28. খাদ্যদ্রব্য
দাওয়াত কবুল করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কাউকে যদি ওয়ালীমার দাওয়াত দেয়া হয়, তবে সে যেন তাতে অংশগ্রহণ করে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ... পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। এতে রয়েছে : সে সওম পালনরত না হলে যেন খায়, আর সওম পালনকারী হলে যেন (দাওয়াতদাতার জন্য) দু’আ করে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে দাওয়াত দিলে সে যেন তা কবুল করে, তা বিবাহ অনুষ্ঠান বা প্রীতিভোজ যাই হোক না কেন। নাফি’ (রহঃ) সূত্রে আইয়ূবের সানাদ অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে দাওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তাতে সাড়া দেয়, অতঃপর ইচ্ছা হলে খাবে, নতুবা বিরত থাকবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে দাওয়াত দেয়ার পরও সে তা কবুল করলো না, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করলো। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত ছাড়াই উপস্থিত হলো, সে চোর হয়ে ঢুকলো এবং লুটেরা হয়ে বের হলো। [৩৭৪১] দুর্বল : ইরওয়া (১৯৫৪), মিশকাত (৩২২২)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলতেন, নিকৃষ্টতম খাদ্য হলো ঐ বিবাহ অনুষ্ঠানের খাদ্য, যেখানে শুধু ধনীদের দাওয়াত দেয়া হয় এবং গরীবদের উপেক্ষা করা হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করে।
বিয়ের ওয়ালীমা অনুষ্ঠান করা উত্তম
সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, যাইনাব বিনতু জাহশের বিবাহের ঘটনা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)–এর নিকট আলাপ করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাইনাবের বিয়েতে যেভাবে ওয়ালীমা অনুষ্ঠান করেছেন, অন্য কোন স্ত্রীর বেলায় তাঁকে তদ্রূপ করতে দেখিনি। তিনি একটি বকরী দিয়ে বিবাহ ভোজের ব্যবস্থা করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর বিবাহে খেজুর ও ছাতু দিয়ে ওয়ালীমা করেছেন।
ওয়ালীমা কয়দিন আয়োজন করা যাবে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান আস-সাক্বাফী (রহঃ) হতে তার গোত্রের এক অন্ধ ব্যক্তির সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ওয়ালীমা অনুষ্ঠান বিবাহের প্রথম দিনে করা জরুরী, দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান উত্তম এবং তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান লোক শুনানো ও লোক দেখানোর জন্য। ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমাকে এক ব্যক্তি বলেছেন, সাঈদ ইবনুল মুনাইয়্যাব (রহঃ)–কে ওয়ালীমাতে প্রথম দিন দাওয়াত দেয়া হলে তিনি সাড়া দিলেন, দ্বিতীয় দিন দাওয়াত দেয়া হলেও কবুল করলেন এবং তৃতীয় দিন দাওয়াত দেয়া হলে তিনি দাওয়াত কবুল করলেন না। তিনি বললেন, এসব লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এবং শুনানোর জন্য এসব করে থাকে। দুর্বল : ইরওয়া (১৯৫০)। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রাঃ) ক্বাতাদাহ উল্লিখিত ঘটনা প্রসংগে বলেন, তৃতীয় দিনে দাওয়াত করা হলো কিন্তু তিনি তা কবুল করেননি এবং যে লোক তাকে দাওয়াত দিতে এসেছিল তিনি তার দিকে ঢিল ছুড়ে মারেন।
সফর হতে ফিরে এসে আহারের আয়োজন
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাবূকের সফর হতে) মদিনায় ফিরে এসে একটি উট অথবা গরু যাবেহ করলেন।
মেহমানদারী সম্পর্কে
আবূ শুরাইহ্ আল-কা’বী (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। উত্তমরূপে মেহমানদারীর সীমা একদিন একরাত। মেহমানদারী তিনদিন। এরপর অতিরিক্ত দিনগুলোর মেহমানদারী সদাক্বাহ হিসাবে গণ্য। তিনদিন পর আপ্যায়নকারীর বাড়িতে তার বিনা অনুমতিতে মেহমানদের অবস্থান করা উচিৎ নয়। এতে সে বিরক্ত হতে পারে। মালিক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ ‘জাইযাহ’ একদিন ও একরাত-এর অর্থ কি? তিনি বলেন, কথাটির অর্থ হলো, মেহমানকে সম্মান প্রদর্শন, উপহার প্রদান ও তার নিরাপত্তা বিধান করা একদিন ও একরাত। আর আতিথ্য প্রদান হচ্ছে তিনদিন। [৩৭৪৮] আবূ শুরাইহ বর্ণিত হাদীসটি সহীহ। মালিক ইবনু আনাসের বর্ণনার সানাদ সহীহ মাক্বতূ‘। আবূ শুরাইহ্ আল-কা’বী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মেহমানদারীর সীমা তিন দিন। এর অতিরিক্ত দিনের আতিথ্য প্রদান সদাক্বাহ হিসেবে গণ্য। আবূ কারীম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একরাত মেহমানদারী করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যার আঙ্গিনায় মেহমান নামে, একদিন মেহমানদারী করা তার উপর ঋণ পরিশোধের সমান। সে ইচ্ছা করলে তার ঋণ পরিশোধ করবে বা ত্যাগ করবে। আল-মিক্বদাম আবূ কারীমাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের নিকট মেহমান হয়ে এলো, (অথচ) বঞ্চিত অবস্থায় তার সকাল হলো, তাকে সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। তাদের খাদ্য ও মাল হতে সে তার রাতের মেহমানদারীর পরিমাণ আদায় করে নিতে পারে। [৩৭৫১] দুর্বল : মিশকাত (৪২৪৭)। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে বাইরে প্রেরণ করে থাকেন। আমরা কোন জনপদে গিয়ে যাত্রাবিরতি করি। তারা আমাদের মেহমানদারী করে না। এ বিষয়ে আপনি কি বলেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেনঃ তোমরা যদি কোন সম্প্রদায়ের নিকট অবতরণ করার পর তারা নিজেদের সার্মথ্য মোতাবেক তোমাদের আপ্যায়ন করে তবে তোমরা তা গ্রহন করবে। যদি তারা তা না করে, তবে তাদের কাছ হতে তাদের সামর্থ্যের দিকে লক্ষ রেখে মেহমানের অধিকার আদায় করবে।
অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ রহিত হওয়া সম্পর্কে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণী: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না। তবে ব্যবসায়ের লেনদেন পরস্পরের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে হওয়া আবশ্যক…..” (সূরাহ আন-নিসাঃ ২৯)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর লোকেরা অন্য কারো বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করা অন্যায় ভাবলো। অতঃপর সূরাহ আন-নূরের মাধ্যমে উপরের আয়াতের হুকুম রহিত করা হলো। মহান আল্লাহ বলেনঃ “এতে কোন দোষ নেই যে, কোন ব্যক্তি নিজেদের ঘর থেকে খাবে… আলাদা আলাদাভাবে খাও” (সূরাহ আন-নূরঃ ৬১) পর্যন্ত। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে অবস্থা এরূপ ছিলো যে, কোন ধনী লোক কাউকে খাওয়ার দাওয়াত দিলে সে বলতো, আমি এর থেকে খাওয়া অন্যায় মনে করি। (আরবি) অর্থ আপত্তি। সে আরো বলতো, এ খাদ্যে আমার চেয়ে দরিদ্ররাই অধিক হকদার। এ প্রেক্ষিতে অন্য মুসলিমের বাড়িতে খাবার গ্রহণ বৈধ করা হয়, যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে। আহলে কিতাবদের খাদ্যদ্রব্যও হালাল করা হয়েছে।
দুই প্রতিযোগীর দাওয়াতে অংশগ্রহন না করা সম্পর্কে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই প্রতিদ্বন্দী অহংকারকারীর খাদ্য গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন।
মেহমান অবাঞ্ছিত কিছু দেখলে
সাফীনাহ আবূ ‘আবদুর রহমান (রহঃ) একদা একটি লোক ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে দাওয়াত করে তার জন্য খাদ্য তৈরি করে (বাড়িয়ে) দিয়ে গেলো। ফাত্বিমাহ (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ডাকলে তিনি আমাদের সঙ্গে আহার করতেন। ‘আলী (রাঃ) তাঁকে দাওয়াত দিলেন এবং তিনি এসে দরজার চৌকাঠের উপর নিজের হাত রাখলেন। তিনি একটি রঙ্গীন পর্দা ঘরের এক দিকে টানিয়ে রাখা, দেখতে পেয়ে ঘরে প্রবেশ না করে ফিরে গেলেন। ফাত্বিমাহ (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) কে বললেন, গিয়ে দেখুন, তিনি কেন ফিরে যাচ্ছেন? সুতরাং আমি তাঁর অনুসরণ করলাম, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিসে আপনাকে ফিরে আসতে বাধ্য করলো? তিনি বলেনঃ আমার জন্য বা কোন নাবীর জন্য কারুকার্য খচিত সজ্জিত ঘরে প্রবেশ করা সমীচীন নয়।
দুই দাওয়াতদাতা একত্রে এলে কে অগ্রাধিকার পাবে
হুমাইদ ইবনু ‘আবদুর রহমান আল-হিম্যারী (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবীর সূত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’ ব্যক্তি একই সাথে দাওয়াত করলে তোমার বাড়ির নিকটতর ব্যক্তির দাওয়াত কবুল করবে।কেননা বাড়ির নিকটবর্তী ব্যক্তি নিকটতর প্রতিবেশী। আর একজন অন্যজনের আগে দাওয়াত দিতে আসে তবে প্রথমে আসা ব্যক্তির দাওয়াত কবুল করবে। [৩৭৫৬] দুর্বল : ইরওয়া (১৯৫১), মিশকাত (৩২২৩)।
‘ইশার সলাত ও রাতের খাবার একত্রে উপস্থিত হলে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের রাতের খাবার উপস্থিত করা হলে এবং ‘ইশার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে খাবার শেষ না করে সলাতে যাবে না। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে বা রাতের খাবার আনা হলে তিনি আহার শেষ না করে কখনও সালাতের জন্য উঠতেন না। এমনকি ইক্বামাত বা ইমামের কিরাআত শুনতে পেলেও তিনি আহার শেষ না করা পর্যন্ত উঠতেন না। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাবারের জন্য বা অন্য কোন কারণে সলাতের জামা‘আত বিলম্বিত করা যাবে না। [৩৭৫৮] দুর্বল : মিশকাত (১০৭১)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু উমাইর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রাঃ) সময় আমার পিতার সঙ্গে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের (রাঃ) নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন ‘আব্বাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর বললেন, আমরা শুনেছি, রাতে আহারকে সলাতের উপর (অর্থাৎ আগে খেয়ে নেয়ার) অগ্রাধিকার দেয়া হতো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি কি মনে করেছ আগেকার লোকদের রাতের আহার তোমার পিতার রাতের আহারের অনুরূপ ছিল?
