4. সফরকালীন সালাত

【1】

মুসাফিরের সলাত

'আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবাসে ও সফরে সলাত দুই দুই রাক'আত করে ফরয করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সফরের সলাত ঠিক রাখা হয় এবং আবাসের সলাত বৃদ্ধি করা হয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইয়া'লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি 'উমার উবনুল খাত্তাব (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, আজকাল লোকেরা যে সলাত ক্বসর করে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? কেননা মহাপরাক্রশালী আল্লাহ বলেছেন, "যদি তোমরা কাফিরদের হামলার আশংকা করো তাহলে সলাত ক্বসর হিসেবে আদায় করতে পারো " (৪ : ১০১)। কিন্তু বর্তমানে আশংকা দূরীভূত হয়ে গেছে। 'উমার (রাঃ) বললেন, তুমি যে ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করছো, আমিও তাতে আশ্চর্যবোধ করেছিলাম। অতঃপর আমি এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেনঃ এটি একটি সদাক্বাহ, যা মহান আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন। সুতরাং তোমরা তাঁর অনুদান গ্রহণ করো। সহীহঃ মুসলিম। বর্ণনাকারী এ সানাদেও পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

【2】

মুসাফির কখন সলাত ক্বসর করবে ?

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল-হুনায়ী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে সলাত ক্বসর করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন মাইল বা তিন ফার্‌সাখ্‌ দূরত্বের সফর বের হলে দু' রাক'আত সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মদিনায় যুহরের সলাত চার রাক'আত এবং যুল-হুলায়ফাতে 'আসরের সলাত দু' রাক'আত আদায় করেছি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【3】

সফরে আযান দেয়া

'উক্ববাহ ইবনু 'আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, যখন কোন বকরীর রাখাল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানকালে আযান দিয়ে সলাত আদায় করে তখন মহান আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে বলেনঃ (হে মালায়িকাহ)! তোমরা আমার বান্দার দিকে তাকিয়ে দেখো, সে আযান দিয়ে সলাত আদায় করছে। সে তো আমাকে ভয় করার কারণেই এরূপ করছে। কাজেই আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।

【4】

মুসাফির ওয়াক্তের ব্যাপারে সন্দিহান অবস্থায় সলাত আদায় করলে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে থাকাবস্থায় বলাবলি করতাম যে, সূর্য কি পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে কিনা? অথচ ঐ সময় তিনি সলাত আদায় করতেন। অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা করতেন। আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন স্থানে (যুহরের সময়) যাত্রাবিরতী করলে যুহর সলাত আদায় না করা পর্যন্ত সেখান থেকে পুনরায় রওয়ানা করতেন না। এক ব্যক্তি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, তখন যদি ঠিক দুপুর হয় তবুও? তিনি বললেন, হাঁ, ঠিক দুপুর হলেও।

