3. সালাতুল ইসতিস্‌কা (বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত)

【1】

ইসতিস্‌কা সালাত ও তার বর্ণনা

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) হতে তার চাচার সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। উভয় রাক‘আতে স্বরবে ক্বিরআত পাঠ করেন, অতঃপর স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নিয়ে দু’হাত উঠিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে ‘আব্বাদ ইবনু তামীম আল-মাযিনী (রহঃ) জানালেন, তিনি তার চাচাকে– যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যতম সহাবী ছিলেন- বলতে শুনেছেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসতিসকা সালাতের জন্য বের হলেন এবং লোকদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে মহা মহীয়ান আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন। বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু দাঊদ বলেন, তিনি ক্বিবলাহমুখী হয়ে স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নিয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। ইবনু আবূ যি’বের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি উভয় রাক‘আতে ক্বিরাআত পাঠ করেন। ইবনুস সারাহ্‌র বর্ণনায় রয়েছে, তিনি ক্বিরাআতে উচ্চস্বরে পাঠ করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। তবে মুসলিমে ক্বিরাআত ও উচ্চস্বরে পাঠের কথা নেই। মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) হতে নিজস্ব সানাদ তবে তার বর্ণনায় সালাত আদায়ের কথা উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, “তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নেন। তিনি ডান স্কন্ধের উপরে রাখা চাদরের ডান পার্শ্বকে বাম কাঁধের উপর এবং বাম কাঁধের উপরে রাখা চাদরের বাম পার্শ্বকে ডান কাঁধের উপর রাখলেন। তারপর মহা মহীয়ান আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির জন্য দু‘আ করেন। তখন তাঁর শরীরে কালো বর্ণের একটি চাদর জড়ানো ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদরের নীচের অংশকে উল্টিয়ে উপরে উঠানোর সময় ভারী বোধ করায় তিনি তা কাঁধের উপরে রেখেই উল্টিয়ে নেন।

【2】

ইসতিস্‌কার সালাত কখন চাদর উল্টিয়ে পরিধান করবে?

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসতিস্‌কা সালাত আদায়ের উদ্দেশে ঈদগাহে যান এবং যখন দু‘আর ইচ্ছে করেন তখন ক্বিবলাহমুখী হয়ে স্বীয় চাদরখানা উল্টিয়ে নেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ আল-মাযিনী (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ আল-মাযিনী (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে গিয়ে ইসতিস্‌কার সালাত আদায় করলেন। তিনি ক্বিবলাহমুখী হওয়ার সময় স্বীয় চাদরখানা উল্টিয়ে নিলেন। সহীহঃ মুসলিম। হিশাম ইবনু ইস্‌হাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কিনানাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতিকার সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে আল-ওয়ালীদ ইবনু ‘উতবাহ আমাকে ইবনু ‘আব্বাসের নিকট পাঠালেন। ‘উসমান ইবনু ‘উক্ববাহ বলেন, ওয়ালীদ ইবনু ‘উতবাহ তখন মাদীনাহ্‌র গভর্ণর ছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরাতন বেশভূষায় ভয় ও বিনয়ী অবস্থায় বের হয়ে ঈদগাহে গেলেন। অতঃপর তিনি মিম্বারে উঠেন এবং প্রচলিত নিয়মে খুত্ববাহ না দিয়ে তিনি সারাক্ষণ কাকুতি-মিনতি, দু’আ ও তাকবীর পাঠেরত ছিলেন। অতঃপর তিনি ঈদের সলাতের মত দু' রাক’আত সলাত আদায় করেন।

