22. শপথ ও মানত
মিথ্যা কসমের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বন্দী থাকা অবস্থায় মিথ্যা শপথ করলো, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামের নির্ধারণ করে নিলো। সহীহ: সহীহাহ (২৩৩২)।
যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ আত্মসাতের জন্য মিথ্যা কসম করে
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট। আশ’আস(রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ। এ হাদীস আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমার এবং এক ইয়াহুদীর যৌথ মালিকানায় একটি জমি ছিল। সে আমার মালিকানা অস্বীকার করলে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তিনি ইয়াহুদীকে বললেনঃ তুমি কসম খাও। আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! সে কসম করবে এবং আমার জমি তার হাতে চলে যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের ওয়াদাসমূহ সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি করে, আখিরাতে তাদের জন্য কোন অংশই নেই...” আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ আলে ‘ইমরানঃ ৭৭)। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২৩২৩)। আশ‘আস ইবনু ক্বায়িস (রাঃ) কিনদাহ এলাকার একজন ও হাদরামাওত এলাকার একজন-এ দু’জনে ইয়ামানে অবস্থিত এক খণ্ড জমির মালিকানা দাবি করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে মোকদ্দমা পেশ করলো। হাদরামাওতের লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যক্তির পিতা আমার জমি জবরদখল করে নিয়েছে। সে এখন তার দখলে আছে। তিনি বললেনঃতোমার কোন সাক্ষী আছে কি? সে বললো, না। তাহলে আপনি তাকে এভাবে কসম করতে বলুন, “আল্লাহর শপথ, আমার এ জমি তার পিতা জবরদখল করে নিয়েছে এ বিষয়ে সে জানে না।” এ কথা শুনেই কিনদার লোকটি শপথ করতে উদ্ধত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শপথের মাধ্যমে কেউ সম্পদ আত্মসাৎ করলে সে হাত-পা কাটা অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। এ কথা শুনে কিনদী বললো, নিঃসন্দেহে এ জমিটা তার। সহীহঃ ইরওয়া (৮/২৬২-২৬৩)। আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল ইবনু হুজর আল-হাদরামী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, হাদরামাওতের একজন এবং কিনদাহ এলাকার একজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলো। হাদরামী বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যক্তি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখল করে নিয়েছে। কিনদী বললো, এটা আমার দখলেই আছে। আমিই তাতে চাষাবাদ করি, এতে তার কোন স্বত্ব নাই। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদরামীকে বললেন। তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? সে বললো, না। তিনি বললেনঃতবে তোমাকে কিনদীর শপথের উপর নির্ভর করতে হবে। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল। সে তো মন্দ লোক। সে মিথ্যা কসম করতে পরোয়া করবে না। তার কোন বাছ-বিচার নাই। রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএছাড়া তোমার কোন বিকল্প পথ নেই। কিনদী শপথ করতে অগ্রসর হলো। সে যখন পিঠ ফিরালো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জেনে রাখো। সে যদি জুলুম করে অন্যের সম্পদ দখলের জন্য কসম খায়, তবে সে আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। সহীহ: ইরওয়া (২৬৩২)।
নাবী ( সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর মিম্বারের উপর মিথ্যা কসম খাওয়া কঠিন পাপ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার মিম্বারের কাছে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কসম খায়, তা একটি তাজা মিসওয়াকের জন্য হলেও- সে জাহান্নামে নিজের বাসস্থান ঠিক করে নিলো অথবা তার জন্য আগুন ওয়াজিব হয়ে গেলো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩২৫)।
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে কসম করা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কেউ শপথ করতে গিয়ে যদি বলে, আমি লাত (নামক মূর্তির) নামে শপথ করে বলছি; তবে সে যেন অবশ্যই বলে- “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই।” আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, আসো তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন কিছু সদাক্বাহ করে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২০৯৬)।
বাপ-দাদার নামে কসম করা মাকরূহ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা নিজেদের পিতা-মাতা কিংবা দেবদেবীর নামে শপথ করবে না। তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর নামে শপথ করবে। আর তোমরা আল্লাহর নামে কেবল সে বিষয়েই শপথ করবে যে বিষয়ে তোমরা সত্যবাদী। সহীহঃ নাসায়ী (২৭৯৬) উমার উবনুল খাত্তাব (রা:) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমারকে (রাঃ) একটি কাফেলার সাথে পেলেন। তখন তিনি তার পিতার নামে শপথ করলে রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো শপথ করার প্রয়োজন হলে সে যেন আল্লাহ্র নামে শপথ করে, অন্যথায় চুপ থাকে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২০৯৪)। উমার (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পিতার নামে কসম করতে শুনলেন... ‘বাপ-দাদার নামে কসম খেও না’ এ পর্যন্ত উপরের হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ ‘উমার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি কখনও ব্যক্তিগতভাবে বা বর্ণনা প্রসঙ্গে ঐরূপ শপথ করিনি। সহীহ : ইরওয়া (৮/১৮৭)। সাঈদ ইবনু আবূ ‘উবাইদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনলেন : “না! এ কা‘বার শপথ।” তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে, সে শিরক করলো। সহীহ : তিরমিযী (১৫৯০)। আবূ সুহাইল নাফি’ ইবনু মালিক ইবনু আবূ ‘আমির (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি ত্বালহা ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট জনৈক বেদুইনের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তার (বেদুইনের) পিতার কসম! যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে সে সফলকাম হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। তার পিতার কসম! যদি সে সত্য বলে থাকে। (হাদীসটি সম্ভবত ইসলামের প্রথম যুগের-অনুঃ) শাযঃ এটি সলাত অধ্যায়ের প্রথম দিকে গত হওয়া একটি হাদীসের অংশ বিশেষ। তাতে “তার পিতার কসম” কথাটি নেই। যঈফহ (৪৯৯২)।
আমানতের উপর শপথ করা অপছন্দনীয়
বুরাইদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমানতের উপর শপথ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। সহীহ : সহীহাহ (৯৪)।
বেহুদা শপথ করা
আত্বা (রহঃ) তিনি বেহুদা কসম খাওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “কোন ব্যক্তির নিজ ঘরে বসে কথাবার্তায় এরূপ বলা যে: কখনো নয়, আল্লাহর শপথ! এবং হাঁ, আল্লাহর শপথ!”
