2. সালাত (নামায)
সলাত ফরয হওয়ার বর্ণনা
আবূ সুহাইল ইবনু মালিক থেকে তার পিতার তিনি ত্বালহা ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, উষ্কখুস্ক চুল বিশিষ্ট নাজদের জনৈক অধিবাসী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসল। তখন তার মুখ হতে গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু কথাগুলো বোঝা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটবর্তী হয়ে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (ইসলাম হচ্ছে) দিবা-রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করা। লোকটি বললো, এছাড়া আরও (সলাত) আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে তুমি নফল (সলাত) আদায় করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উদ্দেশে রমাযান মাসের সিয়ামের কথা উল্লেখ করলেন। লোকটি বলল, আমার উপর এছাড়া আরও (সিয়াম) আছে কি? তিনি বললেনঃ না, তবে তুমি নফল (সিয়াম) পালন করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যাকাতের কথাও বললেন। লোকটি বলল, আমাকে এছাড়াও কোন দান করতে হবে কি? তিনি বললেনঃ না, তবে নফল হিসেবে (দান) করতে পার। অতঃপর লোকটি এই বলতে বলতে চলে যেতে লাগল যে, আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশীও করব না কমও করব না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সফলকাম হয়ে গেল। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ সুহাইল নাফি‘ ইবনু মালিক ইবনু আবূ ‘আমির একই সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন) তার পিতার শপথ! [১] সে অবশ্যই সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে। তার পিতার শপথ! সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [৩৯২] শাযঃ “তার পিতার শপথ” কথাটি অতিরিক্ত যোগে।
সলাতের ওয়াক্তসমূহের বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাইতুল্লাহর নিকট জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) দু’বার আমার সলাতে ইমামতি করেছেন। (প্রথমবার) সূর্য (পশ্চিম আকাশে) ঢলে যাওয়ার পর আমাকে নিয়ে তিনি যুহর সলাত আদায় করলেন। তখন (পূর্ব দিকে) জুতার ফিতার সমান ছায়া দেখা দিয়েছিল। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে ‘আসরের সলাত আদায় করলেন, যখন (প্রত্যেক বস্তুর) ছায়া তার সমান হয়। এরপর আমাকে নিয়ে তিনি মাগরিবের সলাত আদায় করলেন, যখন ছায়া তার দ্বিগুণ হলো। তিনি আমাকে নিয়ে মাগরিবের সলাত আদায় করলেন, যখন সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময় হয়। তিনি আমাকে নিয়ে ‘ইশা সলাত আদায় করলেন রাতের তৃতীয়াংশে এবং ফাজ্র সলাত আদায় করলেন ভোরের আলো ছড়িয়ে যাওয়ার পর। অতঃপর জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) আমার দিকে ফিরে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এটাই হচ্ছে আপনার পূর্ববর্তী নাবীগণের সলাতের ওয়াক্ত এবং সলাতের ওয়াক্তসমূহ এ দু’সময়ের মাঝখানেই নিহিত। [৩৯৩] উসামাহ ইবনু যায়িদ আল-লাইসী ইবনু শিহাব (রহঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, একদা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) মিম্বারের উপর বসে (কর্মব্যস্ত) ছিলেন। ফলে তিনি ‘আসরের সলাত আদায়ে কিছুটা বিলম্ব করলেন। তখন ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তাকে বললেন, আপনি জানেন না, জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আপনি যা বলছেন, বুঝে শুনে বলুন। ‘উরওয়াহ বললেন, আমি বাশীর ইবনু আবূ মাসঊদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে আমাকে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আমি তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি, অতঃপর আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করেছি। এভাবে তিনি আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গণনা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যুহরের সলাত আদায় করতে দেখেছি। প্রচণ্ড গরমের দিনে তিনি কখনো দেরী করেও আদায় করেছেন। আমি তাকে ঐ সময় ‘আসরের সলাত আদায় করতে দেখেছি যখন সূর্য উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত, তখনো তাতে হলুদ রং আসেনি। কোন ব্যক্তি ‘আসরের সলাত আদায় করে সূর্য ডোবার পূর্বেই যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে যেত। তিনি মাগরিবের সলাত আদায় করতেন সূর্য ডোবার পরপরই, আর ‘ইশার সলাত আদায় করতেন যখন (পশ্চিম আকাশ) কালো রঙে আচ্ছাদিত হত, অবশ্য তিনি কখনো লোকজনের একত্র হওয়ার আশায় তা বিলম্বেও আদায় করতেন। একবার তিনি ফাজরের সলাত অন্ধকারে আদায় করেন, অতঃপর পরের বার আদায় করেন ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার পর। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদা ফজরের সলাত অন্ধকারেই আদায় করেন, পুনরায় আর কখনোই তিনি ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষা করেননি। হাসান। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি যুহরী (রহঃ) সূত্রে মা’মার, মালিক, ইবনু উয়াইনাহ, শু’আইব ইবনু আবূ হামযাহ ও লাইস ইবনু সা’দ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা সলাত আদায়ের সময় উল্লেখ করেননি, এবং তার কোন ব্যাখ্যাও দেননি। ওয়াহ্হাব ইবনু কায়সান (রহঃ) জাবির (রহঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে মাগরিবের ওয়াক্ত সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ পরের দিন সূর্যাস্তের পরে একই সময়ে জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) মাগরিবের সলাত আদায় করতে আসলেন। সহীহ। আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতেও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ আমাকে নিয়ে জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) পরের দিন একই সময়ে মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। আবূ মূসা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি তার কোন জবাব না দিয়ে বিলালকে (ইক্বামাতের) নির্দেশ দিলেন। বিলাল সুবহি সাদিক হওয়ার পরপরই ফজর সলাতের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তারপর তিনি এমন সময় ফজর সলাত আদায় করলেন যখন (অন্ধকারের কারণে) একজন আরেকজনকে চিনতে পারত না অথবা একজন তার পার্শ্ববর্তী লোককে চিনতে পারত না। অতঃপর সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়লে তিনি বিলালকে নির্দেশ দিলে বিলাল যুহর সলাতের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তখন কেউ বলল, দুপুর হয়েছে। অথচ (সূর্য ঢলে পড়া সম্পর্কে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক জ্ঞাত। অতঃপর তিনি বিলালকে নির্দেশ দিলে বিলাল ‘আসর সলাতের জন্য ইক্বামাত দিলেন। তখন সূর্য সাদা ও উঁচুতে ছিল। অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে তিনি বিলালকে মাগরিব সলাতের জন্য ইক্বামাতের নির্দেশ দিলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর পশ্চিমাকাশের লাল আভা (শাফাক্ব) দূরীভূত হলে তিনি বিলালকে ‘ইশা সলাত আদায়ের জন্য ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। পরের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাত আদায় শেষে প্রত্যাবর্তন করলে আমরা বললাম, সূর্য উদয় হয়েছে কি? (এ দিন) তিনি যুহর সলাত আদায় করলেন পূর্বের দিনের ‘আসরের ওয়াক্তে। তিনি ‘আসরের সলাত আদায় করলেন যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তিনি মাগরিবের সলাত আদায় করলেন আকাশের লালিমা (শাফাক্ব) দূরীভূত হওয়ার পূর্বে। আর তিনি ‘ইশার সলাত আদায় করলেন রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর। অতঃপর বললেন, সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? এই দু’ সময়সীমার মধ্যবর্তী সময়ই হচ্ছে সলাতের ওয়াক্ত (অর্থাৎ পূর্বের দিন ও পরের দিন যে যে সময়ে সলাত আদায় করা হয়েছে তার মাঝামাঝি সময়)। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে মাগরিব (সলাতের ওয়াক্ত) সম্পর্কে এরূপই বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, কারো মতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন রাতের এক তৃতীয়াংশে, আবার কারো মতে অর্ধরাতে। সহীহ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আসরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যুহরের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। সূর্য হলুদ রং ধারণ না করা পর্যন্ত ‘আসরের ওয়াক্ত থাকে। মাগরিবের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে (পশ্চিমাকাশে) লাল রংয়ের আভা বিলোপ না হওয়া পর্যন্ত। ‘ইশার ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে অর্ধরাত পর্যন্ত। আর ফাজ্র সলাতের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের ওয়াক্ত ও তাঁর সলাত আদায় করার নিয়ম
মুহাম্মাদ ইবনু "আমর ইবনু হাসান ইবনু "আলী ইবনু আবূ ত্বালিব তিনি বলেন, আমরা জাবির (রাঃ) -কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি যুহরের সলাত আদায় করতেন ঠিক দ্বিপ্রহরের পরপরই। আর "আসরের সলাত আদায় করতেন ঐ সময় যখন সূর্য জীবন্ত থাকত। মাগরিবের সলাত আদায় করতেন সূর্যাস্তের পরপরই। লোকজন জড়ো হলে "ইশার সলাত তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর লোকজনের উপস্থিতি কম হলে বিলম্বে আদায় করতেন। তিনি ফাজরের সলাত অন্ধকারে আদায় করতেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে যুহরের সলাত আদায় করতেন, 'আসরের সলাত আদায় করতেন ঐ সময় যখন আমাদের কেউ মাদীনাহর শেষ প্রান্তে গিয়ে ফিরে আসতে পারত এবং সূর্যের প্রখরতা বিদ্যমান থাকত। মাগরিবের কথা আমি ভুলে গেছি। "ইশার সলাত রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে তিনি পরোয়া করতেন না, কখনো বা অরধরাত পর্যন্ত। "ইশার সলাতের পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন। তিনি ফাজরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন আমাদের কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত না। ফাজরের সলাতে তিনি ষাট আয়াত থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
যুহরের সলাতের ওয়াক্ত
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে যুহরের সলাত আদায় করতাম। আমি এক মুষ্ঠি পাথর কণা তুলে নিতাম, যেন সেগুলো আমার হাতে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমি সাজদাহ্র সময় প্রচণ্ড গরমের কারণে সেগুলো কপালের নিচে রেখে সেগুলোর উপর সাজদাহ করতাম। আসওয়াদ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, গ্রীষ্মকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর (যুহর) সলাত আদায়ের সময় ছিল (ছায়ার) তিন কদম হতে পাঁচ কদম পর্যন্ত। আর শীতকালে ছিল পাঁচ কদম হতে সাত কদম পর্যন্ত। যায়িদ ইবনু ওয়াহহাব তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। মুয়াজ্জিন যুহরের আযানের জন্য প্রস্তুত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, থাম, ঠাণ্ডা হোক। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'বার অথবা তিনবার এরূপ বললেন। এমনকি আমরা টিলা সমূহের ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি বললেন, গ্রীষ্মের খরতাপ জাহান্নামের অংশ বিশেষ। কাজেই প্রচণ্ড গরমে ঠাণ্ডা করে (বিলম্বে) সলাত আদায় করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অত্যধিক গরমে তোমরা যুহরের সলাত ঠাণ্ডা করে (বিলম্বে) আদায় করবে। কারণ অত্যধিক গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ বিশেষ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূর্য (পশ্চিম আকাশে) ঢলে পেলে বিলাল (রাঃ) যুহরের সলাতের আযান দিতেন। হাসান সহীহঃ মুসলিম।
আছরের সলাতের ওয়াক্ত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) "আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। সলাতের প্র লোকজন "আওয়ালী (মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম) পর্যন্ত যেত। অথচ সূর্য তখনো উঁচুতেই থাকত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয-যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন, আওয়ালীর দূরত্ব মাদীনাহ থেকে দুই অথবা তিন মাইল। বর্ণনাকারী বলেন, সম্ভবত তিনি (যুহরী) চার মাইলের কথাও বলেছেন। খায়সামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, সূর্যের জীবন্ত হওয়ার অর্থ হলও, তাঁর তাপ অবশিষ্ট থাকা বা অনুভূত হওয়া। 'উরওয়াহ (রহঃ) 'আয়িশাহ (রাঃ) আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) "আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন রোদ তাঁর ঘরের মধ্যে থাকত এবং দেয়াল রোদ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই এরূপ হত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা মাদীনাহয় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি সূর্যের রং উজ্জ্বল থাক পর্যন্ত "আসরের সলাত বিলম্ব করে আদায় করলেন।[৪০৮] 'আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দকের যুদ্ধের দিন বলেন, তারা (কাফিররা) আমাদেরকে মধ্যবর্তী সলাত অর্থাৎ "আসরের সলাত আদায় করা হতে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তাদের ঘর ও ক্ববরগুলোকে জাহান্নামের আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। "আয়িশাহ (রাঃ) -এর মুক্ত দাস আবূ ইউনুস তিনি বলেন, "আয়িশাহ (রাঃ) আমাকে তাঁর জন্য এক জিলদ কুরআন লিখে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, যখন তুমি “তোমরা সলাত সমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও”- (সূরাহ বাক্বারাহ, ২৩৮) এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছবে তখন আমাকে অবহিত করে অনুমতি চাইবে। অতঃপর আমি উক্ত আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তাকে অবহিত করে অনুমতি চাইলাম। তিনি বললেন, তুমি এভাবে লিখ, “তোমরা সলাতসমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের এবং "আসরের সলাতের।” অতঃপর "আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এটা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি। সহীহঃ মুসলিম। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত দুপুরে (সূর্য ঢলার পরপরই প্রচণ্ড গরমে) আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণের নিকট অন্যান্য সলাতের চেয়ে এ সলাতই ছিল বেশি কষ্টদায়ক। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “তোমরা সলাত সমূহের হিফাযাত কর, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের” (সূরাহ বাক্বারাহ, ২৩৮)। যায়িদ (রাঃ) বলেন, এ সলাতের পূর্বে এবং পরে দু' ওয়াক্ত করে সলাত রয়েছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে "আসরের সলাত এক রাক"আত আদায় করতে পারল সে (যেন ওয়াক্তের মধ্যেই পুরো) "আসর সলাত পেয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফাজরের সলাত এক রাক"আত আদায় করতে সক্ষম হল সে (যেন ওয়াক্তের মধ্যেই পুরো) ফাজর পেয়ে গেল। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আল-"আলা ইবনু "আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা যুহর সলাত আদায়ের পর আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে দেখলাম, তিনি "আসরের সলাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছেন। তার সলাত আদায় শেষে আমরা তাঁর বেশী আগে ("আসর) সলাত আদায় করা নিয়ে আলোচনা করলাম। অথবা তিনিই এ বিষয়ে আলোচনা করলেন এবং (এর কারণ সম্পর্কে) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ এটা মুনাফিক্বদের সলাত! এটা মুনাফিক্বদের সলাত!! এটা মুনাফিক্বদের সলাত!!! এদের কেউ বসে থাকে আর যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তা শাইত্বানের দু' শিংয়ের মধ্যখানে বা উপরে অবস্থান করে তখন সে দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে। তাতে সে খুব সামান্যই আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে। সহীহঃ মুসলিম ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি "আসরের সলাত ছুটে গেল (আদায় করল না) তার যেন পরিবার-পরিজন ধ্বংস হয়ে গেলো এবং তার ধনসম্পদ লুট হয়ে গেল (নিঃসম্বল হয়ে গেল)। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, "আবদুল্লাহ ইবনু "আমর, আইয়ুব ও যুহরী “উতিরু” শব্দের বানানে কিছুটা পার্থক্য করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ 'আমর আল-আওযাঈ (রহঃ) "আসরের সলাতে বিলম্ব করার অর্থ হচ্ছে, সূর্যের হলুদ রং জমিনে প্রতিভাত হতে দেখা (পর্যন্ত বিলম্ব করা)।[৪১৫] দুর্বল মাক্বতূ
মাগরিবের ওয়াক্ত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। অতঃপর তীর নিক্ষেপ করতাম। আমদারে যে কেউ তখনো তার তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত। সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাত সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অস্ত যাওয়ার পরপরই আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মারসাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, যখন আবূ আইউব (রাঃ) জিহাদ হতে ফিরে আমাদের নিকট আসলেন, সে সময় উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) মিশরের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি মাগরিবের সলাত আদায়ে বিলম্ব করলে আবূ আইউব (রাঃ) উক্ববাহ্ (রাঃ)-এর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, হে উক্ববাহ্! এটা আবার কেমন সলাত? উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, আমরা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেননিঃ আমার উম্মাত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে অথবা মূল অবস্থায় থাকবে যতদিন তারা মাগরিবের সলাত আদায়ে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না।
ইশার সলাতের ওয়াক্ত
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এই ‘ইশার সলাতের শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি অবগত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত সলাত (এ পরিমাণ সময়ের পর) আদায় করতেন, যখন তৃতীয়বার চাঁদ অস্তমিত হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমরা ‘ইশার সলাত আদায়ের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে তিনি আসলেন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা এর চেয়েও কিছু সময়ের পর। তিনি কোন কাজে ব্যস্ততার জন্য নাকি অন্য কিছুর কারণে বিলম্ব করলেন তা আমরা অবগত নই। তিনি এসে বললেনঃ তোমরা কি এ (‘ইশার) সলাতের জন্য অপেক্ষা করছো? আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হলে আমি এ সময়েই (ইশার সলাত) আদায় করতাম। অতঃপর তিনি মুয়াজ্জিনকে ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিয়ে সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ মুসলিম। আসিম ইবনু হুমাইদ আস-সুকুনী (রহঃ) তিনি মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমরা ‘ইশার সলাতের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতীক্ষায় ছিলাম। তিনি আসতে এতটা বিলম্ব করলেন যে, কেউ কেউ ধারণা করল, হয়তো তিনি বের হবেন না। আবার কেউ এরূপ মন্তব্য করল যে, হয়তো তিনি (ঘরে) সলাত আদায় করে ফেলেছেন। আমাদের এসব আলোচনার এক পর্যায়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এলেন। অতঃপর লোকেরা যা কিছু বলাবলি করছিল, তা তাকে ও বলল। তিনি বললেনঃ তোমরা এই (‘ইশার) সলাত বিলম্বে আদায় করবে। কারণ এ সলাতের মাধ্যমে অন্য সকল জাতির উপর তোমাদেরকে মর্যাদা দান করা হয়েছে। তোমাদের পূর্বে কোন জাতি এ সলাত আদায় করেনি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করলাম। সেদিন তিনি প্রায় অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর সলাতের জন্য বের হয়ে আসেন এবং বলেনঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। সুতরাং আমরা নিজেদের জায়গায় অবস্থান করলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ ইতোমধ্যে অনেকেই ইশার সলাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সলাতের জন্য অপেক্ষামাণ থাকলে, ততক্ষন তোমাদেরকে সলাত আদায়কারী হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। দুর্বলের দুর্বলতা এবং রোগীর রুগ্নতার আশংকা না থাকলে আমি অবশ্যই এ সলাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করতাম।
ফাজ্র সলাতের ওয়াক্ত
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্র সলাত এমন সময় আদায় করতেন যে, মহিলারা সলাত আদায় করে গায়ে চাদর জড়িয়ে প্রত্যাবর্তন করত এবং অন্ধকারের কারণে তাদের চেনা যেত না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ভোরের আলো প্রকাশিত হলে ফাজ্র সলাত আদায় করবে। কারণ এতে তোমাদের জন্য অত্যাধিক সওয়াব বা অতি উত্তম বিনিময় রয়েছে।
সলাতসমূহের হিফাযাত করা
‘আবদুল্লাহ ইবনুস সুনাবিহী (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ মুহাম্মাদের মতে, বিত্র সলাত ওয়াজিব। একথা শুনে ‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা (ভুল) বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ সম্মানিত মহান আল্লাহ্ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু’ ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে সলাত আদায় করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যাক্তি এরূপ করবে না, তার জন্য আল্লাহ্র পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন অন্যথায় শাস্তি দিবেন। উম্মু ফারওয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সলাতের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (প্রথম ওয়াক্তেই) সলাত আদায় করা। সহীহ। খুযাঈ তাঁর বর্ণিত হাদীসে তার ফুফু উম্মু ফারওয়াহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আবূ বাক্র ইবনু ‘উমারাহ ইবনু রুয়াইবাহ হতে তার পিতার তিনি বলেন, বাসরাহর এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছেন আমাকে তা বলুন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে সলাত আদায় করবে। লোকটি বললো, আপনি কি একথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? এরূপ তিনবার বলল। এর জবাবে তিনি প্রত্যেকবারই বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। অতঃপর লোকটি বলল, আমিও তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এরূপ বলতে শুনেছি। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ফাদালাহ হতে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (শারী‘আত সম্পর্কে) শিক্ষা দেন। তন্মধ্যে তিনি আমাকে এটাও শিক্ষা দেন যে, তুমি (নির্ধারিত সময়ে) পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের হিফাযাত করবে। আমি বললাম, এ সময়গুলোতে আমার কর্মব্যস্ততা থাকে। অতএব আমাকে এমন একটা পরিপূর্ণ সময়ের (বা কাজের) নির্দেশ দিন যা করলে আমার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি দুই ‘আসরের হিফাযাত করবে। আমাদের ভাষায় দুই ‘আসর শব্দটি প্রচলিত না থাকায় আমি বললাম, দুই ‘আসর কি? তিনি বললেন, দু’টি সলাত, একটি হচ্ছে সূর্যোদয়ের পূর্বে, অপরটি সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফাজ্র ও ‘আসর সলাত)। আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু ও রুকু’ সাজদাহ্ সহকারে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হাজ্জ করবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবূ দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, অপবিত্র হলে গোসল করা। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সম্মানিত মহান আল্লাহ্ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সলাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই।
ইমাম ওয়াক্ত মোতাবেক সলাত আদায়ে বিলম্ব করলে
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! যখন তোমার শাসকগণ সলাতকে মেরে ফেলবে বা বিলম্ব করে সলাত আদায় করবে তখন তুমি কী করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি আমাকে কী নির্দেশ করেন? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করবে, অতঃপর তাদেরকে ঐ ওয়াক্তের সলাত আদায় করতে দেখলে তাদের সাথেও আদায় করে নিবে। সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। সহীহঃ মুসলিম। ‘আমর ইবনু মায়মূন আল-আওদী (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দূত হিসেবে মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) ইয়ামানে আমাদের নিকট আসলেন। আমি ফাজ্রের সলাতে তাঁর তাকবীর শুনতে পেলাম। তিনি উচ্চ কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। তার সাথে আমার ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর সাহচর্য ত্যাগ করিনি। অতঃপর তার মৃত্যু হলে সিরিয়ায় তাকে দাফন করি। এরপর আমি ভাবলাম, তার পরবর্তী সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে হতে পারে? অবশেষে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) –এর কাছে যাই এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাহচর্যে থাকি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, যখন তোমাদের উপর এমন শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা বিলম্ব করে সলাত আদায় করবে তখন তোমরা কী করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করবে। আর পুনরায় তাদের সাথে আদায়কৃত সলাতকে নফল হিসেবে ধরে নিবে। ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি ঐ সলাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছেঃ লোকটি বলল, আমি তাদের সাথে ঐ সলাত পেলে তাদের সাথেও আদায় করব কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। কাবীসাহ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরে তোমাদের এমন শাসকগণ আসবে, যারা বিলম্বে সলাত আদায় করবে। এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই, বরং তাদের জন্যই ক্ষতিকর। যতদিন পর্যন্ত তারা কিবলামুখী হয়ে সলাত আদায় করবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে সলাত আদায় করতে থাকবে।
কেউ সলাতের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা সলাতের কথা ভুলে গেলে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল (রাঃ)–কে বলেনঃ তুমি জেগে থাকবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে। কিন্তু বিলাল (রাঃ)–ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , বিলাল এবং তাঁর সহাবীদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের তাপ তাদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্থির হয়ে বললেনঃ কী হলো বিলাল! বিলাল বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন। অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং বিলালকে নির্দেশ করলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকলকে নিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় শেষে বললেনঃ কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত সলাত আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ্ বলেন, “আমার স্মরণার্থে সলাত প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরাহ ত্বাহা, ১৪) সহীহঃ মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা ঐ স্থান ত্যাগ কর যেখানে তোমাদেরকে গাফ্লতি পেয়ে বসেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বিলালকে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান ও ইক্বামাত দিলেন এবং তিনি সলাত আদায় করালেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি মালিক, সুফিয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ, আল-আওযাঈ ও ‘আবদুর রায্যাক (রহঃ), মা‘মার ও ইবনু ইসহাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মা‘মার সূত্রে আওযাঈ এবং আবান আল-আত্তার ব্যতীত কেউই যুহরীর এ হাদীসে আযানের উল্লেখ করেননি। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফরে ছিলেন। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিকে মনোনিবেশ করলে আমিও তাঁর সাথে মনোনিবেশ করি। তিনি বললেনঃ লক্ষ্য রাখ। আমি বললাম, এই একজন যাত্রী, এই দু’জন যাত্রী, এই তিনজন যাত্রী। এভাবে আমরা সাতজন হয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাদের ফাজ্র সলাতের ব্যাপারে সজাগ থাক। কিন্তু তাদের সবার কান বন্ধ হয়ে গেল (সকলেই ঘুমিয়ে পড়লেন) এবং গায়ে সূর্যতাপ না লাগা পর্যন্ত তাঁরা ঘুম হতে জাগতে পারলেন না। অতঃপর ঘুম থেকে জেগে কিছু দূর সফর করে তারা (এক স্থানে) অবতরণ করে উযু করলেন। বিলাল (রাঃ) আযান দিলে সবাই প্রথমে ফাজ্রের দু’ রাক’আত সুন্নাত, অতঃপর ফরয সলাত আদায় করে সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, আমরা (নির্ধারিত সময়ে) সলাত আদায়ে অবহেলা করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঘুমের কারণে গাফলতি হলে দোষ নেই। কিন্তু জাগ্রতাবস্থায় গাফিলতি করা অন্যায়। তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হলেই সলাত আদায় করে নেয়। আর পরবর্তী দিন যেন নির্ধারিত সময়ে সলাত আদায় করে (অর্থাৎ সলাত ক্বাযা করা যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়)। সহীহঃ মুসলিম। খালিদ ইবনু সুমাইর তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ আল-আনসারী (রাঃ) মাদীনাহ থেকে আমাদের এখানে আসলেন। আনসারগণ তাকে জ্ঞানী লোক (বিশিষ্ট ফাক্বীহ) হিসেবে গণ্য করতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘোড়া রক্ষক আবূ ক্বাতাদাহ্ আল-আনসারী (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুতার যুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রেরণ করলেন। তারপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী আবূ-ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর আমরা সলাতের জন্য অস্থির ও ভীত অবস্থায় জাগ্রত হলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শান্ত হও, শান্ত হও। এমনকি সূর্য উঁচুতে উঠে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার যারা ফাজ্রের দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায়ে অভ্যস্ত তারা যেন তা আদায় করে নেয়। এ কথা শুনে যারা ঐ দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করত এবং যারা আদায় করত না তারা সকলেই দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করে নিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের আযান দেয়ার নির্দেশ দিলে আযান দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন এবং সলাত শেষে বললেনঃ জেনে রাখ, আমরা আল্লাহ্রই প্রশংসা করছি, দুনিয়ার কোন কাজ আমাদেরকে আমাদের সলাত থেকে বিরত রাখেনি। বরং আমাদের রূহগুলো আল্লাহ্র হাতে নিবন্ধ ছিল। তিনি স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক তা ছেড়েছেন। অতএব তোমাদের কেউ আগামীকাল নির্ধারিত সময়ে ফাজ্রের সলাত পেলে সে যেন তার সাথে অনুরূপ আরেক ওয়াক্ত সলাত (অর্থাৎ এ ক্বাযা সলাতটিও) আদায় করে নেয়।[৪৩৮] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক তোমাদের রূহসমূহকে আঁটকে রেখেছিলেন, আবার তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক ছেড়েও দিয়েছেন। উঠো এবং সলাতের আযান দাও। অতঃপর সকলে উঠে উযু করে নিল। ইতিমধ্যে সূর্যও উপরে উঠে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ বুখারী। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ তার পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছেঃ সূর্য উপরে উঠার পর তিনি উযু করে লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ অনুরূপ বুখারী। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘুমের কারণে সলাতের গাফলতি হলে দোষ নেই। কিন্তু জাগ্রতাবস্থায় গাফলতি করে বিলম্ব সলাত আদায় করা অন্যায়, এতে করে আরেক সলাতের ওয়াক্ত এসে যায়। সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ গত হয়েছে ৪৩৭ নং এ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেন। এটাই তার সলাতের কাফ্ফারা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক সফরে ছিলেন সে সময় লোকেরা ফাজ্রের সলাতের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে ছিল। অতঃপর সূর্যের তাপে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। তারা কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর সূর্য উপরে উঠে গেলে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দিলে মুয়াজ্জিন আযান দেন। অতঃপর তিনি প্রথমে ফাজ্রের পূর্বের দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করেন এবং ইক্বামাত দেয়ার পর ফাজ্রের ফারয্ সলাত আদায় করলেন। ‘আমর ইবনু উমায়্যাহ আদ-দামরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে তাঁর কোন এক সফরে ছিলাম। তিনি ফাজ্রের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে ছিলেন। সূর্যোদয়ের পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে উঠে বললেন, এ জায়গা থেকে সরে পড়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর (অন্য এক স্থানে গিয়ে) বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সকলে উযু করে দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করল। অতঃপর নির্দেশ মোতাবেক বিলাল সলাতের ইক্বামাত দিলে তিনি ফাজ্রের সলাত আদায় করালেন। যু-মিখ্বার আল-হাবাশী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাত করতেন। তার বর্ণনায় রয়েছেঃ তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতটুকু পরিমাণ পানি দিয়ে উযু করলেন যে, তাতে জমিন ভিজল না। অতঃপর বিলালকে নির্দেশ দিলে তিনি আযান দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে ধীরেসুস্থে শান্তভাবে দু’ রাক‘আত সুন্নাত পড়ে বিলালকে সলাতের ইক্বামাত দিতে বললেন। এরপর তিনি ধীরেসুস্থে ফরয সলাত আদায় করালেন। নাজ্জাশীর ভ্রাতুষ্পুত্র যু-মিখ্বার (রাঃ) তিনি অনুরূপ ঘটনার বর্ণনাতে বলেন, অতঃপর বিলাল কোনরূপ তাড়াহুড়া না করে ধীরেসুস্থে আযান দিলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদকালে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে আগমন করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (রাতের বেলায়) আমাদের পাহারা দেয়ার দায়িত্ব কে নেবে? বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি। অতঃপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ল, এমনকি সূর্যোদয় হয়ে গেল। এমতাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে উঠে বললেনঃ তোমরা ঐরূপ কর যেরূপ তোমরা করে থাকতে (অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে যেরূপ সলাত আদায় করতে এখনও তাই কর)। সুতরাং আমরা তাই করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কেউ ঘুমিয়ে পড়লে বা ভুলে গেলে সেও এরূপই করবে।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে উঁচু করে মাসাজিদ বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়নি। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, তোমরা (অচিরেই) মাসাজিদ সমূহকে এমনভাবে সুসজ্জিত ও কারুকার্যময় করবে যেরূপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা (তাদের উপাসনালয়) সুসজ্জিত করে থাকে। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা মসজিদ নিয়ে পরস্পর গৌরব ও অহঙ্কারে মেতে উঠা না পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না। ‘উসমান ইবনু আবূল ‘আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তায়িফের ঐ স্থানে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন যেখানে মুশরিকদের মূর্তিসমূহ স্থাপিত ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে মসজিদে নাববী নির্মাণ করা হয়েছিল ইট ও খেজুর পাতা দ্বারা। তার খুঁটি ছিল খেজুর কাঠের। আবূ বকর (রাঃ) (স্বীয় শাসনামলে) মসজিদকে সম্প্রসারণ করেননি। তবে ‘উমার (রাঃ) সম্প্রসারন করেছেন, কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগের ভিত্তির উপরই তিনি ইট ও খেজুর পাতা দিয়ে তা নির্মাণ করান এবং নতুন কিছু স্তম্ভ স্থাপন করেন। তার স্তম্ভ ছিল খেজুর কাঠের। পরে ‘উসমান (রাঃ) তা পরিবর্তন করে মসজিদকে অনেক সম্প্রসারিত করেন। তিনি নকশাযুক্ত পাথর ও চুনা দিয়ে তার দেয়াল তৈরি করেন, নকশাযুক্ত পাথর খচিত খুঁটি নির্মাণ করেন এবং ছাদ নির্মাণ করেন সেগুন কাঠ দ্বারা। মুজাহিদ বলেন, তার ছাদ ছিল সেগুন কাঠের। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আলক্বচ্ছতু হলো চুন বা প্লাস্টার। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে মসজিদে নাববী এর খুঁটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ডের। তার উপরিভাগ ছিল খেজুর পাতা দ্বারা আচ্ছাদিত। আবূ বকর (রাঃ) এর খেলাফতকালে তা ভেঙ্গে পড়ে গেলে তিনি খেজুর গাছ ও খেজুর পাতা দিয়ে তা পূননির্মাণ করেন। অতঃপর ‘উসমান (রাঃ) এর খিলাফতকালে ঐগুলো বিনষ্ট হয়ে গেলে তিনি তা পাকা ইট দিয়ে নির্মাণ করেন। আজও তা বিদ্যমান আছে (অর্থাৎ এ হাদীস সংকলনের সময় পর্যন্ত)।[৪৫২] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় আগমন করে মদীনার বনু ‘আমর ইবনু ‘আওফ নামক উচ্চভূমির একটি এলাকায় অবতরণ করলেন। সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বনু নাজ্জারের নিকট লোক পাঠালেন। তারা তাঁর (সম্মানার্থে) গলায় তরবারী ঝুলিয়ে অস্ত্রে সুসজ্জিত অবস্থায় এলো আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উটের উপর দেখে পাচ্ছি এবং তাঁর পেছনে আবূ বকর (রাঃ) আরোহিত ছিলেন। আর বনু নাজ্জারের লোকেরা ছিল তাঁর চারপাশে। অবশেষে তিনি আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) এর আঙ্গিনায় অবতরণ করলেন। যেখানেই সলাতের ওয়াক্ত হত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করে নিতেন। তিনি বকরী রাখার স্থানেও সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিন বনু নাজ্জারের নিকট সংবাদ পাঠিয়ে ডাকালেন এবং বললেন, হে বনু নাজ্জার! তোমরা এ বাগানের মূল্য নিয়ে নাও। তারা বলল, আল্লাহ্র শপথ! আমরা এর বিনিময় একমাত্র আল্লাহ্র নিকটেই চাই। আনাস (রাঃ) বলেন বাগানটিতে যা যা ছিল আমি তোমাদেরকে তা বলছিঃ তাতে ছিল মুশরিকদের কিছু ক্ববর, পুরাতন ধ্বংসস্তুপ এবং কিছু খেজুর গাছ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশক্রমে মুশরিকদের ক্ববরগুলো খুঁড়ে হাড়গোড় ইত্যাদি বেছে অন্যত্র ফেলে দেয়া হলো। কর্তিত খেজুর গাছের কাণ্ড মসজিদের সামনে সারিবদ্ধভাবে গেড়ে দেওয়া হলো। দরজার চৌকাঠ নির্মাণ করা হলো পাথর দ্বারা। সাহাবীদণ পাথরগুলো স্থানান্তরের সময় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও তাদের সাথেই ছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ্! আখিরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ। আপনি আনসার ও মুহাজিরের সাহায্য করুন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিন বলেন, মসজিদে নাববীর জায়গাটিতে বনু নাজ্জারের একটি বাগান ছিল। তাতে ক্ষেত, খেজুর গাছ ও মুশরিকদের কিছু ক্ববর ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ আমার কাছ থেকে তোমরা এ বাগানের মূল্য নিয়ে নাও। তারা বলল, আমরা এই মূল্য চাই না (বরং দান করতে চাই)। অতঃপর খেজুর গাছ কাটা হলো, শষ্যক্ষেত্র সমতল করে দেয়া হলো এবং মুশরিকদের ক্ববরগুলো খুঁড়ে হাড়গোড় বেছে ফেলে দেয়া হলো। ...... অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসেঃ (হে আল্লাহ্) ‘আপনি সাহায্য করুন’- এর স্থলেঃ ‘আপনি ক্ষমা করুন’ উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী মূসা বলেন, ‘আবদুল ওয়ারিসও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল ওয়ারিস এ হাদীস হাম্মাদের কাছে বর্ণনা করছেন। সহীহঃ মুসলিম।
পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সামুরাহ (রাঃ) তিনি তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে এ মর্মে পত্র লিখেন যেঃ অতঃপর জেনে রাখ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন এলাকায় এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করি এবং তা ঠিকঠাক ও পরিচ্ছন্ন রাখি।
মসজিদে বাতি জ্বালানো
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুক্ত দাসী মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! বায়তুল মাক্বদিস ( মসজিদুল আক্বসা) সম্পর্কে আমাদের জন্য আপনার অভিমত কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সেখানে গিয়ে সলাত আদায় করতে পার। ঐ সময় শহরটি শত্রুদের দখলে ছিল। (সেজন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,) তোমরা সেখানে গিয়ে সলাত আদায় করতে না পারলে সেখানে বাতি জ্বালানোর জন্য তেল পাঠিয়ে দিও। [৪৫৭]
মসজিদের কঙ্কর প্রসঙ্গে
আবূল ওয়ালীদ তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)–কে মসজিদের কঙ্কর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এক রাতে বৃষ্টি হওয়ার মাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। তখন এক ব্যক্তি তার কাপড়ে করে ছোট ছোট পাথর টুকরা এনে মাটিতে বিছিয়ে দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় শেষে বললেনঃ এটা কতই না উত্তম কাজ। [৪৫৮] আবূ সালিহ তিনি বলেন, কথিত আছে, কোন ব্যক্তি যখন মসজিদ থেকে পাথর কুচি বাইরে নিয়ে যায়, তখন সেগুলো তাকে শপথ দিতে থাকে (এবং বলতে থাকে, আমাদের কে মসজিদ থেকে বের করো না)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আবূ বাদ্র(রাঃ) বলেন, আমার মতে হাদীসটি তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত সানাদ পৌঁছিয়ে মারফু ভাবেই বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাথর কুচি তার অপসারণকারীকে এ মর্মে শপথ দেয় যে-তাকে যেন মসজিদ থেকে বের করা না হয়। [৪৬০]
মসজিদ ঝাড়ু দেয়া
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সাওয়াবসমূহ (কাজের বিনিময়গুলো) আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, এমনকি কোন ব্যক্তি কর্তৃক মসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা দূর করার সাওয়াবও। অপর দিকে আমার উম্মাতের পাপারাশিও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কুরআনের কোন সূরাহ বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আর দেখিনি। [৪৬১] দুর্বলঃ মিশকাত
মসজিদে প্রবেশে নারীদেরকে পুরুষদের থেকে পৃথক পথ অবলম্বন করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা যদি এ দরজাটি কেবল নারীদের (মসজিদে যাতায়াতের) জন্য ছেড়ে দিতাম! নাফি’ (রহঃ) বলেন, (এরপর থেকে) ইবনু ‘উমার (রাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত ঐ দরজা দিয়ে আর (মসজিদে) প্রবেশ করেন নি। সহীহ ‘আবদুল ওয়ারিস ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীর (অর্থাৎ ইসমাঈলের) মতে, কথাটি (ইবনু ‘উমার (রাঃ) নন বরং) ’উমার (রাঃ) বলেছিলেন। আর এটাই অধিকতর সহীহ। নাফি’ (রহঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন ... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেন। এটাই অধিকতর সহীহ। নাফি’(রহঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মহিলাদের দরজা দিয়ে পুরুষদের (মসজিদে) প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন। [৪৬৪]
কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় যে দু’আ পাঠ করবে
‘আবদুল মালিক ইবনু সাইদ ইবনু সুওয়াইদ আমি আবূ হুমাইদ (রাঃ) বা আবূ আনসারী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন সর্বপ্রথম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর সালাম পাঠ করে, অতঃপর যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ আর বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।’ সহীহঃ মুসলিম। হাইওয়াহ ইবনু শুরায়িহ (রহঃ) আমি ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করে বলি, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেনঃ ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শাইত্বান হতে। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, এতটুকুই? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, কেউ এ দু’আ পাঠ করলে শাইত্বান বলে, এ লোকটি আমার (অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা) থেকে সারা দিনের জন্য বেঁচে গেল। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
মসজিদে প্রবেশকালীন সলাত
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে আসলে যেন বসার পূর্বেই দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে আরো আছেঃ দু’ রাক‘আত সলাত আদায়ের পর তার ইচ্ছা হলে বসবে অথবা নিজ প্রয়োজনে বাইরে চলে যাবে।
মসজিদে বসে থাকার ফাযীলাত
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত তার সলাত আদায়ের স্থানে (জায়নামাযে) বসে থাকে ততক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য দু’আ করতে থাকেন। তার উযু নষ্ট হওয়া অথবা উঠে চলে যাওয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ এই বলে দু’আ করতে থাকেনঃ ‘হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন।’ সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত সলাত আদায়ে রত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবে, যতক্ষণ সলাত (অর্থাৎ সলাতের অপেক্ষা) তাকে আটকে রাখবে। তাকে তো তার পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যেতে কেবল সলাতই বারণ করছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত সলাত আদায়ের স্থানে (জায়নামাযে) সলাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো সময় সে সলাতেই থাকে। তার প্রত্যাবর্তন না করা অথবা উযু টুটে না যাওয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ্! তার প্রতি রহম করুন।’ বলা হলো, উযু টুটে যাওয়ার অর্থ কী? তিনি বললেনঃ (পায়খানার রাস্তা দিয়ে) নিঃশব্দে অথবা সশব্দে বায়ু নির্গত হওয়া। সহীহঃ মুসলিম আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ কোন উদ্দেশ্যে মসজিদে এলে, সে ঐ উদ্দেশ্য অনুপাতেই (প্রতিদান) পাবে।
মসজিদে হারানো বস্তু খোঁজ করা অপছন্দনীয়
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন ব্যক্তিকে (চিৎকার করে) মসজিদে হারানো বস্তু অনুসন্ধান করতে শুনলে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমাকে ঐ বস্তু কখনো ফিরিয়ে না দিন। কারণ মসজিদ তো এ কাজের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। সহীহঃ মুসলিম
মসজিদে থুথু ফেলা অপছন্দনীয়
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মসজিদে থুথু ফেলা অন্যায়। (কেউ ফেললে) তার কাফ্ফারা হচ্ছে তা ঢেকে দেয়া। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মসজিদে থু থু ফেলা অপরাধ। এর কাফ্ফারা হলো তা মাটি দিয়ে ঢেকে ফেলা। আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মসজিদে থু থু বা কফ্ ফেলা ...... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই মসজিদে প্রবেশের পর এতে থু থু অথবা কফ্ ফেলবে, সে যেন মাটি খুঁড়ে তা চাপা দিয়ে দেয়। এরূপ না করতে পারলে যেন নিজ কাপড়ে থু থু ফেলে এবং ঐ কাপড়সহ বাইরে চলে যায়। ত্বারিক্ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-মুহারিবী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সলাতে দাঁড়ালে বা সলাত আদায়কালে যেন তার সামনে অথবা ডান দিকে থু থু না ফেলে। অবশ্য বাম দিকে (ফাঁকা) জায়গা থাকলে সেদিকে থু থু ফেলবে অথবা বাম পায়ের নিচে থু থু ফেলে তা ঘষে মুছে ফেলবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ দানকালে মসজিদের ক্বিবলার দিকে কফ্ দেখতে পেয়ে তিনি লোকদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং পরে তিনি তা তুলে ফেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা পরে তিনি জাফরান আনিয়ে সেখানে তা লাগিয়ে দিয়ে বললেনঃ সলাত আদায়কালে মহান আল্লাহ তোমাদের সামনেই থাকেন। কাজেই সলাত আদায়ের সময় কেউ যেন সামনে থু থু না ফেলে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিমে জাফরান লাগানোর কথাটি বাদে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, কোন কোন বর্ণনায় জাফরানের কথা উল্লেখ নেই। আবার কোন বর্ণনায় ‘আল-খালুক’ তথা ‘কস্তুরীযুক্ত সুগন্ধি’র কথা উল্লেখ আছে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুরের ডাল পছন্দ করতেন এবং তাঁর হাতে সর্বদা (প্রায়ই) এর একটি লাঠি থাকত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করে মসজিদের ক্বিবলার দিকে শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে তা রগড়ে তুলে ফেললেন। অতঃপর রাগান্বিত হয়ে লোকদের দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমাদের কারো মুখে থু থু ফেললে সে কি তাতে খুশি হবে? জেনে রাখ, তোমাদের কেউ যখন ক্বিবলামুখী হয়ে (সলাতে) দাঁড়ায়, তখন সে মূলত সম্মানিত মহান আল্লাহর দিকেই মুখ করে দাঁড়ায়। আর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তখন তার ডান দিকে থাকেন। কাজেই কেউ যেন ডানদিকে ও ক্বিবলার দিকে থু থু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে। যদি হঠাৎ শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে (তাড়াতাড়ির প্রয়োজন হয়), তাহলে কাপড়ে এরূপ করবে। ইবনু ‘আজলান ফেলার পদ্ধতি বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, নিজের কাপড়ে থু থু ফেলে কাপড়ের একাংশকে অপর অংশের উপর কচ্লাবে (উলট-পালট করে নেবে)। আবূ সাহলা আস-সাইব ইবনু খালাদ (রাঃ) ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, তিনি ছিলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাহাবী। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতিকালে ক্বিবলার দিকে থু থু ফেললে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা লক্ষ্য করলেন। লোকটি সলাত শেষ করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে) বললেনঃ এ ব্যক্তি তোমাদের সলাত আদায় করাবে না (আর ইমামতি করবে না)। পরবর্তীতে লোকটি তাদের ইমামতি করতে চাইলে তারা তাকে নিষেধ করে এবং তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর উক্তিও অবহিত করে। অতঃপর লোকটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথাও বলেছেনঃ তুমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দিয়েছ। মুত্বাররিফ (রহঃ) থেকে তার পিতার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে দেখতে পেলাম, তিনি সলাত আদায়কালে স্বীয় বাম পায়ের নিচে থু থু ফেললেন। আবূল ‘আলা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা’ (রাঃ) –কে দামিশ্কের মসজিদে দেখতে পেলাম, তিনি চাটাইয়ের উপরে থু থু ফেলে তা পা দিয়ে মুছে ফেললেন। তাকে বলা হলো, আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে এরূপই করতে দেখেছি। সহীহঃ মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ওয়াসিলাহ ইবনু আসক্বা‘ (রাঃ) দামিশকের মসজিদে চাটাইয়ের উপর থু থু নিক্ষেপ করে পরে তা পা দিয়ে মুছে ফেলেন। তাকে এরূপ করার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপই করতে দেখেছি। [৪৮৪] দুর্বল। ‘উবাদাহ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) –এর সাথে দেখা করতে আসি। সে সময় তিনি তার মসজিদে ছিলেন। তিনি বললেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু তাব নামক এক প্রকার খেজুরের ডাল হাতে নিয়ে আমাদের এ মসজিদে এলেন। তিনি তাকিয়ে মসজিদের ক্বিবলার দিকে শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে সেখানে এগিয়ে গেলেন এবং ডালটি দ্বারা তা তুলে ফেলেন। অতঃপর বলেনঃ তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তার সামনেই থাকেন। তাই কেউ যেন নিজের সম্মুখে ও ডান দিকে থু থু না ফেলে, বরং যেন বামদিকে (কিংবা) বাম পায়ের নিচে ফেলে। আর যদি হঠাৎ শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে (তাড়াতাড়ির প্রয়োজন হয়) তাহলে এরূপ করবে –এই বলে তিনি মুখের উপর কাপড় রেখে তা রগড়িয়ে বললেনঃ ‘আবির (এক ধরনের সুগন্ধি) নিয়ে এসো। জনৈক যুবক দাঁড়াল এবং দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে হাতে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিয়ে ডালের মাথায় লাগিয়ে শ্লেষ্মা লেগে থাকার স্থানে ঘষে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, এ কারণেই তোমরা মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহার করে থাক। সহীহঃ মুসলিম।
মুশরিক লোকের মসজিদে প্রবেশ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে মসজিদে (নাববীর) কাছে আসল। এরপর উটটি মসজিদের আঙ্গিনায় বেঁধে বলল, আপনাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন সাহাবীগণের সামনেই বসা ছিলেন। আমরা লোকটিকে বললাম, এই যে সাদা বর্ণের লোকটি হেলান দিয়ে বসে আছেন- ইনিই [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ]! লোকটি তাকে বলল, হে ‘আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র! উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ আমি তোমার কথা শুনেছি। এরপর লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি ... এরপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, বনু সা‘দ ইবনু বাক্র গোত্রের লোকেরা দিমাম ইবনু সা‘লাবাহকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট পাঠালেন। লোকটি তাঁর নিকট এসে উটকে মসজিদের দরজার কাছে বসিয়ে বেঁধে রেখে মসজিদে প্রবেশ করল। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি বলল, তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র কে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র। লোকটি বলল, হে ‘আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র! ... অতঃপর পূর্ণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে বসা ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে ইয়াহূদীরা এসে বলল, হে আবূল ক্বাসিম! পরে তারা তাদের মধ্যকার এমন এক পুরুষ ও এক নারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল যারা যেনায় লিপ্ত হয়েছে। [৪৮৮]
যেসব জায়গায় সলাত আদায় করা জায়িয নয়
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার জন্য (অর্থাৎ আমার উম্মাতের জন্য) সমগ্র জমিনকে পবিত্র এবং মসজিদ (সাজদাহ্র স্থান) বানানো হয়েছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিমে জাবির সূত্রে। আবূ সালিহ আল-গিফারী (রহঃ) কোন এক সফরে ‘আলী (রাঃ) বাবিল নামক শহর অতিক্রমকালে তার কাছে মুয়াজ্জিন এসে ‘আসরের সলাতের আযান দেয়ার অনুমতি চাইল। কিন্তু তিনি বাবিল শহর থেকে বেরিয়ে এসে মুয়াজ্জিনকে ইক্বামাত বলার নির্দেশ দিলেন। মুয়াজ্জিন ইক্বামত দিলে তিনি সলাত আদায় করলেন এবং সলাত শেষে বললেন, আমার প্রিয় বন্ধু [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ] আমাকে ক্ববরস্থানে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে আমাকে বাবিলের জমিনে সলাত আদায় করতেও নিষেধ করেছেন। কারণ তা অভিশপ্ত জমিন। [৪৯০] আবূ সালিহ আল-গিফারী (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে “ফালাম্মা বারাযা” এর স্থলে “ফালাম্মা খারাজা” উল্লেখ করা হয়েছে। [৪৯১] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেবলমাত্র গোসলখানা ও ক্ববরস্থান ছাড়া সমগ্র জমিনই মসজিদ (তথা সলাতের স্থান হিসেবে গণ্য)।
উটের আস্তাবলে সলাত আদায় করা নিষেধ
আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে উটের আস্তাবলে সলাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা উটের আস্তাবলে সলাত আদায় করবে না। কারণ তা শাইত্বানের আড্ডাখানা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বকরীর খোঁয়াড়ে সলাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সেখানে সলাত আদায় করতে পার। কারন তা বারকাতময় প্রাণী (বা স্থান)। সহীহঃ এটি গত হয়েছে ১৮৪ নং এ।
বালকদের কখন থেকে সলাতের নির্দেশ দিতে হবে?
