24. ইজারা (ভাড়া ও শ্রম বিক্রয়)
শিক্ষকের পারিশ্রমিক সম্পর্কে
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আহলে সুফফার কতিপয় ব্যক্তিকে কুরআন পড়া ও লিখা শিখাতাম। তাদের একজন আমাকে উপহার হিসেবে একটি ধনুক পাঠালো। আমি বললাম, এটা কোন সম্পদ নয়। আমি এটা দিয়ে আল্লাহর পথে তীর ছুঁড়বো। কিন্তু আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক লোক আমাকে একটি ধনুক উপহার দিয়েছে। আমি লোকদের সঙ্গে তাকেও লিখা এবং কুরআন শিখাতাম। ধনুকটা (মূল্যবান) সম্পদ নয়। আমি এটা দিয়ে আল্লাহর পথে (জিহাদে) তীর ছুঁড়বো। তিনি বলেনঃ তুমি যদি গলায় জাহান্নামের শিকল পরতে ভালোবাস, তাহলে তা গ্রহণ করো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৫৭) ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তবে প্রথম হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ। এ বর্ণনায় রয়েছেঃ আমি জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল! এ বিষয়ে আপনি কী বলেন? তিনি বললেনঃ এটাতো জ্বলন্ত অংগার, যা তুমি তোমার দুই কাঁধে ঝুলিয়েছ। সহীহঃ পূর্বেরটি দ্বারা।
চিকিৎসকদের পারিশ্রমিক সম্পর্কে
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একদল সাহাবী কোন এক সফরে বের হলেন। তারা এক আরবের একটি জনপদে যাত্রাবিরতি করে সেখানকার লোকদের নিকট মেহমান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো। বর্ণনাকারী বলেন, ঘটনাক্রমে এই জনপদের সর্দারকে (বিষাক্ত প্রাণী) দংশন করলো। তারা তাকে আরোগ্য করতে অনেক কিছুই করলো, কিন্তু কোনই কাজ হলো না। তাদের মধ্যে কেউ বললো, তোমরা যদি এখানে যাত্রাবিরতিকারী দলের কাছে যেতে! হয়ত তাদের কারো কাছে এমন কিছু থাকতে পারে যা তোমাদের সর্দারের উপকারে আসতে পারে। তাদের কতিপয় লোক এসে বললো, আমাদের সর্দারকে (বিষাক্ত প্রাণী) দংশন করেছে। তার আরোগ্যের জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেও কোন ফল পাইনি। তোমাদের কেউ কি ঝাড়ফুঁক জানে? দলের একজন বললেন, আমি ঝাড়ফুঁক জানি। কিন্তু আমরা তোমাদের নিকট মেহমানদারী চেয়েছিলাম, তোমরা আমাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে পারিশ্রমিক দিতে রাজী না হলে আমি ঝাড়ফুঁক করবো না। তারা তাকে কিছু বকরী পারিশ্রমিক দেয়ার চুক্তি করলো। তিনি রোগীর নিকট উপস্থিত হয়ে ‘উম্মূল কিতাব’ (সূরাহ ফাতিহা) পড়লেন এবং (দংশিত স্থানে) থুথু লাগিয়ে দিলেন। এতেই সে রোগমুক্ত হলো এমনভাবে যে, সে যেন বন্ধনমুক্ত হয়ে গেলো। বর্ণনাকারী বলেন, তারা তাদের চুক্তির শর্ত পূরণার্থে তাকে তার প্রাপ্য প্রদান করলো। সাহাবীগণ বললেন, এগুলো আমাদের মধ্যে বন্টন করো। ঝাড়ফুঁককারী বললেন, এরূপ করো না, বরং আমরা আগে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করে নেই। পরদিন সকালে তারা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট পৌছলেন এবং তাঁকে ঘটনাটি জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কিভাবে জানলে যে, এটা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়? তোমরা ভালো কাজই করেছো। তোমাদের সাথে আমারও একটা ভাগ নির্ধারন করো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৫৬)। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। খারিজাহ ইবনুস সাল্ত (রহঃ) হতে তার চাচার সূত্র তিনি একটি জনপদ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সেখানকার কিছু লোক তার কাছে এসে বললো, আপনি এই ব্যক্তির [রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কাছ থেকে কল্যাণ নিয়ে এসেছেন। কাজেই আমাদের এই ব্যক্তিকে একটু ঝাড়ফুঁক করে দিন। এ বলে তারা একটি পাগলকে বাঁধা অবস্থায় তার কাছে আনলো। তিনি তিন দিন সকাল-বিকাল সূরাহ ফাতিহা পড়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করলেন। তিনি যখনই পাঠ শেষ করতেন তখন থুথু জমা করে তার শরীরে নিক্ষেপ করতেন। অতঃপর লোকটি যেন বন্ধনমুক্ত হয়ে গেলো। তারা তাকে কিছু বিনিময় দিলো। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে ঘটনাটি জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যা পেয়েছো তা খাও। আমার জীবনের শপথ! কিছু লোক তো বাতিল মন্ত্র দ্বারা উপার্জন করে খায়। আর তুমি উপার্জন করেছো সত্য মন্ত্র দ্বারা। সহীহঃ সহীহাহ্ (২০২৭)
রক্তমোক্ষণকারীর উপার্জন
রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রক্তমোক্ষণের উপার্জন নিকৃষ্ট, কুকুর বিক্রয়মূল্য নিকৃষ্ট এবং যেনাকারিনীর উপার্জনও নিকৃষ্ট। সহীহঃ তিরমিযী (১২৯৭) ইবনু মুহাইয়াদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র একদা তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে রক্তমোক্ষণের পারিশ্রমিক গ্রহণ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু তিনি বারবার তাঁর কাছে আবেদন করতে থাকলেন এবং অনুমতি চাইতে থাকলেন। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ নির্দেশ দিলেনঃ ঐ উপার্জন দিয়ে তোমার উটের খাদ্য কিনবে এবং তোমার গোলামকে দিবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৬৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষণ করালেন। তিনি রক্তমোক্ষণকারীকে পারিশ্রমিক দিলেন। তিনি একে নিকৃষ্ট মনে করলে তাকে দান করতেন না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৬২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ ত্বাইবাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেহে শিংগা লাগান। তিনি তাকে এক সা‘ খেজুর দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তার মুনিবদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন তার উপর ধার্যকৃত মুক্তিপণ সহজ করে দেয়। সহীহঃ তিরমিযী (২৩০১)
দাসীর উপার্জন
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাসীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। তারিক ইবনু ‘আবদুর রহমান আল-কুরাশী (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, রাফি‘ ইবনু রিফা‘আহ (রাঃ) আনসারদের এক সমাবেশে গিয়ে বললেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজ আমাদেরকে (কিছু) নিষেধ করেছেন। এই বলে তিনি কিছু বিষয়ের উল্লেখ করলেন। তিনি দাসীর (গর্হিত) উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, তবে তাদের নিজ হাতের উপার্জন গ্রহনের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে দেখালেন, (হাতের কাজ হলো) যেমন রুটি তৈরি করা, সূতা কাটা অথবা তুলা ধুনা করা ইত্যাদি। হাসানঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। রাফি‘‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাসীর উপার্জনের উৎস না জানা পর্যন্ত তার আয় ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। হাসান : পূর্বেরটি দ্বারা।
গণকের ভেট
আবূ মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের বিক্রয়মূল্য, যেনাকারিনীর আয় ও গণকের ভেট গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৫৯)।
ষাঁড় দ্বারা পাল দিয়ে তার মজুরি গ্রহণ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষ পশুর দ্বারা মাদী পশুকে সঙ্গম করিয়ে তার মজুরী গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ : তিরমিযী (১২৯৬)।
স্বর্ণকার সম্পর্কে
আল-‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে আবূ মাজিদাহ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি এক যুবকের কান কেটে ফেলেছিলাম অথবা কেউ আমার কান কেটে ফেলেছিল। হাজ্জ উপলক্ষে আবূ বকর (রাঃ) আমাদের এখানে এলে আমরা তার নিকট একত্র হলাম। তিনি আমাদেরকে ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) কাছে পাঠালেন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, এ অপরাধের জন্য ক্বিসাস নেয়া যাবে। হাজ্জামকে ডেকে আনো, যাতে ক্বিসাস গ্রহণ করতে পারে। অতঃপর আমার নিকট একজন হাজ্জামকে ডেকে আনা হলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : আমি আমার খালাকে একটি গোলাম দান করেছিলাম। আমার আশা ছিল, এতে তাঁর বরকত হবে। আমি তাকে বলেছিলাম, একে রক্তমোক্ষণকারী, স্বর্ণকার অথবা কসাইয়ের কাছে সোপর্দ করবেন না। দুর্বল : আহাদীসুল বুয়ূ‘‘, যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (২০৯৮)। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্র পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মালদার গোলাম বিক্রি করলে তার বিধান
