27. পানীয় দ্রব্য প্রসঙ্গে

【1】

মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা

‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মদ হারাম হওয়ার বিধান যেদিন অবতীর্ণ হলো তখন তা পাঁচটি জিনিস থেকে তৈরি করা হতোঃ আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম ও বার্লি। মদ সেই পানীয় যা মানুষকে জ্ঞানশূন্য করে দেয়। তিনটি বিষয় সম্পর্কে আমি আশা করেছিলাম, তা সুস্পষ্টভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা না করা পর্যন্ত যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের হতে বিদায় না নিতেন! সেগুলো হলো, দাদার মীরাস, কালালার ব্যাখ্যা ও সুদের কিছু বিষয়। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, মদ পান হারাম হওয়া সম্পর্কিত আদেশ তখনও অবতীর্ণ হয়নি। আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য মদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিন। অতঃপর সূরাহ আল-বাক্বারাহর (২১৯ নং) আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “(হে রাসূল)! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। আপনি বলুন, উভয়ের মধ্যে বড় বড় পাপের উপাদান আছে, যদিও এতে লোকদের জন্য কিছু উপকারিতাও আছে। কিন্তু উভয় কাজের পাপ ও অকল্যাণের পরিমাণ উপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি।” অতঃপর ‘উমার (রাঃ)-কে ডাকা হলো এবং তাকে এ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! মদের ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্টভাবে বলে দিন। অতঃপর সূরাহ আন-নিসার (৪২ নং) আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মাতাল অবস্থায় সলাতের কাছেও যাবে না; সলাত তখন পড়বে যখন তোমরা বুঝতে পারো তোমরা কি পড়ছো।” এরপর হতে যখন সলাতের জামা‘আত প্রস্তুত হতো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘোষক ঘোষণা করতেন, সাবধান! মাতাল অবস্থায় সলাতের কাছেও আসবে না। ‘উমার (রাঃ)-কে ডেকে এনে এ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি আবার দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! মদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলে দিন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, আস্তানা ও পাশা এসবই নাপাক, শয়তানী কাজ। তোমরা এসব থেকে দূরে থাকো......”(সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৯০-৯১)। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমরা এসব কাজ বর্জন করলাম। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) একদা আনসার গোত্রের এক লোক তাকে ও ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-কে দাওয়াত করে উভয়কে মদ পান করালেন তা হারাম হওয়ার পূর্বে। অতঃপর মাগরিবের সলাতে ‘আলী (রাঃ) তাদের ইমামতি করলেন। তিনি সূরাহ “ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন” পাঠ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন মাতাল অবস্থায় থাকো তখন সলাতের কাছেও যেও না। সলাত তখনই পড়বে, যখন তোমরা কি বলছো তা সঠিকরূপে বুঝতে পারো” (সূরাহ আন-নিসাঃ ৪৩)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন মাতাল অবস্থায় থাকো তখন সলাতের কাছেও যেও না...” এবং “লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলুন, এর মধ্যে বড় বড় পাপের উপাদান আছে; যদিও এর মধ্যে লোকদের জন্য কিছুটা উপকারিতাও রয়েছে...” এ আয়াত দু’টির হুকুম “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, আস্তানা...” দ্বারা রহিত করা হয়েছে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মদ হারাম ঘোষিত হয় তখন আমি আবূ ত্বালহার ঘরে মদ পরিবেশনকারী ছিলাম। আমাদের মদ ছিল ‘ফাদীখ’। এ সময় এক লোক এসে আমাদেরকে বললো, নিশ্চয়ই মদ হারাম করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘোষণাকারীও মদ হারাম হওয়ার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা আওয়াজ শুনে বললাম, এ লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘোষক।

【2】

মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর নিংড়ানো

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক ও শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয়- এদের সকলকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন।

【3】

মদের সিরকা সম্পর্কে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আবূ ত্বালহা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কতিপয় কয়েকটি ইয়াতীম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে মদ পেয়েছিল। তিনি বললেনঃ তা ঢেলে ফেলে দাও। আবূ ত্বালহা (রাঃ) বললেন, আমি কি একে সিরকায় রূপান্তরিত করতে পারবো না? তিনি বললেনঃ না।

