13. তালাক

【1】

যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

【2】

কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।

【3】

তালাক ঘৃণিত

মুহারিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট হালাল বিষয়ের মধ্যে তালাকের চেয়ে অধিক ঘৃণিত কিছু নেই। [২১৭৭] দুর্বলঃ যঈফ আল জামি‘উস সাগীর (৪৯৮৬), ইরওয়া (২০৪০)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হচ্ছে তালাক। [২১৭৮] দুর্বলঃ যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪৪১/২০১৮), ইরওয়া (২০৪০), মিশকাত (৩২৮০)।

【4】

নির্ধারিত নিয়মে তালাক প্রদান

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুগে তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিলেন। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো এবং তুহর’ পর্যন্ত রেখে দিতে বলো। এরপর আবার হায়িয ও তার থেকে আবার পাক হওয়ার পর ইচ্ছা করলে সে তাকে রেখে দিবে অন্যথায় সহবাসের আগেই তালাক দিবে। মহান আল্লাহ এভাবে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় এক তালাক দেন। অতঃপর ইমাম মালিক বর্ণিত হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিলেন। ‘উমার (রাঃ) এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অবহিত করলে তিনি বললেনঃ তাকে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো, পরে হায়িয থেকে পবিত্র হলে অথবা সে গর্ভবতী হলে তাকে তালাক দিবে। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দেয়ায় ‘উমার (রাঃ) বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অবহিত করালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলো। সে যেন তাকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দেয়। অতঃপর আবার ঋতুবতী হয়ে পুনরায় পবিত্র হওয়ার পর ইচ্ছে হলে সঙ্গমের আগেই তাকে তালাক দিতে পারবে। মহান আল্লাহ এভাবে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইউনুস ইবনু জুবাইর (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে কত তালাক দিয়েছিলেন? তিনি বললেন, এক তালাক। ইউনুস ইবনু জুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছে, তার হুকুম কি? তিনি বললেন, তুমি কি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে চিনো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্থায় তালাক দিয়েছিলো। ফলে ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে বলো, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে। তারপর ইদ্দতাকালের পূর্বেই যেন তাকে তালাক দেয়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস ক্রলাম, ঐ তালাকটি কি গ্ণ্য হবে? তিনি বললেন, কেন নয়? তোমার ধারণা, যদি সে এরূপ করতে অপারগ হয় তবে সে আহাম্মকের মত কাজ করলো। ‘উরওয়াহ (রহঃ)-এর মুক্তদাস ‘আবদুর রহমান ইবনু আইমান (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আর আবুয যুবাইর (রহঃ) তা শুনলেন, কেউ তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিলে তার হুকুম কি? তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। ফলে ‘উমার (রাঃ) এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তিনি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বলেছেন এবং এটাকে দোষণীয় বলেননি। তিনি বলেছেনঃ যখন সে ঋতু থেকে পবিত্র হবে তখন ইচ্ছে হলে তালাক দিবে অথবা রাখবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিবে, তখন তাদের ইদ্দাত আসার পূর্বে তালাক দিবে।” ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইউনুস ইবনু জুবাইর, আনাস ইবনু সীরীন, সাঈদ ইবনু জুবাইর, যয়িদ ইবনু আসলাম, আবূয যুবাইর এবং মানসূর (রহঃ) আবূ ওয়ায়িলের সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তাদের সকলের হাদীসের অর্থ হলোঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদেশ দিয়েছেন, সে তার স্ত্রীকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দিবে। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) সালিম সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর সালিম হতে তিনি নাফি‘ হতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে ইমাম যুহরীর বর্ণনা হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আবদুল্লাহকে নির্দেশ দিলেন, তুমি তাকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দাও, এরপর পুনরায় ঋতুবতী হয়ে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রেখে দাও, অতঃপর ইচ্ছে হলে তালাক দিবে অথবা রেখে দিবে। আর ‘আত্বা আল-খোরসানী হতে হাসান বাসরীর মাধ্যমে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাফি‘ ও যুহরীর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, উল্লেখিত সব হাদীস আবূয যুবাইরের বর্ণনার বিপরীত।

【5】

যে ব্যক্তি স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনলো অথচ এর সাক্ষী রাখলো না

মুতাররিফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, এ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক তালাক দেয়ার পর পুনরায় তার সাথে সহবাস করেছে, অথচ তার তালাক প্রদান ও পরে ফিরিয়ে আনার সময় কাউকে সাক্ষী রাখেনি। তিনি বললেন, তুমি সুন্নাতের পরিপন্থী তালাক দিয়েছো এবং সুন্নাত বিরোধী নিয়মে তাকে ফিরিয়ে এনেছো। ভবিষ্যতে তালাক প্রদান ও ফিরিয়ে আনার সময় সাক্ষী রাখবে। পুনরায় এরূপ করবে না।

【6】

ক্রীতদাসের সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদান

বনী নাওফালের মুক্তদাস আবূ হাসান (রহঃ) তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট জনৈক ক্রীতদাস সম্পর্কে ফাতাওয়াহ চাইলেন, তার একজন দাসী স্ত্রী ছিলো যাকে সে দুই তালাক দেয়। পরে তারা উভয়ে দাসত্বমুক্ত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঐ মহিলাকে পুনরায় বিয়ের পয়গাম দেয়া তার জন্য ঠিক হবে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ পারবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। [২১৮৭] দুর্বলঃ যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪৫৩), যঈফ সুনান নাসায়ী (২২৫/৩৪২৮) ‘আলী ইবনুল মুবারক (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের সানাদ ও অর্থে হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তোমার জন্য আর একটি তালাক অবশিষ্ট আছে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপই ফায়সালা দিয়েছেন। [২১৮৮] ‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দাসীর তালাক দু’টি এবং তার ইদ্দাতকাল হচ্ছে দুই হায়িয। আবূ ‘আসিম বলেন, মুযাহির আমাকে ক্বাসিমের মাধ্যমে ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেনঃ দাসীর ইদ্দাত হচ্ছে দুই হায়িয। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি অজ্ঞাত (মাজহুল)। [২১৮৯]

【7】

বিয়ের আগে তালাক প্রদান

‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে মহিলার উপর অধিকার নেই তাকে তালাক দেয়া যায় না, যে গোলামের উপর মালিকানা নেই তাকে আযাদ করা যায় না। তোমার মালিকানাধীন বস্তুই কেবল বিক্রয়যোগ্য। ইবনুস সাববাহ আরো বলেন, যে বস্তুর উপর তোমার মালিকানা নেই তার মান্নাত পূরণ করতে হবে না। ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে এ সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের জন্য শপথ করে তার শপথ হয়নি এবং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শপথ করে তার শপথও হয়নি (এরূপ শপথ পূরণ করতে হবে না)। ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এতে আরো রয়েছেঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে মান্নত করা হয় কেবল তাই পূরণ করতে হয়।

【8】

রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দেয়া

ইলিয়ার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আদী ইবনু ‘আদী আল-কিনদীর সাথে সিরিয়া থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কায় গেলাম। তিনি আমাকে সাফিয়্যাহ বিনতু শাইবার কাছে পাঠালেন। কেননা সাফিয়্যাহ ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে হাদীস সংরক্ষন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ রাগের অবস্থায় কোন তালাক হয় না এবং দাসত্বমুক্ত করা যায় না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমার মতে ‘আল-গিলাক্ব’ অর্থ রাগ।

【9】

হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে তালাক প্রদান

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি কাজ এমন যা বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা বাস্তবিকই ধর্তব্য। তা হলোঃ বিবাহ, তালাক ও স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা।

【10】

তিন তালাকের পর স্ত্রীকে পুনঃগ্রহণ প্রসঙ্গ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর বাণীঃ “তালাকপ্রাপ্তা নারী যেন তিন কুরুপর্যন্ত নিজেদেরকে বিরত রাখে এবং আল্লাহ তাদের গর্ভে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা বৈধ নয়…” এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গ হলো, (ইসলামের প্রথম যুগে) কেউ স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে পুররায় ফিরিয়ে আনার অধিকারী হতো, এমনকি তাকে তিন তালাক দিতো। অতঃপর এ বিধান রহিত করে আল্লাহ বলেছেনঃ “তালাক দুই বার…”। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রুকানার পিতা ‘আবদু ইয়াযীদ ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠী উম্মু রুকানাকে তালাক দেন এবং মুযাইনাহ গোত্রের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। একদা ঐ মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বললো, তার স্বামী সহবাসে অক্ষম। যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। সুতরাং আপনি আমার ও তার মাঝে বিচ্ছেদ করিয়ে দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতে অসন্তুষ্ট হন এবং রুকানা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে ডেকে আনেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত লোকজনকে বলেনঃ তোমরা কি লক্ষ্য করেছো যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের অঙ্গের সাথে মিল রয়েছে? তারা বললো, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আবদু ইয়াযীদকে বলেনঃ তুমি তাকে তালাক দাও। সুতরাং তিনি তাকে তালাক দিলেন। তিনি বলেনঃ তুমি রুকানার মা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে পুনরায় গ্রহণ করো। তিনি বলেন, আমি তো তাকে তিন তালাক দিয়েছি, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি বলেনঃ আমি তা জানি, তুমি তাকে গ্রহণ করো। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে তখন তাদের ইদ্দাতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিবে” (সূরাহ আত্-তালাকঃ ১) ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, নাফি’ ইবনু উজাইর ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আলী ইবনু ইয়াযীদ ইবনু রুকানা হতে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দিলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে পুনরায় ঐ স্ত্রীকে গ্রহণ করতে আদেশ দেন। এটা অধিকতর সঠিক। মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) কাছে অবস্থান করছিলাম এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো যে, সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ কথা শুনে চুপ রইলেন। তখন আমার মনে হলো, সম্ভবত তিনি মহিলাটিকে পুনরায় গ্রহণের নির্দেশ দিবেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ আহমকের মতো কাজ করে এবং এসে বলে, হে ইবনু ‘আব্বাস! হে ইবনু ‘আব্বাস! অথচ আল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য একটা সমাধানের পথ দেখিয়ে দিবেন” (সূরাহ আত-তালাকঃ ২)। আর তুমি তো (তালাকের বিষয়ে) আল্লাহকে ভয় করোনি। সুতরাং আমি তোমার জন্য কোন পথ দেখছি না। তুমি তোমার প্রতিপালকের নাফরমানী করেছো এবং স্ত্রীকেও হারিয়েছো। মহান আল্লাহ তো বলেছেনঃ “হে নাবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে তখন তাদের ইদ্দাতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিবে।” ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি হুমাইদ, আ‘রাজ ও অন্যরা মুজাহিদ হতে ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও শু‘বাহ, আইয়ূব, ইবনু জুরাইজ আ‘মাশ প্রমূখ বর্ণনাকারীগণ সকলেই ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে হাদীস বর্ণনা করে বলেছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একে তিন তালাক হিসেবে গণ্য করেছেন। তাই তিনি বলেছেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে হারালে’। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ আইয়ুব হতে ইকরিমার মাধ্যমে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণানা করেছেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে একত্রে তিন তালাক দেয়, তা এক তালাক গণ্য হবে”। ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আইউব হতে ইকরিমা (রহঃ) সূত্রে বর্ণানা করেন, উক্ত কথাটি ইবনু ‘আব্বাসের নয়, বরং ইকরিমার কথা। তিনি ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) উল্লেখ করেননি এবং একে ইকরিমার (রহঃ) অভিমত গণ্য করেছেন। মুহাম্মদ ইবনু ইয়্যাস (রহঃ) একদা ইবনু আব্বাস, আবূ হুরায়রা এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে এক যুবতী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বললেন, “ঐ স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না যতক্ষন না তাকে অন্য স্বামীর সাথে বিয়ে না দেওয়া হয়।” ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদের মাধ্যমে মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ আইয়াশ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি ঐ ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যখন মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াস ইবনুল বুকাইর এসে ইবনু যুবাইর ও ‘আসিম ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছেন। তারা বলেছেন, তুমি ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ হুরায়রার নিকট যাও। আমি তাদের উভয়কে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট রেখে এসেছি। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) বক্তব্য হলো, স্ত্রীর সাথে সহবাস হোক বা না হোক, তিন তালাকে সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অন্য স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে তার জন্য বৈধ হবে না। এ হাদীস সারফ সম্পর্কিত হাদীসের মতই। উক্ত হাদীসে বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তার মত পরিহার করেছেন। তাঊস (রহঃ) আবুস সাহবা নামে জনৈক ব্যক্তি, যিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন। একদা তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ বকর ও ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতের প্রথমদিকে কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই তিন তালাক দিতো তাহলে তা এক তালাক গণ্য হতো? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুগে, আবূ বকর (রাঃ) এর পুরো খিলাফাতকালে এবং ‘উমার (রাঃ)-র খিলাফতের প্রথম দিকে কোন ব্যক্তি সহবাসের আগে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তারা তা এক তালাক গণ্য করতেন। পরবর্তীতে যখন ‘উমার (রাঃ) দেখলেন যে, লোকেরা অধিকহারে একত্রে তিন তালাক দিচ্ছে, তখন তিনি বললেন, তাদের উপর তিন তালাক প্রয়োগ করো। [২১৯৯] আবুস সাহ্বা (রাঃ) একদা আবুস সাহ্বা (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কি জানেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ) এর যুগে একত্রে তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হতো এবং ‘উমার (রাঃ) এর যুগে তিন তালাক গণ্য করা হতো? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।