সালিম (রহঃ) তার পিতা হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র তিনি বলেন: কেউ গোলাম বিক্রি করলে ঐ গোলামের যদি কোন মাল থাকে তাহলে উক্ত মাল বিক্রেতাই পাবে। তবে ক্রেতা (মালের) শর্ত করলে সে তা পাবে। আর কেউ খেজুর গাছ তা‘বীর করার পর বিক্রি করলে ঐ বাগানের বর্তমান ফল বিক্রেতা পাবে, তবে ক্রেতা নিজের জন্য শর্ত করলে ভিন্ন কথা। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২১১)। নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুধু গোলামের ক্রয়-বিক্রয়ের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুধু খেজুর বাগান সম্পর্কিত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যুহ্রী ও নাফি‘ (রহঃ) চারটি হাদীস বর্ণনায় পরস্পর মতভেদ করেছেন। উপরের হাদীসটি সেগুলোর একটি। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি এমন গোলাম বিক্রয় করে যার কিছু মাল আছে, তাহলে ঐ মাল বিক্রেতা পাবে। কিন্তু ক্রেতা যদি নিজের জন্য শর্ত করে তাহলে ভিন্ন কথা। সহীহ : ইরওয়া (৫/১৫৮)।
(বাজারে পৌঁছার আগেই) অগ্রগামী হয়ে ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে মিলিত হওয়া
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের সময় নিজের ক্রয়-বিক্রয়ের কথা না বলে। পণ্যদ্রব্য বাজারে উপস্থিত করার আগে তোমরা অগ্রগামী হয়ে তা কিনতে যাবে না। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৭১)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে বাজারে পণ্যদ্রব্য নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সাথে মিলিত হতে নিষেধ করেছেন। কোন ক্রেতা যদি এগিয়ে গিয়ে তার সাথে মিলিত হয়ে কিছু কিনে তাহলে বিক্রেতা বাজারে পৌঁছার পর (বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের) সুযোগ পাবে। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২১৭৮)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এই বলে অপরের বিক্রয়ের ওপর বিক্রয় না করে যে, আমার কাছে এর চেয়ে ভাল পণ্য মাত্র দশ টাকায় (অর্থাৎ কম দামে) পাবে।
ধোঁকাপূর্ণ দালালী নিষেধ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধোঁকাপূর্ণ দালালী করো না। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২১৭৪)।
শহরবাসীর জন্য গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি করা নিষেধ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শহুরে লোককে গ্রাম্য লোকের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, শহুরে লোক গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি না করে দেয়ার অর্থ কি? তিনি বললেনঃ সে তার দালাল না হওয়া। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২১৭৭)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি না করে, যদিও সে তার ভাই অথবা পিতা হয়। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ লোকেরা বলে থাকে, “শহরবাসী গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রয় করবে না” এটি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য। অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে কিছু বিক্রিও করবে না এবং কিনবেও না। সালিম আল-মাক্কী (রহঃ) এক বেদুঈন তাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তার দুধের উষ্ট্রী নিয়ে ত্বালহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) এর নিকট অবতরণ করেন। তখন তিনি (তালহা) বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “শহরবাসীকে গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি করে দিতে নিষেধ করেছেন”। বরং তুমি বাজারে গিয়ে দেখো, তোমার পণ্য কে কিনতে চায়। তারপর আমার সঙ্গে পরামর্শ করবে, আমি হয়তো তোমাকে অনুমতি দিব কিংবা নিষেধ করবো। জাবির (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে পণ্য বিক্রি করবে না। তোমরা লোকদেরকে ছেড়ে দাও। মহান আল্লাহ এক দলের মাধ্যমে উপর দলের রিজিক্বের ব্যবস্থা করেন। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২১৭৬)।
আটকানো দুধে পশুর পালান ফুলানো দেখে ক্রয়ের পর তা অপছন্দ হলে
আবু হুরা্ইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যারা বাজারে বিক্রিও উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসে, তোমরা তাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য এগিয়ে তাদের সাথে মিলিত হবে না। একজনের পক্ষ হতে ক্রয়-বিক্রয়ের আলাপের সময় অন্যজন তা ক্রয়ের আলোচনা করবে না। উট-বকরীর স্তনে দুধ জমা করে রাখা যাবে না। এরূপ করার পর কেউ তা কিনলে দুধ দোহনের পর তার জন্য এখতিয়ার থাকবে। ইচ্ছা হলে সে ক্রয় বহাল রাখবে নতুবা ক্রয় ভঙ্গ করে তা ফেরত দিবে এবং (দুধপানের বিনিময় বাবদ) এক সা‘ খেজুর দিবে। সহীহ: নাসায়ী (৪৪৮৭,৪১৭৯)। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী বলেনঃ যে ব্যক্তি স্তন ফুলানো বকরী কিনবে তার জন্য তিন দিন পর্যন্ত অবকাশ থাকবে। ইচ্ছা করলে সে তা ফেরত দিবে। (ফেরতের সময়) সাথে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্যও দিবে, তবে উন্নত মানের গম দিবে না। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২২৩৯)। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কেউ স্তন ফুলানো বকরী কিনলে তার দুধ দোহন করে দেখে নিবে। তারপর পছন্দ হলে সে তা রেখে দিবে, আর পছন্দ না হলে ফেরত দিতে পারবে। তবে দুধ দোহনের বিনিময়ে সাথে এক সা‘ খেজুরও দিতে হবে। সহীহ: আহাদীসুল বুয়ু‘। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্তন ফুলানো পশু ক্রয় করে তার জন্য তিন দিনের অবকাশ থাকে। সে তা ফেরত দিলে সাথে দোহনকৃত দুধের পরিমাণ অনুযায়ী অথবা তার দ্বিগুণ গম দিবে। দুর্বলঃ ইবনু মাযাহ (২২৩৯)।
অসৎ উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখা নিষেধ
‘আদী ইবনু কা’বের(রাঃ) এক পুত্র মা‘মার ইবনু আবু মা‘মার (রাঃ) সুত্র তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জঘন্য অপরাধী ছাড়া কেউই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (মূল্য বৃদ্ধির আশায়) গুদামজাত করে না। আমি (মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) -কে বলি, আপনি তো গুদামজাত করেন। তিনি বলেন, মা‘মারও গুদামজাত করতেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, (কোন বস্তু) গুদামজাত করা নিষেধ? তিনি বললেন, মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আওযাঈ‘ (রহঃ) বললেন, গুদামজাতকারী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে বাজারজাত করার পথে প্রতিবন্ধক হয়। সহীহঃ ইবনূ মাজাহ (২১৫৪)। ক্বাতাদাহ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, খেজুর গুদামজাত করা নিষেধ নয়। ইবনুল মুসান্না (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু ফাইয়্যাদ স্বীয় বর্ণনায় হাসান বাসরীকে যুক্ত করেছেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি হাসানের বরাত দিবেন না (কারণ হাসান এটা বর্ণনা করেননি)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। সানাদ দুর্বল মাক্বতু‘। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) খেজুরের আঁটি, পশুখাদ্য ও তৈলবীজ গুদামজাত করেতেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু ইউনুসের কাছে শুনেছি ,আমি সুফিয়ানকে পশুখাদ্য গুদামজাত করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পূর্ববর্তী লোকেরা গুদামজাত করাকে মাকরূহ জানতেন। আমি (আহমাদ) আবূ বকর ইবনুল ‘আয়্যাশকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা গুদামজাত করাতে দোষ নেই। সহিহ মাক্বতু‘।
দিরহাম ভাঙ্গা
আলক্বামাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা বিশেষ কোন ত্রুটি ছাড়া ভাংতে নিষেধ করেছেন। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২২৬৩), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০০১)।
দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি বললেনঃ বরং আমি দু‘আ করবো। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করুন। তিনি বললেনঃ বরং আল্লাহই (জিনিসের দাম) কমান-বাড়ান। আমি আশা করি, আমি যেন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হই, আমার বিরুদ্ধে কারো প্রতি জুলুমের কোন অভিযোগ থাকবে না। সহীহঃ রাওযুন নাযীর (৪০৫)। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই মূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই তা কমান ও বৃদ্ধি করেন এবং একমাত্র তিনিই রিযিক্বদাতা। আমি এই আশা করি যে, আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবো যেন আমার উপর কারো জীবন বা সম্পদের উপর জুলুম করার কোনরূপ অভিযোগ না থাকে। সহীহঃ ইবনূ মাজাহ (২২০০)
