31. দাসত্বমুক্তি

【1】

চুক্তিবদ্ধ গোলাম কৃত শর্তের কিছু পরিশোধের পর অপারগ হলে বা মারা গেলে

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘মুকতাব’ গোলাম আযাদ হওয়ার জন্য যে পরিমাণ মুদ্রা দেয়ার শর্ত আরোপ করে, তা হতে এক দিরহাম অবশিষ্ট থাকলেও সে গোলামই থেকে যাবে। [৩৯২৬] ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে গোলাম তার মনিবকে একশো ‘ঊকিয়া’ দিয়ে আযাদ হওয়ার চুক্তি করে নব্বই ঊকিয়া দিয়েছে সে গোলামই রয়ে গেলো। আর যে গোলাম একশো দীনার চুক্তি করে নব্বই দীনার আদায় করেছে, সেও গোলাম রয়ে গেলো। [৩৯২৭] উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের কারো যদি মুকাতাব গোলাম থাকে এবং সে চুক্তিতে আরোপিত মূল্য প্রদানের যোগ্যতা রাখে, তবে তোমরা তার থেকে পর্দা করো। [৩৯২৮]

【2】

মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ গোলাম)-এর চুক্তি ভঙ্গ হলে তাকে বিক্রি করা

‘উরওয়াহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেন, একদা বারীরাহ নাম্নী নামক এক মুকাতাবা দাসী চুক্তিকৃত মূল্য পরিশোধে সাহায্য চাইতে তাঁর নিকট এলো। সে তখন পর্যন্ত চুক্তিপত্রের কিছুই শোধ করেনি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি মনিব পরিবারে গিয়ে বলো, তারা চাইলে আমি তোমার চুক্তির সমস্ত মূল্যই পরিশোধ করবো এবং আমি তোমার উত্তরাধিকারী হবো। বারীরাহ তাই করলো। কিন্তু মনিব পরিবার রাজি না হয়ে বললো, তিনি ইচ্ছা করলে নেকীর আশায় তোমার এ উপকার করতে পারেন; কিন্তু আমরাই তোমার উত্তরাধিকারী থাকবো। একথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বলা হলে তিনি তাকে বললেনঃ তুমি ওকে কিনে মুক্ত করে দাও। বস্তুত যে আযাদ করে, উত্তরাধিকার স্বত্ব তারই প্রাপ্য। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেনঃ লোকেদের কি হলো? এরা এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। আর আল্লাহর কিতাবে নেই এরূপ শর্ত একশো বার করলেও সে তার হকদার নয়। আল্লাহর শর্তই সত্য ও সবচেয়ে মজবুত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বারীরাহ তার চুক্তি মোতাবেক মূল্য পরিশোধে সাহায্য চাইতে এসে বললো, আমি আমার মনিব পরিবারের সাথে প্রতি বছর এক ঊকিয়া করে নয় ঊকিয়া দেয়ার চুক্তিতে দলীল করেছি। কাজেই আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন, তোমার মনিব পরিবার সম্মত হলে চুক্তির পুরো মূল্য একসঙ্গে আদায় করে তোমাকে মুক্ত করবো। আর আমি হবো তোমার উত্তরাধিকারী। এ প্রস্তাব নিয়ে বাঁদী তার মনিবের নিকট গেলো। অতঃপর যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে যুহরীর বর্ণনার শেষ দিকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ কথাটুকু রয়েছেঃ মানুষের কী হলো যে, তাদের কেউ বলে, হে অমুক! তুমি আযাদ করে দাও, কিন্ত উত্তরাধিকার স্বত্ব আমার। অথচ নিঃসন্দেহে উত্তরাধিকার স্বত্ব আযাদকারীর জন্যই নির্ধারিত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বনী মুস্তালিক যুদ্ধে ‘জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস ইবনুল মুস্‌তালিক’ বন্দিনী হয়ে সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাস (রাঃ) বা তার চাচাত ভাইয়ের ভাগে পড়েন। অতঃপর তিনি নিজেকে আযাদ করার চুক্তি করেন। তিনি খুবই সুন্দরী নারী ছিলেন, নজর কাড়া রূপ ছিল তার। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি চুক্তির অর্থ চাইতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলেন। তিনি দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমি তাকে দেখে অসন্তুষ্ট হলাম। আমি ভাবলাম, যে রূপ-লাবন্যে তাকে দেখেছি, শিঘ্রই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাকে এভাবে দেখবেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস, আমার সামাজিক অবস্থান অবশ্যই আপনার নিকট স্পষ্ট। আমি সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাসের ভাগে পড়েছি। আমি মুক্ত হওয়ার চুক্তিপত্র করেছি, চুক্তির নির্ধারিত অর্থ আদায়ে সাহায্য চাইতে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো কি? তিনি বললেন, কী প্রস্তাব, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আমি চুক্তির সমস্ত পাওনা শোধ করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুয়ায়রিয়াহকে বিয়ে করেছেন, একথা সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেলো। তারা তাদের আওতাধীন সমস্ত বন্দীকে আযাদ করে ছাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, এরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শ্বশুর বংশের লোক। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। শুধু তার মাধ্যমে বনী মুস্তালিকের একশো পরিবার আযাদ হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসক সরাসরি বিয়ে করতে পারেন।

