17. শিকার প্রসঙ্গে
শিকার ইত্যাদি উদ্দেশ্যে কুকুর প্রতিপালন করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি পশুদের রক্ষণাবেক্ষন, শিকার কিংবা কৃষিক্ষেতের পাহারার উদ্দেশ্যে ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, তার সাওয়াব থেকে প্রত্যহ এক ক্বীরাত করে বিয়োগ করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র সৃষ্টজীবের মধ্যে কুকুর এক প্রকার জীব না হলে আমি এগুলোকে হত্যা করতে আদেশ দিতাম। সুতরাং তোমরা গাঢ় কালো রঙের কুকুরগুলো হত্যা করো। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুকুর হত্যার আদেশ দেন, এমনকি কোন মহিলাও যদি জঙ্গল থেকে তার কুকুরসহ আসতো সেটাও আমরা হত্যা করতাম। অতঃপর তিনি আমদেরকে কুকুর হত্যা নিষেধ করে বললেনঃ তোমরা শুধুমাত্র কালো কুকুর হত্যা করবে।
শিকারের বর্ণনা
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করি, আমি আমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর শিকারে পাঠালে তা আমার জন্য শিকার ধরে আনলে আমি কি তা খাবো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরকে আল্লাহর নাম নিয়ে শিকারে পাঠালে তা তোমার জন্য যে শিকার ধরে আনবে তা খাবে। আমি জিজ্ঞেস করি, কুকুর যদি শিকারকে হত্যা করে? তিনি বললেনঃ কুকুর যদি শিকার হত্যা করে এবং তোমার কুকুরের সাথে অন্য কুকুর অংশগ্রহণ না করে তাহলে খেতে পারবে। আমি বলি, আমি পালকবিহীন ধাতুর পাত ছুঁড়ে কোন শিকার ধরলে তা খাব কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে পালকবিহীন ধাতুর পাত ছোঁড়া হলে তা শিকারকে জখম করলে খেতে পারো। কিন্তু তীরের পার্শ্বের আঘাতে শিকার হয়ে থাকলে তা খেও না। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করি, আমরা এসব কুকুর দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি আমাকে বললেনঃ যখন তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো আল্লাহর নাম নিয়ে শিকারে পাঠাবে, সেগুলো তোমার জন্য যা ধরে আনবে তা খাও, এমনকি শিকার মেরে ফেললেও। কুকুর যদি তা থেকে না খেয়ে থাকে তাহলে খাও। আর যদি খেয়ে থাকে তবে খেও না। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে, ঐ শিকার সে নিজের জন্য ধরেছে। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি যদি আল্লাহর নাম নিয়ে তোমার তীর ছুঁড়ো এবং ঐ শিকারকৃত পশু পরের দিন এমন অবস্থায় পাও যে, তা পানিতে পড়েনি এবং তাতে তোমার তীরের আঘাত ছাড়া অন্য কোন চিহ্নও নেই, তবে তা খাও। আর যদি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সাথে অন্য কুকুর দেখো তাহলে শিকার খেও না। কেননা তুমি অবহিত নয় যে, হয়ত অন্য কোন কুকুর শিকার হত্যা করেছে। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার শিকার তীরসহ পানিতে পড়ে ডুবে মারা গেলে তাহলে তুমি তা খাবে না। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি কোন কুকুর বা বাজ পাখি প্রশিক্ষণ দিয়ে শিকারে পাঠালে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করলে-সে তোমার জন্য যা ধরে আনবে তা খেতে পারো। আমি বলি, যদি সে তা মেরে ফেলে? তিনি বললেনঃ সে যদি শিকার হত্যা করে এর কোন অংশ না খায়, তবে সে তা তোমার জন্যই শিকার করেছে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বাজ পাখি শিকারের কিছু খেলে অসুবিধা নেই। কুকুর শিকার থেকে খেলে তা খাওয়া নিষেধ, তবে কেবল রক্ত পান করলে তা খাওয়া দূষণীয় নয়। সহীহঃ কিন্তু ‘অথবা বাজ পাখি’ কথাটির মুনকার। যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫১১১) এর প্রথম অংশ, মিশকাত (৪০৮৩)। আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের শিকার সম্পর্কে বলেনঃ তুমি যখন তোমার কুকুর শিকারে পাঠাবে এবং তাতে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করবে, অতঃপর সে যা ধরে নিয়ে আসবে তা খেতে পারো। এমনকি তা থেকে কুকুর সামান্য খেলেও অসুবিধা নেই। আর তোমার ধনুক তোমাকে যা ফিরিয়ে দিবে তা খাও। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যদি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে, অতঃপর দুই বা তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর মৃত অবস্থায় শিকারটি পায় এবং তার শরীরে তীরবিদ্ধ থাকে। সে কি তা খাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, সে ইচ্ছা হলে খেতে পারে। আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (পালাকহীন ও মধ্যবর্তী অংশ মোটা) তীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ শিকার এর ধারালো দিকের আঘাতে মারা গেলে খাবে। আর প্রস্থের দিকের আঘাতে মারা গেলে খাবে না। কেননা তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত প্রাণীর মতই (হারাম)। আমি বলি, আমি শিকার ধরার জন্য আমার কুকুর প্রেরণ করি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর নাম নিয়ে ছেড়ে থাকলে খাও, অন্যথায় খেও না। তবে কুকুর শিকার থেকে খেয়ে থাকলে তা খেও না। কেননা সে তা নিজের জন্য ধরেছে। ‘আদী (রাঃ) বললেন, আমার শিকারের জন্য কুকুর প্রেরণ করি এবং এর সাথে অন্য কুকুরও দেখি। তিনি বললেনঃ তা খাবে না। কারণ তুমি তো কেবল তোমার কুকুরের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেছো। আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীন উভর ধরণের কুকুর শিকারে প্রেরণ করি। তিনি বললেনঃ তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরকে আল্লাহর নাম নিয়ে ছেড়ে থাকলে তার শিকার খাও। আর তোমার প্রশিক্ষণহীন কুকুর শিকারে পাঠালে তার শিকার যাবাহ করার সুযোগ পেলে তা খাবে। আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আবূ সা‘লাবাহ! তোমার তীর ও কুকুর তোমাকে যে শিকার এনে দিলে তা ভক্ষণ করো। বর্ণনাকারী ইবনু হারবের বর্ণনায় ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ এবং ‘কাওসের’ স্থলে ‘ইয়াদ’ শব্দ উল্লেখ রয়েছে। তাতে এও আছে, হোক জীবিত বা মৃত তা খেতে পারবে। আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার একদা আবূ সা‘লাবাহ (রাঃ) নামক এক বেদুঈন এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার শিকারী কুকুর আছে। এর শিকার সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার শিকারী কুকুর তোমার জন্য যা ধরে নিয়ে আসে তা খাও। তিনি বলেন, তা যাবাহ করার সুযোগ না পেলে? তিনি বললেনঃ সে তা থেকে কিছু খেলেও তা খেতে পারবে। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তীর-ধনুক সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেনঃ তোমার তীর তোমাকে যা ফেরত দেয় তা খাও। তা যাবাহ করার সুযোগ পাও অথবা না পাও। তিনি বলেন, শিকার যদি নিখোঁজ হয়। তিনি বললেনঃ যদি তাতে তোমার তীর ছাড়া অন্য কিছুর চিহ্ন না থাকে তবে খাবে। তিনি বলেন, অগ্নিপূজারীর রান্না ও পাত্র ব্যবহার সম্পর্কে ফাতাওয়াহ দিন; যদি ওগুলো ছাড়া আমাদের কোন উপায় না থাকে। তিনি বললেন, ওগুলো ধুয়ে নিবে, তারপর খাবে। হাসানঃ কিন্তু “সে তা থেকে কিছু খেলেও”-এ কথাটি মুনকার।
যদি জীবিত পশুর দেহের অংশবিশেষ কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
আবূ ওয়াক্বিদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জীবিত পশুর দেহের অংশবিশেষ কেটে বিচ্ছিন্ন হলে ঐ অংশ মৃত বলে গণ্য (যা হারাম)।
শিকারের পিছু নেয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জংগলে বসবাসকারীর অন্তর কঠিন হয়ে যায়। যে লোক শিকারের পিছনে ছুটে সে কর্মবিমুখ হয়। আর যে লোক রাজা-বাদশার নিকট আসা-যাওয়া করে সে বিপদগ্রস্থ হয়। আবূ হুরায়রা হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসে অনুরুপ বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাজা-বাদশার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক স্থাপনকারী বিপদগ্রস্থ হয়। আর যে বান্দা রাজার সাথে অধিক ঘনিষ্ঠ হয় সে আল্লাহ থেকে ততোই দুরে সরে যেতে থাকে। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৭০১)। আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপের তিনদিন পর তা পেলে এবং তাতে তোমার তীর আটকে থাকলে তা খেতে পারবে, যদি তাতে দুর্গন্ধ না থাকে।