ছলনামূলক কসম করা
আবূ হুরাইরাহ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার শপথ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তোমার প্রতিপক্ষ তা বিশ্বাস করবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আব্বাদ ইবনু আবূ সালিহ এবং ‘আবদুল্লহ ইবনু আবূ সালিহ একই লোক। সহীহ সুওয়াইদ ইবনু হানযালাহ (রা:) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে দেখা করতে রওয়ানা হলাম। তখন আমাদের সাথে ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ)-ও ছিলেন। এমন সময় তার এক শত্রু তাকে ধরে ফেললো। দলের লোকেরা এ ব্যাপারে শপথ করতে সংকোচবোধ করলে আমি শপথ করে বললাম, সে আমার ভাই। ফলে শত্রু তাকে ছেড়ে দিলো। আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে ঘটনাটি জানালাম এবং বললাম, দলের লোকেরা এভাবে শপথ করাকে ভাল মনে করেনি। তাই আমি শপথ করে বলেছি, সে আমার ভাই। তিনি বলেনঃ তুমি সঠিক বলেছো। কেননা এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সহীহ : ইবনু মাজাহ(২১১৯)।
ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মেও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কসম করা।
সাবিত ইবনুদ দাহ্হাক (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে (হুদায়বিয়াতে) গাছের নীচে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করলে- সে যেরূপ বলবে তাই হবে। কেউ নিজেকে কোন জিনিস দ্বারা হত্যা (আত্মহত্যা) করলে তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ঐ জিনিস দ্বারা অবিরত শাস্তি দেয়া হবে। আর কেউ যদি এমন জিনিসের মানত করে যার মালিক সে নয়, তবে এ মানতের কোন মূল্য নেই। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২০৯৮)। বুরাইদাহ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি শপথ করে বলেঃ আমি ইসলাম থেকে মুক্ত। সে মিথ্যা বললেও সে যেরুপ বলেছে তদ্রুপই হবে। আর সত্যবাদী হলে তার পক্ষে নিরাপদে ইসলামে ফিরে আসা সম্ভব নয়। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২১০০)।
যে ব্যক্তি তরকারি না খাওয়ার কসম করে
ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা:) তিনি বলেন, একদা আমি দেখি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুটির উপর খেজুর রেখে বললেনঃ এটা হচ্ছে এটার তরকারী। দুর্বলঃ এর চেয়ে পরিপূর্ণ আসছে হা/৩৮৩০। যঈফাহ (৪৭৩৭, ৮২৬), মিশকাত (৪২২৩)। ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা:) এ সানাদে উপরের হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
কসমে ইনশাআল্লাহ বলা
ইবনু ‘উমার (রা:) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করার পর ইনশাআল্লাহ বললো, সে ব্যতিক্রম করলো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১০৫, ২১০৬)। ইবনু ‘উমার (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ শপথ করে ‘ইনশাআল্লাহ’ বললে সে ইচ্ছা করলে শপথ পূর্ণও করতে পারে আবার নাও করতে পারে, এতে কোন দোষের কিছু নেই। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কসমের ধরন
ইবনু ‘উমার (রা:) তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে শপথ করতেনঃ “লা ওয়া মুকাল্লিবিল কুলূব”। সহীহঃ যিলালুল জান্নাহ (২৩৬)। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন গুরুত্ব সহকারে শপথ করতেন, তখন বলতেনঃ “লা ওয়াল্লাযী নাফসু আবিল ক্বাসিমে বিয়াদিহ”। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৪২২), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৪৩২৮)। আবূ হুরাইরাহ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শপথ করার সময় বলতেনঃ “লা ওয়া আসতাগফিরুল্লাহ”। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২০৯৩), মিশকাত (৩৪৩২)। আসিম ইবনু লাক্বীত্ব (রা:) একদা লাক্বীত্ব ইবনু ‘আসিম (রাঃ) একটি দলের প্রতিনিধি হয়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাক্ষাৎ করতে রওয়ানা হলেন। লাক্বীত্ব (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরবারে উপস্থিত হলাম। অতঃপর তিনি এ হাদীস বর্ণনা করেন। যাতে রয়েছেঃ নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “লাআমরু ইলাহিকা”। দুর্বলঃ যিলালুল জান্নাহ (৬৩৬)।
কসম ইয়ামীনের সমার্থক কিনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা আবু বক্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কসম খেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ এভাবে শপথ করো না। সহীহ : ইবনু মাজাহ (৩৯১৮)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করতেন : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বললো, আমি আজ রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। এ বলে সে স্বপ্নে যা দেখেছে তা বর্ণনা করলো। আবূ বকর (রাঃ) এর ব্যাখ্যা করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কিছুটা ঠিক বলেছো এবং কিছুটা ভুল করেছ। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আপনাকে আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, হে আল্লাহ্র রাসুল! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি ভুল অংশটি বলে দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, শপথ করো না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র উপরের হাদীসটি বর্ণনা করেন। কিন্তু এতে “শপথ” শব্দটি উল্লেখ নাই। এতে রয়েছে : তিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে তাঁর ভুল দিক অবহিত করেননি।
যে ব্যক্তি কিছু না খাওয়ার শপথ করেছে