【4】

যেসব উপাদান দিয়ে মদ তৈরি হয়

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আঙ্গুর হতে মদ তৈরি হয়; খেজুর হতে মদ তৈরি হয়; মধু হতে মদ তৈরি হয়; গম হতে মদ তৈরি হয় এবং বার্লি হতে মদ তৈরি হয়। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আঙ্গুরের রস, কিশমিশ, খেজুর, গম, বার্লি এবং এক প্রকার বীজ দ্বারা মদ তৈরি হয়। নেশা উদ্রেককারী সব ধরনের বস্তুর ব্যবহার হতে আমি তোমাদের নিষেধ করছি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দুই প্রকার গাছ থেকে মদ তৈরি হয়। খেজুর গাছ ও আঙ্গুর গাছ।

【5】

নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি জিনিস হারাম

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি বস্তু মদের অন্তর্ভুক্ত এবং নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি জিনিস হারাম। যে ব্যক্তি সর্বদা মদপান করে এবং এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, আখিরাতে তাকে মদ পান করা হতে বঞ্চিত রাখা হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি বস্তু মদের অন্তর্ভুক্ত। আর নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তু হারাম। যে ব্যক্তি একবার নেশা উদ্রেককারী জিনিস পান করলো সে তার চল্লিশ দিনের সলাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো। সে যদি তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করতে পারেন। সে যদি চতুর্থবার তা পান করে তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের ঘা হতে নির্গত পুঁজ খাওয়াবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘তীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেনঃ জাহান্নামীদের পুঁজ। যে ব্যক্তি কোন বালককে যার হালাল-হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান হয়নি, এটা পান করাবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই জাহান্নামীদের পুঁজ-রক্ত পান করাবেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে জিনিসের অধিক পরিমাণ পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় তার সামান্য পরিমাণও হারাম। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মধুর তৈরি শরবত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ নেশা সৃষ্টিকারী যে কোন পানীয় হারাম। অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ মধুর তৈরি শরবত। বর্ণনাকারী বলেন, ইয়ামানের অধিবাসীরা এই শরবত পান করতো। দায়লাম আল-হিম্‌যারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করলাম, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা শীতপ্রধান এলাকায় বসবাস করি। আমাদেরকে সেখানে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা গম হতে তৈরি মদ পান করে ক্লান্তি দূর করি ও শীত প্রতিরোধ করি। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তাতে কি নেশার সৃষ্টি হয়? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ তবে তা বর্জন করো। আমি বললাম, কিন্তু লোকেরা তা বর্জন করবে না। তিনি বললেন, যদি তারা এটা বর্জন না করে তাহলে তোমরা তাদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করো। আবূ মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মধুর তৈরি শরবত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এটাকে ‘বেত্‌‘উ’ বলা হয়। আমি বার্লি ও এক ধরনের বীজের তৈরি শরবত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এটা ‘মিযর’। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমার গোত্রের লোকদের জানিয়ে দাও, নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ পান, জুয়া খেলা, কুবাহ ও গুবায়রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নেশা সৃষ্টিকারী সর্ব ধরনের বস্তু এবং অবসন্নকারী বস্তুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। [৩৬৮৬] দুর্বলঃ যঈফাহ (৪৭৩২), মিশকাত (৩৬৫০)। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ নেশা উদ্রেককারী যে কোন বস্তুই হারাম। যে বস্তুর এক ফারাক পরিমাণ পান করলে নেশার উদ্রেক হয় তার এক অঞ্জলি পরিমাণও হারাম।

【6】

দাযী (বীজ) সম্পর্কে

মালিক ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম (রহঃ) আমাদের নিকট আসলে আমরা ‘তিলাআ’ সম্পর্কে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আবূ মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক মদ পান করবে এবং তারা একে ভিন্ন নামে অভিহিত করবে। সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) একদা তাকে দাযী (দুষ্কৃতকারীদের শরাব) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক অবশ্যই মদ পান করবে এবং তারা এর ভিন্নতর নামকরণ করবে।

