21. জানাযা
অসুস্থতার কারণে মুমিনের গুনাহ ক্ষমা হয়
আল-খুদর গোত্রের তীরন্দাজ ‘আমির (রাঃ) নুফাইলী বলেন, শব্দটি ‘খাদরি’ নয়, বরং খুদর, তবে ব্যবহারে তা প্রচলিত হয়ে গেছে। ‘আমির বলেন, আমি আমাদের শহরেই ছিলাম। এমন সময় আমরা কিছু পতাকা উড্ডীন দেখতে পেয়ে লোকদের জিজ্ঞেস করি, এসব কি? তারা বললো, এগুলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পতাকা। আমি তাঁর নিকট আসলাম। তখন তিনি একটি গাছের নিচে তাঁর জন্য বিছানো একটি কম্বলের উপর বসা ছিলেন। তাঁর চারপাশে তাঁর সাহাবীগণও বসা ছিলেন। আমি তাদের কাছে বসলাম। রাসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বললেনঃ মুমিন ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয়, অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে রোগমুক্তি দেন, এটা তার অতীতের গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ এবং তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শিক্ষণীয়। পক্ষান্তরে কোন মুনাফিক অসুস্থ হওয়ার পর তাকে তা থেকে মুক্তি দেয়া হলে সে এমন উটের মত যাকে তার মালিক শক্ত করে বেঁধে আবার ছেড়ে দিলো। কিন্তু সে কিছুই বুঝলো না, তার মালিক তাকে কেনই বা শক্ত করে বাঁধলো আর কেনই বা ছেড়ে দিলো। তাঁর আশেপাশে বসা লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! কিসের অসুস্থতা? আল্লাহ্র শপথ! আমি তো কখনও অসুস্থ হইনি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আমাদের এখান থেকে উঠে যাও, কারণ তুমি আমাদের দলভুক্ত নও। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাঁর কাছে বসা। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি আসলো। তার গায়ে কম্বল জড়ানো এবং তার হাতে কিছু একটা ছিলো। সে বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি আপনাকে দেখতে পেয়েই আপনার কাছে উপস্থিত হলাম। গাছপালার মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় আমি পাখির বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পাই। আমি সেগুলো ধরে আমার কম্বলের মধ্যে রাখি। বাচ্চাগুলোর মা এসে আমার মাথার উপর চক্কর দিতে লাগলো। আমি বাচ্চাগুলোকে তাদের মায়ের জন্য কম্বলের মধ্য থেকে বের করে দিলাম। পাখিটি এসে বাচ্চাগুলোর সাথে মিলিত হলো। আমি সবগুলোকে আমার কম্বল দিয়ে লেপটিয়ে ধরে ফেললাম। এখন সবগুলো পাখি আমার সাথে রয়েছে। তিনি বললেনঃ সেগুলো বের করে রাখো। সুতারাং আমি বের করলাম। কিন্তু মা পাখিটা বাচ্চাদের রেখে যেতে চাইলো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের বললেনঃ বাচ্চাদের প্রতি মা পাখিটার মায়ায় তোমরা কি আশ্চর্যবোধ করছো না! তারা বললেন, হাঁ হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বললেনঃ সেই সত্তার শপথ, যিনি আমাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন! বাচ্চাদের প্রতি মা পাখিটার যে মায়া রয়েছে, আল্লাহ্ অবশ্যই তাঁর বান্দাদের প্রতি আরো অধিক মমতাময়ী। তুমি যেখান থেকে বাচ্চাগুলোকে ধরে এনেছ মা-সহ তাদেরকে সেখানে রেখে আসো। সুতারাং সে পাখিগুলো সেখানে রেখে এলো। দুর্বল : মিশকাত (১৫৭১)। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) হতে তার পিতা ও দাদার সূত্র তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ্ তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। সহীহ : সহীহাহ (২৫৯৯)।
কোন ব্যক্তি সৎকাজে অভ্যস্ত হলে পরবর্তীতে অসুস্থতা বা সফরের কারণে তা করতে বাধাগ্রস্ত হলে
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একবার দুইবার নয়, বহুবার বলতে শুনেছি : কোন বান্দা নেক কাজ করলে এবং পড়ে রোগ বা সফর তাকে সে কাজ হতে বিরত রাখলে তার আমলনামায় সুস্থ ও আবাসে অবস্থানকালে তার কৃত সৎ আমলের ন্যায় সওয়াব লেখা হবে। হাসান : ইরওয়া (৫৬০)।
মহিলা রোগীর সেবা করা
উম্মূল ‘আলা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে আসলেন। তিনি বললেনঃ হে ‘আলার মা! সুসংবাদ গ্রহণ করো, আগুন যেভাবে সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয় তদ্রুপ মহান আল্লাহ্ কোন মুসলিমের রোগের দ্বারা তার গুনাহসমূহ দূর করে দেন। সহীহ : সহীহাহ (৭১৪)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি বললাম : হে আল্লাহ্র রাসূল! মহান আল্লাহ্র কিতাবের সবচেয়ে কঠোর আয়াতটি আমি অবশ্যই অবহিত আছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : হে ‘আয়িশাহ! সেটি কোন আয়াত? তিনি বললেনঃ মহান আল্লাহ্র বাণী : “কেউ পাপ করলে তার প্রতিফলন সেই পাবে এবং সে আল্লাহ্র বিপক্ষে কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না” (সূরাহ আন-নিসা : ১২৩)। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি কি জানো, কোন মুসলিম যখন বিপদগ্রস্ত বা নির্যাতিত হয়, এতে তার আমলের মন্দ দিকগুলো দূরীভূত হয়ে যায়। যে ব্যক্তির হিসাব নেয়া হবে সে মারা পড়বে বা শাস্তি পাবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ কি বলেননি, “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে তার হিসাব সহজে গ্রহণ করা হবে” (সূরা আল-ইনশিক্বাক্ব : ৮)। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! এর অর্থ আমল পেশ করা। অন্যথায় যার হিসাবে কড়াকড়ি হবে সে তো মারা পড়বে। সানাদ দুর্বল। কিন্তু [...আরবী...] অংশটি সহীহ।
রোগী দেখতে যাওয়া
উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, (মুনাফিক সর্দার) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে যান। তিনি তার কাছে প্রবেশ করে তার চেহারায় মৃত্যুর ছাপ দেখে বললেনঃ আমি তোমাকে ইয়াহুদীদেরকে ভালোবাসতে নিষেধ করতাম। ‘আবদুল্লাহ বললো, তাদের প্রতি আস’আদ ইবনু যুরারাহ বিদ্বেষ পোষণ করে কী পেয়েছে? ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেলে তার ছেলে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহ্র নাবী! ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেছে। তাকে কাফন দেয়ার জন্য আপনার একটা জামা দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর গায়ের চাঁদরটি খুলে তাকে দিলেন। সানাদ দুর্বল। কিন্তু কামীসের ঘটনা সহীহ।
অমুসলিম রোগী দেখা
আনাস (রাঃ) এক ইয়াহুদী যুবক অসুস্থ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে যান। তিনি তার মাথার কাছে বসে বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। সে তার পিতার দিকে তাকালো। সেও তার মাথার কাছেই বসা ছিলো। তার পিতা তাকে বললো, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। সে ইসলাম গ্রহণ করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান থেকে উঠে আসার সময় বললেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি তাকে আমার মাধ্যমে দোযখ থেকে মুক্তি দিলেন। সহীহ : ইরওয়া (১২৭২)।
পায়ে হেঁটে রোগী দেখতে যাওয়া
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়ে হেঁটে আমাকে দেখতে আসেন। তিনি খচ্চর বা তুর্কী ঘোড়ায় চড়ে আসেননি। সহীহ : তিরমিযী (৪১২৩)।
উযু করে রোগী দেখতে যাওয়ার ফাযীলাত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ উত্তমরূপে উযু করে নেকীর আশায় তার কোন (অসুস্থ) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর খারীফ (সত্তর বছরের) পথ দূরে রাখা হবে। আমি (সাবিত আল-বানানী) আবূ হামযাহকে জিজ্ঞেস করি, খারীফ শব্দের তাৎপর্য কি? তিনি বললেন, বছর। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বাসরাহ্র মুহাদ্দিসগণ শুধু ‘উযু করে রোগী দেখার’ অংশটুকু বর্ণনা করেছেন। দুর্বল : মিশকাত (১৫৫২), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৫৫৩৯)। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, কেউ বিকাল বেলা কোন রোগীকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাথে রওয়ানা হয় এবং তারা তার জন্য ভোর হওয়া পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকে। উপরন্তু তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি করা হয়। আর কোন ব্যক্তি দিনের প্রথমভাগে রোগী দেখতে গেলে তার সাথেও সত্তর হাজার ফেরেশতা রওয়ানা হয় এবং তারা সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। তাকেও জান্নাতে একটি বাগান দেয়া হয়। সহীহ মাওকুফ : সহীহাহ (১৩৬৭)। আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) হতে এ সানাদেও উপরের হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণিত। কিন্তু এতে ‘খারীফ’ শব্দের উল্লেখ নেই। আবূ জাফর ‘আবদুল্লাহ ইবনু নাফি (রহঃ) একদা আল-হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) অসুস্থ হলে তাকে আবূ মূসা (রাঃ) দেখতে আসেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনা শু’বাহ (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের সানাদসুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত মারফু করা হয়েছে, তবে এটি যথার্থ নয়।
বারবার রোগী দেখা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত তীরে সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য মাসজিদের ভেতর একটি তাঁবু টানালেন। যেন তিনি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারেন।
চক্ষু রোগীকে দেখতে যাওয়া
যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমার চোখে ব্যাথা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে আসেন।
মহামারী উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করা
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগ-মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কথা শুনলে সেখানে যাবে না। আর যদি কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে এবং তোমরাও সেখানে অবস্থান করো, তাহলে সেখান থেকে পালিয়ে এসো না।
