38. ইমাম মাহ্দী প্রসঙ্গ
ইমাম মাহ্দী প্রসঙ্গ
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এ দ্বীন ততদিন প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতদিন তোমাদের শাসকরূপে বারজন প্রতিনিধির অবির্ভাব না হবে। তাদের প্রত্যেক উম্মাতকে তার পাশে একত্র করবে। অতঃপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরেকটি কথা শুনলাম, তবে তা বুঝতে পারিনি। পরে আমার পিতাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করায় তিনি বললেন, তিনি বলেছেনঃ তাদের সবাই কুরাইশ বংশোদ্ভূত হবে। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এ দ্বীন (ইসলাম) বারজন প্রতিনিধি আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত অটুট অবস্থায় বিজয়ী থাকবে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একথা শুনে উপস্থিত লোকেরা অবাক হয়ে ‘আল্লাহ আকবার’ ধ্বনি দিলো এবং চিৎকার করে উঠলো। অতঃপর তিনি নিম্নস্বরে একটি কথা বললেন। আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেছেন? তিনি বললেন যে, তিনি বলেছেনঃ তাদের সবাই কুরাইশ বংশোদ্ভূত হবে। [মুসলিম, আহমাদ] জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তবে এই বর্ণনায় আছেঃ পরে যখন তিনি তাঁর ঘরে ফিরে যান, কুরাইশদের কয়েকজন এসে তাঁকে প্রশ্ন করলো, তার পরে কি হবে? তিনি বললেনঃ অতঃপর বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। সহীহ, তবে এ কথাটি বাদেঃ “পরে যখন তিনি তাঁর ঘরে ফিরে যান….।” ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবে আল্লাহ সেই দিনকে অত্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন এবং আমার হতে অথবা আমার পরিজন হতে একজন লোক আবির্ভূত করবেন, যার নাম ও তার পিতার নাম আমার ও আমার পিতার নামের সঙ্গে হুবহু মিল হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে যেরূপে তা যুলুমে পরিপূর্ণ ছিল। আর সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসে বলেন, ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতদিন পর্যন্ত আমার পরিবারের এক ব্যক্তি আরবে রাজত্ব না করবে, তার নাম হুবহু আমার নামই হবে। [৪২৮১] ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবুও আল্লাহ আমার পরিজন হতে অবশ্যই এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন। তখনকার দুনিয়া যেরূপে অত্যাচারে ভরে যাবে, সে সেরূপেই তা ন্যায়-ইনসাফে ভরে দিবে। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মাহ্দী আমার পরিজন হতে ফাত্বিমাহ্র সন্তানদের বংশ হতে আবির্ভূত হবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) বলেন, আমি আবুল মালীহকে ‘আলী ইবনু নুফাইলের প্রশংসা করতে এবং তার গুণাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার বংশ হতে মাহ্দীর আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। তখনকার দুনিয়া যেরূপে যুলুমে ভরে যবে, সে তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবে, আর সে সাত বছর রাজত্ব করবে। [৪২৮৪] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জনৈক খলীফাহ্র মৃত্যুকালে মতনৈক্য সৃষ্টি হবে। এ সময় মাদীনাহ্বাসী জনৈক ব্যক্তি পালিয়ে মাক্কাহ্য় চলে যাবে। মাক্কাহবাসীরা তার নিকট এসে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে আসবে এবং তারা রুকন ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে তার হাতে বাই’আত করবে। অতঃপর তার বিরুদ্ধে সিরিয়া হতে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠানো হবে। এদেরকে মাক্কাহ ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে দেখতে পাবে, তখন সিরিয়ার ধার্মিক ব্যক্তিগন ও ইরাকবাসীদের কয়েকটি দল তার নিকট এসে রুকন ও মাকামের মাঝখানে তার হাতে বাই’আত করবে। অতঃপর কুরাইশ বংশে জনৈক ব্যক্তির উদ্ভব হবে, কাল্ব গোত্র হবে তার মাতুল গোত্র। সে তাদের মুকাবিলায় একটি বাহিনী পাঠাবে। যুদ্ধে মাহ্দীর অনুসারীরা কাল্ব বাহিনীর উপর বিজয়ী হবে। এ সময় যারা কাল্বের গনীমাত নিতে উপস্থিত হবে না তাদের জন্য আফসোস। মাহ্দী গনীমাতের সম্পদ বন্টন করবেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুযায়ী মানুষের মাঝে কার্য পরিচালনা করবেন, আর ইসলাম সারা পৃথিবীতে প্রসারিত হবে। অতঃপর তিনি সাত বছর অবস্থান করার পর মারা যাবেন। আর মুসলিমরা তার জানাযা সলাত পড়বে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ হিশাম হতে বর্ণনা করে বলেন, নয় বছর অবস্থান করবেন, আবার কেউ বলেন, সাত বছর। [৪২৮৫] ক্বাতাদাহ (রহঃ) উপরে বর্ণিত হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নয় বছর অবস্থান করবেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মু’আয ছাড়া অন্যরা হিশাম হতে বর্ণনা করে বলেন, নয় বছর অবস্থান করবেন। [৮২৮৬] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর মু’আযের হাদীসই পরিপূর্ণ। [৪২৮৭] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধ্বসে যাওয়া সেই বাহিনীর ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণনা করলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হবে, তাদের কি হবে? তিনি বললেনঃ তাদেরও ধ্বসিয়ে দেয়া হবে; কিন্তু তারা তাদের নিয়ত অনুযায়ী ক্বিয়ামাতের দিন পুনরুত্থিত হবে। আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, আর তিনি তার ছেলে হাসানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার এই ছেলেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ নেতা আখ্যায়িত করেছেন, অচিরেই তার বংশ হতে জনৈক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে তার নাম হবে, স্বভাব-চরিত্রে তাঁর মত হবে; কিন্তু গঠন আকৃতি অনুরূপ হবে না। অতঃপর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরে দিবে। হারুণ (রাঃ) বলেন, ‘আমর ইবনু আবূ ক্বাইস পর্যায়ক্রমে মুতাররিফ ইবনু তরীফ, হাসান ও হিলাল ইবনু ‘আমর হতে বর্ননা করে বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নদীর পেছন দিক থেকে জনৈক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তাকে হারিস ইবনুর হাররাস বলে ডাকা হবে, তার আগে জনৈক ব্যক্তি আসবেন, যার নাম হবে মানসূর। তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিজনকে আশ্রয় দিবেন, যেরূপ কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্থান দিয়েছিল। সুতরাং প্রত্যেক মু’মিনের কর্তব্য হবে তার সাহায্যে এগিয়ে আসা, তার ডাকে সাড়া দেয়া। [৪২৮৯]