【3】

ইসতিস্‌কার সলাতে দু’হাত উত্তোলন সম্পর্কে

বনী আবূল লাহ্‌মের মুক্তদাস উমাইর (রাঃ) তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘আযযাওরার’ নিকটবর্তী ‘আহ্‌জারুয্‌ যায়িত’ নামক স্থানে ইসতিস্‌কার সলাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি বৃষ্টি বর্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে হাত দু’টিকে চেহারার সম্মুখে মাথার উপরিভাগ পর্যন্ত উঠিয়ে দু’আ করেছেন। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়)। আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতিস্‌কা ছাড়া অন্য কোন দু’আতে দু’ হাত উঠাননি। তিনি হাত দু’টিকে এতটুকু উঠাতেন যে, তাঁর বগলদ্বয়ের সাদা অংশ দেখা যেত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টির জন্য এরূপে দু’আ করেছেন। অর্থাৎ তিনি দু' হাত প্রশস্ত করে দু’ হাতের তালুকে যমীনের দিকে রেখেছেন। এমনকি আমি তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখেছি। সহীহঃ মুসলিম সংক্ষেপে। মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, এ হাদীস আমাকে এমন এক ব্যক্তি অবহিত করেছেন, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ‘আহ্‌জারুয্‌ যায়িত’ নামক স্থানের সন্নিকটে দু' হাত প্রশস্ত করে দু’আ করতে দেখেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে লোকজন অনাবৃষ্টির অভিযোগ পেশ করলে তিনি একটি মিম্বার স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। সেটি তাঁর ঈদগাহে রাখা হলো এবং তিনি লোকদেরকে ওয়াদা দিলেন যে, তিনি তাদেরকে নিয়ে একদিন সেখানে যাবেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উদিত হওয়ার পর বের হয়ে মিম্বারের উপর বসে তাকবীর বলে মহা মহীয়ান আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং বলেনঃ তোমরা তোমাদের অনাবৃষ্টির অভিযোগ করেছ। অথচ মহান আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন তোমরা তাকে ডাকো, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে ওয়াদাবদ্ধ। অতঃপর তিনি বলেনঃ সকল প্রশংসা বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর জন্য, যিনি দয়ালু ও অতিশয় মেহেরবান, শেষ বিচারের দিনের মালিক। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করেন। হে আল্লাহ! আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আপনি সম্পদশালী আর আমরা ফকীর ও মুখাপেক্ষী। কাজেই আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং আপনি যা কিছু বর্ষণ করবেন, তদ্‌দ্বারা আমাদের জন্য প্রবল শক্তি ও প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌছার ব্যবস্থা করে দিন। অতঃপর তিনি দু’ হাত এতোটা উঁচু করলেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা গেলো। অতঃপর হাত উঠানো অবস্থায়ই তিনি লোকদের দিকে স্বীয় পিঠ ঘুরিয়ে দিয়ে চাদরটি উল্টিয়ে নিলেন। এরপর তিনি লোকজনের দিকে ফিরে মিম্বার হতে নেমে দু' রাকা’আত সলাত আদায় করলেন। এ সময় মহান আল্লাহ এক খণ্ড মেঘের আবির্ভাব ঘটালেন, যার মধ্যে গর্জন ও বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টিপাত হলো। এমনকি তিনি মসজিদ পর্যন্ত আসতে না আসতেই পথপঘাট পানিতে প্লাবিত হয়ে গেলো। যখন লোকজনকে বাড়ি-ঘরের দিকে দৌড়াতে দেখলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে হাসলেন যে, তার সামনের পাটির দাঁত দেখা গেলো। অতঃপর তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চই আল্লাহ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতবান এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব। তথাপি হাদীসটির সানাদ ভাল। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় একবার মাদীনাহ্‌বাসী দুর্ভিক্ষে পতিত হয়। ঐ সময়ের জুমু’আহর দিন তিনি আমাদের উদ্দেশে খুত্ববাহ দানকালে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! (অনাবৃষ্টির কারণে) উট-বকরি ইত্যাদি প্রায় ধ্বংসের মুখে। সুতরাং আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণের দু’আ করুন। অতঃপর তিনি হাত প্রসারিত করে দু’আ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি দু’আ করার পূর্বে পর্যন্ত আকাশ মেঘমুক্ত স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিস্কার ছিল, (দু’আ করার পর) হঠাৎ বায়ু প্রবাহিত হয়ে এক খণ্ড মেঘ প্রস্তুত হলো, অতঃপর বিভিন্ন খণ্ড একত্র হয়ে আকাশে অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষিত হলো। এমনকি আমরা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িঘরে ফিরে এলাম এবং একটানা পরবর্তী জুমু’আহ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে থাকলো। এ জুমু’আহতে ঐ লোক অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! (অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে) ঘর-বাড়ি ধসে যাচ্ছে, কাজেই বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তার কথায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে দু’আ করলেন, (হে আল্লাহ!) আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি দাও, আমাদের উপরে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, তা মদীনাহ্‌র আশেপাশে উঁচু উঁচু সুদৃশ্য চূড়ার মত বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সহীহঃ বুখারী। মুসলিম সংক্ষেপে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু’ হাত স্বীয় চেহারা বরাবর উঠিয়ে দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। অতঃপর পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম সংক্ষেপে। ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) তার পিতা হতে তার দাদার সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির জন্য দু’আ করার সময় বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দাদের ও প্রাণীদেরকে পানি দান করুন, আপনার রহমাত বিস্তৃত করুন এবং আপনার মৃত শহরকে (শুস্ক ভূমিকে) জীবিত করুন।

