39. যুদ্ধ-সংঘর্ষ
এক শতাব্দী কালের বর্ণনা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মাতের জন্য প্রতি একশত বছরের শিরোভাগে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যিনি এই উম্মাতের দীনকে তার জন্য সঞ্জীবিত করবেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু শুরাইহ আল-ইসকান্দারানীও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি শারাহীল-এর অতিরিক্ত বর্ণনা করেননি।
রোমীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ
হাসসান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাকহুল ও ইবনু আবূ যাকারিয়া (রাঃ) খালিদ ইনবু মা’দান-এর নিকট যেতে রওয়ানা হলে আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। তারা জুবাইর ইবনু নুফাইরের সূত্রে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করলেন সন্ধি সম্পর্কে। তিনি বলেন, জুবাইর (রাঃ) বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাহাবী যু-মিখবার (রাঃ)-র নিকট চলুন। সুতরাং আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে জুবাইর (রাঃ) তাকে সন্ধি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অচিরেই তোমরা রোমানদের সঙ্গে সন্ধি করবে। অতঃপর তোমরা ও তারা একত্র হয়ে তোমাদের পশ্চাৎবর্তী একদল শত্রুর মোকাবেলা করবে। তোমরা বিজয়ী হবে, গনীমাত অর্জন করবে এবং নিরাপদে ফিরে আসবে। শেষে তোমরা টিলাযুক্ত একটি মাঠে যাত্রাবিরতি করবে। অতঃপর খৃস্টানদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি ক্রুশ উপরে উত্তোলন করে বলবে, ক্রুশ বিজয়ী হয়েছে। এতে মুসলিমদের মধ্যকার এক ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করবে। তখন রোমানরা চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিবে। হাসসান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) হাসসান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে এই সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে আরও আছেঃ মুসলিমরা রাগের সাথে তাদের যুদ্ধাস্ত্রের দিকে ধাবিত হবে এবং যুদ্ধে লিপ্ত হবে। আল্লাহ তাদেরকে শহিদী মৃত্যু দিয়ে সম্মানিত করবেন।
বিপর্যয়ের আলামাতসমূহ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বাইতুল মাকদিসে বসতি স্থাপন ইয়াসরিবের বিপর্যয়ের কারণ হবে এবং ইয়াসরিবের বিপর্যয় সংঘাতের কারণ হবে। যুদ্ধের ফলে কুসতুনতীনিয়া বিজিত হবে এবং কুসতুনতীনিয়া বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের আলামত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন তার ঊরুতে বা কাঁধে নিজের হাত দ্বারা মৃদু আঘাত করে বলেন, এটা নিশ্চত সত্য, যেমন তুমি এখানে উপস্থিত, যেমন তুমি এখানে বসা আছো। অর্থাৎ তিনি মু‘আয ইবনু যাবাল (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন।
ধারাবাহিক যুদ্ধ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভয়ংকর যুদ্ধ ও কুসতুনতীনিয়া বিজয় এবং দাজ্জালের আবির্ভাব মাত্র সাত মাসের মধ্যে ঘটবে। [৪২৯৪] ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মহাযুদ্ধ এবং (কন্সটান্টিনোপল) শহর বিজয়ের মধ্যে ছয় বছরের ব্যবধান হবে। আর সপ্তম বছরে মাসীহ দাজ্জাল আবির্ভূত হবে। [৪২৯৫]
বিভিন্ন জাতি পরস্পরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আহ্বান জানাবে
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে। এক ব্যক্তি বললো, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেনঃ তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের পক্ষ হতে আতঙ্ক দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দিবেন। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আল-ওয়াহ্ন’ কি? তিনি বললেনঃ দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।
তুমুল যুদ্ধে মুসলিমদের স্থান
আবূ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে ‘গূতা’ নামক শহরে, যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামিশকের পাশে অবস্থিত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই মুসলিমরা মদিনায় অবরুদ্ধ হবে এবং তাদের দূরবর্তী সীমান্ত হবে ‘সালাহ’ নামক স্থান। যুহরী (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বারের নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম হল সালাহ্।
