12. বিবাহ

【1】

বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান

‘আলক্বামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের (রাঃ) সাথে মিনায় হাঁটছিলাম। এ সময় ‘উসমান (রাঃ)–এর সাথে দেখা হলে তিনি ‘আবদুল্লাহর (রাঃ) সাথে নির্জনে আলাপ করেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন দেখলেন, এ বিষয়ে তার কোন প্রয়োজন নেই, তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আলক্বামাহ! এদিকে এসো। আমি এলে উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমরা কি আপনার সাথে একটি কুমারী মেয়ে বিয়ে দিব, যাতে আপনি অতীতের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পান? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি এরূপ এজন্যই বলেছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ বিয়ের সামর্থ্য রাখলে সে যেন অবশ্যই বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌন জীবনকে সংযমী করে। আর যে ব্যক্তির বিয়ে করার সামর্থ্য নেই সে যেন অবশ্যই সওম পালন করে। কারন সওম তার যৌনস্পৃহা দমনকারী।

【2】

ধার্মিক মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তার ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা, তার রূপসৌন্দর্য এবং তার দীনদারী। তবে তুমি দীনদার নারী বিয়ে করো। অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।

【3】

কুমারী মহিলা বিয়ে করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি কি বিয়ে করেছো? আমি বলি, হ্যাঁ। তিনি আবার বললেনঃ কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, অকুমারী। তিনি বললেনঃ তুমি কোন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? তার সাথে তুমি খেলতে পারতে সেও তোমার সাথে খেলাধুলা করতে পারতো।

【4】

যে মহিলা সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তাকে বিয়ে করা নিষেধ সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে অভিযোগ করলো, আমার স্ত্রী কোন স্পর্শকারীর হাতকে নিষেধ করে না। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ত্যাগ করো। সে বললো, আমার আশংকা আমার মন তার পিছনে ছুটবে। তিনি বললেনঃ (যেহেতু ব্যভিচারের প্রমাণ নেই) তাহলে তুমি তার থেকে ফায়দা হাসিল করো। মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদাসম্পন্ন নারীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে বন্ধা। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেনঃ না। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেনঃ এমন নারীকে বিয়ে করো যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করবো।

【5】

মহান আল্লাহর বাণীঃ “ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করবে”

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা মারসাদ ইবনু আবূ মারাসাদ আল-গানাবী (রাঃ) মাক্কাহ থেকে বন্দীদেরকে বহন করতেন। সে সময় মাক্কাহতে ‘আনাক’ নাস্মী নামক এক ব্যভিচারিণী ছিলো। সে ছিল মারসাদের বান্ধবী। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি ‘আনাক’-কে বিয়ে করবো? মারসাদ (রাঃ) বলেন, তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘ব্যভিচারিণীকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে করবে না। (সূরাহ আন-নূরঃ ৩) তিনি আমাকে ডেকে এনে আয়াতটি শুনান এবং বলেনঃ তুমি তাকে বিয়ে করো না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাজাপ্রাপ্ত ব্যভিচারী তার অনুরূপ কাউকে বিয়ে করবে।

【6】

যে ব্যক্তি তার দাসীকে মুক্ত করার পর বিয়ে করে

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসীকে দাসত্বমুক্ত করার পর বিয়ে করে সে দু’টি পুরস্কারের অধিকারী। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যাহ (রাঃ)-কে মুক্ত করেন এবং এ মুক্তিকে তার মোহর হিসেবে গণ্য করেন।

【7】

রক্তের কারণে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম তারা দুধপানের কারণেও হারাম

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম, অনুরূপভাবে দুধপান জনিত সম্পর্কের কারণেও তারা হারাম। উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বোনের প্রতি কোন প্রয়োজন আছে কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে দিয়ে আমার কি দরকার? তিনি বললেন, তাকে বিয়ে করবেন। তিনি বললেনঃ তোমার বোন? উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি এরূপ পছন্দ করো? তিনি বললেন, “আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী না। কাজেই আমার ইচ্ছা, আমার বোনও আমার সাথে কল্যাণে শরীক হোক।” তিনি বললেনঃ আমার জন্য এরূপ হালাল নয়। উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি জেনেছি, আপনি আবূ সালামাহর কন্যা ‘দোররাহ’-কে বিয়ে করতে আগ্রহী? তিনি বললেনঃ তুমি বলতে চাইছো আমি উম্মু সালামাহর কন্যাকে বিয়ে করতে চাই। উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সে আমার সপত্নী কন্যাও না হলেও তাকে বিয়ে করা আমার জন্য বৈধ হতো না। যেহেতু সে দুধ সম্পর্কের কারণে আমার ভ্রাতুস্পুত্রী। আমি এবং তার পিতা আবূ সালামাহ উভয়কে সুয়াইবিয়্যাহ দুধ পান করিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের কন্যা ও ভগ্নিকে আমার জন্য পেশ করো না।

【8】

দুধপিতা সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূল কুয়াইসের পুত্র আফলাহ (রাঃ) আমার কাছে এলে আমি তার থেকে পর্দা করলাম। তিনি বললেন, তুমি আমার থেকে পর্দা করছো? অথচ আমি তোমার চাচা। আমি বললাম, তা কেমন করে? তিনি বললেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রী তোমাকে দুধ পান করিয়েছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, আমাকে তো একজন মহিলা দুধ পান করিয়েছেন, কোন পুরুষ তো নয়। এমন সময় আমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি জানালে তিনি বললেনঃ সে তোমার চাচা। সূতরাং সে তোমার নিকট আসতে পারে।

【9】

বয়স্ক লোকের দুধপান সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে এমন সময় আসলেন যখন তার নিকট একটি লোক উপস্থিত ছিলো। হাফস-এর বর্ণনায় রয়েছে, এ দৃশ্য দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হলো। অতঃপর উভয় বর্ণনাকারী একমত হয়ে বর্ণনা করেন যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি তো আমার দুধভাই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাচাই করে দেখো, কারা তোমার দুধ ভাই। কেননা দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে শুধুমাত্র ঐ সময় যখন শিশুর একমাত্র খাদ্য হবে দুধ। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, (দুধের দ্বারা) হাড় মজবুত করা এবং গোশত বৃদ্ধি করা ছাড়া দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় না। তখন আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) বললেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না, এ বিষয়ে তোমরা জ্ঞাত। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনায় রয়েছেঃ যখন হাড় বিস্তৃত হয়। [২০৬০] দুর্বলঃ মাওকুফ হওয়াটা সঠিক। যা এর পূর্বেরটিতে রয়েছে। ইরওয়া (২১৫৩), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬২৯০)।

【10】

বয়স্ক লোক দুধপান করলে যা নিষিদ্ধ হয়

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ ও উম্মু সালামাহ (রাঃ) আবূ হুযাইফাহ ইবনু ‘উতবাহ ইবনু রাবী’আহ ইবনু ‘আবদি শাম্‌স সালিমকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে তার সাথে স্বীয় ভাতিজী ওয়ালীদ ইবনু ‘উতবাহ ইবনু রাবী’আহ্‌র মেয়ে হিন্দাকে বিয়ে দেন। সালিম এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস ছিলো। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়িদকে পালক পুত্র হিসাবে লালন করেছিলেন। জাহিলী যুগের নিয়ম ছিলো, কেউ কাউকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে ঐ ব্যক্তির পুত্র হিসেবে সম্বোধন করতো এবং ঐ লোক মারা গেলে পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারীও তাকে করা হতো। কিন্তু যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “তাদেরকে (পালক পুত্রদেরকে) তাদের (প্রকৃত) পিতার নামে ডাকবে। তারা তোমাদের দীনি ভাই ও বন্ধু” (সূরাহ আহ্‌যাবঃ ৫)। অতঃপর তাদের প্রকৃত পিতার নাম ধরেই ডাকা আরম্ভ হয়। আর পিতার সন্ধান না পাওয়া গেলে তাকে বন্ধু ও দীনি ভাই বলে ডাকা হতো। পরবর্তীতে আবূ হুযাইফাহ ইবনু ‘উত্ববাহর স্ত্রী সাহলা বিনতু সুহাইল ইবনু ‘আমর আল-কুরাইশী আল-‘আমিরী (রাঃ) এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালিমকে আমরা আমাদের পুত্র গণ্য করি। সে আমার ও আবূ হুযাইফাহ্‌র সাথে একই ঘরে থাকে। আর সে আমাকে একই বস্ত্রের মধ্যে দেখেছে। আল্লাহ যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন আপনি তা ভালভাবে অবহিত। এখন তার ব্যাপারে আপনি কি নির্দেশ দেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে তোমার দুধ পান করাও। সুতরাং তিনি তাকে পাঁচ ঢোক দুধ পান করান। তখন থেকে সে তার দুধ পানকারী সন্তান গন্য হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) তার ভাগ্নী ও ভাতিজীদেরকে নির্দেশ দিতেন যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ) নিজে যাদেরকে সাক্ষাত দান ও যাদের আগমন পছন্দ করতেন, তাদেরকে যেন পাঁচ ঢোক নিজেদের দুধ পান করানো হয়, তাদের বয়স দুধ পানের বয়সের (দু’বছরের) বেশী হয়েও। অতঃপর তারা ‘আয়িশাহর কাছে সরাসরি আসতো। কিন্তু উম্মু সালামাহ (রাঃ) এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য স্ত্রীগণ যে কোন ব্যক্তিকে এরূপ দুধসন্তান বানিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি বর্জন করলেন, যতক্ষণ না শিশু বয়সে দুধ পান করা হয়। তারা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদের জানা নেই, সম্ভবত সালিমের বিষয়ে এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি বিশেষ অনুমোদন ছিলো যা অন্য কারোর জন্য প্রযোজ্য নয়।

【11】

পাঁচ ঢোকের কম দুধপানে নিষিদ্ধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় কিনা?