【4】

সূর্যগ্রহণের সলাত

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর রুকু’ করে আবার দাঁড়ালেন। আবার রুকু’ করলেন এবং আবার দাঁড়ালেন। অতঃপর রুকু’ করলেন। এভাবে দু' রাক'আত সলাত আদায় করলেন এবং প্রত্যেক রাক'আতে তিনটি করে রুকু’ করার পর সাজদাহ্ করলেন। সলাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে কতিপয় লোক অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তাদের উপর পানি ঢালা হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ করার সময় 'আল্লাহু আকবার’; আর রুকু’ হতে মাথা উঠানোর সময় 'সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ' বলেছেন এবং তাঁর সলাত অবস্থায়ই সূর্যগ্রহণ শেষ হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বললেনঃ সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণ কারোর জন্ম বা মৃত্যুর কারণে হয় না, বরং তা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দু'টি নিদর্শন। তিনি এর দ্বারা স্বীয় বান্দাদেরকে ভয় দেখিয়ে থাকেন। সুতরাং কখনো গ্রহণ হলে তোমরা সলাত আদায়ে মনোনিবেশ করবে। সহীহঃ মুসলিম। কিন্তু (তিন রাক’আত) কথাটি শায। মাহফূয হচ্ছেঃ (দুই রাক’আত)। যেমন বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। এছাড়া সামনে ১১৮০ নং এ আসছে।