খাওয়া শুরুর সময় উভয় হাত ধোয়া
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলে তাঁর সামনে খাবার উপস্থিত করা হলো। সাহাবীগণ বললেন, আপনার জন্য উযুর পানি নিয়ে আনবো কি? তিনি বললেনঃ আমাকে তো সলাতের জন্য উযু করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
আহারের পূর্বে হাত ধোয়া
সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তাওরাতে পড়েছিঃ “খাবার শুরুর আগে উযু করার মধ্যেই খাবারের বরকত নিহিত।” আমি এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন খাদ্য গ্রহণের আগে ও পরে উযু করার (হাত ধোয়ার) মাধ্যে খাদ্যের বরকত নিহিত। সুফিয়ান (রহঃ) খাওয়ার পূর্বে উযু করা পছন্দ করতেন না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি যঈফ। [৩৭৬১] দুর্বল: যঈফাহ (১৬৮) ,মিশকাত (৪২০৮)।
তাড়াহুড়ার সময় হাত না ধুয়ে আহার করা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব-পায়খানা সেরে গিরিপথ-থেকে নামলেন। আমাদের সামনে ঢালের উপর খেজুর রাখা ছিল। আমরা তাঁকে খেতে ডাকলে তিনি আমাদের সঙ্গে খেজুর খেলেন কিন্ত পানি স্পর্শ করলেন না (হাত ধৌত করেননি)।
খাদ্যদ্রব্যের সমালোচনা করা অপছন্দনীয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও খাদ্যের দোষ বর্ণনা করতেন না। রুচি হলে তিনি খেতেন, আর রুচি না হলে বাদ দিতেন।
একসঙ্গে খাওয়া
ওয়াহশী ইবনু হারব হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খাবার খাই, কিন্ত পরিতৃপ্ত হতে পারি না।তিনি বললেনঃ হয়ত তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে খাও। তারা বললেন, হাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা একত্রে আহার করো এবং খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করো, তাহলে তোমাদের খাদ্যে বরকত দেয় হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যদি তোমাকে কোথাও দাওয়াত করা হয় এবং খাবার সামনে রাখা হয় তাহলে বাড়ির কর্তা অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া শুরু করবে না। [৩৭৬৪]
খাওয়ার সময় আল্লাহ্র নাম নেয়া
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোর সুযোগই পেলে। হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে খেতে বসলে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়া আরম্ভ করার পূর্বে আমাদের কেউ খাদ্যের দিকে হাত বাড়াতো না। একদা আমরা তাঁর সাথে খেতে বসি। তখন এক বেদুঈন এমনভাবে দৌড়ে এলো যেন কেউ তাকে পিছন হতে তাড়া করছে। সে খাওয়ার পাত্রে হাত দিতে যাচ্ছিল তখনই রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর একটি বালিকা দৌড়িয়ে আসলো, যেন তাকেও কেউ পিছন হতে তাড়া করছে। সেও খাদ্যের মধ্যে হাত ঢুকাতে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতও ধরে ফেললেন। তিনি বললেন, যে খাদ্য আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া হয় না তাতে শয়তান শরীক করে। সে প্রথমে বেদুঈনকে নিয়ে এসেছিল তার সঙ্গে খাদ্যে অনুপ্রবেশ করতে। আমি তার হাত ধরে ফেলি। ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শয়তানের হাত এখন এই দু’জনের হাতের সাথে আমার হাতে মধ্যে বন্দী। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম। উমাইয়্যাহ ইবনু মাখশী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। তখন এক লোক খাচ্ছিল, কিন্তু আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করেনি। মাত্র এক লোকমা খাবার বাকি থাকতে সে তা মুখে দেয়ার সময় বললোঃ খাবারের শুরুতে ও শেষে বিসমিল্লাহ। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন এবং বললেনঃ শয়তান তার সঙ্গে খাচ্ছিল। যখন সে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলো, শয়তান তার পেটের খাবার বমি করে ফেলে দিলো। [৩৭৬৮] দুর্বল: মিশকাত (৪২০৩)।
হেলান দিয়ে খাওয়া সম্পর্কে
‘আলী ইবনুল আক্বমার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আসনে বসে হেলান দিয়ে খাবার খাই না। মুস‘আব ইবনু সুলাইম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমাকে কোন এক কাজে প্রেরণ করলেন। আমি তাঁর নিকট ফিরে এসে দেখি তিনি বসে খেজুর খাচ্ছেন। শু‘আইব ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো হেলান দিয়ে খাবার খেতে দেখা যায়নি এবং তাঁর পিছনে কখনো দু’জন লোককে চলতে দেখা যায়নি।
পাত্রের উপরিভাগ হতে খাওয়া সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ খাওয়ার সময় যেন পাত্রের মাঝখান হতে না খায়, বরং যে যেন তার কিনারা হতে খাওয়া শুরু করে। কেননা পাত্রের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুস্র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি বড় কড়াই ছিল। তা চারজন লোক বহন করতো। পাত্রটির নাম ছিল ‘গাররাআ’। বেলা কিছুটা উপরে উঠলে এবং লোকেরা চাশতের সলাত আদায় শেষ হলে পাত্রটি নিয়ে আসা হলো। অর্থাৎ তাতে ঝোল মিশ্রিত রুটি ছিল। লোকেরা এর চারদিকে বসলো। লোকের আধিক্যের কারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাঁটু গেড়ে বসলেন। এক বেদুঈন বললো, এটা কিভাবে বসা হলো! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাকে ভদ্র ও সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অবাধ্য ও উচ্ছৃঙ্খল বানাননি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পাত্রের কিনারা হতে খাও এবং মধ্যখান ছেড়ে দাও। এতে বরকত হবে।
যে দস্তরখানে কিছু অপছন্দনীয় খাবার থাকে সেখানে বসে খাওয়া সম্পর্কে
সালিম (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই জায়গায় আহার করতে নিষেধ করেছেনঃ যে দস্তরখানে বসে মদ পান করা হয় এবং যেখানে উপুড় হয়ে বসে পেটের উপর ভর দিয়ে খাওয়া হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটা মুনকার হাদীস। জা‘ফার ইবনু বুরকান হাদীসটি যুহরীর নিকট শুনেননি। জা‘ফার (রহঃ) সূত্র তার নিকট এ হাদীস যুহরীর সূত্রে পৌঁছেছে। [৩৭৭৫] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
