43. শিষ্টাচার
নবী রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহনশীলতা ও চরিত্র সম্পর্কে
আনাস (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চরিত্রের দিক হতে সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে কোনো দরকারে পাঠালেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম ! আমি যাবো না। কিন্তু আমার অন্তরে ছিলো যে, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে যে প্রয়োজনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে যাবো। আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি রওয়ানা হয়ে বাজারে খেলাধুলারত বালকদের কাছ দিয়ে যেতে খেলায় লিপ্ত হলাম। হঠাৎ পিছন দিক হতে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আমার ঘাড় ধরলেন। পিছন দিকে ফিরে দেখি তিনি হাসছেন। তিনি বললেন, হে উনাইস ! আমি তোমাকে যেখানে যেতে বলেছি তুমি সেখানে যাও। আমি বললাম , হে আল্লাহর রাসুল ! হ্যাঁ , এইতো যাচ্ছি। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম ! আমি সাত বছর অথবা নয় বছর তাঁর খেদমত করেছি ; কিন্তু আমার মনে পড়ছে না যে , তিনি আমার কোনো কাজের জন্য আমাকে বলেছেনঃ তুমি এটা কেনো করলে? অথবা কোনো কাজ না করলে তিনি আমার কৈফিয়ত তালাশ করেননি, এ কাজ কেনো করলে না। [৪৭৭২] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনাহয় আমি দশ বছর যাবৎ নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমত করেছি। তখন আমি বালক ছিলাম। সব কাজ আমার মালিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে করতে পারিনি। সেজন্য তিনি আমার প্রতি কখনো মনক্ষুন্নতা প্রকাশ করেননি এবং কখনো আমাকে বলেননি, তুমি এটা কেন করলে অথবা এটা কেন করলে না। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে মাসজিদে বসে কথাবার্তা বলতেন। অতঃপর তিনি উঠে গেলে আমরাও দাড়াঁতাম এবং তিনি তাঁর কোন স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম। একদিন তিনি আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন এবং তিনি দাঁড়ালে আমরাও তার সঙ্গে দাঁড়ালাম। দেখলাম যে, জনৈক বেদুঈন তাকে নাগালে পেয়ে তাঁর চাদরটা ধরে এমন টান দিলো যে, তাঁর ঘাড় লাল হয়ে গেলো। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন তার চাদরটা ছিলো খসখসে। তিনি ফিরে তাকালেন। বেদুঈন তাকে বললো, এ দুই উটের বোঝা পরিমান খাদ্য আমাকে দাও। কারন তুমি তো তোমার নিজের সম্পদ হতেও দিচ্ছো না আর তোমার বাবার সম্পদ হতেও দিচ্ছো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি ; না, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি ; না, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি আমাকে যে জোরে টান দিয়েছো, তুমি তোমার উপর আমাকে তার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ না দেয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে কিছুই দিবো না। বেদুঈন বারবার বলছিলো, আল্লাহর কসম ! আমি আপনাকে তার প্রতিশোধ নেবার সুযোগ দিবো না। অতঃপর বর্ণনাকারী এ হাদীস বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি একটি লোককে ডেকে এনে বললেনঃ তার এ দুই উটের একটিতে যব এবং ওপরটিতে খেজুর বোঝাই করে দিয়ে দাও। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর কল্যান নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো। [৪৭৭৪]
আত্নমর্যাদাবোধ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম পথ , গাম্ভীর্যপূর্ণ উত্তম আচরণ এবং পরিমিতিবোধ নবুওয়্যাতের পচিশঁ ভাগের এক ভাগ।
যে ব্যাক্তি রাগ সংবরণ করে
সাহল ইবনু মু’আয (রাঃ) হতে তাঁর পিতা নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তাঁর রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্বেও সংযত থাকে, ক্বিয়ামাদের দিন আল্লাহ তাকে সকল সৃষ্টিকুলের মধ্য হতে ডেকে নিবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য হতে তাঁর পছন্দমত যে কোন একজনকে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিবেন। [৪৭৭৬] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জনৈক সাহাবীর পুত্র হতে তার পিতার সুত্র তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ---পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তারপর আখিরাতে আল্লাহ তাকে ডাকবেন, এর স্হানে বলেন, আল্লাহ তাকে শাস্তি ও ঈমানের দ্বারা পরিপূর্ণ করবেন। তারপর বলেন যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সৌন্দর্যবর্ধক পোশাক পরা হতে বিরত থাকে এবং বর্ণনাকারী বিশর বলেন, আমার ধারনা তিনি নম্রতা পরিত্যাগের কথা বলেছেন , আল্লাহ তাকে সন্মানের পোশাক পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিবাহ করবে আল্লাহর তাকে রাজমুকুট পরিধান করাবেন। ৪৭৭৭ দূর্বল। মিশকাত হা / ৫০৮৯। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন একদা রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তিকে তোমরা বড় বীর মনে করো? সাহাবীগন বললেন, যাকে কেউ যুদ্ধে হারাতে পারে না। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না , বরং প্রকৃত বীর হলো সেই ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।
ক্রোধের সময় যা বলতে হয়
মু’আয ইবনু জালাল (রাঃ) তিনি বলেন , দুই ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে পরস্পরকে গালি দিতে লাগলো। তাদের একজন এতটা রাগাম্বিত হলো যে, মনে হচ্ছিল, রাগের প্রচন্ডতায় তার নাক ফেটে যাবে। রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এমন একটি বাক্য জানি যা বললে রাগের প্রতিক্রিয়া চলে যাবে। তখন মু’আয (রাঃ) বললেন , হে আল্লাহর রাসুল ! তা কি? তিনি বললেন, “ সে বলবে : হে আল্লাহ ! আমি আপনার নিকট অভিশপ্ত শয়তান হতে আশ্রয় চাইছি।“ আবদুর রহমান বলেন, তখন মু’আয (রাঃ) তাকে তা পরার তাকিদ দিতে থাকলেন। কিন্তু সে তা পরতে সম্মত হলো না এবং ঝগড়া করতে থাকলো এবং তার রাগ আরো বৃদ্ধি পেলো।৪৭৭৯ দূর্বল। সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) তিনি বলেন , দুই ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে পরস্পরকে গালি দিতে লাগলো। তাদের একজনের চোখ লাল হতে থাকে ও ঘাড়ের রগ মোটা হতে থাকে। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি অবশ্যই এমন একটি বাক্য জানি এ ব্যক্তি তা বললে নিশ্চয়ই তার রাগ চলে যাবে। তা হলো : অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইছি। লোকটি বললো, আপনি কি আমার পাগল ভাব দেখছেন! আবু যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারোর যদি দাড়াঁনো অবস্হায় রাগের উদ্রেক হয় তাহলে সে যেন বসে পরে। এতে যদি তার রাগ দুর হয় তো ভালো, অন্যথায় সে যেনো শুয়ে পরে। বাকর (র) একদা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু যার (রাঃ) কে ডেকে পাঠালেন। .... অতঃপর উপরোক্ত হাদীস। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, দু’টি হাদীসের মধ্যে এটি অধিক সহীহ। আবু ওয়াইল আল-ক্বাস (রহঃ) তিনি বলেন , একদা আমরা ‘উরওয়াহ ইবনু মুহাম্মাদ আস-সা’দীর নিকট গেলাম। তখন এক ব্যক্তি তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে তাকে রাগিয়ে দিলো। অতএব তিনি দাঁড়ালেন এবং উযু করলেন। অতঃপর বললেনঃ আমার পিতা আমার দাদা ‘আত্বিয়্যাহ (র) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাগ হচ্ছে শয়তানী প্রভাবের ফল। শয়তানকে আগুন হতে সৃস্টি করা হয়েছে। আর আগুন পানি দিয়ে নিভানো যায়। অতএব তোমাদের কারো রাগ হলে সে যেন উযু করে নেয়।৪৭৮৩ দূর্বল।
ক্ষমা করা ও অপরাধ উপেক্ষা করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন যখনে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দু’টি কাজের যে কোন একটি গ্রহনের স্বাধীনতা দেয়া হতো তখন তিনি দু’টির মধ্যে সহজতরটি গ্রহন করতেন, যদি না তা পাপ কাজ হতো। আর যদি তা পাপ কাজ হতো তবে তিনি তা হতে অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দুরে থাকতেন। রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ নেন নি। কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত সীমারেখা বা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর জন্য অবশ্যই তার প্রতিশোধ নিতেন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাদেমকে এবং কোন মহিলাকে মারধর করেনেনি। ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ), মহান আল্লাহ্র এ বাণী “তুমি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো” (সূরাহ আল-আ‘রাফ : ১৯৯)- সম্পর্কে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা ক্ষমা করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
লোকজনের সঙ্গে উত্তমরূপে বসবাস করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন ব্যক্তির কোন বিষয়ে জানানো হলে তিনি এভাবে বলতেন না : তার কি হলো যে, সে একথা বলে? বরং তিনি বলতেন, লোকজনের কি হলো যে, তারা এই এই বলে। আনাস (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলো, তখন তার শরীরে হলুদ রং-এর আলামত ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো মুখের উপর তার দোষ-ত্রুটি নির্দেশ করতে সংকোচবোধ করতেন। তাই লোকটি যখন চলে যেতে লাগলো তখন তিনি বললেন, তোমরা যদি এ ব্যক্তিকে তার চেহারার ঐ রং ধুয়ে ফেলতে বলতে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সাল্ম ‘আলী (রাঃ) বংশীয় নন। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা করতেন। তিনি ‘আদী ইবনু আরত্বাত (রাঃ)-এর সামনে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলে তিনি তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেননি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, গোত্রের কতই না খারাপ লোক। অতঃপর তিনি বললেন, আসতে দাও। যখন সে ভিতরে এলো তখন তার সঙ্গে তিনি নম্রভাবে কথা বললেন। (সে চলে গেলে) ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি এ ব্যক্তির সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন, অথচ ইতিপূর্বে আপনি তার সম্পর্কে অন্য রকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বললেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্র নিকট ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ, যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! সবচেয়ে খারাপ মানুষ তারাই যাদেরকে মানুষ তাদের জিহবার অনিষ্ট হতে আত্নরক্ষার জন্য সম্মান করে। [৪৭৯১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন ব্যক্তি এসে কানে কানে কথা বললে সে তার কান না সরানোর পূর্বে তাঁকে কখনো নিজের কান সরিয়ে নিতে দেখিনি। আর কোন ব্যক্তি তার হাত ধরলে যতোক্ষণ সে হাত না ছাড়তো ততোক্ষণ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত সরাতেন না। আয়িশাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ গোত্রের নিকৃষ্ট ভাই। অতঃপর লোকটি প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেন। লোকটি চলে গেলে আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! লোকটি যখন প্রবেশের জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছিল আপনি তখন তার সম্পর্কে বলেছিলেন, গোত্রের নিকৃষ্ট ভাই; কিন্তু প্রবেশ করলে আপনি তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! মহান আল্লাহ্ অশালীন ভাষীকে ভালবাসেন না।
লজ্জাশীলতা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তার ভাইকে লজ্জাশীলতার কারণে তিরস্কার করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একে ছেড়ে দাও; কেননা লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অঙ্গ। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘লজ্জার সবটুকুই কল্যাণকর’। অধঃস্তন বর্ণনাকারী বুশাইর ইবনু কা‘ব বলেন, আমরা কতিপয় গ্রন্থে দেখতে পাই যে, লজ্জা দ্বারা প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য অর্জন হয় এবং তাতে দুর্বলতাও সৃষ্টি হয়। ‘ইমরান (রাঃ) হাদীসটি পুনরায় বললেন। বুশাইরও তার কথার পুনরোক্তি করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এতে ‘ইমরান (রাঃ) রাগান্বিত হলেন, ফলে তার দুই চোখ লাল হয়ে গেলো। তিনি বলেন, আমি তোমার নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বলছি আর তুমি এর বিপরীতে তোমার কিতাবের কথা উল্লেখ করছো। আবূ ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমরা বললাম, হে আবূ নুজাইদ! থামো থামো। [৪৭৯৪] আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্বযুগের নাবীগণের যে কথাটি মানুষের নিকট পৌঁছেছে তা হলোঃ যখন তুমি নির্লজ্জ হবে তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।
উত্তম চরিত্র সম্পর্কে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভাল চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদগুজারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। আবূ দারদা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মীযানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই। আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার। হারিসাহ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাওয়ায ও জা’যারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, জাওয়ায অর্থ অসভ্য।
কাজে কর্মে অহংকার দেখানো অপছন্দনীয়
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আদবাকে (নবীজীর উষ্ট্রীকে) পরাজিত করা যেতো না। একদা এক বেদুঈন তার একটি মাদী উষ্ট্রী নিয়ে এসে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাতে বিজয়ী হলে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ মনঃক্ষুন্ন হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন কিছুর চরম উন্নতি অর্জনের পর আবার অবনতির দিকে প্রত্যাবর্তিত করা আল্লাহর চিরন্তন নীতি। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পৃথিবীর কোন বস্তু উন্নতির শিখরে পৌছার পর সেটিকে অবনত করা মহান আল্লাহর বিধান।
চাটুকারিতা নিন্দনীয়
হাম্মাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি এসে ‘উসমান (রাঃ)-এর সামনে তার প্রশংসা শুরু করলে মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) মাটি তুলে নিয়ে তার মুখমন্ডলে ছুরে মারলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা চাটুকারদের সাক্ষাৎ পেলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকরাহ (রহঃ) হতে তার পিতা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে অন্য এক লোকের প্রশংসা করলে তিনি লোকটিকে তিনবার বলেন, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গলা কেটে দিলে। অতঃপর তিনি বললেন, যদি তোমাদের কেউ একান্তই তার সঙ্গীর প্রশংসা করতে চায়, তাহলে সে যেন বলে, আমি তাকে এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহর নিকট তাকে নির্দোষ মনে করি না। মুত্বাররিফ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বনী ‘আমরের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গেলাম। আমরা বললাম, আপনি আমাদের নেতা। তিনি বললেন, প্রকৃত নেতা হলেন বরকতময় মহিয়ান আল্লাহ। আমরা বললাম, আপনি মর্যাদার দিক হতে আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দানের বিশালতায় আপনি মহান। তিনি বললেন, তোমাদের এ কথা তোমরা বলতে পারো, অথবা তোমাদের এরূপ কিছু বলায় কোন সমস্যা নেই। তবে শয়তান যেন তোমাদেরকে তার প্রতিনিধি না বানায়।
বিনয় ও নম্রতা সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্র স্বভাবের লোককে যা দান করেন তা কঠিন স্বভাবের লোককে দান করেন না। আল-মিক্বদাম ইবনু শুরাইহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে মরুভূমিতে বসবাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মরুভূমিতে এ ঝর্ণার দিকে যেতেন। তিনি একদা মরুভূমিতে সফরের সিদ্ধান্ত নেন এবং আমার নিকট বাহন হিসেবে তখনও অব্যবহৃত যাকাতের একটি উষ্ট্রী পাঠালেন। তিনি আমাকে বললেন, হে ‘আয়িশাহ! (উষ্ট্রীর সাথে) নম্র আচরণ করো। কারণ কোন কিছুর মধ্যে নম্রতা বিদ্যমান থাকলে তা সেটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে। আর কোন কিছু হতে তা অপসারণ করা হলে তা সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে সকল প্রকার কল্যান হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। মুস’আর ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আখিরাতের আমল ছাড়া পার্থিব সকল ব্যাপারেই তাড়াহুড়া পরিহার করতে হবে।৪৮০৮
অনুগ্রহ প্রদর্শনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথবা যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ। আনাস (রাঃ) একদা মুহাজিরগণ, হে আল্লাহর রাসূল! আনসারগণ তো সব নেকী নিলেন। তিনি বললেনঃ না, যতোক্ষণ তোমরা আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দু’আ করবে ও তাদের প্রশংসা করবে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাউকে কিছু দান করা হলে সে যেন সামর্থ্য থাকলে তার প্রতিদান দেয়। যদি সেই সামর্থ্য না থাকে তবে সে যেন তার প্রশংশা করে। সে তার প্রশংসা করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি তা গোপন রাখলো সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি অনুদান পেয়ে দানকারীর প্রশংসা করলো সে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো আর যে ব্যক্তি অনুদান গোপন করলো সে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা দেখালো।
রাস্তার পাশে বসা সম্পর্কে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে না বসে আমাদের উপায় নেই। আমরা তথায় (বসে) আলোচনা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি তোমাদের একান্তেই বসতে হয় তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ নিষেধ করা। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এবং (রাস্তার হক হলো পথ হারাকে) পথ দেখানো। জাবির ইবনু হাযেম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে আরো বলতে শুনেছি; বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে এবং পথহারাকে পথ দেখাবে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট একটি প্রয়োজনে এসেছি। তিনি বললেন, হে অমুকের মা! তোমার সুবিধা মতো রাস্তার যে কোন গলিপথে বসো এবং আমি তোমার নিকট বসে তোমার দরকার পূরণ করবো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহিলাটি বসলো এবং নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও বসে থাকলেন যাবত না তার প্রয়োজন পূরণ হলো। আনাস (রাঃ) এক নারীর বুদ্ধিতে কিছুটা জড়তা ছিল। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত।
মাজলিসের বসার জায়গা প্রশস্ত করা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, বসার জন্য উত্তম হলো চওড়া স্থান।
রোদ ও ছায়ার মাঝামাঝি বসা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবুল ক্বাসিম (রাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রোদে বসা অবস্থায় সেখানে ছায়া এলে তার দেহের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় পড়ে গেলে সে যেন সেখান হতে উঠে যায়। ক্বাইস (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুত্ববাহ দেয়া অবস্থায় রোদে এসে দাঁড়ালেন। তখন তিনি তাকে আদেশ দিলে তাকে ছায়ায় আনা হয়।
গোল হয়ে বসা সম্পর্কে
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবীগণ বিক্ষিপ্তভাবে এক এক স্থানে কয়েকজন করে মাসজিদের মধ্যে গোলাকার হয়ে বসা ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে বললেন, আবার কি হলো, আমি যে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি! আ’মাশ (রহঃ) উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন তাঁদের ঐক্যবদ্ধভাবে বসাকে পছন্দ করেছেন। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসতাম, তখন আমাদের যে কোন ব্যক্তি সভার প্রান্তের খালি জায়গায় বসতো।
বৃত্তের মাঝখানে বসা
হুযাইফাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃত্তের মাঝখানে গিয়ে উপবেশনকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন।৪৮২৪ দুর্বল।
অন্যকে বসতে দেয়ার জন্য নিজের স্থান হতে উঠে যাওয়া
সাঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, সাক্ষী দেয়ার জন্য আবূ বাকরাহ (রাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। তখন তার জন্য জনৈক ব্যক্তি তার স্থান ছেড়ে দাঁড়ালো। কিন্ত তিনি সেখানে বসতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, কোন লোক যেন তার হাত এমন কাপড়ে না মোছে যা তাকে দেয়া হয়নি।৪৮২৫ দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৭০১। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলে অন্য লোক তার জন্য তার স্থান হতে উঠে দাঁড়ালো। সে সেখানে বসার জন্য যেতে থাকলে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বারণ করলেন।
যার সংস্পর্শে বসা উচিত
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুমিন কুরআন পড়ে তার উদাহরণ হলো কমলা-লেবু, যার ঘ্রাণ স্নিগ্ধ এবং স্বাদ উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হলো খেজুর, যা সুস্বাদু কিন্তু ঘ্রাণহীন। আর যে গুনাহগার ব্যক্তি কুরআন পড়ে তার উদাহরণ লতাগুল্ম, যার ঘ্রাণ স্নিগ্ধ কিন্তু স্বাদ তিক্ত। পক্ষান্তরে, যে গুনাহগার ব্যক্তি কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হানযালা বৃক্ষের ফল, যার স্বাদ তিক্ত কিন্তু গন্ধ নেই। আর সৎলোকের সংসর্গ হলো কস্তুরী বিক্রেতার সদৃশ, তুমি কস্তুরী না পেলেও তার সুবাস পাবে এবং অসৎ লোকের সংসর্গ হলো কামারের সদৃশ। যদিও কালি ও ময়লা না লাগে, তবে ধুমা হতে রক্ষা পাবে না। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আবূ সাঈদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আত্মাসমূহ দলবদ্ধ ছিল। যার সঙ্গে পরিচয় ছিল তার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় এবং যাদের মধ্যে পরিচয় ছিল না তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকে।