【5】

যিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের সলাতে রুকূ’ হবে চারটি

জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুর দিনে সূর্যগ্রহণ হলে লোকজন মন্তব্য করলো, ইবরাহিমের মৃত্যুর কারনেই গ্রহণ লেগেছে। অতঃপর তিনি লোকদেরকে নিয়ে চার সাজদাহ্‌ ও ছয় রুকূ’সহ সালাত আদায় করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর বলে সলাত আরম্ভ করে দীর্ঘক্ষণ ক্বিরাআত পড়েন। অতঃপর দাড়ানোর অনুরূপ সময় রুকূ’তে অতিবাহিত করেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে প্রথমবারের চেয়ে কিছুটা কম সময় ক্বিরআত পড়েন। অতঃপর দাড়ানোর অনুরূপ সময় রুকু’তে অতিবাহিত করেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে তৃতীয়বারের ক্বিরাআত পড়েন যা ছিল দ্বিতীয়বারের চেয়ে কিছুটা কম। অতঃপর তিনি রুকু’তে গিয়ে দাড়ানোর অনুরূপ সময় অতিবাহিত করে মাথা উঠান, অতঃপর সাজদাহ্‌ করেন। তিনি দু’টি সাজদাহ্‌ করার পর দ্বিতীয় রাক’আতের জন্য দাড়ান এবং এ রাক’আতেও তিনি সাজদাহ্‌র পূর্বে তিনটি রুকু’ করেন। তাঁর দ্বিতীয় রাক’আতে দাড়ানোর সময়ও দীর্ঘ ছিল, তবে তা প্রথম রাক’আতের প্রত্যেকটি ক্বিয়ামের চেয়ে কম সময় ছিল এবং রুকু’তে অবস্থানের সময় ছিল দাড়ানোর সমপরিমাণ। অতঃপর তিনি সালাতের মধ্যেই পেছনের দিকে সরে আসেন, ফলে মুসল্লীদের কাতারগুলোও তাঁর সাথে সাথে সরে গেল। অতঃপর তিনি আবার সস্থানে আসলে সবগুলো কাতার সম্মুখে অগ্রসর হয়। এভাবে তিনি সালাত সমাপ্ত করলেন এবং এ সময়ের মধ্যে সূর্যও গ্রহণমুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে লোকেরা! নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দু’টি নিদর্শন। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। অতএব তোমরা গ্রহণ হতে দেখলে তা গ্রাসমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় করবে। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ও এভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহিহঃ মুসলিম। কিন্তু (ছয় রাক’আত) কথাটি শায। মাহফুজ হচ্ছে (চার রাক’আত। যেমন সামনে আসছে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে প্রচন্ড গরমের দিনে সূর্যগ্রহণ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি এত দীর্ঘ সময় সালাতে দাড়িয়ে থাকলেন যে, লোকজন বেহুশ হয়ে পড়ছিল। তিনি দীর্ঘক্ষণ রুকূ’ করলেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। অতঃপর দু’টি সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাক’আতেও প্রায় প্রথম রাক’আতের অনুরূপ করলেন। এতে পুরো সলাত চার রুকু’ ও চার সাজদাহ্‌ বিশিষ্ট হলো। এরপর বর্নণাকারী পুরো হাদিস বর্ণনা করেন। সহিহঃ মুসলিম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের দিকে বের হন। তিনি আল্লাহু আকবার বলে সালাত আরম্ভ করেন এবং লোকজন তাঁর পেছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর তিনি লম্বা ক্বিরাআত পাঠ করেন, তারপর তাকবীর বলে রু’কুতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাতে অতিবাহিত করেন। এরপর মাথা তুলে "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌ রব্বানা ওয়ালাকাল হাম্‌দ" বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর আবার লম্বা ক্বিরাআত পড়েন, তবে তা প্রথমবারের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর তাকবীর বলে দীর্ঘক্ষণ রুকু’ করেন, তবে তা প্রথমবারের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদা্‌হ্‌ ,রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ " বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক’আতেও অনুরূপ করেন। এভাবে তিনি পুরো সলাত চার রুকু’ ও চার সাজদাহ্‌ সহকারে আদায় করেন। সালাত শেষে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই সূর্য গ্রাসমুক্ত হয়ে যায়। সহিহঃ বুখারী ও মুসলিম। কাসীর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) 'আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদিস বর্ণনা করতেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণ এর সময় সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর অবশিষ্ট বর্ণনা 'উরওয়াহ হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। তিনি বলেন, তিনি দু' রাক’আত সলাত আদায় করেছেন এবং প্রতি রাক’আতে দু'টি করে রুকূ’ করেছেন। সহিহঃ বুখারি ও মুসলিম। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি সলাতে দীর্ঘ সূরাহ তিলাওয়াত করেন। তিনি প্রথম রাক’আতে পাচটি রুকূ’ ও দুটি সাজদাহ্‌ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক’আতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সূরাহ তিলাওয়াত করেন। তাতেও পাঁচটি রুকূ’ ও দু'টি সাজদাহ্‌ করেন। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে বসে দু'আ করতে থাকেন। এমতাবস্থায় সূর্য গ্রাসমুক্ত হয়ে যায়। [১১৮২] উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করেন। তিনি তাতে ক্বিরাআত পড়ে রুকূ’ করেন, অতঃপর ক্বিরাআত পড়ে রুকূ’ করেন, পুনরায় ক্বিরাআত পড়ে রুকূ’ করেন, আবার ক্বিরাআত পড়ে রুকূ’ করেন, অতঃপর সাজদাহ্‌ করেন এবং দ্বিতীয় রাক’আতেও অনুরূপ করেন। (অর্থাৎ প্রতি রাক’আতে চারটি রুকূ’)। [১১৮৩] সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও এক আনসারী যুবক তীর চালনা করছিলাম। এমন সময় সূর্য যখন লোকদের নজরে আনুমানিক দুই বা তিন তীর পরিমাণ উপরে উঠেছিল তখন তা কালজিরা বা কালো ফলের মত হয়ে যায়। তখন আমাদের একজন তার সাথীকে বলল, চলো মসজিদে যাই। আল্লাহর শপথ, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মাতের উপর এ সূর্যের কারণে নিশ্চয়ই নতুন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা গিয়ে দেখি, তিনি বেরিয়ে এসে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে সলাত আরম্ভ করেছেন। তিনি আমাদেরকে নিয়ে সলাতে এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, ইতিপূর্বে কখনো তিনি এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াননি। তবে (নিঃশব্দে ক্বিরাআত পড়ায়) আমরা সলাতের মধ্যে তাঁর কোন শব্দ শুনতে পাইনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে রুকূ’ করলেন এবং এত লম্বা রুকূ’ করলেন যে, ইতিপূর্বে কখনো এত দীর্ঘ রুকূ’ করেননি। এতেও আমরা তাঁর (তাসবীহ পাঠের) শব্দ শুনতে পাইনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি এত দীর্ঘ সাজদাহ্‌ করলেন যে, ইতিপূর্বে সলাতে কখনো এরূপ দীর্ঘ সাজদাহ্‌ করেননি। এতেও আমরা তাঁর কোনও শব্দ শুনতে পাইনি। অতঃপর দ্বিতীয় রাক’আতেও অনূরুপ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি দ্বিতীয় রাক’আতে বসা অবস্থায় থাকতেই সূর্য গ্রাসমুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি সালাম ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করে সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দেন যে, তিনি তাঁর বান্দাহ্‌ ও রসূল। অতঃপর আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) তার বর্ণনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভাষণের বর্ণনা দেন। [১১৮৪] ক্বাবীসাহ আল-হিলালী (রাঃ) তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় কাপড় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে খুব ভয়ের সাথে বের হলেন। তখন আমি তার সাথে মদিনায় ছিলাম। তিনি দু' রাক’আত সলাত আদায় করালেন এবং এতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁর সলাত শেষ হলে সূর্য গ্রাসমুক্ত হয়ে যায়। এরপর তিনি বলেন, নিশ্চয় এগুলো হচ্ছে নিদর্শন, মহান আল্লাহ এর মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করেন। সুতরাং যখন তোমরা এরূপ দেখবে, তখন এর পূর্বে তোমাদের আদায়কৃত (ফাজরের) ফারয সলাতের ন্যায় সলাত আদায় করবে। [১১৮৫] হিলাল ইবনু ‘আমির (রাঃ) ক্বাবীসাহ আল-হিলালী (রাঃ) তাকে বলেছেন, একদা সূর্যগ্রহণ হয়। অতঃপর মূসা বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ। তিনি বলেন, গ্রহণের কারণে সূর্য এমনভাবে আচ্ছন্ন হয়েছিল যে, তারকারাজি পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। [১১৮৬]