ভেজাল দেয়া নিষেধ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কিভাবে বিক্রি করছো? তখন সে তাঁকে এ সম্পর্কে জানালো। ইতিমধ্যে তিনি এ মর্মে ওয়াহী প্রাপ্ত হলেনঃ আপনি আপনার হাত শস্যের স্তূপের ভেতরে ঢুকান। তিনি স্তূপের ভেতরে তাঁর হাত ঢুকিয়ে অনুভব করলেন যে , তার ভেতরের অংশ ভিজা। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি প্রতারণা করে তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২২২৪) ইয়াহইয়া (রহঃ) তিনি বলেন, সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) ‘‘লাইসা মিন্না’ -এর ব্যাখ্যা ‘আমাদের মত নয়’ করাকে অপছন্দ করতেন।
ক্রেতা- বিক্রেতার এখতিয়ার সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়ের জন্য সুযোগ থাকে। তবে ‘সুযোগ থাকার’ শর্ত রাখা হলে ভিন্ন কথা। সহীহ : ইবনু মাজাহ (২১৮১)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ অথবা উভয়ের একজন অন্যজনকে এরূপ বলা হয়ে, বিক্রয় কার্য চূড়ান্ত করূন। সহীহ : এর পূর্বেরটি দেখূন। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আস ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়য়ের জন্য (ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের) অবকাশ থাকে, তবে পরবর্তীতেও এ অবকাশ বহাল রাখলে ভিন্ন কথা। আর ক্রেতা বা বিক্রেতার একজন অপরজন থেকে (বিক্রয় প্রত্যাখ্যান হওয়ার আশংকায়) দ্রুত পৃথক হওয়া উচিত নয়। হাসান : তিরমিযী (১২৭০)। আবুল ওয়াদী (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আমাদের কোন একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করি। তখন আমাদের একজন একটি গোলামের বিনিময়ে একটি ঘোড়া বিক্রি করে। অতঃপর তারা (ক্রেতা-বিক্রেতা) উভয়ে অবশিষ্ট দিন ও রাত একত্রে অবস্থান করে। অতঃপর পরদিন সকালে বিদায়ের পালা আসলে ক্রেতা তার ঘোড়ার পিঠে জিন বাঁধতে শুরু করলো। এমন সময় বিক্রেতা লজ্জিত অবস্থায় ক্রেতার নিকট এসে চুক্তি বাতিল করে ঘোড়া ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু ক্রেতা তাকে ঘোড়া ফেরত দিতে অস্বীকার করায় বিক্রেতা বললো, তোমার ও আমার মধ্যকার বিবাদ নিষ্পত্তি করে দিবেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী আবূ বারযা (রাঃ)। তারা উভয়ে তাকে ঘটনাটি জানালে তিনি তাদেরকে বললেন, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফায়সালার অনুরূপ সিদ্ধান্ত দিবো, তোমরা কি এতে রাজি আছো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকে। হিশাম ইবনু হাস্সান (রহঃ) বলেন, জামীল (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আবূ বারযা (রাঃ) বললেন, আমি দেখছি তোমরা এখনো বিচ্ছিন্ন হওনি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৮২)। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ যুর‘আহ (রহঃ) কারো নিকট কিছু বিক্রি করলে তাকে অবকাশ দিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনিও বলতেন, আমাকেও অবকাশ দিবে। তিনি বলতেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যেন পরস্পরের সম্মতি ছাড়া একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। হাসান সহীহঃ তিরমিযী(১২৭১)। হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পরস্পর পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য (ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের) অবকাশ থাকে। তারা সততার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করলে এবং বিক্রিত মালের দোষ-ত্রুটির প্রকাশ করলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং বিক্রিত বস্তুর দোষ গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত দূর হয়ে যাবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু আবূ ‘আরূবাহ ও হাম্মাদ এ হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মামের বর্ণনায় রয়েছেঃ পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকে। তিনি কথাটি তিনবার বলেন। সহীহঃ তিরমিযী(১২৬৯)।
ইক্বালাহ (অনুতাপজনিত চুক্তি) বাতিল করার ফাযীলাত সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের (অনুরোধে তার) সাথে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২১৯৯)।
একই চুক্তিতে দুই লেনদেন
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি একই দ্রব্য বিক্রয়ে দুই রকম নিয়ম রাখে তাকে দুই মূল্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যই গ্রহন করতে হবে, নতুবা তা হবে সুদ। হাসানঃ ইরওয়া (৫/১৪৯-১৫০)
আল-ঈনাহ পদ্ধতির লেনদেন
ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।[২] সহীহঃ সহীহাহ (১১)
অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনাহ্য় আসলেন তখন সেখানকার লোকেরা এক, দুই অথবা তিন বছরের মেয়াদে খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃকেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করলে তাকে তা নির্দিষ্ট পরিমাপে, নির্দিষ্ট ওজনে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে করতে হবে। সহীহঃ সহীহাহ (১১) মুহাম্মাদ অথবা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মুজালিদ (রহঃ) তিনি বলেন, অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পর্কে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ও আবূ বুরদার (রাঃ) মতভেদ করেন। তারা আমাকে ইবনু আবূ ‘আওফার (রাঃ) নিকট পাঠালেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) এর যুগে গম, বার্লি, খেজুর এবং কিসমিস অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতাম। ইবনু কাসীরের বর্ণনায় রয়েছেঃ এমন লোকদের নিকট থেকে অগ্রিম ক্রয় করা হতো যাদের কাছে এগুলো বর্তমান থাকতো না। এরপর তারা (হাফ্স ইবনু ‘উমার ও ইবনু কাসীর) একইরূপ বর্ণনা করেন। অতঃপর আমি ইবনু আবযাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনিও একই কথা বললেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ(২২৮২) আব্দুল্লাহ ইবনু মুজালিদ (রহঃ) অথবা ইবনু আবুল মুজালিদ (রহঃ) সূত্র তিনি (ইবনু আবূ ‘আওফা) বলেন, এমন লোকদের কাছ থেকে অগ্রিম ক্রয় করতাম যাদের কাছে এগুলো বর্তমান থাকতো না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সঠিক হল ইবনু আবুল মুজালিদ নামটি। শু‘বাহ তার বর্ণনায় ভুল করেছেন। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আওফা আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সিরিয়ার যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তখন সেখানকার কৃষকরা আমাদের কাছে আসলো। আমরা তাদের থেকে গম এবং যাইতূন নির্ধারিত দামে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে অগ্রিম কিনতাম। তাকে বলা হলো, আপনারা কি এমন লোকের কাছ থেকে অগ্রিম কিনতেন যার কাছে তা বর্তমান থাকতো? তিনি বলেন, তাদের নিকট ঐ বস্তু আছে কিনা তা আমরা জিজ্ঞেস করতাম না। সহীহঃ এর পূর্বেরটির দ্বারা।
বিশেষ কোন ফলের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির একটি গাছের খেজুর অগ্রিম কিনলো। কিন্তু ঐ বছর কোন ফল ধরলো না। তারা উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে তিনি বললেনঃ তুমি কিসের বিনিময়ে তার মাল (নিজের জন্য) বৈধ মনে করলে? তার মাল তাকে ফেরত দাও। অতপরঃ তিনি বললেনঃ গাছের খেজুর পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তার ক্রয়-বিক্রয় করবে না। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২২৮৪), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬২২৯)।
অগ্রিম ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত না হলে তা অন্যের নিকট হস্তান্তর না করা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বস্তু অগ্রিম কিনেছে, সে যেন ঐ বস্তুকে (হস্তগত করার পূর্বে) অন্যের নিকট হস্তান্তর না করে। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২২৮৩), ইরওয়া (১৩৭৫), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪১৪), মিশকাত (২৮৯১)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফল-ফসল বিনষ্ট হলে তার ক্ষতিপূরণ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে এক ব্যক্তি (বাগানের) ফল কিনে লোকসানে পড়ে খুব ঋণগ্রস্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাকে সদাক্বাহ প্রদান করো। লোকেরা সদাক্বাহ দিলো কিন্তু তা তার ঋণ পরিশোধের সমপরিমাণ হলো না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ( হে পাওনাদার) যা পেয়েছো তা নিয়ে নাও, এর অতিরিক্ত আর পাবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৫৬)। জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি যদি তোমার কোন ভাইয়ের কাছে বাগানের খেজুর বিক্রি করো এবং তা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার কাছ থেকে কোন মূল্য গ্রহণ তোমার জন্য বৈধ নয়। তুমি কিসের বিনিময়ে তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে মূল্য গ্রহণ করবে? সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২১৯)।