【11】

যে শব্দ দ্বারা তালাক হতে পারে তা এবং নিয়্যাত

‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াককাস আল-লাইসী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সকল কাজ নিয়্যাত অনুযায়ী হয়। কোন ব্যক্তি যা নিয়্যাত করে সেটা তাই হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরাত করলো, তার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হলো এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে অথবা কোন নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরাত করলো, তার হিজরাত সেই উদ্দেশ্যেই হবে যা সে নিয়্যাত করেছে। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) যখন অন্ধ হয়ে যান, তখন তাঁর সন্তানদের মধ্য হতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব ছিলেন তার পথ প্রদর্শক। তিনি বর্ণনা করেন, আমি কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। এরপর তাবুক অভিযানের পূর্ব ঘটনা বর্ণনা করেন। কা’ব বলেন, যখন পঞ্চাশ দিন থেকে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দূত আমার কাছে এসে বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনাকে আপনার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, তবে কি আমি তাকে তালাক দিবো, না কি রাখবো? সে বললো, না, বরং বিচ্ছিন্ন রাখুন এবং সহবাস মেলামেশা করবেন না। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও এবং তাদের সাথে অবস্থান করো যতক্ষন না মহান আল্লাহ আমার এ বিষয়ে কোন ফায়সালা দেন।

【12】

তালাক প্রয়োগের ব্যাপারে স্ত্রীকে এখতিয়ার প্রদান

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এখতিয়ার দিয়েছিলেন। আমরা তাঁকেই এখতিয়ার করে গ্রহণ করলাম। তবে একে তালাক বা অন্য কিছু গণ্য করা হয়নি।

【13】

(স্ত্রীকে এরূপ বলা) তোমার ব্যাপার তোমার হাতে

হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আইয়ুব (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি এমন কাউকে জানেন যিনি হাসান বাসরীর মতো বলেন, তোমার ব্যাপার তোমার হাতে? তিনি বললেন, না। তবে ক্বাতাদাহ…আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ বলেছেন। [২২০৪] দুর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২০৫/১১৯৪), যঈফ সুনান নাসায়ী (২২২/৩৪১০) ক্বাতাদাহ (রহঃ) তিনি হাসান বাসরী (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, “তোমার ব্যাপার তোমার হাতে” বললে তিন তালাক বর্তাবে।

【14】

ছিন্নকারী তালাক

নাফি’ ইবনু উজাইর ইবনু ‘আবদে ইয়াযীদ ইবনু রুকানা (রহঃ) রুকানা ইবনু ‘আবদে ইয়াযীদ তার স্ত্রী সুহাইমাকে ‘আলবাত্তাতা‘ শব্দের দ্বারা তালাক দিলেন। অতঃপর তিনি বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানালেন এবং বললেন, আমি এর দ্বারা এক তালাকের ইচ্ছা করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! তুমি কি এক তালাকের ইচ্ছা করেছিলে? রুকানা বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি কেবল এক তালাকেরই নিয়াত করেছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার স্ত্রীকে তার কাছে ফেরত দিলেন। পরে তিনি তাকে ‘উমার (রাঃ)-এর যুগে দ্বিতীয় এবং ‘উসমান (রাঃ)-এর যুগে তৃতীয় তালাক দিয়েছেন। [২২০৬] দুর্বলঃ মিশকাত (৩২৮৩), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৪৪৪/২০৫১), ইরওয়া (২০৬৩), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২০৪/১১৯৩)। নাফি’ ইবনু উজাইর (রহঃ) রুকানা ইবনু ‘আবদু ইয়াযীদের মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [২২০৭] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আলী ইবনু ইয়াযীদ রুকানা (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদা তার দাদা নিজ স্ত্রীকে ‘আলবাত্তা’ শব্দের দ্বারা তালাক দিয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট আসলে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কী ইচ্ছা করেছিলে? তিনি বললেন, এক তালাকের। তিনি বললেনঃ আল্লাহ শপথ? তিনিও বললেন, আল্লাহর শপথ। অতঃপর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি যা নিয়্যাত করেছো তাই। [২২০৮] দুর্বলঃ ইরওয়া (২০৬৩)।

【15】

অন্তরে তালাকের কথা জাগা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মাতের মনে যা উদয় হয় তা যতক্ষণ না সে মুখে বলে অথবা কার্যে পরিণত করে ততক্ষণ তা উপেক্ষা করেন।

【16】

কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীকে বলে, হে আমার বোন

আবূ তামীমাহ আল-হুজাইমী (রাঃ) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বললো, হে আমার বোন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে কি তোমার বোন? তিনি তার এরূপ সম্বোধনকে অপছন্দ করলেন এবং এরূপ করতে নিষেধ করলেন। [২২০৮] আবূ তামীমাহ (রাঃ) তিনি তাঁর স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি এক ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে ‘হে আমার আদুরে বোন’ বলতে শুনে তাকে এরূপ সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। [২২১১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, ইবরাহীম (আঃ) কখনো মিথ্যা বলেননি, তিনবার মিথ্যা বলেছিলেন (যা মূলত মিথ্যা নয়)। তন্মধ্যে দুটি আল্লাহর সত্ত্বা সম্পর্কে। যেমন তাঁর কথাঃ “নিশ্চয় আমি অসুস্থ” (সূরাহ আস-সাফফাতঃ ৮৯) এবং তাঁর কথা, “বরং এদের এই বড় (মূর্তিটাই), এ কাজ করেছে” (সূরাহ আল-আম্বিয়াঃ ৬৩)। (আর তৃতীয়টি হচ্ছে ব্যক্তিগত) তা হলোঃ ইবরাহীম (আঃ) স্ত্রী সারাহকে নিয়ে এক অত্যাচারী শাসকের এলাকা সফর করছিলেন। তিনি এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে এক দূত ঐ অত্যাচারী শাসকের কাছে এসে বললো, এ স্থানে এক ব্যক্তি সাথে এক সুন্দরী নিয়ে আগমন করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন ঐ (শাসক) ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে জানতে চেয়ে লোক পাঠালো যে, তার সাথের মহিলাটি কে? তিনি বললেন, আমার বোন। যখন তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন তখন তাঁকে বললেন, ঐ ব্যক্তি আমার কাছে তোমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি তাকে বলেছি, তুমি আমার বোন। বিষয় তাই, কেননা এ স্থানে আমি আর তুমি ছাড়া কোন মুসলিম নেই। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী (মুসলিমগণ পরস্পর ভাইবোন বিধায়) তুমি আমার দ্বীনি বোন। সুতরাং তার কাছে আমার কথাকে মিথ্যা বলো না। এরপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

【17】

যিহার

সালামাহ ইবনু সাখর আল-বায়দী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নারীদের প্রতি এতো অধিক আসক্ত প্রবণ ব্যক্তি অন্য কেউ এরূপ আসক্ত নয়। যখন রমাযান মাস সমাগত হলো তখন আমার ভয় হলো যে, হয়তো আমি ভোর বেলায়ও স্ত্রীসঙ্গমে লিপ্ত থাকবো। তাই রমাযান মাস অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত আমি তার সাথে ‘যিহার’ করি। এক রাতে সে আমার খেদমত করছিলো। এমন সময় তার শরীরের এমন কিছু আমার সামনে খুলে গেলো যে, আমি স্থির থাকতে পারলাম না। আমি সহবাসে লিপ্ত হয়ে পড়লাম। ভোর হলে আমি আমার বংশের লোকদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার ঘটনা জানিয়ে বললাম, তোমরা আমার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে চলো। তারা বললো, না আল্লাহর শপথ! আমরা যাবো না। কাজেই আমি একাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে ঘটনাটি জানালাম। তিনি বললেনঃ এরূপ কাণ্ড কি তুমি করেছো হে সালামাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমিই এরূপ করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! এইভাবে দুইবার বলি। আর আপনি মহান আল্লাহর বিধান আমার উপর কার্যকর করুন, আমি ধৈর্যশীল হবো। তিনি বললেনঃ তুমি একটি দাস মু্ক্ত করো। আমি বলি, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! আমার কোন দাস নেই, আমার নিজেকে ছাড়া। এ কথা বলে আমি আমার গর্দানের উপর হাত রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একাধারে দু’মাস সওম পালন করো। সে বললো, সওম পালনের কারণেই তো এ সমস্যায় পড়েছি। তিনি বললেনঃ ‘এক ওয়াসক’ খেজুর যাটজন মিসকীনকে খাওয়াও। সে বললো, সেই সত্ত্বার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! গত রাত আমি এবং আমার পরিবার উপোস কাটিয়েছি। কারণ আমাদের কাছে খাবার নেই। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি বনু যুরাইকের যাকাত আদায়কারীর নিকট গিয়ে বলো, সে যেন তোমাকে তাদের সদাক্বাহ দেয়। তা থেকে ‘এক ওয়াসক’ খেজুর ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াবে। আর যা বাকী থাকবে তা তুমি ও তোমার পরিবার খাবে। অতঃপর আমি আমার কওমের লোকদের নিকট ফিরে এসে বলি, আমি তোমাদের কাছে পেয়েছি সংকীর্ণতা ও মন্দ ব্যবহার, আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে পেয়েছি উদারতা ও উত্তম ব্যবহার। তিনি আমাকে তোমাদের সদাক্বাহ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। ইবনুল ‘আলা অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, ‘বায়াদাহ’ বনু যুরাইকের একটি শাখা। খুওয়াইলাহ বিনতু মালিক ইবনু সা’লাবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সাথে আমার স্বামী আওস ইবনুস সামিত (রাঃ) যিহার করলেন। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে অভিযোগ করলাম। তিনি আমার স্বামীর পক্ষ হতে আমার সাথে বিতর্ক করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহকে ভয় করো, সে তো তোমার চাচার ছেলে। মহিলাটি বলেন, আমি সেখান থেকে চলে না আসতেই কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “নিশ্চয় আল্লাহ ঐ মহিলার কথা শুনতে পেয়েছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করছে” (সূরাহ আল-মুজাদালাঃ ১) এখান থেকে কাফফারাহ পর্যন্ত অবতীর্ণ হলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ সে একটি দাস মুক্ত করবে। মহিলাটি বলেন, তার সে সামর্থ নেই। তিনি বললেনঃ সে একাধারে দু’মাস সওম পালন করবে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসুল! সে খুবই বৃদ্ধ, সাওম পালন করতে অক্ষম। তিনি বললেনঃ তবে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাবে। মহিলাটি বললেন, সদাক্বাহ করার মত পয়সা তার নেই। মহিলাটি বলেন, এ সময় সেখানে এক ঝুড়ি খুরমা আসলো। তখন আমি (মহিলা) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ পরিমাণ আর এক ঝুড়ি খুরমা দিয়ে আমি তাকে সহযোগীতা করবো। তিনি বললেনঃ তুমি ভালই বলেছো। তুমি এর দ্বারা তার পক্ষ হতে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াও এবং তোমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে যাও। ইয়াহইয়া ইবনু আদাম বলেন, ষাট সা’তে এক ‘আরাক্ব হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মহিলাটি তার স্বামীর নির্দেশ ছাড়াই তার পক্ষ হতে কাফফারাহ আদায় করেছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আওস (রাঃ) ছিলেন ‘উবাদাহ ইবনুল সামিত (রাঃ) এর ভাই। [২২১৪] হাসান, তার এ কথাটি বাদেঃ “ষাট সা’তে এক ‘আরাক্ব।” ইরওয়া (২০৮৭) ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো আছে, ‘আরাক্ব হলে তিরিশ সা’-এর সমান। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বরেন, হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনু আদামের বর্ণিত হাদীসের চেয়ে অধিকতর বিশুদ্ধ। আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আরাক্ব এমন থলে, যাতে পনের সা’ পরিমাণ ধারণ হয়। সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) উক্ত হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে কিছু খেজুর আসে। তিনি সবগুলো খেজুর ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে দেন, যার পরিমাণ ছিলো প্রায় পনের সা’। তিনি বললেনঃ এগুলো দান করে দাও। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ও আমার পরিবারের লোকদের চাইতে অধিক নিঃস্ব কেউ নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি ও তোমার পরিবারের লোকেরা তা খাও। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াযীর আল-মিসরী হতে ‘উবাদাহ ইবনুস সামিতের ভাই আওস (রাঃ) সূত্র ষাটজন মিসকীনকে খাওয়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে পনের সা’ যব দিলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ‘আতা’র সাথে আওসের সাক্ষাৎ ঘটেনি। কারণ ‘আওস’ (রাঃ) বদরী সাহাবী, যিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। সুতরাং হাদীসটি মুরসাল। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) খাওলাহ ছিলেন আওস ইবনুস সামিতের স্ত্রী। আর আওস (রাঃ) সঙ্গমে অধিক সক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এক সময় তার এ আসক্তি বৃদ্ধি পেলে তিনি তার স্ত্রীর সাথে ‘যিহার’ করেন। এই প্রসঙ্গে মহান শক্তিশালী আল্লাহ যিহারের কাফফারাহ সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ‘ইকরিমা (রহঃ) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করে তার কাফফারাহ আদায়ের আগেই সহবাসে লিপ্ত হয়। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসে তোমাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে? সে বললো, চাঁদের আলোয় আমি তার দুই উরুর সৌন্দর্য দেখে। তিনি বললেনঃ তোমার যিহারের কাফফারাহ আতার না করা পর্যন্ত তার থেকে দূরে থাকো। ‘ইকরিমা (রহঃ) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে যিহার করলো। সে চাঁদের আলোয় স্ত্রীর উরুর উজ্জ্বলতা দেখতে পেয়ে তার সাথে সঙ্গম করে। অতঃপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলে তিনি তাকে কাফ্‌ফারাহ দেয়ার নির্দেশ দেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অবশ্য তিনি ‘উরু’ কথাটি উল্লেখ করেননি। ‘ইকরিমা (রহঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সূত্রে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আল-হাকাম ইবনু আবান (রহঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী এই সানাদে ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) নাম উল্লেখ করেননি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু মূসা মা’মার হতে... ইকরিমার মাধ্যমে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সূ্ত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত।

