11. হজ্জ
হাজ্জ ফার্য হওয়ার বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আকরা‘ ইবনু হাবিস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হাজ্জ প্রতি বছরই ফরয, নাকি মাত্র একবার? তিনি বললেন, জীবনে বরং একবারই, তবে কেউ অধিক করলে সেটা তার জন্য নাফ্ল। [১৭২১] আবূ ওয়াক্বিদ আল-লাইসী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদায় হাজ্জের দিন তাঁর স্ত্রীদেরকে বলতে শুনেছি : তোমাদের জন্য হাজ্জ এই একবারই। এরপর হাজ্জের জন্য আর বের হতে হবে না। [১৭২২]
মাহরাম ছাড়া নারীদের হাজ্জ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো মুসলিম নারীর জন্য সাথে মাহরাম (যার সাথে বিবাহ হারাম এমন আত্মীয়) ছাড়া এক রাতের রাস্তা সফর করা বৈধ নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে নারী আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে তার জন্য একদিন ও এক রাতের পথ সফর করা বৈধ নয় ... অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বের হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেন। [১৭২৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন... অতঃপর বর্ণনাকারী (পূর্ব বর্ণিত) হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে (বর্ণনাকারী সুহাইল) বলেছেন, ‘এক বারীদ’। [১৭২৫] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারী আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য তিন দিন কিংবা এর অধিক সময়ের পথ (একাকী) ভ্রমণ করা বৈধ নয়, যদি না তার সঙ্গে তার পিতা, ভাই, স্বামী, ছেলে অথবা কোন মাহরাম লোক থাকে। [১৭২৬] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী স্বীয় মাহ্রাম সাথে না নিয়ে তিন দিনের সফর করবে না। [১৭২৭] নাফি‘ (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার দাসী সাফিয়্যাহ নাম্মীকে তার পেছনে সওয়ারীর উপর বসিয়ে নিয়ে মাক্কাহ পর্যন্ত সফর করেন। [১৭২৮]
ইসলামে বৈরাগ্য নেই
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে সন্নাসবাদীতা নেই। [১৭২৯] দুর্বল : যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬২৬৯), মিশকাত (২৫২২)।
হাজ্জের সফরে পাথেয় সাথে নেয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন হাজ্জ করতো কিন্তু সাথে পাথেয় নিয়ে আসতো না। আবূ মাসঊদ বলেন, ইয়ামানের কতিপয় লোক হাজ্জে যেতো কিন্তু সাথে পাথেয় আনতো না এবং তারা বলতো যে, আমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করতো। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, “তোমরা হাজ্জের সফরে সাথে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়। (২ : ১৯৭) [১৭৩০]
হাজ্জে গিয়ে ব্যবসা করা
মুজাহিদ (রাঃ) হতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করলেন : ‘হাজ্জের সময়ে (ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে) তোমরা তোমাদের প্রভুর অনুগ্রহ তালাশ করলে দোষের কিছু নেই। (২ : ১৯৮)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (অন্যায় মনে করে) মিনায় কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতো না। তাদেরকে আরাফাত হতে ফেরার পর মিনায় ব্যবসা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [১৭৩১]
-
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ হাজ্জের ইচ্ছা করলে যেন তাড়াতাড়ি সম্পাদন করে। [১৭৩২]
পশু ভাড়ায় খাটানো
আবূ উমামাহ আত-তাইমী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এমন লোক যে, হাজ্জের সময় আমার পশু ভাড়ায় খাটাতাম। তাই কতিপয় লোক বললো, তোমার হাজ্জ হয়নি। তাই আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে সাক্ষাত করে বললাম, হে আবূ ‘আবদূর রহমান! আমি এমন ব্যক্তি যে, হাজ্জের সফরে পশু ভাড়ায় খাটাই। কতিপয় লোক বলে, তোমার হাজ্জ হয় না। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেলেন, তুমি কি ইহরাম বেঁধেছো, তালবিয়া পাঠ করেছো, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছো, আরাফাত থেকে ঘুরে এসেছো, কংকর নিক্ষেপ করেছো? আমি বললাম, হা! তিনি বললেন, তোমার হাজ্জ হয়ে গেছে। একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে প্রশ্ন করলো যেরূপ তুমি আমাকে প্রশ্ন করলে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বক্তব্য না দিয়ে কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। অবশেষে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় : “এ ব্যপারে তোমাদের কোন দোষ নেই যদি (হাজ্জের মওসুমে) তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে তোমাদের রবের অনুগ্রহ তালাশ করো।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত ব্যক্তিকে ডেকে পাঠিয়ে তাকে এ আয়াত পড়ে শুনালেন এবং বললেন, তোমার হাজ্জ হয়েছে। [১৭৩৩] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রাথমিক কালে লোকেরা হাজ্জের মওসুমে মিনা, আরাফাত, যুল-মাজাযির বাজারে এবং হাজ্জের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্থানগুলোতে ব্যবসা করতো, কিন্তু ইহরাম অবস্থায় এসব স্থানে ব্যবসা করা (জায়িয কিনা) তাদের সংশয় হলো। তখন মহিয়ান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন : “তোমাদের কোনো অপরাধ নেই যদি (হাজ্জের সময়) তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে তোমাদের রবের অনুগ্রহ তালাশ করো, বিশেষ করে হাজ্জের অনুষ্ঠানের স্থানগুলোতে।” ইবনু আবূ যিব বলেন, ‘উবাইদ ইবনু উমাইর আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) (আরবী) এ বাক্যটি মূল কুরআনের মধ্যেই পাঠ করতেন। [১৭৩৪] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রথম দিকে লোকেরা হাজ্জের মওসুমে কেনা –বেচা করতো। অতঃপর বর্ণনাকারী (আরবী) পর্যন্ত পূর্ব বর্ণীত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। [১৭৩৫] সহীহ, পূর্বেরটি দ্বারা।
শিশুদের হাজ্জ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আর-রাওহা’ নামক স্থানে কাফেলার সাথে সাক্ষাত হলে তাদেরকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কোন কাফেলা? তারা বললো, আমরা মুসলিম। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কারা? লোকেরা বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এ কথা শুনে এক মহিলা অস্থির হয়ে উঠলো এবং ‘হাওদা’ থেকে একটি শিশুর বাহু ধরে বের করে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এ শিশুর হাজ্জ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে সওয়াব তুমি পাবে। [১৭৩৬]
ইহরাম বাঁধার মীক্বাত সমূহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্বাসীদের জন্য ‘উলহুলাইফা’, শামবাসীদের জন্য ‘আল-জুহফা’ এবং নজদবাসীদের জন্য ‘কারণ’ মীক্বাত হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, এবং আমার কাছে এটাও পৌঁছেছে যে, তিনি ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ পর্বতকে মীক্বাত নির্দিষ্ট করেছেন। [১৭৩৭] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ত্বাউস (রাঃ) তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীক্বাত নির্দিষ্ট করেন। এরপর বর্ণনাকারী পূর্বে বর্ণিত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেন। তাদের দু’জনের একজন বলেন, ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’, একজন বলেছেন ‘আলামলাম’। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ স্থানগুলো সেখানকার অধিবাসীদের জন্য এবং যারা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র উদ্দেশ্যে উক্ত স্থানগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করবে তাদের জন্যও এ স্থানগুলো মীক্বাত গন্য হবে, তারা এখানকার অধিবাসী না হলে। আর যারা মীক্বাতের অভ্যন্তরের অধিবাসী, ইবনু তাঊস বলেন, তারা যেখানে আছে সেখান থেকেই আরম্ভ করবেন। তিনি বলেন, অনুরূপভাবে মাক্কাহবাসীগণ মাক্কাহ থেকেই ইহরাম বাঁধবে। [১৭৩৮] আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরাকবাসীদের জন্য ‘যাতু ইরক’-কে মীক্বাত নির্দিষ্ট করেছেন। [১৭৩৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাচ্যবাসীদের জন্য ‘আল-আক্বীক্ব’-কে মীক্বাত নির্দিষ্ট করেছেন। [১৭৪০] দুর্বল : মিশকাত (৯২৫৩০), যঈফ সুনান তিরমিযী (৮৪০/১৪০)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্র জন্য বায়তুল মাকদিস হতে মাসজিদুল হারাম পর্যন্ত গমনের ইহরাম বাঁধে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে অথবা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমানের সন্দেহ বর্ণনাকারী কোন শব্দটি বলেছেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল্লাহ ওয়াকী (রহঃ)-কে ক্ষমা করুন। তিনি বায়তুল মাকদিস হতে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছেন। [১৭৪১] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪৮৩), সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ (২১১), মিশকাত (২৫৩২), যঈফ ইবনু মাজাহ (৬৪৬)। হারিস ইবনু ‘আমর আস-সাহমী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম, তখন তিনি মিনা অথবা আরাফাতে ছিলেন। এ সময় কিছু লোক তাঁকে ঘিরে রেখেছিলো। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় কতিপয় বেদুঈন এসে তাঁর চেহারা মোবারক দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলো, সত্যই এটা বরকতময় চেহারা। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ সময় ইরাকবাসীর জন্য ‘যাতু ইরক’ কে মীক্বাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। [১৭৪২
হায়িয অবস্থায় হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আসমা’ বিনতু উমাইস (রাঃ) যুল-হুলায়ফায় আবূ বকর (রাঃ) এর ছেলে মুহাম্মাদকে প্রসব করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন তিনি যেন গোসল করে ইহরাম বাঁধে। [১৭৪৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হায়িয ও নিফাসগ্রস্ত নারীরা মীক্বাত পৌঁছার পর গোসল করবে, ইহরাম বাঁধবে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত কাজ সম্পন্ন করবে। আবূ মা‘মার তার হাদীসে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত বাক্যটি বলেছেন। ইবনু ঈসা বলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ছাড়া হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র অন্যান্য কাজ করবে। তিনি ‘কুল্লাহা’ শব্দটি বলেননি। [১৭৪৪]
ইহরাম বাঁধার সময় সুগন্ধি মাখা
‘আয়িশাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম ইহরাম বাঁধার সময়, ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং ইহরাম খোলার সময় বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফের পূর্বে। [১৭৪৫] ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ইহরাম অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, তাঁর সিঁথির চাকচিক্য যেন আমি এখনও দেখছি। [১৭৪৬]
(মাথার) চুল জট পাকানো
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর চুল জট পাকানো অবস্থায় ইহরাম বাঁধতে অথবা ‘তালবিয়া’ পড়তে শুনেছি। [১৭৪৭] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধু দিয়ে তাঁর মাথার চুল জট পাকিয়েছেন। [১৭৪৮] দুর্বল : মিশকাত (২৫৪৮)।
হাজ্জীদের কুরবানীর পশুর বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার বছর কুরবানীর জন্য যেসব পশু পাঠান তাতে আবূ জাহলের উটটিও ছিলো যার নাকে রৌপ্য নোলক লাগানো ছিলো। ইবনু মিনহাল বলেন, স্বর্ণ নোলক ছিলো। নুফাইলী বর্ধিত করেছেন যে, এর দ্বারা মুশরিকদের প্রতি রাগ প্রকাশ উদ্দেশ্য। [১৭৪৯] হাসান “রৌপ্য” শব্দে। মিশকাত (২৬৪০)।
গরু কুরবানী প্রসঙ্গে
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গাভী কুরবানী করেছেন। [১৭৫০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্বীয় স্ত্রীদের পক্ষ হতে একটি গরু করবানী করেন, যারা ‘উমরাহ করেছেন। [১৭৫১]
ইশ‘আর বা উটের কুঁজের পার্শ্বদেশ চিড়ে ফেলা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ থেকে (হাজ্জের উদ্দেশ্যে) মক্কায় যাওয়ার সময় যুল-হুলাইফাতে যুহরের সলাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি কুরবানীর উট আনালেন এবং তার কুঁজের ডান পাশে জখম করে রক্ত প্রবাহিত করলেন, তারপর একজোড়া জুতা তার গলায় বেঁধে দিলেন। পরে তাঁর সওয়ারী আনা হলে তিনি তার পিঠে উপবিষ্ট হলেন এবং তা আল-বায়দায় তাকে নিয়ে দাঁড়ালে তিনি হাজ্জের ‘তালবিয়া’ পাঠ করলেন। [১৭৫২] শু‘বাহ (রহঃ) উক্ত হাদীসটি আবুল ওয়ালীদের বর্ণিত হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে রক্ত প্রবাহিত করলেন। আবূ দাঊদ বলেন, হাম্মাম বর্ণনা করেছেন, নিজের আঙ্গুল দ্বারা রক্ত প্রবাহিত করেছেন। আবু দাঊদ বলেন, হাদীসটি কেবল বাসরাহর বর্ণনাকারীরা বর্ণনা করেছেন আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ ইবনুল হাকাম (রাঃ) ও মারওয়ান তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার বছর রওয়ানা হয়ে যখন ‘যুল-হুলাইফায়’ পৌঁছেন তখন কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধে তাকে ইশ‘আর করে ইহরাম বাঁধলেন। [১৭৫৪] ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মেষের গলায় মালা পরিয়ে তা কুরবানীর জন্য (মাক্কাহয়) পাঠিয়ে দেন। [১৭৫৫]
কুরবানীর পশু পরিবর্তন
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একটি ‘বুখতী উট’ কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করলেন। অতঃপর তিনশো দীনারে তা কেনার প্রস্তাব এলে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বুখতী উট কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট করেছি। এখন আমাকে এর বিনিময়ে তিনশ দীনার প্রদানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি কি তা বিক্রি করে সেই মূল্যে অন্য কোনো উট কিনতে পারি? তিনি বললেনঃ না, বরং সেটাই যাবাহ করো। আবূ দাঊদ বলেন, কেননা তিনি ওটাকে ইশ‘আর করেছিলেন। [১৭৫৬]
কুরবানীর পশু (মাক্কাহ্য়) পাঠিয়ে আবাসে অবস্থান করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর পশুর গলায় বাঁধার মালা পাকিয়ে দিয়েছি। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তাকে ইশ‘আর করে তার গলায় ঐ মালা বেঁধে দিয়েছেন, পরে তা খানায়ে কা‘বাতে পাঠিয়ে দেন। তিনি মদিনায় অবস্থান করেছেন। কিন্তু এতে স্বাভাবিক অবস্থায় তাঁর জন্য যা কিছু হালাল ছিলো সেসবের কিছুই তাঁর জন্য হারাম হয়নি। [১৭৫৭] উরওয়াহ ও ‘আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ হতে (মাক্কাহতে) কুরবানীর পশু পাঠাতেন, আর আমি সেটির গলায় বাঁধার জন্য মালা তৈরি করে দিতাম। কিন্তু এগুলো প্রেরণ করার পর হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরামধারী ব্যক্তিকে যা কিছু পরিহার করতে হয় তিনি তার কিছুই পরিহার করতেন না। [১৭৫৮] ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দিতেন। আমি নিজ হাতে আমাদের ঘরের তুলা দিয়ে সেটির গলায় বাঁধার জন্য মালা পাকিয়ে দিয়েছি। অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে (ইহরামহীন) হালাল অবস্থায় থাকলেন এবং কেউ স্বীয় স্ত্রীর সাথে যা করে থাকে তিনিও তা করতেন। [১৭৫৯]
কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ করা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট নিয়ে যেতে দেখে বললেনঃ এটির পিঠে চড়ে যাও। লোকটি বললো, এটা কুরবানীর পশু। তিনি বললেনঃ তুমি এর পিঠে চড়ো। তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার বললেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়, তুমি এর পিঠে চড়ো। [১৭৬০] আবুয যুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে কুরবানীর পশুর পিঠে চড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তুমি নিরূপায় হলে অন্য সওয়ারী না পাওয়া পর্যন্ত সদয়ভাবে তার উপর চড়তে পারো। [১৭৬১]
কুরবানীর পশু গন্তব্যে পৌঁছার আগেই অচল হয়ে গেলে
নাজিয়াতুল আসলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর কুরবানীর পশুর সাথে (মাক্কাহতে) প্রেরণের সময় বলেছেনঃ এগুলোর কোনটি অচল হয়ে পড়লে তা যাবাহ করে সেটির গলায় বাঁধানো জুতা রক্তের মধ্যে ফেলে দিবে এবং মুসাফিরদের আহারের জন্য রেখে দিবে। [১৭৬২] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ আসলামের জনৈক ব্যক্তিকে আঠারটি কুরবানীর পশু সহ (মক্কায়) প্রেরণ করলেন। লোকটি বললো, (পথে) কোন জন্তু অচল হয়ে পড়লে তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তা যাবাহ করবে এবং তার গলায় বাঁধা জুতা রক্তে মেখে তার ঘাড়ে রেখে দিবে। কিন্তু তুমি নিজে এবং তোমার কোনো সাথী এর গোশত খাবে না। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল ওয়ারিসের হাদীসে (আরবী) এর স্থলে (আরবী) শব্দ রয়েছে। [১৭৬৩]
নিজ হাতে কুরবানী করা এবং অন্যের সহযোগিতা নেয়া
আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিজ হাতে ত্রিশটি কুরবানীর পশু (উট) যাবাহ করেছেন। পরে তার নির্দেশ মোতাবেক অবশিষ্ট পশুগুলো আমি যাবাহ করেছি। [১৭৬৪] ‘আবদুল্লাহ ইবনু কুরত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রাচুর্য্যময় মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন দিন হলো কুরবানীর দিন, তারপর মেহমানদারীর দিন, সেটি হলো দ্বিতীয় দিন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর পাঁচটি বা ছয়টি কুরবানীর পশু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আনা হলো। যে পশুকে তাঁর কাছে আনা হলো তিনি প্রথমে সেটিই যাবাহ’ করলেন। এভাবে যাবাহ শেষ হলো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হালকা একটা কথা বলেছেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। পরে আমি আমার (কাছের ব্যক্তিকে) জিজ্ঞেস করলে সে বললো, তিনি বলেছেনঃ ‘কারো ইচ্ছে হলে এখান থেকে গোশত কেটে নিতে পারবে’। [১৭৬৫] গারাফা ইবনুল হারিস আল-কিনদী (রাঃ) আমি বিদায় হাজ্জের দিন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলাম। তাঁর কাছে কুরবানীর উট আনা হলে তিনি বললেনঃ হাসানের পিতাকে ডাকো। সুতরাং ‘আলী (রাঃ)-কে ডাকা হলো। তিনি তাকে বললেনঃ তুমি অস্ত্রের নিম্নভাগে ধরো, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে উপরিভাগ ধরলেন। তারপর তাঁরা উভয়ে ধারালো অস্ত্রে পশুটি যাবাহ করলেন। অতঃপর যাবাহ শেষে তাঁর খচ্চরে আরোহন করে ‘আলীকে তাঁর পেছনে বসিয়ে চলে গেলেন। [১৭৬৬]
উট কিভাবে যাবাহ করতে হয়
জাবির ও ‘আবদুর রহমান ইবনু সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ উটের বাম পা বেঁধে, অবশিষ্ট (তিন) পায়ের উপর খাড়া অবস্থায় তা যাবাহ করতেন। [১৭৬৭] যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে মিনাতে ছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে তার উটকে বসানো অবস্থায় যাবাহ করতে প্রস্তুত হচ্ছিল। তিনি বললেন, এটিকে ছেড়ে দাও এবং বেঁধে দাঁড় করিয়ে যাবাহ করো। এটাই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর কুরবানীর পশুর দেখাশোনা, চামড়া বিতরণ ও তার আচ্ছাদন সদাক্বাহ করতে নির্দেশ দেন এবং কসাইকে তা থেকে কিছু না দেয়ার নির্দেশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, তবে কসাইকে আমরা নিজেদের পক্ষ হতে আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দিতাম। [১৭৬৯]
ইহরাম বাঁধার সময়
সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, হে আবুল ‘আব্বাস! রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বাঁধার মুহূর্ত বিষয়ে যে মতভেদ করছেন তাতে আমি স্তম্ভিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি এ বিষয়ে অন্যদের চেয়ে অধিক অবগত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু একবারই হাজ্জ করেছেন, আর এটাই তাদের মতভেদের মূল উৎস। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তিনি যুল-হুলাইফাতে তাঁর মাসজিদে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন এবং ঐ বসাবস্থায় দু’ রাক‘আত শেষ করেই নিজের জন্য হাজ্জ ওয়াজিব করে নিয়ে ‘তালবিয়া’ পাঠ করলেন। সুতরাং এখানে কিছু লোক তাঁকে ‘তালবিয়া’ পড়তে শুনে তারা তাই স্মরণ রেখেছে। অতঃপর তিনি আরোহণ করলেন এবং উষ্ট্রী তাঁকে পিঠে তুলে নিয়ে দাঁড়ানোর সময়ও তিনি ‘তালবিয়া’ পড়লেন। সুতরাং আরো কিছু লোক এখানে তাঁকে ‘তালবিয়া’ পড়তে শুনলো। বস্তুত লোকজন পৃথক পৃথকভাবে দলে দলে আসছিলো। আর তারা তখন তাঁকে তালবিয়া পাঠ করতে শুনলো যখন তিনি উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় তালবিয়া পড়লেন। ফলে তারা একথাই বললো যে, উষ্ট্রী তাঁকে তার পিঠে তোলার সময় তিনি তালবিয়া পড়েছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মুখে অগ্রসর হলেন। এবার তিনি ‘আল-বায়দার’ উচ্চভূমিতে চড়লেন এবং এখানেও ‘তালবিয়া’ পড়লেন। কিছু লোক তাঁকে এখানে ‘তালবিয়া’ পড়তে শুনে তারা বললো, তিনি তখনই ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়েছেন এবং পরে উষ্ট্রীর পিঠে ও আল-বায়দার উচ্চভূমিতে, সর্বত্র সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়েছিলেন। অতঃপর সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাসের বর্ণনানুযায়ী কাজ করে, সে যেন দু’ রাক‘আত সালাত শেষে স্বীয় মুসাল্লাতেই ইহরাম বাঁধে। [১৭৭০] দুর্বল : যঈফ সুনান তিরমিযী (৮২৫/১৩৫) সংক্ষিপ্তভাবে এ শব্দে ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সলাতের পর তালবিয়া পড়তেন।’ অনুরূপ যঈফ সুনান নাসায়ী (২৭৫৪/১৭৫)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেন, এই হচ্ছে তোমাদের ‘বায়দা’ যেখানে তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে অনুমানে কথা বলছো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলাইফার মাসজিদ থেকেই ইহরাম বেধেছেন। [১৭৭১] ‘উবাইদ ইবনু জুরাইজ (রহঃ) একদা তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি আপনাকে এমন চারটি আমল করেতে দেখি, যা আপনার অন্য কোনো সাথীকে করতে দেখি না। তিনি বললেন, হে ইবনু জুরাইজ! সেগুলো কি? তিনি বললেন, আপনি দুই রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ করেন না। আপনি সিবতী চামড়ার জুতা পড়েন। আপনি হলুদ রঙ ব্যবহার করেন এবং আপনি মাক্কাহতে থাকাবস্থায় লোকজন যিলহাজ্জ মাসের চাঁদ দেখে ইহরাম বাঁধে, কিন্তু আপনি ‘তারবিয়ার দিন’ না আসা পর্যন্ত ইহরাম বাঁধেন না। অতঃপর এর জবাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুই রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পশমহীন জুতা পরতে দেখেছি, তিনি সেটা পরা অবস্থার উযুও করতেন। সুতরাং আমি তা পরতে পছন্দ করি। হলুদ রং- আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হলদে রং ব্যবহার করতে দেখেছি। কাজেই আমি তা পছন্দ করি। আর ইহরাম বাঁধা- আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সওয়ারী সফরের উদ্দেশ্যে না দাঁড়ানো পর্যন্ত ইহরাম বাঁধতে দেখিনি। [১৭৭২] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় যুহরের চার রাক‘আত সলাত আদায় করেন এবং যুলহুলাইফায় পৌঁছে ‘আসরের সলাত আদায় করেন দুই রাক‘আত। তিনি সেখানেই রাত যাপন করেন এবং সকালে সওয়ারীতে চড়ে সফর শুরু করার সময় ‘তালবিয়া’ পাঠ করেন। [১৭৭৩] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাদীনাহয়) যুহরের সলাত আদায় করে সওয়ারীতে চড়েন। অতঃপর তিনি আল-বায়দার উচ্চভূমিতে আরোহণের সময় ‘তালবিয়া’ পাঠ করেন। [১৭৭৪] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আল-ফুর‘আ নামক স্থানের দিকে যেতেন তখন সওয়ারীর পিঠে চড়া মাত্রই তালবিয়া পড়তেন। তিনি যখন উহুদের পথে রওয়ানা হতেন, তখন আল-বায়দা পর্বতে উঠার সময় তালবিয়া পড়তেন। [১৭৭৫]