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ কুরআনে প্রথম অবতীর্ণ করেছিলেন যে, দশ ঢোক দুধ পান করলেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম। অতঃপর এ বিধান মান্‌সূখ করে পাঁচ ঢোক পানে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারামের বিধান বহাল করা হয়। কুরআনের এই বিধান পাঠ বহাল রেখেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একবার অথবা দুইবার চোষার কারণে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয় না।

【12】

দুধপান ছাড়ার সময় প্রতিদান দেয়া

হাজ্জাজ ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দুধের হক কিভাবে পূর্ণরূপে আদায় হতে পারে? তিনি বললেনঃ একটি দাস বা দাসী প্রদানের দ্বারা। [২০৬৪] দুর্বলঃ মিশকাত (৩১৭৪), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৯৬/১১৬৯), যঈফ সুনান নাসায়ী (২১৩/৩৩২৯)।

【13】

যেসব মহিলাকে একত্রে বিয়ে করা জায়িয নয়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে এবং কোন ফুফুকে তার ভাতিজীর সাথে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। অনুরূপভাবে কোন নারী ও তার খালা এবং কোন খালা ও তার ভাগ্নীকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। অনুরূপ বড় (বোন)-কে ছোট (বোনের) সাথে এবং ছোটকে বড় (বোনের) সাথেও একত্রে বিয়ে করা যাবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মহিলাকে তার খালার সাথে এবং কোন মহিলাকে তার ফুফুর সাথে একত্রে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন দুই মহিলাকে একত্রে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন যাদের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে ফুফু ও ভাতিজী এবং খালা ও ভাগ্নী। অনুরূপভাবে তিনি এমন দু’জন মহিলাকেও একত্রে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন যারা পরস্পর খালা বা ফুফু। [২০৬৭] ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) আমাকে বলেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে এ আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “তোমরা যদি ভয় করো, ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী অন্য মহিলা বিয়ে করো” (সূরাহ আন-নিসাঃ৩)। তিনি বললেন, হে আমার ভাগ্নে! এ আয়াত ঐসব ইয়াতীম বালিকা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা কারো তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং সে তার সম্পদের অংশীদার। সে তার সৌন্দর্য ও সম্পদকেও পছন্দ করে। এমতাবস্থায় সে তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী, কিন্তু অন্য মহিলাকে তার অনুরূপ মোহর আদায় করতে অনিচ্ছুক। এরূপ অভিভাবকদেরকে ঐ ইয়াতীম বালিকাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে যতক্ষণ না তারা তাদের পূর্ণ মোহর দেয় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর তাদেরকে নিজেদের পছন্দমতো অন্য মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘উরওয়ার (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, পরবর্তীতে লোকেরা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইয়াতীম বালিকাদের বিষয়ে ফাতাওয়াহ চাইলে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ও আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “লোকেরা আপনার কাছে নারীদের বিষয়ে ফাতাওয়াহ জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে তোমাদেরকে সমাধান দিয়েছেন। এ কিতাবের মাধ্যমে শুনানো হচ্ছে হুকুমগুলো এই যে, তাদের জন্য যে মোহার নির্ধারিত তোমরা তা আদায় করো না অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী।” (নিসাঃ ১২৭)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে মহান আল্লাহর কিতাবের মধ্যে তাদের উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তা হচ্ছে, প্রথমের সে আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি ভয় করো যে, ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না। তাহলে তোমরা নিজেদের পছন্দ মোতাবেক অন্য নারী বিয়ে করো।” ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, ইয়াতীম বালিকা সুন্দরী এবং সম্পদশালী না হলে অভিভাবকরা এর কমতি দেখিয়ে তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য নারী বিয়ে করতো। সুতরাং তাদেরকে বলা হয়েছে, স্বার্থের বেলায় পূর্ণ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো এবং পুরো মোহর আদায় করা ছাড়া এসব ইয়াতীমকে বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তারা এসব ইয়াতীমের হক আদায় করতে চাইতো না। ইউনুস বলেন, রাবী‘আ, আল্লাহর বাণী- {…………………………..} -এর অর্থ বলেছেন, তোমরা যদি ভয় করো যে, ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তবে তাদেরকে পরিত্যাগ করো। কেননা আমি তোমাদের জন্য চারজন মহিলা পর্যন্ত বিয়ে করা হালাল করেছি। ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘আলী ইবনুল হুসাইন (রহঃ) তাকে বর্ণনা করেন যে, হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর যখন তারা ইয়াযীদ ইবনু মু‘আবিয়াহ্র নিকট থেকে মদিনায় আসলেন, তখন আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) তার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আপনি আমার উপর কোন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করবেন কি? তিনি বললেন, না। এরপর মিসওয়ার বললেন, আপনি কি আমাকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তলোয়ার খানি দিবেন? কেননা আমার আশংকা হচ্ছে, লোকেরা আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করবে। আল্লাহর শপথ! আপনি আমাকে তা দান করলে কেউ আমার দেহকে নিঃশেষ না করা পর্যন্ত তা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ফাত্বিমাহ (রাঃ) বর্তমান থাকতে আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই মিম্বারের উপর লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুনেছি। তখন আমি যুবক ছিলাম। তিনি বলেছেনঃ ফাত্বিমাহ আমার দেহের একটি অংশ। আর আমার ভয় হচ্ছে, সে দীনী ফ্যাসাদে পতিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনি ‘আবদি শাম্সের সাথে শ্বশুর-জামাতার সম্পর্কের আলাপ করলেন। আর উক্ত শ্বশুর সম্পর্কীয় আত্মীয়তার ভূয়সী প্রশংসাই করলেন। তিনি বলেনঃ সে (জামাতা) আমার সাথে যে কথা দিয়েছিল তা সত্যে পরিণত করেছে এবং যে ওয়াদা করেছিল তাও পূরণ করেছে। কোন হালাল জিনিসকে হারাম এবং হারাম জিনিসকে হালাল করার অধিকার আমার নেই। তবে আল্লাহর শপথ! আল্লাহর রাসূলের কন্যা এবং আল্লাহর দুশমনের কন্যা কখনো এক জায়গায় একত্রে হতে পারে না। ইবনু আবূ মূলাইকাহ (রহঃ) ইবনু আবূ মূলাইকাহ (রহঃ) এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, অতঃপর ‘আলী (রাঃ) সে বিবাহের সংকল্প ত্যাগ করেন। আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাসজিদের মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ হিশাম ইবনুল মুগীরাহ্র বংশের লোকেরা তাদের বংশের এক কন্যাকে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিবের কাছে বিয়ে দিতে অনুমতি চাইছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিবো না, তারপরও আমি অনুমতি দিবে না, অনুমতি দিবো না। অবশ্য আবূ ত্বালিবের পুত্র আমার কন্যাকে তালাক দিলে সে তাদের কন্যা বিয়ে করতে পারবে। কারণ আমার কন্যা আমার দেহেরই একটি অংশ। যেটা তার অপছন্দ, সেটা আমারও অপছন্দ এবং তাকে যা দুঃখ দেয়, তা আমাকেও দুঃখ দেয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের এই অংশটি ইমাম আহমদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত।

【14】

মুত‘আহ বিবাহ

আয-যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীযের (রহঃ) নিকট ছিলাম। তখন আমরা নারীদের মুত‘আহ (সাময়িক) বিয়ে নিয়ে আলাপ করলাম। রাবী‘ ইবনু সাবুরাহ নামক জনৈক ব্যক্তি বললেন, আমি আমার পিতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি বর্ণনা করেছেন, বিদায় হাজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুত’আহ নিষিদ্ধ করে দেন। [২০৭২] শায। মাহফূয হচ্ছেঃ মাক্কাহ বিজয়ের সময়। ইরওয়া (১৯০১)। রাবী‘ ইবনু সাবুরাহ (রহঃ) হতে তার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের সাথে মুত‘আহ বিয়ে হারাম করেছেন।