【3】

শর্তসাপেক্ষে দাসত্বমুক্তি

সাফীনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্‌র (রাঃ) কৃতদাস ছিলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাকে আযাদ করবো এ শর্তে যে, যতো দিন তুমি জীবিত থাকবে, রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেদমত করবে। আমি বললাম, আপনি যদি এ শর্ত আরোপ নাও করতেন, তবুও আমি আমার জীবদ্দশা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গ ত্যাগ করতাম না। অতঃপর তিনি আমাকে উক্ত শর্তে আযাদ করলেন।

【4】

কেউ শরীকানা গোলামের নিজ অংশ মুক্ত করলে

আবুল ওয়ালীদ (রহঃ) হতে তার পিতা এক ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন কৃতদাসে তার অংশ মুক্ত করলো। অতঃপর এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছলে তিনি বলেনঃ আল্লাহর কোন শরীক নেই। ইবনু কাসীরের (রহঃ) বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মুক্ত করার অনুমতি দিলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি যৌথ মালিকানাভুক্ত কৃতদাসের তার অংশ আযাদ করে দিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাসত্বমুক্তির অনুমতি দিয়ে তাকে তার অবশিষ্ট অংশের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করতে বললেন। ক্বাতাদাহ (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন দাস হতে তার অংশ আযাদ করে দেয়, তার কর্তব্য হলো তাকে পূর্ণভাবে আযাদের ব্যবস্থা করা। ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে তার নিজ সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যৌথ মালিকানাধীন দাস থেকে যে ব্যক্তি তার নিজের অংশ আযাদ করবে, সে যদি সম্পদশালী হলে তার সম্পদ খরচ করে বাকী অংশও যেন আযাদ করে দেয়।

【5】

গোলামকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে কাজ করানো

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাভুক্ত কৃতদাসের নিজের অংশ আযাদ করে সে মালদার হলে সম্পূর্ণ আযাদ করার ব্যবস্থা করা উচিত। সম্পদশালী না হলে কঠিন পরিশ্রমে না ফেলে দাসকে দিয়ে কাজ করাতে পারে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাভুক্ত কৃতদাসের নিজের অংশ আযাদ করে, সে সম্পদশালী হলে তার কর্তব্য হলো তাকে পূর্ণভাবে আযাদ করার ব্যবস্থা করা। আর সে সম্পদশালী না হলে গোলামটির সঠিক মূল্য নিরূপণ করার পর গোলামের দ্বারা সাধ্য মোতাবেক কাজ করাবে। অতঃপর তার পারিশ্রমিকের অর্থ দ্বারা মূল্য আদায় করবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উভয় বর্ণনাকারীর বক্তব্য হলো : ‘তাকে দিয়ে সহজসাধ্য পরিশ্রম করাবে’। সাঈদ (রহঃ) সাঈদ (রহঃ) হতে তার সানাদে অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কোন বর্ণনায় শব্দটি উল্লেখ আছে এবং কোন বর্ণনায় নেই। [৩৯৩৯]

