41. রক্তমূল্য

【1】

হত্যার বদলে হত্যা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, বনু কুরাইযাহ ও বনু নাযীর নামে দু’টি (ইয়াহুদী) গোত্র ছিল। নাযীর গোত্র কুরাইযাহর চেয়ে অধিক মর্যাদার দাবিদার ছিল। এজন্য যখন কুরাইযার কোন লোক নাযীর গোত্রের কোন লোককে হত্যা করতো বিনিময়ে তাকেও হত্যা করা হতো। কিন্তু যখন নাযীর গোত্রের কোন ব্যাক্তি কুরাইযার কোন লোক হত্যা করতো তখন একশো ওয়াসাক খেজুরের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নবুওয়াত লাভ করলেন, তখন নাযীর গোত্রীয় এক ব্যাক্তি কুরাইযার এক লোককে হত্যা করলে কুরাইযার লোকেরা বললো, হত্যাকারীকে আমাদের হাতে সমর্পণ করো; আমরা তাকে হত্যা করবো। কিন্তু পুরাতন প্রথানুযায়ী এ প্রস্তাবে বনী নাযীর অসম্মতি জানালে তারা বললো, আমাদের ও তোমাদের মাঝে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রয়েছেন। তারপর তারা তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হলে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ “যদি তুমি তাদের মধ্যে ফায়সালা করো, তাহলে ইনসাফের সঙ্গে ফায়সালা করবে” (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৪২)। ইনসাফ হলো প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ। অতঃপর নাযিল হলোঃ “তবে কি তারা জাহিলী যুগের বিধিবিধান কামনা করে (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৫০)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বনু কুরাইযাহ ও বনু নাযীর সকলেই নবী হারূন (আ)-এর বংশধর।

【2】

কারো পিতা বা ভাইয়ের অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না

আবূ রিমসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে থাকা অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পিতাকে প্রশ্ন করলেনঃ সে কি তোমার ছেলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ কা’বার রবের কসম! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঠিক বলেছো তো? তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতার সঙ্গে আমার সাদৃশ্য এবং আমার সম্পর্কে পিতার কসমকে কেন্দ্র করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেনঃ “জেনে রাখো! তার কোন অপরাধ তোমাকে অভিযুক্ত করবে না এবং তোমার কোন অপরাধের জন্যও সে অভিযুক্ত হবে না।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমাদের কাউকে অপরের পাপের বোঝা বহন করতে হবে না।” (সুরাহ আন’আমঃ ১৬৪)।

【3】

শাসক বা বিচারক যদি খুনিকে ক্ষমা করার আদেশ দেন

আবূ শুরাইহ্‌ আল-খাযাঈ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে হত্যা বা আহত করা হয়েছে তাকে অবশ্যই তিনটি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করতে হবে। হয় সে কিসাস নিবে, অথবা ক্ষমা করবে, অথবা রক্তমূল্য গ্রহণ করবে। যদি সে চতুর্থ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তাহলে তোমরা তার দু’হাত চেপে ধরো। যে ব্যাক্তি এরপরও সীমালঙ্ঘন করবে তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। [৪৪৯৫] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন কিসাসজনিত বিবাদ পেশ করা হলে তিনি ক্ষমা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এক ব্যাক্তি নিহত হলে ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হয়। তখন তিনি হত্যাকারীকে নিহত ব্যাক্তির অভিভাবকের নিকট সোপর্দ করলেন। হত্যাকারী বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! তাকে হত্যা করার ইচ্ছা আমার ছিলো না। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিভাবককে বললেন, ‘সাবধান! যদি তার কথায় সে সত্যবাদী হয় আর এরপরও তুমি তাকে হত্যা করো তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। তিনি বলেন, অতঃপর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো। বর্ণনাকারী বলেন, হত্যাকারীর দু’হাত পিছনের দিক হতে চামড়ার লম্বা রশি বাঁধা ছিল এবং সে চামড়ার রশিটি টানতে টানতে চলে গেলো। এজন্য তা নাম দেয়া হয় যুন-নিস’আহ্‌ (চামড়ার রশিধারী)। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম এমতাবস্থায় গলায় চামড়ার রশি বাঁধানো এক হত্যাকারীকে আনা হল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত ব্যাক্তির অভিভাবককে ডেকে বললেন, তুমি কি ক্ষমা করে দিবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি দিয়াত নিবে? সে বললো, না। তিনি পুনরায় বললেন, তুমি কি হত্যা করবে? সে বললো, হাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন, একে নিয়ে যাও। সে যখন যেতে উদ্যত হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় বললেন, তুমি কি ক্ষমা করে দিবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি রক্তপণ গ্রহণ করবে? সে বললো, না। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাহলে তুমি কি হত্যা করবে? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেন, একে নিয়ে যাও। এভাবে চতুর্থবারে তিনি বললেন, জেনে রাখো, তুমি তাকে ক্ষমা করে দিলে সে নিজের ও তার সাথীর গুনাহ নিয়ে ফিরতো। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব সে তাকে ক্ষমা করে দিলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে (হত্যাকারীকে) চামড়ার রশি টেনে টেনে চলে যেতে দেখেছি। ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) সূত্র উপরোক্ত সানাদে অনুরূপ সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত। [৪৪৯৯] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি হাবশী এক লোককে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, এ লোক আমার ভাতিজাকে হত্যা করেছে। তিনি বললেন, তুমি তাকে কিভাবে হত্যা করেছো? সে বললো, আমি কুঠার দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেছিলাম, তবে তাকে হত্যা করার ইচ্ছা আমার ছিল না। তিনি বললেন, তোমার কি সম্পদ আছে যা দিয়ে তুমি তার রক্তপণ শোধ করতে পারো? সে বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি মনে করো, যদি আমি তোমাকে ছেড়ে দেই তাহলে তুমি কি মানুষের নিকট ভিক্ষা করে তার দিয়াত সংগ্রহ করতে পারবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তোমার মনিব গোষ্ঠী কি তোমার পক্ষ হতে তার দিয়াত দিবে? সে বললো, না। তিনি বাদীকে বললেন, একে নিয়ে যাও। অতঃপর হত্যা করার জন্য সে তাকে নিয়ে রওয়ানা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “জেনে রাখো! যদি সে তাকে হত্যা করে, তাহলে সেও তার মতোই হবে”। কথাটি লোকটির কানে পৌঁছালো যেখান হতে সে তাঁর কথা শুনতে পাচ্ছিল। সে বললো, সে এখানে আছে; অতএব তার ব্যাপারে আপনার যা ইচ্ছা তাই হুকুম দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। অপর বর্ণনায় আছে, তাকে ত্যাগ করো, সে তার ও তার সাথীর গুনাহ বহন করবে, ফলে সে জাহান্নামী হবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সে তাকে ছেড়ে দিলো। আবূ উমামাহ ইবনু সাহল (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম, যখন তিনি (বিদ্রোহীদের দ্বারা) একটি ঘরে আটক ছিলেন। ঐ ঘরের একটি প্রবেশদ্বার ছিল। কেউ ঐ প্রবেশদ্বারে প্রবেশ করলে আল-বালাত নামক স্থানের লোকের কথাবার্তা শুনতে পেতো। ‘উসমান (রাঃ) তাতে প্রবেশ করলেন এবং বিবর্ণ অবস্থায় আমাদের নিকট এসে বললেন, তারা এইমাত্র আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হে আমীরূল মুমিনীন! আল্লাহ্‌ই তাদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি প্রশ্ন করলেন, তারা আমাকে হত্যা করবে কেন? আমি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতেন শুনেছিঃ তিনটি অপরাধের কোন একটি ব্যাতীত মুসলিম ব্যাক্তির রক্তপাত করা হালাল নয়, (১) ইসলাম গ্রহনের পর পুনরায় কুফরীতে ফিরে যাওয়া (২) বিবাহিত ব্যাক্তির যেনায় লিপ্ত হওয়া এবং (৩) হত্যার অপরাধী না হওয়া সত্ত্বেও কোন ব্যাক্তিকে হত্যা করলে। আল্লাহর কসম! আমি জাহিলী যুগে এবং ইসলামী যুগেও কখনো যেনা করিনি। আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করার পর হতে আমি মোটেই অন্য ধর্ম গ্রহণ পছন্দ করি না এবং আমি কোন মানুষকে হত্যা করিনি। অতএব তারা কেন আমাকে হত্যা করবে? ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান ও আবূ বকর (রাঃ) উভয়ে জাহিলী যুগেই মাদক গ্রহণ পরিত্যাগ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার ইবনু সা’দ ইবনু দুমাইরাহ (রহঃ) তার পিতা ও দাদার সূত্র তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। লাইস গোত্রীয় মুহাল্লিম ইবনু জাসসামাহ আশজা’ গোত্রের এক ব্যাক্তিকে ইসলামের (প্রাথমিক) যুগে হত্যা করে। এটা ছিল সর্বপ্রথম হত্যাকান্ড যার বিচার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। এ ব্যাপারে ‘উয়াইনাহ আল-আশজায়ী সম্পর্কে আলাপ করেন। কেননা তিনি গাতফান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং আকরা’ ইবনু হারিস (রাঃ) মুহাল্লিমের পক্ষ হয়ে কথা বলেন, কেননা তিনি খিনদিফদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এতে কথা কাটাকাটি হতে হতে তা ঝগড়ায় রূপ নিলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, হে উয়াইনাহ! তুমি কি দিয়াত নিবে না? উয়াইনাহ বললেন, না, আল্লাহ্‌র কসম! যতক্ষণ তাদের নারীরা দুর্দশাগ্রস্ত না হবে, যেরূপ আমাদের নারীরা দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবার বাকবিতন্ডা চরম আকার ধারণ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় উয়াইনাহ্কে উদেশ্য করে বললেন, হে উয়াইনাহ! তুমি কি দিয়াত নিবে না? উয়াইনাহ এবারও একই উত্তর দিলেন। এরপর মুকাইতিল নামক বনী লাইস গোত্রের এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়ালো, যার সঙ্গে অস্ত্র ও হাতে ঢাল ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যাক্তি (মুহাল্লিম) ইসলামের প্রথম যুগে যে কাজ করলো আমি তার এই উদাহরণ ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাই না যে, ছাগলের একটি পাল জলাশয়ে উপনীত হলে যেটি প্রথমে এলো তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করা হলে বাকিগুলো পলায়ন করলো, আজ একটি বিধান প্রণয়ন করুন এবং আগামীকাল তা পরিবর্তন করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখনই নগদ পঞ্চাশটি এবং মদিনায় ফিরে গিয়ে বাকি পঞ্চাশটি (উট) পাবে। ঘটনাটি তাঁর কোন এক সফরের সময় ঘটেছিল। মুহাল্লিম এক দীর্ঘকায় ও বাদামী রংবিশিষ্ট লোক ছিল। সে জনতার এক পাশে উপবিষ্ট ছিল। এমতাবস্থায় তাকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত তারা তদবীর করতে থাকে। সে স্বস্থান ত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে সামনা সামনি বসলো, তখন তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পর্কে আপনার নিকট যে অভিযোগ এসেছে, সত্যিই আমি উক্ত দোষে দোষী। আর আমি এজন্য আল্লাহর নিকট তাওবাহ করেছি, আপনিও আল্লাহর নিকট আমার তাওবাহ কবুলের জন্য দু’আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি ইসলামের প্রথম যুগে তোমার অস্ত্রের মাধ্যমে তাকে হত্যা করেছো? তিনি উচ্চস্বরে বললেন, হে আল্লাহ! মুহাল্লিমকে ক্ষমা করো না। আবূ সালামাহ্র বর্ণনায় আরো আছেঃ সে চাদরের আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো। ইবনু ইসহাক্ব বলেন, তার গোত্রের লোকদের ধারণা যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে মুহাল্লিমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। [৪৫০২]