【7】

মদের পেয়ালা সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু ‘উমার (রাঃ)–এর সূত্র তারা উভয়ে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন দুব্বা, হানতাম, মুযাফ্ফাত ও নাকীর পাত্রগুলো ব্যবহার করতে। সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)–কে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসে সংরক্ষিত নাবীয হারাম ঘোষণা করেছেন। আমি তার এ কথায়ঃ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসে সংরক্ষিত নাবীয হারাম ঘোষণা করেছেন”, ভীত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আপনি কি শুনেছেন ইবনু ‘উমার (রাঃ) কি বলেছেন? তিনি বললেন, কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসে সংরক্ষিত নাবীয হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বললেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ঠিকই বলেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসে সংরক্ষিত নাবীয হারাম ঘোষণা করেছেন।” আমি বললাম, ‘জার’ কি? তিনি বলেন, মাটির তৈরী পাত্র। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা রবী‘আহ গোত্রের একটি শাখাগোত্র। আমাদেরও আপনার মাঝখানে কাফির মুদার গোত্রের এ জনপদ বাধা হয়ে আছে। এজন্য হারাম মাসে (মুহাররম, রজব, যিলক্বাদ ও যিলহাজ্জ) ব্যতীত অন্য কোন সময়ে আমরা আপনার নিকট আসতে পারি না। কাজেই আমাদেরকে এমন কিছু আদেশ দিন যা আমরা নিজেরা গ্রহন করবো এবং আমাদের অন্যান্য লোকদেরও সে দিকে আহবান করবো। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয় গ্রহণের আদেশ দিচ্ছি এবং চারটি বিষয়ে নিষেধ করছি। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা– এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি নিজের হাত দিয়ে ইশারা করলেন। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান’ বলে তিনি তাদেরকে এর ব্যাখ্যা করে বললেনঃ এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া এবং গনীমাতের এক-পঞ্চমাংশ জমা দেয়া। আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি লাউয়ের খোল দ্বারা তৈরী পাত্র, মাটির সবুজ পাত্র, তৈলাক্ত পাত্র এবং কালো রং-এর পাত্র ব্যবহার করতে। ইবনু উবাইদের বর্ণনায় মুকাইয়ার শব্দের স্থলে নাকীর শব্দ রয়েছে। মুসাদ্দাদ নাকীর ও মুকাইয়ার শব্দ বর্ণনা করেছেন কিন্তু মুযাফ্‌ফাত শব্দের উল্লেখ করেননি। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের প্রতিনিধিদেরকে বললেনঃ আমি তোমাদের নাকীর মুকাইয়ার, হানতাম, দুব্বা এবং মাথা কাটা কলস ব্যবহার করতে নিষেধ করছি। বরং তোমরা (অন্য) পাত্রে পান করো এবং পাত্রের মুখ উত্তমরূপে বেঁধে রাখো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র আবদুল ক্বায়িস গোত্রের প্রতিনিধিদের ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত। তারা বললো, হে আল্লাহর নাবী! আমরা কিসে করে পান করবো? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের উচিত মুখ বন্ধ করে রাখা চামড়ার মশক ব্যবহার করা। আবুল কামূস যায়িদ ইবনু ‘আলী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে যারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসেছিল তাদেরই একজন আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ‘আওফের ধারণা তার নাম ক্বায়িস ইবনুল নু’মান। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কাঠের পাত্রে, তৈলাক্ত পাত্রে, লাউয়ের খোলের পাত্রে এবং মাটির সবুজ পাত্রে পান করো না। যদি তা (নাবীয) কড়া হয়ে যায় তবে পানি মিশিয়ে এর তেজী ভাব দূর করো। যদি কড়া কমাতে না পারো তবে তা ঢেলে ফেলে দাও। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল ক্বায়িসের প্রতিনিধি দল বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিসে করে পান করবো? তিনি বলেনঃ তোমরা লাউয়ের খোলের পাত্রে, তৈলাক্ত পাত্রে এবং কাঠের পাত্রে পান করবে না। তোমাদের কলসে নাবীয প্রস্তুত করো। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কলসের নাবীযে যদি তেজী ভাব আসে? তিনি বলেনঃ তাতে পানি ঢেলে দাও। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! (পূর্বের অনুরূপ)! তিনি তাদেরকে তৃতীয় বা চতুর্থবারে বললেনঃ তা ঢেলে ফেলে দাও। অতঃপর তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া এবং যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র। তিনি আরো বলেনঃ নেশা উদ্রেককারী সকল জিনিস হারাম। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমি ‘আলী ইবনু বাযীমাকে ‘কুবাহ’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা হলো তবলা বা ঢোল। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লাউয়ের খোলের পাত্র, মাটির সবুজ পাত্র, ও কাঠের পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন এবং জি’আহ নামক নাবীয পান করতেও নিষেধ করেছেন। ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয় হতে বিরত থাকতে বলেছিলাম। এখন আমি সেসব বিষয়ে তোমাদেরকে অনুমতি দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত করো। কেননা তা দর্শনে (মৃত্যুকে) স্মরণ হয়। আমি তোমাদেরকে পানপাত্র সম্পর্কে নিষেধ করেছিলাম যে, তোমরা চামড়ার পাত্রে নাবীয পান করবে। এখন তোমরা যে কোন পাত্রে পান করতে পারো। কিন্তু তোমরা কখনও মাদক দ্রব্য পান করো না। আমি তোমাদের উপর কুরবানীর গোশতের ব্যাপারে তা তিন দিনের পর না খেতে বলেছিলাম। এখন তোমরা তা (দীর্ঘদিন) খেতে পারো এবং তোমাদের সফরে তা কাজে লাগাতে পারো। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বিভিন্ন পাত্র সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন, তখন আনসারগণ বললেন, এছাড়া আমাদের একেবারেই চলেনা। তিনি বলেনঃ তাহলে আপত্তি নেই। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, হানতাম, মুযাফ্‌ফাত, নাকীর ইত্যাদি পাত্রের কথা উল্লেখ করলেন (ব্যবহার করতে বারণ করলেন)। তখন এক বেদুঈন বললো, এছাড়া আমাদের অন্য কোন পাত্র নেই। তিনি বলেনঃ যা হালাল তা পান করো। শারীক (রহঃ) তিনি তার সানাদে বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নেশা উদ্রেককারী বস্তু বর্জন করো। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য মশকে নাবীয ঢালা হতো। মশক না পাওয়া গেলে পাথরের তৈরী পাত্রে তাঁর জন্য নাবীয ঢালা হতো l