【6】

যারা বলেন, গোলামকে কাজে লাগানো যাবে না

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি যৌথ মালিকানাভুক্ত কৃতদাসের নিজের অংশ মুক্ত করলে তার সঠিক মূল্য নিরূপণ করতে হবে। অতঃপর সে অন্য শরীকদের অংশও পরিশোধ করবে এবং এর বিনিময়ে গোলামটি আযাদ হবে। অন্যথায় তাকে যতটুকু আযাদ করা হয়েছে সে ততটুকুই আযাদ হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, নাফি’ কখনো অর্থাৎ “যা আযাদ করলো তা করলোই” এরূপ বলেছেন, আবার কখনো তা বলেননি। [৩৯৪১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। আইয়ূব (রহঃ) বলেন, আমি অবহিত নই, হাদীসের “যা আযাদ করলো তা করলোই” কথাটুকু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাকি নাফি’ (রহঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য। [৩৯৪২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরীকানা গোলামের নিজের অংশ আযাদ করে দেয়, তার নিকট যদি এ গোলামের সম্পূর্ণ মূল্য পরিমাণ মাল থাকে, তবে তার উচিত তাকে পূর্ণভাবে আযাদ করা। আর যদি এ পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তবে সে তার অংশ পরিমাণই আযাদ হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে ইবরাহীম ইবনু মূসা বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। [৩৯৪৪] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে মালিক বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। তবে এতে “সে তার অংশ পরিমাণই আযাদ হবে” কথাটুকু উল্লেখ নেই। তার বর্ণিত হাদীস [...আরবী...] একথায় গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। [৩৯৪৫] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কেউ শরীকানা গোলামের নিজের অংশ আযাদ করলে তার নিকট এ গোলামের পুরো মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার উচিত, অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে তাকে আযাদ করার ব্যবস্থা করা। সালিম (রহঃ) হতে তার পিতা সালিম (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত এবং এ সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছে। তিনি বলেনঃ দুই মনিবের মালিকানাধীন একটি কৃতদাসকে এক মনিব তার অংশ আযাদ করলো। আযাদকারী মনিব যদি সম্পদশালী হয়, তবে তার উচিত হলো গোলামটির যথার্থ মূল্য না কমিয়ে না বাড়িয়ে ধার্য করে তাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা। ইবনুত তালিব্বা (রহঃ) হতে তার পিতা এক ব্যক্তি শরীকানা গোলামের নিজের অংশ মুক্ত করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অবশিষ্ট অংশ মুক্ত করতে বাধ্য করেননি। [৩৯৪৮]

【7】

কেউ রক্ত সম্পর্কীয় মুহাররাম গোলামের মালিক হলে

সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কারো মালিকানায় কোন নিকটাত্মীয় ‘মুহাররাম’ দাস হয়ে আসলে সে আযাদ। ক্বাতাদাহ (রহঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, কারো মালিকানায় যদি নিকটাত্মীয় মুহাররাম ব্যক্তি গোলাম থাকে তবে সে সরাসরি আযাদ। [৩৯৫০] ক্বাতাদাহ (রহঃ) হাসান (রহঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি নিকট আত্মীয়ের মনিব হলে, সে সরাসরি মুক্ত। [৩৯৫১] ক্বাতাবাহ (রহঃ) জাবির ইবনু যায়িদ এবং হাসানের সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন হাম্মাদের তুলনায় সাঈদ (রহঃ) অধিক স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন। [৩৯৫২]