【4】

ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে অভিভাবক দিয়াত গ্রহণ করলে

সাঈদ ইবনু আবূ সাঈদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ শুরাইহ আল-কা’বী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শোন হে খুযা’আহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা হুযাইল গোত্রের এ ব্যাক্তিকে হত্যা করেছো। আর আমিই তার রক্তমূল্য পরিশোধ করবো। আমার একথার পর যাদের কোন লোককে হত্যা করা হবে তখন নিহতের পরিবার দু’টি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারবে। দিয়াত গ্রহণ করবে অথবা হত্যা করবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেন, যার কোন লোককে হত্যা করা হয়েছে তার দু’টি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের স্বাধীনতা আছে। হয়তো তাকে রক্তমূল্য দেয়া হবে, অন্যথায় কিসাস কার্যকর হবে। তখন ইয়ামানের অধিবাসী আবূ শাহ নামক এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (এ নির্দেশ) আমাদের জন্য লিখিয়ে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আবূ শাহ-এর জন্য লিখে দাও। হাদীসের এ শব্দ ইমাম আহ্‌মাদ (রহঃ)-এর। আর ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, “আমাদের জন্য লিখিয়ে দিন” অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুত্ববাহটি। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কাফির হত্যার দায়ে মুমিনকে হত্যা করা যাবে না। কেউ মুমিন ব্যাক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে নিহতের ওয়ারিসদের নিকট সোপর্দ করা হবে। তারা চাইলে তাকে হত্যা করবে অথবা দিয়াত গ্রহণ করবে। [৪৫০৫]

【5】

যে ব্যাক্তি দিয়াত গ্রহণের পর হত্যা করলো

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি দিয়াত গ্রহণের পর হত্যা করলো, আমি তাকে ক্ষমা করবো না। [৪৫০৬] দুর্বলঃ মিশকাত হা/৩৪৭৯৮, যঈফাহ হা/৪৭৬৭।

【6】

কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা জনৈকা ইয়াহুদী নারী বিষ মিশ্রিত একটি ভুনা ছাগী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে উপস্থিত হলে তিনি তা থেকে খেলেন। অতঃপর তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি তাকে এজন্য প্রশ্ন করলেন। সে বললো, আমি আপনাকে হত্যা করার জন্যই এটা করেছি। তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে আল্লাহ তোমাকে সফল হতে দেননি অথবা তিনি বলেছেন, আমার উপর তোমাকে সফল হতে দেননি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, একে আমরা হত্যা করবোই। তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আলজিভে তা (বিষের ক্ষত চিহ্ন) দেখতে পেতাম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ইয়াহুদী মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিষ মিশ্রিত একটি ভুনা ছাগী উপহার দিয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যে নারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিষ প্রয়োগ করেছিল সে হলো মারহাব নামক ইয়াহুদীর বোন। [৪৫০৮] ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছিলেন যে, খায়বারে অধিবাসী এক ইয়াহুদী মহিলা বিষ মিশিয়ে একটি ছাগী ভুনা করে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রান নিয়ে খাওয়া আরম্ভ করলেন এবং তাঁর কতিপয় সাহাবীও তাঁর সঙ্গে খেতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা হাত গুটিয়ে নাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ইয়াহুদী মহিলাকে লোক মারফত ডেকে এনে বললেন, তুমি কি এ ছাগীর সঙ্গে বিষ মিশিয়েছ? সে বললো, আপনাকে কে সংবাদ দিয়েছে? তিনি বললেন, আমার হাতের এই রান আমাকে খবর দিয়েছে। সে বললো, হাঁ। তিনি বললেন, এরুপ করার উদ্দেশ্য কি? সে বললো, আমি ভেবেছি, যদি তিনি সত্যিই নবী হন তাহলে বিষ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি নবী না হন তবে আমরা তার থেকে ঝামেলামুক্ত হবো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কোন প্রকার শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিলেন। যেসব সাহাবী তাঁর সঙ্গে ছাগীর গোশত খেয়েছেন তাদের কেউ কেউ মারা গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাগীর গোশত খাওয়ার প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার জন্য তাঁর বাহুদ্বয়ের মাঝখানে রক্তমোক্ষণ করালেন। বনী বায়াদার মুক্তদাস আবূ হিন্দ আনসারী শিং ও বল্লমের ফলা দ্বারা তাঁর রক্তমোক্ষণ করিয়েছিলেন। [৪৫০৯] জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খায়বারে এক ইয়াহুদী নারী একটা ভূনা ছাগী উপহার দিয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, বিশ্র ইবনুল বারাআ’ ইবনু মা’রূর আনসারী (বিষক্রিয়ার) মৃত্যু বরণ করায় তিনি ইয়াহুদী নারীকে ডেকে এনে বললেন, তুমি কেন এরূপ করলে? অতঃপর জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। এতে আরো রয়েছেঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মহিলাটিকে হত্যার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো। কিন্তু বর্ণনাকারী এ হাদীসে রক্তমোক্ষণের কথা উল্লেখ করেননি। [৪৫১০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সদাক্বাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারে এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হতে আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করেছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশ্‌র ইবনুল বারাআ ইবনু মা’রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমার কিসে প্ররোচিত করেছে? সে বললো, আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যাথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে। ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যাতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে। উম্মু মুবাশশির (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। অতঃপর তিনি মাখলাদ ইবনু খালিদের হাদীসের অর্থানুরুপ বর্ণনা করেন জাবিরের (রাঃ) হাদীসের মতই। বর্ণনাকারী বলেন, বিশর ইবনুল বারাআ ইবনু মা’রূর (রাঃ) মারা গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহূদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করেছো তা করতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করেছে? অতঃপর জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হয়। বর্ণনাকারী এখানে রক্তমোক্ষণের কথা উল্লেখ করেননি।

【7】

কেউ স্বীয় গোলামকে হত্যা বা অঙ্গছেদন করলে তাকেও কি অনুরূপ করা হবে?

সামূরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যাক্তি তার দাসকে হত্যা করবে আমরা তাকে হত্যা করবো এবং যে তার দাসের অঙ্গহানি করবে আমরাও তার মতই অঙ্গহানি করবো। [৪৫১৪] দূর্বলঃ যঈফাহ হা/৩৪৭৩। ক্বাতাদাহ (রহঃ) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার গোলামকে নির্বীর্য (অন্ডকোষ কাটবে) আমরাও তাকে নির্বীর্য করবো। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ শু’বাহ ও হাম্মাদের হাদীসের মতই। [৪৫১৫] ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে শু’বাহ (রহঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো রয়েছেঃ পরবর্তীতে আল-হাসান (রহঃ) হাদীসটি ভুলে যান। তাই তিনি বলতেন, গোলাম হত্যার অপরাধে স্বাধীন ব্যাক্তিকে হত্যা করা যাবে না। আল হাসান (রহঃ) দাস হত্যার অপরাধে স্বাধীন ব্যাক্তিকে হত্যা করা যাবে না। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, একদা একটি লোক চিৎকার করতে করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! অমুকের দাসী! তিনি বললেন, দুর্ভাগা! তোমার কি হয়েছে বলো। সে বললো, আমার অনিষ্ট হয়েছে। সে তার মালিকের দাসীর প্রতি তাকানোর কারণে সে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তার লিঙ্গ কেটে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ লোকটিকে আমার নিকট নিয়ে আসো। তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি দাসত্বমুক্ত; তুমি চলে যাও। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কে আমাকে সাহায্য করবে? তিনি বললেন, (তোমায় সাহায্য করা) প্রত্যেক মুসলিম বা মুমিনের দায়িত্ব। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, দাসত্বমুক্ত ব্যক্তির নাম ছিল রাওহ ইবনু দীনার। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তার লিঙ্গ কর্তনকারীর নাম ছিল যিন্বা’। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই যিন্বা’ আবূ রাওহ ছিল দাসটির মনিব।

【8】

সম্মিলিত কসম সম্পর্কে

সাহল ইবনু আবূ হাসমা ও রাফি’ ইবনু খাদীজা (রাঃ) সূত্র মুহাইয়াসা ইবনু মাস’ঊদ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) দুজনেই খায়বারে উপনীত হয়ে খেজুর বাগানের মধ্যে পৃথক হয়ে গেলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহল নিহত হলে তারা এজন্য ইয়াহুদী গোত্রকে দায়ী করলো। অতঃপর তার ভাই ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহল ও তার দু’জন চাচাত ভাই হুওয়াইয়াসা ও মুহাইয়াসা একত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলেন এবং ভাইয়ের ব্যাপারে আলাপ শুরু করলো। বস্তুত সে তাদের মধ্যে বয়েসে ছোট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; যে বড়ো, অর্থাৎ যে বয়েসে বড়ো তাকে আগে কথা বলতে দাও। অথবা তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড়ো তারই শুরু করা উচিৎ। অতঃপর তারা দু’জনে তাদের সাথীর (নিহতের) বিষয়ে আলাপ করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের মধ্য হতে কোন ব্যাক্তির দায়ী হওয়ার ব্যাপারে তোমাদের মধ্য হতে পঞ্চাশজনকে কসম করতে হবে; অতঃপর কিসাস নেয়ার জন্য আসামীকে সোপর্দ করা হবে। তারা বললো, আমরা কি করে কসম করবো, আমরা তো উপস্থিত ছিলাম না! তিনি বললেন, তাহলে তাদের মধ্য হতে পঞ্চাশ ব্যাক্তির কসম গ্রহণের মাধ্যমে ইয়াহুদীরা তোমাদের হতে অভিযোগমুক্ত হবে। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এরা তো কাফির সম্প্রদায়ের। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ থেকে দিয়াত পরিশোধ করলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, আমি একদিন তাদের উটের বাথানে গিয়েছিলাম, ঐ উটগুলোর মধ্যকার একটা মাদী উট আমাকে পা দিয়ে সজোরে লাথি মেরেছিল। হাম্মাদ (রহঃ)-ও একইরূপ বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস বিশ্র ইবনু মুফাদ্দাল ও মালিক ইবনু ইয়াহয়া ইবনু সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। সেখানে রয়েছেঃ তোমরা কি পঞ্চাশটি কসম খেয়ে তোমাদের হত্যাকারীর রক্তের অধিকারী হবে? কিন্তু বিশ্র (রহঃ) তার বর্ণনায় রক্ত শব্দটি বলেননি। আবূ লাইলাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) আবু হাস্‌মার পুত্র সাহ্‌ল (রাঃ) বর্ণনা করেন, সে, (সাহ্‌ল) ও তার গোত্রের কতিপয় গণ্যমান্য লোক তাকে সংবাদ দিয়েছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল ও মুহাইয়াসা উভয়ে দুর্ভিক্ষে পড়ে খায়বারে যায়। মুহাইয়াসা তাদের নিকট ফিরে এসে সংবাদ দিলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সাহ্‌ল (রাঃ)-কে হত্যা করে গর্তে বা কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি ইয়াহুদীদের নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরাই তাকে মেরেছো। তারা বললো, আল্লাহর কসম! আমরা তাকে হত্যা করিনি। অতঃপর সে ফিরে এসে গোত্রের লোকজনকে ঘটনা জানালো। অতঃপর সে, তার ভাই হুওয়াইয়াসা এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহ্‌ল এগিয়ে এলেন। মুহাইয়াসা কথা বলতে উদ্যোগী হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, যে বয়সে বড়ো তাকে সন্মান করো এবং কথা বলার জন্য প্রাধান্য দাও। অতঃপর পর্যায়ক্রমে হুওয়াইয়াসা ও মুহাইয়াসা আলাপ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হয় তারা তোমাদের সাথীর দিয়াত দিবে, না হয় তাদেরকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনাবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা তাদেরকে লিখে জানালেন এবং তারাও উত্তরে লিখলো, আল্লাহর কসম! আমরা তাকে হত্যা করিনি। এবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুওয়াইয়াসা, মুহাইয়াসা ও ‘আবদুর রহমানকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি কসম করে তোমাদের সাথীর দিয়াত নিতে পারবে? তারা বললো, না। তিনি বললেন, তাহলে ইয়াহুদীরা তোমাদের জন্য কসম করবে? তারা বললেন, ওরা তো মুসলিম নয়। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ পক্ষ হতে তার দিয়াত পরিশোধ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বাড়িতে একশো উট পাঠিয়ে দিলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, ঐ উটগুলোর মধ্যকার একটি লাল রঙের মাদী উট আমাকে লাথি মেরেছিল। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতিপয় ব্যাক্তির সম্মিলিত শপথের ভিত্তিতে বাহুরাতুল রুগাত নামক স্থানের বনী নাস্র ইবনু মালিক গোত্রের এক ব্যাক্তিকে বাহরার শহর হতে কিছু দূরে অবস্থিত লিয়্যা উপত্যকায় মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, হত্যাকারী নিহত ব্যাক্তি উভয়ে তাদের (নাসর গোত্রের) লোক ছিল। [৪৫২১]

