16. কুরবানীর নিয়ম-কানুন
কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে
মিখলাফ ইবনু সুলাইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আরাফাহয় অবস্থান করছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেনঃলোকসকল! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের লোকদের উপর প্রতি বছর কুরবানী ও ‘আতীরাহ করা কর্তব্য। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো, ‘আতীরাহ কি? ‘আতীরাহ হলো, যাকে লোকেরা ‘রাজাবিয়াহ’ বলতে থাকে। আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আতীরাহ রহিত এবং এর হাদীসও রহিত। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কুরবানীর দিনকে ঈদ উদযাপন করতে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আল্লাহ এ দিনকে এ উম্মাতের জন্য ঈদ হিসাবে নির্দিষ্ট করেছেন। এক ব্যক্তি বললো, আপনার অভিমত ব্যক্ত করুন, আমি (আমার প্রতিপালিত) দুগ্ধবতী বা মালবাহী পশু ছাড়া অন্য পশু না পেলে কি তা দিয়েই কুরবানী করবো? তিনি বললেনঃ না, বরং তুমি তোমার চুল ও নখ কাটবে, গোঁফ ছোট করবে এবং নাভীর নীচের লোম কাটবে। এ কাজগুলোই আল্লাহর নিকট তোমার পূর্ণাঙ্গ কুরবানী। দুর্বলঃ মিশকাত (১৪৭৯), আল-জামি’উস সাগীর (১২৬৫), যঈফ সুনান নাসায়ী (২৯৪/৪৩৬৫)।
মৃতের পক্ষ হতে কুরবানী
তাবিঈ হানাশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি (দু’টি কেন)? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ওয়াসিয়্যাত করেছেন, আমি যেন তার পক্ষ হতে কুরবানী করি। তাই তার পক্ষ হতেও কুরবানী করছি। দুর্বলঃ মিশকাত (১৫৪২)।
যে কুরবানী করতে চায়, সে যিলহাজ্জের দশ তারিখ পর্যন্ত তার চুল কাটবে না
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।
কুরবানীর জন্য কোন ধরনের পশু উত্তম
‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন দুম্বা কুরবানী করতে নির্দেশ করেন, যার শিং নিখুঁত, হাঁটা কালো, দেখতে কালো এবং শোয়াও কালো (অর্থাৎ পা, চোখ, পেট সবই কালো রঙের)। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! ছুরি দাও। এরপর বললেনঃ এটা পাথরে ঘষে ধারালো করো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। তিনি ছুরি নিলেন, দুম্বাকে ধরে কাৎ করে শোয়ান এবং যাবাহ করার সময় বললেনঃ “বিসমিল্লাহ; হে আল্লাহ! আপনি এ কুরবানী মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার ও তার উম্মাতের পক্ষ হতে কবুল করুন।" অতঃপর তিনি দুম্বাটি কুরবানী করলেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে সাতটি উটকে দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদীনাহতে শিংযুক্ত দুটি ধূসর বর্ণের দুম্বা কুরবানী করেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই শিংওয়ালা ধূসর বর্ণের দু’টি দুম্বা কুরবানী করেন। যাবাহ করার সময় তিনি বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার পাঠ করেন, এবং তিনি তার পা পশুর ঘাড়ের উপর রাখেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন দু’টি ধূসর বর্ণের শিংবিশিষ্ট ও খাসী করা দুম্বা যাবাহ করেন। তিনি দুম্বা দু’টিকে কিবলাহুমুখী করে শুইয়ে বলেনঃ (আরবি) অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যাবাহ করেন। দূর্বলঃ মিশকাত (১৪৬), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৬৯/৩১২১) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন শিংবিশিষ্ট মোটাতাজা দুম্বা কুরবানী করেছেন যার চোখ, মুখ ও পা কালো বর্ণের ছিলো।
কুরবানীর পশুর বয়স কত হওয়া চাই