‘জায়িহাহ’ শব্দের ব্যাখ্যা
আত্বা (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, ‘জায়িহাহ’ বলা হয় এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে যাতে প্রকাশ্য ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। যেমন অতিবৃষ্টি, তুষারপাত, পঙ্গপালের আক্রমন, ঝড়, অগ্নিকান্ড ইত্যাদি। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, মূলধনের এক-তৃতীয়াংশের কম বিনষ্ট হলে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ গণ্য নয়। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, এটাই মুসলিমদের প্রচলিত নিয়ম।
পানির প্রবাহ বন্ধ করা নিষেধ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতিরিক্ত পানি থেকে কাউকে বাধা দেয়া যাবে না। কেননা এতে ঘাস (বাঁচিয়ে রাখাকেই) বাধা দেয়া হবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৭৮)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তিন ধরনের লোকের সাথে মহান আল্লাহ কথা বলবেন না- (১) যে ব্যক্তি তার কাছে রক্ষিত অতিরিক্ত পানি থেকে পথিক ব্যক্তিকে বাঁধা দেয়; (২) যে ব্যক্তি ‘আসরের পর কোন জিনিসের মূল্য নিয়ে মিথ্যা শপথ করে এবং (৩) যে ব্যক্তি ইমামের কাছে বাইআত গ্রহণ করে। এরপর ইমাম তাকে পার্থিব স্বার্থ দান করলে সে তার আনুগত্য করে, আর স্বার্থ হাসিল না হলে আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২০৭)। আল-আ‘মাশ (রহঃ) হতে একই সানাদ অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। এই আরো রয়েছেঃ (আল্লাহ) তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে নির্মম শাস্তি। আর মালের উপর কসম খাওয়ার অর্থ হলো এরূপ বলাঃ আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, এ মাল এতো এতো দামে কিনতে চেয়েছিল। এ কথা শুনে বর্তমান ক্রেতা বিশ্বাস করে তার নির্ধারিত মূল্যে তা কিনে নিলো। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। বুহাইসাহ নাম্নী নামক জনৈক মহিলা হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অনুমতি চেয়ে তাঁর শরীরের জামার ভেতর মুখ ঢুকিয়ে তাকে চুমু দিলেন এবং জড়িয়ে ধরলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর নাবী! কোন জিনিস থেকে বাধা দেয়া হালাল নয়? তিনি বললেনঃ ‘পানি’। তিনি আবার বললেন, হে আল্লাহর নাবী! কোন জিনিস থেকে বাধা দেয়া হালাল নয়? তিনি বললেনঃ ‘লবণ’। তিনি আবার বললেন, হে আল্লাহর নাবী! কোন জিনিস দেয়া থেকে নিষেধ করা যায় না? তিনি বললেনঃ তুমি যত ভালো কাজ করবে তোমার ততোই মঙ্গল হবে। দুর্বলঃ এটি যাকাত অধ্যায়ের শেষ দিকে গত হয়েছে। আবূ খিদাশ (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক মুহাজির সাহাবীর কাছ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তিনবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ মুসলিমরা তিনটি জিনিসে সমানভাবে অংশীদারঃ পানি, ঘাস ও আগুন। সহীহঃ ইরওয়া (৬/৭)
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বিক্রি করা
ইয়াস ইবনু ‘আব্দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৭৬)।
বিড়াল বিক্রয় মূল্য সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষিদ্ধ করেছেন। সহীহঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের বিক্রয় মূল্য (গ্রহণ করতে) নিষিদ্ধ করেছেন।
কুকুর বিক্রয় মূল্য সম্পর্কে
আবূ মাস‘ঊদ আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর বিক্রয় মূল্য, ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্জিত আয় এবং গণকের ভেট নিষিদ্ধ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৫৯)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য নিষিদ্ধ করেছেন। কেউ কুকুরের মূল্য চাইতে এলে মাটি দিয়ে তার হাতের মুষ্টি ভরে দিবে। আওন ইবনু আবূ জুহাইফাহ (রহঃ) তার পিতা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুকুরের বিক্রয় মূল্য, গণকের ভেট এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে আয় ভক্ষণ করা হালাল নয়। সহীহঃ নাসায়ী (৪২৯৩)।
মদ ও মৃত জীবের মূল্য
. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ মদ ও মদের মূল্য হারাম করেছেন, মৃত জন্তু ও এর মূল্য হারাম করেছেন এবং শূকর ও এর মূল্য হারাম করেছেন। সহীহঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি মাক্কাহ বিজয়ের বছর সেখানে অবস্থানকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত জন্তুর চর্বি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া বস্তুতে ব্যবহার করা হয় এবং লোকজন এর দ্বারা বাতি জ্বালায়। এর ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? তিনি বলেনঃ না, এগুলো হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস করুন! মহান আল্লাহ যখন তাদের জন্য চর্বি হারাম করলেন, তখন তারা চর্বি গলিয়ে বিক্রি করলো এবং এর মূল্য ভক্ষণ করলো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৬৭)। ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, ‘আত্বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস আমাকে লিখে পাঠালেন। তিনি তাতে‘ এটি হারাম’ কথাটুকু উল্লেখ করেননি। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কা‘বার রুকনের নিকট বসে থাকতে দেখি। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং তিনবার বললেনঃ মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের অভিশপ্ত করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছিলেন। কিন্ত তারা তা বিক্রি করে এর মূল্য ভক্ষণ করতো। অথচ আল্লাহ যখন কোন জাতির জন্য কোন বস্তু খাওয়া হারাম করেন তখন তার মূল্যও হারাম করেন। খালিদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসে ‘‘আমি তাঁকে দেখেছি’’ কথাটি উল্লেখ নাই। তিনি বর্ণনা করেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস করুন। সহীহঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ বিক্রি করলো, সে যেন (খাওয়ার জন্য) শূকরের গোশত প্রস্তুত করলো। দুর্বলঃ যঈফাহ (৪৫৬৬), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪৯৯)। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সূরাহ বাক্বারাহ্’র শেষের দিকের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এসে আমাদেরকে তা পড়ে শুনালেন। তিনি বললেনঃ মদের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে। সহীহঃ আহাদীসুল বুয়ূ‘। আ‘মাশ (রহঃ) তার নিজস্ব সানাদ একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, (সূরাহ বাকারাহ্’র) শেষের আয়াতগুলো সূদ (হারাম) সম্পর্কিত। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
হস্তগত করার আগে খাদ্যশস্য বিক্রয়
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ খাদ্যশস্য ক্রয় করলে তা হস্তগত না করা পর্যন্ত পুনরায় বিক্রি করবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২২৬)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে খাদ্যশস্য কিনতাম। আমাদের নিকট লোক পাঠানো হতো, যিনি আমাদেরকে আদেশ করতেনঃ পুনরায় বিক্রি করার পূর্বে যে স্থানে আমরা তা কিনেছি সেখান থেকে তা অন্যত্র সরিয়ে নিবে। সহীহঃ নাসায়ী (৪৬০৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বাজারের একটি উঁচু জায়গায় স্তূপ করে খাদাশস্য কিনতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রয়কৃত বস্তু অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেন। সহীহঃ নাসায়ী (৪৬০৬) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাপে খাদ্যশস্য কেনার পর তা হস্তগত করার পূর্বে পুনরায় বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ নাসায়ী (৪৬০৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ খাদ্যবস্তু কিনে তা পরিমাপ করার পূর্বে যেন পুনরায় বিক্রি না করে। বর্ণনাকারী আবূ বাক্রের বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ তিনি (তাঊসের পিতা) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তা কেন? তিনি বলেন, তুমি কি দেখছো না! তারা সোনার (দীনারের) বিনিময়ে খাদ্যশস্য বিক্রি করতো, অথচ ঐ খাদ্যশস্য বিক্রেতার দখলেই আছে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২২৭)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন খাদ্যশস্য কিনে তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রি না করে। মুসাদ্দাদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমার মতে প্রত্যেক জিনিসের ক্ষেত্রেই খাদ্যদ্রব্যের অনুরূপ হুকুম। সহীহঃ এর পূ্র্বেরটি দেখুন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, খাদ্যশস্যের স্তুপ ক্রয় করে তা নিজের গন্তব্য স্হানে পৌঁছানোর অগে বিক্রির অপরাধে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে লোকদেরকে মারধোর করা হতো। সহীহঃ নাসায়ী (৪৬০৮)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বাজারে গিয়ে যাইতূন কিনলাম। তা আমার হস্তগত হলে এক ব্যক্তি এসে আমাকে এর একটা ভালো মুনাফা দিতে চাইলো। আমি তাকে যাইতূন প্রদানের ইচ্ছা করলে পেছন থেকে এক ব্যক্তি আমার বাহু ধরলেন। তাকিয়ে দেখি যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ)। তিনি বললেন, যেখান থেকে কিনেছেন সেখানে বিক্রি করবেন না, আপনার স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করুন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবসায়ীদেরকে পণ্যদ্রব্য ক্রয়ের পর নিজের জায়গায় স্থানান্তরিত করার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। হাসানঃ পূ্র্বেরটি দ্বারা।
