40. অপরাধ ও তার শাস্তি
মুরতাদ সম্পর্কে বিধান
‘ইকরিমাহ (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) কিছু সংখ্যক মুরতাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তা জানতে পেরে বলেন, আমি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী অনুসরণ করে এদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাউকে আল্লাহর শাস্তির উপকরন দ্বারা শাস্তি দিও না। তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বক্তব্য মোতাবেক এদের মৃত্যুদণ্ড দিতাম। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি নিজের ধর্ম (ইসলাম) পরিবর্তন করে তোমরা তাকে হত্যা করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদিস শুনে ‘আলী (রাঃ) বলেন, আহ! ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় যদি না সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে থাকেঃ (১) বিবাহিত ব্যাক্তি যেনা করলে; (২) কেউ কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) সমাজের ঐক্য বিনষ্টকারী মুরতাদ। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের যে কোন একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (১) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে, (২) আল্লাহ এবং তাঁর রাঊলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ হতে নির্বাসন দেয়া হবে, (৩) আর কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা কয়া হবে। আবূ বুরদাহ (রহঃ) আবূ মূসা আশ্আরী গোত্রের দু’জন লোককে সঙ্গে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যাই। তাদের একজন আমার ডানপাশে এবং অপরজন বামপাশে ছিল। তারা উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট চাকুরী (সরকারী পদ) চাইল। তিনি নীরব রইলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস! তুমি কি বলো? আমি বললাম, সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! এরা এদের মনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেনি এবং আমি জানতামনা যে, তারা চাকুরী চাইবে। আবু মুসা বলেন, আমি তাঁর ঠোঁটের নীচে মেস্ওয়াকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তা যেন ফুলে আছে। তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি সরকারী পদে নিয়োগের প্রার্থনা করে আমরা তাকে কখনো তাতে নিয়োগ করি না। তুমি বরং চলে যাও হে আবূ মূসা অথবা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস! অতঃপর তিনি তাকে ইয়ামানে পাঠিয়ে দেন এবং তার পরে মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, মু‘আয (রাঃ) তার নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, নেমে আসুন এবং তের জন্য একটি বালিশ পেতে দিলেন। তার নিকট ছিল একটা বাঁধা লোক। তিনি প্রশ্ন করলেন, লোকটি কে? তিনি বললেন, লোকটি ছিল ইয়াহুদী, পরে ইসলাম গ্রহন করে। পরে আবারো সে তার খারাপ ধর্মে ফিরে যায়। মু‘আয (রাঃ) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা মোতাবেক তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি বসবো না। তিনি বলেন, হাঁ আপনি বসুন। মু‘আয (রাঃ) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা মোতাবেক তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমিও বসবো না। একথা তিনি তিনবার বলেন। অতঃপর তার হুকুমে তাকে হত্যা করা হলো। পরে তারা দু‘জন রাত জেগে ‘ইবাদাত করা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের একজন মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আমিতো রাতে ঘুমাই ও জেগে ইবাদাত করি, অথবা দাঁড়িয়ে ‘ইবাদাত করি, ঘুমাই এবং ‘ইবাদাতের মধ্যে আমি যা কামনা করি, ঘুমের মধ্যেও তাই কামনা করি। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে অবস্থানকালে মু‘আয (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। একটি লোক ইয়াহুদী ছিল, সে মুসলিম হয়ে আবার ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। মু‘আয (রাঃ) এসে বলেন, একে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি আমার জন্তুযান হতে নামবো না। অতঃপর তাকে হত্যা করা হলো। তাল্হা ও বুরাইদাহ উভয়ের একজন বলেন, হত্যা করার পূর্বে তাকে ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানানো হয়েছিল। একই ঘটনা প্রসঙ্গে আবূ বুরদাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ মুসার নিকট ইসলাম ত্যাগী একটি লোককে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে বিশ দিন অথবা এর কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ইসলামে ফিরে আসার আহবান জানান। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) এসেও তাকে আহবান জানালেন; কিন্তু সে অস্বীকার করলো। সুতরাং তাকে হত্যা করা হলো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ বুরদাহ হতে ‘আবদুল মালিক ইবনু ‘উমাইরের বর্ণিত হাদীসে ‘ইসলামে ফিরে আসার’ কথা উল্লেখ নেই। আর ইবনু ফুদাইল শাইবানীর সূত্রে সাঈদ ইবনু আবূ বুরদাহ হতে তার পিতা আবূ মুসা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতেও ‘ইসলামে ফিরে আসার’ জন্য আহবান করার কথা উল্লেখ নেই। ক্বাসিম (রহঃ) ক্বাসিম (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত তিনি (মু‘আয) অবতরণ করেননি। আর তাকে ইসলামে ফিরে আসার আহবানও করা হয়নি। [৪৩৫৬] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা‘দ ইবনু আসুস সার্হ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (ওয়াহী) লেখকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে এবং সে কাফিরদের সঙ্গে মিশে যায়। মাক্কাহ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। কিন্তু ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তার জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন। সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু আবূ সার্হ ‘উসমান ইবনু ‘আফফান এর নিকট আত্মগোপন করে। তিনি তাকে নিয়ে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আবদুল্লাহকে বাই’আত করুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা উঠিয়ে তিনবার তার দিকে তাকান এবং প্রতিবারই বাই’আত করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনবারের পর তাকে বাই’আত করেন। অতঃপর তিনি সাহাবীদের দিকে ফিরে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কি সঠিক নির্দেশ উপলব্ধি করার মত কেউ ছিলনা, যে এর সামনে গিয়ে দাঁড়াত, আর যখন দেখত আমি তার বাই’আত গ্রহন না করার জন্য হাত গুটিয়ে নিচ্ছি, তখন সে তাকে হত্যা করতো? সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার মনের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারিনি। আপনি কেন আমাদের চোখ দিয়ে ইশারা করলেন না? তিনি বললেনঃ কোন নাবীর পক্ষে চোখের খেয়ানাতকারী হওয়া শোভা পায় না। জাবীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ক্রীতদাস পলায়ন করে যদি মুশরিক হয়ে যায়, তবে তাকে হত্যা করা বৈধ। [৪৩৫৯] দুর্বল, আর সহীহ হলো এ শব্দেঃ (আরবী) নাসায়ী।
যে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গালি দেয় তার সম্পর্কিত বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জনৈক অন্ধ লোকের একটি ‘উম্মু ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসী ছিল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গালি দিত এবং তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতোনা। সে তাকে ভর্ত্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। একরাতে সে যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, সে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করলো। তার দু’পায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বললেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছিঃ যে ব্যক্তি একাজ করেছে, সে যদি না দাঁড়ায়, তবে তার উপর আমার অধিকার আছে। একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুশের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম কিন্তু সে বিরত হতোনা। আমি তাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতোনা। তার গর্ভজাত মুক্তার মত আমার দুতি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিল। গতরাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো। ‘আলী (রাঃ) এক ইয়াহুদী মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গালাগালি করতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। একদা জনৈক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার রক্ত বাতিল বলে ঘোষণা করেন। [৪৩৬১] সানাদ দুর্বলঃ ইরওয়া হা/১২৫১। আবূ বারযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি একটি লোকের প্রতি খুবই ক্রোধান্বিত হলেন। আমি তাকে বললাম, হে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খালিফাহ! আমাকে অনুমতি দিন, তাকে হত্যা করি। তিনি বলেন, আমার একথায় তার ক্রোধ দূর হলো। তিনি উঠে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। অতঃপর তিনি লোক পাঠিয়ে আমাকে (ডেকে নিয়ে) প্রশ্ন করেন, তুমি এইমাত্র কি বলেছ? আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি তাকে হত্যা করি। তিনি প্রশ্ন করেন, আমি যদি তোমাকে আদেশ করতাম, তুমি কি তাই করতে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, না, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরে অন্য কোন মানবের এ অধিকার নেই। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই মুল পাঠ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ। আহ্মাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে তিনটি অপরাধের কোনটিতে লিপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলেছেন, তাদের ছাড়া অন্য কাউকে হত্যা করা আবূ বাক্রের জন্য বৈধ নয়ঃ কেউ ধর্ম ত্যাগ করলে, বিবাহিত ব্যাক্তি যেনা করলে এবং নিরপরাধ ব্যাক্তির হত্যাকারী। তবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হত্যা করার কর্তৃত্ব ছিল।
বিদ্রোহ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উকল অথবা উরাইনাহ গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলো। মদিনায় বসবাস তাদের পক্ষে অনুপযোগী হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে উতের পালের নিকট গিয়ে এগুলর পেশাব ও দুধ পান করতে আদেশ দেন। অতএব তারা সেখানে চলে গেলো। পরে তারা সুস্থ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাখালকে হত্যা করে এবং উট পাল্কে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। দিনের প্রথমভাগে এ খবর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পৌঁছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের পিছনে লোক পাঠান। উঠন্ত বেলায় তাদের ধরে নিয়ে আসা হয়। তাঁর আদেশে তাদের হাত পা কাতা হয় এবং লৌহ শলাকা তাদের চোখে বিদ্ধ করে উত্তপ্ত রদে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চাইলেও তা দেয়া হয়নি। আবূ ক্বিলাবাহ বলেন, এরা এমন একটি গোত্রের, যারা চুরি করেছে, ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং সর্বোপরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আইয়ুব (রাঃ) আইয়ুব (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশে লৌহ শলাকা উত্তপ্ত করা হয়, তাদের চোখে ফুঁড়ে দেয়া হয়, হাত-পা কেটে দেয়া হয়, এবং তাদের রক্তপ্রবাহ বন্ধ করেননি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তিনি তাতে বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের অনুসন্ধানে পদচিহ্ন বিশারদ একদল লোক পাঠালেন। পরে তাদেরকে ধরে নিয়ে আসা হোল। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেনঃ “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেরায়, তাদের শাস্তি হোল, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের একদিকের হাত এবং অপরদিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা ভূপৃষ্ঠ হতে নির্বাসিত (কারাগারে আবদ্ধ) করা হবে। এতাই তাদের ইহকালের অপমান, আর পরকালে তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে” (সূরাহ আল্-মায়িদাহঃ ৩৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, বিপরীত দিক হতে তাদের হাত-পা কর্তন করা হয়। হাদীসের প্রথমাংশে তিনি বলেন, তারা উট ছিনতাই করে এবং ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাদের একজনকে পিপাসার যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে মাটি কামড়াতে দেখেছি। অবশেষে তারা মারা যায়। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে আরো আছেঃ অতঃপর তিনি অঙ্গহানি নিষিদ্ধ করেন। এ বর্ণনায় ‘বিপরীত দিক হতে’ কথাটুকুর উল্লেখ নেই। আনাস (রাঃ) হতে অন্যান্য বর্ণনাকারীও এ অংশটুকু উল্লেখ করেননি। আমি হাম্মাদ ইবনু সালামাহর হাদীস ব্যতীত আর কারোর বর্ণনায় ‘বিপরীত দিক হতে তাদের হাত-পা কাটার’ কথা পাইনি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উট লুট করে নিয়ে যায়, ইসলাম ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একজন ঈমানদার রাখালকে হত্যা করে। অতঃপর তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠান! তাদের ধরে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে দেন এবং চোখ উপড়ে ফেলেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, এদের সম্পর্কে ‘মুহারাবার’ আয়াত (৫:৩৩) নাযিল হয়। হাজ্জাজ যখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি এদের সম্পর্কিত হাদীসটি বর্ণনা করেন। আবূয-যিনাদ (রহঃ) যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উট চুরি করেছিল তিনি তাদের হাত-পা কাটলে এবং আগুন দিয়ে তাদের চোখ উৎপাটন করলে আল্লাহ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেন এবং আয়াত নাযিল করেনঃ “ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ধবংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এই যে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলীবিদ্ধ করা হবে....” (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৩৩)। [৪৩৬৯] মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের ঘটনাটি ঘটেছিল আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে। [৪৩৭০] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হলোঃ তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা যমীন হতে নির্বাসিত করা হবে, .....নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়” (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৩৩-৩৪) আয়াত দু’টি মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি তাওবাহ করে ফিরে আসে তাকে নিয়ন্ত্রনে আনার পূর্বে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়নে কোন বাধা থাকবে না।