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ‘মুসিন্নাহ’ ছাড়া যাবাহ করবে না। তবে তা সংগ্রহ করা তোমাদের জন্য কষ্টকর হলে মেষের জাযা’আহ যাবাহ করতে পারো। যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বণ্টন করেন। তিনি আমাকে অল্প বয়স্ক একটা জাযা’আহ দেন। যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমি সেটি নিয়ে তার নিকট গিয়ে বলি, এটা তো জাযা’আহ। তিনি বললেনঃ এটাই কুরবানী করো। সুতরাং আমি তা-ই কুরবানী করলাম। আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি (কুলাইব) বলেন, আমরা বনী সুলাইম গোত্রের মুজাশি’ নামক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবীর সাথে ছিলাম। একবার বকরীর মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে তিনি ঘোষককে নির্দেশ দেয়ায় সে ঘোষণা করলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ এক বছর বয়সের ছাগলের স্থানে ছয় মাস বয়সের ভেড়া যথেষ্ট। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, তিনি মাসউদের পুত্র মুজাশি’ (রাঃ)। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন ঈদের সলাতের পর আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের মত সলাত আদায় করলো, আমাদের মত কুরবানী করলো, তার কুরবানী সঠিক হলো। আর যে ঈদের সলাতের পূর্বে কুরবানী করলো, তা (কুরবানী না হয়ে) গোশত খাওয়ার বকরী হলো। আবু বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি তো সলাতের জন্য বের হওয়ার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছিলাম, আজ পানাহারের দিন। তাই তাড়াহুড়া করে কুরবানীর গোশত নিজে খেয়েছি, পরিবারপরিজন এবং প্রতিবেশীদেরও খেতে দিয়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা গোশত খাওয়ার বকরী হলো। আবু বুরদাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে ছয়মাস পূর্ণ বয়সের একটি ছাগল আছে যা আমার গোশত খাওয়ার বকরীর চেয়েও উত্তম। এটা কি আমার কুরবানীর স্থান পূর্ণ করবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য এরূপ করা জায়িয হবে না। আল বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বুরদাহ নামক আমার এক খালু একদা ঈদের সালাতের আগেই কুরবানী করে ফেলেন। ফলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমার বকরী গোশত খাওয়ার বকরী হয়েছে (কুরবানীর বকরী হয়নি)। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে ছয় মাস বয়সের একটি ছাগল আছে। তিনি বললেনঃ সেটা কুরবানী করো, তবে তোমার পর আর কারো জন্য এরূপ করা সঠিক হবে না।
যে ধরনের পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়
‘উবাইদ ইবনু ফাইরূয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, কোন ধরনের পশু কুরবানী করা জায়িয নয়? তিনি বললেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়ান। আমার আঙ্গুলগুলো তাঁর আঙ্গুলের চেয়ে তুচ্ছ এবং আমার আঙ্গুলের গিরাগুলোও তাঁর আঙ্গুলের গিরার চেয়ে তুচ্ছ। তিনি আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ চার ধরনের দোষযুক্ত পশু কুরবানী করা জায়ি্য নয়। অন্ধ-যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন-যার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া-যার খোঁড়ামী সুস্পষ্ট, বৃদ্ধ ও দুর্বল-যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। ‘উবাইদ (রহঃ) বলেন, আমি বলি, বয়সের কোন দোষ থাকাও আমি অপছন্দ করি। আল-বারাআ (রাঃ) বলেন, তুমি যা অপছন্দ করো তা বর্জন করবে, তবে অন্যের জন্য তা নিষিদ্ধ করবে না। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এমন দুর্বল যে, তার হাড়ের মজ্জা নাই। ইয়াযীদ মিসরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উতবাহ ইবনু আব্দ আস-সুলামীর নিকট এসে বলি, হে ওয়ালীদের পিতা! আমি কুরবানীর পশুর খোঁজে বের হই, কিন্ত কোন পশুই পছন্দ হয়নি। একটি বকরী পছন্দ হয়েছিল, তার একটি দাঁত না থাকায়, সেটাও বাদ দিয়েছি। এখন এ বিষয়ে আপনি আমাকে পরামর্শ দিন। ‘উতবাহ বলেন, তুমি আমার কাছে সেটা নিয়ে আসোনি কেন? আমি বলি, সুবহানাল্লাহ! দাঁতপড়া পশু কুরবানী আপনার জন্য বৈধ, অথচ আমার জন্য বৈধ নয়! তিনি