【18】

খোলা’র বর্ণনা

সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়। হাবীবাহ বিনতু সাহল আল-আনসারিয়্যাহ (রাঃ) তিনি সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাসের (রাঃ) স্ত্রী ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজ্‌রের সলাতে যাওয়ার পথে সাহলের কন্যা হাবীবাহকে ভোরের অন্ধকারে তাঁর ঘরের দরজায় দেখতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? তিনি বললেন, আমি সাহলের কন্যা হাবীবাহ্। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি বলেন, সাবিত ইবনু ক্বায়িসের সাথেও আমার দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হবে না। যখন সাবিত ইবনু ক্বায়িস আসলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেনঃ এই তো সাহলের কন্যা হাবীবাহ। অতঃপর মহিলাটি তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিলো তা পেশ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আমাকে যা কিছু দিয়েছেন সবই আমার কাছে আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাবিত ইবনু ক্বায়িসকে বললেনঃ তুমি যা কিছু তাকে দিয়েছো তা গ্রহণ করো। সুতরাং তিনি স্ত্রী থেকে সব গ্রহণ করলেন এবং হাবীবাহ তার পরিজনের কাছে চলে গেলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) হাবীবাহ বিনতু সাহল ছিলেন (রাঃ) সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাসের স্ত্রী। তিনি হাবীবাহকে প্রহার করলে তার শরীরের কোন অঙ্গ ভেঙ্গে যায়। তাই তিনি সুবহে সাদেকের পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাবিতকে ডেকে এনে বললেনঃ তুমি তাকে যা কিছু দিয়েছো তার কিছু অংশ গ্রহণ করে তাকে তালাক দাও। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা ফেরত নেয়া কি ঠিক হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ! সে বললো, আমি তাকে মোহরানা বাবদ দু’টি বাগান দিয়েছি এবং সেগুলো তার দখলে আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বাগান দু’টি নিয়ে নাও এবং তাকে ত্যাগ করো। ফলে তিনি তাই করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সাবিত ইবনু ক্বায়িসের (রাঃ) স্ত্রী তার কাছ থেকে খোলা’ তালাক নিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ইদ্দাতকাল নির্ধারণ করলেন এক হায়িয। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই হাদীস ইকরিমা (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সূত্রে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, খোলা’ তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দাতকাল হচ্ছে এক হায়িয।

【19】

স্বাধীন কিংবা গোলামের দাসী স্ত্রী আযাদ হলে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মুগীস ছিলেন একজন গোলাম। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য তার (বারীরার) কাছে একটু সুপারিশ করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে বারীরাহ! আল্লাহকে ভয় করো। কেননা সে তোমার স্বামী এবং তোমার সন্তানদের পিতা। সে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি আমার প্রতি আপনার নির্দেশ? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি একজন সুপারিশকারী। এদিকে মুগীসের চোখের পানিতে তার চোয়াল পর্যন্ত ভিজে গড়িয়ে পড়ছে। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ হে ‘আব্বাস! বারীরাহ্‌র প্রতি মুগীসের প্রেম, আর মুগীসের প্রতি তার ক্রোধ কতই না আশ্চর্যকর। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বারীরাহ্‌র স্বামী এক কালো বর্ণের ক্রীতদাস ছিলেন। যার নাম মুগীস। বারীরাহ মুক্ত হবার পর এ স্বামী গ্রহণ করা অথবা বর্জনের ব্যাপারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে এখতিয়ার দিয়ে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র বারীরাহর ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার স্বামী একজন গোলাম ছিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে স্বামীর ব্যাপারে এখতিয়ার প্রদান করায় সে নিজেকে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়। স্বামী আযাদ হলে তাতে এখতিয়ার থাকতো না। সহীহ: তবে এ কথাটি বাদেঃ “স্বামী আযাদ হলে তাতে এখতিয়ার থাকতো না”। এটুকু মুদরাজ। যা ‘উরওয়ার উক্তি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারীরাহ্‌কে এখতিয়ার দিয়েছিলেন। তার স্বামী ছিলো ক্রীতদাস।

【20】

যিনি বলেছেন, সে (মুগীস) আযাদ ছিলো

‘আয়িশাহ (রাঃ) যখন বারীরাহকে আযাদ করে দেয়া হয় তখন তার স্বামী ছিলো আযাদ এবং তাকে এখতিয়ার দেয়া হলে সে বলে, তার সাথে বসবাসের কোন আকর্ষণ আমার নেই, যদি আমাকে এতো এতো কিছু দেয়া হয়। সহীহ: বুখারী। আর ‘স্বামী আযাদ হওয়ার’ কথাটি মুদরাজ। যা আসওয়াদে উক্তি থেকে এসেছে।]

【21】

স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটানোর সময়সীমা সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) বারীরাহ্‌কে যখন আযাদ করা হয় তখন সে আবূ আহমাদ পরিবারের ক্রীতদাস মুগীসের স্ত্রী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে এখতিয়ার দিয়েছিলেন এবং তাকে এটাও বলেছিলেনঃ তোমার স্বামী তোমার সাথে সহবাস করলে তোমার এখতিয়ার বহাল থাকবে না। [২২৩৬] যঈফঃ ইরওয়া (১৯০৮), যঈল আল-জামি’উস সাগীর (১২৯৫)।

【22】

বিবাহিত দাস-দাসী একই সাথে আযাদ হলে স্ত্রীর এখতিয়ার থাকবে কিনা?

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি এমন দু’জন দাস-দাসীকে আযাদ করার ইচ্ছা করলেন, যে দাসীর স্বামী আছে। ক্বাসিম বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি নারীর পূর্বে পুরুষটিকে আযাদ করার নির্দেশ দেন। [২২৩৭]

【23】

স্বামী-স্ত্রী দু’জনের একজন ইসলাম কবুল করলে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে আসলো, পরে ঐ ব্যক্তির স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করে আসলো। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় সে আমার সাথেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। ফলে তিনি স্ত্রীটিকে তার কাছে ফিরিয়ে দেন। [২২৩৮] দুর্বল : যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৯৫/১১৫৯), ইরওয়া (১৯১৮)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে এক মহিলা ইসলাম গ্রহণ করে মদিনায় এসে জনৈক ব্যক্তিকে বিয়ে করলো। পরবর্তীতে তার (প্রাক্তন) স্বামী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং সে আমার ইসলাম গ্রহণ সম্মন্ধে জানতো। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে দ্বিতীয় স্বামী থেকে ফেরত নিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে সোপর্দ করলেন। [২২৩৯]

【24】

স্ত্রীর পর যদি স্বামীও ইসলাম গ্রহণ করে, তবে স্ত্রী কতদিন পর স্বামীর কাছে ফেরত যাবে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কন্যা যাইনাবকে প্রথম বিবাহের ভিত্তিতেই আবুল ‘আসের কাছে ফেরত দেন এবং নুতনভাবে কোন মাহর ধার্য করেননি। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর তার হাদীসে বলেন, ছয় বছর পর এবং হুসাইন ইবনু ‘আলী বলেন, দুই বছর পর। সহীহ, তবে দুই বছর উল্লেখ বাদে।

【25】

ইসলাম গ্রহণের পর কারো কাছে চারের অধিক স্ত্রী থাকলে

হারিস ইবনু ক্বায়িস ইবনু ‘উমাইর আল-আসাদী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিলো। বিষয়টি আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানালে তিনি বলেনঃ তাদের যে কোন চারজনকে বেছে নাও। ক্বায়িস ইবনুল হারিস (রাঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আদ-দাহহাক ইবনু ফায়রূয (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইসলাম কবূল করেছি এবং একই সাথে দুই বোন আমার স্ত্রী হিসেবে আছে। তিনি বলেনঃ তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী তাদের উভয়ের কোন একজনকে তালাক দাও।

【26】

পিতা-মাতার যে কোন একজন মুসলিম হলে সন্তান কে পাবে?