‘আবদুল মালিক ইবনু রাবী‘ ইবনু সাবুরাহ্ থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শিশুর বয়স সাত হলেই তাকে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিবে এবং তার বয়স দশ হয়ে গেলে (সলাত আদায় করতে না চাইলে) এজন্য তাকে প্রহার করবে। ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে সলাতের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে তখন (সলাত আদায় না করলে) এজন্য তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে। দাঊদ ইবনু সাওয়ার আল-মুযানী (রহঃ) একই সানাদ ও অর্থে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে অতিরিক্তভাবে একথাও রয়েছেঃ তোমাদের কেউ তার দাসীকে তার দাসের সঙ্গে বিয়ে দিলে (এরপর থেকে) সে তার (দাসীর) নাভির নিচে ও হাঁটুর উপরে তাকাবেনা। হিশাম ইবনু সা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা মু’আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব আল-জুহানীর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, শিশু কখন সলাত আদায় করবে? তার স্ত্রী বললেন, আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি এ বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলছিলেনঃ শিশু যখন ডান ও বাম (হাতের) পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে তখন তাকে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিবে। [৪৯৭]
আযানের সুচনা
আবূ ‘উমাইর ইবনু আনাস হতে তার এক আনসারী চাচার তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য লোকদের কিভাবে একত্র করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তিত ছিলেন। তা দেখে কেউ পরামর্শ দিলেন, সলাতের সময় উপস্থিত হলে একটা পতাকা উড়ানো হোক। তা দেখে একে অন্যকে সংবাদ জানিয়ে দিবে। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এটা পছন্দ হলো না। কেউ কেউ প্রস্তাব করল, ইয়াহুদীদের ন্যায় শিঙ্গা-ধ্বনি দেয়া হোক। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাও পছন্দ করলেন না। কারন তা ছিল ইয়াহুদীদের রীতি। কেউ কেউ নাকুস (ঘণ্টা ধ্বনি) ব্যবহারের প্রস্তাব করলে তিনি বলেনঃ ওটা নাসারাদের রীতি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ বিষয়টি নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চিন্তার কথা মাথায় নিয়ে প্রস্থান করলেন। অতঃপর (আল্লাহর পক্ষ হতে) স্বপ্নে তাকে আযান শিখিয়ে দেয়া হলো। বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন ভোরে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে বিষয়টি অবহিতকালে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কিছুটা তন্দ্রাছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক আগন্তক এসে আমাকে আযান শিক্ষা দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, একইভাবে ‘উমার খাত্তাব (রাঃ) ও বিশদিন আগেই স্বপ্নেযোগে আযান শিখেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কাছে তা (ব্যক্ত না করে) গোপন রেখেছিলেন। অতঃপর (‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদের স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলার পর) তিনিও তার স্বপ্নের কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আগে বললে না কেন? তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ এ বিষয়ে আমার আগেই বলে দিয়েছেন। এজন্য আমি লজ্জিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিলাল! উঠো, এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ তোমাকে যেরূপ নির্দেশ দেয় তুমি তাই করো। অতঃপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। আবূ বিশর বলেন, আবূ ‘উমাইর আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, আনসারদের ধারনা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ঐদিন অসুস্থ না থাকলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকেই মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করতেন।
আযানের পদ্ধতি
‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘নাকুস’ (ঘণ্টা ধ্বনি) দিয়ে লোকদের সলাতের জন্য একত্র করার নির্দেশ দিলেন, তখন আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি হাতে ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘণ্টাটি বিক্রি করবে কি? লোকটি বললঃ তা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, আমরা এর সাহায্যে লোকদের সলাতের জন্য ডাকবো। লোকটি বললো, আমি কি তোমাকে এর চাইতে উত্তম জিনিস অবহিত করব না? আমি বললাম, অবশ্যই। লোকটি বললঃ তুমি বলবেঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ। হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” (অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, (দু’বার) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই (দু’বার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল (দু’বার), এসো সলাতের দিকে (দু’বার), এসো সফলতার দিকে (দু’বার), আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান ,আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।) বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি কিছুটা দূরে গিয়ে বলল, যখন সলাতের জন্য দাঁড়াবে তখন বলবেঃ “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশাহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস ফালাহ, ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অতঃপর ভোর হলে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বপ্নে দেখা বিষয়টি অবহিত করি। তিনি বললেনঃ এটা সত্য স্বপ্ন, ইনশাআল্লাহ। তুমি উঠো, বিলালকে সাথে নিয়ে গিয়ে তুমি স্বপ্নে যা দেখেছো তা তাকে শিখিয়ে দাও, যেন সে (ঐভাবে) আযান দেয়। কারন তার কণ্ঠস্বর তোমার কণ্ঠস্বরের চেয়ে উচ্চ। অতঃপর আমি বিলালকে নিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে (আযানের শব্দগুলো) শিখাতে থাকলাম। বিলাল ঐগুলো উচ্চেঃস্বরে বলতে লাগল। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিজ ঘর থেকে আযান শুনতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন। এবং বললেন , হে আল্লাহর রসূল! ঐ মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নাবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই ----। হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ সূত্রে যুহরী (রহঃ)-এর বর্ণনায়ও অনুরূপ রয়েছে। তাতে যুহরী সূত্রে ইবনু ইসহাক্ব বলেছেনঃ “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” (অর্থাৎ আল্লাহু আকবার চারবার বলেছেন)। সহীহ। অপরদিকে যুহরী সূত্রে মা’মার ও ইউনুস বলেছেনঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” তারা আল্লাহু আকবার দু’বার বলেছেন, চারবার বলেননি। সহীহঃ কিন্তু তাকবীরে তারবী’ (চার বার আল্লাহু আকবার) বলা অধিক সহীহ। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল মালিক ইবনু আবূ মাহযূরাহ হতে তার পিতা সূত্রে ও দাদার তিনি (আবূ মাহযুরাহ (রাঃ)) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি আমার মাথার সন্মুখ ভাগে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি বলবেঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার–উচ্চেঃস্বরে। এরপর কিছুটা নীঁচু স্বরে বলবেঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ। হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ। হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। ফাযরের সলাত হলে বলবেঃ আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম, আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম (ঘুমের চেয়ে সলাত উত্তম-দু’বার) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছেঃ আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম, আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম-(এটা) ফাজরের প্রথম আযানে (বলবে)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদের বর্ণনা এর চেয়ে বেশি স্পষ্ট। তাতে রয়েছেঃ তিনি আমাকে ইক্বামাতের শব্দগুলো দু’ দু’বার করে শিখিয়েছেন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ। হাইয়্যা ‘আলাস-সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস-সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ‘আব্দুর রাযযাক্ব বলেন, সলাতের ইক্বামাত দেয়ার সময় ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু , ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ’ দু’বার বলবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ মাহযুরাহ (রাঃ) কে বললেন, (আমি যেভাবে আযান ও ইক্বামাতের শব্দগুলো শিখালাম) তুমি কি তা ঠিকমতো শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেন, আবূ মাহযুরাহ তার কপালের চুলগুলা কাটতেন না এবং সেগুলোতে সিঁথিও কাটতেন না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর (এই চুলের উপর) হাত বুলিয়েছিলেন। সহিহঃ তবে আবূ মাহযুরাহ তার কপালের চুল কাটতেন না...’ এ কথাটি বাদে। আবূ মাহযুরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আযানের শব্দ উনিশটি আর ইক্বামাতের শব্দ সতেরটি শিখিয়েছিলেন। আযানের শব্দগুলো হছেঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর ইক্বামাতের শব্দগুলো হচ্ছেঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাস-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আবূ মাহযুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আযানের শব্দগুলো শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তুমি বলোঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ। তারপর কণ্ঠস্বর উঁচু করে আবার বলোঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে আমাকে অক্ষরে অক্ষরে আযানের শব্দগুলো শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছেঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ফাজরের (আযানে) বলতেন, আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম। আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অক্ষরে অক্ষরে আযান শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলতেনঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তারপর বাকী অংশ ‘আব্দুল আযিয ইবনু ‘আব্দুল মালিক সূত্রে বর্ণিত ইবনু জুরাইজের হাদীসের অনুরূপ। মালিক ইবনু দীনারের হাদীসে রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ মাহযুরাহর পুত্রকে বললাম, আপনার পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যেরূপ আযান শিখেছেন আমাকে তা বর্ণনা করুন। তিনি তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ……। সহীহ, তাকবীরে তারবী’ সহকারে। অনুরূপ জা’ফর ইবনু সুলাইমান-ইবনু আবূ মাহযূরাহ-তার চাচা তার-দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাতে রয়েছেঃ তারপর তারজী’ করবে এবং উচ্চেঃস্বরে “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”—বলবে। মুনকারঃ মাহফুয হচ্ছে কেবল শাহাদাতাইনে তারজী করা। ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, সলাতের অবস্থা পর্যায়ক্রমে তিনবার পরিবর্তিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের মুসলমানগণ অথবা মুমিনগণ একত্রে জামা’আতে সলাত আদায় করাটা আমার কাছে আনন্দদায়ক। এমনকি প্রাথমিক অবস্থায় আমি চিন্তা করলাম, সলাতের সময় হলে মানুষদের ডেকে আনার জন্য ঘরে ঘরে লোক পাঠিয়ে দিব। এমনকি আমি এ ইচ্ছাও করলাম যে, সলাতের সময় উপস্থিত হলে কিছু লোককে দুর্গের উপর দাড়ঁ করিয়ে দিব যারা মুসলমানদের সলাতের জন্য আহবান করবে। এমনকি তারা ‘নাকুস’ ঘণ্টা ধ্বনিও বাজালো বা বাজাবার উপক্রম করল। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় এক আনসারী এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে উৎকণ্ঠিত দেখে আপনার কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার পর (রাতে স্বপ্ন) এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। লোকটি যেন দু’টি সবুজ কাপড় পরে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আযান দিল। কিছুক্ষন বসে থাকার পর সে আবার আযানের অনুরূপ শব্দ উচ্চারন করল (ইক্বামত দিল)। কিন্তু ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু’ অতিরিক্ত বলল। লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে না করলে আমি অবশ্যই বলব, আমি জাগ্রতই ছিলাম, ঘুমন্ত নয়। ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই উত্তম স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তবে ‘আমরের বর্ণনায় ‘আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই উত্তম স্বপ্ন দেখিয়েছেন’ কথাটুকু নেই। তুমি বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দাও। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমিও তার মত একই ধরনের স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু লোকটি আগেই বলে ফেলাতে আমি বলতে লজ্জাবোধ করি। ইবনু আবূ লায়লাহ বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লোক মসজিদে এসে জামা’আত হতে দেখলে মুসল্লিদের কাছে সলাত কয় রাক’আত হয়েছে তা জিজ্ঞেস করত। অতঃপর ইশারায় তা জানিয়ে দেয়া হতো। তারপর তারা ঐ পরিমান সলাত দ্রুত আদায় করে জামা’আতে শামিল হত। ফলে তাঁর পিছনের মুক্তাদিদের অবস্থা পৃথক পৃথক হত। কেউ দাঁড়ানো, কেউ রুকু’তে, কেউ বসা, আবার কেউ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথেই সলাতরত অবস্থায় থাকত। ইবনু মুসান্না ‘আমর ও হুসায়ন ইবনু আবূ লায়লাহ সূত্রে বর্ণনা করেন, এমন সময় (জামা’আত শুরু হওয়ার পর) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) আসলেন। শু’বাহ (রহঃ) বলেন, আমি একথা হুসাইন থেকে শুনেছিঃ তিনি বললেন, আমি আপনাকে যে অবস্থায় পাবো, তারই তো অনুসরন করব। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মু’আয তোমাদের জন্য একটি সুন্নাত নির্ধারণ করেছে। তোমরাও সেরুপ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহয় পদার্পণ করে তাদের তিন দিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। অতঃপর রমাযানের সিয়াম ফারয (হওয়া সম্পর্কিত) আয়াত অবতীর্ণ হয়। সাহাবীগণ ইতোপূর্বে সিয়াম পালনের অভ্যাস না থাকায় সিয়াম পালনের বিধান তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরে। কাজেই কেউ সিয়াম পালনে অক্ষম হলে মিসকিনকে খাদ্য আহার করাতেন। এমতাবস্থায় এ আয়াত নাযিল হলোঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ রমাযান মাস পেলে সে যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে” —(সূরাহ বাক্বারাহ, ১৮৫)। এতে রোগী ও মুসাফিরকে অব্যাহতি দিয়ে অবশিষ্ট সবাইকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেয়া হলো। আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেনঃ (ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায়) কেউ ইফতার করে আহার না করে ঘুমিয়ে পড়লে তার পক্ষে পরদিন সূর্যাস্তের পূর্বে কোন কিছু খাওয়া বৈধ ছিল না। একদা ‘উমার (রাঃ) সহবাসের ইচ্ছা করলে তার স্ত্রী বললেন, আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। ‘উমার ধারনা করলেন, তার স্ত্রী বাহানা করছে। তাই তিনি স্ত্রী সহবাস করলেন। অন্যদিকে জনৈক আনসারী (ইফতারের পর) খাদ্য চাইলে লোকেরা বলল, অপেক্ষা করুন আমরা আপনার জন্য খানা তৈরী করছি। ইতোমধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পরলেন। অতঃপর সকাল বেলা এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “রোযার রাতে স্ত্রী সহবাস তোমাদের জন্য বৈধ করা হল।” (সূরাহ বাক্বারাহ, ১৮৭) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, সলাতের অবস্থা পর্যায়ক্রমে তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। অনুরূপ সিয়ামের অবস্থাও তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। তারপর বর্ণনাকারী নাসর ঐরূপ দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনুল মুসান্না কেবল বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে সলাত আদায়ের ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তৃতীয় অবস্থা এই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহয় পদার্পণ করার তের মাস যাবত বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেন। অতঃপর আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আসমানের দিকে তোমার মুখ উত্তোলন আমরা লক্ষ্য করেছি। অতএব তোমার পছন্দের ক্বিবলার দিক আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। এখন তুমি তোমার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও (সূরাহ বাক্বারাহ, ১৪৪)। এভাবে আল্লাহ তাঁর মুখ কা’বার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ইবনুল মুসান্নার হাদীস এখানেই শেষ। আর যিনি স্বপ্ন দেখেহিলেন নাসর তার নাম উল্লেখ করে বলেনঃ অতঃপর আনসার গোত্রের ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) আসলেন। তিনি উক্ত হাদীসে বলেনঃ স্বপ্নে দেখা লোকটি ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে বললোঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস-সলাহ দু’বার, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ দু’বার। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অতঃপর কিছুক্ষন নীরব থেকে আবার দাঁড়িয়ে থেকে পূর্বের কথারই পুনরাবৃত্তি করল। তবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ বলেন, লোকটি হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ বলার পর ক্বাদ ক্বামাতিস সলাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ বাক্য দু’বার বলল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ এটা তুমি বিলাল কে শিখিয়ে দাও। অতঃপর বিলাল (রাঃ) শিখানো শব্দগুলো দ্বারা আযান দিলেন। এরপর বর্ণনাকারী সওম (রোযা) সম্পর্কে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসে তিন দিন এবং আশুরার দিন সিয়াম পালন করতেন। অতঃপর আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেনঃ “তোমাদের উপর সিয়াম ফারয করা হলো যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফারয করা হয়েছিল, যেন তোমরা আল্লাহভীরু (মুত্তাকী) হতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা মুসাফির হলে পরবর্তীতে তাকে এর ক্বাযা করতে হবে। যারা সিয়াম পালনে সক্ষম (হয়েও সিয়াম পালন করে না) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার করাবে”—(সূরাহ বাক্বারাহ,১৮৩-১৮৪)। এতে কেউ ইচ্ছে হলে সিয়াম পালন করত, আর কেউ বা সিয়াম পালন না করে প্রতি সিয়ামের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার করাতো। এটাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। (সিয়ামের প্রাথমিক অবস্থা এরূপই ছিল) অতঃপর এ বিধান পরিবর্তন করে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেনঃ “রমাযান হচ্ছে মহিমাম্বিত মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে যা মানব জাতির পথপ্রদর্শক, হিদায়াতের স্পষ্ট দলীল এবং (হাক্ব ও বাতিলের মধ্যে) পার্থক্যকারী। তোমাদের যে কেউ রমাযান মাস পেল সে যেন সিয়াম পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে সে পরবর্তী সময়ে তা ক্বাযা করে নিবে—(সূরাহ বাক্বারাহ ১৮৫)। এরপর থেকে রমাযান মাস প্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর সিয়াম ফারয হয়ে যায়। এবং মুসাফিরের জন্য এর ক্বাযা আদায় ফারয সাব্যস্ত হয়। আর ফিদয়ার ব্যবস্থা বিধিবদ্ধ হয় সিয়াম পালনে অপারগ বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য। সাহাবী সিরমাহ (রাঃ) সারা দিন পরিশ্রম করেছিলেন। এরপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহ, প্রথম দিকে তাকবীরে তারবী’ সহকারে। ইরওয়াউল গালীল ৪/২০—২১।
ইক্বামতের বর্ণনা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল কে আযান জোড় ও ইক্বামাত বেজোড় সংখ্যায় বলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। হাম্মাদ তার হাদীসে আরো বলেন, কিন্তু ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ’ বাক্যটি ছাড়া (অর্থাৎ এ বাক্যটি দু’বার বলতে হবে)। সহিহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইসমাঈল বলেন, আমি এ হাদীস আইউবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, কিন্তু ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ (বাক্যটি জোড় সংখ্যায় বলবে)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আযানের শব্দগুলো দু’বার করে এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা হত। তবে ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ’ বাক্যটি দু’বার বলা হত। আমরা ইক্বামাত শুনলেই উযু করে সলাত আদায় করতে আসতাম। শু’বাহ (রাঃ) বলেন, আমি আবূ জা’ফর থেকে কেবলমাত্র এ হাদীসটি শুনেছি। মসজিদে ‘উরয়ানের মুয়াজ্জিন আবূ জা’ফর (রহঃ) আমি মসজিদুল আকবারের মুয়াজ্জিন আবূল মুসান্না হতে শুনেছি , তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে শুনেছি ………. অতঃপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন।
একজনের আযান ও আরেকজনের ইক্বামাত দেয়া
‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আযান প্রচলনের জন্য কয়েকটি বিষয়ের ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু এর কোনটিই করেননি। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদকে স্বপ্নে দেখানো হলো। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা জানালে তিনি বললেনঃ বিলাল কে শিখিয়ে দাও। তিনি বিলাল কে শিখানোর পর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে আযান দেখেছি, সেজন্য আমিই আযান দিতে চেয়েছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আচ্ছা, তুমি ইক্বামাত দাও। [৫১১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ তার দাদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) এরূপই বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার দাদা (‘আবদুল্লাহ) ইক্বামাত দিলেন। [৫১২] যিয়াদ ইবনুল হারিস আস-সুদাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাজরের প্রথম আযান নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশক্রমে আমি দিয়েছিলাম। আযান শেষে আমি বলতে লাগলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি ইক্বামাত দিব? তিনি তখন পূর্ব দিগন্তে ভোরের আভা লক্ষ্য করে বললেনঃ না। ভোরের আলো প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি বাহন থেকে নেমে পেশাব-পায়খানা সেরে আমার দিকে ফিরে এলেন। সাহাবীগণ তার সাথে মিলিত হলেন (চারপাশে উপস্থিত হলেন)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উযু করলেন। বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিতে চাইলে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ সুদা গোত্রের ভাই আযান দিয়েছে। আর যে আযান দেয় সে-ই ইক্বামাত দিবে। অতঃপর আমি ইক্বামাত দিলাম। [৫১৩] দুর্বলঃ ইরওয়া ২৩৭, যঈফাহ ৩৫।
উচ্চৈঃস্বরে আযান দেয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যতদুর পর্যন্ত যায় তাকে ততদুর ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই (ক্বিয়ামাতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাআতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত সলাতের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক সলাত থেকে আরেক সলাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সলাতের আযান দেয়া হয়, তখন শাইত্বান সশব্দে হাওয়া ছাড়তে ছাড়তে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়, যেন আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হলে সে আবার ফিরে আসে। সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে সে আবার পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। ইক্বামাত শেষে সে আবার ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে অহেতুক চিন্তার উদ্রেক করায় এবং বলে, উমুক কথা স্মরন করো। সে এমন কথা স্মরন করিয়ে দেয় যা তার চিন্তায়ই আসেনি। এমনকি মুসল্লী কখনো ভুলেই যায় যে, কত রাক’আত সলাত আদায় করেছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
ওয়াক্তের প্রতি খেয়াল রাখা মুয়াজ্জিনের কর্তব্য
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম হচ্ছেন যিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন (ওয়াক্তের) আমানতদার। ‘হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।’ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন … পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। [৫১৭]
মিনারের উপর থেকে আযান দেয়া
বানু নাজ্জারের এক মহিলা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মসজিদের নিকটবর্তী আমার ঘরটিই ছিল সবচেয়ে উচুঁ। বিলাল (রাঃ) ঘরের ছাদে উঠে ফাজ্রের আযান দিতেন। তিনি সাহরীর সময় (শেষ রাতে) সেখানে এসে বসতেন এবং সুবহে সাদিকের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তিনি শরীরের আড়মোড় ভেঙ্গে (বা হাই তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে) বলতেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসা করছি এবং কুরাইশদের ব্যাপারে আপনার কাছে সাহায্য চাইছি যেন তাদের দ্বারা আপনার দ্বীন কায়িম হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি আযান দিতেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আল্লাহর শপথ কোন রাতেই আমি বিলালকে এ কথাগুলো ত্যাগ করতে দেখিনি।
আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিনের ঘুরে যাওয়া
‘আওন ইবনু আবূ জুহায়ফাহ তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ্তে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তিনি তখন লাল চামড়ার তৈরি ছোট তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় বিলাল বের হয়ে এসে আযান দিলেন। আযানের সময় আমি তার মুখের দিকে লক্ষ্য করছিলাম যে, তিনি এদিক ওদিক মুখ ঘুরাচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়ে ডোরাকাটা চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে এলেন। সহীহঃ মুসলিম, বুখারী সংক্ষেপে। বর্ণনাকারী মূসা বলেন, আবূ জুহায়ফাহ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, বিলাল (রাঃ) ‘আবত্বাহ’ নামক স্থানে গিয়ে আযান দিলেন। তিনি ‘হাইয়্যা ‘আলাস-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ’ পর্যন্ত পৌঁছালে স্বীয় ঘাড় ডানে-বামে ঘুরালেন, তবে শরীর ঘুরাননি। অতঃপর তাঁবু প্রবেশ করে একটি বর্শা বা ছড়ি বের করলেন।.. এরপর বর্ণনাকারী মূসা হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। মুনকার।
আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু’আ করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।
মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলতে হয়
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলবে তোমরাও তদ্রূপ বলবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রূপ বলবে। তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করবে। ওয়াসিলাহ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হব সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফা‘আত পাবে। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! মুয়াজ্জিন তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে (আল্লাহর নিকট) দু‘আ করবে। তখন তোমাকে তা-ই দেয়া হবে (তোমার দু‘আ ক্ববুল হবে)। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে বলেঃ “এবং আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন শারীক নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রসূল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।” – তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহঃ মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়াজ্জিনকে শাহাদাতের শব্দ উচ্চারণ করতে শুনলে বলতেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমিও অনুরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-এর জাওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর জওয়াবে আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ এর জওয়াবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলে, অতঃপর হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, তারপর হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, তারপর যদি আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এর জওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ-এর জওয়াবে লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহিহঃ মুসলিম।
ইক্বামাতের জবাবে কী বলতে হবে?
আবূ উমামাহ (রাঃ) সূত্রে অথবা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোন সাহাবী বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিলেন। তিনি ‘ক্বাদ ক্বমাতিস সলাহ’ বললে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহ।” আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইক্বামাতের অবশিষ্ট শব্দগুলোর জওয়াব ঐরূপ দিলেন যেরূপ ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে আযান সম্পর্কে বলা হয়েছে। [৫২৭] দুর্বল : ইরওয়া ২৪১।
আযান শুনে যে দু’আ পাঠ করবে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিম্নোক্ত দু‘আ পড়বে তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফা‘আত অবশ্যম্ভাবী : আল্লাহুম্মা রব্বি হাযিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তাম্মাতি ওয়াস্ সলাতিল ক্বায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল্ ওয়াসিলাতা ওয়ালফাযীলাহ্ ওয়াব‘আসহু মাকামাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহু। অর্থ : হে আল্লাহ! এই পূর্ণাঙ্গ আহবান ও চিরন্তন সলাতের রব! আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ওয়াসিলাহ ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন এবং তাকে আপনার প্রতিশ্রুত প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করুন। সহীহঃ বুখারী।
মাগরিবের আযানের সময় যা পড়তে হয়
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন আমি যেন মাগরিবের আযানের সময় এ দু‘আ পাঠ করি : আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা ইক্ববালু লাইলিকা ওয়া ইদবারু নাহারিকা ওয়া আসওয়াতু দু‘আয়িকা ফাগফিরলী। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এটা হচ্ছে আপনার রাত আসার সময়, আপনার দিন বিদায়ের মুহূর্ত এবং আপনাকে আহবানকারীর ডাক শোনার সময়। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ [৫২৯] দুর্বল : মিশকাত ৬৬৯।
আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ
‘উসমান ইবনু আবূল ‘আস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার সম্প্রদায়ের ইমাম নিয়োগ করুন। তিনি বলেনঃ যাও, তোমাকে তাদের ইমাম নিযুক্ত করা হলো। তবে দুর্বল মুত্তাকীদের প্রতি খেয়াল রাখবে এবং এমন একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করবে যে তার আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে না। সহীহঃ মুসলিম, মুয়াজ্জিন নিয়োগের কথাটি বাদে।
ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা বিলাল (রাঃ) সুবহে সাদিকের আগেই আযান দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পুনরায় আযান দেয়ার স্থানে ফিরে গিয়ে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেনঃ জেনে রাখ, বান্দা (বিলাল) আযানের সময় সম্পর্কে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু সালামাহ্ (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ আইউব (রাঃ) সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেননি। নাফি‘ (রহঃ) ‘উমার (রাঃ)-এর মাসরূহ নামক এক মুয়াজ্জিন ছিল। একদা তিনি সুবহে সাদিকের পূর্বেই আযান দিলে ‘উমার (রাঃ) তাকে (পুনরায় আযান দেয়ার) নির্দেশ দিলেন … তারপর অনুরূপ হাদীসটি বর্ণনা করেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ হতে ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে নাফি‘ অথবা অন্য কারো সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, দারাওয়ার্দী, ‘উবাইদুল্লাহ হতে নাফি’ থেকে ইবনু ‘উমার সূত্রে বর্ণনা করেন : ‘উমার (রাঃ)-এর মাস‘ঊদ নামে একজন মুয়াজ্জিন ছিল। আর এটাই প্রথম কথার চাইতে অধিকতর সহীহ। বিলাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ভোরের আলো এরূপ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি আযান দিবে না। এই বলে তিনি তাঁর উভয় হাত (উত্তর ও দক্ষিণ দিকে) প্রসারিত করলেন। হাসান। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শাদ্দাদ (রহঃ) বিলাল (রাঃ)-এর সাক্ষাত পাননি।
অন্ধ ব্যাক্তির আযান দেয়া
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুয়াজ্জিন ছিলেন। আর তিনি ছিলেন অন্ধ। সহীহঃ মুসলিম।
আযানের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া
আবূশ-শা‘সা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-সাথে মসজিদে ছিলাম। মুয়াজ্জিন ‘আসরের আযান দিলে এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, লোকটি আবূল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বিরুদ্ধাচারণ করল। সহীহঃ মুসলিম।
ইমামের জন্য মুয়াজ্জিনের অপেক্ষা করা
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) আযান দেয়ার পর অপেক্ষামান থাকতেন। তিনি যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বের হতে দেখতেন, তখন সলাতের ইক্বামাত দিতেন। সহীহঃ মুসলিম
তাস্বীব (আযানের পর সলাতের জন্য পুনরায় ডাকা) প্রসঙ্গে
মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি যুহর কিংবা ‘আসরের সলাতের জন্য তাসবীব (পুনরায় আহবান) করায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, চলো আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাই, কারণ এটা বিদ’আত।
সলাতের ইক্বামাত হওয়ার পরও ইমামের আগমনের অপেক্ষায় বসে থাকা
‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ তার পিতা আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সলাতের ইক্বামাত দেয়া হয়, তখন আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মু’আবিয়াহ ইবনু সালাম ও ‘আলী ইবনুল মুবারাক ইয়াহ্ইয়াহ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা শান্তভাবে (অপেক্ষা করতে) থাকবে। সহীহঃ বুখারী ইয়াহ্ইয়াহ (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ যতক্ষন না তোমরা দেখবে, আমি বের হয়েছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি বের হয়েছি, শব্দগুলো মা’মার ব্যতীত অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। ইবনু ‘উয়াইনাহও মা’মার সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতেও ‘আমি বের হয়েছি’ কথাটি উল্লেখ নেই। সহীহঃ মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আসার সময় হলেই সলাতের ইক্বামাত দেয়া হত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্থানে আসার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করতেন। সহীহঃ মুসলিম। হুমাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাবিত আল-বুনানীকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে সলাতের ইক্বামাত হওয়ার পরও কথা বলেছিল। তিনি আনাস (রাঃ) সূত্রে হাদীস বর্ণনা করে বলেন, ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসে এবং তাকে (কথাবার্তায়) ব্যস্ত রাখে। সহীহঃ বুখারী কাহ্মাস (রাঃ) তিনি বলেন, মিনায় আমরা সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম, কিন্তু তখনো ইমাম বের হননি। এমতাবস্থায় আমাদের মধ্যকার কেউ কেউ বসে পড়ল। কুফাবাসী জনৈক শায়খ বললেন, কিসে আপনাকে বসিয়ে দিল? আমি বললাম, ইবনু বুরাইদাহ। তিনি বলেছেন, ইমামের জন্য এভাবে (দাঁড়িয়ে) অপেক্ষা করা নিস্প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমার শায়খ ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওসাজাহ (রহঃ) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তাকবীরে তাহরীমা বলার পূর্বে সলাতের কাতারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতাম। তিনি আরো বলেন, সম্মানিত মহান আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) দু’আ করে থাকেন ঐ লোকদের জন্য যারা সামনের কাতারসমূহের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহর নিকট ঐ পদক্ষেপের চাইতে অধিক পছন্দনীয় পদক্ষেপ আর কোনটি নেই মানুষেরা যা কাতারবদ্ধ হবার জন্য করে থাকে। [৫৪২] দুর্বলঃ মিশকাত ১০৯৫ আনাস (রাঃ) (‘ইশার) সলাতের ইক্বামাত দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের কোণে এক লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি সলাত শুরু করতে আসায় বিলম্ব করায় অপেক্ষমান লোকজন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সহীহঃ মুসলিম সালিম আবূন্ নাদর তিনি বলেন, সলাতের ইক্বামাত বলার পর মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা কম দেখলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শুরু না করে বসে যেতেন। অতঃপর যখনই পূর্ণ জামা’আতের মুসল্লীর সমাগম হতে দেখতেন তখন সলাত আদায়ে দাঁড়াতেন। [৫৪৪] ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) এ সানাদে পূর্বানুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [৫৪৫]
জামা’আত পরিত্যাগের ব্যাপারে সাবধান বাণী
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন জনপদে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রে বসবাস করা সত্ত্বেও তারা জামা’আতে সলাত আদায়ের ব্যবস্থা না করলে তাদের উপর শাইত্বান আধিপত্য বিস্তার করে। অতএব তোমরা জামা’আতকে আঁকড়ে ধর। কারণ নেকড়ে (বাঘ) দলচ্যুত বকরীটিকেই খেয়ে থাকে। যায়িদাহ (রহঃ) বলেন, সায়িব (রহঃ) বলেছেন, এখানে জামা’আত বলতে সলাতের জামা’আতকেই বোঝানো হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ইচ্ছা হয়, (লোকদেরকে জামা’আতে) সলাত আদায়ের নির্দেশ দেই এবং কাউকে লোকদের সলাত আদায় করাবার হুকুম করি, অতঃপর লাকড়ি বহনকারী কিছু লোককে সাথে নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি সেগুলো দ্বারা ঐসব লোকের ঘর-বাড়ি আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য যারা জামা’আতে (সলাত আদায় করতে) উপস্থিত হয়নি। সহীহঃ বুখারী। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ইচ্ছা হয়, আমি আমার যুবকদের লাকড়ির বোঝা জমা করার নির্দেশ দেই, অতঃপর যারা কোন কারণ ছাড়াই নিজ নিজ ঘরে সলাত আদায় করে, সেগুলো দিয়ে তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইয়াযীদ ইবনুল আসাম্মকে বললাম, হে আবূ ‘আওফ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা’আত বলতে কি জুমু’আর কথা বুঝিয়েছেন? তিনি বলেন, আমার দু’কান বধির হোক, যদি আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) থেকে না শুনে থাকি। তিনি স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (নির্দিষ্টভাবে) জুমু’আহ্ বা অন্য কিছুর উল্লেখ করেননি। সহীহঃ (আরবী) কথাটি বাদে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে আযানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত সলাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা’আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (মসজিদে) যেত এবং তাকে (সলাতের) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (সলাতের স্থান) নেই। তোমরা যদি মসজিদে আসা বাদ দিয়ে ঘরেই (ফরয) সলাত আদায় কর তাহলে তোমরা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতকেই বর্জন করলে। আর তোমরা তোমাদের নাবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই কুফরীতে জড়িয়ে পড়বে। সহীহঃ মুসলিমে ___ ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ শব্দে। আর এটাই মাহফূয। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামা’আতে সলাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) সলাত ক্ববুল হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কী? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা। সহীহঃ ওজর সম্পর্কিত বাক্যটি বাদে। এছাড়া __ শব্দে মিশকাত। ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো অন্ধ, আমার ঘরও দূরে অবস্থিত। আমার একজন পথচালকও আছে, কিন্তু সে আমার অনুগত নয়। এমতাবস্থায় আমার জন্য ঘরে সলাত আদায়ের অনুমতি আছে কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? ইবনু উম্মে মাকতূম বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার জন্য অনুমতির কোন সুযোগ দেখছি না। ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাদীনাহ্তে অনেক কীট-পতঙ্গ ও হিংস্র জন্তু রয়েছে (যদ্দ্বারা আক্রান্ত হবার আশংকা আছে, এরূপ অবস্থায়ও কি মসজিদে জামা’আতে হাযির হতে হবে?)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ্, হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ শুনতে পাও? (শুনতে পেলে) অবশ্যই জামা’আতে আসবে।
জামা’আতে সলাত আদায়ের ফাযীলাত
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে ফাজ্রের সলাত আদায় করার পর বললেনঃ অমুক হাযির আছেন কি? সাহাবীগণ বললেনঃ না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ দু’ওয়াক্ত (ফাজ্র ও ‘ইশা) সলাতই মুনাফিক্বদের জন্য বেশি ভারী হয়ে থাকে। তোমরা যদি এ দু’ওয়াক্ত সলাতে কী পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা জানতে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমরা অবশ্যই এতে শামিল হতে। জামা’আতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্র (ফেরেশতাদের) কাতারের সমতুল্য। তোমরা যদি এর ফাযীলাত সম্পর্কে জানতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা এজন্য প্রতিযোগিতা করতে। নিশ্চয় দু’জনের জামা’আত একাকী সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তিনজনের জামা’আত দু’জনের জামা’আতের চেয়ে উত্তম। জামা’আতে লোক সংখ্যা যত বেশী হবে মহান আল্লাহর নিকট তা ততই বেশি পছন্দনীয়। ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘ইশার সলাত জামা’আতে আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত ‘ইবাদাতে কাটালো। আর যে ব্যাক্তি ‘ইশা ও ফাজ্রের সলাত জামা’আতে আদায় করল, সে যেন সারা রাতই ‘ইবাদাতে কাটালো। সহীহঃ মুসলিম
সলাত আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যাওয়ার ফাযীলাত
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মসজিদ থেকে যার (বাসস্থান) যত বেশী দূরে, সে তত বেশী সাওয়াবের অধিকারী। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমার জানামতে মাদীনাহর সলাত আদায়কারীদের মধ্যে এক ব্যক্তির বাসস্থান মসজিদ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি সর্বদা পায়ে হেঁটে জামা'আতে উপস্থিত হতেন। আমি তাকে বললাম, আপনি একটি গাধা খরিদ করে নিলে গরম ও অন্ধকারে তাতে সওয়ার হয়ে আসতে পারতেন। তিনি বললেন, আমার ঘর মসজিদের নিকটবর্তী হোক, তা আমি অপছন্দ করি। একথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছলে তিনি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি মসজিদে আসা ও মসজিদ থেকে ঘরে ফেরার বিনিময়ে সাওয়াব লাভের প্রত্যাশা করি (তাই এরূপ বলেছি)। তিনি বললেনঃ তুমি যা পাওয়ার আশা করেছ, আল্লাহ তোমাকে তাই দিয়েছেন। তুমি যে সাওয়াবের প্রত্যাশা করেছ তা পূর্ণরূপেই তোমার জন্য মঞ্জুর করেছেন। সহীহঃ মুসলিম আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফারয সালাতের জন্য উযু করে নিজ ঘর থেকে বের হবে, সে একজন ইহরামধারী হাজ্জীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি চাশতের সলাত আদায় করার জন্য বের হবে, সে একজন ‘উমরাহকারীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের পর থেকে আরেক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের মধ্যবর্তী সময়ে কোন বাজে কথা বা কাজ করবে না, তাকে ইল্লিয়্যুন-এ লিপিবদ্ধ করা হবে( অর্থাৎ তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ হবে)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ঘরে ও বাজারে (একাকী) সলাত আদায় অপেক্ষা জামা'আতে সলাত আদায় করলে পঁচিশ গুণ বেশি সাওয়াব পাবে। কেননা তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে উযু করে শুধুমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে যায়, এবং একমাত্র সলাতই তাকে (ঘর থেকে) বের করে, তাহলে মসজিদে পৌছা পর্যন্ত তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা হয়। মসজিদে প্রবেশের করার পর সেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতের জন্য অবস্থান করবে ততক্ষণ তাকে সালতের মধ্যে গণ্য করা হবে। সে যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সলাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে মালায়িকাহ তার জন্য এই বলে দু'আ করতে থাকেঃ "হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। হে আল্লাহ! তার তওবাহ কবুল করুন।" যতক্ষণ পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয় অথবা তার উযু না ভাঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়িকাহ(ফেরেশতাগণ) তার জন্য এরূপ দু'আ করতে থাকে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা'আতের সাথে এক ওয়াক্ত সলাত (একাকী) পঁচিশ ওয়াক্ত সলাত আদায়ের সমান। কেউ কোন খোলা মাঠে (জামা'আতের সাথে) পূর্ণরূপে রুকু-সাজদাহ সহকারে সলাত আদায় করলে সে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সাওয়াব পাবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, 'আবদুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ কোন ব্যক্তির মাঠে বা জঙ্গল (জামা'আতে) সলাত আদায় করা (অন্যত্র) জামা'আতে সালাতের উপর কয়েকগুন বেশী সাওয়াব হবে, অতঃপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহঃ বুখারীতে এর প্রথমাংশ।
অন্ধকারে সলাত আদায় করতে যাওয়ার ফাযীলাত
বুরায়দাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা অন্ধকার রাতে মসজিদে যাতায়াত করে তাদেরকে কিয়ামাতের দিন পূর্ণজ্যোতির সুসংবাদ দাও।
উযু করে মসজিদে যাওয়ার নিয়ম
আবূ সুমামাহ আল-হান্নাত তিনি বলেন, তিনি মসজিদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কা'ব ইবনু উজারাহর (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে আমার দু’ হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাতে দেখতে পেয়ে আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি আরো বললেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলে সে যেন তার দু' হাতের আঙ্গুল না মটকায়। কেননা সে তখন সালাতের মধ্যেই থাকে (অর্থাৎ ঐ অবস্থায় তাকে সলাত আদায়কারী হিসেবেই গণ্য করা হয়)। সা'ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক আনসারী সহাবীর মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট কেবল সাওয়াব লাভের প্রত্যাশায় একটি হাদীস বর্ণনা করব। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে উযু করে সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন সে তার ডান পা উঠাতেই মহান আল্লাহ তাঁর জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেন। এরপর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই মহা সম্মানিত আল্লাহ তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এখন তোমাদের ইচ্ছা হলে মসজিদের নিকট থাকবে অথবা দূরে। অতপর সে যখন মসজিদে গিয়ে জামা'আতের সলাত আদায় করে তখন ক্ষমা করে দেয়া হয়। যদি জামা'আত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত হয় এবং অবশিষ্ট সালাতে শামিল হয়ে সালাতের ছুটে যাওয়া অংশ পূর্ণ করে, তাহলেও তাকে অনুরূপ (জামা'আতে পূর্ণ সলাত আদায়কারীর সমান সাওয়াব) দেয়া হয়। আর যদি সে (মসজিদে এসে) জামা'আত সমাপ্ত দেখে একাকী সলাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে ঐরূপ (ক্ষমা করে) দেয়া হয়।
কেউ জামা'আতে সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েও জামা'আত না পেলে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে মসজিদে গিয়ে দেখতে পেল লোকেরা সলাত আদায় করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ তাকেও জামা'আতে শামিল হয়ে সলাত আদায়কারীদের সমান সাওয়াব দান করবেন। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না।
নারীদের মসজিদে যাতায়াত সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর ঘরে (মসজিদে) যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা বের হওয়ার সময় যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিও না। [৫৬৫] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মহিলাদেরকে রাতের বেলা মসজিদে যেতে অনুমতি দাও। তখন তাঁর এক ছেলে (বিলাল) বলল, আল্লাহর শপদ! আমি তাদেরকে (রাতের বেলা মসজিদে যেতে) অনুমতি দিব না। এটাকে তারা বাহানা হিসেবে গ্রহণ করবে। আল্লাহর শপদ! আমি কখনো তাদেরকে অনুমতি দিব না। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে গালমন্দ করেন এবং ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন, আমি তোমাকে বলছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মহিলাদের অনুমতি দাও, আর তুমি কিনা বলছ, আমি তাদের অনুমতি দেব না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
নারীদের মসজিদে যাতায়াতে কঠোরতা
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মিনী ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আজকের মহিলাদের এরূপ অবস্থা দেখতেন (যেমন সুগন্ধি লাগানো, বেপর্দা চলা), তাহলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন। যেরূপ নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল বনী ইসরাইলের মহিলাদের। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়াহ বলেন, আমি আমরাহকে বললাম, বনী ইসরাইলের মহিলাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন হ্যাঁ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সলাত আদায়ের চেয়ে তার গৃহে সলাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সলাত আদায়ের চেয়ে তার গোপন কামরায় সলাত আদায় করা অধিক উত্তম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমরা যদি এ দরজাটি কেবল মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই, তবে ভালই হয়। নাফি (রহঃ) বলেন, অতঃপর ইবনু উমার (রাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত ঐ দরজা দিয়ে আর কখনো মসজিদে প্রবেশ করেননি। সহীহঃ এটি পুনরাবৃত্তি হয়েছে ৪৬২ নং এ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইসমাইল ইবনু ইবরাহীম আইয়ূব হতে, তিনি নাফি হতে উমার (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এটাই অধিক সহীহ।
সালাতের জন্য দৌড়ানো
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তোমরা সালাতের জন্য দৌড়ে আসবে না, বরং স্বাভাবিক গতিতে শান্তভাবে হেঁটে আসবে এবং (ইমামের সাথে) যতটুকু সলাত পাবে আদায় করে নেবে। আর যেটুকু ছুটে গেছে তা পূর্ণ করে নিবে। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যুবাইদী ইবনু আবূ যি’ব, ইবরাহীম ইবনু সা'দ, মা'মার, ও শু'আয়ব ইবনু হামযাহ প্রমুখ যুহরী সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ "সালাতের যেতুকু ছুটে যাবে তোমরা তা পূর্ণ করে নেবে"। যুহরী সূত্রে কেবল ইবনু উয়ায়নাহ বর্ণনা করেছেন যে, "তোমরা আদায় করে নেবে"। শায হাদীসটি আবূ হুরায়রা, ইবনু মাস'উদ ক্বাতাদাহ, আনাস (রাঃয়াল্লাহ আনহুম) প্রমুখ সহাবায়ি কিরামগন হতেও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেনঃ "তোমরা তা পূর্ণ করে নেবে।" আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সালাতের জন্য স্বাভাবিক গতিতে শান্তভাবে আসবে। অতঃপর (ইমামের সাথে) যেটুকু পাবে আদায় করবে, যেটুকু ছুটে গেছে তা পূর্ণ করে নিবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে ইবনু সীরীন কিছুটা শাব্দিক পার্থক্য সহকারে এরূপই বর্ণনা করেছেন।
একই মসজিদে দু'বার জামা'আত অনুষ্ঠান
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একাকী সলাত আদায় করতে দেখে বললেনঃ এ লোকটিকে সদাক্বাহ করার মত কি এমন কেউ নেই যে তার সাথে সলাত আদায় করবে।
ঘরে সলাত আদায়ের পর পুনরায় জামা'আতে আদায় করা
জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আসওয়াদ তার পিতার সূত্র তিনি যুবক বয়সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেন। সলাত শেষে দেখা গেল, দু'জন লোক সলাত আদায় না করে মসজিদের কোণে বসে আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন। তারা এরূপ অবস্থায় আসল যে, ভয়ে তাদের পাঁজরের গোশত কাঁপছিল। তিনি বললেনঃ আমাদের সাথে সলাত আদায় করতে কোন জিনিস তোমাদের বাধা দিল? তারা বলল, আমরা তো ঘরে সলাত আদায় করেছি। তিনি বললেনঃ তোমরা এরূপ করবে না। তোমাদের কেউ ঘরে সলাত আদায়ের পর ইমামকে সলাত আদায়রত পেলে সে যেন তার সাথে সলাত আদায় করে যা তাঁর জন্য নাফল হিসেবে গণ্য হবে। জাবির ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তার পিতা তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিনাতে ফাজরের সলাত আদায় করলাম ......... পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক। ইয়াযীদ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁকে সলাতরত পেয়ে তাঁদের সাথে সলাত আদায়ে শামিল না হয়ে বসে পড়লাম। সলাত শেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে ফিরে ইয়াযীদকে বসে থাকতে দেখে বললেনঃ তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করনি, হে ইয়াযীদ? ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে কেন তুমি লোকদের সাথে জামা‘আতে শামিল হওনি? ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, আমি ভেবেছিলাম আপনারা সলাত আদায় করে ফেলেছেন, তাই আমি বাড়িতে সলাত আদায় করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি মাসজিদে এসে লোকদের সলাতরত পেলে তাদের সাথে সলাতে শরীক হবে, যদিও তুমি তা আগে আদায় করে থাক। সেটা (জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত সলাত) তোমার জন্য নফল হিসেবে এবং এটা (ঘরে আদায়কৃত সলাত) ফরয হিসেবে গণ্য হবে। [৫৭৬] দুর্বলঃ মিশকাত ১১৫৫। বানু আসাদ ইবনু খুযাইমার জনৈক ব্যক্তি তিনি আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমাদের কেউ বাড়িতে সলাত আদায়ের পর মাসজিদে এসে সেখানে সলাতের জামা‘আত হতে দেখলে আমি তাদের সাথে সলাত আদায় করব কিনা এ ব্যাপারে আমার মনে একটা খটকা অনুভব করি। আবূ আইউব (রাঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেনঃ (জামা‘আতে শরীক হলে) তার জন্যও এর সাওয়াবের অংশ রয়েছে। [৫৭৭] দুর্বলঃ মিশকাত ১১৫৪।
কোন ব্যক্তি জামা‘আতে সলাত আদায়ের পর অন্যত্র আবার জামা‘আত পেলে শরীক হবে কি?