বললেন, হাঁ। তুমি সন্দিহান হয়েছো কিন্ত আমি সন্দিহান হইনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কানকাটা, শিংবিহীন, অন্ধ, দুর্বল এবং পা ভাঙ্গা পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। মুসফারা হচ্ছে ঐ পশু যার কানকাটার ছিদ্র স্পষ্ট দেখা যায়। মুস্তাসালা হলো ঐ পশু যার শিং গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে। যাখকা হলো, যে পশুর দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছে। মুশায়্যি’আহ হলো, যে পশু দুর্বলতার কারণে মেষের সাথে সাথে চলতেও অক্ষম। কাসরা হলো ঐ পশু যার পা ভাঙ্গা। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন আমরা যেন কুরবানীর প্রাণীর চোখ-কান ভালভাবে দেখে নেই। আমরা যেন এমন পশু কুরবানী না করি যা কানা যা অন্ধ, কানের অগ্র যা শেষভাগের অংশ কাটা; যার কানের পাশের দিক ফাঁড়া যা গোলাকার ছিদ্র রয়েছে। যুহাইর (রহঃ) বলেন, আমি আবূ ইসহাক্বকে বলি, তিনি কান কাটার কথা উল্লেখ করেছেন কিনা? তিনি বললেন, না। আমি তাকে জিজ্ঞেস বলি, মুকাবালাহ কি? তিনি বললেন, যার কানের একপাশে কাটা। আমি বলি, মুদাবারাহ কি? তিনি বল্লেন, যে পশুর কানের শেষের অংশ কাটা। আমি বলি, শারকা কি? তিনি বললেন, যার কান ছিদ্র করা হয়েছে। আমি বলি, খারকা কি? তিনি বললেন, যে পশুর কান সম্পূর্ণ কাটা। দুর্বল : ভালভাবে দেখে নেয়ার আদেশ কথাটি বাদে। মিশকাত (১৪১৩), ইরওয়া (১১৪৯)। ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কান কাটা এবং শিং ভাঙ্গা পশু দ্বারা কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী জুরাই সাদূস গোত্রীও এবং বাসরাহ নিবাসী। তার থেকে ক্বাতাদাহ (রহঃ) ছাড়া কেউই হাদীস বর্ণনা করেননি। দুর্বল : মিশকাত (১৪৬৪), যইফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৭৮/৩১৪৫), ইরওয়া (১১৪৯), যইফ সুনান আত-তিরমিযী (২৫৯/১৫৫৬)। ক্বাতাদাহ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (র)-কে জিজ্ঞেস করি, আ’দাব কোন ধরনের পশু? তিনি বলেন, যে পশুর কান বা শিং অর্ধেক বা ততোধিক ভাঙ্গা বা কাটা।
কুরবানীর গরু ও উটে কতজন শরীক হওয়া জায়িয
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে তামাত্তু হাজ্জ করতাম এবং সাতজন মিলে একটি গরু কুরবানী করতাম। অনুরূপভাবে একটি উটেও সাতজন শরীক হয়ে কুরবানী করেছি। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (একটি) গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুদায়বিয়াতে সাতজনের পক্ষ হতে একটি উট এবং সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করেছি।
জামা’আতের পক্ষ হতে একটি বকরী কুরবানী করা সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুত্ববাহ শেষে মিম্বার থেকে নামলেন। একটি বকরী আনা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে যাবাহ করেন এবং বলেনঃ “আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহ মহান। এই কুরবানী আমার ও আমার উম্মাতের যারা কুরবানী করতে অক্ষম তাদের পক্ষ হতে।”
ঈদগাহে ইমামের কুরবানী করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কুরবানীর পশু ঈদগাহে যাবাহ করতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও অনুরূপ করতেন।
কুরবানীর গোশ্ত সংরক্ষণ করে রাখা
‘আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময়ে জঙ্গলে বসবাসকারী কিছু লোক এসে ঈদুল আযহার জামা’আতে উপস্থিত হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তিন দিনের খাওয়ার পরিমাণ গোশ্ত রেখে বাকী গোশ্ত সদাক্বাহ করে দাও। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, কিছুদিন পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! ইতিপূর্বে লোকেরা তো তাদের কুরবানী (গোশ্ত) দ্বারা (অনেকদিন) সুবিধা ভোগ করতো। তারা চর্বি জমা করে রাখতো এবং চামড়া দিয়ে পানির মশক বানাতো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরূপ বলার অর্থ কি? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কুরবানীর গোশ্ত তিন দিনের অধিক জমা রাখতে নিষেধ করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সময় তোমাদের নিকট কিছু গরীব লোক এসেছিল বিধায় আমি তোমাদেরকে এরূপ নিষেধ করেছিলাম। কাজেই এখন তোমরা তা খাও, সদাক্বাহ করো এবং জমা করে রাখো। নুবাইশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানীর গোশ্ত খেতে নিষেধ করেছিলাম, যাতে গোশ্ত তোমাদের সকলের নিকট পৌঁছে যায়। আল্লাহ এখন তোমাদের দারিদ্র মোচন করেছেন। কাজেই এখন তোমরা তা খাও, জমা করে রাখো এবং সদাক্বাহ করে নেকী অর্জন করো। জেনে রেখো, এ দিনগুলো পানাহারের দিন এবং মহান আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।
পশুকে চাঁদমারীর লক্ষ্য না বানানো এবং কুরবানীর পশুর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট দুটি বৈশিষ্ট সম্পর্কে শুনেছি। এক. মহান আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করেছেন। সুতরাং তোমরা হত্যা করার সময় সঠিক পন্থায় (দ্রুত) হত্যা করবে। দুই. তোমরা যখন যাবাহ করবে, দয়া সহকারে উত্তমরূপে যাবাহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি উত্তমরূপে ধার দেয় এবং যাবাহকৃত পশুকে আরাম দেয়। হিশাম ইবনু যায়িদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আনাসের (রাঃ) সাথে আল-হাকাম ইবনু আইয়ুবের নিকট যাই। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো, কতিপয় যুবক একটি মুরগীকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে তীর ছুঁড়ছে। তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীব-জন্ত্তকে চাঁদমারীর লক্ষ্যবস্তু বানাতে নিষেধ করেছেন।
মুসাফিরের কুরবানী করা
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে কুরবানী করেন এবং বলেনঃ হে সাওবান! আমাদের জন্য বকরীর গোশতগুলো তৈরি করো। সাওবান (রাঃ) বলেন, মদিনায় পৌঁছা পর্যন্ত তাকে এ গোশত খাওয়াতে থাকি।
আহলে কিতাবের যাবাহকৃত পশু সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আল্লাহর বাণী) : “যে পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় তোমরা তার গোশত খাও” (সূরাহ আল-আন’আম : ১১৮) “যে পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তার গোশত খেয়ো না” (সূরাহ আল-আন’আম : ১২১)। এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এটি আহলে কিতাবের যাবাহ করা পশুর ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়। (আল্লাহর বাণী) : “আহলে কিতাবের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল” (সূরাহ আল-মায়িদাহ : ৫)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণী, “শয়তানরা তাদের সঙ্গীদের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্ভব করে”-এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বর্ণিত আছে, শয়তানের সহযোগীরা বলতো, আল্লাহর যাবাহ করা (মরা জন্ত্ত) তোমরা খাও না, অথচ তোমরা নিজেরা যা যাবাহ করছো তা খাও? অতঃপর আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেন, “যে পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তার গোশত খেয়ো না” ... শেষ পর্যন্ত (সূরা আল-আন’আম : ১২১)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ইয়াহুদীরা এসে বললো, আমরা নিজেরা যা পশু হত্যা করি তা খেয়ে থাকি আর আল্লাহ যা হত্যা করেন তা খাই না। এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেন, “যে পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তার গোশত খেয়ো না” ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা আল-আন’আম : ১২১)। সহীহ : কিন্তু এতে ইয়াহুদীদের উল্লেখ করাটা মুনকার। মাহফূয হলো : মুশরিকরা। দেখুন, সহীহ সুনান আত-তিরমিযী (২৪৫৪) সংক্ষিপ্ত সানাদে।