【9】

কাসামার ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করা

বাশীর ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তার মতে, সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) নামক জনৈক আনসারী তাকে জানান যে, একটি ক্ষুদ্র দল খায়বারের উদ্দেশ্য যাত্রা করে সেখানে পৌঁছে তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যান। অতঃপর তারা তাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পান। তখন তারা যাদের নিকট তাকে পেলেন, তাদের অভিযুক্ত করে বললেন, তোমরা আমাদের সাথীকে হত্যা করেছো। তারা বললো, আমরা তাকে হত্যা করিনি এবং কে হত্যা করেছে তাও অবহিত নই। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, হত্যাকারীর বিপক্ষে তোমরা প্রমাণ দাও। তারা বললেন, আমাদের নিকট কোন প্রমাণ নেই। তিনি বললেন, তাহলে ওরা তোমাদের জন্য কসম করবে। তারা বললেন, আমরা ইয়াহুদী জাতির শপথে সন্তষ্ট নই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিয়াতের দাবি বাতিল করাকে সমীচীন মনে না করে তার জন্য সদাক্বাহর একশো উট দিয়াত হিসেবে দান করলেন। রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আনসারদের এক ব্যাক্তি খায়বারে নিহত হলে তার অভিভাবকগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা জানালেন। তিনি বললেন, তোমাদের কি এমন দু’জন সাক্ষী আছে, যারা তোমাদের সাথীর হত্যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেখানে কোন মুসলিম নেই। আর এরা হলো সেই ইয়াহুদী জাতি, যারা এর চেয়েও আরো জঘন্য অপকর্মের জন্য কুখ্যাত। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা তাদের পঞ্চাশজন লোককে বাছাই করে নিয়ে তাদের থেকে কসম নাও। তারা এতে রাজি না হওয়ায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ হতে তার দিয়াত দিয়ে দিলেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু বুজাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই সাহ্‌ল (রহঃ) এ হাদীসটি সন্দেহযুক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহুদী গোত্রের নিকট এই মর্মে পত্রটি লিখেন যে, যেহেতু তোমাদের এলাকায় নিহত ব্যাক্তির লাশ পাওয়া গেছে, কাজেই তোমরা তার দিয়াত আদায় করো। তারা আল্লাহর নামে পঞ্চাশ বার কসম করে উত্তরে লিখে, আমরা তাকে হত্যা করিনি এবং কে হত্যা করেছে তাও অবহিত নই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজের পক্ষ হতে একশোটি উট দিয়াত হিসেবে পরিশোধ করলেন। [৪৫২৪] কতিপয় আনসারী সাহাবী (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে ইয়াহুদীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্য হতে পঞ্চাশ জন কসম করবে। তারা এতে সম্মত না হওয়ায় তিনি আনসারদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা (কসমের দ্বারা) দিয়াতের অধিকারী হও। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি অদৃশ্য বিষয়ে কসম করবো? এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহুদীদের উপর দিয়াত আরোপ করলেন। কেননা নিহতকে তাদের এলাকায় পাওয়া গেছে। [৪৫২৫]

【10】

হত্যাকারী থেকে সমান প্রতিশোধ নেয়া

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একদা একটি বালিকাকে দু’টি পাথরের মাঝখানে মাথা থেতলিয়ে দেয়া অবস্থায় পাওয়া গেলো। তাকে প্রশ্ন করা হলো, তোমার সঙ্গে এরূপ ব্যবহার কে করেছে; অমুকে না অমুকে? শেষে এক ইয়াহুদীর নাম নিলে সে মাথা নাড়িয়ে হাঁ-সূচক ইঙ্গিত করলো। তখন ঐ ইয়াহুদীকে গ্রেপ্তার করে আনা হলে সে অপরাধ স্বীকার করলো। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর দিয়ে তার মাথা থেতলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। আনাস (রাঃ) একদা আনসার গোত্রের এক বালিকার অলঙ্কার ছিনতাই করার জন্য এক ইয়াহুদী তাকে হত্যা করে একটি কূপে নিক্ষেপ করে। সে তার মাথা পাথর দিয়ে থেতলিয়ে দিয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হলো। আনাস (রাঃ) এক বালিকার অলঙ্কার ছিনতাই করার জন্য এক ইয়াহুদী তার মাথা পাথর দিয়ে থেতলিয়ে দিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সেখানে পৌঁছলেন তখনও তার প্রাণস্পন্দন অবশিষ্ট ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমাকে কে হত্যা করেছে? অমুক ব্যক্তি তোমাকে হত্যা করেছে? সে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করলো, না। তিনি বললেন, তোমাকে কে হত্যা করেছে?তোমাকে অমুক ব্যক্তি হত্যা করেছে? সে মাথার ইঙ্গিতে বললো, না। তিনি বললেন, অমুক ব্যক্তি কি তোমাকে হত্যা করেছে? সে মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিতে বললো, হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলে তাকে দু’টি পাথরের মাঝে রেখে হত্যা করা হলো।

【11】

কাফির হত্যার দায়ে মুসলিমকে হত্যা করা হবে কিনা?

ক্বাইস ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ও আল-আশতার ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনাকে বিশেষ কোন উপদেশ দিয়েছেন যা সাধারণভাবে মানুষকে দেন নি? তিনি বললেন, না; তবে শুধু এতটুকু যা আমার এ চিঠিতে আছে। অতঃপর তিনি তার তরবারির খাপ হতে একখানা পত্র বের করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ সকল মুসলিমের জীবন সমমানের। অন্যদের বিরুদ্ধে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি। তাদের একজন সাধারণ ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত নিরাপত্তাই সকলের জন্য পালনীয়। সাবধান! কোন মুমিনকে কোন কাফির হত্যার অপরাধে হত্যা করা যাবেনা। চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককেও চুক্তি বলবৎ থাকাকালে হত্যা করা যাবে না। কেউ বিদআত চালু করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে। কোন ব্যক্তি বিদআত চালু করলে বা বিদআতীকে মুক্তি দিলে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছেঃ তাদের দূরবর্তীরাও তাদের পক্ষে নিরাপত্তা দিতে পারবে, উত্তম ও দুর্বল পশুর মালিকরা এবং পিছনে অবস্থানরত ও সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ সৈন্যগনও গণীমাতে সমান অংশ লাভ করবে।

【12】

কেউ স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে অন্য লোককে দেখতে পেলে সে তাকে হত্যা করবে কি?

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে কোন পুরুষকে দেখতে পায় তাহলে কি সে তাকে হত্যা করবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না। সা’দ (রাঃ) বললেন, হাঁ; সেই আল্লাহর কসম যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে মর্যাদাবান করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নেতা সা’দ কি বলে তা শোনো। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেন, যদি আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোন পুরুষকে দেখতে পাই তবে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করা পর্যন্ত কি তাকে অবকাশ দিবো? তিনি বললেনঃ হাঁ।

【13】

যাকাত আদায়কারীর দ্বারা ভুলবশত কেউ আহত হলে করণীয়

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ জাহম ইবনু হুযাইফাহ (রাঃ)-কে যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। এক লোক তার যাকাত দেয়ার ব্যাপারে তার সঙ্গে সংঘাতে জড়ালো। আবূ জাহম (রাঃ) তাকে মারধর করলে তাতে তার মাথা ফেটে যায়। তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে অভিযোগ করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিসাস কার্যকর করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদেরকে এই এই পরিমাণ দেয়া হবে। কিন্তু এতেও তারা সন্তুষ্ট হলো না। পুনরায় তিনি বললেন, তোমাদেরকে এই এই পরিমাণ দেয়া হবে। এতে তারা সম্মত হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আজ বিকেলে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবো আর তখন তাদেরকে তোমাদের সম্মতির ব্যাপারে জানাবো। তারা বললো, হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ভাষণে বললেন, লাইস গোত্রের এসব লোক আমার নিকট এসে কিসাস চাইলে আমি তাদেরকে এই এই পরিমাণ সম্পদ দেয়ার প্রস্তাব করেছি এবং এতে তারা সম্মত হয়েছে। সুতরাং তোমরা কি রাজি আছো? তারা বললো, না। এতে মুহাজিরগণ তাদের উপর চড়াও হতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে হস্তক্ষেপ করতে বারণ করলেন এবং তারাও বিরত রইলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে ডেকে পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা কি সম্মত আছো? তারা বললো, হাঁ। তিনি বললেন, আমি লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবো এবং তখন তোমাদের সম্মতির কথা তাদেরকে জানাবো। তারা বললো, হাঁ। এবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ভাষণে বললেন, তোমরা কি সম্মত আছো? তারা বললো, হাঁ।