শাস্তি মওকুফের জন্য সুপারিশ করা
‘আয়িশাহ (রাঃ) জনৈকা মাখযূমী মহিলার চুরি সংক্রান্ত অপরাধ কুরাইশদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুললে তারা বললো, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে কে আলোচনা করবে? তারা বললো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রিয়পাত্র উসামাহ ইবনু যায়িদ-ই এ প্রসঙ্গে কথা বলতে সাহস করতে পারে। অতঃপর উসামাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একথা বলাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে উসামাহ! তুমি কি মহান আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি মওকুফের সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিরা এজন্য ধবংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার মর্যাদাশীল কেউ চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো, আর তাদের দুর্বল কেউ চুরি করলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতো। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি! মুহাম্মাদের কন্যা ফাত্বিমাহও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কাটতাম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক মাখযুমী মহিলা জিনিসপত্র ধার নিয়ে পরে তা অস্বীকার করতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। অতঃপর লাইস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত কেটে দেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু ওয়াহব এ হাদীস ইউনুসের সূত্রে যুহরী হতে বর্ণনা করে বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাক্কাহ বিজয়কালে জনৈক মহিলা চুরি করে। লাইস ইউনুসের সূত্রে এবং ইবনু শিহাব সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, জনৈক মহিলা ধার নিতো। মাস‘উদ ইবনুল আস্ওয়াদ নিজস্ব সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এর সমার্থক হাদীস বর্ণনা করে বলেনঃ মহিলাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘর হতে একটি মখমলের চাদর চুরি করে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূয যুবাইর (রাঃ) এবং জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, জনৈক নারী চুরি করে। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা যাইনাব (রাঃ) এর মাধ্যমে মুক্তি চায়। হাদীসের বাকি অংশে ধার নেয়া অথবা চুরি করার কথা উল্লেখ আছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উত্তম গুণাবলীর অধিকারী লোকদের পদস্খলন (ছোটখাট ত্রুটি) এড়িয়ে যাও, হদ্দের অপরাধ ব্যতীত।
শাসকের নিকট না পৌঁছা পর্যন্ত হাদ্দের অপরাধ গোপন রাখা
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা আপসে তোমাদের মধ্যে সংঘটিত হদ্দ সংশ্লিষ্ট অপরাধ গোপন রাখো। অন্যথায় তা আমার নিকট পৌঁছালে তার শাস্তি বাস্তবায়িত হবেই।
কেউ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে যথাসম্ভব তা গোপন রাখা উচিৎ
ইয়াযীদ ইবনু সু’আইম (রাঃ) হতে তার পিতা মাঈয নামক জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে চারবার (যেনার কথা) স্বীকার করে। সুতরাং তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দেন। আর তিনি হাযযালকে বলেন, তুমি যদি এটা তোমার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে, তাহলে তোমার কল্যাণ হতো। [৪৩৭৬] ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) হাযযাল মাঈযকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে (তার অপরাধের কথা) তাঁকে অবহিত করতে আদেশ দেন। [৪৩৭৭]
হাদ্দের অপরাধী উপস্থিত হয়ে স্বীকারোক্তি করলে তার সম্পর্কে
‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে জনৈকা মহিলা সলাত আদায়ের উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাকে নাগালে পেয়ে তার উপর চেপে বসে তাকে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার দিলে লোকটি সরে পড়ে। এ সময় অপর এক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে (ভুলবশত) বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ করেছে। এ সময় মুহাজিরদের একটি দল এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীলোকটি বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ করেছে। অতএব যার সম্পর্কে মহিলাটি অভিযোগ করেছে তারা দ্রুত এগিয়ে লোকটিকে ধরলো। অতঃপর তারা তাকে তার নিকট নিয়ে আসলে সে বললো, হাঁ, এ সেই ব্যক্তি। তারা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি তার সম্পর্কে ফায়সালা করতেই আসল অপরাধী দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই অপরাধী। তিনি ধর্ষিতা মহিলাটিকে বললেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন আর নির্দোষ ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম কথা বললেন। যে ধর্ষণের অপরাধী তার ব্যাপারে তিনি বললেনঃ তোমরা একে পাথর মারো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে এমন তাওবাহ করেছে যে, মাদীনাহবাসী যদি এরূপ তাওবাহ করে, তবে তাদের পক্ষ হতে তা অবশ্যই কবুল হবে। [৪৩৭৮] হাসান, এ কথাটি বাদেঃ “তোমরা একে পাথর মারো।” অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে পাথর মারা হয়নি।
হাদ্দ থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো কথা বলার পরামর্শ দেয়া
আবূ উমাইয়্যাহ আল-মাখযূমী (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি চোর ধরে আনা হলো। সে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে কিন্তু তার নিকট কোন মাল পাওয়া যায়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বললো, হ্যাঁ, আমি চুরি করেছি। তিনি দু’বার অথবা তিনবার তার নিকট একথার পুনরাবৃত্তি করলেন, কিন্তু সে বরাবর একই উত্তর দিলো। অতঃপর তিনি আদেশ করলে তার হাত কেটে আনা হলে তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর নিকট তাওবাহ করো। সে বললো, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাওবাহ করছি। অতঃপর তিনি তিনবার বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাঁর তাওবাহ কবুল করো। [৪৩৭৯]
যে ব্যক্তি হাদ্দের অপরাধ স্বীকার করে অথচ অপরাধের নাম বলে না
আবূ উমামাহ (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দযোগ্য অপরাধ করেছি। কাজেই আমাকে শাস্তি দিন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি আসার সময় উযু করেছো কি? সে বললো, হাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ আমরা সলাত আদায়ের সময় তুমি কি আমাদের সঙ্গে সলাত আদায় করেছো? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেনঃ চলে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করেছেন।
মারধর করে তথ্য বের করা
আযহাব ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-হারাযী (রাঃ) কিলা’আ এলাকার কিছু লোকের মাল চুরি হলে তারা একদল তাঁতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। অতঃপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী নু’মান ইবনু বশীরের নিকট (ঐ অভিযুক্তদের) নিয়ে এলো। তিনি তাদের কয়েক দিন আটকে রাখার পর ছেড়ে দেন। অভিযোগকারীরা এসে নু’মান (রাঃ) কে বললো, মারধর ও তদন্ত ছাড়াই আপনি তাদের ছেড়ে দিলেন? নু’মান (রাঃ) বললেন, তোমরা কী চাও? তোমরা যদি চাও আমি তাদেরকে মারধর করি। আর তাতে যদি তোমাদের মাল উদ্ধার হয় তবে তো ভালো। অন্যথায় আমি তাদের পিঠে যেরুপ আঘাত করবো, সেরুপ আঘাত তোমাদের পিঠেও করবো। তারা বললো, এটা কি আপনার ফায়সালা? তিনি বললেন, এটা আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায়সালা। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ কথার দ্বারা তিনি তাদেরকে সতর্ক করেছেন। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় স্বীকার করার পরই প্রহার করা যেতে পারে।
যে পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে চোরের হাত কাটা যায়
‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা এর চাইতে বেশী চুরির অপরাধে চোরের হাত কাটতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দীনারের এক-চতুর্থাংশ অথবা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ সম্পদ চুরির দায়ে চোরের হাত কাটা হবে। আহমাদ ইবনু সালিহ বলেন, দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা এর চেয়ে বেশী সম্পদ চুরির অপরাধে হাত কাটা যায়। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিরহাম মূল্যের বর্ম চুরির দায়ে চোরের হাত কেটেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক চোরের হাত কেটেছেন, যে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান হতে তিন দিরহাম মূল্যের একটি বর্ম চুরি করেছিল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে দীনার অথবা দশ দিরহাম মূল্যের বর্ম চুরির অপরাধে এক ব্যক্তির হাত কেটেছেন। [৪৩৮৬]
যেসব বস্তু চুরির দায়ে হাত কাটা যায় না
মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রাঃ) একদা এক গোলাম এক ব্যক্তির বাগান হতে খেজুরের চারা চুরি করে এনে তার মনিবের বাগানে রোপন করে। চারা গাছের মালিক তা খুজঁতে খুজঁতে পেয়ে যায় এবং ওই গোলামের ব্যাপারে তৎকালীন মাদীনাহর গভর্নর মারওয়ান ইবনুল হাকামের কাছের বিচার প্রার্থী হয়। মারওয়ান গোলামটিকে বন্দী করে রাখেন এবং তার হাত কাটতে মনস্হ করেন। অতঃপর গোলামটির মনিব রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ)-র নিকট গিয়ে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তার নিকট বর্ণনা করেন যে তিনি, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। লোকটি বললো, মারওয়ান তো আমার গোলাম কে ধরে রেখেছেন আর তার হাত কাটতে চাচ্ছেন। আমি চাই, আপনি আমার সাথে তার নিকট গিয়ে, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এই ব্যাপারে যা শুনেছেন তা তাকে জানাবেন। অতঃপর রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তার সঙ্গে মারওয়ান ইবনুল হাকামের নিকট গিয়ে বলেন, আমি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেতে শুনেছি: ‘ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না’। অতঃপর মারওয়ানের আদেশে গোলামটিকে ছেড়ে দেয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহিয়া ইবনু হাব্বান (রাঃ) উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহিয়া ইবনু হাব্বান (রাঃ) বলেন, মারওয়ান তাকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করে ছেরে দেন। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) একদা রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গাছে ঝুলন্ত ফল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: কোনো ক্ষুধার্ত লোক তা খেলে এবং কাপরে বেধেঁ নিয়ে না গেলে তার কোনো অপরাধ নাই। কিন্তু কেউ যদি কাপড়ে বেধেঁ তা হতে কিছু নিয়ে যায় তবে তাকে এর দ্বিগুন জরিমানা দিতে হবে এবং শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর কেউ যদি এমন স্হান হতে তা চুরি করে, যেখানে ফল শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে, আর চুরিকৃত ফলের মূল্য একটি বর্মের মূল্যর সমপরিমান হয় , তবে আর হাত কাটা যাবে। কেউ উপরোক্ত মূল্যর কম পরিমান চুরি করলে তাকে দ্বিগুন জরিমানা করা হবে এবং তাকে শাস্তিও দেয়া হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, খেজুর শুকানোর স্হানকে ‘জারীন’ বলা হয়।