【5】

দু' ওয়াক্তের সলাত একত্র করা

আবুত-তুফাইল 'আমির ইবনু ওয়াসিলাহ (রহঃ) মু'আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তাদেরকে অবহিত করেন যে, তাবুক যুদ্ধে তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বের হন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও 'আসর সলাত একত্রে এবং মাগরিব ও 'ইশা সলাত একত্রে আদায় করেন। এদিন তিনি সলাত বিলম্বে আদায় করেন । (যুহর বিলম্ব করে) যুহর ও 'আসর একত্রে আদায় করেন। অতঃপর তিনি আবার (তাঁবুতে) প্রবেশ করেন। তারপর বেরিয়ে মাগরিব ও 'ইশার সলাত একত্রে আদায় করেন। সহীহঃ মুসলিম। নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) মাক্কাহতে অবস্থানকালে তাঁর নিকট স্বীয় স্ত্রী সাফিয়্যাহর (রাঃ) মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছলে তিনি (মাদীনাহয়) রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে সূর্য অস্ত গিয়ে নক্ষত্রও প্রকাশিত হলো (অথচ তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন না)। অতঃপর তিনি বলেন, কোন সফরে দ্রুত যাওয়ার প্রয়োজন হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’ ওয়াক্তের সলাত (মাগরিব ও ‘ইশা) একত্র করতেন। এ বলে তিনি তার সফর অব্যাহত রাখলেন। ইতিমধ্যে পশ্চিমাকাশের লালিমা দূরীভূত হলো। তারপর তিনি (বাহন থেকে) নামলেন এবং উভয় সলাত একত্রে আদায় করলেন। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম তার সূত্রে মারফুভাবে। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুকের যুদ্ধে ছিলেন। (সাধারণত সফরকালে) যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর তিনি কোথাও রওয়ানা হতেন, তখন তিনি যুহর ও ‘আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন এবং সূর্য ঢলার পূর্বে রওয়ানা হলে তিনি যুহরকে বিলম্বে আদায় করতেন আর ‘আসরকে প্রথম ওয়াক্তে পড়ে নিতেন। তিনি মাগরিবেও অনুরূপ করতেন। অর্থাৎ রওয়ানা হবার পূর্বে সূর্য ডুবে গেলে মাগরিব ও ‘ইশা একত্র আদায় করতেন। আর সূর্য ডুবার পূর্বে রওয়ানা হলে মাগরিবকে বিলম্ব করে ‘ইশার সাথে একত্রে আদায় করতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরকালে কেবলমাত্র একবারই মাগরিব ও ‘ইশার সলাতকে একত্র করেছেন (একাধিকবার নয়)। [১২১২] ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস আইয়ূব হতে তিনি নাফি’ হতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে ‘মওকুফ’ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ যেদিন (তার স্ত্রী) সাফিয়্যাহর মৃত্যু সংবাদে ইবনু ‘উমার (রাঃ) মাদীনাহ্‌র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন শুধুমাত্র ঐ রাতেই নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমারকে দু’ সলাতকে একত্র করতে দেখেন, এছাড়া অন্য সময় নয়। অপরদিকে মাকহুল নাফি’ হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে একবার কিংবা দু’বার এরূপ করতে দেখেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শত্রুর ভয় ও সফর ছাড়াই যুহর ও ‘আসরকে একত্রে এবং মাগরিব ও ‘ইশাকে একত্র করেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, সম্ভবতঃ বৃষ্টির কারণেই এমনটি করেছেন। কিন্তু কুররাহ ইবনু খালিদ হতে আবূ যুবাইর (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, ‘আমরা তাবুক যুদ্ধের সফরে ছিলাম ’। সহীহঃ মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শত্রুর ভয় ও বৃষ্টির কারণ ছাড়াই মাদীনাহ্‌তে যুহর ও ‘আসর এবং মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর উম্মাত যেন কোন অসুবিধায় না পড়ে সেজন্যেই তিনি এরূপ করেন। সহীহঃ মুসলিম। ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবনু ওয়াক্বিদ (রহঃ) একদা ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর মুয়াযযিন ‘আস-সলাত’ বললে তিনি বলেন, চলো, এগিয়ে চলো! ইতিমধ্যে লালিমা দূরীভূত হবার সময় হলে তিনি (বাহন থেকে) নেমে মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে লালিমা দূরীভূত হবার পর ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। এরপর তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফরে দ্রুত যাওয়ার প্রয়োজন হলে এরূপ করতেন, যেরূপ আমি করলাম। অতঃপর তিনি সেই দিন ও রাতের সফরে তিন দিনের পথ অতিক্রম করেন। সহীহঃ কিন্তু তার বক্তব্যঃ (লালিমা দূরীভূত হওয়ার সময়) কথাটি শায। মাহফুয হচ্ছেঃ (লালিমা দূরীভূত হওয়ার পর)। নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, যখন লালিমা দূরীভূত হবার সময় হলো, তখন তিনি (বাহন থেকে) নেমে উভয় সলাতকে (মাগরিব ও ‘ইশা) একত্রে আদায় করলেন। সহীহ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্‌তে আমাদেরকে নিয়ে আট রাক’আত (অর্থাৎ যুহরের চার ও ‘আসরের চার) এবং সাত রাক’আত (মাগরিবের তিন ও ‘ইশার চার) সলাত আদায় করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী সুলায়মান ও মুসাদ্দাদ তাঁদের বর্ণনায় ‘আমাদেরকে নিয়ে’ কথাটি বলেননি। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) তাওয়ামাহর মুক্তদাস সলিহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সেদিন বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও সলাত একত্র করেছেন। সহীহ। জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহতে অবস্থানকালে সূর্য ডুবে গেলে ‘সারিফ’ নামক স্থানে উভয় সলাতকে (মাগরিব ও ‘ইশা) একত্রে আদায় করেছেন। [১২১৮] হিশাম ইবনু সা’দ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, মাক্কাহ ও সারিফ এর মধ্যকার দশ মাইলের ব্যবধান। [১২১৯] ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) একদা সূর্য ডুবলো আর আমি তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমরা (তখনও) পথ চলতে থাকলাম। যখন আমরা দেখলাম যে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে তখন বললাম, আস-সলাত। কিন্তু, তিনি পথ অতিক্রম করতেই থাকলেন। এমনকি লালিমা দূরীভূত হয়ে গেলো এবং নক্ষত্ররাজিও উদিত হলো। অতঃপর তিনি বাহন থেকে নামলেন দু’ ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, কোন সফরে তাঁর দ্রুত যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি এ সলাতকে এরূপে আদায় করেছেন। তিনি বলতেন, এই দুই সলাতকে রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর একত্র করা যায়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) লালিমা দূরীভূত হবার পরই দু’ সলাতকে একত্র করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলার পূর্বে রওয়ানা হলে যুহর সলাতকে ‘আসর পর্যন্ত বিলম্ব করতেন, অতঃপর বাহন থেকে নেমে উভয় সলাতকে একত্রে আদায় করতেন। অবশ্য তাঁর রওয়ানা হবার পূর্বে সূর্য ঢলে গেলে তিনি যুহর সলাত আদায় করার পর সওয়ার হতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুফাদ্দাল (রহঃ) মিসরের বিচারপতি ছিলেন এবং তাঁর দু’আ কবুল হতো। আর তিনি ছিলেন ফাদালাহ (রাঃ)-এর পুত্র। উক্বায়িল (রহঃ) উক্বায়িল (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি লালিমা দূরীভূত হবার পর মাগরিবকে পিছিয়ে নিয়ে মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুকের অভিযানে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বে রওয়ানা হলে যুহরকে বিলম্বিত করে ‘আসরের সাথে মিলিয়ে উভয়টি একত্রে আদায় করতেন। আর সূর্য ঢলার পর রওয়ানা হলে যুহর ও ‘আসর একত্রে আদায়ের পর রওয়ানা হতেন। আর তিনি মাগরিবের পূর্বে রওয়ানা হলে মাগরিবকে বিলম্বিত করে তা ‘ইশার সাথে আদায় করতেন এবং মাগরিবের পরে রওয়ানা হলে ‘ইশাকে এগিয়ে নিয়ে তা মাগরিবের সাথে আদায় করতেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এককভাবে কুতাইবাহ ব্যতীত অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।