【6】

সূর্যগ্রহণের সলাতের ক্বিরআত

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে সূর্যগ্রহণ হওয়ায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এসে লোকদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তিনি দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘক্ষণ ক্বিরআত পাঠ করেন যে, আমি অনুমান করে দেখেছি যে, তিনি সূরাহ বাক্বারাহ তিলাওয়াত করেছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীসের বাকী অংশ বর্ণনা করেন। এরপর তিনি দু’টি সাজদাহ্ করেছেন। তারপর দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘ ক্বিরাআত পাঠ করেন যে, আমি অনুমান করেছি যে, তিনি সূরাহ আলে-‘ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সূর্যগ্রহণের সলাতে) স্বরবে অত্যাধিক দীর্ঘ ক্বিরাআত পাঠ করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সূর্যগ্রহন হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত এবং তাঁর সাথের লোকেরা সলাত আদায় করেন। তিনি (সলাতে) সূরাহ আল-বাক্বারাহ পড়ার সমপরিমাণ সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপর রুকূ’ করেন। এরপর বর্ণনাকারী হাদীসের বাকী অংশটি বর্ণনা করেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【7】

সূর্যগ্রহণের সলাতের জন্য আহবান করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সূর্যগ্রহণ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ করেন যে, সলাতের জামা’আত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে (কাজেই তোমরা একত্রিত হও)। সহীহঃ মুসলিম। বুখারী তা’লীক্বভাবে।