【8】

দুই বস্তুর সংমিশ্রণ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ও আঙ্গুরের সমন্বয়ে নাবীয তৈরী করতে বারণ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে করেও নাবীয বানাতে বারণ করেছেন। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিশমিশ ও শুকনো খেজুর একত্রে মিশিয়ে এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে মিশিয়ে এবং পাকা রং ধারণকৃত ও শুকনো খেজুর একত্রে মিশিয়ে পানীয় বানাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রতিটি ফল দিয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে তোমরা নাবীয বানাও। ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) হতে জনৈক ব্যক্তি সূত্র তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একদল সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে মিশিয়ে এবং আঙ্গুর ও খেজুর একত্রে মিশিয়ে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। কাবশাহ বিনতু আবূ মারইয়াম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ)–কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাদের খেজুরের আঁটি পাকাতে নিষেধ করেছেন এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। [৩৭০৬] ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য আঙ্গুরের নাবীয তৈরি করা হতো, অতঃপর তাতে খেজুর ছেড়ে দেয়া হতো বা খেজুরের নাবীয তৈরি করা হতো এবং তাতে আঙ্গুর ছেড়ে দেয়া হতো। [৩৭০৭] সাফিয়্যাহ বিনতু ‘আত্বিয়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রের মহিলাদের সঙ্গে আমি ‘‘আয়িশাহ্‌হ্‌ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমরা তাকে খেজুর ও আঙ্গুর মিশ্রিত শরবত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি এক মুষ্টি খেজুর ও এক মুষ্টি আঙ্গুর একটি পাত্রে ঢালতাম। তা আঙ্গুল দিয়ে চেপে রস বের করতাম, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পান করাতাম। [৩৭০৮]

【9】

কাঁচা খেজুরের শরবত

ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে জাবির ইবনু যায়িদ ও ‘ইকরামাহ্ সূত্র তারা দু’জনেই কেবল কাঁচা খেজুরের তৈরী শরবত অপছন্দ করতেন। তারা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে এটা বর্ণনা করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার আশংকা হচ্ছে- এটা যেন মুয্যাআ না হয়। কেননা ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রকে তা পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। (বর্ণনাকারী হিশাম বলেন), আমি ক্বাতাদাহ্কে বললাম, ‘মুয্যাআ’ কি? তিনি বলেন, মাটির সবুজ পাত্রে ও তৈলাক্ত পাত্রে ভিজানো নাবীয।