রোগী দেখতে গিয়ে রোগীর সুস্থতা চেয়ে দু’আ করা
‘আয়িশাহ (রাঃ) তার পিতা বলেছেন, আমি মক্কাতে অসুস্থ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি আমার কপালে হাত রাখলেন এবং বুক ও পেট মলে দিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! সা’দ কে রোগমুক্ত করে দিন এবং তার হিজরাতকে পূর্ণ করে দিন। আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রোগীর সাথে দেখা-সাক্ষাত করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো। সুফিয়ান আস-সাওরী (রহঃ) বলেন, ‘আল-‘আনী’ অর্থ বন্দী। সহীহ : তাখরীজ মুশকিলাতুল ফিক্বর (১১২)।
রোগীকে দেখতে গিয়ে তার জন্য দু’আ করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি এমন রোগীকে দেখতে গেলো যার অন্তিম সময় আসেনি, সে যেন তার সামনে সাতবার বলে : “আমি মহান আরশের প্রভু মহামহিম আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাকে রোগমুক্তি দেন,” তাহলে তাকে নিশ্চয়ই রোগমুক্তি দেয়া হবে। সহীহ : মিশকাত (১৫৫৩)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ কোন রোগীকে দেখতে গেলে সে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে আরোগ্য দিন যাতে সে আপনার উদ্দেশ্যে শত্রুকে আঘাত হানতে পারে এবং আপনার জন্য জানাযায় বা সলাতে শরীক হতে পারে।” সহীহঃ সহীহাহ (১৫০৪)।
মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করা অনুচিত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা না করে। বরং সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! যে পর্যন্ত জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর, আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখুন এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর, তখন আমাকে মৃত্যু দিন”। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে... হাদীসের বাকী অংশ উপরের হাদীসে অনুরূপ। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
আকস্মিক মৃত্যু
বনু সুলাইমের ‘উবাইদ ইবনু খালিদ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যতম সাহাবী ছিলেন। অধস্তন বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ এটি কখনো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মারফূ‘ হাদিসরূপে আবার কখনো উবাইদ ইবনু খালিদের কাছ থেকে মওকুফ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আকস্মিক মৃত্যু গযবের দ্বারা গ্রেপ্তারস্বরূপ। সহীহঃ মিশকাত (১৬১১)।
মহামারীতে মৃত্যুবরণকারীর ফাযীলত
জাবির ইবনু ‘আতীক্ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাবিতের (রাঃ) মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে দেখতে যান। তিনি দেখলেন, সে বেহুঁশ অবস্থায় রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সশব্দে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিতে পারলেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করলেন। তিনি বললেনঃ হে আবুর রাবী‘! আমরা তোমার ব্যাপারে পরাজিত। এতে মহিলারা চিৎকার করলো এবং কাঁদতে লাগলো। ইবনু ‘আতীক্ব (রাঃ) তাদেরকে থামাতে চেষ্টা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদেরকে ছেড়ে দাও। ওয়াজিব হয়ে গেলে কোন ক্রন্দনকারিণীই কাঁদবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ওয়াজিবের তাৎপর্য কি? তিনি বললেনঃ মৃত্যু। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাবিতের কন্যা বললো, আল্লাহর শপথ! আমি মনে করেছিলাম, (হে আমার পিতা) তুমি শহীদ হবে। কারণ তুমি জিহাদের সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিলে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মহামহিম আল্লাহ নিশ্চয়ই তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তোমরা কাকে শহীদ বলে গণ্য করো? তারা বললেন, আল্লাহর পথে (যুদ্ধে) নিহত ব্যক্তিকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী শহীদ, পানিতে ডুবে নিহত ব্যক্তি শহীদ, চাপা পড়ে নিহত ব্যক্তি শহীদ এবং প্রসবকালীন কষ্টে নিহত নারী শহীদ। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আল-জুমউ’ অর্থ গর্ভবতী মহিলা। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮০৩)।
রোগীর নখ ও লজ্জাস্থানের চুল কাটা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বনুল হারিস ইবনু ‘আমির ইবনু নাওফাল খুবাইব (রাঃ)-কে খরিদ করেছিল। ইনি সেই খুবাইব যিনি বদর যুদ্ধের দিন আল-হারিস ইবনু ‘আমিরকে হত্যা করেছেন। খুবাইব (রাঃ) তাদের কাছে বন্দী ছিলেন। তারা তাকে হত্যা করতে একত্র হলো। তিনি হারিসের কন্যার কাছে ক্ষৌরি হওয়ার জন্য একটি ছুরি চাইলেন। সে তাকে তা এনে দিলো। তার অজান্তেই তার শিশু পুত্রটি খুবাইবের কাছে এসে পড়লো। স্ত্রীলোকটি এসে দেখলো, ছেলেটি তার রানের উপর বসে আছে এবং তার হাতে ঐ ধারাল ছুরিটি রয়েছে। সে খুব ভীত হয়ে পড়লো। তার চেহারা দেখে খুবাইব তা বুঝতে পেরে বললেন, তুমি কি আশংকা করছো আমি একে হত্যা করবো, আমি কখনো এরূপ করবো না।
মৃত্যুর সময় আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ উত্তম
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ না করে মৃত্যু বরণ না করে।
মৃত্যুর সময় মুমূর্ষ রোগীর পরিধেয় বস্ত্র পরিষ্কার থাকা ভাল
আবূ সাঈদ আল-খুদঈ (রাঃ) তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তিনি নতুন কাপড় নিয়ে ডাকলেন এবং তা পরিধান করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি যে কাপড় পরিধান করে মারা যাবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে ঐ কাপড়েই উঠানো হবে। সহীহঃ সহীহাহ (১৬৭১)।
মৃত্যুপথযাত্রীর সামনে যে ধরনের কথা বলা উচিত
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির কাছে উপস্থিত হলে উত্তম কথা বলবে। কেননা কথার সাথে ফেরেশতারা আমীন আমীন বলেন। আবূ সালমাহ (রাঃ) মারা গেলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে কল্যাণকর পরিণতি দান করুন।” উম্মু সালমাহ (রাঃ) বলেন, এ দু‘আর বদৌলতে মহান আল্লাহ আমার কল্যাণময় পরিণতি দান করলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (তার সাথে বিবাহ হয়)। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৪৭)।
মুমূর্ষু ব্যক্তিকে তালক্বীন দেয়া সম্পর্কে
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা সর্বশেষ বাক্য হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মৃত্যুপথ যাত্রীকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” তালক্বীন দাও।
মৃতের চোখ বন্ধ করা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ সালামাহর (রাঃ) নিকট প্রবেশ করেন। তখনও তার চোখ খোলা থাকায় তিনি তা বন্ধ করে দেন। অতঃপর তার পরিবারের কিছু লোক চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তিনি বললেনঃ নিজেদের জন্য কল্যাণ কামনা ছাড়া তোমরা অযথা কিছু বলো না। কারণ তোমরা যা বলবে তার সাথে সাথে ফেরেশতারা আমীন বলবেন। পুনরায় তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আবূ সালামাহকে ক্ষমা করে দাও এবং তাকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদা দান করো। তার পেছনে যারা রয়ে গেলো, তুমিই তাদের অভিভাবক হও। হে জগতসমূহের প্রতিপালক! তার কবরকে প্রশস্ত করো এবং তা আলোকিত করো।” আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, রূহ বের হয়ে যাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে দিবে। আবূ মাইসারাহ (রহঃ) নামক এক ইবাদতগুজার ব্যক্তি বলেন, আমি ইবাদতপ্রিয় জা’ফার আল-মু’আল্লিমের (রহঃ) মৃত্যুকালে তার চোখ বন্ধ করে দিয়েছি। তার মৃত্যুর রাতে আমি তাকে স্বপ্নে দেখি এবং তিনি বললেন, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তুমি যে আমার চোখ বন্ধ করে দিয়েছিলে তা ছিল আমার প্রতি তোমার মহাঅনুগ্রহ।
ইন্না লিল্লাহ পাঠ করা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো উপর বিপদ আসলে সে যেন বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা নিশ্চয়ই তাঁর কাছে ফিরে যাবো। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই আমার বিপদের কথা পেশ করছি। সুতরাং আমাকে এর উত্তম প্রতিফল দান করুন এবং বিপদকে আমার জন্য কল্যাণকর বস্তুতে পরিবর্তন করে দিন।” সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৯৮)।
মৃতের শরীর ঢেকে রাখা
আয়িশাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে একটি ডোরাদার চাঁদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল।
মৃত্যুপথযাত্রীর নিকট কুরআন পাঠ
মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের নিকট ‘সূরাহ ইয়াসীন’ পাঠ করো। দুর্বলঃ মিশকাত (১৬২২), ইরওয়া (৬৮৮)।
বিপদের সময় (মাসজিদে) বসা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু হারিসাহ, জা’ফার ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) যখন শহীদ হন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাসজিদে গিয়ে বসেন। তাঁর চেহারায় চিন্তার ছাপ পরিলক্ষিত হলো।