বেদুঈনরা দম্ভ প্রকাশার্থে যে পশু যাবাহ করে তার গোশত খাওয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব যাবাহকৃত পশুর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন যেগুলো আরবের লোকেরা নিজেদের অহঙ্কার প্রকাশার্থে যাবাহ করে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অধস্তন বর্ণনাকারী গুনদার এটি ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) উক্তি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ রাইহানার নাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাত্বার।
চকমকি পাথর দ্বারা যাবাহ করা
রাফি ‘ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আগামীকাল সকালে শত্রুর মোকাবিলা করবো। কিন্তু আমাদের কাছে ছুরি নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এমন বস্তু দ্বারা দ্রুত যাবাহ করো যা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়, আল্লাহর নাম নিয়ে যাবাহ করো এবং তা খাও, কিন্তু দাঁত অথবা নখ দিয়ে যাবাহ করো না। আমি এর কারণ তোমাদের বলছি। দাঁত হচ্ছে হাড় আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। সৈন্যদলের কিছু লোক সামনে অগ্রসর হয়ে কিছু গনীমাত লাভ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনের দিকে ছিলেন। তারা গোশতের হাড়ি চুলায় বসালো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ডেগের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক গোশতের হাঁড়িগুলো উপুর করে ফেলে দেয়া হলো। তিনি তাদের মধ্যে গনীমাত বণ্টন করলেন এবং একটি উটকে দশটি বকরীর সমান ধরলেন। দলের মধ্যকার একটি উট পালিয়ে যায়। তখন তাদের নিকট ঘোড়া ছিলো না। এক লোক (উটকে লক্ষ্য করে) তীর ছুঁড়লে মহান আল্লাহ উটটিকে থামিয়ে দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ পশুর মধ্যেও পালাতে তৎপর পশু আছে, বা বন্য পশুর মধ্যেও থাকে। সুতরাং (যে পশু পালাবে) তোমরা সেটির সাথে এরূপ আচরণ (তীর নিক্ষেপ) করবে। মুহাম্মাদ ইবনু সাফওয়ান অথবা সাফওয়ান ইবনু মুহাম্মাদ (রা:) সূত্র তিনি বলেন, আমি দু’টি খরগোশ শিকার করে চকমকি পাথর দিয়ে যাবাহ করলাম। এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে এর গোশত খেতে অনুমতি দিলেন। আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বনূ হারিসাহর জনৈক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেন, সে (লোকটি) উহূদ পাহাড়ের এক উপত্যকায় একটি মাদী উট চড়াচ্ছিল। এমতাবস্থায় উটটি মারা যাওয়ার উপক্রম হলে সে যাবাহ করার জন্য কোন অস্ত্র না পেয়ে একটি পেরেক নিয়ে উটের বুকের উপরের অংশে ঢুকিয়ে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত করলো। পরে লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি তাকে এর গোশত খাওয়ার অনুমতি দেন। ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো হাতে শিকার আসলে তখন কাছে ছুরি না থাকলে সে কি চকমকি পাথর ও লাঠির ধারালো পার্শ্ব দিয়ে তা যাবাহ করবে, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, যেভাবে সম্ভব রক্ত প্রবাহিত করো এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো।
কোন কিছু নিক্ষেপের মাধ্যমে (বন্য প্রাণী) যাবাহ করা সম্পর্কে
আবুল ‘আশরাআ (রহ:) হতে তাঁর পিতার সূত্র তিনি (পিতা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যাবাহ কি শুধু কণ্ঠনালী বা সিনার উপর করতে হবে? বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি তার রানে (বল্লমের) আঘাত করতে পারলে তা তোমার জন্য যথেষ্ট। ইমাম আবূ দাঊদ (রহ:) বলেন, এরূপ কেবল সংকটাপন্ন অবস্থা বা বন্য প্রাণীর বেলায় প্রযোজ্য। অন্যথায় নয়। মুনকার : যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৪৮২৭), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬৮৪/৩১৮৪), যঈফ আত তিরমিযী (২৫১/১৫২৬), যঈফ সুনান নাসায়ী (৩০১/৪৪০৮), ইরওয়া (২৫৩৫), মিশকাত (৪০৮২)।