【6】

সফরকালে সলাতের ক্বিরাআত সংক্ষেপ করা

আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে শেষ ‘ইশার সলাতটি আদায় করলেন এবং দু’রাক’আতের এক রাক’আতে সূরাহ ‘ওয়াত্তীন ওয়ায্‌যায়তুন’ পাঠ করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【7】

সফরে নাফ্‌ল সলাত আদায়

আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আঠারটি সফরে রসূলুল্লাহর (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরসঙ্গী ছিলাম। আমি কখনো তাঁকে সূর্য হেলে যাবার পর যুহরের পূর্বে দু’ রাক’আত সলাত বর্জন করতে দেখিনি। [১২২৫] ঈসা ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি এক পথে ইবনু ‘উমারের (রাঃ) সাথে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন। অতঃপর মুখ ফিরিয়ে কিছু লোককে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, এরা কি করছে? আমি বললাম, নাফ্‌ল সলাত আদায় করছে। তিনি বললেন, (সফরে) নাফ্‌ল সলাত আদায় প্রয়োজন মনে করলে আমি (ফরয) সলাত পুরো (চার রাক’আতই) আদায় করতাম। হে ভাতিজা! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফর করেছি। তিনি মহা মহীয়ান আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত দু’ রাক’আতের বেশি আদায় করেন নি। আর আমি আবূ বকর (রাঃ) এর সফরসঙ্গী হয়েছি। তিনিও মহা মহীয়ান আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত দু’ রাক’আতের অধিক আদায় করেননি। আমি ‘উমার (রাঃ) এর সফরসঙ্গী হয়েছি। তিনিও মহামহিম আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত দু’ রাক’আতের অধিক আদায় করেননি। পরে আমি ‘উসমান (রাঃ) এর সফরসঙ্গী হয়েছি। তিনিও মহা মহীয়ান আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত দু’ রাক’আতের অধিক আদায় করেননি। কেননা মহা মহীয়ান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ নিহিত আছে” (সূরাহ আল-আহ্‌যাবঃ ২১)। সহীহঃ মুসলিম। বুখারী সংক্ষেপ।

【8】

বাহনের উপর নাফ্ল ও বিতর সলাত আদায়

সালিম (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্তুযানে আরোহিত অবস্থায় যেকোন দিকে মুখ করে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন। তিনি বাহনের উপর বিতর সলাতও আদায় করতেন, অবশ্য ফরয সলাত আদায় করতেন না। সহীহঃ মুসলিম। বুখারী তা’লীক্বভাবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে নাফ্‌ল সলাত আদায়ের ইচ্ছা করলে স্বীয় উষ্ট্রীকে কেবলামুখী করে নিয়ে তাকবীর বলতেন। অতঃপর সওয়ারীর মুখ যেদিকেই হত সেদিকে ফিরেই সলাত আদায় করতেন। [১২২৮] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গাধার পিঠে সলাত আদায় করতে দেখেছি। এ সময় গাধার মুখ খায়বারের দিকে ছিলো (অর্থাৎ ক্বিবলাহ্‌র বিপরীতে)। সহিহঃ মুসলিম। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখি, তিনি সওয়ারীর উপর পূর্ব দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন এবং তাঁর রুকূ’র চেয়ে সাজদাহ্‌তে (মাথা) অধিক নত ছিল।

【9】

ওযরবশত বাহনের উপর ফার্‌য সলাত আদায়

‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, নারীদের কি জন্তুর উপর সলাত আদায়ের অনুমতি রয়েছে? তিনি বললেন, সুবিধা কিংবা অসুবিধা কোন অবস্থাতেই তাদের জন্য এর অনুমতি নেই। মুহাম্মাদ ইবনু শু’আইব (রহঃ) বলেন, এ বিধান ফরয সলাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

【10】

মুসাফির কখন পূর্ণ সলাত আদায় করবে?