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার অর্থাৎ মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর মুক্ত দাস তিনি বলেন, আমি বালাত নামক স্থানে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে দেখা করতে এসে লোকদেরকে সলাত আদায়রত পাই। আমি বললাম, আপনি তাদের সাথে সলাত আদায় করছেন না কেন? তিনি বললেন, আমি ইতোপূর্বে সলাত আদায় করেছি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: তোমরা একদিনে কোন সলাত দু’বার আদায় করো না।
ইমামতি ও তার ফাযীলাত সম্পর্কে
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ সঠিক সময়ে লোকদের ইমামতি করলে সে নিজেও এবং মুক্তাদীরাও (এর পূর্ণ সাওয়াব) পাবে। আর কোন ইমাম যদি বিলম্বে সলাত আদায় করে, তাহলে সে গুনাহগার হবে, মুক্তাদীরা নয়। হাসান সহীহ।
ইমামতি করতে আপত্তি করা বাঞ্ছনীয় নয়
খারাশাহ ইবনুল হুর আল-ফাযারীর বোন সালামাহ বিনতুল হুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: ক্বিয়ামাতের একটি নিদর্শন এটাও যে, মাসজিদের বাসিন্দারা ইমামতির জন্য একে অপরের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করবে। পরিচ্ছিত এমন হবে যে, তাদের সলাত আদায় করাবার মত কোন (যোগ্য) ইমাম তারা পাবে না। [৫৮০] দুর্বলঃ মিশকাত ১১২৪।
ইমামতির অধিক যোগ্য কে?
আবূ মাসউদ আল-বাদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও কিরাআতে অধিক পারদর্শী ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করবে। ক্বিরাআতের দিক থেকে সকলে সমান হলে ইমামতি করবে ঐ ব্যক্তি, যে সবার আগে হিজরাত করেছে। হিজরাতের দিক থেকে সবাই সমান হলে বয়োজ্যেষ্ঠ্য ব্যক্তি ইমামতি করবে। কেউ যেন অনুমতি ছাড়া কারো বাড়িতে, কারো প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামতি না করে এবং অনুমতি ছাড়া কারো সংরক্ষিত আসনে না বসে। সহীহঃ মুসলিম। শু‘বাহ বলেন, আমি ইসমাঈলকে বললাম, ‘সংরক্ষিত আসন’ অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘তার বিছানা’। শু‘বাহ (রহঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ কেউ কারোর প্রভাবাধীন এলাকায় (অনুমতি ছাড়া) ইমামতি করবে না। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলৈন, ইয়াহ্ইয়াহ আল-কাত্তান শু‘বাহ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন যে, সর্বাধিক অভিজ্ঞ ক্বারীই ইমামতির যোগ্য। আবূ মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ কিরাআতে সবাই সমান হলে হাদীস সম্পর্কে বেশি অভিজ্ঞ লোক ইমামতি করবে। হাদীস সম্পর্কেও সকলে সমান হলে সর্বাগ্রে হিজরাতকারী (ইমামতি করবে)। আর এই বর্ণনাতে ‘সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্বারী’ কথাটি উল্লেখ নেই। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাজ্জাজ ইবনু আরত্বাত (রহঃ) ইসমাইলের সূত্রে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে যেন অনুমতি ছাড়া কারো নির্দিষ্ট আসনে না বসে। সহীহ। ‘আমর ইবনু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এমন জায়গায় সমবেত ছিলাম যে, লোকেরা আমাদের পাশ দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাতায়াত করত এবং প্রত্যাবর্তনের সময় তারা আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বর্ণনা করত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ এরূপ বলেছেন। তখন আমি বালক ছিলাম, যা শুনতাম তাই মুখস্থ করে ফেলতাম। শুনে শুনে আমি কুরআনের কিছু অংশও মুখস্থ করে ফেলি। একবার আমার পিতা কিছু সংখ্যক লোকসহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। তিনি তাদেরকে সলাতের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিলেন। তিনি আরো বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ইমামতি করবে। আর আমিই ছিলাম কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ এবং সকলের চেয়ে আমারই কুরআন বেশী মুখস্থ ছিল। সেহেতু তারা আমাকে ইমাম নিযুক্ত করল। আমি তাদের ইমমতি করতাম। এ সময় আমার গায়ে ছোট একটি গেরুয়া রংয়ের চাদর ছিল। আমি যখন সাজদাহ্য় যেতাম তখন আমার লজ্জাস্থান অনাবৃত হয়ে যেত। এক মহিলা বলল, তোমাদের ক্বারীর লজ্জাস্থান ঢাকার ব্যবস্থা কর। তারা আমার জন্য একটি ওমানী চাদর খরিদ করল। এতে আমি এতই আনন্দিত হই যে, ইসলাম গ্রহণের পর আর কিছুতে আমি এতটা আনন্দিত হইনি। আমার বয়স যখন মাত্র সাত কি আট বছর তখন থেকেই আমি তাদের ইমামতি করতাম। সহীহঃ অনুরূপ বুখারী। ‘আমর ইবনু সালামাহ্ (রাঃ) ‘আমর ইবনু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে একই হাদীসে বর্ণিত আছে, আমি একটি তালিযুক্ত চাদর গায়ে দিয়ে তাদের ইমামতি করতাম। চাদরটি ছেঁড়া থাকায় সিজদায় গমনকালে আমার নিতম্ব উন্মুক্ত হয়ে যেত। সহীহ। ‘আমর ইবনু সালামাহ হতে তার পিতার তারা একটি প্রতিনিধি দল হিসেবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যান এবং ফিরে আসার সময় জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের (সলাতে) ইমামতি করবে কে? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরআন বেশি জানে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমিই ছিলাম আমার ক্বওমের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। সেজন্য তারা আমাকে (ইমামতির জন্য) সম্মুখে এগিয়ে দিল। কিন্তু আমি অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক ছিলাম। আমার পরনে ছোট একটি চাদর থাকত। জারাম গোত্রের যে কোন মাজলিসে উপস্থিত হলে আমিই তাদের ইমামতি করতাম এবং আজকের এদিন পর্যন্ত তাদের জানাযার সলাতও আমি পড়াতাম। সহীহঃ কিন্তু তার (আরবী) কথাটি অংসরক্ষিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইয়াযীদ ইবনু হারূন সূত্রে ‘আমর ইবনু সালামাহ্র বর্ণনায় সানাদে ‘আন আবীহি’ উল্লেখ নেই। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনাহতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমনের পূর্বেই মুহাজিরদের প্রথম দলটি মদিনায় ‘আল-উসবাহ্’ নামক স্থানে অবতরণ করলে আবূ হুযাইফাহ্ (রাঃ)-এর মুক্ত দাস সালিম (রাঃ) তাদের ইমামতি করেন। তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে কুরআনকে সর্বাধিক হিফ্যকারী। সহীহঃ বুখারী। হায়সাম বলেন, তাদের মধ্যে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব ও আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুল আসাদ (রাঃ)-ও ছিলেন। সহীহঃ অনুরূপ বুখারী। মালিক ইবনুল হুয়াইরিস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তকে অথবা তার সাথীকে বললেনঃ সলাতের সময় হলে তোমরা আযান ও ইক্বামাত দিবে। তারপর তোমাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমামতি করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মাসলামাহর হাদীসে রয়েছেঃ ঐ সময় আমরা ‘ইলমের দিক থেকে প্রায় সমান ছিলাম। এটি মুদরাজ। ইসমাঈলের হাদীসে রয়েছেঃ খালিদ বলেন, আমি আবূ ক্বিলাবাহ্কে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত হওয়ার কথা বলা হলো না কেন? তিনি বললেন, তারা উভয়েই এ দিক থেকে প্রায় সম মানের ছিলেন। এটি মুরসাল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক যেন তোমাদের আযান দেয় এবং কিরাআতে অধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমামতি করে। [৫৮৯] দুর্বলঃ মিশকাত ১১১৯।
মহিলাদের ইমামতি করা প্রসঙ্গে
উম্মু ওয়ারক্বাহ বিনতু নাওফাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বদরের যুদ্ধে গেলেন তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমি পীড়িত-আহতদের সেবা করব। হয়তো মহান আল্লাহ আমাকেও শাহাদাতের মর্যাদা দিবেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান কর। মহান আল্লাহ তোমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, ঐদিন থেকে উক্ত মহিলার নাম হয়ে গেল শাহীদাহ্। তিনি কুরআন মাজীদ ভাল পড়তেন। সেজন্য তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তার ঘরে একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগের অনুমতি দিলেন। তিনি একটি দাস ও একটি বোবা দাসীকে তার মৃত্যুর পর আযাদ করে দেয়ার চুক্তি করেছিলেন। তারা (দাস ও দাসী) দু’জন রাতে উঠে তার নিকট গিয়ে তাঁর চাদর দিয়ে তাকে চেপে ধরে হত্যা করে উভয়ে পালিয়ে যায়। প্রত্যুষে এটা ‘উমার (রাঃ) জানতে পেরে লোকদের জানিয়ে দিলেন, এ দু’টি গোলাম-বাঁদী সম্পর্কে কারো জানা থাকলে বা তাদেরকে কেউ দেখে থাকলে, তাদের যেন (ধরে) নিয়ে আসে। (তারা গ্রেফতার হলে) তাদেরকে নির্দেশ মোতাবেক শূলে চড়ানো হয়। মাদীনাহ্তে তাদের দু’জনকেই সর্বপ্রথম শূলে চড়ানো হয়। উম্মু ওয়ারক্বাহ বিনতু ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রথম বর্ণনাটিই পূর্ণাঙ্গ। তাতে রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তার বাড়িতে যেতেন। তিনি তার জন্য একজন মুয়াজ্জিনও নিযুক্ত করেন, যে তার জন্য (তার ঘরে) আযান দিত। তিনি তাকে (উম্মু ওয়ারাক্বাহকে) তার ঘরে মহিলাদের ইমামতি করার নির্দেশ দেন। ‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, আমি তার নিযুক্ত বয়োবৃদ্ধ মুয়াজ্জিনকে দেখেছি।
মুক্তাদীদের অপছন্দনীয় লোকের ইমামতি করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ তিন ব্যক্তির সলাত আল্লাহর ক্ববূল করেন না। (এক) যে ব্যক্তি নিজে আগে বেড়ে ইমামতি করে অথচ লোকেরা তাকে অপছন্দ করে। (দুই) যে ব্যক্তি ‘দিবারে’ সলাত আদায়ে অভ্যস্ত। ‘দিবার’ হচ্ছে ওয়াক্ত শেষ হবার মুহূর্তে সলাত আদায় করা। (তিন) যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন লোককে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। [৫৯২] দুর্বলঃ তবে প্রথম অংশটি সহীহ, মিশকাত ১১২৩।
সৎ ও অসৎ লোকের ইমামতি
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলমানের ইমামতিতে ফরয সলাত আদায় করা ওয়াজিব, সে নেককার হোক বা বদকার হোক, এমনকি কবীরাহ গুনাহের কাজে জড়িত থাকলেও। [৫৯৩]
অন্ধ লোকের ইমামতি করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাবূক যুদ্ধে গমনকালে) ইবনু উম্মু মাকতূমকে (মাদীনাহ্র) শাসক নিয়োগ করেছিলেন। তিনি লোকদের ইমামতি করতেন, অথচ তিনি অন্ধ ছিলেন।
সাক্ষাৎকারীর ইমামতি করা
বুদাইল হতে আবূ ‘আত্বিয়্যাহ তিনি বলেন, মালিক ইবনুল হুয়াইরিস (রাঃ) আমাদের এই সলাতের স্থানে (মাসজিদে) আসলেন। অতঃপর সলাতের ইক্বামাত হলে আমরা তাকে সামনে গিয়ে সলাত আদায় করাতে বললাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজেদের মধ্য হতে একজনকে ইমামতি করতে বল। আমি তোমাদের ইমামতি না করার কারণ সম্পর্কে তোমাদের একটি হাদীস শোনাব। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন ক্বওমের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে সে যেন তাদের ইমামতি না করে। বরং তাদের মধ্য হতেই যেন কেউ ইমামতি করে।
মুক্তাদীদের চেয়ে উঁচু স্থানে ইমামের দাঁড়ানো
হাম্মাম হুযাইফাহ (রাঃ) মাদায়িন নামক স্থানে একটি দোকানের উপর দাঁড়িয়ে লোকদের ইমামতি করলেন। এ সময় আবূ মাসউদ (রাঃ) তার জামা ধরে তাকে টান দিলেন। তিনি সলাত শেষে বললেন, আপনার কি জানা নেই যে, লোকদেরকে এরূপ (উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি) করা হতে নিষেধ করা হত? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আপনি যখন আমাকে টান দেন তখনই আমার তা স্মরণ হয়। ‘আদী ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাঃ) আমার কাছে এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করেছেন যিনি মাদায়েনে ‘আম্মার ইবনু ইয়াসীর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে ‘আম্মার (রাঃ) সামনে গেলেন এবং ইমামতি করার জন্য একটি দোকানের উপর দাঁড়ালেন। তখন লোকেরা তার থেকে নিঁচু স্থানে ছিল। হুযাইফাহ (রাঃ) সামনে এগিয়ে গিয়ে ‘আম্মারের দু’ হাত চেপে ধরলে ‘আম্মার (রাঃ) তার অনুসরণ করেন এবং হুযাইফাহ (রাঃ) তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। ‘আম্মার সলাত শেষ করলে হুযাইফাহ (রাঃ) বললেন, তুমি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শোননি, কেউ কোন ক্বওমের ইমামতি করলে সে যেন তাদের চেয়ে উঁচু স্থানে না দাঁড়ায়? অথবা অনুরূপই বলেছেন। ‘আম্মার (রাঃ) বললেন, তাই তো আপনি আমার হাত ধরা মাত্রই আমি পেছনে সরে আসলাম। [৫৯৭] হাসান পূর্বেরটির কারণে।
কোন ব্যক্তি একবার জামা’আতে সলাত আদায়ের পর আবার ঐ সলাতে ইমামতি করা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায়ের পর পুনরায় নিজ ক্বওমের নিকট গিয়ে ঐ সলাতেই তাদের ইমামতি করতেন। ‘আমর ইবনু দীনার তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায়ের পর সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি পুনরায় নিজ ক্বওমের ইমামতি করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম
বসা অবস্থায় ইমামতি করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ায় সওয়ার হন এবং ঘোড়ার পিঠ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে তিনি ডান পাঁজরে ব্যাথা পান। ফলে তিনি কোন এক ওয়াক্তের সলাত বসে আদায় করেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সলাত আদায় করলাম। সলাত শেষে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন তার অনুসরণ করা হয়। ইমাম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলে তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। ইমাম রুকু’ করলে তখন তোমরা ও রুকু’ করবে। ইমাম মাথা উঠালে তোমরাও তখন মাথা উঠাবে। আর ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললে তোমরা বলবে, “রব্বানা লাকাল হামদ”। আর ইমাম বসে সলাত আদায় করলে তোমরা সকলেই বসে সলাত আদায় করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় একটি ঘোড়ায় সওয়ার হলে সেটি তাকে একটি খেজুর গাছের গোড়ার উপর ফেলে দেয়। এতে তিনি পায়ে আঘাত পান। আমরা তাঁর সাথে দেখা করতে এসে ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর ঘরে তাকে বসে সলাত আদায়রত পাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমরাও তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে যাই। কিন্তু তখন তিনি চুপ থাকলেন। আমরা পুনরায় তাঁর সাথে দেখা করতে এসে দেখি, তিনি বসা অবস্থায় ফারয সলাত আদায় করছেন। আমরাও তাঁর পেছনে (সলাত আদায়ে) দাঁড়ালাম। তিনি আমাদের প্রতি ইশারা করলে আমরা বসে পড়লাম। অতঃপর সলাত শেষে তিনি বললেনঃ ইমাম বসে সলাত আদায় করলে তোমরাও বসা অবস্থায় সলাত আদায় করবে। আর ইমাম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলে, তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। পারস্যবাসীরা তাদের নেতাদের সামনে যেরূপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তোমরা ঐরূপ করো না। সহীহঃ মুসলিম আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন তার অনুসরন করা হয়। কাজেই ইমাম তাকবীর বললে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম তাকবীর না বলা পর্যন্ত তোমরা তাকবীর বলবে না। ইমাম রুকু’ করলে তোমরাও রুকু’ করবে। ইমাম রুকু’ না করা পর্যন্ত তোমরা রুকু’ করবেনা। ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললে তোমরা বলবে, “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ”। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ “ওয়া লাকাল হামদ”। ইমাম সাজদাহ করলে তোমরাও সাজদাহ করবে। ইমাম সাজদাহ না করা পর্যন্ত তোমরা সাজদাহ করবে না। ইমাম দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে। আর বসে আদায় করলে তোমরাও বসে আদায় করবে। সহীহ ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন আমার সহকর্মীরা আমাকে সুলাইমানের সূত্রে “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ” – এর বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন অন্যেরা তার অনুসরন করে। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে আরো রয়েছেঃ ইমাম যখন ক্বিরআত পাঠ করবে তখন তোমরা চুপ থাকবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, “ইমাম যখন ক্বিরআত পাঠ করবে তখন তোমরা চুপ থাকবে।”- এ অতিরিক্ত অংশটুকু সুরক্ষিত (মাহফূয) নয়- এটা আবূ খালিদের ধারণা মাত্র। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে বসা অবস্থায় সলাত আদায়কালে লোকেরা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিল। তিনি তাদেরকে বসার জন্য ইশারা করলেন। অতঃপর সলাত শেষে বললেন, ইমাম তো এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন অন্যেরা তার অনুসরন করে। কাজেই ইমাম রুকু’ করলে তোমরাও রুকু’ করবে। ইমাম মাথা ঊঠালে তোমরাও মাথা উঠাবে। আর ইমাম বসে সলাত আদায় করলে তোমরাও বসে সলাত আদায় করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগাক্রান্ত অবস্থায় বসে সলাত আদায়কালে আমরাও তাঁর পেছনে সলাত আদায় করি। সে সময় আবূ বাকর (রাঃ) লোকদের শোনাবার জন্য উচ্চস্বরে তাঁর তাকবীর বলছিলেন। অতঃপর (পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ) হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহঃ মুসলিম। উসায়িদ ইবনু হুদায়ির (রাঃ) তিনি লোকদের ইমামতি করতেন। একদা তিনি অসুস্থ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে আসেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের ইমাম তো অসুস্থ। তিনি বললেনঃ ইমাম বসে সলাত আদায় করলে, তোমরাও বসে আদায় করবে। সহীহ ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুত্তাসিল নয়।
দু ব্যক্তির একজন তার সঙ্গীর ইমামতি করলে তারা কিরূপে দাঁড়াবে?
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হারাম (রাঃ) এর নিকট আসলেন। তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে ঘি ও খেজুর পেশ করলেন। তিনি বললেন, খেজুরের পাত্রে খেজুর আর ঘিয়ের মশকে ঘি রেখে দাও। কেননা আমি সওমরত আছি। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে আমাদেরকে নিয়ে দু’রাকা’আত নাফল সলাত আদায় করলেন। তখন উম্মু সুলাইম ও উম্মু হারাম (রাঃ) আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। বর্ণনাকারী সাবিত বলেন, আমার এটাই মনে পড়ছে যে, আনাস (রাঃ) বলেছেন, তিনি আমাকে তাঁর ডান দিকে একই বিছানায় দাঁড় করালেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন তাঁর ও তাদের মধ্যকার একজন মহিলার ইমামতি করলেন। তিনি তাকে তাঁর ডান পাশে এবং ঐ মহিলাকে পেছনে দাঁড় করালেন। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহ (রাঃ) এর ঘরে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা উঠে মশকের মুখ খুলে উযু করলেন। তারপর সেটির মুখ বন্ধ করে সলাতে দাঁড়ালেন। আমিও তখন উঠে তাঁর অনুরূপ উযু করে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার ডান পাশ (বা ডান হাত) ধরে তাঁর পেছন দিক দিয়ে আমাকে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। এ সময় আমিও তার সাথে সলাত আদায় করলাম। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথা অথবা মাথার চুল ধরে তাঁর ডান পাশে এনে আমাকে দাঁড় করেন।
তিনজন মুক্তাদী হলে তারা কিভাবে দাঁড়াবে?
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁর নানী মুলায়কাহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য তৈরি করা খাদ্য খাওয়ার জন্য তাকে দা’ওয়াত করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহার করার পর বললেনঃ তোমরা দাঁড়াও। আমি তোমাদের নিয়ে সলাত আদায় করব। আনাস বলেন, আমি উঠলাম এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারে কালো হয়ে যাওয়া আমাদের মাদুরটির উপর পানি ঢেলে তা পরিষ্কার করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটির উপর দাঁড়ালেন। আমি ও ইয়াতীম (ছোট ভাই) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর বৃদ্ধা নানী আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। তিনি আমাদের নিয়ে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে চলে গেলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম ‘আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে তার পিতার তিনি বলেন, ‘আলক্বামাহ ও আল-আসওয়াদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ তার দরজায় বসে থাকার পর জনৈক দাসী বের হয়ে আসল। অতঃপর সে (পুনরায় ঘরে ঢুকে ‘আবদুল্লাহর নিকট) তাদের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাদের প্রবেশের অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি ‘আলক্বামাহ এবং আল-আসওয়াদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি এরূপই করতে দেখেছি। সহীহঃ মুসলিমে এর কেবল মারফু বর্ণনাটি।
সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ইমামের ঘুরে বসা
জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ থেকে তার পিতার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে সলাত আদায় করেছি। তিনি সলাত শেষে (আমাদের দিকে) ফিরে বসতেন। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সলাত আদায়কালে তাঁর ডান দিকে থাকতে পছন্দ করতাম। যাতে (সলাত শেষে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে বসেন। সহীহঃ মুসলিম।
ইমামের নিজ জায়গাতে নাফল সলাত আদায় করা
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম ফারয সলাত আদায়ের স্থান হতে সরে অন্যত্র সলাত আদায় করবে না। [৬১৬] সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আত্বা আল-খুরাসানী (রাঃ) মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রহঃ) এর সাক্ষাত পাননি।
সলাতে শেষ রাক‘আতে সাজদাহর পর ইমামের উযু ছুটে গেলে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের শেষ পর্যায়ে (শেষ বৈঠকে) বসে কোনরূপ কথা বলার (সালাম ফিরানোর) পূর্বেই যদি ইমামের উযু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ইমামের সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার পেছনে সলাত আদায়কারীদেরও সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। [৬১৭] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্বাহারাত (পবিত্রতা) হচ্ছে সলাতের চাবি, তাকবীর হচ্ছে সলাতের তাহরীম, আর হারাম হচ্ছে সলাতের তাহলীল। হাসান সহীহঃ এটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে ৬১ নং এ।
মুক্তাদীকে ইমামের অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পূর্বে তোমরা রুকু‘ ও সাজদাহ্ করবে না। আমি যখন তোমাদের পূর্বে রুকু‘তে যাব এবং তোমাদের পূর্বে (রুকু‘ হতে) মাথা তুলব, তখন তোমরা আমার অনুসরণ করবে। কেননা আমি তো এখন কিছুটা ভারী (স্থুল) হয়ে গিয়েছি। আবূ ইসহাক্ব তিনি বলেন, একদা আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)-কে খুতবাহ দানকালে বলতে শুনলাম, আমাদের নিকট অতীব সত্যবাদী আল-বারাআ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে রুকু‘ থেকে মাথা তুলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সাজদাহ্ করতে দেখলে তাঁরাও সাজদাহয় যেতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যতক্ষণ না রুকু‘তে দেখতাম পেতাম, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ রুকু‘তে যেতে পিঠ ঝুঁকাতো না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মুহারিব ইবনু দিসার তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনলাম, তিনি বলেছেন, আমাদের নিকট আল-বারাআ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকু‘ করতেন, তখন তারাও রুকু‘ করতেন। তিনি যখন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন, তখন তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন (সাজদায়) জমিনে কপাল রাখতেন, তখন তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুসরণ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় বা নামায় তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারী
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কি ভয় হয় না, ইমাম সাজদাহতে থাকাবস্থায় কেউ মাথা উঠালে আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথা অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে রূপান্তরিত করে দিতে পারেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম
ইমামের পূর্বে চলে যাওয়া
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সলাত আদায়ে উৎসাহিত করেছেন এবং সলাতের পর তাঁর চলে যাওয়ার পূর্বে তাদের চলে যেতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ মুসলিমের উৎসাহিত করণের কথাটি বাদে।
সলাত বৈধ হওয়ার জন্য যতটুকু কাপড় জরুরী
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এক কাপড়ে সলাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে কাপড় আছে? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে সলাত আদায় না করে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় করলে সে যেন কাপড়ের ডান পাশকে বাম কাঁধের উপর এবং বাম পাশকে ডান কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখে। সহীহঃ মুসলিম। ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একটি কাপড়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি কাপড়টি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উভয় কাঁধের উপর বিপরীতমুখী করে ঝুলিয়ে রাখতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ক্বায়িস ইবনু ত্বালক হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর নাবী! একটি কাপড়ে সলাত আদায়ের ব্যাপারে আপনার মতামত কী? বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইযারের উপর চাদর ছেড়ে দিয়ে উভয়টিকে একত্র করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষে তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের দু’টি করে কাপড় আছে কি?
যে ব্যক্তি তার ঘাড়ের পেছনে কাপড় বেঁধে সলাত আদায় করে
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে লোকদেরকে সংকীর্ণ ইযারের কারণে তা বালকদের ন্যায় ঘাড়ে বেঁধে সলাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় একজন বলল, হে সমবেত নারী সমাজ! পুরুষরা মাথা না তোলা পর্যন্ত তোমরা মাথা তুল না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম
কোন সলাত আদায়কারীর কাপড়ের অংশ বিশেষ অন্যের গায়ে থাকা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাপড়ে সলাত আদায় করলেন। সেটির কিছু অংশ আমার গায়ে ছিল। সহীহঃ মুসলিম। এটি গত হয়েছে।
যে ব্যক্তি একটি জামা পরিধান করে সলাত আদায় করে
সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি শিকার করে থাকি। আমি কি একটি জামা পরে সলাত আদায় করতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তবে একটি কাঁটা হলেও তা বেধেঁ নাও (যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়)। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রহমান আবূ বাকর হতে তার পিতার তিনি বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) গায়ে কোন চাদর না জড়িয়েই একটি মাত্র জামা পরে আমাদের ইমামতি করলেন। অতঃপর সলাত শেষে তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একটি জামা পরে সলাত আদায় করতে দেখেছি। [৬৩৩]
কাপড় সংকীর্ণ হলে তা লুঙ্গি হিসাবে পরিধান করবে
‘উবাদাহ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে একটি যুদ্ধে যাই। তিনি সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। তখন আমার গায়ে একটি চাদর ছিল। আমি সেটির দু’ প্রান্ত দু’ কাঁধের উপর রাখার চেষ্টা করছিলাম। (চাদরটি ছোট হওয়ায়) সেটি দিয়ে আমার শরীর (বা কাঁধ) ঢাকা যাচ্ছিল না। অবশ্য চাদরটিতে আঁচল লাগানো ছিল। আমি তা উল্টে নিয়ে দু’ বিপরীত দিকে দু’ কাঁধের উপর তার দু’ মাথা ফেলে দিলাম। তারপর আমি কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে তা চিবুক দিয়ে চেপে ধরলাম, যেন পড়ে না যায়। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। পরে ইবনু শাখরা এসে তাঁর পাশে দাঁড়ালো। তিনি তাঁর দু’হাতে আমাদের উভয় হাত ধরে তাঁর পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার প্রতি লক্ষ্য করছিলেন। অথচ আমি বুঝতেই পারিনি, অবশ্য পরে বুঝেছি। তিনি ইশারায় আমাকে বললেনঃ ওটাকে ‘তহবন্দ’ বানিয়ে নাও। সলাত আদায় শেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে জাবির! আমি বললামঃ আমি উপস্থিত, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, চাদর প্রশস্ত হলে সেটির দু’ মাথা বিপরীতভাবে দু’ কাঁধের উপর দিবে। পক্ষান্তরে চাদর ছোট হলে সেটি কোমরে বেঁধে নিবে। সহীহঃ মুসলিম, বুখারী সংক্ষেপে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন অথবা ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের নিকট কারো দু’টি কাপড় থাকলে সে যেন ঐগুলো পরেই সলাত আদায় করে। আর একটি মাত্র কাপড় থাকলে সে যেন তা কোমরে বেঁধে নেয় এবং ইয়াহূদীদের ন্যায় দু’ কাঁধে ঝুলিয়ে না রাখে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়দাহ (রাঃ) থেকে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন একটি মাত্র চাদরে সলাত আদায় করতে, যা দেহ আবৃত করে না। তিনি আরো নিষেধ করেছেন, গায়ে চাদর না জড়িয়ে কেবল পাজামা পরে সলাত আদায় করতে।
সলাতের মধ্যে কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া
ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ সলাতের মধ্যে স্বীয় বস্ত্র (পাজামা/লুঙ্গি/প্যান্ট ইত্যাদি পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে রাখে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হালাল করবেন না এবং জাহান্নামও হারাম করবেন না। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, একদল বর্ণনাকারী (যেমন হাম্মাদ ইবনু সালামাহ, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ, আবূল আহওয়াস, আবূ মু‘আবিয়াহ প্রমুখ) ‘আসিম সূত্রে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বক্তব্যরূপে মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি স্বীয় লুঙ্গি (পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যাও, উযু করে আস। সে উযু করে এলে তিনি আবার বললেনঃ যাও, উযু করে আস। সে পুনরায় উযু করে আসল। একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তাকে (উযু থাকাবস্থায় পুনরায়) উযু করতে কেন বললেন? তিনি বললেন, সে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। মহান আল্লাহ (পায়ের গিরার নিচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায়কারীর সলাত ক্ববুল করেন না। [৬৩৮]
মহিলারা কয়টি কাপড় পরে সলাত আদায় করবে
মুহাম্মাদ ইবনু যায়িদ ইবনু কুনফুয হতে তার মাতার সূত্র তার মাতা উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মহিলারা কয়টি কাপড় পরে সলাত আদায় করবে? তিনি বললেন, একটি ওড়না এবং একটি জামা পরেই সলাত আদায় করতে পারবে। তবে জামাটি এরূপ লম্বা হবে যা দিয়ে পায়ের উপরিভাগ ঢেকে যাবে। [৬৩৯] মুহাম্মাদ ইবনু যায়িদ উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলেন, মহিলারা ইযার ছাড়া কেবল একটি জামা ও একটি ওড়না পরে সলাত আদায় করতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ জামাটি যদি এরূপ লম্বা হয়, যা দিয়ে পায়ের পাতা ঢেকে যায় (তাহলে সেটা পরে সলাত আদায় করতে পারবে)। দুর্বল : মিশকাত ৭৬৩ ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি মালিক ইবনু আনাস, বাক্র ইবনু মুদার, হাফ্স ইবনু গিয়াস, ইসমাঈল ইবনু জা‘ফর, ইবনু আবূ যি’ব ও আবূ ইসহাক্ব- মুহাম্মদ ইবনু যায়িদ হতে তার মাতা থেকে উম্মু সালামাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাদের কেউই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নাম উল্লেখ করেননি। [৬৪০]
ওড়না ছাড়া মহিলাদের সলাত আদায় করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা ওড়না ছাড়া সলাত আদায় করলে আল্লাহ তার সলাত ক্ববূল করেন না। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) ত্বালহার মা সাফিয়্যাহ্র নিকট যান। সেখানে তিনি সাফিয়্যাহ্র মেয়েদের দেখতে পেয়ে বললেনঃ একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করেন। তখন আমার ঘরে একটি বালিকা ছিল। তিনি আমাকে তার একখানা লুঙ্গি দিয়ে বললেনঃ এটিকে দু’ টুকরা করে এক টুকরা এই বালিকাকে এবং আরেক টুকরা উম্মু সালামাহ্র নিকট যে বালিকা রয়েছে তাকে দাও। কারণ আমি তাকে অথবা তাদের উভয়কে প্রাপ্তবয়স্কা মনে করি। দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে হিশাম এরূপই বর্ণনা করেছেন। [৬৪২]
সলাতরত অবস্থায় কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় কাপড় উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে ও মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন। হাসান। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘ইস্ল ‘আত্বা (রহঃ) হতে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় কাপড় ঝুলিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন। সহীহ। ইবনু জুরায়িজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আত্বা (রহঃ)-কে অধিকাংশ সময় কাপড় ঝুলিয়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আত্বা (রহঃ)-এর এরূপ আচরণ আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর হাদীসকে দুর্বল করে দেয়। [644]
মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্রের (অংশ বিশেষের) উপর সলাত আদায়
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পরিধেয় কাপড় বা লেপের উপর সলাত আদায় করতেন না। সহীহঃ এটি পূর্বেই উক্ত হয়েছে ৩৬৭
চুলের ঝুটি বেঁধে পুরুষের সলাত আদায় করা
সাঈদ ইবনু আবূ সাঈদ আল-মাক্ববূরী থেকে তার পিতার তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুক্ত দাস আবূ রাফি‘কে হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে যেতে দেখলেন। তখন তিনি (হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)) গর্দানের পেছনে চুলের ঝুটি বেঁধে সলাত আদায় করছিলেন। আবূ রাফি‘ (রাঃ) বাঁধন খুলে দিলে হাসান (রাঃ) তার প্রতি রাগের দৃষ্টিতে তাকালেন। আবূ রাফি‘ বলেন, আগে সলাত আদায় শেষ করুন, রাগ করবেন না। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : এটা (চুলের ঝুটি) হচ্ছে শাইত্বানের ঘাঁটিবিশেষ, অর্থাৎ শাইত্বানের আড্ডাখানা। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিসকে মাথার চুল পেছন দিক থেকে বাঁধা অবস্থায় সলাত আদায় করতে দেখলেন। ফলে তিনি তার পেছনে দাঁড়িয়ে তা খুলতে লাগলে তিনি চুপ করে থাকলেন। সলাত শেষে তিনি ইবনু ‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি আমার মাথা স্পর্শ করলেন কেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ এভাবে পেছনে চুলের ঝুটি বেঁধে সলাত আদায়কারীর উপমা হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে তার হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় সলাত আদায় করে। সহীহঃ মুসলিম।
জুতা পরে সলাত আদায়
‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি মাক্কাহ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জুতাজোড়া তাঁর বাম পাশে রেখে সলাত আদায় করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন আমাদের ফাজ্রের সলাত আদায় করালেন। সলাতে তিনি সূরাহ আল-মু’মিনূন হতে তিলাওয়াত শুরু করলেন। তিনি যখন মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) অথবা মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর কাহিনী পর্যন্ত পৌছলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাশি আরম্ভ হয়। তিনি ক্বিরাআত ছেড়ে দিয়ে রুকু‘ করলেন। সে সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সহীহঃ মুসলিম, বুখারী মু‘আল্লাক্বভাবে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদের নিয়ে সলাত আদায়কালে তাঁর জুতাজোড়া খুলে তাঁর বাম পাশে রেখে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে লোকেরাও তাদের জুতা খুলে রাখল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে বললেনঃ তোমরা তোমাদের জুতা খুললে কেন? তারা বলল, আপনাকে আপনার জুতাজোড়া খুলে রাখতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে আমাকে জানালেন, আপনার জুতাজোড়ায় অপবিত্র বস্তু লেগে আছে। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন তার জুতাজোড়া দেখে নেয়। তাতে অপবিত্র বস্তু দেখতে পেলে যেন জমিনে তা ঘষে নিয়ে পরিধান করে সলাত আদায় করে। বাকর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত আছে। তাতে (‘কাযার’ শব্দের পরিবর্তে) দু’ জায়গাতে ‘খুবসুন’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ই‘য়ালা ইবনু শাদ্দাদ ইবনু আওস থেকে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত কর। তারা জুতা ও মোজা পরে সলাত আদায় করে না। ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কখনো খালি পায়ে আবার কখনো জুতা পরে সলাত আদায় করতে দেখেছি।
মুসল্লি তার জুতা খুলে কোথায় রাখবে?
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সলাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সলাত আদায়কালে জুতা খুলে যেন এমন জায়গায় না রাখে যাতে অন্যের কষ্ট হয়। বরং জুতাজোড়া যেন দু’ পায়ের মাঝখানে রেখে দেয় অথবা তা পরেই সলাত আদায় করে।
ছোট চাটাইয়ের উপর সলাত আদায় করা
মায়মূনাহ বিনতুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতেন, তখন আমি হায়িয অবস্থায় তাঁর পাশে অবস্থান করতাম। তাঁর সাজদাহ্কালে কখনো তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেত। তিনি (খেজুর পাতার ছোট) চাটাইয়ের উপরও সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
চাটাইয়ের উপর সলাত আদায় করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক আনসারী বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি স্থুলদেহী। সেজন্য আপনার সাথে (জামা’আতে) সলাত আদায়ে আমি সক্ষম নই। একদা ঐ লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য খানা তৈয়ার করে তাকে তার বাড়িতে যেতে আহবান করল এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! এখানে সলাত আদায় করুন। যেন আমি জেনে নিতে পারি, আপনি কিভাবে সলাত আদায় করেন। অতঃপর আমি সেভাবেই আপনার অনুসরণ করব। অতঃপর লোকেরা তাঁর জন্য একটি বড় চাটাইয়ের একাংশ ধৌত করার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে দাঁড়িয়ে দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন। ইবনুল জারূদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি চাশ্তের সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, আমি তাকে ঐদিন ছাড়া আর কোনদিন ঐ (সময়) সলাত আদায় করতে দেখিনি। সহীহঃ বুখারীতে (.........) তার কথাটি বাদে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঝেমধ্যে উম্মু সুলাইম (রাঃ)-কে দেখতে যেতেন। সেখানে কখনো সলাতের সময় হয়ে গেলে তিনি আমাদের (খেজুর পাতার তৈরী) মাদুরের উপর সলাত আদায় করে নিতেন। উম্মু সুলাইম (রাঃ) সেটিকে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খেজুর পাতার তৈরী) চাটাই ও প্রক্রিয়াজাত চামড়ার উপর সলাত আদায় করতেন। [৬৫৯]
কোন ব্যক্তি তার (পরিহিত) কাপড়ে সাজদাহ্ করলে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা প্রচন্ড গরমকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতাম। তখন আমাদের কেউ গরমের কারণে জমিনে সাজদাহ্ করতে না পারলে পরিধেয় বস্ত্রের উপর সাজদাহ্ করত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম
কাতার সোজা করা
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্ তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বললেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়। সহীহঃ মুসলিম। আবূল ক্বাসিম আল-জাদালী তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমুহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম, কাতারসমূহ সোজা করার নির্দেশ বাক্য যোগে। আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর বাক্যটি বুখারী তা’লীক্বভাবে বর্ণনা করেছেন আনাস সূত্রে। সিমাক ইবনু হারব তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কাতারবদ্ধ করতেন এমন সোজা করে যেরূপ তীরের ফলা সোজা করা হয়। এমনকি তিনি যখন বুঝতে পারলেন, আমরা এ সম্পর্কে তাঁর তা’লীম আত্মস্থ করেছি ও বুঝেছি, তখন একদা তিনি (আমাদের দিকে) ঘুরে দেখতে পেলেন, একজনের বুক সামনের দিকে এগিয়ে আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের চেহারায় বৈপরিত্য সৃষ্টি করে দিবেন। সহীহঃ মুসলিম আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন, আর বলতেনঃ তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেনঃ নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি মহান আল্লাহ রহমাত বর্ষণ করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগন) দু’আ করেন। সিমাক তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা সলাতের জন্য দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দিতেন। অতঃপর আমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তাকবীর বলতেন। সহীহঃ অনুরূপ মুসলিম। ইবনু উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, “তোমাদের ভাইয়ের হাতে” শব্দগুলো নেই। (তিনি আরো বলেন,) শাইত্বানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তারঁ রহমাত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমাত হতে কর্তন করবেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ শাজারার নাম হচ্ছে কাসীর ইবনু মুর্রাহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেনঃ “তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও” এর অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি এসে কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিই তার জন্য নিজ নিজ কাঁধ নরম করে দেবে, যেন সে সহজে কাতারে শামিল হতে পারে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমরা (সালাতের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে। পরস্পর কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি (ফাঁকা) জায়গাতে শাইত্বান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে। আনাস ইবনু মলিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাতারসমূহ সোজা করবে। কারণ কাতারসমূহ সোজা করার দ্বারাই সলাত পূর্ণতা পায়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম প্রাসাদের মালিক মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনুস সায়িব তিনি বলেন, একাদা আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলাম। তিনি বললেন, তুমি কি জান (মসজিদে নাবাবীতে) এ কাষ্ঠ খণ্ডটি কেন তৈরী করা হয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি জানি না। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর তাঁর হাত রেখে বলতেন তোমরা সোজা হয়ে যাও এবং তোমাদের কাতারসূমহ বরাবর করে নাও। [৬৬৯] দুর্বল আনাস (রাঃ) এরূপ সূত্রের উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে আরো রয়েছেঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়ানোর সময় ঐ কাষ্ঠ খণ্ডটি তাঁর ডান হাতে নিয়ে বলতেনঃ তোমরা সোজা হয়ে যাও, তোমাদের কাতারসমূহ বরাবর করে নাও। তারপর সেটি বাম হাতে নিয়ে বলতেন তোমরা সোজা হয়ে যাও, তোমাদের কাতারসমূহ বরাবর করে নাও।[৬৭০] দুর্বলঃ মিশকাত ১০৯ আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে, তারপর তার পরবর্তী কাতার পূর্ণ করবে। এরপর কোন অসম্পূর্ণতা থাকলে তা যেন শেষ কাতারে হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট হচ্ছে ঐসব লোক, যারা সালাতের মধ্যে নিজেদের কাঁধ বেশি নরম করে দেয়।
খুঁটি সমূহের মাঝখানে কাতার বাঁধা
আব্দুল হামীদ ইবনু মাহমূদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সাথে জুমু’আর সলাত আদায় করি। লোকজন বেশি হওয়ায় আমরা খুঁটি সমূহের মাঝখানে যেতে বাধ্য হই। এতে করে আমরা আগে পিছে হয়ে যাই। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমরা এভাবে (দু খুঁটির মাঝখানে) দাঁড়ানো হতে বিরত থাকার চেষ্টা করতাম।
কাতারে ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ানো উত্তম ও দূরে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়
আবূ মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যেকার প্রবীন ও জ্ঞানী লোকেরা যেন আমার কাছাকাছি দাঁড়ায়। তারপর পর্যায়ক্রমে দাঁড়াবে যারা ঐ গুনে তাদের কাছাকাছি, তারপর দাঁড়াবে যারা তাদের কাছাকাছি তারা। সহীহঃ মুসলিম আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে আরো রয়েছেঃ “তোমরা আগ-পিছ হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। সাবধান! তোমরা মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল করবে না।” সহীহঃ মুসলিম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন নিশ্চয় কাতারের ডান দিকের (মুসল্লিদের) উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ করেন এবং মালায়িকাহ (ফেরেশতাগন) দু’আ করেন। [৬৭৬] হাসান : এ শব্দেঃ (.........) “যারা কাতারবদ্ধ হয়ে সলাত আদায় করে”।
কাতারে বালকদের দাঁড়ানোর স্থান
‘আবদুর রহমান ইবনু গানম তিনি বলেন, আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে বর্ণনা করব না? এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের কাতারবদ্ধ করালেন, তারপর তাদের পিছনের কাতারে বালকদের দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি তাদের সাথে সলাত আদায় করলেন। এরপর বর্ণনাকারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের বর্ণনা দেন। (বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এভাবেই সলাত আদায় করতে হয়। বর্ণনাকারী ‘আবদুল আ’লা বলেন, আ্মার ধারণা আমার শায়খ কুররাহ ইবনু খালিদ বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মাত এভাবেই সলাত আদায় করবে। [৬৭৭] দুর্বলঃ মিশকাত-১১১৫।
মহিলাদের কাতার এবং তারা পিছনের কাতারে দাঁড়াবে, প্রথম কাতারে নয়
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথমটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে শেষেরটি। পক্ষান্তরে মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে শেষেরটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে প্রথমটি। সহীহঃ মুসলিম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদল লোক সর্বদা প্রথম কাতার থেকে পিছনের দিকে সরতে থাকবে। ফলে আল্লাহও তাদেরকে জাহান্নামের পিছন দিকে রাখবেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদেরকে প্রথম কাতারে দাঁড়াতে বিলম্ব করতে দেখে বললেন সামনে আস এবং আমার অনুকরণ কর। আর তোমাদের পরের লোকেরাও তোমাদের অনুসরণ করবে। একদল লোক সর্বদাই (প্রথম কাতার থেকে) পিছনের দিকে সরতে থাকবে। ফলে মহান আল্লাহ ও তাদের পিছনে ফেলে রাখবেন। সহীহঃ মুসলিম
কাতারে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ইমামকে কাতারের মাঝখান বরাবর দাঁড় করাও এবং (কাতারের মধ্যকার) ফাঁকা বন্ধ করে দাও। [৬৮১] দুর্বলঃ কিন্ত হাদীসের দ্বিতীয় অংশটি সহীহ। দেখুন হাদীস নং ৬৬৬, ৬২০।
যে ব্যক্তি কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে
ওয়াবিসাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যাক্তিকে কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে দেখে তাকে পুনরায় সলাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন।
যে ব্যক্তি কাতারে না পৌঁছেই রুকু’ করে
হাসান (রহঃ) আবূ বাকরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একদা আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’তে থাকাবস্থায় তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কাতারে না পৌঁছেই রুকু করে নিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাকে) বললেন আল্লাহ (ইবাদাত ও নেকীর প্রতি) তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন, তবে পুনরায় এরূপ করো না। সহীহঃ বুখারী হাসান (রহঃ) একদা আবূ বাকরাহ (রাঃ) (মসজিদে) এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রুকু’তে পেলেন। তিনি কাতারে না পৌঁছেই রুকু করলেন, তারপর কাতারে শামিল হওয়ার জন্য অগ্রসর হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে বললেন তোমাদের মধ্যকার কে কাতারে পৌঁছার পূর্বেই রুকু করেছে এবং পরে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য অগ্রসর হয়েছে? আবূ বাকরাহ (রাঃ) বললেন, আমি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে পুনরায় এরূপ করো না।
মুসল্লী কিরূপ সুতরাহ স্থাপন করবে
ত্বালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি (খোলা ময়দানে সলাত আদায়কালে) তোমার সামনে উটের পিঠের হাওদার পিছন দিকের কাষ্ঠ খণ্ড বা অনুরূপ কোন কিছু স্থাপন করলে তোমরা সামনে দিয়ে কারো চলাচলে (সালাতের) কোন ক্ষতি হবে না। সহীহঃ মুসলিম আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, হাওদার পশ্চৎভাগের কাষ্ঠ খণ্ড এক হাত বা তার চেয়ে কিছু বেশি (লম্বা) হয়ে থাকে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন বের হওয়ার সময় সঙ্গে বর্শা নেয়ার নির্দেশ দিতেন। সেটি তাঁর সামনে স্থাপন করা হত এবং তিনি সেদিকে ফিরে সলাত আদায় করতেন। আর লোকজন তাঁর পেছনে থাকত। তিনি সফর অবস্থায়ও এরূপ করতেন। এ জন্যই তখন থেকে শাসকরা হাতে বর্শা রেখে থাকেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-বাত্বহা নামক স্থানে সলাত আদায় করলেন। তখন তাঁর সামনে একটি বর্শা স্থাপিত ছিল। তিনি যুহরের দু’ রাক’আত ও ‘আসরের দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন। এ সময় বর্শার অপর পাশ দিয়ে নারী ও গাধা চলাচল করছিল। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
ছড়ি না পাওয়া গেলে রেখা টেনে দিবে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (খোলা জায়গাতে) সলাত আদায় করলে যেন (সুতরাহ্ হিসেবে) তার সামনে কিছু স্থাপন করে। কিছু না পাওয়া গেলে যেন একটি লাঠি স্থাপন করে নেয়। সাথে কোন লাঠি না থাকলে (মাটিতে) যেন একটি দাগ টেনে নেয়। তারপর সামনে দিয়ে কিছু চলাচল করলে সলাতের কোন ক্ষতি হবে না। [৬৮৯] দুর্বলঃ মিশকাত ৭৮১ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আবূল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন.. বর্ণনাকারী অতঃপর দাগ টানা সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ সুফিয়ান বলেন, এ হাদীসটিকে মজবুত প্রমান করার মত কিছুই পেলাম না। হাদীসটি কেবল উক্ত সানাদেই বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সুফিয়ানকে বললাম, লোকেরা এতে মত পার্থক্য করেছে। তিনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, আমার কেবল আবূ মহাম্মাদ ইবনু ‘আমরের কথাই মনে পড়ছে। সুফিয়ান বলেন, ইসমাঈল ইবনু উমায়্যাহর মৃত্যুর পর এক ব্যক্তি এখানে (কুফায়) এসে এ শায়খ আবূ মুহাম্মাদের অনুসন্ধান করে তাকে পেয়ে যান। তিনি তাকে এ মাটিতে দাগ টানা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি সঠিক উত্তর দিয়ে ব্যর্থ হন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি একাধিকবার আহমাদ ইবনু হাম্বাল থেকে মাটিতে দাগ দেয়া সম্পর্কে শুনেছি যে, দাগটি প্রস্থে নবচন্দ্রের ন্যায় (মোটা) হবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি মুসাদ্দাদকে বলতে শুনেছিঃ ইবনু দাউদ বলেছেন, দাগ লম্বালম্বিভাবে টানতে হবে। [৬৯০] সুফিয়ান ইবনু ‘উয়াউনাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি শারীক (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি এক জানাযার সলাত আদায় করতে এসে আমাদের সাথে ‘আসরের সলাত আদায় করলেন। তিনি (উক্ত ফরয সালাতে সুতরাহ্ হিসেবে) নিজের টুপি (খুলে) সামনে রাখলেন।
জন্তুযান সামনে রেখে সলাত আদায় করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের দিকে ফিরে সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ বুখারী।
কেউ খুঁটি বা অনুরূপ কিছু সামনে রেখে সলাতে দাঁড়ালে তা কোথায় রাখবে?