ক্রয় বিক্রয়ের সময় যে ব্যক্তি বলে, ধোঁকাবাজি করা চলবে না
ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ লোক অভিযোগ করলো যে, সে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় প্রতারিত হয়। তিনি তাকে বললেনঃ যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন বলবে, ‘ধোঁকাবাজি করা চলবে না’। অতঃপর লোকটি যখন ক্রয়-বিক্রয় করতো তখন বলতো, ‘যেন ধোঁকাবাজি না করা হয়’। সহীহঃ নাসায়ী (৪৪৮৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে এক ব্যক্তির জ্ঞান-বুদ্ধি কম থাকায় ক্রয়-বিক্রয়ে ঠকে যেতো। তার পরিবারের লোকেরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে অভিযোগ করলো, হে আল্লাহর নাবী! অমুককে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করে দিন। করণ এ বিষয়ে তার জ্ঞান-বুদ্ধি কম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে এনে ক্রয়-বিক্রয়ে জড়াতে নিষেধ করলেন। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ক্রয়-বিক্রয় থেকে আমি ধৈর্য ধরতে পারবো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি ক্রয়-বিক্রয় ছাড়তে না পারো তাহলে লেনদেন করার সময় বলবে, মূল্য দাও, পন্য নাও, খবরদার! ধোঁকাবাজি করা চলবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৫৪)।
‘উরবান (বায়না) প্রসঙ্গ
আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা হতে তার দাদার সূত্র তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উরবান পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, আল্লাহই অধিক জ্ঞাত, আমার মতে এ ধরনের পদ্ধতি নিম্নরূপঃ কেউ একটি গোলাম কিনলো অথবা পশু ভাড়া করলো, তারপর বললো, আমি তোমাকে এই শর্তে একটি দীনার (বায়না) দিলাম যে, যদি আমি গোলাম ক্রয় না করি অথবা পশু ভাড়া না নেই তাহলে এই দীনার তোমার। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২১৯২), মিশকাত (২৮৬৪), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬০৬০)।
কোন ব্যক্তির এমন বস্তু বিক্রয় করা যা নিজের কাছে নেই
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) একদা তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি আমার নিকট এসে এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার কাছে নেই। আমি কি বাজার থেকে তার জন্য ঐ জিনিস কিনে আনবো? তিনি বলেনঃ তোমার কাছে যা নেই তা বিক্রি করো না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৮৭)। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিক্রয়ের সাথে ঋণের শর্ত যোগ করা, একই লেনদেনে দুই রকম শর্ত নির্ধারণ করা, যিম্মাদারী ছাড়া কোন বস্তু থেকে মুনাফা গ্রহন করা এবং যা তোমার কাছে নেই তা বিক্রি করা জায়িয নয়। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৮৮)।
ক্রয়-বিক্রয়ে শর্তারোপ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আমার উট বিক্রি করি এই শর্তে যে, আমি তাতে আরোহণ করে বাড়ি পৌঁছবো। অতঃপর বর্ণনাকারী অবশিষ্ট ঘটনা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি মনে করছো, আমি তোমার উটটি কিনতে বিলম্ব করছি, এজন্য যে, তোমার কাছ থেকে তা (কম দামে) নিবো। যাও! তুমি তোমার উট এবং সাথে এর মূল্যও নিয়ে যাও। তুমি দুটোই নাও। সহীহঃ আহাদীসূল বুয়ূ‘।
গোলাম ক্রয়-বিক্রয়
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিক্রয়ের পর দাস অথবা দাসীর মধ্যে দোষ পরিলক্ষিত হলে বিক্রেতা তিন দিন পর্যন্ত দায়ী থাকবে। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২২৪৪, ২২৪৫), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৩৮৩২)। ক্বাতাদাহ (রহঃ) তার সানাদ একই অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বর্ণনা করেন, ক্রেতা তিন দিনের মধ্যে কোন দোষ দেখতে পেলে বিনা প্রমাণে ফেরত দিতে পারবে। আর তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ত্রুটি দেখতে পেলে ক্রেতাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তার ক্রয়ের সময়ই এই দোষ বিদ্যমান ছিল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটা ক্বাতাদাহ্র নিজস্ব ব্যাখ্যা। দুর্বলঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। আর ক্বাতাদাহ পর্যন্ত এর সানাদ সহীহ।
কৃতদাস ক্রয় করে কাজে নিয়োগের পর তার মধ্যে ত্রুটি পাওয়া গেলে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফা ঝুঁকির অনুগামী। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (২২৪২)। মাখলাদ ইবনু কুফাক আল-গিফারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং কতিপয় লোকের যৌথ মালিকানায় একটি গোলাম ছিলো। কতিপয় অংশীদারের অনুপস্থিতিতে আমি তাকে কাজে নিয়োগ করলে সে আমার জন্য কিছু উপার্জন করে আনলো। আমার এক অংশীদার এই আয়ে তার অংশ দাবি করে কোন এক বিচারকের কাছে মোকদ্দমা দায়ের করলো। বিচারক আমাকে অংশীদারের অংশ ফেরত দিতে নির্দেশ দিলেন। আমি ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইরের কাছে এসে বিষয়টি জানালাম। ‘উরওয়াহ বিচারকের কাছে এসে তাকে ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফায়সালা শুনালেনঃ মুনাফা ঝুঁকির সাথে সম্পৃক্ত। হাসান: এর পূর্বেরটি দেখুন। আয়িশাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি একটি ক্রীতদাস কিনলো। আল্লাহ যতদিন চাইলেন গোলামটি তার কাছেই থাকলো। অতঃপর সে তার মধ্যে দোষ দেখতে পেলো। তখন লোকটি বিক্রেতার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে অভিযোগ পেশ করলো। তিনি গোলামটি বিক্রেতাকে ফেরত দিলেন। বিক্রেতা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার গোলাম এতো দিনে যা উপার্জন করেছে (তার কি হবে)? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুনাফা ঝুঁকির সাথে সম্পৃক্ত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই হাদীসের সানাদ তেমন নির্ভরযোগ্য নয়। হাসানঃ এর পূর্বেরটি দ্বারা।
পণ্যে বিদ্যমান থাকাবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে মতভেদ হলে
‘‘আবদুর রহমান ইবনু ক্বায়িস ইবনু মুহাম্মাদ ইবনুল আশ‘আস (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র তিনি (ক্বায়িস) বলেন, আশ‘আস (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) এর কাছ থেকে বিশ হাজার দিরহামে কয়েকটি গোলাম কিনলেন। এগুলো তিনি পেয়েছিলেন গনীমাতের এক-পঞ্চমাংশ থেকে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তার কাছে দাম চেয়ে পাঠালেন। তিনি বললেন, আমি দশ হাজার দিরহামে কিনেছি। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তুমি এমন কোন ব্যক্তিকে বেছে নাও, যিনি আমার ও তোমার মাঝে মধ্যস্থতা করবেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে মতভেদ হলে যদি এ ব্যাপারে কারো কাছে কোন প্রমাণ না থাকে তাহলে পণ্যের মালিকের কথা গ্রহণযোগ্য হবে কিংবা উভয়েই চুক্তি বাতিল করবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৮৬) আল-ক্বাসিম ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আশ‘আস ইবনু ক্বায়িস (রাঃ) এর কাছে কিছু গোলাম বিক্রি করেন। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে কিছু কম-বেশী আছে। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