【8】

উম্মু ওয়ালাদ আযাদ হওয়া

খারিজাহ ক্বায়িস ‘আইলান গোত্রের সালামাহ বিনতু মা’ক্বিল (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমার চাচা আমাকে মদীনায় এনে আবুল ইয়াসার ইবনু ‘আমরের ভাই হুবাব ইবনু ‘আমরের নিকট বিক্রি করেন। অতঃপর আমি হুবারের পুত্র ‘আবদুর রহমানকে প্রসব করি। পরবর্তীতে হুবার মারা গেলে তার স্ত্রী বলেন, আল্লাহর কসম! এখন তুমি তার ঋণের জন্য বিক্রি হবে। একথা শুনে আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খারিজাহ ক্বায়িস ‘আইলান গোত্রের মহিলা। জাহিলী যুগে আমার চাচা আমাকে নিয়ে মাদীনাহ্‌তে আসেন এবং আবুল ইয়াসার ইবনু ‘আমরের ভাই হুবার ইবনু ‘আমরের নিকট আমাকে বিক্রি করেন। অতঃপর আমার গর্ভে ‘আবদুর রহমান ইবনু হুবার জন্মগ্রহণ করে। তার স্ত্রী বলেন, আল্লাহর কসম! এখন তুমি তার ঋণের জন্য বিক্রি হবে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হুবারের অভিভাবক কে? বলা হয়, তার ভাই আবুল ইয়াসার ইবনু ‘আমর। অতঃপর তিনি তার নিকট বলে পাঠালেন, মেয়েটিকে তোমরা মুক্ত করে দাও। আর যখনই শুনবে, আমার নিকট কোন গোলাম এসেছে, তখনই তোমরা আসবে এবং আমি এর বিনিময়ে তাকে তোমাদেরকে প্রদান করবো। মহিলাটি বলেন, তারা আমাকে মুক্ত করে দিলো। পরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট একটি গোলাম এলে তিনি তাকে আমার বিনিময়ে তাদের দিয়ে দিলেন। [৩৯৫৩] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্‌রের যুগে উম্মু ওয়ালাদ বাঁদীদেরকে বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে ‘উমারের (রাঃ) যুগে তিনি আমাদের বারণ করায় আমরা বিরত হই।

【9】

মুদাব্বার গোলাম বিক্রি করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক লোক তার কৃতদাসকে এরূপ শর্ত দিয়ে রাখলো যে, সে মারা গেলে সে আযাদ। অথচ গোলাম ব্যতীত তার কোন সম্পদ ছিলো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ গোলাম বিক্রি করার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে সাতশো অথবা নয়শো আরবী মুদ্রায় বিক্রি করা হয়। ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমার নিকট উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে রয়েছেঃ তিনি অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমিই মুদাব্বার গোলামের মূল্যের পাওনাদার, আর আল্লাহ তা হতে মুখাপেক্ষীহীন। জাবির (রাঃ) আবূ মাযকূর নামক জনৈক আনসারীর ইয়াকূব নামে একটি কৃতদাস ছিল। সে ঘোষণা করে যে, সে মনিব মারা গেলে কৃতদাস আযাদ। অথচ এ কৃতদাস ছাড়া তার অন্য কোন সম্পদ ছিলো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন এবং সাহাবীদের বলেনঃ কে একে কিনবে। নু’আইম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নাহ্‌হাম গোলামটিকে আটশো দিরহামে কিনে নিলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অর্থ আনসারীকে দিয়ে বলেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ দরিদ্র থাকলে সে প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় করবে। তারপর প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলে তা নিকট আত্মীয়দের জন্য ব্যয় করবে, এরপরও অবশিষ্ঠ থাকলে আল্লাহর পথে নেককাজে ব্যয় করবে।

【10】

যিনি সম্পদের এক–তৃতীয়াংশের কমে গোলাম আযাদ করেন

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) একজন মুমূর্ষু ব্যক্তি তার ছয়টি গোলামকে আযাদ করে দিলো। এগুলো ছাড়া তার অন্য কোন সম্পদ ছিলো না। এ খবর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছলে তিনি সেই ব্যক্তিকে কঠোর ভাষায় ধমকালেন। অতঃপর গোলামদের ডেকে এনে তিন ভাগে ভাগ করে তাদের মাঝে লটারী দিলেন। লটারীর ভিত্তিতে দু’জনকে আযাদ করে দিলেন এবং চারজনকে গোলাম হিসেবে রেখে দিলেন। আবূ ক্বিবলাহ (রহঃ) আবূ ক্বিবলাহ (রহঃ) সূত্রে সানাদসহ উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। তবে তিনি “তাকে কঠোর ভাষায় ধমকালেন” এ বাক্য উল্লেখ করেননি। আবূ যায়িদ (রহঃ) জনৈক আনসারী সম্পর্কিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি যদি তার দাফনের পূর্বে উপস্থিত হতাম, তাহলে তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হতো না। [৩৯৬০] ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) মুমূর্ষ অবস্থায় এক ব্যক্তি তার ছয়টি কৃতদাসকে আযাদ করে দিলো। অথচ এগুলো ছাড়া তার অন্য কোন সম্পদ ছিলো না। এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদের মাঝে লটারী করে দু’জনকে আযাদ করেন এবং চারজনকে দাস হিসেবে রেখে দেন।