【10】

নাবীযের বৈশিষ্ট্য

‘আবদুল্লাহ ইবনু দায়লামী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি (পিতা) বলেন, একদা আমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি জানেন যে, আমরা কারা, কোথাকার অধিবাসী এবং কার নিকট এসেছি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট এসেছো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের এখানে আঙ্গুর উৎপাদিত হয়। আমরা এগুলো কি করবো? তিনি বলেনঃ এগুলো শুকিয়ে কিশমিশ বানাও। আমরা বললাম, কিশমিশ দিয়ে কি করবো? তিনি বলেনঃ শরবত তৈরীর জন্য তা সকালে ভিজাবে এবং রাতে পান করবে অথবা রাতে ভিজাবে এবং সকালে পান করবে। তা চামড়ার মশকে ভিজাবে। মাটির কলসীতে অথবা বড় পাত্রে নাবীয বানাবে না। কেননা নিংড়াতে দেরী হলে তা সিরকায় পরিণত হবে। [৩৭১০] ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি পাত্রে নাবীয বানানো হতো, তার উপরের মুখ বন্ধ করে দেয়া হতো এবং এর নীচের দিকেও মুখ ছিল। তাঁর জন্য সকালে যে নাবীয বানানো হতো তিনি রাতের বেলা তা পান করতেন। আবার রাতে যে নাবীয বানানো হতো তিনি তা সকালে পান করতেন। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য সকালে নাবীয তৈরি করতেন। যখন রাত হতো তিনি তা পান করতেন। কিছু উদ্বৃত্ত থাকলে তিনি তা ঢেলে ফেলে দিতেন বা শেষ করে দিতেন। অতঃপর তিনি রাতে নাবীয তৈরি করতেন। যখন সকাল হতো তিনি তা পান করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি সকাল-সন্ধ্যায় নাবীয পাত্র ধুয়ে নিতাম। মুকাতিল (রহঃ) বলেন, আমার পিতা তাকে বললেন, দৈনিক দুইবার? তিনি বলেন, হাঁ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য আঙ্গুরের নাবীয বানানো হতো। তিনি তা সারা দিন পান করতেন, দ্বিতীয় দিন এবং তৃতীয় দিনও বিকাল পর্যন্ত পান করতেন। অতঃপর তিনি আদেশ দিলে অবশিষ্ট শরবত খাদেমদেরকে পান করানো হতো কিংবা ফেলে দেয়া হতো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, খাদেমদের পান করানোর অর্থ হলো, তাতে নেশা প্রকাশ পাওয়ার আগে তারা তা পান করতো।

【11】

মধুর শরবত

‘উবাইদ ইবনু ‘উমাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলেতে শুনেছিঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাইনাব বিনতু জাহ্‌শ (রাঃ)-এর ঘরে আসতেন এবং সেখানে মধু খেতেন। একদিন আমি ও হাফসাহ পরামর্শ করলাম যে, আমাদের দু’জনের যার ঘরেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রবেশ করবেন। সে যেন বলে, আমি আপনার মুখ হতে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। তিনি তাদের কোন একজনের ঘরে ঢুকলে তিনি তাঁকে ঐ কথা বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং আমি যাইনাব বিনতু জাহ্‌শের ঘরে মধু পান করেছি। ঠিক আছে আমি আজ হতে কখনো তা পান করবো না। অতঃপর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে নাবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা কেন হারাম করছেন? আপনি কি স্ত্রীদের সন্তুষ্টি লাভ করতে চান?... তোমরা উভয়ে যদি আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর” (সূরাহ তাহরীমঃ ১-৫), এ আয়াতগুলোতে ‘আয়িশাহ্‌ ও হাফসাহ্‌ (রাঃ)-কে তাওবাহ করতে বলা হয়েছে। “যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা কথা স্বীয় এক স্ত্রীর নিকট সংগোপনে বলেছিলেন” এ আয়াতটি ‘বরং আমি মধু পান করেছি’ কথার ব্যাখ্যায় অবতীর্ণ। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টি জিনিস ও মধু অত্যন্ত পছন্দ করতেন। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরের হাদীসের অংশ বিশেষ বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শরীর হতে কেউ কোনরূপ দুর্গন্ধ পাক তা তিনি খুবই অপছন্দ করতেন। এ হাদীসে রয়েছেঃ সাওদা (রাঃ) বললেন, বরং আপনি মাগাফীর পান করেছেন। তিনি বললেনঃ আমি মধু পান করেছি, হাফসাহ আমাকে মধু পান করিয়েছে। আমি বললাম, ‘তাহলে মৌমাছি উরফুতের রস শোষণ করেছে।’ যেসব গাছ হতে মৌমাছি রস সংগ্রহ করে উরফুত সে ধরনের একটি গাছ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মাগাফীর হচ্ছে এক ধরনের বৃক্ষনির্যাস; জারাসাত অর্থ আহার করলো এবং উরফুত হলো এক ধরনের উদ্ভিদ যা হতে মৌমাছি রস সংগ্রহ করে।