যুদ্ধের ফলে ফিত্বনাহ ছড়াবে
আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই উম্মাতের তরবারি ও এর শত্রুর তরবারি দুটোকে আল্লাহ কখনো এ উম্মাতের উপর একত্র করবেন না।
তুর্কী ও আবিসিনীয়দের সঙ্গে অকারণে গোলযোগ বাঁধানো নিষেধ
আবূ সুবাইনা নামক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হাবশীদের হতে বিরত থাকো যে পর্যন্ত তারা তোমাদের থেকে বিরত থাকে এবং তুর্কিদেরও ত্যাগ করো যে পর্যন্ত তারা তোমাদের ত্যাগ করে। [৪৩০১]
তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে পর্যন্ত না মুসলিমরা তুর্কী জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করবে, সে পর্যন্ত ক্বিয়ামাত হবে না। সেই জাতির মুখমন্ডল হবে বর্মের ন্যায় চওড়া আর মাংসল। তারা পশমী পোশাক পরে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে জাতি পশমযুক্ত জুতা পরবে সেই জাতির সঙ্গে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত হবে না। আর তোমরা ছোট চোখ, চেপ্টা নাক ও বর্মের মতো চওড়া ও মাংসল মুখমন্ডলবিশিষ্ট জাতির সঙ্গে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত হবে না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রাঃ) তার পিতা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করেন যেঃ তোমাদের সঙ্গে ছোট চোখবিশিষ্ট জাতি অর্থাৎ তুর্কীরা যুদ্ধ করবে। তিনি বলেন, তোমরা তাদেরকে তিনবার তাড়িয়ে নিয়ে যাবে, অবশেষে আরব উপদ্বীপে তাদের নাগাল পাবে। প্রথম তাড়ানোতে যারা পালিয়ে যাবে, তারা রক্ষা পাবে, আর দ্বিতীয় তাড়ানোতে অনেকে রক্ষা পাবে আর অনেকে ধ্বংস হবে; আর তৃতীয়বার তাদের মূলোৎপাটিত করা হবে অথবা অনুরূপ কিছু বলেছেন। [৪৩০৪]
বাসরাহ সম্পর্কে
মুসলিম ইবনূ আবূ বাক্রাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাজ্লা (তাইগ্রিস) নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকায় ‘বাস্রাহ’ নামক স্থানে আমার উম্মাতের কিছু লোক বসতি স্থাপন করবে। সেই নদীর উপরে সেতু থাকবে আর নাগরিকের সংখ্যা হবে প্রচুর। আর এটা হবে মুহাজিরদের শহরসমূহের একটি। শেষ যামানায় চওড়া চেহারা ও ছোট চোখবিশিষ্ট ‘কানতূরা’ গোত্র সেই নদীর অববাহিকায় ঘাঁটি স্থাপন করবে এবং উক্ত শহরের বাসিন্দারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক দল গরুর লেজ ধরে মরুভূমিতে যাবে এবং ধ্বংস হবে। দ্বিতীয় দল নিজেদের জন্য নিরাপদ স্থান খুজবে এবং কাফির হয়ে যাবে। তৃতীয় দল তাদের পিছনে পরিবার-পরিজন ও সন্তানাদি রেখে দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং শহীদ হবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে আনাস! নিশ্চয়ই লোকেরা বিভিন্ন শহরের পত্তন করবে। জেনে রাখো, তার মধ্যে বাসরাহ বা বুসাইরা নামক একটি শহরও হবে। তুমি যদি এর পাশ দিয়ে যাও বা এতে প্রবেশ করো তাহলে সাবধান থাকবে এর লবণাক্ত যমীন হতে, এর ‘কাল্ল’ নামক স্থান হতে এবং বাজার ও নেতাদের দরজা হতে এবং আশপাশ থেকে। কেননা এটা ধ্বসে যাবে, নিক্ষিপ্ত হবে আর ভুমিকম্পে প্রকম্পিত হবে। আর একদল লোক রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকবে; কিন্তু প্রত্যুষে তার বানর ও শূকরে পরিণত হবে। ইবরাহীম ইবনু দিরহাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমরা হাজ্জ করতে যাচ্ছিলাম। তখন এক লোক আমাদের জিজ্ঞাস করলো, তোমাদের কাছাকাছি উবুল্লাহ নামে একটি শহর আছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, তোমাদের মধ্যে কে এই দায়িত্ব নিবে যে, আমার পক্ষ হতে ‘আল-আশ্শার মসজিদে’ দুই বা চার রাক‘আত সালাত পড়বে? আর এ কথাটা তিনি আবূ হুরায়রা্র জন্য বলতেন যে, আমি আমার বন্ধু আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন মাসজিদুল আশ্শারে এমন কতক শহীদকে পাঠাবেন যাদের ব্যতীত অন্য কেউ বদরের শহীদদের সঙ্গে দাঁড়াতে পারবে না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই মাসজিদটি (ফুরাত) নদীর তীরে অবস্থিত। [৪৩০৭]
ইথিওপিয়া সম্পর্কে