【11】

কেউ সম্পদশালী গোলাম আযাদ করলে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ সম্পদশালী দাস আযাদ করলে, সে তার সম্পদ পাবে, যদি না মনিব এমন শর্ত করে যে, সম্পদ তারই থাকবে।

【12】

জারজ সন্তান মুক্ত করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জারজ সন্তান তিনটি মন্দের অন্যতম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর পথে চাবুক দ্বারা উপকৃত হওয়া আমার নিকট জারজ সন্তান আযাদ করার চে্য়ে বেশি প্রিয়।

【13】

গোলাম আযাদ করার সওয়াব সম্পর্কে

আল-গারীফ ইবনুদ দায়লামী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা’র (রাঃ) নিকট এসে তাকে বলি, আমাদের নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যাতে না বাড়তি কিছু আছে, না কমতি কিছু। একথা শুনে তিনি অসন্তষ্ট হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে এমন ব্যক্তি আছে, যে ঘরে তার কিতাব (আল-কুরআন) হতে বাড়িয়ে-কমিয়ে পাঠ করে? আমরা বললাম, আমরা তো এরূপ হাদীসের আশা করেছি, যা আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন। তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে আমাদের এক মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললাম, হত্যার দায়ে যার উপর জাহান্নামের আগুন অবধারিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ তার পক্ষ হতে তোমরা দাস মুক্ত করো, আল্লাহ দাসের প্রতিটি অঙ্গের পরিবর্তে মৃত ব্যক্তির প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দিবেন।

【14】

কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা অধিক উত্তম

আবূ নাজীহ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে তায়েফ দুর্গ অবরোধ করেছি। মু’আয (রহঃ) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তায়েফ প্রাসাদ বা তায়েফ দুর্গ। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে, তার জন্য একটি মর্তবা রয়েছে। এ হাদীস এভাবে অগ্রসর হয়েছে। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন মুসলিম পুরুষ তার মুসলিম দাসকে মুক্ত করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন এ কৃতদাসের প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রতিটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। আর যে কোন মুসলিম নারী তার মুসলিম কৃতদাসীকে মুক্ত করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দাসীর প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে ক্বিয়ামাতের দিন মুক্তিদাত্রীর প্রতিটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। শুরাহ্‌বীল ইবনুস সিম্‌ত (রহঃ) একদা তিনি ‘আমর ইবনু আবাসাহ (রাঃ)-কে বলেন, আপনি আমাদের নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কৃতদাসীকে মুক্ত করবে, সে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি পাবে। শুরাহ্‌বীল ইবনুস সিম্‌ত (রহঃ) একদা তিনি কা’ব ইবনু মুররাহ বা মুররাহ ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে বলেন, আপনি আমাদের নিকট এমন একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন। অতঃপর তিনি মু’আয বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস এ পর্যন্ত বর্ণনা করেনঃ যে কোন ব্যাক্তি তার মুসলিম কৃতদাসকে মুক্ত করবে এবং যে কোন মহিলা তার মুসলিম দাসীকে মুক্ত করবে। বর্ণনাকারীর অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ যে কোন পুরুষ দু’জন মুসলিম দাসীকে মুক্ত করবে, এগুলো তাকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবে। এ দু’জন দাসীর দু’টি হাড়ের পরিবর্তে মুক্তিদাতার একটি হাড়কে মুক্তি দেয়া হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাজিম (রহঃ) শুরাহ্‌বীল (রহঃ) হতে হাদীস শুনেননি। শুরাহ্‌বীল (রহঃ) সিফ্‌ফীন যুদ্ধে মারা গেছেন।

【15】

সুস্থ অবস্থায় গোলাম আযাদ করার মর্যাদা

আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমূর্ষু অবস্থায় গোলাম আযাদকারীর দৃষ্টান্ত হলো, যে ব্যাক্তি পরিতৃপ্ত হওয়ার পর অন্যকে উপহার দেয়। [৩৯৬৮]