মৃতের জন্য শোক প্রকাশ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে আমরা একটি লাশ দাফন করলাম। আমরা অবসর হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে আসলেন। আমরাও তাঁর সাথে ফিরে এলাম। তিনি ঘরের দরজার নিকট পৌছে থামলেন। আমরা এক মহিলার মুখোমুখি হলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ধারণা করলাম, তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাটিকে চিনতে পেরেছেন। মহিলাটি চলে যাওয়ার সময় দেখা গেলো, তিনি তো ফাত্বিমাহ (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেনঃ হে ফাত্বিমাহ! কোন জিনিস তোমাকে ঘর থেকে বের হতে বাধ্য করেছে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এসেছিলাম এ বাড়ির লোকদের সান্ত্বনা দিতে এবং ধৈর্য ধারণের নসিহত করতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেনঃ খুব সম্ভব তুমি তাদের সাথে কবর পর্যন্ত গিয়েছিলে। তিনি বললেন, আল্লাহর আশ্রয় চাই। নারীদের কবরস্তানে যাওয়ার বিষয়ে আমি আপনার আলোচনা শুনেছি। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তাদের সাথে কবরস্তানে যেতে তাহলে আমি তোমাকে এই করতাম। তিনি এ বিষয়ে কঠোর বাণী উচ্চারণ করলেন। আমি (মুফাদ্দাল) রবী’আহকে ‘আল-কুদা’ শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমার ধারণা, এর অর্থ কবর। দুর্বলঃ নাসায়ী (১৮৮০)।
বিপদে ধৈর্যধারণ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মহিলার কাছে যান। মহিলাটি তার ছেলের মৃত্যুশোকে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেনঃ আল্লাহ্কে ভয় করো এবং ধৈর্য ধরো। মহিলাটি বললো, তুমি তো আমার মতো বিপদগ্রস্ত হওনি। তাকে বলা হলো, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পরে মহিলাটি তাঁর বাড়িতে এলো, কিন্তু দরজায় কোন দারোয়ান দেখলো না। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তখন আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেনঃ প্রকৃত ধৈর্য বিপদের প্রথম দিকেই।
মৃতের জন্য কান্নাকাটি করা
উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা (যাইনাব (রাঃ)) তাঁর নিকট লোক পাঠালেন। তখন আমি ও সাদ (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলাম। সম্ভবত উবাই (রাঃ) আমাদের সাথেই ছিলেন। তিনি বলে পাঠান, আমার একটি শিশু পুত্র বা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) কন্যা মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। আপনি আমাদের এখানে আসুন। তিনি তাকে লোক মারফত সালাম পাঠিয়ে বললেনঃ বলো, আল্লাহ যা গ্রহণ করেন এবং যা দান করেন তা সবই তাঁর। তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তুর একটা নির্দিষ্ট সময়কাল আছে। তিনি পুনরায় কসম দিয়ে লোক পাঠালেন। তিনি সেখানে গেলেন। বাচ্চাটি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোলে রাখা হলো। তখন তার প্রাণ ছটফট করছিল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সা’দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, এ কি? তিনি বললেনঃ এটাই হলো মায়া। আল্লাহ যাদেরকে চান তাদের অন্তরে এটি স্থাপন করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়াবানদের দয়া করেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আজ রাতে আমার ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। আমি আমার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম (আ)-এর নাম অনুসারে তার নাম রেখেছি ইবরাহীম। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখেছি ইবরাহীম রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনেই প্রাণ ত্যাগ করলেন। রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। তিনি বললেনঃ চোখ অশ্রু ঝরাচ্ছে, অন্তর দুঃখভারাক্রান্ত, তবুও আমরা শুধুমাত্র তাই বলবো যাতে আমাদের প্রতিপালক সস্তুষ্ট হবেন (অর্থাৎ ইন্না লিল্লাহি ওয়া..)। হে ইবরাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকার্ত।
বিলাপ করে কান্নাকাটি করা
উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে উচ্চস্বরে বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাপকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীকে অভিশম্পাত করেছেন। সানাদ দুর্বলঃ ইরওয়া (৭৬৯)। ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোকজনের কান্নাকাটির কারণে শাস্তি দেয়া হয়। এ কথা ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, এ ধরনের কথা ইবনু ‘উমার কোত্থেকে শুনেছে। একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেনঃ কবরবাসীর পরিবারের লোকজনের কান্নাকাটির কারণে এ ক্ববরের বাসিন্দাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অতঃপর ‘আয়িশাহ এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “একের বোঝা অন্যের উপর চাপানো হবে না" (সূরাহ আল-আন’আমঃ ১৬৪, বনী ইসরাঈলঃ ১৫, ফাত্বিরঃ ১৮, যুমারঃ ৩৯ এবং নাজমঃ ৩৮)। হান্নাদ (রহঃ) আবূ মু’আবিয়াহর সূত্রে বলেন, তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ইয়াহুদীর ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যায়িদ ইবনু আওস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি অসুস্থ আবূ মূসা (রাঃ)-কে দেখতে যাই, তার স্ত্রী কাঁদতে লাগলেন। আবূ মূসা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ শুনোনি? তিনি বললেন, হাঁ শুনেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কান্না থামিয়ে চুপ হলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) যখন মারা যান, তখন ইয়াযীদ বলেন, আমি মহিলার সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আবূ মূসা আপনাকে কী বলেছিলেন? (তিনি বলেছিলেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ শুনোনি- অতঃপর আপনি তখন চুপ হয়েছিলেন। মহিলাটি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (মৃত্যুশোক প্রকাশে) যে মহিলা মাথা মুড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। সহীহ : ইরওয়া (৭৭১)। আসীদ ইবনু আসীদ (রহঃ) তিনি বাই’আত গ্রহণকারী জনৈক মহিলার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছ থেকে যেসব সৎকাজের বাই’আত গ্রহণ করেছিলেন তাতে এটাও ছিলঃ আমরা তাঁর অবাধ্য হবো না, মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করবো না, বুক চাপড়াবো না, ধ্বংসের আহবান করবো না, কাপড়-চোপড় ফাঁড়বো না এবং চুল এলোমেলো করবো না।
মৃতের পরিবারের জন্য খাদ্য প্রেরণ
আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা জা’ফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো। কারণ তাদের কাছে এমন দুঃসংবাদ এসেছে যা তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১৬১০-১৬১১), মিশকাত (১৭৩৯)।
শহীদকে গোসল দিবে কিনা?
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তির বুকে বা কণ্ঠনালীতে একটি তীর বিদ্ধ হলে তাতেই সে নিহত হলো। অতঃপর তার পরিহিত কাপড়েই তাকে (দাফনে) জড়ানো হলো। আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথেই ছিলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদের শহীদদের ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন যে, তাদের শরীর থেকে যুদ্ধাস্ত্র ও চামড়ার বস্ত্র খুলে নিয়ে তাদের রক্তমাখা পরিধেয় বস্ত্রসহ তাদেরকে দাফন করতে হবে। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (১৫১৫), মিশকাত (১৬৪৩), ইরওয়া (৭০৯)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উহুদ যুদ্ধের শহীদদেরকে গোসল দেয়া হয়নি। তাদেরকে রক্তরঞ্জিত দেহেই দাফন করা হয় এবং তাদের উপর জানাযা পড়া হয়নি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হামযাহ (রাঃ)-এর (লাশের) পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দেখলেন, তার লাশ বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বললেনঃ সাফিয়্যাহ্ (হামযাহ্র বোন) যদি কষ্ট না পেতো তাহলে আমি তার লাশ পড়ে থাকতে দিতাম এবং পশুপাখিরা তা খেয়ে নিতো এবং ক্বিয়ামাতের দিন তাকে এদের পেট থেকেই উত্থিত করা হতো। এ সময় কাফনের কাপড় কম ছিলো, কিন্তু মৃতদেহ ছিল অনেক। ফলে এক, দুই, এমনকি তিন ব্যক্তিকে একই কাপড়ে জড়িয়ে কাফন দেয়া হয়। কুতাইবাহ্র বর্ণনায় রয়েছেঃ অতঃপর তাদেরকে একই ক্ববরে দাফন করা হয়। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করতেনঃ এদের মধ্যে কোন ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে অধিক পারদর্শী ছিল। তিনি তাকে ক্বিবলাহ্র দিকে (ডানে) রাখতেন। হাসানঃ তিরমিযী (১০২৭)। আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হামযাহ (রাঃ) এর লাশের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দেখলেন, তার মৃতদেহ বিকৃত করা হয়েছে। তিনি হামযাহ (রাঃ) ছাড়া অন্য কোন শহীদের জানাযা পড়েননি। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদদের দুইজনকে একই ক্ববরে দাফনের নির্দেশ দেন এবং জিজ্ঞেস করতে থাকেনঃ এদের মধ্যে কোন ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে অধিক পারদর্শী ছিল। অতঃপর তাদের কারো প্রতি ইঙ্গিত করা হলে তাকেই তিনি প্রথমে ক্ববরে রাখতেন। তিনি বললেনঃ আমি ক্বিয়ামাতের দিন তাদের জন্য সাক্ষী হবো। তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রক্তমাখা দেহে দাফনের নির্দেশ দেন এবং তাদের গোসল দিলেন না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫১৪)। লাইস (রহঃ) লাইস (রহঃ) হতে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদদের দুই দুই ব্যক্তিকে একই কাপড়ে একত্রে কাফন দেন।
গোসলের সময় মৃত ব্যক্তির লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা
আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রান অনাবৃত করবে না এবং জীবিত ও মৃত কারো রানের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না। খুবই দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (১৪৬০), ইরওয়া (২৬৯)। আব্বাস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গোসল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা বুঝে উঠতে পারছি না, আমরা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বস্ত্র খুলে নিবো যেভাবে সাধারণ লোকের মৃতদেহ থেকে বস্ত্র খুলে নেই, নাকি তাঁর পরিধেয় বস্ত্রসহ তাকে গোসল দিবো? তারা এ নিয়ে মতভেদে লিপ্ত হলে মহান আল্লাহ তাদের উপর ঘুম চাপিয়ে দিলেন। ঘুমের ঘোরে তাদের প্রত্যেকের থুতনী নিজ নিজ বুকের সাথে ঠেকে গেলো। এমতাবস্থায় ঘরের এককোণ থেকে অদৃশ্য আওয়াজ আসলো। ঐ আওয়াজ কে দিলো তা জানা গেলো না। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কাপড়ে আবৃত অবস্থায়ই গোসল দাও।” একথা শুনে তারা জেগে উঠলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তাঁর জামা পরিহিত অবস্থায় গোসল দিলেন। তারা জামার উপর পানি ঢাললেন এবং হাতের পরিবর্তে জামা দিয়ে তাঁর শরীর রগরালেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম যা পরে বুঝতে পেরেছি তাহলে তাঁর স্ত্রীরাই তার গোসল দিতেন।
মৃতকে গোসল দেয়ার পদ্ধতি
উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা (যাইনাব (রাঃ)) মারা গেলে তিনি আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তোমরা তাকে কুল পাতা মেশানো সিদ্ধ পানি দিয়ে তিন, পাঁচ অথবা প্রয়োজনবোধ এর চেয়ে অধিকবার গোসল করাও এবং শেষবারে কাফুর মিশিয়ে নাও। গোসল দেয়া শেষ হলে তোমরা আমাকে খবর দিবে। অতঃপর আমরা গোসল দেয়া শেষ করে তাঁকে খবর দিলাম। তিনি তাঁর ব্যবহৃত একখানা কাপড় দিয়ে আমাদেরকে বললেনঃ এটা তার গায়ে পরিয়ে দাও। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৫৮)। উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তার (যয়নাব (রাঃ)) চুলগুলো তিন গোছায় ভাগ করেছিলাম। উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তাঁর (যাইনাবের) মাথার চুল তিন গোছায় ভাগ করলাম। এরপর কপালের (একভাগ) চুল এবং মাথার দু’পাশের (দুইভাগ) চুল তার পিছনের দিকে ফেলে দিলাম। উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যার (যাইনাবের) গোসল সম্পর্কে তাদেরকে বললেনঃ তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং উযুর অঙ্গসমূহ থেকে গোসল দেয়া আরম্ভ করবে। উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে হাফসাহ (রহঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে এও রয়েছেঃ [তিনি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন] অথবা সাতবার বা প্রয়োজনে এর চেয়ে অধিকবার গোসল দিবে। মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি উম্মু ‘আতিয়্যার (রাঃ) নিকট গোসল দেয়ার পদ্ধতি শিখেছেন। মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, কুলপাতা মিশানো গরম পানি দিয়ে দুইবার এবং কর্পুর মিশ্রিত পানি দিয়ে একবার গোসল দিতে হয়।
কাফনের বর্ণনা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন খুত্ববাহ দেয়ার সময় তাতে তাঁর এক সাহাবীর কথা উল্লেখ করলেন। ঐ সাহাবী মারা গেলে লোকেরা তাকে রাতের বেলায় অপর্যাপ্ত কাপড়ে কাফন দিয়েছিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত ব্যক্তিকে রাতের বেলায় কবরস্থ করাকে তিরস্কার করলেন, যেন লোকজন জানাযা শরীক হতে পারে। তবে কেউ বিশেষ কারণে রাতে ক্ববর দিতে চাইলে তা ভিন্ন কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বললেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে কাফন পরালে যেন উত্তমরূপে কাফন পরায়। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (তাঁর ইন্তেকালের পর) একটি ডোরাদার ইয়ামানী চাঁদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। অতঃপর তা পাল্টিয়ে সাদা চাঁদরে ঢেকে দেয়া হয়। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৬৯)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ মারা গেলে এবং ‘তার পরিজন সচ্ছল হলে তারা যেন ডোরাদার ইয়ামানী চাদরে কাফন দেন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (তাঁর ইন্তেকালের পর) ইয়ামানের তৈরী তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। কাফনে কোন কামীস ও পাগড়ী ছিলো না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৬৯)। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি (পিতা) ‘আয়িশাহর (রাঃ) কাছ থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। কিন্তু তাতে সুতীর কাপড় উল্লেখ আছে। কেউ ‘আয়িশাহর (রাঃ) নিকট লোকজনের বক্তব্য ‘তাঁর কাফনে দু’টি সাদা কাপড় ও একটি কারুকার্য খচিত ইয়ামানী চাদর ছিল’ উল্লেখ করলে তিনি বলেন, (কাফনের জন্য) ইয়ামানী চাদরটি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সাহাবীগণ তা ফিরিয়ে দেন। তারা তাঁকে ঐ চাঁদরে কাফন দেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়। এগুলো ছিল নাজরানের তৈরী। যার একটি ছিল চাদর, একটি লুঙ্গি এবং অপরটি ছিল মৃত্যশয্যায় তাঁর পরিহিত পোশাক। ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্র বর্ণনায় রয়েছেঃ তাকে তিনটি কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল- যার দু’টি চাদর লাল বর্ণের এবং যে জামা পরিহিত অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
দামী কাফন ব্যবহার অপছন্দনীয়
আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা বেশি দামী কাফন ব্যবহার করবে না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কাফনের জন্য বেশি দামী কাপড় ব্যবহার করো না। কেননা তা শিঘ্রই নষ্ট হয়ে যাবে। দুর্বলঃ মিশকাত (১৬৩৯) আবূ ওয়াইল (রহঃ) হতে খাব্বাব (রাঃ) এর সূত্র তিনি বলেন, মুস’আব ইবনু ‘উমাইর (রাঃ) উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন।তার কাফনের জন্য একটি কম্বল ছাড়া কিছুই ছিলো না। আমরা তা দিয়ে তার মাথা ঢাকলে তার দু’পা উম্মুক্ত হয়ে যেতো আবার তার দু’পা ঢাকলে তার মাথা উম্মুক্ত হয়ে যেতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ কম্বল দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং তার দূ’পায়ের উপর ইযখির ঘাস বিছিয়ে দাও। সহীহঃ তিরমিযী (৪১২৫)। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম কাফন হচ্ছে হুল্লা এবং কুরবানীর জন্য উত্তম পশু হচ্ছে শিংওয়ালা দুম্বা। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (১৪৭৩), মিশকাত (১৬৪১), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২৬৩/১৫৭০)।
মহিলাদের কাফন সম্পর্কে
গাক্বীফ গোত্রের কানিফের কন্যা লায়লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা উম্মু কুলসুম (রাঃ) মারা গেলে যে মহিলা তাকে গোসল দেয় তার সাথে আমিও ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (কাফনের জন্য) প্রথমে তহবন্দ, তারপর কামীস, তারপর ওড়না, তারপর চাদর, এবং অন্য একটি কাপড় দিলেন। যা দিয়ে লাশ পেচিয়ে দেয়া হলো। লায়লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফনের কাপড়সহ দরজার পাশেই বসা ছিলেন। তিনি সেখান থেকে একটি একটি করে কাপড়গুলো আমাদেরকে প্রদান করেন।
মৃতের জন্য মিশ্কের সুগন্ধি ব্যবহার
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সুগন্ধির মধ্যে সর্বোত্তম হলো কস্তুরী।
দাফন-কাফনে জলদি করা
আল-হুসাইন ইবনু ওয়াহওয়াজ (রাঃ) ত্বালহা ইবনুল বারাআ (রাঃ) অসুস্থ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে এসে বললেনঃ আমি দেখতে পাচ্ছি ত্বালহার মৃত্যু আসন্ন। কাজেই তোমরা আমাকে তার খবর জানাবে এবং তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা দ্রুত করবে। কেননা কোন মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে আটকে রাখা ঠিক নয়। দুর্বলঃ যঈফাহ (৩২৩২), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (২০৯৯), মিশকাত (১৬২৫)।
মৃতকে গোসলদাতার গোসল করা সম্পর্কে
‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র তিনি যুবাইর (রাঃ) কে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার অবস্থায় গোসল করতেনঃ সহবাসের পর, জুমু’আর দিনে গোসল, শিংগা লাগানোর পর এবং মৃতকে গোসল দেয়ার পর গোসল। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেয় সে যেন গোসল করে এবং যে ব্যক্তি লাশ বহন করে সে যেন উযু করে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৬৩)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্র উপরের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মৃতকে গোসল দেয়ার পর গোসল করা সম্পর্কিত হাদীস রহিত হয়েছে। আমি আহমাদ ইবনু হাম্বলের নিকট শুনেছি, তাকে মৃতের গোসল দেয়ার পর গোসল করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তার জন্য উযু করাই যথেষ্ট। আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ সালিহ এ হাদীসের সানাদে তার ও আবূ হুরায়রা্র মাঝে ইসহাক্বের নাম ঢুকিয়েছেন। তিনি বলেন, মুস’আবের হাদীসটি দুর্বল। তাতে এমন কিছু আছে, যার উপর আমল করা হয় না।
লাশকে চুম্বন করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘উসমান ইবনু মাযউনের লাশে চুমু খেতে দেখেছি। আমি তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখেছি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৫৬)।
রাতে দাফন করা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাতের বেলায় কবরস্থানে আলো দেখতে পেয়ে লোকেরা সেখানে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ক্ববরের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের সাথীকে আমার কাছে দাও। এ লোকটি উচ্চস্বরে যিকির করতো।
মৃতদেহ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নেয়া
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা উহুদের শহীদদের দাফনের জন্য অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘোষক এসে ঘোষণা করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, শহীদদের লাশ যেন তাদের নিহত হওয়ার স্থানে দাফন করা হয়। সুতরাং আমরা তাদের লাশ (পূর্বের স্থানে) ফিরিয়ে আনি।