【14】

অস্ত্র ছাড়া অন্য বস্তুর দ্বারা হত্যা করা হলে তার কিসাস সম্পর্কে

আনাস (রাঃ) একদা একটি বালিকাকে তার মাথা দু’টি পাথরের মাঝে রেখে থেতলানো অবস্থায় পাওয়া গেলো। তাকে প্রশ্ন করা হলো, তোমার সঙ্গে এরূপ ব্যবহার কে করেছে? অমুক ব্যক্তি করেছে? অমুক ব্যক্তি করেছে? অবশেষে এক ইয়াহুদীর নাম বলা হলে সে তার মাথার ইঙ্গিতে বললো, হাঁ। অতঃপর সেই ইয়াহুদীকে গ্রেপ্তার করে আনা হলে সে তা স্বীকার করলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মাথা পাথরে থেতলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

【15】

প্রহারের বদলা এবং শাসক তার নিজের উপর কিসাস গ্রহণের সুযোগ দেয়া

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু সম্পদ বন্টনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়লো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুরের লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করলেন এবং এতে তার চেহারার দাগ পড়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি এসে আমার থেকে কিসাস নাও। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বরং আমি ক্ষমা করে দিলাম। [৪৫৩৫] আবুল ফিরাস (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাদের সম্মুখে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, আমি আমার কর্মচারীদেরকে এজন্য প্রেরণ করি না যে, তারা আপনাদের উপর শারীরিক নির্‍্যাতন চালাবে এবং আপনাদের সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। যদি কারো উপর এ ধরনের কোন কিছু করা হয়ে থাকে তাহলে সে যেন আমার নিকট অভিযোগ করে। আমি তার প্রতিশোধ নিবো। ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) বললেন, যদি কোন ব্যক্তি তার কোন নাগরিককে আদব শিখানোর জন্য শাস্তি দেয় তাহলে কি তার কিসাস নেয়া হবে? তিনি বললেন, হাঁ। সেই পবিত্র সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! জেনে রাখো! আমি তার কিসাস গ্রহণ করবো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে কিসাস কার্যকর করতে দেখেছি। [৪৫৩৬]

【16】

নারীরা ও কিসাস ক্ষমা করতে পারে

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিবাদমান পক্ষবৃন্দ যেন কিসাস গ্রহণ হতে বিরত থাকে। ঘনিষ্ঠতর ব্যক্তি কিসাস ক্ষমা করবে, অতঃপর পরবর্তী ঘনিষ্ঠতর ব্যক্তি, যদিও সে মহিলা হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘ইয়ানহাজি্যু’ শব্দের অর্থ হলো, তার কিসাস গ্রহণ হতে বিরত থাকবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, মহিলাদের জন্যও হত্যাকারীকে ক্ষমা করা বৈধ, যদি তিনি নিহতের ওয়ারিস হন। [৪৫৩৭]

【17】

---

ইবনু ‘উবাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অদৃশ্যভাবে নিহত হলো পাথর নিক্ষেপে, চাবুক কিংবা লাঠির আঘাতে নিহত হলে তা ভুলবশত হত্যা হিসেবে গণ্য হবে এবং এজন্য দিয়াত দিবে। আর যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে তার কিসাস কার্‍্যকর হবে। অতঃপর উভয় বর্ণনাকারী সম্মিলিতভাবে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি কিসাস কার্যকর করতে বাধা দিবে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ ও ক্রোধ পতিত হবে এবং তার কোন ফরয বা নফল ‘ইবাদত কবুল করা হবে না। সহীহ, পরবর্তী হাদীস দ্বারা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অতঃপর সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসের অর্থানুরূপ হাদীস বর্ণিত।

【18】

দিয়াতের (ক্ষতিপূরনের) পরিমাণ কতো?

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ভুলবশত হত্যার দিয়াত হবে একশো উট। এর মধ্যে ত্রিশটি হবে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, ত্রিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, ত্রিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী এবং দশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উট। আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে মুদ্রায় দিয়াত ছিল আটশো দীনার অথবা আট হাজার দিরহাম। সে সময় আহলে কিতাবদের জন্য ছিলো মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত দিয়াতের অর্ধেক। বর্ণনাকারী বলেন, দিয়াতের এ পরিমাণ ‘উমার(রাঃ)-এর খলীফাহ নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর ছিলো। খলীফাহ হয়ে তিনি ভাষণদানকালে বলেন, উটের দাম বেড়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ) দিয়াতের পরিমাণ স্বর্ণের মালিকদের জন্য এক হাজার দীনার, রৌপ্যের মালিকদের জন্য বারো হাজার দিরহাম, গাভীর মালিকদের জন্য দুইশো গাভী, ছাগলের মালিকদের জন্য দুই হাজার ছাগল ও কাপড়ের মালিক বা ব্যবসায়ীদের জন্য দুইশো জোড়া কাপড় ধার্য করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি জিম্মিদের দিয়াত বাদ রাখলেন অর্থাৎ দিয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধিকালে তাদের জন্য নির্ধারিত পূর্বের পরিমাণে বৃদ্ধি করেন নি। ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়াত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, উটের মালিকরা একশো উট, গরুর মালিকরা দুইশো গরু, ছাগলের মালিকরা দুই হাজার ছাগল ও কাপড়ের মালিকরা দুইশো জোড়া কাপড় দিয়াত হিসেবে প্রদান করবে। আর গমের মালিককে যা দিতে হবে তার পরিমান বর্ণনাকারী স্মরণ রাখতে পারেন নি। [৪৫৪২] দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২২৪৪। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয করেছেনঃ এর বাকী অংশ মূসা বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। অতঃপর তিনি বলেন, খাদ্যদ্রব্যের মালিকদের জন্য যা (ফরয) করেছেন তা আমি স্মরণ রাখিনি। [৪৫৪৩] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভুলবশত হত্যার দিয়াত হলো বিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, বিশটি পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, বিশটি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, বিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী এবং বিশটি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী। এটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য। [৪৫৪৪] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বনী ‘আদীর এক ব্যক্তি নিহত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিয়াত নির্ধারণ করেন বারো হাজার দিরহাম। [৪৫৪৫] দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২২৪৫।