ডান হাতে খাওয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ খাওয়ার সময় যেন তার ডান হাতে খায় এবং যখন পান করে তখনও যেন তার ডান হাতে পান করে। কেননা শয়তান তার বাম হাতে পানাহার করে। ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার কাছে এসো, আল্লাহর নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনে থেকে খাও।
গোশত খাওয়া
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ছুরি দিয়ে গোশত কেটে (খাবে) না। কেননা এটা অনারবদের রীতি, বরং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে খাও। কারণ তা অধিক উপকারী ও স্বাস্থ্যকর। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি শক্তিশালী নয়। [৩৭৭৮] দুর্বলঃ মিশকাত (৪২১৫)। সাফওয়ান ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে আহার করছিলাম এবং হাঁড় থেকে গোশত ছিড়ে খাচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হাড়টি তুলে মুখে নাও এবং দাঁত দিয়ে কামড়ে খাও, কারণ তা অধিক উপকারী ও স্বাস্থ্যকর। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান (রহঃ) সাফওয়ান (রাঃ) হতে কিছু শুনেননি। এ বর্ণনাটি মুরসাল। [৩৭৭৯] দুর্বল: যঈফাহ (২১৯৩)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট সবচেয়ে প্রিয় গোশত ছিল ছাগলের হাড়ের গোশত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) একই সানাদ বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই বাহুর গোশতেই বিষ মিশানো হয়েছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন, ইয়াহুদীরা এতে বিষ মিশিয়ে ছিল।
লাউ খাওয়া
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক দর্জি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াত করলো। সে তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমিও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে খাবারের দাওয়াতে গেলাম। সে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে বার্লির রুটি, লাউ ও শুকনা গোশত দিয়ে তৈরী তরকারী আনলো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তিনি পাত্রের চারপাশে লাউয়ের টুকরা খুঁজছেন। সেদিন হতে আমিও সর্বদা এ তরকারী পছন্দ করি।
সারীদ খাওয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দের খাবার ছিল তরকারীর ঝোলে ভিজানো রুটি ও খুরমা এবং মাখন ও আটার সংমিশ্রনে তৈরী রুটি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি যঈফ। [৩৭৮৩] দুর্বল: যঈফাহ (১৭৫৮), মিশকাত (৪২২০)।
কোন খাদ্যের প্রতি ঘৃণা পোষণ অপছন্দনীয়
ক্বাবীসাহ ইবনু হুলব (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, সে বললো, এমন খাবার আছে কি যা আমি অপছন্দ করবো? তিনি বললেনঃ তোমার মনে যেন কোন হালাল বস্তু সংশয় সৃষ্টি না করে। তাহলে তুমি নাসারাদের সদৃশ হবে। কেননা তারা প্রত্যেক জিনিসে সংশয় বোধ করতো। [৩৭৮৪]
জাল্লালা ও তার দুধ পান নিষেধ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাল্লালার (যে প্রাণী নাপাক বস্তু খায়) গোশত খেতে ও তার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাল্লালার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাল্লালার উটে আরোহণ করতে এবং তার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন।
ঘোড়ার গোশত খাওয়া সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বিজয়ের দিন আমাদেরকে গাধার গোশত খেতে বারণ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের দিন আমরা ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা যাবাহ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খচ্চর ও গাধার গোশত খেতে বারণ করলেন, কিন্তু ঘোড়ার গোশত খেতে বারণ করেননি। খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। হায়ওয়াতের বর্ণনায় আছেঃ তিনি হিংস্র জন্তুর গোশত খেতেও নিষেধ করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) এ মত পোষণ করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ঘোড়ার গোশত খাওয়া দোষের কিছু নয় এবং উপরোক্ত হাদীস মোতাবেক আমল করা হয় না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস মানসূখ। রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল সাহাবী ঘোড়ার গোশত খেয়েছেন। ইবনুয যুবাইর, ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ, আনাস ইবনু মালিক, আসমা বিন্তু আবূ বাক্র, সুওয়াইদ ইবনু গাফালাহ্ (রাঃ) ও ‘আলক্বামাহ (রহঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কুরাইশগণ ঘোড়া যাবাহ করতো। [৩৭৯০]
খরগোশের গোশত খাওয়া সম্পর্কে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ছিলাম একজন শক্তিশালী যুবক। আমি একটি খরগোশ শিকার করে তার গোশত ভুনা করলাম। আবূ ত্বালহা (রাঃ) আমাকে এর পিছনে দিকের গোশত নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রেরণ করলেন। আমি তা নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলে তিনি তা গ্রহণ করলেন। আবূ খালিদ ইবনু হুওয়াইরিস (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) ‘আস-সাফাহ’ নামক স্থানে ছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ বলেন, তা মক্কায় অবস্থিত একটি স্থান। এক লোক একটি খরগোশ শিকার করে আনলো। সে বললো, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর! আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এর গোশত আনা হয়। তখন আমি সেখানে বসা ছিলাম। তিনি তা আহার করেননি এবং অন্যকে খেতে নিষেধ করেননি। তাঁর ধারণা, এর মাসিক ঋতু হয়। [৩৭৯২]
