23. ব্যবসা-বাণিজ্য
ব্যবসায় কসম ও অহেতুক কথার সংমিশ্রণ
ক্বায়িস ইবনু আবু গারাযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমাদেরকে (ব্যবসায়ীদের) সামাসিরাহ (দালাল সম্প্রদায়) বলা হতো। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদেরকে এই নামের চেয়ে অধিক সুন্দর নাম দিলেন। তিনি বললেনঃ হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ব্যবসায়িক কাজে বেহুদা কথাবার্তা এবং অপ্রয়োজনীয় শপথ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা ব্যবসায়ের পাশাপাশি সদাক্বাহ করে তাকে ত্রুটিমুক্ত করো। সহিহ : ইবনু মাজাহ ( ২১৪৫ ) ক্বায়িস ইবনু আবূ গারাযাহ (রাঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো রয়েছে : তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ব্যবসায়) মিথ্যা বলা ও শপথ করা হয়ে থাকে। ‘আবদুল্লাহ আয-যুহরীর বর্ণনায় রয়েছে : বেহুদা কথাবার্তাও মিথ্যা হয়ে থাকে। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখুন (৩৩২৬)।
খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা এক লোক জনৈক ব্যক্তিকে দশ দীনার ঋণ দেয়। পরে তা আদায় করার জন্য সে ঋণ গ্রহীতার পিছনে লাগে এবং বলে, আল্লাহ্র শপথ! তুমি আমার পাওয়া পরিশোধ না করা অথবা জামিনদার না নিয়ে আসা পর্যন্ত আমি তোমার পিছু ছাড়বো না। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার যামিন হলেন। অতঃপর সে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোনা নিয়ে এল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন : এ সোনা তুমি কোথায় পেলে? সে বললো, খনি থেকে। তিনি বললেনঃ এগুলো আমাদের দরকার নেই এবং এর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পক্ষ হতে উক্ত ঋণ পরিশোধ করলেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪০৬)।
সন্দেহমূলক বস্তু পরিহার করা
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে অনেক সন্দেহজনক জিনিস আছে। বর্ণনাকারী কখনও (...আরবী...) শব্দের পরিবর্তে (...আরবী...) শব্দ বলেছেন। আমি তোমাদের সামনে এর উপমা পেশ করছি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ চারণভূমি নির্ধারিত করেছেন। আর আল্লাহ্র নির্ধারিত চারণভূমি হচ্ছে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ। যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার নিকটে চড়ায়, তার পশু ঐ নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার আশংকা থাকে। একইভাবে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসে জড়ায় সে হারামে লিপ্ত হতে পারে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (৩৯৮৪)। আমির আশ-শা‘বী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উক্ত হাদীস বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ এ দুইয়ের (হালাল-হারামের) মাঝে অনেক সন্দেহজনক বস্তু রয়েছে। অনেক লোকই এ বিষয়ে জ্ঞান রাখে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বস্তু বর্জন করবে সে তার দ্বীন ও সম্মান সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক কাজে জড়াবে, সে শীঘ্রই হারামে লিপ্ত হবে। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখুন (৩৩২৯)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, যখন কেউ-ই সুদ খাওয়া ছাড়া থাকবে না। যদি কেউ সুদ না খায় তবুও তার ধোঁয়া তাকে স্পর্শ করবে। ইবনু ঈশার বর্ণনায় রয়েছে : তার ধুলা-ময়লা তাকে স্পর্শ করবে। দুর্বল : ইবনু মাজাহ (২২৭৮), মিশকাত (২৮১৮), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৪৮৬৪)। ‘আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে (কুলাইব) গোত্রের জনৈক ব্যক্তির সূত্র তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য রওয়ানা হলাম। আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে খননকারীকে নির্দেশ দিচ্ছেন : পায়ের দিকটা আরো প্রশস্ত করো, মাথার দিকটা আরো প্রশস্ত করো। তিনি সেখান থেকে ফিরতে উদ্যত হলে এক মহিলার পক্ষ হতে দাওয়াত দানকারী এসে তাঁকে স্বাগত জানালেন। তিনি তার বাড়িতে এলে খাবার উপস্থিত করা হলো। তিনি খেতে শুরু করলে অন্যরাও খাওয়া শুরু করলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের মুরব্বীরা লক্ষ্য করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবারের একটি লোকমা মুখে তুলে তা নাড়াচাড়া করছেন। তিনি বললেনঃ আমার মনে হচ্ছে, বকরীর মালিকের অনুমতি ছাড়াই এটি নিয়ে আসা হয়েছে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একটি বকরী কিনতে বাকী’ নামক বাজারে লোক পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। অতঃপর আমার প্রতিবেশীর কাছে এই বলে লোক পাঠালাম যে, তুমি যে বকরীটি কিনেছো তা তোমার ক্রয়মূল্যে আমাকে দিয়ে দাও। কিন্তু তাকেও (বাড়িতে) পাওয়া যায় নি। আমি তার স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালে সে বকরীটা পাঠিয়ে দেয়। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ গোশত বন্দীদেরকে খাওয়াও। সহীহ : আহকামুল জানায়িয (১৪৩-১৪৪)।
সুদখোর ও সুদদাতা সম্পর্কে
‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী ও এর দলীল লেখক সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২৭৭)।
সুদ প্রত্যাহার করা
সুলায়মান ইবনু ‘আমর (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিদায় হাজ্জে বলতে শুনেছি : জাহিলী যুগের সব ধরণের সুদ বাতিল করা হলো। তোমরা মূলধন ফেরত পাবে। তোমরা যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। জাহিলী যুগের সব ধরণের হত্যার প্রতিশোধ বাতিল ঘোষণা করা হলো। আমি প্রথমেই আল-হারিস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিবের হত্যার প্রতিশোধ বাতিল ঘোষণা করছি। (বর্ণনাকারী বলেন) সে বনূ লাইসে দুধপানরত ছিল। এমতাবস্থায় হুযাইল সম্প্রদায় তাকে হত্যা করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কি পৌছে দিয়েছি? উপস্থিত জনতা বলেন, হাঁ, তিনবার। তিনি তিনবার বলেনঃ হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (৩০৫৫)।