【12】

নাযীবে কড়া ভাব আসলে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জানতাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই সওম পালন করতেন। সুতরাং আমি অপেক্ষায় ছিলাম তিনি কোন দিন সওম না রাখেন। আমি তাঁর জন্য লাউয়ের পাত্রে নাবীয তৈরী করে নিয়ে গেলাম। আমি তাঁকে তা পরিবেশন করলাম। কিন্তু তাতে তেজী ভাব আসায় তিনি বললেনঃ এগুলো দেয়ালের ওখানে ফেলে দাও। এটা তারাই পান করতে পারে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী নয়।

【13】

দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যাক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। আন-নায্‌যাল ইবনু সাবরাহ (রহঃ) একদা ‘আলী (রাঃ) পানি চেয়ে নিয়ে তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। অতঃপর তিনি বলেন, কতিপয় লোক এটাকে অপছন্দ করে যে, তাদের কেউ এরূপ করুক। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ (দাঁড়িয়ে পান করতে) করতে দেখেছি, যেরূপ তোমরা আমাকে করতে দেখলে।

【14】

কলসের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করা সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে, জাল্লালায় সওয়ার হতে এবং কোন প্রাণীকে বেঁধে তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে বারণ করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, জাল্লালা হলো, যে প্রাণী নাপাক বস্তু খায়।

【15】

চামড়ার মশকের মুখ উল্টিয়ে পান করা

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের মুখ উল্টিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। আনসার গোত্রের ঈসা ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতা সূত্র উহুদ যুদ্ধের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চামড়ার একটি ছোট মশক নিয়ে আহবান করলেন। তিনি বললেনঃ পাত্রের মুখ উল্টাও। অতঃপর তিনি এর মুখ দিয়ে পানি পান করলেন। [৩৭২১]

【16】

পাত্রের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি পান করা

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন পাত্রের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি পান করতে এবং পানীয়ের মধ্যে ফুঁ দিতে।

【17】

সোনা-রূপার পাত্রে পান করা সম্পর্কে

ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযাইফাহ (রাঃ) মাদায়েনে ছিলেন। তিনি পানি চাইলেন। তখন এক মহাজন একটি রূপার পাত্রে তার জন্য পানি আনলে তিনি পানি ফেলে দিয়ে বললেন, আমি এটা ফেলতাম না; ফেলেছি কেবল এজন্য যে, তাকে এ পাত্রে পানি পরিবেশন করতে নিষেধ করেছি, কিন্তু তবুও বিরত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় পরতে এবং সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ঐগুলো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য।

【18】

চুমুক দিয়ে পান করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর এক সাহাবী এক আনসারীর নিকট গেলেন। সে তখন তার বাগানে পানি দিচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার নিকট পুরাতন কলসে রাখা গত রাতের বাসি পানি থাকলে নিয়ে আসো। নতুবা আমরা নালায় চুমুক দিয়ে পানি পান করে নিবো। লোকটি বললো, হাঁ আমার নিকট পুরাতন কলসে রাখা বাসি পানি আছে।