【15】

আশ-শিগার পদ্ধতির বিয়ে

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার নিষিদ্ধ করেছন। মুসাদ্দাদ (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, শিগার কি? তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিবে এ শর্তে যে, ঐ ব্যক্তিও তার কাছে তার কন্যা বিয়ে দিবে মোহর ছাড়া। অথবা কোন ব্যক্তি নিজের বোনকে অন্য এক ব্যক্তির নিকট বিয়ে দিবে এ শর্তে যে, তার বোনকে এ ব্যক্তি বিয়ে করবে মোহর ছাড়া”। ‘আবদুর রহমান ইবনু হুরমুয আল-আ‘রাজ (রহঃ) আল-‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুল ‘আব্বাস (রহঃ) তার কন্যাকে ‘আবদুর রহমান ইবনুল হাকামের সাথে বিয়ে দেন, আবার ‘আবদুর রহমান তার কন্যাকে আল-‘আব্বাসের কাছে বিয়ে দেন। তারা উভয়ে এই পারস্পরিক বিয়েকে মোহর গণ্য করেন। এ খবর শুনে মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে মাওয়ানের কাছে নির্দেশনামা লিখে পাঠান। তিনি তার ফরমানে বলেন, এটা শিগার, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতে নিষিদ্ধ করেছেন।

【16】

তাহলীল প্রসঙ্গে

‘আলী (রাঃ) ইসমাঈল বলে ন, আমার ধারণা তিনি হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে মারফুভাবে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, সে এবং যে স্বামী তালাক দেয়ার পর পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছায় তাকে অন্যের নিকট বিবাহ দিয়ে তার জন্য হালাল করে নেয়, তারা উভয়ে অভিশপ্ত। হারিস আল-আ‘ওয়ার (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী (বর্ণনাকারী বলেন) আমাদের ধারণা, তিনি ‘আলী (রাঃ), যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উক্ত হাদীসের সমার্থক বর্ণনা করেছেন।

【17】

মনিবের বিনা অনুমতি ক্রীতদাসের বিয়ে করা

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ক্রীতদাস তার মনিবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে সে ব্যভিচারী। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ক্রীতদাস তার মনিবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল গণ্য হবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি যঈফ ও মাওকূফ। এটা ইবনু ‘উমারের (রাঃ) উক্তি। [২০৭৯]

【18】

কেউ তার অপর ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়া অপছন্দনীয়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর নিজের প্রস্তাব না দেয়। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার (মুসলিম) ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। আর কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপর দর-দাম না করে, অবশ্য সে অনুমতি দিলে ভিন্ন কথা।

【19】

বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।

【20】

ওয়ালী সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার সে বিয়ে বাতিল। তিনি একথাটি তিনবার বলেছেন। আর সে যদি তার সাথে সহবাস করে, তাহলে এজন্য তাকে মোহর দিবে। যদি উভয় পক্ষের (অভিভাবকদের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে শাসক হবেন তার অভিভাবক। কারণ যাদের অভিভাবক নাই তার অভিভাবক শাসক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বরেন, জা‘ফার সরাসরি যুহরী (রহঃ) হতে শুনেননি, বরং যুহরী তাকে লিখে পাঠিয়েছেন। [২০৮৪] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়েই হতে পারে না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সানাদ হলোঃ ইউনুস আবূ বুরদাহ হতে, আর ইসরাঈল আবূ ইসহাক্ব হতে আবূ বুরদাহ সূত্রে। উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) তিনি (‘উবাইদুল্লাহ) ইবনু জাহ্শের স্ত্রী ছিলেন। স্বামী মারা গেলে তিনি হিজরাতকারীদের সাথে হাবশায় হিজরাত করেন। অতঃপর হাবশার বাদশা নাজ্জাশী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে তাকে বিয়ে দেন। তিনি (অভিভাবক ছাড়া) তাদের কাছেই অবস্থান করেন।

【21】

নারীদেরকে বিয়েতে বাধা দেয়া নিষেধ

হাসান বাসরী (রহঃ) তিনি বলেন, মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) আমাকে বর্ণনা করেন যে, আমার এক বোন ছিলো। আমার নিকট তার বিয়ের ব্যাপারে পয়গাম আসতো। একদা আমার এক চাচাত ভাই আমার কাছে এলে আমি তার সাথে আমার বোনকে বিয়ে দিলাম। পরে সে তাকে এক তালাক রাজঈ দিয়ে ফেলে রাখলো এমনকি তার ইদ্দাতকাল শেষ হলো। অতঃপর যখন তার বিয়ের পয়গাম আসতে থাকলো। আমার চাচাত ভাইও পুনরায় আমার কাছে পয়গাম পাঠালে আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি তাকে তার কাছে কখনোই বিয়ে দিবো না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমাকে কেন্দ্র করেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “যখন তোমারা নারীদের তালাক দিবে, ইদ্দাতকাল শেষ হওয়ার পর যদি তারা তাদের পূর্ব-স্বামীকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে তোমারা তাদেরকে বাধা দিও না” … (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৩২)। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি আমার শপথের কাফ্ফারাহ দিয়ে বোনকে তার সাথে বিয়ে দেই।

【22】

কোন নারীকে দু’জন ওয়ালী বিয়ে দিলে

সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন নারীকে যদি দুই অভিভাবক বিয়ে দেয়, তবে প্রথম ওয়ালীর বিয়ে কার্যকরী হবে। কোন ব্যক্তি যদি দুই লোকের কাছে কোন জিনিস বিক্রি করে তাহলে দু’জনের মধ্যে প্রথম ক্রেতাই তার প্রাপক। [২০৮৮] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (২২২৪), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৮৯/১১২২), যঈফ সুনান নাসায়ী (৩১৬/৪৬৮২), মিশকাত (৩১৫৬), ইরওয়া (১৮৫৩)।

【23】

মহান আল্লাহর বাণীঃ “জোরপূর্বক কোন মহিলার মালিক হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আর তোমরা তাদের অবরুদ্ধ করবে না” (সূরাহ আন-নিসাঃ ১৯)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) “জোরপূর্বক কোন মহিলার মালিক হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আর তোমরা তাদের অবরুদ্ধ করবে না (সূরাহ আন-নিসাঃ ১৯) এ আয়াতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, (জাহেলী যুগে) কোন ব্যক্তি মারা গেলে মৃতের ওয়ারিসরা মৃতের স্ত্রীর অভিভাবকের পরিবর্তে নিজেরাই মালিক হতো। ইচ্ছে হলে তাদের কেউ তাকে বিয়ে করতো বা তাকে অন্যত্র বিয়ে দিতো, অথবা বিয়ে দিতো না। এ প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, “জোরপূর্বক কোন মহিলার মালিক হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখো না, যদি না তারা স্পষ্ট ব্যভিচার করে”(সূরাহ আন-নিসাঃ ১৯)। এ আয়াত অবতীর্ণের কারণ হলো, (জাহিলী যুগে) পুরুষরা তাদের নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর পর তাদের স্ত্রীদেরও মালিক হয়ে যেতো এবং তাকে এমনভাবে অতিষ্ট করে তুলতো যে, হয়তো সে মারা যেতো অথবা তার মোহরানা তাদেরকে দিত্যে বাধ্য হতো। ফলে আল্লাহ এরূপ কাজ নিষিদ্ধ করেন। 'উমার (রাঃ) এর মুক্তদাস ‘উবাইদুল্লাহ হতে দহহাক (রহঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ (এ আয়াতে) মানুষকে নসীহত করেছেন।

【24】

মেয়েদের কাছে বিয়ের অনুমতি চাওয়া

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বিধবা মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া এবং কোনা কুমারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার অনুমতি কি? তিনি বললেনঃ চুপ থাকা। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াতীম কুমারী মেয়ে থেকে সরাসরি সম্মতি নিতে হবে। তার চুপ থাকাই তার সম্মতি। সে অসম্মতি প্রকাশ করলে তার উপর কোন জবরদস্তি করা চলবে না। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীস উক্ত সানাদে বর্ণিত। তবে তাতে আরো রয়েছেঃ “তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যদি সে কাঁদে অথবা নীরব থাকে’। এখানে ‘বাকাত্’ শব্দটি অতিরিক্ত। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘বাকাত্’ শব্দটি নির্ভরযোগ্য নয়। এটি হাদীসের মধ্যে সংশয়। যা ইবনু ইদরীস থেকে হয়েছে। আর ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কুমারী (বিয়ের) কথাবার্তা বলতে লজ্জাবোধ করে। তিনি বললেনঃ তার চুপ থাকা তার সম্মতি। আবূ হুরায়রা বর্ণিত হাদীসটি শায। ‘আয়িশাহ বর্ণিত হাদীসটি সহীহ। ইরওয়া (১৮৩৪, ১৮৩৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদের থেকে তাদের কন্যাদের ব্যাপারে পরামর্শ নাও। [২০৯৫] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (১৪)।

【25】

যদি পিতা তার কুমারী কন্যাকে তার অমতে বিয়ে দেন

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক যুবতী এসে বললো, তার অসম্মতিতে তার পিতা তাকে বিয়ে দিয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এখতিয়ার প্রদান করলেন (সে বিয়ে রাখতেও পারে অথবা বিচ্ছেদ ঘটাতেও পারে)। ‘ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্র তিনি উক্ত হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) ‘ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) নাম উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে অন্যরাও হাদীসটি মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। আর এটাই প্রসিদ্ধ। [২০৯৭] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।