রাফি’ ইবনু সিনান (রাঃ) তিনি ইসলাম কবুল করেন, কিন্তু তার স্ত্রী ইসলাম কবুল করতে অস্বীকার করে। অতঃপর মহিলাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, এটি আমার কন্যা এবং সে এখনও দুগ্ধপোষ্য বা এ জাতীয় কিছু বলেন। পক্ষান্তরে রাফি’ (রাঃ) বলেন, এটি আমার কন্যা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাফি’কে বললেনঃ তুমি এক পাশে বসো এবং মহিলাকে বললেনঃ তুমি অপর পাশে বসো। তিনি মেয়েটিকে উভয়ের মাঝখানে বসালেন এবং বললেনঃ এখন তোমরা দু’জনেই তাকে ডাকো। মেয়েটি তার মায়ের দিকেই ঝুঁকছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’আ করে বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! কন্যাটিকে সঠিক পথ দেখাও’। অতঃপর মেয়েটি তার পিতার দিকে ঝুঁকে পড়লো। ফলে সে (পিতা) তাকে গ্রহণ করে।

【27】

লি’আন সম্পর্কে

ইবনু শিহাব (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, একদা ‘উয়াইমির ইবনু আশকার আল-আজলানী (রাঃ) ‘আসিম ইবনু ‘আদী (রাঃ) এর নিকট এসে বলেন, হে ‘আসিম! যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে পায়, এ বিষয়ে তোমার কি অভিমত? সে কি তাকে হত্যা করবে এবং তোমরা তাকে হত্যা করবে বা সে কী করবে? হে ‘আসিম! আমার এ বিষয়ে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করুন। ‘আসিম (রাঃ) এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তা খারাপ ও অশোভন মনে করলেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে ‘আসিম (রাঃ) যা শুনলেন সেটা তার জন্য ভয়ানক মনে হলো। ‘আসিম (রাঃ) তার বাড়ি ফিরে এলে ‘উয়াইমির এসে তাকে বলেন, হে ‘আসিম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে কি বলেছেন? ‘আসিম বললেন, তুমি আমাকে খুব একটা ভালো কাজ দাওনি। আমি তোমার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তা অপছন্দ করেন। তখন ‘উয়াইমির (রাঃ) আল্লাহর শপথ করে বললেন, আমি এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস না করে ক্ষান্ত হবো না। এই বলে ‘উয়াইমির (রাঃ) উঠে সরাসরি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকটে উপস্থিত হলেন। এ সময় তিনি চতুর্দিক থেকে লোকজন পরিবেষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বলেন, যদি কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে পায় তবে সে কি তাকে হত্যা করবে? অতঃপর আপনারা তাকে হত্যা করবেন বা সে কী করবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার ও তোমার সঙ্গিনীর ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তাকে নিয়ে এসো! সাহল (রাঃ) বলেন, তারা আসলো এবং উভয়েই লি’আন করলো। তখন আমি অন্যান্য লোকদের সঙ্গে সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছেই উপস্থিত ছিলাম। তারা লি’আন থেকে অবসর হলে ‘উয়াইমির (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরপর যদি আমি তাকে স্ত্রী হিসাবে রাখি তবে প্রমাণ হবে আমি মিথ্যা বলেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দেয়ার আগেই তিনি তাকে তিন তালাক দিলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, তখন থেকে লি’আনকারীদের জন্য এটাই বিধান হয়ে যায়। ‘আব্বাস ইবনু সাহল (রহঃ) হতে তার পিতা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আসিম ইবনু ‘আদী (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি মহিলাকে সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দাও। সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তাদের দু’জনের লি’আন করার সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমার বয়স ছিলো পনের বছর। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহিলাটি গর্ভধারণ করে এবং সন্তানটিকে তার মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) উভয় লি’আনকারীর ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা ঐ মহিলার প্রতি দৃষ্টি রাখো। যদি সে কালো চক্ষু ও বড় নিতম্ববিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তবে আমি বুঝে নিবো, সে (স্বামী) সত্যই বলেছে। আর যদি সে সান্ডার মতো রক্তিমাভ সন্তান প্রসব করে তাহলে ধারণা করবো যে, সে মিথ্যাবাদী ছিলো। বর্ণনাকারী বলেন, সে অপছন্দনীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত সন্তান প্রসব করলো। সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) সূত্র উক্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, সন্তানটিকে তার মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো। সাহল ইবনু সা’দ আস-সাইদী (রাঃ) সূত্র উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর ‘উয়াইমির তার স্ত্রীকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপস্থিতিতে তিন তালাক প্রদান করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা কার্যকর করলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপস্থিতিতে যা করা হয় তাই সুন্নাতে পরিণত হয়। সাহল (রাঃ) বলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকটে উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর উভয় লি’আনকারীর জন্য এই নিয়ম চলে আসছে যে, তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং পুণরায় কখনো তারা উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) মুসাদ্দাদ বলেন, সাহল বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে ঐ দু’জন লি’আনকারীর ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম। তখন আমার বয়স ছিলো পনের বছর। তারা উভয়ে যখন লি’আন থেকে অবসর হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটালেন। মুসাদ্দাদের বর্ণনা এখানেই শেষ। অন্য বর্ণনাকারীগণ বলেছেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লি’আনকারীদ্বয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটান তখন তিনি (সাহল) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর সে ব্যক্তি (‘উয়াইমির) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে স্ত্রী হিসেবে রেখে দিলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, আমি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছি কোন কোন বর্ণনাকারী ‘আলাইহা’ শব্দটি বলেননি। সাহল ইবুন সা’দ (রাঃ) এ হাদীস সম্পর্কে বর্ণিত। উক্ত মহিলা গর্ভবতী ছিলো। স্বামী তার গর্ভ অস্বীকার করায় সন্তানটিকে তার মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো। অতঃপর মীরাসের ক্ষেত্রে এ নিয়ম বিধিবদ্ধ হয় যে, এ সন্তান তার মায়ের ওয়ারিস হবে এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মাতাও সন্তানের ওয়ারিস হবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক জুমু’আহ্‌র রাতে আমি মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম। তখন এক আনসারী ব্যক্তি মাসজিদে এসে বললো, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে অবৈধ কাজে লিপ্ত পায় এবং সে যদি তা প্রকাশ করে তাহলে অভিযোগকারীকে তোমরা মিথ্যাবাদিতার শস্তি দিবে নাকি তাকে (যিনাকারীকে) হত্যা করার কারণে তাকেও হত্যা করবে? আর সে যদি নীরব থাকে তবে ক্ষোভ নিয়েই নীরব থাকবে। আল্লাহর শপথ! আমি এ বিষয়ে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করবো। অতঃপর ভোর বেলার সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে অবৈধ কাজে লিপ্ত পায়, তাহলে আপনারা কি তাকে তা বলার অপরাধে মিথ্যাবাদিতার শাস্তি দিবেন? নাকি সে (যিনাকারীকে) হত্যা করলে (কিসাসস্বরূপ) তাকেও হত্যা করবেন, নাকি সে ক্ষোভ নিয়ে চুপ থাকবে? তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! সঠিক তথ্য প্রকাশ করে দিন’ এবং তিনি দু’আ করতে থাকলেন। অতঃপর লি’আনের আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যারা নিজেদের স্ত্রীদের উপর যিনার অভিযোগ দেয় অথচ তাদের কাছে তারা ছাড়া অন্য কোন সাক্ষী নেই...” (সূরাহ আন-নূর: ৬)। বস্তুত লোকটিই এ গুরুতর ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছিলো। পরে সে ও তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে লি’আন করলো এবং সে ব্যক্তি আল্লাহর শপথ দ্বারা চারবার শপথ করলো যে, সে তার দাবিতে সত্যবাদী। আর পঞ্চমবারে সে বললো, তার উপর আল্লাহর অভিশাপ বার্ষিত হোক যদি সে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। অতঃপর উক্ত মহিলা লি’আন করতে উদ্যত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেনঃ থামো! কিন্তু সে বিরত থাকতে অস্বীকার করলো এবং লি’আন করলো। উভয় লি’আনকারী চলে গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সম্ভবত সে কালো ও স্থুলদেহী সন্তান প্রসব করবে। পরে তাই হলো, সে কালো ও স্থুলদেহী সন্তানই প্রসব করলো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট শারীক ইবনু সাহমার সাথে তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি প্রমাণ পেশ করো অন্যথায় তোমার পিঠে হদ্দ কার্যকর হবে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কিভাবে সম্ভব? এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে অবৈধ কাজে লিপ্ত দেখে সে সাক্ষীর খোঁজে বের হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবারও বললেনঃ তুমি সাক্ষী পেশ করো, অন্যথায় তোমার পিঠে হদ্দ কার্যকর হবে। হিলাল বললেন, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন। আমি আমার দাবিতে অবশ্যই সত্যবাদী। নিশ্চয় আল্লাহ আমার বিষয়ে অবতীর্ণ করবেন। যা আমার পিঠকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যারা নিজেদের স্ত্রীদের উপর যিনার অভিযোগ দেয় অথচ তাদের কাছে তারা ছাড়া অন্য কেউ সাক্ষী নেই... হতে সত্যবাদী পর্যন্ত” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে লোক মারফত ডাকালেন। তারা উপস্থিত হলো এবং হিলাল (রাঃ) উঠে তার শপথ বাক্য পাঠ করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই অবগত, তোমাদের দু’জনের মধ্যে একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কে তাওবাহ করবে? পরে মহিলাটি উঠে শপথ বাক্য পড়লো। মহিলাটি পঞ্চমবারের বাক্য “আল্লাহর গযব তার নিজের উপর বর্ষিত হোক, যদি স্বামী তার দাবিতে সত্যবাদী হয়” বলার সময় উপস্থিত লোকেরা তাকে বলেছিলে, এ বাক্যে অবশ্যই আল্লাহর ‘গযব’ নাযিল হবে। কাজেই ভেবে-চিন্তে বলো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, একথা শুনে মহিলাটি কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ালো এবং পেছনের দিকে সরে এলো। আামদের ধারণা হলো, সম্ভবত সে বিরত থাকবে। কিন্তু সে আমি আমার বংশকে চিরদিনের জন্য কলংকিত করবো না” বলে পঞ্চম বাক্যটিও পাঠ করলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এ মহিলাটির প্রতি নযর রাখো, যদি সে কুচকুচে কালো চোখ, বড় নিতম্ব ও মোটা নলাওয়ালা সন্তান প্রসব করে তবে তা হবে শারীক ইবনু সাহমার। পরে সে এরূপ সন্তানই প্রসব করে। পরবর্তীতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কিতাবে লি’আনের নির্দিষ্ট বিধান অবতীর্ণ না হলে আমার ও এই নারীর মধ্যকার ফায়সালার বিষয়টি সংকটজনক হতো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন লি’আনকারদেরকে লি’আন করার আদেশ দিলেন তখন এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, লি’আনকারীর পঞ্চমবারে বাক্যটি পাঠ করার প্রাক্কালে তিনি তার মুখের উপর যেন হাত রেখে বলেন, নিশ্চয়ই এতে শাস্তি অনিবার্য। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ), যিনি (তাবূক অভিযানে পিছনে পড়ে থাকা) তিনজনের একজন। আল্লাহ পরবর্তীতে তাদের তাওবাহ কবুল করেছেন। একদা রাতের প্রথম অংশে তিনি খামার থেকে ফিরে এসে তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক পুরুষকে দেখতে পান। তিনি তাদের অবৈধ কাজ স্বচক্ষে দেখলেন এবং তাদের কথাবার্তাও নিজ কানে শুনলেন। তথাপি কোনরূপ বাড়াবাড়ি না করে রাত কাটালেন। তিনি সকাল বেলায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাতের প্রথমভাগে আমি আামার খামার থেকে ফিরে এসে আমার স্ত্রীর সাথে এক পুরুষকে দেখতে পেলাম। তাদের অবৈধ মেলামেশা আমি চাক্ষুষ দেখেছি এবং নিজ কানে তাদের কথাবার্তা শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কথায় অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁর কাছে বিষয়টি গুরুতর মনে হলো। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যারা নিজেদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে এবং তারা নিজেরা ছাড়া অন্য কোন সাক্ষীও নেই, তাদের প্রত্যেককে শপথ করতে হবে...” পূর্ণ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ হলো। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার কঠিন অবস্থা প্রশমিত হলে বললেনঃ হে হিলাল! সুসংবাদ গ্রহণ করো। অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্ত করেছেন। হিলাল (রাঃ) বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে এমনই আশা করেছিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠিয়ে তাকে আসতে বলো। সে আসলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে আয়াতটি পাঠ করে শুনান, নসিহত করেন এবং তাদেরকে বললেনঃ পরকালের আযাব দুনিয়ার আযাবের চাইতে খুবই ভয়াবহ। হিলাল (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! স্ত্রীর বিরুদ্ধে আমি যে অভিযোগ পেশ করেছি, তা অবশ্যই সত্য। কিন্তু মহিলাটি বললো, সে মিথ্যা বলেছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এদের উভয়ের মধ্যে লি’আন করাও। অতঃপর হিলালকে সাক্ষ্য দিতে বলা হলে তিনি চারবার শপথ করেন যে, তিনি তার দাবীতে সত্যবাদী। পঞ্চম শপথটি পড়ার সময় তাকে বলা হলো, হে হিলাল! আল্লাহকে ভয় করো। কেননা দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তির চাইতে অনেক কম। আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তাহলে এ শপথ অবশ্যই তোমার উপর বিপদ আনবেই। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করার কারণে আল্লাহ আমার পিঠে যেমন দোর্‌রা লাগাননি, তেমনি এ বিষয়ে আমাকে শাস্তি থেকেও বাঁচাবেন। এ বলে তিনি পঞ্চম শপথ করলেন যে, ‘তার নিজের উপর আল্লাহর গযব নামবে যদি সে মিথ্যাবাদী হয়’। অতঃপর মহিলাটিকে বলা হলো, তুমিও শপথ করো। সেও চারবার আল্লাহর নামে শপথ করলো যে, স্বামী তার দাবীতে মিথ্যাবাদী। আর পঞ্চমবার শপথের সময় হলে তাকেও বলা হলো যে, আল্লাহকে ভয় করো। কেননা দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তির তুলনায় অনেক হালকা। এ পঞ্চম শপথ অবশ্যই তোমার উপর আযাব এসে ছাড়বে। একথা শুনে সে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়ালো, এবং কিছুক্ষণ পর বললো, আল্লাহর শপথ! আমি আমার খান্দানকে কলঙ্কিত করবো না এবং এই বেলা পঞ্চমবার শপথটি করলো যে, তার নিজের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক, যদি সে (স্বামী) সত্যবাদী হয়ে থাকে। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ করালেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, তার গর্ভস্থ সন্তানের পরিচয় তার পিতা থেকে নেয়া হবে না, মহিলাটির উপর যিনার অপবাদ দেয়া যাবে না এবং সন্তানটিকে জারজ বলে কলঙ্কিত করা যাবে না। আর যে ব্যক্তি উক্ত মহিলা ও তার সন্তানকে অপবাদ দিবে, তার উপর মিথ্যা বলার শাস্তি প্রয়োগ হবে। এ মহিলা তার স্বামী থেকে খোরাকী পাবে না। কারণ তারা তালাক ছাড়াই বিচ্ছেদ হয়েছে, এবং তার স্বামী মারা যায়নি। তিনি আরো বললেনঃ যদি মহিলাটি বাজ পাখির মতো লাল-কালো বর্ণের, হালকা নিতম্ব, সামান্য কুঁজো এবং সরু নলাবিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তাহলে সেটা হবে হিলালের ঔরসজাত। আর যদি সে গমের রং, কোঁকড়া চুল, মোটা বাহু, মোটা নলাওয়ালা ও বড় নিতম্ববিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে, তাহলে তা ঐ ব্যক্তির ঔরসের যাকে সম্পর্কিত করে অপবাদ দেয়া হয়েছে। সন্তান জন্মের পর দেখা গেলো, সে মহিলাটি গমের রং, কোঁকড়া চুল, ভারী বাহু, মোটা নলাওয়ালা ও বড় নিতম্ববিশিষ্ট সন্তান প্রসব করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ শপথের আয়াত অবতীর্ণ না হলে আমি অবশ্যই তাকে পাথর মেরে হত্যা করতাম। ইকরিমা (রহঃ) বলেন, পরবর্তীতে ঐ সন্তানটি মুদার গোত্রের প্রশাসক নিযুক্ত হয়। কিন্তু তাকে পিতার সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লি’আনকারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের দু’জনেরই হিসাব নিবেন। তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। স্ত্রীর উপর তোমার কোন অধিকার নেই। স্বামী বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদ? তিনি বললেনঃ তুমি সম্পদ ফেরত পাবে না যদিও তুমি তার বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ করো, কেননা এর বিনিময়ে তুমি তার লজ্জাস্থানকে হালাল করে নিয়েছিলে। আর তুমি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকলে তোমার মাল তোমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। সাঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যিনার অপবাদ দিয়েছে। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল-‘আজলান সম্প্রদায়ের এক দম্পতিকে পৃথক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ আল্লাহ জানেন, তোমাদের দু’জনের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তোমাদের দুইজনের মধ্যে কেউ তাওবাহ করতে সম্মত আছ কি? তিনি কথাটি তিনবার বললেন। কিন্তু উভয়ই তাওবাহ করতে অস্বীকার করলো। অতঃপর তিনি উভয়কে পৃথক করে দেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লি’আন করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটালেন এবং সন্তানটিকে মায়ের সাথে সম্পর্কিত করলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘তিনি সন্তানটিকে তার মায়ের সাথে সম্পর্কিত করলেন’ কথাটি বেকল ইমাম মালিক (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। আর ইউনুস (রহঃ) আয-যুহরী হতে সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সূত্রে লি’আনের হাদীস সম্পর্কে বলেন, স্বামী স্ত্রীর গর্ভস্থিত সন্তান অস্বীকার করলো। তাই ঐ পুত্রকে তার মায়ের সাথে সম্পৃক্ত করে ডাকা হতো। [২২৫৯] সহীহ। এটি মাওসূলভাবে গত হয়েছে হা/২২৪৭।