গুইসাপ খাওয়া সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা তার খালা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য মাখন, পনির ও গুইসাপের গোশত পাঠালে তিনি মাখন ও পনির হতে খেলেন কিন্তু গুইসাপের গোশত খেলেন না রুচিবোধ না হওয়ায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে একত্রে বসে তা খাওয়া হলো। তা হারাম হলে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে বসে তা খাওয়া যেতো না। খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে মাইমূনাহ (রাঃ) এর ঘরে যান। সেখানে গুইসাপের ভাজা গোশত আনা হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিতে হাত বাড়ালে মাইমূনাহ (রাঃ)-এর ঘরে উপস্থিত অন্যান্য স্ত্রীগণ বললেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট বলে দাও যা নিতে তিনি চাইছেন। তারা বললেন, এটা গুইসাপের গোশত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত গুটিয়ে নিলে খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এটা কি হারাম? তিনি বললেনঃ না, কিন্তু এটা আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। এর গোশত আমার নিকট রুচিকর নয়। খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি হাত বাড়িয়ে তা নিয়ে খেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখলেন। সাবিত ইবনু ওয়াদি‘আহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সামরিক অভিযানে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে ছিলাম। আমরা কিছু গুইসাপ ধরলাম। সাবিত (রাঃ) বলেন, আমি একটি গুইসাপ ভূনা করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে রাখলে তিনি একটি কাঠ উঠিয়ে তা দিয়ে এর আঙ্গুল গণনা করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ বনী ইসরাঈলের একটি সম্প্রদায়কে যমীনের বুকে একটি বিচরণশীল প্রাণীতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়েছিল। আমি জানিনা, সেটা কোন প্রাণী? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তা খেলেননা এবং খেতে নিষেধও করলেন না। ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গুইসাপের গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
হুবারার গোশত (দ্রুত দৌড়াতে পারে এমন বৃহদাকার পাখি) খাওয়া সম্পর্কে
বুরাইহ ইবনু ‘উমার ইবনু সাফীনাহ (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে হুবারার গোশত খেয়েছি। [৩৭৯৭] দুর্বলঃ মিশকাত (৪১২৫)।
কীট-পতঙ্গ ও গর্তের প্রাণী
মিলক্বাম ইবনু তালিব্ব (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। কিন্তু কখনো ‘হাশরাতুল আরদ’ হারাম হওয়া সম্পর্কে কিছু শুনিনি। [৩৭৯৮] ঈসা ইবনু নুমাইলাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তাকে সজারুর গোশত খাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ আয়াত পড়েনঃ “আপনি বলুন, আমার নিকট যে ওয়াহী এসেছে তাতে এমন কোন বস্তু পাই না যা খাওয়া কারো পক্ষে হারাম....” (সূরাহ আল-আনআমঃ ১৪৫) পূর্ণ আয়াত। বর্ণনাকারী বলেন, এক প্রবীণ শাইখ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বললেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে সজারু সম্পর্কে আলাপ করা হলে তিনি বলেনঃ “নাপাক প্রাণীর মধ্যকার একটি প্রাণী।” ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা বলে থাকেন তাহলে তিনি ঠিকই বলেছেন, যা আমার জানা ছিলো না। [৩৭৯৯]
যেসব জিনিসের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসেনি
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা কিছু জিনিস খেতো এবং ঘৃণাবশত কিছু জিনিস পরিহার করতো। এ অবস্থায় আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করলেন এবং তাঁর কিতাব অবতীর্ণ করলেন এবং তাতে কিছু জিনিস হালাল করলেন ও কিছু জিনিস হারাম করলেন। তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যেগুলো সম্পর্কে নীরব থেকেছেন তাতে ছাড় দেয়া আছে। অতঃপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিলাওয়াত করেনঃ “আপনি বলুন, আমার নিকট যে ওয়াহী এসেছে তাতে এমন কোন জিনিস পাইনি যা আহার করা কারো জন্য হারাম...” আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
হায়েনার গোশত খাওয়া সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হায়েনা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এটা শিকার করার মতো প্রাণী। ইহরাম অবস্থায় তা শিকার করলে একটি মেষ কুরবানী দিতে হয়।
হিংস্র প্রাণী খাওয়া সম্পর্কে
আবূ সা‘লাবা আল-খুশানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক শিকারী দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক শিকারী দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু ও প্রত্যেক পাঞ্জাধারী শিকারী পাখী খেতে নিষেধ করেছেন। আল-মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাবধান! শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র জন্তু, গৃহপালিত গাধা এবং চুক্তিবদ্ধ যিম্মীর হারানো মাল খাওয়া হারাম। তবে সে তা পরিত্যাগ করে থাকলে ভিন্ন কথা। কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের নিকট মেহমান হিসেবে উপস্থিত হওয়ার পর তারা তাকে আতিথ্য না করলে সে আতিথ্যের পরিমাণ মাল তাদের কাছ হতে আদায় করে নিতে পারে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বিজয়ের দিন শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র জন্তু ও প্রত্যেক পাঞ্জাধারী শিকারী পাখী খেতে নিষেধ করেছেন। খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যোগদান করেছি। ইয়াহুদীরা এসে অভিযোগ করলো যে, লোকেরা তাড়াহুড়া করে তাদের বাঁধা পশুগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাবধান! যে কাফিররা তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছাড়া তাদের মাল আত্মসাৎ করা বৈধ নয়। তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে গৃহপালিত গাধা, ঘোড়া, খচ্চর, প্রত্যেক শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র জন্তু এবং প্রত্যেক পাঞ্জাধারী শিকারী পাখী। [৩৮০৬] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের গোশত খেতে এবং এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। [৩৮০৭] দুর্বলঃ ইরওয়া (২৪৮৭)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া সম্পর্কে