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যতদিন পর্যন্ত ইথিওপীয়রা তোমাদের ত্যাগ করবে, তোমরাও তাদের ত্যাগ করো। কেননা ইথিওপিয় ছোট গোছাধারী এক ব্যক্তি ব্যতীত কেউ কা‘বার ভাণ্ডার লুণ্ঠন করবে না।
ক্বিয়ামাতের আলামতসমূহ
আবূ যুর‘আহ (রহঃ) তিনি বলেন, মাদীনাহ্তে মারওয়ানের নিকট একদল লোক এসে শুনতে পেল যে, তিনি ক্বিয়ামাতের আলামত প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন যে, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ এর প্রথম আলামত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমরের নিকট গিয়ে একথা আলোচনা করলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তিনি তার কিছুই বলেননি। নিঃসন্দেহে এর প্রথম আলামত হল পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া অথবা মানব জাতির উপর পূর্বাহ্নে ‘দাব্বাতুল আরদ’ নামক একটি জন্তুর আত্মপ্রকাশ। এই দু’টির যে কোন একটি আগে এবং অপরটি এর পরপরই প্রকাশিত হবে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এ সময় তিনি কিতাব পড়ছিলেন। আর আমার মনে হয় তাঁর বক্তব্যের মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়টাই প্রথম প্রকাশিত হবে। হুযাইফাহ ইবনু আসীদ আল-গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরের ছায়ায় বসে ক্বিয়ামাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। আমাদের কণ্ঠস্বর চরমে উঠলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দশটি আলামত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কখনো ক্বিয়ামাত হবে না। সেগুলো হলঃ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়, ‘দাব্বাতুল আর্দ’ নামক জন্তুর আবির্ভাব, ইয়াজুজ-মাজুজ, দাজ্জাল ও ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) ও ধোঁয়ার প্রকাশ, আর তিনটি ভূমিধ্বসঃ পাশ্চাত্যে একটি, প্রাচ্যে একটি, আরব উপদ্বীপে একটি। এগুলার পরেই ইয়ামানের আদান নামক স্থানের নীচু ভুমি হতে আগুন বের হবে, যা মানুষকে হাশরের (সিরিয়ার) দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সূর্য তার ডুবার স্থান (পশ্চিম দিক) হতে উদয় না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামাত হবে না। যখন তা উদয় হবে এবং যত লোক তা দেখবে, তারা ঈমান আনবে। কিন্তু “সেদিন তার ঈমান কোন উপকারে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি অথবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি” (সূরাহ আনআমঃ ১৫৮)।
ফুরাতের খনিজ সম্পদ উন্মুক্ত হওয়া সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই ফুরাত নদী স্বর্ণের খনি উন্মুক্ত করবে। অতএব যে কেউ সেখানে উপস্থিত থাকবে সে যেন তা হতে কিছুই গ্রহণ না করে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি বলেনঃ ফুরাত নদী স্বর্ণের পাহাড় উন্মুক্ত করবে।
দাজ্জালের আবির্ভাব সম্পর্কে
রিবঈ’ ইবনু হিরাশ (রহঃ) তিনি বলেন, হুযাইফাহ ও আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) একত্র হলে হুযাইফাহ (রাঃ) বললেন, দাজ্জালের সঙ্গে যা কিছু থাকবে, এ সম্বন্ধে আমি অবশ্যই তার চেয়ে ভাল জানি। নিশ্চয়ই তার সঙ্গে থাকবে পানির নহর ও আগুনের কুণ্ড। অতঃপর তোমরা যেটাকে দেখবে আগুন, মূলত সেটা পানি আর যেটাকে দেখবে পানি, মূলত সেটা আগুন। যে কেউ এর সাক্ষাত পাবে, সে যেটাকে আগুন দেখবে তা যেন পান করে, তাহলেই সে পানি পাবে। আবূ মাস‘ঊদ আল-বাদ্রী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ বলতে শুনেছি। ক্বাতাদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রেরিত নাবীই তাঁর উম্মাতদের মিথ্যাবাদী কানা দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। জেনে রাখো, সে হবে কানা, আর তোমাদের মহান রব কানা নন। আর তার দু’চোখের মাঝে কাফির লেখা থাকবে। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না-, মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার হতে শু’বাহ (রহঃ) সূত্র মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না-, মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার হতে শু’বাহ (রহঃ) সূত্রে (ক্বাফ), (ফা), (রাঃ) এভাবে উল্লেখ আছে। [৪৩১৬] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে এ হাদীসে বর্ণিত আছেঃ প্রত্যেক মুসলিম তা পড়তে পারবে। আবুদ‘-দাহমা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম! যে কোন ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ইমানদার। অতঃপর সে তার দ্বারা তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ের অনুসরণ করবে। তিনি এরূপই বলেছেন। ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি লোকদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট দাজ্জাল সম্পর্কে বহুবার বর্ণনা করেছি, কারণ আমি আশঙ্কা করছি, তোমরা বুঝতে পারছো কিনা? নিশ্চয়ই মাসীহ দাজ্জাল হবে বেঁটে, মুরগীর পা বিশিষ্ট ও কুঞ্চিত কেশধারী, এক চোখবিশিষ্ট আলোহীন এক চোখধারী যা বাইরের দিকে ফোলাও নয়, আবার কোঠরাগতও নয়। যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তবে জেনে রাখো, তোমাদের রব কানা নন। আন-নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-কিলাবী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয় তবে তোমাদের পক্ষ হতে আমিই তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকা অবস্থায় যদি সে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেই তার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আর আল্লাহ হবেন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পক্ষের দায়িত্বশীল। তোমাদের মাঝে যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন সূরাহ আল-কাহ্ফের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে; কেননা এটাই হবে ফিত্বনাহ থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়। আমরা বললাম, সে পৃথিবীতে কতদিন থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান ও একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর বাকি দিনগুলো হবে তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর সমান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে এক দিন ও এক রাতের সলাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সলাত পড়বে)। অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং ‘লুদ্দ’ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরে বর্ণিত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। আর অনুরূপ অর্থে সলাতের উল্লেখ করেন। আবূ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরাহ আল-কাহ্ফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিত্বনাহ হতে মুক্তি পাবে। সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হিশাম আদ-দাস্তাওয়াঈ কাতাদার সূত্রে এরূপই বলেছেন; কিন্তু তিনি একথাটি এভাবে বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরাহ কাহ্ফের শেষের কয়েকটি আয়াত হিফাযাত করবে। আর শু’বাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরাহ কাহ্ফের শেষাংশ মুখস্ত রাখবে। এর পূর্বের বর্ণনাটি অধিক সহীহ এবং অধিক বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার ও তাঁর অর্থাৎ ঈসা (আঃ) এর মাঝে কোন নবী নেই। আর তিনি তো অবতরণ করবেন। তোমরা তাঁকে দেখে এভাবে চিনতে পারবে যে, তিনি মাঝারি উচ্চতার, লাল-সাদা ও গেরুয়া রঙের মাঝামাঝি অর্থাৎ দুধে আল্তা তাঁর দেহের রং হবে এবং তাঁর মাথার চুল ভিজা না থাকলেও মনে হবে চুল হতে যেন বিন্দু বিন্দু পানি টপকাচ্ছে। তিনি ইসলামের জন্য মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন ও জিযিয়া রহিত করবেন। তিনি তাঁর যুগে ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম বিলুপ্ত করবেন এবং মাসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযা পড়বে।
জাসসাস প্রসঙ্গে
ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বাইস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে ‘ইশার সলাত পড়তে বিলম্ব করলেন। তিনি (ঘর হতে) বেরিয়ে এসে বললেনঃ তামীম আদ-দারী আমার নিকট যে ঘটনা বর্ণনা করেছে সেটিই আমাকে আটকে রেখেছে। সে সমুদ্রের উপদ্বীপের জনৈক ব্যক্তির সূত্রে আমাকে বলেছে, হঠাৎ আমি একটি স্ত্রীলোককে দেখতে পেলাম যে, সে তার চুল টানছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কে? সে বলল, আমি গুপ্তচর, তুমি ওই প্রাসাদে যাও। অতঃপর আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, জনৈক ব্যক্তি তার কুঞ্চিত কেশ টানছে, সে মজবুত শিকলে বাঁধা অবস্থায় আকাশ ও যমীনের মাঝখানে ছট্ফট করছে। আমি বললাম, তুমি কে? সে বলল, আমি তো দাজ্জাল। নিরক্ষরদের নবী এখন আবির্ভূত হয়েছেন কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, লোকেরা তাঁকে মান্য করছে নাকি অমান্য করছে? আমি বললাম, তারা বরং মান্য করছে। সে বললো, এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর। ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বাইস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি শুনতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করছেন যে, সলাতের জন্য সমবেত হও। অতএব আমি বেরিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করলাম। সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসতে হাসতে মিম্বারের উপর বসে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে থাকো। পুনরায় বললেনঃ তোমরা কি জানো, কেন আমি তোমাদের একত্র করেছি? উপস্থিত সকলেই বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ কোন ভয়-ভীতি বা কোন কাঙ্ক্ষিত বস্তুর জন্য আমি তোমাদের একত্র করিনি; বরং তোমাদের একত্র করেছি এজন্য যে, তামীম আদ-দারী খ্রিস্টান ছিল। সে এসে বাই‘আত করে মুসলিম হয়েছে, আর আমাকে দাজ্জাল সম্পর্কে এরূপ একটি ঘটনা শুনিয়েছে, আমি তোমাদের নিকট সে সম্পর্কে যা বলেছি, তার অনুরূপ। সে বলেছে, একদা সে ‘লাখ্ম ও জুযাম’ গোত্রের তিরিশজন লোকের সঙ্গে সমুদ্রযানে ভ্রমণ করছিল। এসময় সমুদ্র তরঙ্গ তাদের নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করে সূর্যাস্তের সময় উপকূলের দ্বীপে ভিড়িয়ে দেয়। অতঃপর তারা জাহাজের নিকট কিছুক্ষণ বসে থেকে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা ঘন-লম্বা লোমবিশিষ্ট এক জন্তুর সাক্ষাত পেয়ে বলল, তোমার জন্য দুঃখ হয় তুমি কে? সে বলল, আমি জাস্সাসা, তোমরা এই মন্দিরের লোকটির নিকট যাও, কেননা সে তোমাদের সংবাদের জন্য খুবই আগ্রহী। তামীম আদ-দারী বলেন, যখন সে একটি লোকের নাম বলে দিলো, তখন সে শয়তান কিনা এই ভয়ে আমরা দ্রুতগতিতে চলতে লাগলাম। অতঃপর মন্দিরে প্রবেশ করে দেখলাম, বিরাট দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি। এরূপ মজবুত গড়ন এবং কঠিন আকৃতির লোক ইতিপূর্বে আমরা কখনও দেখিনি। তার দু’টি হাত ঘাড়ের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে বাঁধা। অতঃপর তিনি হাদীস বর্ণনা করেন যে, সে তাদের নিকট ‘বাইসান’-এর খেজুর বাগান ও যুগার ঝর্না সম্পর্কে আর উম্মী নাবীর আবির্ভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে বললো, আমিই মাসীহ (দাজ্জাল)। শীঘ্রই আমাকে বেরিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেটা নিশ্চয়ই সিরিয়া বা ইয়ামান সাগরে হবে, না বরং সেটা প্রাচ্যের দিকে হবে। একথা তিনি দু’বার বলেন এবং পূর্ব দিকে ইশারা করে দেখান। তিনি (ফাত্বিমাহ) বলেন, আমি এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে মুখস্ত করেছি। ‘আমির (রহঃ) তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বাইস (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত পড়ে মিম্বারে উঠলেন। এ দিনের পূর্বে তিনি জুমু‘আহ্র দিন ছাড়া অন্য কোন সময় তাতে উঠেননি। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরের ঘটনা বর্ণনা করলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু সুদ্রান বাসরী, ইবনু মিসওয়ারের সঙ্গে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন। তিনি (তামীম আদ-দারী) ব্যতীত কেউ নিরাপদে ফিরে আসতে পারেনি। [৪৩২৬] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উঠে বলেনঃ একদা কিছু সংখ্যক লোক সমুদ্র ভ্রমণ করেছিল। এ সময় তাদের রসদ ফুরিয়ে গেলে একটি দ্বীপ দৃষ্টিগোচর হয়। অতঃপর তারা রুটির সন্ধানে বেরিয়ে পড়লে জাস্সার সাক্ষাত পেলো। আমি (ওয়ালীদ) আবূ সালামাহ্কে বললাম, ‘জাসসাস’ কি? তিনি বললেন, এমন নারী, যে তার দেহের ও মাথার চুল টেনে বেড়ায়। সে বললো, ওই দালানে