【19】

পরিবেশনকারী কখন পান করবে

‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দলের পানি পরিবেশনকারী সবশেষে পান করবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য দুধ আনা হলো। তাতে পানি মিশানো ছিল। তাঁর ডান দিকে এক বেদুঈন বসা ছিল এবং বাম দিকে ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)। তিনি দুধ পান করার পর তা বেদুঈনকে দিয়ে বললেনঃ ডান দিকের ব্যক্তি, অতঃপর ডান দিকের ব্যক্তি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পান করার সময় তিনবার নিঃশ্বাস নিতেন। তিনি বলতেন : এতে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করা যায়, পিপাসা দূরীভূত হয়, পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

【20】

পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দেয়া এবং তাতে নিঃশ্বাস ফেলা সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানির পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে বারণ করেছেন। সুলাইম গোত্রের ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পিতার ঘরে এলে তিনি তাঁর সামনে খাদ্য পরিবেশন করলেন। তিনি ‘হাইস’ নামক খাবারের উল্লেখ করলে তা তাঁর নিকট নিয়ে আসা হলো। অতঃপর তিনি শরবত আনলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পান করলেন। তারপর ডান দিক হতে পরিবেশন করা হলো। তিনি খেজুর খেলেন এবং বীচিগুলো তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের পেটের উপর রাখলেন। যখন তিনি বিদায় নিতে উঠলেন, আমার পিতাও দাঁড়ালেন। তিনি তাঁর জন্তুযানের লাগাম ধরে বললেন, আল্লাহ্‌র নিকট আমার জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’আ করলেন : “হে আল্লাহ্! তাদেরকে দেয়া রিযিক্বে বরকত দিন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।

【21】

দুধ পানের সময় কি বলবে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি মাইমূনাহ (রাঃ)–এর ঘরে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে আসলেন। তাঁর সাথে ছিল খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)। তখন এ সময় কতিপয় লোক দু’টি গুইসাপ ভুনা করে দু’টি কাঠের উপর রেখে নিয়ে এলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থুথু ফেললেন। খালিদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মনে হয় আপনি গুইসাপের গোশত অপছন্দ করেন। তিনি বললেনঃ হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য দুধ আনা হলো। তিনি তা পান করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কেউ খাবার খাওয়ার সময় যেন বলে : “হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এর মধ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়েও উত্তম খাবার দান করুন”। এবং দুধ পানের সময় যেন বলে : “হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এর মধ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়ে আরো বৃদ্ধি করে দিন”। কেননা একমাত্র দুধই খাদ্য ও পানীয় উভয়ের কাজ দেয়।

【22】

পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা

জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমাও। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে তোমার ঘরের আলো নিভিয়ে ঘুমাও। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে তোমার পাত্রগুলোর মুখ ঢেকে রাখো, যদিও একটি কাছ দ্বারা হয়। তা পাত্রের মুখে আড়াআড়িভাবে রেখে দাও। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে তোমার পানপাত্রের মুখ বন্ধ করে রাখো। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসটি এভাবেই বলেছেন। এ হাদীস পরিপূর্ণ বর্ণিত হয়নি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না, বন্ধ পাত্রে ঢুকতে বা তা খুলতে পারে না এবং ইঁদুর মানুষের ঘর বা ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেয়। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের শিশুদের রাতের বেলা ঘরে আবদ্ধ রাখো। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছে, সন্ধ্যা বেলায়। কেননা, এ সময় শয়তান বা জিন ছড়িয়ে পড়ে এবং নিজেদের থাবা বিস্তার করে। জাবির (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পানি চাইলে দলের এক ব্যক্তি বললো, আমরা কি আপনাকে নাবীয পরিবেশন করবো না? তিনি বলেনঃ হাঁ। জাবির (রাঃ) বলেন, লোকটি দ্রুত চলে গিয়ে একটি নাবীয ভর্তি পাত্র নিয়ে ফিরে এলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কেন পাত্রটির মুখ ঢাকলে না? অন্তত একটি কাঠ-এর উপর আড়াআড়িভাবে রাখলেও হতো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য ‘বুয়ূতুস-সুকইয়া’ হতে মিষ্টি পানি সংগ্রহ করে আনা হতো। কুতাইবাহ (রহঃ) বলেন, ‘বুয়ূতুস-সুকইয়া’ হলো একটি কূপের নাম, এর এবং মাদীনাহ্‌র মাঝে দুই দিনের পথের দূরত্ব।