আবদুর রহমান ইবনু আবূ বক্র (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমাদের কাছে কিছু মেহমান আসলো। এ সময় রাতের বেলা আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি (আবূ বক্র) আমাদের বলে গেলেন যে, তুমি মেহমানদের থেকে অবসর হওয়ার পর আমি আসবো। ‘আবদুর রহমান মেহমানদের কাছে ফিরে এসে তাদেরকে খাবার দিলেন। মেহমানরা বললেন, আবূ বক্র ফিরে না আসা পর্যন্ত খাবার গ্রহন করবো না। তিনি ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মেহমানদের কি অবস্থা, তাদের খাবার খাইয়েছো? ঘরের লোকেরা বললো, না। আমি বললাম, আমি তাদের খাবার নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু তারা আপনাকে ছেড়ে খেতে রাজি হননি। তারা বললেন, আল্লাহ্র শপথ! তিনি (আপনি) ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা খাবো না। মেহমানরা বললেন, ‘আবদুর রহমান সত্যিই বলেছেন। তিনি আমাদের জন্য খাবার এনেছিলেন, কিন্তু আপনি না আসা পর্যন্ত আমরা খেতে রাজি হইনি। তিনি বললেন, কোন জিনিস তোমাদেরকে বাঁধা দিলো? তারা বললেন, আপনার অনুপস্থিতি। আবু বক্র (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি আজ রাতে আহার করবো না। তারাও বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আপনি না খেলে আমরাও রাতে আহার করবো না। তিনি বললেনঃ আমি এ রাতের মত খারাপ রাত কখনো দেখিনি। তিনি ‘আবদুর রহমানকে বললেন, খাবার নিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, তাদেরকে খাদ্য দেয়া হলো। তিনি বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলেন, তারাও খেলেন। আমি জানতে পারলাম, তিনি (আবূ বক্র) সকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং তুমি তাদের চেয়ে অধিক পরহেযগার এবং সত্যবাদী। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রহঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে সালিম (রহঃ) সূত্রের বর্ণনায় রয়েছে : তিনি বলেন, তিনি (আবূ বকর) কাফফারাহ দিয়েছিলেন কিনা আমি জানতে পারিনি।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শপথ করা
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) আনসার সম্প্রদায়ের দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি (যৌথ) মীরাস ছিল। এক ভাই অপর ভাইয়ের কাছে তা বণ্টনের দাবি করলে সে বলল, তুমি পুনরায় মীরাস বণ্টনের কথা বললে আমি আমার সমস্ত সম্পদ কা’বা ঘরের জন্য ওয়াক্ফ করে দিবো। ‘উমার (রাঃ) লোকটিকে বললেন, কা’বা ঘর তোমার সম্পত্তির মুখাপেক্ষী নয়। তোমার শপথের কাফফারাহ আদায় করো এবং তোমার ভাইয়ের সাথে (বণ্টনের) কথাবার্তা বলো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মহান রব্বের নাফরমানীতে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করণে এবং যার মালিক তুমি নও তাতে তোমার কোন শপথ ও মানত জায়িয নেই। সানাদ দুর্বল : মিশকাত (৩৪৪৩)। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানত শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজেই করা যেতে পারে আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কসম খাওয়া নিষেধ। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম সন্তান যে বস্তুর মালিক নয় তাতে তার কোন মানত নাই শপথও নাই; আল্লাহর নাফরমানীর কাজে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে কোন মানত গ্রহণযোগ্য হবে না। কোন লোক কসম খাওয়ার পর তার বিপরীতে কল্যাণ দেখতে পেলে সে তার শপথ বর্জন করে অধিকতর কল্যাণকর কাজটি করবে। পূর্বের শপথ বর্জন করাই শপথ ভঙ্গের কাফফারাহ গণ্য হবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত এ বিষয়ের সহীহ হাদীসসমূহের বক্তব্য হচ্ছে : “তাকে তার শপথ ভঙ্গের কাফ্ফারাহ দিতে হবে,” কিন্তু যেসব হাদীস যথার্থ নয় সেগুলো ছাড়া। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আহ্মাদ (রাঃ) কে বললাম, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ‘উবাইদুল্লাহর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন আহ্মাদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু ‘উবাইদের হাদীসসমূহ প্রত্যাখ্যাত এবং তাঁর পিতা অজ্ঞাত। হাসান : তাঁর এ কথাটি বাদে [...আরবী...] কেননা এ অংশটুকু মুনকার। যঈফাহ (১৩৬৫), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬৩১২)।
ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা শপথ করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা দুই ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে তাদের বিবাদ পেশ করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাদীর কাছে প্রমাণ চাইলেন। কিন্তু তার কাছে প্রমাণ ছিল না। তিনি বিবাদীকে শপথ করতে বললে সে বললো, মহান আল্লাহ্র নামে শপথ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ, তুমি তো (মিথ্যা শপথ) করেছো। কিন্তু তোমাকে নিষ্ঠার সাথে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার কারনে ক্ষমা করা হয়েছে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাফফারাহ প্রদানের নির্দেশ দেননি।
অপেক্ষাকৃত উত্তম কাজ হলে কসম ভঙ্গ করা