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং মাক্কাহ বিজয়ের দিনেও তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি মাক্কাহতে আঠার দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি (ফরয) সলাত দু’ রাক্‌আত আদায় করেন এবং বলেনঃ হে শহরবাসী! তোমরা চার রাক’আত সলাত আদায় করবে। কেননা আমরা মুসাফির সম্প্রদায় (তাই চার রাক’আতের স্থলে দু’ রাকআত আদায় করেছি)। [১২৩২] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কাতে সতের দিন অবস্থানকালে সলাতকে ক্বসর করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, কোন ব্যাক্তি কোথাও সতের দিন অবস্থান করলে তাকে সলাত ক্বসর করতে হবে। এর চেয়ে বেশি দিন অবস্থান করলে, সে সলাত পুরো আদায় করবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঊনিশ দিন অবস্থান করেছেন। সহীহঃ বুখারী এ শব্দেঃ (ঊনিশ দিন...) আর এটাই সুরক্ষিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের বছরে সেখানে পনের দিন অবস্থান করেন এবং এ সময় তিনি সলাত ক্বসর করেন। [১২৩৪] দুর্বল মুনকার। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) হাদীসটি ইবনু ইসহাক্ব সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে, তাতে বর্ণনাকারীগণ ইবনু ‘আব্বাসের নাম উল্লেখ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহতে সতের দিন অবস্থানকালে (ফরয সলাত চার রাকা’আতের স্থলে) দু’ রাকা’আত করে সলাত আদায় করেন। [১২৩৫] দুর্বল মুনকার। সহীহ হচ্ছে ঊনিশ দিন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মাদীনাহ হতে মাক্কাহতে রওয়ানা হলাম। আমরা মাদীনাহতে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তিনি দু’ রাক’আত করে সলাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কি সেখানে কিছু কাল অবস্থান করেন? তিনি বললেন, আমরা দশদিন অবস্থান করেছিলাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু ‘উমার ইবনু ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র ‘আলী (রাঃ) সফরকালে সূর্যাস্তের পরও চলা অব্যাহত রাখতেন। অবশেষে অন্ধকার ঘনিয়ে এলে বাহন থেকে নেমে মাগরিবের সলাত আদায় করতেন। তারপর রাতের খাবার চেয়ে নিয়ে তা খাওয়ার পর ‘ইশার সলাত আদায় করতেন। অতঃপর আবার রওয়ানা দিতেন এবং বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘উমার ইবনু ‘আলীর সূত্রে ‘উসমান বলেন, আমি আবূ দাউদ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, উসামাহ ইবনু যায়িদ, হাফ্স ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ অর্থাৎ আনাস ইব্‌ন মালিকের পুত্র হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাঃ) পশ্চিমাকাশের লালিমা দূরীভূত হবার পর উভয় সলাত একত্রে আদায় করতেন এবং বলতেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। সহীহ।

【11】

শত্রুর দেশে অবস্থানকালে সলাত ক্বসর করা সম্পর্কে

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকে বিশ দিন অবস্থকালে সলাত ক্বসর করেছেন।

【12】

সলাতুল খাওফ (ভয়কালীন সলাত)

কারো মতে, এ সলাতের পদ্ধতি হচ্ছেঃ ইমাম সকলকে দুই কাতারে ভাগ করে সলাত আরম্ভ করবেন। তারপর তিনি সবাইকে নিয়ে তাকবীর বলবেন, অতঃপর রুকূ’ করবেন। অতঃপর ইমাম তার নিকটবর্তী কাতারের লোকদের নিয়ে সাজদাহ্‌ করবেন, তখন দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তাদেরকে পাহারা দিবে। অতঃপর প্রথম কাতারের লোকেরা উঠে দাঁড়ালে দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা সাজদাহ্‌ করবে, যারা তাদের পিছনে ছিল। অতঃপর ইমামের নিকতবর্তী কাতারের লোকেরা পিছনে সরে সেই স্থানে যাবে যেখানে দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা দাঁড়িয়েছে। এ সময় পিছনের কাতারের লোকেরা প্রথম কাতারের লোকেরদের স্থানে আসবে। এরপর সকলে একত্রে রুকূ’ করবে। অতঃপর ইমাম তার নিকতবর্তী কাতারের লোকেদের নিয়ে সাজদাহ্‌ করবেন। তখন অপর দল তাদেরকে পাহারা দিবে। অতঃপর ইমাম ও তার নিকটবর্তী কাতার বসলে অন্য কাতার সাজদাহ্‌ করবে। অতঃপর সকলে একত্রে বসে একসঙ্গে সালাম ফিরাবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘সলাতুল খাওফ’ এ পদ্ধতিতে আদায় করা সুফয়ান সওরীর অভিমত। আবূ ‘আইয়াশ আয-যুরাক্বী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ‘উসফান নামক স্থানে ছিলাম। তখন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ মুশরিকদের সেনাধিনায়ক ছিলেন। আমরা যুহরের সলাত আদায় করলে মুশরিকরা পরস্পর বলাবলি করলো, নিশ্চয়ই আমরা ধোঁকার মধ্যে আছি, আমরা তো একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। তাদের সলাতরত অবস্থায় আক্রমণ করতে পারলে তো (আমাদের নিশ্চিত বিজয়)। এমন সময় যুহর ও ‘আসর সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে সলাত ক্বসর সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হয়। কাজেই ‘আসরের ওয়াক্ত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে সলাতে দাঁড়ান। তখন মুশরিকরা তাঁর সম্মুখে অবস্থান করছিল। (মুসলিমদের) এক জামা’আত কাতারবদ্ধভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে দাঁড়ালো, এবং তার পিছনে দাঁড়ালো দ্বিতীয় কাতার। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ করলে তারাও একসাথে রুকূ’ করলো। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করলে যে কাতার তাঁর কাছাকাছি ছিল, তারাও সাজদাহ্ করলো, আর পিছনের কাতার এদেরকে পাহারা দিতে লাগলো। যখন প্রথম কাতার দু’টি সাজদাহ্ করে দাঁড়ালো তখন তাদের পিছনের কাতার লোকেরা সাজদাহ্ করলো। এ পর্যন্ত প্রত্যেক কাতারের লোকদের একটি রুকূ’ ও দু’টি করে সাজদাহ্ পূর্ণ হলো। অতঃপর প্রথম কাতারের লোকেরা দ্বিতীয় কাতারে সরে এলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ করলে সকলে একত্রে রুকূ’ করলো এবং পিছনের কাতারের লোকেরা তাদেরকে পাহারা দিল। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর কাছাকাছি কাতারের লোকেরা বসলেন, তখন দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা সাজদাহ্ করলো। অতঃপর তারা সবাই বসে পড়লো, এরপর তিনি সবাইকে নিয়ে একত্রে সালাম ফিরালেন। এভাবে তিনি ‘উসফান নামক স্থানে সলাত আদায় করলেন। আর এটা ছিল বনূ সুলাইম গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানকালে তাঁর সলাতুল খাওফ আদায়ের পদ্ধতি। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আইয়ূব বর্ণনা করেন, হিশাম আবুয যুবাইর হতে জাবির সূত্রে এরূপ অর্থের হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। সহীহঃ মুসলিম। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন দাউদ ইবনু হুসাইন, ‘ইকরিমাহ হতে ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে। হাসান সহীহ। অনুরূপভাবে ‘আবদুল মালিক ‘আত্বা হতে জাবির সূত্রে। একইভাবে ক্বাতাদাহ, হাসান হতে হিত্তান সূত্রে আবূ মূসার কর্মমূলক বর্ণনা। সহীহঃ মুসলিম। অনুরূপভাবে ‘ইকরিমা ইবনু খালিদ বর্ণনা করেছেন মুজাহিদ হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে। আমি এটি পাইনি। একইভাবে হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ তার পিতা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে। সহীহ মুরসাল। এ নিয়মে সলাতুল খাওফ আদায় করা সুফয়ান সাওরীর অভিমত।