জানাযার সলাতের কাতার সম্পর্কে
মালিক ইবনু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ মারা গেলে এবং মুসলিমদের তিন কাতার লোক তার জানাযা পড়লে (আল্লাহ তার জন্য জান্নাত) ওয়াজিব করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ কারনে মালিক (রহঃ) জানাযায় লোক সংখ্যা কম হলে তাদেরকে তিন কাতারে বিভক্ত করতেন, এ হাদীস মোতাবেক আমলের উদ্দেশ্যে। দুর্বলঃ কিন্তু মাওকুফ হাসান। মিশকাত (১৬৮৭)।
জানাযায় নারীদের অংশগ্রহণ
উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের মহিলাদেরকে জানাযায় অংশগ্রহণে নিষেধ করা হয়, তবে এ বিষয়ে আমাদের উপর কড়াকড়ি করা হয় নি।
জানাযায় অংশগ্রহণ ও লাশের অনুগমনের ফযীলাত
আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাশের অনুগমন করে এবং তাঁর জানাযা আদায় করে তার জন্য এক ক্বীরাত সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি লাশের অনুগমন করে এবং দাফন শেষ করা পর্যন্ত শরীক থাকে তার জন্য রয়েছে দুই ক্বীরাত সওয়াব। এ দুই ক্বীরাতের ছোট ক্বীরাতটি উহুদ পাহাড়ের সমান অথবা উভয়ের একটি উহুদ পাহাড়ের সমান। সহীহঃ আল-আহকাম (৬৮) দাউদ ইবনু ‘আমির ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) হতে তার পিতার সুত্র একদা দাউদের পিতা ‘আমির (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ক্ষুদ্র কুটিরবাসী খাব্বাব (রাঃ) এসে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু উমার! আবূ হুরায়রা (রাঃ) কি বলছেন তা কি আপনি শুনেছেন? তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের ঘর থেকে রওয়ানা হয়ে তার পিছনে পিছনে যায় এবং তার জানাযা পড়ে...অতঃপর সুফিয়ান হাদিসের অনুরূপ। ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশাহর (রাঃ) কাছে লোক পাঠালে তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা ঠিকই বলেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিম মারা গেলে তার জানাযায় যদি এমন চল্লিশ ব্যক্তি অংশ গ্রহন করে যারা কখনও আল্লাহর সাথে শরীক করে নাই তবে তার জন্য তাদের সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে।
আগুন সাথে নিয়ে লাশের সাথে যাওয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে এবং আগুন নিয়ে লাশের অনুসরন করা যাবে না। হারূনের বর্ণনায় রয়েছেঃ লাশের আগে আগেও চলা যাবে না। দুর্বলঃ ইরওয়া (৭৪২)।
লাশের জন্য (সম্মানার্থে) দাঁড়ানো
আমির ইবনু রবী’আহ (রাঃ) বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি তোমরা জানাযা বহন করে নিয়ে যেতে দেখো তাহলে তা তোমাদেরকে অতিক্রম না করা পর্যন্ত অথবা নিচে নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়িয়ে থাকবে। ইবনু আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রহঃ) হতে তার পিতার সুত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন লাশের অনুসরণ করবে তখন তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত বসবে না। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান সাওরী এ হাদীসটি সুহাইলের সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার পিতা হতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ লাশ মাটিতে না নামানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। আবূ মু’আবিয়াহও হাদীসটি সুহাইলে সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ লাশ ক্ববরে না নামানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) আবূ মু’আবিয়াহর তুলনায় অধিক স্মৃতি সম্পন্ন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের সামনে দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর আমরা তা বহন করতে অগ্রসর হয়ে দেখি সেটা এক ইহূদীর লাশ। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা তো ইয়াহুদীর লাশ। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই মৃত্যু একটি ভয়াবহ ঘটনা। কাজেই তোমরা কোন লাশ নিয়ে যেতে দেখলে উঠে দাঁড়াবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৪৩) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন লাশ নিয়ে যেতে দেখলে প্রথমে দাঁড়াতেন, তারপর বসে পড়তেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(১৫৪৪) উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ দিয়ে লাশ নিয়ে যাওয়া হলে তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তা ক্ববরে না নামানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন। একবার এক ইয়াহুদী ‘আলিম তাঁর কাছে এসে বললো, আমরাও এরূপ করি। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে গেলেন এবং বললেনঃ তোমরা তাদের বিপরীত করার জন্য বসে যাও। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১৫৪৫)।
বাহনে চড়ে লাশের সাথে যাওয়া
সাওবান (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য একটি বাহন আনা হলো। তিনি তখন একটি লাশের সাথে সাথে চলছিলেন। তিনি সওয়ারীতে চড়তে অসম্মতি জানালেন। অতঃপর (লাশ দাফন থেকে) অবসর হলে তাঁকে সওয়ারী দেয়া হলে তিনি তাতে চড়লেন। তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ ফেরেশতারা পায়ে হেঁটে লাশের সাথে যাচ্ছিলেন। তাদের হেঁটে যাওয়া অবস্থায় আমার বাহনে চড়ে যাওয়া সংগত মনে করিনি। অতঃপর তারা যখন চলে গেলেন তখন আমি সওয়ারীতে আরোহন করলাম। সহীহ : আহকাম (৭৫)। সিমাক (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনুদ দাহদাহ্ (রাঃ)-এর জানাযা আদায় করলেন। তাতে আমরাও শরীক ছিলাম। অতঃপর একটি ঘোড়া আনা হলে, তিনি তা বেঁধে রাখলেন। পরে তিনি তাতে আরোহণ করলে ঘোড়াটি দ্রুত যেতে থাকে। তখন আমরাও তাঁর চারপাশে সাথে সাথে দৌড়িয়ে চলছিলাম। সহীহ : তিরমিযী (১০২৪)।
লাশের আগে আগে যাওয়া
সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর ও 'উমার (রাঃ)-কে লাশের আগে আগে চলতে দেখেছি। সহীহ : ইবনু মাজাহ (১৪৮২)। যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) তার পিতা হতে মুগীরাহ ইবনু শু'বাহ (রাঃ) সূত্র যিয়াদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) তার পিতা হতে মুগীরাহ ইবনু শু'বাহ (রাঃ) সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী ইউনুস (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা, যিয়াদ পরিবারের সদস্যরা আমাকে জানিয়েছেন, যিয়াদ হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাহনে আরোহী ব্যক্তি লাশের পিছনে পিছনে চলবে এবং পায়ে হাটা ব্যক্তি লাশের পিছনে, সামনে, ডানে, বামে এবং সাথে সাথেও যেতে পারবে। অপূর্ণাঙ্গভাবে প্রসবিত বাচ্চার জানাযা পড়তে হবে এবং তার পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা ও রহমাতের দু'আ করতে হবে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (১৪৮১, ১৫০৭)।
জানাযা দ্রুত বহন করা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা মৃতের দাফন-কাফনের কাজ জলদি করবে। কেননা সে যদি নেককার হয় তবে তো ভালো। তাকে তোমরা তার কল্যাণকর পরিণতির দিকে দ্রুত পৌঁছে দিবে। আর যদি সে খারাপ লোক হয় তবে তো অমঙ্গল। তোমরা তোমাদের ঘার থেকে অমঙ্গলকে দ্রুত নামিয়ে দিলে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (১৫৭৭)। 'উয়াইনাহ ইবনু 'আবদুর রহমান (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি (পিতা) 'উসমান ইবনু আবুল 'আসের (রাঃ) লাশের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম। এমন সময় আবূ বকরাহ (রাঃ) আমাদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি তার চাবুক উঠিয়ে বললেন, তোমরা তো দেখেছো যে, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে (লাশ নিয়ে) দ্রুত চলেছি। সহীহ। কিন্তু 'উসমান ইবনু আবুল 'আস কথাটি শায। মাহফূয হলো 'আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ। যেমন পরের হাদীসে আসছে। নাসায়ী (১৯১২, ১৯৭৩)। 'উয়াইনাহ (রহঃ) উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে এতে রয়েছে : এটি ছিলো 'আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্র (রাঃ) জানাযার ঘটনা। আবূ বকরাহ (রাঃ) দ্রুত তার খচ্চর হাঁকালেন এবং (দ্রুত চলতে) তার চাবুক দিয়ে ইশারা করলেন। সহীহ। এটাই মাহফূয। ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে জানাযার সাথে চলার নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ দৌড়ের চেয়ে কিছুটা কম গতিতে চলবে। যদি নেককার হয় তবে আমরা তাকে দ্রুত তার উত্তম পরিণতির দিকে পৌঁছে দিচ্ছি। আর যদি সে এর বিপরীত হয় তবে আগুনের বাসিন্দারা ধবংস হয়েছে। জানাযা (লাশ) আগে আগে থাকবে আর লোকেরা তার পিছনে চলবে। যে ব্যক্তি লাশের আগে চলে সে যেন জানাযার সাথেই যাচ্ছে না। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনু 'আবদুল্লাহ হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। তিনি হলেন, ইয়াহইয়া আল-জাবির। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তিনি কূফার অধিবাসী। আর আবূ মাজিদা বাসরাহ্র অধিবাসী। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই আবূ মাজিদা অজ্ঞাত। দুর্বল : ইবনু মাজাহ (১৪৮৪), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১৬৯/১০২২), মিশকাত (১৬৬৯), যঈফ আল-জামি'উস সাগীর (৫০৬৬)।
ইমাম আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়বে না