ঝগড়া করা নিন্দনীয়
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন তখন তাকে নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা লোকদেরকে সুসংবাদ দিবে, দূরে ঠেলে দিবে না, আর সহজ করবে, কঠিন করবে না। আস-সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তখন সাহাবীরা আমার প্রশংসা করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ আমি তার সম্বন্ধে তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞাত। আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি সত্য বলেছেন, আপনি আমার (সফর) সঙ্গী ছিলেন। আপনি কতো উত্তম সঙ্গী! আপনি না আমার বিরোধিতা করছেন; আর না আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছেন।
কথা বলার আদব-কায়দা
ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলাপকালে প্রায়ই চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকাতেন। [৪৮৩৫] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৭৬৮। মিস‘আর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একজন শাইখকে মাসজিদের মধ্যে বলতে শুনেছি, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট ও ধীর গতিসম্পন্ন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট, প্রত্যেক শ্রোতাই তাঁর বক্তব্য বুঝতে পারতো আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব বক্তব্য আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে শুরু করা হয় না তা হয় পঙ্গু। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি ইউনুস...যুহরী (রহঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন।৪৮৩৮ দুর্বলঃ ইরওয়া হা/২।
খুত্ববাহ সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে বক্তৃতায় আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সাক্ষ্য থাকে না তা পঙ্গু হাতের ন্যায়। [৪৮৩৯]
লোকদের সাথে পদমর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করা
মাইমূন ইবনু আবূ শাবীব (রহঃ) একদা এক ভিক্ষুক ‘আয়িশাহর (রাঃ) নিকট এলে তিনি তাকে এক টুকরা রুটি দিলেন এবং পোষাক পরিহিত সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট আরেক ব্যক্তি এলে তিনি তাকে বসালেন এবং খেতে দিলেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মানুষের সঙ্গে তাদের মর্যাদা অনুযায়ী আচরণ করো। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মাইমূন (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর সাক্ষাৎ পাননি।৪৮৪০ দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৮৯৪। আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।৪৮৪১
দুই ব্যক্তির মাঝে তাদের অনুমতি ছাড়া বসা সম্পর্কে
‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা এবং তার দাদার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ দু’ব্যক্তির মাঝখানে বসবে না। [৪৮৪২] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উভয়ের অনুমতি ছাড়া (একত্রে বসা) দুই ব্যক্তিকে পৃথক করা কারোর জন্য বৈধ নয়
কিভাবে বসা উচিৎ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাটুদ্বয় খাড়া করে তা স্বীয় হাত দ্বারা পেঁচিয়ে ধরে বসতেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইবরাহীম হাদীস শাস্ত্রে প্রত্যাখ্যাত ক্বাইলাহ বিনতু মাখরামাহ (রাঃ) তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর হাঁটুদ্বয় খাড়া করে তা দুই হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে বসতে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিনীতভাবে বসা দেখে ভয়ে শিউরে উঠি
দৃষ্টিকটুভাবে বসা
শারীদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) হতে তার পিতা শারিদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) এর সূত্র তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি তাদের মতো বসছো, যারা অভিশপ্ত। [৪৮৪৬]
ইশার সলাতের পর আলোচনা সম্পর্কে
আবূ বারযাহ(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ইশার সলাতের পূর্বে ও সলাতের পর কথাবার্তা বলতে বারণ করতেন
যে ব্যক্তি চার হাঁটু হয়ে বসে
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ফজরের সলাত শেষ করে চার জানু হয়ে সস্থানে বসে থাকতেন সূর্য সম্পূর্ণরূপে উদিত হওয়া পর্যন্ত
কানাঘুষা করা
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি যেন তাদের অপর (তৃতীয়) সঙ্গীকে (একা) রেখে চুপি চুপি কথা না বলে। কারন তা তাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে পারে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ….উপরের হাদীসের অনূরূপ। আবূ সালিহ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে বললাম, চার ব্যক্তি হলে? তিনি বললেন, তবে তোমার কোন ক্ষতি নেই
কেউ স্বীয় বসার স্থান হতে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে
সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার নিকট বসা ছিলাম, তখন তার নিকট একটি বালকও ছিল।অতঃপর সে সেখানে হতে চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো। আমার পিতা আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি বৈঠক হতে চলে যাওয়ার পর প্রত্যাবর্তন করে তাহলে সে পূর্বের স্থানে বসার অধিক হকদার কা‘বা আল-ইয়াদী (রহঃ) তিনি বলেন, আমারা আবূ দারদা (রাঃ) এর সাক্ষাতে যেতাম। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথাও বসতেন এবং আমরাও তাঁর চারপাশে বসতাম। অতঃপর তিনি বৈঠক হতে উঠে গেলে এবং পুনরায় প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা থাকলে তাঁর জুতা জোড়া বা অন্য কিছু রেখে যেতেন। এর দ্বারা তাঁর সাহাবীগন তাঁর ফিরে আসার ইচ্ছা জানতে পারতেন এবং বৈঠকে বসে অপেক্ষায় থাকতেন।৪৮৫২ দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৭০২।
আল্লাহর যিকির না করেই কারো মাজলিস হতে উঠে যাওয়ার অপছন্দনীয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কওমের লোকেরা কোন সমাবেশে একত্রিত হওয়ার পর চলে যাবার সময় তাতে আল্লাহকে স্মরণ না করেই চলে গেলে তা যেন গাধার শবদেহ। তা তাদের জন্য পরিতাপের কারণ হবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসলো অথচ আল্লাহকে স্মরণ করলো না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা। আর যে ব্যক্তি কোথাও শয়ন করার পর আল্লাহর নাম নিলো না তার জন্যও আল্লাহর পক্ষ হতে লাঞ্ছনা।
মাজলিসের কাফফারাহ সম্পর্কে
আব্দুল্লাহ ইবনু আ’মর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু বাক্য যা কোন ব্যক্তি মাজলিস হতে উঠার সময় তিনবার উচ্চারণ করলে তা তার ঐ মাজলিসের কাফফারাহ হবে। আর যদি উক্ত বাক্যগুলো কোন উত্তম মাজলিসে ও যিকিরের মাজলিসে পাঠ করে তাহলে পুস্তিকায় সীল মোহর করার মতই তা তার জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে। বাক্যগুলো হলো “সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”। হে আল্লাহ! মহিমা আপনার, আমি আপনার প্রশংসা সহকারে শুরু করছি। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট ফিরে আসছি।৪৮৫৪ সহীহ। তবে “তিনবার” কথাটি বাদে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন “সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু (ভুলক্রটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হবে।
মাজলিসে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সাহাবীগণের কেউ যেন অপর সাহাবী সম্পর্কে আমার নিকট কোন অভিযোগ না করে। কারণ আমি তোমাদের নিকট প্রশান্ত অন্তরে আসতে পছন্দ করি। দুর্বল- মিশকাত হা/৪৮৫।
মানুষ সম্পর্কে সাবধানতা
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ফাগওয়া আল-খুযাঈ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডাকলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশদের মধ্যে কিছু সম্পদ বন্টনের জন্য আমাকে আবূ সুফিয়ানের (রাঃ) নিকট প্রেরণের ইচ্ছা করলেন। তিনি বললেন, তুমি একজন সঙ্গী যোগাড় করো। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমর ইবনু উমাইয়াহ আদ-দামরী আমার নিকট এসে বললেন, অবগত হলাম, আপনি সফরে যেতে চান এবং একজন সঙ্গী খুঁজছেন। তিনি বললেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমিই সঙ্গী। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে জানালাম, আমি একজন সাথী পেয়েছি তিনি তার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বললাম, আমর ইবনু উমাইমাহ আদ-দামরী। তিনি বললেন, তুমি যখন তার গোত্রের এলাকায় পৌঁছবে তখন তার ব্যাপারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করবে। কেননা প্রবাদ আছে “আপন ভাইকেও নিজের জন্য নিরাপদ ভেবো না”। অতঃপর আমরা যাত্রা করে আল-আবওয়া নামক স্থানে পৌঁছলে আমর ইবনু উমাইয়াহ বললো, আমি আমার গোত্রের নিকট এক দরকারে যাচ্ছি। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি বললাম আপনি যান, কিন্তু যেন রাস্তা ভুলে না যান। তিনি চলে যাবার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাবধানবাণী মনে পড়ে গেলো, তখনই আমি আমার হাওদা উটের উপর শক্ত করে বেঁধে তাড়াহুড়া করে দ্রুত আল-আসাফ নামক স্থানে পৌছলে তিনিও দলবল নিয়ে আমার পিছু নিলেন। আমি অতি দ্রুত অগ্রসর হয়ে তাদেরকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম। ফলে তারা ফিরে গেলো। আমর ইবনু উমাইয়াহ আমার নিকট এসে বললো,গোত্রের লোকদের নিকট আমার দরকারী কাজ ছিল। আমি বললাম হাঁ। এরপর আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে মাক্কাহয় পৌঁছলাম এবং আবূ সুফিয়ানের নিকট মালগুলো হস্তান্তর করলাম। ৪৮৫৯ দুর্বল : যঈফাহ হা/১২০৫ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু‘ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না
হাঁটার নিয়ম
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পথ চলতেন তখন মনে হতো তিনি যেন সামনে ঝুঁকে হাঁটছেন। আবুত তুফাইল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি দেখেছি। আমি বললাম,কেমন দেখেছেন? তিনি বললেন সাদা রং মিশ্রিত ও সুদর্শন। আর তিনি যখন হাঁটতেন তখন মনে হতো, তিনি যেন নীচু স্থানে নামছেন।৪৮৬২
এক পায়ের উপর অপর পা রাখা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক পায়ের উপর অন্য পা রাখতে বারণ করেছেন। কুতাইবাহর (রাঃ) বর্ণনায় রয়েছে: কোন ব্যক্তি যেন তার এক পায়ের উপর অপর পা না উঠায়। কুতাইবাহর (রাঃ) বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ অর্থাৎ চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থায়। আব্বাস ইবনু তামীম (রহঃ) হতে তার চাচার তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাসজিদে তাঁর এক পায়ের উপর অপর পা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব ও উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) উভয়েই তা করতেন। সানাদ সহীহ ‘উসমান সূত্রে।
কথাও এক ধরনের আমানত
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কোন কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (কেউ শুনেছে কিনা তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল মাজলিস আমানতস্বরূপ, তবে তিনটি মাজলিস ব্যতীত (১) অবৈধভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত মাজলিস অথবা (২) যেনার মাজলিস অথবা (৩) অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাত করার মাজলিস।৪৮৬৭ দুর্বল ; যঈফাহ হা/১৯০৯। আব্দুর রহমান ইবনু সা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় আমানতহবে স্বামী স্ত্রীর পরষ্পর যৌন সম্ভোগ সম্পর্কিত বিষয়। যে গোপনীয় বিষয় স্বামী প্রকাশ করে দিলো।৪৮৬৮
চোগলখোর
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
দ্বিমুখী চরিত্রের লোক সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দ্বিমুখী চরিত্রের লোক। তারা এক দলের নিকট এক চেহারা নিয়ে এবং অপর দলের নিকট অন্য চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। আম্মার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়াতে দ্বিমুখী স্বভাবের লোকের ক্বিয়ামতের দিন আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে।
গীবত সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত কী? তিনি বললেন, তোমরা ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বললাম, সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের রং পাল্টে যাবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেন, আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করবো না। সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানসম্মানে হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। [আহমাদ] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানসম্মানে আঘাত হানা কবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত এবং একবার গালি দেওয়ার পরিবর্তে দুইবার গালি দেয়াও কবীরাহ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।৪৮৭৫ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো (গীবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো । আবুল মুগীরাহ (রহঃ) সূত্রে ইবনুল মুসাফ্ফা (রহঃ) আবুল মুগীরাহ (রহঃ) সূত্রে ইবনুল মুসাফ্ফা (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। [৪৮৭৭] আমি এটি সহীহ এবং যঈফে পাইনি। আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি ! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। আল-মুসতাওরিদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক লোকমা ভক্ষন করবে আল্লাহ তাকে এজন্য জাহান্নাম হতে সমপরিমাণ ভক্ষন করাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষত্রুটি বর্ণনার পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে অনুরূপ জাহন্নামের পোশাক পরাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির (কুৎসা) রটিয়ে খ্যাতি ও প্রদর্শনীর স্তরে পৌছবে, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাকে ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর জায়গাতেই (জাহান্নামে) স্থান দিবেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের হস্তক্ষেপ করা হারাম। কোন ব্যক্তির নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে।
যে ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের সম্মান রক্ষার্থে তাঁর পক্ষ নেয়
সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল্-জুহানী (রহঃ) হতে তার পিতার নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মুনাফিক হতে রক্ষা করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম হতে রক্ষার জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও আবূ ত্বালহা ইবনু সাহল আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে ত্যাগ করে , আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা হতে বিমূখ থাকবেন যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে। [৪৮৮২] দুর্বল : মিশকাত হা/৪৯৮৮৩।
যে ব্যক্তির দোষ চর্চা গীবত নয়
জুনদুব (রাঃ) একদা এক বেদুঈন আসলো এবং তার উট বসিয়ে তা রশি দিয়ে বেঁধে মাসজিদে প্রবেশ করলো এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালে সে তার উটের নিকট এসে তার বাঁধন খুলে তাতে আরোহণ করলো, অতঃপর উচ্চ আওয়াজে বললো, হে আল্লাহ ! আমাকে ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দয়া করুন এবং আমাদের দয়ার সঙ্গে কাউকে শরীক করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বলো দেখি, সে বেশি মূর্খ নাকি তার উট? সে কি বলেছে তোমরা কি তা শুনোনি? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ, শুনেছি। [৪৮৮৩] “ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বলো দেখি, সে বেশি মূর্খ না তার উট? ...।” এ অংশটি বাদে বর্ণনাটি সহীহ। অথবা দুর্বল, এ অংশে অতিরিক্ত যোগে : “ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বলো দেখি, সে বেশি মূর্খ না তার উট? ...।”
কেউ কাউকে অপবাদ দিলে সে তার জন্য বৈধ
ক্বাতাদাহ (রহঃ) । তিনি বলেন, তোমাদের কেউ কি আবূ দায়গাম বা আবূ দামদাম-এর অনুরূপ হতে অপারগ? তিনি প্রত্যেক দিনের শুরুতে বলতেন : হে আল্লাহ ! আমি আমার মান-সম্মানকে তোমাদের বান্দাদের জন্য সদাক্বাহ করলাম। আবদুর রহমান ইবনু ‘আজলান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি আবূ দামদামের অনুরূপ হতে অক্ষম? লোকেরা প্রশ্ন করলো, আবূ দামদাম কে? তিনি বলেন, তোমাদের আগেকার জাতির এক ব্যক্তি... পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ। সে বললো, যে ব্যক্তি আমাকে মন্দ করে তার জন্য আমার মান-ইজ্জত উৎসর্গিত।৪৮৮৫ যঈফঃ ইরওয়া হা/২৩৬৬।
ছিদ্রান্বেষণ নিষেধ
মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ তুমি যদি মানুষের গোপন দোষ তালাশ করো তাহলে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বা ক্ষতির সীমানায় পৌঁছে দিবে। অতঃপর আবূ দারদা (রাঃ) বললেন, একথা মু‘আবিয়াহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হতে শুনেছেন, মহান আল্লাহ তাকে এর মাধ্যমে লাভবান করুন। জুবাইর ইবনু নুফাইর, কাসীর ইবনু মুররাহ, ‘আমর ইবনুল আসওয়াদ, আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব ও আবূ উমামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শাসক জনগণকে অপরাধী সন্দেহ করলে তাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলবে। যায়িদ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তিকে ইবনু মাস‘ঊদের (রাঃ) নিকট এনে বলা হলো, এ সেই লোক যার দাড়ি থেকে মদ টপকে পড়ছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমাদের জন্য গোয়েন্দাগিরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি প্রকাশ্যে কোন অন্যায় আমাদের সামনে ধরা পড়ে তাহলে এজন্য আমরা তাকে ধরবো।
মুসলিমদের দোষ গোপন রাখা
উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি (অন্য কারোর) গোপনীয় দোষ দেখতে পেয়েও তা গোপন করলো সে যেন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জীবন দিলো।৪৮৮৯ দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১২৬৫। কা‘ব ইবনু ‘আলক্বামাহ (রহঃ) তিনি আবুল হাইসাম (রহঃ) কে উল্লেখ করতে শুনেছেন যে, তিনি ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমিরের (রাঃ) সচিব দুখাইনাকে বলতে শুনেছেন, আমাদের এক প্রতিবেশী পরিবার মদপান করতো। আমি তাদেরকে বারণ করার পরও তারা বিরত হয়নি। আমি ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) কে বললাম, আমাদের এক প্রতিবেশী পরিবার মদপান করে। আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি কিন্তু তারা বিরত হয়নি। তাই আমি এখন পুলিশ আনতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, তাদেরকে ছেড়ে দাও। আমি পুনরায় ‘উক্ববাহ (রাঃ) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলাম, আমাদের সেই প্রতিবেশীরা মদপান পরিহারে অস্বীকার করেছে। আমি পুলিশ আনতে যাচ্ছি। তিনি এবার বললেন, তোমার জন্য দুঃখ! তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি... অতঃপর মুসলিম ইবনু ইবরাহীম বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, লাইস বলেন, বরং তাদেরকে উপদেশ দাও এবং ধমকাও। ৪৮৯০
ভ্রাতৃত্ব
সালিম (রহঃ) হতে তার পিতার নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কাজেই সে তার উপর নির্যাতন করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায়ও ছেড়ে যাবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মিটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিনে তার বিপদ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।
যারা পরস্পরকে গালি দেয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরস্পর তিরস্কারকারীর মধ্যে যে প্রথমে আরম্ভ করে উভয়ের দোষ তার উপর বর্তাবে, যতক্ষণ না অপরজন সীমালংঘন করে।
বিনয় ও নম্রতা
ইয়াদ ইবনু হিমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আমার নিকট (এ মর্মে) ওয়াহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যতোক্ষণ না একে অপরের উপর যুলুম করে এবং অহংকার করে।
প্রতিশোধ গ্রহণ