【8】

সূর্যগ্রহণের সময় সদাক্বাহ করার নির্দেশ

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা (সংঘটিত হতে) দেখবে তখন মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট দু’আ করবে, তাকবীর বলবে এবং সদাক্বাহ করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম

【9】

সূর্যগ্রহণের সময় গোলাম আযাদ করা

আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণের সলাতের সময় গোলাম আযাদ করার আদেশ দিতেন। সহীহঃ বুখারী।

【10】

যিনি বলেন, সূর্যগ্রহণের সময় দু’ রাক’আত সলাত আদায় করবে

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে তিনি দু’ দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন এবং সূর্য গ্রহণমুক্ত হয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করেতে থাকেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়ান। তিনি এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, রুকূতেই যাচ্ছেন না। অতঃপর রুকূ’ করলেন এবং এত দীর্ঘক্ষণ রুকূ’ করলেন যে, মাথা উঠাবেন বলে মনে হলো না, অবশ্য পরে উঠালেন এবং এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, সাজদাহ্‌ করার সম্ভাবনাই থাকলো না। অতঃপর সাজদাহ্‌ করলেন এবং এত দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্‌ করলেন যে, মাথা উঠানোর সম্ভাবনাই থাকলো না। অবশ্য পরে মাথা ঊঠালেন এবং প্রথম সাজদাহ্‌র পর এত দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেন যে, দ্বিতীয় সাজদাহ্‌ করবেন বলে সম্ভাবনা দেখা গেলো না। অতঃপর সাজদাহ্‌য় গিয়ে এত দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্‌ করলেন যে, মাথা উঠাবেন বলে মনে হলো না, অতঃপর উঠালেন এবং দ্বিতীয় রাক’আতেও অনুরূপ করলেন। পরে তিনি সর্বশেষ সাজদাহ্‌র মধ্যে উহঃ উহঃ শব্দ করলেন এবং বললেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি কি আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দেননি যে, আমার বর্তমানে আপনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, তারা ক্ষমা চাইতে থাকলে আপনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? এ বলে তিনি সলাত হতে অবসর হলে সূর্যও গ্রাসমুক্ত হয়ে যায়। আর এভাবেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সহীহঃ কিন্তু দুই রুকূ’ উল্লেখসহ। যেমনটি বুখারী ও মুসলিমে আছে। ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় একটি জায়গাতে আমি তীর চালনা শিখছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ হলে আমি তীরগুলো ফেলে দিয়ে বলি, আজ সূর্যগ্রহণের দরুন রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্য কি ঘটে, তা অবশ্যই স্বচক্ষে দেখবো। আমি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলাম, তিনি দু’হাত উঠিয়ে তাসবীহ, তাহমীদ, কালিমাহ ও দু’আ পাঠরত আছেন। অবশেষে সূর্য গ্রাসমুক্ত হয়ে গেল। তিনি দু’টি সূরার দ্বারা দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ মুসলিম সংক্ষেপে।

【11】

দুর্যোগকালে সলাত আদায়

‘উবায়দুল্লাহ ইবনুন নাদর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, একদা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সময় একবার (আকাশ) অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে আমি আনাস (রাঃ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু হাম্‌যাহ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আপনারা কখনো এরূপ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন কি? তিনি বললেন, “আল্লাহ পানাহ! তখন একটু জোরে বাতাস প্রবাহিত হলেই আমরা ক্বিয়ামাত হবার আশংকায় দ্রুত দৌড়িয়ে মাসজিদে যেতাম। [১১৯৬]

【12】

বিপদের আলামাত দেখে সাজদাহ্‌ করা

‘ইকরিমাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক স্ত্রীর ইন্তেকালের সংবাদ দেয়া হলে তিনি সাজদাহ্‌য় লুটে পড়লেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ সময় সাজদাহ্‌ করার কারণ কি? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন নিদর্শন দেখবে, তখন সাজদাহ্‌ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীর ইন্তিকালের চেয়ে বড় নিদর্শন (বিপদ) আর কি হতে পারে! [১১৯৭]