【13】

যিনি বলেন, ইমামের সাথে এক কাতার দাঁড়াবে এবং এক কাতার দাঁড়িয়ে থাকবে শত্রুর মোকাবিলায়। ইমাম তার নিকটস্থ কাতারের লোকদের নিয়ে এক রাক’আত সলাত আদায় করে ইমাম ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষন না তার সাথে এক রাক’আত সলাত আদাইয়কারীরা নিজস্বভাবে তাদের দ্বিতীয় রাক’আত আদায় করে নেয়। আতঃপর তারা শত্রুর সম্মুখে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দল আসবে। ইমাম তাদেরক নিয়ে এক রাক’আত আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ততক্ষন বসে থাকবেন যতক্ষন এরা নিজস্বভাবে নিজ নিজ দ্বিতীয় রাক’আত পূর্ণ করে নেয়। অতঃপর ইমাম সকলকে নিয়ে একত্রে সালাম ফিরাবে।

সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করেন। তিনি তাঁর পিছনে সাহাবীদেরকে দুই কাতারে দাঁড় করান। অতঃপর তাঁর কাছাকাছি কাতারের লোকদের নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করেন। অতঃপর তাঁর কাছাকাছি কাতারের লোকেরা নিজেরাই বাকী এক রাক'আত আদায় করে নেন কিন্তু তিনি যথারীতি দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর যারা পিছনের (দ্বিতীয়) কাতারে ছিল তারা সম্মুখে আসলো এবং যারা সম্মুখে ছিল তারা পিছনে চলে গেল। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদেরকে নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে রইলেন আর পিছনের লোকেরা বাকী এক রাক'আত পূর্ণ করলো। সবশেষে তিনি সালাম ফিরালেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【14】

যিনি বলেন, যখন ইমাম এক রাক'আত আদায় করে দাঁড়িয়ে থাকবেন, তখন লোকজন নিজেদের অবশিষ্ট এক রাক'আত পূরণ করে সালাম ফিরিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়াবে। এতে সালাম হবে পৃথক পৃথক।