হাজ্জের মধ্যে শর্ত যোগ করা প্রসঙ্গে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা যুবাইর ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিবের মেয়ে- দবা‘আহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাজ্জের ইচ্ছা করেছি। এতে কোন শর্ত করতে পারব কি? তিনি বললেনঃ হাঁ। দবা‘আহ বলেন, তা কিভাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো : ‘আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, পথে যেখানেই তুমি আমাকে আটক করবে সেটাই আমার ইহরাম ভঙ্গের স্থান। [১৭৭৬]
হাজ্জে ইফরাদ
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জে ইফরাদ করেছেন। [১৭৭৭] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কিছু আগে আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। তিনি যুল-হুলাইফায় পৌঁছে বললেনঃ কেউ হাজ্জের ইহরাম বাঁধতে চাইলে বাঁধুক। আর কেউ ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধতে চাইলে সে যেন ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধে। উহাইব হতে মূসা বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেছেনঃ যদি আমার সাথে কুরবানীর পশু না আনতাম তাহলে ‘উমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধতাম। হাম্মাদ ইবনু সালামাহ্র হাদীসে রয়েছে, আমি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি, কারণ আমার সাথে কুরবানীর পশু আছে। তারপর উভয় বর্ণনাকারী একইরূপ বর্ণনা করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যারা শুধু ‘উমরাহ্র ইহরাম বেঁধেছিলো, আমি তাদের দলভুক্ত ছিলাম। পথিমধ্যে আমার হায়েয আরম্ভ হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আসলেন, এ সময় আমি কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কাঁদছো কেন? আমি বললাম, কতই না ভালো হতো যদি আমি এ বছর (ঘর থেকে) বের না হতাম। তিনি বললেনঃ তুমি ‘উমরাহ্ ত্যাগ করো, মাথার খোপা খুলে ফেলো, চুল আঁছড়িয়ে নাও। মূসা বর্ণনায় রয়েছে : এবং হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধো। সুলাইমান বলেন, মুসলিমরা হাজ্জে যেসব অনুষ্ঠান পালন করে তুমিও তা করো। অতঃপর (মাক্কাহ থেকে) ফেরার রাত এলো ‘আবদুর রহমানকে নির্দেশ করলে তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে ‘তানঈমে’ নিয়ে যান। মূসার বর্ণনায় আরো রয়েছে : তিনি পূর্বের ‘উমরাহ্র স্থানে ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন। ফলে আল্লাহ তাঁর ‘উমরাহ্ ও হাজ্জ উভয়টিই পূর্ণ করলেন। হিশামের বর্ণনায় রয়েছে : কিন্তু এরূপ করার কারণে তাঁকে কাফফারাহ হিসেবে কুরবানী দিতে হয়নি। আবূ দাঊদ বলেন, হাম্মাদ ইবনু সালামাহ্র হাদীসে মূসা বর্ধিত করেছেন যে, অতঃপর ‘বাতহা’ উপত্যকায় প্রবেশের রাতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) পবিত্র হন। [১৭৭৮] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের বছরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ ‘উমরাহ্র ইহরাম বেঁধেছিলো, কেউ হাজ্জ ও ‘উমরাহ দুটির ইহরাম বেঁধেছিলো এবং কেউ শুধুমাত্র হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। যারা শুধু হাজ্জ কিংবা হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারেননি। [১৭৭৯] আবুল আসওয়াদ (রহঃ) পূর্ব বর্ণিত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত। তবে এতে আরো আছে : যারা কেবল ‘উমরাহর ইহরাম বাঁধেন তারা ‘উমরাহ্ সমাপন করে ইহরামমুক্ত হন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে তারা যেন ‘উমরাহ্র সাথে হাজ্জের ইহরাম বাঁধে এবং উভয়টির যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি শেষ না করা পর্যন্ত ইহরাম না খুলে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি হায়িয অবস্থায় মক্কায় উপস্থিত হলাম। সুতরাং আমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়াতে সাঈ করলাম না। আমি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করলে তিনি বললেনঃ চুলের খোপা খুলে ফেলো, মাথায় চিরুনি করো, ‘উমরাহ্র নিয়্যাত বর্জন করে কেবল হাজ্জের ইহরাম বাঁধো। তিনি বলেন, সুতরাং আমি তাই করলাম। অতঃপর আমাদের হাজ্জ সমাপ্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকরের সাথে ‘তানঈম’-এ প্রেরণ করলেন এবং আমি সেখান থেকে ‘উমরাহ করলাম। তিনি বললেনঃ এটা তোমার পূর্বের ‘উমরাহ্র পরিপূরক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যারা ‘উমরাহ্র ইহরাম বেঁধেছিলো তারা মক্কায় পৌঁছে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেলে। তার পর মিনা থেকে ফিরে এসে হাজ্জের জন্য আরেকবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে। আর যারা হাজ্জ ও ‘উমরাহ একত্রে আদায় করেছে তারা শুধুমাত্র একবার তাওয়াফ করেছে। [১৭৮১] সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবরাহীম ইবনু সা’দ এবং মা‘মার (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, তবে এতে “যারা শুধু ‘উমরাহ্র ইহরাম বেঁধেছিল এবং যারা হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়টির ইহরাম বেঁধেছে তাদের তাওয়াফের কথা” বর্ণিত হয়নি। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলাম কিন্তু ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছালে আমার হায়িয আরম্ভ হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আসলেন, তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আয়িশা! তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, গত রাতে আমি ঋতুবতী হয়েছি, আমি তো হাজ্জ করতে পারলাম না। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এতো সেই বস্তু যা মহান আল্লাহ আদমের কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। সুতরাং তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ব্যতীত হাজ্জের অন্যান্য সব কাজ সম্পন্ন করো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা মক্কায় প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে ছাড়া যে কেউ তার ইহরাম ‘উমরাহ্তে পরিণত করতে পারে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রীদের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেন। অতঃপর ‘বাতহা’র রাতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) হায়িয থেকে পবিত্র হলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সাথীরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ সম্পন্ন করে ফিরে যাবে, আর আমি কি শুধু হাজ্জ করেই ফিরবো? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকরকে নির্দেশ দিলে তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে ‘তানঈম’ নামক স্থানে নিয়ে যান এবং তিনি সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ‘উমরাহ্ করেন। [১৭৮২] সহীহ, তবে এ কথাটি বাদে : “… من شاء أن يجعلها عمرة”। সঠিক হলো : “اجعلوها عمرة ” : মুসলিম। [যা সামনে আসছে এ গ্রন্থের হা/১৭৮৮।] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে রওয়ানা হলাম। তাতে হাজ্জ ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। আমরা মক্কায় পৌঁছে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ইহরাম মুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিলেন যারা কুরবানীর পশু সাথে আনেনি। সুতরাং যারা কুরবানীর পশু সাথে আনেনি তারা ইহরাম মুক্ত হলো। [১৭৮৩] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যা পরে জানতে পেরেছি তা যদি আগে জানতে পারতাম তাহলে আমি কুরবানীর পশু সাথে আনতাম না। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেন, আমার ধারণা, আমার শায়খ (‘উসমান ইবনু ‘উমার) বলেছেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, যারা ‘উমরাহ সমাপ্ত করে ইহরাম খুলেছে আমিও তাদের দলভুক্ত ছিলাম। মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সকলের কার্যক্রম যেন একইরূপ হয়। [১৭৮৪] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলূল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হাজ্জে ইফরাদের ইহরাম বেঁধে রওয়ানা হই। আর ‘আয়িশাহ (রাঃ) এলেন ‘উমরাহ্র ইহরাম বেঁধে। তিনি ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছে ঋতুবতী হলেন। আমরা (মক্কায় ) পৌঁছে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ সমাপ্ত করি। আমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইহরাম খুলে হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমরা বললাম, হালাল হওয়ার অর্থ কি? তিনি বললেনঃ সবকিছুর জন্য হালাল হওয়া। ফলে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করলাম এবং গায়ে সুগন্ধি মেখে স্বাভাবিক পোশাক পরলাম। অথচ আমাদের ও ‘আরাফাহ দিবসের মাঝে মাত্র চার দিনের ব্যবধান আছে। অতঃপর আমরা যিলহাজ্জ মাসের অষ্টম তারিখে হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখলেন তিনি কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলেন : তোমার কি হয়েছে? তিনি বলেলেন, আমি ঋতুবতী হয়েছি। অথচ সকল লোক (‘উমরাহ্ সম্পন্ন করে) ইহরাম খুলে ফেলেছে, আর আমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারিনি। আর লোকজন এখনই হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তিনি বললেনঃ মহান আল্লাহ তো এটা আদমের সকল কন্যাদের উপর নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তুমি গোসল করো এবং হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধো। সুতরাং তিনি তাই করলেন এবং যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন, পরে যখন পবিত্র হলেন তখন বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলেন। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়টি হতে হালাল হয়েছো। তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মনে (খটকা) হচ্ছে, আমি হাজ্জের সময় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিনি। সুতরাং তিনি বললেনঃ হে ‘আবদুর রহমান! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তাকে ‘তানঈম’ থেকে এর ‘উমরাহ করাও। এটা ছিল মুহাসসাব উপত্যকার রাতের ঘটনা (অর্থাৎ যিলহাজ্জ মাসের চৌদ্দ তারিখ)। [১৭৮৫] আবুয যুবাইর (রাঃ) জাবির (রাঃ) হতে এ ঘটনার অংশবিশেষ শুনেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা : এবং তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধো অতঃপর হাজ্জ করো এবং অন্যান্য হাজীগণ যা করে তুমিও তাই করো’, কিন্তু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না এবং সলাত আদায় করবে না। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে শুধুমাত্র হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি, এতে অন্য কিছু ছিল না। যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখে আমরা মক্কায় উপস্থিত হয়ে (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ এবং (সাফা-মারওয়া) সাঈ করি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইহরাম খুলে হালাল হবার নির্দেশ দিয়ে বললেনঃ আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম। তখন সুরাক্বাহ ইবনু মালিক (রাঃ) উঠে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের এই ‘হাজ্জে তামাত্তু’ কি এ বছরের জন্য, নাকি সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, বরং এটা সর্বকালের জন্য। ইমাম আওযাঈ বলেন, আমি এ হাদীস ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহকে বলতে শুনেছি, কিন্তু স্মরণ রাখতে পারিনি। অবশেষে ইবনু জুরাইজের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাকে তা যথাযথভাবে স্মরণ করিয়ে দেন। [১৭৮৭] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীরা যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখে (মক্কায়) আসেন। তাঁরা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া সাঈ সম্পন্ন করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে ব্যতীত তোমরা সকলেই এ কাজগুলোকে ‘উমরাহ্ গণ্য করো। অতঃপর (অষ্টম তারিখ) তারবিয়ার দিন এলে তারা হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। অতঃপর (কুরবানীর দিন) দশ তারিখে তারা (মক্কায়) এসে শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) করলেন না। [১৭৮৮] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ‘সাথীরা ইহরাম বেঁধে হাজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ত্বালহা (রাঃ) ব্যতীত কারো সাথেই কুরবানীর পশু ছিলো না। ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান দেশ থেকে আসলেন, তখন তাঁর সাথে কুরবানীর পশু ছিলো। ‘আলী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও ঐ উদ্দেশ্যেই ইহরাম বেঁধেছি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলো না তাদের হাজ্জকে ‘উমরাহ্য় রূপান্তরিত করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দেন এবং মাথা মুন্ডন করে হালাল হতে বললেন। কিন্তু যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত। তারা বললেন, আমরা কিভাবে মিনার দিকে রওয়ানা হবো অথচ আমাদের কেউ কেউ স্ত্রী সহবাস করেছে। এসব কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কানে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ আমার ব্যাপারে আমি যা পরে জেনেছি তা যদি আগে জানতাম, তাহলে আমি কুরবানীর পশু সাথে করে আনতাম না। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম। [১৭৮৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ সেই ‘উমরাহ্ যার থেকে আমরা উপকৃত হয়েছি। কাজেই যার সাথে কুরবানীর পশু নেই সে সব কিছু থেকে সম্পূর্ণ হালাল হয়ে যাবে। আর ‘উমরাহ্ ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করলো। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, এ হাদীসটি মুনকার এবং এগুলো ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) বক্তব্য। [১৭৯০] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি হাজ্জের ইহরাম বেঁধে মক্কায় উপস্থিত হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ করলে সে অবশ্যই হালাল হয়ে গেল। আর এটাই হচ্ছে ‘উমরাহ্। আবূ দাউদ বলেন, ইবনু জুরাইজ এক ব্যক্তি হতে ‘আত্বা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ শুধুমাত্র হাজ্জের ইহরাম বেঁধে (মক্কায়) প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ‘উমরাহ্য় রূপান্তরিত করেন। [১৭৯১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে (মক্কায়) পৌঁছে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করলেন। ইবনু শাওকার বলেন, কুরবানীর পশু সাথে থাকার কারণে তিনি চুল খাট করেননি এবং ইহরাম থেকেও মুক্ত হননি। তবে যারা সাথে করে কুরবানীর পশু আনেননি তাদেরকে তাওয়াফ ও সাঈ করার পর চুল ছেঁটে ইহরাম মুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইবনু মানী‘ বর্ধিত করেছেন যে : অথবা মাথা মুন্ডন করে যে হালাল হয়। [১৭৯২] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) কাছে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মৃত্যুশয্যায় হাজ্জের পূর্বে ‘উমরাহ্ করতে নিষেধ করতে শুনেছেন। [১৭৯৩] দুর্বল : যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০৫১)। মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অমুক অমুক কাজ করতে এবং চিতা বাঘের চামড়ার উপর আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। মু‘আবিয়াহ বললেন, আপনারা কি জানেন যে, তিনি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্কে একত্র করতে নিষেধ করেছেন? তারা বললেন, এটা আমাদের জানা নেই। অতঃপর তিনি বললেন, এটাকেও ঐসব নিষিদ্ধ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু আপনারা ভুলে গেছেন। সহীহ : তবে হাজ্জ ও ‘উমরাহ একত্র করা নিষেধ কথাটি শায। যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬০২৩)।
হাজ্জে কিরান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়টির জন্যে একত্রে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আমি ‘উমরাহ ও হাজ্জের জন্য আপনার দরবারে উপস্থিত। [১৭৯৫] আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল-হুলাইফাতে রাত যাপন করেন। অতঃপর সকালে সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে পৌঁছে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ পাঠ করলেন এবং তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র ‘তালবিয়া’ পাঠ করলে লোকেরা ও হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র জন্য তালবিয়া পড়ে। পরে আমরা মক্কায় পৌঁছলে তাঁর নির্দেশ মোতাবেক লোকেরা তাদের ইহরাম খুলে ফেলে। অতঃপর (অষ্টম তারিখ) ‘তারবিয়ার’ দিনে সবাই হাজ্জের জন্য তালবিয়া পড়লো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সাতটি উট দাঁড়ানো অবস্থায় নিজ হাতে কুরবানী করেছেন। আবূ দাউদ বলেন, হাদীসটি আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তার ভাষা হলো : “তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা, গুনগান ও তাকবীর পাঠের পর হাজ্জের ইহ্রাম বেঁধেছেন। [১৭৯৬] আল বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘আলী (রাঃ)-কে ইয়ামান দেশে শাসক করে প্রেরণ করেন তখন আমিও তার সাথে ছিলাম। তিনি বলেন, আমি তার সাথে কয়েক ‘আওকিয়া সোনার’ অধিকারী হয়েছিলাম। তিনি বলেন, যখন ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসলেন তখন ‘আলী বলেন, আমি ফাত্বিমাহ (রাঃ)-কে দেখি রঙ্গিন কাপড় পরে আছে এবং ঘরকে সুগন্ধময় করে রেখেছে। সে আমাকে বললো, আপনার কি হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীদেরকে ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন, সেজন্য সবাই ইহরাম খুলে ফেলেছেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইহরামের মতই ইহরাম বেঁধেছি, এ বলে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলে তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কি জন্য ইহরাম বেঁধেছো? আমি বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধেছেন আমিও ঐ উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধেছি। তখন তিনি বললেনঃ আমি কুরবানীর পশু সাথে এনেছি এবং ‘কিরান’ হাজ্জের নিয়্যাত করেছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমার জন্য সাতষট্টিটি উট কুরবানী করবে এবং তোমার নিজের জন্য তেত্রিশ বা চৌত্রিশটি রেখে দেবে আর প্রত্যেকটি উট থেকে আমার জন্য এক টুকরা করে গোশত রেখে দিবে। [১৭৯৭] আবূ ওয়াইল (রহঃ) তিনি বলেন, আস সুবাই ইবনু মা‘বাদ (রহঃ) বলেন, আমি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধায় ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত অনুসরণ করেছো। [১৭৯৮] আবূ ওয়াইল (রহঃ) তিনি বলেন, আস্-সুবাই ইবনু মা‘বাদ (রহঃ) বলেছেন, আমি খৃষ্টান বেদুঈন ছিলাম। ইসলাম কবুলের পর আমি আমার গোত্রের হুযাইম ইবনু সুরমুলা নামক এক ব্যক্তির কাছে এসে তাকে বললাম, হে অমুক! আমি জিহাদে যোগদান করতে চাই। আমি দেখছি, আমার উপর হাজ্জ ও ‘উমরাহ ফারয হয়ে গেছে। কাজেই এ দু’টাকে আমি কিভাবে একত্র করবো? সে বললো, তুমি উভয়টি একত্রে আদায় করো এবং তোমার জন্য সহজলভ্য কুরবানী করো। সুতরাং আমি উভয়টির জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধি। আমি যখন আল-উযাইব নামক স্থানে পৌঁছি তখন সালমান ইবনু রবী‘আহ এবং যায়িদাহ ইবনু সূহার (রাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আর আমি উভয়টির একত্রে ইহরাম বেঁধেছি। তাদের একজন আরেকজনকে বললেন, এ ব্যক্তি তার উটের চেয়ে অধিক জ্ঞানী নয়। বর্ণনাকারী বলেন, এই মন্তব্যে যেন আমার উপর পাহাড় পতিত হলো। শেষে আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) কাছে গিয়ে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমি ছিলাম খৃষ্টান বেদুঈন। আমি ইসলাম কবুল করেছি। আমি জিহাদে অংশ গ্রহনে আগ্রহী। আমি আমার উপর হাজ্জ ও ‘উমরাহ ফরয দেখতে পাচ্ছি। কাজেই আমি আমার গোত্রের এক লোকের কাছে গেলে সে আমাকে বললো, তুমি একত্রে উভয়টির ইহরাম বাঁধো এবং তোমার জন্য সহজলভ্য কুরবানী করো। ফলে আমি একত্রে উভয়টির ইহরাম বেঁধেছি। ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের হিদায়াত পেয়েছো। [১৭৯৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : রাতে আমার মহান পরাক্রমশালী প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক আগমনকারী এসে আমাকে বললেন, এ কল্যাণময় উপত্যকায় সলাত আদায় করুন এবং বলেছেন, ‘উমরাহ্কে হাজ্জের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সহীহ : বুখারী। ‘উমরাহ হাজ্জের অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা অগ্রগণ্য। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আল-‘আক্বীক্ব উপত্যকায় অবস্থানরত ছিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম আওযাঈ হতে বর্ণনা করেছেন এবং বলুন, ‘উমরাহ হাজ্জের সংযুক্ত হলো’। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, অনুরূপভাবে এ হাদীসে ‘আলী ইবনুল মুবারক বর্ণনা করেন, ‘বলুন, হাজ্জের মধ্যে ‘উমরাহ অন্তর্ভুক্ত হলো। [১৮০০] আর-রাবী‘ ইবনু সাবরাহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে রওয়ানা হলাম। যখন ‘উসফান’ নামক স্থানে উপনীত হলাম তখন সুরাকাহ ইবনু মালিক আল-মুদলিজী (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে হাজ্জের নিয়ম নীতি এমনভাবে (উত্তমরূপে) বুঝিয়ে দিন যেভাবে কোন নবীন দলকে বুঝানো হয়। তিনি বললেনঃ মহাশক্তিশালী আল্লাহ তোমাদের হাজ্জের মধ্যে ‘উমরাহকে প্রবেশ করিয়েছেন। সুতরাং তোমরা (মক্কায়) পৌঁছে যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করবে সে হালাল হয়ে যাবে, কিন্তু যার সাথে কুরবানীর পশু আছে সে ব্যতীত। [১৮০১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি মারওয়ার পাশে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চুল কাঁচি দিয়ে ছোট করে দিয়েছিলাম অথবা তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মারওয়াতে কাঁচি দ্বারা তাঁর চুল ছাঁটতে দেখেছি। [১৮০২] সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। তবে বুখারীতে তার এ কথাটি নেই : (আরবি)। এটাই অধিক বিশুদ্ধ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তাকে বলেছেন, আপনি কি জানেন, মারওয়ার উপর এক বেদুঈনের কাঁচি দ্বারা আমি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের সময় তাঁর চুল ছোট করেছিলাম। [১৮০৩] সহীহ : তার একথাটি বাদে : “তাঁর হাজ্জের সময়।” কেননা তা শায। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাহ্র জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন এবং তাঁর সাথীরা হাজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। [১৮০৪] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে হাজ্জ ও ‘উমরাহ একত্রে সম্পন্ন করে তামাত্তু‘ হাজ্জ করেছেন। তিনি যুল-হুলাইফাহ থেকে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে যান। সকলকে তামাত্তু‘ করার নির্দেশ দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে ‘উমরাহ্র জন্য তালবিয়া পড়েন, তারপর হাজ্জের জন্য তালবিয়া পড়েন (ইহরাম বাঁধেন)। তাঁর সাথে লোকজনও হাজ্জের সাথে ‘উমরাহ্র নিয়্যাত করে তামাত্তু‘ করলো। কেউ কেউ সাথে কুরবানীর পশু এনেছিলো আবার কেউ কেউ আনেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় পৌঁছে লোকদেরকে বললেনঃ যারা সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছো, তাদের জন্য হাজ্জ আদায় না করা পর্যন্ত (ইহরাম অবস্থায়) নিষিদ্ধকৃত কাজ বৈধ নয়। আর তোমাদের যারা সাথে করে কুরবানীর পশু আনোনি, তারা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ করে, চুল খাট করে, ইহরাম খুলে ফেলবে এবং হাজ্জের জন্য (নতুন করে) ইহরাম বাঁধবে, অতঃপর কুরবানী করবে। কিন্তু যারা কুরবানী দিতে অক্ষম তারা হাজ্জের মওসুমে তিনটি সওম এবং বাড়িতে ফিরে সাতটি সওম (মোট দশটি সওম) পালন করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন, তারপর ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করলেন। তিনি তাওয়াফের সাত চক্করের প্রথম তিন চক্কর দ্রুত পায়ে চললেন এবং অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেন। বায়তুল্লাহ তাওয়াফ শেষ করে তিনি মাকামে ইবরাহীমের পাশে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করলেন, সলাতের সালাম ফিরিয়ে উঠে সাফা পাহাড়ে গিয়ে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করলেন। অতঃপর হাজ্জ সমাপণ করে কুরবানীর দিন (দশম তারিখে) কুরবানী করা পর্যন্ত তিনি ইহরাম অবস্থায় থাকলেন। অতঃপর ফিরে এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ইহরাম খুলে যেসব জিনিস এ সময় নিষিদ্ধ ছিলো তা হালাল করলেন। আর যারা সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছিলো তারা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুসরণ করলো। [১৮০৫] সহীহ : কিন্তু তার এ কথাটি শায : “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে ‘উমরাহ্র জন্য তালবিয়া পড়েন, তারপর হাজ্জের জন্য তালবিয়া পড়েন।” হাফসাহ (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কি হলো, লোকজন ইহরাম খুলে ফেলেছে, অথচ আপনি এখনো ‘উমরাহ্র ইহরাম খুলেননি? তিনি বললেনঃ আমি আমার মাথার চুল জট পাকিয়েছি এবং আমার কুরবানীর পশুর গলায় মালা পরিয়েছি। সুতরাং কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারবো না। [১৮০৬]
হাজ্জের ইহরাম বাঁধার পর তা ‘উমরাহ্য় পরিবর্তিত করা
সুলাইম ইবনুল আসওয়াদ (রহঃ) সূত্র আবূ যার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি হাজ্জের ইহরাম বাঁধার পর তা ‘উমরাহ্তে পরিবর্তন করে এরূপ করা ঠিক নয়। এরূপ করা কেবল তাঁদের জন্যই জায়িয ছিলো, যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে (বিদায় হাজ্জে) ছিলেন। [১৮০৭] আল-হারিস ইবনু বিলাল ইবনুল হারিস (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হাজ্জের ইহরাম ভেঙ্গে তা ‘উমরাহ্য় পরিবর্তন করা কি কেবল আমাদের জন্যই নির্ধারিত না আমাদের পরবর্তীদের জন্যও? তিনি বললেনঃ না, শুধু তোমাদের জন্যই নির্ধারিত। [১৮০৮] দুর্বল : যঈফ ইবনু মাজাহ (৬৪৪), যঈফ সুনান নাসায়ী (২৮০৮/১৭৭)।
কারো পক্ষ হতে হাজ্জ করা
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে তাঁর সওয়ারীতে বসা ছিলেন। এমতবস্থায় খাস্আম গোত্রীয় এক মহিলা এসে তাঁর কাছে বিধান জানতে চাইলেন। ফাদল মহিলাটির দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাদলের মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকলেন। মহিলা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান শক্তিশালী আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর হাজ্জ ফরয করেছেন। কিন্তু আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি সওয়ারীর উপর স্থির থাকতে পারেন না। কাজেই আমি কি তার পক্ষ হতে হাজ্জ করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। এটা বিদায় হাজ্জের সময়ের ঘটনা। [১৮০৯] আবূ রাযীন (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমির গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ, হাজ্জ এবং ‘উমরাহ আদায় করতে তিনি অক্ষম এবং সওয়ারীতে সফর করতেও অসমর্থ। তিনি বললেনঃ তোমার পিতার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ ও ‘উমরাহ আদায় করো। [১৮১০] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন : ‘লাব্বাইকা আন শুবরুমা’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : শুবরুমা কে? লোকটি বললো, আমার ভাই কিংবা আমার বন্ধু। তিনি বললেনঃ তুমি কি নিজের হাজ্জ করেছো? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ প্রথমে তোমার নিজের হাজ্জ আদায় করে নাও, তারপর শুবরুমার পক্ষ হতে হাজ্জ করো। [১৮১১]
তালবিয়া কিরূপ?
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তালবিয়া ছিলো : “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি‘মাতা লাকা ওয়াল-মুলকা লা শারীকা লাকা।” নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার তালবিয়ার মধ্যে বর্ধিত করতেন : হে রব! আমি উপস্থিত (তিনবার) এবং সৌভাগ্য ও করুণা আপনার হাতেই এবং আকর্ষণ আপনাতেই। আমাদের কাজের প্রতিদানও আপনার অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল। [১৮১২] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বাঁধলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী ইবনু ‘উমার বর্ণিত হাদীসের তালবিয়ার উল্লেখ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা তালবিয়াতে ‘যাল-মা‘আরিজ’ ইত্যাদি বাক্য বলতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনতেন, অথচ তিনি তাদেরকে কিছুই বলতেন না। [১৮১৩] সহীহ। সামনে এর দীর্ঘ হাদীস আসছে (১৯০৫)। খাল্লাদ ইবনুস সায়িব আল-আনসারী (রহঃ) হতে তার পিতার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ) এসে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সাহাবী এবং যারা আমার সাথে রয়েছে তাদেরকে আদেশ করি, তারা যেন তাদের ‘ইহলাল’ বা ‘তালবিয়া’ যে কোনো একটি উঁচু আওয়াযে পাঠ করে। [১৮১৪]
তালবিয়া পাঠ কখন বন্ধ করবে?
আল-ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করার পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়েছেন। [১৮১৫] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সকালে মিনা থেকে আরাফাহর দিকে রওয়ানা হই। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করেছেন এবং কেউ তাকবীর পাঠ করেছেন।
উমরাহ্কারী কখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে?
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘উমরাহ আদায়কারী ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করা পর্যন্ত ‘তালবিয়া’ পড়তে থাকবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল মালিক ইবনু সুলাইমান এবং হাম্মাম (রহঃ) ‘আত্বা (রহঃ) হতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে এটি ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [১৮১৭] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬৪৪৩), মিশকাত (২৬১৫), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫৮/৯২৮)।
আদব শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে মুহরিম কর্তৃক নিজ চাকরকে শাস্তি প্রদান
আসমা বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে রওয়ান হলাম। আমরা আল-আরজ নামক স্থানে পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাত্রাবিরতি করেন এবং আমরা ও যাত্রাবিরতি করি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশে বসলেন আর আমি আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর পাশে বসি। আবূ বকর (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মালপত্র একত্রে একটি উটের পিঠে আবূ বকর (রাঃ) এর এক ক্রীতদাসের নিকট ছিলো। আবূ বকর (রাঃ) তার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। এমন সময় সে হাযির হলো, কিন্তু তার সাথে উট ছিল না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উট কোথায়? সে বললো, গত রাতে তা আমি হারিয়ে ফেলেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, একটিমাত্র উট, সেটাও হারিয়ে ফেললে? এই বলে তিনি তাকে মারধর করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেনঃ তোমরা এই ইহরামধারী লোকটির দিকে দেখো, সে কি করছে? ইবনু আবূ রিযমা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে শুধু বললেন, তোমরা এ মুহরিম লোকটির দিকে দেখো, সে কি করছে”। [১৮১৮]
কেউ পরনের কাপড়ে ইহরাম বাঁধলে
সাফওয়ান ইবনু ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রহঃ) হতে তার পিতার এক ব্যক্তি আল-জি‘ইররানা নামক স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে উপস্থিত হলো। ঐ ব্যক্তির শরীরে খালূক কিংবা হলুদ রংয়ের কিছুটা চিহ্ন ছিলো এবং পরণে ছিলো জুব্বা। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমায় ‘উমরাহ কিভাবে করতে বলেন? এ সময় মহান আল্লাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। তাঁর থেকে ওয়াহী অবতীর্ণ হবার অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি বললেনঃ যে লোকটি ‘উমরাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলো সে কোথায়? তোমার শরীর থেকে খালূক অথবা হলুদ রংয়ের চিহ্ন ধুয়ে ফেলো, তোমার পরিহিত জুব্বাটি খুলে ফেলো এবং হাজ্জের মধ্যে যা কিছু করেছো ‘উমরাতেও তাই করো। [১৮১৯] সাফওয়ান ইবনু ইয়া‘লা (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছে : অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমার জুব্বাটি খুলে ফেলো। ফলে সে তার মাথার দিক থেকে জুব্বাটি খুলে ফেললো। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ, তবে তার এ কথাটি বাদে ‘তার মাথার দিক থেকে”। কেননা এ অংশটুকু মুনকার। সাফওয়ান ইবনু ইয়া‘লা ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি তার পিতা হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জুব্বাটি খুলে ফেলার নির্দেশ দেন এবং সুগন্ধির স্থান দুই বা তিনবার ধুয়ে ফেলতে বললেন। অতঃপর বর্ননাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [১৮২১] সাফওয়ান ইবনু ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রহঃ) তার পিতা এক ব্যক্তি আল-জি‘ইররানা নামক স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলো। সে ‘উমরাহ্র জন্য এমন অবস্থায় ইহরাম বেঁধেছে যে, তার গায়ে জুব্বা ছিলো এবং তার চুল ও দাঁড়ি ছিলো হলুদ রংয়ে রঞ্জিত। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। [১৮২২]
মুহরিম ব্যক্তি কেমন পোশাক পরিধান করবে?
সালিম (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলো, মুহরিম ব্যক্তি কি ধরনের কাপড় পরিহার করবে? তিনি বললেনঃ মুহরিম ব্যক্তি জামা, টুপি, পায়জামা, পাগড়ী, জাফরান অথবা ওয়ারাস মাখা কোন কাপড় ও মোজা পরবে না। তবে যার জুতা নেই সে মোজা পরতে পারবে। কিন্তু মোজা দু’টি সে এমনভাবে কেটে নিবে যাতে তা গোছাদ্বয়ের নীচে থাকে। [১৮২৩] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তাতে অতিরিক্ত রয়েছে : ‘মুহরিম নারী মুখাবরণ পরিধান করতে পারবে না, হাতমোজাও পরতে পারবে না। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাতিম ইবনু ইসমাঈল...বিভিন্ন সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে মাওকূফভাবে বর্ণিত আছে এবং মারফূভাবেও। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুহরিম নারী মুখাবরণ এবং হাতমোজা পরবে না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুহরিমা মুখাবরণ ও হাতমোজা পরবে না। [১৮২৬] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইহরাম অবস্হায় নারীদের হাতমোজা ও মুখমন্ডলে নিকাব ঝুলাতে এবং ‘ওয়ারস’ ঘাস ও জাফরান মিশ্রিত কাপড় পরতে নিষেধ করতে শুনেছেন। তবে এগুলো বাদে অন্য কাপড় পরতে পারবে, যদিও তা রেশমী, কারুকার্য খচিত পায়জামা বা জামা কিংবা মোজা হয়। [১৮২৭] ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা তিনি খুব শীত অনুভব করায় নাফি‘কে বললেনঃ আমাকে একখানা কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও। আমি বোরকা সদৃশ একটি জুব্বা তাঁর উপর বিছিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, তুমি এটা আমার উপর বিছালে? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম ব্যক্তিকে এটা পরতে নিষেধ করেছেন। [১৮২৮] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : মুহরিম ব্যক্তির লুঙ্গি না থাকলে সে পায়জামা পরবে, জুতা না থাকলে সে মোজা পরবে। [১৮২৯] আয়িশাহ বিনতু ত্বালহা (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেছেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (মাদীনাহ থেকে) মক্কায় সফর করেছি এবং ইহরামের সময় আমরা আমাদের পরিধেয় বস্ত্রে উত্তম সুগন্ধি মেখেছি। আমাদের কেউ ঘর্মাক্ত হলে তা মুখমন্ডল বেয়ে পড়তো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখতেন কিন্তু তা ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন না। [১৮৩০] সালিম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) মুহরিম নারীর জন্য মোজার উপরের অংশ কেটে ব্যবহারের অনুমতি দিতেন। পরে সাফিয়্যাহ বিনতু আবূ ‘উবাইদ (রহঃ) তাকে বর্ণনা করেন যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদেরকে মোজা পরার অনুমতি দিয়েছেন। এরপর তিনি তা কর্তন করা বাদ দেন। [১৮৩১]
মুহরিম ব্যক্তির অস্ত্র বহন প্রসঙ্গে
আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আল-বারাআ‘ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়াবাসীর সাথে সন্ধি করার সময় তাদের সাথে এই সন্ধি করলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীরা কেবল কোষবদ্ধ তলোয়ার নিয়ে (মক্কায়) প্রবেশ করতে পারবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘জুলবানুসসলাহ’ কি? তিনি বললেন, কোষবদ্ধ তলোয়ার। [১৮৩২]
ইহরাম অবস্হায় মহিলাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, অনেক কাফেলা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। তখন আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে ইহরাম অবস্হায় ছিলাম। তারা আমাদের সামনা-সামনি আসলে আমাদের নারীরা নিজ মুখাবরণ মাথা থেকে নামিয়ে নিজ মূখমন্ডল ঢেকে ফেলতেন। অতঃপর তারা অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখ খুলতাম। [১৮৩৩] দুর্বল : মিশকাত (২৬৯০), ইরওয়া (১০২৪), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৩৭)।
মুহরিম ব্যক্তিকে ছায়া প্রদান
উম্মুল হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে উপস্হিত ছিলাম। আমি উসামাহ ও বিলাল (রাঃ)-কে দেখলাম, তাদের একজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে আছেন এবং অপরজন ‘জামরাতুল আকাবায়’ কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তার কাপড় উঠিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রোদের তাপ থেকে ছায়া প্রদান করেছেন। [১৮৩৪]
মুহরিম ব্যক্তির শিংগা লাগানো
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম অবস্হায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। [১৮৩৫] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোনো রোগের কারণে মুহরিম অবস্হায় তাঁর মাথায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। [১৮৩৬] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাথার কারণে ইহরাম অবস্হায় তাঁর পায়ের উপরিভাগে রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। ইবনু আবূ আরুবাহ (রহঃ) ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে এটি মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। [১৮৩৭]
মুহরিম ব্যক্তির সুরমা লাগানো
নুবাইহ্ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) উমার ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মা‘মারের চোখের অসুখ হলো। তিনি আবান ইবনু ‘উসমানের (রাঃ) কাছে জানতে চেয়ে পাঠালেন, এখন কি করণীয়? সুফিয়ান বলেন, তিনি (আবান) ছিলেন আমীরুল হাজ্জ। তিনি বললেন, ‘সাবার’ নামক তিতা গাছের রস চোখে লাগাও। কেননা আমি ‘উসমান (রাঃ)-কে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। [১৮৩৮] নাফি’ (রহঃ) নুবাইহ্ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [১৮৩৯] আমি এটি সহীহ এবং যঈফে পাইনি।
মুহরিম ব্যক্তির গোসল করা
ইবরাহীম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনাইন (রহঃ) হতে তার পিতার আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস ও আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ)-এর মধ্যে আল-আবওয়া নামক স্হানে মতবিরোধ দেখা দিলে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি মাথা ধুতে পারবে। আর মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি মাথা ধুতে পারবে না। সুতরাং এ বিষয়ে জানার জন্য ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনাইনকে আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ)-এর কাছে প্রেরণ করেন। তিনি গিয়ে তাকে দুই খুঁটির মাঝখানে একখানা কাপড়ের আড়ালে গোসল করতে দেখলেন। তিনি বলেন, আমি তাকে সালাম দিলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনাইন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে আপনার কাছে জানতে পাঠিয়েছেন যে, মুহরিম অবস্হায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা কিভাবে ধুতেন? ইবনু হুনাইন বলেন, আবূ আইয়ূব (রাঃ) তার হাত কাপড়ের উপর রেখে তা নিচু করলেন, এমনকি আমি তার মাথা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি এক ব্যক্তিকে তার মাথায় পানি ঢালতে বললে সে পানি ঢালতে থাকলো। তখন তিনি মাথার চুলে দুই হাত দিয়ে একবার সামনে আনলেন, আবার পিছনে নিলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। [১৮৪০]
মুহরিম বিয়ে করতে পারবে কি?