দুবা’আহ বিনতু মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ হতে তার পিতার তিনি (মিক্বদাদ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি, তিনি (সুতরাহ্ হিসেবে) কোন লাকড়ি, স্তম্ভ বা গাছের দিকে ফিরে সলাত আদায় করলে ওগুলোকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে রাখতেন, দু’চোখের ঠিক মাঝ বরাবর রাখতেন না। [৬৯৩] দুর্বলঃ মিশকাত ৭৮৩।
আলাপে রত ও ঘুমন্ত ব্যক্তিদের সামনে রেখে সলাত আদায় করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ঘুমন্ত ও বাক্যালাপকারী লোকদের সামনে রেখে সলাত আদায় করো না।
সুতরাহর কাছাকাছি দাঁড়ানো
সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সুত্রাহ স্থাপন করে সলাত আদায় করলে যেন সুত্রার কাছাকাছি দাঁড়ায়। যাতে করে শাইত্বান তার সলাত ভঙ্গ করতে না পারে। সহীহ ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি বর্ণনা করেছেন অয়াক্বিদ ইবনু মুহাম্মাদ সাফওয়ান হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনু সাহল হতে তার পিতার সূত্রে অথবা মুহাম্মাদ ইবনু সাহল হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সূত্রে। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন, নাফি’ ইবনু জুবাইর সাহল ইবনু সা’দ হতে। এর সানাদ বর্ণনায় মত পার্থক্য করা হয়েছে। সাহল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দাঁড়ানোর স্থান ও তাঁর ক্বিবলাহ্র মধ্যবর্তী স্থানে একটি বকরী চলাচলের পরিমাণ জয়গা ফাঁকা থাকত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
মুসল্লীর সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে তাকে বাধা দেয়া
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সলাত আদায়কালে তার সামনে দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না এবং সাধ্যমত যেন তাকে বাধা দেয়া হয়। সে বাধা উপেক্ষা করলে তার সাথে যুদ্ধ করবে। কারণ সে হচ্ছে একটা শাইত্বান। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সলাত আদায় করলে যেন সুত্রার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। সুলাইমান ইবনু মালিকের দ্বাররক্ষী আবূ ‘উবায়িদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আত্বা ইবনু ইয়াযীদ আল-লাইসীকে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে দেখি। অতঃপর আমি তার সামনে দিয়ে যেতে উদ্যত হলে তিনি আমাকে বাধা দিয়ে বললেন, আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার কেউ তার ও ক্বিবলাহ্র মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলাচলে কাউকে বিরত রাখতে সক্ষম হলে সে যেন তাই করে। হুমায়িদ ইবনু হিলাল তিনি বলেন, আবূ সালিহ (রহঃ) বলেছেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে যা করতে দেখেছি ও বলতে শুনেছি তোমার নিকট তাই বর্ণনা করব। একদা আবূ সাঈদ আল-খূদরী (রাঃ) মারওয়ানের নিকট গিয়ে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ কোন কিছুকে সুতরাহ্ বানিয়ে সলাত আদায়কালে কেউ তা লঙ্ঘন করে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে সে যেন তার বক্ষে হাত মেরে তাকে বাধা দেয়। যদি সে না মানে, তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ সে হচ্ছে একটা শাইত্বান। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষেধ
বুসর ইবনু সাঈদ যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তাকে আবূ জুহায়িম (রাঃ)- এর নিকট পাঠালেন-সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গেলে কি (পরিমাণ অন্যায়) হবে এ সম্পর্কে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছেন তা জিজ্ঞেস করার জন্য। আবূ জুহায়িম (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এ কারনে তাকে কত মারাত্মক শাস্তি ভোগ করতে হবে, তাহলে সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন) দাঁড়িয়ে থাকাও অধিকতর উত্তম মনে করত। আবূন নাদর বলেন, আমার স্মরণ নেই যে, তিনি চল্লিশ দিন, মাস, না বছর বলেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
যে জিনিস সলাতকে নষ্ট করে দেয়
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায়কারী ব্যক্তির সম্মুখে উটের পিঠের হাওদার পিছনের লাকড়ি পরিমাণ কিছু না থাকলে তার সামনে দিয়ে গাধা, কালো কুকুর অথবা মহিলা অতিক্রম করলে তার সলাত নষ্ট হয়ে যাবে। আমি বললাম, লাল, হলুদ কিংবা সাদা রংয়ের কুকুরের তুলনায় কালো কুকুরের কী এমন বিশেষত্ব? তিনি বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি যেরূপ আমাকে জিজ্জেস করলে আমিও সেরূপ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্জেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেনঃ কালো কুকুর হলো একটা শাইত্বান। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঋতুবর্তী মহিলা ও কুকুর সলাত আদায়কারীর (সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে) সলাত নষ্ট হয়ে যায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সুতরাহ ছাড়া সলাত আদায় করলে তার সামনে দিয়ে কুকুর, গাধা, শূকর, ইয়াহূদী, অগ্নিউপাসক অথবা স্ত্রীলোক অতিক্রম করলে তার সলাত নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য কঙ্কর নিক্ষেপের দূরত্বের বাইরে দিয়ে যদি অতিক্রম করে, তাহলে তার সলাত হয়ে যাবে। দুর্বলঃ মিশকাত ৭৮৯। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটির ব্যাপারে আমি কিছু (সন্দেহ) অনুভব করছি। ইবরহীম (রহঃ) প্রমুখের সাথে এ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করে আমি দেখলাম, হাদীসটি হিশাম থেকে কেউই বর্ণনা করেননি এবং এ ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হাদীসটিকে কাউকেই আমি হিশামের সাথে সম্পর্কিত করতে দেখিনি। আমার ধারনা মতে ইবনু আবী সামীনাহ হতে সন্দেহের সূত্রপাত হয়েছে। হাদীসটিতে ‘অগ্নিউপাসক’ ‘কঙ্কর নিক্ষেপের দূরত্ব’ এবং ‘শূকর’-এর উল্লেখ প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য। ইমামা আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, আমি হাদীসটি কেবলমাত্র মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল আল-বাসরী থেকে শুনেছি। আমার ধারনা, তিনি ভুলে পতিত হয়েছেন। কারণ হাদীসটি তিনি তার মুখস্থ থেকে বর্ণনা করেছেন। [৭০৩] ইয়াযীদ ইবনু নীমরান তিনি বলেন, আমি তাবূতে এক খোঁড়া ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। সে বলল, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়কালে আমি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! তার পদচিহ্ন (চলার শক্তি) মিটিয়ে দাও। এরপর থেকে আমি আর হাঁটতে পারি না। [৭০৪] সাঈদ উক্ত সানাদ ও অর্থে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে এও রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে আমাদের সলাত নষ্ট করেছে। আল্লাহ তার পা কেটে দিন। দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাইদ হতে মুসহিরও উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতেও রয়েছেঃ সে আমার সলাত নষ্ট করেছে। [৭০৫] সাঈদ ইবনু গাযওয়ান থেকে তার পিতার তিনি হাজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে গমনকালে তাবূকে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক খোঁড়া লোক দেখতে পেয়ে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। লোকটি বলল, আমি আপনার কাছে এ শর্তে একটি কথা বলব যে, আমি যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন পর্যন্ত আপনি কাউকে তা বলতে পারবেন না। একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকে অবতরণ করে একটি খেজুর গাছের নিকট গিয়ে বলেলনঃ এটাই হচ্ছে আমাদের ক্বিবলাহ্ (সুতরাহ্)। এই বলে তিনি সেদিকে ফিরে সলাত শুরু করলেন। আমি তখন বালক ছিলাম বিধায় (না বুঝতে পেরে) দৌড়ে তাঁর ও সেই গাছের মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেনঃ সে আমাদের সলাত কেটেছে। আল্লাহ! তুমিও তার পদচিহ্ন (চলার শক্তি) মিটিয়ে দাও। অতঃপর সেদিন থেকে আজকের এদিন পর্যন্ত আমি আর (দু’পায়ে ভর করে) দাঁড়াতে পারিনি। [৭০৬]
ইমামের সুতরাহ্ মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট
আমর ইবনু শু’আইব থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ‘সানিয়্যাতু আযাখির’ নামক স্থানে অবতরন করলাম। সলাতের সময় হলে তিনি দেয়ালের দিকে ক্বিবলাহমুখী হয়ে (দেয়ালকে সুতরাহ্ বানিয়ে) সলাত আদায় করলেন। আমরাও তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। ইতোমধ্যে একটি ছাগলছানা এসে তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে তিনি সেটিকে এমনভাবে বাধা দিতে থাকলেন যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর পেট দেয়ালের সাথে লেগে গেল। অবশেষে ছানাটি তাঁর পেছন দিয়ে চলে গেল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত আদায়কালে একটি ছাগলছানা তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে তিনি সেটিকে বাধা দিলেন।
যে বলে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে মহিলাদের যাতায়াতে সলাত ভঙ্গ হয় না।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (সলাত আদায়কালে) আমি তাঁর ক্বিবলাহ্র মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। শু’বাহ বলেন, আমার ধারণা, ‘আয়িশাহ (রাঃ) এটাও বলেছিলেন, আমি তখন হায়িয অবস্থায় ছিলাম। সহীহ, তবে ‘আমি হায়িয অবস্থায় ছিলাম’ এ কথাটি বাদে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বিভিন্ন সানাদে বর্ণিত হয়েছে। ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ও আবূ সালামাহ্ কর্তৃক ‘আয়িশা (রাঃ) এর সূত্রের বর্ণনায় ‘আমি তখন হায়িয অবস্থায় ছিলাম’ কথাটুকু উল্লেখ নেই। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতে সলাত আদায়কালে তিনি তাঁর ও ক্বিবলাহ্র মধ্যবর্তী স্থানে ঐ বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতেন, যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্র সলাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তাকে জাগিয়ে দিতেন, ফলে তিনিও বিত্র সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, তোমরা (সলাত ভঙ্গের ব্যাপারে) আমাদেরকে গাধা ও কুকুরের পর্যায়ভুক্ত করেছ। অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপ অবস্থায় সলাত আদায় করতে দেখেছি যে, আমি তাঁর সামনে আড়া-আড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। তিনি সাজদাহ্ করতে চাইলে আমার পায়ে চিমটি কাটতেন, এতে আমি আমার পা গুটিয়ে নিতাম। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করতেন। সহীহঃ বুখারী। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতে সলাত আদায়কালে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার দু’ পা তাঁর সামনে থাকত। তিনি যখন সাজদাহ্ করতে চাইতেন, তখন আমার পায়ে খোঁচা দিতেন। ফলে আমি পা গুটিয়ে নিতাম, অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে ক্বিবলাহ্র দিকে আড়া-আড়িভাবে শুয়ে থাকতাম। এরূপ অবস্থায়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাতের নফল) সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি বিত্র সলাত আদায়ের ইচ্ছা করলে আমাকে চিমটি কাটতেন আর বলতেনঃ উঠো এবং পাশে দাঁড়াও। বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় ‘চিমটি কাটার’ কথাটি আছে। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
মুসল্লীর সামনে দিয়ে গাধা অতিক্রম করলে সলাত ভঙ্গ হয় না।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বালিগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে একটি মাদী গাধার পেঠে সওয়ার হয়ে মিনায় আসলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সলাত আদায় করাচ্ছিলেন। আমি একটি কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে গাধীর পিঠ থেকে নামলাম এবং সেটিকে ঘাস খাওয়ার জন্যে ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হলাম। এ সময় কেউ আমাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেনি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন এটা হলো কা’নাবীর বর্ণনা। এটাই পূর্নাঙ্গ। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, ইমামের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে সলাতের ক্ষতি হয়, কিন্তু কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোন ক্ষতি নেই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূস সাহবা তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট সলাত নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, একদা আমি এবং বনু ‘আবদুল মুত্তালিবের এক বালক গাধার পিঠে আরোহণ করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তখন তিনি সলাত আদায় করছিলেন। সে ও আমি গাধার পিঠ থেকে নামলাম এবং আমরা গাধাটিকে কাতারের সামনে ছেড়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে আপত্তিকর মনে করলেন না। এ সময় বনু ‘আবদুল মুত্তালিবের দু’টি বালিকা এসে কাতারের মধ্যে প্রবেশ করল। এতেও তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ করলেন না। মানসূর (রহঃ) একই সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রে দু’টি মেয়ে ঝগড়ারত অবস্থায় আসল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ধরে ফেললেন। ‘উসমান বলেন, তারপর উভয়কে পৃথক করে দিলেন। দাউদ বলেন, তারপর তাদের একজনকে অপরজন হতে আলাদা করে দিলেন কিন্তু তিনি এরূপ করা আপত্তিকর মনে করলেন না।
যে বলে মুসল্লীর সামনে দিয়ে কুকুর অতিক্রম করলে সলাত নষ্ট হয় না
আল-ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তখন আমাদের বাগানে ছিলাম। তাঁর সাথে ‘আব্বাস (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি বালু ভূমিতে সলাত আদায় করলেন। অথচ তাঁর সামনে কোন সুতরাহ্ ছিল না। আমাদের মাদী গাধা এবং কুকুরটি তাঁর সামনে দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিন্তু তিনি একে আপত্তিকর মনে করলেন না। [৭১৭]
যে বলে, সামনে দিয়ে কিছু অতিক্রম করলে সলাত নষ্ট হয় না।
আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের সামনে দিয়ে কোন কিছু অতিক্রম করলে সলাত ভঙ্গ হয় না। তবে সাধ্যানুযায়ী তোমরা এরূপ করতে বাধা দিবে। কারণ সে তো একটা শাইত্বান। [৭১৮] আবূল ওয়াদ্দাক তিনি বলেন, একদা আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁর সামনে দিয়ে এক কুরাইশ যুবক অতিক্রম করলে তিনি তাকে বাধা দিলেন। সে পুনরায় অতিক্রম করতে চাইলে তিনি তাকে আবারো বাধা দিলেন। এরূপ তিনবার হলো। অতঃপর সলাত শেষে তিনি বললেন, বস্তুত সলাতকে কোন কিছুই নষ্ট করতে পারে না। তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যথাসাধ্য (সলাতের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে) বাধা দিবে। কারণ সে একটা শাইত্বান। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’টি হাদীস পরস্পর বিরোধী হলে তাঁর পরে তাঁর সাহাবীগণ যেরূপ আমল করেছেন তা বিবেচনায় আনতে হবে। [৭১৯]
রাফ’উল ইয়াদাইন (সলাতে দু’হাত উত্তোলন)
সালিম (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সলাত আরম্ভকালে নিজের দু’ হাত স্বীয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। অনুরূপভাবে রুকু’তে গমনকালে এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর পরও তাকে হাত উঠাতে দেখেছি। তবে তিনি দু’সাজদাহ্র মাঝে হাত উঠাতেন না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়ানোর সময় স্বীয় দু’হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকু’তে গমনকালেও দু’হাত উপরে উঠাতেন। রুকু’ থেকে উঠার সময়ও দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে “সামিআল্লাহু লিমান্ হামিদাহ্”-বলতেন। তবে তিনি সাজদাহ্র সময় হাত উঠাতেন না। প্রত্যেক রুকুর জন্য তাকবীর বলার সময়, দু’হাত উঠাতেন এবং এভাবেই সলাত সম্পন্ন করতেন। আবূ ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর বলার সময় স্বীয় দু’হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর স্বীয় হাত কাপড়ে ঢুকিয়ে ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি রুকু’তে গমনকালে স্বীয় দু’হাত বের করে উপরে উঠাতেন এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময়ও দু’হাত উপরে উঠাতেন। তারপর সাজদাহ্তে স্বীয় চেহারা দু’ হাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে রাখতেন। অতঃপর সাজদাহ্ থেকে মাথা উত্তোলনের সময়ও দু’হাত উত্তোলন করতেন। এরূপে তিনি তাঁর সলাত শেষ করতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বলেন, আমি হাসান ইবনু হাসানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি এরূপই ছিল। যে লোক এর অনুসরণ করেছে- সে তো করেছে আর যে তা বর্জন করেছে-সে তো তা বর্জন করেছে। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ইবনু জাহদাহ হতে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাতে সাজদাহ্ থেকে মাথা উঠানোর সময় হাত উত্তোলনের কথা উল্লেখ নেই। ‘আবদুল জব্বার ইবনু ওয়ায়িল থেকে তাঁর পিতার তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সলাতে দাঁড়িয়ে স্বীয় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীর বলতে দেখেছেন। [৭২৩] ‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল আমার পরিবারের লোকজন আমার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আমার পিতা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাকবীর বলার সময় দু’হাত উঠাতে দেখেছেন। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি দেখাব। তিনি বলেন, (তা হচ্ছে এরূপঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিবলাহ্মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে স্বীয় দু’হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করেন। তারপর ডান হাত দিয়ে স্বীয় বাম হাত ধরেন এবং রুকু’তে গমনকালে স্বীয় দু’হাত তদ্রূপ উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর উভয় হাতকে হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখেন। রুকু’ হতে মাথা উত্তোলনের সময়ও তিনি উভয় হাত ঐভাবে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন এবং বাম হাত বাম ঊরুর উপর এবং ডান হাত ডান ঊরুর উপর আলাদাভাবে রাখেন। অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাতের কনিষ্ট ও অনামিকা অঙ্গুলিদ্বয় আবদ্ধ রাখেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ঈশারা করেন। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি তাকে এভাবে বলতে দেখেছি। আর বিশ্র নিজের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন। ‘আসিম এ সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি ও জোড়া আঁকড়ে ধরেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি কয়েকদিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগন প্রচণ্ড শীতের দরুণ শরীর আবৃত করে রেখেছেন। এ সময় তাঁদের হাতগুলো নিজ নিজ কাপড়ের নীচে নড়াচড়া করছিল (রফ‘উল ইয়াদাইনের কারণে)। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আরম্ভকালে স্বীয় দু’ হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কয়েকদিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগণ সলাত আরম্ভকালে তাদের হাতগুলো বুক পর্যন্ত উঠাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের শরীর কোট ও অন্যান্য কাপড়ে আবৃত ছিল।
সলাত শুরু করা সম্পর্কে
ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি শীতের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে দেখলাম যে, তাঁর সাহাবীগণ সলাতরত অবস্থায় তাদের কাপড়ের ভিতর থেকে নিজ হাত উত্তোলন করছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুমায়িদ আস-সাঈদী (রাঃ) কে দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে- যাঁদের মধ্যে আবূ কাতাদাহ (রাঃ) ছিলেন- বলতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, সেটা আবার কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো তাঁর অনুসরণ ও সাহচর্যের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রগামী নন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তারা বললেন, এখন আপনি আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়ানোর সময় নিজের দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে পূর্ণরূপে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এরপর ক্বিরাআত পড়ে তাকবীর বলে রুকু‘তে গমনকালে স্বীয় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তারপর রুকু‘তে গিয়ে দু’ হাতের তালু দ্বারা হাটুদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতেন। রুকু‘তে তাঁর মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল থাকতো। এরপর রুকু‘ হতে মাথা উঠিয়ে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলে তিনি স্বীয় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তিনি সাজদাহ্য় যেতেন, সাজদাহ্তে বাহুদ্বয় স্বীয় পাঁজরের পাশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। তারপর সাজদাহ্ হতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বসতেন এবং সাজদাহ্কালে স্বীয় পায়ের আঙ্গুলগুলি ফাঁকা করে রাখতেন। এরপর আবার সাজদাহ্য় যেতেন এবং আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্ হতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বসতেন, এমনকি প্রতিটি হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত। এরপর পরের রাক‘আতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন। অতঃপর যখন দু’ রাকাত শেষে (তৃতীয় রাক‘আতের জন্য) দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলে দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন, ঠিক যেমনটি করতেন সলাত আরম্ভকালে তাকবীর বলে। অতঃপর এভাবেই তাঁর অবশিষ্ট সলাত আদায় করতেন। অতঃপর শেষ রাক‘আতে স্বীয় বাম পা ডান পাশে বের করে বাম পাশের পাছার উপর ভর করে বসতেন। তখন তারা সকলেই বললেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সলাত আদায় করতেন। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর আল-‘আমিরী তিনি বলেন, একদা আমি সাহাবীগনের মাজলিসে উপস্থিত হই। সেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। তখন আবূ হুমায়দ(রাঃ) বলেন..... তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অংশ বিশেষ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি রুকুতে স্বীয় হাতের তালু দ্বারা হ্যাঁটু মজবুতভাবে ধরতেন, হাতের অঙ্গুলিগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং স্বীয় মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল রাখতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দু’ রাকাত সলাত শেষে বসার সময় বাম পায়ের উপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা দাঁড় করে রাখতেন। তারপর চতুর্থ রাক‘আতে বসার সময় স্বীয় দু’ পা ডান দিকে বের করে দিয়ে বাম পাশের পাছার উপর ভর করে বসে যেতেন। সহীহ, তবে তাঁর (আরবী) কথাটি বাদে। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আত্বা সুত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সাজদাহ্তে নিজের দু’ হাত একেবারে বিছিয়েও দিতেন না আবার তা শরীরের সাথে মিলিয়েও রাখতেন না। তিনি তাঁর পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলাহ্মুখী করে রাখতেন। সহীহঃ বুখারী। ‘আব্বাস অথবা ‘আইয়্যাশ ইবনু সাহল আস-সাঈদী (রহঃ) তিনি বলেন, তিনি সাহাবীগনের একটি মাজলিসে উপস্থিত হন, যেখানে তাঁর পিতা, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ), আবূ হুমায়িদ আস-সাঈদী এবং আবূ উসায়িদ (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। এ সুত্রে উপরোক্ত হাদীস কিছুটা হ্রাসবৃদ্ধিসহ বর্ণিত হয়েছে। তাতে বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ হতে মাথা উঠিয়ে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হাম্দ’ বলে নিজের দু’ হাত উত্তোলন করতেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্য় যেতেন এবং সাজদাহ্তে হাতের তালু, হ্যাঁটু ও পায়ের পাতার উপর ভর করতেন। তারপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে (সাজদাহ্ হতে উঠে) বাম পার্শ্বের পাছার উপর ভর করে বসতেন আর অন্য পা সোজা করে রাখতেন। তারপর তাকবীর বলে সাজদাহ্য় যেতেন এবং পুনরায় তাকবীর বলে সাজদাহ্ হতে উঠে বাম পার্শ্বের পাছার উপর না বসে দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর (পুরো) হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি দু’ রাক‘আত সলাত শেষে বসার পর (তৃতীয় রাক‘আতের জন্য) দাঁড়ানোর ইচ্ছা করলে তাকবীর বলে দাঁড়াতেন এবং (এভাবে) অবশিষ্ট দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। কিন্তু তাতে শেষ বৈঠকে বাম পার্শ্বের পাছার উপর বসার কথা উল্লেখ নেই। [৭৩২] ‘আব্বাস ইবনু সাহল (রহঃ) আবূ হুমায়িদ, আবূ উসায়িদ, সাহল ইবনু সা‘দ এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) একটি মাজলিসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তখন আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত ... অতঃপর তিনি এখানে অংশ বিশেষ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘তে নিজের দু’ হাতে শক্তভাবে হ্যাঁটুদ্বয় ধরে রাখতেন এবং দু’ হাতকে তাঁর পার্শ্বদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সাজদাহ্তে নাক ও কপাল মাটির সাথে মিলিয়ে রাখতেন এবং দু’ হাতকে তাঁর পার্শ্বদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে মাথা উঠাতেন যে, শরীরের সমস্ত সংযোগ স্থান স্ব স্ব স্থানে স্থাপিত হত। অতঃপর বসে বাম পা বিছিয়ে দিতেন, ডান পায়ের সম্মুখ ভাগ ক্বিবলামুখী করে রাখতেন, ডান হাতের তালু ডান পায়ের ঊরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম পায়ের ঊরুর উপর রাখতেন এবং তাঁর (শাহাদাত) আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ‘উত্বাহ ইবনু আবূ হাকীম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ হতে ‘আব্বাস ইবনু সাহল সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে বাম পার্শ্বের পাছার উপর বসার কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি ফুলাইহর এর অনুরূপ হাদীস উল্লেখ করেন। আর হাসান ইবনুল হুর বসার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন ফুলাইহ্ ও ‘উত্বাহর বর্ণনার অনুরূপ। আবূ হুমায়িদ (রাঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি সাজদাহ্তে স্বীয় পেট উরু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। [৭৩৪] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইবনুল মুবারাক ও অন্যান্য সুত্রেও বর্ণিত হয়েছে। ‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদায় গমনকালে যমীনে স্বীয় হাত রাখার পূর্বে হ্যাঁটু রাখতেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সাজদাহ্তে তিনি নিজের দু’ হাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে কপাল রাখতেন এবং দু’ হাত বগল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। [৭৩৫] দুর্বল। ‘আসিম ইবনু কুলাইব তাঁর পিতা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, যথা সম্ভব মুহাম্মাদ ইবনু জুহাদাহ্র বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি দাঁড়ানোর সময় উরু ও হ্যাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। ‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল থেকে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাকবীর বলার সময় তাঁর দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের নিম্নভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। [৭৩৬] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় নিজের দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। এমনিভাবে রুকু’তে গমনকালে, রুকু‘ হতে সোজা হওয়ার সময় এবং দু’ রাক’আত শেষে (তৃতীয় রাক’আতের জন্য) দাঁড়ানোর সময়ও দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। মায়মূন আল-মাক্কী তিনি দেখলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ির (রাঃ) লোকদের সলাত আদায়কালে দাঁড়ানোর সময়, রুকু’ হতে সোজা হওয়ার সময়, সাজাদাহ্কালে*, এবং (দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় তাঁর দু’ হাত উঠালেন। অতঃপর আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাকে ইবনুয যুবায়িরের সলাত সম্পর্কে বললাম, কাউকে তো এভাবে হাত উঠিয়ে সলাত আদায় করতে দেখিনি। তিনি বললেন, তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের পদ্ধতি অবলোকন করতে চাইলে ইবনুয যুবায়িরের সলাতের অনুসরণ কর। নাদ্র ইবনু কাসীর তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু তাউস (রহঃ) খায়িফের মসজিদে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায়কালে প্রথম সাজদাহ্য় যাওয়ার পর সাজদাহ্ হতে মাথা উঠানোর সময় চেহারা বরাবর দু’ হাত উত্তোলন করলেন। বিষয়টি আমার কাছে অপ্রীতিকর মনে হওয়ায় আমি এ ব্যাপারে উহায়িব ইবনু খালিদকে জিজ্ঞাসা করি। ফলে উহায়িব (রহঃ) ‘আবদুল্লাহকে বললেন, তুমি এমন একটি কাজ করেছ, যা আমি ইতোপূর্বে আর কাউকে করতে দেখিনি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু তাউস (রহঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে এরুপ করতে দেখিছি এবং আমার পিতা বলেছেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে এরুপ করতে দেখিছি। আমি নিশ্চিত অবগত, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। [৭৩৯] নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার সময়, রুকু’তে গমনকালে, রুকু’ হতে মাথা উত্তোলনকালে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বলে এবং দু’ রাক’আত সলাত আদায়ের পর (তৃতীয় রাক’আতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় উভয় হাত উত্তোলন করতেন। তিনি এর বর্ণনা সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন (অর্থাৎ এটি মারফূ হাদীস)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, প্রথম হাদীসের দু’ রাক’আত সলাত শেষে দাঁড়ানোর সময় হাত উত্তোলনের কথাটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত নয়। আর সাক্বাফী এটি ‘উবাইদুল্লাহ সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর মাওকূফ বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাতে উল্লেখ আছেঃ “তিনি দু’ রাক’আত সলাত শেষে দাঁড়ানোর সময় উভয় হাত বক্ষ পর্যন্ত উঠাতেন।” এ বর্ণনাটি সহীহ। সহীহঃ বুখারী। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, লাইস ইবনু সা’দ, মালিক, আইউব ও ইবনু জুরায়িজ প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ এর বর্ণনা সূত্র সহাবী পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। হাম্মাদই কেবল এককভাবে হাদীসকে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী ইবনু জুরায়িজ বলেন, আমি নাফি’কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইবনু ‘উমার (রাঃ) কি অন্য সময়ের চেয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর হাত অধিক উঠাতেন? তিনি বলেন, না; বরং তিনি সব সময়ই একইভাবে হাত উঠাতেন। আমি বললাম, আমাকে ইশারায় দেখিয়ে দিন। তিনি তার বুক বা তার চেয়ে একটু নীচে পর্যন্ত ইশারা করে দেখালেন। নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সলাত আরম্ভের সময় নিজের দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন এবং রুকু হতে মাথা উঠাবার সময় দু’ হাত একটু কম উপরে উঠাতেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমর জানা মতে বর্ণনাকারী মালিক ছাড়া কেউ হাত কম উঠানোর কথা উল্লেখ করেননি।
দু’ রাক’আত সলাত আদায়ের পর (তৃতীয় রাক’আতের জন্য) উঠার সময় দু’ হাত উত্তোলন
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের দু’ রাক’আত আদায় শেষে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে উভয় হাত উঠাতেন। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে তাঁর দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত শেষে রুকু’তে গমনকালে এবং রুকু’ হতে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে বসে সলাত আদায়কালে তিনি এরুপ হাত তুলতেন না। তিনি দু’ সাজদাহ্র পর (অর্থাৎ দু’ রাক’আত শেষে) দাঁড়ালে হাত উঠিয়ে তাকবীর বলতেন। হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুমায়িদ আস-সাঈদী (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছেঃ যখন তিনি সলাতের দু’ রাক’আত আদায় শেষে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর বলে তাঁর দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন, যেরুপ তিনি সলাত আরম্ভকালে উঠাতেন। মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়, রুকু’তে গমনকালে এবং রুকু’ হতে উঠার সময় দু’ হাত কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। সহীহঃ মুসলিম। বাশীর ইবনু নাহীক তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মুখে দাঁড়ালে তাঁর বগল দেখতে পেতাম (অর্থাৎ তিনি হাত এতটা পৃথক রাখতেন)। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয আরো উল্লেখ করেন যে, বর্ণনাকারী নাহীক বলেন, তুমি কি দেখনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) সলাতের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে যেতে পারেন না। বর্ণনাকারী মূসা ইবনু মারওয়ান তাঁর হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি তাকবীর বলার সময় দু’ হাত উত্তোলন করতেন। ‘আলক্বামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাতের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত উঠিয়েছেন এবং রুকুতে দু’ হাত একত্র করে দু’ হাঁটুর মাঝখানে রেখেছেন। এ সংবাদ সা‘দ (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, আমার ভাই (‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) সত্যই বলেছেন। পূর্বে আমরা এরূপই করেছি। পরবর্তীতে আমাদেরকে এরূপ (দু’ হাঁটুর মাঝখানে হস্তদ্বয় স্থাপন) করা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।
রুকু‘র সময় হাত না উঠানোর বর্ণনা
‘আলক্বামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত কিরূপ ছিল তা শিক্ষা দেব না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সলাত আদায় করলেন এবং তাতে কেবলমাত্র একবার হাত উত্তোলন করলেন। [৭৪৭] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি একটি দীর্ঘ হাদীসের সারসংক্ষেপ। উপরোক্ত শব্দে হাদীসটি সহীহ নয়। তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সলাত হাঃ ২৫৭, অনুঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল প্রথমবারই হাত উঠিয়েছেন), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক, অনুঃ ঐরূপ না করার অনুমতি প্রসঙ্গে, হাঃ ১০৫৭) উভয়ে ওয়াকী‘ হতে। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং ইবনু হাযাম বলেছেন সহীহ। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামগণ এটিকে দূর্বল আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম নাববী, ইমাম শওকানী (রহঃ) প্রমূখ ইমামগণ হাদীসটিকে দূর্বল বলেছেন। (আল-মাজমু‘আহ ফী আহাদীসিল মাওযু‘আহ, ২০ পৃষ্ঠা) বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আরম্ভের সময় কেবল একবার কানের কাছাকাছি পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না। সুফিয়ান (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীস এ সানাদে বর্ণিত হয়েছে। বর্ননাকারী বলেন, অতঃপর তিনি শুধুমাত্র প্রথমবারই একবার হাত উঠিয়েছেন। কতিপয় বর্ণনাকারী বলেন, তিনি শুধুমাত্র একবার হাত উঠান। ইয়াযীদ হতে এ সূত্র শারীকের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটির উল্লেখ নেই। সুফিয়ান বলেন, অতঃপর বর্ণনাকারী (ইয়াযীদ) আমাদের নিকট কূফা শহরে “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটি উল্লেখ করেন। [৭৫০] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হুশাইম, খালিদ এবং ইবনু ইদরীসও হাদীসটি ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন এবং তারা “তিনি এরপর আর হাত তুলেননি” কথাটি উল্লেখ করেননি। বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত উঠাতে দেখেছি। অতঃপর সলাত শেষ করা পর্যন্ত তিনি দু’ হাত আর উত্তোলন করেননি। [৭৫১] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি সহীহ নয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আরম্ভকালে দু’ হাত উপরের দিকে প্রসারিত করে উঠাতেন।
সলাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
‘আবদুর রহমান তিনি বলেন, আমি ইবনুয যুবায়ির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, সলাতে দু’ পা সমান রাখা এবং এক হাতের উপর অপর হাত রাখা সুন্নাত। [৭৫৩] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) একদা তিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে সলাত আদায় করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখতে পেয়ে তাঁর বাম হাতের উপর ডান হাতকে রাখেন। আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, সলাত আদায়কালে বাম হাতের তালুর উপর ডান হাতের তালু নাভির নীচে রাখা সুন্নাত। [৭৫৫] ইবনু জুরাইজ হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে সলাত আদায়কালে নাভির উপরে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে রাখতে দেখেছি। [৭৫৬] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু জুবাইর সূত্রে ‘নাভির উপরে’ কথাটি বর্ণিত আছে। আর আবূ মিজলায বলেছেন, ‘নাভির নীচে’। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। কিন্তু সেটি শক্তিশালী নয়। আবূ ওয়ায়িল তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ আমি সলাতের সময় (বাম) হাতের উপর (ডান) হাতকে নাভির নীচে রাখি। [৭৫৭] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি শুনেছি, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) সানাদের ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক আল-কূফীকে দূর্বল বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়কালে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বাঁধতেন।
যে দু‘আ পড়ে সলাত আরম্ভ করতে হয়
‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার পর নিম্নোক্ত দু‘আ পাঠ করতেনঃ “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহী রাব্বিল ‘আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা লী ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনা ‘আবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীআন। লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লি-আহসানীল আখলাক্ব। লা ইয়াহদিনী লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ ‘আন্নী সাইয়্যিআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল- খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইকা, ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা আনাবিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।” অতঃপর রুকু‘কালে তিনি এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকা রাকা‘তু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, খাসাআ লাকা সামঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখয়ী ওয়া ‘ইযামী ওয়া ‘আসাবী।” তারপর রুকু‘ হতে মাথা উঠিয়ে তিনি এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্, রাব্বানা লাকাল হাম্দ মিলউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মিলউ মা বায়নাহুম ওয়া মিলউ মাশি’তা মিন শাইয়ান বা’দু।” তারপর সাজদাহ্র সময় এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ "আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ফাআহ্সানা সূরাতাহু ওয়া শাক্বা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু ওয়া তাবারাকাল্লাহু আহ্সানুল খালিক্বীন।” তারপর সলাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতু, ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আলানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়াল মুআখখিরু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।” সহীহঃ মুসলিম। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত পাঠ শেষে রুকু‘তে গমনকালে এবং রুকু‘ হতে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে তিনি বসা অবস্থায় হাত উত্তোলন করতেন না। তিনি দু’ সাজদাহ্র শেষে (অর্থাৎ দু’ রাক‘আত আদায় শেষে) উঠার সময়ও অনুরূপভাবে হাত উঠাতেন এবং তাকবীর বলে ‘আবদুল আযীয বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে উল্লিখিত দু‘আ পাঠ করতেন। তবে এ বর্ণনায় দু‘আ কিছুটা কম-বেশী রয়েছে এবং “ওয়াল খায়রু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা”- বাক্যটির উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী এতে আরো উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে বললেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখখারতু ওয়া আসরারতু ওয়া‘আলানতু আনতা ইলাহী লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” শু‘আইব ইবনু আবূ হামযাহ তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির, ইবনু আবূ ফারওয়াহ এবং মাদীনাহ্র অন্যান্য ফাক্বীহ্গণ আমাকে বলেছেন, উপরোক্ত দু‘আ পাঠকালে তুমি “ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন” এর স্থলে “ওয়া আনা মিনাল-মুসলিমীন” বাক্যটি বলবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দ্রুত গতিতে ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে (সলাতে) উপস্থিত হয়ে বলল, “আল্লাহু আকবার আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ।” অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যকার কে এ দু‘আটি পড়েছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন লোকটি বলল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! আমি ক্লান্ত অবস্থায় মাসজিদে এসে এ দু‘আটি পড়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি দেখতে পেলাম, বারজন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) এজন্য প্রতিযোগীতায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, কে সর্বাগ্রে দু‘আটি আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাবেন। বর্ণনাকারী হুমায়িদের বর্ণনায় আরো রয়েছে, তোমাদের কেউ (মাসজিদে) এলে যেন স্বাভাবিক গতিতে আসে। অতঃপর ইমামের সাথে যেটুকু সলাত পাবে আদায় করবে এবং সলাতের ছুটে যাওয়া অংশ (ইমামের সালাম ফিরানোর পর) একাকী আদায় করে নিবে। সহীহঃ মুসলিমে অতিরিক্ত অংশ বাদে। ইবনু জুবায়ির ইবনু মুত্বঈম হতে তাঁর পিতার তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন এক সলাত আদায় করতে দেখেছেন। বর্ণনাকারী ‘আমর বলেন, সেটা কোন সলাত ছিল (ফরয না নফল) তা আমার জানা নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সলাত আদায়কালে) বলেছেন, “আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আল্লাহু আকবার কাবীরান, আলহামদু লিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, আলহাম দুলিল্লাহি কাসীরান, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসীলা”, (তিনবার) “আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজীমি মিন নাফখিহী ওয়া নাফসিহী ওয়া হামযিহি।" বর্ণনাকারী (‘আমর ইবনু মুররাহ) বলেন, নাফখিহী হচ্ছে শাইত্বানের কবিতা, নাফসিহী হচ্ছে শাইত্বানের অহঙ্কার এবং হামযিহি হচ্ছে শাইত্বানের কুমন্ত্রণা। [৭৬৩] দূর্বলঃ মিশকাত ৮১৭, ইরওয়া ৩৪২। নাফি‘ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নফল সলাত আদায়কালে বলতে শুনেছি ..... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [৭৬৪] ‘আসিম ইবনু হুমায়িদ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাত কিসের দ্বারা আরম্ভ করতেন সে সম্পর্কে আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তুমি আমাকে এমন একটি প্রশ্ন করেছ যা ইতোপূর্বে কেউ করেনি। অতঃপর তিনি বলেন, তিনি সলাতে দাঁড়িয়ে প্রথমে দশবার আল্লাহু আকবার, দশবার আলহামদুলিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং দশবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন। তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ “আল্লাহুম্মাগফির লী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী, ওয়া ‘আফিনী’।” এছাড়া তিনি ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করতেন। [৭৬৫] হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী খালিদ ইবনু মা‘দান রবী‘আহ হতে ‘আয়িশা (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাত কিসের দ্বারা আরাম্ভ করতেন? তিনি বললেন, তিনি রাতে দন্ডায়মান হয়ে এ দু‘আ দ্বারা সলাত আরাম্ভ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফিলা ফাত্বিরাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ‘আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি, আনতা তাহকুমু বাইনা ‘ইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহ্দিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বি-ইযনিকা, ইন্নাকা আনতা তাহদী মান তাশাউ ইলা সিরাত্বিম মুসতাক্বীম।” হাসানঃ মুসলিম। ‘ইকরামাহ ‘ইকরামাহ একই সানাদে ভিন্ন শব্দে ও অর্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে (তাহাজ্জুদ) সলাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করে বলতেন … (হাদীস)। মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, ফারয ও নাফল যে কোন সলাতেই সলাতের প্রথমে, মাঝে বা শেষ দিকের যে কোন সময়ে দু‘আ পড়া যায়। রিফা’আহ ইবনু রাফি‘ আয-যুরাকী (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করছিলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ হতে মাথা উঠিয়ে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ বললে এক ব্যক্তি বলে উঠেন-‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহ”। সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ দু‘আ পাঠকারী কে? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি দেখলাম, তিরিশেরও অধিক মালিয়িকাহ্ (ফেরেশতা) তা সর্বাগ্রে লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। সহীহঃ বুখারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধ্য রাতে (তাহাজ্জুদ) সলাতে দন্ডায়মান হয়ে বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা নূরুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া লাকাল-হামদু আনতা রব্বুস-সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি, ওয়া মান ফীহিন্না, আনতাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল-হাক্কু, ওয়া ওয়া‘দুকাল-হাক্কু, ওয়া লিক্বাউকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান-নারু হাক্কুন, ওয়াস্-সা‘আতু হাক্কুন। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খাসমতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু ফাগফির লী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া আখ্খারতু ওয়া আসরারতু ওয়া আ‘লানতু, আনতা ইলাহী, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” [৭৭০] সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তাহাজ্জুদ সলাতে আল্লাহু আকবার বলার পর বলতেন…. পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। সহীহঃ মুসলিম। মু‘আয ইবনু রিফা‘আহ ইবনু রাফি‘ হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে সলাত আদায় করি। এমন সময় রিফা‘আহ হাঁচি দিয়ে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি মুবারাকান ‘আলাইহি কামা ইউহিব্বু রব্বুনা ওয়া ইয়ারদা।” সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সলাতের মধ্যে এ দু‘আটি কে পাঠ করেছে? অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস মালিক বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে সলাত আদায়কালে আনসার গোত্রের জনৈক যুবক হাঁচি দিয়ে বলল, “আলহামদু লিল্লাহে হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি হাত্তা ইয়ারদা রব্বুনা ওয়া বা‘দু মা ইয়ারদা মিন আমরিদ্-দুনয়া ওয়াল-আখিরাহ।” সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? যুবকটি এ সময় নিরব থাকল। তিনি পুনরায় বললেন, এ কথাগুলো কে বলেছে? সে তো মন্দ কিছু বলেনি। তখন যুবকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো আমিই বলেছি এবং আমি ভাল উদ্দেশ্যই বলেছি। তিনি বললেনঃ এ উক্তিগুলো কোথাও অপেক্ষা করেনি, বরং মহীয়ান রহমানের আরশে পৌঁছে গেছে। [৭৭৩]
যারা বলেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা বলে সলাত শুরু করতে হবে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সলাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এ দু‘আ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।” অতঃপর তিনবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” ও তিনবার “আল্লাহু আকবার কাবীরান” বলার পর “আ‘উযু বিল্লাহিস সামি‘ইল-‘আলীমি মিনাশ-শাইত্বানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পাঠ করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আরম্ভকালে এ দু‘আ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।”
সলাতের শুরুতে চুপ থাকা