ছিনতাই ও প্রতারনার অপরাধে হাত কাটা সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: লুন্ঠনকারীর হাত কাটা যাবে না। যে ব্যাক্তি দিবালোকে লুন্ঠন করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। জাবির (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রতারকের হাত কাটা যাবে না। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছে: লুন্ঠনকারীর হাত কাটা যাবে না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু জুরাইজ উপরোক্ত হাদীসদ্বয় আবূস-যুবাইর হতে শোনেননি। আমি আ্হমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) হতে জেনেছি। তিনি বলেছেন, ইবনু জুরাইজ উপরোক্ত হাদীসদ্বয় ইয়াসীন আয-যাইয়াতের কাছে শুনেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মুগীরাহ ইবনু মুসলিম হাদীসদ্বয় আবূ যুবাইর (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
যে নিরাপদে সংরক্ষিত স্হান থেকে চুরি করে
সাফওয়ান ইবনু ‘উমাইয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি তিরিশ দিরহাম মূল্যর আমার একটি চাদরে মাসজিদে ঘুমিয়েছিলাম। অতঃপর এক ব্যাক্তি এসে আমার কাছ থেকে সেটা টেনে নিয়ে যায়। তাকে হাতেনাতে ধরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁর নিকট হাজির হয়ে বললাম, মাত্র ত্রিশটি দিরহামের কারনে আপনি তার হাত কাটাবেন? আমি তার নিকট এটা বাকীতে বিক্রি করছি। তিনি বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আসার পূর্বে তা করলে না কেনো? ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যায়িদাহ সিমাকের সূত্রে জুআইদ ইবনু হুযাইর হতে এই হাদীস বর্ণনা করে বলেন, সাফওয়ান ঘুমিয়েছিলেন। তাউস ও মুজাহিদ এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, তিনি ঘুমন্ত ছিলেন। চোর এসে তার মাথার নীচ হতে চাদরটি চুরি করে নিয়ে যায়। আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রা্হমান’ এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, চোরটি তার মাথার নীচ হতে চাদরটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তিনি জাগ্রত হয়ে চিৎকার দেন এবং তাকে ধরে ফেলা হয়। যুহরী (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ হতে বর্ণনা করে বলেন, তার চাদরটাকে তিনি বালিশ বানিয়ে মাথার নিচে রেখে মাসজিদে ঘুমান। এ সময় চোর এসে তার চাদরটা হস্তগত করে। তিনি তাকে ধরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে আসেন।
ঋণ গ্রহনের পর তা অস্বীকার করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) জনৈকা মাখযুমী মহিলা বিভিন্ন জিনিস ধার নিয়ে পরে তা অস্বীকার করতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশে তার হাত কেটে দেয়া হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, জুয়াইরিয়া, নাফি’ হতে ইবনু ‘উমার অথবা সাফিয়্যাহ বিনতু আবূ ‘উবাইদ সূত্রে আরো বর্ণনা করেন: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষন দিতে দাড়িঁয়ে বলেন: এমন কোনো মহিলা আছে কি যে আল্লাহ ও তার রাসুলের নিকট তাওবাহ করবে? একথা তিনি তিনবার বলেন। তখন ঐ মহিলাটি সেখানে উপস্হিত ছিলো; কিন্তু সে দাঁড়ায়নি এবং কথাও বলেনি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু গানাজ নাফি’র সূত্রে সাফিয়্যাহ বিনতু আবূ ‘উবাইদ সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, মহিলাটির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া হয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) এক অপরিচিত মহিলা কিছু পরিচিত লোকের নামে অলংকার ধার নেয়। অতঃপর সে এগুলো বিক্রি করে দেয়। তাকে ধরে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাজির করা হয়। তিনি তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। এ সেই মহিলা যার জন্য উসামা্হ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সুপারিশ করেছিলেন। আর রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ব্যাপারে যা বলার বলেছিলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের এক মহিলা জিনিসপত্র ধার নেয়ার পর তা অস্বীকার করতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত কাটতে নির্দেশ দেন। ইবনু শিহাব হতে বর্ণিত এই হাদীসে আরো আছে: অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত কেটে দেন।
পাগল চুরি বা হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে
‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তিন ধরনের লোকের উপর হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে: (১) নিদ্রিত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয়, (২) অসুস্হ (পাগল) ব্যাক্তি, যতক্ষন না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক যতক্ষন না বালেগ হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা যেনার অপরাধে জনৈকা উম্মদিনীকে ধরে এনে ‘উমার (রাঃ)-র নিকট হাযির করা হয়। তিনি এই ব্যাপারে লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এ সময় ‘আলি (রাঃ) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, এর কি হয়েছে? উপস্হিত লোকেরা বললো, সে অমুক গোত্রের উম্মাদিনী (পাগল মহিলা) সে যেনা করেছে। ‘উমার(রাঃ) তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে ফিরে যাও। অতঃপর তিনি ‘উমারের নিকট এসে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি জানেন না, তিন ধরনের লোকের উপর হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে: (১) পাগল, যতক্ষন না সুস্হ হয় (২) নিদ্রিত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয়, এবং (৩) নাবালগ শিশু যতক্ষন না বালেগ হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। ‘আলী (রাঃ) বলেন, তাহলে তাকে পাথর মারা হবে কেন? তিনি বলেন, কোন কারন নেই। ‘আলী (রাঃ) বলেন, তবে তাকে ছেড়ে দিন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন এবং ‘আল্লাহু আকবার ‘ধ্বনি উচ্চারন করলেন। আ’মাশ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত। এতে রয়েছে: তিনি বলেন, নাবালেগ যতক্ষন না বুদ্ধিমান হবে। তিনি বলেন: পাগল যতক্ষন না সুস্হ জ্ঞানসম্পন্ন হবে। বর্ণনাকারী বলেন, ’উমার (রাঃ) ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিতে থাকেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আলি ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-র পাশ দিয়ে যাওয়া...অতঃপর ‘উসমান ইবনু শাইরাহ বর্ণিত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, আপনার কি মনে নেই, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন প্রকার লোকদের উপর হতে কলম তুলে রাখা হয়েছে: (১) নির্বোধ পাগল, যতক্ষন না সুস্হ হয় (২) নিদ্রিত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয়, এবং (৩) নাবালেগ শিশু, যতক্ষন না প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একথা শুনে ‘উমার (রাঃ) বলেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি দন্ডিতাকে ছেড়ে দিলেন। আবূ যিবৃয়ান (রহঃ) তিনি বলেন, হান্নাদ আল-জানাবী বলেছেন: একদা এক জেনাকারিনীকে ‘উমার (রাঃ)–র নিকট হাযির করা হলে তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যার আদেশ দেন। এ সময় ‘আলি (রাঃ) ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ছেড়ে দিলেন। ’উমার (রাঃ) এ সংবাদ পেয়ে ‘আলি (রাঃ) কে ডেকে পাঠালেন। ‘আলি (রাঃ) তার নিকট এসে বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে: রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন প্রকার লোকদের উপর হতে কলম তুলে রাখা হয়েছে: (১) নাবালেগ, যতক্ষন না বালেগ হয় (২) নিদ্রিত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয়, এবং (৩) পাগল, যতক্ষন না সুস্হ হয়। আর এ তো অমুক গোত্রের পাগলিনী। সে যা করেছে, সম্ভবত উম্মাদ অবস্হায় তা করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমার বিষয়টি জানা নেই। অতঃপর ‘আলি (রাঃ) বলেন, আমিও জানতাম না। সহীহ: এ কথাটি বাদে: সম্ভবত উম্মাদ অবস্হায় …। ‘আলি (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন ধরনের লোকের উপর হতে কলম তুলে রাখা হয়েছে: (১) ঘুমন্ত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয় (২) নাবালেগ, যতক্ষন না সাবালেগ হয় এবং (৩) পাগল, যতক্ষন না জ্ঞানসম্পন্ন হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন ,ইবনু জুরাইজ পর্যায়ক্রমে ক্বাসমম ইবনু ইয়াযীদ হতে ‘আলি (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেন, তাতে ‘বার্ধক্যজনিত কারনে নিস্তেজ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাক্তি’ কথাটুকু রয়েছে।
নাবালগের অপরাধের শাস্তি
‘আত্বিয়্যাহ আল-কুরাযী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বনু কুরাইযার বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তারা দেখতো, যার নাভীর নীচে চুল উঠেছে, তাকে হত্যা করা হতো; আর যার উঠেনি, তাকে হত্যা করা হতো না। আর আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। যাদের তা উঠেনি। ‘আবদুল মালিক ইবনু উমাইর (রহঃ) ‘আত্বিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, তারা (মুসলিমরা) আমার নাভীর নীচ্ অনাবৃত করে দেখলো যে, চুল উঠেনি। সুতরাং তারা আমাকে বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত করলো। ইবনু ‘উমার (রাঃ) উহুদ যুদ্ধের সময় তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাযির করা হয়। তখন তিনি চৌদ্দ বছরের বালক ছিলেন। তিনি তাকে অনুমতি দেননি। আবার খন্দক যুদ্ধের সময়ও তাকে হাযির করা হয়। তখন তিনি ছিলেন পনেরো বছরের তরুন। তখন তিনি তাকে (যুদ্ধ করার) অনুমতি দেন। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রহঃ) তিনি বলেন নাফি’ (রহঃ) বলেছেন, আমি এই হাদীস ‘উমার ইবনু ‘আবদুর আযীয (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, এই বয়সটাই নাবালেগ ও সাবালেগের মধ্যেকার সীমারেখা।
যুদ্ধের সময় চুরি করলে হাত কাটা প্রসঙ্গে
জুনাদাহ ইবনু আবূ উমাইয়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা বুসর ইবনু আরত্বাত (রাঃ)-এর সাথে নৌযুদ্ধে ছিলাম। এ সময় মিসদার নামক এক চোরকে ধরে তার নিকট হাযির করা হলো। সে একটি উষ্ট্রী চুরি করেছিলো। তিনি বললেন, আমি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: সফরে হাত কাটা যাবে না। অন্যথায় আমি অবশ্যই এর হাত কেটে দিতাম।
কাফন চোরের হাত কাটা সম্পর্কে
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডেকে বললেন, হে আবূ যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সৌভাগ্যপূর্ণ দরবারে উপস্হিত। তিনি বললেনঃতুমি কি করবে যখন মানুষ মৃতুমুখে পতিত হবে এবং তখন একটি ঘর অর্থাৎ কবরের ক্রয়মূল্য হবে একটি ক্রীতদাসের মূল্যের সমান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল আমার জন্য যা পছন্দ করেন। তিনি বললেনঃতুমি তখন ধৈর্য ধরবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মান ইবনু আবূ সুলাইমান বলেছেন, কাফন চোরের হাত কাটতে হবে; কেননা সে মৃত ব্যাক্তির ঘরে হানা দেয়।
একই চোর একাধিবার চুরি করলে
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক চোরকে ধরে আনা হলে তিনি বলেন: তোমরা একে হত্যা করো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে চুরি করেছে। তিনি বললেনঃএর হাত কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তার হাত কেটে দেয়া হলো। অতঃপর তাকে দ্বিতীয়বার তাঁর নিকট আনা হলে তিনি বলেন: তোমরা একে হত্যা করো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! সে তো চুরি করেছে! তিনি আদেশ দিলেন, তোমরা এর অপর হাত কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তার হাত কেটে দেয়া হলো। তৃতীয়বার তাকে তাঁর নিকট ধরে আনা হলে তিনি বলেন: তোমরা একে হত্যা করো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো চুরি করেছে। তিনি বললেনঃতাহলে তোমরা তার অঙ্গ (এক পা) কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এবার তার পা কাটা হলো। অতঃপর চতুর্থবার তাকে ধরে আনা হলে তিনি তাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসুল! সে তো চুরি করেছে। তিনি বললেনঃতাহলে তাঁর আরেক পা কেটে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এবার তার অপর পা কাটা হলো। অতঃপর পঞ্চমবার তাকে ধরে আনা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, অতএব আমরা তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করলাম এবং হেচঁড়িয়ে টেনে নিয়ে একটি কূপে ফেলে দিয়ে তার উপর পাথরচাপা দিলাম।