উত্তমরূপে যাবাহ করা
ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শয়তানের নিয়মে যাবাহ করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ঈসা বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ ‘শারীত্বাতিশ শাইতান’ হলোঃ যাবাহের সময় রগ না কেটে কেবল শরীরের চামড়া তুলে পশুকে রেখে দেয়া, ফলে অধিক কষ্ট পেয়ে পশুটি মারা যায়। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০৬৮), ইরওয়া (২৫৩১)।
পশুর পেটের বাচ্চা যাবাহ করা সম্পর্কে
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যাবাহকৃত পশুর পেটের বাচ্চা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমাদের ইচ্ছে হলে তাও খেতে পারো। মুসাদ্দাদের (রহঃ) এর বর্ণনায় রয়েছেঃ আমরা বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা উস্ট্রী, গাভী ও বকরী যাবাহ করার পর কখনো এর পেটে ভ্রূণ পেয়ে থাকি। আমরা এ ভ্রূণ ফেলে দিব নাকি খাবো? তিনি বললেনঃ ইচ্ছা হলে খেতে পারো। কেননা মাকে যাবাহ করাই এর যাবাহের অন্তর্ভুক্ত। জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পশুকে যাবাহ করাই তার পেটের বাচ্চার যাবাহের জন্য যথেষ্ট।
এমন গোশত খাওয়া, যা আল্লাহর নামে যাবাহ করা হয়েছে কিনা জানা নাই
আয়িশাহ (রাঃ) একদা সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জাহিলী যুগের কাছাকাছি একটি (নও মুসলিম) দল আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না তারা আল্লাহর নাম নিয়ে তা যাবাহ করেছে কিনা। আমরা কি এ গোশত খাবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তা খাও।
‘আতীরাহ বা রজব মাসের কুরবানী
আবুল মালীহ (রহঃ) তিনি বলেন, নুবাইশাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উচ্চস্বরে বললো, আমরা জাহিলী যুগে রজব মাসে ‘আতীরাহ করতাম। এখন এ বিষয়ে আপনি আমাদের কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, আল্লাহর নামে যে কোন মাসেই যাবাহ করতে পারো, আল্লাহর আনুগত্য করো ও অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দাও। নুবাইশাহ (রাঃ) বলেন, লোকটি আবার বললো, আমরা জাহিলী যুগ ফারা’আ করতাম, এখন এ বিষয়ে আপনি আমাদের কি আদেশ দেন? তিনি বললেন, প্রত্যেক বিচরণকারী পশুতে ফারা’আ রয়েছে। তোমরা তোমাদের পশুদেরকে খাদ্য দিয়ে থাকো। এমনকি তা বোঝা বহনের উপযোগী হয়। বর্ণনাকারী নাসর (রহঃ) বলেন, হাজ্জীদের বহনের উপযোগী হলে একে যাবাহ করে তার গোশত তুমি সদাক্বাহ করবে। খালিদ (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা, আবূ ক্বিলাবাহ মুসাফিরের জন্য সদাক্বাহ করতে বলেছেন। কেননা এটাই উত্তম। খালিদ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ ক্বিবালাহকে বলি, কয়টি বিচরণকারী পশুতে একটি ফারা’আ? তিনি বললেন, একশোটি। আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইসলামে কোন ফারা’আ নাই এবং ‘আতীরাহও নাই। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহঃ) তিনি বলেন, ফারা’আ হলো পশুর ঐ প্রথম বাচ্চা, যা তারা দেবতার উদ্দেশ্যে যাবাহ করত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে প্রতি পঞ্চাশটি বকরীতে একটি বকরী ‘আতীরাহ করতে আদেশ করেছেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কতিপয় লোকের উক্তি হচ্ছে, ‘ফারা’আ হলো উটের প্রথম বাচ্চা, যা জাহিলী যুগের লোকেরা তাদের দেবতার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতো। তারা এর গোশত খেতো এবং এর চামড়া গাছে ঝুলিয়ে রাখতো। ‘আতীরাহ হচ্ছে রজব মাসের প্রথম দশ দিনের কুরবানী।
আক্বীক্বাহ্র বর্ণনা