গালিব ইবনু আবজার (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমরা এক বছর দুর্ভিক্ষে পড়লাম। পরিবার-পরিজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করার মত সম্পদ আমার ছিলো না, কয়েকটি গাধা ব্যতিত। ইতোপূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমারা দুর্ভিক্ষে পড়েছি। মোটাতাজা কয়েকটি গাধা ছাড়া আমার এমন কোন কিছু নেই যা দিয়ে আমি পরিবার-পরিজনের আহারের ব্যবস্থা করবো। অথচ আপনি গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া হারাম করেছেন। তিনি বলেনঃ তোমার পরিবারের লোকদেরকে মোটাতাজা গাধার গোশত খাওয়াও। নাপাক খাওয়ায় অভ্যস্ত হওয়ার কারণে আমি গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া হারাম করেছিলাম। [৩৮০৯] মিস‘আর (রহঃ) আমার মতে গালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এ বর্ণনা নিয়ে আসেন। [৩৮১০] ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র তিনি (দাদা) বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহপালিত গাধার গোশত এবং নাপাকী খায় এমন প্রানীর গোশত খেতে ও তাতে সওয়ার হতে নিষেধ করেছেন। [৩৮১১]
পঙ্গপাল খাওয়া সম্পর্কে
আবূ ইয়া‘ফুর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু আবূ ‘আওফার (রাঃ)-এর নিকট শুনেছি, আমি তাকে টিড্ডি খাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছয়-সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা তাঁর সঙ্গে একত্রে টিড্ডি খেয়েছি। সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে টিড্ডি খাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র অসংখ্য সৈন্যবাহিনী রয়েছে। আমি এগুলো খাই না এবং হারামও বলি না। [৩৮১৩] দুর্বল : মিশকাত (৪১৩৪)। সালমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে টিড্ডি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ এরা আল্লাহ্র অসংখ্য সৈনিক। [৩৮১৪] দুর্বলঃ এর পূর্বেরটি দেখুন।
ভেসে আসা মৃত মাছ খাওয়া সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমুদ্র যা নিক্ষেপ করে বা পানি সরে গেলে যা পাওয়া যায় তা খাও, আর যা মরে ভেসে উঠে তা খেও না। [৩৮১৫] দুর্বলঃ মিশকাত (৪১৩৩)।
যে ব্যক্তি মৃত প্রানী খেতে বাধ্য হয়
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজন নিয়ে হাররা নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বললো, আমার একটি উট হারিয়ে গেছে। তুমি তা পেলে ধরে রাখবে। সে উটটি পেয়ে গেলো কিন্তু মালিককে পেলো না। উটটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্ত্রী তাকে বললো, এটা যাবাহ করো, কিন্তু সে যাবাহ করতে সম্মত হলো না। উটটি মারা গেলে তার স্ত্রী বললো, এর চামড়া ছাড়াও তাহলে এর গোশত ও চর্বি আগুনে জ্বালিয়ে খেতে পারবো। স্বামী বললো, রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রশ্ন করে দেখি। সে তাঁর নিকট এসে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ তোমার নিকট এমন কি কিছু আছে যা তোমাকে মুর্দা খাওয়া হতে মুখাপেক্ষিহীন করতে পারে? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ তবে তা খাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উটের মালিক ফিরে এলে সে তাকে ঘটনা অবহিত করলো। সে বললো, তুমি যাবাহ করলে না কেন? সে বললো, তোমার উট যাবাহ করতে লজ্জাবোধ করেছি। ফুজায়ঈ আল- ‘আমিরী (রাঃ) তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, আমাদের জন্য কি মৃত প্রানী হালাল নয়? তিনি বললেনঃ কেন, তোমাদের খাদ্য কি? আমি বললাম, সকালে এক পিয়ালা দুধ এবং রাতে এক পিয়ালা দুধ খেয়ে থাকি। আবূ নু‘আইম বলেন, ‘উক্ববাহ আমার নিকট এরুপ ব্যাখ্যা করেছেনঃ সকালে এক পিয়ালা এবং রাতে এক পিয়ালা, আমার পিতার কসম! আমরা সম্পূর্ণ ক্ষুধার্ত থাকি। এমতাবস্থায় তাদের জন্য তিনি মৃত প্রানী খাওয়া হালাল করলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-গাবূক হচ্ছে রাতের পানীয় এবং আস-সাবূহ সকালের পানীয়। [৩৮১৭] সানাদ দুর্বলঃ মিশকাত (৪২৬১)
দুই রং-এর খাদ্য একত্র করা সম্পর্কে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুধ ও ঘিয়ে ভিজানো সাদা আটার সাদা রুটি আমার খুবই পছন্দ। লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি উঠে গিয়ে ঐ ধরনের রুটি তৈরি করে আনলো। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ ঘি কিরুপ পাত্রে ছিল? লোকটি বললো, গুই সাপের চামড়ার পাত্রে। তিনি বলেনঃ এটা তুলে নিয়ে যাও। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। [৩৮১৮] সানাদ দুর্বল : মিশকাত (৪২২৯)।
পনীর খাওয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূকের ময়দানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পনীরের একটি টিকা আনা হলে তিনি ছুঁড়ি নিয়ে ডাকলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে তা টুকরা টুকরা করলেন।
সিরকা সম্পর্কে
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেনঃ সিরকা হচ্ছে উত্তম তরকারী। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেনঃ সিরকা উত্তম তরকারী।