【19】

ইচ্ছাকৃত হত্যার সদৃশ-এর দিয়াত

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন ভাষণ দেয়ার সময় তিনবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলেন অতঃপর বললেন, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তিনি তাঁর অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই কাফিরদের পরাজিত করেছেন”। আমি এ পর্যন্ত মুসাদ্দাদ হতে মুখস্ত করেছি। অতঃপর উভয়ের বর্ণনা একই। “জেনে রাখো! জাহিলী যুগে কিসাসের ব্যাপারে যেসব বংশীয় মর্যাদার দাবি করা হতো তা আমার দুই পদতলে প্রোথিত। কিন্তু হাজ্জীদের পানি পান করানো ও কা’বা ঘরের খেদমতের নিয়ম আগের মত বহাল থাকবে।” অতঃপর তিনি বললেন, জেনে রাখো! ইচ্ছাকৃত হত্যার মতই ভুলবশত হত্যা যা চাবুক বা লাঠির আঘাতে হয়ে থাকে, এজন্য দিয়াত হিসেবে একশো উট দিবে, যার মধ্যে চল্লিশটি উট হবে গর্ভবতী। খালিদ (রহঃ) সূত্র এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদিস বর্ণিত। [৪৫৪৭] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিজয়ের দিন বা মাক্কাহ বিজয়ের সময় কা’বার দরজায় বা কা’বার চত্বরে ভাষণ দিলেন। [৪৫৪৮] দুর্বল : ইরওয়া হা/৭/২৫৭। মুজাহিদ (রহঃ) ইচ্ছাকৃত হত্যার সদৃশ-এর দিয়াত সম্পর্কে ‘উমার (রাঃ) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ত্রিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, ত্রিশটি পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী এবং চল্লিশটি এমন গর্ভবতী উষ্ট্রী যার বয়স ছয় হতে নয় এর মধ্যে রয়েছে। [৪৫৪৯] ‘আসিম ইবনু দমরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, ভুলবশত হত্যার দিয়াত তিন ধরনের: তেত্রিশটি চার বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, তেত্রিশটি পাঁচ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী এবং চৌত্রিশটি তিন বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী যা ছয় হতে নয় বছর বয়সী, দিয়াত হিসেবে ধার্য। [৪৫৫০] ‘আসিম ইবনু দামরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, ভুলবশত হত্যার দিয়াত চার ধরনের: চার বছরে পদার্পণকারী পঁচিশটি উষ্ট্রী, পাঁচ বছরে পদার্পণকারী পঁচিশটি উষ্ট্রী, তিন বছরে পদার্পণকারী পঁচিশটি উষ্ট্রী এবং দুই বছরে পদার্পণকারী পঁচিশটি উষ্ট্রী। [৪৫৫১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ইচ্ছাকৃত হত্যার সদৃশ (কত্লে শিব্হে আম্দ)-এর দিয়াত হলো : পঁচিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, পঁচিশটি পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, পঁচিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী ও পঁচিশটি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী। [৪৫৫২] উসমান ইবনু ‘আফফান ও যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্র তাদের মতে, কঠোর দিয়াত হচ্ছে: চল্লিশটি পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী গর্ভবতী উষ্ট্রী, ত্রিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী এবং ত্রিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী। আর ভুলবশত হত্যার দিয়াত হলো: ত্রিশটি চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, ত্রিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী, বিশটি তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উট এবং বিশটি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রী। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্র যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে কঠোর দিয়াত সম্পর্কে বর্ণিত। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরুপ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ ‘উবাইদ প্রমুখ বলেছেন, যখন কোন উষ্ট্রী চতুর্থ বছর বয়সে পদার্পণ করে তখন পুরুষ উটকে বলা হয় হিক্কুন এবং স্ত্রী উটকে বলা হয় হিক্কাতুন। কারণ, তখন ঐ উট বা উষ্ট্রী বাহনোপযোগী ও ভারবাহী পশুতে পরিণত হয়। যখন তা পঞ্চম বছরে পদার্পণ করে পুরুষটিকে জায্উন ও স্ত্রীটিকে জায্আতুন বলা হয়। যখন তা ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করে এবং তার উপর ও নীচের মাড়ির সামনের দিকে দু’টি করে মোট চারটি দাঁত পড়ে যায় তখন তাকে সানিয়ুন ও ছানিয়্যাতুন বলা হয়। যখন তা সপ্তম বছরে পদার্পণ করে তখন যথাক্রমে রাবাউন ও রাব’ইয়্যাহ বলা হয়। যখন তা অষ্টম বছরে পদার্পণ করে এবং সামনের চারটি দাঁতের পরবর্তী দাঁত পড়ে যায় তখন তাকে যথাক্রমে সাদীস্ ও সাদাস বলা হয়। যখন তা নবম বছরে পদার্পণ করে এবং তার দাঁত পুনরায় উঠে তখন তাকে বাযিল বলা হয়। আর যখন দশম বছরে পদার্পণ করে তখন তাকে মুখলিফ বলা হয়। এরপর নির্ধারিত কোন নাম নেই বরং এক বছর বেশী হলে বাযিলে ‘আম ও দু’বছরের বেশী হলে বাযিলে ‘আমাইন বলা হয়। অতঃপর এক বছর হলে মিখলাফে ‘আম ও দু’বছর হলে মিখলাফে ‘আমাইন বলা হয়, অতঃপর এভাবে নামকরণ করা হয়। নাদর ইবনু শুমাইল (রহঃ) বলেন, এক বছর হলে বিনতু মাখাদ্, দুই বছর হলে বিনতু লাবুন, তিন বছর হলে হিক্কাহ্, চার বছর হলে জাযা’আহ, পাঁচ বছর হলে সানিয়্যু, ছয় বছর হলে রাবা’, সাত বছর হলে সাদীস, আট বছর হলে বাযিল বলা হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ হাতিম ও আবূ আসমাঈ বলেন, জাযা’আহ্ হচ্ছে সময়, তা বয়স নয়। আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, কতিপয় বিশেষজ্ঞ বলেন, সম্মুখের দাঁত পড়ে গেলে বলা হয় রাবা’উন। আর মাড়ির দাঁত পড়ে গেলে বলা হয় সানী। আবূ ‘উবাইদ (রহঃ) বলেন, উষ্ট্রী গর্ভবতী হলে খালিফাহ বলা হয়। অতঃপর দশ মাসের পূর্ব পর্যন্ত তাকে খালিফাহ্ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন দশম মাসে পদার্পণ করে তখন তাকে ‘উশারা বলা হয়। আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, যখন উপর ও নীচের মাড়ির সামনের দু’টি করে দাঁত পড়ে যায় তখন তাকে সানিয়্যন বলা হয়। আর যখন চারটি দাঁত পড়ে যায় তখন তাকে বলা হয় রাবা’উন।

【20】

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিয়াত

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: (দিয়াতের ব্যাপারে) আঙ্গুলগুলো সমান। প্রত্যেক আঙ্গুলের দিয়াত হবে দশটি করে উট। আল-আশ’আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দিয়াতের ক্ষেত্রে আঙ্গুলগুলো সমান। আমি বললাম, দশটি দশটি করে? তিনি বললেন, হাঁ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এটা এবং ওটা সমান, অর্থাৎ বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলের দিয়াত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আঙ্গুল এবং দাঁতের (দিয়াত) সমান, সম্মুখের দাঁত ও চোয়ালের দাঁত সমান; এটাও ওটার সমান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দাঁতগুলো সমান এবং আঙ্গুলগুলোও সমান (পার্থক্য হবে না)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুল (এর দিয়াত) সমান হিসেবে ধার্য করেন। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে ভাষণদানকালে বলেন, আঙ্গুলগুলো দশটি দশটি করে (উট দিয়াত পাবে)। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতিটি দাঁতের দিয়াত হলো পাঁচটি উট। আমর ইবনু শু’য়াইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলবশত হত্যার অপরাধে গ্রামের অধিবাসীদের উপর চারশো দীনার অথবা এর সম-পরিমান আট হাজার রৌপ্য মুদ্রা ধার্য করতেন। আর তিনি মুদ্রার সংখ্যা নির্ধারিত করতেন উটের মূল্যকে ভিত্তি করে। অতএব উটের মূল্য বাড়লে দিয়াতের পরিমাণও বাড়বে আর দাম কমলে কিসাস বৃদ্ধি পেতো। আর উটের বাজার দর নিম্নগামী হলে দিয়াতের পরিমাণও কমে যেতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে তা বৃদ্ধি পেয়ে স্বর্ণমুদ্রা চারশো হতে আটশত পর্যন্ত উঠানামা করেছে এবং এর বিকল্প রৌপ্য মুদ্রা আট হাজার পর্যন্ত পৌছেছে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গরুর মালিকদের জন্য দুইশো গরু এবং ছাগলের মালিকদের জন্য দুই হাজার ছাগল দিয়াত ধার্য করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত ব্যাক্তির দিয়াত তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে মীরাস হিসেবে গণ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং আত্মীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে অর্থাৎ প্রথমে যাবিল ফুরূয ও তাদের নির্ধারিত অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট আসাবাগণ পাবেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদের্শ দিয়েছেন, নাকের দিয়াত হলো, তা সম্পূর্ণ কেটে বিচ্ছিন্ন করা হলে পূর্ণ দিয়াত, নাকের সম্মুখভাগ বা আংশিক কাটা হলে পূর্ণ দিয়াতের অর্ধেক পঞ্চাশটি উট বা তার মূল্য হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা অথবা রৌপ্য মুদ্রা বা একশো গরু বা এক হাজার ছাগল। আর যদি হাত কেটে ফেলা হয় তাহলে পূর্ণ দিয়াতের অর্ধেক এবং পা কাটার জন্যও অনুরূপ অর্ধেক দিয়াত। আর আঘাত মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছালে এক-তৃতীয়াংশ দিয়াতস্বরূপ তেত্রিশটি উট এবং একটি উটের মূল্যে তিন ভাগের এক ভাগ অথবা দিয়াতের বিনিময় মূল্য স্বর্ণ বা রৌপ্য বা গরু বা ছাগল দিয়ে আদায় করবে। আঘাত যদি পেটের ভেতরে পৌঁছে তাহলেও (এক-তৃতীয়াংশ) দিয়াত দেবে। প্রতিটি আঙ্গুলের দিয়াত দশটি উট এবং প্রতিটি দাঁতের দিয়াত পাঁচটি উট। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ দিয়েছেন, মহিলাদের অপরাধের দিয়াত তার সেসব আসাবা দিবে যারা যাবিল ফুরূযের অংশ দেয়ার পর সম্পূর্ণ সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, যেমন পুত্র, পিতা, চাচা, ভাই ইত্যাদি। আর যদি কোন মহিলা নিহত হয় তাহলে তার রক্ত মূল্য তার উত্তরাধিকারীগণ পাবে অথবা তারা তার হত্যাকারীকে হত্যা করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিস হবে না। যদি তার কোন যাবিল ফুরূয উত্তরাধিকারী না থাকে তাহলে যারা আত্মীয় সম্পর্কের দিক হতে নিকটতর তারা উত্তরাধিকারী হবে। আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ-এর দিয়াত ইচ্ছাকৃত হত্যার মতোই কঠোর হবে; অবশ্য ঘাতককে হত্যা করা যাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, খলীল আমাদেরকে ইবনু রাশিদ সূত্রে আরো বলেছেন: শয়তান মানুষের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ফলে অন্যের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা হয় এবং অস্ত্র ছাড়াই অসতর্কভাবে প্রাণহানি ঘটে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আঘাতের দরুন কোন অঙ্গের হাড় দৃশ্যমান হলে তার দিয়াত হবে পাচঁটি উট। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন, যদি আঘাতের কারণে চক্ষু স্থানচ্যুত না হয়ে জ্যোতি নষ্ট হয় তাহলে পূর্ণ দিয়াতের এক-তৃতীয়াংশ দিতে হবে।