【28】

সন্তান সম্পর্কে সন্দেহ করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বনু ফাযারাহ্‌র জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললো, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান জন্ম দিয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কাছে কিছু উট আছে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কোন বর্ণের? সে বললো, লাল। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলোর মধ্যে ছাই বর্ণেরও উটও তো আছে? সে বললো, হ্যাঁ সেগুলোর মধ্যে ছাই বর্ণেরও আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা এ রং কোথা থেকে এলো বলোতো? লোকটি বললো, সম্ভবত বংশগত কারণে। তিনি বললেনঃ তোমার এ বাচ্চার বর্ণে পূর্বপুরুষের কারো বর্ণের প্রভাব পড়েছে। যুহরী (রহঃ) এই সানাদে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তুসহ বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তখন লোকটি ইঙ্গিতে সন্তানকে অস্বীকার করেছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এক বেদুইন এসে বললো, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান প্রসব করেছে, আমি তা অস্বীকার করি। বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেন।

【29】

ঔরসজাত সন্তান অস্বীকার করা জঘন্য অন্যায়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) লি’আনের আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে মহিলা কোন বংশের মধ্যে (এমন সন্তান) প্রবেশ করালো যার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই সে মহিলা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহ তাকে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ নিজ সন্তানকে অস্বীকার করে, অথচ বাচ্চা তার মমতার আকাঙ্খা করে, মহান আল্লাহও তার থেকে আড়ালে থাকবেন। এবং ক্বিয়ামাতের দিন পুর্বাপর সমল মানুষের সামনে তাকে অপমানিত করবেন। [২২৬৩] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (২২২১), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬০১), মিশকাত (৩৩১৬)। যঈম সুনান নাসায়ী (২২৯/৩৪৮১)।

【30】

জারজ সন্তানের মালিকানা দাবী প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে ব্যভিচারের সুযোগ নাই। যারা জাহিলিইয়াতের যুগে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছে এবং এর ফলে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, ঐ সন্তান যেনাকারীর সাথে সম্পৃক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি যেনার সন্তানকে নিজের সন্তান বলে দাবী করবে, সে তার ওয়ারিস হবে না এবং উক্ত সন্তানও তার ওয়ারিস হবে না। [২২৬৪] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬৩১০)। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসলামের প্রথম যুগে এরূপ ফায়সালা করতেন যে, প্রত্যেক উত্তরাধিকারী তার পিতার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিস হবে যাকে সে ওয়ারিস হিসাবে স্বীকার করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ফায়সালাও দিতেনঃ প্রত্যেক দাসীর সন্তানকে সেই পাবে, যে ঐ দাসীর মালিক হয়ে তার সাথে সহবাস করেছে এবং সে সন্তানও ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে। ইতিপূর্বে যেসব সম্পদ বণ্টন হয়ে গেছে, এ সন্তান তা থেকে কোন অংশ পাবে না। আর যেগুলো ইতিপূর্বে বণ্টন হয়নি এ সন্তান তা থেকে অংশ প্রাপ্ত হবে। তবে পিতা তার জীবদ্দশায় সন্তানটিকে অস্বীকার করলে সন্তানটি তার সাথে সংযুক্ত হবে না। আর যদি সন্তান এমন দাসী থেকে জন্ম নেয়, যে ব্যাক্তি তার মালিক নয় কিংবা এমন স্বাধীন মহিলা থেকে জন্ম নেয়, যার সাথে সে যেনা করেছে, এমতাবস্থায় এ সন্তান ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে না এবং এ সন্তান তার উত্তরাধিকারও হবে না, যদিও সে ব্যক্তি দাবী করে। আর যাকে তার সাথে সংযুক্ত করা হয়, আর সেও সম্পর্কিত হয়, সে জারজ সন্তান, চাই সে দাসী কিংবা স্বাধীন নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন। মুহাম্মাদ ইবনু রাশিদ (রহঃ) উক্ত সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ ঐ সন্তান মায়ের জারজ সন্তান হিসেবে পরিচিতি পাবে, চাই সে নারী স্বাধীন অথবা কিংবা দাসী হোক। এ বিধান ইসলামে প্রাথমিক যুগে প্রযোজ্য ছিলো। আর ইসলামের পূর্বে যে সম্পদ বণ্টন হয়েছে তাতো গত হয়ে গেছে।

【31】

দৈহিক গঠনের ভিত্তিতে সম্পর্ক নির্ণয় করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় আমার কাছে আসলেন। তখন তাঁর চেহারার সন্তুষ্টির আভা ফুটে উঠেছিল। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্‌! তুমি কি জানো? মুজুযযিয আল-মুদলিজী দেখতে পেয়েছে যে, যায়িদ এবং উসামাহ এক সাথে একটি চাদরে মাথা আবৃত করে রেখেছে, তাদের উভয়ের পা ছিলো খোলা। তখন সে বললো, এ পাগুলো পরস্পরের থেকে (অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কীয়)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উসামাহ ছিলেন কালো বর্ণের আর যায়িদ গৌর বর্ণের। ইবনু শিহাব (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের সানাদে ও অর্থে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, তাঁর চেহারার সন্তুষ্টির আভা ফুটে উঠেছিল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘তাঁর চেহারার ঔজ্জ্বল্য’ কথাটি ইবনু ‘উয়াইনাহ সংরক্ষণ করেননি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটা ইবনু ‘উয়াইনাহ্ কর্তৃক তাদলীস। তিনি তা যুহরী হতে শুনেননি, বরং অন্য কারো থেকে শুনেছেন। লাইস প্রমূখের হাদীসে উক্ত কথাটি রয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, উসামাহ (রাঃ) ছিলেন আলকাতরার মতো কালো, আর যায়িদ (রাঃ) ছিলেন তুলার মতো সাদা।

【32】

সন্তান নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে লটারী দ্বারা মীমাংসা করবে

যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। তখন ইয়ামান থেকে এক লোক এসে বললো, ইয়ামানের তিন ব্যক্তি একটি সন্তানের মালিকানা দাবী নিয়ে ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বিবাদ করে, তারা সকলেই একই তুহুরে একটি মহিলার সাথে সঙ্গম করেছে। ‘আলী (রাঃ) তাদের মধ্যকার দু’জনকে বললেন, সন্তানটি তোমাদের মধ্যকার এই তৃতীয় ব্যক্তির। তাতে তারা ক্ষেপে গেলো। এবার তিনি অন্য দু’জনকে বললেন সন্তানটি তোমাদের এই তৃতীয় ব্যক্তির। তাতে তারাও রেগে গেলো। এবার তিনি অপর দু’জনকে বললেন, সন্তানটি তোমাদের মধ্যকার এই তৃতীয় ব্যক্তির। তাতে তারাও রাগান্বিত হলো। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা এই সন্তানের দাবী নিয়ে বিবাদ করছো। আমি লটারীর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবো। লটারীতে যার নাম উঠবে, সন্তানটি সেই পাবে, তবে সে অপর দু’জনকে এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করবে। অতঃপর তিনি তাদের মধ্যে লটারী দিলেন এবং যার নাম উঠলো সন্তানটি তাকেই প্রদান করলেন। ‘আলী (রাঃ)-এর এ দুরদর্শিতা দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনভাবে হেসে উঠলেন যে, তাঁর সম্মুখের ও মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশিত হলো। যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইয়ামানে অবস্থানকালে তার নিকট তিন ব্যক্তিকে আনা হলো। তারা একই মহিলার সাথে একই তুহুরে (হায়িযের পর পবিত্র অবস্থায়) সঙ্গম করেছে। তাদের প্রত্যেকের সন্তানটিকে নিজের বলে দাবী করলো। তিনি তাদের দু’জনকে বললেন, আমি সন্তানটি ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে দিচ্ছি? তারা বললো, না। এভাবে তিনি তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু তারা সবাই অস্বীকৃতি জানালো। অতঃপর তিনি তাদের মধ্যে লটারী করলেন, লটারী যে ব্যক্তির নামে উঠলো সন্তানটি তার সাথেই সংযুক্ত করলেন এবং এ ব্যক্তির উপর অপর দু’জনকে দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষতিপূরণ দেয়া বাধ্যতামূলক করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ঘটনাটি ব্যক্ত করা হলে তিনি এমনভাবে হেসে উঠেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। খলীল অথবা ইবনু খলীল (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর নিকট এমন মহিলাকে আনা হলো, যে তিনজন পুরুষের সাথে যেনার ফলে সন্তান প্রসব করেছিল। সে একটি সন্তান প্রসব করেছে। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় ‘ইয়ামান’ ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে ব্যক্ত করা’ এবং ‘আলী (রাঃ) এর নির্দেশঃ ‘তোমরা দু’জন সন্তুষ্টচিত্তে সন্তানটির দাবী ছেড়ে দাও’ ইত্যাদি উল্লেখ নাই।’ [২২৭১]