সলিহ ইবনু খাওয়াত (রঃ) তিনি ঐ ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন, যিনি যাতুর-রিক্বা'র অভিযানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেছেন। (তাদের সলাত আদায়ের পদ্ধতি এরূপ ছিল যে), একদল তাঁর সাথে কাতারবদ্ধ হলো এবং একদল শত্রুর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে রইল। (প্রথমে) তিনি তাঁর নিকটবর্তী সাথীদেরকে নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করে স্থীরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। আর লোকেরা বাকী (এক রাক'আত সলাত) নিজেরা আদায় করে দুশমনের মোকাবিলায় চলে গেলেন। অতঃপর (সলাতের জন্য) দ্বিতীয়দলটি তাঁর পিছনে এসে দাঁড়ালে তিনি তাদেরকে নিয়ে তাঁর অবশিষ্ট এক রাক'আত আদায় করে বসে রইলেন। তখন তারা তাদের দ্বিতীয় রাক'আত নিজেরাই আদায় করে নিলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম মালিক (রঃ) বলেন, "সলাতুল খাওফ" আদায় সম্পর্কে যে কয়টি পদ্ধতির কথা বর্ণিত আছে এবং আমি শুনেছি, তার মধ্যে ইয়াযীদ ইবনু রূমানের এ হাদীসটি আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। সালিহ ইবনু খাওয়াত আল-আনসারী (রঃ) তার কাছে সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ আল-আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, সলাতুল খাওফে ইমাম দাঁড়াবে এবং তাঁর সাথে দাঁড়াবে সঙ্গীদের একাংশ এবং আরেক অংশ শত্রুর মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবে। ইমাম তাঁর নিকটবর্তী সাথীদের নিয়ে এক রাক'আত সলাত রুকূ ও সাজদাহ সহ আদায় করে স্থীরভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় সাথীরা নিজ নিজ অবশিষ্ট এক রাক'আত পূরণ করে নিবে এবং ইমামের দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ই তারা সালাম ফিরিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় চলে যাবে। অতঃপর সাথীদের দ্বিতীয় অংশ যারা সলাত আদায় করেনি তারা সম্মুখে এগিয়ে এসে তাকবীর বলে ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। তাদেরকে নিয়ে ইমাম রুকু ও সাজদাহ করে সালাম ফিরাবেন, কিন্তু লোকেরা দাঁড়িয়ে তাদের নিজ নিজ বাকী রাক'আত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। সহীহঃ বুখারী, দুই স্থানে সালাম ফিরানোর কথাটি বাদে। কেননা তা মাওকূফ। আর এর পূর্বেরটি মারফূ'। তাতে কেবল দ্বিতীয় দলের সাথে ইমামের সালাম ফিরানোর কথা আছে। এটিই অধিক বিশুদ্ধ।

【15】

যিনি বলেন, সকলেই একত্রে তাকবীর বলবে, যদিও তারা ক্বিবলাহর বিপরীত দিকে মুখ করে থাকে। ইমাম তাঁর কাছের লোকদের নিয়ে এক রাক'আত আদায় করবেন। এরপর এরা তাদের সাথীদের সারীতে এসে দাঁড়াবে এবং ঐ দলটি এসে নিজস্বভাবে এক রাক'আত আদায় করবে। ইমাম এদেরকে নিয়ে আরো এক রাক'আত আদায় করবেন। অতঃপর শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকা দলটি সামনে এগিয়ে এসে নিজস্বভাবে তাদের এক রাক'আত আদায় করে নিবে। সবার সলাত শেষ হওয়া পর্যন্ত ইমাম যথারীতি বসেই থাকবেন এবং পরে সবাইকে নিয়ে একত্রে সালাম ফিরাবেন।

মারওয়ান ইবনুল হাকাম তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর 'সলাতুল খাওফ' আদায় করেছেন? তিনি বলেন, হাঁ, মারওয়ান জিজ্ঞেস করেন, কখন? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, 'নাজদ' অভিযানের বছর। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসর সলাতের জন্য দাঁড়ালে এক দল তাঁর সাথে দাঁড়ালো। আর অপর দল দাঁড়ালো শত্রুর মুকাবিলায়। এদের পৃষ্ঠ ছিল ক্বিবলাহর দিকে। যারা তাঁর সাথে ছিলেন এবং যারা শত্রুর মুকাবিলায় ছিলেন সকলেই একত্রে তাকবীর বললেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটবর্তী লোকদের নিয়ে রুকূ করলেন। দ্বিতীয় দলটি শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে রইল। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালে তার নিকটবর্তী দলটিও উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর তারা গিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় দন্ডায়মান হলে শত্রুর মুকাবিলায় দন্ডায়মান থাকা দলটি সম্মুখে এগিয়ে এসে রুকূ ও সাজদাহ করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। অতঃপর তারা (প্রথম রাক'আত হতে) উঠে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক'আতের রুকূ করেন এবং তারাও তাঁর সাথে রুকূ ও সাজদাহ করলো। অতঃপর শত্রুর মুকাবিলায় দন্ডায়মান দলটি সামনে অগ্রসর হয়ে রুকূ ও সাজদাহ করে এক রাক’আত আদায় করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থিরভাবে বসেই রইলেন এবং তারাও তাঁর সাথে ছিলো। অতঃপর সালাম ফিরানোর সময় হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালেন এবং তারা সবাই সালাম ফিরালো। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সলাত হলো দু' রাক'আত। আর উভয় দলের প্রত্যেকের সলাত হলো (জাম'আতের সাথে) এক রাক'আত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে 'নাজদ' অভিযানে বের হই। আমরা যখন যাতুর-রিকা স্থানের নাখল উপত্যকায় পৌঁছি, তখন গাতাফান গোত্রের একদল লোকের সাথে আমাদের যুদ্ধ হয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীসের ভাব ও অর্থ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী হায়ওয়া যে শব্দে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন পূর্বোল্লিখিত বর্ণনাকারীর শব্দ এর ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, তিনি যখন তাঁর সাথীদের নিয়ে রুকূ ও সাজদাহ করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, তারা সাজদাহ হতে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনের দিকে সরে গিয়ে তাদের সাথীদের স্থানে দন্ডায়মান হলো। তবে এ হাদীসে ক্বিবলাহর দিক পিছনে থাকার কথা উল্লেখ নেই। 'আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তাকবীর বলার সাথে সাথে তাঁর নিকটবর্তী কাতারের লোকজন ও তাকবীর বললো। অতঃপর তিনি রুকূ করলে তারাও রুকূ করলো। এরপর তিনি সাজদাহ করলে তারাও সাজদাহ করলো, পরে তিনি মাথা উঠালে তারাও মাথা উঠালো। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থির হয়ে বসে থাকলেন, তবে লোকেরা নিজ নিজ দ্বিতীয় রাক'আত আদায় করে নিল। অতঃপর তারা দাঁড়িয়ে পিছনের দিকে সরে গিয়ে দ্বিতীয় দলটির পিছনে অবস্থান করলো। তারপর দ্বিতীয় দলটি সামনে এসে তাকবীর বলে স্ব স্ব সলাতের রুকূ পর্যন্ত শেষ করলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ করলে তারাও তাঁর সাথে সাজদাহ করলো। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ান। আর এ সময় লোকেরা নিজ নিজ দ্বিতীয় রাক'আত সমাপ্ত করলো। অতঃপর উভয় দল একত্রে উঠে দাঁড়ালো এবং তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে সলাত আদায় করলো। তারা তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাথে রুকূ এবং সাজদাহ আদায় করলো। এরপর তিনি দ্বিতীয় সাজদাহ করলে লোকেরাও তাঁর সাথে খুবই তাড়াতাড়ি সাজদাহ করলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীরা সালাম ফিরালেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে দাঁড়ালেন। এভাবে লোকজন তাঁর সাথে পুরো সলাতে অংশগ্রহন করে।