【21】

ভ্রুণের দিয়াত সম্পর্কে

মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) হুযাইল গোত্রের এক লোকের দু’টি স্ত্রী ছিল। তাদের একজন অপরজনকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে তাকে ও তার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করে। বাদী-বিবাদী উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ পেশ করে। পক্ষদ্বয়ের একজন বললো, আমরা কি করে এমন ব্যক্তির দিয়াত আদায় করবো যে না চিৎকার করেছে, না খেয়েছে, না পান করেছে, আর না কেঁদেছে। তিনি বললেন, এ তো বেদুঈনদের গদ্য! তিনি গর্ভস্থ বাচ্চার দিয়াত হিসেবে একটি গোলাম দেয়ার জন্য আদেশ করেন এবং হত্যাকারী নারীর পিতৃ আত্নীয়দের উপর (দিয়াত) ধার্য করলেন। মানসূর (রহঃ) সূত্র এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তাতে আরো আছেঃ বর্ণনাকারী বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারিনীর পিতৃপক্ষীয় আত্নীয়দের উপর ধার্য করেছেন এবং নিহত মহিলার গর্ভে যে সন্তান ছিল তার দিয়াত হিসেবে একটি উত্তম দাস প্রদানের আদেশ দেন। আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) একদা ‘উমার (রাঃ) লোকদের কাছে মহিলাদের গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধ সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তখন মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি দাস অথবা দাসী (দিয়াত) প্রদানের আদেশ দেন। ‘উমার বললেন, আমার নিকট তোমার পক্ষে সাক্ষী দেয়ার মত একজন লোক নিয়ে এসো। অতঃপর তিনি মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)-কে আনলেন এবং তিনি তার পক্ষে সাক্ষী দিলেন। অর্থাৎ এক ব্যক্তি তার স্ত্রী পেটে আঘাত করেছিল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ ‘উবাইদ সূত্রে আমি জানতে পেরেছি, এই গর্ভপাতকে এজন্য ইমলাস বলা হয় যে, নারী গর্ভ খালাস হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গর্ভপাত করে। একইভাবে হাত হতে কোন জিনিস পড়ে যাওয়াকেও ইমলাস বলা হয়। সহীহ, তবে হারুন উল্লেখ বাদে। এর পূর্বের হাদীস দেখুন। ‘উমার (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু যায়িদ ও হাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়াহ হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘উমার (রাঃ) বলেন। [৪৫৭০] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেন। তখন হামাল ইবনু মালিক ইবনুন-নাবিগাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, একদা আমি দু’জন মহিলার নিকট উপস্থিত ছিলাম। তাদের একজন অপরজনকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করলে সে ও তার গর্ভস্থ শিশু মারা যায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গর্ভস্থ সন্তানের বিনিময়ে একটি উৎকৃষ্ট গোলাম প্রদানের নির্দেশ দেন, যদিও হত্যাকারিনীকে হত্যা করা হয়। তাঊস (রহঃ) একদা উমার (রাঃ) মিম্বারে দাঁড়ালেন .... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তবে এতে “তাকে হত্যা করা হবে” কথাটি নেই। এরপর উৎকৃষ্ট গোলাম বা দাসীর কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহু আকবার, আমি হাদীস না শুনলে তো ভিন্ন নির্দেশ দিয়ে ফেলতাম। [৪৫৭২] হামাল ইবনু মালিকের কিস্সা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, সে একটি মৃত ছেলে সন্তান জন্ম দিলো, যার (মাথায়) চুল ছিল। মহিলাটিও মারা যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যাকারিনীর পিতৃ পক্ষীয় আত্নীয়দেরকে দিয়াত দেয়ার আদেশ দেন। তার চাচা বললেন, হে আল্লাহর নাবী! সে এমন একটি ছেলে প্রসব করেছে যার মাথায় চুল গজিয়েছে মাত্র। আর হত্যাকারিনীর পিতা বললো, নিশ্চয়ই সে মিথ্যা বলছে। আল্লাহর কসম! সে না চিৎকার করেছে, না আহার করেছে। অতএব এ ধরনের হত্যায় জরিমানা হয় না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা কি জাহিলিয়াতের ছন্দোময় বক্তৃতা ও গণকের মন্ত্র? শিশুটির বিনিময়ে একটি গোলাম দাও। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাদের দু’জনের একজনের নাম ছিল মুলাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উম্মু গুতাইফ। [৪৫৭৩] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) হুযাইল গোত্রের দুই নারীর একজন অপরজনকে হত্যা করে, আর উভয়েরই স্বামী-সন্তান ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারিনীর পিতৃপক্ষীয় আত্নীয়দের উপর সোপর্দ করেন এবং তার স্বামী ও সন্তানদেরকে দায়মুক্ত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর (কিসাসে) নিহত মহিলার আত্নীয়রা বললো, আমরা তার উত্তরাধিকার হবো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, তার উত্তরাধিকারের অংশীদার হবে তার স্বামী ও সন্তান। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হুযাইল গোত্রের দু‘জন মহিলা পরস্পরে মারামারি কালে একজন অপরজনকে পাথর ছুঁড়ে মেরে হত্যা করে। অতঃপর উভয়ের অভিভাবক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বিচার প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গর্ভস্থ শিশুর দিয়াত হিসেবে একটি মূল্যবান দাস বা দাসী প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারিনীর গোত্রের লোকজনের উপড় ধার্য করে দেন এবং দিয়াতের উত্তরাধিকারী বানান নিহতের সন্তান ও তার সঙ্গের অন্যান্য অংশীদারকে। ফলে হুযাইল গোত্রের হামাল ইবনু মালিক ইবনু নাবিগাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! পানাহার করেনি, কথাও বলেনি, চিৎকারও দেয়নি, এমন শিশুর দিয়াত কিভাবে আমরা পরিশোধ করবো। এরূপ ক্ষেত্রে জরিমানা বৃথা। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে যেভাবে ছন্দোবদ্ধ বক্তব্য রেখে যাচ্ছে মনে হচ্ছে সে গণকের ভাই। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র অনুরূপ ঘটনা বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ দন্ডিত মহিলা, যার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি দাস দিয়াত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন, দন্ডিতার সন্তানরা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে এবং তার দিয়াত আদায় করবে তার আত্মীয়রা। আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র একদা জনৈক মহিলা অপর এক মহিলার উপর পাথর ছুঁড়ে মারলে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পেশ করা হলে তিনি সন্তানের দিয়াত ধার্য করেন পাঁচশো ছাগল এবং ঐ দিনই পাথর নিক্ষেপ করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটিতে পাঁচশো ছাগলের উল্লেখ আছে, কিন্তু সঠিক হলো একশো ছাগল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আব্বাস এরুপই বলেছেন এবং এটা ভুল ধারনা মাত্র। [৪৫৭৭] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গর্ভস্থ ভ্রুণের ক্ষতিসাধনের জরিমানা ধার্য করেন একটি উত্তম দাস বা দাসী অথবা একটি ঘোড়া বা একটি খচ্চর। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) হতে হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ও খালিদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)-ও বর্ণনা করেছেন। তবে তারা ঘোড়া ও খচ্চরের কথা উল্লেখ করেননি। [৪৫৭৮] আশ-শাবী (রহঃ) তিনি বলেন, আল্-গুররাহ হলো পাঁচশো দিরহাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, রবী’আহ বলেছেন, গুররাহ হলো পঞ্চাশ দীনার।