রসুন খাওয়া সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রসুন বা পিয়াজ খেয়েছে সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা আমাদের মাসজিদ হতে দূরে থাকে। সে যেন নিজের ঘরে বসে থাকে। তাঁর সামনে একত্রে রান্না করা বিভিন্ন প্রকার তরকারী ভর্তি একটি পাত্র আনা হলে তিনি তা হতে এক ধরনের ঘ্রান পেয়ে প্রশ্ন করলেন। তাঁকে পাত্রের মধ্যকার তরকারী সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বলেনঃ অমুক ব্যক্তির নিকট নিয়ে যাও। লোকটি তাঁর সাথেই ছিলো। তিনি যখন দেখলেন সে তা খেতে অপছন্দ করছে তখন তিনি বললেনঃ খাও। নিশ্চয়ই আমি এমন এক মহান সত্তার সাথে অতি গোপনে কথা বলি যাঁর সাথে তোমরা কথা বলতে পারো না। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে পিয়াজ-রসুন সম্পর্কে কথা উঠলো। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! এর মধ্যে রসূনের গন্ধটাই খুব বেশি। আপনি কি এটা হারাম করেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তা খেতে পারো। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তা খায় সে যেন মুখের গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই এ মাসজিদের নিকটে না আসে। [৩৮২৩] হুযাইফাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ক্বিবলাহ্র দিকে থুথু ফেলে, ক্বিয়ামাতের দিন সে ঐ থুথু নিজের দু’চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে। যে ব্যক্তি এ খারাপ তরকারী (পিয়াজ) খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদে না আসে। তিনি কথাটি তিনবার বলেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি এ গাছ (পিয়াজ) খাবে সে অবশ্যই যেন মাসজিদসমূহের নিকটে না আসে। আল-মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসুন খেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুসল্লায় সলাত পড়তে আসলাম। তখন এক রাক’আত শেষ হয়েছে। আমি মাসজিদে প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রসুনের গন্ধ পান। তিনি তাঁর সলাত শেষ করে বললেনঃ “যে ব্যক্তি এই গাছ (রসূন) হতে আহার করলো, তার মুখের দুর্গন্ধ দূর হওয়ার পূর্বে সে অবশ্যই যেন আমাদের নিকট না আসে”। আমি সলাত শেষ করে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্র কসম! অবশ্যই আপনার হাতটা আমাকে দিন। মুগীরাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর হাত জামার ভিতর দিয়ে আমার বুক পর্যন্ত ঢুকালাম। আমার বুকে পট্টি বাঁধা ছিলো। তিনি বললেনঃ এটা তোমার জন্য ওজর। মু’আবিয়াহ ইবনু কুররাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি গাছ খেতে বারন করেছেন। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ঐ গাছ দু’টো খাবে সে যেনো অবশ্যই আমাদের মাসজিদে না আসে। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমাদের যদি একান্তই এটা খেতে হয় তাহলে রান্না করে দুর্গন্ধ দুর করে খাও। বর্ণনাকারী বলেন, গাছ দু’টি হলো পিয়াজ ও রসুন। ‘আলি (রাঃ) তিনি বলেন, কাচাঁ রসুন খেতে নিষেধ করা হয়েছে। রান্না করে খাওয়াতে দোষ নেই। আবূ যিয়াদ খিয়ার ইবনু সালামাহ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)–কে পিয়াজ খাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ যে খাবার খেয়েছিলেন তাতে পিয়াজ ছিলো। [৩৮২৯]
খেজুর সম্পর্কে
ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখলাম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক টুকরা যবের রুটি নিয়ে তাতে একটি খেজুর রেখে বললেনঃ এই খেজুর এই রুটির তরকারী। [৩৮৩০] দূর্বলঃ মিশকাত (৪২২৩)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে খেজুর নেই সে ঘরের অধিবাসীরা অভুক্ত।
পোকায় ধরা খেজুর পরীক্ষা করে খাওয়া
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে পুরাতন খেজুর পরিবেশন করা হলে তিনি তা ছিঁড়ে এর মধ্য হতে পোকা খুঁজে বের করতে থাকেন। ইসহাক্ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ত্বালহা (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পোকায় ধরা খেজুর দেয়া হতো। বাকী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরুপ।
খাওয়ার সময় একত্রে দু’টি খেজুর নেয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তোমার সাথীর অনুমতি ছাড়া একত্রে দু’টি খেজুর তুলে খেতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।
দু’ ধরনের বস্তু একত্রে মিশিয়ে খাওয়া
‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাজা খেজুরের সাথে শসা খেতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেনঃ এর ঠান্ডা ওটার গরম কমাবে, এবং এর গরম ওটির ঠান্ডা কমিয়ে দিবে। বুসর আস-সুলামীর দুই পুত্রের সূত্র তারা উভয়ে বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলেন। আমরা তাঁকে পনীর ও খেজুর খেতে দিলাম। তিনি পনীর ও খেজুর খুব পছন্দ করতেন।
আহলে কিতাবের বাসনপত্র ব্যবহার সম্পর্কে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যুদ্ধে যোগদান করতাম। আমরা মুশরিকের পাত্র ও পানপাত্র নিয়ে তা ব্যবহার করতাম। এতে তিনি আমাদের কোনো দোষ ধরেননি। আবূ সা’লাবা আল-খুশানী (রাঃ) একদা তিনি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আরজ করলেন, আমরা আহলে কিতাবের এলাকায় যাতায়াত করি। তারা তাদের হাঁড়িতে শুকরের গোশত রান্না করে এবং তাদের পানপাত্রে মদ পান করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও তবে তাতে পানাহার করো। আর যদি তাদেরগুলা ছারা অন্য কোনো পাত্র না পাও তবে তাদেরগুলা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে তাতে পানাহার করো।