যাও। অতঃপর উপরে বর্ণিত হাদীস বলেন। আর সে (দালানের লোকটি অর্থাৎ দাজ্জাল) ‘নাখ্লে বাইসান’ ও ‘আইনে যুগার’ সম্পর্কে জানতে চাইলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে লোকটিই মাসীহ দাজ্জাল। অতঃপর ইবনু আবূ সালামাহ্ আমাকে (ওয়ালীদকে) বলেন, নিশ্চয়ই এই হাদীসের কিছু অংশ আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) সাক্ষ্য দিলেন যে, সে-ই ইবনু সাইয়াদ। আমি বললাম, সে তো মারা গেছে। তিনি বললেন, যদিও সে মারা গিয়ে থাকে। আমি বললাম, সে তো মুসলিম হয়েছিল। তিনি বললেন, যদিও সে মুসলিম হয়েছিল। আমি বললাম, সে তো মদিনায় প্রবেশ করেছিল। তিনি বললেন, যদিও সে মাদীনাহ্ প্রবেশ করেছিল। [৪৩২৭]
ইবনু সায়িদের ঘটনা সম্পর্কে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একদল সাহাবীসহ ইবনু সাইয়াদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় সে (ইবনু সায়িদ) কয়েকজন বালকের সঙ্গে ‘মাগালা’ গোত্রের দুর্গের পাশে খেলা করছিল। সেও ছিল বালক বয়সী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত দিয়ে তার পিঠ স্পর্শ করার পূর্ব পর্যন্ত সে কিছুই টের পায়নি। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেনঃ আমি যে রাসূলুল্লাহ, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও? বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু সায়িদ তার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি নিরক্ষরদের নাবী। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছি। পুনরায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমার নিকট কে আসে? সে বললো, আমার নিকট সত্যবাদীও আসে, মিথ্যাবাদীও আসে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমার ব্যাপারটা ঘোলাটে হয়ে গেলো। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি তোমার জন্য একটি বিষয় গোপন রেখেছি। তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তার জন্য গোপন রেখেছিলেনঃ “যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে” (সূরাহ দুখান : ১০)। ইবনু সাইয়াদ বললো, সেটা ধোঁয়া। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ দূর হও! তুমি তোমার অনুমান হতে কখনো অগ্রসর হতে পারবে না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অনুমতি দিন, আমি ওর ঘাড়ে আঘাত হানি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন! এ যদি সেই (দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তবে তুমি তার অর্থাৎ দাজ্জালের উপর শক্তি খাটিয়েও কাবু করতে পারবে নাঃ আর যদি সে তা না হয়ে থাকে, তবে তাকে হত্যা করায় কোন কল্যান নেই। নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, ইবনু সাইয়াদই সে মাসীহে দাজ্জাল, এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি আল্লাহর কসম করেছেন! তিনি বললেন, আমি ‘উমারকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এ ব্যাপারে আল্লাহর কসম করতে শুনেছি; অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা অস্বীকার করেননি। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইবনু সাইয়াদকে ‘হারাবা’র যুদ্ধের দিন হারিয়ে ফেলেছি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিরিশ সংখ্যক দাজ্জাল অবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবি করবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিরিশ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জাল আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না। তদের প্রত্যেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করবে। ইবরাহীম আন-নাখাঈ (রহঃ) তিনি ‘আবীদাহ আস-সালমানীর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আমি ‘আবীদাহ আস-সালামানীকে বললাম, আপনি কি মনে করেন যে, সে ওদের অর্থাৎ আল-মুখতার অন্তর্ভূক্ত? ‘আবীহাদ বলেন, সে নেতৃস্থানীয় দাজ্জালদের অন্তর্ভূক্ত। [৪৩৩৪]
আদেশ ও নিষেধ সম্পর্কে