ক্রয়-বিক্রয়ে (মিথ্যা) কসম করা অপছন্দনীয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : কসম কাটলে অধিক মাল বিক্রিতে সহায়ক হতে পারে কিন্তু তা বরকত দূর করে দেয়। ইবনুস সারহির বর্ণনায় রয়েছে : উপার্জনে (বরকত) দূর করে দেয়। হাদীসটি তিনি সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ও আবূ হুরায়রা সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। সহীহ : নাসায়ী (৪৪৬১, ৪১৫৫)।
মাপে সামান্য বেশী দেয়া এবং মজুরীর বিনিময়ে কিছু মেপে দেয়া
সুওয়াইদ ইবনু ক্বায়িস (রাঃ) আমি এবং মাখরাফাহ আল-‘আবদী ‘হাজার’ নামক স্থান থেকে ব্যবসায়ের জন্য কাপড় কিনে আনি। অতঃপর আমরা তা মক্কায় নিয়ে আসি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেঁটে আমাদের কাছে আসলেন। তিনি আমাদের সাথে একটি পাজামার দর করলেন, আমরা সেটি তাঁর কাছে বিক্রি করলাম। এ সময় এক ব্যক্তি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে (জিনিসপত্র) ওজন করে দিচ্ছিল। তিনি তাকে বলেনঃ ওজন করো এবং একটু বেশী দাও। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২২০)। আবূ সাফওয়ান ইবনু ‘উমাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মক্কায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম তখনও তিনি (মাদীনাহ্য়) হিজরাত করেননি। এরপর হাদীসের বাকী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। কিন্তু এই বর্ণনায় : “পারিশ্রমিকের বিনিময়ে” কথাটি উল্লেখ নেই। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ক্বায়িসও সুফিয়ানের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ানের বর্ণনা সঠিক। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২২১)। ইবনু আবূ রিযমাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তি শু‘বাহকে বললেন, সুফিয়ান আপনার বিপরীত করেছেন। তিনি বললেন, তুমি আমার মস্তিষ্ক খেয়েছো! ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন থেকে জানতে পেরেছি, তিনি বলেছেন, কেউ সুফিয়ানের বিপরীত বর্ণনা করলে সুফিয়ানের বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য গণ্য হবে। শু‘বাহ (রহঃ) তিনি বলেন, সুফিয়ানের স্মরণশক্তি আমার স্মরণশক্তির চেয়ে অধিক মজবুত।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী : মাদীনাহ্র পরিমাপই মানসম্মত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ওজনের ক্ষেত্রে মক্কাবাসীদের ওজন মানসম্মত এবং পরিমাপে মদীনাহ্বাসীদের পরিমাপ মানসম্মত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-ফিরয়ারী এবং আবূ আহমদ এ হাদীস সুফিয়ান থেকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আর ইবনু দুকাইন হাদীসের মতনে উভয়ের সাথে একমত হয়েছেন। আবূ আহমদ ইবনু ‘উমারের পরিবর্তে ইবনু ‘আব্বসের নাম উল্লেখ করেছেন। ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম এ হাদীস হানযালাহ হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে : মাদীনাহ্র ওজন ও মক্কার পরিমাপ মানসম্মত। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, ‘আত্বা হতে মালিক ইবনু দীনার কর্তৃক বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ হাদীসের মতনে মতভেদ আছে। সহীহ : নাসায়ী (৪৫৯৪, ৪২৮১)।
ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধে কড়াকড়ি করা
সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্ববাহ প্রদানের সময় জিজ্ঞেস করলেন : এখানে অমুক গোত্রের কেউ আছে কি? এতে কেউ সাড়া দিলো না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন : এখানে অমুক গোত্রের কেউ আছে কি? এবারও কেউ সাড়া দিলো না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন : এখানে অমুক গোত্রের কোন লোক আছে কি? তখন এক ব্যক্তি উঠে বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেনঃ প্রথম দু’বারের ডাকে তোমাকে সাড়া দিতে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি তোমাদেরকে একমাত্র কল্যাণের জন্যই আহবান করি। তোমাদের গোত্রের এ লোক ঋণের কারণে আটক রয়েছে। সামুরাহ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, ঐ ব্যক্তি তার পক্ষ হতে সব ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে তার কোন পাওনাদারই বাকী থাকলো না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাম‘আনের পিতার নাম মুশান্নাজ। হাসান : নাসায়ী (৪৬৮৪, ৪৩৬৮)। আবূ বুরদাহ ইবনু মূসা আল-আশ‘আরী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্র নিকট নিষিদ্ধ কবীরাহ গুনাহসমূহের পরে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত হওয়া এবং এই ঋণ পরিশোধের কোন ব্যবস্থা না করে যাওয়া। দুর্বল : মিশকাত (২৯২২), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর(১৩৯২)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তার জানাযা পড়তেন না। একদা তাঁর নিকট একটি লাশ আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তার উপর কোন ঋণ আছে কি? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ, দুই দীনার ঋণ আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা আদায় করো। তখন আবূ ক্বাতাদাহ আল-আনসারী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! ঋণ পরিশোধের যিম্মা আমি নিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা পড়লেন। পরবর্তীতে আল্লাহ্ যখন তাঁর রাসূলকে বিভিন্ন যুদ্ধে বিজয়ী করলেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি প্রত্যেক মুমিনের তার নিজের সত্তার চাইতে অধিক প্রিয়। সুতরাং কেউ ঋণ রেখে মারা গেলে তা পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর কেউ সম্পদ রেখে মারা গেলে তা তার উত্তরাধিকারদের প্রাপ্য। সহীহ : ইবনু মাজাহ (৪৫)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে : একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবসায়ী কাফেলার কাছ থেকে জিনিস কিনলেন। কিন্তু তখন তাঁর কাছে এর মূল্য পরিশোধের মত কিছুই ছিল না (বাকীতে কিনলেন)। পরে তিনি জিনিসগুলো লাভে বিক্রি করলেন। তিনি লাভের অংশটা ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রের বিধবা ও দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি এখন থেকে এমন কোন জিনিস ক্রয় করবো না, যার মূল্য পরিশোধের অর্থ আমার কাছে নেই। সহীহ : যঈফাহ (৪৭৬৬)।
ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা অনুচিৎ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সচ্ছল ব্যক্তির জন্য দেনা পরিশোধে গড়িমসি করা অন্যায়। আর তোমাদের কোন (সচ্ছল) ব্যক্তিকে কারোর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হলে সে যেন তা মেনে নেয়। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪০৩)।
উত্তমরূপে দেনা পরিশোধ করা সম্পর্কে
আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ছোট উট ধার নিলেন। অতঃপর তাঁর নিকট যাকাতের উট এলে তিনি আমাকে উঠতি বয়সের একটি উট দিয়ে ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, (বাইতুল মালে) কেবল ছয়-সাত বছর বয়সের উট আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে তাই দাও। কারণ মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে উত্তমরূপে দেনা পরিশোধ করে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২৮৫)। মুহাবির ইবনু দিসার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি আমার পাওনা পরিশোধ করলেন এবং কিছু বেশী দিলেন। সহীহঃ নাসায়ী (৪৫৯১, ৪২৭৮)।
মুদ্রার আন্ত-বিনিময় প্রসঙ্গ
উমার (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের বিনিময় স্বর্ণের সাথে যদি উভয় পক্ষ হতে নগদ আদান-প্রদান না হয়, তবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। গমের বিনিময় গমের সাথে, যদি উভয় পক্ষ হতে (সমান) আদান-প্রদান না হয়, তবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। খেজুরের বিনিময় খেজুরের সাথে, যদি উভয় পক্ষ হতে নগদ লেনদেন (সম-পরিমাণ) না হয়, তবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। যবের বিনিময় যবের সাথে, যদি উভয় পক্ষ হতে নগদ লেনদেন (সম-পরিমাণ) না হয়, তবে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২৫৩)। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময় স্বর্ণের সাথে সমান সমান হবে, চাই তা স্বর্ণের পাত হোক বা স্বর্ণের মুদ্রা এবং রূপার বিনিময় রূপার সাথে সমান সমান হবে, চাই তা রূপার পাত হোক বা রূপার মুদ্রা। গমের সাথে গমের বিনিময়, যবের সাথে যবের বিনিময়, খেজুরের সাথে খেজুরের বিনিময় এবং লবণের সাথে লবণের বিনিময় পরিমাণে ও ওজনে সমান হতে হবে। কেউ অতিরিক্ত দিলে বা নিলে তা সুদ সাব্যস্ত হবে। রূপার বিনিময়ে সোনা বা সোনার বিনিময়ে রূপার বিক্রি করার ক্ষেত্রে পরিমাণে কম-বেশী হওয়া দোষণীয় নয়, তবে আদান-প্রদান নগদে হতে হবে, বাকিতে বিনিময় হতে পারে না। যবের বিনিময়ে গম অথবা যব বিক্রি করার ক্ষেত্রেও পরিমাণে কম-বেশি হওয়া দোষণীয় নয়, তবে আদান-প্রদান নগদে হতে হবে, বাকিতে নয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সা’ঈদ ইবনু আবু ‘আরূবাহ ও হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈ ক্বাতাদাহ হতে মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে তার সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২৫৪)। ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রা:) পূর্বোক্ত হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে কিছুটা কম-বেশী করে বর্ণিত হয়েছে। এতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এসব ক্ষেত্রে একধরনের বস্তু অন্য ধরনের বস্তুর সাথে বিনিময় হলে তোমরা ইচ্ছামত পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারো। তবে আদান-প্রদান হতে হবে নগদে। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখুন।
তরবারির বাট দিরহামের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয়
ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রা:) তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি মালা আনা হলো। এতে স্বর্ণদানা ও পুঁতি ছিল। বর্ণনাকারী আবূ বাক্র ও ইবনু মানী’ বলেন, মালাটিতে স্বর্ণদানার সাথে পুঁতির দানা লটকানো ছিল। মালাটি এক ব্যক্তি নয় কিংবা সাত দীনারে কিনে ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উভয় প্রকারের দানা পৃথক না করা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। লোকটি বললো, আমি শুধু পুঁতির দানাগুলো চাচ্ছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় বললেনঃ উভয় প্রকার দানা পৃথক না করা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। অতঃপর সে মালাটি ফেরত দিলে তা থেকে সোনা পৃথক করা হলো। বর্ণনাকারী ইবনু ঈসা বলেন, আমি এর দ্বারা ব্যবসা বুঝেছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ঈসার নুস্খায় ‘হিজারাতা’ শব্দ ছিল। তিনি তা পরিবর্তন করে ‘তিজারাতা’ শব্দ বসিয়েছেন। সহিহঃ তিরমিযী (১২৭৮)। ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রা:) তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের দিন আমি বারো দীনারে একটি মালা ক্রয় করি। তাতে স্বর্ণ-দানা ও পুঁতি ছিল। আমি স্বর্ণ দানাগুলো পৃথক করে দেখি, তা পরিমাণে বারো দীনারের চেয়েও বেশি। বিষটি আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে জানালে তিনি বলেনঃ উভয় প্রকারের দানা পৃথক করার পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়িয নয়। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রা:) তিনি বলেন, আমরা খায়বার বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম এবং ইয়াহুদীদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম। আমরা তাদের থেকে এক দীনারের বিনিময়ে এক আওকিয়া সোনা কিনলাম। অধস্তন বর্ণনাকারী কুতাইবাহ ব্যতীত অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ দুই বা তিন দীনারের কথা উল্লেখ করেছেন, অতঃপর সকলে এইরূপে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমারা সোনার বিনিময়ে সোনা ক্রয়-বিক্রয় করবে না দাড়ি-পাল্লার উভয় দিক ওজনে সমান না হলে।
রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণমুদ্রা নেয়া