【33】

জাহিলা যুগের বিভিন্ন বিবাহ পদ্ধতির বর্ণনা

‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাঁকে বলেন, জাহিলী যুগে চার প্রকার বিবাহ চালু ছিলো। (এক) বর্তমানে যা চলছে, অর্থাৎ কোন ব্যক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দিবে এবং পাত্রীকে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করবে। (দুই) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হায়িয হতে পবিত্র হলে বলতো, তুমি অমুক ব্যক্তির নিকট চলে যাও এবং তার সাথে সঙ্গম করো। অতঃপর তার স্বামী স্বীয় স্ত্রী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকতো এবং অন্য ব্যক্তি দ্বারা গর্ভবতী না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে অবস্থান করতো না, এমনকি তাকে স্পর্শও করতো না। অতঃপর স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতো। স্বীয় স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথ সহবাস করাতো এজন্যই যে, যাতে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান জন্ম হয়। এরূপ বিবাহকে বলা হতো ‘আল-ইস্তিবদা’। (তিন) দশজনের কম ব্যক্তি একত্রে একজন মহিলাকে বিবাহ করতো এবং তারা সকলেই ঐ মহিলার সাথে সঙ্গম করতো। অতঃপর মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে সন্তান প্রসবের পর কয়েকদিন অতিবাহিত হলে সকলকে ডেকে পাঠাতো এবং সবাই আসতে বাধ্য হতো। সকলে তার সামনে উপস্থিত হলে সে তাদেরকে বলতো, তোমরা সকলেই জানো যে, তোমরা কি করেছো। এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি। তাদের মধ্য হতে পছন্দ মতো কাউকে ডেকে বলতো, হে অমুক! এটি তোমারই সন্তান। ফলে সন্তানটি ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত হতো। (চার) বহু পুরুষ একত্রিত হয়ে পর্যায়ক্রমে একই নারীর সাথে সঙ্গম করতো এবং ঐ নারীর কাছে যত পুরুষ আসতো কাউকেই সে সঙ্গমে বাঁধা দিতো না। এরা ছিলো বেশ্যা। এরা প্রতীক চিহ্ন হিসেবে নিজ ঘরের দরজার উপর পতাকা টানিয়ে রাখতো। যে কেউ অবাধে এদের সাথে যেনা করতে পারতো। এদের মধ্যে কেউ গর্ভবতী হয়ে সন্তান প্রসব করলে সেসব পুরুষেরা উক্ত মহিলার কাছে একত্রিত হতো এবং একজন বংশবিশারদকে ডেকে আনা হতো। সে যে ব্যক্তির সাথে শিশুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করতো তাকে বলতো, এটা তোমার সন্তান। পরে লোকেরা শিশুটিকে তার ছেলে হিসেবে আখ্যা দিতো এবং সে ব্যক্তি তা অস্বীকার করতো না। কিন্তু মহান আল্লাহ যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সত্য দীনসহ প্রেরণ করলেন, তখন তিনি জাহিলী যুগের প্রচলিত ঐসব বিবাহ পদ্ধতি বাতিল করে বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী বিবাহ) পদ্ধতি বহাল করলেন।

【34】

বিছানা যার সন্তান তার

‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) এ ‘আব্‌দ ইবনু যাম’আহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট যাম’আহ্‌র দাসীর এক সন্তানের বিষয়ে বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হলো। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমার ভাই ‘উতবাহ আমার কাছে ওয়াসিয়াত করেছে, আমি মক্কায় এলে যেন যাম’আহ্‌র দাসীর সন্তানকে আমার অধিকারে গ্রহণ করি। কারণ ওটা তার ছেলে। কিন্তু ‘আবদ ইবনু যাম’আহ বললেন, এটা আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর সন্তান, আমার পিতার বিছানায় তার জন্ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্তানটির মধ্যে ‘উতবাহ্‌র সুস্পষ্ট সাদৃশ্য দেখতে পেয়ে বললেনঃ সন্তান তার বিছানা যার। আর যিনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। তিনি সাওদা (রাঃ)-কে বললেনঃ তার থেকে পর্দা করো। যিনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ‘হে ‘আবদ! সে তোমার ভাই’। আমার ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক আমার পুত্র, জাহিলী যুগে আমি তার মায়ের সাথে যেনা করেছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ইসলামে অবৈধ সন্তানের দাবীর কোন ব্যবস্থা নাই। আর জাহিলী যুগের প্রথা বাতিল হয়ে গেছে। বিছানা যার সন্তান তার এবং যেনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। রাবাহ (রহঃ) তিনি বলেন, তিনি আমার পরিজনেরা আমার সাথে তাদের এক রুম দেশীয় দাসীকে বিবাহ দেন। আমি তার সাথে সঙ্গম করলে সে আমার মতোই একটি কালো সন্তান জন্ম দেয়। আমি তার নাম রাখি ‘আবদুল্লাহ। আমি পুনরায় তার সাথে সঙ্গম করলে সে আবারো আমার মতোই একটি কালো সন্তান জন্ম দিলো। আমি তার নাম রাখি ‘উবাইদুল্লাহ। অতঃপর আমার গোত্রের ইউহান্না নামক এক রোমীয় গোলাম আমার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে তার অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে। তার ভাষা ছিল দুর্বোধ্য। অতঃপর সে গিরগিটি সদৃশ একটি সন্তান জন্ম দেয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী? সে বললো, এটা ইউহান্নার। আমি ‘উসমান (রাঃ)-এর কাছে বিষয়টি জানালে ‘উসমান (রাঃ) তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা উভয়ে তা স্বীকার করলো। পরে তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা এ বিষয়ে কি সম্মত আছো যে, আমি তোমাদের মাঝে এমন ফায়সালা করি যেরূপ ফায়সালা দিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফায়সালা দিয়েছেনঃ বিছানা যার সন্তান তার। অতঃপর তিনি মহিলা ও পুরুষ উভয়কে বেত্রাঘাত করেন। তারা উভয়েই দাস ও দাসী ছিলো।

【35】

সন্তান লালন-পালনে অধিক হকদার কে?

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) একদা এক মহিলা বললো, হে আল্লাহর রাসুল! এই সন্তানটি আমার গর্ভজাত, সে আমার স্তনের দুধ পান করেছে এবং আমার কোল তার আশ্রয়স্থল। তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে। এখন সে সন্তানটিকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি অন্যত্র বিয়ে না করা পর্যন্ত তুমিই তার অধিক হকদার। হিলাল ইবনু উসামাহ (রহঃ) আবূ মায়মূনাহ সালামাহ নামক মাদীনাহবাসীদের এক সত্যবাদী মুক্তদাস বলেন, একদা আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় ফার্সীভাষী জনৈক মহিলা তার একটি সন্তানসহ তার তালাকদাতা স্বামী ও সন্তানের দাবি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো। মহিলাটি ফার্সী ভাষায় বললো, হে আবূ হুরায়রা! আমার স্বামী আমার সন্তানটি নিয়ে যেতে চাইছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তোমরা এ সন্তানের বিষয়ে লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা করো। তিনি বিদেশী ভাষায় মহিলাকে কথাটি বললেন। অতঃপর তার স্বামী এসে বললো, আমার সন্তান আমার থেকে কে কেড়ে নিবে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমি ঐ কথাই বলবো যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি এক মহিলাকে বলেছিলেন, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার থেকে আমার সন্তানটি নিতে চাইছে। অথচ এ সন্তান আবূ ইনাবার কূপ থেকে পানি এনে আমাকে পান করায় এবং আমার অনেক খিদমাত করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা উভয়ে লটারীর মাধ্যমে ফায়সালা করো। কিন্তু স্বামী বললো, আমার সন্তান আমার থেকে কে কেড়ে নিবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানটিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ইনি তোমার বাবা এবং ইতি তোমার মা। সুতরাং তুমি এদের যাকে খুশি গ্রহণ করো। তখন সে তার মায়ের হাত ধরে, ফলে মহিলাটি তাকে নিয়ে চলে গেলো। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু হারিসাহ (রাঃ) মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন। (অতঃপর মাক্কাহ থেকে) ফেরার সময় তিনি হামযাহ্‌র (রাঃ) কন্যাটিকে সাথে করে আনলেন। জা’ফার ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) বললেন, তাকে আমি নিবো, আমিই তার অধিক হকদার, কারণ সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী। আর খালা হচ্ছে মায়ের সমতূল্য। ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমিই তা রঅধিক হকদার, সে আমার চাচার কন্যা এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা আমার স্ত্রী। সুতরাং আমার স্ত্রীই এর অধিক হকদার। যায়িদ ইবনু হারিসাহ (রাঃ) বললেন, আমিই এর বেশি হকদার। কারণ আমিই তাকে আনতে গিয়েছি, সফরের কষ্ট স্বীকার করেছি এবং আমিই তাকে নিয়ে এসেছি। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে আসলেন। তাঁকে একজন ঘটনাটি বললেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কন্যাটির ব্যাপারে আমার ফায়সালা হচ্ছে, সে জা’ফারের কাছে থাকবে। সে খালার সাথে অবস্থান করবে, কেননা খালা তো মায়ের সমতূল্য। আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ) সূত্র এই সানাদে উক্ত ঘটনা অপূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত মেয়েটি জা’ফার (রাঃ)-কে দিলেন। কেননা তার খালা ছিলো জা’ফারের স্ত্রী। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মাক্কাহ থেকে রওয়ানা হলে হামযাহ (রাঃ)-এর কন্যা আমাদের পিছে পিছে ছুটে এলো এবং হে চাচা! হে চাচা! বলে ডাক দিলো। ‘আলী (রাঃ) তার হতে ধরে তাকে তুলে নিলেন এবং ফাত্বিমাহ (রাঃ)-কে এসে বললেন, এই নাও তোমার চাচার মেয়ে। অতএবং ফাত্বিমাহ (রাঃ) তাকে গ্রহণ করলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, জা’ফার (রাঃ) বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে, তার খালা আমার স্ত্রী। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েটি খালাকে দিলেন এবং বললেনঃ খালা মায়ের সমতুল্য।

【36】

তালাকপ্রাপ্তা নারীর ‘ইদ্দাত

আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনুস সাকান আল-আনসারিয়্যাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তিনি তালাকপ্রাপ্তা হন। তখন তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত পালনের প্রথা ছিলো না। যখন আসমাকে তালাক দেয়া হলো তখন মহান আল্লাহ তালাক বিষয়ে ইদ্দাতের আয়াত অবতীর্ণ করলেন। তিনিই হলেন সর্বপ্রথম নারী যাকে কেন্দ্র করে তালাকপ্রাপ্ত মহিলার ইদ্দাতের বিধান অবতীর্ণ হয়।