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে বসা ছিলেন। এ সময় এক লোক আবূ বাকর (রাঃ) কে গালি দিলো এবং কষ্ট দিলো, কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলেন। অতঃপর পুনরায় সে আবূ বাকর (রাঃ) কে গালি দিলো এবং কষ্ট দিলো, কিন্তু তিনি কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলেন। তৃতীয়বার সে আবূ বাকর (রাঃ) কে গালি এবং কষ্ট দিলে এবার তিনি তার প্রতিশোধ নিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) যখন প্রতিশোধ নিলেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আসমান হতে একজন ফেরেশতা নেমে ছিলেন এবং তোমার পক্ষ হয়ে জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তুমি তার প্রতিশোধ নিলে তখন শয়তান এখানে উপস্থিত হয়েছে। শয়তান এখানে উপস্থিত হওয়ায় আমি আর বসতে পারি না। [৪৮৯৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি আবূ বাকর (রাঃ) কে গালি দিচ্ছিল... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। ইবনু ‘আওন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি প্রতিশোধ গ্রহণ ও আল্লাহর বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম, “তবে নির্যাতিত হওয়ার পর যারা প্রতিশোধ নেয় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না” (সূরাহ শূরাঃ ৪১)। ‘আলী ইবনু যায়িদ ইবনু জুদ’আন তার বিমাতা উম্মু মুহাম্মাদ সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আওন বলেন, তাদের বর্ণনানুযায়ী তার বিমাতা উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট যাতায়াত করতেন। মুহাম্মাদ বলেন, উম্মুল মু‘মিনীন বলেছেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন, তখন আমার নিকট যাইনাব বিনতু জাহশ (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত দিয়ে কিছু করতে (আমাকে স্পর্শ করতে) চাইলেন। আমি হাতের ইশারায় যাইনাবের উপস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জানালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেমে গেলেন। এরপর যাইনাব (রাঃ) অগ্রসর হয়ে ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে গালি দিতে লাগলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে গালি দিতে বারণ করলেন কিন্তু তিনি বিরত হলেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে বললেন, তুমিও তাকে গালি দাও। তারপর ‘আয়িশাহ (রাঃ)-ও তাকে গালি দিলেন এবং তাকে পরাভূত করলেন। অতঃপর যাইনাব (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলেন যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ) তোমাদের গালি দিয়েছে এবং এ কাজ করেছে। অতঃপর ফাত্বিমাহ ফিরে গিয়ে তাদেরকে বললেন, আমি তাঁকে (আব্বাকে) এই এই কথা বলেছি এবং এর উত্তরে তিনি এই এই কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। [৪৮৯৬]
মৃত ব্যক্তিকে গালি দেয়া নিষেধ
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন সঙ্গী মারা গেলে তাঁকে ছেড়ে দাও এবং তার সম্পর্কে কটুক্তি করো না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভাল দিকগুলো আলোচনা করো এবং তাদের দোষচর্চা পরিহার করো। [৪৮৯৮] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৬৭৮।
বিদ্রোহ নিষিদ্ধ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ বনী ইসরাইলের মধ্যে দু’ব্যক্তি ছিল। তাদের একজন পাপ কাজ করতো এবং অন্যজন সর্বদা ‘ইবাদতে লিপ্ত থাকতো। যখনই ‘ইবাদতে রত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখতো তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলতো। একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বললো, তুমি এমন কাজ হতে বিরত থাকো। সে বললো, আমাকে আমার রবের উপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বললো, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর দু’জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি ‘ইবাদতগুজারী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবান ছিলে? এবং পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর অপর ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! সে এমন উক্তি করেছে যার ফলে তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে গেছে। আবূ বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মত অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতিদ্রুত আযাব দেয়ার পরও আখিরাতের আযাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি।
হিংসা-বিদ্বেষ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। [৪৯০১] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১৯০২। সাহল ইবনু আবূ উমামাহ (রহঃ) তিনি ও তার পিতা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীযের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি খুবই সংক্ষেপে সলাত আদায় করলেন, যেন তা মুসাফিরের সলাত বা প্রায় অনুরূপ। তিনি সালাম ফিরানোর পর আমার পিতা প্রশ্ন করলেন, আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় হোন! আমাকে বলুন, এটা কি ফরয সলাত না নফল সলাত? তিনি বলেন, এটা ফরয সলাত এবং তা অবশ্যই রসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত। আমি ভুল করিনি, তবে তার যতোটুকু বিস্মৃত হয়েছি। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলতেনঃ তোমরা নিজেদের উপর কঠিন করো না; ফলে তোমাদের উপর কঠোরতা চাপিয়ে দেয়া হবে। অতীতে এক সম্প্রদায় নিজেদের জন্য কঠোরতা অবলম্বন করেছিল, ফলে আল্লাহও তাদের উপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দেন। অতঃপর তাদের শেষ উত্তরসুরি দৃষ্টিগোচর হয় মাঠে ও নির্জন ঘরে। “কিন্তু সন্ন্যাসবাদ, তারা নিজেরাই তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অবলম্বন করেছিল। আমি তাদেরকে এ বিধান দেইনি” (সূরাহ হাদীদঃ ২৭)। পরবর্তী দিন সকালে তিনি গিয়ে বল্লেন,উপদেশ গ্রহণ করতে পারো? অতএব তারা সদলবলে সফর করলেন এবং একটি এলাকায় পৌঁছালেন যার অধিবাসীরা ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছে, অতীতের মধ্যে বিলীন হয়েছে এবং বাসস্থানের ছাদসহ ধবংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কি এ জনপদ চিনতে পেরেছো? তিনি বলেন, এ হলো সেই জাতির জনপদ যাদের স্বৈরাচারীতা ও হিংসা-বিদ্বেষ তাদের ধবংস করেছে। নিশ্চয়ই হিংসা নেক কাজের নূরকে নিভিয়ে দেয় এবং স্বৈরাচার তাকে সত্যে বা মিথ্যায় পরিণত করে। চোখ যেনা করে এবং হাত-পা, শরীর, জবান ও লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবায়িত করে অথবা ত্যাগ করে। [৪৯০২] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৩৪৬৮।
অভিশাপ দেয়া সম্পর্কে
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিশাপ দেয় তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে উঠার পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের জন্য রওয়ানা হয়, কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেয়ায় সে ডানে বামে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোন পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার নিকট ফিরে আসে। তখন সেই বস্ত যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার উপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর উপরই তা পতিত হয়। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা আল্লাহর অভিশাপ, আল্লাহর গযব বা জাহান্নাম দ্বারা অভিশাপ দিও না। আবু দারদা (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ অভিশম্পাতকারীরা (কিয়ামতে) সুপারিশকারী হতে পারবে না এবং সাক্ষীদাতাও হতে পারবে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি বাতাসকে অভিশাপ দিলো। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যক্তির চাদর বাতাসে ওলটপালট হয়ে গেলে সে বাতাসকে অভিশাপ দিলো। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি বাতাসকে লানত করো না, কেননা সে নির্দেশপ্রাপ্ত। যা অভিশাপযোগ্য নয় কেউ তাকে অভিশাপ দিলে তা অভিশাপকারীর ওপরই পতিত হয়।
যে ব্যক্তি অত্যাচারীকে বদদু’আ করে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তার কিছু জিনিস চুরি হওয়ায় তিনি চোরকে লানত দিতে থাকলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি চোরের আযাব কম করো না।
কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরকে ঘৃণা করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, বরং আল্লাহ্র বান্দারা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। যে কোন মুসলিমের জন্য তার কোন ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা জায়িয নয়। আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; কোন মুসলিমের জন্য তার কোন ভাইয়ের সঙ্গে (ঝগড়া করে) তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। দু’জন পথিমধ্যে মুখোমুখি হলে একজন এদিকে এবং অপরজন অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ দু’জনের মধ্যে যে প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ঈমানদারের জন্য বৈধ নয়, সে কোন ইমানদারের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখবে। অতঃপর তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উভয়ের দেখা হলে একজন সালাম দিলে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার সালামের উত্তর দিলে উভয়ই সালামের সওয়াব পাবে। তার দ্বিতীয়জন সালামের উত্তর না দিলে গুনাহগার হবে। ইমাম আহ্মাদ (রহঃ) – এর বর্ণনায় রয়েছেঃ সালামদাতা সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হবে।৪৯১০ দুর্বলঃ গায়াতুল মারাম হা/৪০৫, ইরওয়া হা/২০২৯। আয়িশাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা উচিত নয়। অতঃপর সে তার দেখা পেয়ে তাকে তিনবার সালাম দিলে সে যদি একবারও উত্তর না দেয় তবে সে তার গুনাহসহ প্রত্যাবর্তন করলো। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা হালাল নয়। অতঃপর যে ব্যক্তি তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন থাকা অবস্থায় মারা গেলো, সে জাহান্নামে প্রবেশ করলো। আবু খিরাশ আস্-সুলামী (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ যে তার ভাইয়ের সাথে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন রাখলো সে যেন তাকে হত্যা করলো। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা সমূহ খোলা হয়। অতঃপর ঐদিন আল্লাহ্র সাথে শির্ককারী ও দুই ভাইয়ে শত্রুতা পোষণকারীরা ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করা হয়। বলা হয়, তোমরা এ দু’জনকে শত্রুতা ত্যাগ করার সুযোগ দাও। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চল্লিশ দিন যাবত তাঁর কোন এক স্ত্রীর হতে বিছিন্ন ছিলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমৃত্যু তাঁর এক পুত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, সম্পর্কচ্ছেদ মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকলে তাতে গুনাহ নেই। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) এক ব্যক্তি হয়ে তার চেহারা আড়াল করে রেখেছেন।
সন্দেহ করা সম্পর্কে
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা সন্দেহ করা হতে মুক্ত থাকো। কারণ সন্দেহ করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। পরস্পরের বিরুদ্ধে তথ্য তালাশ করো না এবং গোয়েন্দাগিরি করো না।
আন্তরিকতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হতে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে।
পরষ্পরের মধ্যে মিমাংসা করা সম্পর্কে
আবু দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাদের সিয়াম, সালাত, সদাকাহ্র চেয়েও ফযিলত পূর্ণ কাজের কথা বলবো না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে আল্লাহ্র রাসুল! তিনি বললেনঃ পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ। হুমাইদ ইবনু ‘আব্দুর রহমান (রহঃ) হতে তার মায়ের রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে মিথ্যাবাদী নয় যে দু’জনের মধ্যে মিমাংসার জন্য কিছু কথা বাড়িয়ে বলে। আহ্মাদ ও মুসানাদ (রহঃ) – এর বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি লোকদের মধ্যে মিমাংসার জন্য কিছু উত্তম কথা বলে এবং কিছু বাড়িয়ে বলে, সে মিথ্যুক নয়। . উম্মু কুলসুম বিনতু ‘উকবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, শুধু তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে আমি শুনিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ যে ব্যক্তি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যেসব কথা বলে থাকে সে কারণে তাকে আমি মিথ্যাবাদী মনে করি না। অনুরূপভাবে যুদ্ধের সময় কৌশল হিসেবে যেসব কথা বলা হয় এবং স্বামী স্ত্রীকে যা বলে এবং স্ত্রী স্বামীকে যা বলে।
গান গাওয়া নিষেধ হওয়া সম্পর্কে
মু’আব্বিয্ ইবনু ‘আফরা (রাঃ) এর কন্যা রুবাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বাসর রাতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আমার বিছানায় এমনভাবে বসলেন, যেমনটি তুমি (খালিদ) বসে আছো। অতঃপর কয়েকটি বালিকা তাদের দফ বাজিয়ে বদর যুদ্ধে শহীদ আমার পিতা ও চাচার সুনাম করছিল। এক পর্যায়ে একটি বালিকা বলল, “আমাদের মাঝে এমন একজন নবী রয়েছেন, যিনি জানেন আগামিকাল কি হবে”। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা বর্জন করো, বরং আগে যা বলছিলে তাই বলো। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদিনাহ্য় আসলেন তখন আবিসিনীয়রা তাঁর আগমন উল্লাসে বল্লম খেলা প্রদর্শন করেছে।
সঙ্গীত ও বাঁশি বাজানো নিন্দনীয়
নাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ইবনু’ উমার (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়ে উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়ে আমাকে বললেন, হে নাফি’ তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো? বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি কান থেকে হাত তুলে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি এ ধরনের শব্দ শুনে এরূপ করেছিলেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। নাফি’ (রাঃ) আমি বাহনে ইবনু ‘উমারের (রাঃ) পিছনে ছিলাম। তিনি এক রাখালকে অতিক্রম করলেন যে বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিল ... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। নাফি (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা ইবনু’ উমার (রাঃ) সঙ্গে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনতে পেলেন ... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, এটি অধিকতর মুনকার। সাল্লাম ইবনু মিসকীন (রহঃ) এক শাইখের সূত্রে যিনি আবূ ওয়াইল(রহঃ)-এর সঙ্গে এক বৌ-ভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।তখন লোকেরা খেলাধূলা ও আনন্দ আর সঙ্গীতে মত্ত হল।আবূ ওয়াইল (রহঃ) হাত দিয়ে নিজ হাঁটুদ্বয় পেঁচিয়ে ধরে বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ(রাঃ)-কে বলতে শুনেছি,আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই সঙ্গীত অন্তরে কপটতা সৃষ্টি করে। দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৮১০,যঈফাহ হা/২৪৩০।
হিজড়া সম্পর্কে বিধান
আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) কোন একদিন এক হিজড়াকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আনা হলো। তার হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙ্গানো ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর এ অবস্থা কেনো? বলা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! সে নারীর বেশ ধরেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আন-নকী নামক স্থানে নির্বাসন দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করবো না? তিনি বললেন, সলাত আদায়কারীদের হত্যা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আবূ-উসামাহ বলেন, আন-নাফী’ হলো মাদীনাহ্ এর প্রান্তবর্তী একটি জনপদ, এটা বাকী’ নয়। উম্মু সালামাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম),তখন তার নিকট এক হিজড়া উপস্থিত ছিল।সে তার ভাই ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলছিল, আল্লাহ্ আগামীতে তায়েফ বিজয় দান করলে আমি অবশ্যই এমন এক মহিলাকে দেখাবো , যে চার ভাঁজে সামনে আসে এবং আট ভাঁজে পিছনে যায়।তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এদেরকে তোমাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দাও। ইমাম আবূ দাঊদ (রহ:) বলেন, ঐ নারীর পেটে চার ভাঁজ ছিল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ দিয়েছেন পুরুষ ও নারী হিজড়াকে যারা পুরুষ সাজে।তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে হতে বের করে দাও এবং অমুক অমুক হিজড়াকেও বের করো।
পুতুল দ্বারা খেলা করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অন্যান্য বালিকাদের সঙ্গে নিয়ে পুতুল খেলা করতাম। কখনো রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অবস্থায় আমার ঘরে আসতেন। তিনি প্রবেশ করলে বালিকারা বেরিয়ে যেতো এবং তিনি চলে গেলে তারা পুনরায় প্রবেশ করত। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে ‘আয়িশাহ! এগুলো কি? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো আমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরী দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার উপর আবার ওটা কি? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমান (আ)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল! ‘আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।
দোলনা সম্বন্ধে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ছয় বা সাত বছর বয়সে (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদিনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করলেন, তখন আমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন। আবূ উসামাহ (রহঃ) হতে . আবূ উসামাহ (রহঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে রয়েছেঃ তারা আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আনসার মহিলাদের নিকট সোর্পদ করলেন। তারা আমার মাথা ধৌত করলেন এবং আমাকে পরিপাটি করলেন। পূর্বাহ্নে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত কেউই আমার নিকট আসেনি। অতএব তারা আমাকে তাঁর নিকট সোর্পদ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমরা মদিনায় আসলাম তখন মহিলারা আমার নিকট এলো, এ সময় আমি দোলনায় খেলছিলাম। আমার মাথায় ঘন কালো ও লম্বা চুল ছিল। তারা আমাকে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে প্রস্তুত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে এলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করেন। তখন আমার বয়স ছিল নয় বছর। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) তার সানাদে এ বর্ণনা করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি আমার বান্ধবীকে নিয়ে দোলনায় ছিলাম। অতঃপর আমাকে এক ঘরে প্রবেশ করানো হলো, সেখানে আনসারদের মহিলারা উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর তারা আমাকে কল্যাণ ও বরকতের শুভেচ্ছা জানালেন। ইয়াহ্য়া ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু হাতিব (রহঃ) আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমরা মদিনায় আগমন করে হারিস ইবনুল খায়রায গোত্রে আসি। তিনি বলেন, আল্লাহ কসম! আমি দু’টি খেজুর গাছের মধ্যে দোলনায় উপর ছিলাম, আমার মাথার ঘন ও লম্বা চুল ছিল। তারপর আমার মা এসে আমাকে নামালেন।
পাশা খেলা নিষেধ
আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাশা খেললো সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করলো। সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ(রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাশা খেললো সে যেন শূকরের মাংস ও রক্তের মধ্যে হাত ডুবালো।
কবুতর নিয়ে খেলা করা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূসলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের পিছু ধাওয়া করতে দেখে বললেনঃ এক শয়তান আরেক শয়তানীর অনুসরণ করছে।
করুনা সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দয়াশীলদের উপর করুনাময় আল্লাহ্ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত এই হুজরার মালিক আবুল ক্বাসিম (রহঃ) কে বলতে শুনেছিঃ হতভাগা ছাড়া অন্য কারো থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নেয়া হয় না। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নসীহত সম্পর্কে
তামীম আদ্-দারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দ্বীন হলো কল্যাণ কামনা, উত্তম উপদেশ ও সুপরামর্শ; দ্বীন হলো কল্যাণ কামনা, উত্তম উপদেশ ও সুপরামর্শ; দ্বীন হলো কল্যাণ কামনা, উত্তম উপদেশ ও সুপরামর্শ; সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল, মু’মিন বা মুসলিম নেতাগণ এবং সর্ব সাধারণের জন্য। জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, শ্রবণ, অনুসরণ ও প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য বাই‘আত গ্রহণ করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, জারীর (রাঃ) কোন কিছু বিক্রি করলে বা কিনলে বলতেন, আমি যা আপনার কাছ হতে কিনেছি তা আমার নিকট আপনাকে যা দিয়েছি তার চেয়ে অধিক পছন্দনীয়। সুতরাং আপনার স্বাধীনতা থাকলো।
মুসলিমকে সাহায্য করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোন বিপদ হতে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ্ ক্বিয়ামাতের দিনের বিপদসমূহের কোন বিপদ হতে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন গরীব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ্ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে আল্লাহ্ও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহ্ও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উসমান (রহঃ), আবূ মু‘আবিয়াহ (রহঃ) সূত্রে “যে ব্যক্তি গরীব ব্যক্তির সঙ্গে নম্র ব্যবহার করবে ...” এ কথাটুকু উল্লেখ করেন নি। হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেকে ভাল কাজই একটি সদাক্বাহ।
নাম পরির্বতন করা