নুবাইহ্ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) উমার ইবনু উবাইদুল্লাহ এক ব্যক্তিকে আবান ইবনু ‘উসমানের নিকট প্রেরণ করলেন এটা জিজ্ঞেস করার জন্য যে, আমি (আমার পুত্র) ত্বালহা ইবনু ‘উমারকে শাইবাহ ইবনু জুবাইরের মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেছি। তখন আবান ছিলেন আমীরুল হাজ্জ এবং তারা উভয়েই মুহরিম ছিলেন। আমরা আশা করি আপনি এ অনুষ্ঠানে উপস্হিত থাকবেন। আবান ‘উমারের এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বললেন, আমি আমার পিতা ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্হায় বিয়ে করতে পারবে না এবং কাউকে বিয়ে করাতেও পারবে না। [১৮৪১] উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এ বর্ণনায় আরো রয়েছে : ‘বিবাহের প্রস্তাবও দিতে পারবে না’। [১৮৪২] মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ‘সারিফ’ নামক স্হানে বিয়ে করেছেন। তখন আমর উভয়ে হালাল অবস্হায় ছিলাম। [১৮৪৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্হায় মায়মূনাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করেছেন। [১৮৪৪] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, ইহরাম অবস্হায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মায়মূনাহ (রাঃ)-এর বিয়ে হওয়ার বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সন্দেহে পড়েছেন। [১৮৪৫]
মুহরিম ব্যক্তি যেসব প্রাণী হত্যা করতে পারবে
সালিম (রাঃ) হতে তার পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, মুহরিম ব্যক্তি কোন কোন প্রাণী হত্যা করতে পারবে। তিনি বললেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করতে দোষ নেই, চাই ইহরাম অবস্হায় বা ইহরাম ব্যতিরেকে অথবা হেরেম এলাকায় বা হেরেমের বাইরে হোক। তা হল : বিছা, কাক, ইদুঁর, চিল ও পাগলা কুকুর। [১৮৪৬] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাপ, বিছা, চিল, ইঁদুর ও পাগলা কুকুর- এ পাঁচ প্রকারের প্রাণী হারাম এলাকায় হত্যা করা জায়িয। [১৮৪৭] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, মুহরিম ব্যক্তি কোন কোন প্রাণী হত্যা করতে পারবে। তিনি বললেনঃ সাপ, বিছা, ইঁদুর, খ্যাপা কুকুর, চিল এবং হিংস্র জন্তু। আর কাক তাড়িয়ে দিবে, হত্যা করবে না। [১৮৪৮] দুর্বল, এবং তার কথা “কাক তাড়িয়ে দিবে, হত্যা করবে না” এ অংশটুকু মুনকার। ইরওয়া (১০৩৬), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৬০), তার বর্ণনায় “কাক তাড়িয়ে দিবে, হত্যা করবে না” কথাটুকু নেই।
মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকারকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া
ইসহাক্ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) হতে তার পিতার আল-হারিস (রাঃ) ছিলেন তায়িফে ‘উসমানের (রাঃ) প্রতিনিধি গভর্ণর। হারিস ‘উসমানের (রাঃ) জন্যে খাবার তৈরী করালেন, তন্মধ্যে হুযাল ও ইয়া‘কীব পাখির গোশত এবং বন্য গাধার গোশ্ত ছিলো। অতঃপর তিনি ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে ডেকে আনতে লোক পাঠান। লোকটি যখন তার (আলীর) কাছে এলো তখন তিনি (আলী) উটের জন্য গাছ থেকে পাতা জড়ো করছিলেন। তিনি হাত থেকে পাতা ঝাড়তে ঝাড়তে দাওয়াতে আসলেন। তারা তাকে বললেন, খাওয়া শুরু করুন। তিনি বললেন, এটা এমন ব্যক্তিদেরকে খেতে দিন যারা ইহরামমুক্ত। কেননা আমরা মুহরিম। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) উপস্থিত আশজা’ গোত্রীয় লোকদের শপথ দিয়ে বলেন, তোমরা কি জানো না, এক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জংলী গাধার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন, তখন তিনি মুহরিম ছিলেন এবং তিনি তা খেতে চাননি? তারা বললো, হ্যাঁ। [১৮৪৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হে যায়িদ ইবনু আরক্বাম! তুমি কি জানো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি শিকারী প্রাণীর এক টুকরা গোশত হাদিয়া দেয়া হলে তিনি সেটা গ্রহণ না করে এই বলে ফেরত পাঠালেন যে, আমরা মুহরিম? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। [১৮৫০] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : স্থলভাগের শিকার করা পশুর গোশত তোমাদের জন্য খাওয়া হালাল ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তোমরা (ইহরাম অবস্থায়) তা শিকার করে না থাকো কিংবা শুধু তোমাদের জন্যই কেউ শিকার না করে থাকে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে পরস্পর বিরোধী হাদীস বর্ণিত হলে সাহাবীরা যেটা গ্রহণ করেছেন সেটাই প্রাধান্য পাবে। [১৮৫১] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৩৫২৪), মিশকাত (২৭০০), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৪৭/৮৫৪)। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর সঙ্গী ছিলেন। মক্কার কোনো রাস্তা অতিক্রমের সময় তিনি তার কিছু মুহরিম সাথীসহ পেছনে রয়ে যান। তিনি ছিলেন ইহরাম মুক্ত। অতঃপর তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে নিজের ঘোড়ার পিঠে চড়লেন। তাঁর চাবুকটি নীচে পড়ে গেলে তিনি তার সঙ্গীদের তা তুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে তারা তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তার তীরটি তুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে তাও দিতে অস্বীকার করেন। অবশেষে তিনি নিজেই তা তুলে নিলেন এবং গাধাটিকে আক্রমণ করে হত্যা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিছু সাহাবী তার গোশত খেলেন, আর কিছু সাহাবী খেতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর যখন তারা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মিলিত হলেন, তখন তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এটা তো খাদ্য, যা মহান আল্লাহ তোমাদেরকে খাইয়েছেন। [১৮৫২]
মুহরিম ব্যক্তির পঙ্গপাল শিকার করা প্রসঙ্গে
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পঙ্গপাল হলো সামুদ্রিক শিকার। [১৮৫৩] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (২৬৪৭), মিশকাত (২৭০১), ইরওয়া (১০৩১)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ফড়িংয়ের একটি বিরাট দলের মধ্যে পৌঁছলে জনৈক মুহরিম ব্যক্তি তার চাবুক দিয়ে সেগুলো মারতে লাগলো। কেউ বললো, মুহরিমের জন্য এরূপ করা উচিত নয়। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা অবহিত করালে তিনি বলেনঃ এটা হচ্ছে সামুদ্রিক শিকার। [১৮৫৪] খুবই দুর্বল : ইরওয়া (১০৩১)। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি ইমাম আবূ দাউদকে বলতে শুনেছি, আবুল মুহাযযিম হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। তার বর্ণিত হাদীসদ্বয় সন্দেহযুক্ত। কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ফড়িং সামুদ্রিক শিকারের অন্তর্ভুক্ত। [১৮৫৫]
ফিদয়া (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে
কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার সময় তার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাকে বললেনঃ তোমর মাথার উকুন তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মাথা মুণ্ডন করে ফেলো, অতঃপর একটি বকরী কুরবানী করো অথবা তিন দিন সাওম পালন করো অথবা তিন সা’ খেজুর ছয়জন মিসকীনকে বিতরণ করো। [১৮৫৬] কা‘ব ইবনু ‘উজারাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি চাইলে একটি কুরবানী করো অথবা তিন দিন সওম রাখো অথবা তিন সা‘ খেজুর ছয়জন মিসকিনকে দান করো। [১৮৫৭] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার সময় তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন : তোমার সাথে কুরবানীর পশু আছে কি? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তিন দিন সওম পালন করো অথবা তিন সা‘ খেজুর ছয়জন মিসকীনকে বিতরণ করো, যেন প্রত্যেক দু’জন মিসকীন এক সা‘ করে পায়। [১৮৫৮] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) তার মাথায় (উকুনের উপদ্রবের কারণে) কষ্ট হওয়ায় তিনি মাথা মুড়ে ফেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি গরু কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। [১৮৫৯] দুর্বল, এবং তার ‘গরু’ কথাটি মুনকার। কা‘ব ইবনু ‘উজারাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হুদায়বিয়ার বছরে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলাম। আমার মাথায় উকুনের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো। এমনকি আমি আমার দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে আশংকায় পড়লাম। এ সময় মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন : “তবে যে ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার কারণে অথবা মাথায় কোনো প্রকার কষ্টদায়ক ব্যাপার থাকার কারণে মাথা মুড়িয়ে নেয়, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার সওম পালন বা ফিদ্য়া প্রদান বা কুরবানী করা বিধেয়” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ১৯৬)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে বললেনঃ মাথা মুন্ডন করো এবং তিন দিন সওম পালন করো অথবা এক ফারাক কিশমিশ ছয়জন মিসকীনের মধ্যে বিতরণ করো অথবা একটি বকরী কুরবানী করো। কা‘ব বলেন, সুতরাং আমি আমার মাথা মুণ্ডন করি এবং কুরবানী করি। [১৮৬০] হাসান। কিন্তু কিশিমিশের উল্লেখ মুনকার। মাহফূয হলো : খেজুর। কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে রয়েছে : তুমি এসবের কোন একটি করলেই তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।
যদি পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হয়
‘ইকরিমাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজ ইবনু ‘আমর আল-আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কারো চলার পথে পা ভেঙ্গে যায় বা খোঁড়া হয়ে যায় তবে সে ইহরাম খুলতে পারবে। অবশ্য পরবর্তী বছরে তাকে হাজ্জ করতে হবে। ‘ইকরিমাহ (রহঃ) বলেন, পরে এ বিষয়ে আমি ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তারা উভয়ে বললেন, (হাজ্জাজ) সত্যই বলেছেন। [১৮৬২] আল-হাজ্জাজ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কারো পা ভেঙ্গে গেলে অথবা খোঁড়া হয়ে গেলে অথবা ব্যাধিগ্রস্ত হলে..; অতঃপর পূর্ববর্তী হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত। [১৮৬৩] আবূ মায়মূন ইবনু মিহরান (রহঃ) তিনি বলেন, যে বছর সিরিয়াবাসীরা ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে মক্কায় অবরোধ করেছিলো আমি সেই বছর ‘উমারাহ করতে বের হই। আমার কওমের কতিপয় লোক আমার সাথে তাদের কুরবানীর পশুও প্রেরণ করলো। আমি সিরিয়াবাসীদের নিকট পৌঁছলে তারা আমাদেরকে হেরেমের এলাকাতে যেতে নিষেধ করলো। সুতরাং আমি ঐ স্থানেই সাথের পশুগুলো কুরবানী করি এবং ইহরাম খুলে ফিরে আসি। পরের বছর আমি আমার ‘উমরাহ পূরণের জন্য রওয়ানা হই এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে সিরিয়াবাসীরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কুরবানীর পরিবর্তে কুরবানী করো। কেননা হুদাইবিয়ার বছর লোকেরা যে কুরবানী করেছিলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গীদেরকে তার পরিবর্তে ‘উমরাতুল কাযার সময় কুরবানী করতে আদেশ করেছিলেন। [১৮৬৪]
মাক্কাহ্য় প্রবেশ করা
নাফি‘ (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) মক্কায় এসে যি-তুয়া নামক স্থানে ভোর পর্যন্ত রাত যাপন করতেন এবং গোসল করে পরে দিনের বেলা মক্কায় প্রবেশ করতেন। আর তিনি বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করেছেন। [১৮৬৫] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সানিয়্যাতুর উলইয়া দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং সানিয়্যাতুস সুফলা দিয়ে মাক্কাহ হতে বের হতেন। [১৮৬৬] সহীহ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফর আল-বারমাকীর বর্ণনায় আছে : এ দুটী স্থান মক্কার দু’টি উচুঁ টিলা। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল-হুলাইফার বৃক্ষের পথ দিয়ে মাক্কাহ হতে বের হতেন এবং যুল-হুলাইফার মু‘আররাসের (মাসজিদের) পথে প্রবেশ করতেন। [১৮৬৭] ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের বছর ‘কাদা’ নামক স্হান দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন এবং ‘উমরাহ করার সময় ‘কুদা’ নামক স্হানের পথে প্রবেশ করেছেন। আর ‘উরওয়াহ (রহঃ) এ দুটি স্হান দিয়েই মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং অধিকাংশ সময় কুদা নামক স্থান দিয়েই প্রবেশ করতেন, যা তার বাড়ির অধিক নিকটবর্তী ছিল। [১৮৬৮] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করার সময় এর উচ্চভূমি দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং নিম্নভূমি দিয়ে বের হতেন। [১৮৬৯]
বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে দু’হাত তোলা
আল–মুহাজির আল মাক্কী (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এমন ব্যাক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো, যে বায়তুল্লাহ দেখলে দুই হাত উত্তোলন করে। তিনি বলেন, ইয়াহুদী ছাড়া অন্য কাউকে আমি এরূপ করতে দেখিনি। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হাজ্জ করেছি, কিন্তু তিনি এরূপ করেননি। [১৮৭০] দুর্বল : মিশকাত (২৫৭৪ ), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫০/৮৬৩), যঈফ সুনান নাসায়ী (১৮৫/২৮৯৫)। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) মাক্কাহ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। [১৮৭১] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাদীনাহ থেকে) আগমন করে মক্কায় প্রবেশ করলেন, এরপর ‘হাজরে আসওয়াদের’ নিকটবর্তী হয়ে তাতে চুমু খেলেন এবং বায়তুল্লাহ তওয়াফ করলেন। অতঃপর সাফা পাহাড়ের চুড়ায় উঠলেন এবং সেখান থেকে বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলেই তিনি দুই হাত উত্তলোন করে যতক্ষন ইচ্ছে মহান আল্লাহর যিকির করলেন এবং দু’আ করলেন। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, এ সময় সিঁড়ির পাথর তার নীচে ছিলো। হাশিম (রহঃ) বলেন, সেখানে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ইচ্ছেমত দু’আ করেন। [১৮৭২]
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
উমার (রাঃ) তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হয়ে তাতে চুমা দিয়ে বললেন, আমি জানি, তুমি একটি পাথর মাত্র। তোমার মধ্যে উপকার বা ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমি কখন তোমাকে চুমা দিতাম না। [১৮৭৩]
রুকুনগুলোকে চুম্বন করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দু’টি রুকনে ইয়ামানী ছাড়া বায়তুল্লাহর অন্য কিছুকে স্পর্শ করতে দেখিনি। [১৮৭৪] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর উক্তির উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘হাতীমের’ কিছু অংশ বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। তাই ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমার বিশ্বাস, এ কথা ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে শুনেছেন। সুতরাং আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজরে আসওয়াদের নিকটস্হ দু’টি (শামী) রুকনে চুমা খাওয়া বর্জন করেছিলেন এজন্য যে, তা ঘরের মুল ভিটির অংশ ছিলো না। আর লোকেরাও এ কারণেই হাতীমের পিছন দিয়ে তাওয়াফ করেন। [১৮৭৫] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক তাওয়াফে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের চুমা খাওয়া পরিত্যাগ করেননি। তিনি (নাফি‘) বলেন, তাই ইবনু ‘উমার (রাঃ) এরূপ করতেন। [১৮৭৬]
ফার্য তাওয়াফের বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উটে সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন এবং লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন। [১৮৭৭] সাফিয়্যাহ বিনতু শাইবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিরাপদ হওয়ার পর তাঁর উটে সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং তাঁর হাতের লাঠির সাহা্য্যে (ইশারায়) হাজরে আসওয়াদে চুমা দিলেন। সাফিয়্যাহ বলেন, আমি এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখেছিলাম। [১৮৭৮] আবুত তুফাইল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার সওয়ারীতে চড়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে দেখেছি। তিনি তাঁর লাঠির সাহায্যে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর তাতে চুমু দিয়েছেন। মুহাম্মদ ইবনু রাফি‘র বর্ণনায় রয়েছে : অতঃপর তিনি সাফা ও মারওয়ায় যান এবং স্বীয় বাহনে আরোহীত অবস্হায়ই সাতবার তাওয়াফ (সাঈ) করেন। [১৮৭৯] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিদায় হাজ্জে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের বাহনে চড়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করেন, যাতে লোকেরা তাঁকে দেখে, তাঁর কাজের প্রতি দৃষ্টি দেয় এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ে জিজ্ঞেস করে নেয়। কারন লোকেরা চতুর্দিক থেকে তাঁকে ঘিরে রেখেছিলো। [১৮৮০] ইবনু ‘আববাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্হ অবস্হায় মক্কায় আসেন। এ সময় তিনি তাঁর সাওয়ারীতে চড়ে তাওয়াফ করেন। তিনি রুকনের নিকট আসলে লাঠির সাহায্যে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতেন। তাওয়াফ শেষ করার পর তিনি উটকে বসিয়ে দেন এবং দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করেন। [১৮৮১] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আমার অসুস্হতার কথা জানালে তিনি বললেন, তুমি সওয়ারীতে চড়ে লোকদের পেছনে থেকে তাওয়াফ করবে। তিনি বলেন, আমি এরূপেই তাওয়াফ করি। আর যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহর এক পাশে সলাত আদায় করছিলেন এবং তিনি “ওয়াত-তূরি ওয়া কিতাবিম মাসতূর” সুরাটি পাঠ করছিলেন। [১৮৮২]
তাওয়াফের সময় কাঁধের উপর চাদর রাখা
ইয়া‘লা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবুজ রঙের একখানা চাদর বগলের নীচ থেকে কাঁধের উপর রাখা অবস্হায় (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করেছেন। [১৮৮৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগন আল-জিই‘ররানা নামক স্হান হতে ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধেন এবং তাঁরা বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সময় রমল করেন (দ্রুতপদে হাঁটেন)। এ সময় তাঁরা নিজেদের চাদর বগলের নিচে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখে দেন। [১৮৮৪]
‘রমল’ করার পদ্ধতি
আবুত তুফাইল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের ধারনা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সময় দ্রুতপদে হেটেঁছেন এবং এরুপ করা সুন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং মিথ্যাও বলেছে। আমি বললাম, তারা কি সত্যি বলেছে এবং কি মিথ্যা বলেছে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘রমল’ করেছেন, এ কথা সত্য কিন্তু একে সুন্নাত বলা মিথ্যা। হুদায়বিয়ার সময় কুরাইশগণ মুসলিমদেরকে তিরস্কারস্বরূপ বলেছিলো যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাথীদের এভাবেই থাকতে দাও। এমনকি তারা উট ও বকরীর মত মৃত্যুবরন করে নিঃশেষ হবে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সন্ধি চুক্তি করলো, মুসলিমরা আগামি বছর এসে মক্কায় তিন দিন অবস্হান করবে। সুতরাং পরবর্তী বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন। মুশরিকরা ‘কুয়াইকিয়ান পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলো ( মুসলিমদের অবস্হান লক্ষ্য করতে)। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন যে, তাওয়াফের মধ্যে তিনবার রমল করো। সুতরাং তারা তাই করলেন। এরূপ করা মুলতঃ সুন্নাত নয়। আমি আবার বললাম, আপনার সম্প্রদায়ের ধারনা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উটে চড়েই সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) করেছেন। আর এরূপ নাকি সুন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্যও বলেছে এবং মিথ্যাও বলেছে। আমি বললাম, তারা কি সত্যি বলেছে এবং কি মিথ্যা বলেছে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উটে সওয়ারী হয়ে সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) করেছেন, তাদের এ কথা সত্য। কিন্তু এটাকে সুন্নাত বলা মিথ্যা। প্রকৃত ব্যাপার হলো, তখন লোকদের অবস্হা এরুপ ছিলো যে, তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে সরানো যেতনা এবং তিনিও তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারতেন না। সুতরাং তিনি উটে আরোহী অবস্হায় তাওয়াফ (সাঈ) করেছেন। যাতে প্রতিটি লোক তাঁর কথা শুনতে পায়, তাঁকে সরাসরি দেখতে পায় এবং তাদের হাত তাঁর শরীরে না লাগে। [১৮৮৫] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অবস্হায় মক্কায় এলেন যে, ইয়াসরিবের ভাইরাস জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিলো। মুশরিকরা বললো, তোমাদের কাছে এমন একদল লোক আসছে যাদেরকে ভাইরাস জ্বর দুর্বল করেছে। কাজেই এখন তারা (মুসলিমরা) বিপদগ্রস্হ। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুশরিকদের কথাগুলা জানিয়ে দিলেন। তাই তিনি মুসলিমদেরকে তাওয়াফের সময় তিন চক্করে রমল করতে এবং উভয় রুকন (ইয়ামানী ও হাতীম )-এর মাঝে স্বাভাবিক গতিতে চলার নির্দেশ দিলেন। মুশরিকরা যখন দেখলো যে, মুসলিমগণ ‘রমল’ করছেন তখন তারা বলাবলি করলো, এরাই তো তারা যাদের সম্বন্ধে তোমরা মন্তব্য করেছিলে যে, ইয়াসরিবের ভাইরাস জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে ফেলেছে! অথচ এরাতো আমাদের চাইতেও শক্তিশালী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি তাদেরকে (মুসলিমদের) সমস্ত চক্করে ‘রমল’ করতে নির্দেশ দেননি। [১৮৮৬] যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রমল করা এবং কাঁধ খোলা রাখা এখন তেমন গুরুত্ববহ নয়। কেননা মহান আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী ও শক্তিশালী করেছেন এবং কুফর ও কাফির দুটোই নির্মূল করেছেন। তথাপি আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময়ে যে কাজ করেছি তা কখনো বর্জন করবো না। [১৮৮৭] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মূলতঃ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ এবং জামরায় কংকর নিক্ষেপ ইত্যাদি প্রবর্তিত হয়েছে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। [১৮৮৮] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (২০৫৬), মিশকাত (২৬২৪), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫৪/৯১০)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় বগলের নীচ দিয়ে চাদর নিয়ে কাঁধের উপর ছেড়ে দিয়েছেন, হাজরে আসওয়াদে চুমু খেয়েছেন, তাকবীর বলেছেন অতঃপর তিন চক্করে রমল করেছেন। তাঁরা যখন রুকনে ইয়ামানীর কাছে পৌঁছতেন এবং কুরাইশদের চোখের আড়াল হতেন, তখন স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতেন। আর যখন তাদের সম্মুখে এসে যেতেন তখন আবার রমল করতেন। তাঁদেরকে দেখে কুরাইশরা বলতো, ওরা যেন হরিণ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ফলে রমল করা সুন্নাতে পরিণত হয়। [১৮৮৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগন আল-জিঈররানা নামক স্থান হতে ইহরাম বেঁধে ‘উমরাহ করেছেন এবং বায়তুল্লাহ্র তিন চক্করে রমল এবং চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটেছেন। [১৮৯০] নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজরে আসওয়াদ হতে আরম্ভ করে পুনরায় হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করতেন এবং তিনি উল্লেখ করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। [১৮৯১]