হাত কেটে চোরের গর্দানে ঝুলিয়ে দেয়া
‘আবদুর রাহমান ইবনু মুহাইরিয (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ)-কে বললাম, চোরের কাটা হাত গর্দানের সঙ্গে বেঁধে দেয়া কি সুন্নাত? তিনি বললেন, একদা রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক চোরকে নিয়ে আসা হলে তার হাত কাটা হয় এবং তার নির্দেশমত তা গর্দানের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়। [৪৪১০]
দাস চুরি করলে তাকে বিক্রি করে দেয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দাস যদি চুরি করে তবে তাকে এক নাশ্ অর্থাৎ বিশ দিরহামের বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দাও। [৪৪১১]
রজম সম্পর্কে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর বানী: ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা অশ্লীল কাজ করে, তবে তোমাদের মধ্যে হতে চার ব্যাক্তিকে তাদের উপর সাক্ষী দাঁড় করাও। অতঃপর তারা সাক্ষ্য দিলে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখো, যতক্ষন না মৃত্যু তাদের অবসান ঘটায় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ বের করেন “(সুরা্ আন-নিসা : ১৫)। মেয়েদের সম্পর্কে একথা বলে পুরুষদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, অতঃপর উভয়ের সম্পর্কে একত্রে আলোচনা করেছেন: “আর তোমাদের মধ্যে দু’জন নারী-পুরুষ যদি এ অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদের শাসন করো। অনন্তর তারা যদি তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তবে তাদেরকে ছেড়ে দাও “(সুরা্ আন-নিসা : ১৬)। উপরোক্ত আয়াতের নির্দেশ ‘বেত্রাঘাত’ সংক্রান্ত আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে। অতএব আল্লাহর বাণী: “ব্যাভিচারিনী এবং ব্যাভিচারী, তাদের প্রত্যেককে একশো বেত্রাঘাত করো” (সুরা্ আন-নুর : ২)। মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর বানী, আস-সাবিল অর্থাৎ হাদ্দ। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, ‘ফাআযুহুমা’ অর্থ অবিবাহিতের শাস্তি এবং ‘ফাআমসিকূহুন্না ফিল বুয়ূত’ অর্থ বিবাহিতের শাস্তি। [৪৪১৩] ‘উবাদা্হ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা আমার থেকে গ্রহন করো। আল্লাহ তাদের জন্য বিধান দিয়েছেন: বিবাহিত পুরুষ ও বিবাহিত নারী অপরাধী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি হলো একশো বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। আর অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারীর শাস্তি হলো একশো বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন। ইয়াহ্য়া ইয়াহ্য়ার সূত্রে উপোরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত। এতে রয়েছে: তাদের শাস্তি হলো একশো বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। ‘উবাদাহ সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত। লোকজন সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) কে বললো, হে সাবিতের পিতা! হাদ্দ সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়েছে। অতএব আপনি যদি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোন পুরুষ লোককে দেখতে পান তাহলে আপনি কি করবেন? তিনি বলেন, আমি তরবারির আঘাতে উভয়কে নিস্তব্ধ করে দিতাম। আমি কি যাবো এবং চারজন সাক্ষী একত্র করবো আর এই সুযোগে তারা তাদের অপকর্ম সেরে নিবে? অতএব তারা গিয়ে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একত্র হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি সাবিতের পিতাকে দেখেননি, তিনি এই এই কথা বলেছেন। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতরবারিই যথেষ্ট সাক্ষী। অতঃপর তিনি বলেন: না না, আমি আশংকা করি যে, কোনো উন্মত্ত ও আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন লোকই এই পদ্ধতি অনুসরন করতে পারে। আরেক বর্ণনায় রয়েছে: এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সঙ্গে সংগমে লিপ্ত হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-ফাদল ইবনু দালহাম হাদীসের হাফিয নন। তিনি ওয়াসিত অঞ্চলের কসাই ছিলেন। [৪৪১৬] দুর্বল: যঈফ হা/২৩৪১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার ভাষনে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তার উপর কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি তাঁর উপর যা নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াত তার অন্তর্ভুক্ত। আমরা তা পাঠ করেছি এবং সংরক্ষন করেছি। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজম করেছেন আর আমরাও তার পরে রজম করেছি। তবে আমার আশংকা হচ্ছে কাল প্রবাহের দীর্ঘতায় কেউ হয়তো বলবে ,আমরা তো আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবে রজমের আয়াত পাইনি। ফলে তারা আল্লাহর নাযিলকৃত একটা ফরয পরিত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হবে। জেনে রাখো বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যাভিচারের অপরাধে দায়ী প্রমাণিত হলে অথবা অন্তঃসত্তা হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে তাদেরকে রজম করা অবধারিত। আল্লাহর কসম! লোকেরা যদি একথা না বলতো যে, ‘উমার আল্লাহর কিতাবে কিছু বর্ধিত করেছেন। তাহলে আমি অবশ্যই এই আয়াত লিখে দিতাম।
মাইয ইবনু মালিককে রজম করার ঘটনা
ইয়াযীদ ইবনু সু’আইম ইবনু হায্যাল (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, মাঈয ইবনু মালিক ইয়াতীম ছিল। সে আমার পিতার তত্ত্বাবধানে ছিলো। সে এক গোত্রের জনৈক বাঁদীর সঙ্গে সঙ্গম করে। আমার পিতা তাকে বললেন, তুমি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট যাও এবং তাকে তোমার কৃতকর্মের ব্যাপারে জানাও। তিনি হয়তো তোমার জন্য ক্ষমা চাইবেন। বস্তুত এর দ্বারা তিনি তার অপরাধ হতে মুক্তির সন্ধানই চেয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সে তার নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো যেনা করেছি; সুতরাং আমার উপর আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি বাস্তবায়িত করুন। তিনি তার হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে পুনরায় বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো যেনা করেছি; আমার উপর আল্লাহর কিতাব বাস্তবায়িত করুন। তিনি তার হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবারো বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো যেনা করেছি; আমার উপর আল্লাহর কিতাব বাস্তবায়িত করুন। একথা সে চারবার বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি তো চারবার একথা বললে, তা কার সঙ্গে? সে বললো, অমুক নারীর সঙ্গে। তিনি প্রশ্ন করলেন: তুমি কি তার সঙ্গে শুয়েছো? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি আবারো প্রশ্ন করলেন: তুমি কি তার শরীরে শরীর মিশিয়েছো? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন: তুমি কি তার সঙ্গে সঙ্গম করেছো? সে বললো, হ্যাঁ! বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাকে আল-হাররা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলো। যখন তাকে পাথর মারা শুরু হলো, সে আঘাতের চোটে আতংকিত হলো এবং দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু উনাইস (রাঃ) এমতাবস্হায় তার সাক্ষাৎ পেলেন যে, তাকে পাথর মারার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিগন তাকে ধরতে আপারগ হলো। তিনি উটের সামনের পায়ের হাড় তুলে তার দিকে নিক্ষেপ করেন এবং তাতে সে নিহত হয়। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে এ ঘটনা ব্যক্ত করেন। তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন? সে হয়ত তাওবাহ করতো। আর আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করতেন। সহীহ। এ কথাটি বাদে (আরবী) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাঈয ইবনু মালিকের ঘটনা ‘আসিম ইবনু ‘উমার ইবনু ক্বাতাদাহ্র নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলি ইবনু আবূ ত্বালিব আমাকে বলেছেন, এরা আসলাম গোত্রের কতক লোক যাদেরকে আমি দোষারোপ করি না এবং যাদের নিকট হতে তুমি আমার নিকট রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী: ‘তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেনো “বর্ণনা করছো। আমি এ হাদীস হৃদয়ংগম করতে পারিনি। অতএব আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, আসলাম গোত্রের কতক লোক বর্ণনা করেছে যে, পাথর নিক্ষেপের মারাত্নক চোট পেয়ে মাঈযের হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আলোচনা করাতে তিনি বলেন: ‘তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেনো?’ অথচ আমি তো এ হাদীস সম্পর্কে জানিনা। জাবির বললেন, হে ভাতিজা! এ হাদীস সম্পর্কিত ঘটনা আমি অধিক জ্ঞাত। কেননা আমিও লোকটিকে পাথর মারার জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। আমরা যখন তাকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে পাথর মারা শুরু করলাম তখন পাথর নিক্ষেপের মারাত্নক চোট পেয়ে সে আমাদের নিকট চিৎকার করে বলতে লাগলো, হে লোক সকল! তোমরা আমাকে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ফিরিয়ে নিয়ে চলো। আমার আপনজনেরাই আমাকে হত্যার জন্য দায়ী। তারা আমার সঙ্গে প্রতারনা করেছে। তারা আমাকে বলেছে যে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে হত্যা করবেন না। তথাপি আমরা তাকে হত্যা না করে ছাড়িনি। অতঃপর আমরা যখন ফিরে এসে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসব কথা বললাম, তখন তিনি বললেনঃতোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন এবং আমার নিকট নিয়ে এলে না কেন? যাতে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অনুতাপ কবুল করতেন। কিন্তু তিনি হাদ্দ পরিত্যাগ করার জন্য একথা বলেননি। বর্ণনাকারী বলেন, এবার আমি এ হাদীসের মর্ম বুঝতে পারলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা মাঈদ ইবনু মালিক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো যে সে যেনা করেছে। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে কয়েকবার একথা বললো, আর তিনি প্রতিবার মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি তার গোত্রের লোকদের প্রশ্ন করলেন: সে কি পাগল? তারা বললো, তার তো কোনো সমস্যা নেই। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন: তুমি কি তার সঙ্গে এটা করেছো? সে বললো, হ্যাঁ। অতএব তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত পরেননি। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাঈয ইবনু মালিককে দেখেছি। যখন তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাযির করা হয়। সে ছিলো বেঁটে, মাংসল ও বলিষ্ঠ গড়নের লোক। তার দেহে কোনো চাদর ছিলো না। সে নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, সে যেনা করেছে। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃসম্ভবত তুমি তাকে চুমা দিয়েছো। সে বললো, না আল্লাহর কসম! এ দুর্ভাগা নিশ্চয়ই যেনা করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষন দিতে গিয়ে বলেন: জেনে রাখো আমরা যখনই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যাই, আর এদিকে যদি তাদের কেউ পিছনে গিয়ে পাঠা ছাগলের ন্যায় ভ্যাভ্যা করে কোনো নারীকে যৎকিঞ্চিৎ বীর্য দান করে। জেনে রাখো, আল্লাহ যদি আমাকে তাদের কারো উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দেন, তবে তাকে দুষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে নারীদের থেকে প্রতিহত করবো। সিমাক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) কে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তবে পূর্বোক্ত বর্ণনাটি পুর্ণাঙ্গ। তিনি বলেন, সে দু’বার এ কথা বলেছে। সিমাক বলেন, আমি মাঈদ ইবনু জুরাইরের নিকট এ হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, সে বরং চারবার একথা বলেছে। শু’বাহ (রহঃ) আমি সিমাককে ‘কুসবাহ’ এর অর্থ বললাম। তিনি বললেন, অল্প দুধ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঈয ইবনু মালিককে ডেকে বললেনঃতোমার সম্বন্ধে যে সংবাদ আমার কানে পৌঁছেছে তা কি সত্য? সে বললো, আমার সম্বন্ধে আপনার নিকট কিরুপ সংবাদ পৌঁছেছে? তিনি বললেনঃতুমি নাকি অমুক গোত্রের জনৈক বাঁদীর সঙ্গে যেনা করেছো? সে বললো, হ্যাঁ। অতঃপর সে চারবার একথার স্বীকারোক্তি করে। সুতরাং তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার আদেশ দেন। অতঃপর তাকে পাথর মারা হয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা মাঈয ইবনু মালিক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে যেনা করেছে বলে দু’বার সাক্ষ্য দেয়। তিনি তাকে তাড়িয়ে দিলে সে আবারো এসে দু’বার যেনার স্বীকারোক্তি করে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য দিয়েছো। তোমরা একে নিয়ে যাও এবং ‘রজম’ করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঈয ইবনু মালিককে বললেনঃ তুমি সম্ভবত চুমু খেয়েছো অথবা হাতে স্পর্শ করেছো অথবা তাকিয়েছো। সে বললো, না। তিনি বললেনঃ তবে কি তুমি যেনা করেছো? সে বললো, হাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, সে একথা বলতেই তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দেন। বর্ণনাকারী মূসা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেননি, বরং এটি ওয়াহ্বের বর্ণনা। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা আসলাম গোত্রীয় এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য দেয় যে, সে জনৈকা নারীর সঙ্গে হারাম কাজ করেছে। প্রতিবারই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পঞ্চমবার সে একথা বললে তিনি তার দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি তার সঙ্গে যেনা করেছ সে বললো, হাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার লজ্জাস্থান কি তার লজ্জাস্থানে ঢুকেছে? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেনঃ যেরূপ সুরমা শলাকা সুরমা দানীতে ঢুকে যায় এবং রশি যেরূপ কূপের মধ্যে ঢুকে পড়ে? সে বললো, হাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি জান, যেনা কি? সে বললো, হাঁ, কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে বৈধভাবে যে সহবাস করে, আমি ঐ নারীর সঙ্গে অবৈধভাবে তা করেছি। তিনি বললেনঃ তোমার একথা বলার উদ্দেশ্য কী? সে বললো, আপনি আমাকে পবিত্র করবেন, এটাই আমার উদ্দেশ্য। অতঃপর তিনি আদেশ দিলেন তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হলো। অতঃপর আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনতে পান যে, তাঁর দু’জন সাহাবী একে অপরকে বলছেন লোকটিকে দেখো, আল্লাহ যার অপরাধ গোপন রাখলেন, অথচ নিজেকেই সে রক্ষা করতে পারলো না, অতঃপর কুকুরের মত তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হলো। তিনি তাদের একথা শুনে চুপ থকলেন এবং কিছু সময় চলার পর একটি গাধার লাশের নিকট এলেন যার পা উপরের দিকে উঠেছিল। তিনি বললেনঃ অমুক অমুক কোথায়? তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এখানে। তিনি বললেনঃ তোমরা দু’জন নেমে গিয়ে এ গাধার গোশত খাও। তারা বললো, হে আল্লাহর নাবী! এটা কি কেউ খেতে পারে? তিনি বললেনঃ তোমরা এখন তোমাদের এক ভাইয়ের মর্যাদা নিয়ে যেরূপ মন্তব্য করেছ, তা এর গোশত খাওয়ার চাইতেও গুরুতর। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই সে এখন জান্নাতের ঝর্ণাসমূহে আনন্দে ডুব দিচ্ছে। [৪৪২৭] দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২৩৫৪, যঈফাহ হা/২৯৫৭। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে অনূরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে আরো রয়েছেঃ হাসান ইবনু ‘আলী বলেন, বর্ণনাকারীগণ বিভিন্ন শব্দে হাদীসটি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। কেউ বলেছেন, লোকজন মাঈযকে গাছের সঙ্গে বেঁধেছিল আবার কেউ বলেছেন, তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। [৪৪২৮] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) একদা আসলাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে যেনার কথা স্বীকার করলে তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবারো সাক্ষ্য দিলো। তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এরূপ সে চারবার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করেনঃ তোমার পাগলামী রোগ আছে নাকি? সে বললো, না। তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বললো, হাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পাথর মারার আদেশ দিলেন। ঈদগাহে তাকে পাথর মারা হয়। পাথরের আঘাত যখন তাকে সন্ত্রস্ত করে তুললো সে পালাতে লাগলো। অতঃপর তাকে ধরে এনে পাথর মেরে হত্যা করা হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে উত্তম কথা বললেন, তবে তার জানাযা পড়েননি। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঈয ইবনু মালিককে পাথর মারার আদেশ করলে আমরা তাকে নিয়ে আল-বাকী’ নামক স্থানে যাই। আল্লাহর কসম! আমরা তাকে বাঁধিওনি এবং তার জন্য গর্তও খনন করিনি; কিন্তু তবু সে দাঁড়িয়ে থাকে। আবূ কামিল বললেন, আবূ সাঈদ বলেছেন, অতঃপর আমরা তার শরীরে হাড়, মাটির ঢিলা ও কংকর নিক্ষেপ করতে লাগলাম। সে দৌড়াতে লাগলো, আমরাও তার পিছনে দৌড়াতে লাগলাম। অবশেষে সে সেই প্রস্তরময় প্রান্তরের এক প্রান্তে গিয়ে আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে গেলো। আমরা তাকে পাথর নিক্ষেপ করলাম। অবশেষে সে চুপ হয়ে গেলো (মৃত্যবরণ করলো)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও করেননি, তাকে গালিও দেননি। আবূ নাদরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলো। অতঃপর অনুরূপ সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন তবে অপূর্ণাঙ্গভাবে। তিনি বলেন, উপস্থিত জনতা লোকটিকে গালি দিতে শুরু করলে তিনি তাদের নিষেধ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলে তিনি তাদের নিষেধ করে বললেনঃ লোকটি গুনাহ করেছে, আল্লাহই তার হিসাব গ্রহনের জন্য যথেষ্ট। [৪৪৩১] যঈফ মুরসালঃ ইরওয়া (৭/২৫৫-২৫৬)। ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঈযের মুখের গন্ধ শুঁকলেন, (নেশাগ্রস্ত কিনা জানার জন্য)। [৪৪৩২] ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ পরস্পর আলোচনা করতাম যে, ‘গামিদ’ গোত্রের ঐ নারী এবং মাঈয ইবনু মালিক যদি তাদের স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করতো অথবা তিনি বলেন, তারা স্বীকারোক্তির পর যদি তার পুনরাবৃত্তি না করতো, তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের তলব করতেন না। তিনি তাদেরকে পাথর মেরেছেন চারবার স্বীকারোক্তির পর। [৪৪৩৩] দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২৩৫৯। খালিদ ইবনুল লাজলাজ (রাঃ) তিনি বাজারে বসে কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা একটি শিশুসহ এ পথ দিয়ে যাচ্ছিল। কিছু লোকেরা তার সঙ্গে ভীড় করছিল এবং আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পৌঁছালে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার সঙ্গের এ শিশুর পিতা কে? সে চুপ থাকলো। তার পাশে দাঁড়ানো এক যুবক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই এ শিশুটির পিতা। তিনি মহিলার দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমার সঙ্গের এ শিশুটির পিতা কে? যুবকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর পিতা। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চারপাশের লোকজনের নিকট তার সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বললো, তাকে আমরা ভালো লোক বলেই জানি। অতঃপর নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকেই প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বললো, হাঁ। অতঃপর তাঁর হুকুমে লোকটিকে পাথর মারা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, তার জন্য গর্ত খনন করে তাকে তাতে রাখলাম এবং রজম করলাম। ফলে সে মারা গেলো। একজন লোক এসে পাথর নিক্ষেপে নিহত ব্যাক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগলো। আমরা তাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে বললাম, এ লোকটি এসে অপবিত্র ব্যাক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তো মহান আল্লাহর নিকট মৃগনাভীর চেয়েও অধিক সুগন্ধযুক্ত। পরে দেখা গেল যে, আগন্তুক লোকটি নিহত ব্যাক্তির পিতা। অতঃপর আমরা তাকে এর গোসল, কাফন ও দাফন করতে সাহায্য করি। খালিদ বলেন, তার জানাযার সলাত পড়া হয়েছিল কিনা এ সম্পর্কে আমি জানি না। খালিদ ইবনুল লাজলাজ (রাঃ) হতে তার পিতা খালিদ ইবনুল লাজলাজ (রাঃ) হতে তার পিতা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরোক্ত হাদীসের অংশবিশেষ বর্ণিত। [৪৪৩৫] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে স্বীকারোক্তি করলো যে, সে এক নারীর সঙ্গে যেনা করেছে। সে তাঁর নিকট সেই নারীর নামও বলেছে। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই নারীর নিকট লোক পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে তা অস্বীকার করে। অতএব তিনি পুরুষ লোকটির উপর বেত্রাঘাতের হাদ্দ কার্য করেন এবং নারীকে রেহাই দেন। জাবির (রাঃ) জনৈক ব্যাক্তি এক মহিলার সঙ্গে যেনা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অতঃপর তাঁকে অভিহিত করা হয় যে, সে বিবাহিত; কাজেই তিনি নির্দেশ দিলে তাকে পাথর মারা হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু বাক্র আল-বুরসানী এ হাদীস ইবনু জুরাইজ হতে জাবির (রাঃ) সূত্রে মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন। আবূ ‘আসিম এ হাদীস ইবনু জুরাইজ সূত্রে ইবনু ওয়াহরের মতই বর্ণনা করেছেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উল্লেখ করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, এক ব্যাক্তি যেনা করলো, কিন্তু সে বিবাহিত কিনা তা জানা গেলো না। অতএব তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। পরে তার বৈবাহিক অবস্থা জানা গেলে তাকে রজম করা হয়। [৪৪৩৭] জাবির (রাঃ) এক লোক জনৈকা স্ত্রীলোকের সঙ্গে ব্যাভিচার করে। পুরুষটি বিবাহিত কিনা তা জানা যায়নি। সুতরাং তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অতঃপর তার বৈবাহিক অবস্থা জানা গেলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। [৪৪৩৮]
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুহাইনাহ গোত্রের যে মহিলাকে পাথর মারার আদেশ দিয়েছিলেন
‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) একদা জুহাইনাহ গোত্রের জনৈকা মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, সে যেনা করেছে এবং অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অভিভাবককে ডেকে এনে বলেনঃ এর সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যখন সে সন্তান প্রসব করবে, তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। অতঃপর সে সন্তান প্রসব করলে অভিভাবক তাকে নিয়ে এলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে তাকে কাপড় দিয়ে বেঁধে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। অতঃপর তিনি সাহাবীদের আদেশ দিলেন তার জানাযার সলাত পড়তে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তার জানাযার সলাত পড়বেন? সে তো যেনা করেছে! তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম! সে এরূপ তাওবাহ করেছে, যা মাদীনাহ্বাসীদের সত্তরজনের মধ্যে বন্টন করে দিলেও তাদের জন্য তা যথেষ্ট হবে। তুমি তার চাইতে উত্তম কোন ব্যাক্তিকে পাবে যে তার নিজের সত্তাকে উৎসর্গ করে দিল। আবান সূত্রে বর্ণিত হাদীসে কাপড় দিয়ে বাঁধার কথাটূকু নেই। আওযাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, তাকে তার কাপড় শক্তভাবে পরানো হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা গামিদ গোত্রের এক নারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমি ব্যাভিচার করেছি, তিনি বললেনঃ ফিরে যাও। সে ফিরে চলে গেলো। পরদিন সকালে সে আবার তাঁর নিকট এসে বললো, আপনি যেরূপ মাঈয ইবনু মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সম্ভবত আমাকেও সেরূপ ফিরিয়ে দিতে চান। আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই গর্ভবতী। তিনি এবারো তাকে ফিরে যেতে বললে সে চলে গেলো। পরদিন সে পুনরায় আসতেই তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও যতক্ষণ না সন্তান প্রসব করো। সে ফিরে গেলো। যখন সে পুত্র সন্তান প্রসব করলো, সে সেই শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে এসে বললো, আমি এই শিশুটিকে প্রসব করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত তাকে দুধ পান করাতে থাকো। অবশেষে দুধ ছাড়ানো হলে শিশুটিকে নিয়ে সে হাযির হলো। শিশুটি খাদ্য হাতে নিয়ে খাচ্ছিল। তিনি একজন মুসলিমকে তার ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তার জন্য গর্ত খনন করতে আদেশ দিলে তা খনন করা হলো এবং পাথর মেরে হত্যার আদেশ দিলে তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। তাকে পাথর মারার জন্য নিয়োজিত ব্যাক্তিদের মধ্যে খালিদ (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাকে পাথর মারলে এক ফোটা রক্ত ছিটে এসে তাঁর গালে পড়তেই তিনি তাকে গালি দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে খালিদ! অনুগ্রহ করো। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তার কসম! সে এরূপ তাওবাহ করেছে যে, কোন যালিম কর আদায়কারীও যদি সেরূপ তাওবাহ করতো, তাহলে অবশ্যই তাকে মাফ করা হতো। অতঃপর তাঁর আদেশে তার জানাযার সলাত পড়া হয় এবং তাকে দাফন করা হয়। ইবনু আবূ বাক্রাহ (রহঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈকা মহিলাকে রজম করেন। তার জন্য বুক পর্যন্ত গর্ত খনন করা হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এক লোক ‘উসমান সূত্রে বর্ণনা করে এ হাদীস আমাকে বুঝিয়ে দেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, গাস্সানী বলেছেন, জুহাইনা গামিদ ও বারিক একই গোত্র। [৪৪৪২] যাকারিয়া ইবনু সুলাইমান যাকারিয়া ইবনু সুলাইমান সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তাতে আরো আছেঃ অতঃপর তাকে চানাবুটের মত ক্ষুদ্র কংকর নিক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেনঃ তার মুখমন্ডল বাদ দিয়ে পাথর নিক্ষেপ করো। সে যখন মারা গেলো, তাকে গর্ত হতে বের করলেন এবং তার জানাযা পড়লেন। তার তাওবাহ সম্পর্কে বুরাইদাহ বর্ণিত হাদীসের মতই বলেছেন। [৪৪৪৩] ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ ইবনু মাস’ঊদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা এবং যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, দুই বিবাদমান ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো। তাদের একজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কুরআন অনুসারে আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিন। দ্বিতীয়জন বললো, সে ছিল তাদের দু’জনের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমান, হাঁ ঠিক আছে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন, আর আমাকে কিছু বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ বলো। সে বললো, আমার ছেলে এই লোকটির শ্রমিক ছিল। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যেনা করেছে। কতক লোক আমাকে জানিয়েছে, আমার ছেলের দন্ড হলো পাথর নিক্ষেপে হত্যা। সুতরাং আমি তার পক্ষ হতে একশো বকরী ও আমার একটি দাসী জরিমানা দেই। পুনরায় আমি এ ব্যাপারে জ্ঞানীদের প্রশ্ন করলে তারা আমাকে বলেন যে, আমার ছেলের শাস্তি হলো একশো বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন, আর এই লোকটির স্ত্রীর শাস্তি হলো পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। এ ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জেনে রাখো, যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! আমি অবশ্যই তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করবো। তোমার বকরী ও দাসী তুমি ফিরে পাবে। অতঃপর তিনি তার ছেলেকে একশো বেত্রাঘাত করে এবং এক বছরের নির্বাসন দেন এবং উনাইস আল-আসলামীকে আদেশ দেন অপর লোকটির স্ত্রীর নিকট যেতে এবং সে যদি স্বীকারোক্তি করে তাহলে তাকে রজম করতে। অতএব সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম করলেন।
দুই ইয়াহুদীকে রজম করার ঘটনা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ইয়াহুদীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, তাদের একজোড়া নারী-পুরুষ যেনা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বলেনঃ তাওরাতে তোমরা যেনা সম্বন্ধে কি হুকুম পেয়েছো? তারা বললো, আমরা তো অপমান করি এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হয়। একথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, তোমরা মিথ্যা বলেছো। নিশ্চয়ই তাতে রজম করার হুকুম বিদ্যমান। অতঃপর তারা তাওরাত কিতাব নিয়ে আসে এবং তা খোলে। তাদের একজন তার একটি হাত রজমের আয়াতের উপর রেখে দিয়ে এর পূর্বাপর পড়তে থাকে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তাকে হাত উঠিয়ে নিতে আদেশ দেন। সে হাত উঠিয়ে নিতেই দেখা গেলো যে, তাতে রজমের আয়াত রয়েছে। তারা বললো, হে মুহাম্মাদ! তিনি সত্যিই বলেছেন, নিশ্চয়ই তাতে রজমের আয়াত আছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে দু’জনকেই রজম করা হলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, পুরুষটি ঐ নারীকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা কালিমা মাখা মুখ বিশিষ্ট এক ইয়াহুদীকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাকে জনসমক্ষে ঘুরানো হচ্ছিল। তিনি তাদের কসম দিয়ে বলেন, তাদের কিতাবে যেনাকারীর হাদ্দ কী? বর্ণনাকারী বলেন, তারা তাঁকে তাদের মধ্যকার একজনকে দেখিয়ে দিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করেনঃ তোমাদের কিতাবে যেনাকারীর হাদ্দ ঘটলে তাদের শাস্তি হতে রেহাই দেয়া এবং অন্যদের শাস্তি দেয়া আমারা পছন্দ করলাম না। অতএব আমরা উপরোক্ত শাস্তি বাতিল করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলে অপরাধীকে রজম করা হয়। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! তারা তোমার কিতাবের যে অংশের মৃত্যু ঘটিয়েছিল আমিই প্রথম তা পুনর্জীবিত করলাম। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, বেত্রাঘাতকৃত জনৈক ইয়াহুদীর মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদের ডেকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তির হুকুম পেয়েছ? তারা বললো, হাঁ। অতএব তিনি তাদের একজন ‘আলিমকে ডেকে বললেনঃ তোমাকে সেই আল্লাহর কসম করে বলছি যিনি মূসা (আ)-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! তোমাদের কিতাবে যেনাকারীদের এরূপ শাস্তির কথা উল্লেখ পেয়েছ কি? সে বললো, হে আল্লাহ! না। আপনি যদি এ বিষয়ে আমাকে আল্লাহর কসম না দিতেন, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে বলতাম না। আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি রজমের উল্লেখ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজে যেনার বিস্তার ঘটলে আমরা কোন মর্যাদাসম্পন্ন লোককে এ অপরাধে ধরতে পারলেও ছেড়ে দিতাম; তবে দুর্বলদের কাউকে পেলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। অতঃপর আমরা সকলকে আহবান করে বললাম, চলুন, আমরা যেনার শাস্তির ব্যাপারে সকলে ঐকমত্যে পৌঁছে এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই, যাতে সকল শ্রেণীর লোকদের উপর তা বাস্তবায়িত করা যায়। অতঃপর আমরা এর শাস্তিস্বরূপ মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে অপমান করা এবং বেত্রাঘাত করাতে একমত হই এবং ‘রজম’ পরিত্যাগ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে তোমার নির্দেশকে পুনর্জীবন দান করেছি, তারা একে প্রাণহীন করার পর। অতঃপর তাঁর নির্দেশে অপরাধীকে রজম করা হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে এ আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ “হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয়.... তারা বলে, তোমাদেরকে এরূপ বিধান দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো অন্যথায় তোমরা বর্জন করো... আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির [ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে].... আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই যালিম [ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে].... আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই পাপাচারী” (সূরাহ আল-মায়িদাঃ ৪১-৪৭)। তিনি বলেন, এ আয়াতগুলো কাফির অবাধ্যদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা একদল ইয়াহুদী এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘কুফ্’ নামক উপত্যকায় যেতে আবেদন জানালো। তিনি তাদের এক পাঠাগারে উপস্থিত হলেন। তারা বললো, হে আবূল ক্বাসিম! আমাদের এক ব্যাক্তি জনৈকা মহিলার সঙ্গে যেনা করেছে। সুতরাং আপনি এদের সম্পর্কে ফায়সালা দিন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি বালিশ পেতে দিলো। তিনি তাতে বসে তাদের বললেনঃ তোমরা একখানি তাওরাত নিয়ে এসো। তাওরাত নিয়ে আসা হলে তিনি তাঁর নীচের বিছানো বালিশ টেনে নিয়ে তার উপর তাওরাত রাখলেন এবং বললেনঃ আমি তোমার প্রতি এবং তোমায় যিনি নাযিল করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার অধিক জ্ঞানী ব্যাক্তিকে নিয়ে এসো। অতএব এক যুবককে আনা হলো। অতঃপর তিনি (ইবনু ‘উমার) নাফি’ হতে মালিক সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ ‘রজম’ সম্পর্কিত ঘটনা বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) আমি মুযাইনাহ গোত্রের এমন এক ব্যাক্তিকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু ও সংরক্ষণকারী। একদা আমরা সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহঃ)-এর নিকট ছিলাম। তিনি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে। এটা মা’মার বর্ণিত হাদীস এবং এটি সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ। তিনি বলেন, ইয়াহুদীদের মধ্যকার একজোড়া নারী পুরুষ যেনা করলো। তারা পরস্পরকে বললো, চলো আমরা এই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাই। তাঁকে তো সহজতর বিধানসহ পাঠানো হয়েছে। তিনি যদি আমাদের এ ব্যাপারে রজম করার পরিবর্তে লঘু শাস্তির বিধান দেন, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করবো এবং আল্লাহর নিকট এর মাধ্যমে বাহানা দাঁড় করাবো এবং বলবো, হে আল্লাহ! এটা তো আপনার এক নবী প্রদত্ত ফায়সালা। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসে। এ সময় তিনি সাহাবীদের সঙ্গে মাসজিদে বসা ছিলেন। তারা বললো, হে আবূল ক্বাসিম! যেনা কারী নারী ও পুরুষের সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? তিনি তাদের পাঠাগারে আসার পূর্ব পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথাও বলেননি। অতঃপর পাঠাগারের দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি বললেনঃ তোমাদেরকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলেছি যিনি মূসা (আ)-এর প্রতি তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! বিবাহিত লোক যেনা করলে তার কী হুকুম তাওরাতে পাচ্ছো? তারা বললো, চুন-কালিতে মুখমন্ডল রাঙিয়ে তাজ্বীহ করা হয় এবং বেত্রাঘাত করা হয়। তাজ্বীহ অর্থ হলো, যেনার অপরাধীদ্বয়কে গাধার পিঠে উঠিয়ে উভয়ের পিঠ পরস্পর মিশিয়ে এলাকা জুড়ে চক্কর দেয়া। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় এক যুবককে চুপ করে থাকতে দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কসম দিয়ে অনুরোধ করলে সে বললো, আল্লাহর কসম! আপনি যেহেতু আমাদের কসম দিলেন, আমরা তো তাওরাতে রজমের বিধান পাচ্ছি। অতঃপর নবী তাদের প্রশ্ন করলেনঃ তাহলে তোমরা আল্লাহর বিধানকে এতো হালকা ভাবলে কেন? সে বললো, আমাদের কোন এক রাজার জনৈক নিকটাত্মীয় যেনার অপরাধী সাব্যস্ত হয়; তিনি তাকে রজমের অব্যহতি দিলেন। অতঃপর সাধারণ পরিবারের জনৈক ব্যাক্তি যেনা করার অপরাধে দোষী সব্যস্ত হওয়াতে তিনি তাকে রজম করার ইচ্ছা করেন; কিন্তু দোষী লোকটির পক্ষের লোকেরা তাতে বাধা দিলো। তারা বললো, আপনার আত্মীয়টিকে এনে রজম না করা পর্যন্ত আমাদের এ ব্যাক্তিকে রজম করা যাবে না। অতঃপর তারা এ শাস্তির উপর ফায়সালা করে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন আমি নিশচয়ই তাওরাতে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করব। অতঃপর তাঁর নির্দেশে তাদেরকে রজম করা হলো। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, নিম্নোক্ত আয়াত ইয়াহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ “নিশ্চয়ই আমি তাওরাত নাযিল করেছি, যাতে হিদায়াত ও আলো বিদ্যমান ছিল। আল্লাহর অনুগত নাবীগণ এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদেরকে বিধান দিতো” (সুরাহ আল-মায়েদাহঃ ৪৪)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও অনুগত নাবীদের অন্তর্ভুক্ত। [৪৪৪৯] দুর্বলঃ ইরওয়া হা/১২৫৩। আয-যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মুযাইনাহ গোত্রের জনৈক ব্যাক্তিকে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, একজোড়া বিবাহিত ইয়াহুদী নারী-পুরুষ যেনা করে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরাত করে মদিনায় আসেন। যেনার শাস্তির ব্যাপারে তাওরাত কিতাবে রজমের বিধান বিদ্যমান ছিল, কিন্তু ইয়াহূদীরা তা পরিত্যাগ করে ‘তাজবীহ’ নামক শাস্তি চালু করে। তাজ্বীহ হলো, পাকানো রশি দিয়ে একশোবার প্রহার করা এবং মুখমন্ডলে চুন-কালি মেখে গাধার উপর এমনভাবে বসিয়ে দেয়া যে, অপরাধীর মুখ গাধার পেছন দিকে থাকে। এমনিভাবে তাকে এলাকা জুড়ে চক্কর দেয়া। অতঃপর তাদের ‘আলিমদের একটি দল একত্র হলো এবং অপর একটি দলকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠিয়ে দিলো এবং তাদের বলে দিলো যে, তাঁকে গিয়ে যেনার শাস্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। এভাবে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসে আরো আছেঃ যারা তাঁর ধর্মের অনুসারী নয়, তিনি তাদের মাঝেও ফায়সালা করতেন। অতঃপর এ ব্যাপারে তাঁকে স্বাধীনতা দিয়ে আল্লাহ বলেনঃ “তাঁরা যদি আপনার নিকট আসে, তবে আপনি তাদের বিচার মিমাংসা করুন অথবা তাদের উপেক্ষা করুন” (সূরা আল-মায়েদাঃ ৪২)। [৪৪৫০] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদল ইয়াহুদী তাদের মধ্যকার যেনার অপরাধী পুরুষ-নারীকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলো। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার সবচাইতে বিজ্ঞ দু’জন লোক নিয়ে এসো। অতএব তারা ‘সূরিয়ার’ দুই পুত্রকে তাঁর নিকট হাযির করলো। তিনি তাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে প্রশ্ন করেনঃ তোমরা এদের ব্যাপারে তাওরাতে কিরূপ বিধান দেখতে পাও? তারা বললো, আমরা তাওরাতে দেখতে পাই, চারজন সাক্ষী যদি সাক্ষ্য দেয় যে, তারা পুরুষটির গুপ্তাঙ্গ স্ত্রীলোকটির গুপ্তাঙ্গে এরুপভাবে ঢুকানো অবস্থায় দেখেছে, যেরূপ সুরমা শলাকা সুরমাদানীতে ঢুকানো হয়, তাহলে তাদের উভয়কে রজম করা হবে। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তাহলে কোন জিনিসটা তোমাদেরকে তাদেরকে রজম করতে বাধা দিচ্ছে? তারা উভয়ে বললো, আমাদের শাসন ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। সুতরাং হত্যা করাকে আমরা অনুমোদন করি না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাক্ষীদের নিয়ে আসতে ডাকলেন। তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে এলো। তারা সাক্ষ্য দিলো যে, সুরমা শলাকা যেরূপে সুরমাদানীর ভেতরে ঢুকে যায়, ঠিক সেরূপেই তারা পুরুষটির গুপ্তাঙ্গ স্ত্রীলোকটির গুপ্তাঙ্গের মধ্যে ঢুকানো অবস্থায় দেখেছে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের রজম করার নির্দেশ দেন। ইবরহীম ও আশ-শা’বী (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তবে এতে “তিনি সাক্ষীদের হাযির করতে বললেন। অতএব তারা এসে সাক্ষ্য দিলো’ - এ কথাটির উল্লেখ নেই। আশ-শা’বী (রহঃ) আশ-শা’বী (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। [৪৪৫৩] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) একজোড়া ইয়াহুদী নারী-পুরুষ যেনা করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের রজম করার নির্দেশ দেন। [৪৪৫৪]