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে, তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ইবনু আবূ যাকরিয়া (রহঃ) আবূ দারদার (রাঃ) সাক্ষাৎ পাননি।৪৯৪৬ দুর্বল: মিশকাত হা/৪৭৬৮, যঈফাহ হা/৫৪৬০। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম হলো ‘আবদুল্লাহ এবং ‘আবদুর রহমান। আবূ ওয়াহব আল্-জিশামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নবী-রাসূলগণের নামে নামকরণ করো। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম হলো ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান। নামের মাঝে হারিস ও হাম্মাম হলো বিশ্বস্ত নাম এবং হারব ও মুররাহ হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম। সহীহ, তার এ কথাটি বাদে: “তোমরা নবী-রাসূলগণের নামে নামকরণ করো”। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ ত্বালহার (রাঃ) পুত্র ‘আবদুল্লাহকে তার জন্মগ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে যাই। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উলের আলখাল্লা পরা ছিলেন এবং তার উটের গায়ে তৈল মালিশ করছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, অত:পর আমি তাঁকে কয়েকটি খেজুর দিলাম। তিনি ঐ খেজুরগুলো তাঁর মুখে দিয়ে চিবালেন এং তার মুখ হতে শিশুর মুখ খুলে তাতে দিলেন। তখন শিশুটি তার মুখ নাড়তে শুরু করে এবং খাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। অত:পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআনসারদের পছন্দনীয় খাদ্য হলো খেজুর এবং শিশুটির নাম রাখলেন ‘আবদুল্লাহ।
মন্দ নাম পরিবর্তন করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার (রাঃ) এর কন্যা আসিয়ার নাম পরিবর্তন করে বলেন, তোমার নাম হলো জামীলাহ। মুহাম্মদ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আত্বা (রহঃ) যাইনাব বিনতু আবূ সালামাহ (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার মেয়ের কি নাম রেখেছো? তিনি বললেন, আমি, তার নাম রেখেছি বাররা (পুণ্যবতী)। অত:পর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ধরনের নাম রাখতে বারণ করেছেন। আমার নামও বাররা রাখা হয়েছিল। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ দাবি করো না। কেননা আল্লাহই ভাল জানেন, তোমাদের মধ্যে কে পুণ্যবান”। অত:পর তিনি বললেন, আমি এর কি নাম রাখবো? নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর নাম রাখো যাইনাব। উসামাহ ইবনু আখদারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক লোকের নাম ছিল আসরাম (কর্কশ)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমি আসরাম। তিনি বললেনঃনা, এ নাম ঠিক নয়, বরং তুমি যুর’আহ (শস্যদানা)। হানী (রাঃ) তিনি যখন তার গোত্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গোত্রের লোকদেরকে তাকে আবুল হাকাম উপনামে ডাকতে শুনে তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহই হলেন হাকাম এবং তাঁর নিকটই ন্যায়বিচার ও নির্দেশ। তোমার উপনাম কি করে আবুল হাকাম হলো? তিনি বললেন, আমার গোত্রের লোকজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে তারা মীমাংসার জন্য আমার নিকট আসে। আমি যে সিদ্ধান্ত দেই তাতে তারা উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএটাতো খুবই উত্তম কাজ! তোমার কি কোন সন্তান আছে? হানী (রাঃ) বললেন, শুরাইহ, মুসলিম ও আবদুল্লাহ নামে আমার তিনটি ছেলে আছে। তিনি বললেন, এদের মধ্যে বড় কে? আমি বললাম, শুরাইহ। তিনি বললেন, তাহলে তুমি আবূ শুরাইহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহ) বলেন, ইনি হলেন সেই শুরাইহ (রাঃ) যিনি শিকল ভেঙ্গেছিলেন এবং তুসতার (দুর্গে) প্রবেশ করেছিলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, শু্রাইহ (রাঃ) তুসতার দুর্গের প্রবেশ পথ ভেঙ্গে ফেলেন এবং একটি সুড়ঙ্গ পথে তাতে প্রবেশ করেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহঃ) হতে তার পিতা এবং তার দাদার সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, হাযন (কর্কশ)। তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমার নাম সাহল (সহজ)। তিনি বললেন, না, কারণ সহজ-সরলকে পদদলিত করা হয়, অপমান করা হয়। বর্ণনাকারী সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি ধারণা করলাম যে, অচিরেই আমাদের উপর বিপদ বা কঠোরতা নেমে আসতে পারে। ইমাম আবূ দাউদ (রহ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আস (অবাধ্য), আযীয (পরাক্রমশালী), আতলাহ (কর্কশ), শয়তান, হাকাম (বিচারক), গুরাব (কাক) হুবাব (সাপ) ও শিহাব (উল্কা) নামকে পরিবর্তন করে রেখেছেন হিশাম (বিধ্বস্তকারী)। তিনি হারব (যুদ্ধ) এর পরিবর্তে সালাম (শান্তি) মুনবাইস (শয়নকারী) কে মুদতাদি (জাগরিত), আফিরাহ (অনুর্বর) নামক এলাকাকে খাদিরাহ (সবুজ), আদ-দালালাহ (বিপথ) উপত্যকাকে আল-হুদা (হিদায়াতের পথ), বনূ যানিয়াহ (জারজ সন্তান) এর নাম বনূর-রিশদাহ (নির্মল সন্তান) এবং বনু মুগবিয়াহ (বিপথগামী নারীর সন্তান) এর বনূ রিশদা (হিদায়াতপ্রাপ্ত নারীর সন্তান) নামকরণ করেছেন। মাসরূক (রহঃ) আমি উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি বললেন, তুমি কে? আমি বললাম, মাসরূক ইবনুল আজদা’। উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আল-আজদা হলো একটি শয়তান। [৪৯৫৫] দুর্বল: মিশকাত হা/৪৭৬৭। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমার সন্তানের নাম উয়াসার (সম্পদ), রাবাহ (মুনাফা), নাজীহ (সফল) বা আফলাহা (কৃতকার্য) রাখবে না। কারণ তুমি যখন প্রশ্ন করবে, সে কি এখানে আছে, জবাবদাতা বলবে, না। সামুরাহ (রাঃ) বলেন, চারটি নাম উল্লেখ করা হলো। আমার নিকট এর অতিরিক্ত প্রশ্ন করো না। সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দাসদের নামকরণের ক্ষেত্রে চারটি নাম রাখতে বারণ করেছেন: আফলাহ, ইয়াসার, নাফি’ ও রাবাহ। জাবির তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইনশাআল্লাহ যদি আমি জীবিত থাকি তবে আমার উম্মাতকে নাফি, আফলাহ, বারকাত এরূপ নামকরণ করতে বারণ করবো। আমাশ (রহঃ) বলেন, আমি অবহিত নই যে, তিনি নাফি নামটি উল্লেখ করেছেন কিনা। কারণ কোন লোক এসে যখন প্রশ্ন করে, বরকত এখানে আছে কি? লোকে বলে, না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ যুবাইর (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন, তবে তাতে বারাকাত নাম উল্লেখ করেননি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহর নিকট ঐ ব্যক্তির নামই সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে যার নাম রাখা হয় মালিকুল আমলাক (রাজাধিরাজ)।
উপনাম সম্পর্কে
আবূ জুরাইরা ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের বনী সালিমাহ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়: “তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। কারণ ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত” (সূরাহ আল হুজরাত: ১১) বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদের মাঝে আগমন করেন তখন আমাদের প্রত্যেকেরই দুই-তিনটা করে নাম ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “হে অমুক” এভাবে ডাকলে তারা বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! থামুন, সে ব্যক্তি এ নামে ডাকলে অসন্তুষ্ট হবে। অত:পর এ আয়াত নাযিল হলো: “তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপধিতে ডেকো না।
আবূ ঈসা উপনাম রাখা
যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে উমার (রাঃ) তার এক ছেলে আবূ ঈসা উপনাম করায় তাকে প্রহার করেন। মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ)-এর উপনাম ছিল আবূ ঈসা। উমার (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার উপনাম পালটে আবূ আবদুল্লাহ রাখলে কি যথেষ্ট নয়? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এ উপনাম দিয়েছেন। উমার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আর আমরা তো উদ্বিগ্ন আছি। এরপর হতে মৃত্যু পর্যন্ত তার পদবী আবূ ‘আবদুল্লাহ ছিল। [৪৯৬১]
অন্যের পুত্রকে ‘হে আমার পত্র’ বলা সম্পর্কে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ‘হে আমার পুত্র’ বলে সম্বোধন করেছেন।
কারো আবুল ক্বাসিম উপনাম রাখা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখো কিন্তু আমার উপনামে উপনাম রেখো না।
কারো একই সঙ্গে নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম ও উপনাম গ্রহণ ঠিক নয়
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার নামানুসারে তার নাম রাখবে সে যেন আমার উপনামে তার উপনাম না রাখে। আর যে ব্যক্তি আমার উপনামে উপনাম গ্রহণ করবে সে যেন আমার নামে তার নাম না রাখে।
নাম ও উপনাম উভয়টি একত্রে গ্রহণের অনুমুতি প্রসঙ্গে
মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়া (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আপনার ইন্তিকালের পরে আমার যদি কোন পুত্র সন্তান জন্মাগ্রহণ করে তাহলে আমি কি তার নাম ও উপনাম আপনার নাম ও উপনামে রাখবো? তিনি বললেন, হাঁ। বর্ণনাকারী আবূ বাকর (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘আমি বললাম’ কথাটি নেই, রয়েছে আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছি এবং তার নাম রেখেছি মুহাম্মদ আর উপনাম রেখেছি আবুল ক্বালিম। আমাকে বলা হয়েছে, আপনি এরূপ পছন্দ করেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন জিনিস আমার নামে নাম রাখাকে হালাল করবে এবং উপনামকে হারাম করবে অথবা কোন জিনিস আমার উপনামে উপনাম দেয়াকে হালাল করে এবং আমার নামে নাম রাখাকে হারাম করবে।
সন্তানহীন ব্যক্তির উপনাম
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসতেন। আর আমার একটি ছোট ভাই ছিল তার উপনাম ছিল আবূ উমাইর এবং তার একটি ছোট পাখি (নুগার) ছিল। একে নিয়ে সে খেলতো। নুগার মারা গেলে একদিন নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট এসে তাকে মর্মাহত দেখে বললেনঃ তার কি হয়েছে? তারা বললেন, তার নুগার (পাখিটি) মারা গেছে। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওহে আবু উমাইর। কি হয়েছে তোমার নুগাইর?
নারীদের উপনাম গ্রহণ
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমার প্রত্যেক বান্ধবীর ডাকনাম আছে। আপনি আমার একটি ডাকনাম ঠিক করে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার (বোনের) ছেলে ‘আবদুল্লাহর নামানুসারে উপনাম গ্রহণ করো। মুসাদ্দাদ (রহঃ) বলেন, যুবাইর (রাঃ)-র পুত্র আবদুল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উম্মু ‘আবদুল্লাহ উপনাম গ্রহণ করলেন।
পরোক্ষ মিথ্যাচার
সুফিয়ান ইবনু আসীদ আল-হাদরামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, সবচেয়ে বড় বিশ্বাঘাতকতা হলো তুমি তোমার কোন ভাইকে কোন কথা বলেছো এবং সে তোমার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে, অথচ তুমি যা বলেছো তা ছিল মিথ্যা।৪৯৬৯ দুর্বল : যঈফাহ হা/১২৫১।
কোন ব্যক্তির “যা‘আমূ” শব্দ ব্যবহার করা সম্পর্কে
আবূ ক্বিলাবাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ মাস‘উদ (রাঃ) আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে অথবা আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আবূ মাস‘উদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “যা‘আমূ” শব্দ সম্পর্কে কী বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ “যা‘আমূ” শব্দটি কোন ব্যক্তির নিকৃষ্ট ভারবাহী পশুর ন্যায়।
বক্তব্যে ‘আম্মা বা’দ শব্দের ব্যবহার
যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং শুরুতে বললেন, আম্ম বা‘দ (অতঃপর)।
আঙ্গুরকে কারম বলা এবং বাকসংযত হওয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন (আঙ্গুরকে) কারাম না বলে। কারণ মুসলিমই হলো কারাম (সম্ভ্রান্ত)। কিন্তু তোমরা ‘হাদাইকুল আ‘নাব’ (আঙ্গুরের বাগান) বলবে।
দাস/সেবক তার মালিককে ‘আমার রব’ বলবে না
আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থারাও যেন ‘আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী (আমার যুবক ও আমার যুবতী)। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ (আমার নেতা ও আমার নেত্রী)। কেননা তোমরা সবাই গোলাম। মহান আল্লাহই হলেন একমাত্র রব। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদীস ভিন্ন সানাদে বর্ণিত। বর্ণনাকরী এতে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উল্লেখ করেননি। এতে রয়েছে : সে যেন বলে, আমার নেতা, আমার নেত্রী। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মুনাফিককে নেতা বলবে না। কেননা সে যদি নেতা হয় তাহলে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে রাগান্বিত করলে।
আমার আত্মা কলুষিত হয়ে গেছে এরূপ না বলা
সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে “আমার আত্মা কলুষিত’ হয়ে গেছে। বরং বলবেঃ আমার আত্মা অস্থির হয়ে পড়েছে। আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমার আত্মা বিক্ষুব্ধ হয়ে গেছে। বরং বলবেঃ আমার আত্মা বিতৃষ্ণ হয়ে গেছে। নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বলো না যে, আল্লাহ যা চান এবং অমুক লোক যা চায়। সুতরাং তোমরা বলো আল্লাহ যা চান, অতঃপর অমুকে যা চায়।
( এই অনুচ্ছেদে কোন শিরোনাম নেই )
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) এক বক্তা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিতিতে বক্তৃতা করতে গিয়ে বললোঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ করলো সে সঠিক পথ পেলো আর যে তাদের আদেশ অমান্য করলো-এ পর্যন্ত বলার পর তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওঠো। অথবা তিনি বললেন, চলে যাও। কারণ তুমি কতই না খারাপ বক্তা। আবুল মালীহ (রহঃ) হতে এক ব্যক্তির তিনি বলেন, আমি জন্তুযানে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার সাওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, একথা বলো যে, না শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মতো বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতায় হয়েছে। অতএব বলো, আল্লাহর নামে। যখন তুমি আল্লাহ নামে বলবে শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে। আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে বলতে শুনবে, সকল লোক ধ্বংস হয়েছে, তখন সে-ই তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ধ্বংসের কবলে পড়বে। অথবা সে যেন তাদেরকে ধ্বংস করলো। বর্ণনাকারী মূসা (রাঃ) শুনেছিলেন পরিবর্তে বলেছেন উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মালিক (রহঃ) বলেছেন, যে যদি ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের অবনতি লক্ষ্য করে দুঃখে একথা বলে তাহলে আমার মতে তা দূষণীয় নয়। কিন্তু সে আত্মগর্বী হয়ে এবং লোকজনকে তুচ্ছজ্ঞান করে একথা বললে তা হবে জঘন্য আচরণ, যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আতামার সলাত
আবূ সালামহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ বেদুঈনরা যেন সলাতের ওয়াক্তের নামকরণের ক্ষেত্রে তোমাদেরকে পরাভূত করতে না পারে। জেনে রাখো, সেটি হলো ইশার সলাত। কিন্তু তারা রাতের অন্ধকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে উটের দুধ দোহন করে। সালিম ইবনু আবুল জা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলেন, মিস‘আর বলেছেন, আমার ধারণা, সে ব্যক্তি খুযাআ গোত্রীয়, যদি আমি সলাত পড়তাম তাহলে প্রশান্তি পেতাম। উপস্থিত লোকজন নারাজ হলো। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ হে বিলাল। সলাত ক্বায়িম করো। আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারবো। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া (রহঃ) তিনি বলেন, এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে আমি ও আমার পিতা আনসার গোত্রীয় আমার শ্বশুরবাড়ি গেলাম। তখন সলাতের ওয়াক্ত হলে তিনি তার পরিবারের একজনকে ডেকে বললেন, এই যে মেয়ে। উযূর জন্যে পানি আনো, যাতে আমি সলাত পড়ে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তার একথায় আমরা নারাজ হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ হে বিলাল। আযান দাও, আমরা সলাতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করবো। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত করা ছাড়া অন্যভাবে কারো পরিচয় দিতে শুনিনি।৪৯৮৫
পরিচিতির ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা অনুমোদিত
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা মদিনায় লোকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বালহার (রাঃ) এর ঘোড়ায় চড়ে অনুসন্ধান করে এসে বললেনঃ আমি তো ভীতিজনক কোন কিছুই দেখলাম না। আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের ন্যায় (দ্রুতগতির) পেয়েছি।
মিথ্যাচার সম্পর্কে কঠোরতা
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোন ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। বাহয ইবনু হাকীম (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা তার পিতার সূত্রে আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষকে হাসানোর জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এই যে, এসো! তোমাকে দিবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেনঃ তাকে কি দেয়ার ইচ্ছা করেছ? তিনি বললেন, খেজুর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লিপিবদ্ধ হতো। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাভ্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়।
সুধারণা পোষণ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম ধারণা পোষণ উত্তম ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।৪৯৯১ দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৩১৫০ উম্মুল মু’মিমীন সাফিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। এক রাতে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে তাঁর নিকট গেলাম। কথাবার্তা শেষ করে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে দাঁড়ালেন। তার (সাফিয়া (রাঃ)) বসবাসের স্থান ছিল উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-এর ঘর (সংলগ্ন)।এ সময় আনসার গোত্রের দুই ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা থামো! ইনি (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াই। তারা দু’জনে বললেন, “সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শয়তান মানুষের মধ্যে রক্তের মত চলাচল করে। তাই আমার ভয় হচ্ছিল যে, সে তোমাদের দু’জনের মনে মন্দ কিছু নিক্ষেপ করবে।
ওয়াদা পালন
যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে ওয়াদা পূর্ণ করার নিয়্যাতে অঙ্গীকার করে এবং কোন কারণে উক্ত অঙ্গীকার পূরণ করতে না পারে এবং ওয়াদা পূরণের নির্দিষ্ট সময়ও না আসে তাহলে তার পাপ হবে না।৪৯৯৩ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ হাম্সাআ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়্যাত লাভের আগের ঘটনা। আমি তাঁর নিকট হতে একটা জিনিস কিনে কিছু দাম বাকি রেখে এই বলে চলে গেলাম যে, আমি অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে এখানে এসে পৌছিয়ে দিব। পরে আমি অঙ্গীকার ভুলে গেলাম। তিনদিন পর আমার এ ওয়াদার কথা মনে পড়লো। আমি অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি সেখানেই আছেন। তিনি বললেন, ওহে যুবক! তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছ। আমি তিনদিন যাবত এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।৪৯৯৪
না পেয়েও তৃপ্তির ভান করা
আসমা বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) একদা এক মহিলা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একজন সতীন আছে। আমি কি তাকে এরূপ বলতে পারি যে, আমার স্বামী আমাকে এই বস্তু দিয়েছে, অথচ বাস্তবে তা দেয়নি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না পেয়ে পাওয়ার ভানকারী মিথ্যাচারের দু’টি পোশাক পরিধানকারীর মতই।
রসিকতা সম্পর্কে
আনাস (রাঃ) একদা এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আরোহীর ব্যবস্থা করে দিন। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে আরোহণের জন্য একটি উষ্ট্রীর বাচ্চা দিবো। লোকটি বললো, উষ্ট্রীর বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো? নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উটকে তো উষ্ট্রীই জন্ম দেয়। নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি ‘আয়িশার (রাঃ) উচ্চ কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। আবূ বকর (রাঃ) ভেতরে ঢুকে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে দুর্বল করার জন্য চড় মারতে প্রস্তুত হলেন এবং বললেন, আমি কি লক্ষ্য করিনি যে, তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উচ্চস্বরে কথা বলছো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে বারণ করলেন। আবূ বকর রাগান্বিত অবস্থায় বেরিয়ে গেলেন। আবূ বকর (রাঃ) চলে যাওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে (কৌতুকের ছলে) বললেন, দেখলে তো আমি তোমাকে কিভাবে ঐ লোকটার হাত হতে বাঁচালাম! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর কয়েক দিন আবূ বকর (রাঃ) তাঁর নিকট আসলেন না। অতঃপর একদিন এসে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলেন এবং ভিতরে ঢুকে উভয়কে সন্তুষ্ট অবস্থায় দেখতে পেয়ে বললেন, আমাকেও তোমাদের শান্তির অংশীদার বানাও যেমনটি তোমরা আমাকে অংশীদার বানিয়েছিলে তোমাদের কলহে। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমরা তাই করলাম।৪৯৯৭ আওফ ইবনু মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধের সময় আমি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট গেলাম। তখন তিনি চামড়ার তৈরী তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে ঢুকতে বললেন। আমি (কৌতুকের ছলে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পুরো শরীরসহ? তিনি বললেন, হাঁ, পুরো শরীরসহ এসো। অতঃপর আমি ঢুকলাম। ‘উসমান ইবনু আবুল আতিকাহ (রাঃ) তাঁবুর পরিধি সংকীর্ণ হওয়ায় ‘আওফ (রাঃ) কৌতুক করে বলেছিলেন, আমার পুরো শরীরসহ প্রবেশ করবো? [৪৯৯৯] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কৌতুক করে) আমাকে বললেন, ওহে দুই কানওয়ালা!