【26】

স্বামীহীনা (তালাক্ব প্রাপ্তা বা বিধবা) নারী প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা মহিলা (বিয়ের ব্যাপারে) তার অভিভাবকের চেয়ে নিজেই অধিক হকদার এবং কুমারীর বিয়ের ব্যাপারে তার সম্মতি নিতে হবে, তার নীরব থাকা সম্মতি গণ্য হবে। হাদীসের মূল পাঠ আল-কা‘নাবীর। ‘আবদুল্লাহ ইবনুল ফাদল (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ অর্থে বর্ণিত। বিধবা নারী (নিজের বিয়ের ব্যাপারে) তার অভিভাবকের চাইতে নিজেই অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন। আর কুমারী মেয়ে থেকে তার পিতা সম্মতি নিবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের ‘আবুহা’ (তার পিতা) শব্দটি সংরক্ষিত নয়। সহীহঃ পিতার কথা উল্লেখ বাদে (আরবী) শব্দে। ইরওয়া (১৮৩৩)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা নারীর উপর তার অভিভাবকের কোন কর্তৃত্ব নাই, আর ইয়াতীম কুমারী মেয়ে থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং তার চুপ থাকাই তার সম্মতি। খানসাআ বিনতু খিযাম আল-আনসারিয়্যাহ (রাঃ) তার পিতা তাকে বিয়ে দেন তখন তিনি বয়স্কা (সাবালিকা)। তিনি এ বিয়ে অপছন্দ করলেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে অভিযোগ করলে তিনি তার এ বিয়ে বাতিল করে দেন।

【27】

সমতা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা আবূ হিন্দ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথার তালুতে শিংগা লাগান। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে বায়াদাহ গোত্রের লোকেরা! তোমাদের গোত্রের একটি মেয়ে আবূ হিন্দের কাছে বিয়ে দাও। ফলে তারা তাদের একটি কন্যা তার কাছে বিয়ে দিলো। তিনি বললেনঃ তোমরা যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করো সেসবের কোনটিতে উপকার থাকলে তা শিংগা লাগানোতেই রয়েছে।

【28】

জন্মগ্রহণের আগেই বিয়ে দেয়া

সারাহ বিনতু মিক্বসাম (রহঃ) তিনি মায়মূনা বিনতু কারদাম (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের বছরে আমি আমার পিতার সাথে বের হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে আমার পিতা তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন। এ সময় তিনি তাঁর উষ্ট্রীর উপর ছিলেন এবং তাঁর সাথে ছিলো শিক্ষকদের হাতে যেরূপ দোররা থাকে সেরূপ দোররা। এ সময় আমি আরব ও অন্যান্যদের বলতে শুনলাম, দোররা থেকে দূরে থাকো, দোররা থেকে দূরে থাকো, দোররা থেকে দূরে থাকো। অতঃপর আমার পিতা তাঁর কাছে গিয়েই তাঁর পা দু’খানা জড়িয়ে ধরে তাঁর রিসালাতের স্বীকৃতি দেন, তার কাছে অবস্থান করেন এবং তার কথা শুনেন। আমার পিতা বলেন, আমি (জাহেলী যুগে) ‘আসরান’ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছে ‘গাস্রান’। তখন তারিক ইবনুল মুরাক্কা’ বললো, আামাকে এর বিনিময়ে কে একটি তীর দিবে? আমি বললাম, এর বিনিময় কি? সে বললো, আমার সর্বপ্রথম যে কন্যাটি জন্মগ্রহণ করবে তাকে তার সাথে বিয়ে দিবো। আমি আমার তীরটি তাকে দিলাম। এরপর আমি তাদের কাছ থেকে চলে গেলাম। পরে আমি জানতে পারলাম, তার কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে এবং সে সাবালিকাও হয়েছে। অতঃপর আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, আমার স্ত্রী আমাকে দিন। সুতরাং তারা তাকে আমার নিকট সোপর্দ করতে প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু সে (পিতা) শপথ করে বললো, অতিরিক্ত কিছু মোহর না দিলে কন্যাকে দিবো না। অপরদিকে আমিও শপথ করি, তাকে পূর্বে যা দিয়েছি, তা ছাড়া অতিরিক্ত কিছু দিবো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বর্তমানে সে একজন মহিলা। হয়তো সে তোমাকে (বৃদ্ধ) দেখেছে। তিনি আরো বললেনঃ আমার ইচ্ছা, তুমি তাকে ত্যাগ করো। তিনি (কারদাম) বলেন, আমি আমার শপথের জন্য ভীত হলাম এবং রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিকে তাকালাম। তিনি আমার অবস্থা অনুধাবন করে বললেনঃ (শপথের কারণে) তোমার কোন গুনাহ হবে না এবং তোমার প্রতিপক্ষেরও কোন গুনাহ হবে না। [২১০৩] ইবরাহীম ইবনু মাইসারার (রহঃ) খালা হতে জনৈক মহিলা তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমার পিতা এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং তাতে বালির গরমে চলাফেরা অসহনীয় হয়ে পড়ে। তখন এক ব্যক্তি বললো, কে আমাকে তার জুতাজোড়া দিবে? এর বিনিময়ে আমার সর্বপ্রথম যে কন্যাটি জন্মলাভ করবে, তাকে তার সাথে বিয়ে দিবো। এ কথা শুনে আমার পিতা তার জুতাজোড়া তাকে দিলেন। অতঃপর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলো এবং সে সাবালিকাও হলো। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন তবে এতে ‘আল-কাতীর’ শব্দটি উল্লেখ নেই। [২১০৪]

【29】

মোহরানা সম্পর্কে

আবূ সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (স্ত্রীদের) মোহরানা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বারো ঊকিয়া ও এক নাস্স।’ আমি বললাম, ‘নাস্স্’ কি? তিনি বললেন, এক ঊকিয়ার অর্ধেক। আবুল আজফা আস্‌-সুলামী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, সাবধান! তোমরা নারীদের মোহর নির্ধারণে সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ যদি তা দুনিয়ার মর্যাদার বস্তু হতো এবং আল্লাহর নিকট পরহেজগারীর বস্তু হতো, তবে তোমাদের চেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এর যোগ্যতম ব্যক্তি। অথচ তিনি তাঁর স্ত্রীদের কারো মোহর এবং তাঁর কন্যাদের কারো মোহর বারো ঊকিয়ার অধিক ধার্য করেননি। উম্মুল মুমিনীন উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) তিনি ছিলেন ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু জাহশের স্ত্রী। অতঃপর ‘উবাইদুল্লাহ হাবশায় মারা গেলে হাবশার বাদশা নাজ্জাশী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর বিয়ে দেন এবং তাঁর পক্ষ হতে মোহর আদায় করেন। অতঃপর তিনি তাকে শুরাহবীল ইবনু হাসানাহ্র মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাসানাহ হলেন শুরাহবীলের মা। আয-যুহরী (রহঃ) আন-নাজ্জাশী (রহঃ) আবূ সুফিয়ানের-কন্যা উম্মু হাবীবাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ে দেন এবং এতে মোহর ধার্য করেন চার হাজার দিরহাম। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করলে তিনি তা কবুল করেন। [২১০৮]

【30】

মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ

আনাস (রাঃ) একদা রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফের (রাঃ) শরীরে জা‘ফরানের চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কি? তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তাকে কি পরিমাণ মোহর প্রদান করেছো? তিনি বলেন, খেজুরের আঁটির সমপরিমাণ ওজনের স্বর্ণ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিবাহভোজের আয়োজন করো, যদিও তা একটি বকরী দ্বারাও হয়। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মোহর হিসেবে এক মুষ্টি ছাতু অথবা খোরমা দিলে তার বিয়ে বৈধ। [২১১০] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪৫৩), মিশকাত (৩২০৫)। জাবির (রাঃ) অপর একটি হাদীসে বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় এক মুষ্টি খাদ্যের বিনিময়ে ফায়দা ভোগ করতাম। এরূপ হতো মুত‘আহ বিবাহের ক্ষেত্রে। আবূ দাঊদ বলেন, ইবনু জুরাইজ আবুয-যুবাইরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাবির (রাঃ) সূত্রে আবূ ‘আসিমের অনুরূপ অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ।

【31】

কাজের বিনিময়ে বিয়ে

সাহল ইবনু সা’দ আস সাঈদী (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জনৈক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমাকে বিয়ে করার জন্য আপনার সমীপে সমর্পণ করলাম। এরপর সে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। তখন এক (আনসারী) ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাকে আমার সাথে বিয়ে দিন, যদি তাকে আপনার প্রয়োজন না থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তাকে মোহরানা দেওয়ার জন্য তোমার নিকট কিছু আছে কি? সে বললো, আমার এই পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পরিধেয় বস্ত্র দিলে তো তোমাকে (ঘরেই) বসে থাকতে হবে। যেহেতু তোমার কাছে অন্য কোনো বস্ত্র নেই। কাজেই খুঁজে দেখ, কিছু পাও কিনা? সে বললো, আমি কিছুই পাচ্ছি না। তিনি আবার বললেনঃ খুঁজে দেখো, যদিও একটি লোহার আংটিও হয়। সে খোঁজ করলো, কিন্তু কিছুই পেলো না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি কুরআনের কিছু মুখস্ত জানো? সে বললো, হ্যাঁ আমার অমুক অমুক সূরাহ, কয়েকটি সূরার নাম উল্লেখ করে বললো, এগুলো মুখস্ত আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কুরআনের যেটুকু মুখস্ত জানো, তার বিনিময়ে আমি তোমার সাথে তাকে বিয়ে দিলাম। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে এতে পরিধেয় বস্ত্র ও আংটির কথা নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি কুরআনের কতটুকু মুখস্ত জানো? সে বললো, সূরা আল-বাকারাহ অথবা পরবর্তী সূরাহ। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তাকে বিশটি আয়াত শিক্ষা দাও এবং সে তোমার স্ত্রী। [২১১২] মাকহুল (রহঃ) সূত্র সাহল (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মাকহুল (রহঃ) বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরে কারোর জন্য মোহর ছাড়া বিয়ে জায়েয নয়। [২১১৩]