উম্মু কুর্য আল-কা’বিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পুত্রের জন্য একই ধরনের দু’টি এবং কন্যার জন্য একটি বকরী ‘আক্বীক্বাহ করতে হয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ‘মুতাকাফিয়ান’ অর্থ হলো সমবয়স্ক বা এর কাছাকাছি। উম্মু কুর্য (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা পাখিকে তার বাসায় নিরাপদে থাকতে দিবে। আমি তাঁকে এও বলতে শুনেছিঃ ‘আক্বীক্বাহ্ ছেলের পক্ষ হতে দু’টি এবং মেয়ের পক্ষ হতে একটি বকরী যাবাহ করবে। আক্বীক্বাহ্ খাসী বা বকরী দ্বারা দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। উম্মু কুর্য (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (আক্বীক্বাহ) ছেলের পক্ষ হতে সমবয়স্ক দু’টি বকরী এবং মেয়ের পক্ষ হতে একটি বকরী। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটিই আসল হাদীস। আর সুফিয়ানের হাদীস সন্দেহযুক্ত। সামুরাহ (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বাহর সাথে বন্ধক থাকে। সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে আক্বীক্বাহ করতে হয়, মাথা মুড়াতে হয় এবং (মাথায়) রক্ত মাখাতে হয়। ক্বাতাদাহ্কে জিজ্ঞেস করা হলো, রক্ত কিভাবে মাখতে হয়? তিনি বলে, আক্বীক্বাহ্র পশু যাবাহ করে তা থেকে একটু পশম নিয়ে তাতে রক্ত মেখে তা বাচ্চার মাথার নরম তালুতে রেখে দিবে। অতঃপর মাথা থেকে সূতার ন্যায় রক্ত গড়িয়ে পড়লে মাথা ধুইয়ে তা ন্যাড়া করবে। আবূ দাঊদ বলেন, ‘রক্তমাখার’ শব্দটি হাম্মামের ধারণামূলক, অন্যরা তা বর্জন করেছেন। আবূ দাঊদ বলেন, এখন এ হাদীস আমলযোগ্য নয়। সহীহঃ তবে “(আরবী)” কথাটি বাদে। মাহফু্য হলো “(আরবি)”। যেমন নীচের বর্ণনাটি। ইরওয়া (১১৬৫)। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বাহ্র বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বাহ করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। আবূ দাঊদ বলেন, ‘ইউদমা” শব্দের পরিবর্তে ‘ইউসাম্মা’ শব্দটি অধিক সঠিক। সালমান ইবনু ‘আমির আদ-দাব্বী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতিটি সন্তানের সাথে আক্বীক্বাহ রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষ হতে রক্ত প্রবাহিত করো এবং তার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করো। হাসান বাসরী (রহঃ) তিনি বলতেন, কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা দ্বারা মাথা মুণ্ডানোকে বুঝানো হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনের (রাঃ) পক্ষ হতে একটি করে দুম্বা আক্বীক্বাহ করেছেন। সহীহ। কিন্তু নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছেঃ “দুটি দুটি করে”- এটাই অধিক সহীহ। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতার ও দাদার সূত্র তিনি (দাদা) বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আক্বীক্বাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ কষ্ট পছন্দ করেন না। হয়তো সেজন্যই তিনি আক্বীক্বাহকে কষ্ট নামকরণ করেছেন। তিনি বলেনঃ যার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার পক্ষ হতে আক্বীক্বাহ করে। সে যেন ছেলের পক্ষ হতে সমবয়স্ক দু’টি বকরী এবং মেয়ের পক্ষ হতে একটি বকরী যাবাহ করে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফারা’আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ফারা’আ বৈধ। তোমরা যদি একে এ সময় পর্যন্ত ছেড়ে দাও যে, তা বয়স্ক, শক্তিশালী, ইবনু মাখাদ কিংবা ইবনু লাবূন হয়, তারপর তা কোন বিধবাকে দিয়ে দাও বা আল্লাহর পথে বাহন হিসেবে প্রদান করো, তাহলে এ কাজ একে যাবাহ করে এর গোশত ও লোম চটচটে করার চেয়ে উত্তম হবে। অথবা তোমার উটকে ভারাক্রান্ত করা ও তোমার দুধের পাত্র উপুর করে দেয়ার চাইতে উত্তম হবে। বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমাদের কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে একটি বকরী যাবাহ করতো এবং শিশুর মাথায় ঐ পশুর রক্ত মেখে দিতো। অতঃপর আল্লাহ যখন দীনে ইসলাম আনলেন, আমরা বকরী যাবাহ করতাম, শিশুর মাথা মুণ্ডন করতাম এবং তাতে যা’ফরান মাখতাম।