কেউ ঠাট্টাচ্ছলে কিছু গ্রহণ করলে
‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তার পিতা হতে তার দাদার সূত্র তিনি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের কোন জিনিস না নেয়, খেলাচ্ছলেই হোক কিংবা বাস্তবিকই হোক। আর কেউ তার কোন ভাইয়ের লাঠি নিয়ে থাকলে তা যেন ফিরিয়ে দেয়। [৫০০১] আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, একদা তারা নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে ছিলেন। তাদের এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়লে তাদের মধ্যকার কেউ গিয়ে (মজার ছলে) তার সঙ্গের রশি নিয়ে আসলো। তাতে সে ভয় পেয়ে গেলো। নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়।
বাকপটুতা সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ঘৃণা করে যারা বাকপটুত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহবাকে দাঁতের সঙ্গে লাগিয়ে বিকট শব্দ করে, গরু তার জিহবা নেড়ে যেমন করে থাকে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের অন্তরকে আকৃষ্ট করার জন্য চিত্তাকর্ষক কথাবার্তা শিখে, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তার কোন তাওবাহ ও ফিদইয়া (অথবা ফরয ও নফল ইবাদত) গ্রহণ করবেন না।৫০০৪ দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৮০২ আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা প্রাচ্য হতে দু’ব্যক্তি এসে বক্তৃতা করলো এবং উভয়ের বক্তৃতা শুনে লোকেরা বিস্মিত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন কোন বক্তৃতায় যাদুর প্রভাব আছে। ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) একদিন বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিল। ‘আমর (রাঃ) বললেন, যদি সে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতো তবে তার জন্য ভালো হতো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমার নিকট উপযুক্ত মনে হয়েছে অথবা আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে ভাষণ সংক্ষিপ্ত করতে। কেননা সংক্ষিপ্ত আলোচনা উত্তম। [৫০০৬]
কবিতা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবিতা দিয়ে পেট ভরার চেয়ে তোমাদের জন্য পুঁজ দিয়ে পেট ভর্তি করা উত্তম। আবূ ‘আলী (রাঃ) বলেন, আবূ ‘উবাইদ সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি যে, তিনি এ হাদীসের তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন, কবিতায় তার কলব ভর্তি হয়ে যাওয়ায় সে কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর যিকির হতে বঞ্চিত হবে। কিন্তু কুরআন ও ইলম চর্চার প্রাধান্য থাকলে আমরা বলবো না যে, তার পেট কবিতায় ভরা। কোন কোন ভাষণে অবশ্যই যাদুর প্রভাব রয়েছে অর্থাৎ সে কোন মানুষের প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করবে এবং এতো উত্তেজক বক্তব্য রাখবে যে, মানুষের মন তার ভাষণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। আবার সে তার কুৎসা করলে এমনভাবে করবে যে, মানুষ তা বিশ্বাস করবে। ফলে তাদের অন্তর তার ভাষণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। মনে হবে, সে যেন তার ভাষণের দ্বারা শ্রোতাদের উপর যাদু করেছে। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কোন কবিতা প্রজ্ঞাপূর্ণ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক বেদুঈন এসে কথা বলা শুরু করলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন কোন আলোচনা যাদুর মত হৃদয়গ্রাহী; আর কোন কোন কবিতা হিকমাতপূর্ণ। সাখর ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন কোন বর্ণনা যাদুর মত হৃদয়গ্রাহী হয়, কোন কোন ইলম অজ্ঞতাপূর্ণ হয়, কোন কোন কবিতা হিকমাতপূর্ণ হয় এবং কোন কোন কথা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সা‘সাআহ ইবনু সুহান বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঠিক বলেছেন। প্রথমত, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী “কোন কোন বর্ণনা যাদুর মত হৃদয়গ্রাহী হয়”- প্রায় দেখা যায়, কোন ব্যক্তির নিকট অপরের হক থাকে কিন্তু সে হকদারের সঙ্গে এমন সুন্দরভাবে যুক্তিপূর্ণ কথা বলে যাতে পাওনাদারের দেনা পরিশোধ করতে হয় না। আর ‘ইলম অজ্ঞতা হয়ে থাকে’, এর অর্থ হলো, ‘আলিম ব্যক্তি না জেনেও জানার ভান করে, ফলে এটাই অজ্ঞতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর কবিতাকে হিকমাত বলার কারণ হচ্ছে, কোন কোন কবিতায় এমন নসিহতপূর্ণ থাকে যা মানুষ গ্রহণ করে থাকে। আর কোন কোন কথা বোঝাস্বরূপ হওয়ার অর্থ হলো, অনুপযুক্ত ব্যক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা, যা সে তা শুনতে চায় না। [৫০১০] দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৮০৪। সাঈদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা হাসসান (রাঃ) মাসজিদে কবিতা পাঠ করছিলেন এবং ‘উমার (রাঃ) তখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) তার দিকে বক্র দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি বললেন, আমি মাসজিদে তখনও কবিতা পড়েছি যখন সেখানে তোমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিটি হাজির ছিলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তবে এতে রয়েছেঃ ‘উমার (রাঃ) আশঙ্কা করলেন, তিনি যদি হাসসান (রাঃ) কে বারণ করেন তবে তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকাকে দলীল বানাবেন। তাই তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। [৫০১২] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসসান (রাঃ) এর জন্য মাসজিদে একটি মিম্বার স্থাপন করতেন। তিনি তাতে দাঁড়িয়ে কাফিরদের মধ্যে যারা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)শানে অবাঞ্চিত কথা বলতো তিনি কবিতায় তার প্রতিবাদ করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হাসসান (রাঃ) যতোক্ষণ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)পক্ষ হতে প্রতিবাদ করতে থাকে ততক্ষণ জিবরাঈল (আঃ) তার সঙ্গে থাকেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, “পথভ্রষ্ট লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে।” (সূরাহ শু’আরাঃ২২৪)। এ আয়াতটি আল্লাহ রহিত করেছেন এবং ব্যতিক্রম করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ “কিন্তু তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ রাখে।” (সূরাহ শু’আরাঃ ২২৭)।
স্বপ্ন সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ফজরের সলাত শেষে (লোকদের দিকে) মুখ করে বলতেনঃ আজ রাতে তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? অতঃপর তিনি বলতেন, আমার পরে কেবল সত্য স্বপ্ন ছাড়া নবুওয়্যাতের ধারা অবশিষ্ট থাকবে না। উবাইদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়্যাতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সময় যখন কাছাকাছি হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না এবং যে যতো সত্যবাদী হবে তার স্বপ্নও ততো সত্য হবে। স্বপ্ন তিন প্রকার, (ক) উত্তম স্বপ্ন যা আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ, (খ) ভীতিপ্রদ স্বপ্ন যা শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে, (গ) যা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা অনুপাতে দেখে থাকে। যে ব্যক্তি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখবে, তার উচিত ঘুম থেকে জেগে সলাত আদায় করা এবং ঐ স্বপ্ন সম্বন্ধে কারো সঙ্গে আলাপ না করা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি স্বপ্নে পায়ে শিকল লাগানো দেখতে পাওয়াকে পছন্দ করি তবে গলায় শিকল লাগানো দেখাকে অপছন্দ করি। স্বপ্নে শিকল দেখার তাৎপর্য হলো, দ্বীনের উপর অবিচল থাকা। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, “সময় যখন কাছাকাছি হবে” অর্থাৎ যখন রাত ও দিনের দৈর্ঘ্য সমান হবে। আবূ রাযীন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার পূর্ব পর্যন্ত তা একটি পাখির পায়ের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে। অতঃপর ব্যাখ্যা করা হলে তা কার্যকর হয়। বর্ণনাকারী বলে, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ “বন্ধু ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে স্বপ্নের কথা বলবে না। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। তোমাদের কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে তার উচিৎ তার বাম দিকে তিনবার থুথু মারা। অতঃপর ঐ স্বপ্নের খারাবী হতে আশ্রয় চাওয়া। তাহলে ঐ স্বপ্নে তার কোন ক্ষতি হবে না। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে, মহান আল্লাহর নিকট শয়তান হতে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে ঘুমায়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখলো সে অতিশীঘ্রই জাগ্রত অবস্থায় আমাকে দেখতে পাবে অথবা সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায়ই দেখলো। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি আঁকবে ক্বিয়ামাতের দিন সে তাতে প্রাণ সঞ্চার না করা পর্যন্ত তার শাস্তি হতে থাকবে। অথচ তার পক্ষে তাতে প্রাণ দেয়া অসম্ভব। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা স্বপ্ন বলবে তাকে যবের দানায় গিঠ দিতে বলা হবে। আর যে ব্যক্তি এমন কওমের কথা কান লাগিয়ে শুনবে যারা তার থেকে ঐ কথা গোপন রাখতে চায়, ক্বিয়ামাতের দিন তার কানে উত্তপ্ত সিসা ঢালা হবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি রাতে স্বপ্নে দেখেছি, আমরা যেন ‘উক্ববাহ ইবনু রাফি’র (রাঃ) ঘরে বসে আছি এবং আমাদের সামনে “রুত্বাবে ইবনু ত্বাব” নামক টাটকা খেজুর পরিবেশন করা হয়েছে। আমি এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছি যে, দুনিয়াতে আমাদের বিপুল উন্নতি ও মর্যাদা লাভ হবে এবং আখিরাতেও কল্যাণ লাভ হবে, আর আমাদের দ্বীনও উত্তম।
হাই তোলা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই আসলে সে যেন তাঁর মুখ বন্ধ করে দেয়। কেননা শয়তান ভিতরে ঢুকে। সুহাইল (রাঃ) সূত্র সুহাইল (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সলাতরত অবস্থায় হাই উঠলে যথাসাধ্য তা বন্ধ রাখবে। [৫০২৫] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই অপছন্দ করেন। সুতরাং যখনই তোমাদের কারো হাই আসে সে যেন যথাসাধ্য তা প্রতিরোধ করে এবং হাহ্ হাহ্ ইত্যাদি শব্দ না করে। কারণ হাই তোলা শয়তানের কাজ, এতে শয়তান হাসে।
হাঁচি দেয়া প্রসঙ্গে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাঁচি আসতো তখন তিনি হাত বা কাপড় দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতেন এবং হাঁচির শব্দ নীচু করতেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার মুসলিম ভাইদের পাচঁটি অবশ্য করণীয় রয়েছে। সালামের জবাব দেয়া, হাঁচি শুনে জবাব দেয়া, দাওয়াত কবুল করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এবং জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা।
হাঁচির জবাব দেয়া
হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি সালিম ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন কওমের এক লোক হাঁচি দিয়ে বললো, ‘আসসালামু ‘আলাইকুম। সালিম (রাঃ) বললেন, তোমার এবং তোমার মাতার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সালিম (রাঃ) বললেন, মনে হয় তুমি আমার উত্তরে বিব্রতবোধ করছো। লোকটি বললো, ভালো-মন্দ কোন প্রসঙ্গে আপনি আমার মায়ের উল্লেখ করবেন তা আমি আশা করি না। সালিম (রাঃ) বললেন, আমি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মতই বলেছি। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে বললো, আস্সালামু ‘আলাইকুম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘ওয়া ‘আলাইকা ওয়া ‘আলা উম্মিকা’। তারপর বললেনঃ তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে তার উচিৎ “আল্হামদু লিল্লাহ” বলা। অতঃপর তিনি কিছু হামদ উল্লেখ করলেন, এবং তার নিকট যারা থাকবে তাদের উচিৎ “ইয়ারহামুকাল্লাহ” (আল্লাহ তোমাকে দয়া করুন) বলা; এবং হাঁচি দানকারীর উচিৎ উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম’ (আল্লাহ আপনাদেরকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করুন) বলা। [৫০২৯] সালিম ইবনু ‘উবাইদ আল-আশজাঈ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [৫০৩০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ হাঁচি দেয় তাহলে সে বলবেঃ ‘আলহামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল’ (সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। আর তার ভাই অথবা সাথী বলবেঃ ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ”। আর হাঁচিদাতা বলবেঃ ‘ইয়াহ্দীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু সালাকুম’ (আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখান এবং তোমাদের সংশোধন করুন)।
হাঁচির জবাব কতবার দিবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমার ভাইয়ের হাঁচির উত্তর তিনবার দিবে। এরপরও হাঁচি দিতে থাকলে তবে তার মস্তিষ্কে ঠান্ডা লেগেছে (তাই আর জবাব দিতে হবে না)। [৫০৩২] হাসান মাওকূফ ও মারফু। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। [৫০৩৩] উবাইদ ইবনু রিফা’আহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হাঁচিদাতার উত্তর তিনবার দাও। এরপরও যদি সে হাঁচি দিতে থাকে তবে তোমার ইচ্ছা উত্তর দিতেও পারো আবার নাও দিতে পারো। সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসে হাঁচি দিলে তিনি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললেন। লোকটি আবার হাঁচি দিলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ লোকটির ঠান্ডা লেগেছে।
যিম্মীর হাঁচির জবাব কিভাবে দিবে?
আবূ বুরদাহ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে এই আশায় ইচ্ছাকৃতভাবেই হাঁচি দিতো যে, তিনি তাদের হাঁচির জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহু’ বলবেন। কিন্তু তিনি বলতেনঃ ‘ইয়াহ্দিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’। [৫০৩৬]
যে ব্যক্তি হাঁচি দেয়ার পর আলহাম্দু লিল্লাহ বলে না
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে হাঁচি দিলে তিনি এক ব্যক্তির হাঁচির উত্তর দিলেন এবং অপর ব্যক্তির হাঁচির উত্তর হতে বিরত থাকলেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সামনে তো দুই ব্যক্তি হাঁচি দিয়েছে। আপনি একজনেরটা উত্তর দিলেন, আর অন্যজনেরটা উত্তর দানে বিরত থাকলেন? তিনি বললেনঃ এই ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রশংসা করেছে আর এ ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেনি।
উপুড় হয়ে শোয়া
ইয়াঈশ ইবনু তিখফাহ ইবনু ক্বাইস আল-গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আস্হাবে সুফ্ফার সদস্য ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর ঘরে যেতে বললেন। আমরা সেখানে গেলে তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ! আমাদের আহারের ব্যবস্থা করো। তিনি হাশীশা পরিবেশন করলেন এবং আমরা খেলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! আমাদেরকে আরো খাবার দাও। এবার তিনি কবুতরের মত সামান্য হায়সা নিয়ে আসলেন এবং আমরা খেয়ে নিলাম। তারপর তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ! আমাদেরকে পান করাও। অতঃপর তিনি এক গামলা দুধ আনলেন এবং আমরা পান করলাম। পুনরায় তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট পানীয় চাইলে তিনি ছোট এক পেয়ালা পরিবেশন করলেন এবং আমরা তা পান করলাম। এবার তিনি বললেনঃ ইচ্ছা করলে তোমরা এখানে ঘুমাতে পারো নতুবা মসজিদে চলে যাও। আমার পিতা বলেন, আমার বুকের ব্যথার কারনে আমি মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি আমাকে তাঁর পা দিয়ে নাড়া দিয়ে বললেন, এভাবে শোয়া আল্লাহ ঘৃণা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি চোখ তুলে দেখলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। [৫০৩৮] যঈফ মুযতারিব।
দেয়ালবিহীন ছাদে ঘুমানো সম্পর্কে
‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়া’লা ইবনু শাইবান (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি দেয়ালবিহীন ছাদে রাত কাটালে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে না। [৫০৩৯]
পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো সম্পর্কে
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দু’আ করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। সাবিত আল-বুনানী (রাঃ) বলেন, আবূ যাব্ইয়ান (রাঃ) আমাদের এখানে এসে আমাদের নিকট মু’আয ইবনু জাবাল সূত্রে (রাঃ)- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ হাদীস বর্ণনা করেন। সাবিত (রাঃ) বলেন, অমুক ব্যক্তি বলেছেন, আমি ঘুম থেকে জেগে তা পড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে ঘুম হতে জেগে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে উভয় হাত ও মুখ ধুয়ে পুনরায় ঘুমালেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তিনি পেশাব করেছিলেন।
কোন দিকে মুখ করে ঘুমাবে?