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ত্রুটি ঢুকেছে এভাবে যে, তাদের কেউ অপরজনের সাক্ষাতে বলতো, এই যে! তুমি আল্লাহ্কে ভয় করো এবং যা অপকর্ম করছো, তা পরিত্যাগ করো। কেননা এগুলো করা তোমার জন্য বৈধ নয়। পরের দিন আবার তার সঙ্গে সাক্ষাত হলে তার অপকর্ম তার সঙ্গে একত্রে পানাহার ও মেলামেশা করতে তাকে বিরত রাখতো না। যখন তাদের অবস্থা এরুপ হলো, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে পরস্পরের সাথে একাকার করে দিলেন। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল…. ফাসিকূন” পর্যন্ত (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৭৮-৮১)। পুনরায় তিনি বলেনঃ কখনো নয়, আল্লাহর কসম! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে এবং অবশ্যই অত্যাচারির দুই হাত ধরে তাকে সৎপথে ফিরে আসতে ও সত্যের উপর অবিচল থাকতে বাধ্য করবে। [৪৩৩৫] দুর্বলঃ মিশকাত হা/৫১৪৮। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। তবে এতে রয়েছেঃ অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের পরস্পরের অন্তরকে একাকার করে দিবেন। অতঃপর তোমাদের অভিশম্পাত করবেন, যেমন তাদেরকে অভিশম্পাত করেছেন। [৪৩৩৬] ক্বাইস (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, হে জনসমাজ! তোমরা তো এ আয়াত পাঠ করে থাকো কিন্তু একে যথাস্থানে প্রয়োগ করো না। আল্লাহর বাণী: “তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না” (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ১০৫)। তিনি খালিদ হতে বর্ণনা করে বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষ যখন কোন যালেমকে যুলুম করতে দেখে তার দু’হাত চেপে ধরে না অবিলম্বে আল্লাহ তাদের সবাইকে শাস্তি দিবেন। ‘আমর (রহঃ) হুসাইম হতে বর্ণনা করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে জাতির মধ্যে পাপ কাজ হতে থাকে, এগুলো বন্ধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা বন্ধ করছে না, অচিরেই আল্লাহ তাদের সবাইকে চরম শাস্তি দিবেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, খালিদ, আবূ উসামাহ ও একদল বর্ণনাকারী যেরূপ বলেছেন, এরূপ বর্ণনা তিনি করেছেন। এ বর্ণনায় শু’বাহ বলেনঃ “যে সম্প্রদায়ে পাপ চলতে থাকে এবং পাপীদের চাইতে তাদের সংখ্যা বেশী হয়”। আবূ বকরের হাদীস সহীহ। জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি কোন জাতির মধ্যে বাস করছে যাদের মাঝে পাপাচার হচ্ছে, তারা এ পাপাচার প্রতিরোধে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরোধ করছে না, তাহলে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তাদের চরম শাস্তি দিবেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন অন্যায় হতে দেখলে, সে তা হাতের সাহায্যে দমন করতে সক্ষম হলে তা দ্বারা যেন প্রতিরোধ করে। ‘হান্নাদ’ এ হাদীসের বাকী অংশ উল্লেখ করেননি। তবে ইবনুল ‘আলা তা পূর্ণ করেছেন। তা হলঃ যদি হাতের দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হয়, তবে জিহ্বা দ্বারা, আর যদি জিহ্বা দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হলে তবে অন্তর দ্বারা, তবে এটা দুর্বল ঈমানের স্তর। আবূ উমাইয়্যাহ আশ-শা’বানী (রহঃ) আবূ সা‘লাবাহকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ সা‘লাবাহ! আপনি এ আয়াত ‘আলাইকুম আনফুসাকুম’ (৫:১০৫) সম্পর্কে কি বলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আপনি এ ব্যাপারে অবহিত ব্যক্তিকেই প্রশ্ন করেছেন। আমি এ আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেনঃ তোমরা বরং পরস্পরকে ভালো কাজের আদেশ দাও এবং অন্যায় হতে বিরত রাখো। এমনকি যখন দেখবে যে, কৃপণের আনুগত্য করা হচ্ছে, কুপ্রবৃত্তি তাড়িতকে অনুসরণ করা হচ্ছে ও পার্থিব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং প্রত্যেকে নিজের মতকেই প্রাধান্য দিচ্ছে, তখন তুমি নিজের ব্যাপারে যত্নবান হও এবং জনগণ যা করছে তা ত্যাগ করো। কেননা তোমাদের সামনে এরূপ যুগ আসছে, যখন ধৈর্য ধারণ করা জ্বলন্ত অঙ্গার মুষ্টিবন্ধ করে রাখার মতো কষ্টকর হবে। এ সময় যথার্থ কাজ সম্পাদনকারীকে তার মতই পঞ্চাশজনের সমান পুরস্কার দেয়া হবে। অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাকে কি সেই সময়কার পঞ্চাশজনের সমান সওয়াব দেয়া হবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজনের সমান