ইবনু ‘উমার (রা:) তিনি বলেন, আমি আল বাকী’ নামক বাজারে দীনারের বিনিময়ে উট বিক্রি করতাম, কিন্তু মূল্য গ্রহণের সময়ে আমি দীনারের পরিবর্তে দিরহাম নিতাম। আবার কখনও দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দীনার নিতাম। অর্থাৎ আমি কখনো এটার পরিবর্তে ওটা এবং কখনো ওটার পরিবর্তে এটা গ্রহণ করতাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি তখন হাফসাহ্র (রাঃ) ঘরে ছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার দিকে দেখুন। আমি আপনার কাছে জানতে চাই। আমি আল বাকী’ নামক বাজারে দীনারের বিনিময়ে উট বিক্রি করে দিরহাম গ্রহণ করি এবং দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দীনার গ্রহণ করি। অর্থাৎ আমি এটার (দীনারের) পরিবর্তে ওটা (দিরহাম) গ্রহণ করি এবং ওটার (দীনারের) বিনিময়ে এটা (দিরহাম) গ্রহণ করি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই, তবে সেদিনের বাজারদরে গ্রহণ করবে এবং কিছু অমীমাংসিত না রেখে পরস্পর পৃথক হওয়ার আগেই তা করবে। দুর্বলঃ ইরওয়া (১৩২৬), মিশকাত (২৮৭১)। সিমাক (রহঃ) তার সানাদ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু (আরবি) বাক্যাংশটুকু উল্লেখ করেননি। তবে পূর্ববর্তী বর্ণনাটি পুর্ণাঙ্গ। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
পশুর বিনময়ে পশু বাকীতে ক্রয়-বিক্রয়
সামুরাহ (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর বিনিময়ে পশু ধারে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২৭০)।
এ বিষয়ে অনুমতি সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আস (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি অভিযানের জন্য সৈন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন। সৈন্য প্রস্তুতে উটের অভাব দেখা দিলো। তিনি তাকে যাকাতের উট প্রাপ্তি সাপেক্ষে উট ধার নিতে বললেন। তদানুযায়ী তিনি যাকাতের উট প্রাপ্তি সাপেক্ষে দুই দুইটি উটের বিনিময়ে এক একটি উট গ্রহণ করলেন। দুর্বলঃ মিশকাত (২৮২৩)।
নগদে বদলী ক্রয়-বিক্রয়
জাবির (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি গোলামের বিনময়ে একটি গোলাম কিনেছেন। সহীহঃ তিরমিযী (১২৬২)।
খেজুরের বিনিময়ে খেজুর বিক্রয়
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) যায়িদ আবূ ‘আইয়াশ (রহঃ) তাকে জানিয়েছেন, তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বার্লির বিনিময়ে গম কেনা-বেচা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সা’দ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, উভয়ের মধ্যে কোনটি অধিক উত্তম? তিনি বললেন, গম। বর্ণনাকারী বলেন, সা’দ (রাঃ) যায়িদকে এর বিনিময় করতে নিষেধ করলেন। তিনি (সা’দ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পাকা খেজুরের বিনিময়ে খুরমা ক্রয় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ পাকা খেজুর শুকানো হলে কি ঘাটতি হয়? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ। অতঃপর তিনি এরূপ বিনিময় করতে নিষেধ করলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইসমাঈল ইবনু উমাইয়্যাহ এ হাদীস মালিকের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২৬৪)। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রা:) সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাকা খেজুরকে খুরমার বিনিময়ে বাকিতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। শাযঃ ইরওয়া (৫/১৯৯-২০০)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীস ‘ইমরান ইবনু আবূ আনাস বনূ মাখযূমের মুক্তদাস সা’দ (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। সহীহঃ এতে বাকীতে কথা নেই। ইরওয়া (ঐ)।
মুযাবানা পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয়
ইবনু ‘উমার (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের খেজুর আন্দাজ করে খেজুরের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে, আঙ্গুরকে কিশমিশের বিনিময়ে অনুমান করে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং খেতের ফসল গমের মাধ্যমে অনুমানে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২৬৫)।
‘আরিয়া (গাছের ফল পেড়ে) বিক্রয় সম্পর্কে
খারিজাহ ইবনু যায়িদ ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরিয়া পদ্ধতিতে খুরমা ও খেজুর ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। সাহল আবূ হাসমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ‘আরিয়া পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। যাতে ক্রেতার পরিবার তাজা ফল খেতে পারে। সহীহঃ নাসায়ী (৪৫৩২)।
‘আরিয়্যার পরিমাণ
আবূ হুরাইরাহ(রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ ওয়াসাকের কম বা পাঁচ ওয়াসাক পরিমাণে ‘আরিয়্যা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘চার ওয়াসাক’ উল্লেখ রয়েছে। সহীহঃ নাসায়ী (৪২৩৩, ৪৫৩৩)।
‘আরিয়্যার ব্যাখ্যা
‘আস ইবনুল হারিস (রহঃ) হতে রাব্বিহি ইবনু সা’ঈদ আল-আনসারীর সূত্র তিনি বলেন, ‘আরিয়্যা হচ্ছে কেউ অন্য কোন ব্যক্তিকে তার বাগানের একটি খেজুর গাছ দান করলো অথবা কেউ তার খেজুর বাগান থেকে কাউকে একটি বা দু’টি খেজুর গাছ এই বলে নির্দিষ্ট করলো যে, এই গাছের ফল সে নিবে। অতঃপর প্রকৃত মালিক শুকনা খেজুরের বিনিময়ে দান করা খেজুর গাছের তাজা ফল ক্রয় করলো। সহীহঃ নাসায়ী (৪৫৪১, ৪২৩১)। ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আরিয়্যা হলো- কোন ব্যক্তি তার কিছু খেজুর গাছ অন্য কাউকে দান করলো। অতঃপর দাতার নিকট এটা অপ্রিয় মনে হলো যে, (গ্রহীতা) ব্যক্তি এ গাছের কাছে আসুক। এমতাবস্থায় সে (গ্রহীতা) ব্যক্তি তার গাছের খেজুর অনুমান করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে মালিকের কাছে বিক্রি করে দিলো (এটাই ‘আরিয়্যা)।
খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্বে ফল ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের ফল উপযোগী হওয়ার পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২১৪)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাল বা হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করতে এবং শীষ জাতীয় বস্তু (পাকার পূর্বে) ক্রয়–বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিনষ্ট হওয়ার সময় অতিক্রান্ত হলে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তিনি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। সহীহ : তিরমিযী (১২৪৯-১২৫০)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গণীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করতে, সব ধরনের বালা-মুসিবত দূর হওয়ার পূর্বে খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কোমরবন্ধ ব্যতিত সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুশাক্কাহ’ না হওয়া পর্যন্ত ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। জাবির (রাঃ)–কে ‘মুশাক্কাহ’ শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর অর্থ হল লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং তা খাওয়ার উপযোগী হওয়া। সহীহ : আহাদীসূল বুযূ। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুর কালো রং ধারণ করার আগে এবং খাদ্যশষ্য পুষ্ট হওয়ার আগে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২১৭)। ইউনুস (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি আবুয যিনাদকে উপযোগী হওয়ার পূর্বে ফল ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) সাহল ইবনু হাসামাহ হতে যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যায়িদ বলেছেন, লোকেরা ফল (খাওয়া ও ব্যবহার করার) উপযোগী হওয়ার পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করতো। তাদের ফল কাটার সময় ক্রেতা এসে বলত, ফলে মড়ক লেগেছে, পোকা ধরেছে, রোগ হয়েছে। সে এসব অজুহাত দাঁড় করিয়ে মূল্য কম দেয়ার চেষ্টা করতো অথবা মোটেই দিতে চাইতো না। একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে তাদের অত্যধিক ঝগড়া হলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে পরামর্শ দিলেন যে, ফল পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় করো না। এ নির্দেশ ছিলো তাদের অধিক ঝগড়া ও মতবিরোধ এড়ানোর জন্য। সহীহ : আহাদীসুল বুয়ূ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপযোগী হওয়ার পূর্বে খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আর এর ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই দীনার বা দিরহামের মাধ্যমে হবে। তবে ‘আরিয়্যার’ অনুমতি আছে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২১৬)
কয়েক বছরের জন্যে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন গাছের বা বাগানের ফল কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন এবং ক্ষতিপূরণের জন্য মূল্য কর্তনের ব্যবস্থা রেখেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ ক্ষতিপূরণের কথাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দিকে সম্পৃক্ত করা সঠিক নয়। এটা মদীনাহ্বাসীদের মত। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২১৮)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আওয়ামাহ নিষিদ্ধ করেছেন। আহমাদ ইবনু হাম্বল কিংবা ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন (রহঃ) বলেছেনঃ মু’আওয়ামাহ অর্থ হলো, কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম বিক্রয়।
ধোঁকাপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধোঁকাবাজীর মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ‘উসমানের বর্ণনায় রয়েছে : তিনি কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৯৪)। আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ধরণের ক্রয়-বিক্রয় এবং দুই ধরণের পোশাক পরিধানের নিয়মকে নিষিদ্ধ করেছেন। ক্রয়–বিক্রয়দ্ব্য় হলো, ‘মুলামাসা ও মুনাবাযা’ (অর্থাৎ ক্রেতা বা বিক্রেতার মধ্যে কেউ কোন কাপড়ে হাত দিলো, অথবা তা একে অন্যের প্রতি ছুঁড়ে মারলো – আর এতেই বিক্রয় নির্ধারিত হয়ে গেলো)। আর পোশাক পরিধানের নিয়ম দু’টি হলো, লুঙ্গি ইত্যাদি পরিধান না করে শুধু এক চাঁদরে সমস্ত শরীর আবৃত করে চাঁদরের একদিক কাঁধে উঠিয়ে রাখা। অথবা লুঙ্গি বা এরূপ কাপড় পরিধান করে হাঁটুদ্বয় খাড়া করে বসা, অথচ লজ্জাস্থান খোলা রয়েছে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৭০)। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তবে এই বর্ণনায় আরো রয়েছে : লুঙ্গি ইত্যাদি না পরে শুধু একটি চাঁদরে সমস্ত শরীর আবৃত করা এবং চাঁদরের উভয় দিক বাম কাঁধে উঠিয়ে রাখা এবং ডান দিক খোলা রাখা। ‘মুনাবাযা’ হলো : ক্রেতা বা বিক্রেতার এরুপ বলা যে, আমি যখন এই কাপড় নিক্ষেপ করবো তখন ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। আর ‘মূলামাসা’ হলো : ক্রেতা কাপড়টি হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তা খুলে দেখতে পারবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না; ক্রেতা তা হাত দিয়ে স্পর্শ করার মাত্রই তা ক্রয় করা বাধ্যতামূলক হবে। আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন,… অতঃপর পুরো হাদীসটি সুফিয়ান ও ‘আবদুর রায্যাক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর পেটের বাচ্চার বাচ্চা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৭৯)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকেও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি (ইবনু ‘উমার) বলেন, ‘পেটের বাচ্চার বাচ্চা’ অর্থাৎ উষ্ট্রীর পেট থেকে যে বাচ্চা জন্ম নিবে সেই বাচ্চা পরবর্তীতে যে বাচ্চা প্রসব করবে তা ক্রয় করা। সহীহ : পূর্বেরটি দেখুন।
ঠেকায় পড়ে ক্রয়-বিক্রয়
আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, মানুষের উপর এমন এক কঠিন সময় আসবে যখন ধনীরা তাদের হাতের জিনিস খরচ করতে চরম কৃপণতা করবে, অথচ তাদেরকে কৃপণতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “তোমরা পারস্পরিক অনুগ্রহ করতে ভুলে যেও না” (সূরাহ বাক্বারাহ : ২৩৭)। লোকেরা ঠেকায় পড়ে বিক্রয় করতে বাধ্য হবে। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠেকায় পড়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে, ধোঁকাবাজীর মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে ফল ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। দূর্বল : মিশকাত (২৮৬৫), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০৬৩)।
অংশীদারী কারবার
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আমি দুই অংশীদারের মধ্যে তৃতীয় অংশীদার, যতক্ষণ তারা একে অন্যের সাথে বিশ্বাঘাতকতা না করে। যখন এক অংশীদার অপরের সাথে খিয়ানত করে তখন আমি তাদের থেকে সরে যাই। দূর্বল : ইরওয়া (১৪৬৮), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (১৭৪৮)।
ব্যবসায়ীর বৈপরিত্য করা