【32】

কেউ মোহর নির্ধারণ ছাড়া বিয়ে করার পর মারা গেলে

’আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্র এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে বর্ণিত, যে কোনো নারীকে বিয়ে করার পর মারা গেছে কিন্তু তার সাথে সঙ্গম করেনি এবং মোহরও ধার্য করেনি। তিনি বললেন, সে পূর্ণ মোহরের হকদার, সে ইদ্দত পালন করবে এবং স্বামীর সম্পদের মীরাসও পাবে। এ সময় মা’ক্বিল ইবনু সীনান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিরওয়াআ বিনতু ওয়াশিকের সম্পর্কে অনুরূপ ফয়সালা দিতে শুনেছি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [২১১৫] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ ইবনু মাসঊদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের (রাঃ) নিকট এক ব্যক্তি পূর্বোক্ত হাদীসের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। বর্ণণাকারী বলেন, লোকেরা এ বিষয়ে এক মাস বা অনেকবার মতভেদ করেন। অতঃপর ইবনু মাসঊদ বললেন, ঐ নারীর ব্যাপারে আমার বক্তব্য হচ্ছে, সে তার বংশের নারীর সমপরিমাণ মোহর পাবে, এতে কমবেশি করবে না, সে মীরাসের অংশও পাবে এবং তাকে ইদ্দাত পালন করতে হবে। এ হলো আমার অভিমত, এটা নির্ভুল হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর ভুল হলে, তা আমার ও শয়তানের পক্ষ হতে। তবে এ ব্যপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পূর্ণ নির্দোষ। অতঃপর আশজা’ গোত্রের আল-জাররাহ ও আবূ সিনান (রাঃ)-সহ কতিপয় লোক দাঁড়িয়ে বললেন, হে ইবনু মাসঊদ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘ঊত্ববাহ (রাঃ) আমাদের মাঝে হেলাল ইবনু মুররার স্ত্রীর বিরওয়াআ’ বিনতু ওয়াশিকের ব্যাপারে অনুরূপ ফাতাওয়াহ দিয়েছিলেন, যেরূপ আপনি দিলেন। বর্ণণাকারী বললেন, অতঃপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ যখন দেখলেন যে, তার ফাতাওয়াহ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতাওয়াহর অনুরূপ, তখন তিনি খুবই খুশি হলেন। ’উক্ববাহ ইবনু ‘আমীর (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ আমি তোমার সাথে অমুক মহিলার বিয়ে দিতে চাই, তুমি কি এতে খুশি আছো? সে বললো, হ্যাঁ। এরপর তিনি উক্ত মহিলাকে বললেন, আমি তোমাকে অমুক পুরুষের সাথে বিয়ে দিলে তুমি কি রাজি হবে? সে বললো, হ্যাঁ। সুতরাং তারা একে অপরকে বিয়ে করলো। তারপর লোকটি তার সাথে সঙ্গম করলো, কিন্তু তার জন্য কোন মোহরানা নির্ধারণ করেনি এবং তাকে নগদ কিছু প্রদান করেনি। লোকটি হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ছিলো। হুদায়বিয়ায় উপস্থিত সকলকে খায়বারের এক এক অংশ দেয়া হয়েছিল। অতঃপর লোকটির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে সে বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে অমুক মহিলার বিয়ে দিয়েছিলেন, অথচ আমি তার জন্য কোন মোহর নির্ধারণ করিনি এবং তাকে নগদ কিছুই দেইনি। সুতরাং আমি আপনাদের সাক্ষী করছি যে, আমি খায়বারের অংশটুকু তাকে মোহরানা বাবদ প্রদান করলাম। অতঃপর মহিলাটি (স্ত্রী) তা গ্রহণ করে এবং তা এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের শুরুতে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) অতিরিক্ত বর্ণণা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে বিবাহ সহজে সম্পন্ন হয় তাই উত্তম বিবাহ। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ লোককে বললেন,...। অতঃপর বাকী অংশটুকু একইরূপ বর্ণণা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আশংকা, এ হাদীসে সংযোজন হয়েছে। কেননা বিষয়টি ব্যতিক্রম।

【33】

বিবাহের খুত্ববাহ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বিবাহের খুত্ববাহ শিক্ষা দিয়েছেনঃ “সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্যই। আমরা তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমাদের দেহ ও আত্মার সবল অনিষ্ট হতে। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, কেউ তাকে হিদায়াত করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমাদের পরস্পরের মধ্যে চাওয়া-নেওয়া ও আত্মীয়দের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন”। “হে ঈমানদারগণ, তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে মরো না’’ (সূরা আলে ইমরানঃ ১০১)। “হে ঈমানদারগণ! সঠিক কথা বলো। তাহলে তিনি তোমাদের কাজকর্ম সংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে মহাসাফল্য লাভ করবে” (সূরা আহযাবঃ ৭০-৭১) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খুত্ববাহ দিতেন। অতঃপর পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তিনি অতিরিক্ত বর্ণণা করেনঃ “তিনি তাকে সত্য সহ ক্বিয়ামাতের পূর্বে পাঠিয়েছেন সুসংবাদ প্রদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের উভয়ের অবাধ্য হবে, সে শুধু নিজেই অমঙ্গল ডেকে আনবে, কিন্তু আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। বনু সুলাইমের এক ব্যক্তি তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে উমামাহ বিনতু ‘আবদুল মুত্তালিবকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তিনি খুত্ববাহ ছাড়াই আমাকে বিয়ে করান। [২১২০]

【34】

অপ্রাপ্তা বয়স্কা মেয়ে বিয়ে দেয়া

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিয়ে করেন। সুলাইমানের বর্ণণায় রয়েছে ছয় বছর। আর তিনি আমার সাথে বাসর যাপন করেন আমাদের নয় বছর বয়সে। সহীহ। এর দীর্ঘ মাতান সামনে আসছে (হা/৪৯৩৩)।

【35】

কুমারী স্ত্রীর নিকট অবস্থান

উম্মু সালমাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সালামাকে বিয়ে করে তার কাছে তিনরাত অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি তোমার পরিজনের কাছে অবহেলিত নও। তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে সাতরাত অবস্থান করবো। তবে তোমাকে সাত রাত দিলে আমার অন্যান্য স্ত্রীদের সাথেও সাত রাত অবস্থান করতে হবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাফিয়্যাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন তখন তিনি তার সাথে তিন দিন অবস্থান করেন। বর্ণণাকারী ‘উসমান বলেন, তিনি বিধবা ছিলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, যদি স্ত্রী থাকা অবস্থায় কেউ কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে সে যেন কুমারী স্ত্রীর নিকট সাত রাত অতিবাহিত করে। আর যদি কেউ বিধবাকে বিয়ে করে তাহলে সে বিধবার কাছে যেন তিন রাত অতিবাহিত করে। বর্ণণাকারী আবু ক্বিলাবাহ বলেন, আমি যদি বলি, আনাস (রাঃ) হাদীসটি মারফুভাবে বর্ণনা করেছেন, তা সঠিক হবে। তবে তিনি বলেছেন, এরূপ করাই সুন্নাত।

【36】

যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে কিছু দেয়ার পূর্বে তার সাথে বসবাস করতে চায়

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘আলী (রাঃ), ফাতিমা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তাকে কিছু প্রদান করো। তিনি বললেন, আমার নিকট কিছুই নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার হুতামীয়া বর্মটি কোথায়? (সেটাই দাও)। মুহম্মাদ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু সাওবান (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী ‘আলী (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাত্বিমাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করেন এবং তার সাথে বাসর যাপনের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কিছু না দিয়ে তার কাছে যেতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিষেধ করেলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে তোমার বর্মটি দাও। সুতরাং তিনি তাকে তার বর্মটি দিয়ে বাসর যাপন করলেন। [২১২৬] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [২১২৭] ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আদেশ দিলেন, আমি যেন জনৈকা মহিলাকে (স্বামীর পক্ষ থেকে) কিছু প্রদানের আগেই সহবাসের অনুমতি দেই। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, খায়সামাহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে হাদীসটি শুনেননি। [২১২৮] দুর্বলঃ যইফ ইবনু মাজাহ (৪৩৩) ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো নারীকে বিয়ের পূর্বে মোহরানা বা দান হিসেবে কিংবা অন্য কোনো প্রকারে পাত্রের পক্ষ হতে কিছু দেয়া হলে তা ওই স্ত্রীলোকটির জন্যই। আর বিয়ের পরে যা কিছু দেয়া হবে সেটা তার যাকে তা দেয়া হয়েছে। আর বিয়ে উপলক্ষে কেউ নিজ কন্যা বা বোনকে কিছু দিলে সেটা অধিক সম্মানজনক। [২১২৯] দুর্বলঃ যইফ আল-জামি’উস সাগীর (২২২৯), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪২৪/১৯৫৫), যঈফ সুনান নাসায়ী (২১৪/৩৩৫৩)।