আবূ বুরদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! আমি কোন কাজের শপথ করার পর তার বিপরীত দিকে কল্যাণ দেখতে পেলে ইন শা আল্লাহ্ আমি শপথ ভঙ্গ করে কাফফারাহ প্রদান করবো এবং অধিকতর কল্যাণকর কাজটি করবো। অথবা তিনি বলেছেন, আমি অধিকতর কল্যাণকর কাজটি করবো এবং আমার শপথ ভঙ্গের কাফফারাহ আদায় করবো। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১০৭)। আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি কোন বিষয়ে শপথ করার পর তাঁর বিপরীতে কল্যাণ দেখতে পেলে তুমি কল্যাণকর কাজটি করবে এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারাহ আদায় করবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) শপথ ভঙ্গের পূর্বেই কাফফারাহ আদায় জায়িয মনে করেন। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) সূত্র পূর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আছে : “প্রথমে কাফফারাহ দিবে, তারপর কল্যাণকর কাজটি করবে”। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবূ মূসা আল-আশ’আরী, ‘আদী ইবনু হাতিম ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার কতগুলোতে রয়েছে, শপথ ভঙ্গের পর কাফফারাহ আদায় করবে, আর কতগুলোতে রয়েছে, শপথ ভঙ্গের আগে কাফফারাহ আদায় করবে।
কসমের কাফফারাহ কত সা’
আবদুর রহমান ইবনু হারমালাহ (রহঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীব আমাদেরকে একটি সা’ দিলেন। তিনি আমাদেরকে তার দ্বিতীয় স্বামী সাফিয়্যাহ্র ভ্রাতুষ্পুত্রের সূত্রে বলেন, তিনি সাফিয়্যাহ্র সূত্রে বলেছেন, এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সা’। আনাস (ইবনু ইয়াদ) বলেন, আমি তা যাচাই করে দেখেছি, তার ওজন হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিকের যুগের আড়াই মুদ্দের সমান। মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু খাল্লাদ আবূ ‘আমর (রহঃ) “মাক্কূক খালিদ” নামে আমাদের একটি মাক্কূক ছিল। তা ছিল হারূনুর রশীদের আমলের পরিমাপকের দ্বিগুণ। মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, খালিদের সা’ ছিল হিশাম ইবনু মালিকের সা’। উমাইয়্যাহ ইবনু খালিদ (রহঃ) তিনি বলেন, খালিদ আল-কাসরী গভর্ণর হয়ে সা’-কে দ্বিগুণ করলেন। তাতে এক সা’ ষোল রতলের সমান হয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ খাল্লাদকে নিগ্রোরা বন্দী করে হত্যা করে। তিনি তার হাতের ইশারায় বলেন, এভাবে। আবূ দাঊদ (রহঃ) তার হাত প্রসারিত করেন এবং দু’হাতের তালু মাটির দিকে উপুর করে বলেন, আমি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্ আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? তিনি বলেন, আল্লাহ্ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। আমি বললাম, তাহলে আপনার বন্দী অবস্থা আপনার অনিষ্ট করতে পারেনি।
কাফফারাহ হিসেবে মুমিন দাসী আযাদ করা
মু’আবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার একটি বাঁদী আছে। আমি তাকে জোরে থাপ্পর মেরেছি। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এটা কষ্টদায়ক মনে হল। আমি বললাম, তাকে আযাদ করে দেই? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে নিয়ে এলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন : আমি কে? সে বললো, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি আমাকে বললেনঃ তাকে আযাদ করে দাও, কারন সে মুমিন। আশ-শারীদ (রাঃ) একদা তার মা তাকে একটি মুমিন বাঁদী আযাদ করতে তাকে ওসিয়াত করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার মা তার পক্ষ হতে একটি মুমিন ক্রীতদাসী আযাদ করতে আমাকে ওসিয়াত করেছেন। কিন্তু আমার কাছে নুবা এলাকার একটি হাবশী ক্রীতদাসী আছে। এরপর হাদীসের বাকী অংশ উপরের হাদীসের শেষাংশের অনুরূপ। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, খালিদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ এটি মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন এবং আশ-শারীদের নাম উল্লেখ করেননি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি একটি কালো দাসী নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহ্র রাসুল! আমাকে একটি মুমিন দাসী আযাদ করতে হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাসীটিকে জিজ্ঞেস করলেন : আল্লাহ্ কোথায়? সে তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলো। তিনি তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন : আমি কে? সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আকাশের দিকে ইশারা করে বললো, আপনি আল্লাহ্র রাসুল। তিনি বলেনঃ তুমি তাকে আযাদ করে দাও কেননা সে মুমিন।
কসমের পর ‘ইন শা আল্লাহ্’ বলা
‘ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। অতঃপর তিনি ইন শা আল্লাহ্ বললেন। সহীহ। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-ওয়ালীদ বিন মুসলিম (রহঃ) শারীক হতে বর্ণনা করেছেন যে, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি। ‘ইকরিমাহ (রহঃ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। অতঃপর তিনি বললেন, ইন শা আল্লাহ্। পুনরায় তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো ইন শা আল্লাহু তা’আলা। অতঃপর তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি অচিরেই কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেনঃ ইন শা আল্লাহ্। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) শারীক (রহঃ) সূত্রে হাদীসের শেষাংশে বর্ণনা করছেন, ‘অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি’।
(মানত করা অপছন্দনীয়)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানত করতে নিষেধ করে বলেনঃ মানত (তাকদীরের) কোন কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না, শুধু কৃপণের কিছু সম্পদ ব্যয় হয় মাত্র। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানত কোন কিছুই প্রতিহত করতে পারে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১২২)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (আল্লাহ্ বলেন) মানত আদম সন্তানের তাক্বদীরকে এমন কিছু দিতে পারে না – যা আমি তার জন্য নির্ধারণ করিনি। বরং আমি তার তাক্বদীরে যা নির্ধারণ করেছি কেবল তাই মানত তাকে এনে দেয়। তা কৃপণের ধন থেকে কিছু পরিমাণ বের করে আনে এবং তার নিকট তা নিয়ে আসে যা আগে তার কাছে আসেনি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১২৩)।