উম্মু সালামাহ্র (রাঃ) কোন আত্মীয় সূত্র তিনি বলেন, সাধারণত মৃত ব্যক্তিকে কবরে যেভাবে রাখা হয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিছানা সেই পদ্ধতিতে বিছানো ছিল এবং তাঁর মাথার দিকে মসজিদ ছিল। [৫০৪২] দুর্বলঃ মিশকাত হা/৪৭১৭।
ঘুমের সময় যা বলতে হয়
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী হাফসাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন শয়ন করতেন তখন তাঁর ডান হাত গালের নীচে রেখে তিনবার বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ক্বিনী ‘আযাবাকা ইয়াওমা তাব’আসু ইবাদাকা” (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি যেদিন আপনার বান্দাদেরকে কবর হতে উঠাবেন, সেদিন আমাকে আপনার ‘আযাব হতে রক্ষা করবেন)। [৫০৪৩] সহীহ। তবে “তিনবার” কথাটি বাদে। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ যখন রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে তখন সলাতের উযুর ন্যায় উযু করে ডান কাতে শুয়ে বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার নিকট সমর্পণ করলাম ও আপনার অনুগত হলাম, আমার কাজ আপনার উপর ন্যস্ত করলাম, আমার পিঠ আপনার নিকট সোপর্দ করলাম এবং আপনার সাহায্যের প্রতি আমি ভরসা করলাম আপনার প্রতি আগ্রহে ও ভয়ে। আপনি ছাড়া অন্য কোথাও মুক্তি ও নিরাপত্তার স্থান নেই। আমি আপনার সেই কিতাবে বিশ্বাস করি যা আপনি আপনার প্রেরিত নাবীর উপর অবতীর্ণ করেছেন।” অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর (ঐ রাতে) যদি তোমার মৃত্যু হয় তাহলে তুমি ইসলামের উপরেই মারা গেলে। এটাই হবে তোমার সর্বশেষ কথা। আল-বারাআ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম। এটি আওরাতে গিয়ে আমার মুখে ‘ওয়া বিরাসূলিকাল্লাযী আরসালতা’ এসে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, বরং “ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা’। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি পবিত্র হয়ে বিছানায় বিশ্রাম নিবে তখন তোমার ডান হাত মাথার নিচে রাখবে। অতঃপর উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। আল-বারাআ (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, একজন বর্ণনাকারী বলেন, ‘তুমি পবিত্র হয়ে যখন তোমার বিছানায় আসো’। অপর বর্ণনাকারী বলেন, ‘তুমি তোমার সলাতের উযুর মত উযু করো’। এভাবে হাদীসের বাকি বর্ণনা মু’তামির বর্ণিত হাদীসের অর্থানুরূপ। [৫০৪৬] হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর সময় বলতেনঃ “ আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহ্ইয়া ওয়া আমূতু ” (অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)। আবার তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ“ আল্হামদু লিল্লাহিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন-নুশূর) (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনারায় জীবিত করবেন)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার বিছানায় বিশ্রাম নেয়, সে যেন তার পরিধেয় বস্ত্রের (লুঙ্গির) ভেতরের দিক দিয়ে বিছানা ঝেঁড়ে নেয়। কেননা সে জানে না তার চলে যাওয়ার পর বিছানায় কি এসেছে। অতঃপর সে যেন তার ডান কাতে শুয়ে বলেঃ হে রব! আপনার নামে আমার দেহ রাখলাম এবং আপনার নামে তা উঠাবো। যদি আপনি আমার আত্মাকে রেখে দেন তবে তার প্রতি দয়া করবেন, আর যদি ফিরিয়ে দেন, তবে তার নিরাপত্তা দিবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিছানায় বিশ্রাম নেয়ার সময় বলতেনঃ হে আল্লাহ! আসমান-যমীনের তথা প্রত্যেক বস্তুর রব; শস্যবীজ অঙ্কুরিতকারী, তাওরাত, ইনজিল ও কুরআন অবতীর্ণকারী। হে রব! আমি আপনার নিকট আপনার অধীনস্থ ও আয়াত্তাধীন সকল অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে মুক্তি চাই। আপনিই প্রথম, আপনার পূর্বে কিছুই ছিল না, আপনি অনন্ত, আপনার পরে কেউ থাকবে না, আপনি প্রকাশ্য এবং আপনার উপরে কিছু নেই। আপনিই গোপন, আপনি ছাড়া কিছুই নেই। বর্ণনাকারী ওয়াহ্ব (রহঃ) তার হাদীসের আরো উল্লেখ করেন, আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং অভাব থেকে মুক্তি দিন। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিছানায় শোয়ার সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার মহান সত্তা ও পূর্ণ কালেমার মুক্তি কামনা করছি, যা আপনার অধীনে রয়েছে তার অকল্যাণ হতে। হে আল্লাহ! আপনিই ঋণ ও পাপের বোঝা দূরীভূত করলেন। হে আল্লাহ! আপনার সৈন্যবাহিনী বা আপনার দলকে কখনো পরাভূত করা যায় না এবং আপনার ওয়াদার কখনো ভঙ্গ হয় না। সম্পদশালীর সম্পদ তাকে আপনার হাত হতে রক্ষা করতে পারবে না। আপনার পবিত্রতা আপনার প্রশংসার সঙ্গে।” [৫০৫০] দুর্বল : মিশকাত হা/২৪০৩। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিছানায় বিশ্রাম নেয়ার সময় বলতেনঃ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সেই মহান রবের জন্য যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন, আমাদের প্রয়োজন পূর্ণ করলেন এবং আমাদের মুক্তি দিলেন, অথচ এমন বহু লোক আছে যাদের না আছে প্রয়োজন পূর্ণকারী আর না আছে আশ্রয়দাতা। আবুল আযহার আল-আনমারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে শোয়ার সময় বলতেনঃ আল্লাহর নামে আমার দেহ রাখলাম। হে আল্লাহ! আমার গুণাহ ক্ষমা করুন, আমার থেকে শয়তানকে তাড়িয়ে দিন, আমার ঘাড়কে মুক্ত করুন এবং আমাকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্নদের কাতারে স্থান দিন। ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাওফাল (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন” সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক হতে মুক্তকারী। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে শোয়ার জন্য তাঁর বিছানায় এসে দুই হাত একত্র করে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’, ‘কুল আ’ঊযুবিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ’ঊযুবি রব্বিন্ নাস’ সূরাহ তিনটি পড়ে (হাতে) ফুঁক দিতেন, অতঃপর সেই হাত দু’টো দিয়ে যতদূর সম্ভব তাঁর শরীর মাসেহ করতেন এবং মাথা হতে মাসেহ শুরু করতেন, তারপর মুখমণ্ডল, শরীরের সম্মুখভাগ, অতঃপর শরীরের যেখানে যেখানে হাত পৌঁছানো সম্ভব। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শোয়ার পূর্বে যেসব সূরার শুরুতে ‘সাব্বাহা’ বা ‘ইউসাব্বিহু’ আছে সেগুলো পড়তেন। তিনি বলেছেন, এ সূরাহগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা হাজার আয়াতের চেয়েও উত্তম। [৫০৫৫] দুর্বল। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে শোয়ার জন্য যেতেন তখন বলতেনঃ সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার প্রয়োজন পুরা করলেন, আমাকে মুক্তি দিলেন, আমাকে পানাহার করালেন, যিনি আমার প্রতি অসীম দয়াবান এবং আমাকে দান করলেন। সুতরাং সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা। হে আল্লাহ! প্রত্যেক বস্তুর রব ও অধিকারী এবং প্রত্যেক জিনিসের ইলাহ্! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করলো না, সে ক্বিয়ামাতের দিন বঞ্চিত হবে। আর যে ব্যক্তি কোন আসনে বসলো অথচ সেখানে সে মহিমান্বিত আল্লাহকে স্মরণ করলো না, ক্বিয়ামাতের দিন সে বঞ্চিত হবে।
রাতে ঘুম থেকে সজাগ হলে যা বলতে হয়
উবাইদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে ঘুম হতে জেগে বলেঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই, সার্বভৌমত্ব, প্রভুত্ব, রাজত্ব ও প্রশংসা সবই তাঁর, তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী; সকল প্রশংসা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য, আল্লাহর সাহায্য ও ক্ষমতা ছাড়া কারো কোন উপায় নেই”; অতঃপর এ দু’আ করেঃ “হে আমার রব আমাকে মাফ করুন; “বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেনঃ দু’আ করে। অর্থাৎ তার বর্ণনায় “রব্বিগফিরলী” উল্লেখ নেই এবং এ দু’আ কবুল করা হয়। অতঃপর সে যদি উঠে উযূ করে সলাত আদায় করে তাহলে তার সলাত কবুল করা হয়। আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সজাগ হলে বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আমার গুনাহের জন্য ক্ষমা ও রহমত কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমার ইলম বাড়িয়ে দিন এবং হিদায়াত দানের পর আমার অন্তরকে বাঁকা করবেন না এবং আমার জন্য আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদানকারী। [৫০৫৯] দুর্বলঃ মিশকাত হা/১২১৪।
ঘুমানোর সময় তাসবীহ পাঠ সম্পর্কে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর হাতে ফোসকা পড়ে যাওয়ায় তিনি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ করেন। কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী থেকে ফাত্বিমাহ (রাঃ) একটি খাদেম চাওয়ার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন, কিন্তু তাঁর দেখা না পেয়ে তিনি এ বিষয়ে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জানিয়ে চলে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসলে তিনি তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সময় আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন যখন আমরা ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। তাঁর আগমনে আমরা বিছানা থেকে উঠতে উদ্যত হলে তিনি বললেনঃ তোমরা স্বস্থানে থাকো। তিনি এসে আমাদের দু’জনের মাঝখনে বসলেন। এমনকি আমি তাঁর পায়ের শীতল পরশ আমার বুকে অনুভব করছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের দু’জন কে এমন একটি উত্তম পথ দেখাবনা যা তোমাদের পার্থিব জিনিসের চেয়ে উত্তম হবে? তা হলো তোমরা শোয়ার সময় তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আল্হামদু লিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে। আর এটা তোমাদের উভয়ের জন্য একটি খাদেমের চেয়ে অধিক উত্তম হবে। আবুল ওয়ারদ ইবনু সুমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আলী (রাঃ) ইবনু আ’বাদকে বলেন, আমি আমার স্ত্রী ও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাত্বিমাহ্র ঘটনা কি তোমাকে বর্ণনা করবো না? তিনি ছিলেন তাঁর নিকট তাঁর পরিবারের সর্বাধিক প্রিয় এবং আমি তাকে বিয়ে করেছি। যাতা ঘুরাতে ঘুরাতে তার হাতে এবং পানির মশক বহন করায় তার কাঁধে দাগ পড়ে যায়; ঘর ঝাড়ু দেয়ায় ও রান্নাঘর পরিষ্কার করায় তার কাপড়ে ময়লা লেগে যায়; এতে ফাত্বিমাহ্র খুব কষ্ট হয়। আমরা শুনতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট যুদ্ধবন্দী এসেছে। তাই আমি তাকে বললাম, তুমি যদি তোমার পিতার নিকট গিয়ে একটি খাদেম চেয়ে আনতে তাহলে তোমার জন্য যথেষ্ট উপকার হতো। তারপর তিনি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যান, সেখানে কতক লোক তাঁর সাথে আলোচনারত থাকায় তিনি লজ্জায় না বলে ফিরে আসেন। পরের দিন ভোরে তিনি আমদের ঘরে আসলেন, এসময় আমরা লেপের ভিতরে ছিলাম। তিনি ফাত্বিমাহ্র মাথার নিকট বসলেন। ফাত্বিমাহ্ লজ্জায় মাথা লেপের ভিতরে লুকালো। তিনি প্রশ্ন করলেন : গতকাল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারে তোমার কি দরকার ছিল? এভাবে তিনি দু’বার প্রশ্ন করলেও তিনি চুপ থাকেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ কসম! আমি বলছি। সে আমার এখানে যাঁতা ঘুরানোর কারণে তার হাতে দাগ পড়েছে, পানির মশক টানতে টানতে তার কাঁধে দাগ পড়েছে, ঘর ঝাড়ু দেয়া ও রান্না করায় তার কাপড়গুলো কালো হয়ে গেছে। আমি খবর পেয়েছিলাম যে, আপনার নিকট যুদ্ধবন্দী এসেছে। আমি আপনার নিকট একজন খাদেম চাওয়ার জন্য তাকে বলেছিলাম। অতঃপর হাকাম বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। [৫০৬১] ‘আলী (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনাকারী বলেন, ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি সিফফীন যুদ্ধের রাত ব্যতীত এ তাসবীহগুলোর পড়া কখনো ছাড়িনি: যখন হতে আমি তা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট শুনেছি। অবশ্য ঐ রাতের শেষ প্রহরে আমার তা স্মরণ হলে আমি তাসবীহগুলো আদায় করেছি। [৫০৬২] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’টি বিষয় বা দু’টি অভ্যাসের প্রতি যে মুসলিম খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দু’টি সহজ কিন্তু তা আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হলো (১) প্রত্যেক সলাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্হামদু লিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে। মুখে (পাঁচ ওয়াক্তে) এর সংখ্যা একশ পঞ্চাশ, কিন্তু মীযানে তা একহাজার পাঁচশ। (২) যখন শয্যায় যাবে চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আল্হামদু লিল্লাহ ও তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে। তা মুখে একশ কিন্তু মীযানে একহাজার। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অভ্যাস দু’টি সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেনঃ তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোন লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর সলাতের মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়। উম্মুল হাকাম বা দুবা‘আহ বিনতু যূবাইর (রাঃ) উভয়ের একজন অপরজন একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু যুদ্ধবন্দী পেলেন। আমি, আমার বোন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ফাত্বিমাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদেরকে বন্দি থেকে (খাদেম) দেয়ার নির্দেশ দিতে আবেদন করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের আগে বদরের যুদ্ধে শহীদদের ইয়াতীম সন্তানরা অগ্রগামী হয়ে গেছে। অতঃপর বর্ণনাকারী তাসবীহ পাঠের কথা উল্লেখ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেক সলাতের পর, কিন্তু তিনি ঘুমের কথা উল্লেখ করেননি। [৫০৬৪]
সকালে ঘুম থেকে উঠে যা বলতে হয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে এমন কিছু কালেমা শিখিয়ে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলবো। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ্! আপনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা, প্রত্যেক বস্তুর রব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমার মনের কু-প্রবৃত্তি, শয়তানের খারাবী ও তার শির্কী হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাইছি।” তিনি বলেনঃ হে আবূ বাক্র! তুমি এ কথাগুলো ভোরে, সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় বলবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোরে উপনীত হয়ে বলতেনঃ “হে আল্লাহ্! আপনার অনুগ্রহে আমরা ভোরে উপনীত হই, সন্ধ্যায় উপনীত হই এবং বাঁচি ও মরি। আর আপনার দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন”। আর তিনি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ্! আপনারই সাহায্যে আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হই এবং সকালে উপনীত হই, আপনার নামেই আমরা বাঁচি ও মরি এবং আপনারই দিকে আমাদের আমাদের প্রত্যাবর্তন”। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলবেঃ “হে আল্লাহ্! আমি সকালে উপনীত হয়েছি এবং সাক্ষী রাখি আপনাকে ও আপনার আরশ বহনকারীদের, আপনার ফেরেশতাদেরকে, আপনার সমস্ত সৃষ্টিকে, নিশ্চয়ই আপনি একমাত্র আল্লাহ্, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার বান্দা ও রাসূল”-আল্লাহ তার এক-চতুর্থাংশ দেহ জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি দিবেন। আর যে ব্যক্তি তা দুইবার বলবে, আল্লাহ তার শরীরের অর্ধেক জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দিবেন। আর যে ব্যক্তি তা তিনবার বলবে আল্লাহ তার শরীরের তিন-চতুর্থাংশ এবং চারবার বললে তার সমস্ত শরীর জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দিবেন। [৫০৬৭] বুরাইদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনারই বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। আমি আমার নিকৃষ্ট আমল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার যে অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করছি এজন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমি আমার কৃত অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। বস্তুত আপনি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই” – এ দু’আ পড়ার পর সে যদি ঐ দিন বা রাতে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলতেনঃ অর্থ “আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং রাজ্য আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় প্রবেশ করেছে, সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই”। জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে : “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সাম্রাজ্য, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। হে আমার রব! আমি আপনার নিকট এ রাতের কল্যাণ চাইছি এবং রাতের পরবর্তী কল্যাণও কামনা করছি। আর এ রাতের সকল প্রকার অমঙ্গল হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তারপরে যা আছে তার অমঙ্গল হতেও মুক্তি চাচ্ছি। হে আমার রব! আমি আপনার নিকট অলসতা, গর্ব-অহংকারের অনিষ্ট ও কুফরীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাইছি। হে রব! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের শাস্তি ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় চাইছি”। আর তিনি ভোরে উপনীত হয়েও এরুপ বলতেনঃ আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং আল্লাহ্র বাদশাহী সকাল বেলাও আছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, শু’বাহ হাদীসটি সালামাহ ইবনু কুহাইল হতে ইবরাহীম ইবনু সুয়াইদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বার্ধক্যের অনিষ্ট হতে’ এবং তিনি ‘কুফরীর অনিষ্ট হতে’ উল্লেখ করেননি। আবূ সাল্লাম (রহঃ) একদা তিনি হিমসের মাসজিদে ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি সেখান দিয়ে অতিক্রম করলে লোকেরা বললো, ইনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমত করেছিলেন। অতএব আবূ সাল্লাম (রহঃ) তার নিকট গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে একটি হাদীস বলুন যা আপনি অন্য কারো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখে শুনেছেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলেঃ ‘আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছি’, এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাকে খুশি করবেন। [৫০৭০] আবদুল্লাহ ইবনু গান্নাম আল-বায়াদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ্! সকালে আমার প্রতি যে নেয়ামত পৌছেছে তা একমাত্র আপনার পক্ষ থেকেই পৌছলো, আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই, সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য’-সে তার ঐ দিনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এরূপ বললো সে তার ঐ রাতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলো। [৫০৭১] জুবাইর ইবনু আবূ সুলাইমান, ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু’আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন নাঃ “হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ্! আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ হতে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে হিফাযাত করুন আমার সম্মুখ হতে, আমার পিছন দিক হতে, আমার ডান দিক হতে, আমার বাম দিক হতে এবং আমার উপর দিক হতে। হে আল্লাহ্! আমি আপনার মর্যাদার ওয়াসিলায় মাটিতে ধ্বসে যাওয়া হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।” [৫০৭২] বনু হাশিমের আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল হামীদ (রহঃ) তার মা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যাদের কারো একজনের খেদমত করতেন, মা তাকে বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা তার নিকট বর্ণনা করেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বলতেনঃ তুমি সকালে উঠে বলবেঃ “আল্লাহ্র পবিত্রতা তাঁর প্রশংসার সঙ্গে; কারো কোন শক্তি নেই আল্লাহ্র শক্তি ব্যতিত; আল্লাহ যা চান তাই হয়, যা চান না তা হয় না। আমি জানি, আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আর আল্লাহ্ সকল বস্তুকে জ্ঞানের আওতায় ঘিরে রেখেছেন।” অতঃপর যে ব্যক্তি সকালে উঠে তা বলবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। আর যে সন্ধ্যায় বলবে সে ভোর উপনীত হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। [৫০৭৩] দুর্বল : মিশকাত হা/২৩৯৩। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উঠে (এই আয়াত) বলবেঃ “সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করো যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও এবং যখন সকালে উপনীত হও, আর আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তাঁরই... তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে” (সূরাহ রূমঃ ১৭-১৯) পর্যন্ত। তার ঐ দিনে যেসব (কল্যাণ) ছুটে গেলে, সে তা লাভ করবে। আর যে তা সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে পড়বে সে লাভ করবে ঐ রাতে যেসব (কল্যাণ) তার হাতছাড়া হয়েছে। [৫০৭৪] খুবই দুর্বল : মিশকাত হা / ২৩৯৪। আবূ আয়্যাশ (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে বলেঃ “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”- এটা তার জন্য ইসমাঈল (আ) বংশীয় একটি গোলাম আযাদ করার সমান হবে, তার জন্য দশটি পুণ্য লেখা হবে ও দশটি পাপ মোচন করা হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বুলন্দ করা হবে এবং শয়তান হতে নিরাপদ থাকবে যতোক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তা বলে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফাযীলাত পাবে। বর্ণনাকারী হাম্মাদের (রহঃ) বর্ণনায় রয়েছেঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আবূ আয়্যাশ (রাঃ) আপনার নামে এই এই বলেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ আয়্যাশ সত্যিই বলেছে। [৫০৭৫] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই আমি সকালে উপনীত হয়েছি, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি এবং সাক্ষী রাখছি আপনার আরশ বহনকারীগণকে, আপনার ফেরেশতাগণকে এবং আপনার সৃষ্টিকুলকে যে, আপনি একমাত্র আল্লাহ্, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আপনি একক, আপনার কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার বান্দা ও রাসূল”- তাহলে তার ঐ দিনের কৃত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা হবে। আর সে যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে ঐ বাক্যসমূহ বলে তাহলে ঐ রাতে কৃত তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা হবে। [৫০৭৬] আল-হারিস ইবনু মুসলিম আত্-তামীমী (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চুপে চুপে বলেন, যখন তুমি মাগরিবের সলাত হতে অবসর হয়ে সাতবার বলবেঃ (আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্-নার) “হে আল্লাহ্! আমাকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করো। তুমি তা বলার পর ঐ রাতে মারা গেলে তোমার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লেখা হবে। আর যখন তুমি ফাজ্রের সলাত শেষ করবে তখনও অনুরূপ বলবে, অতঃপর তুমি যদি ঐ দিন মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লেখা হবে।” মুহাম্মাদ ইবনু শু’আইব (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদ (রহঃ) আমাকে আল-হারিস (রাঃ) সূত্রে জানিয়েছেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তা চুপে চুপে বলেছেন, যাতে আমি আমার ভাইদের নিকট তা বিশেষভাবে প্রচার করি। [৫০৭৭] মুসলিম ইবনুল হারিস ইবনু মুসলিম আত্-তামীমী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “জাহান্নাম হতে নিরাপত্তা” পর্যন্ত পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছেঃ “কারো সঙ্গে তোমার কথা বলার পূর্বে”। এতে ‘আলী ইবনু সাহল বলেন, তার পিতা তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর ‘আলী ও ইবনুল মুসাফ্ফা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে একটি ক্ষুদ্র অভিযানে প্রেরণ করলেন। আমরা আক্রমণের স্থানে পৌছলে আমি আমার ঘোড়াকে উত্তেজিত করে আমার সঙ্গীদেরকে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসর হই। তখন সেখানকার লোকেরা হৈ চৈ করে আমার সঙ্গে দেখা করলো। আমি বললাম, তোমরা বলোঃ লা ইলাহা ইল্লালাহু, তাহলে নিরাপত্তা লাভ করবে। অতএব তারা কালেমা পড়লো। এতে আমার সঙ্গীরা আমাকে তিরস্কার করে বললো, তুমি আমাদেরকে গনীমাত থেকে বঞ্চিত করেছো। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এসে আমি যা করেছি তা তাঁকে জানালো। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে আমার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানালেন এবং বললেনঃ জেনে রাখো! তোমার এ কাজের জন্যই মহান আল্লাহ্ তাদের প্রত্যেক ব্যক্তির বিনিময়ে তোমার জন্য এই এই নেকী নির্ধারণ করেছেন। বর্ণনাকারী ‘আবদুর রহমান বলেন, এর বিনিময়ে যে সওয়াবের কথা তিনি বলেছেন তা আমি ভুলে গেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জেনে রাখো! আমি তোমার জন্য একটি ওয়াসিতনামা লিখে দিবো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাই করেছিলেন এবং তাতে তাঁর সীলমোহর লাগিয়ে দিয়েছিলেন এবং আমাকে হস্তান্তর করেছিলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী তাদের বর্ণিত হাদীসের অর্থের অনুরূপ হাদীস আমাকে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল মুসাফ্ফা (রহঃ) বলেন, আমি আল-হারিস ইবনু মুসলিম ইবনুল হারিস আত-তামীমী (রহঃ)-কে তার পিতার সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। [৫০৭৮] আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ “আল্লাহ্ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’- আল্লাহ্ তার জন্য যথেষ্ট হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে, চাই যেন সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন। [৫০৭৯] বানোয়াট : যঈফাহ হা / ৫২৮৬। মু’আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সলাত পড়াবার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরাহ কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরাহ নাস ও ফালাক্ব পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে।[৫০৮০] আবূ মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদেরকে এমন কিছু বলুন যা আমরা সকাল-সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় পড়বো। তিনি তাদেরকে আদেশ দিলেন তারা যেন বলেঃ “হে আল্লাহ্, আকাশ-যমীনের সৃষ্টিকারী, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা! আপনি প্রত্যেক বস্তুর রব। ফেরেশতারা সাক্ষ্য দিচ্ছে, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতএব আমরা আমাদের কু-প্রবৃত্তির অনিষ্ট হতে এবং অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্ট ও শির্ক হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি এবং আমাদের অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়া বা কোন মুসলিমকে অপরাধের দিকে ধাবিত করা হতে আশ্রয় চাইছি”।[৫০৮১] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৫৬০৬। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) এ সনদে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ভোরে উপনীত হলে যেন বলেঃ “আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং জগতসমূহের রব আল্লাহ্র রাজ্যও ভোরে উপনীত হলো। হে আল্লাহ্! আমি আজকের দিনের কল্যাণ, বিজয়, সাহায্য, আলো, বরকত ও হিদায়াত কামনা করছি। আর আজকের দিনের অমঙ্গল ও তার পরের অমঙ্গল হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাইছি”। যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখনও তাই বলবে।[৫০৮২] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৫৬০৬। শারীক আল-হাওযানী (রহঃ) একদা আমি ‘আয়িশাহ্র (রাঃ) নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে জেগে সর্বপ্রথম কোন দু’আ পড়ার মাধ্যমে শুরু করতেন? তিনি বললেন, তুমি আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছো, তোমার পূর্বে কেউই এ ব্যাপারে আমার নিকট জানতে চায়নি। তিনি যখন রাতে জাগতেন তখন দশবার আল্লাহ্ আকবার ও দশবার আল্হামদুলিল্লাহ বলতেন। আর সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি দশবার ও সুবহানাল মালিকুল কুদ্দুস দশবার এবং আস্তাগফিরুল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লালাহ দশবার বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় অভাব, সংকীর্ণতা ও বিপদগ্রস্ততা হতে আশ্রয় চাইছি। এরপর তিনি সলাত শুরু করতেন।[৫০৮৩] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন তখন ভোর রাতে উপনীত হয়ে বলতেনঃ শ্রবণকারী শ্রবণ করুন, আল্লাহ্র প্রশংসা করছি আমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামতসমূহ ও আশির্বাদসহ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের সাথী হও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। আর আমরা আল্লাহ্র নিকট জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি চাই। আবূ যার (রাঃ) যে ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে উঠে বলবে: “হে আল্লাহ! আমি যে কসমই করি, যে কথাই বলি, আর যে মান্নতই মানি, এসব কার্যকর হওয়ার জন্য রয়েছে তোমার ইচ্ছা। তুমি যা চাও তাই হয়, তুমি যা চাও না তা হয় না। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার এগুলো আগ্রাহ্য করো। হে আল্লাহ! যার প্রতি তুমি দয়া করো তার প্রতি আমারও দু‘আ। তুমি যাকে অভিশাপ দাও তার প্রতি আমারও অভিশাপ”-এসব অকল্যাণ হতে ঐ দিনের জন্য তাকে মুক্তি দেয়া হয়।[৫০৮৫] তাহক্বিক আলবানীঃ সনদ যঈফ মাওকুফ। আবান ইবনু ‘উসমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে: “আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোন বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।” সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোন হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোন হঠাৎ বিপদ আসবে না। আবান (রাঃ) পক্ষাঘাতগ্রস্থ হলে যে লোকটি তার থেকে হাদীস শুনেছিল, তার দিকে তাকাচ্ছিল। তখন আবান তাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে! তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছে কেনো? বিশ্বাস করো, আল্লাহর কসম! আমি ‘উসমান (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিনি আর ‘উসমান (রাঃ)-ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেননি। তবে যেদিন আমি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়েছি সেদিন আমি রাগের বশে তা বলতে ভুলে গিয়েছি। ‘উসমান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী এতে পক্ষাঘাতের ঘটনা উল্লেখ করেননি। [৫০৮৭] ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আব্বাজান! আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলতে শুনি: “হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই।” তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বাক্যগুলো দ্বারা দু‘আ করতে শুনেছি। সেজন্য আমিও তার নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা হতে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।” তিনি এ দু‘আ সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিনবার করে বলতেন। তাই আমিও তাঁর নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির দু‘আ হলো : “হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের নিকট সোপর্দ করবেন না এবং আমার সবকিছু সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ।” [৫০৮৮] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশো বার বলবেঃ “সুবাহানাল্লাহিল ‘আযীম ওয়া বিহামদিহি” এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহলে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না।
নতুন চাঁদ দেখে যে দু‘আ পড়তে হয়
ক্বাতাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-নতুন চাঁদ দেখে বলতেনঃ “কল্যান ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যান ও হেদায়াতের চাঁদ, কল্যান ও হেদায়াতের চাঁদ। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন আমি তাঁর উপর ঈমান আনলাম”-একথা তিনবার বলতেন, অতঃপর বলতেনঃ আল্লাহর প্রশংসা যিনি অমুক মাস শেষ করলেন এবং এ মাস এনে দিলেন।[৫০৯০] ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-নতুন চাঁদ দেখে তাঁর মুখমন্ডল (চাঁদ) হতে অন্যত্র ঘুরাতেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, চাঁদের উদয় সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই।
ঘর হতে বের হওয়ার সময় যা বলবে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই আমার ঘর হতে বের হতেন, তখন আকাশের দিকে মাথা তুলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথভ্রষ্ট হওয়া বা পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ করা বা গুনাহের দিকে ধাবিত করা, উৎপীড়ন করা বা উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে আশ্রয় চাইছি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি তার ঘর হতে বের হওয়ার সময় বলবেঃ “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ, ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছো, রক্ষা পেয়েছো ও নিরাপত্তা লাভ করেছো। সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে!