শুফ‘আহ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক শরীকানা সম্পদে শুফ‘আর অধিকার আছে। চাই তা বাড়ি হোক কিংবা বাগান। অন্যান্য শরীকদের না জানিয়ে তা বিক্রি করা উচিত নয়। কেউ যদি শরীককে না জানিয়ে বিক্রি করে তাহলে অপর শরীকদার শুফ‘আর অধিকারী হবে। অবশ্য সে বিক্রিতে সম্মতি দিলে ভিন্ন কথা। সহীহঃ নাসায়ী (৪৬৪৬)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সম্পত্তিতে শুফ‘আর ব্যবস্থা রেখেছেন যা এখনও বণ্টন করা হয়নি। সীমানা চিহ্নিত হয়ে গেলে এবং পৃথক রাস্তা করা হয় আর শুফ‘আর অধিকার থাকে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৯৯)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন জমীন ভাগ করা হয়ে যায় এবং সীমানা নির্ধারণ হয়ে যায় তখন আর শুফ‘আর অধিকার থাকে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৯৭)। আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ প্রতিবেশী তার নৈকট্যের কারণে শুফ‘আর অধিক হকদার। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৯৮) মাসুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘরের নিকটবর্তী প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর ঘর ও জমি কেনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। সহীহঃ তিরমিযী (১৩৯৩)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর শুফ‘আর বেশি হক্বদার। সে অনুপস্থিত থাকলে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে যদি তাদের উভয়ের যাতায়াতের পথ এক হয়। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৯৪)
দেউলিয়া সাব্যস্ত ব্যক্তির নিকট নিজের মাল অক্ষত অবস্থায় পেলে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি কেউ দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে যে ব্যক্তি তার কাছে নিজের মাল অক্ষত অবস্থায় পাবে সে-ই ঐ মালের অধিক হক্বদার হবে অন্যান্য পাওনাদারদের তুলনায়। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৫৮)। আবূ বাকর ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনুল হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মাল বিক্রি করার পর যদি ক্রেতা দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বিক্রেতা তার কাছ থেকে এর মূল্য আদায় করতে না পারে তাহলে সে তার বিক্রিত পণ্য ক্রেতার নিকট অক্ষত অবস্থায় পেলে সে-ই হবে ঐ মালের অধিক হক্বদার। ক্রেতা মারা গেলে বিক্রেতা অন্যান্য পাওনাদারের মতই একজন পাওনাদার গণ্য হবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৫৯)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ক্রেতা পণ্যের মূল্য কিছু পরিশোধ করে থাকে তাহলে বিক্রেতা তার অবশিষ্ট পাওনার ক্ষেত্রে অন্যান্য পাওনাদারের মতই একজন পাওনাদার গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে, তার কাছে বিক্রেতার মাল অক্ষত রয়েছে। তাহলে বিক্রেতা তার কাছ থেকে কিছুটা মূল্য পেয়ে থাকুক বা না থাকুক, উভয় অবস্থায় সে অন্যান্য পাওনাদারের মতই গণ্য হবে। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। আবূ বকর ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনুল ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অতঃপর মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। এতে আরো আছেঃ সে মূল্যের কিছু অংশ পরিশোধ করে থাকলে বিক্রেতা অপরাপর পাওনাদারের মতই একজন পাওনাদার গণ্য হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মালিক বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ। সহীহঃ ইরওয়া (৫/২৬৯-২৭০)। উমার ইবনু খালদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা আমাদের এক দেউলিয়া সাথীর মোকদ্দমা নিয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদের অবশ্যই রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ ফায়সালা প্রদান করবো। তা হলোঃ কেউ দেউলিয়া হয়ে গেলে অথবা মারা গেলে পাওনাদার যদি তার মাল ঐ ব্যক্তির কাছে অক্ষত অবস্থায় পায় তাহলে মালিকই ঐ মালের অধিক হক্বদার। দুর্বলঃ ইবনু মাজাহ (২৩৬০), ইরওয়া (১৪৪২), মিশকাত (২৯১৪), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪৬৩)।
যে ব্যক্তি অক্ষম পশুকে সবল করে
আবান (রহঃ) আমির আশ-শা‘বী (রহঃ) তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে পশুকে মালিক খাওয়াতে অক্ষম হয়ে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিলো। এখন যে ব্যক্তি পশুটি কুড়িয়ে নিয়ে সেবা-যত্ন করে সুস্থ-সবল করে তুলবে সেই হবে পশুটির মালিক। আবানের হাদীসে রয়েছেঃ ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) ‘আমির আশ-শা‘বী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ হাদীস কার থেকে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একাধিক সাহাবীর কাছ থেকে শুনেছি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি হাম্মাদ বর্ণিত হাদীস এবং এটি অধিক স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ। হাসানঃ ইরওয়া (১৫৬২)। আশ-শা‘বী (রহঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার কোন পশুকে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পরিত্যাগ করলে যে ব্যক্তি এটাকে তুলে নিয়ে সেবা-যত্নের মাধ্যমে সুস্থ-সবল করে তুলবে সে-ই হবে এর মালিক। হাসানঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
বন্ধক সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দুগ্ধবতী পশু বন্ধক রাখা হলে তাকে খাদ্য খাওয়ানোর বিনিময়ে তার দুধ দোহন করা যাবে। আরোহণের পশু বন্ধক রাখা হলে তাকে ঘাস খাওয়ানোর বিনিময়ে তাতে আরোহণ করা যাবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমাদের মতে হাদীসটি সহীহ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৪৪০)। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা নবী নন এবং শহীদও নয়। ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদার কারণে নাবীগণ ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অবহিত করুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ঐসব লোক যারা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালবাসে, অথচ তারা পরস্পর আত্মীয়ও নয় এবং পরস্পরকে সম্পদও দেয়নি। আল্লাহর শপথ! তাদের মুখমণ্ডল যেন নূর এবং তারা নূরের আসনে উপবেশন করবে। তারা ভীত হবে না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়বে না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। তিনি এ আয়াত তিলওয়াত করলেনঃ “জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবে না” (সূরাহ ইউনুসঃ ৬২) সহীহঃ তা‘লীকুর রাগীব (৪/৪৭-৪৮)।
পিতা সন্তানের সম্পদ ভোগ করতে পারে
উমারাহ ইবনু উমাইর (রহঃ) তার ফুফুর সূত্র তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার প্রতিপালনে একটি ইয়াতীম রয়েছে। আমি কি তার মাল থেকে খেতে পারি? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির নিজ হাতের উপার্জিত খাদ্য সর্বোত্তম খাদ্য। তার সন্তানও তার উপার্জন বিশেষ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২১৩৭)। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির সন্তান তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত বরং তার সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পদ থেকে ভোগ করতে পারো। হাসান সহীহ। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু আবু সুলায়মানের বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমরা মুখাপেক্ষী হয়ে পড়লে খাবে। এ কথাটুকু প্রত্যাখ্যাত। ‘আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পদও আছে সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেনঃ তুমি এবং তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। তোমাদের সন্তান তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন খাবে।
কেউ নিজের (হারানো) বস্তু অন্যের নিকট অবিকল পেলে
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্য কারো কাছে নিজের মাল অক্ষত অবস্থায় পেয়েছে সে তার অধিক হক্বদার। ক্রেতা তো মালের বিক্রেতাকেই ধরবে। দুর্বলঃ নাসায়ী (৪৬৮১), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৮৭০), মিশকাত (২৯৪৯)।
নিজের আয়ত্তধীন মাল থেকে নিজের প্রাপ্য গ্রহন