জানির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো। তার এক প্রতিবেশি এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, সে মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি বললেনঃ তুমি কিভাবে জানলে? সে বললো, আমি দেখে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই সে মারা যায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি ফিরে গেলো এবং পুনরায় তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো। সে আবার এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, সে মৃত্যু বরণ করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই সে মারা যায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, সে ফিরে গেলো এবং পুনরায় তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো। রোগীর স্ত্রী তার প্রতিবেশীকে বললো, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গিয়ে এ খবর দাও। সে বললো, হে আল্লাহ্! এর (রোগীর) প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি রোগীর কাছে এসে দেখলো, সে তার কাছে রক্ষিত তীরের ফলা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে পুনরায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে বললো, সে মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি বললেনঃ তুমি কিভাবে জানলে? লোকটি বললো, আমি তাকে তীর দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেখেছি। তিনি বললেনঃ তুমি সরাসরি দেখেছো? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে আমি তার জানাযা পড়বো না।
শারঈ হদ্দ কার্যকরে নিহত অপরাধীর জানাযা পড়া সম্পর্কে
আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা'ইয ইবনু মালিকের জানাযা সালাত পড়েননি এবং পড়তে নিষেধও করেননি। হাসান সহীহ : ইরওয়া (৭/৩৫৩)।
মৃত শিশুর জানাযা পড়া
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ) আঠার মাস বয়সে মারা যান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা সালাত পড়েননি। ওয়াইল ইবনু দাঊদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আল-বাহীকে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ) মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বসার জায়গাতে তার জানাযা পড়েন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি সাঈদ ইবনু ইয়া‘কূব আত-তালাকানীর সামনে করলাম। ইবনুল মুবারক (রহঃ) আপনাদের কাছে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়া‘কূব ইবনু কা‘কা‘র হতে ‘আত্বা সূত্রে: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পুত্র ইবরাহীমের জানাযা সালাত আদায় করেছেন। তখন তার বয়স ছিল সত্তর দিন।
মাসজিদে জানাযার সালাত আদায়
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহাইল ইবনু বাইদার জানাযা মাসজিদের ভিতরেই আদায় করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (১৫১৮)। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইদার পুত্র-সুহাইল ও তার ভাইয়ের জানাযা মাসজিদের ভিতরেই আদায় করেছেন। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখুন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি মাসজিদের ভিতরে জানাযার সালাত পড়ে তার কোন গুনাহ হবে না। হাসান : কিন্তু এ শব্দে: (আরবি)। সহীহাহ (২৩৫১)।
সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের সময় লাশ দাফন করা সম্পর্কে
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। (তা হলো) : সূর্য উদয়ের সময় হতে তা উপরে না উঠা পর্যন্ত ; ঠিক দুপুর বেলায় সূর্য পশ্চিম দিকে না ঢলে পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় তা সম্পূর্ণ ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছেন। সহীহ : আহকাম (১৩০)।
পুরুষ ও নারীর লাশ একত্রে উপস্থিত হলে কার লাশ আগে থাকবে
আল-হারিস ইবনু নাওফালের মুক্তদাস ‘আম্মার (রহঃ) তিনি উম্মু কুলসুম (রাঃ) ও তার পুত্রে জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। ছেলেকে ইমামের নিকটে রাখা হলে আমি প্রতিবাদ করলাম। উপস্থিত লোকদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস, আবূ সাঈদ আল-খুদরী, আবূ ক্বাতাদাহ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ)-ও ছিলেন। তারা বললেন, এটিই সুন্নাত। সহীহ: আহকাম (১০৪)।
জানাযা সলাতে ইমাম কোথায় দাঁড়াবেন
নাফি‘ আবূ গালিব (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, একদা আমি আল-মিওবাদের গলিপথে ছিলাম। এ সময় সেখান দিয়ে একটি জানাযা (লাশ) যাচ্ছিল, তার সাথে অনেক লোক ছিল। তারা বলছিল, এটা ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমাইরের লাশ। আমিও লাশের পিছনে চললাম। তখন আমি দেখি, হালকা কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তি একটি ছোট্ট মাথাবিশিষ্ট ঘোড়ায় বসা এবং তিনি নিজ মাথায় এক টুকরা কাপড় দিয়ে রোদ থেকে আত্নরক্ষা করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিটি কে? লোকেরা বললো, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)। অতঃপর লাশ নামানো হলে আনাস (রাঃ) দাঁড়িয়ে তার জানাযা পড়ালেন। আমি তার পিছনেই দাঁড়ালাম; তার ও আমার মাঝে কোন প্রতিবন্ধক ছিল না। তিনি লাশের মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। তিনি চার তাকবীরে সালাত আদায় করলেন। জানাযার সালাত দীর্ঘও করেননি, একেবারে সংক্ষিপ্তও করেননি। অতঃপর তিনি বসার জন্য গেলেন। লোকেরা বললো, হে আবূ হামযাহ! এটি একজন আনসারী মহিলার লাশ (এর জানাযা পড়ুন)। লাশটি তার নিকটে আনা হলো। সে একটি সবুজ গেলাফে আবৃত ছিলো। তিনি তার নিতম্ব বরাবর দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি পূর্বের পুরুষ লোকটির নিয়মেই তার জানাযা পড়ালেন। এরপর তিনি বসে গেলেন। ‘আলা ইবনু যিয়াদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযাহ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনার আদায়কৃত সলাতের নিয়মেই মৃতের জানাযা পড়তেন? তিনিও কি মহিলাদের জানাযায় চার তাকবীর বলতেন এবং পুরুষের মাথা বরাবর এবং মহিলাদের কোমর বরাবর দাঁড়াতেন? তিনি বললেন, হাঁ। ‘আলা পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, হে আবূ হামযাহ! আপনি কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কোন যুদ্ধে যোগদান করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ আমি তাঁর সাথে হুনাইনের যুদ্ধে যোগদান করেছি। মুশরিকরা আমাদের বিরুদ্ধে রওয়ানা হলো। তারা আমাদের উপর কঠিন আক্রমণ করলো। এমনকি আমাদের লোকদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাতে দেখলাম। শত্রুবাহিনীর এক লোক আমাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছিল। সে তরবারির আঘাতে আমাদের ক্ষত-বিক্ষত করছিল। পরিশেষে আল্লাহ তাদের পরাস্ত করলেন। তিনি তাদের নিয়ে আসেন এবং তারা এসে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে ইসলাম গ্রহণের বাই‘আত নিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের একজন বললেন, আমার একটি মানত আছে। তা হলো, সেদিন যে লোকটি আমাদের আহত করছিল, আল্লাহ যদি তাকে আমাদের করায়ত্ত করেন তবে আমি তাকে হত্যা করবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। লোকটিকে উপস্থিত করা হলে সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর নিকট তওবা করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বাই‘আত নেয়া থেকে বিরত থাকলেন এবং ঐ সাহাবীকে তার মানত পূর্ণ করার সুযোগ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবী লোকটিকে মারার জন্য রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দেখলেন, সাহাবী কিছুই করছেন না, তখন তিনি লোকটির বাই‘আত নিলেন। সেই সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মানত কিভাবে পূর্ণ হবে? তিনি বললেনঃআমি তো তোমার মানত পূর্ণ করতে তার বাই‘আত গ্রহণে বিরত ছিলাম। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ইশারা করেননি কেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃকোন নাবীর জন্য ইশারা করা শোভনীয় নয়। আবূ গালিব (রহঃ) বলেন, মহিলার কোমর বরাবর আনাসের (রাঃ) দাঁড়ানোর বিষয়ে আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে বললেন, প্রথম যুগে এরূপই করা হতো। কেননা তখন কোন খাটিয়ার ব্যবস্থা ছিল না। সুতরাং ইমাম মহিলাদের কোমর বরাবর দাঁড়াতেন, যেন লোকদের ও লাশের মাঝে আড়াল সৃষ্টি হয়। সহীহ : কিন্তু এ কথাটি বাদে: (আরবি)। কেননা এটি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ভিন্ন রায়। আহকাম (১০৮-১০৯)। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে এক মহিলার জানাযা পড়েছি। তিনি নিফাসগ্রস্থ অবস্থায় মারা যান। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযায় তার দেহের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। সহীহ : আহকাম (১১০)।
জানাযার সলাতে তাকবীর সংখ্যা
আশ-শা‘বী (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি নতুন ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সাহাবীগণ কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার তাকবীরে জানাযার সালাত আদায় করলেন। আমি (আবূ ইসহাক্ব) আশ-শা‘বীকে জিজ্ঞেস করলাম, এ হাদীস আপনাকে কে বর্ণনা করেছে? তিনি বললেন, একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি যার সাথে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সাক্ষাত করেছেন। সহীহ : আহকাম (৮৭)। ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) আমাদের জানাযার সলাতে চার তাকবীর বলতেন। একবার এক জানাযা সলাতে তিনি পাঁচ তাকবীর দিলেন। আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও দিতেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনুল মুসান্নার হাদীসটি ভালভাবে স্মরণ রেখেছি। সহীহ : আহকাম (১১২)।
জানাযার সলাতে ক্বিরাআত পাঠ