【37】

তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত সম্পর্কিত কিছু বিধান রহিত হওয়া সম্পর্কে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আল্লাহর বাণী)ঃ “তালাক্বপ্রাপ্তা নারী তিন হায়িয পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২২৮); এবং “তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের আর ঋতুবতী হওয়ার আশা নাই তাদের ইদ্দাত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দাতকাল হবে তিন মাস” (সূরাহ আত-তালাক্বঃ ৪)। এ দ্বিতীয় বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। অতঃপর আল্লাহ বলেছেন, “যদি তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দাও তাহলে তোমাদের জন্য তাদের পালনীয় কোন ইদ্দাত নাই যা তোমরা গণনা করবে” (সূরাহ আল-আহযাবঃ ৪৯)।

【38】

তালাক প্রদানের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা (রিজ’ঈ)

উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাফসাহ (রাঃ)-কে তালাক প্রদান করার পর তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন।

【39】

চূড়ান্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার খোরাকী

ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) আবূ ‘আমর ইবনু হাফস (রাঃ) অনুপস্থিত থাকা অবস্থায়ই তাকে চূড়ান্ত তালাক দেন। তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে তার নিকট সামান্য কিছু যব (খোরাকী) পাঠালেন। এতে ফাত্বিমাহ (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। প্রতিনিধি লোকটি বললো, আল্লাহর শপথ! আপনার জন্য আমাদের উপর কোন পাওনা নাই। অতঃপর ফাত্বিমাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি বললেনঃ তার থেকে তুমি খোরাকী পাওয়ার অধিকারী নও। তিনি তাকে উম্মু শারীকের ঘরে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তার ঘরে তো আমার সাহাবীদের আসা-যাওয়ার একটা ভিড় থাকে। তুমি বরং ইবনু উম্মে মাকতূমের ঘরে অবস্থান করো। কারণ সে অন্ধ মানুষ। তোমার পোশাক বদলাতে অসুবিধা হবে না। তোমর ইদ্দাতকাল শেষ হলে আমাকে জানাবে। ফাত্বিমাহ (রাঃ) বলেন, আমার ইদ্দতকাল শেষ হলে আমি তাকে জানালাম, মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান ও আবূ জাহম উভয়ে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই যে আবূ জাহম, তার কাঁধ থেকে লাঠি কখনো নীচে নামে না। আর মু’আবিয়াহ! তার তো কোন সম্পদই নাই। তুমি বরং উসামাহ ইবনু যায়িদকে বিয়ে করো। ফাত্বিমাহ বলেন, প্রথমে আমি তাঁর এ প্রস্তাবকে অপছন্দ করি। কিন্তু তিনি পুনরায় বললেনঃ তুমি উসামাহ ইবনু যায়িদকে বিয়ে করো। সুতরাং আমি তাকে বিয়ে করলাম। মহান আল্লাহ আমাদের এ দাম্পত্য জীবনের মধ্যে যে বরকত দান করেছেন, তাতে আমি অন্যের ঈর্ষার পাত্র হয়েছি। আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন, আবূ হাফ্‌স ইবনুল মুগীরাহ তাকে তিন তালাক প্রদান করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ এবং মাখযূম গোত্রীয় একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট আগমন করে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আবূ হাফ্‌স ইবনুল মুগীরাহ তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছে এবং তার জন্য সামান্য খোরাকী রেখেছে। তিনি বলেনঃ সে কোন খোরাকী পাবে না। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে মালিক বর্ণিত হাদীসটি এর চেয়ে পরিপূর্ণ। আবূ সালামাহ (রাঃ) ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) আমাকে বর্ণনা করেন যে, ‘আমর ইবনু হাফস আল-মাখযূমী তাকে তিন তালাক প্রদান করেছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের কথাটি সহ পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ মহিলা সম্পর্কে বললেনঃ সে খোরাকী ও বাসস্থান পাবে না। তাতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে সংবাদ পাঠিয়েছেন যে, আমার সাথে পরামর্শ ছাড়া কিছু করবে না। ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বনু মাখযূমের জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলাম। সে আমাকে বিচ্ছেদের তালাক দিলো। অতঃপর বর্ণনাকারী মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে আরো রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেনঃ “আমাকে না জানিয়ে কিছু করো না”। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আশ-শা’বী, আল-বাহী ও ‘আত্বা প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ ‘আবদুর রহমানের মাধ্যমে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবূ বাক্‌র ইবনু আবুল জাহম, এরা সকলেই ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক প্রদান করেছে। ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) তার স্বামী তাকে তিন তালাক প্রদান করলো, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তার জন্য খোরাকী ও বাসস্থান কিছুই নির্ধারিত করেননি। ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) তিনি আবূ হাফস ইবনুল মুগীরাহ্‌র স্ত্রী ছিলেন। আবূ হাফস ইবনুল মুগীরাহ তাকে সর্বশেষ তৃতীয় তালাকটিও দিলেন। তিনি বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট আগমন করে স্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফাতাওয়াহ চাইলেন। তিনি তাকে ইবনু উম্মে মাকতূমের ঘরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু মারওয়ান ইবনুল হাকাম ‘তালাকপ্রাপ্তা নারীর স্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া’ বিষয়ে ফাত্বিমাহর হাদীসকে সঠিক বলে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। আার ‘উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের হাদীসকে অস্বীকার করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সালিহ ইবনু ক্বায়সান, ইবনু জুরাইজ, শু’আইব ইবনু আবূ হামযাহ এরা সবাই আয-যুহরী (রহঃ) হতে ঐভাবেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) মারওয়ান ফাত্বিমাহ (রাঃ) এর কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করতে প্রেরিত হলেন। তিনি তাকে জানালেন যে, তিনি (ফাত্বিমাহ) আবূ হাফসের স্ত্রী ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে ইয়ামানে কোন একটি এলাকার শাসক নিযুক্ত করে পাঠান। তার স্বামীও তার সাথে সেখানে যান। অতঃপর তার স্বামী তাকে অবশিষ্ট এক তালাক প্রদান করলেন। তিনি ‘আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবী’আহ এবং হারিস ইবনু হিশামকে অনুরোধ করেন, তারা উভয়ে যেন ফাত্বিমাহকে খোরাকী দেন। জবাবে তারা উভয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! সে গর্ভবতী না হলে খোরাকী পাবে না। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট আগমন করলে তিনি বলেনঃ তুমি গর্ভবতী না হয়ে থাকলে খোরাকী পাবে না। তিনি স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। ফাত্বিমাহ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কোথায় যাবো? তিনি বললেনঃ ইবনু উম্মে মাকতূমের নিকট। তিনি অন্ধ মানুষ। তুমি তার সামনে কাপড় বদলালেও সে দেখতে পাবে না। অতঃপর ইদ্দাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে উসামাহ (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ দিলেন। তারপর ক্বাবীসাহ মারওয়ানকে তা অবহিত করলেন। মারওয়ান বলেন, আমরা উক্ত হাদীস শুধু একটি মহিলা থেকেই শুনেছি। আমরা নির্ভরযোগ্য বিষয়ে অবিচল থাকবো, লোকজন যার উপর আমল করে আসছে। ফাত্বিমাহ মারওয়ানের মন্তব্য শুনতে পেয়ে বলেন, আল্লাহর কিতাবই আমার ও তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করবে। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা তাদেরকে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে তালাক দিবে... তুমি জ্ঞাত নও, হয়তো এরপর আল্লাহ কোন উপায় করে দিবেন” (সূরাহ আত-তালাকঃ ১)। ফাত্বিমাহ (রাঃ) বললেন, তিন তালাকের (হায়িযের) পর আবার কি সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে? ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন ইউনুস যুহরী হতে অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। আর যুবাইদী উভয় হাদীসকে উবাইদুল্লাহর হাদীসের মতই মা’মারের হাদীসের অর্থে বর্ণনা করেছেন। আর আবূ সালামাহর হাদীস ‘উক্বাইলের হাদীসের অর্থানুরূপ এবং মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব যুহরীর মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, ক্বাবীসাহ ইবনু যুআইব (রহঃ) এর হাদীসের অর্থ ‘উবাইুদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের অর্থকে সমর্থন করে। তিনি বলেছেন, “অতঃপর ক্বাবীসাহ মারওয়ানের নিকট গিয়ে ফাত্বিমাহ (রাঃ) এর বিবরণ তাকে অবহিত করলেন।

【40】

যিনি ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর হাদীসটি অস্বীকার করেন

আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি কুফার জামে মাসজিদে আল-আসওয়াদের সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে আগমন করলে তিনি বললেন, এক মহিলার কথার উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের প্রতিপালকের কিতাব এবং আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাত ত্যাগ করতে পারি না। কেননা আমরা জানি না যে, তিনি প্রকৃত ঘটনা মনে রেখেছেন কিনা? হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস বর্ণিত হাদীসের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ফাত্বিমাহ একটি ভীতিপ্রদ স্থানে বসবাস করতেন, সেখানে তার একাকী অবস্থান নিরাপদ মনে না করায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট ফাত্বিমাহ্‌র বক্তব্যের ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা করার মধ্যে তার কোন কল্যাণ নেই। সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) ফাত্বিমাহর চলে যাওয়ার বিষয়ে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার অশোভনীয় আচরণের কারণে তা হয়েছিল। [২২৯৪] আল-ক্বাযিম ইবনু মুহাম্মাদ ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ ইবনুল ‘আস ‘আবদুর রহমান ইবনুল হাকামের কন্যাকে চূড়ান্ত তালাক প্রদান করায় ‘আবদুর রহমান তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ খবর শুনে ‘আয়িশাহ (রাঃ) মদিনায় গভর্নর মারওয়ান ইবনুল হাকামের কাছে লোক মারফত বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং মহিলাকে তার (স্বামীর) ঘরে পাঠিয়ে দাও। সুলায়মান বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ মারওয়ান বললেন, ‘আবদুর রহমান এ বিষয়ে আমার উপর প্রভাব খাটিয়েছে। আল-ক্বাসিম বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ মারওয়ান বলেন, আপনার কাছে কি ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের হাদীস পৌঁছেনি? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের ঘটনা উল্লেখ না করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। মারওয়ান বললেন, আপনি তাতে মন্দ কিছু দেখলে, তা এই দম্পতির ব্যাপারেও যথেষ্ট হবে। মায়মূন ইবনু মিহরান (রহঃ) আমি মদিনায় আসি এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাবের নিকট গিয়ে বলি, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসকে তালাক দেয়া হলে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সাঈদ (রহঃ) বললেন, ঐ নারী তো মানুষকে বিপদে ফেলেছেন। তিনি মুখোরা নারী ছিলেন। তাই তাকে অন্ধ ইবনু উম্মে মাকতূমের বাড়িতে সোপর্দ করা হয়।

【41】

ইদ্দাত পালনকারিণী দিনের বেলায় বাইরে যেতে পারবে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খালাকে তিন তালাক দেয়া হয়। এরপর তিনি তার খেজুর কাটতে বের হলে জনৈক ব্যক্তি তাকে নিষেধ করলো। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি বললেনঃ তুমি বাইরে যাও এবং তোমার খেজুর কাটো। হয়তো তুমি তা থেকে সদাক্বাহ করবে অথবা কল্যাণমূলক কাজ করবে।

【42】

মীরাস ফার্‌য হওয়ার পর বিধবার জন্য খোরাকী প্রদানের ব্যবস্থা রহিত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু আসন্ন এবং স্ত্রী রেখে যায় তারা যেন এরূপ অসিয়ত করে যে, তাদেরকে এক বছর ঘর থেকে বের না করে খোরাকী দেয়” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ : ২৪০)। এ আয়াতটি মীরাসের আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। যেখানে স্ত্রীদের জন্য এক-চতুর্থাংশ ও এক-অষ্টমাংশ নির্ধারণ করা হয়। আর এক বছরের ইদ্দাত বাতিল করে চার মাস দশ দিন করা হয়।