【22】

চুক্তিবদ্ধ দাসের দিয়াত

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নিহত মুকাতাব গোলামের দিয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মুকাতাব তার নির্ধারিত মুক্তিপণ হতে যে পরিমাণ অর্থ আদায় করেছে সে পরিমাণ স্বাধীন ব্যক্তির সমান দিয়াত হিসেবে আদায় করবে এবং বাকি অংশ গোলামের দিয়াতের পরিমাণে হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মুকাতাব গোলাম হাদ্দ- এর অপরাধে অভিযুক্ত হলে বা মৃতের ওয়ারিস হলে সে তার মুক্ত হওয়ার অংশের অংশীদার হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস উহাইব (রহঃ) আইয়ূব হতে, তিনি ইকরিমা হতে, তিনি আলী হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে হাম্মাদ ইবনু যায়িদ ও ইসমাঈল (রহঃ) আইয়ূব হতে, তিনি ‘ইকরিমা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। ইসমাঈল ইবনু উলাইয়্যাহ একটিকে ইকরিমার (রহঃ) বক্তব্য গন্য করেছেন।

【23】

যিম্মীর দিয়াত

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ)হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জিম্মির দিয়াত স্বাধীন ব্যক্তির দিয়াতের অর্ধেক।

【24】

কেউ কারো সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে তাকে প্রতিহত করলে

সাফওয়ান ইবনু ইয়া’লা (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমার এক কর্মচারী এক লোকের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হলে লোকটি তার হাত কামড়িয়ে ধরে এবং সে টান দিয়ে তার হাত ছাড়িয়ে আনলে তার সামনের পাটির দাঁত পড়ে যায়। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ নিয়ে এলে তিনি তার মামলা খারিজ করে দেন এবং বলেন: তুমি কি চাও যে, সে তার হাত তোমার মুখে পুড়ে রাখুক আর তুমি তা উটের মতো চিবোতে থাকো? বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রহঃ) তার দাদার সূত্রে আমাকে জানিয়েছেন, আবূ বাকর (রাঃ)-ও অনুরূপ ঘটনার দিয়াতের দাবি বাতিল করেছেন এবং বলেন, তার দাঁত পড়ে গেল। ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রহঃ) সূত্র অনুরূপ বর্ণিত। এতে আরো আছে: অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার ইচ্ছা হলে তুমিও তার মুখে হাত দাও আর সে চিবাতে থাকুক। তারপর তুমি তার মুখ হতে তা বের করে আনো। অতঃপর তিনি তার দাঁতের দিয়াতের দাবি বাতিল করেন।

【25】

অজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হলে

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: চিকিৎসা বিদ্যাহীন ব্যক্তি চিকিৎসা করলে তাতে সে দায়ী হবে। নাদর (রহঃ) বলেন, ইবনু জুরাইজ (রহঃ) হাদীসটি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ওয়ালীদ একাই বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সহীহ কিনা তা আমরা জানি না। আবদুল আযীয ইবনু উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) আমার পিতার নিকট যেসব প্রতিনিধি দল এসেছিল তাদের কেউ কেউ আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যেসব ডাক্তার চিকিৎসা শাস্ত্র সর্ম্পকে জ্ঞান রাখে না, তারা যদি কোন গোত্রের চিকিৎসা করে এবং এর ফলে রোগীর ক্ষতি হয় তাহলে সে এজন্য দায়ী হবে। আবদুল আযীয (রাঃ) বলেন, তবে সাধারনভাবে ডাক্তার দায়ী হবে না, বরং শিরা উন্মুক্ত করা, অস্ত্রপচার করা ও উত্তপ্ত লোহার সেঁক দেয়া ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে।

【26】

ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ ভুলবশত হত্যার দিয়াত

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন ভাষণ দেয়ার সময় তিনবার “আল্লাহ আকবার” বলার পর বলেন, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহা নেই, তিনি এক, তিনি তাঁর ওয়াদাকে বাস্তবায়িত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই (কাফিরদের) দলগুলোকে পরাজিত করেছেন।” আমি এ পর্যন্ত মুসাদ্দাদ হতে মুখস্ত করেছি। অতঃপর উভয়ের বর্ণনা মিলে গেছে। “জেনে রাখো! অন্ধকার যুগে কিসাসের ব্যাপারে যেসব বংশীয় মর্যাদার দাবি করা হতো তা আমার দুই পদতলে প্রোথিত। কিন্তু হাজ্জীদের পানি পান করানো ও কা’বা ঘরের খেদমতের প্রথা আগের মতো বহাল থাকবে। অতঃপর তিনি বলেন, জেনে রাখো! ইচ্ছাকৃত হত্যা সদৃশ হলো ভুলবশত নরহত্যা যা চাবুক বা লাঠির আঘাতে হয়ে থাকে, এজন্য একশো উট দিয়াত দিতে হবে যার মধ্যে চল্লিশটি উষ্ট্রী হবে গর্ভবতী। খালিদ (রহঃ) সূত্র এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরুপ হাদীস বর্ণিত। [৪৫৮৮] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।

【27】

গরীব মালিকের ক্রীতদাসের অপরাধ

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) একদা এক দরিদ্র ব্যক্তির গোলাম অপর এক ধনী লোকের গোলামের কান কেটে ফেললো। অতঃপর তার পরিবারের লোকেরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো গরীব। অতএব তিনি তার উপর কোন কিছুই ধার্য করেননি।

【28】

কওমের পারস্পরিক সংঘাতে কেউ নিহত হলে

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন ব্যক্তি অজ্ঞাতভাবে নিহত হলে বা লোকজনের পাথর নিক্ষেপের সময় তার আঘাতে বা চাবুকের আঘাতে নিহত হলে ভূলক্রমে হত্যার দিয়াত প্রযোজ্য। আর যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়, তার হত্যার কিসাস কার্যকর হবে। কেউ এতে বাধা দিলে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সকল মানুষের অভিশাপ।

【29】

পশু যদি পা দিয়ে লাথি মারে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জীবজন্তুর আঘাত ক্ষমাযোগ্য। খনির দুর্ঘটনা বৃথা। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, পশুর পিঠে আরোহী অবস্থায় তা কাউকে পদাঘাত করলে (তা মাফ)। [৪৫৯১] দুর্বল: ইরওয়া হা/১৫২৬।

【30】

নির্বাক জন্তু, খনি ও কূপ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নিষ্ফল

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: চতুষ্পদ জন্তু আহত করলে তা কিসাসযোগ্য নয়, খনিতে চাপা পড়ে ও কূপের মধ্যে পড়ে মারা গেলে নিহত ব্যক্তির রক্তমূল্য ক্ষমা এবং মাটির নীচে প্রাপ্ত সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ (সরকারকে) দিতে হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, জন্তু যদি দিবাভাগে মাঠে চরাকালে আহত করে এবং সঙ্গে রাখাল না থাকে তাহলে মাফ, কিন্তু এরূপ রাতেরবেলা সংঘটিত হলে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়।

【31】

আগুন ছড়িয়ে পড়া সর্ম্পকে

আবূ হূরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আগুনে ক্ষতিপূরন নেই (দূর্ঘটনাক্রমে আগুন ছড়িয়ে পড়লে)।

【32】

দাঁতের কিসাস সর্ম্পকে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আনাস ইবনুন নাদরের (রাঃ) বোন রুবাই (রাঃ) এক মহিলার সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন। তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলে তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে কিসাসের হুকুম দেন। আনাস ইবনুন নাদর (রাঃ) বললেন, আপনাকে যে পবিত্র সত্তা সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আজ তার দাঁত উপড়ে ফেলবেন না। তিনি বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ হলো কিসাস। এরপর বিবাদী পক্ষ দিয়াত গ্রহনে রাযী হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে অবাক হয়ে বললেন, আল্লাহর কিছু বান্দা আছে, তারা আল্লাহর উপর কসম করলে আল্লাহ তাদের কসমকে পূর্ন করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বালের (রহঃ) নিকট শুনেছি, তাকে প্রশ্ন করা হলো, দাঁতের কিসাস সর্ম্পকে। তিনি বলেন, এক ফালি কাঠ দ্বারা তা ভেঙে দিতে হবে।