【16】

যিনি বলেন, ইমাম প্রত্যেক দলের সাথে এক রাক'আত করে আদায় করবেন, এরপর সালাম ফিরাবেন। অতঃপর প্রত্যেক দল দাঁড়িয়ে নিজস্বভাবে অবশিষ্ট এক রাক'আত সালাত আদায় করবেন।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু' দলের এক দলকে সঙ্গে নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করেন। এ সময় অপর দলটি শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকলো। অতঃপর তারা দ্বিতীয় দলের অবস্থানে গিয়ে দাঁড়ালে দ্বিতীয় দলটি (সামনের কাতারে) আসলো। এ সময় তিনি তাদেরকে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় রাক'আতটি আদায় করে একাই সালাম ফিরালেন, অতঃপর প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় দল দাঁড়িয়ে নিজেরাই নিজ নিজ অবশিষ্ট এক রাক'আত সলাত পূর্ণ করলো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন নাফি' ও খালিদ ইবনু মা'দান ইবনু 'উমার হতে মারফূ'ভাবে। ইবনু আব্বাস সূত্রে মাসরুক্ব এবং ইউসূফ ইবনু মিহরানের উক্তিও তাই। ইউনূস-হাসান হতে আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে।

【17】

যিনি বলেন, ইমাম প্রত্যেক দলের সাথে এক রাক'আত করে সলাত আদায় করে সালাম ফিরাবেন। অতঃপর তার পিছনের দলটি দাঁড়িয়ে (ইমামের সাথে) এক রাক'আত সলাত আদায় করবে। এরপর পরবর্তী দল তাদের স্থানে এসে দাঁড়িয়ে (ইমামের সাথে) এক রাক'আত আদায় করবে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করেন। এ সময় লোকজন দুই কাতারে দাঁড়ালো। এক কাতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে অবস্থান করলো এবং অপর কাতার শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়ালো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটবর্তী সাথীদের নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করলেন। এরপর অপর কাতারের লোকেরা এসে (প্রথম সারির লোকেদের) স্থানে দাঁড়ালো এবং (প্রথম কাতারের লোকেরা) শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়ালো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদেরকে নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করে একাই সালাম ফিরালেন। এ সময় তারা উঠে দাঁড়িয়ে নিজস্বভাবে এক রাক'আত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে (শত্রুর মুকাবিলায় অবস্থানকারীদের) স্থানে অবস্থান নিলো এবং তারা এসে নিজস্বভাবে এক রাক'আত আদায় করে সালাম ফিরালো। খুসাইফ (রাঃ) খুসাইফ (রাঃ) হতে এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য তাকবীর বললে উভয় দলই তাকবীর বললো। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের এরূপ ভাবার্থ ইমাম সাওরী ও 'খুসাইফ' হতে বর্ণনা করেছেন এবং আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) এভাবে সলাত আদায় করেছেন। তবে উক্ত হাদীসে রয়েছে, তিনি যে দলটির সাথে এক রাক'আত আদায় করে সালাম ফিরালে তারা তাদের দ্বিতীয় কাতারের সাথীদের স্থানে চলে যান এবং তারা এসে নিজেরাই নিজ নিজ এক রাক'আত সলাত আদায় করেন। অতঃপর তারা আবার এদের স্থানে প্রত্যাবর্তণ করে নিজস্বভাবে বাকী এক রাক'আত আদায় করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসলিম ইবনু ইবরাহীম হতে, তিনি ‘আবদুস সমাদ ইবনু হাবীব হতে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে অবহিত করেন যে, তারা আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) এর সাথে 'কাবুল' (পারস্য) অভিযানে ছিলেন। তখন তিনি আমাদেরকে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করেছেন। দূর্বল।