【43】

স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর শোক পালন

হুমাইদ ইবনু নাফি’ (রহঃ) যাইনাব বিনতু আবূ সালামাহ (রাঃ) তাকে এ তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাইনাব (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) হলুদ রং-এর সুগন্ধি বা অন্য কিছুর জন্য ডাকলেন। সেটা দিয়ে একটি বালিকাকে সুগন্ধি মাখালেন এবং তার গাল স্পর্শ করলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার কোন সুগন্ধির প্রয়োজন ছিলো না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন বৈধ নয়। কিন্তু স্ত্রী স্বীয় স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। যাইনাব (রাঃ) বলেন, অতঃপর যাইনাব বিনতু জাহশের ভাই মারা গেলে আমি তার ঘরে প্রবেশ করি। তিনিও সুগন্ধি নিয়ে আহবান করলেন এবং তা লাগিয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার সুগন্ধির কোন দরকার ছিলো না। শুধু এজন্যেই ব্যবহার করলাম যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ যে মহিলা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। স্ত্রী কেবল তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। যাইনাব (রহঃ) বলেন, আমি আমার মা উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কন্যার স্বামী মারা গেছে এবং কন্যাটির চোখে রোগ ধরেছে। আমরা কি তার চোখে সুরমা লাগিয়ে দিবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না। মহিলাটি দুই অথবা তিনবার জিজ্ঞেস করলো আর তিনি প্রতিবারই ‘না’ বললেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে। অথচ জাহিলী যুগে তোমাদের কোন নারীকে এক বছর যাবত ইদ্দাত পালন করতে হতো, অতঃপর পায়খানা নিক্ষেপ করে পবিত্র হতো। হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আমি যাইনাবকে জিজ্ঞেস করি, বছর শেষে পায়খানা নিক্ষেপের অর্থ কি? যাইনাব বলেন, জাহিলী যুগে কোন নারীর স্বামী মারা গেলে সে একটি কুড়ে ঘরে প্রবেশ করতো এবং খুবই মন্দ পোশাক পরতো, কোন সুগন্ধি মাখতো না। এভাবে সে এক বছর অতিবাহিত করতো। অতঃপর তার কাছে চতুষ্পদ জন্তু, যেমন গাধা, বকরী বা পাখি আনা হতো। সে তার গায়ে হাত বুলাতো, সে যেটার গায়ে হাত বুলাতো সেটা কমই জীবিত থাকতো। অতঃপর মহিলাকে বের করে এসে কিছু পায়খানা দেয়া হতো। সে তা নিক্ষেপ করতো। তারপর সে যে কোন কাজ, যেমন সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করতো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আল-হাফশ’ অর্থ সংকীর্ণ ঘর।

【44】

যার স্বামী মারা গেছে তার (বাড়ীর) বাইরে যাওয়া

যাইনাব বিনতু কা’ব ইবনু ‘উজরাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-এর বান ফুরাই’আহ বিনতু মালিক ইবনু সিনান (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বনু খুদরায় তার পিতার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে অনুমতি চাইলেন। তার স্বামী তার কয়েকটি পলাতক গোলামের সন্ধানে গিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি আল-কাদূম সীমায় পৌঁছে তাদের দেখতে পেলো। এরপর গোলামরা তাকে হত্যা করে ফেলে। তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট অনুমিত চাইলেন, আমি আমার পিত্রালয়ে ফিরে যেতে চাই। তিনি আমার জন্য তার মালিকাধীন বাসস্থান অথবা খোরপোষ রেখে যাননি। মহিলা বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রওয়ানা হয়ে হুজরা অথবা মাসজিদ পর্যন্ত গেলে তিনি আমাকে ডাকলেন বা কাউকে দিয়ে ডাকালেন। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি কি বলেছিলে? তখন আমি আমার স্বামীর ঘটনাটি পুনরাবৃত্তি করি। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি ইদ্দাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান করো। মহিলাটি বললেন, আমি সেখানে চার মাস দশ দিন অতিবাহিত করলাম। ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তার যুগে আমার নিকট লোক পাঠিয়ে আমার ঘটনাটি জানতে চাইলে আমি তাকে অবহিত করি। তিনি তা অনুসরণ করলেন এবং সেই অনুযায়ী বিধান জারি করলেন।

【45】

যার মতে, ইদ্দাত পালনকারিণী অন্যত্র যেতে পারবে

‘আত্বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ “নিজ পরিবারে থেকে ইদ্দাত পালন করা” সম্পর্কিত আয়াতটি মানসূখ হয়ে গেছে। সুতরাং যেখানে খুশি ইদ্দাত পালন করবে। তা হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণীঃ “ঘর থেকে বহিষ্কার না করে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৪০)। ‘আত্বা (রহঃ) বলেন, সে ইচ্ছা হলে স্বামীর বাড়িতে ইদ্দাত পূর্ণ করবে এবং (স্বামীর) ওসিয়াতকৃত বাড়িতে অবস্থান করবে, আর ইচ্ছে হলে অন্যত্র চলে যেতে পারবে। আল্লাহর এ বাণী মোতাবেকঃ “আর যদি তারা বের হয়ে যায় তবে এতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই, তাদের কাজের ব্যাপারে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৪০)। ‘আত্বা (রহঃ) বলেন, মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হলে নির্দিষ্ট বাসস্থানও মানসূখ হয়ে যায়। এখন সে যেখানে খুশি ইদ্দাত পূর্ণ করতে পারে।

【46】

ইদ্দাত পালনকারিণী ইদ্দাতকালে যা বর্জন করবে

উম্মু ‘আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী স্বামী ব্যতীত (কোন মৃত ব্যক্তির জন্য) তিন দিনের বেশি শোক পালন করবে না, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে সে শোক পালন করব চার মাস দশ দিন। এ সময়ের মধ্যে সে রঙ্গিন পোশাক পরিধান করবে না, অবশ্য হালকা রংবিশিষ্ট পোশাক পরতে পারে এবং সুরমা ও কোন প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। তবে হায়েয বা ঋতুস্রাবের পরে তোহরের নিকটবর্তী সমেয় ‘কোসত’ ও ‘আযফার’ নামক হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে, ‘খেযাব’ও লাগাতে পারবে না। উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত। তবে ঐ দু’জনের (হারুন ও মালিকের) হাদীস পূর্ণাঙ্গ নয়। মালিক ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-মিসমায়ী বলেন, ইয়াযীদ বলেছেন, আামার ধারণা হাদীসে “সে খিযাব ব্যবহার করবে না”- এ কথাটিও আছে। হারূন বলেছেন, “সে রঙ্গিন পোশাক পরবে না, অবশ্য হালকা রঙ্গিন পোশাক পরতে পারবে। নাবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে সে রঙ্গিন পোশাক, কারুকার্য খচিত জামা ও অলংকার পরবে না, খিযাব ও সুরমা ব্যবহার করবে না। উসাইদের কন্যা উম্মু হাকীম (রহঃ) তার মায়ের সুত্র তার স্বামী মারা যান। তখন তার চোখে অসুখ থাকায় তিনি ইসমিদ সুরমা ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে তিনি তার এক দসীকে উম্মু সালমাহ (রাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করে তাকে ইসমিদ সুরমা ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘তুমি কোন সুরমাই লাগাবে না। একান্তই প্রয়োজন হলে রাতের বেলা সুরমা লাগাবে এবং দিনের বেলায় তা মুছে ফেলো। উম্মু সালমাহ (রাঃ) বলেন, (আমার প্রাক্তন স্বামী) আবূ সালামাহ মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট আসলেন। এ সময় আমি চোখে ‘সিবর’ (গাছের রস) লাগিয়েছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে উম্মু সালামাহ! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এটা ‘সিবর’। এতে কোন খোশবু নেই। তিনি বললেনঃ এটা চেহারাকে রঞ্জিত করে। কাজেই তুমি তা কেবলমাত্র রাতের বেলা ব্যবহার করবে এবং দিনের বেলা তা মুছে ফেলবে। আর মাথার চুলে কোন সুগন্ধি মেখে আঁচড়াবে না এবং মেহেদি লাগাবে না, কারণ এটাও এক প্রকার খিযাব। তিনি (উম্মু সালামাহ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তবে আমি মাথায় কি ব্যবহার করে চুল আঁচড়বো হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ তোমার মাথায় কুল পাতা লেপে নিবে। [২৩০৫] দুর্বলঃ যঈফ সুনান নাসায়ী (২৩০/৩৫৩৭)।

【47】

গর্ভবতীর ইদ্দাত

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ (রহঃ) তার পিতা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আরক্বাম আয-যুহরীকে এ মর্মে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তিনি যেন আল হারীস আল-আসলামীর মেয়ে সুবাইয়ার নিকট গিয়ে তাকে তার হাদীসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, এবং তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট ফাতাওয়াহ জানতে চাইলে তিনি তাকে কি উত্তর দিয়েছিলেন তাও যেন জিজ্ঞেস করেন। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবুন ‘উতবাহকে জানালেন, সুবাইয়া (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি সা’দ ইবনু খাওলাহ্‌ (রাঃ) এর বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। আর তিনি ছিলেন আমির ইবনু লুয়াঈ গোত্রের লোক এবং অন্যতম বদরী সাহাবী। তিনি গর্ভবতী অবস্থায় তার স্বামী বিদায় হাজ্জ্বের সময় মারা যান। তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে তার সন্তান প্রসব হয়। তিনি নিফাসমুক্ত হওয়ার পর বিয়ের প্রস্তাবের আশার সাজসজ্জা করেন। তখন ‘আবদুদ-দার গোত্রীয় আবুস সানাবিল ইবনু বা’কাক তার নিকট এসে বললো, আমি যে তোমাকে সুসজ্জিত দেখছি, তুমি কি বিয়ের ইচ্ছা করো? আল্লাহর শপথ! চার মাস দশ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি কোথাও বিয়ে করতে পারবে না। সুবাইয়া (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে একথা বললে আমি আমার পোশাক গুটিয়ে সন্ধ্যার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট গমন করে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি তখনই হালাল হয়েছি যখন আমি সন্তান জন্ম দিয়েছি। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি ইচ্ছা করলে বিয়ে বসতে পারি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সন্তান প্রসবের পর তার বিয়ে বসাতে আমি কোন দোষ দেখি না, যদিও তার নিফাসের রক্ত চালু রয়েছে। তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার স্বামী তার সাথে সহবাস করবে না। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি লি’আন করতে চায় আমি তার সাথে তা করতে প্রস্তুত আছি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, সূরাহ আন-নিসা যা তালাকের সূরাহ হিসেবেও পরিচিত, “চার মাস দশদিন” সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরেই অবতীর্ণ হয়।

【48】

উম্মু ওয়ালাদের উদ্দাত

‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতকে আমাদের জন্য সংশয়পূর্ণ করো না। ইবনুল মুসান্না (রঃ) বলেন, আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত অনুযায়ী উম্মু ওয়ালাদের ইদ্দাতকালও চার মাস দশ দিন।

【49】

তিন তারাকপ্রাপ্ত‍া নারী, দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রথম স্বামী তার নিকট ফিরে আসতে পারবে না।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, ফলে ঐ মহিলা অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করলে সে তার সাথে নির্জনবাস করার পর সঙ্গম না করেই তাকে তালাক প্রদান করেছে। এখন ঐ মহিলা কি তার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ? তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে প্রথম স্বামীর জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল নয় যতক্ষণ পরস্পর পরস্পরের মধুর স্বাদ গ্রহন (সহবাস) না করবে।

【50】

ব্যভিচারের পরিণাম

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বড় পাপ কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার খাদ্যে ভাগ বসাবে এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। তিনি বলেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার যিনা করা। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথার সমর্থনে অবতীর্ণ করা হয়ঃ “যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করে না এবং আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যিনা করে না। তবে যারা এরূপ করে, তারা তাদের পাপের ফল ভোগ করবে।” জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মুসাইকাহ’ নামক এক আনসারী সাহাবীর দাসী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আমার মনিব আমাকে ব্যভিচারে বাধ্য করে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) “তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে যিনায় লিপ্ত হওয়ার জন্য বাধ্য করোনা।” উবায়দুল্লাহ ইব্ন মু’আয মু’তামির থেকে এবং তিনি তার পিতা (কুরআনের এ আয়াত) বর্ণনা করেছেন যে, “আর তাদের মধ্যে যারা অপছন্দনীয় কাজ করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার এ অপছন্দনীয় কাজের পরেও মার্জনাকারী, অনুগ্রহশীল।” রাবী বলেন, সাঈদ ইব্‌ন আবুল হাসান বলেন, যারা বাধ্য হয়ে অপকর্ম করে, সেই সমস্ত নারীদের জন্য আল্লাহ মার্জনাকারী।