কেউ নিজ ঘরে প্রবেশকালে কি বলবে?
আবূ মালিক আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন সে যেন বলে: (অর্থ) “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যান চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করি”। অতঃপর সে যেন তার পরিবারের লোকদের সালাম দেয়।
প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহের সময় যা বলবে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: বায়ু আল্লাহর অন্যতম রহমাত। তা কখনো শান্তি বয়ে আনে আবার কখনো আযাব নিয়ে আসে। সুতরাং বাতাস প্রবাহিত হতে দেখলে তোমরা তাকে গালাগালি দিবে না, বরং আল্লাহর নিকট এর কল্যান চাইবে এবং তার খারাবী হতে আল্লাহর নিকট মুক্তি প্রার্থনা করবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন দিন এরূপ মুখ খুলে হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর আলজিভ্ দেখা যায়, বরং তিনি সর্বদাই মুচকি হাসতেন। আর তিনি যখন আকাশে মেঘ বা প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে দেখতেন তখন তাঁর চেহারায় এর ভীতি পরিলক্ষিত হতো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ সাধারণত আকাশে মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। আর আপনি যখন মেঘ দেখেন তখন আপনার চেহারায় আমার নিকট আপনার অসন্তুষ্টির ভাব ধরা পড়ে; এর কারণ কী? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তা শাস্তি বয়ে আনছে কিনা এর নিরাপত্তা আমাকে কে দিবে? এক কওমকে বায়ুর মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়েছে (যেমন আদ ও হূদ) আরেক কওম মেঘ দেখে বলেছিল, “এটা তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিবে” (সূরাহ আহ্কাফ: ২৪)। [৫০৯৬] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাশের প্রান্তে মেঘ উঠতে দেখলে যাবতীয় (নাফল) ‘ইবাদত ছেড়ে দিতেন, এমনকি তিনি সলাতে থাকলেও। অতঃপর তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর খারাবী থেকে আশ্রয় চাইছি”। যদি বর্ষা হতো তাহলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! বরকতপূর্ণ ও সুমিষ্ট পানি দান করো।
বৃষ্টি প্রসঙ্গে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে ছিলাম। আমাদের উপর বৃষ্টি আরম্ভ হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়লেন এবং শরীর থেকে জামা খুলে ফেললেন, যাতে তাঁর শরীরে বৃষ্টি পৌছে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা করলেন কেনো? তিনি বললেনঃ এ বৃষ্টি তার রবের পক্ষ হতে বর্ষিত হচ্ছে।
মোরগ ও চতুস্পদ প্রাণী সম্বন্ধে
যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কারণ সে সলাতের জন্য জাগায়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ চাইবে, কেননা মোরগ একজন ফেরেশতাকে দেখেছে। আর যখন তোমরা গাধার চিৎকার শুনবে তখন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। কেননা সে একটা শয়তানকে দেখেছে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা রাতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ও গাধার ডাক শুনতে পেলে “আউযুবিল্লাহ” বলবে। কেননা তারা (কুকুর ও গাধা) যা দেখতে পায় তোমরা তা দেখতে পাও না। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও ‘আলী ইবনু ‘উমার ইবনু হুসাইন ইবনু ‘আলী (রহঃ) তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: লোক চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তোমরা বাইরে কম যাবে। কেননা মহান আল্লাহর এমন কিছু জীবজন্তু আছে, যাদেরকে এ সময়ে তিনি বিক্ষিপ্তভাবে যমীনে ছেড়ে দেন। তাতে আরো আছে: কারণ আল্লাহ্র কিছু সৃষ্টি আছে। অতঃপর তিনি গাধা ও কুকুরের শব্দের অনুরুপ উল্লেখ করেন।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার কানে আযান দেয়া
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ (রাঃ) যখন ‘আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কানে সলাতের আযানের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাচ্চাদেরকে আনা হলে তিনি তাদের জন্য বরকতের দু‘আ করতেন। ইউসুফের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর চিবিয়ে তাদের মুখে দিতেন। এতে ‘বরকতের জন্য’ কথাটি উল্লেখ নেই। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রশ্ন করলেন : তোমাদের মধ্যে মুগাররিবূন দেখা গেছে কি? আমি বললাম মুগাররিবূন কারা? তিনি বললেন যাদের মধ্যে জিনের একটি অংশ আছে।
কেউ কারোর (অনিষ্ট) হতে আশ্রয় প্রার্থনা।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর নামে আশ্রয় চায় তোমরা তাকে আশ্রয় দাও। আর যে তোমাদের নিকট আল্লাহর নামে কিছু চায় তোমরা তাকে তা দান করো। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ তোমাদের নিকট আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইলে তোমরা তাকে আশ্রয় দিবে। কেউ আল্লাহর নামে তোমাদের নিকট কিছু চাইলে তোমরা তাকে দাও। বর্ণনাকারী সাহল ও ‘উসমান আরো বলেন, যে তোমাদেরকে দাওয়াত দেয় তোমরা তাতে সাড়া দাও। অতঃপর বর্ণনাকারীগণ বলেন, আর যে ব্যক্তি তোমাদের প্রতি উত্তম আচরণ করবে তোমরা তার প্রতিদান দাও। যদি তাকে দেয়ার মতো কিছু না পাও তবে তার জন্য দু’আ করতে থাক-যখন বুঝতে পারো তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছো।
প্ররোচনা প্রতিহত করা সম্পর্কে
আবূ যুমাইল (রহঃ) আবূ যুমাইল (রহঃ) বলেন একদা আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, আমি আমার অন্তরে যেসব বিষয় অনুভব করি এগুলো কি? তিনি বললেন, তা কি? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি সে বিষয়ে মুখ খুলবো না। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে বললেন, সন্দেহমূলক কিছু? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি হাসলেন এবং বললেন, এর থেকে কেউই রেহাই পায়নি, এমনকি মহান আল্লাহ নাযিল করেন: “আমি আপনার উপর যা নাযিল করেছি এ ব্যাপারে আপনি যদি সন্দেহে থাকেন, তাহলে যারা কিতাব পড়ে তাদেরকে প্রশ্ন করুন….” (সূরাহ ইউনুস: ৯৪) বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, যখন তুমি মনের মধ্যে এ ধরণের কিছু উদ্রেক হতে দেখবে, তখন তুমি পাঠ করবে: “তিনিই আদি তিনিই অনন্ত, তিনিই প্রকাশ্য, তিনি গুপ্ত এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক অবহিত” (সূরাহ হাদীদ: ৩) [৫১০৮] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট তাঁর কতিপয় সাহাবী (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আমাদের অন্তরে এমন কিছু অনুভব করি যা ব্যক্ত করাকে বা যা মুখে বলাকে আমরা গুরুতর মনে করি। আমরা এ ধরণের কথা মনে আসা অথবা পরস্পর সমালোচনা করাকে পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ তোমরা কি এরূপ অনুভব করো? তারা বললেন, হ্যাঁ তিনি বললেনঃ এটা স্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো মনের মধ্যে এমন কিছু উদয় হয় যা মুখে ব্যক্ত করার চেয়ে সে জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়াকে উত্তম মনে করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি শয়তানের এ ধোঁকাকে কল্পনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
যে দাস নিজ মনিবের পরিবর্তে অন্যের পরিচয় দেয়।
সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) আমি এ হাদীসটি আমার নিজ কানে শুনেছি স্বয়ং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট হতে এবং আমার অন্তর তা হিফাযাত করেছে। তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি স্বীয় পিতাকে ভিন্ন বংশের দলে দাবি করলো অথচ সে জানে যে, তার পিতা কে, তার জন্য জান্নাত হারাম। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি আবূ বাক্রাহ (রাঃ) এর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তার নিকট উত্থাপন করলে তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ হাদীস আমার কান শুনেছে এবং আমার স্মৃতিশক্তি তা হিফাযাত করেছে। ‘আসিম (রহঃ) বলেন, আমি বললাম হে আবূ উসমান! আপনার নিকট দু’জন লোক সাক্ষ্য দিয়েছে, তারা কে? তিনি বলেন, তাদের একজন হলেন, সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর পথে দ্বীন ইসলামের তীর ছুঁড়েছেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন যিনি বিশের অধিক লোকের একটি দলের সঙ্গে তায়েফ থেকে হেটে এসেছেন। তিনি তার ফযীলত ও বর্ণনা করলেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আন-নুফাইলী (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহর কসম! এটি আমার নিকট মধুর চেয়েও মিষ্টি অর্থাৎ এর সানাদ। আবূ ‘আলী বলেন, আমি আবূ দাঊদকে বলতে শুনেছি, আমি আহমাদ(রহঃ) কে বলতে শুনেছি, কূফাবাসীর হাদীসে নূর নেই। আমি বাসরাহ্বাসীর অনুরূপ দেখিনি, তারা হাদীসটি শু’বাহ (রহঃ) হতে শিখেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজ মনিব গোত্রের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোন গোত্রে পালিয়ে যায় তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকূল ও সকল মানুষের পক্ষ হতে লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন তার কোন ফরয ও নফল অথবা তাওবাহ ও ফিদইয়া গ্রহণযোগ্য হবে না। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি তার পিতার বংশ পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য বংশের হওয়ার দাবি করে অথবা নিজেকে প্রকৃত অভিভাবক পরিবারকে বাদ দিয়ে অন্যের পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করে তার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অবিরাম অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে।
বংশের গৌরব
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মু’মিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আঃ) মাটির তৈরী। লোকদের উচিৎ বিশেষ গোত্রের ভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়েও জঘন্য গণ্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ঠেলে নিয়ে যায়।
দলপ্রীতি বা পক্ষপাতিত্ব
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) যে ব্যক্তি তার কওমের লোকদেরকে অন্যায়ভাবে সাহায্য করে, সে ঐ উটের মত, যেটিকে গর্তে পড়ার পর তার লেজ ধরে টানা হচ্ছে। [৫১১৫] সহীহ মাওকূফ ও মারফু। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলাম, তখন তিনি একটি চামড়ার তাঁবুতে ছিলেন ... অতঃপর বাকী অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ। ওয়াসিলাহ ইবনু আক্বকা’ (রাঃ)-র কন্যা তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আসাবিয়্যাত (পক্ষপাতিত্ব) কি? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার কওমকে অত্যাচার করার জন্য সহযোগিতা করলে। [৫১১৭] দুর্বল : গায়াতুল মারাম হা/৩০৫। সুরাক্বাহ ইবনু মালিক ইবনু জু’শাম আল-মুদলিজী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার সময় বলেনঃ যে ব্যক্তি পাপাচারে লিপ্ত না হয়ে তার গোত্রের উপর নির্যাতন হওয়া প্রতিরোধ করে সে-ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আইয়ূব ইবনু সুয়াইদ দুর্বল বর্ণনাকারী। [৫১১৮] দুর্বল : মিশকাত হা/ ৪৯০৬ জুবাইর ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। যে ব্যক্তি আসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে বা গোত্রের দোহাই দিয়ে আহবান করে লোকদেরকে সমবেত করে সে আমার দলভুক্ত নয়। আর ঐ ব্যক্তিও আমার দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়্যাতের ভিত্তিতে যুদ্ধ করে এবং সেও নয় যে আসাবিয়্যাতের উপর মারা যায়। [৫১১৯] দুর্বল : মিশকাত হা/৪৯০৭, গায়াতুল মারাম হা/ ৩০৪। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ গোত্রের ভাগনে তাদের অন্তর্ভুক্ত। আবূ উক্ববাহ (রাঃ) (তিনি ছিলেন পারস্যবাসীর আযাদকৃত গোলাম)। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সঙ্গে উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহন করি। এক মুশরিক ব্যক্তির উপর আঘাত হেনে আমি বললাম, আমার কাছ থেকে এটা নাও। আমি পারস্যদেশীয় যুবক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললেনঃ তুমি কেন একথা বললে না যে, আমার পক্ষ হতে এটা গ্রহন করো, আমি আনসারী যুবক।
কেউ কারোর ভালো কিছু দেখে তাকে ভালবাসলে
আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে, তার উচিৎ তাকে তাঁর ভালোবাসা সম্পর্কে অবহিত করা। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিল। এ সময় অন্য এক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অবশ্যই এ ব্যক্তিকে ভালোবাসি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি তাকে তোমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছ? সে বললো, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তাকে জানিয়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে ঐ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। সে বললো, যাঁর উদ্দেশ্যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তিনিও আপনাকে ভালোবাসুন। আবূ যার (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি যদি কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তারা যে ধরণের আমল করে সে অনুরূপ আমল করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি যাদেরকে ভালোবাসো তাদের দলভুক্ত হবে। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যাদেকে ভালোবাসো তাদের সাথী হবে। বর্ণনাকারীবলেন, আবূ যার (রাঃ) একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও একই উত্তর দেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদেরকে একটি ব্যাপারে এতোটা আনন্দিত দেখতে পেলাম যে, অন্য কোন ব্যাপারেই এরূপ আনন্দিত হতে দেখিনি। তা হলো, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তার সৎকাজের জন্য ভালবাসে, কিন্তু সে তার মতো সৎকাজ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তিই যাকে ভালবাসে সে তার সাথী হবে।
পরামর্শ করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরামর্শদাতা একজন আমানতদার।
কল্যাণের দিকে পথ দেখানো
আবূ মাসা‘উদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকটে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কোন বাহন নেই। তাই আমার জন্য একটি বাহনের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বললেনঃআমার নিকট তোমাকে বাহন হিসেবে দেয়ার মতো কোন ব্যবস্থা নেই। তবে তুমি অমুকের নিকট যাও, সে হয়তো তোমার সাওয়ারীর ব্যবস্থা করতে পারবে। অতএব সে তার নিকট গেলে লোকটি তার বাহনের ব্যবস্থা করে দিলো। ঐ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বললেনঃসে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের পথ দেখায়, সে উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পায়।
অসৎ বাসনা
আবূ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন বস্তুর প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে অন্ধ ও বধির করে দিতে পারে। [৫১২৮] দুর্বল : যঈফাহ হা/১৮৬৮।
সুপারিশ করা
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নিকট সুপারিশ করো, তাহলে তোমরা সাওয়াব লাভ করতে পারবে। আর নাবীর সিদ্ধান্ত তাই হয় যা আল্লাহর ইচ্ছা করেন। মু‘আবিয়াহ (রাঃ) । তোমরা সুপারিশ করো, তাহলে সওয়াব লাভ করতে পারবে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ তোমরা সুপারিশ করো, সাওয়াব পাবে।” কারণ আমি (মু‘আবিয়াহ) কোন সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছাকৃতভাবেই বিলম্ব করি যাতে তোমরা সুপারিশ করে সওয়াব লাভ করতে পারো। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সুপারিশ করে সওয়াব অর্জন করো। আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [৫১৩১]
চিঠিপত্রে প্রথমে নিজের নাম লেখা সম্পর্কে
আল-‘আলা (রা.)-এর কোন সন্তান আল-‘আলা (রাঃ) বাহরাইনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নিযুক্ত গভর্ণর ছিলেন। তিনি যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চিঠিপত্র লিখতেন তখন তাতে প্রথমে নিজের নাম লিখতেন। [৫১৩২] আল-‘আলা ইবনুল হাদরামী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চিঠি লিখেছিলেন এবং তাতে প্রথমে নিজের নাম লিখেছিলেন। [৫১৩৩]
যিম্মীর নিকট পত্র লিখার নিয়ম
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোম সম্রাট হিরাকালের নিকটে চিঠি লিখেছিলেন: “আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পক্ষ হতে রোমের সম্রাট হিরাকলের নিকট। যে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসারী তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইবনু ইয়াহ্য়াহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা হিরাকলের দরবারে উপস্থিত হলে তিনি আমাদেরকে তার সামনে বসালেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চিঠি নিয়ে ডাকলেন। তাতে লেখা রয়েছে : বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম; আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পক্ষ হতে মহান রোম সম্রাট হিরাক্ল–এর প্রতি। যিনি হেদায়েতের অনুসারী তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক; অতঃপর। আবূ সুফিয়ানের হাদীস সহীহ।
পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার হক আদায় করতে সক্ষম নয়, তবে ক্রীতদাস পিতাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিলে (সামান্য হক আদায় হয়)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিল এবং তাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা (‘উমার) তাকে অপছন্দ করতেন। তিনি আমাকে তাকে তালাক দিতে আদেশ করলে আমি তাতে অসম্মতি জানালাম। ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এসে এ ব্যাপারে তাঁকে জানালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতাকে তালাক দাও। বাহয ইবনু হাকীম (রাঃ) হতে তার পিতা এবং তার দাদা তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, অতঃপর তোমার বাবা, এরপর পর্যায়ক্রমে আত্মীয়তার নৈকট্য অনুসারে হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ কোন গোলাম তার মালিকের নিকট তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে চাইলে এবং সে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্বিয়ামতের দিন ঐ অতিরিক্ত সম্পদ তার জন্য একটি মাথায় টাক পড়া বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে। [৫১৩৭] কুলাইব ইবনু মান্ফা’আহ (রহ.) তার দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কার সঙ্গে অধিক উত্তম ব্যবহার করবো। তিনি বললেনঃতোমার মা, বোন, ভাই এবং তোমার মুক্তদাস, যা তোমার আবশ্যকীয় কর্তব্য এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যা বজায় রাখতে হয়। [৫১৩৮] দুর্বল : ইরওয়া হা/৮৩৭ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে মারাত্বক গুনাহ হলো, কোন ব্যক্তির তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল ! মানুষ কিভাবে স্বীয় পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করতে পারে? তিনি বললেনঃএই ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির পিতাকে অভিশাপ দেয়, প্রতিউত্তরে সেও তার পিতাকে অভিশাপ দেয়। আবার এই ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে অভিশাপ দেয়, প্রতিউত্তরে সেও তার মাকে অভিশাপ দেয়। আবূ উসাইদ মালিক ইবনু রবী‘আহ আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় বনী সালিমার এক লোক তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও কি তাদের প্রতি হক রয়েছে যা আমি পালন করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ, তাদের জন্য দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাদের উভয়ের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে তা রক্ষা করা এবং তাদের বন্ধুদের সম্মান করা।[৫১৪০] দুর্বল : মিশকাত হা/৪৯৩৬। ইবনু ‘উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বাধিক পুণ্যের কাজ হলো, কোন ব্যক্তির তার পিতার ইন্তিকালের পর (অবর্তমানে) তার বন্ধুদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আবুত তুফাইল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল-জি’ইর্রানা নামক স্থানে গোশত বণ্টন করতে দেখেছি। আবুত তুফাইল (রাঃ) বলেন, তখন আমি যুবক ছিলাম এবং উটের হাড় বহন করছিলাম। এ সময় এক মহিলা আসলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় চাদর বিছিয়ে দিলেন। তিনি তার উপর বসলেন। আমি বললাম, ইনি কে? সাহাবীগণ বললেন, ইনি হলেন তাঁর দুধমাতা। [৫১৪২] উমার ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি জানতে পেরেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। এমন সময় তাঁর দুধপিতা এলে তিনি তার জন্য তাঁর কাপড়ের একাংশ বিছিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর বসলেন। এরপর তাঁর দুধমাতা আসলে তিনি তার জন্যও অন্য পাশে তাঁর টুকরা কাপড় বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে তিনি বসলেন। তারপর আসলেন তাঁর দুধভাই। তখন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য উঠে দাঁড়ান এবং তাকে তাঁর সামনে বসান। [৫১৪৩]