【37】

নব দম্পত্তির জন্য দু’আ করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে বিয়ের পর শুভেচ্ছা জানালে বলতেনঃ ‘আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন, তোমাকে বরকত দান করুন এবং তোমাদের দাম্পত্য জীবন কল্যাণময় হোক।

【38】

যে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিয়ে করার পর তাকে গর্ভবতী পায়

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে জনৈক আনসারী বর্ণণাকারী আবূস-সারী বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন এবং ‘আনসার’ শব্দটি বলেননি। অতঃপর সমস্ত বর্ণনাকারী একমত হয়ে বর্ণনা করেছেন। ‘বাসরা’ নামক এক ব্যক্তি বলেন, আমি জনৈকা কুমারী মেয়েকে না দেখে বিয়ে করি। অতঃপর বাসর যাপনের সময় আমি দেখি সে গর্ভবতী। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যেহেতু তার বিশেষ অঙ্গ উপভোগ করেছো, সেজন্য তোমাকে মোহরানা দিতে হবে। আর যে সন্তানটি জন্ম নিবে সে তোমার গোলাম হবে। সন্তান প্রসবের পর তুমি বা তোমরা তাকে চাবুক মারবে অথবা বলেছেনঃ তার উপর ‘হদ্দ’ কার্যকর করবে। আবূ দাউদ বলেন, হাদীসটি কাত্বাদাহ (রহঃ) সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ হতে ইবনুল মুসাইয়্যাব সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর ইয়াযীদ ইবনু নুয়াইমের মাধ্যমে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব হতে, এবং ‘আত্বা আল-খোরাসারনী সরাসরি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব সূত্রে বর্ণণা করেছেন। কিন্তু এদের সকলের হাদীস মুরসাল। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীরের হাদীসে রয়েছেঃ ‘বাসরা ইবনু আকসাম জনৈকা মহিলাকে বিয়ে করেন’। আর সমস্ত বর্ণনাকারী বলেছেন, তিনি সন্তানটিকে তার গোলাম বানিয়েছেন। [২১৩১] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) বাসরা ইবনু আকসাম নামক এক ব্যক্তি জনৈক মহিলাকে বিয়ে করলো। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থে বর্ণনা করেন। এতে আরো রয়েছেঃ ‘এবং তিনি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন’। তবে ইবনু জুরাইজের বর্ণিত হাদীসটি পরিপূর্ণ। [২১৩২]

【39】

স্ত্রীদের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই’জন স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল, ক্বিয়ামাতের দিন সে পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফভিত্তিক বন্টন করে বলতেনঃ হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে ইনসাফ, যেটুকু আমার সম্ভব হয়েছে। আর যা আপনার নিয়ন্ত্রণে এবং আমার সাধ্যের বাইরে, সেজন্য আমাকে অভিযুক্ত করবেন না। [২১৩৪] দুর্বলঃ মিশকাত (৩২৩৫), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪২৭), ইরওয়া (২০১৮), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৯৩/১১৫৫), যঈফ সুনান নাসায়ী (২৬১/৩৯৪৩)। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, হে ভাগ্নে! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে অবস্থানের ব্যাপারে কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিতেন না। এমন দিন খুব কমই হয়েছে; যেদিন তিনি আমাদের কাছে আসতেন এবং সহবাস না করে সবার সাথে আলাপ করতেন। অতঃপর যার নিকট রাত যাপনের পালা হতো, তিনি সেখানে রাত যাপন করতেন। যখন সাওদা বিনতু যাম’আহ (রাঃ) বার্ধক্যে পোঁছলেন তখন আশংকা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হয়তো তাকে ত্যাগ করবেন, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার পালার দিনটি ‘আয়িশাকে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এ প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমরা বলতাম, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেনঃ “যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ হতে উপেক্ষিত হওয়ার আশংকা করে.........” (সূরাহ আন-নিসাঃ ১২৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বাণীঃ) “তুমি তাদের মধ্যে যার সাথে ইচ্ছা (থাকতে) পারো এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারো” (সূরাহ আল-আহ্‌যাবঃ ৫১) এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে অবস্থানের দিনের বিষয়ে অনুমতি চাইতেন। মু’আযা (রহঃ) বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কি বলতেন, তিনি বলেন, আমি বলতাম, পালার দিনটি আমার হলে আমি কাউকে আমার উপর অগ্রাধিকার দিব না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে মৃত্যু বরণ করেন তখন সকল স্ত্রীকে ডাকলেন। তারা সকলে একত্র হলে তিনি বললেনঃ আমি পালাক্রমে তোমাদের সকলের মাঝে ঘুরে ঘুরে অবস্থানের শক্তি পাচ্ছিনা। যদি তোমরা ভালো মনে করো, তাহলে আমাকে ‘আয়িশাহর কাছে অবস্থানের অনুমতি দাও। তখন তারা সকলেই তাঁকে অনুমতি দিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন। লটারীতে যার নাম উঠতো তিনি তাকেই সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আর তিনি প্রত্যেক স্ত্রীর জন্যে পালাক্রমে রাত ও দিন ভাগ করে নিতেন। তবে যাম’আহ্‌র এর কন্যা সাওদাহ্‌ (রাঃ) তার পালার দিনটি ‘আয়িশা (রাঃ) কে দিয়ে দেন।

【40】

স্ত্রীর বাড়িতে সহাবস্থানের শর্তে বিয়ে করা

‘উক্ববাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘শর্তসমূহের মধ্যে যে শর্ত দ্বারা তোমরা স্ত্রীদের গুপ্তাঙ্গ ব্যবহার হালাল করে থাকো তা পূরণ করা অধিক অগ্রগণ্য।

【41】

স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার

ক্বায়িস ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (কুফার) আল-হীরা শহরে এসে দেখি, সেখানকার লোকেরা তাদের নেতাকে সিজদা করছে। আমি ভাবলাম, (তাহলে তো) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই সিজদার অধিক হকদার। অতঃপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এসে বলি যে, আমি আল-হীরা শহরে গিয়ে দেখে এসেছি, সেখানকার লোকেরা তাদের নেতাকে সিজদা করে। সুতরাং হে আল্লাহ্‌র রাসূল! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনিই তো এর অধিক হকদার যে, আমরা আপনাকে সিজদা করি? তিনি বললেনঃ যদি (মৃত্যুর পর) তুমি আমার ক্ববরের পাশ দিয়ে যাও তখন কি তুমি সেটাকে সিজদা করবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ সাবধান! তোমরা এরূপ করবে না। আমি যদি কোন মানুষকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, তবে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ্‌ স্ত্রীদের উপর স্বামীদের অধিকার দিয়েছেন। [২১৪০] সহীহ, তবে ক্ববর সম্পর্কিত বাক্যটি বাদে। যইফ আল-জামি’উস সাগীর (৪৮৪২), ইরওয়া (১৯৯৮), মিশকাত (৩২৬৬) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্বামী তার স্ত্রীকে তার সাথে বিছানায় শোয়ার জন্য আহবান করার পর যদি স্ত্রী না আসে এবং স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীকে অভিসম্পাত করতে থাকেন।

【42】

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার

হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) তার পিতার হতে তার দাদা তিনি বলেনঃ একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা আমাদের স্ত্রীদের কোন স্থানে সঙ্গম করবো, আর কোন স্থান বর্জন করবো? তিনি বললেনঃ তুমি যেভাবে ইচ্ছে করো তোমার ফসল উৎপাদন স্থানে (সম্মুখের লজ্জাস্থানে) সঙ্গম করো। আর তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি পরিধান করলে তাকেও পরিধান করাবে। তাকে গালমন্দ করবে না এবং মারবে না। ইমামা আবু দাউদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, শু’বাহ বর্ণনা করেছেন, যখন তুমি খাবে তাকেও খাওয়াবে, আর যখন তুমি পরিধান করবে, তখন তাকেও পরাবে। মু’আবিয়াহ্‌ আল-কুশাইরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না।

【43】

স্ত্রীদেরকে প্রহার করা

আবু হুরাইরাহ আর-রাক্বাশী (রহঃ) হতে তার চাচা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমরা স্ত্রীদের অবাধ্য হওয়ার আশংকা করো, তাহলে তাদেরকে তোমাদের বিছানা থেকে পৃথক করে দাও। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তাদের সাথে সহবাস বর্জন করো। ইয়াস ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌-র দাসীদেরকে মারবে না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বললেন, মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর অনেক মহিলা এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। সুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়। ‘উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে (শালীন শিক্ষার উদ্দেশে) আঘাত করলে এজন্য সে দোষী হবে না। [২১৪৭] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামিউস সাগীর (৬২১৮), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪৩১), মিশকাত (৩২৬৮)।