যে ব্যাক্তি মাহ্রাম নারীর সঙ্গে যেনা করে
আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আমার একটি হারানো উট খোঁজ করতে বেরিয়েছি, এমন সময় একদল আরোহী অথবা অশ্বারোহী আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়। তাদের নিকট একটি পতাকা ছিল। এই বেদুঈনরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রিয়পাত্র হিসেবে আমার চারদিকে ঘুরতে থাকে। যখন তারা একটি গম্বুজ সদৃশ স্থাপনার নিকট এসে এর ভিতর হতে একটি লোককে বের করে হত্যা করে তখন আমি তাদেরকে তার সম্পর্কে বললাম। তারা বললো, লোকটি তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) সঙ্গম করেছিল। ইয়াযীদ ইবনুল বারাআ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে সাক্ষাত করি। তখন তার সঙ্গে একটি ঝান্ডা ছিল। আমি তাকে বলি, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এক ব্যাক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাকে হত্যা করতে এবং তার সম্পদ নিয়ে আসতে।
যে ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সঙ্গে যেনা করে
হাবীব ইবনু সালিম (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু হুনাইন নামে জনৈক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সঙ্গে সঙ্গম করে। বিষয়টি কুফার গভর্ণর নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেন, আমি আবশ্যই তোমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফায়সালার মতই ফায়সালা করবো। তোমার স্ত্রী যদি এ বাঁদীকে তোমার জন্য বৈধ করে দিয়ে থাকে, তবে আমি তোমাকে একশো বেত্রাঘাত করবো, আর যদি তোমার জন্য বৈধ না করে থাকে, তাহলে তোমাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবো। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তার স্ত্রী বাঁদীকে তার জন্য বৈধ করে দিয়েছে। কাজেই তিনি তাকে একশো বেত্রাঘাত করেন। ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমি হাবীব ইবনু সালিমের নিকট চিঠি লিখলে তিনি এ হাদীসটি লিখে পাঠান। [৪৪৫৭] নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সঙ্গে সঙ্গম করলে, তার স্ত্রী যদি তাকে তার জন্য বৈধ করে দিয়ে থাকে তবে একশো বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি বৈধ করে না দিয়ে থাকে, তবে আমি তাকে রজম করবো। [৪৪৫৮] সালামাহ ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) জনৈক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সঙ্গে সঙ্গম করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন, সে যদি তার সঙ্গে জোরপূর্বক একাজ করে থাকে, তাহলে দাসী আযাদ এবং তার কর্তব্য হলো, তার মতো একটি দাসী তার মনিবকে (স্ত্রীকে) দেয়া। আর যদি আপসে তা হয়ে থাকে, তাহলে সে তার মালিকানায় চলে যাবে এবং দাসীর মনিবকে তার মত একটি দাসী প্রদান করা স্বামীর কর্তব্য হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইউনুস ইবনু ‘উবাইদ, ‘আমর ইবনু দীনার, মানসূর ইবনু যাযান ও সাল্লাম (রহঃ) আল-হাসান সূত্রে এ হাদীস পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেন। ইউনূস ও মানসূর (রহঃ) কাবীসাহ্র (রাঃ) উল্লেখ করেননি। [৪৪৫৯] সালাম ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) সালাম ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে তিনি বলেনঃ দাসী যদি একাজে সম্মতি দিয়ে থাকে, তবে সেও তার মতো আরো একটি দাসী নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করে দাসীর মনিবকে প্রদান করবে। [৪৪৬০]
কেউ কওমে লূতের অনুরূপ অপকর্ম করলে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাউকে যদি লুত গোত্রের মতই কুকর্মে লিপ্ত দেখতে পাও তাহলে কর্তা ও যার সঙ্গে করা হয়েছে তাদের উভয়কে হত্যা করো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, অবিবাহিতদের লাওয়াতাতে (পায়ুকামে) লিপ্ত পাওয়া গেলে রজম করা হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আসিম (রহঃ) বর্ণিত হাদীস আমর ইবনু আবূ ‘আমরের হাদীসকে দুর্বল প্রমানিত করে।
যে ব্যাক্তি পশুর সঙ্গে সঙ্গম করে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি পশুর সঙ্গে সঙ্গম করলে তাকে এবং পশুটিকেও তার সঙ্গে হত্যা করো। তিনি (ইকরিমা) বলেন, আমি তাকে (ইবনু আব্বাসকে) বললাম, পশুটির অন্যায় কি? তিনি বলেন, আমার মতে যে পশুর সঙ্গে সঙ্গম করা হয়েছে নিশ্চয়ই তিনি তার গোশত খাওয়া অপছন্দ করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি তেমন শক্তিশালী হাদীস নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, পশুর সঙ্গে সঙ্গমকারী হাদ্দের আওতাভুক্ত নয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আত্বা-ও এরূপই বলেছেন। হাকাম বলেন, আমি মনে করি তাকে বেত্রাঘাত করা উচিত; কিন্তু তা হাদ্দের সীমা (১০০ বেত্রাঘাত) পর্যন্ত পৌছা উচিৎ নয়। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, সে যেনাকারীর সমতুল্য। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আসিম কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ‘আমা ইবনু আবূ ‘আমর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে দুর্বল প্রামাণিত করে।
যদি পুরুষ যেনার কথা স্বীকার করে এবং নারী তা অস্বীকার করে
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ জনৈক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এসে স্বীকারোক্তি করলো যে, সে এক স্ত্রীলোকের সঙ্গে যেনা করেছে এবং সে তার নামও বলেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট লোক পাঠিয়ে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সে যেনার কথা অস্বীকার করলো। কাজেই তিনি পুরুষটিকে বেত্রাঘাতের শাস্তি দিলেন এবং স্ত্রীলোকটিকে মুক্তি দিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বাক্র ইবনু লাইস গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে চারবার স্বীকারোক্তি করলো যে, সে জনৈকা স্ত্রীলোকের সঙ্গে যেনা করেছে। সে অবিবাহিত ছিল বিধায় তিনি তাকে একশো বেত্রাঘাত করেন। এরপর তিনি স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষী আনার জন্য তাকে আদেশ দেন। স্ত্রীলোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তিনি পুরুষটিকে যেনার মিথ্যা অপবাদ আরোপের অপরাধে আরো আশিটি বেত্রাঘাত করেন। [৪৪৬৬] মুনকারঃ মিসকাত হা/৩৫৭৮।
যে ব্যাক্তি কোন মহিলার সাথে সঙ্গম ছাড়া অন্য সবকিছু করে এবং কর্তৃপক্ষের নিকট ধরা পড়ার পূর্বেই তাওবাহ করে নেয়
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জনৈক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমি মাদীনাহ্র উপকন্ঠে জনৈকা নারীর সঙ্গে সঙ্গম ছাড়া সবকিছুই করেছি। এখন আমি এখানে উপস্থিত। আপনি যা ইচ্ছা আমাকে শাস্তি দিন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তোমার এ অপরাধ গোপন রেখেছিলেন, তুমিও যদি তা তোমার নিকট গোপন রাখতে! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথার কোন উত্তর দেননি। কাজেই লোকটি ফিরে গেলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পিছনে একজন লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “দিনের দু’প্রান্তে ও রাতের প্রথামাংশে তুমি সালাত ক্বায়িম করো, নিশ্চয় সৎকাজসমূহ গুনাহসমূহকে মুছে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা এক নসীহত” (সূরাহ হূদঃ ১১৪)। উপস্থিত লোকদের মধ্য হতে এক লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এ আয়াত কি শুধু তার জন্য নির্দিষ্ট, নাকি সবার জন্য? তিনি বললেনঃ বরং তা সকল মানুষের জন্য। [৪৪৬৭]
অবিবাহিত দাসী যেনা করলে
আবূ হুরাইরাহ ও যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি অবিবাহিত দাসী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে, সে যেনা করেছে। তিনি বলেনঃ সে যেনা করলে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনা করলে আবারো বেত্রাঘাত করো, পুনরায় যেনা করলে আবারো বেত্রাঘাত করো। অতঃপর আবারো যেনা করলে একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমি অবহিত নই যে, তিনি তিনবার নাকি চারবার (বিক্রির কথা) বলেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কারো দাসী যেনা করলে সে তাকে যেন শাস্তি দেয়, তিরস্কার করেই ছেড়ে দিবে না। এরূপ তিনবার করবে। চতুর্থবার যদি সে যেনা করে, তাহলে তাকে বেত্রাঘাত করবে এবং একটি রশি বা পশমের তৈরী রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দিবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রতিবার তাকে আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি প্রদান করবে, কেবল তিরস্কার করেই ছেড়ে দিবে না। চতুর্থবার যদি সে এরূপ করে, তাহলে তাকে আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি দেয়ার পর একটি পশমের রশির বিনিময়ে হলেও বিক্রি করে দাও।
রোগীর উপর হাদ্দ কার্যকর সম্পর্কে
আবূ উমামাহ ইবনু সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতক আনসারী সাহাবীর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তাদের একজন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তাদের কারো এক দাসী তার নিকট এলে সে শিহরিত হয়ে তার সঙ্গে সঙ্গম করে। তার গোত্রের লোকজন তাকে দেখতে এলে, সে তাদেরকে এ বিষয়ে অবিহিত করে এবং বলে, তোমরা আমার ব্যাপারে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে এ বিষয়ে ফাতাওয়া চাইবে যে, আমার নিকট আগত দাসীর সঙ্গে আমি যেনা করেছি। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা জানালো এবং বললো, রোগে শুকিয়ে তার মতো হাড্ডিসার হতে আমরা কোন লোককে দেখিনি। তাকে যদি আপনার নিকট বহন করে আনি তবে তার হাড়গোড় আলাদা হয়ে যাবে। তার হাড়ে চামড়া ছাড়া আর কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে আদেশ দিলেনঃ তারা যেন একশো পাতা বিশিষ্ট একটি ডাল নিয়ে তদ্বারা তাকে একবার প্রহার করে। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের এক দাসী ব্যাভিচার করলো। তখন তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ হে আলী! তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। আমি (‘আলী) তার নিকট গিয়ে দেখি, বিরামহীনভাবে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কাজেই আমি তাঁর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কি কাজ সেরে এসেছ? আমি বললাম, আমি তার নিকট গিয়ে দেখি, তার অবিরাম রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি বললেনঃ রক্ত বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তাকে রেখে দাও, অতঃপর তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। আর তোমাদের ডান হাতের মালিকানায় যারা আছে (দাস-দাসী) তাদের উপর হদ্দ ক্বায়িম করো। শু’বাহ (রহঃ) ‘আবদুল ‘আলা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ প্রসব করার পূর্ব পর্যন্ত তাকে প্রহার করো না। তবে প্রথম বর্ণনাটি অধিক সহীহ।
যেনার মিথ্যা অপবাদ দাতার শাস্তি