গুনাহের কাজে মানত করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্যের মানত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাফরমানীর মানত করে, সে যেন তা না করে। সহীহঃ ইবুন মাজাহ (২১২৬)।
যিনি বলেন, গুনাহের কাজের মানত ভঙ্গ করলে কাফফারাহ দিবে
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহের কাজে মানত করা জায়িয নাই। (কেউ করলে) এর কাফফারাহ হবে শপথ ভঙ্গের কাফফারাহ্র সমান। সহীহঃ ইবুন মাজাহ (২১২৫)। আবূ দাঊদ (রহঃ) আমি আহমাদ ইবনু শাব্বুয়াহ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, ইবনুল মুবারক(রহঃ) এ হাদিস সম্পর্কে বলেছেন, যুহরী এ হাদীসটি আবূ সালামাহ্র কাছে শোনেননি। আবূ দাঊদ(রহঃ) বলেন, আমি আহ্মাদ ইবনু হাম্বল(রহঃ) – কে বলতে শুনেছি, তারা আমাদের জন্য হাদিসকে ত্রুটিযুক্তভাবে বর্ণনা করেছে- সুতরাং একথা কি সঠিক? আর ইবনু আবূ উয়াইস ছাড়া অপর কেউ কি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন? তিনি উত্তরে বলেন, বিশ্বস্ততায় আইয়ুব ইবনু সুলাইমান ইবনু বিলাল আবূ উয়াইসের সম-পর্যায়ের। হাদীসটি আইয়ুবও বর্ণনা করেছেন। আমি এটি সহীহ ও যঈফেও পাইনি। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপকাজে কোন মানত নেই। এর কাফফারাহ শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। আহ্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মারওয়াযী (রহঃ) বলেন, সঠিক সানাদ হলোঃ ‘আলী ইবনুল মুবারক – ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসির – মুহাম্মাদ ইবনুয যুবাইর - তার পিতা - ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) – নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আল-মারওয়াযী এর দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ হাদিস সম্পর্কে সুলাইমান ইবনু আরক্বাম সন্দিহান। তার থেকে আয-যুহরী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু মুরসালভাবে আবূ সালামা – ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বাক্বিয়্যাহ এ হাদিস বর্ণনা করেছেন আল-আওযাই-ইয়াহ্ইয়া-মুহাম্মাদ ইবনুয যুবাইর – ‘আলী ইবনুল মুবারকের সানাদে পূর্বের হাদিসের অনুরূপ। সহীহঃ পূর্বেরটি দ্বারা। উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বোন পদব্রজে এবং খালি মাথায় হাজ্জ করার মানত করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে ওড়না পরতে, যানবাহনে আরোহণ করতে এবং তিন দিন সওম পালন করতে আদেশ করো। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২১৩৪), যইফ সুনান আত-তিরমিযী, যইফ সুনান নাসায়ী, ইরওয়া (২৫৯২), মিশকাত (৩৪৪২)। মাখলাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ সাইদ আর-রু’আইনী উপরোক্ত হাদিস ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাইদ কর্তৃক বর্ণিত সানাদের অনুরূপ সানাদে একই হাদিস বর্ণনা করেছেন। উকবাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বোন পদব্রজে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে যাওয়ার মানত করেন। তিনি আমাকে এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফাতাওয়াহ জিজ্ঞেস করতে বলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফাতাওয়াহ জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ সে যেন পায়ে হেঁটে যায় এবং যানবাহনেও যায়। দুর্বলঃ পূর্বেরটি দেখুন (৩২৯৪)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) উক্ববাহ ইবনু ‘আমিরের (রাঃ) বোন পদব্রজে হাজ্জে যাওয়ার মানত করেছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সওয়ারীতে করে আসার এবং একটি কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন। ইবনু ‘আব্বাস(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানতে পারলেন, ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমিরের (রাঃ) বোন পদব্রজে হাজ্জ করার মানত করেছেন, তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তার এরূপ মানতের মুখাপেক্ষী নন। তাকে যানবাহনে চড়ে হাজ্জে আসার নির্দেশ দাও। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু আবূ ‘আরূবাহ(রহঃ)– ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। খালিদ (রহঃ) ‘ইকরিমাহ হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। ‘ইকমিরাহ(রহঃ) উক্ববাহ ইবনু আমিরের (রাঃ) বোন ... অতঃপর হিশামের হাদিসের সমার্থবোধক হাদিস বর্ণিত। বর্ণনাকারী কুরবানির উল্লেখ করেননি। এতে আরও রয়েছেঃ তোমার বোনকে হুকুম করো সে যেন বাহনে চড়ে যায়। আবূ দাঊদ(রহঃ) বলেন, খালিদ(রহঃ) এ হাদিস ‘ইকরিমাহ সূত্রে হিশামের হাদিসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেছেন। সহীহ: পূর্বেরটি দ্বারা। উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার এক বোন পায়ে হেঁটে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করার মানত করেন। তিনি আমাকে হুকুম করলেন, আমি যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে ফাতাওয়াহ জিজ্ঞেস করি। আমি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফাতাওয়াহ জানতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে যেন পায়ে হেঁটেও