তাওয়াফকালে দু‘আ পাঠ করা
আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুই রুকনের মাঝখানে বলতে শুনেছি : “হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন, আখিরাতের কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের ‘আযাব হতে রক্ষা করুন” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ২০১)। [১৮৯২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আসার পর হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র জন্য সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করেছিলেন, তার প্রথম তিন চক্করে রমল করেছেন এবং বাকী চার চক্করে ধীরগতিতে চলেছেন, তারপর দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। [১৮৯৩]
‘আসর সলাতের পর তাওয়াফ করা
জুবাইর ইবনু মুত্ব‘ইম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাউকে রাত বা দিনের যে কোন সময়ে এই ঘরের তাওয়াফ করতে ও সলাত আদায় করতে বাধা দিবে না। আল-ফাদলের বর্ণনায় রয়েছে : হে ‘আবদে মানাফের বংশধর! তোমরা কাউকে বাধা দিবে না। [১৮৯৪]
কিরান হাজ্জকারীর তাওয়াফের বর্ণনা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারই তাওয়াফ করেছেন। এটাই ছিল তাঁর প্রথমবারের তাওয়াফ। [১৮৯৫] ‘আয়িশাহ (রাঃ) (বিদায় হাজ্জের সময়) রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাহাবীগণ জামরায় কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তাওয়াফ করেননি। [১৮৯৬] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে তোমার তাওয়াফ, তোমার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র জন্য যথেষ্ট। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেনঃ সুফিয়ান কখনো ‘আত্বা (রহঃ) হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে, আবার কখনো ‘আত্বা (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে এরূপ বলেছেন। [১৮৯৭]
‘মুলতাযাম’ (কা‘বার দরজা হতে হাতীম পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানকে জড়িয়ে ধরা)
আবদুর রহমান ইবনু সাফওয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কাহ বিজয় করলেন তখন আমি (মনে মনে) বললাম, আমি আমার পোশাক পরবো, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কাজ করেন তাও দেখবো। আমার ঘরও ছিলো পথের পাশেই। সুতরাং আমি চলে গেলাম এবং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণ কা‘বা ঘরের ভেতর থেকে বাইরে এসে, তার দরজা থেকে হাতীম পর্যন্ত চুমু খেয়েছেন এবং তাঁরা তাঁদের গাল ও চোয়াল রেখেছেন কা’বা ঘরে উপর। এসময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মাঝখানে ছিলেন। [১৮৯৮] ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর সাথে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করি। আমরা যখন কা‘বার পিছনে যাই তখন আমি বলি, আপনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছেন না কেন? তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর তিনি সম্মুখে গিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলেন, রুকনে ইয়ামানী এবং দরজার মাঝখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন, তার বুক, চেহারা, উভয় বাহু এবং হাতের তালু স্থাপন করে তা বিছিয়ে রাখলেন। এই বলে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দেখালেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। [১৮৯৯] মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর (দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার পর) হাত ধরে নিয়ে যেতেন এবং বায়তুল্লাহর দরজা সংলগ্ন রুকনের সাথে মিলিত তৃতীয় অংশে দাঁড় করিয়ে দিতেন। অতঃপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ স্থানে সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সেখানে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। [১৯০০] দুর্বল : যঈফ সুনান নাসায়ী (১৮৮/২৯১৮)।
সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) করা
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে আমার ছেলে বেলায় জিজ্ঞেস করলাম, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনমূহের অন্তর্ভুক্ত।” আমি মনে করি, কেউ এই দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) না করলে তার কোন গুনাহ হবে না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, ‘কখনো নয়, তুমি এ আয়াতের যেরূপ ব্যাখ্যা করলে তা ঠিক হলে আয়াতটি হতো এরূপ : “তার কোন গুনাহ নেই যদি সে এই দুই পাহাড়ের মাঝে তাওয়াফ না করে।” মূলতঃ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আনসারদের সম্পর্কে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তারা ‘মানাত’ মূর্তির উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধতো। আর এ মানাত মূর্তি ‘কুদাইদ’ পাহাড় বরাবরে অবস্থিত ছিল। সুতরাং তারা সাফা-মাওরয়ার মাঝে তাওয়াফ (সাঈ) করাকে আপত্তিকর ভাবতো। ইসলাম গ্রহণের পর তারা এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলো। তখন মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন : “নিশ্চই সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ১৫৮)। [১৯০১] আবদুল্লাহ ইবন আবূ ‘আওফা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাহ করতে এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। কাফিরদের সম্ভাব্য আক্রমন থেকে তাঁকে রক্ষার্তে এ সময় তাঁর সাথে তাঁর রক্ষীবাহিনী সাহাবীরা ছিলেন। কেউ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা‘বার ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন কিনা? তিনি বললেন, না। [১৯০২] ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা হতে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস শুনেছি। এতে আরো রয়েছে : অতঃপর তিনি সাফা ও মারওয়ায় এসে এর মাঝে সাতবার সাঈ করেন, অতঃপর মাথা মুণ্ডন করেন। [১৯০৩] সহীহ। তবে মুণ্ডন কথাটি বাদে। কাসীর উবনু জুমহান (রহঃ) এক ব্যাক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি সাফা-মারওয়ার মাঝে স্বাভাবিক গতিতে চলছেন, অথচ অন্য লোকেরা দৌড়াচ্ছে। তিনি বললেন, যদি আমি হাঁটি তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এখানে হাঁটতে দেখেছি। আর যদি আমি দৌড়াই (সাঈ করি), তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এখানে দৌড়াতেও দেখেছি। আর এখন তো আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। [১৯০৪]
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিদায় হাজ্জের বিবরণ
জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, একদা আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট যাই। আমরা তার নিকটবর্তী হলে তিনি (অন্ধ হওয়ার কারণে) আগন্তুকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন এবং এক পর্যায়ে আমার কাছাকাছি এলে আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী ইবনু হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাঃ)। আমার কথা শুনে তিনি আমার মাথার দিকে হাত বাড়ান, আমার জামার উপরের ও নিচের বোতাম খুলে তার হাতের তালু আমার বুকের উপর রাখলেন। তখন আমি ছিলাম যুবক। তিনি বললেন, মারহাবা! মোবারক হোক তোমার আগমণ, স্বাগতম হে ভ্রাতুষ্পুত্র! যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারো। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি ছিলেন অন্ধ। সলাতের সময় উপস্থিত হলে তিনি কাপড় পেঁচিয়ে নিজের জায়নামাযের উপর সলাতে দাঁড়ালেন। কিন্তু তার কাপড় ছোট হওয়ায় তিনি যখনই তা কাঁধের উপর রাখছিলেন তখনই এর দু’ পাশ তার দিকে ফিরে আসছিলো। তিনি আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন, অথচ তার (বড়) চাদরটি আলনার উপর রক্ষিত ছিলো। আমি বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাজ্জ সম্বন্ধে বলুন। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে নয় সংখ্যাটির কথা বললেন, অতঃপর বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় বছর মদিনায় ছিলেন, এ সময় একবারও হাজ্জ করেননি। অতঃপর দশম বছরে লোকদের মধ্যে ঘোষণা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ করবেন। ফলে অসংখ্য লোক মাদীনাহয় আসলো এবং প্রত্যেকেই চাইলো যে, তারা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করবে এবং তিনি যেসব কাজ করেন তারাও তাই করবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রওয়ানা হলে আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হই। ‘যুল-হুলাইফা’ পর্যন্ত পৌঁছলে আসমা’ বিনতু উমাইস (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাক্রকে প্রসব করেন। কাজেই তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে লোক মারফত জানতে চাইলেন, এখন আমার কি করণীয়? তিনি বললেনঃ তুমি গোসল করে (লজ্জাস্থানে) কাপড় বেঁধে ইহরাম বেঁধে নাও। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে সলাত আদায় করেন, অতঃপর উষ্ট্রী ‘কাসওয়া’র উপর চড়েন। উষ্ট্রীটি যখন আল-বায়দা’ উপত্যকায় দাঁড়ালো তখন জাবির (রাঃ) বলেন, তাঁর সম্মুখে আমার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দেখতে পেলাম শুধু আরোহী ও পদাতিক জনসমুদ্র, তাঁর ডানে, বামে এবং পিছনে সর্বত্রই একই অবস্থা। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে ছিলেন এবং তখন তাঁর ওপর আহকাম সম্বলিত কুরআনের আয়াত নাযিল হচ্ছিল আর তিনিই এর ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি যা কিছু করতেন আমরাও অনুরূপ করতাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে ইহরাম বেঁধে উচ্চস্বরে পড়লেন : “লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক। লা শারীকা লাকা লাব্বায়িক ইন্নাল- হামদা ওয়ান-নি‘মাতা লাকা ওয়াল-মুলক লা শারীকা লাকা”। তিনি যেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়েছেন, লোকেরাও সেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়লো। তাদের কোনো কাজকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকৃতি দেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রাখলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা শুধু হাজ্জের নিয়্যাত করেছিলাম। ‘উমরা’ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। পরে আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহয় এসে পৌঁছলে তিনি রুকন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলেন এবং তিনবার রমল এবং চারবার স্বাভবিক গতিতে হেঁটে (তাওয়াফ) সম্পন্ন করলেন। অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হয়ে পড়লেন : “এবং ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে তোমরা সলাতের স্থানরূপে নির্ধারণ করো” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ১২৫) এবং তিনি মাকামে ইবরাহীম ও বায়তুল্লাহকে সামনে রাখলেন। জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ বলেন, আমার পিতা বলেছেন, ইবনু নুফাইল এবং ‘উসমান বলেছেন, আমার মনে হয়, এ কথাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। সুলাইমান বলেন, আমার ধারণা, জাবির বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই রাক‘আত সলাত ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ এবং ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ দিয়ে পড়েছেন। আবার তিনি বায়তুল্লাহর নিকট গিয়ে রুকনে (হাজরে আসওয়াদ) চুমু খেলেন। অতঃপর (বায়তুল্লাহর) দরজা দিয়ে বেরিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে গেলেন। তিনি সা‘ফার কাছে গিয়ে পাঠ করলেন : “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ১৫৯)। সুতরাং আমরা সেখান থেকে সাঈ শুরু করবো আল্লাহ যেখান থেকে শুরু করেছেন (অর্থাৎ প্রথমে সাফা হতে এবং পরে মারওয়া হতে) এ বলে তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন। সেখান থেকে বায়তুল্লাহ দেখে তাকবীর বললেন এবং তাঁর তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে বললেনঃ “তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব তাঁর। তিনিই জীবন-মৃত্যু দানকারী। তিনিই সকল প্রশংসার প্রকৃত হকদার এবং তিনি সবকিছু করতে সক্ষম ও ক্ষমতাবান। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একাই তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করে দেখিয়েছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (বিদ্রোহী) বাহিনীকে বিতাড়িত ও পরাভূত করেছেন”। তিনি এর মধ্যে অনুরূপ তিনবার দু‘আ করলেন। অতঃপর সেখান থেকে নেমে মারওয়ায় গেলেন, তাঁর পদদ্বয় নিম্নভূমি স্পর্শ করল, তিনি সমতল ভূমিতে রমল করলেন। সমতল ভূমি অতিক্রম করে মারওয়া পাহাড়ের নিকটে এসে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেন। তারপর মারওয়া পাহাড়ে উঠে তাই করলেন যেরূপ করেছিলেন সাফা পাহাড়ে। পরে মারওয়ার সর্বশেষ তাওয়াফ সম্পন্ন করে বললেনঃ আমি যা পরে জেনেছি তা যদি আগে জানতাম তাহলে কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসতাম না এবং (হাজ্জের) ইহরামকে ‘উমরাহ্য় পরিণত করতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই, তারা যেন ‘উমরাহ করার পর ইহরাম খুলে ফেলে এবং (তাওয়াফ, সাঈ ইত্যাদিকে) ‘উমরাহ্র কাজ হিসেবে করে নেয়। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলো তারা ব্যতীত সকল লোক তাদের ইহরাম খুলে মাথার চুল ছেঁটে ফেললো। এ সময় সুরাক্বাহ ইবনু জ‘শুম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ কি শুধু আমাদের এ বছরের জন্য প্রযোজ্য, নাকি সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে বললেনঃ ‘উমরাহ হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে, এভাবে তিনি দু’বার বললেন, সর্বকালের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কুরবানীর পশু নিয়ে ইয়ামান থেকে এলেন। তিনি দেখলেন, ফাত্বিমাহ (রাঃ) ইহরাম খুলে রঙ্গিন পোশাক পরে সুরমা লাগিয়েছেন। ‘আলী (রাঃ) এটা অপছন্দ করে বললেন, তোমাকে এরূপ করতে কে বলেছে? তিনি বললেন, আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় ‘আলী (রাঃ) ইরাকে একথা বলেছেন, আমি ফাত্বিমাহ্র কৃতকর্মের জন্য রাগ করে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। আমি তাঁকে জানালাম, আমি ফাত্বিমাহর এ কাজ অপছন্দ করেছি এবং সে বলেছে, আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে আদেশ করেছেন। তিনি আমার কথা শুনে বললেনঃ সে সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। (হে ‘আলী!) তুমি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্র ইহরাম বাঁধার সময় কি বলেছিলে? তিনি বলেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন, আমার ইহরামও অনুরূপ। তিনি বললেনঃ আমার সাথে কুরবানীর পশু আছে। সুতরাং (আমার মত) তুমিও ইহরাম খুলে হালাল হতে পারবে না। অপরদিকে ‘আলী (রাঃ) এর ইয়ামান থেকে নিয়ে আসা কুরবানীর পশু এবং মাদীনাহ থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিয়ে আসা কুরবানীর পশু, এগুলো মোট সংখ্যা ছিলো একশটি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ঐসব সাহাবী যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলো তারা ব্যতীত সকলেই ইহরাম খুলে হালাল হয়ে মাথার চুল খাট করলো। বর্ণনাকারী বলেন, তারা যখন (অষ্টম তারিখ) তারবিয়ার দিনে মিনার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন তারা হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীতে চড়লেন এবং মিনায় পৌঁছে আমাদেরকে যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ‘ইশা এবং ফাজ্র, মোট পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সেখানে আদায় করলেন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেন। তিনি তাঁর জন্য একখানা পশমের তাঁবু টানাতে নির্দেশ দিলেন এবং ‘নামিরা’ নামক স্থানে তা টানান হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে গেলেন। যাতে কুরাইশদের এরূপ সংশয় না করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাশ’আরুল হারামের নিকটবর্তী মুযদালিফায় অবস্থান করবেন, যেরূপ কুরাইশরা জাহিলিয়াতের যুগে করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে আরাফাতে আসলেন। এখানে এসে দেখলেন ‘নামিরায়’ তাঁর জন্য তাবু টানান হয়েছে। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত তিনি ঐ তাবুতে অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে তিনি ‘কাসওয়া’ উষ্ট্রীটি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন। তা আনা হলে তিনি তাতে চড়ে বাতনুল ওয়াদীতে আসলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (পরষ্পরের জন্য) আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতই সম্মানিত। সাবধান! জাহিলী যুগের সমস্ত কাজ ও প্রথা আমার দুই পায়ের নিচে পতিত হলো। জাহিলী যুগের রক্তের সকল দাবি বাতিল। আমি সর্বপ্রথম আমাদের (বনী হাশিমের) রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম। বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় রয়েছে : আমি ইবনু রবী‘আহ্র রক্তের দাবি আর সুলইমানের বর্ণনায় রয়েছে : আমি রবী‘আহ ইবনু হারিস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম। আর রবী‘আহ সা‘দ গোত্রে দুগ্ধপুষ্য থাকাকালীন হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিলো। জাহিলী যুগের সুদও বাতিল হলো। আমি সর্বপ্রথম ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিবের সুদের দাবি পরিহার করলাম। তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হলো। তোমরা নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদেরও অধিকার আছে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমার ঘরে স্থান না দেয়। তারা এরূপ করলে তাদেরকে খুবই হালকা মারধর করো। তাদের ভরণ-পোষনের দায়িত্বও তোমাদের উপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে। সর্বোপরি আমি তোমাদের মধ্যে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব। (ক্বিয়ামাতের দিন) তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কি বলবে? তারা বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিবো, আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার আমানাতের হক্ব আদায় করেছেন এবং ভালো কাজের উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে তর্জনী তুলে ধরেন এবং মানুষের প্রতি ইঙ্গিত করে (তিনবার) বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর বিলাল (রাঃ) আযান অতঃপর ইক্বামাত দিলেন। তিনি যুহরের সলাত আদায় করলেন, পুনরায় ইক্বামাত দিলে ‘আসরের সলাত আদায় করলেন। কিন্তু এ দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অন্য (নফল) সলাত পড়েননি। অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীতে আরোহণ করে আরাফাতে অবস্থানের স্থানে এলেন এবং কাসওয়া উষ্ট্রীকে ‘জাবালে রহমাতের’ পাদদেশে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে তিনি পাহাড়কে সামনে রেখে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্য ডুবে আকাশের লালিমা কিছুটা মুছে যাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেন। সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি ‘উসামাকে তাঁর পেছনে সওয়ারীতে বসিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে রওয়ানা হলেন এবং উষ্ট্রীর লাগাম শক্ত করে ধরলেন, ফলে উটের মাথা হাওদার সম্মুখভাগের সাথে ছুটতে লাগলো। এ সময় তিনি ডান হাতের ইশারায় বলতে লাগলেন : ধীরস্থিরভাবে পথ চলো, হে লোকেরা, ধীরস্থিরভাবে চলো, হে লোকজন! তিনি কোন বালির টিলার নিকট এলে উষ্ট্রীর লাগাম সামান্য ঢিলা করতেন যাতে তা সহজে টিলায় উঠে সামনে অগ্রসর হতে পারে। অবশেষে তিনি ‘মুযদালিফায়’ উপস্থিত হলেন। এখানে এসে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেন। এ দুই সলাতের মাঝখানে তিনি অন্য কোনো (নফল) সলাত পড়েননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ স্থানে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করেন। ফাজ্রের সময় হলে তিনি ফাজ্রের সলাত আদায় করেন। তিনি এ সলাত আদায় করেছেন এক আযান ও এক ইক্বামাতে। অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীর উপর চড়ে মাশ‘আরুল হারামে এসে তার উপর উঠেন। তারপর তিনি ক্বিবলাহকে সামনে রেখে মহান আল্লাহর প্রশংসা, তাকবীর এবং তাহলীল পাঠ করেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদেরও ঘোষণা করেন এবং তিনি ভোর হওয়া পর্যন্ত এ স্থানে অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে তাঁর বাহনের পেছনে বসিয়ে রওয়ানা হলেন। ফাদল ছিলেন কালো চুল ও সুন্দর চেহারার অধিকারী যুবক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চলার পথে জন্তুযানের অবস্থানকারী একদল মহিলাও তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। আর ফাদল বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাদলের মুখের উপর হাত রাখলেন। ফাদল অন্যদিকে ঘুরে তাদের দিকে দেখছিলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাদলের মুখের উপর হাত দিয়ে তা অন্যদিকে ফিরালেন। এবার তিনি ‘মুহাসসার’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং তিনি উষ্ট্রীকে কিছুটা দ্রুত চালালেন। অতঃপর এখান থেকে রওয়ানা হয়ে জামরাতুল কুবরার দিকের মধ্যবর্তী পথ ধরে চললেন এবং সেখানে বৃক্ষের নিকটবর্তী জামরায় এসে উপস্থিত হয়ে তাতে সাতটি কংকর মারলেন আর প্রত্যেক কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বললেন। কংকরগুলো ছিলো পাথরের ক্ষুদ্র টুকরার মতো এবং তা সমতল ভূমি থেকে নিক্ষেপ করেছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশু কুরবানীর স্থানে উপস্থিত হলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কুরবানী করলেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তিনি অবশিষ্টগুলো যাবাহ করলেন। তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে তাঁর কুরবানীতে অংশীদারও করেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেকটি যাবাহকৃত পশু হতে এক টুকরো করে গোশত তাঁকে দেয়ার আদেশ করলেন। সুতরাং তা নিয়ে একটি হাঁড়িতে পাকানো হলো। তাঁরা দু’জনেই এ গোশত খেলেন এবং এর ঝোল পান করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উষ্ট্রীতে চড়ে খুব তাড়াতাড়ি রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ্য় উপস্থিত হলেন। তিনি মক্কায় এসেই যুহরের সলাত আদায় করলেন। পরে তিনি বনি ‘আবদুল মুত্তালিবের নিকট গেলেন। এসময় তারা (লোকদের) যমযমের পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ হে বনি ‘আবদুল মুত্তালিব! পানি উত্তোলন করতে থাকো। লোকদের অত্যাধিক ভিড় হওয়ার আশংকা যদি না থাকতো তাহলে আমিও তোমাদের সাথে পানি উত্তোলনে অংশগ্রহণ করতাম। এরপর লোকেরা তাঁকে পানির বালতি সরবরাহ করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে পান করেন। [১৯০৫] জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাহর ময়দানে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে যুহর ও ‘আসরের সলাত আদায় করেছেন। কিন্তু এ দুই সলাতের মধ্যখানে কোনো তাসবীহ পড়েননি। অনুরূপভাবে তিনি মুযদালিফায় এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং দুই সলাতের মাঝখানে কোন তাসবীহ পড়েননি। [১৯০৬] সহীহ : মুসলিম, জাবির সূত্রে। এটাই সঠিক। এর পূর্বের ১৯০৫ নং হাদীস। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, জাবির হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে : “অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব ও ‘ইশা এক আযান ও এক ইক্বামাতে আদায় করেছেন”। দুর্বল। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি। আর মিনার পুরো এলাকাই কুরবানীর স্থান। তিনি আরাফার এক স্থানে অবস্থান করেছেন এবং বলেছেনঃ আমি এ স্থানে অবস্থান করেছি, আর আরাফার সম্পূর্ণ এলাকাই অবস্থানের স্থান। তিনি মুযদালিফার এক স্থানে অবস্থান করেছেন এবং বলেছেনঃ আমি এ স্থানে অবস্থান করেছি, আর মুযদালিফার পুরো এলাকাই অবস্থানের স্থান। [১৯০৭] জা‘ফর (রহঃ) হতে একই সানাদ এতে আরো আছে সুতরাং : তোমরা নিজ নিজ অবস্থান স্থলে কুরবানী করো। জাবির (রাঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার হাদীসে একথাও রয়েছে : “আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে দাঁড়াবার স্থানকে সলাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো”। জা‘ফর ইবনু মুহম্মাদ বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ স্থানে সলাত আদায়কালে সূরাহ ইখলাস ও সূরাহ কাফিরুন পাঠ করেছেন। [১৯০৯]