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সমর্থনে যখন আয়াত অবতীর্ণ হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং কুরআনের আয়াত তিলায়াত করেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে এসে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাদের উপর হাদ্দ কার্যকর করা হয়। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) সূত্রেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তবে তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেনঃ যারা অশ্লীল কথা রটিয়েছিল, তিনি তাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে আদেশ দেন। পুরুষ দু’জন হলোঃ হাসসান ইবনু সাবিত ও মিসত্বাহ ইবনু উসাসাহ। নুফাইলী বলেন, তারা বলতেনঃ মহিলাটি হলো হামনা বিনতু জাহ্শ। [৪৪৭৪]
মাদক সেবনের শাস্তি
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদক গ্রহনের শাস্তি স্বরূপ হাদ্দ নির্দিষ্ট করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যাক্তি মদ পান করে মাতাল হয়। এ সময় তাকে রাস্তায় দুলতে দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসা হয়। সে ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ঘর বরাবর এলে জ্ঞান ফিরে পায় এবং ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে (শাস্তির ভয়ে) তাকে জড়িয়ে ধরে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করা হলে তিনি হেসে বললেনঃ সে কি তাই করেছে? তিনি তার ব্যাপারে কোন আদেশ দেননি। [৪৪৭৫] দুর্বলঃ মিশকাত হা/৩৬২২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) জনৈক মাতাল ব্যাক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আনা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা একে প্রহার করো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমাদের মাঝ হতে কেউ তাকে হাত দিয়ে মেরেছে, কেউবা জুতাপেটা করেছে আর কেউবা কাপড় দিয়ে মেরেছে। অতঃপর সে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত লোকজনের কেউ বললো, আল্লাহ তোমাকে অপদস্থ করেছেন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এভাবে বলো না, তার বিরুদ্ধে শয়তানকে সহযোগিতা করো না। ইবনুল হাদ (রহঃ) ইবনুল হাদ (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে প্রহারের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের বললেনঃ তোমরা তাকে মৌখিক ধমক দিয়ে নসীহত করো। সুতরাং তারা তার নিকট এসে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় করোনি, তুমি আল্লাহকে ভয় করোনি এবং তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে লজ্জিত হওনি। অতঃপর তারা তাকে ছেড়ে দিলেন। হাদীসের শেষাংশে তিনি বলেনঃ বরং তোমরা বলো, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! তার উপর করুণা বর্ষণ করো। আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদক গ্রহনের অপরাধে (এ ব্যাক্তিকে) খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে আঘাত করেন। আর আবূ বকর (রাঃ) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) যখন খলীফা হন, তিনি লোকদের ডেকে বললেন, অনেক লোক পানির উৎসসমূহে ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এখন আপনারা মাদক গ্রহনের হাদ্দ প্রসঙ্গে কি বলেন? তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বলেন, আমরা হাদ্দের আওতায় লঘু শাস্তি দেয়ার মত দিচ্ছি। সুতরাং তিনি এর শাস্তি হিসেবে আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারিত করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু আবূ আরূবাহ ক্বাতাদাহ্র সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদ্যপায়ীদের খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে চল্লিশ ঘা প্রহার করেছেন। শু’বাহ (রাঃ) ক্বাতাদাহ্ হতে আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করে বলেন, তিনি দু’টি খেজুরের ডাল দিয়ে প্রায় চল্লিশ ঘা প্রহার করেছেন। হুসাইন ইবনুল মুনযির আর-রাক্বাশী ওরফে আবূ সাসান (রহঃ) একদা আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদ ইবনু ‘উক্ববাহ্কে ধরে আনা হলো। হুমরান এবং অপর এক ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলো। তাদের একজন সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে মদ খেতে দেখেছে। অপর ব্যাক্তি সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে মদ বমি করে ফেলতে দেখেছে। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, মদ পান না করলে তা বমি করতে পারে না। তাই তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতে নির্দশ দিলেন। ‘আলী (রাঃ) হাসান (রাঃ)-কে বললেন, তুমি তাকে শাস্তি দাও। হাসান (রাঃ) বললেন, যিনি খিলাফাতের সুবিধা ভোগ করছেন তিনি ভার বহন করবেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফারকে বললেন, তুমি তার উপর হাদ্দ কার্যকর করো। অতএব তিনি একটি চাবুক নিয়ে তাকে প্রহার করতে শুরু করলেন। আর ‘আলী (রাঃ) তা গননা করতে থাকলেন। যখন তিনি চল্লিশে পৌঁছলেন, ‘আলী (রাঃ) বললেন, থামো, যথেষ্ট হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন। আমি মনে করি, আবূ বাক্রও চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন, কিন্তু ‘উমার আশিটি বেত্রাঘাত করেছেন। এর প্রতিটিই সুন্নাত। তবে আমি চল্লিশটি পছন্দ করি। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) মদপানের অপরাধে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন, আর ‘উমার (রাঃ) তা আশিতে পূর্ণ করেছেন। এর প্রতিটিই সুন্নাত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আল-আসমাঈ “এর শীতলতা উপভোগকারী এর উত্তাপ সহ্য করবে” বাগধারার ব্যাখ্যায় বলেন, যিনি খিলাফাতের সুবিধা ভোগ করেছেন তাকেই এর ভার বহন করতে হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ সাসান হুসাইন ইবনু মুনযির ছিলেন তার গোত্রের সর্দার।
মাদক সেবনের পুনরাবৃত্তি করলে
মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা মদ পান করলে, তাদের বেত্রাঘাত করো। পুনরায় পান করলে বেত্রাঘাত করো। আবারো পান করলে বেত্রাঘাত করো, পুনরায় পান করলে বেত্রাঘাত করো, আবারো পান করলে তাদের হত্যা করো। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,....উপরের হাদীসের সমার্থবোধক। এতে রয়েছেঃ আমার ধারণা, তিনি পঞ্চমবারে বলেছেনঃ আবারো যদি সে মদ পান করে তবে তাকে হত্যা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ গুতাইফ বর্ণিত হাদীসেরও পঞ্চমবারের কথা উল্লেখ আছে। [৪৪৮২] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ মাতাল হলে তাকে বত্রাঘাত করো। আবার মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত করো, আবারো মাতাল হলে বেত্রাঘাত করো, চতুর্থবারও যদি এর পুনরাবৃত্তি হয়, তবে হত্যা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ও পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও আবূ হুরায়রা্ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ কেউ মদ পান করলে তাকে বেত্রাঘাত করো। চতুর্থবারও যদি এরূপ করে তবে তাকে হত্যা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপভাবে সুহাইল পর্যায়ক্রমে আবূ সালিহ ও আবূ হুরায়রা সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ চতুর্থবার যদি তারা মদ পান করে তাহলে তাদের হত্যা করো। একইভাবে ইবনু আবূ নু’আইম ইবনু ‘উমারের সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এবং আশ-শারীদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করছেন। তবে আল-জাদলী মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে তৃতীয়বার বা চতুর্থবার মদ পান করলে তাকে হত্যা করো। ক্বাবীসাহ ইবনু যুওয়াইব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যাক্তি মদ পান করে তাকে বেত্রাঘাত করো। আবারো পান করলে বেত্রাঘাত করো। আবারো করলে তাকে বেত্রাঘাত করো। তৃতীয় কিংবা চতুর্থবার যদি সে এরুপ করে তবে তাকে হত্যা করো। অতঃপর মদ পানের অপরাধে জনৈক ব্যাক্তিকে ধরে আনা হলে তিনি তাকে বেত্রাঘাত করেন। পুনরায় তাকে এ অপরাধে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর একই অপরাধে তাকে নিয়ে আসা হলে তিনি বেত্রাঘাত করেন আর হত্যা পরিহার করেন। তা ছিল অবকাশ। সুফিয়ান বলেন, যুহরী (রহঃ) মানসূর ইবনুল মু’তামির ও মুখাওয়াল ইবনু রাশিদের উপস্থিতিতে এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, তোমরা দু’জন প্রতিনিধি হিসেবে ইরাকবাসীদের নিকট গিয়ে এ হাদীস বর্ণনা করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আশ-শারীদ ইবনু সুওয়াইদ, শুরাহ্বীল ইবনু আওস, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার, আবূ গুতাইফ আল-কিন্দী এবং আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [৪৪৮৪] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কারো উপর হাদ্দ কার্যকর করলে এবং তাতে সে মারা গেলে আমি তার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবো না, মদ পানের অপরাধী ব্যাতীত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম দেননি। এর যা কিছু শাস্তি প্রচলিত আছে তা আমরা নিজেরা নির্ধারণ করেছি। ‘আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন এখনো দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৈন্যশিবিরের মধ্যে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের শিবির খুঁজছেন। এমতাবস্থায় জনৈক মদ্যপায়ীকে ধরে আনা হলো। তিনি লোকদের বললেনঃ তোমরা একে প্রহার করো। অতএব তাদের কেউ জুতা দিয়ে, কেউবা লাঠি দিয়ে আর কেউবা ‘মিতাখাহ’ দিয়ে তাকে প্রহার করলো। ইবনু ওয়াহ্ব বলেন, ‘মিতাখাহ’ অর্থ খেজুরের কাঁচা ডাল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমীন থেকে কিছু মাটি নিয়ে তার মুখমন্ডলে ছুঁড়ে মারলেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনাইনে অবস্থানকালে জনৈক মাতালকে তাঁর নিকট আনা হলো। তিনি তার মুখমন্ডলে মাটি ছুঁড়ে মারলেন এবং তাকে প্রহার করতে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন। তারা তাদের জুতা ও হাতে যা ছিল তা দিয়ে তাকে প্রহার করতে লাগলেন, যতক্ষণ না তিনি তাদের বললেন, থামো। অতঃপর তারা প্রহার বন্ধ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকালের পর আবূ বকর (রাঃ) মদ পানের জন্য চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর ‘উমারও তার খিলাফাতের প্রথম পর্যায়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে আশিটি বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর ‘উসমান (রাঃ) আশি এবং চল্লিশ দু ধরনের শাস্তিই প্রয়োগ করেন। অতঃপর মু’আবিয়াহ (রাঃ) মদ পানের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ বিজয়ের দিন সকালবেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জনতার ভীড়ের মধ্যে পদব্রজে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের (রাঃ) শিবিরের সন্ধান করতে দেখি। আমি তখন উঠতি বয়সের যুবক। তাঁর নিকট এক মদ্যপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তাঁর নির্দেশে লোকজন তাকে তাদের হাতের নিকট সহজলভ্য জিনিস দ্বারা প্রহার করে। তাদের কেউ চাবুক দ্বারা, কেউ লাঠি দ্বারা এবং কেউবা নিজেদের জুতা দ্বারা তাকে প্রহার করে। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি ধূলা নিক্ষেপ করেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর সময় এক মদপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তিনি লোকজনকে প্রশ্ন করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত ব্যাক্তিকে কয়টি বেত্রাঘাত করেছেন? তারা চল্লিশবার বেত্রাঘাতের কথা উল্লেখ করে। অতএব আবূ বকর (রাঃ) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। ‘উমার (রাঃ) খলীফাহ হলে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) তাকে লিখে পাঠান যে, লোকজন মাদক গ্রহনের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে এবং হাদ্দ ও শাস্তির ভয়কে পরোয়া করছে না। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আপনার নিকট যারা আছে তাদের প্রশ্ন করুন। তার সংগে ছিলেন সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী মুহাজিরগণ। তিনি তাদের নিকট প্রশ্ন করলে তারা আশিটি বেত্রাঘাত সম্পর্কে ঐকমত্য হন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি মাদক গ্রহণ করলে সে মিথ্যা কথা বলে। অতএব আমি মনে করি, তাকে মিথ্যা বলার শাস্তির মতই শাস্তি দেয়া উচিৎ।
মাসজিদে হাদ্দ কার্যকর করা
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের ভিতরে কিসাস গ্রহণ করতে, কবিতা আবৃত্তি করতে এবং হাদ্দ কার্যকর করতে নিষেধ করেছেন।
বিচারকের সুবিবেচনামূলক শাস্তি সম্পর্কে
আবূ বুরদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত হাদ্দ ছাড়া কাউকে দশ বেত্রাঘাতের অধিক শাস্তি দেয়া যাবে না। আল বুরদাহ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ...অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস। [৪৪৯১] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।
হাদ্দের ক্ষেত্রে চেহারায় আঘাত না করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রহার করার সময় যেন মুখমন্ডল থেকে বিরত থাকে।