আল-হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, সামুরাহ (রাঃ) বলেন, সলাতে নিশ্চুপ থাকার দুটি স্থান (দু‘ সাকতা) আমি স্মরণ রেখেছি। প্রথম সাকতা হলো ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলা থেকে ক্বিরাআত আরাম্ভ করা পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় সাকতা হলো ইমামের সূরাহ ফাতিহা ও অন্য সূরাহ পড়ার পর রুকু‘তে যাওয়ার পূর্বে। কিন্তু ‘ইমরান ইবনু হুসায়িন (রাঃ) একথা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ফলে তারা এ বিষয়ে জানার জন্য মাদীনাহতে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখে পাঠালে তিনি সামুরাহ (রাঃ)-এর বর্ণনাকে সত্যায়িত করেন। [৭৭৬] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে হুমায়িদও অনুরূপভাবে বলেছেন যে, ক্বিরাআত শেষে একটি সাকতা রয়েছে। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দু’জায়গায় চুপ থাকতেন। সলাত আরাম্ভকালে (অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা বলার পর) এবং ক্বিরাআত শেষ করার পর …. অতঃপর ইউনুস সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। [৭৭৭] আল-হাসান (রহঃ) একদা সামুরাহ ইবনু জুনদুব ও ‘ইমরান ইবনু হুসায়িন (রাঃ) পরস্পরে আলোচনাকালে প্রসঙ্গক্রমে সামুরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সলাতের দু’ স্থানে চুপ থাকা (দু’ সাকতা) সম্পর্কিত জ্ঞান হিফয করেছেন। প্রথম সাকতা হচ্ছে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এবং দ্বিতীয় সাকতা হচ্ছে, “গাইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্যলীন” পাঠের পর। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) বিষয়টি স্মরণ রাখলেও ‘ইমরান ইবনু হুসায়িন (রাঃ) তা অস্বীকার করেন বসেন। ফলে তাঁরা দু’জনেই এ বিষয়ে জানার জন্য উবাই ইবনু কা‘ব-এর নিকট পত্র লিখেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে লিখেন যে, সামুরাহ (রাঃ) বিষয়টি যথাযথ স্মরণ রেখেছেন। [৭৭৮] দুর্বলঃ মিশকাত ৮১৮। সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সলাতে দু’স্থানে চুপ থাকা সম্পর্কিত জ্ঞান আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে হিফয করেছি। বর্ণনাকারী সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাহ্ (রহঃ)-কে দু’স্থানে চুপ থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন কেউ সলাত আরাম্ভ করবে এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করবে (তখন চুপ থাকবে)। পরে তিনি বলেন, (ক্বিরাআত শেষ করা অর্থ হচ্ছে) যখন কেউ গাইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্যলীন বলবে। [৭৭৯] আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে চুপ থাকতেন। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যবর্তী সময়ে কেন চুপ থাকেন তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, (এ সময় আমি নিশ্চুপে এ দু‘আ পড়ে থাকি): “আল্লাহুম্মা বাঈদ বাইনী ওয়া বাইনা খত্বা ইয়া ইয়া কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা আনকিনী মিন খত্বা ইয়া ইয়া কাসাওবিল আবয়াযি মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মা মাগসিলনী বিস সালজি ওয়াল মায়ি ওয়াল বারদ।” সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
সশব্দে বিসমিল্লাহ না বলা প্রসঙ্গে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও ‘উসমান (রাঃ) “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন” হতে ক্বিরাআত আরাম্ভ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শুরু করতেন তাকবীরে তাহরীমার দ্বারা আর ক্বিরাআত শুরু করতেন আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন দ্বারা। তিনি রুকু‘তে স্বীয় মাথা উঁচুও করতেন না আবার নীচুও করতেন না বরং পিঠের সাথে সমান্তরাল করে রাখতেন। তিনি রুকু‘ হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বে সিজদায় যেতেন না এবং এক সাজদাহর পর সোজা হয়ে বসার পূর্বে দ্বিতীয় সাজদাহ্ করতেন না। তিনি প্রত্যেক দু’ রাক‘আত সলাত শেষে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ (তাশাহুদ) পড়তেন। অতঃপর বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে রাখতেন। তিনি শাইত্বানের ন্যায় (দু’ গোড়লির উপর পাছা রেখে) বসতে এবং চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় (মাটিতে দু’ হাত বিছিয়ে) সাজদাহ্ করতে নিষেধ করতেন। তিনি সালামের দ্বারা সলাত সমাপ্ত করতেন। সহীহঃ মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ “বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আ’ত্বায়না কাল-কাওসার….” সূরাটি শেষ পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমরা কি জান! কাওসার কী? তাঁরা বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, তা হচ্ছে একটি নাহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। হাসানঃ মুসলিম। ‘উরওয়াহ হতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি ইফকের ঘটনা উল্লেখ পূর্বক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। (অতঃপর ওয়াহী হওয়া শেষে) তিনি মুখ খুলে বললেন, ‘আউযু বিস্ সামি‘ইল ‘আলীম মিনাশ শাইত্বনির রজীম, “ইন্নাল্লাযীনা জা’উ বিল-ইফকি ‘উসবাতুম মিনকুম…” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। অর্থঃ “যারা মিথ্যা অপপ্রচার করেছে তারা তোমাদের মধ্যেরই লোক….।” [৭৮৪] দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। কারণ একদল এ হাদীসটি ইমাম যুহরী (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণনায় উক্ত আয়াতের সাথে আ‘উযু বিল্লাহ্-এর উল্লেখ নেই। আমরা আশঙ্কা হচ্ছে আ‘উযু বাক্যটি বর্ণনাকারী হুমায়িদের উক্তি।
সশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠের বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উসমান(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কিভাবে সূরাহ বারাআতকে সূরাহ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত করে আল-কুরআনের সাব‘উল মাসানী (সাতটি দীর্ঘ সূরাহ)-এর মধ্যে গণ্য করেন এবং উভয় সূরার মধ্যস্থলে বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম কেন লিখেন না? অথচ সূরাহ্ বারাআত মিআতাইন (তথা ১০০-এর অধিক আয়াত সম্বলিত সূরাহ্)-এর অন্তর্ভুক্ত (কারণ সূরাহ্ বারাআতে ১২৯টি আয়াত আছে)। পক্ষান্তরে সূরাহ আল-আনফাল মাসানীর অন্তর্ভুক্ত (কারণ তাতে আয়াতের সংখ্যা ১০০-এর কম অর্থাৎ ৭৫ টি)। ‘উসমান (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর কোন আয়াত অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই তিনি ওয়াহী লিখক সাহাবীদের ডেকে বলতেন: এ আয়াত অমুক সূরাহর অমুক স্থানে সন্নিবেশিত কর যেখানে এই এই বিষয় আলোচিত হয়েছে। তাঁর উপর একটি অথবা দু’টি আয়াত অবতীর্ণ হলেও তিনি ঐরুপ বলতেন। সূরাহ আল-আনফাল হচ্ছে মাদীনাহতে আগমণের পরপরই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর অবতীর্ণ সূরাহ সমূহের অন্যতম সূরাহ। আর সূরাহ বারাআত হচ্ছে কুরআন অবতীর্ণের শেষ পর্যায়ে নাযিলকৃত সূরাহ সমূহের অন্যতম। তথাপি সূরাহ আল-আনফালের ঘটনাবলীর সাথে সূরাহ বারাআতে বর্ণিত ঘটনাবলীর সাদৃশ্য আছে। সেজন্য আমার মনে হলো, এটি সূরাহ্ আল-আনফালের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমি সূরাহ দুটি একত্রে সাব‘উ-তিওয়াল-এর অন্তর্ভুক্ত করি এবং এ উভয় সূরাহ মধ্যস্থলে বিসমিল্লাহ-হির রহমা-নির রহীম লিখি নাই। [৭৮৫] ইবনে আববাস (রাঃ) এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্নিত আছে।তিনি বলেছেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু সূরা্হ আনফালের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ ব্যাপারে তিনি পরিস্কারভাবে কিছুই বলেননি। ইমাম দাউদ (রহঃ) বলেন,শা’বী, আবূ মালিক, ক্বাতাদা্হ ও সাবিত ‘ইবনু উমারা্হ বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর সূরা্হ আন-নামল অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি (কোনো সূরাহর শুরুতে) বিসমিল্লাহ লিখেননি। দুর্বল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর বিসমিল্লাহ-হির রহমানির রহীম অবতীর্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সুরা্র শুরুতে দিক চিহ্নিত করতে পারতেন না।
কোনো অনিবার্য কারনে সলাত সংক্ষেপ করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদা্হ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি কখনো সলাত দীর্ঘায়িত করতে চাই, কিন্তু শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে তার মায়ের কষ্টৈর কথা চিন্তা করে সলাত সংক্ষেপ করি। সহীহঃ বুখারী।
সালাত সংক্ষিপ্ত করা
জাবির (রাঃ) মু‘আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত আদায়ের পর ফিরে এসে আমাদের সালাত ইমামতি করতেন। বর্ননাকারী পুনরায় বলেন, তিনি ফিরে এসে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের সালাত ইমামতি করতেন। এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সালাত আদায়ে বিলম্ব করেন। সেদিনও মু‘আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ‘ইশার সালাত আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করেন। এবং উক্ত সালাতে তিনি সূরাহ আল-বাক্বারা্হ পাঠ করলে এক ব্যাক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী সালাত আদায় করে নেয়। ফলে বলা হলো, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে নাকি? লোকটি বললোঃ আমি মুনাফিক্ব হই নাই। পরে লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! মু‘আয (রাঃ) আপনার সাথে সালাত আদায় শেষে ফিরে গিয়ে আমাদের সালাতের ইমামতি করেন। আমরা মেহনতি মজদুর লোক এবং নিজেরাই ক্ষেতের কাজ-কর্ম করে থাকি। অথচ মু‘আয (রাঃ) আমাদের সালাত ইমামতিকালে সূরাহ বাক্বারাহ পড়েন (অর্থাৎ দীর্ঘ সূরাহ পাঠ করে থাকেন)। হে কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মু‘আযকে সম্বোধন করে) বললেনঃ হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী? তুমি কি লোকদের ফিতনাহয় ফেলতে চাও? তুমি সালাত অমুক অমুক (ছোট) সূরাহ পাঠ করবে। আবূয যুবায়ির বলেন, সূরাহ আল-’আলা, ওয়াল লাইলি, ইযা ইয়াগশা এ ধরনের (ছোট) সুরা্ পাঠ করবে। অতঃপর আমরা তা (বর্ননাকারী) ‘আমরের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার ধারনা, তিনি সেটাও উল্লেখ করেছেন। হাযম ইবনু উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) এর নিকট এমন সময় এলেন যখন তিনি মাগরিব এর সালাতের ইমামতি করছিলেন। বর্ননাকারী এ হাদীসে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাঃ) কে ডেকে বললেনঃ হে মু‘আয! তুমি ফিতনাহ সৃষ্টিকারী হয়ো না। কেননা তোমার পেছনে বৃদ্ধ, রোগগ্রস্হ, কর্মব্যস্ত, এবং মুসাফির লোকেরা সালাত আদায় করে। [৭৯০] মুসাফিরের উল্লেখের দ্বারা মুনকার। আবু সালি্হ (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সহাবীর তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যাক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কি দু‘আ পাঠ করো? লোকটি বললো, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি--) পাঠ করি এবং বলি আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযুবিকা মিনান নার। কিন্তু আমি আপনার ও মু’আযের অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝতে পারিনা। (অর্থাৎ আপনি ও মু‘আয কি দু‘আ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমরাও তার আশে পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত পার্থনা করি)। জাবির (রাঃ) তিনি মু’আয (রাঃ) এর ঘটনা বর্ননা করে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক যুবককে বললেন, হে ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি সালাতে কী পড়? সে বললো ,আমি সুরা্ ফাতিহা পড়ি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা ও জাহান্নাম হতে আশ্রয় চাই। আমি আপনার ও মু‘আয এর অস্পস্ট শব্দগুলো বুঝিনা। (অর্থাৎ আপনি এবং আমাদের ইমাম মু‘আয সালাত নিরবে কোন কোন শব্দযোগে দু‘আ ও মুনাজাত করেন তা আমি অবহিত নই)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এবং মু‘আয উভয়েই আশে-পাশেই ঘুরে থাকি (অর্থাৎ আমরাও জান্নাতের প্রত্যাশা এবং জাহান্নাম হতে আশ্রয় প্রত্যাশা করি) অথবা অনুরুপ কিছু বলেছেন। আবু হুরাইরা্হ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাত ইমামতিকালে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কেননা, মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন, এবং বৃদ্ধ লোকও থাকে। অবশ্য কেও একাকী সালাত আদায় করলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী সালাত দীর্ঘায়িত করতে পারে। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আবু হুরাইরা্হ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমাদের কেও সালাতে ইমামতি করলে যেনো সালাত সংক্ষেপ করে। কারন মুক্তাদীদের মধ্যে দুর্বল ,বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকেরাও থাকে। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম।
সালাতের জন্য ক্ষতিকর দিক
আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এমন লোকও আছে (যারা সালাত আদায় করা সত্ত্বেও সালাতের রুকুন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং সালাতে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুযু না থাকায় তারা সালাতের পরিপূর্ন সাওয়াব পায় না)। বরং তারা দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ্ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ, বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত হয়।
যুহর সালাতের ক্বিরাআত
‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ আবূ হূরাইরাহ (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতেই ক্বিরাআত পড়তে হয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব সালাতে আমাদেরকে শুনিয়ে ক্বিরাআত পড়েছেন, আমরাও তোমাদেরকে সেসব সালাতে সশব্দে ক্বিরাআত পড়ে শুনাই। পক্ষান্তরে তিনি যেসব সালাতে নিঃশব্দে ক্বিরাআত পড়েছেন, আমারাও তাতে নিঃশব্দে ক্বিরাআত পড়ে থাকি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যুহর ও ‘আসর সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরাহ পাঠ করতেন। তিনি কোন কোন সময় আমাদেরকে শুনিয়ে আয়াত পড়তেন। তিনি যুহর সালাতের প্রথম রাকা‘আত কিছুটা দীর্ঘ করতেন এবং ২য় রাকা‘আত সংক্ষেপ করতেন। তিনি ফাজর সালাতও অনুরূপ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ তার বর্ণনাতে সূরাহ ফতিহা ও অন্য সূরাহ পাঠের কথা উল্লেখ করেননি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ (রহঃ) তার পিতার সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে এও রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের শেষ দু’ রাক‘আতে শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতেন। হাম্মামের বর্ণনায় আরও রয়েছেঃ রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক‘আতের তুলনায় প্রথম রাক‘আত কিছুটা দীর্ঘ করতেন। তিনি ফাজর ও ‘আসর ‘সালাতও অনুরূপ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার তিনি বলেনঃ আমাদের ধারনা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম রাক‘আত হয়ত এজন্যই দীর্ঘ করতেন যাতে লোকেরা প্রথম রাক‘আত থেকেই জামা‘আতে শরীক হওয়ার সুযোগ পান। আবূ মা‘মার তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আসর সালাতে ক্বিরাআত পাঠ করতেন কি না এ বিষয়ে আমরা খাব্বাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হ্যা, (পাঠ করতেন)। আমরা তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা তা কিভাবে জানতেন (বা বুঝতেন)? তিনি বলেন, আমরা তাঁর দাড়ি আন্দোলিত হতে দেখে বুঝে ফেলতাম। সহীহঃ বুখারী। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর সালাতের প্রথম রাক‘আতে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, কারো (আগমনের) পদধ্বনি শোনা যেত না। [৮০২]
শেষের দু’ রাক‘আত সংক্ষেপ করা
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার ‘উমার (রাঃ) সা’দ (রাঃ) কে বলেন, লোকেরা আপানার প্রতিটি বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি আপনার সালাত সম্পর্কেও। সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে ক্কিরাআত দীর্ঘ করি এবং শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করি। তিনি আরো বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে যেভাবে সালাত আদায় করেছি- তার কোন ব্যতিক্রম করিনি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আপানার ব্যাপারে আমার ধারনাও তা-ই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘‘আসর সালাত কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা তা নির্ণয় করেছি। আমরা নির্ণয় করি যে, তিনি যুহর সালাত প্রথম দু’ রাক‘আতে ত্রিশ আয়াত পড়ার পরিমান দাঁড়াতেন- যেমন সূরাহ “আলিফ লাম মীম আস-সাজদাহ” ইত্যাদি এবং শেষের দু’ রাক‘আতে তিনি প্রথম দু’ রাক‘আতের চেয়ে অর্ধেক পরিমান দাঁড়াতেন। তিনি যুহরের শেষ দু’ রাক‘আতে যতক্ষণ দাঁড়াতেন ‘আসরের প্রথম দু’ রাক‘আতেও ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি আসরের শেষ দু’ রাক‘আতে তার প্রথম দু’ রাক‘আতে অর্ধেক পরিমান সময় দাড়াতেন। সহীহঃ মুসলিম
যুহর ও ‘‘আসর সালাতে ক্কিরাআতের পরিমান
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আসর সালাতে সূরাহ “ওয়াস-সামায়ি ওয়াত- ত্বারিক” এবং “ওয়াস-সামায়ি যাতিল-বুরুজ”- এর অনুরূপ সূরাহ পড়তেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ত, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত আদায় করতেন এবং তাতে সূরাহ “ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশা”-এর অনুরূপ সূরাহ পড়তেন। তিনি ‘আসর ও অন্যান্য সালাতেও অনুরূপ সূরাহ পড়তেন। তবে তিনি ফাজর সালাতে দীর্ঘ সূরাহ পড়তেন। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর সালাতে (তিলাওয়াতে সাজদাহ্ পাঠ করে) সাজদাহ্ দিয়ে দাড়ালেন, তারপর রুকু‘ করলেন। আমরা তাঁকে সূরাহ “তানযিল আস-সাজদাহ্” পাঠ করতে দেখেছি। ইবনু ঈসা বলেন, মু‘তামির ছাড়া কেউই এ হাদীস উমাইয়্যাহ হতে বর্ণনা করেননি। [৮০৭] দুর্বলঃ মিশকাত ১০৩১। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ তিনি বলেন, একবার আমি বনু হাশিমের কয়েকজন যুবকের সাথে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি আমাদের মধ্যকার এক যুবককে বললাম, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আসর সলাতে ক্বিরাআত করতেন কি? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, না, না। তাঁকে বলা হলো, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্ভবত মনে মনে পড়তেন। তিনি রেগে বললেন, মনে মনে পড়ার চেয়ে না পড়াই উত্তম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশিত ব্যাক্তি, তাঁর প্রতি অবতীর্ণ বিষয় তিনি অকপটে প্রচার করেছেন। আমরা তিনটি বিষয়ে অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। (তা হলো) আমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে উযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাদের জন্য সদাক্বাহ খাওয়া নিষেধ, এবং আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে গাধাকে ঘোডার সাথে সংগম করাতে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আসর সলাতে ক্বিরাআত করতেন কিনা আমি তা অবহিত নই।
মাগরিব সলাতে ক্বিরাআতের পরিমাণ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার উম্মুল ফাদল বিনতুল হারিস (রাঃ) তাঁকে “ওয়াল মুরসালাতি ‘উরফা” শীর্ষক সূরাহ পড়তে শুনে বললেন, হে বৎস! তুমি এ সূরাহ পাঠ করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ মাগরিব সলাতে এ সূরাহ পড়তে শুনেছি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জুবাইর ইবনু মুত্ব‘ইম হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ তূর পাঠ করতে শুনেছি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মারওয়ান ইবনুল হাকাম তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) আমাকে বললেন, আপনি মাগরিব সলাতে “কিসারে মুফাস্সাল” পাঠ করেন কেন? অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাগরিব সলাতে দু’টি লম্বা সূরাহ পড়তে শুনেছি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ লম্বা সূরাহ দু’টি কি কি? তিনি বললেন, সূরাহ আল-আ‘রাফ ও সূরাহ আল-আন‘আম। (ইবনু জুরাইজ বলেন) এরপর আমি এ বিষয়ে ইবনু আবূ মুলায়কাহকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজের পক্ষ হতে বললেন লম্বা সূরাহ দু’টি হচ্ছে সূরাহ আল-মায়িদাহ্ ও সূরাহ আল-আ‘রাফ। সহীহঃ বুখারী সংক্ষেপে।
মাগরিব সলাতে ক্বিরাআত সংক্ষেপ করা
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ তিনি বলেন, আমার পিতা মাগরিবের সলাতে তোমাদের মতই সূরাহ আল ‘আদিয়াত ও অনুরূপ দীর্ঘ সূরাহ পড়তেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে, মাগরিব সলাতে দীঘ সূরাহ পাঠ রহিত হয়ে গেছে। আর এটাই সহীহ। ‘আমর ইবনু শু‘আইব হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফরয সলাতে ইমামতিকালে মুফাস্সালের ছোট-বড় সব সূরাহই পড়তে শুনেছি। [৮১৪] আবূ ‘উসমান আন-নাহদী তিনি বলেন, একবার তিনি ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর পিছনে মাগরিবের সলাত আদায় করেন। তিনি সূরাহ ইখলাস পাঠ করেন। [৮১৫]
উভয় রাক‘আতে একই সূরাহ পাঠ প্রসঙ্গে
মু‘আয ইবনু ‘আব্দুল্লাহ আল-জুহানী তিনি বলেন, জুহায়নাহ গোত্রের এক ব্যক্তি তাঁকে অবহিত করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফাজ্র সলাতে উভয় রাক’আতে “ইজা যুলযিলাতিল আরজু” পাঠ করতে শুনেছেন। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলবশতঃ এরূপ করেছিলেন না ইচ্ছাকৃতভাবে, তা আমি অবহিত নই।
ফাজ্র সলাতের ক্বিরাআত
‘আমর ইবনু হূরাইস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফাজ্রের সলাতে “ফালাউক্বসিমু বিল খুন্নাস, আল জাওয়ারিল কুন্নাস” সূরাহ (তাকবীর) পাঠ করার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। সহীহঃ মুসলিম।
সলাতে কেউ সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন সলাতে সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে কুরআন থেকে সহজপাঠ্য কোন আয়াত পড়ি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি মাদিনাহ্র রাস্তায় বের হয়ে ঘোষনা করো যে, কুরআন পাঠ ছাড়া সলাত হয় না; অন্তত সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) অবশ্যই মিলাবে। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আদেশ করেন যে, আমি যেন ঘোষনা করি, সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) না মিলালে সলাতই হবে না। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি সলাত আদায় করল, যার মধ্যে ‘কুরআনের মা’ অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সলাত ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবু হুরায়রা্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বললেন, হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি সলাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহ’র মধ্যে দু’ ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহ’র জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা কিছু চায়, তাকে তাই দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, “আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “আর-রহমানির রহীম”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুনগান করছে। বান্দাহ যখন বলে, “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন”- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন”- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, “ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, সীরাতালাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দালীন”- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহ’র জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে। সহীহঃ মুসলিম। ‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) এ হাদিসের সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অতিরিক্ত কিছু পরবে না, তার সলাত পূর্ণাঙ্গ হবে না। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, এ নির্দেশ একাকী সলাত আদায়কারীর জন্য। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিমে তার বক্তব্যের এ অংশটুকু বাদে “তার সাথে অতিরিক্ত কিছু..” শেষ পর্যন্ত। আর মুসলিমে (আরবী) রয়েছে। ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর পিছনে ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলাম। সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিরাআত পড়াকালে ক্বিরাআত তাঁর জন্য ভারী হয়ে গেল। সলাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে ক্বিরাআত করেছ। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হ্যাঁ। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এমনটি কর না, তবে তোমাদের সূরাহ ফাতিহা পড়াটা স্বতন্ত্র। কেননা যে ব্যাক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না, তার সলাত হয় না। নাফী‘ ইবনু মাহমুদ ইবনু রাবী‘ আল-আনসারী নাফী‘ বলেন, একবার ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) ফাজ্র সলাতে বিলম্বে উপস্থিত হন। ফলে মুয়াজ্জিন আবূ নু‘আইম (রহঃ) সলাতের তাকবীর বলে লোকদের নিয়ে সলাত আরম্ভ করেন। তখন আমি এবং ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) উপস্থিত হয়ে আবূ নু‘আইমের পিছনে ইকতিদা করি। আবূ নু‘আইম সলাতে স্বরবে ক্বিরাআত পড়ছিলেন। ‘উবাদাহ (রাঃ) (তার পিছনে) সূরাহ ফাতিহা পড়েন। সলাত শেষে আমি ‘উবাদাহ (রাঃ)-কে বললামঃ আবূ নু‘আইমের স্বরবে ক্বিরাআত পাঠকালে আমি আপনাকেও সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে শুনলাম? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ওয়াক্তের স্বরব ক্বিরাআতের সলাতে আমাদের ইমামতি করেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিরাআতের সময় আটকে গেলেন। অতঃপর সলাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের লক্ষ্য করে বলেনঃ আমার স্বরবে ক্বিরাআত পাঠকালে তোমরাও কি ক্বিরাআত করেছ? জবাবে আমাদের কেউ কেউ বললেন, হ্যাঁ, আমরাও ক্বিরাআত করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এমনটি করবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, ক্বিরাআত পাঠের সময় তাইতো ভাবছিলাম, আমার কুরআন পাঠে কিসে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে? অতএব আমি সলাতে যখন স্বরবে ক্বিরাআত করি, তখন তোমরা কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। ইবনু জাবির, সাঈদ ইবনু ‘আবদুল আযীয এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু আ‘লা তাঁরা মাকহুল হতে ‘উবাদাহ (রাঃ) সূত্রে আর-রাবী‘ ইবনু সুলাইমানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, ইমাম মাকহুল (রহঃ) মাগরিব, ‘ইশার ও ফাজ্র সলাতে (ইমামের পিছনে) প্রত্যেক রাক‘আতেই নিঃশব্দে সূরাহ ফাতিহা পরতেন। ইমাম মাকহুল (রহঃ) বলেন, যে সলাতে ইমাম উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত পড়েন এবং থামেন তুমি তখন সূরাহ ফাতিহা নীরবে পড়ে নিবে। আর ইমাম যদি বিরতিহীনভাবে ক্বিরাআত করেন, তাহলে তুমি হয় ইমামের আগে, পরে বা ইমামের সাথেই সূরাহ ফাতিহা পড়ে নিবে এবং কোন অবস্থাতেই তা পাঠ করা ছেড়ে দিবে না।
স্বরব ক্বিরাআতের সলাতে (মুক্তাদীর) সূরাহ ফাতিহা পাঠ যে অপছন্দ করে
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বরব ক্বিরাআতের সলাত আদায় শেষে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমাদের কেউ কি এইমাত্র আমার সাথে (সলাতে) কুরআন পাঠ করেছ? জবাবে এক ব্যাক্তি বলেনঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাইতো ভাবছিলাম আমার কুরআন পাঠে কেন বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে লোকেরা জেহরী সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ক্বিরাআত করা থেকে বিরত থাকেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু উকায়মাহ্র এ হাদীসটি মামার, ইউনুস ও উসামাহ ইবনু যায়িদ যুহরী সূত্রে বর্ণনাকারী মালিকের হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেছেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করেন। সম্ভবতঃ তা ফাজ্রের সলাত। অতঃপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করে “আমার কুরআন পাঠে কিসে বিঘ্ন সৃষ্টি হল” এই পর্যন্ত বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, মা‘মার বলেন, অতঃপর লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সলাতে ক্বিরাআত পাঠ হতে বিরত থাকেন। ইবুনস সারহ্ তার বর্ণিত হাদীসে বলেন যে, মা‘মার যুহরী সূত্রে বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, আতঃপর লোকেরা ক্বিরাআত হতে বিরত থাকেন। আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আয-যুহরীর বর্ণনায় (আরবী) শব্দের উল্লেখ আছে। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, ইমাম যুহরী এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমি শুনিনি। তখন মা‘মার বলেন, তিনি বলেছেন, অতঃপর লোকেরা বিরত থাকেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন যে, হাদীসটি ‘আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব ইমাম যুহরী সূত্রে (আরবী) পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। ইমাম আওযাঈ যুহরী সুত্রের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, যুহরীর বর্ণনায় এ কথাও আছে যে, ঐ ঘটনায় মুসলিমগণ উপদেশ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁরা স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে ক্বিরাআত পড়তেন না। সহীহ। ইমাম আবূ দউদ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়াহ ইবনু ফারিসকে বলেতে শুনেছি যে, “অতঃপর লোকেরা ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ হতে বিরত থাকেন” কথাটুকু ইমাম যুহরীর।
নীরব ক্বিরাআতের সলাতে মুক্তাদীর ক্বিরাআত পাঠ সম্পর্কে
‘ইমারান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁর পিছনে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল- আলা” (সূরাহ আ‘লা) পাঠ করল। সলাত শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যকার কে ক্বিরাআত করেছে? জবাবে তাঁরা বলেন, এক ব্যক্তি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি তোমাদের কেউ আমাকে (কুরাআন পাঠে) জটিলতায় ফেলেছে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূল ওয়ালীদ তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, শু‘বাহ বলেন, আমি ক্বাতাদাহকে বললাম- সাঈদ কি বলেননি যে, “কুরআন পাঠের সময় চূপ থাক?” তিনি বললেনঃ এ হুকূম স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সলাতের জন্য। ইমাম ইবনু কাসীর তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, (শু‘বাহ বলেন) আমি ক্বাতাদাহকে বললাম, সম্ভবতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন ক্বিরাআত পাঠ অপছন্দ করেছেন। তিনি বললেন, যদি তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপছন্দ করতেন তাহলে তিনি ক্বিরাআত পাঠে নিষেধ করতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে যুহ্রের সলাত আদায় শেষে বললেন, তোমাদের মধ্যকার কে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ‘লা” (সূরাহ আ‘লা) পড়েছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমাদের কেউ আমাকে সলাতে কুরআন পাঠে জটিলতায় ফেলেছে। সহীহঃ মুসলিম।
নিরক্ষক ও অনারব লোকের কিরাআতের পরিমাণ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা কিরা’আত করছিলাম, এমনসময় সেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন। তখন আমাদের মধ্যে আরব বেদুইন এবং অনারব লোকজন ছিল।তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা (কুরআন) পড়, প্রত্যেকেই উত্তম। কেননা অচিরেই এমন সম্প্রদায়ের অর্বিভাবঘটবে যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় ঠিক করবে (তাজবীদ নিয়ে বারাবাড়ি করবে), তারা কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করবে না। সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা কিরা’আত করছিলাম এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত হয়ে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর কিতাব একটাই। আর তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা এবং কেউ বা কালো রঙ্গের। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে (কুরআন) পড় যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় দৃঢ় করবে। তারা কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করবে না (অর্থাৎ আখিরাতের অপেক্ষা না করে এর বিনিময় দুনিয়াতেই পেতে চাইবে)। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক লোক এসে বলল, আমি কুরআন মুখস্থ করতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা কুরআনের পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বলোঃ “সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা তো মহা সম্মানিত আল্লাহর জন্য, আমার জন্য কি? নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বলো: “আল্লাহুম্মা ইরহামানী, ওয়ারযুক্বনী, ওয়া ‘আফিনী ওয়াহদিনী।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি ওগুলো হাতের অঙ্গুলিতে গণনা করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই লোক তার হাতকে উত্তম বস্ত দ্বারা পরিপূর্ণ করেছে। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন,আমরা নাফল সালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায় দু‘আ করতাম এবং রুকু ও সাজদাহ্ অবস্থায় তাসবীহ পড়তাম। হাম্মাদ (রহঃ) হুমায়িদ সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে নফল সালাতের কথা উল্লেখ নেই। তিনি (হুমায়িদ) বলেন, হাসান (রাঃ) যুহর এবং ‘আসর সালাতে- ইমাম কিংবা মুক্তাদী উভয় অবস্থায়ই সূরাহ ফাতেহা পড়তেন এবং তিনি উক্ত সালাত সূরাহ ক্বাফ ও সূরাহ যারিয়াত পাঠের অনুরূপ সময় পর্যন্ত তাসবীহ তাহলীল ও তাকবীর পড়তেন।
সালাতে পরিপূর্ণ তাকবীর বলা
মুত্বাররিফ তিনি বলেন, একদা আমি এবং ‘ইমরান ইবনু হুসায়িন ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর পিছনে সালাত আদায় করি। তিনি সাজদাহ ও রুকু‘কালে তাকবীর বলতেন এবং দু’ রাক‘আত সালাত শেষে (তৃতীয় রাক‘আতের জন্য) উঠার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষে প্রত্যাবর্তনকালে ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেনঃ ইতিপূর্বে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে যে নিয়মে সালাত আদায় করেছেন তিনিও সে নিয়ামেই সালাত আদায় করলেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ বাকর ইবনু ‘আবদূর রহমান এবং আবূ সালামাহ (রাঃ) তাঁরা বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রত্যেক ফারয ও অন্যান্য সালাত দাঁড়ানো এবং রুকু‘র সময় তাকবীর বলতেন। অতঃপর সাজদাহয় যাওয়ার পূর্বে (দাঁড়িয়ে) বলতেন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” এরপর বলতেন “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ”। তারপর সাজদাহকালে তিনি আল্লাহু আকবার বলতেন। এরপর সাজদাহ থেকে মাথা উঠানো ও পুনরায় সাজদাহকালে এবং পুনরায় সাজদাহ হতে মাথা উঠানোর সময় তিনি তাকবীর বলতেন। দ্বিতীয় রাক‘আতের বৈঠক হতে দাঁড়ানোর সময়ও তিনি তাকবীর বলতেন। প্রত্যেক রাক‘আতেই তিনি তাকবীর বলতেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি বলতেনঃ সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তোমাদের তুলনায় আমার সালাত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত এভাবেই সালাত আদায় করতেন। সহীহ : বুখারী, মুসলিমে সংক্ষেপে। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, ইমাম মালিক, যুবায়দী, ও অন্যরা যুহরী হতে ‘আলী ইবনু হুসাইনের সূত্রে এটাকে সর্বশেষ বাক্য বলেছেন। আর ‘আব্দুল আ’লা মা‘মার হতে যুহরীর সূত্রে এ বিশয়ে একমত পোষণ করেছেন। আব্দুর রহমান ইবনু আবযা হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ণভাবে তাকবীর বলতেন না। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর পর সাজদাহয় গমনের ইচ্ছা করলে পূর্ণরূপে তাকবীর বলতেন না এবং সাজদাহ থেকে উঠে দাঁড়নোর সময়ও পূর্ণরূপে তাকবীর বলতেন না। [৮৩৭]
সাজদাহর সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখা প্রসঙ্গে
ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত সাজদাহয় গমনকালে (জমিনে) হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন এবং সাজদাহ হতে দাঁড়নোর সময় হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন। [৮৩৮] আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল হতে তাঁর পিতার তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহকালে স্বীয় হস্তদ্বয় মাটিতে রাখার পূর্বে হাঁটুদ্বয় মাটিতে স্থিরভাবে রাখতেন। বর্ণনাকারী হাম্মাম (রাঃ) শাক্বীক্ব সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ‘আসিম ইবনু কুলায়ির তাঁর পিতার হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। উল্লিখিত বর্ণনাকারীদ্বয়ের মধ্যে আমার জানামতে সম্ভাব্য মুহাম্মাদ ইবনু জুহাদা বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহর পর উঠে দাঁড়ানোর সময় হাঁটু ও রানের উপর ভর করে দাঁড়াতেন। [৮৩৯] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সাজদাহর সময় উটের ন্যায় না বসে এবং সাজদাহকালে যেন মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কেউ সালাত উটের বসার ন্যায় বসে থাকে।
বিজোড় রাক‘আতের পরে দাঁড়ানোর নিয়ম
আবূ ক্বিলাবাহ তিনি বলেন, একদা আবূ সুলায়মান মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) আমাদের মাসজিদে এসে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায়ের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন তা তোমাদেরকে দেখাতে চাই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি আবূ ক্বিলাবাহকে বললাম, তিনি কিভাবে সালাত আদায় করতেন? জবাবে তিনি বললেন, আমাদের শায়খ ‘আমর ইবনু সালামাহ (রহঃ)- এর সালাতের অনুরূপ, যিনি তাদের ইমাম ছিলেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তিনি প্রথম রাক‘আতের শেষ সাজদাহ্ হতে মাথা উঠানোর পর একটু বসতেন, অতঃপর উঠে দাঁড়াতেন। সহীহঃ বুখারী। আবূ ক্বিলাবাহ তিনি বলেন, একদা আবূ সুলায়মান মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) আমাদের মাসজিদে এসে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি এখন সালাত আদায় করবো, কিন্তু সালাত আদায়ের উদ্দেশে নয়। বরং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি তা তোমাদেরকে দেখাতে চাই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি প্রথম রাক‘আতের দ্বিতীয় সাজদাহ হতে মাথা উঠানোর পর একটু বসতেন। মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি দেখেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের বিজোড় রাক‘আত সমূহে সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত দাঁড়াতেন না। সহীহঃ বুখারী।
দু’ সাজদাহর মাঝখানে বসা
ইবনু জুরাইজ তিনি বলেন, আবূ জুবাইর ত্বাউস থেকে শুনে আমাকে বলেছেন যে, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে দু’ সাজদাহর মাঝে দু’ পায়ের গোড়ালির উপর পাছা রেখে বসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন, এটি সুন্নাত। ত্বাউস বলেন, আমরা বললাম, আমরা এরূপ করাকে পায়ের জন্য কষ্টকর মনে করি। জবাবে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এরূপ করা তোমার নাবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত। সহীহঃ মুসলিম।
রুকু‘ হতে মাথা উঠানোর সময় যা বলবে
‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ হতে মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, মিলউস-সামাওয়াতি ওয়া মিলউল আরদি ওয়া মিলউ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা’দু”। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, সুফয়ান ও শু’বাহ হাদীসটি ‘উবাইদ আবুল হাসান হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে “রুকূ‘র পরে” কথাটি উল্লেখ নেই। সুফয়ান সাওরী বলেন, আমরা শায়খ ‘উবাইদ আবুল হাসানের সাথে সাক্ষাত করেছি। তিনিও তাতে ‘রুকুর পরে’ কথাটি উল্লেখ করেননি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু‘বাহ (রহঃ) আবু ‘ইসমাহ হতে, তিনি আ‘মাশ হতে, তিনি ‘উবাইদ হতে এ হাদীস বর্ণনার সময় “রুকুর পরে” কথাটি উল্লেখ করেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলার পর বলতেন “রব্বানা লাকাল হামদ মিলউস-সামায়ি”। (বর্ণনাকারী মুআম্মালের বর্ণনা মতে) “মিলউস সামাওয়াতি ওয়া মিলউল আরদি ওয়া মিলউ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা’দু, আহলুস সানায়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্বলাল ‘আবদু, ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন লা মা-নি’আ লিমা আ’ত্বাইতা”। বর্ণনাকারী মাহমুদের বর্ণনায় এ বাক্যটিও রয়েছেঃ “ওয়ালা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা”। অতঃপর সমস্ত বর্ণনাকারী এ বাক্যটি বলার বিষয়ে একমতঃ “ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।” সহীহঃ মুসলিম। বর্ণনাকারী বিশর বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল “রব্বানা লাকাল হামদ” বলতেন। মাহমুদের বর্ণনায় “আল্লাহুম্মা” শব্দটি নেই। তিনি শুধু “রব্বানা লাকাল হামদ” এর কথা উল্লেখ করেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বললে তোমরা বলবেঃ “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ”। কেননা যার এ উক্তি ফেরেশতাদের উক্তির সাথে একই সময়ে উচ্চারিত হবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আমির (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলবে না, বরং বলবে “রব্বানা লাকাল হামদ”।
দু’ সাজাদাহর মাঝখানে দু‘আ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ সাজদাহ্র মাঝে এ দু‘আ পড়তেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়া ‘আফিনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী”।
ইমামের পিছনে সালাত আদায়কালে মহিলারা সাজদাহ হতে মাথা কখন উঠাবে
আসমা বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের (নারীদের) মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাসী, তারা যেন পুরুষদের মাথা উঠানোর পূর্বে নিজেদের মাথা উত্তোলন না করে। কেননা পুরুষদের সতর দেখা নারীদের জন্য অপছন্দনীয়।
রুকূ‘ হতে উঠে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো এবং দু’ সাজদাহর মাঝে দীর্ঘক্ষণ বসা সম্পর্কে
আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্, রুকূ’ ও দু’ সাজদাহ্র মধ্যবর্তী বৈঠক প্রায় একই সমান হতো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন সংক্ষেপে অথচ পূর্ণাঙ্গভাবে সালাত আদায় করতেন, আমি এরূপ সালাত অন্য কারো পিছনে আদায় করিনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমাদের মনে হতো যে, তিনি ভুলে গেছেন। অতঃপর তিনি তাকবীর বলে সাজদাহ্ করতেন এবং দু’ সাজদাহ্র মধ্যবরতী সময়ে এতো দীর্ঘক্ষণ বসতেন যে, আমাদের মনে হতো তিনি দ্বিতীয় সাজদাহ্র কথা হয়তো ভুলে গেছেন। সহীহঃ মুসলিম, বুখারী সংক্ষেপে। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাতরত অবস্থায় দেখি। আমি তাঁর ক্বিয়ামকে রুকূ’ ও সাজদাহ্র অনুরূপ পেলাম। তাঁর রুকূ’ তাঁর সাজদাহ্র সমান এবং দু’ সাজদাহ্র মাঝখানের বৈঠক, অতঃপর সাজদাহ্ করা, অতঃপর সালাম ফিরানো পর্যন্ত বৈঠক প্রায় একই সমান পেয়েছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদ বলেন, তাঁর রুকূ’ এবং দু’ রাক‘আতের মধ্যবর্তী ই’তিদাল, তাঁর সাজদাহ্ ও দু’ সাজদাহ্র মাঝে বসা, দ্বিতীয় সাজদাহ্ এবং সালাম ফিরানোর পর লোকদের দিকে মুখ করে বসা- সবই প্রায় একই সমান ছিল। সহীহঃ মুসলিম।
যে ব্যক্তি রুকূ’তে স্বীয় পিঠ সোজা করে না
আবূ মাসউদ আল-বাদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ’ ও সাজদাহ্তে পিঠ সোজা করে না, তাঁর সালাত যথেষ্ট নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলো এবং এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং আবার সালাত আদায় করো, তুমি সালাত আদায় করোনি। লোকটি ফিরে গিয়ে আগের মতো সালাত আদায় করে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পুনরায় সালাম দিলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বলেনঃ তুমি গিয়ে আবার সালাত আদায় করো, কারণ তুমি তো সালাত আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার সালাত আদায় করলো। অতঃপর লোকটি বলল, ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চাইতে উত্তমরূপে সালাত আদায় করতে পারি না। কাজেই আমাকে সালাতের পদ্ধতি শিখিয়ে দিন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি সালাত দাঁড়ানোর সময় সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর তোমার সুবিধানুয়ায়ী কুরআনের আয়াত পাঠ করবে, অতঃপর শান্তি ও স্থিরতার সাথে রুকূ’ করবে, অতঃপর রুকূ’ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ্ করবে। এরপর প্রশান্তির সাথে বসবে। এভাবেই তোমার পুরো সালাত আদায় করবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষে তাকে বললেনঃ তুমি এভাবে সালাত আদায় করলে তোমার সালাত পরিপূর্ণভাবে আদায় হবে। আর এর কোন অংশ আদায়ে ত্রুটি করলে তোমার সালাতও ত্রুটিপুর্ণ হবে। এতে আরো রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি সালাত আদায় করতে চাইলে প্রথমে উত্তমরূপে উযু করে নিবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আলী ইবনু ইয়াহইয়াহ (রাঃ) হতে তাঁর চাচার তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। অতঃপর তিনি পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি তাতে বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উযুর অঙ্গসমূহ উত্তমরূপে না ধুলে সালাত পূর্ণ হবে না। উযুর অঙ্গসমূহ উত্তমরূপে না ধুলে সালাত পূর্ণ হবেনা। উযুর পর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাম্দ ও সানা পড়ে কুরআন হতে যা ইচ্ছে হয় তিলওয়াত করবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে এমনভাবে রুকু’ করবে যেন তার জোড়াসমূহ স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে। অতঃপর “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলে স্থিরভাবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে এমন সাজদাহ্ করবে, যাতে শরীরের জোড়াসমূহ স্ব–স্ব স্থানে যথারীতি অবস্থান করে। অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে এবং পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্তে যাবে, শরীরের জোড়া সমূহ প্রশান্তি লাভ না করা পর্যন্ত সাজদাহ্তে অবস্থান করবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্ হতে মাথা উঠাবে। কোন ব্যক্তি যখন এরূপে সালাত আদায় করবে, তখনই তার সালাত পরিপূর্নভাবে আদায় হবে। রিফা‘আহ ইবনু রাফি’ (রাঃ) উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে উযু না করলে কারও সালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং সে তার মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে, মাথা মাসাহ করবে এবং উভয় পা গোড়ালীসহ ধুবে। অতঃপর হাম্মাদের হাদীসের অনুরূপ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহু আকবার বলে কপাল মাটিতে লাগিয়ে সাজদাহ করবে এমনভাবে যেন শরীরের জোড়াসমূহ স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে ও প্রশান্তি পায়। এরপর তাকবীর বলে সোজা হয়ে পাছার উপর ভর দিয়ে বসবে এবং পিঠ সোজা রাখবে। এরূপে তিনি চার রাক‘আত সালাতের নিয়ম শেষ পর্যন্ত বর্ণনা দেন। এ পদ্ধতিতে সালাত আদায় না করলে তোমাদের কারো সালাতই পরিপূর্ণ হবে না। রিফা’আহ ইবনু রাফি’ (রাঃ) উপরোক্ত ঘটনা বর্ণিত আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি সালাত আদায়ে দাঁড়ালে ক্বিবলাহমুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে সূরাহ ফাতিহা এবং কুরআনের কিছু অংশ তিলওয়াত করবে। অতঃপর রুকূ’তে তোমার দু’হাত দু’হাঁটুর উপর রাখবে এবং পিঠ লম্বা করে রাখবে। তিনি আরো বলেনঃ তুমি সাজদাহ্ করলে তাতে কিছুক্ষন অবস্থান করবে এবং সাজদাহ্ হতে মাথা উঠানোর পর তোমার বাম উরূর উপর বসবে। রিফা’আহ ইবনু রাফি’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর নামে তাকবীর বলবে। এরপর কুরআনের যে অংশ তোমার জন্য সহজ তা তিলওয়াত করবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি সালাতের প্রথম বৈঠকে প্রশান্তির সাথে বসবে এবং এ সময় তোমরা বাম পা বিছিয়ে দিবে, অতঃপর তাশাহুদ পড়বে। অতঃপর আবার দাঁড়ালে উপরোক্ত নিয়মেই সালাত শেষ করবে। রিফা’আহ ইবনু রাফি’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী উযূ করো, তারপর শাহাদাত পাঠ করো। তারপর দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলার পর কুরআনের মুখস্থ অংশ পাঠ করো। অন্যথায় আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করো। তাতে আরো রয়েছেঃ এর থেকে কিছু বাদ দিলে তুমি তোমার সালাতকে ত্রুটিপূর্ণ করলে। ‘আবদুর রহমান ইবনু শিব্ল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন কাকের ঠোকরের মত (তাড়াতাড়ি) সাজদাহ্ করতে, চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বাহু বিছাতে এবং উটের ন্যায় মাসজিদের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে। সালিম আল-বার্রাদ তিনি বলেন, একদা আমরা ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-আনসারী (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আমাদেরকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন তিনি আমাদের সামনে মাসজিদে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহু আকবার বলে সালাত আরম্ভ করলেন। তিনি রুকূ’তে স্বীয় দু’হাত দু’হাঁটুর উপর রাখেন এবং তাঁর আঙ্গুলগুলো হাঁটুর নীচের অংশে রাখেন আর দু’হাতের কনুইদ্বয় ফাঁকা রাখেন, এমতাবস্থায় শরীর স্থির হয়ে যায়। এরপর তিনি ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়ান। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ্তে যান এবং দু’হাতের কনুইদ্বয় ফাঁকা রেখে এমনভাবে সাজদাহ্ করেন যে, তাঁর সমস্ত শরীর স্থির হয়ে গেলো। অতঃপর সাজদাহ্ থেকে মাথা উঠিয়ে স্থিরভাবে বসেন। তিনি আরো এক রাক‘আত অনুরূপভাবে আদায় করেন। এভাবে তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করার পর বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবেই সালাত আদায় করতে দেখেছি।
নাবী -(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ কারো ফরয সালাত ত্রুটি থাকলে তা তার নাফল সালাত দিয়ে পূর্ণ করা হবে
আনাস ইবনু হাকীম আদ্-দাব্বী তিনি বলেন, তিনি যিয়াদ অথবা ইবনু যিয়াদের ভয়ে মদিনায় চলে আসেন এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে তাঁর বংশ পরিচয় দিলেন এবং আমি ও আমার বংশ পরিচয় দিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে যুবক! আমি কি তোমার কাছে হাদীস বর্ণনা করব না? জবাবে আমি বলিঃ হ্যাঁ, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন ! বর্ণনাকারী ইউনুস বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ হাদীস সরসরি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষের ‘আমালসমূএর মধ্যে সর্বপ্রথম তাদের সালাত সম্পর্কে হিসাব নেয়া হবে। তিনি বলেনঃ আমাদের মহান রব্ব ফেরেশতাদের বান্দার সালাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করবেন, দেখো তো সে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি তাতে কোন ত্রুটি রয়েছে? অতঃপর বান্দার সালাত পূর্নাঙ্গ হলে পূর্নাঙ্গই লিখা হবে। আর যদি তাতে ত্রুটি থাকে তাহলে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, দেখো তো আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে তিনি বলবেনঃ আমার বান্দার ফরয সালাতের ঘাটতি তার নফল সালাত দ্বারা পরিপূর্ণ করো। অতঃপর সকল আমলই এভাবে গ্রহন করা হবে (অর্থাৎ নফল দ্বারা ফরযের ত্রুটি দূর করা হবে)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তামীম আদ্-দারী (রাঃ) রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর যাকাতের হিসাব ও অনুরূপভাবে নেয়া হবে। অতঃপর অন্যান্য আমলের হিসাব ও অনুরূপভাবে গ্রহণ করা হবে।