সওয়াব দেয়া হবে। [৪৩৪০] দুর্বল, তবে ধৈর্য ধারণের যুগের বাক্যটি প্রমাণিত। ইবনু মাজাহ হা/৪০১৫, মিশকাত হা/৫১৪৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এমন এক যুগ সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? অথবা তিনি বলেনঃ অচিরেই এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষকে চারূনির ন্যায় চালা হবে এবং তাতে নিকৃষ্ট মানুষ অবশিষ্ট থাকবে। তাদের ওয়াদা ও আমানতসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে আর অনৈক্য দেখা দিবে, অতঃপর এরূপ হয়ে যাবে। এ বলে তিনি তাঁর আঙ্গুলসমূহ একটা আরেকটার ভেতর ঢুকিয়ে দেখালেন। উপস্থিত লোকেরা বললো, আমরা তাহলে কি করবো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ যেগুলো সম্বন্ধে সঠিক জানো তা গ্রহণ করো এবং যেগুলোকে ভুল জানো তা ত্যাগ করো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চারপাশে বসা ছিলাম। তখন তিনি ফিত্বনাহ্ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ তোমরা যখন দেখবে, মানুষের ওয়াদা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের আমানতদারী কমে গেছে এবং তারা এরূপ হয়ে গেছে- এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে মিলালেন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে তাঁকে বললাম আল্লাহ আমাকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত করুন! আমি তখন কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তোমার ঘরে অবস্থান করো, তোমার জিহ্বা সংযত রাখো; যা জানাশুনা আছে তাই গ্রহণ করো এবং অজানাকে পরিত্যাগ করো। আর তোমাদের নিজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক হও এবং সাধারণের সম্পর্কে বিরত থাকো। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বৈরাচারী বাদশা বা স্বৈরাচারী শাসকের সামনে ন্যায়সঙ্গত কথা বলা উত্তম জিহাদ। আল-‘উরস ইবনু ‘আমীরাহ আল-কিন্দী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্থানে যখন অন্যায় সংঘটিত হয়, তখন সেখানে উপস্থিত ব্যক্তি তাতে অসন্তুষ্ট হলে, সে অনুপস্থিতদের মতোই গণ্য হবে (তার গুনাহ হবে না)। আর যে ব্যক্তি অন্যায় কাজের স্থান থেকে অনুপস্থিত হয়েও তাতে সন্তুষ্ট হয়, সে অন্যায়ে উপস্থিতদের অন্তভূক্ত। ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহঃ) ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরে বর্ণিত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ যে ব্যক্তি অন্যায়ের স্থানে উপস্থিত হয়েও তা অপছন্দ করলো, সে অনুপস্থিতের মতোই। [৪৩৪৫] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের ব্যক্তিগত পাপাচার ব্যাপক না করা পর্যন্ত এবং তাদের কোন ওজর পেশ করার সুযোগ থাকা পর্যন্ত তারা ধ্বংস হবে না। [৪৩৪৬]
ক্বিয়ামাত সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষভাগে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। সালাম ফিরিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃতোমরা আজকের এ রাতটি দেখতে পাচ্ছো তো? নিশ্চয়ই আজ হতে এক শতাব্দীর মাথায় বর্তমান পৃথিবীতে বসবাসরত কেউ জীবিত থাকবে না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই বক্তব্যে লোকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হল ‘একশত বছর’ সংক্রান্ত যেসব হাদীস তারা বর্ণনা করেন তাকে কেন্দ্র করে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা এখন পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদের কেউ শত বছর পর জীবিত থাকবে না। তিনি এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী শেষ হবে (এবং নতুন শতাব্দী শুরু হবে)। আবূ সা’লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দিনের অর্ধেক সময়ের মধ্যে এ উম্মাতের হিসাব নিয়ে ফায়সালা করতে আল্লাহ্ মোটেই অক্ষম নন। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে এ কামনা করতে পারি যে, আমার উম্মাত তার রবের নিকট মাত্র অর্ধদিনের অবকাশে (হিসাব-নিকাশ দিতে) অক্ষম হবে না। সা’দ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, অর্ধ দিন কতটুকু সময়ের? তিনি বললেন, পাঁচ শত বছরের সমান।