আয়িশাহ (রাঃ) একদা মু‘আবিয়াহ (রহঃ) এর মা হিন্দা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, আবূ সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। তিনি আমার ও আমার সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন পরিমাণ খরচ দেন না। আমি তার মাল থেকে খরচের জন্য কিছু নিলে অন্যায় হবে কি? তিনি বললেন, তোমরা ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয় এরূপ পরিমাণ মাল ন্যায়সঙ্গতভাবে নিতে পারো। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২২৯৩)। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা হিন্দা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি যদি তার বিনা অনুমতিতে তার মাল থেকে তার সন্তানদের জন্য খরচ করি তাহলে আমার অন্যায় হবে কি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ করলে অন্যায় হবে না। সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। ইউসুফ ইবনু মাহাক আল-মাক্কি (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তির প্রতিপালনে কিছু ইয়াতীম ছিল। সে তাদের ভরণপোষণের খরচ বহন করতো। আমি এর হিসাব লিখে রাখতাম। একদা ইয়াতিমরা তাকে এক হাজার দিরহামের ভুল হিসাব দিলে সে তাদের তা প্রদান করলো। কিন্তু পরে আমি হিসাব করে ঐ পরিমাণ মাল ইয়াতীমদের মালের মধ্যে পেলাম। আমি বললাম, তারা তোমার কাছ থেকে ভুল হিসাব দিয়ে যে এক হাজার দিরহাম নিয়েছে তা ফেরত নাও। সে বলল, না আমার পিতা আমাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তোমার কাছে কিছু আমানত রেখেছে তাকে তা ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার সাথে খিয়ানাত করেছে তুমি তার সাথে খিয়ানাত করো না। সহীহঃ তিরমিযী (১২৮৭)। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ তোমার কাছে আমানত রাখলে তা তাকে ফেরত দাও। যে ব্যক্তি তোমার সাথে খিয়ানাত করেছে তুমি তার সাথে খিয়ানাত করো না। হাসান সহীহঃ তিরমিযী (১২৮৭)।
হাদিয়া গ্রহণ
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপহার গ্রহণ করতেন এবং তিনি এর পরিবর্তে অন্যকেও (উপহার) দিতেন। সহীহঃ তিরমিযী (২০৩৬)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আজকের দিনের পর থেকে আমি কুরাইশ মুহাজির, আনসার এবং দাওস অথবা সাক্বীফ গোত্রের লোক ছাড়া অন্য কারো উপঢৌকন নিবো না। সহীহঃ তিরমিযী (৪২২৩)।
দান করে তা পুনরায় ফেরত নেয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দান করার পর ফেরত নেয়, তার উদাহরণ হচ্ছেঃ যে ব্যক্তি বমি করে তা পুনরায় ভক্ষণ করে। হাম্মাম (রহঃ) বলেন, ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেছেন, আমরা বমিকে হারাম মনে করি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৮৫) ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তির জন্যই (কাউকে কিছু) দেয়ার বা দান করার পর তা ফেরত নেয়া হালাল নয়। তবে পিতা পুত্রকে কিছু দান করার পর তা ফেরত নিতে পারবে। যে ব্যক্তি দান করার পর তা ফেরত নেয়, সে এমন কুকুরের মত, যে পেট ভরে খাওয়ার পর বমি করে পুনরায় তা খায়। সহিহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৭৭), সংক্ষেপে দেখুন ইরওয়া (৬/৬৩) আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের দান করা বস্তু ফেরত নেয় সে এমন কুকুরের মত, যে বমি করে পুনরায় তা ভক্ষণ করে। দাতা দানকৃত বস্তু ফেরত চাইলে গ্রহীতা খতিয়ে দেখবে এবং জেনে নিবে, সে কি জন্য তার দানকৃত বস্তু ফেরত চাইছে। কারণ জানা গেলে তা ফেরত দিবে। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৭৮) অনুরূপ সক্ষেপে, দেখুন মিশকাতুল মাসাবীহ (৩০২০)
প্রয়োজন পূরণ করে দেয়ার জন্য হাদিয়া গ্রহণ
আবূ উমামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের জন্য কোন বিষয়ে সুপারিশ করার কারণে যদি সে তাকে কিছু উপহার দেয় এবং সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সুদের একটি বড় দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো। হাসানঃ মিশকাত (৩৭৫৭)।
যদি কোন ব্যক্তি নিজ সন্তানদের মধ্যে কাউকে বেশি দেয়
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে অতিরিক্ত কিছু দিলেন। এ হাদীসের অন্যতম বর্ণনাকারী ইসমাঈল ইবনু সালিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি তাকে একটি গোলাম দান করেন। বর্ণনাকারী (নু‘মান) বলেন, আমার মা ‘আমরাহ বিনতু রাওয়াহা (রাঃ) আমার পিতাকে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গিয়ে তাঁকে এ বিষয়ে সাক্ষী রাখুন। তিনি (পিতা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালেন। তিনি বললেন, আমি আমার ছেলে নু‘মানকে কিছু উপহার দিয়েছি। এ ব্যাপারে আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য ‘আমরাহ আমাকে অনুরোধ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, সে ছাড়াও তোমার আরো সন্তান আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি তোমার প্রত্যেক সন্তানকে অনুরূপ দিয়েছো, যেমন নু‘মানকে দিয়েছো? তিনি বললেন, না। কতিপয় মুহাদ্দিসের বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “এটা অন্যায় কাজ”। আর কতিপয় মুহাদ্দিস বলেন, নবী বলেছেনঃ “এতো নীতি বিরোধী কাজ”। সুতরাং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সাক্ষী রাখো। মুগীরাহ (রহঃ) তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন, “তোমার সব সন্তানই সমান সৌভাগ্যবান হোক, এতে কি তুমি খুশি হবে না? তিনি বললেন, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে এর সাক্ষী রাখো”। মুজালিদ তার বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমার উপর তাদের হক্ব রয়েছে যে, তুমি তাদের সাথে সমান ব্যবহার করবে এবং তাদের প্রতি ইনসাফ করবে। যেমন অধিকার রয়েছে তাদের উপর তোমার; তারা সবাই তোমার সাথে সদ্ব্যবহার করুক”। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যুহ্রীর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, কতিপয় বর্ণনাকারী “তোমরা সন্তান” শব্দ বর্ণনা করেছেন। ইবনু খালিদ (রহঃ) বলেন, শা‘বীর বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ “সে ছাড়া তোমার আরো সন্তান আছে কি?”। আবুদ্ দুহা (রহঃ) নু‘মান ইবনু বাশীর সূত্রে হাদীসে বলেন, (সে ব্যতীত তোমার কি আরো সন্তান আছে?” সহীহঃ তবে মুজালিদের অতিরিক্ত সংযোজন ““...... (আরবি)”” অংশটুকু বাদে। গায়াতুল মারাম (২৭৩,২৭৪) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, তার পিতা তাকে একটি গোলাম দান করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নু‘মানকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এটি কার গোলাম? তিনি বললেন, আমার গোলাম, আমার পিতা আমাকে দান করেছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ সে তোমার মতো তোমার অন্য ভাইদেরকেও কি দিয়েছে? নু‘মান বললেন, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এটি ফেরত দাও। সহীহঃ ইরওয়া (৬/৪২) নু‘মান ইবনু বশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের সাথে সমান আচরণ করো; তোমাদের সন্তানদের সাথে ইনসাফ করো। সহীহঃ গায়াতুল মারাম (২৭২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা বাশীর (রাঃ) এর স্ত্রী তাকে বলেন, আপনার গোলামটি আমার ছেলেকে দিয়ে দিন এবং এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখুন।। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বললেন, অমুকের কণ্যা (আমার স্ত্রী) আপনার কাছে আবেদন করেছে, আমি যেন তার ছেলেকে আমার গোলামটি দান করি। সে আমাকে এটাও বলেছে যে, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার আরো ভাই আছে কি? বাশীর বললেন, হাঁ। তিনি বললেনঃ তাকে যেরূপ দান করেছো অন্যদেরও কি সেরূপ দিয়েছো? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ এটা উচিত নয়। আমি সত্য ব্যতীত অন্য কিছুর সাক্ষী হই না। সহীহঃ ইরওয়া (৬/৪২)
স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর দান
আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামী যদি স্ত্রীর সতীত্বের হিফাযাতকারী হয় তাহলে কোন স্ত্রীর পক্ষে (স্বামীর বিনা অনুমতিতে) তার মাল থেকে ব্যয় করা জায়িয নয়। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৮৮) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামীর বিনা অনুমতিতে কোন স্ত্রীর পক্ষে (তার মাল থেকে) কিছু দান করা জায়িয নয়। হাসান সহীহ: এর পূর্বেরটি দেখুন।
জীবনস্বত্ব
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সারা জীবনের জন্য কাউকে কিছু দান করা জায়িয। সামুরাহ (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনূরূপ বর্ণিত। সহীহ পূর্বেরটি দ্বারা। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ সারা জীবনের জন্য প্রদত্ত বস্তু তারই প্রাপ্য যাকে তা দেয়া হয়। সহীহ: নাসায়ী (৩৭৫০) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যাকে সারা জীবনের জন্য কিছু দেয়া হয় তার মালিক সে-ই। তার অবর্তমানে যারা তার উত্তরাধিকারী হয় তারা এর উত্তরাধিকারী হবে। সহীহ: নাসায়ী (৩৭৪০-৩৭৪১)। জাবির (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র উপরের হাদীসের অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