ত্বালহা ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আওফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) সাথে জানাযার সালাত পড়েছি। তিনি সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করলেন। তিনি বললেন, ফাতিহা পড়া সুন্নাত। সহীহ: আহকাম (১১৯)।
মৃতের জন্য দু‘আ করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা কোন মৃতের জানাযা পড়লে তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দু‘আ করবে। হাসান : আহকাম (১২৩)। আলী ইবনু শাম্মাখ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি মারওয়ানের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মৃতের জানাযায় আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন দু‘আ পড়তে শুনেছেন? তিনি বললেন, আপনি কি এ কথাই আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? মারওয়ান বললেন, হাঁ। ইবনু শাম্মাখ বলেন, ইতিপূর্বে তাদের উভয়ের মধ্যে এ বিষয়ে কথোপকথন হয়। আবূ হুরায়রা বললেন, তিনি এ দু‘আ পাঠ করতেন : “হে আল্লাহ! তুমিই তার প্রভু, তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ, তুমি তাকে ইসলামের পথে হিদায়াত দিয়েছ, তুমি তার রূহ ক্ববয করেছ, তুমি তার গোপন-প্রকাশ্য সবকিছুই অবহিত। আমরা তোমার কাছে তার সুপারিশকারী হিসেবে এসেছি, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।” সানাদ দুর্বল : মিশকাত (১৬৮৮)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে এ দু‘আ পড়তেন : “হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, পুরুষ-নারী, এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে আপনি যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখেন এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দিবেন তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।” সহীহ : আহকাম (১২৪)। ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাথে নিয়ে মুসলিমদের এক লোকের জানাযার সালাত আদায় করলেন। তখন আমি তাঁকে এ দু‘আ করতে শুনেছি: “ হে আল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক আপনার দায়িত্বে থাকলো, আপনি তাকে ক্ববরের ফিতনাহ ও রক্ষা করুন।” ‘আবদুর রহমানের বর্ণনায় রয়েছে: “এ ব্যক্তি আপনার যিম্মায় ও প্রতিবেশি থাকলো। সুতরাং আপনি তাকে ক্ববরের বিপদ ও দোযখের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন। আপনি তো প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ও সত্যের অধিকারী। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন। কেননা আপনিই একমাত্র ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ” সহীহ : আহকাম (১২৫)।
ক্ববরের উপর জানাযা পড়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একটি কালো মহিলা বা পুরুষ মাসজিদে নাববীতে ঝাড়ু দিতো। একদিন তাকে দেখতে না পেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলা হয় যে, সে মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমরা আমাকে জানালে না কেন? তিনি বললেনঃআমাকে তার ক্ববর দেখিয়ে দাও। তারা তাঁকে ক্ববর দেখিয়ে দিলে তিনি ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে জানাযা আদায় করলেন। সহীহ : আহকাম (৮৭)।
মুশরিকদের দেশে মৃত মুসলিমের জানাযা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে নাজ্জাশীর মৃত্যুর দিন তার মৃত্যু সংবাদ জানালেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে ঈদের মাঠে গিয়ে সেখানে সারিবদ্ধ হয়ে চার তাকবীরে জানাযা সালাত পড়লেন। আবূ বুরদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি (পিতা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নাজ্জাশীর দেশে হিজরাত করতে নির্দেশ দেন। অতঃপর বর্ণবাকারী পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করেন । নাজ্জাশী বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর রাসূল। তিনি সেই রাসূল, যাঁর সম্পর্কে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) সুসংবাদ প্রদান করেছেন। আমি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে না থাকতাম তবে আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর জুতা জোড়া বহন করতাম। সানাদ দুর্বল।
একাধিক লাশ এক ক্ববরে দাফন করা এবং ক্ববরের নিশানা রাখা সম্পর্কে
আল-মুত্তালিব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু মাযঊন (রাঃ) মারা গেলে তার লাশ আনা হলো, তারপর লাশ দাফন করা হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তাঁর কাছে একটি পাথর নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিন্তু লোকটি তা বহন করতে অক্ষম হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে পাথরটির কাছে গেলেন এবং নিজের জামার আস্তিন গুটালেন। বর্ণনাকারী কাসির (রহঃ) বলেন, আল-মুত্তালিব বললেন, আমাকে যে ব্যক্তি এ ঘটনা অবহিত করেছেন তিনি বললেন, আমি যেন এখনও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহুদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি তাঁর জামার আস্তিন গুটিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি পাথরটি দু’হাতে তুলে এনে (‘উসমান ইবনু মাযঊনের) শিয়রে রাখলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ এর দ্বারা আমি আমার ভাইয়ের ক্ববর চিনতে পারবো এবং আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে তার পাশে দাফন করবো। হাসান : আহকাম (১৫৫)।
ক্ববর খননকারী মৃতের হাড় দেখতে পেলে সে স্থান পরিহার করবে কিনা
'আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা যেন তার জীবিতকালে হাড় ভাঙ্গার মতই। সহীহ : আহকাম (২৩৩)।
লাহ্দ ক্ববর
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লাহ্দ (কবর) আমাদের জন্য, শাক্ক (কবর) আমরা ব্যতীত অন্যদের জন্য। সহীহ : আহকাম (১৪৫)
লাশ রাখতে কতজন ক্ববরে নামবে
আমির (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে ‘আলী (রাঃ), আল-ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উসামাহ ইবনু যায়িয (রাঃ) গোসল দিয়েছেন এবং তারাই তাঁকে ক্ববরে নামিয়েছেন। আশ-শা’বী (রহঃ) বলেন, মারহাব কিংবা ইবনু আবূ মারহাব আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তারা ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) – কেও তাদের সাথে শরীক করেন। দাফন সম্পন্ন করে ‘আলী (রাঃ) বললেন, মৃত ব্যক্তির দাফন কাজ তার স্বজনদের সম্পন্ন করা উচিত। সহীহ : আহকাম (১৪৭) আবূ মারহাব (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) – ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ববরে নেমেছিলেন। আমি যেন তাদের চারজনকে এখনও প্রত্যক্ষ করছি।
ক্ববরে লাশ কিভাবে রাখবে
আবূ ইসহাক্ক (রহঃ) তিনি বলেন, আল-হারিস (রাঃ) তার মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়াত করেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) যেন তার জানাযা সালাত পড়ান। সুতরাং তিনি তার জানাযা পড়ালেন। অতঃপর তিনি তাকে পায়ের দিক থেকে ক্ববরে রাখলেন। তিনি বললেন, এটাই সুন্নাত।
ক্ববরের পাশে বসার নিয়ম
আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আনসারদের এক ব্যক্তির জানাযা পড়ার জন্য বের হলাম। আমরা সেখানে পৌছে দেখি, তখনও ক্ববর খনন শেষ হয়নি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিবলাহমুখি হয়ে বসলেন। আমরাও তাঁর সাথে বসে গেলাম।
লাশ ক্ববরে রাখার সময় মৃতের জন্য দু'আ করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরে লাশ রাখার সময় বলতেন : “আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তরীকার উপর রাখা হলো।”
কোন মুসলিমের মুশরিক স্বজন মারা গেলে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বললাম, আপনার পথভ্রষ্ট বৃদ্ধ চাচা আবূ ত্বালিব মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি বললেনঃ যাও এবং তোমার পিতাকে মাটিতে দাফন করে আসো। আমার কাছে ফিরে আসার আগে অন্য কিছু করো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে মাটি দিয়ে সরাসরি তাঁর কাছে আসি। তিনি আমাকে গোসল করতে নির্দেশ করেন। সুতরাং আমি গোসল করলাম। তিনি আমার জন্য দু’আ করলেন।
ক্ববর গভীর করে খনন করা
হিশাম ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আনসাররা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বললেন, আমরা আহত এবং ক্লান্ত।। আমাদেরকে এখন কি করতে বলেন? তিনি বললেনঃ ক্ববর প্রশস্ত করে খনন করো এবং একই ক্ববরে দুই-তিন জনকে দাফন করো। জিজ্ঞেস করা হলো, কাকে আগে (ডানদিকে) রাখা হবে? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে অধিক পারদর্শী। হিশাম বলেন, সেদিন আমার পিতা ‘আমির (রাঃ) শহীদ হন। তাকে দু’জনের অথবা একজনের সাথে ক্ববর দেয়া হয়। হুমাইদ ইবনু হিলাল (রহঃ) একই সানাদে একই অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত। এতে আরো রয়েছে : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ববর খনন গভীর করবে। সা’দ ইবনু হিশাম ইবনু আমির (র:) এ সানাদে একই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
ক্ববর সমতল করা