দু’ হাত দু’ হাটুঁর উপর রাখা
মুস’আব ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কালে আমার দু’হাত দু’হাটুঁর মাঝখানে রাখলে তিনি আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমি পুনরায় এরূপ করলে তিনি আমাকে বলেনঃ এরূপ করো না, কেননা পূর্বে আমরাও এরূপ করতাম; কিন্তু আমাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করা হয় এবং আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আলক্বামাহ ও আসওয়াদ হতে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ রুকু‘র সময় যেন তার দুই বাহু রানের উপর বিছিয়ে রাখে এবং দু’হাত একত্রে মিলিয়ে রাখে। কেননা (এখনো) আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর আঙ্গুলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে দেখছি। সহীহঃ মুসলিম।
রুকু ও সাজদাহর দু‘আ
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, ‘ফাসাব্বিহ বিসমি ‘রব্বিকাল আযীম’ কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা এটা রুকুতে পাঠ করবে। অতঃপর ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’ এ আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি বলেন, তোমরা এটা সাজদাহতে পাঠ করবে। [৮৬৯] দুর্বলঃ ইরওয়া। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহী’ তিনবার বলতেন এবং সাজদাহতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা ওয়া বিহামদিহী’ তিনবার বলতেন। [৮৭০] দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) বলেন, ‘বিহামদিহী’ শব্দটি নিয়ে আমরা সন্দিহান। হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ এবং সাজদাহতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করতেন এবং কুরআন তিলাওয়াতকালে তিনি কোন রহমাতের আয়াতে পৌঁছলে সেখানে থেমে রহমাতের দু‘আ করতেন এবং কোন ‘আযাবের আয়াত তিলাওয়াতকালে সেখানে থেমে ‘আযাব থেকে পরিত্রান চাইতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ এবং রুকূতে ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ’ বলতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সালাত আদায়ে দাঁড়ালাম। তিনি সূরাহ বাক্বারাহ তিলাওয়াতের সময় কোন রহমাতের আয়াতে পৌঁছলে তথায় থেমে রহমাত চাইতেন এবং যখন কোন আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, তখন সেখানে থেমে আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূতে অবস্থান করেন এবং তাতে “সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি” পাঠ করেন। অতঃপর তিনি কিয়ামের সমপরিমাণ সময় সাজদাহতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দু‘আ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি (দ্বিতীয় রাক‘আতে) দাঁড়িয়ে সূরাহ আলে-’ইমরান তিলাওয়াত করেন। অতঃপর (প্রত্যেক রাক‘আতে) একটি করে সূরাহ তিলাওয়াত করেন। হুযাইফাহ (রাঃ) একদা রাতে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাত আদায় করতে দেখলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলার পর ‘যুল-মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সূরাহ বাকারাহ তিলাওয়াত শুরু করেন। এবং তাঁর রুকু ছিলো কিয়ামের সমপরিমাণ সময়। তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম, ’সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম পাঠ করেন। অতঃপর রুকু হতে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকুর সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন এবং এ সময় “লি-রব্বিয়াল হামদ” পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সাজদাহয় গিয়ে তাতে কিয়ামের অনুরূপ সময় অবস্থান করেন এবং হে সময় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা’ পাঠ করেন। অতঃপর সাজদাহ হতে মাথা উঠিয়ে দু’ সাজদাহর মাঝে সাজদাহয় অবস্থানের সমপরিমাণ সময় বসে থাকেন এবং এখানে তিনি ‘রব্বিগফিরলী’ পাঠ করেন। এরূপে তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করেন এবং এ সালাত সূরাহ আল-বাকারাহ, সূরাহ আলে-’ইমরান, সূরাহ নিসা এবং সূরাহ মায়িদাহ অথবা সূরাহ আন’আম তিলাওয়াত করেন।
রুকু’ ও সাজদাহয় যা পাঠ করবে
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা সাজদাহর সময়ে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে। কাজেই এ সময় তোমরা অধিক পরিমাণে দু‘আ পাঠ করবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (অসুস্থকালে) স্বীয় হুজরার পর্দা উঠিয়ে দেখলেন, লোকেরা আবূ বাকর (রাঃ)-এর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ হে লোকেরা ! নবুওয়্যাতের কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে মুসলিমরা যে নেক স্বপ্ন দেখবে তা ব্যতিত। তিনি আরো বলেনঃ আমাকে রুকু’ ও সাজদাহতে কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা রুকু অবস্থায় রব্বের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো এবং সাজদাহতে বেশি করে দু‘আ পড়ার চেষ্টা করো। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ কবুল হবে। সহীহঃ মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ‘ ও সাজদাহ্তে বেশী করে এ দু‘আ পড়তেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী”। তিনি এভাবে কুরআনের আয়াতকে ব্যাখ্যা করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্তে এ দু‘আ পড়তেনঃ “আল্লাহুম্মাগফিরলী যামবী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জুল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু।” ইবনুস সারহ এ বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেনঃ “আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।” সহীহঃ মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিছানায় না পেয়ে তার খোঁজে মাসজিদে গিয়ে সেখানে তাঁকে সাজদাহ্রত দেখতে পেলাম। এ সময় তাঁর দু’ পায়ের পাতা খাড়া ছিল। তিনি এ দু‘আ পড়ছিলেনঃ “আউযু বিরিদাকা মিন্ সাখাতিকা ওয়া আ‘উযু বিমা‘আফাতিকা মিন ‘উকুবাতিকা ওয়া আ‘উযুবিকা মিনকা লা উহসী সানায়ান ‘আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিকা। সহীহঃ মুসলিম।
সলাতের মধ্যে দু‘আ করা সম্পর্কে
‘উরওয়াহ (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে এ দু‘আ পড়তেনঃ “আল্লাহুমা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিন ‘আযাবিল ক্ববরি ওয়া আ‘উযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল ওয়া আ‘উযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুমা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিনাল মা’সামি ওয়াল মাগরাম।” তখন এক ব্যাক্তি বললো, মাগরাব (ঋণ) হতে অধিক পরিমাণে আশ্রয় প্রার্থনার কারণ কি? জবাবে তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হলে কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদাহ্ করলে তা ভঙ্গ করে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুর রহমান উবনু আবূ লায়লাহ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি বলেনঃ একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে দাঁড়িয়ে নফল সলাত পড়ছিলাম। তখন আমি তাঁকে এ দু‘আ পড়তে শুনেছিঃ “আ‘উযুবিল্লাহি মিনান্নার ওয়া ওয়াইলুল লি-আহলিন্নার। [৮৮১] আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আমরা সলাতে দাঁড়ালাম। সলাতের মধ্যেই এক বেদুইন বললোঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আমার উপর রহমাত বর্ষণ করুন এবং আমাদের সাথে অন্যদের উপর রহমাত করবেন না।’ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরিয়ে ঐ বেদুইনকে বললেনঃ তুমি প্রশস্ত বস্তুকে সংকীর্ণ করে ফেলেছো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ রহমাত প্রশস্ত। সহীহঃ বুখারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল ‘আ‘লা” তিলাওয়াত করলে বলতেনঃ “সুবহানা রব্বিকাল আ‘লা।” মূসা ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার বাড়ির ছাদে সলাত আদায় করতেন। তিনি যখন কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করতেনঃ “তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন?” তখন জবাবে বলতেন, “সকল পবিত্রতা তোমারই জন্য, অবশ্যই আপনি সক্ষম।” পরে লোকেরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে এরূপ শুনেছি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আহমাদ বলেছেন, ফরয সলাতের দু‘আয় আমি কুরআনের আয়াত পড়া পছন্দ করি।
রুকূ‘ ও সিজদায় অবস্থানের পরিমাণ সম্পর্কে
সা‘দী (রাঃ) হতে তাঁর পিতা অথবা তাঁর চাচার তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাতরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি রুকূ‘ ও সাজদাহ্তে “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহিী” তিনবার পড়ার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ রুকূ‘তে গিয়ে যেন কমপক্ষে তিনবার বলেঃ “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম” এবং সাজদাহ্তে গিয়ে যেন তিনবার বলেঃ “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা” আর এটাই সর্বনিম্ম পরিমাণ। [৮৮৬] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ বর্ণনাটি মুরসাল। কেননা ‘আওন ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর সাক্ষাত পাননি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ওয়াত ত্বীন-ওয়ায যাইতূণ”-এর “আলাইসাল্লাহু বি-আহকামিল হাকিমিন” বলার সময় তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা ওয়া আনা ‘আলা যালিকা মিনাশ শাহিদীন”। এমনিভাবে কেউ “লা উক্বসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি”-এর শেষ আয়াত “আলাইসা যালিকা বি-ক্বাদিরীন ‘আলা আই যুহইয়াল মাওতা” পাঠ করার সময় যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা।” আর যে ব্যক্তি “সূরাহ মুরসালাত” তিলাওয়াত করবে এবং তার “ফাবি-আইয়ি হাদীসিন বা’দাহু য়ুউমিনূন” আয়াতটি পাঠ করবে, যে যেন অবশ্যই বলেঃ “আমান্না”। বর্ণনাকারী ইসমাইল বলেন, অতঃপর আমি আরবের ঐ বেদুইন বর্ণনাকারীকে দেখতে যাই তার বর্ণনাটি সঠিক কিনা জানার জন্য। তখন বর্ণনাকারী আমাকে বলেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি মনে করেছো আমি হাদীস ভুলে গিয়েছি? আমি ষাটবার হাজ্জ করেছি এবং প্রত্যেক হাজ্জে আমি কি ধরনের উটের উপর আরোহণ করেছি, তা এখনও আমার স্মরণ আছে। [৮৮৭] দুর্বলঃ মিশকাত ৮৬০। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকালের পর এ যুবক অর্থাৎ ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয ছাড়া কারো পিছনেই রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের অনুরূপ সলাত আদায় করিনি। তিনি বলেন, আমরা তাঁর রুকূ‘তে দশবার এবং সাজদাহ্তে দশবার তাসবীহ পড়ার হিসাব করেছি। [৮৮৮] দুর্বলঃ মিশকাত ৮৮৩।
কেউ ইমামকে সিজদারত পেলে কি করবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সলাতে এসে আমাদেরকে সাজদাহ্ অবস্থায় পেলে সাজদাহ্য় চলে যাবে। তবে এ সাজদাহ্কে (সলাতের রাক‘আত) গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকূ‘ পেলো সে সলাত পেয়েছে।
সাজদাহর অঙ্গসমূহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে (হাম্মাদের বর্ণনায় রয়েছে) তোমাদের নাবীকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি অঙ্গ দ্বারা সাজদাহ্ করতে আদেশ করা হয়েছে। তিনি সলাতের অবস্থায় চুল ও কাপড় মুষ্টিবদ্ধ করতে (বাঁধতে) নিষেধ করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমাদের নাবীকে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সাজদাহ্ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যখন বান্দা সাজদাহ্ করে, তখন তার সাথে তার শরীরের সাতটি অঙ্গও সাজদাহ্ করেন। (যেমন) তার মুখমন্ডল, দু’ হাতের তালু, দু’ হাঁটু এবং দু’ পা। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে মরাফূ‘ভাবে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুখমন্ডলের ন্যায় দু’হাতও সাজদাহ্ করে। তোমাদের কেউ মুখমন্ডল (কপাল) যমীনে রাখার সময় যেন অবশ্যই তার দু’হাতের তালু যমীনে রাখে এবং যমীন থেকে মুখমন্ডল উঠানোর সময় যেন দু’ হাতও উঠায়।
নাক ও কপালের সাহায্যে সাজদাহ্ করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা‘আতের সাথে সলাত আদায়ের পর তাঁর কপাল ও নাকের উপর মাটির দাগ দেখা যায়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুর রাযযাক্ব হতে মা‘মার সূত্র পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত।
সাজদাহ্র পদ্ধতি
আবূ ইসহাক্ব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) আমাদের কাছে সাজদাহ্র পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর দু’ হাত মাটিতে রাখেন এবং হাঁটুর উপর ভর করে (সাজদাহ্তে) পাছা উঁচু করে রাখেন, অতঃপর বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে সাজদাহ্ করতেন। [৮৯৬] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা সাজদাহ্তে ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় দু’ হাতকে যমীনে বিছিয়ে না দেয়। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্তে স্বীয় দু’ হাত এতোটা ফাঁকা রাখতেন যে, কোন বকরীর বাচ্চা এর নীচ দিয়ে যেতে চাইলে চলে যেতে পারতো। সহীহ : মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সালাতেরত অবস্থায় আমি তাঁর পিছন দিয়ে চলে আসি এবং হে সময় আমি তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখতে পাই। কারণ তিনি তাঁর দু’হাত প্রসারিত করে রেখেছিলেন। রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী আহমার ইবনু জায’ রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্তে তাঁর দু’বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং এ অবস্থা দেখে আমাদের করুণা সৃষ্টি হতো। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ সাজদাহ্ করার সময় যেন স্বীয় দু’ হাত কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে না রাখে এবং দু’ উরু যেন মিলিয়ে রাখে। [৯০১]
প্রয়োজনে এ বিষয়ে শিথিলতা
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাদের সমস্যার কথা জানান যে, সাজদাহ্র সময় তারা হাতকে বগল থেকে এবং পেটকে উরু থেকে আলাদা করে রাখলে এতে তাদের কষ্টবোধ হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএক্ষেত্রে তোমরা হাঁটুর সাহায্য নাও। [৯০২]
কোমরে হাত রাখা ও ইক্ব’আ করা
যিয়াদ ইবনু সুবাইহ আল-হানাফী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু ‘উমারের পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করি এবং আমি আমার কোমরের দু’ পার্শ্বের উপর দু’ হাতের ভর করি। সালাত শেষে তিনি আমাকে বললেনঃ এটা হচ্ছে সালাতের শূলী। এমনটি করতে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।
সালাতে কান্নাকাটি করা
মুত্বাররিফ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করছিলেন এবং হে সময় তাঁর বুক থেকে যাঁতা পেষার আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ হচ্ছিল।
সালাতের মধ্যে ওয়াস্ওয়াসা ও বিভিন্ন চিন্তা আসা অপছন্দনীয়
যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ উত্তমরূপে উযু করে নির্ভুলভাবে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ উত্তমরূপে উযু করে একাগ্রচিত্তে খালিস অন্তরে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। সহীহ্ : মুসলিম।
সালাত ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়া
মিসওয়ার ইবনু ইয়াযীদ আল-মালিকী (রাঃ) সূত্র একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত আদায় করি। সালাতের ক্বিরাআতে তাঁর পঠিত আয়াতের অংশ বিশেষ ভুলবশত ছুটে গেলে সালাত শেষে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি অমুক অমুক আয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি আমাকে তা স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? সুলাইমানের বর্ণনায় রয়েছঃ আমি ভেবে ছিলাম, তা মানসূখ হয়ে গেছে। হাসান। ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সালাতে ক্বিরাআত পাঠে আটকে গেলেন। সালাত শেষে তিনি উবাই ইবনু কা‘বকে বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত আদায় করেছো? তিনি বললেন, হাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাকে কিসে বাঁধা দিয়েছে (আমাকে আয়াত মনে করিয়ে দিতে)? সহীহ।
সালাতে ক্বিরাআতের ভুল শোধরানো নিষেধ
আলী (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আলী! তুমি সালাতের মধ্যে ইমামের ভুল শোধরাবে না। [৯০৮] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) বলেন হারীসের কাছ থেকে ইসহাক্ব কেবল চারটি হাদীস শুনেছেন। তাতে এ হাদীসটি নেই।
সালাতের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে
আবূ যার (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায়, ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহর দৃষ্টি তার দিকে থাকে (বা আল্লাহ তার সামনেই থাকেন)। পক্ষান্তরে যখন সে এদিক সেদিক তাকায়, তখন মহান আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। [৯০৯] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে সালাতের মধ্যে এদিক সেদিক তাকানোর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এটাতো শাইত্বানের ছোঁ মারা, সে বান্দার সালাতের কিছু অংশ ছোবল মেরে নিয়ে যায়। সহীহ: বুখারী।
নাক দিয়ে সাজদাহ্ করা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) একদা লোকদেরকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের পর রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কপালে ও নাকে মাটি লেগে থাকতে দেখা যায়। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
সালাতের মধ্যে কোন দিকে দৃষ্টি দেয়া
জাবির ইবনু সামুরাহ (রা:) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন যে, কিছু লোক আকাশের দিকে দু’ হাত উঁচু করে সালাত আদায় করছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে সব লোক আকাশের দিকে তাকিয়ে সালাত আদায় করে তারা যেন এরূপ করা হতে বিরত থাকে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি তাদের নিকট আর ফিরে আসবে না। সহীহ : মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকদের কি হলো যে, তারা সালাতের অবস্থায় তাদের চোখ (আকাশের দিকে) উঁচু করছে? অত:পর তিনি এ বিষয়ে কঠোর ভাষায় বললেনঃ তাদেরকে এরূপ কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেয়া হবে। সহীহ : বুখারী। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নক্শা করা কাপড় পরিধান করে সালাত আদায়ের পর বললেনঃ এ কাপড়ের কারুকার্য আমাকে সালাত থেকে অমনোযাগী করেছে। তোমরা এ কাপড়খানা আবূ জাহ্মের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য কারুকার্যবিহীন চাদর নিয়ে এসো। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রা:) উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ জাহমের কাছ থেকে কুরদী চাদর নিলেন। অত:পর বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল ! আপনার নকশা খচিত চাদরটি হে কুরদী চাদরের চাইতে উত্তম ছিলো।
এ বিষয়ে অনুমতি সম্পর্কে
সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ (রা:) একদা ফজর সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করতে লাগলেন এবং সালাতের অবস্থায়ই তিনি গিরি পথের দিকে তাকাচ্ছিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিরিপথ পাহারা দেয়ার জন্য রাতে এক অশ্বারোহীকে সেখানে প্রেরণ করেছিলেন। (সেজন্যই তিনি সেখানে দৃষ্টি ফিরাচ্ছিলেন)।
সালাতের অবস্থায় যে কাজ করা জায়িয
আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় কন্যা যাইনাবের মেয়ে উমামাহকে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহর সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন এবং দাঁড়ানোর সময় তাকে উঠিয়ে নিতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সমায় (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় কন্যা যাইনাবের মেয়ে উমামাহ বিনতু আবুল ‘আস ইবনু রবী’ কে নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। তখন উমামাহ শিশু ছিলেন, রাসুলুল্ললাহ তাকে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি রুকু করার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন এবং দাঁড়ানোর সময় আবার কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে তিনি সালাত আদায় শেষ করেন। সহীহ: বুখারী সংক্ষেপে আমর ইবনু সুলাইমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবু ক্বাতাদাহ কে বলতে শুনেছি, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমামাহ বিনতু আবুল ‘আস কে কাঁধে নিয়ে লোকদের সালাত ইমামতি করেছেন। তিনি যখন সাজদাহ করতেন তখন তাকে নামিয়ে রাখতেন। সহীহঃ মুসলিম ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) বলেন, মাখরামাহ তার পিতা থেকে কেবল একটি হাদিস শুনেছেন। রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবী আবূ ক্বাতাদাহ তিনি বলেন, একদা আমরা যুহর কিংবা আসরের সালাত আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষায় ছিলাম। বিলাল (রাঃ) তাকে সালাতের জন্য আহবান করলে তিনি উমামা বিনতু আবুল ‘আসকে নিয়ে আমাদের নিকট আসেন। অঃতপর তিনি ইমামতির জন্য তার জায়গায় দাঁড়ালেন এবং আমরা তার পিছনে দাঁড়ালাম। উমামাহ তখন তার কাঁধেই ছিলো। অঃতপর তিনি (রাঃ) তাকবির বললে আমরাও তাকবির বললাম। বর্ননাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকুর ইচ্ছা করলে তাকে নিচে নামিয়ে রুকু ও সাজদাহ করতেন। অঃতপর সাজদাহ থেকে উঠার সময় তাকে পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাকাতেই এরূপ করেন এবং এভাবেই তিনি সালাত শেষ করেন। [৯২০] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) ইনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সালাতেরত অবস্থাতেও কালো সাপ ও কালো বিচ্ছু কে হত্যা করবে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে দরজা বন্ধ করে সালাত আদায় করছিলেন। এমন অবস্থয় আমি এসে দরজা খুলতে বললে তিনি হেটে গিয়ে দরজা খুলে পুনরায় সালাতে রত হলেন। হাদিসে একথাও রয়েছে যে, দরজাটি কিবলার দিকে ছিলো।
সালাতরত অবস্থায় সালামের জবাব দেয়া
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে রত অবস্থায়ই আমরা তাঁকে সালাম দিলে তিনি এর জবাব দিলেন। পরবর্তীতে আমরা বাদশা নাজ্জাশীর কাছ থেকে ফিরে এসে তাঁকে সালাতের অবস্থায় সালাম দিলে তিনি এর জবাব না দিয়ে (সালাত শেষে) বললেনঃ সালাতের মধ্যে অবশ্যই জরুরী কাজ আছে। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সালাতের অবস্থায়ই সালাম দিতাম এবং আমাদের জরুরী কথাবার্তাও বলতাম। পরবর্তীতে আমি হাবশা থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে সালাতের অবস্থায় সালাম করলে তিনি এর জবাব দিলেন না। ফলশ্রুতিতে আমার মনে নতুন ও পুরাতন বহু চিন্তার উদ্ভব হলো। অতঃপর সালাত শেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “মহান আল্লাহ্ যখন ইচ্ছে নতুন নির্দেশ প্রদান করেন। মহান আল্লাহ্র নতুন নির্দেশ হচ্ছে, সালাতের অবস্থায় কথা বলা যাবে না।” অতঃপর তিনি আমার সালামের জবাব দেন। সুহাইব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতেরত অবস্থায় আমি তাঁর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে সালাম করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের ইশারায় সালামের জবাব দেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বনু মুসত্বালিক্ব গোত্রের কাছে প্রেরণ করলেন। সেখান থেকে ফেরার পর আমি তাঁকে উঠের পিঠে সালাত আদায় করতে দেখে তাঁকে সম্বোধন করে কথা বললে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের ইশারায় আমার কথার জবাব দিলেন। আমি পুনরায় কথা বললে তখনও হাতের ইশারায় জবাব দিলেন। আমি তাঁকে কুরআন পড়তে শুনছিলাম। তিনি রুকু ও সাজদাহ ইশারায় আদায় করছিলেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি আমাকে বললেনঃ আমি তোমাকে যে কাজে প্রেরণ করেছিলাম সেটার খবর কি? আমি সালাতের অবস্থায় ছিলাম বিধায় তোমার সাথে কথা বলি নাই। সহীহ : মুসলিম ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায়ের জন্য কুবার মাসজিদে আসলেন। এমতাবস্থায় আনসারগণ এসে তাঁর সালাতের অবস্থায়ই তাঁকে সালাম দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বিলালকে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– কে সালাতের অবস্থায় তাদের সালামের জবাব কিভাবে প্রদান করতে দেখেছেন? বিলাল (রাঃ) বললেন, এভাবে। বর্ণনাকারী জা’ফার ইবনু ‘আওন তার হাতের তালু নীচের দিকে এবং পিঠ উপরের দিকে করে তা দেখিয়ে দিলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তিনি বলেনঃ সালাত এবং সালামে কোন লোকসান নেই। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, আমার মতে এর অর্থ হচ্ছেঃ তুমি কাউকে সালাম প্রদান করলে সে এর জবাব না দিলেও তোমার কোন ক্ষতি বা লোকসান নেই। বরং ধোঁকা বা ক্ষতি হলো কোন ব্যক্তির সন্দিহান মন নিয়ে সালাত শেষ করা। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনাকারী বলেন, এ হাদীসটি মারফূ। তিনি বলেন, সালাম এবং সালাত কোন লোকসান নেই। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, ইবনু ফুযাইল এটি ইবনু মাহদীর শব্দে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এটিকে মারফু’ করেননি।
সালাতেরত অবস্থায় হাঁচির উত্তর দেয়া
মু‘আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সালাত আদায় করি। সালাতের অবস্থায় লোকজনের মধ্যকার এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে জবাবে আমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলায় সকলেই আমার প্রতি (রাগের) দৃষ্টিতে তাকালো। তখন আমি মনে মনে বললাম, তোমাদের মাতা তোমাদেরকে হারাক। তোমরা আমার দিকে এভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছো কেন? মু’আবিয়াহ বলেন, সকলেই রানের উপর সজোরে হাত মেরে শব্দ করতে থাকলে আমি বুঝতে পারি যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাইছে। বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছিলো, তখন (অনিচ্ছা সত্ত্বেও) আমি চুপ হলাম। অতঃপর রসূলুল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করলেন। আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক ! তিনি আমাকে প্রহার করলেন না, রাগ করলেন না এবং গালিও দিলেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সালাতের অবস্থায় তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন তিলাওয়াত ব্যতীত কোন কথা বলা মানুষের জন্য বৈধ নয়। অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ বলার বললেন। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল ! আমি সদ্য জাহিলিয়্যাত ছেড়ে আসা একটি সম্প্রদায়। আল্লাহ্ আমাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তওফিক দিয়েছেন। আমাদের মধ্যেকার কতিপয় ব্যক্তি গণকের নিকট যায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাদের নিকট যাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমাদের মধ্যেকার কতিপয় লোক পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ণয় করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তাদের মনগড়া কাজ, এরূপ (কুসংস্কার) যেন তাদেরকে তাদের কাজ থেকে বিরত না রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমাদের মধ্যেকার এমনও কিছু লোক আছে যারা রেখা টেনে ভাগ্য নির্ণয় করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নাবীগণের মধ্যেকার একজন নবী রেখা টানতেন। সুতরাং কারো রেখা তাঁর (নাবীর) মত হলে সঠিক হতে পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমার এক দাসী উহুদ ও জাওয়ানিয়ার আশেপাশে বকরী চরাচ্ছিলো। আমি দেখলাম, বাঘ এসে সেখান থেকে একটি বকরী নিয়ে গেছে। আমিও তো আদম সন্তান। কাজেই আমিও তাদের মত দুঃখ পাই। কিন্তু আমি তাকে জোরে একটি থাপ্পড় দিলাম। এ কথাটি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গুরুত্ববহ মনে হওয়ায় আমি তাঁকে বললাম, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। আমি তাকে নিয়ে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ্ কোথায়? সে জবাবে বলল, আকাশে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কে? সে জবাবে বলল, আপনি আল্লাহ্র রসূল! তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- বললেন, তাকে আযাদ করে দাও। কারণ সে ঈমানদার মহিলা। মু’আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসার পর আমাকে ইসলামের কিছু বিষয় শেখানো হলো। আমাকে তখন এটাও শেখানো হয়েছিল যে, তুমি হাঁচি দিলে “আলহামদুলিল্লাহ” বলবে। আর অন্য কাউকে হাঁচি দেয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে তুমি বলবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (অর্থঃ আল্লাহ্ তোমার প্রতি রহম করুন)। তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি হাঁচি দিল এবং “আলহামদুলিল্লাহ” বললো। আমি উচ্চস্বরে বললাম, “ইয়ারহামুকাল্লাহ”। এতে উপস্থিত সকলেই আমার দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকালো। তাতে আমিও রাগান্বিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা আমার দিকে এভাবে চোখ ঘুরিয়ে দেখছো কেন? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তারা সুবহানাল্লাহ বললো। সালাত আদায় শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (সালাতের মধ্যে) কে কথাবার্তা বলেছে? বলা হলো, এই গ্রাম্য লোকটি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, সালাত কুরআন পাঠ ও আল্লাহ্র স্মরণ করা হয়। কাজেই সালাতেরত অবস্থায় তোমার তা-ই করা উচিত। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর চাইতে অধিক নম্র ও বিনয়ী শিক্ষক আর কখনো দেখিনি। [৯৩১]
ইমামের পিছনে আমীন বলা প্রসঙ্গে
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন “ওয়ালাদদোয়াল্লীন” পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন বলতেন। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি সশব্দে আমীন বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখেছি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) যখন “গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদদোয়াল্লীন” পড়তেন তখন এমন জোরে আমীন বলতেন যে, প্রথম কাতারে তাঁর নিকটবর্তী লোকেরা তাঁর এ “আমীন” বলা শুনতে পেতো।[৯৩৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সালাতে ইমাম যখন পড়বে “গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদদোয়াল্লীন” তখন তোমরা “আমীন” বলবে। কেননা যার কথা (আমীন বলা) ফেরেশতার কথার সাথে উচ্চারিত হবে তার পূর্বেকার গুনাহসমুহ মাফ করে দেয়া হবে। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (সালাত সূরাহ ফাতিহা পাঠের পর) ইমাম যখন “আমীন” বলবে তখন তোমরাও “আমীন” বলবে। কেননা যে ব্যক্তির (আমীন বলা) মালায়িকাহ (ফেরেশতার) “আমীন” বলার সাথে মিলবে তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব(রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সূরাহ ফাতিহার শেষে) আমীন বলতেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম বিলাল (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি আমার আগে “আমীন” বলবেন না। (রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূরাহ ফাতিহা পাঠ শেষ হয়ে যেতো অথচ তখনও বিলালের (রাঃ) পড়া শেষ হত না। তাই তিনি এ কথা বলতেন)। [৯৩৭] আবু মুসাব্বিহ আল-মাকরাই (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী আবু যুহাইর আন-নুমাইরী (রাঃ) এর নিকট বসতাম। তিনি সুন্দর সুন্দর হাদিস শুনাতেন। একবার আমাদের মধ্যকার এক ব্যাক্তি দু‘আ করতে থাকলে তিনি বললেন, তুমি আমীন বলে দু‘আ শেষ করবে। কেননা (দু‘আ শেষে) ‘আমীন’ বলা (গ্রন্থ বা) চিঠিতে সীলমোহর করার মত। অতঃপর আবু যুহাইর (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে আমি তোমাদের নিকট একটি ঘটনা জানাতে চাই। এক রাতে আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বের হই। অতঃপর আমরা এমন এক ব্যাক্তির কাছে উপস্থিত হই যিনি কাকুতি-মিনতি করে দু‘আ করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থামলেন এবং তার দু‘আ শুনলেন, অতঃপর বললেন, যদি সে শেষ করে তবে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত। উপস্থিত লোকদের একজন বললো, কিসের দ্বারা সে দু‘আ শেষ করবে? নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমীন’ বলে। কেননা যদি সে ‘আমীন’ বলার উপর দু‘আ শেষ কহে তাহলে তার দু‘আ কবূল হয় (অথবা সে নিজের জন্য জান্নাত অবধারিত করে নেয়)। এরপর নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্নকারী লোকটি দু‘আরত ব্যাক্তির নিকট গিয়ে বলল, হে অমুক ! তুমি আমীন বলে দু‘আ শেষ কর এবং জান্নাত লাভের ও দু‘আ কবুলের) সুসংবাদ গ্রহণ করো। ইমাম আবু দাউদ(রহঃ) বলেন, আল-মাকরাই হলো হিময়ারের একটি গোত্র। [৯৩৮]
সালাতরত অবস্থায় হাততালি দেয়া
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে ইমামের কোন ভূল পরিলক্ষিত হলে) পুরুষ (মুক্তাদীরা) সুবহানআল্লাহ বলবে আর নারী (মুক্তাদীরা) হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী ‘আমর ইবনু ‘আওফ গোত্রের বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। এমতাবস্থায় সালাতের ওয়াক্ত হলে মুয়াযযিন আবু বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করবেন? আবু বকর (রাঃ) স্বীকৃতি দেয়ায় সালাতের ইকামাত দেয়া হলো এবং আবু বকর (রাঃ) সালাত শুরু করলেন। ইতিমধ্যে লোকদের সালাতেরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে পৌঁছালেন এবং কাতার ভেদ করে সামনের কাতারে দাঁড়ালেন। এমতাবস্থায় লোকেরা হাততালি দিয়ে শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু আবু বকর সালাতেরত অবস্থায় কোন দিকেই খেয়াল করতেন না। অতঃপর যখন লোকদের হাততালি অধিক হলো আবু বকর (রাঃ) খেয়াল করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশারা করে তাকে স্বীয় স্থানে থাকতে বললেন। কিন্তু আবু বকর(রাঃ) দু’ হাত উঠিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই নির্দেশের জন্য আল্লাহ্র প্রশংসা করেন এবং পিছনে সরে কাতারে শামিল হন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অগ্রসর হয়ে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি আবু বকর (রাঃ) কে বললেন, হে আবু বকর! আমি নির্দেশ দেয়ার পরও তুমি সালাতের ইমামাত করলে না কেন? জবাবে আবু বকর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিতিতে আবু কুহাফার পুত্রের ইমামাত শোভনীয় নয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের বললেন, কি ব্যাপার ! আমি দেখলাম, তোমরা সকলেই হাতের উপর হাত মেরে অধিক শব্দ করেছো। সালাত কিছু ঘটলে (ইমামের কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে) ‘সুবহানআল্লাহ’ বলা উচিত। কেননা কেও ‘‘সুবহানআল্লাহ’ বললে ইমাম সেদিকে লক্ষ্য করবে। আর হাততালি দেয়াতা মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) বলেন, এ নিয়ম শুধু ফরয সালাতের বেলায় প্রযোজ্য। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বানী ‘আমর ইবনু ‘আওফ গোত্রের লোকদের সংঘর্ষের সংবাদ পৌঁছালে তিনি তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসার জন্য যুহর সালাতের পর সেখানে যান। তিনি বিলাল(রাঃ) কে বললেন, আমার ফিরে আসার পূর্বেই ‘আসর সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে আবু বাকর কে লোকদের সালাতের ইমামাত করতে বলবে। অতঃপর ‘আসর সালাতের ওয়াক্ত হলে বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। এরপর ইকামাত দিয়ে আবু বাকরকে (ইমামাত করার) আদেশ করলে আবু বকর সামনে অগ্রসর হলেন। বর্ণনাকারী হাদিসের শেষাংশে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সালাত কোন কিছু ঘটলে পুরুষরা ‘সুবহানআল্লাহ’ বলবে এবং নারীরা হাততালি দিবে। সহীহঃ বুখারী। ঈসা ইবনু আইয়ুব (রহ) তিনি বলেন, “নারীদের হাততালি দেয়া” কথাটির অর্থ হল, তারা ডান হাতের দুই আঙ্গুল বাম হাতের তালুর উপর মারবে।
সালাতের মধ্যে ইশারা করা প্রসঙ্গে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতেরত অবস্থায় ইশারা করতেন। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (সালাত ইমামের ককন ত্রুটি হলে) পুরুষরা ‘সুবহানআল্লাহ’ বলবে এবং মহিলারা হাততালি দিবে। কেও যদি সালাতরত অবস্থায় এরূপ ইশারা করে যা দ্বারা নির্দিষ্ট কোন অর্থ বুঝায় তবে সে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করবে। দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) বলেন, হে হাদীসটি সন্দেহমূলক।[৯৪৪]
সালারত অবস্থায় পাথর কুচি সরানো
আবু যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাত দাঁড়ালে তার সামনে আল্লাহ্র রহমত থাকে। সুতরাং এ সময় মুসল্লি যেন পাথর কুচি সরাতে ব্যস্ত না হয়। দুর্বল। মু’আইক্বীব (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সালাতরত অবস্থায় তুমি পাথরকুচি সরাবে না। যদি সরাতেই হয় তবে কেবল একবার পাথরকুচি সরিয়ে জায়গা সমান করতে পারো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
কোমরে হাত রেখে সালাত আদায়কারী সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায়কালে কোমরে হাত রাখতে নিষেধ করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হলো, পেটের পার্শ্বদেশে হাত রাখা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
লাঠিতে ভর দিয়ে সালাত আদায়কারী সম্পর্কে
হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি যখন (শাম দেশের) রাক্কাহ নামক শহরে যাই তখন আমার বন্ধুদের একজন আমাকে বললেন, আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন সহাবীর সাক্ষাত পেতে আগ্রহী? আমি বললাম, এটা তো আমার জন্য গনীমাতস্বরূপ। অতঃপর আমাদেরকে ওয়াবিসাহ (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো। আমি আমার সাথীকে বললাম, প্রথমে আমরা তাঁর বেশভূষা দেখবো। আমরা দেখলাম, তিনি মাথার সাথে লেপটে থাকা দুই কানাবিশিষ্ট একটি টুপি এবং রেশম ও পশমের তৈরি ধূসর রংয়ের কাপড় পরিধান করেছেন। তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আমরা সালাম দেওয়ার পর তাকে (লাঠিতে ভর দিয়ে সালাত আদায় সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, উম্মু-ক্বাইস বিনতে মিহ্সান (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বয়স বেশী হলো এবং তাঁর শরীরের গোশত ঢিলা হয়ে গেল তখন তিনি তাঁর সালাতের স্থানে একটি লাঠি রাখতেন এবং তার উপর ভর করে সালাত আদায় করতেন।
সালাতরত অবস্থায় কথা বলা নিষেধ
যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ সালাত আদায় অবস্থায়ই তার পাশের ব্যক্তির সাথে কথা বলতো। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হয়ঃ “তোমরা আল্লাহর একান্ত অনুগত হয়ে (সালাত) দাঁড়াও” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৩৮)। এ আয়াতে আমাদেরকে সালাত চুপ থাকতে আদেশ দেয়া হয় এবং কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
বসে সালাত আদায় করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয় যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি বসে (নফল) সালাত আদায় করলে তা অর্ধেক সালাত আদায় হিসেবে ধর্তব্য। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম তিনি বসে সালাত আদায় করছেন। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার মাথায় হাত রাখলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর’ ! তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করা হয়েছিল যে, আপনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি বসে (সালাত) আদায় করলে তা (দঁড়িয়ে) অর্ধেক সালাত আদায়ের সমতূল্য। অথচ আপনি বসে সালাত আদায় করছেন। রসুলূল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আমি তাই বলেছি। কিন্তু আমি তোমাদের কারো মত নই। সহীহঃ মুসলিম। ‘ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কারো বসে সালাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, তার বসে সালাত আদায়ের চাইতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় উত্তম। তার বসে সালাত আদায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের অর্ধেক এবং তার শুয়ে সালাত আদায় বসে সালাত আদায়ের অর্ধেক। সহীহঃ বুখারী। ‘ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পাজঁরে ব্যথাজনিত রোগ ছিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তাতে সক্ষম না হলে বসে আদায় করবে এবং তাতেও সক্ষম না হলে শুয়ে সালাত আদায় করবে। সহীহঃ বুখারী। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সালাত কখনও বসে ক্বিরাআত করতে দেখিনি। অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে পৌছলে তিনি রাতের সালাত বসে ক্বিরাআত করতেন এবং চল্লিশ কিংবা ত্রিশ আয়াত বাকী থাকতে উঠে দাঁড়িয়ে তা পাঠ সম্পন্ন করে সিজদায় যেতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে সালাত আদায়কালে ক্বিরাআতও বসে পড়তেন। যখন ক্বিরাআতের ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকতো তখন উঠে দাঁড়িয়ে তা পাঠ করতেন, এরপর রুকূ’ ও সাজদাহ্ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে কখনো দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে এবং কখনো দীর্ঘ সময় বসে সালাত আদায় করতেন। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কালে দাঁড়িয়ে রুকূ’ করতেন এবং বসে সালাত আদায়কালে বসে রুকূ’ করতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এক রাক‘আতে কয়েকটি সূরাহ পড়তেন? তিনি বললেন, তিনি ‘মুফাস্সাল’ (দীর্ঘ) সূরাহ পড়তেন। তিনি বলেন, আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বসে সালাত আদায় করতেন? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, যখন তাঁর বয়স অধিক হয়ে যায় (তখন তিনি বসে সালাত আদায় করতেন)। সহীহঃ এর দ্বিতীয় অংশ।
তাশাহহুদের বৈঠকে বসার নিয়ম
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি (মনে মনে) বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে সালাত আদায় করেন আমি তা অবশ্যই দেখবো। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত দাঁড়িয়ে ক্বিবলামূখী হয়ে তাকবীর বলে দুই হাত কান বরাবর উত্তোলন করলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাত আকঁড়ে ধরলেন। তারপর যখন রুকূ’তে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উত্তোলন করলেন। বর্ণনাকারী (ওয়াইল ইবনু হুজর) বলেন, অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে বসলেন, বাম হাত বাম পায়ের ঊরুর উপর রাখলেন এবং ডান কনুই ডান ঊরু হতে পৃথক রাখলেন। তারপর দু’ আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্তাকার করলেন এবং তাঁকে আমি এভাবে বলতে দেখলাম। বর্ণনাকারী বিশর (রহঃ) বৃদ্ধাংগুলিকে মধ্যমার সাথে মিলিয়ে বৃত্ত করলেন এবং শাহাদাত অংগুলি দ্বারা ইশারা করে দেখালেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সালাতের সুন্নাত হচ্ছে, (বসার সময়) তোমার ডান পা খাড়া রাখা এবং বাম পা বিছিয়ে দেয়া। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সালাতের সুন্নাত হলো, (বসার সময়) তোমার বাম পা বিছিয়ে রাখা এবং ডান পা খাড়া করে রাখা। ইয়াহিয়া (রহঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) আল-ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মদ তাদেরকে তাশাহহুদে বসার নিয়ম দেখান। অতঃপর হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত (তাশাহুদে বসার সময়) তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ফলে তাঁর পায়ের পাতার উপরিভাগ কালো হয়ে গিয়েছিল।[৯৬২]
চতুর্থ রাক‘আতে পাছার উপর বসা
মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আত্বা (রহঃ) আমি আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দশজন সহাবীর উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি, যাদের মধ্যে আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ)-ও ছিলেন। আবূ হুমাইদ (রাঃ) বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তারা বললেন, তাহলে আপনি বর্ণনা করুন। তখন তিনি হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি এও বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্র সময় দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখতেন। অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে মাথা উঠাতেন এবং বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতেও তিনি অনুরূপভাবে আদায় করতেন। এরপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশ বর্ণনা করেন যে, সবশেষে তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বের সাজদাহ্ শেষ করে বাম পা বাইরের দিকে বের করে বাম পাশের নিতম্বের উপর বসতেন। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের বর্ণনায় আরো রয়েছে, এভাবে হাদীস বর্ণনার পর উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, হাঁ, আপনি সত্যই বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সালাত আদায় করতেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ও মুসাদ্দাদ তাদের বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরূপে বসতেন তা বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু আত্বা (রহঃ) একদা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একদল সহাবীর সাথে বসা ছিলেন। তখন পূর্বোক্ত হাদীসটি আলোচিত হয়। অবশ্য তাতে সহাবী আবূ ক্বাতাদাহর নাম উল্লেখ নেই। তিনি বর্ণনা করলেন, তিনি যখন দুই রাক‘আত সম্পন্ন করে বসতেন তখন বাম পা বাইরের দিকে ছড়িয়ে নিতম্বের উপর বসলেন। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর আল-’আমিরী (রহঃ) তিনি বলেন, যে মাজলিসে এ হাদীসটি আলোচিত হচ্ছিল সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দুই রাক‘আত শেষে বসতেন তখন বাম পায়ের তালুর ওপর ভর করে বসতেন, এ সময় তাঁর নিতম্ব মাটিতে লাগিয়ে রাখতেন এবং উভয় পা একদিকে বের করে দিতেন। ‘আব্বাস অথবা ‘আইয়াশ ইবনু সাহ্ল আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি এমন একটি মাজলিসে ছিলেন যেখানে তাঁর পিতাও উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর তিনি হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্রত অবস্থায় দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের পাতার উপর ভর করলেন। তিনি বসার সময় নিতম্বের উপর বসলেন এবং অপর পা খাড়া করে রাখলেন, অতঃপর তাকবীর বলে সাজদাহ্ করলেন, এরপর আবার তাকবীর বলে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর পূর্বের নিয়মেই তাকবীর বলে পরবর্তী রাক‘আতের রুকূ’ করলেন। অতঃপর দু’ রাক‘আত শেষে বসলেন। এরপর তিনি ক্বিয়ামের মনস্থ করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং পরবর্তী দু’ রাক‘আত আদায় করলেন। অতঃপর শেষ বৈঠকে প্রথমে ডান দিক এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরালেন। দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ (রাঃ) বলেন, আবদুল হামীদ কর্তৃক বর্ণিত নিতম্বের উপর বসা এবং দুই রাক’আতের পর দাঁড়ানোর সময় হাত উঠানোর কথাটি তার হাদীসে উল্লেখ নেই। [৯৬৬] ‘আব্বাস ইবনু সাহল (রা:) আবূ হুমাইদ, আবূ ইসাইদ, সাহ্ল ইবনু সা’দ ও মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) এক জায়গায় সমবেত হলেন। তখন তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করলেন। কিন্তু তাতে দ্বিতীয় রাকা’আতের পর দাঁড়ানোর সময় হাত উঠানো এবং (ক্ষনিক) বসার কথা উল্লেখ নাই। বরং তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষান্তে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিয়ে দান পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলাহমুখী করে বসলেন।