‘আরাফাহ ময়দানে অবস্থান সম্পর্কে
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরাইশরা এবং তাদের ধর্মের অনুসারীরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং নিজেদের এরূপ আচরণকে বীরত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করতো। অথচ আরবের অন্যান্য লোকেরা আরাফাহ্য় অবস্থান করতো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, ইসলামের আবির্ভাবের পর মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফাহ্য় গমনের ও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণী : “তোমরাও সেখান থেকে ফিরে যাও যেখান থেকে অন্যান্য লোক ফিরে আসে। [১৯১০]
মিনায় গমন প্রসঙ্গ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারবিয়ার দিনে যুহরের সলাত এবং আরাফাহর দিনে ফজরের সলাত মিনাতেই পড়েছেন। [১৯১১] আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফাঈ’ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, আপনি আমাকে এমন কিছু জানান যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনে স্মরণ রেখেছেন। তারবিয়ার দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মিনাতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (মিনা থেকে) প্রত্যাবর্তনের দিন ‘আসরের সলাত কোথায় পড়েছিলেন? তিনি বললেন, আল-আবতাহ উপত্যকায়। অতঃপর বললেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করেন তোমরাও অনুরূপ করো। [১৯১২]
আরাফাহ্ ময়দানে গমন
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফার দিন ভোরে ফাজ্রের সলাত আদায় করেই (মিনা হতে) রওয়ানা করে আরাফাহ্তে এসে পৌঁছে ‘নামিরাহ’ নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এটা আরাফার সেই স্থান যেখানে ইমাম (আরাফার দিন) অবস্থান গ্রহণ করেন। অতঃপর যুহর সলাতের ওয়াক্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাড়াতাড়ি সলাতের জন্য রওয়ানা হলেন এবং যুহর ও ‘আসরের সলাত একত্রে আদায় করে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, তারপর সেখান থেকে প্রস্থান করে আরাফাহ্র ময়দানের অবস্থান স্থলে অবস্থান গ্রহণ করেন। [১৯১৩]
আরাফাহ্ অভিমুখে রওয়ানা হওয়া
সাঈদ ইবনু হাস্সান হতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, হাজ্জাজ যে বছরে ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে শহীদ করলো, তখন হাজ্জাজ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলো যে, আজকের এই (আরাফার) দিনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সময় আরাফার দিকে রওয়ানা করেছেন? তিনি বললেন, যাত্রার সময় হলে রওয়ানা করবো। অতঃপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন রওয়ানা করার ইচ্ছা করলেন, তখন লোকেরা তাকে বললো, এখনো সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েনি। অতঃপর ইবনু ‘উমার আবার জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য ঢলে পড়েছে কি? তার সাথীরা বললো, এখনো ঢলে পড়েনি। সাঈদ বলেন, যখন তার সাথীরা বললো, এখন সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়েছে, তখন তিনি রওয়ানা হলেন। [১৯১৪]
আরাফাহ্ ময়দানে খুত্ববাহ
দামরাহ গোত্রীয় জনৈক ব্যক্তি হতে তার পিতা অথবা চাচার তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফার ময়দানে মিম্বারের উপর (খুত্ববাহ দিতে) দেখেছি। [১৯১৫] নুবাইত (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফার ময়দানে একটি লাল রংয়ের উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুত্ববাহ দিতে দেখেছেন। [১৯১৬] খালিদ ইবনুল ‘আদ্দাআ ইবনু হাওযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফার দিন একটি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে তার দুই পাদানীতে পা রেখে দাঁড়িয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। [১৯১৭] আবূ ‘আমর ‘আবদুল মাজীদ (রহঃ) সূত্র তিনি আল-আদ্দাআ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসটির ভাবার্থে বর্ণনা করেছেন।[১৯১৮] আমি এটি সহীহ এবং যঈফে পাইনি।
আরাফাহ্য় অবস্থানের জায়গা
ইয়াযীদ ইবনু শাইবান (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু মিরবা’ আল-আনসারী (রাঃ) আমাদের কাছে আসলেন, তখন আমরা আরাফার এই স্থানে অবস্থান করছিলাম। ‘আমর বলেন, তাদের অবস্থান স্থলটি ইমামের হতে কিছু দূরে ছিলো। তিনি এসে বললেন, আমি তোমাদের কাছে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন দূত। তিনি তোমাদের জন্য ফরমান দিয়েছেন, তোমরা তোমাদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে অবস্থান গ্রহণ করো। কারণ তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর উত্তরাধিকারী ও বংশধর। [১৯১৯]
আরাফাহ হতে প্রত্যাবর্তন
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধীরস্থিরভাবে প্রশান্ত অবস্থায় আরাফাহ হতে ফিরে আসেন। তাঁর সওয়ারীর পেছনে বসা ছিলেন ‘উসামাহ (রাঃ)। তিনি লোদেরকে বললেনঃ হে লোক সকল! ধীরস্থিরভাবে চলো! কেননা ঘোড়া ও উটকে দ্রুত চালনার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ঘোড়া ও উটগুলোকে তাদের দুই হাত (অর্থাৎ সামনের পা) তুলে দ্রুত চলতে দেখিনি। এভাবে তিনি মুযদালিফায় আসলেন। ওয়াহব ইবনু বায়ানের বর্ণনায় রয়েছে : পথিমধ্যে তিনি ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। এখানেও তিনি বললেনঃ হে লোকেরা! ঘোড়া ও উটকে দ্রুত চালনার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। কাজেই তোমরা ধীরস্থিরভাবে চলো। বর্ণনাকারী বলেন, এখানেও আমি পশুগুলোকে তাদের হাত (পা) তুলে দ্রুত চলতে দেখিনি। এভাবেই তিনি মিনায় পৌঁছেন। [১৯২০] কুরাইব (রহঃ) একদা তিনি উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, যে দিন সন্ধ্যায় আপনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেছনে আরোহণ করে ফিরছিলেন, তখন আপনারা কি করেছিলেন? তিনি বললেন, আমরা ঐ পাহাড়ী পথে যাই যেখানে রাত যাপনের জন্য লোকেরা অবতরণ করে। সেখানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উষ্ট্রী বসিয়ে পেশাব করলেন। বর্ণনাকারী এখানে পানি প্রবাহের কথা বলেননি। অতঃপর উযুর পানি চাইলেন, তিনি হালকাভাবে উযু করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ সলাত সামনে গিয়ে (পড়বো)। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সওয়ারীতে চড়ে মুযদালিফায় আসেন এবং ইক্বামাত হলে মাগরিবের সলাত আদায় করেন। এদিকে লোকেরা উটের পিঠ থেকে মালপত্র না নামিয়েই তাদের উটগুলো নিজ নিজ তাঁবুতে বসিয়ে দিলেন। এরপর ইক্বামাত দিয়ে ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। অতঃপর লোকেরা তাদের উটের পিঠের মালপত্র নামালো। মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর তার হাদীসে বৃদ্ধি করেছেন যে, আমি (কুরাইব) জিজ্ঞেস করলাম, পরবর্তী সকালে আপনারা কি করেছেন? উসামাহ বলেন, আজ ফাদল তাঁর বাহনের পেছনে চড়লেন এবং আমি কুরাইশদের অগ্রগামী দলটির সাথে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হলাম। [১৯২১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, অতঃপর তিনি উসামাকে বাহনের পেছনে বসিয়ে মধ্যম গতিতে উষ্ট্রী চালিয়ে গেলেন। এ সময় লোকেরা তাদের উটকে ডানে-বামে মারধর করে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বলতে লাগলেন শান্ত গতিতে চলো হে লোকেরা! অতঃপর সূর্য ডুবার পরই তিনি আরাফাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। [১৯২২] হাসান, তার এ কথাটি বাদে : ‘তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না।’ মাহফূয হলো : তিনি লক্ষ্য করলেন।’ ইমাম তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি উসামাহ্র (রাঃ) কাছে বসা ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে কিভাবে পথ চলেছেন সে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধ্যম গতিতেই চলেছেন। তিনি প্রশস্ত পথে উপনীত হলে একটু দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম করতেন। হিশাম (রহঃ) বলেন, এরূপ গতিকে ‘আন-নাচ্ছ’ ‘আনাক্ব বলে। [১৯২৩] উসামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাহনের পেছনে ছিলাম। যখন সূর্য অস্ত গেলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাত থেকে রওয়ানা হলেন। [১৯২৪] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মুক্তদাস কুরাই (রহঃ) তিনি উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাহ হতে রওয়ানা করলেন। তিনি পাহাড়ী পথে পৌঁছে পেশাব করার পর হালকা উযু করলেন, পূর্নাঙ্গ উযু করলেন না। উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি বললেন, আরো সামনে এগিয়ে সলাত আদায় করবো। তিনি পুনরায় বাহনে চড়লেন এবং মুযদালিফায় এসে বাহন থেকে নেমে উত্তমরূপে উযু করলেন। তারপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তিনি মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর সকল লোক নিজ নিজ স্থানে নিজেদের উট বসালো। অতঃপর ‘ইশার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তিনি ‘ইশার সলাত পড়লেন, কিন্তু এ দুই সলাতের মাঝখানে আর কোনো সলাত পড়েননি। [১৯২৫]
মুযদালিফায় সলাত আদায়
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছেন। [১৯২৬] আয-যুহরী (রহঃ) হতে তার নিজস্ব সানাদ পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক সলাতের জন্য পৃথক ইক্বামাত দ্বারা উভয় সলাত একত্রে আদায় করেছেন। আহমাদ (রহঃ) বলেন, ওয়াকী’ (রহঃ) বলেছেন, প্রতিটি সলাত আদায় করেছেন এক ইক্বামাতে। ওয়াকী’র বর্ণনাটি সহীহ। আহমাদ ইবনু হাম্বালের (রহঃ) আহমাদ ইবনু হাম্বালের (রহঃ) সানাদ দ্বারা আয যুহরী (রহঃ) হতে হাম্মাদ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকারী ‘উসমান ইবনু ‘উমার বলেছেন, প্রত্যেক সলাতের জন্য এক ইক্বামাত দিয়ে এবং প্রথম সলাতে আযান দেয়া হয়নি। আর এ উভয় সলাতের কোনটির পরে অন্য কোন সলাত আদায় করেননি। মাখ্লাদ (রহঃ) বলেন, উভয় সলাতের কোনটির জন্য আযান দেননি। সহীহ : তার এ কথাটি বাদে : “আযান দেয়া হয়নি...।” এটাই সঠিক। আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে মাগরিবের তিন এবং ‘ইশার দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। মালিক ইবনুল হারিস (রহঃ) তাকে বললেন, এ আবার কেমন সলাত? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আমি এ দুটি সলাত এই স্থানে এক ইক্বামাতে আদায় করেছি। [১৯২৯] সহীহ “প্রত্যেক সলাত” অতিরিক্তসহ। যেমন পূর্বের হাদীসে রয়েছে। সাঈত ইবনু যুবাইর ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রহঃ) তারা উভয়ে বলেছেন, আমরা ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সলাত এক ইক্বামাতে আদায় করেছি। অতঃপর ইবনু কাসীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। [১৯৩০] সহীহ “প্রত্যেক সলাত” অতিরিক্তসহ। সাঈদ উবনু জুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে আরাফাহ হতে ফিরে যখন মুযদালিফায় আসলাম তখন তিনি এক ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত যথাক্রমে তিন ও দুই রাক‘আত পড়ালেন। সলাত শেষে ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাদেরকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এ স্থানে এভাবেই সলাত পড়িয়েছেন। [১৯৩১] সহীহ। কিন্তু “প্রত্যেক সলাতের জন্য’ কথাটি বৃদ্ধি না করে “এক ইক্বামাতে” বলাটা শায। যেমন গত হয়েছে। সালামাহ ইবনু কুহাইল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-কে দেখেছি, তিনি মুযদালিফায় ইক্বামাত দিয়ে মাগরিবের তিন রাক‘আত এবং ‘ইশার দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এ স্থানে এমনটি করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এখানে এরূপ করতে দেখেছি। [১৯৩২] সহীহ। তবে এতে শুযুয বিদ্যমান। যা ১৯৩১ নং হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। আশ্‘আস ইবনু সুলাইম (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে আরাফাহ হতে মুযদালিফা পর্যন্ত আসি। মুযদালিফায় আসা পর্যন্ত তিনি তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করেছেন। এরপর তিনি আযান ও ইক্বামাত দেন অথবা এক ব্যক্তিকে নির্দেশ করলে সে আযান ও ইক্বামাত দিলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে মাগরিবের তিন রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, সলাত। অতঃপর আমাদেরকে নিয়ে তিনি দুই রাক‘আত ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। এরপর রাতের খাবার আনতে বললেন। বর্ণনাকারী আশ‘আস বলেন, ‘ইলাজ ইবনু ‘আমর, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে আমার পিতা বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে এভাবেই সলাত আদায় করেছি। [১৯৩৩] সহীহ। তবে তার কথা : “তিনি বললেন, সলাত”- এটি শায। মাহফূয হচ্ছে : “অতঃপর ইক্বামাত দিলেন।” যেমন পূর্বের ১৯২৭ ও ১৯২৮ নং হাদীসদ্বয় রয়েছে। ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘ইশা ও মাগরিবের সলাতকে মুযদালিফায় একত্রে আদায় করা এবং পরের দিন ফাজ্রের সলাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করে নেয়া, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই দুই সলাত ছাড়া কোন সলাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করতে দেখিনি। [১৯৩৪] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় রাত যাপনের পর সকালে ‘কুযাহ’ পাহাড়ে অবস্থান করেন এবং বললেনঃ এটি ‘কুযাহ’ এবং এটাই অবস্থানস্থল। মুযদালিফার গোটা এলাকাই অবস্থানের স্থান। (তারপর মিনায় এসে বললেন) আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি। মিনার পুরো এলাকাই কুরবানী স্থান। সুতরাং তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে কুরবানী করো। [১৯৩৫] জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আরাফাহ্র এ স্থানে অবস্থান করেছি। কিন্তু পুরো আরাফাহই অবস্থানের স্থান। আর আমি মুযদালিফার এ স্থানে অবস্থান করেছি। তবে মুযদালিফার পুরো এলাকাটিই অবস্থান স্থল। আমি মিনার এ স্থানে কুরবানী করেছি। মিনার পুরো এলাকাই কুরবানীর স্থান। কাজেই তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে কুরবানী করো। [১৯৩৬] সহীহ। এটি গত হয়েছে (হা/১৯০৭ ও ১৯০৮)। আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরাফাহ্র পুরো এলাকাই অবস্থানের জায়গা। মিনার সম্পূর্ণ এলাকা কুরবানীর স্থান এবং মুযদালিফার বিস্তৃত এলাকা অবস্থানের স্থান এবং মক্কার প্রতিটি অলি-গলি চলাচলের পথ এবং কুরবানীর স্থান। [১৯৩৭] . ‘আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, জাহিলী যুগের লোকেরা (মুযদালিফা থেকে) সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা হতো না। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিপরীত করেছেন। তিনি সূর্য উঠার পূর্বেই রওয়ানা করেছেন। [১৯৩৮]
মুযদালিফা থেকে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করা
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের যেসব দুর্বল লোককে মুযদালিফার রাতে আগেই প্রেরণ করেছিলেন, আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। [১৯৩৯] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী ‘আবদুল মুত্তালিবের অল্প বয়স্কদেরকে মুযদালিফার রাতে গাধার পিঠে চড়িয়ে আগেভাগেই (মিনায়) পাঠান এবং তিনি আমাদের উরুতে হালকা আঘাত করে বলেনঃ হে আমার প্রিয় সন্তান! সূর্যোদয়ের পূর্বে তোমরা জামরায় কংকর মারবে না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আল-লাতহু’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃদু আঘাত করা। [১৯৪০] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদেরকে রাতের অন্ধকারেই মিনায় প্রেরণ করেন এবং তাদেরকে নির্দেশ দেন, তারা যেন সূর্যোদয়ের পূর্বেই জামরায় কংকর নিক্ষেপ না করে। [১৯৪১] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর রাতেই উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে মিনায় প্রেরণ করেন এবং তিনি ফাজ্রের পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর তিনি (বায়তুল্লাহ) যিয়ারাতে গিয়ে ‘তাওয়াফে ইফাদা’ সম্পন্ন করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, ঐ দিনটি ছিল এমন দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিন তার কাছে অবস্থান করবেন। [১৯৪২] আসমা (রাঃ) তিনি ‘জামরাতুল আকাবায়’ কংকর মেরেছেন। বর্ণনাকারী বললেন, আমরা রাতেই জামরায় কংকর মেরেছি। আসমা (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময়ে এরূপ করেছি। [১৯৪৩] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফা হতে শান্তভাবে রওয়ানা হলেন এবং লোকদেরকে ছোট কংকর মারার নির্দেশ দিলেন। তিনি দ্রুত গতিতে মুহাসসির উপত্যকা অতিক্রম করেন। [১৯৪৪]
বড় হাজ্জের দিন
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জিলহাজ্জের ১০ তারিখ) নহরের দিন তিনটি জামরার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন : এটি কোন দিন? লোকেরা বলল, আজ কুরবানীর দিন। তিনি বললেনঃ আজ হাজ্জের বড় দিন। [১৯৪৫] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) নহরের দিন আমাকে এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠালেন যে, ‘এ বছরের পর আর কোন মুশরিক হাজ্জ করতে পারবে না এবং কেউ উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না।’ আর এই কুরবানীর দিনই হচ্ছে হাজ্জে আকবার এবং হাজ্জে আকবার হল হাজ্জ। [১৯৪৬]
হারাম (সম্মানিত) মাসসমূহ
আবূ বাকরাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেনঃ মহান আল্লাহ যেদিন আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে কালচক্র একইভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বার মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এ চারটি মাসের মধ্যে যুল্-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জা ও মুহাররম এ তিনটি মাস পরপর রয়েছে। চতুর্থ মাসটি হলো রজবে মুদার, যা জুমাদা ও শা‘বানের মধ্যবর্তী মাস। [১৯৪৭] আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যদিও পূর্বের হাদীসে ‘ইবনু আবূ বাকরাহ বলা হয়েছে’ তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু এ হাদীসে ইবনু ‘আওন তার নাম উল্লেখ করেছেন ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকরাহ। [১৯৪৮]
যে ব্যক্তি (নয় তারিখে) আরাফাহ্য় উপস্থিত হতে পারেনি
‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়া‘মুর আদ-দীলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এমন সময় এলাম যখন তিনি আরাফাহ্য় ছিলেন। এ সময় নাজ্দ এলাকার কতিপয় লোক বা একদল লোক এলো। তারা তাদের একজনকে নির্দেশ দিলে সে উচ্চস্বরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলো, হাজ্জ কেমন? এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়া হলে সেও উচ্চস্বরে বললো, ‘হাজ্জ-হাজ্জ হচ্ছে (নয় তারিখে) আরাফাহ্র ময়দানে উপস্থিত হওয়া। যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফাজ্রের সলাতের ওয়াক্ত হওয়ার আগে আরাফাহ্য় উপস্থিত হতে পেরেছে সে তার হাজ্জকে পূর্ণ করেছে। মিনায় তিন দিন অবস্থান করতে হয়। কেউ সেখানে দুই দিনে কাজ সমাপ্ত করতে চাইলে করতে পারে, এতে দোষ নেই। আর কেউ বিলম্ব করতে চাইলে করতে পারে, এতেও দোষ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তাঁর পেছনে সওয়ারীর উপর বসালেন এবং উক্ত কথাগুলো ঘোষণা দিতে থাকলো। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মিহরান সুফিয়ান হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আল-হাজ্জ আল-হাজ্জ শব্দটি দু’বার উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল কাত্তান সুফিয়ান হতে আল-হাজ্জ শব্দটি শুধু একবার উচ্চারণ করেছেন। [১৯৪৯] উরওয়াহ ইবনু মুদাররিস আত্-তায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুযদালিফায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ‘তায়ী’ পাহাড় থেকে আগমন করেছি। আমার সওয়ারী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং আমি নিজেও ক্লান্ত। আল্লাহর শপথ! চলার পথে আমি যে পাহাড়ই পেয়েছি, তার উপর ক্ষণিক অবস্থান করেছি। আমার হাজ্জের কিছু অবশিষ্ট আছে কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সাথে (কুরবানীর দিন) এ স্থানে ফাজ্রের সলাত আদায় করেছে এবং এর পূর্বে রাতে বা দিনে আরাফাহ্য় উপস্থিত হয়েছে, তার হাজ্জ পরিপূর্ণ হয়েছে এবং সে তার অবাঞ্ছিত জিনিসগুলো দূর করেছে। [১৯৫০]
মিনায় অবতরণ
‘আবদুর রহমান ইবনু মুয়ায (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবীর তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনাতে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং তাদের অবস্থানস্থল নির্ধারণ করে দিলেন। তিনি ক্বিবলাহ্র ডানদিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ এখানে মুহাজিরগণ অবস্থান করবে এবং ক্বিবলাহ্র বামদিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ এখানে আনসারগণ অবস্থান করবে। আর অন্যান্য লোক তাদের আশেপাশে অবস্থান করবে। [১৯৫১]
মিনায় কোন দিন খুত্ববাহ দিতে হবে?
ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বনী বাক্রের দুই ব্যক্তি সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আইয়্যামে তাশরীকের’ মধ্যের দিন (১২ তারিখ) খুত্ববাহ দিতে দেখেছি। এ সময় আমরা তাঁর সওয়ারীর নিকটেই ছিলাম। মিনাতে এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেশকৃত খুত্ববাহ। [১৯৫২] সাররা বিনতু নাবহান (রাঃ) তিনি জাহিলী যুগে প্রতীমা ঘরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকের দ্বিতীয় দিন আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ আজ কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। তিনি বললেনঃ এটা কি আইয়্যামে তাশরীকের দিন নয়? ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপভাবে আবূ হাররাহ আর-রাক্বাশীর চাচাও বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকের মাঝের দিন খুত্ববাহ দিয়েছেন। [১৯৫৩]
যিনি বলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন খুত্ববাহ দিয়েছেন
আল-হিরমাস ইবনু যিয়াদ আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরবানীর দিন মিনায় তাঁর ‘আল-আদবা’ নামক উষ্ট্রীর উপর চড়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। [১৯৫৪] আবূ উমামাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরবানীর দিন মিনায় খুত্ববাহ দিতে শুনেছি। [১৯৫৫]
কুরবানীর দিন কখন খুত্ববাহ প্রদান করবে?