সমুদ্রে বিচরনশীল প্রানী সম্পর্কে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের একটি কাফেলাকে পাকড়াও করতে আমাদেরকে এক অভিযানে পাঠালেন। তিনি আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)–কে আমাদের অধিনায়ক বানালেন। তিনি আমাদের সাথে এক ব্যাগ খেজুরও দিলেন। এছাড়া আর কিছু আমাদের সাথে ছিলো না। আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ) প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিতেন। আমরা বাচ্চাদের মত তা চুষে খেতাম। অতঃপর পানি পান করতাম। এভাবে আমরা রাত পর্যন্ত সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। আমরা নিজেদের লাঠি দিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে তা পানিতে ভিজিয়ে খেয়েছি। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা সমুদ্রের কিনারার দিয়ে অগ্রসর হলাম। অতঃপর সমুদ্রের তীরে বালুর ঢিভির ন্যায় একটি বস্তু দেখা গেলো। আমরা গিয়ে দেখলাম, ওটা একটা সামুদ্রিক প্রানী, যার নাম আম্বর (তিমি) মাছ। আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) বলেন, এটা মৃত প্রানী, আমাদের জন্য হালাল নয়। অতঃপর তিনি মত পাল্টিয়ে বললেন, না! বরং আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিনিধি এবং আমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছি। তোমরাও সংকটাপন্ন অবস্হার সম্মুখীন হয়েছো, সুতরাং এটা খাও। জাবির (রাঃ) বলেন, কেবলমাত্র আমরাই সেখানে অবস্হান করেছিলাম। আমরা সংখ্যায় ছিলাম তিনশো। আমরা প্রতিদিন তা খেয়ে মোটাতাজা হয়ে গেলাম। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট ফিরে এসে তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ওটা ছিলো রিযিক। যা আল্লাহ তোমাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তোমাদের সাথে এর গোশত অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে আমাকে খাওয়াও। আমরা মাছের কিছু অংশ রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট পৌছালাম, তিনি তা খেলেন।
ঘি –এর মধ্যে ইদুরঁ পড়লে করনীয়
মাইমূনাহ (রাঃ) একটি ইদুরঁ ঘিয়ের মধ্যে পরে গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তা জানানো হলো। তিনি বললেনঃ এর চারপাশের ঘি ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট ঘি খাও। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি ঘিয়ের মধ্যে ইদুঁর পতিত হয় এবং তা জমাট বাধাঁ হয় তবে ইঁদুর ও তার চার পাশের ঘি ফেলে দিবে। ঘি যদি তরল হয় তবে তার নিকট যাবে না (খাবে না)। [৩৮৪২] শাযঃ মিশকাত (৪১২৩)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে মাইমুনাহ (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা ইবনুল মুসাইয়্যাব বর্ণিত যুহ্রীর হাদীসের অনুরূপ। [৩৮৪৩] সনদঃ পাওয়া যায়নি।
খাদ্যদ্রব্যে মাছি পড়লে করনীয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে মাছি পড়লে তা এর ভিতরে ডুবিয়ে দাও। কেননা তার এক ডানায় রোগ এবং অপর ডানায় নিরাময় রয়েছে। সে জীবাণুযুক্ত পাখা ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করে। কাজেই তা সম্পূর্নভাবে ডুবিয়ে দাও।
পতিত লোকমা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়া শেষ করে আঙ্গুল চাটতেন এবং বলতেনঃ তোমাদের কারো লোকমা পরে গেলে সে যেনো তার ময়লা দুর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। তিনি আমাদেরকে থালা পরিস্কার করে খেতে আদেশ দিয়ৈছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমাদের কেউই জানে না খাদ্যের কোন অংশে তার জন্য বরকত রয়েছে।
মালিকের সাথে চাকরের খাদ্য গ্রহণ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদেম যখন খাবার তৈরী করে তার জন্য পেশ করে; সে বাবুর্চিখানার উত্তাপ সহ্য করেছে; মালিক যেন তাকে সাথে নিয়ে খায়। খাদ্যের পরিমান কম হলে সে যেন অন্তত তার হাতে এক বা দুই লোকমা খাদ্য তুলে দেয়।
রুমাল ব্যবহার করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ আহার করার পর আঙ্গুল চেটে খাওয়ার বা খাওয়ানোর পূর্বে যেন রুমালে হাত না মুছে। ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন আঙ্গুল দিয়ে আহার করতেন এবং আঙ্গুল চেটে খাওয়ার আগে তা মুছতেন না।
খাওয়া শেষে যা বলতে হয়
আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, দস্তরখান তুলে নেয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “আল্লাহর জন্য অসংখ্য প্রশংসা, পবিত্রতা ও প্রাচুর্য অবিরতভাবে। হে আমাদের রব! আমরা যেন আপনার দেয়া রিযিক্ব হতে মুখাপেক্ষিহীন না হই।” আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়া শেষে বলতেনঃ “সেই আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন এবং মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করলেন।” [৩৮৫০] দুর্বলঃ মিশকাত (৪২০৪)। আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়া বা পান করার পর বলতেনঃ “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি খাওয়ালেন, পান করালেন, পেটে প্রবেশ করা সহজ করে দিলেন এবং এগুলো বের হওয়ারও ব্যবস্থা রাখলেন।”
খাওয়া শেষে হাত ধোয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হাত পরিষ্কার না করেই হাতে গোশতের গন্ধ ও তৈলাক্ততা নিয়ে ঘুমালো, এতে তার কোন ক্ষতি হলে এজন্য সে নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।
যিনি খাওয়ালেন খাওয়া শেষে তার জন্য দু‘আ করা
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবুল হাইসাম ইনুত তাইহান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য খাবার তৈরি করলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদেরকে তাঁর বাড়িতে দা‘ওয়াত করলেন। তারা খাওয়া শেষ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের ভাইয়ের প্রতিদান দাও। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার প্রতিদান কি? তিনি বললেনঃ কোন লোককে ঘরে প্রবেশ করিয়ে সেখানে পানাহার করানো হলে যদি তার (দা‘ওয়াতদাতার) জন্য দু’আ করা হয়, এটাই তার প্রতিদান। [৩৮৫৩] দুর্বল : ইরওয়া (১৯৯০)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ্র (রাঃ) বাড়িতে গেলেন। সা’দ (রাঃ) রুটি ও যাইতূন তৈল আনলেন। তা খাওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নিকট রোযাদারগণ ইফতার করেছে, সৎ লোকেরা তোমাদের খাদ্য খেয়েছে এবং ফেরেশতাগণ তোমার জন্য রহমাতের দু’আ করেছেন।