তাশাহুদ পাঠ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন সালাত রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে তাশাহহুদের বৈঠক বসতাম তখন বলতাম, “বান্দাদের পূর্বে আল্লাহর প্রতি সালাম, তারপর অমুক ও অমুকের প্রতি সালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা “আল্লাহর প্রতি সালাম বর্ষিত হোক” এরূপ বলো না। কেননা আল্লাহ নিজেই সালাম বা শান্তিদাতা। বরং তোমরা সালাতের তাশাহহুদের বৈঠকে বসে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সলাওয়াতু ওয়াত্-ত্বায়্যিবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইউহান্ নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস সালিহীন”-(অর্থঃ আমাদের সব সালাম ও অভিবাদন, সালাত ও দু‘আ এবং পবিত্রতা মহান আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও কল্যান বর্ষিত হোক। আমাদের ও আল্লাহর সকল নেক বান্দার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। কেননা তোমরা যখন এটা পাঠ করবে তখন তা আসমান ও যমীন অথবা আসমান ও যমীনের মাঝে আল্লাহর যত নেক বান্দা আছে সবার নিকটেই পৌছে যাবে। “আশ্হাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রসূলুহু”-(অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল। এরপর তোমরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী দু‘আ পাঠ করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, সালাত তাশাহহুদের বৈঠকে আমরা কি পাঠ করবো প্রথমে তা জানতাম না। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন। এরপর তিনি পূর্বানুরূপে হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহ। শারীক (রহঃ) জামি’ ইবনু শাদ্দাদের মাধ্যমে এবং আবূ ওয়াইল ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ হতেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কিছু কথা শিখিয়ে দিলেন, তবে তাশাহুদ শিক্ষার মত করে নয়। তা হলোঃ “আল্লাহুম্মা বাইনা কুলূবিনা ওয়া আসলিহ্ যাতা বাইনিনা ওয়াহদিনা সুবুলাস্-সালামী ওয়া নাজ্জিনা মিনায্ যুলুমাতি ইলান্নূর। ওয়া জাননিব্নাল ফাওয়াহিশা মা যাহারা মিন্হা মা বাতানা ওয়া বারিক লানা ফী আসমাইনা ওয়া আবসারিনা ও ক্বালুবিনা ওয়া আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ওয়া তুব ‘আলাইনা ইন্নাকা আন্তাত তাওওয়াবুর রহীম। ওয়াজ্’আলনা শাকিরীনা লিনি’মাতিকা মুসনীনা বিহা ক্বাবিলীহা ওয়া আতিম্মাহা ‘আলাইনা”। দূর্বল। আল-ক্বাসিম ইবনু মুখায়মিরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আলক্বামাহ (রাঃ) আমার হাত ধরে বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তার হাত ধরে বললেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহর হাত ধরে সালাতের তাশাহুদের পাঠ শিখিয়েছেন। অতঃপর তিনি আ’মাশ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত দু‘আর আনুরূপ দু‘আ শিক্ষা দেন। অতঃপর বললেন, যখন তুমি এ দু‘আ পড়বে অথবা পড়া শেষ করবে তখন তোমার সালাত শেষ হবে। এরপর তুমি উঠে যেতে চাইলে উঠে যাবে নতুবা বসে থাকতে চাইলে বসে থাকবে। শায, এটুকু অতিরিক্ত যোগেঃ “যখন তুমি হে দু‘আ পড়বে….”। সঠিক হচ্ছে এটি ইবনু মাসউদের নিজস্ব বক্তব্য। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি তাশাহুদ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করেনঃ “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্-সলাওয়াতু ওয়াত ত্বায়্যিবাতু। আস্সালামূ ‘আলাইকা আয়্যুহান্ নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বলেন, “বারাকাতুহু” শব্দটি আমি নিজে সংযোজিত করেছি। “আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস সালিহীন, আশ্হাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বলেন, এখানে ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু” কথাটি আমি যোগ করেছি। “ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রসূলুহু ”। হিত্তান ইবনু ‘আবদুল্লাহ আর-রাক্বাশী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) আমাদের সালাত পড়ালেন। সালাতের শেষ দিকে তিনি যখন বসলেন, তখন দলের একজন বললো, নেকী ও পবিত্রতা অর্জনের জন্যই সালাত। সালাত শেষে আবূ মূসা (রাঃ) লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উপস্থিত লোকজন নীরব রইলো। তিনি পুনরায় বললেন, তোমাদের মধ্যকার কে এরূপ কথা বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তখনও লোকেরা চুপ রইলো। হিত্তান বললেন, তিনি আমাকে বললেন, হে হিত্তান! সম্ভবত তুমিই একথাগুলো বলেছো। হিত্তান বললেন, না, আমি বলি নাই। অবশ্য আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে, এজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন। হিত্তান বললেন, এক ব্যক্তি বললো, কথাগুলো আমিই বলেছি এবং শুধু ভাল উদ্দেশেই বলেছি। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, সালাতের মধ্যে কি বলতে হয় তাকি তোমরা অবহিত নও? একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে খুত্ববাহ দিলেন। তাতে তিনি আমাদেরকে সালাতের পদ্ধতি ও সালাত শিক্ষা দিলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে প্রথমে কাতারসমূহ ঠিক করে নিবে। অতঃপর তোমাদের একজন ইমামতি করবে। ইমাম তাকবীর বললে, তোমরাও তাকবীর বলবে, ইমাম যখন “গাইরিল্ মাগ্দুবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়ালীন” পড়বে তোমরা “আমীন” বলবে। তবেই আল্লাহ তা কবুল করবেন। ইমাম তাকবীর বলে রুকূ’ করলে তোমরাও তাকবীর বলে রুকূ’ করবে। কারণ ইমাম তোমাদের পূর্বে রুকূ’তে যাবে এবং তোমাদের পূর্বেই রুকূ’ হতে মাথা উঠাবে। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তার বিকল্প। ইমাম “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বললে তোমরা তখন বলবে “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল্ হাম্দ”। আল্লাহ তোমাদের একথা শুনবেন। কেননা মহান আল্লাহ তাঁর নাবীর যবানীতে বলেছেনঃ “সামি’ আল্লাহু লিমান হামিদাহ্”। অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলে সাজদাহ্ইয় যাবে তখন তোমরাও তাকবীর বলে সাজদাহ্ করবে। ইমাম তোমাদের আগে তাকবীর বলবে এবং আগে সাজদাহ্ করবে। একথা বলার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা সেটার বিকল্প। তাশাহহুদের বৈঠকে তোমাদের সর্বপ্রথম পড়তে হবেঃ “আত্তাহিয়্যাতু তায়্যিবাতুস সাল্লাওয়াতু লিল্লাহি; আস্সালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্ নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুলাহি ও বারাকাতুহু। আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশ্হাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রসূলুহু”। ইমাম আহমাদ (রাঃ) স্বীয় বর্ণনাতে “বারাকাতুহু” ও “আশহাদু” শব্দদ্বয় উল্লেখ করেননি। তিনি “আন্না মুহাম্মাদান” কথাটি উল্লেখ করেছেন। সহীহঃ মুসলিম। হিত্তান ইবনু ‘আবদুল্লাহ আর-রাক্বাশী উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তার বর্ণনায় আরো রয়েছে, ইমাম যখন ক্বিরাআত পড়বে তখন তোমরা চুপ করে থাকবে। বর্ণনাকারী তাশাহুদের “আশ্হাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” এর পরে “ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু” কথাটি বৃদ্ধি করেছেন। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, “আনসিতু” (চুপ করে থাকবে) কথাটি সংরক্ষিত নয়। এ হাদীসে বর্ণনাকারী সুলায়মান আত্-তাইমী ছাড়া অন্য কেউ তা উল্লেখ করেননি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুরআন শিক্ষার মত করেই তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ আত্তাহিয়্যাতুল মুবারাকাতুস সলাওয়াতুত ত্বায়্যিবাতু লিল্লাহি। আল্সালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস সলিহীন। ওয়া আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ। সহীহঃ মুসলিম। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, সালাতের মধ্যভাগে (দ্বিতীয় রাক‘আতের তাশাহহুদ বৈঠকে) অথবা সালাতের শেষ দিকে সালাম ফিরানোর পূর্বে তোমরা পাঠ করবেঃ “আত্তাহিয়্যাতুত্ ত্বায়্যিবাতু ওয়াস্-সলাওয়াতু ওয়াল মুল্কু লিল্লাহি”। এরপর ডান দিকে সালাম ফিরাবে। অতঃপর ইমাম ও নিজেদের সালাম দিবে। দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সুলায়মান ইবনু মূসা কূফার অধিবাসী ছিলেন। তিনি দামেশ্ক শহরে বসবাস করতেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, সুলায়মান ইবনু মূসার এ সহীফাহ প্রমাণ করে, আল-হাসান সামুরাহ (রহ:) ইবনু জুনদুব (রাঃ) এর কাছে হাদীস শুনেছেন। [৯৭৫]
তাশাহ্হুদ পড়ার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরুদ পাঠ
কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা বললাম অথবা লোকজন বললো, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি আমাদেরকে আপনার উপর দরুদ ও সালাম পড়ার আদেশ করেছেন। সালাম পাঠের নিয়ম আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করবো? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বলো- “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ”- (অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষন করুন যেরূপ রহমত বর্ষন করেছেন ইবরাহীমের উপর। আপনি ইবরাহীমকে যেমন বরকত দান করেছেন তেমনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।) সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। শু’বাহ (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছেঃ “সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনুল ‘আলা তার সানাদে ইবনু বিশ্র ও মিস্’আরের মাধ্যমে হাকাম হতে হাদীসটি বর্ণনার পর দরূদ পাঠ সম্পর্কে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।” সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি যুবাইর ইবনু ‘আদী (রহঃ) ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ) হতে মিস্’আরের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে শুধু “কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা” এর স্থলে “কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা” কথাটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ মিস্’আর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরূদ পড়বো? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বলোঃ “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা বারাকতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। (অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ ও সন্তান-সন্তদির উপর রহমত বর্ষণ করুন যেমনি ইবরাহীমের অনুসারী ও বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। এবং আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ ও সন্তান-সন্তদির উপর বরকত নাযিল করুন যেমনি ইবরাহীমের অনুসারী ও বংশধরদের উপর বরকত নাযিল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।) সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ মাস’উদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) এর মাজলিসে আমাদের নিকট আসলেন। তখন বাশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আল্লাহ আমাদেরকে আপনার উপর দরূদ পাঠের আদেশ করেছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়বো? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আক্ষেপ করতে ছিলাম যে, তাঁকে প্রশ্নটি না করাই ভাল ছিল। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বলো…… অতঃপর বর্ণনাকারী কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। তবে হাদীসের শেষাংশে শুধু “ফিল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ” কথাটি বৃদ্ধি করেছেন। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) তিনি বলেন, আহমাদ ইবনু ইউসুফ, যুহাইর, মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনুল হারিস এবং মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদের মাধ্যমে ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বলোঃ “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবীইল উম্মীয়ি ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন।” আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কেউ যদি আমাদের আহলি বাইতের উপর দরূদ পড়ার পুরো সওয়াব পেতে চায় সে যেন এভাবে বলেঃ “আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবীয়্যি ওয়া আয্ওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু’মিনীনা ওয়া যুর্রিয়াতিহি ওয়া আহলি বাইতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রী উম্মাতাহিল মু’মিনীন, তাঁর সন্তানাদি ও আহলি বাইতের উপর রহমাত বর্ষণ করুন যেমনি রহমাত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।” [৯৮২]
তাশাহ্হুদের পরে কি পাঠ করবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ শেষ করবে তখন সে যেন আল্লাহর নিকট চারটি বস্তু হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে। (তা হলো): জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ হতে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট হতে। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত তাশাহুদের পর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া আ’উযুবিকা মিন ‘আযাবিল ক্বাবরি, ওয়া আ’উযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দাজ্জাল, ওয়া আ’উযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি”। (অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের আযাব হতে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব হতে, আশ্রয় প্রার্থনা করছি দাজ্জালের ফিতনাহ হতে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ হতে)। মিহজান ইবনুল আদরা’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন, এক ব্যক্তি সালাত শেষে তাশাহুদ পড়ছে এবং সে এটাও পড়ছে যে, “হে আল্লাহ, হে একক ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।” মিহজান (রাঃ) বলেন, লোকটির এ দু‘আ শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তিনি একথা তিনবার বললেন।
নীরবে তাশাহ্হুদ পাঠ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, তাশাহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত।
তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
‘আলী ইবনু ‘আবদুর রহমান আল-মু’আবী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে সালাতের মধ্যে নুড়ি পাথর দিয়ে অনর্থক নাড়াচাড়া করতে দেখলেন। অতঃপর যখন তার সালাত শেষ হলো তিনি আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে যা করতেন তুমিও তাই করবে। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত কি করতেন? তিনি বললেন, সালাতেরত অবস্থায় তিনি যখন বসতেন তখন তাঁর ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর রাখতেন এবং সব আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন আর বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের (শাহাদাত) অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন, আর বাম হাতের তালু বাম পায়ের উরুর উপর রাখতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে (তাশাহুদ) বৈঠকে তাঁর বাম পা ডান উরু ও নলার নীচে রাখতেন এবং ডান পা বিছিয়ে দিতেন, বাম হাত বাম হাটুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন ও (শাহাদাত) আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। বর্ণনাকারী ‘আফ্ফান বলেন, ‘আবদুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ আমাদেরকে শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করে দেখিয়েছেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইব্নুয যুবাইর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত দু‘আ পাঠকালে আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন, অবশ্য আঙুল নাড়তেন না। দুর্বল। ইবনু জুরাইজ বলেন, ‘আমর ইবনু দীনারের বর্ণনায় একথাও আছে যে, ‘আমির তাকে জানান যে, তার পিতা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দু‘আর সময় আঙুল দ্বারা ইশারা করতে দেখেছেন এবং তখন তিনি তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন। সহীহ। ‘আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তার পিতার সূত্র এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দৃষ্টি (শাহাদাত আঙুলের) ইশারাকে অতিক্রম করতো না। আর হাজ্জাজ বর্ণিত হাদীসটি অধিক পরিপূর্ণ। মালিক ইবনু নুমাইর আল-খুযাঈ (রহঃ) তার পিতা তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাত তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে শাহাদাত আঙুল অর্ধনমিত অবস্থায় উচিয়ে রাখতে দেখেছি।[৯৯১]
সালাতেরত অবস্থায় হাতের উপর ঠেস দেয়া মাকরূহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ইমাম আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তি সালাত হাতের উপর ঠেস দিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। ইবনু শাব্বুয়াহ এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি সালাত কাউকে হাতের উপর ঠেস দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনু রাফি’ এর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি কাউকে হাতের উপর ঠেস দিয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, “আর-রাফ্’উ মিনাস্-সুজুদ” অনুচ্ছেদে। ইবনু ‘আবদুল মালিক বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সালাত উঠার সময় হাতের উপর ভর করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ তবে শেষ অংশটুকু বাদে। কেননা তা মুনকার। ইসমাঈল ইবনু উমাইয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাফি’ (র)-কে এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতে প্রবেশ করিয়ে সালাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, এটা হলো অভিশপ্ত লোকদের সালাত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি এক ব্যক্তিকে সালাত বসা অবস্থায় তার বাম হাতের উপর ভর করে থাকতে দেখলেন। হারুন ইবনু যায়িদ বর্ণনা করেন, সে বাম পাশে পড়ে আছে। হাদীসের বাকী অংশ উভয়ে একইরূপে বর্ণনা করেছেন। (তা হলো): ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) লোকটিকে বললেন, এভাবে বসবে না। কারণ যাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে তারাই এভাবে বসে।
(প্রথম) বৈঠক সংক্ষেপ করা
আবূ ‘উবায়দাহ (রহঃ) তার পিতা (ইবনু মাস’উদ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি সালাতের প্রথম দুই রাকা’আতে এরূপে বসতেন যেন গরম পাথরের উপর বসেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, তিনি দাঁড়ানো পর্যন্ত? তিনি বললেন, হাঁ, দাঁড়ানো পর্যন্ত।
সালাম ফিরানো
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ” বলে ডান দিকে এবং “আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে বাম দিকে সালাম ফিরাতেন। এ সময় তাঁর গালের শুভ্রতা দেখা যেতো। সহীহঃ মুসলিম সংক্ষেপে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু’বাহ (রহঃ) আবূ ইসহাক্বের বর্ণনাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) তার পিতা তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন “আস্ সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” এবং বাঁ দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন “আস্ সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ”। সহীহঃ মুসলিম। জাবির ইরনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে সালাত আদায়কালে আমাদের কেউ সালাম ফিরাতো এবং হাত দ্বারা তার ডানে ও বামে ইশারা করতো। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ তোমাদের কোন এক ব্যক্তির কি হলো যে, সে সালাম ফিরাতে এরূপে হাতের ইশারা করে, যেন তা দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। এটাই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট অথবা এটাই কি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট নয় যে, সে তার ডান ও বাম দিকের ভাইকে এভাবে সালাম বলবে। তিনি আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে দেখালেন। সহীহঃ মুসলিম। মিস’আর (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস মিস’আর (রহঃ) হতেও বর্ণিত হয়েছে। নবী বললেনঃ তোমাদের কারো জন্য কি যথেষ্ট নয় অথবা তাঁদের কারো জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, সে উরুর উপর হাত রেখে তার ডান ও বাম দিকের ভাইদের সালাম করবে? সহীহঃ মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এ সময় লোকেরা হাত উত্তেলিত অবস্থায় ছিল। আ’মাশের বর্ণনায় রয়েছেঃ “সালাতরত অবস্থায়”। নবী বললেনঃ কি ব্যাপার ! আমি তোমাদের দুষ্ট ঘোড়ার লেজের ন্যায় হাত উঠানো অবস্থায় দেখছি। তোমরা সালাত ধীরস্থির থাকো। সহীহঃ মুসলিম।
ইমামের সালামের জবাব দেয়া প্রসঙ্গে
সামুরাহ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন ইমামের সালামের জবাব দিতে, পরস্পরকে ভালবাসতে এবং একে অন্যকে সালাম দিতে।
সালাতের পরে তাকবীর বলা প্রসঙ্গে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সমাপ্তি জানা যেতো তাকবীর দ্বারা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে লোকেরা ফারয সালাত শেষে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতো। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, এভাবে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা শুনে আমি বুঝতে পারতাম যে, লোকদের সালাত সমাপ্ত হয়েছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
সালাম সংক্ষিপ্ত করা
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম সংক্ষিপ্ত করাকে সুন্নাত বলেছেন। ঈসা (রহঃ) বলেন, ইবনুল মুবারক (রহঃ) আমাকে এ হাদীস নবী এর বাণীরূপে বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। [১০০৪] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ উমাইর ঈসা ইবনু ইউনুস ইল-ফাখূরী আর-রামলী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল ফিরয়াবী মাক্কাহ হতে প্রত্যাবর্তনের পর এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করা ত্যাগ করেছেন এবং বলেছেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) তাকে এ হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসাবে বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন।
সালাতরত অবস্থায় বায়ু নির্গত হলে পুনরায় উযু করে সালাত আদায় করা
‘আলী ইবনু ত্বালক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ বায়ু নিঃসরণ করলে সে যেন উঠে গিয়ে উযু করে পুনরায় সালাত আদায় করে। [১০০৫]
ফারয সালাত আদায়ের স্থানে নাফল সালাত আদায় প্রসঙ্গে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি ফারয সালাত আদায়ের পর সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা ডানে বা বাম সরে নাফল সালাত আদায় করতে অপারগ? হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, ফারয সালাত আদায়ের পর। আল-আযরাক্ব ইবনু ক্বায়স (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমাদের ইমাম আবূ রিমসা (রাঃ) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি বললেন, এ সালাত বা এরূপ সালাত আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আদায় করেছি। তিনি আরো বললেন, আবূ বাক্র ও উমার (রাঃ) সামনের কাতারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ডান পাশে দাঁড়াতেন। উক্ত সালাত এমন এক ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলো যিনি প্রথম তাকবীরেই সালাত শামিল হতে পেরেছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করে তাঁর ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরালেন। আমরা তাঁর গলার শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তারপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন। যেমন আবূ রিমসা উঠে দাঁড়ালেন। অর্থাৎ তিনি নিজের কথাই বললেন। এ সময় প্রথম তাকবীরসহ সালাত পাওয়া ব্যক্তি দু’রাকাত নফল সালাত আদায়ের জন্য উঠে দাঁড়ালে উমার তার দিকে ছুটে গিয়ে তার দুই কাঁধ ধরে সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, বসো। কেননা আহলে কিতাবগণ এ কারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তারা ফরয ও নফল সালাতের মাঝে কোন ব্যবধান করতো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিকে তাকিয়ে বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র ! আল্লাহ্ তোমাকে দিয়ে সঠিক কাজ করিয়েছেন। [১০০৭] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, কোন বর্ণনায় আবূ রিমসা (রাঃ) এর স্থলে আবূ উমাইয়াহ্র (রাঃ) কথা রয়েছে।
দুই সাহু সাজদাহ্ সম্পর্কে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে যুহর বা ‘আসর সালাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী (আবূ হুরায়রাহ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে দু’ রাক্আত সালাত আদায় করেই সালাম ফিরিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি মাসজিদের সম্মুখ দিকে রাখা কাষ্ঠখণ্ডের দিকে অগ্রসর হয়ে তার উপরে এক হাতকে অপর হাতের উপর রাখলেন। এ সময় তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ ছিল। লোকজন মাসজিদ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে যেতে বলছিল, সালাত সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে, সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আবূ বাক্র এবং উমার (রাঃ) ও ছিলেন। তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এ নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে যুল-ইয়া-ইয়াদাইন (দু’ হাতবিশিষ্ট) বলে ডাকতে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি কি ভুল করেছেন, না সালাত সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি ভুলও করি নাই এবং সালাতও হ্রাস করা হয় নাই। যুল-ইয়াদাইন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আপনি ভুল করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকজনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –যুল-ইয়াদাইন কি সত্য বলছে? জবাবে সকলেই ইশারায় হ্যাঁ বললেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জায়গায় এগিয়ে গেলেন এবং অবশিষ্ট দু’রাক্আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন, এরপর তাকবীর বলে স্বাভাবিক সাজদাহ্র মত সাজদাহ্ করলেন অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ্ করলেন। এরপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন, তারপর আবার তাকবীর বলে স্বাভাবিক সাজদাহ্র মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ্ করলেন, অতঃপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। বর্ণনাকারী আইয়ূব বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু সীরীনকে সাহু সাজদাহ্ এবং সালাম ফিরানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রাহ্র কাছে এ বিষয়ে শুনেছি কিনা স্মরণ নেই। তবে আমাকে জানানো হয়েছে যে, ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহু সাজদাহ্র পরও সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ তিনি মালিক, তিনি আইয়ুব হতে, তিনি মুহাম্মাদ হতে পূর্বোক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী হাম্মাদের সানাদে বর্ণিত হাদীসটিই পূর্ণাঙ্গ। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন। এ বর্ণনায় ‘আমাদের নিয়ে’ এবং ‘লোকদের ইশারা’ শব্দদ্বয় উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, জবাবে লোকেরা শুধু হ্যাঁ বলেছিলো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা উঠালেন। এতে ‘এরপর তাকবীর বলেন... অতঃপর মাথা উঠালেন’ এ কথাগুলো উল্লেখ নেই। এভাবেই হাদীস শেষ হয়েছে। হাম্মাদ ইবনু যায়িদ ব্যতীত অন্য কেউ ‘ফা আওমায়ূ’ (লোকদের ইশারা) শব্দটি উল্লেখ করেননি। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, যারা এ হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের কেউই ‘ফাক্বাবারা’ (তিনি তাকবীর দিলেন) এবং রাজায়া (প্রত্যাবর্তন করলেন) শব্দদ্বয় উল্লেখ করেননি। সহীহঃ বুখারী। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর হাম্মাদের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস ‘নুববি’তু আন্না ইমরানাব্ হুসাইন ক্বালা সুম্মা সাল্লামা’ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন। বর্ণনাকারী সালামাহ বলেন, আমি তাকে (মুহাম্মাদ ইবনু সীরীরকে) জিজ্ঞেস করলাম, তাশাহহুদের বিষয়? তিনি বললেন, তাশাহহুদ পড়া সম্পর্কে আমি তার নিকট থেকে কিছু শুনিনি। অথচ তাশাহহুদ পাঠ করা আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। তিনি ‘কানা ইউসাম্মীহি যাল্-ইয়াদাইন’, ‘ফাআওমায়ু’, এবং গাদাবা’ এগুলো উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসটিই পূর্ণাঙ্গ। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে যুল-ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদীসে রয়েছেঃ তিনি তাকবীর বলে সাজদাহ্ করলেন। আর হিশাম ইবনু হাস্সান বলেছেন, তিনি তাকবীর বললেন, অতঃপর আবারো তাকবীর বললেন এবং সাজদাহ্ করলেন। [১০১১] শায। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি হাবীব ইবনুল শাহীদ, হুমাইদ, ইঊনুস, এবং আসিম আল-আহ্ওয়াল-মুহাম্মাদ হতে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই হাম্মাদ ইবনু যায়িদ হতে হিশাম সূত্রে বর্ণিত হাদীসের এ কথাগুলো উল্লেখ করেননি। (অর্থাৎ) ‘তিনি তাকবীর বললেন, অতঃপর আবারো তাকবীর বললেন এবং সাজদাহ্ করলেন’। হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ও আবূ বাক্র ইবনু আইয়্যাশ এ হাদীস হিশাম হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা দুজন হিশাম হতে ‘পরপর দুইবার তাকবীর’ দেয়ার কথা উল্লেখ করেননি, যা হাম্মাদ করেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ্ তাঁকে (দু’রাক্আত সালাত ভুলবশতঃ ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি) নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি সাহু সাজদাহ্ করেননি। [১০১২] ইবনু শিহাব (রহঃ) তাকে আবূ বাক্র ইবনু সুলায়মান ইবনু আবূ হাসমাহ্ অবহিত করেছেন যে, তার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, সালাত সন্দেহ হলে যে দুটি সাজদাহ দিতে হয় সে বিষয়ে লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেননি। ইবনু শিহাব বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব এ হাদীসটি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন আবূ হুরায়রা হতে। তিনি আরো বলেন, আবূ সালামাহ ইবনু আব্দুর রহমান, আবূ বাক্র ইবনু হারিস ইবনু হিশাম এবং উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ও আমার কাছে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [১০১৩] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ ঘটনাটি ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর এবং ইমরান ইবনু আবূ আনাস (রাঃ) আবূ সালামাহ ইবনু আব্দুর রহমান হতে আবূ হুরায়রা সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাতে দুটি সাজদাএর কথা উল্লেখ নেই। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যুবাইদী-যুহরী- আবূ বাক্র ইবনু সুলায়মান ইবনু আবূ হাস্মাহ হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তাতে রয়েছে, তিনি দুটি সাহু সাজদাহ্ আদায় করেননি। শায। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত (ভুলবশতঃ) দু’ রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাত কি সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি আরো দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে দুটি সাজদাহ্ করলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (চার রাক্আত বিশিষ্ট) ফরয সালাত (ভুলবশত:) দু’ রাক‘আত আদায় করেন। সালাত শেষে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল ! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, না আপনি ভুল করেছেন? জবাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এর কোনটাই করি নাই। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তা করেছেন। তখন তিনি আরো দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। শায। দাউদ ইবনুল হুসাইন আহমাদের মুক্তদাস আবূ সুফিয়ানের মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে এ ঘটনা সম্পর্কিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, অতঃপর সালাম ফিরিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা অবস্থায়ই দুটি সাহু সজাদাহ্ করেন। [১০১৫] সহীহঃ মুসলিম। দামদাম ইবনু জাওস আল-হাফ্ফানী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সাজদাহ্ করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয) সালাত আদায় করতে গিয়ে (ভুল বশতঃ) দু’ রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন। আতঃপর আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) সূত্রে ইবনু সীরীন বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। এতে রয়েছেঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালেন এবং দুটি সাহু সাজদাহ্ করলেন। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের তিন রাক‘আত সালাত আদায় করেই সালাম ফিরালেন এবং হুজরায় প্রবেশ করলেন। তখন লম্বা হাতওয়ালা খিরবাক্ব নামক এক ব্যাক্তি উঠে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগান্বিত অবস্থায় চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে এসে লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, সে কি সত্যি বলেছে? লোকজন বললো, হাঁ, তখন তিনি অবশিষ্ট এক রাক‘আত সালাত আদায় করে (ডান দিকে) সালাম ফিরালেন। অতঃপর দু’টি সাহু সাজদাহ্ দিয়ে পরে (বাম দিকে) সালাম ফিরালেন। সহীহঃ মুসলিম।
(ভুলবশত চার রাক‘আতের স্থলে) পাঁচ রাক‘আত আদায় করলে
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তা আবার কিভাবে ! সকলেই বললো, আপনি তো পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাহু সাজদাহ্ করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন। ইবরাহীম বলেন, এ সালাত তিনি বেশী করেছিলেন না কম করেছিলেন তা আমি অবহিত নই। তিনি সালাম ফিরালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সালাত নতুন কিছু হয়েছে কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা আবার কেমন করে? তারা বললো, আপনি তো সালাত এরূপ এরূপ করেছেন (কম অথবা বেশী সালাত আদায় করেছেন)। এ কথা শুনে তিনি পা ঘুরিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’টি সাহু সিজদাহ্ করে সালাম ফিরালেন। সালাত শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে ঘুরে বললেন, সালাতের ব্যাপারে নতুন কিছু ঘটে থাকলে আমি তোমাদেরকে অবহিত করতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতই মানুষ। তোমাদের মত আমিও ভুল করে থাকি। কাজেই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিবে। তিনি আরো বললেনঃ তোমাদের কেউ সালাত সন্দিহান হলে সে যেন সঠিক দিক বের করতে চিন্তা ভাবনা করে, অতঃপর তার ভিত্তিতে সালাত সম্পন্ন করে এবং সালাম ফিরায় অতঃপর দু’টি সাহু সাজদাহ্ আদায় করে। সহীহঃ বুখারী মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (সালাতের মধ্যে) তোমাদের কেউ (কিছু) ভুলে গেলে যেন দু’টি সাহু সাজদাহ্ আদায় করে নেয়। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুরে দু’টি সাহু সাজদাহ্ আদায় করেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হুসাইন বর্ণিত হাদীসটি আ’মাশের হাদীসের অনুরূপ। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে লোকেরা এ নিয়ে চুপি চুপি আলাপ করতে থাকলো। তা দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কি হয়েছে? তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল ! সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, না। তারা বললো, আপনি তো পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুরে গিয়ে দু’টি সাহু সাজদাহ্ আদায় করে সালাম ফিরলেন, অতপর বললেনঃ আমি তো একজন মানুষ। তোমাদে মত আমিও ভুল করে থাকি। সহীহঃ মুসলিম। মু’আবিয়াহ ইবনু খাদীজ (রহঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায়কালে সালাতের এক রাক‘আত বাকি থাকতেই সালাম ফিরালেন। এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট গিয়ে বললো, আপনি এক রাক‘আত সালাত আদায় করতে ভুলে গেছেন। কাজেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে মাসজিদে প্রবেশ করে বিলাল (রাঃ)-কে ইক্বামাত দিতে বলেন। বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিলে তিনি লোকদেরকে নিয়ে এক রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। মু’আবিয়াহ ইবনু খাদীজ বলেন, আমি এ ঘটনা লোকজনের নিকট বর্ণনা করলে তারা আমাকে বললো, আপনি কি লোকটিকে চিনেন? আমি বললাম, না, তবে দেখলে চিনতে পারবো। পরে সেই লোকটি আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি বললাম, ইনিই সেই লোক। সকলেই তাকে দেখে বললো, ইনি হচ্ছেন তাল্হা ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ)।
দুই কিংবা তিন রাক‘আতে সন্দেহ হলে করণীয় কেউ বলেন, সন্দেহ পরিহার করবে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাত সন্দিহান হলে সে যেন সন্দেহ পরিহার করে নিশ্চিত প্রত্যয়ের উপর ভিত্তি করে স্বীয় সালাত পূর্ণ করে এবং দু’টি সাহু সাজদাহ্ আদায় করে। তার সালাত পূর্ণ হয়ে থাকলে অতিরিক্ত এক রাক‘আত ও দু’টি সাজদাহ্ নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর সালাত কম হয়ে থাকলে উক্ত এক রাক‘আত সহ তা পূর্ণ হবে এবং দু’টি সাজদাহ্ শাইত্বানের জন্য অপমানকর হবে। হাসান সহীহ: অনুরুপ মুসলিম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলের দু’টি সাজদাহ্র নাম করণ করেছেন “আল্-মুরাগগিমাতাইন” (শাইত্বানের জন্য লাঞ্ছনাকর দু’টি সাজদাহ্)। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে তোমাদের কেউ যদি সালাত এরূপ সন্দেহে পতিত হয় যে, সে তিন রাক‘আত না চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারছে না তাহলে সে যেন আরো এক রাক‘আত সালাত আদায় করে নেয় এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ আদায় করে। আদায়কৃত অতিরিক্ত এক রাক‘আত যদি পঞ্চম রাক‘আত হয়ে থাকে তবে এ দু’টি সাজদাহ্ মিলে তা দু’রাক‘আত নফল সালাত পরিনত হবে। আর তা যদি চতুর্থ রাক‘আত হয়ে থাকে তবে এ সাজদাহ্ দু’টি শাইত্বানের জন্য লাঞ্ছনাকর হবে। যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) ইমাম মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত সন্দিহান হয় এবং তার দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, সে তিন রাক‘আত আদায় করেছে, তখন সে যেন (চতুর্থ রাক‘আতের জন্য) দাঁড়িয়ে সাজদাহ্ সহ আরো এক রাক‘আত পূর্ণ করে। সে তাশাহ্হুদে বসে তাশাহ্হুদ পাঠ শেষে দু’টি সাজদাহ্ করবে, অতঃপর সালাম ফিরাবে। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর তিনি ইমাম মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীস হুবহু বর্ণনা করেন। সহীহঃ মুসলিম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক, হাফ্স ইবনু মাইসারাহ, দাউদ ইবনু ক্বায়িস ও হিশাম ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে ইবনু ওয়াহাব উপরোক্ত হাদীস হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হিশাম (রহঃ) হাদীসের সানাদকে আবূ সাঈদ আল-খুদরীর (রাঃ) সাথে যুক্ত করেছেন।
যিনি বলেন, (সন্দেহ হলে) প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সালাত পূর্ন করবে
আবূ ‘উবায়দাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাত আদায়কালে তুমি তিন রাক‘আত আদায় করেছো নাকি চার রাক‘আত- এরূপ সন্দেহ হলে তোমার দৃঢ় ধারণা যদি চার রাক‘আতে হয়, তাহলে তুমি তাশাহ্হুদ পাঠ করে বসা অবস্থায় সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টি সাহু সাজদাহ্ করবে, তারপর আবার তাশাহুত পাঠ করবে, অতঃপর সালাম ফিরাবে। [১০২৮] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ওয়াহিদ এ হাদীস খুসাইফ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মরফূ’ভাবে নয়। ‘আবদুল ওয়াহিদ সূত্রে বর্ণনাকারীরাও একে মরফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেননি, যদিও তারা হাদীসের মাতানে মতভেদ করেছেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতেরত অবস্থায় সালাত বেশী আদায় করেছে নাকি কম- এ নিয়ে সন্দিহান হলে সে বসা অবস্থায় দুটি সাজদাহ্ করবে। অতঃপর যদি তার নিকট শাইত্বান এসে বলে, (হে মুসল্লী) তোমার তো উযু নষ্ট হয়ে গেছে, তখন সে বলে তুই মিথ্যা বলেছিস। অবশ্য নাকে (বাযু নির্গমনের) দুর্গদ্ধ পেলে অথবা কানে শব্দ শুনতে পেলে তা স্বতন্ত্র কথা। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত দাঁড়ায় তখন শাইত্বান তার কাছে এসে তাকে ধোঁকা দিতে থাকে। এমনকি সে কয় রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা স্মরন করতে পারে না। কাজেই তোমাদের কারো এরূপ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ আদায় করে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) তার সানাদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে এও রয়েছেঃ সে সালাম ফিরানোর পূর্বে বসা অবস্থায় (দু’টি সাহু সাজদাহ) করবে। মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম আয-যুহরী (রহঃ) উপরোক্ত সানাদ ও অর্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সে যেন সালাম ফিরানোর আগে দু’টি সাজদাহ্ আদায় করে, অতঃপর সালাম ফিরায়।
যিনি বলেন, সালাম ফিরানোর পর সাহু সাজদাহ্ দিবে
‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতরত অবস্থায় কারো সন্দেহ হলে সে যেন সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাজদাহ্ করে নেয়। [১০৩৩]
কেউ দু’ রাক’আতের পর তাশাহ্হুদ না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলে
‘আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি দু’রাক‘আত আদায় করে (তাশাহ্হুদের জন্য) না বসেই দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরা তাঁর সাথে দাড়িঁয়ে গেল। সালাত শেষে আমরা যখন সালামের অপেক্ষায় ছিলাম তখন তিনি তাকবীর বলে সালামের পূর্বে বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয-যুহরী (রহঃ) আয-যুহরী (রহঃ) তার সানাদে হাদীসটি হুবহু বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী শু’আয়িব এটাও বর্ণনা করেন যে, আমাদের মধ্যকার কেউ কেউ (ভুল বশতঃ) দাঁড়ানো অবস্থায় তাশাহুদ পাঠ করেছে। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-ও দু’ রাক‘আত আদায় করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং অনুরূপভাবে সালামের পূর্বে দু’টি সাজদাহ্ করেছিলেন আর এটাই আয-যুহরীর অভিমত।
প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়তে ভুলে গেলে
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’রাক‘আতের পরে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বেই তার স্মরণ হলে তিনি বসে যাবেন; কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি বসবেন না, বরং সাহু সাজদাহ্ আদায় করবেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমার কিতাবে জাবির আল-জ’ফা সূত্রে বর্ণিত এ হাদীস ছাড়া অন্য কোন হাদীস নেই। যিয়াদ ইবনু ‘ইলাক্বাহ (রহঃ) তিনি বলেন, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতের পর দাঁড়িয়ে গেলে আমরা ‘সুবহানাল্লাহ’ বললাম, তখন তিনিও ‘সুবহানাল্লাহ’ বললেন এবং ঐভাবেই সালাত শেষ করে সালাম ফিরানোর পর ভূলের জন্য দু’টি সাজদাহ্ করলেন। সালাত শেষে তিনি আমাদের দিকে ঘুরে বললেন, আমি আমার মত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কেও করতে দেখেছি। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেছেন, ইবনু আবু লায়লাহ শা’বীর হতে মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) সূত্রে মরফূ হিসেবে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আবূ ‘উমাইস (‘উতবাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ) সাবিত ইবনু ‘আবদুল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন....... যিয়াদ ইবনু ‘ইলাক্বাহর হাদীসের অনুরূপ ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আবূ ‘উমাইস (‘উতবাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ) হলেন আল-মাসঊদীর ভাই। মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ যেরূপ করেছেন সা’দ ইবনু আবূ সুফয়ান ‘ইমরান ইবনু হুসাইন, দাহ্হাক ইবনু ক্বায়ীস এবং মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) এ ফাতাওয়াহ দিয়েছেন। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, যারা সালাত দু’রাক‘আতের পর না বসে (ভূল বশতঃ) দাঁড়িয়ে যায় এবং সালাম ফিরানোর পর সাজদাহ্ আদায় করে এটা তাদের জন্য। সা’দ এর খবরঃ সহীহ। ‘ইমরান ইবনু হুসাইনের খবরঃ বিশ্বস্থ রিজাল। দাহহাক এর খবরঃ আমি পাইনি। মু’আবিয়ার খবরঃ দূর্বল। ইবনু ‘আব্বাসের ফাতাওয়াহঃ হাসান। আর ‘উমারের ফাতাওয়াহঃ দূর্বল। সাওবান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের যেকোন ভুলের জন্য সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাজদাহ্ করতে হয়।
দুটি সাহু সাজদাহ্র পর তাশাহ্হুদ পাঠ ও সালাম ফিরানো
‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায়কালে ভুল করেন। ফলে তিনি দু’টি সাহু সাজদাহ্ করেন। অতঃপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরান। [১০৩৯]
সালাত শেষে পুরুষদের পূর্বে মহিলাদের প্রস্থান করা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের সালাম ফিরানোর পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন। লোকদের ধারণা, মহিলারা যেন পুরুষদের আগে চলে যেতে পারে সেজন্য তিনি এরূপ করতেন। সহীহঃ বুখারী, কিন্তু তার বক্তব্যঃ “লোকদের ধারণা.....” এটি মুদরাজ, যুহুরীর উক্তি।
সালাত শেষে প্রস্থানের নিয়ম
ক্বাবীসাহ ইবনু হুলব (রহঃ) নামক তাঈ গোত্রের এক ব্যাক্তি হতে তার পিতা হুলব (রাঃ) তিনি (হুলব) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষে যে কোন পাশ দিয়ে ঘুরে বসতেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন তার সালাতের কোন অংশ শাইত্বানের জন্য না রেখে দেয়। অর্থাৎ সালাত শেষে শুধু ডান দিক থেকে ঘুরে না বসে (বা প্রস্থান না করে)। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অদিকাংশ সময় বাম পাশ থেকে ঘুরতে দেখেছি। ‘উমরাহ (রহঃ) বলেন, আমি পরবর্তীতে মদিনায় গিয়ে দেখেছি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অধিকাংশ ঘর বাম দিকে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। তবে ‘উমারাহর হে কথা বাদেঃ আমি পরবর্তীতে মাদীনাহতে আসি।
নফল সালাত বাড়ীতে আদায় করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের সালাতের কিছু সালাত বাড়ীতে আদায় করো এবং বাড়ীগুলোকে ক্ববরস্থানে পরিনণত করো না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সালাত আমার এ মাসজিদে আদায়ের চাইতে তার নিজ ঘরে আদায় করা অধিক উত্তম।
কেউ ক্বিবলাহ ছাড়া অন্যত্র মুখ করে সালাত আদায়ের পর তা অবহিত হলে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করছিলেন। যখন এ আয়াতটি অবতির্ণ হলোঃ “তুমি যেখানেই অবস্থান করো না কেন তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ঘুরিয়ে নাও। আর তোমরা যেখানেই থাকো তোমাদের মুখমন্ডলকে মাসজিদুল হারামের দিকে ঘুরিয়ে নাও” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৪৪), এমন সময় এক ব্যাক্তি বনী সালামাহ গোত্রের এলাকা দিয়ে অতিক্রমকালে দেখতে পেলো যে, তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ফাজ্রের সালাতে রুকু’ অবস্থায় আছেন। তখন লোকটা বলে উঠলো, জেনে রাখ, ক্বিবলাকে এখন কা’বার দিকে ফিরানো হয়েছে। একথা সে দু’বার বললো। বর্ণনাকারী বলেন, এ ঘোষণা শুনে তাঁরা রুকূ’ অবস্থায়ই কা’বার দিকে মুখ ফিরান। সহীহঃ মুসলিম।
জুমু’আহর দিন ও জুমু’আহর রাতের ফযীলত সম্পর্কে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমু’আহর দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম। আদম (আ)-কে এদিনেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এদিনই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিলো। এদিনই তাঁর তাওবা কবুল হয়েছিলো। এদিনই তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন এবং এদিনই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। জিন ও মানুষ ছাড়া প্রতিটি প্রাণী শুক্রবার দিন ভোর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ক্বিয়ামাতের ভয়ে ভীত থাকে। এদিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, সালাতরত অবস্থায় কোন মুসলিম বান্দা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কোন অভাব পূরণের জন্য দু‘আ করলে মহান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। কা‘ব বলেন, এসময়টি প্রতি একবছরে একটি জুমু’আহর দিনে থাকে। আমি (আবূ হুরায়রা) বললাম, না, বরং প্রতি জুমু’আহর দিনে থাকে। অতঃপর কা‘ব (এর প্রমাণে) তাওরাত পাঠ করে বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যই বলেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, অতঃপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করি। সেখানে কা‘ব (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, আমি দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়টি সম্পর্কে জানি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমাকে তা অবহিত করুন। তিনি বলেন, সেটি হল জুমু’আহর দিনের সর্বশেষ সময়। আমি (আবূ হুরায়রা) বললাম, জুমু’আহর দিনের সর্বশেষ সময় কেনম করে হবে? অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যেকোন মুসলিম বান্দা সালাতরত অবস্থায় ঐ সময়টি পাবে.....।” কিন্তু আপনার বর্ণনাকৃত সময়ে তো সালাত আদায় করা যায় না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননি, যে ব্যাক্তি সালাতের জন্য বসে অপেক্ষা করবে সে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত সালাতরত বলে গন্য হবে। আবূ হুরায়রা বলেন, আমি বললাম, হাঁ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, তা এরূপই। আওস ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হল জুমু’আহর দিন। এদিন আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিলো, এদিনই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিলো, এদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এদিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এদিন তোমরা আমার উপর বেশী দরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। আওস ইবনু আওস (রাঃ) বলেন, লোকেরা বুঝতে চাচ্ছিল আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ মাটির জন্য নাবী-রসূলগনের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।
জুমু’আহর দিনে কোন সময় দু‘আ কবুল হয়
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বর্ণনা করেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আপনার পিতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে জুমু’আহর দিনের (দু‘আ কবুলের) সেই বিশেষ মুহুর্তটি সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, হাঁ, তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ঐ বিশেষ মুহুর্তটি হলো ইমামের মিম্বরের উপর বসার সময় থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত।
জুমু’আহর সলাতের ফাযীলাত
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমু’আহর সালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে উযু করে (মাসজিদে) উপস্থিত হয়, অতঃপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমু’আহ হতে (পরবর্তী) জুমু’আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যাক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো। সহীহঃ মুসলিম। ‘আত্বা আল-খুরাসানী (রহঃ) তিনি তাঁর স্ত্রী উম্মু ‘উসমানের মুক্তদাস হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, একদা আমি ‘আলী (রাঃ) কে কুফার মাসজিদের মুম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি- জুমু’আহর দিন এসে সকালবেলা শাইত্বানেরা তাদের ঢাল নিয়ে বাজারে ঘুরে বেড়ায় এবং মানুষকে অনর্থক কাজে আটকে রেখে জুমু’আহয় যেতে বিলম্ব করায়। আর ফেরেশতারাও সকালবেলা মাসজিদের দরজায় এসে বসে থাকেন এবং ইমামার খুত্ববাহ আরম্ভ না করা পর্যন্ত লিখতে থাকে। অমুক ব্যাক্তি প্রথম ঘন্টায় এসেছে, অমুক ব্যাক্তি দ্বিতীয় ঘন্টায় এসেছে। কেউ যদি এমন স্থানে বসে যেখান থেকে খুত্ববাহ শুনতে পায় এবং ইমামকেও দেখতে পায়, এমতাবস্থায় সে কোন অনর্থক কাজ না করে চুপ থেকে (খুত্ববাহ শুনলে) সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে। আর যদি সে দূরে অবস্থান করে এবং এমন জায়গায় বসে যেখান থেকে খুত্ববাহ শুনতে পায় না, কিন্তু নীরব থাকে ও অনর্থক কিছু না করে, তাহলে সে এক গুন সওয়াব লাভ করবে। আর যদি সে এমন স্থানে বসে যেখান থেকে খুত্ববা শুনতে পায় এবং ইমামকেও দেখতে পায় কিন্তু সে চুপ থাকে না এবং অনর্থক কাজ করে তাহা তার গুনাহ হবে। আর যে ব্যাক্তি অনর্থক জুমু’আহর দিন তার সাথীকে বলে, চুপ কর, সেও অনর্থক কাজ করলো। যে ব্যাক্তি অনর্থক কাজে লিপ্ত হয়, সে জুমু’আহর কোন সওয়াব পায় না। অতঃপর সবশেষে ‘আলী (রাঃ) বলেন, একথাগুলো আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। [১০৫১]