রাফি ইবনু ‘আমর আল-মুযানী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিনাতে দ্বি-প্রহরে শাহ্বা নামক খচ্চরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। এ সময় ‘আলী (রাঃ) তাঁর ভাষণের পুনরাবৃত্তি করে শুনাচ্ছিলেন। তখন লোকদের কেউ দাঁড়ানো এবং কেউ বসা অবস্থায় ছিল। [১৯৫৬]
মিনার খুত্ববাহ্য় ইমাম কি আলোচনা করবেন
আবদুর রহমান ইবনু মুয়ায আত-তাইমী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। এ সময় আমরা ছিলাম উৎকর্ণ, যাতে তার বক্তব্য (ভাল করে) শুনতে পাই। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থানেই ছিলাম। তিনি তাদের হাজ্জের যাবতীয় বিধি-বিধান শিখালেন, এমনকি কংকর মারা সম্পর্কেও। তিনি তাঁর উভয় শাহাদাত আঙ্গুল নিজের দু’ কানের মধ্যে রেখে বললেনঃ কংকরগুলো খুবই ক্ষুদ্র হওয়া চাই। তারপর মুহাজিরদেরকে নির্দেশ দিলে তারা মাসজিদের পেছনে গিয়ে অবস্থান করলেন। অত:পর অন্যান্য লোক তাদের অবস্থান গ্রহণ করে। [১৯৫৭] সহীহ। সংক্ষিপ্তভাবে এটি গত হয়েছে।
মিনার রাতগুলো মাক্কাহ্য় যাপন করা
‘আবদুর রহমান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমরা লোকদের মালপত্র ক্রয় করি এবং তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের কেউ মক্কায় গিয়ে রাত যাপন করে। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনাতেই রাত যাপন করতেন এবং দিনেও সেখানেই থাকতেন। [১৯৫৮] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল-‘আব্বাস (রাঃ) হাজ্জীদেরকে পানি পান করানোর জন্য মিনায় অবস্থানের রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাকে অনুমতি দেন। [১৯৫৯]
মিনাতে সলাত আদায়
আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান (রাঃ) মিনাতে চার রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন (কসর করেননি)। ‘আবদুল্লাহ বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এবং আবূ বাক্র ও ‘উমারের (রাঃ) সাথে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। হাফস ইবনু গিয়াছের বর্ণনায় রয়েছে : এবং ‘উসমানের (রাঃ) খিলাফাতের শুরুতে তার সাথেও দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। অত:পর ‘উসমান (রাঃ) চার রাক‘আত পড়েছেন। অত:পর বর্ণনাকারী আবূ মু‘আবিয়্যাহ হতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে : পরে এ নিয়ে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। আমি নিজের জন্য চার রাক‘আতের চেয়ে দুই রাক‘আত মাক্ববুল সলাতই পছন্দ করি । আ‘মাশ (রহঃ) বলেন, মু‘আবিয়্যাহ ইবনু কুররাহ তাঁর শায়খদের সূত্রে আমাকে বলেছেন, পরে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘উসমান (রাঃ) এর সাথে চার রাক‘আতই পড়েছেন। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘উসমান (রাঃ) চার রাক‘আত সলাত আদায়ের কারণে আপনি তার সমালোচনা করেছেন। অথচ দেখছি আপনিও চার রাক‘আত আদায় করছেন। তখন তিনি বললেন, মতপার্থক্য করা মন্দ কাজ। [১৯৬০] আয-যুহরী (রহঃ) উসমান (রাঃ) মিনাতে চার রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। কারণ তিনি হজ্জের পর সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। [১৯৬১] ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান (রাঃ) সলাত চার রাক‘আত পড়েছেন। কারণ তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বাসস্থান বানিয়েছিলেন। [১৯৬২] আয-যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) যখন তাদের এলাকায় কিছু সম্পদ পেলেন তখন তিনি সেখানে কিছুদিন অবস্থানের ইচ্ছা করলেন। সেজন্যই তিনি সলাতে চার রাক‘আত আদায় করেন। অতঃপর (উমাইয়্যাহ) শাসকগণও সেখানে অনুরূপ করেছেন। [১৯৬৩] আয-যুহরী (রহঃ) ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) আরববাসীদের অধিক উপস্থিতির কারণেই মিনাতে পূর্ণ চার রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। যাতে তারা জানতে পারে যে, (আসলে) সলাত চার রাক‘আতই। [১৯৬৪]
মাক্কাহবাসীর জন্য সলাত ক্বাসর করার অনুমতি প্রসঙ্গে
হারিসাহ ইবনু ওয়াহব আল-খুযাঈ (রহঃ) তার মা ছিলেন ‘উমার (রাঃ) এর স্ত্রী। তার গর্ভে উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর জন্ম হয়। তিনি বলেন, আমি রাসূলু্ল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মিনায় সলাত আদায় করেছি। সে বছর লোকজনের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক ছিলো। সুতরাং বিদায় হাজ্জের দিন তিনি আমাদেরকে ক্বসর সলাত পড়িয়েছেন। [১৯৬৫]
জামরাতে কংকর মারা
সুলাইমান ইবনু ‘আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার মাতার তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সওয়ারী অবস্থায় উপত্যকার কেন্দ্রস্থল থেকে কংকর মারতে দেখেছি। প্রত্যেক কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলেছেন। এ সময় এক লোক তাঁকে পেছন থেকে আড়াল করে রেখেছিলো। আমি লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে লোকেরা বললো, তিনি আল-ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। লোকজনের ভীড় হচ্ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা (বড়) কংকর নিক্ষেপ করে একে অপরকে হত্যা করো। তোমরা জামরায় কংকর নিক্ষেপ করার সময় ছো্ট পাথর কুচি নিক্ষেপ করবে। [১৯৬৬] সুলাইমান ইবনু ‘আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার মাতার তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জামরাতে আকাবার নিকট বাহনে সওয়ার অবস্থায় দেখেছি এবং দেখেছি তাঁর আঙ্গুলের ফাঁকে কংকর রয়েছে। তিনি নিক্ষেপ করলে লোকেরাও নিক্ষেপ করলো। [১৯৬৭] ইয়াযীদ ইবনু আবু যিয়াদ (রহঃ) উক্ত সানাদে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে আরো রয়েছে : তিনি (কংকর মেরে) সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেননি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি কংকর মারার জন্য (কুরবানীর পরের) তিন দিন জামরাতসমূহে পায়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করতেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এরূপ করতেন। [১৯৬৯] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর বাহনে সওয়ার অবস্থায় কংকর মারতে দেখেছি। এ সময় তিনি বলছিলেন : তোমরা হাজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি শিখে নাও। তিনি আরো বলেনঃ আমি অবহিত নই আমার এই হাজ্জের পর আবার হাজ্জ করার সুযোগ পাবো কি না। [১৯৭০] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দ্বি-প্রহরে তাঁর বাহনে আরোহিত অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। আর এর পরের দিনগুলোতে তিনি সূর্য ঢলে পড়ার পর কংকর নিক্ষেপ করেছেন। [১৯৭১] ওয়াবারাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জামরায় কখন কংকর নিক্ষেপ করবো তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তোমার ইমাম যখন নিক্ষেপ করেন তখন তুমিও নিক্ষেপ করবে। আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে তিনি বলেন, সূর্য ঢলা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতাম। সুতরাং সূর্য ঢলে পড়লেই আমরা কংকর নিক্ষেপ করতাম। [১৯৭২] ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কুরবানীর দিন) যুহরের সলাত আদায় করে দিনের শেষভাগে ফরয তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। এরপর মিনায় আসেন এবং সেখানে তাশরীকের দিন রাতগুলো অতিবাহিত করেন। তিনি সূর্য ঢলার পর জামরায় কংকর মারেন। তিনি প্রত্যেক জামরায় সাতটি কংকর মারেন এবং প্রত্যেক কংকর মারার সময় তাকবীর বলেন। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় জামরায় দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে বিনয়ের সাথে দু‘আ করেন। অবশ্য তৃতীয় জামরাতে কংকর মারার পর সেখানে অবস্থান করেননি। [১৯৭৩] সহীহ। তার “যুহরের সলাত আদায় করে” কথাটি বাদে। কেননা এটি মুনকার। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি জামরাতুল কুবরার নিকটবর্তী হয়ে বায়তুল্লাহকে তার বামদিকে এবং মিনাকে তার ডান দিকে রেখে জামরাতে সাতটি কংকর মারলেন এবং বললেনঃ যাঁর উপর সুরাহ আল-বাক্বারাহ অবতীর্ণ হয়েছে তিনি এভাবেই (কংকর) নিক্ষেপ করেছেন। [১৯৭৪] আবুল বাদ্দাহ ইবনু ‘আসিম (রহঃ) হতে তার পিতার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের রাখালদেরকে মিনার বাইরে রাত যাপনের অনুমতি দেন। তারা কেবল কুরবানীর দিন কংকর মারবে এবং পরের দু’দিন ও প্রত্যাবর্তনের দিন (তের তারিখ) কংকর নিক্ষেপ করবে। [১৯৭৫] আবূল বাদ্দাহ ইবনু ‘আদী (রহঃ) হতে তার পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের রাখালদেরকে একদিন বাদ দিয়ে একদিন (অর্থাৎ ১১ ও ১২ তারিখ) কংকর মারার বিশেষ অনুমতি দিয়েছেন। [১৯৭৬] আবু মিজলায (রহঃ) আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে (জামরাতে) কয়টি কংকর মারতে হবে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি অবহিত নই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছয়টি কংকর মেরেছেন নাকি সাতটি। [১৯৭৭] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি ‘জামরায় আকাবায়’ কংকর নিক্ষেপ করার পর স্ত্রী সহবাস ছাড়া তার জন্য সবই হালাল হয়ে যায়। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি যঈফ। কারণ যুহরীর সাথে হাজ্জাজের সাক্ষাৎ হয়নি এবং তার থেকে তিনি হাদীসও শুনেননি। [১৯৭৮]
মাথার চুল কামানো এবং ছোট করা সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করলেন : হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? এবার তিনি বললেনঃ এবং চুল খাটোকারীদের প্রতিও। [১৯৭৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে তাঁর মাথা চুল মুণ্ডন করেছিলেন। [১৯৮০] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন জামরাতুল আকাবায় কংকর মেরে মিনায় তাঁর অবস্থান স্থলে ফিরে এসে কুরবানীর পশু আনিয়ে তা যাবাহ করলেন। পরে নাপিত ডাকিয়ে প্রথমে তাঁর মাথার ডান দিকের চুল মুড়ালেন এবং তিনি উপস্থিত লোকদেরকে এক বা দুইগাছি করে চুল বিতরণ করলেন। তারপর মাথার বাম দিকের চুল মুড়ালেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এখানে আবু ত্বালহা আছে কি না? অবশিষ্ট চুলগুলো তিনি আবু ত্বালহা (রাঃ)-কে দিলেন। [১৯৮১] হিশাম ইবনু হাসসান (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে পূর্বের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তাতে আরো আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপিতকে বললেনঃ ডানদিক থেকে শুরু করো এবং তা মুণ্ডন করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মিনাতে অবস্থানকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (হাজ্জের) বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি জবাবে বলতে থাকেন : ‘কোন দোষ নেই।’ এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো, আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা মুড়িয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখন কুরবানী করো, কোনো দোষ নেই। লোকটি বললো, সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ এখনো কংকর নিক্ষেপ করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখন কংকর নিক্ষেপ করো, কোনো দোষ নেই। [১৯৮৩] ইবনু ‘আব্বাস রাঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদের মাথার চুল মুড়ানোর প্রয়োজন নেই। বরং তারা চুল কাটবে। [১৯৮৪] সহীহ, পরবর্তী হাদীস দ্বারা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদের জন্য মাথা কামানোর দরকার নেই, তাদেরকে চুল ছাঁটতে হবে। [১৯৮৫]
‘উমরাহ্ সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে যিলহাজ্জ মাসে ‘উমরাহ করিয়েছেন এজন্যই যে, যাতে মুশরিকদের কাজের বিরোধীতা হয়। কেননা কুরাইশদের এ গোত্র এবং তাদের অনুসারীরা বলতো : ‘উটের পিঠের ঘা শুকিয়ে পশম গজালে এবং সফর মাস এলে ‘উমরাহ করতে ইচ্ছুকদের ‘উমরাহ করা বৈধ। মুশরিকরা যিলহাজ্জ এবং মুহা্ররম মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘উমরাহ করা হারাম মনে করতো। [১৯৮৬] আবূ বাক্র ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, মারওয়ানের যে দূতকে উম্মু মা‘ক্বিলের নিকট প্রেরণ করা হয়, তিনি আমাকে জানিয়েছেন, উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) বলেছেন, আবূ মা‘ক্বিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জ গমনের ইচ্ছা করেছিলেন। তিনি ঘরে এলে উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) বললেন, আমি আবগত হয়েছি, আমার উপরও হাজ্জ ফরয হয়েছে সুতরাং তারা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ে পদব্রজে রাসূলল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হলেন। উম্মু মা‘ক্বিল বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর হাজ্জ ফরয হয়েছে। আর আবূ মা‘ক্বিলের নিকট একটি উষ্ট্রী আছে। আবূ মা‘ক্বিল (রাঃ) বললেন, সে সত্যই বলেছে, কিন্তু আমি তো সেটি আল্লাহর পথে যুদ্ধের কাজে সদাক্বাহ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এটা তাকে দিয়ে দাও, সে হাজ্জ করে আসুক। কেননা এটাও আল্লাহর পথ। নির্দেশ মোতাবেক তিনি উষ্ট্রীটি তাকে দিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো বৃদ্ধ মহিলা এবং অসুস্থ। সুতরাং এমন কোনো কাজ আছে কি যা আমার হাজ্জের বিকল্প হবে? তিনি বললেনঃ রমাযান মাসে ‘উমরাহ তোমার হাজ্জের জন্য যথেষ্ট। [১৯৮৭] আবূ বাক্র ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, মারওয়ানের যে দূতকে উম্মু মা‘ক্বিলের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিলো, তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) বলেছেনঃ আবূ মা‘ক্বিল রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হাজ্জ করার ইচ্ছা করেছিলেন। তিনি ঘরে এলে উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) বলেন, আমার উপরও যে হাজ্জ ফরয হয়েছে তা আমি অবগত হয়েছি। কাজেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই পায়ে হেঁটে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গেলেন। উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর হাজ্জ ফরয হয়েছে। আর আবূ মা‘ক্বিলের নিকট (বাহন উপযোগী) একটি উষ্ট্রী আছে। আবূ মা‘ক্বিল (রাঃ) বললেন, সে সত্য বলেছে, কিন্তু আমি তো সেটি আল্লাহর পথে যুদ্ধের কাজে সদাক্বাহ করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি ওটা (উষ্ট্রীটি) একে দাও, সে হাজ্জ করে আসুক। কারণ এটাও তো আল্লাহর পথ। ফলে তিনি তাকে তা দিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা এবং অসুস্থ। কাজেই এমন কোন আমল আছে কি যা করলে আমার হাজ্জের পরিবর্তে যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ রমাযানের একটি ‘উমরাহ তোমার হাজ্জের জন্য যথেষ্ট হবে। [১৯৮৮] সহীহ, তবে মহিলার এ কথাটি বাদে : আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা ...।” উম্মু মা‘ক্বিল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বিদায় হাজ্জ গমন করেন তখন আমাদের একটি মাত্র উট ছিলো, সেটাও আবূ মা‘ক্বিল (রাঃ) আল্লাহর পথে (জিহাদে) সদাক্বাহ করেছেন। এদিকে আমরা অসুস্থ হলাম এবং আবূ মা‘ক্বিলও মৃত্যুবরণ করলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হাজ্জে) চলে গেলেন। তিনি হাজ্জ সম্পন্ন করার পর আমি তাঁর কাছে আসলে তিনি বললেনঃ হে উম্মু মা‘ক্বিল! আমাদের সাথে যেতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমরা তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আবূ মা‘ক্বিল মারা গেলেন। আমাদের যে উটটি ছিলো, যা দ্বারা আমি হাজ্জ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম, সেটাকেও আবূ মা‘ক্বিল আল্লাহর পথে দান করার ওয়াসিয়্যাত করেছেন। তিনি বললেন, তুমি সেটা নিয়েই বের হলে না কেন? কারণ ‘হাজ্জ করাও আল্লাহর পথের সদৃশ! তুমি যখন আমাদের সাথে এ হাজ্জ করতে পারলে না সুতরাং রমযান মাসে ‘উমরাহ আদায় করো। কেননা এ সময়ের ‘উমরাহ হাজ্জের সমতুল্য। এরপর থেকে উম্মু মা‘ক্বিল প্রায়ই বলতেন, হাজ্জ হাজ্জই এবং ‘উমরাহ ‘উমরাহই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা কেবল আমার জন্যই বলেছেন নাকি সবার জন্য তা আমি অবহিত নই। [১৯৮৯] সহীহ, তার এ কথাটি বাদে : “তিনি প্রায়ই বলতেন ...।” ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের ইচ্ছা করলেন। তখন জনৈক মহিলা (উম্মু মা‘ক্বিল) তার স্বামীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমার হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বললেন, তোমাকে হাজ্জে পাঠাবার মতো (বাহন) ব্যবস্থা আমার কাছে নেই। তিনি (উম্মু মা‘ক্বিল) বললেন, অমুক উটটি দ্বারা আমাকে হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করুন। তিনি বললেন, তাতো মহান শক্তিমান আল্লাহ পথে (জিহাদের জন্য) আবদ্ধ। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমার স্ত্রী আপনাকে সালাম জানিয়েছে এবং আপনার উপর আল্লাহর রহমাত কামনা করেছে। সে আপনার সাথে হাজ্জে যেতে আমার কাছে অনুমতি চেয়ে বলেছে, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। আমি বলেছি, আমার কাছে তোমাকে হাজ্জে পাঠানোর কোন ব্যবস্থা নেই। সে বললো, অমুক উট দ্বারা আমাকে হাজ্জে গমনের সুযোগ দিন। আমি বললাম, সেটি তো মহান শক্তিমান আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) আবদ্ধ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে সেটির দ্বারা হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিলে তাও আল্লাহর পথেই হতো। সে আমাকে আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে বলেছে, আপনার সাথে হাজ্জ করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়ার মত কোন কাজ আছে কিনা? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে আমার সালাম জানাবে, তার উপর আল্লাহর রহমাত ও বরকত বর্ষিত হোক। তাকে এ সংবাদও দিবে, রমযান মাসে ‘উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমুতুল্য। [১৯৯০] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইবার ‘উমরাহ করছেন। একটি যিলক্বাদ মাসে এবং অপরটি শাওয়াল মাসে। [১৯৯১] সহীহ : কিন্তু তার কথা : শাওয়াল অর্থাৎ প্রথমটি। অন্যতায় সেটিও যিলক্বাদ মাসে। মুজাহিদ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার ‘উমরাহ করেছেন? তিনি বললেন, দুইবার। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) অবগত আছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জের সাথে যে ‘উমরাহ করেছেন সেটা ছাড়াও তিনবার ‘উমরাহ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারবার ‘উমরাহ করেছেন। প্রথমবার হুদায়বিয়ার সময়, দ্বিতীয় ‘উমরাহ এর পরবর্তী বছর, যেটির উপর তাদের সাথে সন্ধি হয়েছিল। তৃতীয় ‘উমরাহ আল-জিইররানা হতে এবং চতুর্থ ‘উমরাহ তার হাজ্জের সাথে। [১৯৩৩] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোট চারবার ‘উমরাহ করেছেন। বিদায় হাজ্জের সাথে ‘উমরাহ ছাড়া অবশিষ্ট ‘উমরাহগুলো তিনি যিলক্বাদ মাসে আদায় করেছেন। [১৯৯৪]
যদি কোন মহিলা ‘উমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধার পর ঋতুবতী হয় এবং এমতাবস্থায় হাজ্জের সময় উপস্থিত হওয়ায় সে ‘উমরাহ্র ইহরাম ছেড়ে হাজ্জের ইহরাম বাঁধে, তাহলে তাকে তার ‘উমরাহ ক্বাযা করতে হবে কিনা?
হাফসাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্র (রহঃ) হতে তার পিতার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমানকে বলেনঃ হে ‘আবদুর রহমান! তোমার বোন ‘আয়িশাকে তোমার সওয়াবীর পেছনে বসিয়ে নাও এবং আত-তানঈম থেকে তাকে ‘উমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধাও। আর তুমি তাকে নিয়ে সেখানকার উঁচু টিলা থেকে নেমে সমতল ভূমিতে এলেই সে ইহরাম বাঁধবে, কারণ তা ‘উমরাহ কবুল হওয়ার স্থান। [১৯৯৫] মুহাররিশ আল-কা’বী (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-জি‘ইররানাহ স্থানে পৌঁছে সেখানকার মাসজিদে গিয়ে তথায় আল্লাহ যতটুকু চাইলেন তিনি (রুকু‘) সলাত আদায় করলেন, অতঃপর ইহরাম বাঁধলেন। তারপর সওয়ারীতে চড়ে ‘বাতনে সারিফ’ ভূমিতে এসে মাদীনাহগামী পথে উপনীত হলেন এবং রাত যাপনকারীর মতই তিনি মক্কায় ভোর পর্যন্ত অবস্থান করলেন। [১৯৯৬] সহীহ, মাসজিদে রুকু‘ কথাটি বাদে। কেননা তা মুনকার।
‘উমরাহ আদায়ের পর সেখানে অবস্থান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বাযা ‘উমরাহ আদায়ের পর মক্কায় তিন দিন অবস্থান করেছেন। [১৯৯৭]
হাজ্জে তাওয়াফে ইফাদা (যিয়ারাত)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন মক্কায় এসে তাওয়াফে যিয়ারত সমাপ্ত করে পুনরায় মিনায় ফিরে এসে সেখানে যুহরের সলাত আদায় করেন। [১৯৯৮] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আমার পালার রাতটি ছিলো কুরবানীর দিন সন্ধ্যায়। সুতরাং সেদিন তিনি আমার কাছে ছিলেন। এ সময় ওয়াহব ইবনু যাম‘আহ এবং তার সাথে আবূ উমায়্যাহ পরিবারের জনৈক ব্যক্তি উভয়েই জামা পরিহিত অবস্থায় আমার নিকট প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াহবকে জিজ্ঞেস করলেন : হে আবূ ‘আবদুল্লাহ! তুমি কি তাওয়াফে ইফাদা সম্পন্ন করেছো? সে বললো, না, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার জামা খুলে ফেলো। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, তিনি মাথার দিক থেকে তা খুললেন এবং তার সাথীও মাথার দিক থেকে তার জামা খুললো। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ করার কারণ কি? তিনি বললেনঃ আজকের দিনে তোমাদের জন্য বিধান শিথিল হয়েছে। তোমরা যখন জামারায় কংকর মেরে, কুরবানী সম্পন্ন করে চুল মুড়াবে, তখন একমাত্র স্ত্রীসহবাস ছাড়া এ পর্যন্ত ইহরামের কারণে যা কিছু তোমাদের জন্য হারাম ছিল তা হালাল হবে। আর যদি আজকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের আগে রাত হয়ে যায় তাহলে তাওয়াফ করা পর্যন্ত তোমরা অনুরূপভাবে ইহরাম অবস্থায় থেকে যাবে, যেভাবে ছিলে জামরায় কংকর মারার আগে। [১৯৯৯] আয়িশাহ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন তাওয়াফকে রাত পর্যন্ত বিলম্বিত করেছেন। [২০০০] দুর্বল : যঈফ ইবনু মাজাহ (৬৫৪), মিশকাত (২৬৭২), ইরওয়া (১০৭০), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫৯/৯২৯) এ শব্দে : “তাওয়াফে যিয়ারাহ।” ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওয়াফে যিয়ারাতের সাত চক্করের একটিতেও রমল করেননি। [২০০১]
শেষ তাওয়াফ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা তাওয়াফে যিয়ারাত সম্পন্ন করে মাক্কাহর চতুর্দিক দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করলেন : তোমাদের কেউ যেন শেষ বারের মত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করে চলে না যায়। [২০০২]
তাওয়াফে যিয়ারাতের পর ঋতুবতী মহিলার মাক্কাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করা
আয়িশাহ (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুয়াই এর কন্যা সাফিয়্যাহ্র (রাঃ) কথা উল্লেখ করেন। তখন বলা হলো, সে ঋতুবর্তী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সম্ভবত সে আমাদের যাত্রা বিলম্বিত করবে। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তো তাওয়াফে ইফাদা করেছেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে সমস্যা নাই। [২০০৩] আল-হারিস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আওস (রাঃ) আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে জনৈক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, সে কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পর ঋতুবর্তী হয়েছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তার সর্বশেষ কাজ হওয়া চাই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ। বর্ণনাকারী (ওয়ালীদ) বলেন, তখন আল-হারিস (রাঃ) ‘উমার (রাঃ)-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও আমাকে এরূপ ফাতাওয়াহ দিয়েছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমার ব্যবহারে আমি দুঃখ পেলাম। তুমি আমাকে (না জানার ভান করে) এমন কথা জিজ্ঞেস করেছো যা তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আগেই জিজ্ঞেস করে জ্ঞাত আছো। যাতে আমি তার বিপরীত কিছু বলি। সহীহ, কিন্তু এটি মানসুখ পূর্বের (২০০৩) হাদীস দ্বারা।
বিদায়ী তাওয়াফ
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আত-তানঈম হতে ‘উমারাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধলাম। এরপর মাক্কাহয় প্রবেশ করে ‘উমরাহ সম্পন্ন করলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল-আব্তাহ’ নামক স্থানে আমার অপেক্ষায় থাকলেন। পরে তিনি লোকদেরকে (মাদীনাহতে) যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় এসে বায়তুল্লাহ (বিদায়ী) তাওয়াফ করে রওয়ানা হলেন। [২০০৫] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সর্বশেষ কাফেলায় (যিলহাজ্জের তের তারিখে) মাক্কাহ হতে মাদীনাহর পথে রওয়ানা হই। তিনি মুহাসসাব উপত্যকায় নামলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু বাশ্শার এ হাদীসে তাকে আত-তানঈম প্রেরণের ঘটনা উল্লেখ করেননি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি ‘উমরাহ (সম্পন্ন করে) শেষ রাতে তাঁর কাছে আসি। তখন তিনি তাঁর সাহবীদেরকে রওয়ানা হবার ঘোষণা দিলেন এবং তিনি নিজেও রওয়ানা হলেন। আর তিনি ফাজ্রের সলাতের পূর্বে যাত্রাকালে বায়তুল্লাহ গিয়ে বিদায়ী তওয়াফ করার পর মাদীনাহর দিকে যাত্রা করলেন। [২০০৬] আবদুর রহমান ইবনু ত্বারিক (রহঃ) হতে তার মাতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘দ্বারে ই‘য়ালা’র নিকটস্থ স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে বায়তুল্লাহকে সম্মুখে রেখে দু’আ করেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ স্থানটির নাম ভুলে গেছেন। [২০০৭]
মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ সম্পর্কে
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাস্সাবে অবতরণ করেছেন, যেন মাদীনাহ অভিমূখে রওয়ানা হওয়া সহজতর হয়। তবে সেখানে অবতরণ করা সুন্নাত নয়। [২০০৮] সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ রাফি‘ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ করতে আদেশ করেননি। তবে আমি সেখানে তাঁর জন্য তাঁবু স্থাপন করেছি। তাই তিনি সেখানে অবতরণ করেছেন। মুসাদ্দাদ বলেন, আবূ রাফি‘ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালপত্র দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। [২০০৯] উসামহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আগামী কাল সকালে কোথায় অবরতণ করবেন? তিনি বললেনঃ ‘আক্বীল কি আমাদের জন্য কোন বাড়ী রেখেছে? এরপর বললেনঃ আগামী কাল আমরা বনী কিনানার খাইফে (মুহাস্সাবে) অবতরণ করবো, যেখানে কুরাইশরা কুফরীর শপথ করেছিলো। অর্থাৎ বনী কিনানার লোকেরা কুরাইশদের সাথে এই মর্মে শপথ করেছিলো যে, বনী হাশিমের সাথে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না, তাদেরকে কোনো ধরনের আশ্রয় দিবে না এবং তাদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করবে না। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, ‘খায়ফ’ শব্দের অর্থ উপত্যকা। [২০১০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা করলেন, তখন বললেনঃ আমরা আগামী কাল অবতরণ করবো। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি হাদীসের প্রথমাংশ বর্ণনা করেননি এবং এটাও উল্লেখ করেননি যে, ‘খাইফ’ অর্থ উপত্যকা। [২০১১] নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘বাত্হাতে’ (মুহাস্সাবে) সামান্য নিদ্রা যেতেন এবং পরে মক্কায় প্রবেশ করতেন। তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করতেন। [২০১২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাতহায় যুহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করে সামান্য ঘুমাতেন, তারপর মক্কায় প্রবেশ করেন। নাফি‘ বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও অনুরূপ করতেন। [২০১৩]
যদি কেউ হাজ্জের কোন কাজ আগে-পরে করে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবুল ‘আস (রাঃ) বিদায় হাজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় অবস্থান করলেন। সেখানে লোকেরা তাঁকে প্রশ্ন করতে থাকলো। এক ব্যক্তি এসে বললো, আমার জানা ছিলো না, তাই আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামিয়েছি। তিনি বললেনঃ এখন যাবাহ করো, কোন ক্ষতি নেই। আরেক ব্যক্তি এসে বললো, আমি জানতাম না, তাই কংকর নিক্ষেপের পূর্বেই কুরবানী করেছি। তিনি বললেনঃ এখন কংকর মেরে আসো, এতে কোন অসুবিধা নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এ দিন তাঁকে আগে-পিছে করা যে কাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি জবাবে বলেছেনঃ ‘এখন করে নাও কোন দোষ নেই।’ [২০১৪] উসামাহ ইবনু শারীক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হাজ্জে গেলাম। এ সময় লোকেরা এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাওয়াফ করার পূর্বেই সা‘ঈ করেছি কিংবা কেউ এসে বললো, আমি কিছু কাজ আগে-পরে করে ফেলেছি। জবাবে তিনি বলতে থাকলেন : যাও কোন অসুবিধা নেই, কোন দোষ নেই। তবে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করে, তার সম্পর্কে বলেছেনঃ সে পাপে লিপ্ত হয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। [২০১৫]
মাক্কাহতে সলাতের সুতরাহ
কাসীর ইবনু কাসীর ইবনুল মুত্তালিব ইবনু আবূ ওয়াদা‘আহ (রহঃ) হতে তার পরিবার জনৈক ব্যক্তির সূত্রে এবং তিনি তার দাদার সূত্র তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বনী সাহমের দরজার কাছে সলাত আদায় করতে দেখেছেন। এ সময় লোকেরা তাঁর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করেছে। অথচ উভয়ের মাঝখানে সুতরাহ ছিলো না। সুফিয়ান বলেন, তাঁর এবং কা‘বার মাঝখানে কোন সুতরাহ ছিলো না। [২০১৬]
মাক্কাহ্র পবিত্রতা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে মক্কায় বিজয়ী করলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বললেনঃ মহান আল্লাহ মাক্কাহ থেকে হাতি বাহিনীকে প্রতিহত করেছেন এবং তিনি তাঁর রাসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে মক্কার উপর আধিপত্য দিয়েছেন। আমার জন্য দিনের কিছু সময় বৈধ করা হয়েছিল। এরপর ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে। সুতরাং এখানকার গাছপালা কাটা যাবে না। এখানের শিকার তাড়ানো যাবে না এবং এখানকার পড়ে থাকা বস্তু তুলে নেয়া যাবে না। তবে ঘোষকের জন্য তা তুলে নেয়া বৈধ। তখন ‘আব্বাস (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ইযখির’ ঘাস কাটার অনুমতি দিন, কেননা এগুলো আমরা আমাদের কবর ও ঘরের চালায় ব্যবহার করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঠিক আছে, ইয্খির ঘাস কাটার অনুমতি দেয়া হলো। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনুল মুসাফফা’ ওয়ালীদ সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, এ সময় আবূ শাহ (রাঃ) নামের জনৈক ইয়ামানবাসী দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমাকে লিখে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম বলেন, আমি আওযাঈকে জিজ্ঞেস করি, আবূ শাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কি লিখে দিতে বললেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই ভাষণ যা তাঁর কাছ থেকে শুনেছেন। [২০১৭] মাক্কাহর মার্যাদা সম্পর্কে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র মাক্কাহর মার্যাদা সম্পর্কে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে এও বর্ণিত হয়েছে যে : সেখানকার ঘাসও কাটা যাবে না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে রাসূল! আমরা কি আপনার জন্য মিনাতে একটি ঘর বা এমন বাসস্থান নির্মাণ করে দিবো না যা আপনাকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া দিবে? তিনি বললেনঃ না, কেননা মিনার পুরো অঞ্চল উট বসাবার জায়গা। যে আগে আসবে সে এখান তার হবে। [২০১৯] দুর্বল : যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৪৮-৬৪৯), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫৩-৮৮৮)। মূসা ইবনু বাযান (রহঃ) আমি ইয়া‘লা ইবনু উমায়্যাহ (রাঃ)-এর কাছে এলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হেরেম এলাকায় খাদ্যশস্য গুদামজাত করে রাখা ধর্মদ্রোহিতার নামান্তর। [২০২০] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (১৮৪), মিশকাত (২৭২৩)।
নাবীয পানীয় সম্পর্কে
বাক্র ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললো, এই ঘরের লোকদের কি হলো, এরা হাজ্জীদেরকে শুধু ‘নাবীয’ পান করান কেন? অথচ তাদের চাচাত ভাইয়ের সন্তানরা তো দুধ, মধু ও ছাতুও পান করান। এটা কি তাদের কৃপণতা না দরিদ্রতা? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা আমাদের কৃপণতা বা দরিদ্রতা কোনটিই নয়। বরং ব্যাপার এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাওয়ারীতে চড়ে এবং উসামাহ ইবনু যায়িদকে তাঁর পিছনে বসিয়ে আমাদের কাছে এসে কিছু পানীয় পান করতে চাইলেন। তখন ‘নাবীয’ আনা হলে তিনি তা পান করলেন এবং বাকীটুকু উসামাহ ইবনু যায়িদকে দিলেন। তিনি তা পান করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা খুব উত্তম কাজ করেছো। ভবিষ্যতেও এরূপ করতে থাকবে। তাই আমরা এরূপ পান করাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার প্রশংসা করেছেন আমরা তা পরিবর্তন করতে চাই না। [২০২১]
মাক্কাহ্য় অবস্থান করা
‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হাজ্জে আগত মুহাজিরদের মাক্কাহ্য় অবস্থান সম্পর্কে আপনি কিছু শুনেছেন কি? তিনি বললেন, আমাকে ইবনুল হাদরামী (রাঃ) বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুহাজিরদের লক্ষ্য করে বলতে শুনেছেন : ফার্য তাওয়াফ আদায়ের পর মাক্কাহ্য় তিন দিন অবস্থান করতে পারবে।
কা‘বার অভ্যন্তরে সলাত আদায় করা
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা‘বার ভেতরে প্রবেশ করলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন উসামাহ ইবনু যায়িদ, ‘উসমান ইবনু ত্বালহা আল-হাজাবী ও বিলাল (রাঃ)। তিনি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, দরজা খুলে বাইরে এলে আমি বিলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেতরে কি করছেন? তিনি বললেন, তিনি একটি স্তম্ভ তাঁর বামদিকে, দুটি স্তম্ভ ডানদিকে এবং তিনটি স্তম্ভকে পিছনে রেখে সলাত আদায় করছেন। এ সময় বায়তুল্লাহ মোট ছটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত ছিলো। [২০২৩] ইমাম মালিক (রহঃ) উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি সাওয়ারীর (স্তম্ভ) কথা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করেন, এ সময় তাঁর ও সামনের দেয়ালের মধ্যে তিন গজের দূরত্ব ছিলো। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে আল-কা‘নাবীর বর্ণিত হাদীসের অর্থের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি এও বলেন যে, আমি বিলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। [২০২৫] আবদুর রহমান ইবনু সাফওফান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা‘বার ভেতরে প্রবেশ করে কি করেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি দুই রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। [২০২৬] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আগমন করে কা‘বা ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেন। কেননা এ ঘরে তখন বহু দেবদেবী রাখা ছিল। অতঃপর তাঁর নির্দেশ মোতাবেক সেগুলা অপসারণ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ:)-এর মূর্তিও অপসারণ করা হয়। তাদের মূর্তির হাতে ছিল ভাগ্য পরীক্ষার তীর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। আল্লাহর শপথ! তারা নিশ্চিত জানতো যে, তাঁরা কখনো এ তীরের সাহায্যে ভাগ্য পরীক্ষা করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কা‘বা ঘরে প্রবেশ করলেন এবং এর কোণে তাকবীর ধ্বনি দিলেন, অতঃপর বাইরে আসলেন। কিন্তু তিনি সেখানে সলাত আদায় করেননি। [২০২৭]
হাতীমে সলাত আদায়
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বায়তুল্লাহ্র ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে সলাত আদায় করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে হাতীমের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বললেন, তুমি যেহেতু বায়তুল্লাহর ভেতর সলাত পড়তে চেয়েছ তখন এখানেই সলাত পড়ে নাও। কেননা এটাও বায়তুল্লাহর অংশ। তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন বায়তুল্লাহ পুনঃনির্মান করছিলো, তখন তাদের অর্থের অনটন থাকায় তারা এ অংশটুকু মূল ঘর থেকে বাইরে রেখেছে। [২০২৮]
কা‘বা ঘরে প্রবেশ
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছ থেকে বাইরে গেলেন প্রফুল্ল চিত্তে, কিন্তু ফিরে আসলেন বিষণ্ণ মনে। তিনি বললেনঃ আমি কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেছিলাম। আমি যা পরে জেনেছি তা যদি পূর্বেই জানতাম তাহলে আমি তাতে প্রবেশ করতাম না। আমার আশংকা হচ্ছে যে, আমি আমার উম্মাতকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিলাম কিনা। [২০২৯] দুর্বল : যঈফ আল-জামী‘উস সাগীর (২০৮৫), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৫২/৮৮০)। মানসূর আল হাজাবী (রহঃ) তিনি বলেন, আমার মামা আমার আম্মা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি (আম্মা) বলেছেন, আমি আসলাম গোত্রীয় জনৈক মহিলাকে বলতে শুনেছি, আমি ‘উসমান ইবনু ত্বালহা আল-হাজাবী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে ডেকে নিয়ে কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, আমি আপনাকে জানাতে ভুলে গেছি যে, (ইসমাইলের যাবাহকৃত দুম্বার) শিং দুইটি ঢেকে রাখুন (যা বায়তুল্লাহর দেয়ালে টাঙ্গানো ছিল)। কারণ, বায়তুল্লাহ্য় এমন জিনিস থাকা সমীচীন নয় যা মুসল্লীদের অন্যমনস্ক করে দেয়। ইবনুস সারহ বলেছেন, তার মামার নাম হল মুসাফি’ ইবনু শাইবাহ। [২০৩০]
কা‘বা ঘরের মালপত্র প্রসঙ্গে
শাইবাহ ইবনু ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, আপনি যে স্থানে বসা আছেন, একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব উক্ত স্থানে বসা অবস্থায় বললেন, কা‘বার ভেতরে রক্ষিত সম্পদ বন্টন না করা পর্যন্ত আমি এখান থেকে বের হবো না। শাইবাহ বলেন, আমি বললাম, আপনি এরূপ করতে পারেন না। ‘উমার বলেন, হ্যাঁ, আমি অবশ্যই এরূপ করব। শাইবাহ বলেন, আমি আবার বললাম, আপনি এরূপ করতে পারেন না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, কেন? আমি বললাম, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বাকর (রাঃ) সম্পদ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। আপনার চেয়ে তাঁদের এ সম্পদের বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁরা এ সম্পদে হস্তক্ষেপ করেন নি। একথা শুনে তিনি উঠে বেরিয়ে যান। [৩০৩১] যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ‘লিয়্যা’ নামক স্থান হতে আস-সিদরাহ নামক জায়গাতে পৌঁছলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কালো পাথরের পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তায়েফের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। বর্ণনাকারী বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপত্যকায় থামলেন এবং সকল লোকেরা ও থামলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘সাইদু ওয়াজ্জ’ ও ‘ইযাহা’ কাঁটাবিশিষ্ট বৃক্ষের এলাকাটি আল্লাহর পক্ষ হতে হারাম। এ ঘটনা তাঁর তায়েফ অভিযান ও বনু সাক্বীফকে অবরোধ করার পূর্বেকার। [৩০৩২] দুর্বল : যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (১৮৭৫), মিশকাত (২৭৪৯)।
মাদীনাহ্য় আগমন
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফরের প্রস্তুতি নেয়া যাবে না। মাসজিদুল হারাম, আমার এই মাসজিদ এবং মসজিদুল আক্বসা। [২০৩৩]
মাদীনাহ্র মর্যাদা
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আল্লাহর কুরআন এবং তাঁর এ সহীফার মধ্যে যা লিখিত আছে তা ব্যতীত অন্য কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনাহ ‘আয়ের’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত হারাম এলাকা। এখানে যদি কেউ বিদ‘আত করে কিংবা বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয়, তবে তার উপর আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোন ফরয বা নাফ্ল ‘ইবাদাত আল্লাহ্র দরবারে কবুল হবে না। তিনি আরো বলেছেনঃ সকল মুসলিমের নিরাপত্তা বিধান সমান গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি একজন সাধারণ ব্যক্তির নিরাপত্তাও। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের প্রদত্ত নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাবে তার উপর আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোন ফরয বা নাফ্ল ‘ইবাদাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন কওমের লোকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের নেতা হয় তার উপর আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোন ফরয বা নাফ্ল ‘ইবাদাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। [২০৩৪] ‘আলী (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদীসের ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মদীনার) সবুজ ঘাস কাটা যাবে না, শিকার তাড়ানো যাবে না এবং পড়ে থাকা বস্তু উঠানো যাবে না। তবে ঘোষক ঘোষণার উদ্দেশ্যে তা তুলতে পারবে। কেউ সেখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে কোন হাতিয়ার নিয়ে যেতে পারবে না এবং সেখানকার কোন বৃক্ষও কাটা যাবে না, তবে কেউ তার উটের খাদ্য সংগ্রহ করলে তা ভিন্ন কথা। আদী ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্র চতুর্দিকে এক এক ‘বারীদ’ সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। এখানকার গাছের পাতা পাড়া যাবে না, এবং কাটাও যাবে না। তবে উট যেটুকু খাদ্য হিসেবে বহন করে, তা কাটা যাবে। [২০৩৬] সুলাইম ইবনু আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে এক ব্যক্তিকে আটক করতে দেখেছি, যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক মাদীনাহ্র হেরেম এলাকার মধ্যে শিকার করছিলো। তিনি তার সাথের মালপত্র কেড়ে নেন। অতঃপর তার মনিব এসে এ বিষয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ এলাকাটি হারাম ঘোষণা করে বলেছেনঃ এ এলাকায় যদি কাউকে শিকার করতে দেখো তাহলে তার সাথের মালপত্র কেড়ে নিবে। সুতরাং আমি এমন দান ফেরত দেবো না, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দিয়েছেন। অবশ্য তুমি চাইলে তার মূল্য তোমাদেরকে দিবো। [২০৩৭] সহীহ, কিন্তু তার “শিকার করছিলো” কথাটি মুনকার। মাহফূয হলো : “গাছ কাটছিল” যা পরবর্তী (২০৩৮) হাদীসে আসছে। মিশকাত (২৭৪৭)। . সা‘দ (রাঃ) এর মুক্তদাস সা‘দ (রাঃ) মাদীনাহ্র কতিপয় গোলামকে মাদীনাহ্র গাছপালা কাটতে দেখে তাদের মালপত্র কেড়ে নিলেন এবং তাদের মনিবদের বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাদীনাহ্র গাছপালা কাটতে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ কেউ এখানকার কিছু কাটলে তার মালপত্র সেই পাবে যে তা কেড়ে নিবে। [২০৩৮] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যেন রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংরক্ষিত এলাকায় গাছের পাতা না পড়ে এবং কর্তন না করে, তবে কোমলভাবে পাতায় আঘাত করা যাবে। [২০৩৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বাহনে চড়ে, আবার কখনো পায়ে হেঁটে কুবা মাসজিদে আসতেন। ইবনু নুমাইয়ের বর্ণনায় রয়েছে : এবং তিনি সেখানে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [২০৪০]
ক্ববর যিয়ারত
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ আমার উপর সালাম পেশ করলে আল্লাহ আমার ‘রূহ’ ফিরিয়ে দেন এবং আমি তার সালামের জবাব দেই। [২০৪১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে ক্ববরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার ক্ববরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌছানো হবে। [২০৪২] রবী‘আহ ইবনু হুদাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ত্বালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি হাদীস ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, তা কি? তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে শহীদদের কবর যিয়ারতে রওয়ানা হই। শেষ পর্যন্ত আমরা ‘হাররা ওয়াকিমের’ উঁচু টিলায় উঠি। আমরা সেখান থেকে নেমে উপত্যকায় বাঁকে কিছু ক্ববর দেখলাম। ত্বালহা (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এগুলা কি আমাদের ভাইদের ক্ববর? তিনি বললেনঃ আমাদের সাথীদের ক্ববর? অতঃপর আমরা শহীদের ক্ববরের কাছে এলে তিনি বললেনঃ এগুলা আমাদের ভাইদের ক্ববর। [২০৪৩] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহুলাইফার বিস্তীর্ণ এলাকায় উট বসিয়ে যাত্রাবিরতি করে সেখানে সলাত আদায় করলেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও অনুরূপ করতেন। [২০৪৪] আল-কা‘নাবী (রহঃ) তিনি বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, যথাসম্ভব কিছু সলাত না পড়ে মাদীনাহ প্রত্যাবর্তনকারী কোন ব্যক্তির জন্য মু‘আররাস নামক স্থান অতিক্রম করা উচিত নয়। কেননা আমার কাছে হাদীস পৌছেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে যাপন করেছেন, সামান্য ঘুমিয়েছেন এবং সলাত আদায় করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-মাদানী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, মু‘আররাস মাদীনাহ থেকে ছয় মাইল দূরে অবস্থিত। [২০৪৫]