উরওয়াহ ইবনু আবুল জা’দ আল-রাবিকী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি কুরবানীর পশু বা বকরী কিনতে একটি দীনার প্রদান করলে তিনি (তা দিয়ে) দু’টি বকরী কিনে পরে একটি বকরী এক দীনারে বিক্রি করে দিলেন এবং একটি বকরী ও একটি দীনার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে পেশ করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ক্রয়-বিক্রয়ে বরকতের দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি যদি মাটিও কিনতেন, তাতেও লাভবান হতেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪০২)। ‘উরওয়াহ আল-বারিক্বী (রাঃ) এই সানাদে অনুরূপ হাদীস শাব্দিক পার্থক্য সহকারে বর্ণনা করেছেন। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জন্যে একটি একটি কুরবানীর পশু কিনতে তাকে একটি দীনারসহ বাজারে পাঠালেন। তিনি এক দীনারে তা ক্রয় করে দুই দীনারে বিক্রি করলেন। তিনি পুনরায় ফিরে গিয়ে এক দীনারে তাঁর জন্য একটি কুরবানীর পশু কিনে একটি দীনারসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীনারটি সাদাক্বাহ করে দিলেন এবং তার ব্যবসায় বরকতের জন্যে দু’আ করলেন। দূর্বল : তিরমিযী (১২৮০), মিশকাত (২৯৩৭)।
যে ব্যক্তি মালিকের বিনা অনুমতিতে তার মাল দিয়ে ব্যবসা করে।
সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ এক ফারাক চাউলের অধিকারী লোকের মত হতে সক্ষম হলে যেন তাই হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! চাউলওয়ালা কে? জবাবে তিনি গুহার মুখে পাথরচাপা পড়ে আটকে পড়া লোকদের ঘটনা বর্ণনা করলেন। তাদের প্রত্যেকে পরস্পরকে বললো, তোমরা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে উত্তম কাজটি স্মরণ করো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাদের মধ্যকার তৃতীয় ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্! তুমি তো অবহিত আছো, আমি এক ফারাক চাউলের বিনিময়ে এক ব্যক্তির মজুর নিয়োগ করেছিলাম। সন্ধ্যা বেলায় আমি তার প্রাপ্য তাকে দিতে চাইলে সে তা নিতে অসম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। আমি তার মজুরী কাজে খাটিয়ে তদ্বারা অনেক গরু ও রাখাল জমা করলাম। পরবর্তীতে লোকটি এসে আমার সাথে সাক্ষাত করে বললো, আমার প্রাপ্য দিন। আমি তাকে বললাম, ঐসব গরু ও তার রাখালদের নিয়ে যাও। সে ওগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলে গেলো। মুনকার, এর প্রথম দিকের অতিরিক্ত অংশসহ। তবে হাদীসটি অতিরিক্ত অংশ বাদে সহীহাইনে বর্ণিত আছে।
মূলধনবিহীন অংশীদারী ব্যবসা
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি, ‘আম্মার ও সা’দ (রাঃ) এই মর্মে চুক্তি করি যে, আমরা বদরের যুদ্ধে যা পাবো, তাতে আমরা সমান অংশীদার হবো। তিনি বলেন, সা’দ দু’জন দুশমনকে বন্দী করে আনলেন কিন্তু আমি ও ‘আম্মার কিছুই লাভ করতে পারিনি। দূর্বল : ইবনু মাজাহ (২২৮৮), ইরওয়া (১৪৭৪)।
ভাগচাষ সম্পর্কে
আস ইবনু দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা ভাগচাষকে আপত্তিকর ভাবতাম। কিন্তু রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ)-কে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগচাষ বর্জন করতে বলেছেন। আমি (‘আমর) কথাটি তাঊসকে জানালে তিনি বললেন, আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগচাষ নিষেধ করেননি। বরং তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কারো বিনিময় ছাড়া ধার হিসেবে জমি দেয়াটা এর উপড় নির্ধারিত কর গ্রহন অপেক্ষা উত্তম। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪৬৪)। উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ রাফি’ ইবনু খাদিজকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ্র শপথ! আমি হাদীস সম্পর্কে তার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দুই ব্যক্তি আসলো। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় আছে : দুইজন আনসারী লোক আসলো। তারা উভয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত ছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের অবস্থা এরূপ হলে তোমরা ভাগচাষ করো না। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছে : রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) শুধু শুনেছেন, “তোমরা ভাগচাষ করো না”। দূর্বল : ইবনু মাজাহ (৩৬৬)। সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নালার পার্শ্ববর্তী জমি ভাগচাষে দিতাম। এতে নিজ থেকেই পানি প্রবাহিত হতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি আমাদেরকে স্বর্ণ মুদ্রা অথবা রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে জমি ভাড়ায় খাটাতে আদেশ করেন। হাসান : নাসায়ী (৩৮৯৪)। হানযালাহ ইবনু ক্বায়িস আল-আনসারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ)-কে সোনা (দীনার) ও রূপার (দিরহাম) বিনিময়ে জমি ভাড়ায় খাটানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে আপত্তি নেই। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে লোকেরা নালার পার্শ্ববর্তী জমি, পাহাড়ের পাদদেশের জমি ও অন্যান্য কৃষিভূমি ভাগচাষে খাটাতো। এতে দেখা যেতো, এ অংশে কোন ফসলই উৎপন্ন হতো না কিন্তু ওপর অংশে যথেষ্ট ফসল উৎপন্ন হতো। আবার কখনো এ অংশের ফসল নিরাপদ থাকতো অথচ অপর অংশের ফসল নষ্ট হয়ে যেতো। তখন ভাগচাষ ব্যতিত জমি বন্দোবস্ত দেয়ার অন্য কোন নিয়ম প্রচলিত ছিলো না। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগ চাষ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। অবশ্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকলে কোন আপত্তি নেই। বর্ণনাকারী ইবরাহীমের বর্ণনাটি পূর্ণাঙ্গ। হানযালাহ ইবনু ক্বায়িস (রহঃ) তিনি রাফি’ খাদীজ (রাঃ)-কে জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ভাগচাষ করতে নিষেধ করেছেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, সোনা-রূপার বিনিময়ে? তিনি বললেন, সোনা-রূপার বিনিময়ে হলে কোন দোষ নেই।
ভাগচাষের ব্যাপারে কঠোরতা
ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) জানিয়েছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার জমি ভাগচাষে খাটাতেন। তিনি যখন অবহিত হলেন, রাফি’ ইবনু খাদীজ আল-আনসারী (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাগচাষে জমি খাটাতে নিষেধ করেছেন, তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বললেন, হে ইবনু খাদীজ! জমি বর্গা দেয়া সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে কি হাদীস বর্ণনা করেন? রাফি’ (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারকে বললেন, আমি আমার দুই চাচার নিকট শুনেছি, তারা উভয়ে বদরের যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন, তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে ভাগচাষ প্রচলন ছিলো। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এই আশংকা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বিষয়ে হয়তো নতুন কোন নির্দেশ দিয়েছেন যা তার জানা নেই। অতঃপর তিনি জমি বর্গা দেয়া বর্জন করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আইয়ূব, ‘উবাইদুল্লাহ, কাসীর ইবনু ফারক্বাদ এবং মালিক এরা সকলেই রাফি’ হতে খাদীজের মাধ্যমে হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। আওযাই’ (রহঃ) হাফ্স ইবনু ‘ইনান হতে রাফি (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হাদীসটি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে শুনেছি। অনূরূপভাবে যায়িদ ইবনু আবূ উনাইসাহ (রহঃ) হাকীম হতে রাফি’র মাধ্যমে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি রাফি’র কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে শুনেছেন? রাফি’ বললেন, হাঁ। এমনিভাবে ‘ইকরিমাহ ইবনু ‘আম্মার (রহঃ) আবুন-নাজ্জাশীর হতে রাফি’ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে (এ হাদীস) শুনেছি। আওযাঈ (রহঃ) আবুন-নাজ্জাশী হতে রাফি’ ইবনু খাদীজের সূত্রে এবং তিনি তার চাচা যুহাইর ইবনু রাফি’ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ : নাসায়ী (৩৯০৪)। সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে জমি ভাগচাষে খাটাতাম। তিনি উল্লেখ করলেন, তার এক চাচা তার কাছে এসে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাজ বর্জন করতে বলেছেন, যা আমাদের জন্য লাভজনক ছিলো। কিন্ত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা আমাদের জন্য তার চেয়েও অধিক লাভজনক ও কল্যাণকর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, তা কীভাবে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জমি আছে সে নিজে তা চাষ করবে অথবা তার ভাইকে যেন চাষ করতে দেয়। সে যেন তা এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য প্রদানের বিনিময়ে বর্গা না দেয়। আইয়ূব (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, ইয়া’লা ইবনু হাকীম (রহঃ) আমাকে লিখে পাঠালেন যে, আমি (ইয়া’লা) সুলায়মান ইবনু ইয়াসারের নিকট ‘উবাইদুল্লাহর সানাদে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস শুনেছি। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। ইবনু রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আবূ রাফি’ (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে আমাদের নিকট এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে একটি লাভজনক কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি নিষেধ করেছেন : আমাদের কেউ যেন ভাগচাষের শর্তে কারো জমি না খাটায়। তবে তার নিজের জমি থাকলে কিংবা কেউ তাকে এমনিতেই চাষের জন্য জমি দান করলে সে চাষাবাদ করবে। হাসান, এর পরবর্তী হাদীস দ্বারা। মুজাহিদ (রহঃ) উসাইদ ইবনু যুহাইর (রহঃ) বলেছেন, একদা রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) আমাদের নিকট এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে একটি কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন যা তোমাদের জন্য লাভজনক ছিলো। কিন্তু আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা তোমাদের জন্য অধিক লাভজনক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে জমি বর্গা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার জমির মুখাপেক্ষী নয় সে যেন তার অন্য ভাইকে কোন বিনিময় ছাড়াই তা চাষাবাদ করতে দেয়, অথবা পরিত্যক্ত রেখে দেয়। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪৬০)। আবূ জা’ফর আল-খাতমী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমার চাচা আমাকে ও তার এক গোলামকে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) এর নিকট প্রেরণ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাকে বললাম, আমরা ভাগচাষ সম্পর্কে আপনার কিছু বক্তব্য জানতে পেরেছি। তিনি বললেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাফি’ ইবনু খাদীজ বর্ণিত হাদীস না জানা পর্যন্ত ভাগচাষ আপত্তিকর মনে করেননি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাফি’র নিকট আসলে রাফি’ (রাঃ) তাকে জানান, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী হারিসার কাছে যান। তিনি যুহাইরের জমির ফসল দেখে বললেন, যুহাইরের জমিতে কি সুন্দর ফসল ফলেছে! লোকেরা বললো, হাঁ, তবে ফসল অমুক ব্যক্তির। তিনি বললেনঃ তোমাদের ফসল তোমরা নিয়ে যাও এবং তাকে কৃষিকাজের খরচ ফেরত দাও। রাফি’ (রাঃ) বলেন, আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে নিলাম এবং তাকে কৃষির খরচ ফেরত দিলাম। সাঈদ (রহঃ) বলেন, তোমার ভাইয়ের অভাব দূর করো অথবা দিরহামের বিনিময়ে ভাড়া খাটাও। রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুহাকালা’ ও ‘মুযাবানা’ পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি কৃষিকাজ করতে পারে। (এক) যার নিজস্ব জমি আছে সে তাতে চাষাবাদ করতে পারে। (দুই) যে ব্যক্তি ধারে জমি নিয়েছে সে তাতে জমি চাষাবাদ করতে পারে। (তিন) যে ব্যক্তি সোনা (দীনার) ও রূপার (দিরহাম) বিনিময়ে জমি ভাড়া নিয়েছে সে তাতে চাষাবাদ করতে পারে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪৪৯)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আমি সাঈদ ইয়া’কূব আত-তালাক্বানীকে এটি পাঠ করতে শুনালাম। আপনাদেরকে ইবনুল মুবারক, সাঈদ আবূ শুজা’র সূত্রে বলেছেন, তিনি বললেন, আমাকে ‘উসমান ইবনু সাগল ইবনু রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেছেন। ‘উসমান বলেন, আমি রাফি’ ইবনু খাদীজের নিকট ইয়াতীম হিসাবে প্রতিপালিত হয়েছি। আমি তার সাথে হাজ্জও করেছি। একদা আমার ভাই ‘ইমরান ইবনু সাহল এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের অমুক জমি দু’শো দিরহামের বিনিময়ে অমুককে ধার দিয়েছি। তিনি (রাফি’) বললেন, এটা বর্জন করো। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমি ধার দিতে নিষেধ করেছেন। রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি একটি জমিতে চাষাবাদ করেন। একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় রাফি’ জমিতে পানি দিচ্ছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন : এ ফসল কার এবং জমির মালিক কে? রাফি’ (রাঃ) বললেন, এ ফসল আমার, শ্রমও আমার। আমার অর্ধেক ভাগ এবং অমুকের পুত্রের (জমির মালিকের) অর্ধেক ভাগ। তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়ে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত হলে। মালিককে জমি ফিরিয়ে দাও এবং তোমার খরচ তার কাছ থেকে নিয়ে নাও।