জুমু’আহর সালাত পরিহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
আবুল জা’দ আদ-দামরী (রাঃ) যিনি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (বিনা কারনে) অলসতা করে পরপর তিনটি জুমু’আহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তার অন্তরে সীলমহর মেরে দেন।
জুমু’আহর সলাত ত্যাগের কাফফারা
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনরূপ ওজর ছাড়াই জুমু’আহর সালাত বর্জন করে সে যেন এক দীনার সদাক্বাহ করে। এতে সক্ষম না হলে যেন অর্ধ দীনার সদাক্বাহ করে। [১০৫৩] কুদামাহ ইবনু ওয়াবরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির বিনা কারণে জুমু’আহ কাযা হলে সে যেন এক দিরহাম অথবা অর্ধ দিরহাম অথয়া এক সা’ অথবা সা’ গম সদাক্বাহ করে। [১০৫৪] দূর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু বাশীর হতেও এরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তাতে ‘এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ’ উল্লেখ রয়েছে।
জুমু’আহর সালাত যাদের উপর ফরয
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন জুমু’আহর সালাতের জন্য নিজ নিজ বাড়ী থেকে এবং মাদীনাহ্র আওয়ালী (শহরতলী) থেকে দলে দলে আসতো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা জুমু’আহর আযান শুনতে পাবে তাদের উপর জুমু’আহর সালাত আদায় করা ফরয। [১০৫৬] দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, একদল বর্ণনাকারী হে হাদীস সুফয়ান (রহঃ) সূত্রে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এর হাদীস হিসেবে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী হিসেবে নয়। শুধু ক্বাবীসাহ (রহঃ) এটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বৃষ্টির দিনে জুমু’আর সালাত আদায় সম্পর্কে
আবূ মালীহ (রহঃ) হতে তার পিতার হুনাইনের যুদ্ধের দিনটি ছিলো বৃষ্টির দিন। ঐদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘোষণাকারীকে এ মর্মে ঘোষণা করতে আদেশ দেন যে, প্রত্যেকে যেন নিজ নিজ বাহনে বা শিবিরে সালাত আদায় করে। আবূ মালীহ (রহঃ) সেই (হুনাইনের) দিনটি ছিলো জুমু’আহর দিন। আবূ মালীহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি হুদায়বিয়ার সময় জুমু’আহর দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসেন। সেদিন সামান্য বৃষ্টি হয়েছিলো যাতে জুতার তলাও ভিজে নাই। এ অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন।
শীতের রাতে জামা‘আতে উপস্থিত না হওয়া
নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা (শীতের রাতে) ইবনু ‘উমার দাজনান নামক স্থানে অবস্থানকালে এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে আদেশ করেন যে, প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে নেয়। সহীহ। আইয়ূব (রহঃ) বলেন, নাফি’ হতে ইবনু ‘উমার সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি অথবা শীতের রাতে নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায়ের জন্য ঘোষককে ঘোষণা করতে নির্দেশ দিতেন। এটি কে মারফু করলো তা আমি পাইনি। নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) দানজান নামক জায়গায় সালাতের জন্য আযান দিলেন, অতঃপর ঘোষণা করলেন, সকলেই নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও। নাফি’ (রহঃ) বলেন, অতঃপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, সফরে, বৃষ্টি কিংবা শীতের রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণাকারীকে সালাতের জন্য ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর সে ঘোষণা করতোঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গায় সালাত আদায় করে নাও। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রহঃ) আইযুব ও ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে বলেছেন, সফরে প্রচন্ড শীত বা বৃষ্টির রাতে। এটি কে মারফূ করলো তা আমি পাইনি। নাফি’ (রহঃ) একদা ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রচন্ড শীত ও ঝড়ো হাওয়ার রাতে দানজান নামক স্থানে সালাতের জন্য আযান দেন এবং আযান শেষে ঘোষণা করেন, সকলেই নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও, সকলেই নিজ নিজ জায়গায় সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরকালীন প্রচন্ড শীত কিংবা বৃষ্টির রাতে মুয়াযযীনকে ঘোষণা করতে আদেশ দিতেনঃ তোমরা সকলেই নিজ নিজ স্থানে সালাত আদায় করে নাও। নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ঝড়ো হাওয়া ও শীতের রাতে সালাতের জন্য আযান দিলেন এবং বললেন, সকলেই নিজ নিজ স্থানে সালাত আদায় কর। অতঃপর বললেন, শীত কিংবা বৃষ্টির রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়াযযিনকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, একদা মাদীনাহ্তে বৃষ্টির রাতে ও শীতের ভোরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়াযযিন এরূপ ঘোষণা করেন। [১০৬৪] মুনকার। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন ইয়াহইয়া ইবনু সা‘ঈদ আল-আনসারী এ হাদীসটি ক্বাসিম হতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে মারফুভাবে বর্ণনা করেছেন। তাতে সফরের কথা উল্লেখ আছে। সহীহ। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। ঐ সময় বৃষ্টি হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারোর ইচ্ছা হলে নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করতে পারে। সহীহঃ মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীনের চাচাতো ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) একদা বৃষ্টির দিনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তার মুয়াযযিনকে বললেন, আযানের মধ্যে তুমি যখন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ” বলবে তখন এরপর “হাইয়্যা ‘আলাস-সালাহ” বলবে না। বরং বলবেঃ ‘সল্লু ফী বুয়ুতিকূম’ (তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত আদায় করো)। লোকেরা এটাকে অপছন্দ করলে ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার চাইতে উত্তম যিনি তিনিও এরূপ করেছেন। নিঃসন্দেহে জুমু’আহর সালাত ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ কাদা ও বৃষ্টির মধ্যে তোমাদের হেঁটে আসতে (ঘর হতে বের করতে) আমি পছন্দ করি নাই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
কৃতদাস ও নারীদের জুমু’আহর সালাত আদায় প্রসঙ্গে
ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জুমু’আহর সালাত সত্য- যা প্রত্যেক মুসলিমের উপর জামা‘আতের সাথে আদায় করা ফরয। তবে চার শ্রেণীর লোকের জন্য ফরয নয়ঃ ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও রোগী। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন, কিন্তু তাঁর থেকে কিছু শুনেননি।
গ্রামাঞ্চলে জুমু’আর সালাত আদায়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে জুমু’আহর সালাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ইসলামে সর্বপ্রথম জামা‘আতের সাথে জুমু’আহর সালাত আদায় করা হয়েছে হাবরাইনের ‘জুয়াসা’ নামক একটি গ্রামে। উসমান (রহঃ) বলেন, সেটি ছিল ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের বসতি এলাকা। সহীহঃ বুখারী। ‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব হতে তার পিতা কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি অন্ধ হওয়ার পর ‘আবদুর রহমান হয়েছিলেন তার পরিচালক। তিনি (কা‘ব ইবনু মালিক) যখনই জুমু’আহর দিন জুমু’আহর সালাতের আযান শুনতেন তখন আস’আদ ইবনু যুরারাহ (রাঃ) এর জন্য দু‘আ করতেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি (জুমু’আহর) আযান শুনলেই আস’আদ ইবনু যারারাহর জন্য রহমাতের দু‘আ করেন কেন? তিনি বললেন, কারণ তিনি সর্বপ্রথম ‘নাকীউল খাদামাত’ এর বনূ বায়াদার মালিকানাধীন হারবার ‘হাযম আন-নাবীত’ নামক স্থানে আমাদেরকে নিয়ে জুমু’আহর সালাত আদায় করেছেন। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, তখন আপনারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, চল্লিশজন।
ঈদ ও জুমু’আ একই দিনে একত্র হলে
ইয়াস ইবনু আবু রামলাহ আশ্-শামী (রহঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) যখন যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মু’আবিয়াহ বললেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একই দিনে দুই ‘ঈদ (অর্থাৎ জুমু’আহ ও ‘ঈদ) উদযাপন করেছেন? তিনি (যায়িদ) বললেন, হাঁ। মু’আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, তিনি তা কিভাবে আদায় করেছেন? যায়িদ ইবনু আরক্বাম বললেন, তিনি ‘ঈদের সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর জুমু’আহর সালাত আদায়ের ব্যাপার অবকাশ দিয়ে বলেছেনঃ কেউ জুমু’আহর সালাত আদায় করতে চাইলে আদায় করে নিবে। ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইব্নুয যুবায়ির (রাঃ) জুমু’আহর দিনে আমাদেরকে নিয়ে ঈদের সালাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে একটু হেলে যাওয়ার পর আমরা জুমু’আহর সালাতের জন্য গেলাম, কিন্তু তিনি না আসায় আমরা একা একা (যুহুরের) সালাত আদায় করে নিলাম। এ সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তায়েফে ছিলেন। তিনি তায়েফ হতে ফিরে এলে আমরা তার কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ির সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছেন। ‘আত্বা (রহঃ) একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যাবায়ির (রাঃ) এর যুগে জুমু’আহর ও ঈদুল ফিত্বর একই দিনে হওয়ায় তিনি বলেন, একই দিনে দুই ঈদ একত্র হয়েছে। তিনি দুই সালাত (জুমু’আহ ও ‘ঈদের সালাত) একত্র করেন এবং প্রত্যুষে মাত্র দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন, এর অধিক করলেন না। অতঃপর তিনি ‘আসরের সালাত আদায় করেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজ তোমাদের এ দিনে দু’টি ‘ঈদের সমাগম হয়েছে। তোমাদের কারোর ইচ্ছা হলে (জুমু’আহ ত্যাগ করবে), তার জন্য ‘ঈদের সালাতই যথেষ্ট। তবে আমরা দুটিই (‘ঈদ ও জুমু’আহর সালাত উভয়টি) আদায় করবো।
জুমু’আর দিন ফজরের সালাতে যে সূরা পড়বে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিন ফাজ্রের সালাত সূরাহ তান্যীলুস সাজ্দাহ ও ‘হাল আতা ‘আলাল ইনসানি হীনুম্-মিনাদ্দাহরী’ পাঠ করতেন। সহীহঃ মুসলিম। মুখাব্বিল (রহঃ) উপরোক্ত হাদীসটি একই সানাদে ও অর্থে বর্ণিত হয়েছে। তাতে এও রয়েছেঃ জুমু’আর সালাতের ক্বিরাআতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহ ও সূরাহ “ইযা জাআকাল মুনাফিকুল” পাঠ করতেন। সহীহঃ মুসলিম।
জুমু’আহর সালাতের পোশাক সম্পর্কে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মাসজিদে নববীর দরজার সামনে রেশমী পোশাক বিক্রি হতে দেখে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি এ পোশাক খরিদ করলে এটি জুমু’আহর দিনে এবং আপনার কাছে প্রতিনিধি দলের আগমনকালে পরিধান করতে পারতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তো তারাই পরবে আখিরাতে যাদের জন্য কিছুই থাকবে না। পরবর্তীতে ঐ ধরনের কাপড় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলে তার একখানা কাপড় তিনি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে প্রদান করেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে পরার জন্য এ কাপড় দিলেন। অথচ ইতিপূর্বে আপনি উত্বারিদ (নামক ব্যাক্তির) কাপড় সম্পর্কে যা বলার বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন আমি এ কাপড় তোমাকে পরার জন্য দেইনি। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) কাপড়টি মক্কার অধিবাসী তার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বাজারে একখানা রেশমী কাপড় বিক্রি হতে দেখে তা নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পেশ করে বলেন, আপনি এ কাপড়টি কিনে নিন, এটা ঈদ ও প্রতিনিধি দলের আগমন উপলক্ষে পরতে পারবেন। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য পূর্বের হাদীসটি পূর্নাঙ্গ। সহীহঃ মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ বা তোমরা যদি সচারচর পরিহিত কাপড় ছাড়া জুমু’আহর দিনে পরার জন্য পৃথক একজোড়া কাপড় সংগ্রহ করতে পারো তবে তাই করো। ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমাকে ইবনু আবূ হাবীব, মুসা ইবনু সা’দ হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান হতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা গুলো মিম্বরে বসে বলতে শূনেছেন। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ওয়াহাব ইবনু জারীর তার পিতা হতে , তিনি ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব হতে তিনি ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব হতে তিনি মূসা ইবনু সা’দ হতে তিনি ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
জুমু’আহর দিন সালাতের পূর্বে গোলাকার হয়ে বসা
‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে বেচা-কেনা করতে, হারানো বস্তু তালাশ করতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করেছেন। আরো নিষেধ করেছেন জুমু’আহর দিন সালাতের পূর্বে মাসজিদে গোল হয়ে বসতে।
মাসজিদে মিম্বার স্থাপন সম্পর্কে
আবূ হাযিম ইবনু দীনার (রহঃ) কতিপয় লোক মাসজিদের মিম্বার কোন কাঠের তৈরী ছিলো এ বিষয়ে সন্দিহান হলে তারা সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) এর নিকট এসে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তা কোন কাঠের তৈরী ছিলো তা আমি জানি। প্রথম যেদিন স্থাপন করা হয়েছিল তাও আমি অবগত আছি। আবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম যেদিন তার উপর বসেছিলেন আমি সেদিনও তা দেখেছি। একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক মহিলার (যার নাম সাহ্ল (রাঃ) উল্লেখ করেছিলেন) এর নিকট কাউকে এ সংবাদসহ পাঠালেন যে, লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য বা খুত্ববাহর সময় আমার বসার জন্য তোমার কাঠমিস্ত্রি কৃতদাসকে আমার জন্য কিছু কাঠ প্রস্তুত করতে (মিম্বার বানাতে) বলো। মহিলা তাকে তাই করতে আদেশ করলো। ক্রীতদাসটি আল-গাবা নামক স্থানের ঝাঊগাছের কাঠ দিয়ে তা তৈরী করে আনলে ঐ মহিলা তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন। অতঃপর তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশে সেটি এ স্থানে রাখা হলো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এর উপর সালাত পড়তে, তাকবীর বলতে, রুকু’ করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি পিছন দিকে সরে গিয়ে মিম্বারের গোড়ায় সাজদাহ্ করেন। এরপর তিনি পুনরায় মিম্বরে উঠেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি লোকদের দিকে ঘুরে বলেনঃ হে লোকেরা ! আমি এজন্যই এরূপ করেছি যাতে তোমরা আমাকে সঠিকভাবে অনুসরন করতে পারো এবং আমার সালাত আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) (বয়োঃবৃদ্ধির কারণে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীর ভারী হয়ে গেলে তামীম আদ-দারী (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রসুল ! আমি কি আপনার জন্য একটা মিম্বার তৈরী করে দিবো না, যার উপর আপনার শরীরের ভার রাখবেন? তিনি বললেন, হাঁ। কাজেই তিনি তাঁর জন্য দুই ধাপবিষ্ট একটি মিম্বার তৈরী করে দেয়া হয়। সহীহঃ বুখারী মু‘আল্লাক্ব ভাবে।
মিম্বার রাখার স্থান
সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বার এবং মাসজিদের) দেওয়ালের মাঝখানে একটি বকরী চলাচল করার পরিমাণ ফাঁকা ছিল। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
জুমু’আহর দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার পূর্বে সালাত আদায় করা
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিন ছাড়া (অন্য দিন) ঠিক দুপুরে সালাত আদায় করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেছেনঃ জুমু’আহর দিন ছাড়া (অন্যান্য দিনে) জাহান্নামের আগুনকে উত্তপ্ত করা হয়। [১০৮৩] দূর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। মুজাহিদ (রহঃ) আবুল খালীলের চেয়ে বয়সে বড়। আর আবদুল খালীল (রহঃ) আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে হাদীস শুনেননি।
জুমু’আহর সালাতের ওয়াক্ত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর সালাত আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী। ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জুমু’আহর সালাত আদায় করে ফিরে আসার পরও প্রাচীরসমূহে ছায়া দেখা যেতো না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জুমু’আহর সালাতের পর দুপুরের বিশ্রাম গ্রহণ ও খাবার খেতাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
জুমু’আহর সালাতের আযান
আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র এবং ‘উমার (রাঃ) এর যুগে জুমু’আহর প্রথম আযান দেয়া হত ইমাম মিম্বরে বসলে। কিন্তু ‘উসমান (রাঃ) এর খিলাফাতের সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি জুমু’আহর সালাতের জন্য তৃতীয় আযানের নির্দেশ দেন। এ আযান সর্বপ্রথম (মাদীনাহ্র) আয-যাওয়া নামক স্থানে দেয়া হয়। এরপর থেকেই এ নিয়ম বহাল হয়ে যায়। সহীহঃ বুখারী। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিন যখন মিম্বারের উপর বসতেন তখন তাঁর সামনে মাসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আযান দেয়া হতো। আবূ বাক্র ও ‘উমার (রাঃ) এর সামনেও অনুরূপ করা হতো। অতঃপর হাদীসের পরবর্তী অংশ ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। [১০৮৮] মুনকার। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাত্র একজন মুয়াযযিন ছিলেন। তিনি হলেন বিলাল (রাঃ)। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (রাঃ) তিনি বলেন, একমাত্র মুয়াযযিন (বিলাল) ব্যাতিত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্য কোন মুয়াযযিন ছিল না। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন, তবে পুরো অংশ নয়। সহীহঃ বুখারী।
খুত্ববাহ দেয়ার সময় কারো সাথে ইমামের কথা বলা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জুমু’আহর দিনে খুত্বনাহ দেয়ার উদ্দেশ্য মিম্বারে উঠে বললেন, সবাই বসে পড়ো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) একথা শুনে তাৎক্ষণিক মাসজিদের দরজাতেই বসে পড়েন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখে বললেনঃ ওহে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ তুমি এগিয়ে এসো। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল হাদীস হিসাবে পরিচিত। বর্ণনাকারীরা এটি ‘আত্বা (রহঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর বর্ণনাকারী মাখলাদ একজন শায়খ।
মিম্বারে উঠে ইমাম বসবেন
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহতে দু’টি খুত্ববাহ প্রদান করতেন। প্রথমে তিনি মিম্বরে উঠে মুয়াযযিন আযান শেষ না করা পর্যন্ত বসে থাকতেন, অতঃপর ঊঠে দাঁড়িয়ে (প্রথম) খুত্ববাহ দিতেন, তারপর বসতেন এবং কোন কথা না বলে আবার দাঁড়াতেন এবং (দ্বিতীয়) খুত্ববাহ দিতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম সংক্ষেপে।
দাঁড়িয়ে খুত্ববাহ দেয়া
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে (প্রথম) খুত্ববাহ দিতেন, অতঃপর বসতেন এবং আবার উঠে দাঁড়িয়ে (দ্বিতীয়) খুত্ববাহ দিতেন। কেউ যদি তোমাকে বলে তিনি বসে খুত্ববাহ দিতেন, সে মিথ্যা বলেছে। জাবির বলেন, আল্লাহর শপথ ! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দুই হাজারের অধিক সংখ্যক ওয়াক্তের সালাত আদায় করেছি। [১০৯৩] হাসানঃ মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর সালাতে দু’টি খুত্ববাহ দিতেন এবং দু’ খুত্ববাহর মাঝখানে বসতেন। তিনি খুত্ববাহয় কুরআন পড়তেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। [১০৯৪] হাসানঃ মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাঁড়িয়ে খুত্ববাহ দিতে দেখেছি। তিন (দু’ খুত্ববাহর মাঝে) কিছুক্ষণ বসতেন কিন্তু কোন কথা বলতেন না। অতঃপর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুত্ববাহ দেয়া
শু’আইব ইবনু রুযাইক্ব আত-ত্বায়িফী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সহাবীর নিকট বসা ছিলাম, যার নাম আল-হাকাম ইবনু হাযন আল-কুলাফী। তিনি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমি সাত আট সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সপ্তম বা অষ্টমজন হিসেবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাই এবং তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বলি, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা আপনার সাক্ষাত পেয়েছি। আপনি মহান আল্লাহর নিকট আমাদের কল্যাণের জন্য দু‘আ করুন। তখন তিনি কিছু খেজুর দ্বারা আমাদের মেহমানদারী করতে আদেশ করলেন। সে সময় (মুসলিমদের) অবস্থা ছিল অত্যান্ত করুণ। আমরা বেশ কয়েকদিন (মাদীনাহ্তে) অবস্থান করলাম। এ সময় আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জুমু’আহর সালাতও আদায় করেছি। জুমু’আহর খুত্ববাহ্য় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে পবিত্র বারকাতপূর্ণ কথার দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাঁর কতক হালকা, উত্তম ও পবিত্র গুণাবলো বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেনঃ হে জনগণ ! তোমাদেরকে যা কিছুর আদেশ দেয়া হয়েছে সে সবের প্রতিটি নির্দেশই তোমরা অক্ষরে অক্ষরে পালম করতে সক্ষম হবে না। কাজেই তোমরা নিজেদের ‘আমলের উপর অটল থাকো এবং সুসংবাদ প্রদান করো। [১০৯৬] হাসান। আবু ‘আলী (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমার কতিপয় বন্ধু এ হাদীসের অংশ বিশেষ আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্ববাহ দেয়ার সময় বলতেন, “আলহামদু লিল্লা-হি নাস্তাঈনুহু, ওয়া নাসতাগফিরুহু ওয়া না’উযু বিল্লা-হি মিন শুরুরি আনফুসিনা মাঁই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লা লাহু ওয়া মাই ইউদ্লিল ফালা হা-দিয়া লাহু। ওয়া আশ্হাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রসূলুহ। আরসালাহু বিলহাক্বক্বি বাশিরাও অয়া নাযীরা বাইনা ইয়াদাইস্ সা’আহ। মাঁই ইউত্বি’ইল্লা-হা ওয়া রসূলুহু ফাক্বাদ রাশাদা ওয়া মাঁই ইয়া’সিহিমা ফাইন্নাহু লা ইয়াদুররু ইল্লা নাফসাহু ওয়ালা ইয়াদুররুল্লা-হা শাইয়া”। (সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা চাই। আমারা আমাদের নিজেদের নাফ্সের ক্ষতি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াদ দেন কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হিদায়াত করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল। মহান আল্লাহ তাঁকে ক্বিয়ামাতের পূর্বে সত্য দ্বীনসহ সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলুলের অনুগত্য করে সে সঠিক পথে রয়েছে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ তাঁর রসূলের অবাধ্য হয় সে তো নিজেরই ক্ষতি সাধন করে, সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না)। [১০৯৭] ইউনুস (রহঃ) তিনি ইবনু শিহাব (র)-কে জুমু’আহর দিনে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুত্ববাহ প্রদান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি অতিরিক্ত ভাবে বর্ণনা করেনঃ “ওয়া মাঁই ইয়া’সিহিমা ফাক্বাদ গাওয়া ওয়া নাসআলুল্লা-হা রব্বানা ইয়াজতানিবু সাখাতাহু ফাইন্নামা নাহ্নু বিহি ওয়া লাহু”। (অর্থঃ এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হয়ে সে পথভ্রষ্ট। আর আমরা আমাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষন করে এবং অসন্তুষ্টির পথ পরিহার করে। কারণ আমরা তারই সাথে এবং তারই জন্য (বা আমরা তাঁরই জন্য সৃষ্টি হয়েছি এবং তাঁরই এখতিয়ারভুক্ত)। [১০৯৮] ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) জনৈক বক্তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বললোঃ মাঁই ইউতিয়িল্লাহা ওয়া রসূলুহু ফাক্বাদ রশাদা ওয়া মাঁই ইয়া’সিহিমা”। “যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করলো সে সঠিক পথ পেলো। আর যে তাঁদের নাফরমানী করলো”। একথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি চলে যাও। তুমি অতিশয় নিকৃষ্ট বক্তা। সহীহঃ মুসলিম। হারিস ইবনুন নু’মান (রাঃ) এর মেয়ের তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখ হতে শুনে সূরাহ ‘ক্বাফ’ মুখস্ত করেছি। সূরাটি তিনি প্রতি জুমু’আহর খুত্ববাহতে পাঠ করতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চুলা এবং আমাদের চুলা এক জায়গাতে ছিলো। সহীহঃ মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত ছিলো নাতিদীর্ঘ এবং তাঁর খুত্ববাহও ছিলো নাতিদীর্ঘ। তিনি খুত্ববাহর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। [১১০১] হাসানঃ মুসলিম। ‘আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে তার বোনের তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে শুনে শুনে সূরাহ ‘ক্বাফ’ মুখস্ত করেছি। তিনি প্রত্যেক জুমু’আহর খুত্ববাহয় সূরাহ ক্বাফ তিলায়াত করতেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আমরাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তার এক বোন যিনি তার বযোজ্যেষ্ঠ ছিলেন- সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
মিম্বারের উপর অবস্থানকালে দু’হাত উপরে উঠানো
হুসাইন ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমারাহ ইবনু রুওয়াইবাহ (রাঃ) দেখেন যে, বিশর ইবনু মারওয়ান (জুমু’আহর দিন খুত্ববাহকালে) দু‘আ করছেন। তখন ‘উমারাহ ইবনু রুওয়াইবাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার এ হাত দু’টিকে কুৎসিত করুন। যায়িদাহ বলেন, হুসাইন ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেছেন, ‘উমারাহ ইবনু রুওয়াইবাহ (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বরের উপর এর চাইতে অধিক কিছু করতে দেখিনি অর্থাৎ তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা ব্যাতীত অন্য কিছুই করতেন না। সহীহঃ মুসলিম। সাহুল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বরে অবস্থানকালে অথবা অন্যত্র কখনো হাত উঠাতে দেখিনি। তবে আমি দেখেছি যে, তিনি মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি মিলিয়ে শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা (করে দু‘আ) করতেন। [১১০৫]
খুত্ববাহ সংক্ষেপ করা
‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খুত্ববাহ সংক্ষিপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিনে উপদেশ (ওয়াজ) দীর্ঘ করতেন না, বরং তা কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বাক্য হতো মাত্র।
খুত্ববাহর সময় ইমামের কাছাকাছি বসা
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নসীহতের সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের নিকটবর্তী হবে। কারণ যে ব্যাক্তি সর্বদা (উপদেশ হতে) দূরে থাকে সে জান্নাতবাসী হলে জান্নাতেও বিলম্বে যাবে।
বিশেষ কারণে ইমামের খুত্ববাহয় বিরতি দান
‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন। এমন সময় শিশু হাসান ও হুসাইন লাল রংয়ের জামা পরিহিত অবস্থায় আছাড় খেতে খেতে এগিয়ে এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্ববাহ বন্ধ করে মিম্বার হতে নেমে তাদেরকে নিয়ে এসে মিম্বারে উঠে বললেনঃ আল্লাহ সত্যই বলেছেন, “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদী ফিতনাহ স্বরূপ” (সূরাহ তাগাবুনঃ আয়াত ১৫)। আমি এ দু’জনকে দেখে ধৈয্য ধারণ করতে পারিনি। অতঃপর তিনি খুত্ববাহ দিতে লাগলেন।
ইমামের খুত্ববাহ দেয়ার সময় কাপড় জড়িয়ে বসা সম্পর্কে
সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে তার পিতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিন ইমামের খুত্ববাহ চলাকালে কাউকে হাঁটু উপরে উঠিয়ে কাপড় জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। ইয়া’লা ইবনু শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়াহ (রাঃ) এর সাথে বাইতুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের সাথে জুমু’আহর সালাত আদায় করলেন। আমি দেখলাম, মাসজিদে উপস্থিত অধিকাংশ লোকই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী এবং ইমামের খুত্ববাহ চলাবস্থায় তারা সকলেই হাঁটু উপরে উঠিয়ে কাপড় জড়িয়ে বসে আছেন। [১১১১] দূর্বল। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমামের খুত্ববাহ প্রদানের সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারও (রাঃ) জড়িয়ে বসতেন। আনাস ইবনু মালিক, শুরাইহ্, সা’সাআ ইবনু সূহান, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, ইবরাহীম নাখয়ী, মাকহূল, ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সা’দ এবং সু’আইম ইবনু সুলামাহ প্রমুখের মতে, ইমামের খুত্ববাহ চলাবস্থায় গুটিসুটি মেরে বসাতে কোন দোষ নেই। এগুলো তাদের সূত্রে মুত্তাসিল কে করলো তা আমি পাইনি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘উবাদাহ ইবনু নুসাই ব্যাতীত অন্য কেউ এরূপ বসা অপছন্দনীয় বলতেন বলে আমার জানা নাই।
খুত্ববাহর সময় (মুসাল্লীদের) কথা বলা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমামের খুত্ববাহ চলাকালে যদি তুমি কাউকে বলো চুপ করো, তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে জুমু’আহর সালাতে তিন ধরনের লোক এসে থাকে। এক শ্রেণীর লোক জুমু’আহয় উপস্থিত হয়ে অনর্থক কথা ও কাজে লিপ্ত হয়। সে তার ‘আমল অনুসারেই তার অংশ পাবে। আরেক শ্রেণীর লোক জুমু’আহুয় এসে দু‘আ করে, মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করে। তিনি ইচ্ছে করলে তাদের দু‘আ কবুল করতে পারেন অথবা নাও করতে পারেন। আরেক শ্রেণীর লোক জুমু’আহয় উপস্থিত হয়ে চুপচাপ থাকে, কোন মুসলিমের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে যায় না এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। এই কাজ গুলো ঐ ব্যাক্তির জন্য ঐ জুমু’আহ হতে পরবর্তী জুমু’আহ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিনদিন পর্যন্ত গুনাএর কাফফারা হবে কেননা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যাক্তি একটি নেকীর কাজ করবে বিনিময়ে তাকে তার দশ গুন সওয়াব দেয়া হবে” (সূরাহ আল-আনআমঃ ১৬০)।
উযু নষ্ট হলে ইমামের অনুমতি নেয়া
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে তোমাদের কারো উযু নষ্ট হলে সে যেন তার নাক চেপ ধরে বেরিয়ে যায়।
ইমামের খুত্ববাহ দেয়ার সময় কেউ মাসজিদে এলে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক জুমু’আহয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খুত্ববাহ চলাকালে এক ব্যাক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তূমি কি (তাহিয়্যাতুল মাসজিদের দু’ রাক‘আত নফল) সালাত আদায় করেছো? সে বললো, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উঠো, সালাত আদায় করে নাও। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন, এমন সময় সুলাইক আল-গাতাফানী (রাঃ) মাসজিদে এলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কিছু সালাত আদায় করেছো কি? তিনি বললেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে নাও। সহীহঃ মুসলিম। ত্বালহা (রাঃ) তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, সুলাইক আল-গাতাফানী (রাঃ) মাসজিদে এলেন। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের দিকে ঘুরে বললেনঃ তোমাদের কেউ ইমামমের খুত্ববাহ চলাবস্থায় এলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করে নেয়। সহীহঃ মুসলিম।
জুমু’আহর দিন লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাওয়া
আবুয্ যাহিরিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা জুমু’আহর দিনে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বললেন, একদা জুমু’আহর দিন এক ব্যক্তি লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি বসো, তুমি লোকদের কষ্ট দিয়েছো।
ইমামের খুত্ববাহ দানকালে কারো তন্দ্রা আসলে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : মাসজিদের মধ্যে তোমাদের কারো তন্দ্রা এলে সে যেন তার স্থান পরির্বতন করে অন্যত্র বসে।
খুত্ববাহ শেষে মিম্বার থেকে নেমে ইমামের কথা বলা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্ববাহ শেষে মিম্বার হতে অবতরণ করার পর এক ব্যক্তি নিজ প্রয়োজনে তাঁর সামনে এসে হাজির হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটির প্রয়োজন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেই দাঁড়িয়ে থাকলেন অতঃপর সালাতে দাঁড়ালেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাবিত সূত্রে হাদীসটি পরিচিত নয়। এটি জরীর ইবনু হাযিমের একক বর্ণনা। দুর্বল: সহীহ হচ্ছে হাদীস নং ২০১।
কেউ এক রাক‘আত জুমু’আহর সালাত পেলে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি (জাম’আতে এক রাক‘আত সালাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেয়ে গেলো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
জুমু’আহর সালাত কোন সূরাহ পাঠ করবে ?
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের সালাত এবং জুমু’আহর সালাত ‘সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ’লা’ ও ‘হাল আতা-কা হাদীসুল গা-শিয়াহ” সূরাহদ্বয় তিলাওয়াত করতেন। নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, ঈদ ও জুমু’আহ একই দিনে হলে তখনও তিনি এ দু’টি সূরাহ পাঠ করতেন। সহীহ: মুসলিম। দাহ্হাক ইবনু ক্বায়িস (রাঃ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)–কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিন সূরাহ ‘জুমু’আহ’ তিলাওয়াতের পর কোন সূরাহ পাঠ করতেন? তিনি বলেন, তিনি সূরাহ “হাল আতা-কা-হাদীসুল গা-শিয়াহ” তিলাওয়াত করতেন। সহীহ: মুসলিম। ইবনু আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের সাথে জুমু’আহর সালাত আদায় করলেন। তিনি (প্রথম রাক‘আতে) সূরাহ জুমু’আহ পড়লেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরাহ ‘ইযা জা-আকাল মুনা-ফিকূর” তিলাওয়াত করলেন। ইবনু আবূ রাফি’ (রাঃ) বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাত শেষে প্রত্যাবর্তন কালে আমি তাকে গিয়ে বললাম, আপনি এমন দু’টি সূরাহ পাঠ করেছেন যা ‘আলী (রাঃ) কুফাতে পাঠ করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জুমু’আহর দিন (জুমু’আহর সালাত) এ দু’টি সূরাহ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। সহীহ: মুসলিম। সামুরাহ ইবনু জুনদব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর সালাত ‘সাব্বিহিসমি রব্বিকাল আ’লা’ এবং ‘হাল আতা-কা হাদীসুল গা-শিয়াহ” সূরাহদ্বয় পাঠ করতেন।
ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে প্রাচীর থাকাবস্থায় ইক্বতিদা করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হুজ্রাতে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকজন হুজরার বাইরে পেছনের দিক থেকে তাঁর ইকতিদা করছিলো। সহীহ: বুখারী, এর চেয়ে পরিপূর্ণ।
জুমু’আহর ফরয সালাতের পর সুন্নত সালাত
নাফি’ (রাঃ) একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে জুমু’আহর দিন (জুমু’আহর সালাত শেষে) একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতে দেখে তাকে বাঁধা দিয়ে বললেন, তুমি জুমু’আহর সালাত চার রাক‘আত আদায় করবে নাকি? ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রা. জুমু’আহর দিন বাড়িতে ফিরে দু’ রাক‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম, তার থেকে মারফুভাবে। নাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) জুমু’আহর সালাতের পূর্বে দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম, তার থেকে মারফুভাবে। ‘উমার ইবনু ‘আত্বা ইবনু আবুল খুওয়াব (রহঃ) নাফি’ ইবনু জুবায়ির (রাঃ) তাকে ‘উমার (রাঃ) এর ভাগ্নে আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদের নিকট এটা জানার জন্য পাঠালেন যে, আমীর ম’আবীয়াহ সালাত আপনাকে কী করতে দেখেছিলেন। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, একদা আমি মু’আবীয়াহ (রাঃ) এর সাখে মিহরাবের মধ্যে জুমু’আহর সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরিয়ে আমি একই স্থানে দাঁড়িয়ে (সু্ন্নত) সালাত আদায় করলাম। ঘরে পৌঁছে তিনি লোক মারফত আমাকে বললেন, তুমি (আজ) যা করেছো এরূপ আর কখনো করবে না। জুমু’আহর সালাত আদায়ের পর কোন কথা না বলে কিংবা মসজিদ হতে বের না হয়ে সেখানে পুনরায় সালাত আদায় করবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন যে, কথা না বলে কিংবা মসজিদ হতে বের না হওয়া পর্যন্ত এক সালাতের সাথে আরেক সালাত মিলানো যাবে না। সহীহ: মুসলিম। ‘আত্বা (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি মাক্কাহ্য় অবস্থানকালে জুমু’আহর (ফরয) সালাত আদায়ের পর সামনে এগিয়ে (স্থান পরির্বতন করে) দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর আবার সামনে এগিয়ে (স্থান পরির্বতন করে) চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। কিন্তু তিনি মদিনায় অবস্থানকালে জুমু’আহর (ফরয) সালাতের পর মাসজিদে সালাত আদায় না করে বাড়িতে এসে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ জুমু’আহর (ফরয) সালাতের পর সালাত আদায় করতে চাইলে সে যেন চার রাক‘আত আদায় করে। ইবনু ইউনুসের বর্ণনায় রয়েছে, জুমু’আহর সালাত আদায়ের পরে তোমরা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! তুমি মাসজিদে দু’রাক‘আত (সুন্নাত) আদায়ের পর গন্তব্যে পৌছলে অথবা বাড়িতে এলে সেখানেও দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করবে। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর (ফরয) সালাত আদায়ের পর ঘরে ফিরে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। বুখারী অর্থগতভাবে। এটি গত হয়েছে হাদীস ১১২৭ নং। ‘আত্বা (রাঃ) তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জুমু’আহর সালাতের পর সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি (ইবনু ‘উমার) জুমু’আহর (ফরয) সালাত আদায়ের স্থান থেকে বেশী নয় বরং একটু সরে গিয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। বর্ণনাকারী ‘আত্বা বলেন, অতঃপর সেখান থেকে একটু সরে গিয়ে চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনু জুরায়িজ বলেন, আমি ‘আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে কতবার এরূপ করতে দেখেছেন? তিনি বললেন, কয়েকবার।
দুই ঈদের সালাত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্তে এসে দেখেন মাদীনাহ্বাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধূলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু’টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধূলা করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন।
ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে ঈদগাহে যাওয়ার সময়
ইয়াযীদ ইবনু খুমাইর আর-রাহবী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) লোকদের সাথে ঈদুল ফিত্বর কিংবা ঈদুল আযহার সরাত আদায় করতে যান। (সালাত আরম্ভ করতে) ইমাম দেরী করায় তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেন, (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম))-এর যুগে এ (ইশারাকের) সময় আমরা ঈদের সালাত আদায় শেষ করতাম।
ঈদের সালাত নারীদের অংশগ্রহণ
উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার জন্য গৃহিণীদের নির্দেশ দেন। বলা হলো, ঋতুবর্তী মেয়েরা কি করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কল্যাণমুলক কাজ ও মুসলিমদের দু’আয় তাদের শরীক হওয়া উচিত। এক মহিলা বললো, হে আল্লাহর রসূল ! কারো (শরীর ঢাকার মত) কাপড় না থাকলে সে কি করবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার বান্ধবীর (সঙ্গীর) কাপড়ের কিছু অংশে জড়িয়ে যাবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। (এতে রয়েছে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঋতুবর্তী নারীরা মুসলিমদের সালাতের স্থান হতে পৃথক থাকবে। এ হাদীসে কাপড়ের বিষয় উল্লেখ নাই। বর্ণনাকারী হাফসাহ ও আরেক মহিলা হতে জনৈক মহিলা সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল!...অতঃপর মূসা বর্ণিত হাদীসের কাপড় বিষয়টি বর্ণনা করেন। সহীহঃ বুখারী। উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এ (উপরোক্ত) হাদীস মোতাবেক আমল করতে আদিষ্ট হতাম। বর্ণনাকারী বলেন, ঋতুবর্তী নারীরা সকলের পিছনে অবস্থান করতো এবং লোকদের সাথে তাকবীর পাঠ করতো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইসমাঈল ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ (রহঃ) হতে তার দাদী উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) ইসমাঈল ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ (রহঃ) হতে তার দাদী উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহয় আগমন করে আনসার মহিলাদেরকে একটি ঘরে সমবেত করে ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে আমাদের নিকট প্রেরন করলেন। ‘উমার(রাঃ) এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সালাম জানালে আমরা তার সালামের উত্তর দেই। ‘উমার বলেন, আমি আপনাদের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সংবাদবাহক হিসেবে এসেছি। অতঃপর তিনি আমাদের ঋতুবর্তী ও কুমারী মেয়েদের দুই ঈদের সালাত অংশগ্রহনের আদেশ দেন, মহিলাদের জন্য জুমু’আহ বাধ্যতামূলক নয় বলে জানান এবং আমাদেরকে জানাযার সালাত অংশগ্রহনে নিষেধ করেন। [১১৩৯]
ঈদের সালাতের খুত্ববাহ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ঈদের দিন মারওয়ান ঈদের মাঠে মিম্বার স্থাপন করে সালাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করায় জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, হে মারওয়ান ! তুমি সুন্নাত বিরোধী কাজ করলে। তুমি ‘ঈদের দিন বাইরে মিম্বার এনেছো এবং সালাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করেছো। অথচ ইতিপূর্বে (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খুলাফায়ি রাশিদ্বীনের যুগে) কখনো এমনটি করা হয়নি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে? লোকজন বললো, অমুকের পুত্র অমুক। তিনি বললেন, সে তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন গর্হিত (শারী’আত বিরোধী) কাজ সংঘটিত হতে দেখলে তাকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। এরূপ করতে অক্ষম হলে তা কথার দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি এতেও অক্ষম হয় তাহলে সে তা অন্তরে ঘৃণা করবে (বা তা দূর করার উপায় অন্বেষনে চিন্তা-ভাবনা করবে)। তবে এটি হচ্ছে দুর্বলতম ঈমানের পরিচায়ক। সহীহঃ মুসলিম। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ঈদুল ফিত্বরের দিন দাঁড়িয়ে খুত্ববাহর পূর্বেই সালাত আদায় করলেন।তারপর লোকদের উদ্দেশ্যে খুত্ববাহ দিলেন এবং খুত্ববাহ শেষে মহিলাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে নসীহত করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তখন বিলালের হাতের উপর ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তার কাপড় বিছিয়ে রেখেছিলেন। মহিলারা তাতে দানের বস্তু নিক্ষেপ করছিলেন। কোন কোন মহিলা তাতে নিজেদের গহনা তাতে ছুঁড়ে দিচ্ছিলো এবং অন্যরা আরো অনেক কিছু নিক্ষেপ করছিলো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ঈদুল ফিত্বরের দিন রওয়ানা হয়ে সালাত আদায়ের পর খুত্ববাহ দিলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গেলেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ) ছিলেন। ইবনু কাসীর বলেন, হাদীস বর্ণনাকারী শু’বাহর দৃঢ় ধারণা, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদেরকে সদাক্বাহ করতে আদেশ করলে তারা নিজেদের অলংকারাদী ছুঁড়ে দিতে লাগলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমান করলেন যে, (দূরে অবস্থানের কারণে) মহিলারা তাঁর কথা শুনতে পাননি। কাজেই তিনি বিলালকে সাথে নিয়ে মহিলাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নসীহত প্রদান করেন এবং সদাক্বাহ করতে আদেশ করেন। মহিলারা তাদের কানের রিং ও হাতের আংটি খুলে বিলালের কাপড়ের মধ্যে নিক্ষেপ করতে লাগলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তিনি আরো বলেন, মহিলারা তাদের কানের রিং এবং হাতের আংটি খুলে দিতে লাগলেন এবং বিলাল (রাঃ) স্বীয় চাদরে সেগুলো তুলে রাখলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো অভাবী মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করে দিলেন। সহীহঃ মুসলিম।
ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুত্ববাহ প্রদান
ইয়াযীদ ইবনুল বারাআ (রহঃ) হতে তার পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ঈদের দিন একটি ধনুক দেয়া হলে তিনি তাতে ভর করে খুত্ববাহ দেন।
ঈদের সালাত আযান নেই
‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবিস (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কোন ঈদের সালাত আদায় করেছেন কি? তিনি বললেন, হাঁ। তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্টতা না থাকলে শিশু হওয়ার কারণে আমি হয়ত তাঁর সাথে সালাত শরীক হতে পারতাম না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন কাসীর ইবনুল সলত এর বাড়ির পাশে স্থাপিত ঝান্ডার নিকটে এসে সালাত আদায় করার পর খুত্ববাহ দেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আযান ও ইক্বমাতের কথা উল্লেখ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাহ করতে আদেশ করলে মহিলারা তাদের কান ও গলার দিকে ইশারা করেন, ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে তাদের নিকট পাঠান। বিলাল (রাঃ) তাদের কাছে গিয়ে (সদাক্বাহ সংগ্রহ করে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফিরে আসেন। সহীহঃ বুখারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর এবং উমার অথবা উসমান (রাঃ) আজান ও ইক্বামাত ছাড়াই ঈদের সালাত আদায় করেতেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর সাথে দুই ঈদের সালাত আজান ও ইক্বামাত ছাড়া এক দুইবার নয়, বরং অনেকবার আদায় করেছি।
দুই ঈদের তাকবীর
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাক‘আতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) সূত্র উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস একই সানাদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রুকূর দুই তাকবীর ব্যতীত। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈদুল ফিত্বরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাকআতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি এবং উভয় রাকআতেই তাকবীরের পর ক্বিরাআত পড়তে হবে। আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বরের সালাতের প্রথম রাকআতে সাতবার তাকবীর বলতেন, অতঃপর ক্বিরায়াত পাঠ করতেন, ক্বিরাআত শেষে তাকবীর বলার পর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দন্ডায়মান হয়ে চারবার তাকবীর বলে ক্বিরায়াত আরম্ভ করতেন, অতঃপর রুকূ করতেন। [১১৫২] হাসান সহীহ, তবে (চার তাকবীর) কথাটি বাদে। সঠিক হচ্ছে (পাঁচ তাকবীর)। আবূ মূসা আল-আশ’আরী ও হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) আবূ মূসা আল-আশ’আরী ও হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)- কে সাঈদ ইবনুল আস (রহঃ) জিজ্ঞেস করেন, ঈদুল ফিত্বর এবং ঈদুল আযহার সালাত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে তাকবীর বলতেন? আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেন, তিনি জানাযার সালাতের ন্যায় চারটি তাকবীর বলতেন। হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) সত্যি বলেছেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি বাসরাহতে গভর্নর থাকাকালে (ঈদের সালাত) এভাবেই তাকবীর দিয়েছি। আবূ আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, সাঈদ ইবনুল আসের প্রশ্ন করার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম।
ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার সালাতের ক্বিরাআত
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আবূ ওয়াক্বিদ আল-লাইসী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রসুল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার সালাতে কোন সূরাহ পাঠ করতেন? তিনি বলেন, তিনি সূরাহ কাফ অয়াল-কুরাআনিল মাজীদ এবং সূরাহ ইকতারাবাতিস সা’আতু ওয়ান-শাককাল কামারু তিলাওয়াত করতেন। সহীহঃ মুসলিম।
খুত্ববাহ শুনার জন্য বসা
আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ঈদের সালাত আদায় করি। সালাত শেষে তিনি বলেনঃ আমি এখন খুত্ববাহ দিবো। যে খুত্ববাহ শুনার জন্য বসতে চায় সে বসবে, আর কেউ চলে যেতে চাইলে চলে যাবে। সহীহ।
ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং অন্য পথে ফেরা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। সহীহঃ বুখারী। জাবির হতে।
কোন কারণে ইমাম ঈদের দিন সালাত পড়াতে না পারলে পরের দিন পড়াবেন
আবূ ‘উমাইর ইবনু আনাস (রহঃ) হতে তার চাচা -যিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী ছিলেন- একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একদল আরোহী এসে সাক্ষ্য দিলো যে, গতকাল তারা (ঈদের) চাঁদ দেখেছে। তিনি লোকদেরকে সওম ভঙ্গ করার এবং পরদিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। বাকর ইবনু মুবাশশির আল-আনসারী (রাঃ) আমি ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের সাথে ঈদগাহে যেতাম। আমরা বাতনে বুতহান নামক প্রান্তর অতিক্রম করে ঈদগাহে গিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করতাম। অতঃপর বাতনে বুতহানের পথ ধরেই আমাদের ঘরে ফিরতাম। [১১৫৮]
ঈদের সালাতের পর অন্য নফল সালাত
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদুল ফিত্বরের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে নিয়ে (ঈদের) দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে তিনি কোন সালাত আদায় করেননি। অতঃপর তিনি বিলালকে সাথে নিয়ে মহিলাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে দান-খয়রাত করতে নসীহত করেন। মহিলারা নিজেদের কানের দুল ও হার (চাদরে) নিক্ষেপ করতে থাকলো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
বৃষ্টির দিনে লোকদের নিয়ে ঈদের সালাত মাসজিদে আদায় করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা ঈদের দিন বৃষ্টি হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদেরকে নিয়ে ঈদের সালাত মাসজিদে আদায় করেন। [১১৬০]