【44】

যে বিষয়ে দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে হঠাৎ কোন নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমরা চোখ ফিরিয়ে নিবে। ইবনু বুরাইদাহ (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে বললেন, “হে ‘আলী! কোন নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথমবার দেখার অনুমতি আছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা যায়িয নয়। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন অপর মহিলার দেহ স্পর্শ করে এমনভাবে তার বর্ণনা নিজের স্বামীর কাছে না দেয়, যেন সে তাকে চাক্ষুস দেখছে। জাবির (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন অপরিচিতা নারীকে দেখে ফেললে তিনি তৎক্ষণাত যাইনাব বিনতু জাহ্শ (রাঃ)-র নিকট গিয়ে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করেন। অতঃপর সাহাবীদের কাছে গিয়ে বলেনঃ নারী শয়তানের বেশে এসে যায়। সুতরাং তোমাদের কারো মনে এরূপ কিছু জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর কাছে গমন করে। কেননা এতে তার অন্তরের সুপ্ত জাগ্রত হয় সে যেন অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে আসে। কেননা এতে মনের বাসনা দুর্বল হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত হাদীসের চাইতে সগীরাহ গুণাহ সম্পর্কিত কোন হাদীস দেখিনি। তিনি বলেছেনঃ মহান আল্লাহ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে যেনার একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা সে অবশ্যই করবে। সুতরাং দৃষ্টি হচ্ছে চোখের যেনা, প্রেমালাপ হচ্ছে জিহবার যেনা এবং অন্তরের যেনা হচ্ছে তা ভোগ করার আকাঙ্খা, আর গুপ্তস্থান তা সত্য কিংবা মিথ্যায় পরিণত করে। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে যেনার একটি অংশ আছে। অতঃপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। তিনি বলেছেন, দুই হাত যেনা করে, হাতের যিনা হচ্ছে স্পর্শ করা। দুই পা যেনা করে, অগ্রসর হওয়াই হচ্ছে পায়ের যেনা, মুখও যেনা করে, মুখের যেনা হচ্ছে চুমু খাওয়া। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উক্ত হাদীসের ঘটনায় উল্লেখ করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কানের যিনা হচ্ছে আলাপ শোনা।

【45】

বন্দী দাসীদের সাথে সঙ্গম করা

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হুনাইনের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতাসের দিকে একদল সৈন্য পাঠালেন। তারা শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের নারীদেরকে বন্দি করে আনেন। কিন্তু সেই বন্দী নারীদের মুশরিক স্বামীরা বর্তমান থাকায় কতিপয় সাহাবী তাদের সাথে সঙ্গম করাকে গুণাহ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেনঃ “যে মহিলাদের স্বামী আছে, তারা তোমাদের জন্যে হারাম। তবে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত” (সূরা আন-নিসাঃ ২৪)। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী দাসী যখন তাদের ইদ্দতকাল সমাপ্ত করবে তখন তারা তোমাদের জন্যে বৈধ। আবূ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক যুদ্ধে আসন্ন প্রসবা এক নারীকে দেখতে পেয়ে বলেনঃ সম্ভবত এর মালিক এর সাথে সহবাস করেছে। লোকেরা বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমি ইচ্ছা করেছিলাম সহবাসকারীকে এমন অভিসম্পাত করি যেন সে অভিশপ্ত অবস্থায় কবরে প্রবেশ করে। সে কিভাবে ঐ সন্তানটিকে তার উত্তরাধিকারী বানাবে যা তার জন্যে হালাল নয়? আর সে কিভাবে এই সন্তানকে গোলাম বানাবে? অথচ তা তার জন্যে বৈধ নয়। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। রুয়াইফি’ ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাঃ) হানাশ (রহঃ) বলেন, একদা রুয়াইফি’ আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ প্রদানের সময় বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা কিছু শুনেছি তোমাদেরকে শুধু তাই বলব। তিনি হুনাইনের দিন বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যে বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন করেন। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলার সাথে সঙ্গম করা। যে ব্যক্তি আল্লহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্যে বৈধ নয় কোন বন্দী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে পবিত্র হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যেও বৈধ নয় বন্টনের পূর্বেই গণীমাত বিক্রয় করা। ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) এতে যতক্ষণ না হায়িয থেকে মুক্ত হয় কথাটি রয়েছে। এতে আরো রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ইমান রাখে সে যেন মুসলিমদের যুদ্ধলব্ধ পশুর পিঠে না চড়ে (বন্টনের পূর্বে), অবশেষে সে তা দুর্বল অবস্থায় ফেরত দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ইমান রাখে সে যেন মুসলিমদের গণিমতের কাপড় না পরে, অবশেষে তা পুরাতন করে ফেরত দেয়। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের মধ্যে “ঋতুবতী নারী” শব্দটি সংরক্ষিত নয়।

【46】

বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান

‘আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিয়ে করে অথবা কোন দাসী ক্রয় করে তখন সে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর মধ্যকার কল্যাণ এবং এর মাধ্যমে কল্যাণ চাই এবং তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ ও তার মাধ্যমে অকল্যাণ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই”। আর যখন কোন উট কিনবে তখন যেন সেটির কুঁজের উপরিভাগ ধরে অনুরূপ দু’আ করে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদের বর্ণনায় রয়েছেঃ অতঃপর তার কপালের চুল ধরে বলবে। স্ত্রী এবং দাসীর ব্যাপারেও বরকতের দু’আ করবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার সময় যেন বলেঃ “বিসমিল্লাহ! হে আল্লাহ! আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং যে সন্তান আমাদেরকে দান করবে তাদেরকেও শয়তান থেকে দূরে রাখো।” অতঃপর এ সঙ্গমের মাধ্যমে যে সন্তান আসবে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে সে অভিশপ্ত। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ইয়াহুদীরা বলতো, যদি কোন ব্যক্তি স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে, তাহলে সন্তান টেরা হয়ে জন্মাবে। তখন এর প্রতিবাদে মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে ক্ষেতস্বরূপ। সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা তোমরা তোমাদের ক্ষেতে গমন করো” (সূরা আল-বাক্বারাহ্‌ ২২৩)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে ক্ষমা করুন, তিনি ভুল করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, আনসারদের এই জনপদের লোকেরা মূর্তিপুজারী ছিলো। তারা আহলে কিতাব ইয়াহুদীদের সাথে বসবাস করতো এবং ইয়াহুদীরা জ্ঞানের দিক দিয়ে মূর্তিপুজারীদের উপর নিজেদের মর্যাদা দিতো। সুতরাং তারা নিজেদের কাজকর্মে ইয়াহুদীদের অনুসারী ছিলো। আহলে কিতাবদের নিয়ম ছিলো, তারা স্ত্রীদেরকে কেবল চিৎ করে শুইয়ে তারপর সঙ্গম করতো এবং বলতো, মহিলাদের সতর এ নিয়মে অধিক সংরক্ষিত। আনসার সম্প্রদায়ও তাদের এ কাজে আহলে কিতাবদের অনুসরণ করতো। কিন্তু কুরাইশরা নারীদেরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে সঙ্গম করতো এবং তাদেরকে সামনাসামনি, পেছনের দিকে এবং চিৎ হয়ে শুইয়ে বিভিন্নিভাবে সঙ্গম করতো। অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মদিনায় আসলেন তখন তাদের এক ব্যক্তি জনৈক আনসারী নারীকে বিয়ে করে তার সাথে ঐভাবে সঙ্গম করতে চাইলো যেভাবে তারা মক্কার নারীদের সাথে করতো। কিন্তু মহিলাটি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা শুধু এক অবস্থায়ই সঙ্গম করি। সুতরাং তোমাকেও সেভাবেই সঙ্গম করতে হবে অন্যথায় আমার থেকে দূরে থাকো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ খবর পৌঁছালে মহান আল্লাহ্‌ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, সুতরাং তোমরা যেভাবে ইচ্ছা করো তোমাদের ক্ষেতে গমন করো”। অর্থাৎ সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে বা চিৎ করে শুইয়ে তার লজ্জাস্থানেই সঙ্গম করো।