যায় এবং বাহনে চড়েও যায়। সহীহঃ ইরওয়া (৮/২১৯)। ইবনু আব্বাস(রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ দিচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখলেন, একটি লোক রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি লোকটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে লোকেরা বলল, সে আবূ ইসরাইল। সে মানত করে যে, সে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া নিবে না, কথা বার্তা বলবে না এবং সওম পালন করবে। তখন তিনি বললেনঃ তাকে আদেশ করো , সে যেন কথা বলে, ছায়া নেয়, বসে এবং সওম পূর্ণ করে। সহীহঃ ইরওয়া (৮/২১৮)। আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন, এক ব্যক্তি তার দুই ছেলের কাঁধে ভর করে হেঁটে যাচ্ছে। তিনি তার সম্পর্কে জানতে চাইলে লোকেরা বলল, সে পায়ে হেঁটে (হাজ্জে) যাওয়ার মানত করেছে। তিনি বললেনঃ এ ব্যক্তির নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়া হতে আল্লাহ্ সম্পূর্ণ মুক্ত। তিনি তাকে বাহনে চড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্বাস(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা ঘর তাওয়াফ করার সময় এক ব্যক্তিকে অতিক্রম করতে গিয়ে দেখলেন – তার নাকে আংটিযুক্ত রশি লাগিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিজ হাতে কেটে ফেলেন এবং তাকে তার হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সহীহঃ নাসায়ী (২৯২০) ইবনু আব্বাস (রাঃ) উক্ববাহ ইবনু ‘আমিরের(রাঃ) বোন শারীরিক সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও পদব্রজে হজ্জ করার মানত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই মহামহিম আল্লাহ্ তোমার বোনের এরূপ মানতের মুখাপেক্ষী নন। সুতরাং সে বাহনে চড়ে যায় এবং একটি উট কুরবানি করে। সহীহঃ দেখুন (৩২৯৭)। উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বললেন, আমার বোন পদব্রজে বাইতুল্লাহ যাওয়ার মানত করেছে। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার বোনের পায়ে হেঁটে বাইতুল্লাহ যাওয়াতে বাধ্যবাধকতা রাখেননি।
যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে সলাত আদায়ের মানত করেছে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি (মাক্কাহ) বিজয়ের দিন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ আপনাকে মক্কা বিজয়ের গৌরব দান করলে আমি আল্লাহ্র জন্য বাইতুল মুক্কাদাসে দু’রাক’আত সলাতের মানত করেছিলাম। তিনি বললেনঃ ঐ সলাত এখানেই আদায় করো। সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বললেনঃ এখানে (মাসজিদুল হারামে) পড়ে নাও। সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে তোমার স্বাধীনতা রয়েছে। আবূ দাঊদ(রহঃ) বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে। সহীহঃ ইরওয়া (২৫৯৭) ‘উমার ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ(রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সাহাবীর সূত্র উপরের হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঐ সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মাদকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন! তুমি এখানে তোমার মানতের সলাত আদায় করে নিলে এটা তোমার বাইতুল মুকাদ্দাসে সলাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট হতো।
মৃতের পক্ষ হতে মানত পূর্ণ করা
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সা’দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট ফাতাওয়াহ জানতে চেয়ে বললেন, আমার মা মারা গেছেন, কিন্তু তার একটি মানত আছে যা তিনি পুরণ করে যেতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তার পক্ষ হতে তা আদায় করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে মানত করলো, আল্লাহ যদি তাকে নিরাপদে ফেরার সুযোগ দিলে সে এক মাস সাওম পালন করবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে সমুদ্রের বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন। কিন্তু সাওম পালনের পূর্বেই সে মারা গেল। তার মেয়ে অথবা বোন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলে তিনি তাকে মৃতের পক্ষ হতে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন। সহীহঃ নাসায়ী (৩৮১৬)। বুরাইদাহ (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমি আমার মাকে একটি দাসী দিয়েছিলাম। তিনি ঐ দাসী রেখে মারা গেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সওয়াব পেয়েছো এবং ঐ দাসী উত্তরাধিকার সূত্রে পুনরায় তোমার মালিকানায় ফিরে এসেছে। সে বলল, তিনি এক মাসের সাওম বাকি রেখে মারা গেছেন। হাদিসের বাকি অংশ (উপরের) ‘আমর ইবনু ‘আওন বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৭৫৯,২৩৯৬)।
কেউ ক্বাযা সওম রেখে মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরা তা আদায় করবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলেন, তার মায়ের এক মাসের সওম বাকি আছে। কাজেই আমি কি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ করবো? তিনি বলেনঃ তোমার মা ঋণগ্রস্থ হলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? মহিলা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ তবে আল্লাহ্র প্রাপ্য পরিশোধ করাটা অধিক অগ্রগণ্য। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি সওম অনাদায়ী রেখে মারা গেলে তার পক্ষ হতে তার ওয়ারিসগণ সওম পালন করবে। সহীহ। এটি সাওম অধ্যায়ে গত হয়েছে।
মানত পূর্ণ করার নির্দেশ
‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানত করেছি যে, আমার মাথার উপর দফ বাজাবো। তিনি বললেনঃ তোমার মানত পূর্ণ করো। মহিলাটি আবার বললেনঃ আমি অমুক অমুক স্থানে যাবাহ করার মানত করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, ঐসব স্থানে জাহিলী যুগে কুরবানি করা হতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন, তোমার এ কোরবানি কি কোন মূর্তির জন্য? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করো। হাসান সহীহঃ ইরওয়া (৪৫৭৮)। সাবিত ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যক্তি মানত করে যে, সে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট যাবাহ করবে। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললো, আমি বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করার মানত করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেখানে কি জাহেলী যুগের কোন মূর্তি রয়েছে? লোকেরা বলল, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ সেখানে কি তাদের কোন মেলা বসতো? লোকেরা বলল, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। কেননা আল্লাহ্র নাফরমানীমূলক কাজের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করা জায়িয নয় এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তারও কোন মানত নেই। সহীহঃ মিশকাত (৩৪৩৭)। কারদাম-কন্যা মায়মূনাহ (রাঃ) আমি আমার পিতার সাথে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হই। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখতে পেলাম। আমি যখন লোকজনকে বলতে শুনলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমি এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার পিতা তাঁর কাছে গেলেন, তখন তিনি তাঁর উষ্ট্রীতে আরোহিত ছিলেন। তার সাথে সচিবের চাবুকের মত একটি চাবুক ছিল। আমি লোকদেরকে এবং বেদুইনদেরকে বলতে শুনলাম, চাবুক, চাবুক। আমার পিতা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পা ধরলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি করলেন এবং তাঁর কথা শুনলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানত করেছিলাম, আমার একটি পুত্র সন্তান হলে আমি বুওয়ানার শেষ প্রান্তে পাহাড়ের পাদদেশে কিছু সংখ্যক মেষ যাবাহ করবো। অধস্তন বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় মায়মূনাহ(রাঃ) পঞ্চাশটি বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ সেখানে কি কোন প্রতিমা আছে? তিনি বললেন, না। তিনি বলেনঃ তাহলে তুমি আল্লাহর নামে কৃত তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার মেষগুলো একত্র করে যাবাহ করতে লাগলেন। তার মধ্যে একটি মেষ ছুটে পালালে তিনি এই এই বলতে বলতে তার পিছু ধাওয়া করেনঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার পক্ষ হতে আমার মানত পূর্ণ করুন। সুতরাং তিনি সেটিকে ধরে ফেলেন এবং যাবাহ করেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৩১)। কারদাম ইবনু সুফিয়ান-কন্যা মায়মূনাহ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত, কিন্তু সংক্ষিপ্তভাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ সেখানে কোন প্রতিমা আছে কিনা? অথবা জাহিলী যুগের কোন মেলা বসতো কি না? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, এ আমার মা, তার একটি মানত ও পদব্রেজে (হাজ্জ করার) ইচ্ছা আছে। আমি কি তার পক্ষ হতে তা পূর্ণ করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৩১)
মালিকানাবিহীন জিনিসের মানত করা
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আল-‘আদবা’ নামক উটটি ‘আকিল গোত্রের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ছিল। এ উট হাজীদের কাফেলার আগে আগে চলতো। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটিকে বন্দী করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আনা হলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়ে চাঁদর জড়িয়ে একটি গাধার পিঠে বসে ছিলেন। আল-আদবার মালিক বললো, হে মুহাম্মাদ! আমাকে এবং হাজ্জীদের আগে আগে চলা আমার উষ্ট্রীকে কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করলেন? তিনি বললেনঃ তোমাকে তোমার বন্ধুগোত্র সাক্বিফদের অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, সাক্বিফ গোত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু’জন সাহাবীকে বন্দী করে রেখেছিলো। আল-আদবার মালিক বললো, আমি মুসলিম অথবা সে বললো, আমি ইসলাম কবুল করেছি। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি কথাগুলো মুহাম্মাদ ইবনু ঈসার কাছ থেকে শিখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কিছুদুর অগ্রসর হলেন তখন লোকটি উচ্চস্বরে হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ বলে ডাকলো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন অনুগ্রহকারী ও সহানুভূতিশীল। তিনি তার ডাকে ফিরে এসে বললেন, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি মুসলিম। তিনি বললেনঃ তুমি বন্দী হওয়ার আগে এ কথা বললে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে যেতে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি সুলাইমানের বর্ণিত হাদিসে প্রত্যাবর্তন করি। লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি ক্ষুধার্ত আমাকে খাদ্য দিন, আমি পিপাসার্ত, আমাকে পান করান। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটাই তোমার উদ্দেশ্য অথবা এটাই তার উদ্দেশ্য। বর্ণনাকারী বলেন, এ বন্দীর বিনিময়ে মুসলিম বন্দীদ্বয়কে মুক্ত করে আনা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-আদবা নামক উষ্ট্রীটি নিজের সওয়ারি হিসেবে রাখলেন। অতঃপর মুশরিকরা মাদীনাহ এসে উপকণ্ঠে হামলা করে আদবা উটকে লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় এবং একজন মুসলিম মহিলাকেও বন্দী করে নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা রাতের বেলা উটগুলোকে ময়দানে ছেড়ে দিত। এক রাতে তারা গভীর ঘুমে থাকলে মুসলিম বন্দী মহিলাটি গিয়ে যে উটের গায়েই হাত দিলেন সেটা আওয়াজ করলো। এভাবে তিনি আল-আদবার কাছে পৌঁছে গেলেন। তিনি একটি অনুগত ও সুদক্ষ উষ্ট্রীর কাছে পৌঁছে গেলেন। তিনি তার পিঠে চড়লেন, এবং আল্লাহ্র নামে মানত করলেন, আল্লাহ যদি মুশরিকদের কবল থেকে তাকে মুক্তি দেন তাহলে তিনি এ পশুটি যাবাহ করবেন। অতঃপর তিনি মাদীনাহ আসলে ঐ উটনীকে চেনা গেলো যে, এটি ছিল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উটনী। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খবর দেয়া হলো। তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর তাকে নিয়ে আসা হলো এবং তার মানত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হলো। তিনি বললেনঃ তুমি উটনীকে খুবই নির্মম প্রতিদান দিতে চেয়েছো। আল্লাহ তাকে যে উটনীর সাহায্যে মুক্তি দিলেন সে তাকে যাবাহ করতে চায়। আল্লাহ্র নাফরমানীর কাছে মানত করলে তা পূরণ কারা জায়িয নয় এবং আদম সন্তান যার মালিক নয় তার মানত করা ও তা পূর্ণ করা জায়িয নয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ মহিলা আবূ যার (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন।
নিজের সমস্ত মাল দান করার মানত করা সম্পর্কে
কা’ব ইবনু মালিক(রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তাওবাহ কবুল হওয়ায় আমি আমার সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো এবং তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য দান করে দিবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার সম্পদের কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে দেয়াই তোমার জন্য উত্তম হবে। কা’ব (রাঃ) বলেন, আমি বললাম , খায়বারে প্রাপ্ত আমার অংশ নিজের জন্য রেখে দিলাম। সহীহ : নাসায়ী (৩৮২৩ )। ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব ইবনু মালিক(রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তার তাওবাহ কবুল হওয়ার পর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন , আমি আমার সমস্ত সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো ---“ তোমার জন্য উত্তম হবে “ পর্যন্ত পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখুন। ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বা আবূ লুবাবাহ কিংবা আল্লাহর ইচ্ছায় অপর কেউ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন , আমার তাওবাহ কবুল হওয়ায় আমি আমার গোত্রের যে বাড়িতে অপরাধের শিকার হয়েছি, তা ত্যাগ করবো এবং আমার সমস্ত সম্পদ সদাক্বাহ করে দিবো। তিনি বললেনঃ এক-তৃতীয়াংশ সদাক্বাহ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট। সানাদ সহীহ। ইবনু কা’ব ইবনু মালিক(রহঃ) আবূ লুবাবাহ (রাঃ) ছিলেন---অতপর পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। ঘটনাটি আবূ লুবাবাহ (রাঃ) সংশ্লিষ্ট। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইউনুস ইবনু শিহাব হতে তিনি বনু সায়িব ইবনু আবূ লুবাবাহ হতে বর্ণনা করেছেন। সানাদ: দুর্বল। কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তাওবাহ কবুল হওয়ায় আমি আমার সমস্ত সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো এবং আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথে খরচ করবো। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক সম্পদ? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম-এক তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ হাঁ। আমি বললাম, খায়বারের প্রাপ্ত সম্পদ আমার নিজের জন্য রেখে দিলাম। হাসান সহীহ।
যা পূর্ণ করার সামর্থ্য নাই তার মানত করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ নাম উল্লেখ (নির্দিষ্ট) না করে মানত করলে, তার কাফফারাহ শপথ ভঙ্গের কাফফারাহর অনুরূপ। কেউ গুনাহের কাজে মানত করলে তার কাফফারাহ শপথ ভঙ্গের কাফফারাহর অনুরূপ। কেউ যদি এমন মানত করে যা পূর্ণ করা তার সামর্থ্যর বাইরে, তার কাফফারাহ হবে শপথ ভঙ্গের কাফফারাহর অনুরূপ। কোন ব্যক্তি যদি সামর্থ্য অনুযারী মানত করে তবে সে যেন তা পূর্ণ করে। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ওয়াকী’ ও অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ এ হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু হিন্দ (রহঃ) হতে আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) উপর মওকূফভাবে বর্ণনা করেছেন। দুর্বল মারফু’ : ইরওয়া (২৫৮৬), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৫৮৬২), মিশকাত (৩৪৩৬)।।
কোন কিছুর নাম উল্লেখ না করে মানত করা
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানতের কাফফারাহ হলো শপথ ভঙ্গের কাফফারার মত। সহীহ : নাসায়ী ( ৩৮৩২ )। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
জাহিলী যুগে মানত করার পর ইসলাম গ্রহণ করলে
উমর (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহিলিয়াতের যুগে মাসজিদুল হারামে এক রাত ই’তিকাফ করার মানত করেছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার মানত পূর্ণ করো। সহীহ। এটি সিয়াম অধ্যায়ের শেষ দিকে গত হয়েছে।