মালিকের বিনা অনুমতিতে তার জমিতে কৃষিকাজ করা
রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মালিকের অনুমতি ছাড়া তার জমিতে চাষাবাদ করে সে উৎপাদিত ফসলের অংশ পাবে না। তবে সে তার খরচ ফেরত পাবে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২৪৬৬)।
মুখাবারা (ভাগে বর্গা দেয়া) সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুযাবানা’, ‘মুহাকালা’, ও ‘মু’আওয়ামা’ করতে নিষেধ করেছেন। আবুয–যুবাইর হাম্মাদের সূত্রে বর্ণনা করেন, তাদের (হাম্মাদ ও সা’ঈদ ইবনু মীনা’আ) উভয়ের একজন ‘মু’আওয়ামা’ বর্ণনা করেছেন এবং অন্যজন ‘বায়‘উস সিনীন’ (কয়েক বছরের অগ্রিম চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয়) কথা বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাদের বর্ণনা একই বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। তিনি সানাইয়া নিষেধ করেছেন; কিন্তু ‘আরিয়ার’ অনুমতি দিয়েছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২৬৬, ২২৬৭)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুযাবানা’ ও ‘সানাইয়া’ করতে নিষেধ করেছেন, তবে পরিমাণ নির্ধারিত থাকলে তা করা যাবে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি ‘মুখারাবা’ (বর্গা) বর্জন করেনি তার বিরুদ্ধে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা দাও। দূর্বল : যঈফাহ (৯৯৩), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৫৮৪১)। যায়িদ ইবনু সাবিত (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারা করতে নিষেধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুখাবারা কি? তিনি বললেন? কারো জমি অর্ধাংশ, এক-তৃতীয়াংশ অথবা এক-চতুর্থাংশ ফসলের বিনিময়ে চাষ করা। [১] সহীহঃ ইরওয়া (১৪৭৭)।
বাগান ও জমি বর্গা দেয়া
ইবনু ‘উমার (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের অধিবাসীদের এ শর্তে চাষাবাদ করতে দিয়েছিলেন যে, উৎপন্ন ফল অথবা ফসলের অর্ধেক তারা পাবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২৪৬৭)। ইবনু ‘উমার (রা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের ইয়াহুদীদেরকে সেখানকার বাগান ও জমি এই শর্তে চাষাবাদ করতে দিয়েছিলেন যে, তারা নিজেদের খরচে তা চাষাবাদ করবে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে উৎপন্ন ফলের অর্ধেক প্রদান করবে। সহীহ: এর পূর্বেরটি দেখুন। ইবনু আব্বাস (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বিজয়ের পর শর্ত আরোপ করলেন যে, এখানকার জমি এবং যাবতীয় সোনা-রূপা আমার। খায়বারে বসবাসকারী ইয়াহুদীরা বললো, আমরা কৃষিকাজে আপনাদের চেয়ে অধিক পারদর্শী। সুতরাং এখানে আমাদেরকে চাষাবাদ করতে দিন, উৎপাদিত ফলের অর্ধেক আপনাদের এবং অর্ধেক আমাদের। তিনি উক্ত শর্তে তাদেরকে জমি চাষ করতে দিলেন। অতঃপর খেজুর কাটার সময় এলে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)- কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের খেজুরের পরিমাণ অনুমান করলেন। মাদীনাহবাসিরা একে খারস বলতো। তিনি বললেন, এতে এই এই পরিমাণ খেজুর হবে। তারা বললো, হে ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)! আপনি পরিমাণের চেয়ে বেশী অনুমান করেছেন। তিনি বললেন, আমি প্রথমে খেজুর সংগ্রহ করবো। আমি যে পরিমাণ অনুমান করেছি তার অর্ধেক তোমাদের দিবো। তারা বললো, এটাই সঠিক (হক্ব)। আর আসমান-যমীন হক্বের জন্যই সুপ্রতিষ্ঠিত আছে। আমরা আপনার কথা মোতাবেক গ্রহণ করতে সম্মত। জা’ফার ইবনু বুরক্বান (রহঃ) তার সানাদ অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (‘আবদুল্লাহ) ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘সাফরা’ ও ‘বাইদা’ এর অর্থ হলোঃ সোনা ও রূপা। সানাদ সহীহ। মিক্বসাম (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বিজয় করলেন। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ যায়িদ সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (‘আবদুল্লাহ’) অনুমান করে খেজুরের পরিমাণ নির্ধারণ করে বললেন, আমি খেজুর কাটবো এবং আমি অনুমানে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক তোমাদের দিবো।
অনুমানের ভিত্তিতে পরিমাণ নির্ধারণ করা
আয়িশাহ (রা:) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-কে খায়বারে পাঠাতেন। তিনি সেখানকার বাগানের খেজুর পাকার সময় তা খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্বে অনুমান করে পরিমাণ নির্ধারণ করতেন। অতঃপর তিনি ইয়াহুদীদেরকে এখতিয়ার দিতেনঃ তারা এই পরিমান নিতে পারে। অথবা ঐ পরিমান নিয়ে অবশিষ্ট অংশ তাকে দিবে। এরূপ করা হতো ফল খাবারযোগ্য হওয়ার এবং বণ্টনের পূর্বে যাকাত নির্ধারণ করার জন্য। সানাদ দুর্বলঃ অনুরূপ মিশকাত (১৮০৬)। জাবির (রা:) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে খায়বার এলাকা ফাই হিসাবে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানকার অধিবাসীদের সেভাবে রাখলেন যেভাবে তারা ছিল। তিনি সেখানকার জমি তাদেরকে চাষবাদ করতে দিলেন। তিনি সেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-কে প্রেরণ করলেন। তিনি সেখানে গিয়ে তাদের ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করলেন। সহীহঃ পরবর্তী (৩৪১৫) হাদীস দ্বারা। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) খায়বারের বাগানে ফলের পরিমাণ অনুমানে নির্ধারণ করেন চল্লিশ হাজার ওয়াসক। এরপর তিনি সেখানকার ইয়াহুদীদের ইখতিয়ার দিলে তারা বিশ হাজার ওয়াসক দিতে রাজি হয় এবং ফল তাদের অধিকারে নিয়ে নেয়।