আবুল হাইয়ায আল-আসাদী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আলী (রাঃ) আমাকে পাঠালেন এবং বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কাজে প্রেরণ করবো যে কাজে আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠিয়েছিলেন? তা হলোঃ আমি যেন কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমতল করা ব্যতীত এবং কোন মূর্তি দেখলে চূর্ণ-বির্চূন না করে নিভৃত না হই। আমর ইবনুল হারিস (রহঃ) আবূ আলী আল-হামদানী (রহঃ) তাকে এ হাদীসটি জানান। তিনি বলেছেন, আমরা ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদের (রাঃ) সাথে রোম দেশের রূযিস নামক স্থানে ছিলাম। আমাদের এক ব্যক্তি এখানে মৃত্যূ বরণ করলো। তার ক্ববর সর্ম্পকে ফাদালাহর (রাঃ) নির্দেশ মোতাবেক মাটি সমান করে দেয়া হলো। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কবর সমতল করার নির্দেশ দিতে শুনেছি। আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘রূযিস’ সমুদ্রে অবস্থিত একটি দ্বীপের নাম। আল-ক্বাসিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহর (রাঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ফুফু! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর দুই সাথীর ক্ববর খুলে আমাকে একটু দেখান। তিনি তিনটি কবরই আমাকে (পর্দা) খুলে দেখালেন। আমি দেখি যে, তা খুব উঁচুও নয়, আবার একেবারে সমতলও নয়। কবর তিনটির উপর আল-আরসা নামক স্থানের লালা কাঁকর বিছানো ছিলো। আবূ আলী (রহঃ) বলেন, কথিত আছে, সম্মুখভাগে রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর, তাঁর মাথার দিকে আবূ বকর (রাঃ) এর কবর এবং তাঁর পায়ের দিকে ‘উমার (রাঃ) এর কবর। ‘উমার (রাঃ) এর মাথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পায়ের কাছে অবস্থিত।
দাফন শেষে ফেরার সময় ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দু’আ করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ক্ববরের পাশে পশু যাবাহ করা নিষিদ্ধ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে কোন বলিদান নেই। ‘আবদুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, জাহিলী যুগে লোকেরা ক্ববরের কাছে গরু ছাগল বলি দিতো।
পরবর্তী সময়ে ক্ববরের উপর জানাযা পড়া
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ থেকে বেরিয়ে উহুদের শহীদদের ক্ববরের নিকট গিয়ে মৃতের জন্য জানাযার নিয়মে সালাত আদায় করে ফিরে আসলেন। ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) এ সানাদেও একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আট বছর পর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য জানাযা পড়েছেন জীবিত ও মৃতের দু’আ করার অনুরূপ।
ক্ববরের উপর কিছু নির্মাণ করা সর্ম্পকে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ববরের উপর বসতে, তাতে চুনকাম করতে এবং তার উপর কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করতে শুনেছি। জাবির (রাঃ) সূত্র এ সানাদেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ এতে অতিরিক্ত কিছু যোগ করতে নিষেধ করেছেন। সুলাইমান ইবনু মূসার বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের উপর লিখতে নিষেধ করেছেন। ‘উসমানের বর্ণনার অতিরিক্ত অংশটি মুসাদ্দাদের বর্ণনায় নেই। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে সাজদাহর স্থানে (মাসজিদে) পরিণত করেছে।
ক্ববরের উপর বসা নিষেধ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি আগুনের ফুলকির উপর বসে এবং তাতে তার পরিধের বস্ত্র পুড়ে ঐ আগুন তার শরীরের চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় এটা তার জন্য ক্ববরের উপরে বসা থেকে উত্তম। আবূ মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ক্ববরের উপর বসবে না এবং ক্ববরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না।
জুতা পায়ে কবরস্থানের উপর দিয়ে হাঁটা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস বাশীর (রাঃ) জাহিলী যুগে তার নাম ছিল জাহম ইবনু মা’বদ। তিনি হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে চলে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কি? তিনি বললেন জাহম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং তোমার নাম বাশীর। তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যাচ্ছিলাম। তিনি মুশরিকদের কতিপয় ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেনঃ এরা বিরাট কল্যাণ লাভের পূর্বেই অতীত হয়ে গেছে। তিনি তিনবার এরূপ বললেন। অতঃপর তিনি কতিপয় মুসলিমের ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেনঃএরা প্রচুর কল্যাণ প্রাপ্ত হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে জুতা পরিহিত অবস্থায় কবরস্থানের উপর দিয়ে চলতে দেখে বললেনঃ হে জুতা পরিধানকারী! তোমার জন্য দুঃখ হচ্ছে, তুমি জুতা খুলে ফেলো। লোকটি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দিকে তাকালো এবং তাঁকে চিনতে পেরে সে তার পায়ের জুতা খুলে ফেলে দিলো। আনাস (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন কোন বান্দাকে ক্ববরে রাখা হয়, অতঃপর তার সাথীরা সেখান থেকে চলে যেতে থাকে, তখন সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। সহীহঃ এর চেয়ে পরিপূর্ণ বর্ণনা সামনে আসছে (৪৭৫১), সহীহাহ (১৩৪৪)।
বিশেষ কারণে ক্ববর থেকে লাশ স্থানান্তরিত করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতার সাথে (একই ক্ববরে) অন্য এক লোককে দাফন করা হয়েছিল। তাই আমি তার লাশ অন্যত্র সরিতে নেয়ার ইচ্ছা করলাম। অতঃপর ছয় মাস পর আমি পিতার লাশ তুললাম (এবং অন্যত্র দাফন করলাম)। তার শরীরের কোন অংশই পরিবর্তন হয়নি। কেবল দাড়ির কিছু চুল মাটির সংস্পর্শে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছিলো।
মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে দিয়ে লোকেরা একটা লাশ নিয়ে আসার সময় মৃতের উত্তম প্রশংসা করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (জান্নাত) ওয়াজিব হয়ে গেছে। অতঃপর লোকজন তাঁর সামনে দিয়ে আরেকটি লাশ নিয়ে গেলো এবং তারা মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করলো। তিনি বললেনঃ (জাহান্নাম) ওয়াজিব হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে।
ক্ববর যিয়ারত করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মায়ের ক্ববরের নিকট এসে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথীরাও কাঁদলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আমার মহান প্রভুর নিকট আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চেয়েছি; কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। অতঃপর ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আমাকে তার অনুমতি দেয়া হয়। সুতরাং তোমরা ক্ববর যিয়ারত করো। কারণ তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে ক্ববর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত করতে পারো। কেননা ক্ববর যিয়ারতের মধ্যে (শিক্ষা গ্রহণের) সুযোগ রয়েছে।
মহিলাদের ক্ববর যিয়ারত প্রসঙ্গে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববর যিয়ারতকারী মহিলাদের অভিসম্পাত করেছেন। যারা ক্ববরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করে এবং ক্ববরে বাতি জ্বালায় তাদেরকেও অভিসম্পাত করেছেন। দূর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (৫১), যঈফ সুনান নাসায়ী (১১৮), মিশকাত (৮৪০)।
কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কি বলবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা রাসূল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববর যিয়ারত করতে গিয়ে বললেনঃ“হে মৃত্যুবাসিন্দা মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে অচিরেই মিলিত হবো।"
কেউ ইহরাম অবস্থায় মারা গেলে কিভাবে (দাফন-কাফন)দিবে?
ইবনু ‘আব্বাস (রা:) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো যার উষ্ট্রী তাকে ফেলে দিয়ে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিয়েছে এবং এতে সে ইহরাম অবস্থায় মারা গেছে। তিনি বললেনঃতাকে তার ইহরামের দুই কাপড়েই কাফন পরাও, বরই পাতা মিশানো পানি দিয়ে তাকে গোসল করাও এবং তার মাথা ঢাকবে না কেননা ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে তালবিয়া পাঠরাত অবস্থায় উঠাবেন" আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে এ হাদীসের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বণনা করতে শুনেছি (১) তার ইহরামের দুই কাপড়েই কাফন পরাও অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীকে দুই কাপড়ে কাফন দিতে হবে। (২) বরই পাতা মিশানো পানি দিয়ে গোসল করাও- অর্থাৎ প্রতিটি লাশ বরই পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল দিতে হবে। (৩) ইহরাম অবস্থায় মৃত ব্যক্তির মাথা ঢাকবে না। (৪) তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না এবং (৫) তার সমস্ত সম্পদ থেকে প্রথমে তার কাফনের ব্যবস্থা করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র এ সানাদেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত: তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে দুই কাপড়ে কাফন দিবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) সুলাইমান হতে আইয়ুব সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি ‘সাওবাই’ শব্দ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ‘আমর ‘সাওবাইহি’ শব্দ বর্ণনা করেছেন। আর সুলাইমান এককভাবে “তাকে সুগন্ধিযুক্ত করো না” কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র সুলাইমানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে তার ইহরাম অবস্হায় তার উষ্ট্রী পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করলে তাকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট আনা হয়। তিনি বললেনঃ তাকে গোসল দিয়ে কাফন পরাও, কিন্ত তার মাথা ঢাকবে না এবং তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা (ক্বিয়ামাতের দিন) তাকে তাহলীল পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।