【47】

ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম ও একত্রে বসবাস

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) ইয়াহুদীদের মধ্যে কোন নারী ঋতুবতী হলে তারা তাদের ঘর থেকে বের করে দিতো এবং তাদের সাথে খানাপিনায়ও শরীক করতো না এবং তাদের সাথে একই ঘরে অবস্থান করতে দিতো না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলে, মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “লোকজন আপনাকে হায়িয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুন, তা অপবিত্রতা। সুতরাং তোমরা হায়িয চলাকালে সঙ্গম বর্জন করো ...। “অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাদেরকে নিয়ে একই ঘরে থাকো এবং সঙ্গম ছাড়া সবই একত্রে করো। এ কথা শুনে ইয়াহুদীরা বললো, এ ব্যক্তি তো আমাদের কাজগুলোকে শুধুমাত্র বর্জনই করে না, বরং স্বেচ্ছায় এর বিরোধিতাও করে। তখন উসাইদ ইবনু হুদাইর ও ‘আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! (ইয়াহুদীরা) এরূপ বলেছে। সুতরাং আমরা কি হায়িয অবস্থায় সঙ্গম করবো? একথা শুনে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। আমরা মনে করলাম, তিনি এদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন। এমন সময় তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঠিক তখন তাদের সামনে দিয়ে কিছু দুধ উপঢৌকন হিসাবে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসলে তিনি তাদের খোঁজে লোক পাঠালেন। তখন আমরা বুঝতে পারলাম, তিনি তাদের উপর রাগান্বিত হননি। সহীহ। এটি গত হয়েছে হা/২৫৮। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হায়িয অবস্থায় আমি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই কম্বলে রাত কাটাতাম। আমার দেহের রক্ত তাঁর দেহে লাগলে তিনি শুধু ঐ স্থানটি ধুয়ে নিতেন। আর যদি রক্তের কিছু তাঁর কাপড়ে লাগতো তখনও তিনি শুধু তাই ধুয়ে নিতেন এবং সেই কাপড় পরেই সালাত আদায় করতেন। মায়মূনাহ বিনতুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে একত্রে থাকতে চাইলে, তাকে ইযার শক্তভাবে বেঁধে পরিধান করার নির্দেশ দিতেন, অতঃপর তার সাথে ঘুমাতেন।

【48】

ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফ্‌ফারাহ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণিত, যে হায়িয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করেছে। তিনি বলেনঃ সে এক অথবা অর্ধ দীনার সদাক্বাহ করবে। [২১৬৮] সহীহ। এটি গত হয়েছে হা/২৬৪। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যদি কেউ হায়িয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে তবে তাকে এক দীনার এবং যদি রক্তস্রাব না থাকাকালীন সময়ে সহবাস করে তবে অর্ধ দীনার সদাক্বাহ করবে। [২১৬৯] সহীহ মাওকুফ। এটি গত হয়েছে হা/২৬৫।

【49】

‘আযল’ (স্ত্রী যৌনাঙ্গের বাইরে বীর্যপাত)

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট ‘আযল’ সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ এরূপ কেন করে থাকে? কিন্তু তিনি এ কথা বলেননি যে, তোমাদের কেউ এরূপ করবে না”। কেননা যে প্রাণ দুনিয়াতে সৃষ্টি হওয়ার জন্য নির্ধারিত, আল্লাহ তা সৃষ্টি করবেনই। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একটি দাসী আছে, আমি তার সাথে ‘আযল’ করে থাকি। আমি তার গর্ভবতী হওয়া পছন্দ করি না। আর আমি তাই (সঙ্গম) ইচ্ছা রাখি যা অন্যান্য পুরুষেরা (দাসীর সাথে) ইচ্ছা রাখে। ইয়াহুদীরা বলে থাকে, ‘আযল’ নাকি গোপন হত্যা। তার কথা শুনে তিনি বললেনঃ ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে। যদি মহান আল্লাহ কোন প্রাণীকে সৃষ্টি করা নির্ধারিত করেন তবে তা রোধ করার ক্ষমতা তোমার নেই। ইবনু মুহায়রিয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে গিয়ে বসি এবং তাকে ‘আযল’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বনু মুসতালিকের যুদ্ধাভিযানে বের হই। তখন আমাদের হাতে কিছু মহিলা বন্দী হয়। ঐ সময় আমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে অবস্থান করায় নারী বন্দীদের প্রতি আমাদের আকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়। অতঃপর আমরা তাদেরকে অধিক মূল্যে বিক্রি করার ইচ্ছায় তাদের সাথে আযল করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা ভাবলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথেই আছেন। কাজেই তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে আযল করা উচিৎ হবে না। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমরা এরূপ না করলে কি ক্ষতি? কেননা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যারা সৃষ্টি হবে বলে নির্ধারিত তারা তো জন্মাবেই। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক আনসারী লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললো, আমার একটি দাসী আছে, আমি তার সাথে সঙ্গম করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে আযল করো। কিন্তু তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত, তা নিশ্চিত আসবেই। বর্ণনাকারী বলেন, কিছু দিন পর ঐ ব্যক্তি পুনরায় তাঁর কাছে এসে বললো, দাসীটি গর্ভবতী হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত তা অবশ্যই আসবে।

【50】

কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পর তা অন্যকে বর্ণনা দেয়া নিষেধ

আবূ নাদরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ত্বোফাওয়াত স্থানের এক বৃদ্ধ আমাকে বলেছেন, একদা আমি মদিনায় মেহমান হিসেবে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট অবস্থান করি। এ সময় আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের মধ্যে কাউকে তার চেয়ে অধিক ইবাদতকারী ও নিষ্ঠাবান অতিথি পরায়ণ দেখিনি। একবার আমি তার কাছে ছিলাম, তখন তিনি খাটের উপর বসা ছিলেন। তার সাথে পাথর বা খেজুরের আঁটির একটি থলি। এ সময় খাটের নিচে মেঝের উপর তার একটি কৃষ্ণবর্ণ দাসী বসা ছিল। তিনি ঐ গুটিগুলো দিয়ে তাসবীহ পাঠ করতে থাকেন। থলির গুটি শেষ হলে তিনি থলিটি দাসীর কাছে নিক্ষেপ করেন, আর সে তা ভর্তি করে পুনরায় তাকে প্রদান করে। তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে আমার পক্ষ হতে এবং রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পক্ষ হতে হাদীস বর্ণনা করবো না? লোকটি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন, একদা আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাসজিদে পড়ে থাকি। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলেন, দাওসী যুবকটির সংবাদ কে দিতে পারে? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। জনৈক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তো জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাসজিদের এক পাশে পড়ে আছেন। তিনি হেঁটে আমার কাছে আসলেন এবং তাঁর হাত আমার গায়ের উপর রেখে আমাকে কিছু উত্তম কথা বললেন। আমি উঠে বসলাম। এরপর তিনি এখান থেকে হেঁটে সলাত আদায়ের স্থানে গিয়ে লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। এ সময় তাঁর সাথে দুই কাতার পুরুষ ও এক কাতার মহিলা অথবা দুই কাতার মহিলা ও এক কাতার পুরুষ ছিলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ যদি শয়তান আমাকে সলাতে কিছু ভুলিয়ে দেয় তবে পুরুষেরা সুবহানাল্লাহ বলবে, আর মহিলারা হাতের উপর হাত মেরে আমাকে সতর্ক করবে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সলাত পড়ালেন, কিন্তু সলাতে কোথাও ভুল করেননি। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা নিজ অবস্থানে থাকো। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে পুরুষদের দিকে মুখ ফিরে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে নিজ স্ত্রী সঙ্গমের সময় দরজা বন্ধ করে, নিজেকে পর্দায় আড়াল করে এবং আল্লাহর নির্দেশমত তা গোপন রাখে? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেলঃ পরে (মিলন শেষে) এ কথা বলে যে, আমার স্ত্রীর সাথে আমি এরূপ এরূপ করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন নারী আছে কি যে তার সঙ্গমের কথা নারীদেরকে বলে বেড়ায়? নারীরাও সবাই চুপ হয়ে গেল। এ সময় এক যুবতী নারী তার দুই পায়ে ভর দিয়ে ঘাড় উঁচু করে বসলো, যাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে পান এবং তার কথা শুনতে পান। যুবতী বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা বলেছেন, আসলেই তা ঘটে। পুরুষেরা পুরুষদের মধ্যে, আর নারীরা নারীদের মধ্যে এরূপ কথা বলে থাকে। এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জানো, এদের উদাহরণ কি? তিনি বললেনঃ এদের উদাহরণ হচ্ছে, এমন এক শয়তানের যে স্ত্রী শয়তানের কাছে গিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের যৌনক্ষুধা মিটালো, এই দৃশ্য লোকেরা স্বচক্ষে দেখলো। সাবধান! জেনে রাখো, পুরুষের জন্য এমন সুগদ্ধি ব্যবহার করা উচিৎ, যার ঘ্রাণ আছে কিন্তু রং নেই। সাবধান! নারীদের জন্য এমন সুগদ্ধি ব্যবহার করা উচিত যেটার রং আছে, কিন্তু ঘ্রাণ নেই। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের এখান থেকে পরবর্তী অংশটুকু আমি আমার শায়খ মু’আম্মাল ও মূসা উভয় থেকে সংরক্ষণ করেছি। (এতে রয়েছেঃ) সাবধান! কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষের সাথে এবং কোন নারী যেন অন্য নারীর সাথে একই বিছানায় না ঘুমায়। অবশ্য পিতা পুত্রের সাথে এবং পুত্র পিতার সাথে একই বিছানায় ঘুমাতে পারে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তাদের তৃতীয় উক্তিটি আমার মনে নেই। অবশ্য তা মুসাদ্দাদের হাদীসে আছে, কিন্তু আমি তার থেকে কথাটি দৃড়ভাবে আয়ত্ত করতে পারিনি। [২১৭৪] দুর্বলঃ ইরওয়া (২০১১, তা’লীকুর রাগীব ৯৩/৯৬)।