জীবনস্বত্ব দেয়ার সময় যদি কেউ বলে, তার ওয়ারিসগণও পাবে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সারা জীবনের জন্য কাউকে কিছু দান করে বলে, তাকে এবং তার উত্তরাধিকারীকে জীবনস্বত্ব দেয়া হলো। তাহলে এই জীবনস্বত্ব মালিক সে এবং তার ওয়ারিসরা হবে, যা কখনো গ্রহীতার কাছ থেকে দাতার নিকট ফিরে আসবে না। কারণ সে এমনভাবে দান করেছে, যাতে উত্তরাধিকারস্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সহীহ: নাসায়ী (৩৭৪৫)। ইবনু শিহাব ইবনু শিহাব তার সানাদ পরম্পরায় উপরের হাদীসে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ জীবনস্বত্ব দানের অনুমতি দিয়েছেন তা হলো, দাতা এরূপ বলবেঃ এটা তোমার জন্য এবং তোমার ওয়ারিসদের জন্য। কিন্তু সে যদি তা না বলে এটা বলেঃ “যতদিন তুমি বেঁচে থাকবে ততদিন এটা তোমার জন্য”, এ অবস্থায় (গ্রহীতার মৃত্যুর পর) ঐ দান দাতার নিকট ফেরত আসবে। সহীহ : ইরওয়া (১৬১২) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা পুনরায় ফেরত পাবার আশায় এরূপ (বলে) দান করবে না যে, যদি আমি আগে মরে যাই তবে এটা তোমার; আর যদি তুমি আগে মরে যাও তবে এটা আমার। অথবা যতদিন তুমি বেঁচে থাকবে এটা তোমার। যাকে রুক্ববা অথবা জীবনস্বত্ব দান করা হয় সেটা তার উত্তরাধিকারীদের জন্য হয়ে যায়। সহীহ: নাসায়ী (৩৭৩১)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক আনসারী মহিলাকে তার পুত্র কর্তৃক দান করা একটি খেজুর বাগান সম্পর্কে ফায়সালা দিয়েছিলেন। অতঃপর মহিলাটি মারা গেলে তার ছেলে বললো, আমি তাকে তার জীবিত থাকাকালীন সময়ের জন্যই দান করেছিলাম। ছেলেটির আরো কয়েকটি ভাই ছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জীবিত ও মৃত্যু উভয় অবস্থায়ই বাগানটি তার হয়ে গেছে। ছেলেটি বললো, বাগানটি আমি তাকে সদাক্বাহ স্বরূপ দিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ তাহলে তো এটা তোমার থেকে দূরে সরে গেছে।
রুকবা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে জীবনস্বত্ব দেয়া হয় সেটা তারই হয়ে যায়। রুকবা যাকে দেয়া সে-ই হয় এর স্বত্বাধিকারী। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২৩৮৩)। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ কাউকে জীবনস্বত্বরূপে কিছু দান করে তাহলে যাকে তা দান করা হয়েছে সেই হবে জীবনে মরণে এর স্বত্বাধিকারী। তোমরা রুক্ববা করো না। কেউ রুক্ববা করলে তা গ্রহীতার মালিকানায় চলে যায়। মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, জীবনস্বত্ব হলোঃ কোনো ব্যক্তি কাউকে বললো, যতদিন তুমি বেঁচে থাকবে এটা তোমার। দাতা এরূপ বললে এটা গ্রহীতার হয়ে যাবে এবং তার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিসরা এর স্বত্বাধিকারী হবে। আর রুক্ববা হলোঃ কোন ব্যক্তির এরূপ বলা, যদি আমি আগে মারা যাই তবে এটা তোমার, আর যদি তুমি আগে মারা যাও তবে এটা আমার।
ধারকৃত বস্তু নষ্ট হলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া
সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হাত দিয়ে গৃহীত জিনিস (ধার) গ্রহণকারী তা ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তার যামিন থাকবে। বর্ণনাকারী হাসান (রহঃ) পরবর্তীকালে এ হাদীসটি ভুলে যান। অতঃপর বলেন, ধার গ্রহীতা আমানতদার। সুতরাং তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। দুর্বল: ইবনু মাজাহ (২৪০০), ইরওয়া (১৫১৬), যঈফ তিরমিযী (২১৭/১২৮৯), যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৩৭৩৭), মিশকাত (২৯৫০)। সাফওয়ান ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) হুনাইনের যুদ্ধের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার লৌহবর্মসমূহ ধার হিসেবে গ্রহণ করলে সাফওয়ান বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি জোরপূর্বক নিলেন? তিনি বললেনঃ না, বরং ধার হিসেবে, এর কোন ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। সহীহ: সহীহাহ (৬৩১) আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান এর পরিবারের কিছু ব্যক্তি সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে সাফওয়ান! তোমার নিকট যুদ্ধাস্ত্র আছে কি? সে বললো, ধার চাচ্ছেন না জোরপূর্বক নিবেন? তিনি বললেনঃ না, বরং ধার হিসেবে। সাফওয়ান তাঁকে তিরিশ থেকে চল্লিশটি লৌহবর্ম ধার দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনাইনের যুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করলেন। মুশরিকরা পরাজিত হলে সাফওয়ানের লৌহবর্মগুলো একত্র করে দেখা গেলো, কয়েকটি বর্ম হারিয়ে গেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফওয়ানকে বললেনঃ আমরা তোমার কয়েকটি বর্ম হারিয়ে ফেলেছি। আমরা তোমাকে এর ক্ষতিপূরণ দিবো কি? সে বললো, না, হে আল্লাহর রাসূল! কারণ তখন আমার মনের অবস্থা যেমন ছিলো আজ তেমন নেই। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তিনি ইসলাম কবুলের আগে এগুলো ধার দিয়েছিলেন, পরে ইসলাম কবুল করেন। সহীহ: সহীহাহ (৬৩১)। সাফওয়ানের পরিবারের লোকদের সূত্র তারা বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধার হিসেবে ... অতঃপর উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ প্রত্যেক হক্বদারকে তার হক্ব প্রদান করেছেন। কাজেই উত্তরাধিকারীদের জন্য কোন ওয়াসিয়াত নেই। স্বামীর বিনা অনুমতিতে কোন স্ত্রী তার ঘরের কিছু খরচ করবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বলেন: এটা তো আমাদের সর্বোত্তম সম্পদ। অতঃপর তিনি বললেনঃ ধারকৃত বস্তু ফেরত দিতে হবে; দুগ্ধবতী পশুর দুধ পান শেষ হলে তা ফেরত দিতে হবে; ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং জামিনদার দায়বদ্ধ থাকবে। সহীহ: ইবনু মাজাহ (২৩৯৮) সাফওয়ান ইবনু ইয়া‘লা (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ যখন আমার বার্তাবাহকরা তোমার নিকট আসবে, তাদেরকে তিরিশটি লৌহবর্ম ও তিরিশটি উট প্রদান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি ক্ষতিপূরণ শর্তে ধার দেয়া নাকি ফেরত দেয়ার শর্তে ধার? তিনি বলেনঃ বরং ফেরত দেয়ার শর্তে। সহীহ: সহীহাহ (৬৩০)
কারো কোন জিনিস নষ্ট করলে তার অনুরূপ ক্ষতিপূরণ দিবে
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় উম্মাহাতুল মু’মিনীন রাসূলের জনৈক স্ত্রী তার খাদেমকে দিয়ে এক পেয়ালা খাবার পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার ঘরে ছিলেন] সেই স্ত্রী (রাগান্বিত হয়ে) পেয়ালাটি হাতের দ্বারা আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন। ইবনুল মুসান্না বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাঙ্গা টুকরা দুটো উঠিয়ে নিয়ে একটিকে অপরটির সাথে জোড়া দিলেন এবং পড়ে যাওয়া খাবারগুলো উঠাতে লাগলেন এবং বললেনঃ তোমাদের মায়ের আত্মমর্যাদাবোধ জেগেছে (রাগ হয়েছে)। ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমরা এগুলা খাও। সুতরাং সবাই তা আহার করলো। এমন সময় স্ত্রী তার ঘর থেকে একটি পেয়ালা আনলেন। মুসাদ্দাদ বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা খাও। তাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি খাদেমসহ পেয়ালাটি আটকিয়ে রাখলেন। অতঃপর অক্ষত পেয়ালাটি তিনি খাদেমের হাতে তুলে দিলেন আর ভাঙ্গা পেয়ালাটি তাঁর ঘরে রেখে দিলেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৩৪)। জাসরাহ বিনতু দাজাজাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, সাফিয়্যাহ্র মতো সুস্বাদু খাবার রান্না করতে কাউকে আমি দেখিনি। তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্য খাবার তৈরি করে পাঠালেন। এতে রাগান্বিত হয়ে আমি খাবারের পাত্রটি ভেঙ্গে ফেলি। অতঃপর আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কৃতকর্মের কাফফারাহ কি? তিনি বলেনঃ অনুরূপ একটি পাত্র ও খাবারের বিনিময়ে অনুরূপ খাবার। দুর্বলঃ নাসায়ী (৩৯৫৭)।
যদি গবাদি পশু কারো ফসল নষ্ট করে দেয়
হারাম ইবনু মুহ্যাইয়্যাসা (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র একদা আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) এর উস্ট্রী জনৈক ব্যক্তির বাগানে ঢুকে এর ফসল নষ্ট করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায়সালা দিলেনঃ দিনের বেলায় বাগানের মালিক বাগানের হিফাযাত করবে এবং রাতের বেলায় পশুর মালিক পশুর হিফাযাত করবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৩২)। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, তার একটি মোটাতাজা উস্ট্রী ছিলো। যা একটি বাগানে প্রবেশ করে এর ক্ষতিসাধন করে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিলেনঃ বাগানের মালিক দিনের বেলা বাগানের হিফাযাত করবে। আর পশুর মালিক রাতের বেলা পশুর হিফাযাত করবে। সুতরাং রাতের বেলা পশু কোন ক্ষতিসাধন করলে তার ক্ষতিপূরণ দিবে পশুর মালিক। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৩২)।