【18】

যিনি বলেন, প্রত্যেক দল কেবল এক রাক'আত আদায় করবে, পুরো সলাত নয়।

সালাবাহ ইবনু যাহদাম (রঃ) তিনি বলেন, আমরা সাঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর সাথে 'তাবারিস্থান' অভিযানে ছিলাম। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের মধ্যে এমন কে আছেন, যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে 'সলাতুল খাওফ' আদায় করেছেন? হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, আমি। অতঃপর তিনি এক দলকে নিয়ে এক রাক'আত এবং আরেক দলকে নিয়ে এক রাক'আত সলাত আদায় করেন। এ সময়ে তারা (মুক্তাদীরা) অবশিষ্ট (এক রাক'আত) সলাত পূরণ করেনি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও মুজাহিদ- ইবনু ‘আব্বাস হতে মারফূ'ভাবে এবং আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক- আবূ হুরায়রা হতে মারফূ'ভাবে, এবং ইয়াযীদ আল-ফাক্বীর ও তাবিঈ আবূ মূসা- জাবির হতে মারফূ'ভাবে। অনুরূপভাবে সিমাক আল-হানাফি (রঃ) ইবনু উমার (রাঃ) হতে। কতিপয় বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু ফাক্বীরের হাদীসে বলেন, তারা বাকী এক রাক'আত পূর্ণ করে নেয়। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে। তিনি বলেন, সকল লোকের জন্য ছিলো এক রাক'আত এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য ছিল দু' রাক'আত। ইবনু আব্বাস তিনি বলেন, মহা মহীয়ান আল্লাহ তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জবানীতে সলাত ফারয করেছেন, বাসস্থানে থাকাকালে চার রাক’আত, সফর অবস্থায় দু’ রাক’আত এবং ভয়-ভীতির সময় (যুদ্ধে) এক রাক’আত। সহীহঃ মুসলিম।

【19】

যিনি বলেন , ইমাম প্রত্যেক দলের সাথে দু’ রাক’আত করে সলাত আদায় করবেন।

আবু বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভয়-ভীতির সময় যুহরের সলাত আদায় করেছেন। এ সময় লোকজনের কিছু সংখ্যাক তাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হয় এবং কিছু সংখ্যক কাতারবদ্ধ হয় শত্রুর মুকাবিলায়। অতঃপর তিনি দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে সালাম ফিরান। তাঁর সঙ্গে সলাত আদায়কারীরা সরে গিয়ে (পিছনের) সঙ্গীদের স্থানে গিয়ে দাঁড়ালো এবং তারা এসে দাঁড়ালো তাঁর পিছনে। তিনি তাদেরকে নিয়ে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। ফলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হলো চার রাক’আত এবং তাঁর সাহাবীদের হলো দু’ দু’ রাক’আত। হাসান বাসরী (রহঃ) এরুপই ফাতাওয়াহ দিতেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, এরুপে মাগরিবের সলাতে ইমামের হবে ছয় রাক’আত এবং অন্যদের হবে তিন তিন রাক’আত। সহীহ। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরুপ বর্ননা করেছেন ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর, আবূ সালামাহ হতে জাবির থেকে মারফু’ভাবে। অনুরুপ বলেছেন সুলায়মান ইয়াশকুরী, জাবির হতে মারফূ’ভাবে।

【20】

(শত্রুকে হত্যার জন্য ) অনুসন্ধানকারীর সলাত

‘আবদুল্লাহ ইবনু উনাইস (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে খালিদ ইবনু সুফয়ান আল-হুযালীকে হত্যা করার জন্য উরানাহ ও ‘আরাফাতের নিকটে পাঠালেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি তার সন্ধান পেলাম ‘আসর সলাতের ওয়াক্তে। আমি আশংকা করলাম আমার এবং তার মধ্যে যদি এখনই সংর্ঘষ বেঁধে যায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে আমার সলাত বিলম্ব হবে। কাজেই আমি হাঁটতে থাকলাম এবং তার দিকে মুখ করে ইশারায় সলাত আদায় করতে থাকলাম। আমি তার নিকটবর্তী হলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো , তুমি কে? আমি বললাম , আরবের এক ব্যক্তি। আমার কাছে সংবাদ পৌছেছে যে, তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করছো? সুতরাং আমি এজন্যই তোমার কাছে এসেছি। সে বললো, আমি এরুপই করছি। বর্ননাকারী বলেন, অতঃপর আমি তার সঙ্গে হাঁটতে থাকলাম এবং সুযোগ বুঝে আমার তরবারী দিয়ে তার উপরে আঘাত হানলাম। অবশেষে সে ঠান্ডা হয়ে গেলো ( অর্থ্যাৎ মৃত্যুবরণ করলো)। [১২৫২]