ইয়াতীমদের প্রতিপালনের ফাযীলাত
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে যদি তাকে জীবন্ত কবর না দেয় এবং তাকে অবজ্ঞা না করে এবং তার পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। বর্ণনাকারী ‘উসমান ‘পুত্র সন্তান’ কথাটি উল্লেখ করেননি।[৫১৪৪] দুর্বল : মিশকাত হা/৪৯৭৯। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করলো, তাদেরকে আদব শিক্ষা দিলো, বিয়ে দিলো এবং তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলো, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। [৫১৪৫] সুহাইল (রহঃ) সুহাইল (রহঃ) সূত্রে এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তিনটি বোন অথবা তিনটি কন্যা অথবা দু’টি কন্যা অথবা দু’টি বোন’ হলেও ।[৫১৪৬] দুর্বল। আওফ ইবনু মালিক আল্-আশজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ক্বিয়ামাতের দিন আমি এবং কালো গালবিশিষ্ট মহিলা এভাবে থাকবো। বর্ণনাকারী ইয়াযীদ মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে দেখান। অর্থাৎ যে বংশীয়া, সুন্দরী বিধবা মহিলা তার ইয়াতিম বাচ্চাদের স্বাবলম্বী করার জন্য মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে (পুনর্বিবাহ থেকে) বিরত রেখেছে। [৫১৪৭] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১১২২।
ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর মর্যাদা
সাহল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমদের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকবো। এ বলে তিনি তার মধ্যমা ও তর্জনী (আঙ্গুল) একত্র করলেন।
প্রতিবেশীর হক
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ জিব্রীল (আঃ) আমাকে নিয়মিত প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে থাকলেন। এমনকি আমি ভাবলাম, অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানাবেন। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি একটি বকরি যাবাহ করলেন, তিনি বললেন, তোমরা কি আমার প্রতিবেশি ইয়াহুদীকে উপঢৌকন দিয়েছ? কেননা আমি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আঃ) অবিরত আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্বন্ধে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। এমনকি আমার ধারনা হল, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, যাও ধৈর্য ধরো। অতঃপর সে দুই বা তিনবার এভাবে এসে অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ তুমি গিয়ে তোমার জিনিষপত্র রাস্তায় ফেলে রাখো। অতঃপর সে তার জিনিষপত্র রাস্তায় ফেলে রাখলে লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে লাগলো এবং সে তাদেরকে তার প্রতিবেশীর খবর জানাতে থাকলো। লোকেরা তাকে অভিশাপ দিতে লাগলো, আল্লাহ তোমার এরূপ এরূপ করুন। তার প্রতিবেশী তার নিকট এসে তাকে বললো, তুমি ফিরে যাও। ভবিষ্যতে তুমি আমার পক্ষ হতে এরূপ কিছুর পুনরাবৃত্তি দেখবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার উচিৎ তার মেহমানের সম্মান করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার উচিৎ প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার দুই প্রতিবেশী পরিবার। তাদের মধ্যে কোন পরিবারকে আমি আগে (হাদিয়া) পাঠাবো? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের মধ্যে যে তোমার দরজার অতি নিকটে।
দাস দাসীর হক
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শেষ উপদেশ ছিলঃ সলাত, সলাত এবং দাস-দাসীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা। আল-মা’রূর ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আর-রাবাযাহ নামক স্হানে আবূ যার (রাঃ) কে দেখতে পেলাম। তখন তিনি একটি চাদর পরিহিত ছিলেন এবং তার দাসও অনুরূপ চাদর পরিহিত ছিল। আল-মা’রুর (রাঃ) বলেন, লোকেরা বললো, হে আবূ যার ! আপনি যদি আপনার দাস যে কাপড় পরেছে তা নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো আর আপনার দাসকে অন্য পোশাক পরাতেন তাহলে ভাল হতো। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি এক লোককে, (যার মা অনারব ছিল) গালি দিয়াছিলাম এবং মন্দ ব্যবহার করেছিলাম। এতে সে আমার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি এমন ব্যক্তি যে, তোমার মধ্যে জাহিলিয়াত রয়েছে। তিনি আরো বললেনঃ এরা তোমাদের ভাই; আল্লাহ তাদের উপর তোমাদেরকে মর্যাদা দিয়াছেন। এদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল না লাগে তাকে বিক্রি করে দাও। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে শাস্তি দিও না। আল-মা’রূর ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা আর-রাবাযাহ নামক স্হানে আবূ যার (রাঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করি। এ সময় তিনি ও তার দাস একই ধরনের চাদর পরিহিত ছিলেন। আমরা বললাম, আপনি যদি আপনার দাসের চাদরটি নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো। আর তাকে অন্য পোশাক পরাতেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের ভাইয়েরা, আল্লাহ এদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিৎ সে নিজে যা খায় তাকেও তাই খেতে দেয়া, নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা—ই পরতে দেয়া এবং তার অসাধ্য কোন কাজ তার উপর না চাপানো। আর যদি এমন কোন কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাকে দেয়া হয় তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে। আবূ মাস’ঊদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। এ সময় আমার পিছন হতে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবূ মা’সঊদ! জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার উপর এর চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার উপর ক্ষমতাবান। আমি পিছন হতে তার এরূপ ডাক দু’বার শুনতে পেলাম। আমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য স্বাধীন (আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম)। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যদি তাকে মুক্ত না করে দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করতো। আল-আ’মাশ (রাঃ) আল-আ’মাশ (রাঃ) সূত্রে এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক গোলামকে চাবুক দিয়ে প্রহার করেছিলাম। এতে ‘দাসত্বমুক্ত’ করার কথা উল্লেখ নেই। আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তা-এই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না। রাফি’ ইবনু মাকীস (রাঃ) তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (দাস-দাসী বা চাকর–চাকরানীর সাথে) উত্তম ব্যবহার প্রাচূর্য বয়ে আনে এবং মন্দ আচরণ দুর্ভাগ্য টেনে আনে।[৫১৬০] দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৭৯৬। আল-হারিস ইবনু রাফি’ ইবনু মাকীস (রাঃ) রাফি’ (রাঃ) ছিলেন জুহাইনাহ গোত্রভুক্ত, তিনি রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উত্তম ব্যবহার সৌভাগ্য বয়ে আনে, আর মন্দ ব্যবহার দুর্ভাগ্য বয়ে আনে।[৫১৬১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কাজের লোককে প্রতিদিন কতবার মাফ করব? তিনি চুপ থাকলেন। লোকটি আবার একই প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ থাকলেন। তৃতীয় বার প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তর বার। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তাওবাহ্র নবী আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামের উপর মিথ্যা অপবাদ দিবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে বেত্রাঘাত করা হবে। হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রাঃ) এর বাড়ীতে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে একজন মেজাজী বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি দাসী ছিল। তিনি তার চেহারায় চড় মারলেন। এ কারনে, সুয়াইদ (রাঃ) এতোটা উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাকে এমন উত্তেজিত হতে আর দেখিনি। তিনি বললেন, একে আযাদ করা ব্যতীত তোমার জন্য অন্য কোন পথ নেই। তুমি দেখছো যে, আমাদের মুক্বাররিনের সাতটি সন্তান। আমাদের মাত্র একজন খাদেম ছিল। আমাদের কনিষ্ঠজন তার মুখে চড় মেরেছিল বিধায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তাকে আযাদ করার নির্দেশ দিলেন। মু’আবিয়াহ ইবনু সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমাদের এক দাসকে চড় মারলাম। আমার পিতা তাকে ও আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নাও। আমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মুক্বাররিন গোত্রের সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি খাদেম ছিল। আমাদের মধ্যকার একজন তাকে চর মারলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একে মুক্ত করে দাও। তারা বললো, এছাড়া আমাদের কোন খাদেম নেই। তিনি বললেনঃ এরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সে তাদের সেবা করবে। তারা স্বাবলম্বী হলে তাকে যেন মুক্ত করে দেয়া হয়। যাজান (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু ‘উমারের (রাঃ) নিকট গেলাম। তিনি তার দাসকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তিনি মাটি হতে এক টুকরা কাঠ বা অন্য কিছু উঠিয়ে বললেন, একে মুক্ত করায় আমার এর সমানও নেকি নেই। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে চড় মারবে বা মারধর করবে, এর কাফফারাহ হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।
কর্তব্যপরায়ণ দাস সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দাস যথাযথভাবে তার মালিকের প্রতি কর্তব্য আদায় করে এবং সুন্দরভাবে আল্লাহর ‘ইবাদতও করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।
যে কোন ক্রীতদাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়
আবূ হুরাইয়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্যের স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা ক্রীতদাসকে তাঁর মনিবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক হুজরাতে উঁকি মারলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বা একাধিক তীর-ফলক নিয়ে তার দিকে দাঁড়ালেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য যেভাবে তাকে খুঁজছিলেন সে দৃশ্য এখনো যেন আমার চোখের সামনে ভাসছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: কোন ব্যক্তি যদি কোন গোত্রের ঘরে তাদের অনুমতি ছাড়া উঁকি মারে এবং তারা তার চোখ ফুঁড়ে দেয় তাহলে এর কোন ক্ষতিপূরণ নেই। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোখ প্রবেশ করলে এরপর অনুমতি নেয়ার দরকার থাকলো কই। [৫১৭১] দুর্বল: যঈকাহ হা/২৫৮৬ হুযাইল (রহঃ) একদা এক ব্যক্তি অর্থাৎ সা’দ (রাঃ) এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরের দরজা বরাবর মুখ করে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ দরজার ডান অথবা বাম দিকে সরে দাঁড়াও। কেননা চোখের দৃষ্টির কারণেই অনুমতি নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [৫১৭৩]
অনুমতি চাওয়ার নিয়ম
কালাদাহ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) একদা সাফওয়ান ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ) তাকে কিছু দুধ, একটি হরিণ ছানা ও কিছু শসাসহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রেরণ করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। আমি সালাম না দিয়েই তার নিকট প্রবেশ করলে তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং আস্সালামু ‘আলাইকুম বলো। ঘটনাটি ঘটেছিল সাফওয়ান ইবনু উমাইইয়্যাহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর। রিবঈ (রাঃ) তিনি বলেন, বনী ‘আমিরের এক লোক আমাকে বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরে অবস্থানকালে তাঁর নিকট অনুমতি চেয়ে বলেছিলেন, আমি কি আসবো? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার খাদেম কে বললেন, তুমি বের হয়ে তার নিকট গিয়ে তাকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাকে বলো, আস্সালামু ‘আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? লোকটি এ কথা শুনে বললো, আসসালামু ‘আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ভেতরে প্রবেশ করলো। রিবঈ ইবনু হিরাশ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, বনী ‘আমিরের এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থণা করলো ...... অতঃপর পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এভাবেই মুসাদ্দাদ আবূ আওয়ানাহ হতে মানসূর (রহঃ) সূত্রে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে ‘আমির গোত্রের এক ব্যক্তির সূত্রে’-কথাটি নেই। [৫১৭৬] বনী ‘আমিরর এক ব্যক্তি সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অনুমতি চাইলো...... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁর কাছ থেকে শুনে বললাম, ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম, আসতে পারি কি?’ [৫১৭৭]
অনুমতি নিতে কতবার সালাম দিবে?
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনসারগণের এক সমাবেশে বসা ছিলাম। এ সময় আবূ মূসা (রাঃ) ভীত অবস্থায় উপস্থিত হলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনার ভীত হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন, ‘উমার (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি তার নিকট এসে তিনবার অনুমতি চেয়েও অনুমতি না পেয়ে ফিরে গেলাম। তিনি (‘উমার) আমাকে প্রশ্ন করলেন, (ভেতরে প্রবেশ করতে) তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি বললাম, আমি এসে তিনবার অনুমতি চেয়েছি কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি তিনবার অনুমতি চেয়েও অনুমতি না পায় তবে সে ফিরে যাবে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমাকে অবশ্যই আমাকে এর সাক্ষী পেশ করতে হবে। বর্ণনাকারী বললেন, অতঃপর আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, আপনার সঙ্গে সাক্ষী দেয়ার জন্যে দলের সর্বকনিষ্ঠ লোকটিই উঠবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতপঃর আবূ সাঈদ (রাঃ) তার সঙ্গে গিয়ে তার পক্ষে সাক্ষী দিলেন। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি ‘উমার (রাঃ) এর নিকট এসে তিনবার এভাবে অনুমতি চাইলেনঃ আবূ মূসা অনুমতি চাচ্ছে; আল-আশ’আরী অনুমতি চাচ্ছে এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস অনুমতি চাচ্ছে। কিন্তু তিনি তাকে অনুমতি না দেয়ায় আবূ মূসা (রাঃ) ফিরে যেতে লাগলেন। ‘উমার (রাঃ) তাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করলেন, কিসে আপনাকে ফিরে যেতে বাধ্য করলো? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ অনুমতি চাইবে তিনবার। যদি তাকে অনুমতি দেয়া হয় তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যাবে। ‘উমার (রাঃ) বললেন এর স্বপক্ষে আমাকে প্রমাণ দিন। অতএব তিনি গিয়ে সাক্ষী নিয়ে এসে বললেন, এই উবাই। উবাই (রাঃ) বললেন, হে ‘উমার! রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে শাস্তিদাতা হবেন না। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি কখনো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণকে শাস্তি দিবো না। উবাইদ ইবনু উমাইর (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) –এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন......অতঃপর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ কিস্সা। তবে বর্ণনাকারী আরো বলেনঃ তিনি আবূ সাঈদ (রাঃ)–কে নিয়ে এলেন এবং তিনি তার পক্ষে সাক্ষী দিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত এ হাদীস আমার অজানা রয়ে গেলো! বাজারের বেচাকেনাই আমাকে এ ব্যাপারে অনবহিত রেখেছে। এখন আপনার ইচ্ছেমত আমাকে সালাম দিন এবং অনুমতির দরকার নেই। সহীহ। তবে এ কথাটি বাদেঃ “এখন আপনি ইচ্ছেমত আমাকে ......”। আবূ বুরদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-কে বললেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে অপবাদ দিচ্ছিনা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে হাদীস বর্ণনা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাবী’আহ ইবনু আবূ ‘আবদুর (রহঃ) এবং তাদের একাধিক ‘আলিম ‘উমার (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-কে বলেন, জেনে রাখুন! আমি আপনাকে অপবাদ দিচ্ছি না। কিন্তু আমি ভয় করছি যে, মানুষ হয়ত দায়িত্বহীনভাবে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস বর্ণনা করবে। [৫১৮২] ক্বাইস ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি বললেন, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, সা’দ (রাঃ) আস্তে সালামের উত্তর দিলেন। ক্বাইস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রবেশের অনুমতি দিবেন না? তিনি বললেন, থামো, তাকে বেশী বেশী আমাদেরকে সালাম দিতে দাও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। সা’দ (রাঃ) এবারেও আস্তে সালামের জবাব দিলেন। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অতঃপর তিনি ফিরে যেতে থাকলেন। সা’দ (রাঃ) তাঁর পিছনে পিছনে গিয়ে তঁর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই আমি আপনার সালাম শুনতে পারছিলাম এবিং চুপে চুপে সালামের জবাব দিচ্ছিলাম, যাতে আপনি বেশী বেশী সালাম দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সঙ্গে ফিরে আসলেন এবং সা’দ (রাঃ) তাঁর গোসলের জন্য পানি এনে দিতে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তিনি গোসল করলেন। এরপর তাঁকে জাফরান বা ওয়ার্স দ্বারা রঞ্জিত একটি চাদর দিলেন। তিনি তা পরিধান করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ্র পরিবার-পরিজনের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খাবার দেয়া হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রওয়ানা করার জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন সা’দ (রাঃ) পিঠে মখমলের চাদর বা গদি বিছানো একটি সুসজ্জিত গাধা এনে তার নিকটবর্তী করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে আরোহণ করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, হে ক্বাইস! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাও। ক্বাইস (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ আরোহণ করো। কিন্তু আমি সম্মত হলাম না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আরোহণ করো নতুবা ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ফিরে এলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ওয়াহিদ ও ইবনু সাম’আহ (রাঃ) আল-আওয়াঈর (রহঃ) হাদীসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন এবং তারা উভয়ে ক্বাইস ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর উল্লেখ করেননি। [৫১৮৩] আবদুল্লাহ ইবনু বুস্র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কওমের দরবারে এলে সরাসরি দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার বাম বা ডান পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ ‘ আস্সালামু ‘আলাইকুম, আস্সালামু ‘আলাইকুম ’। কারণ সে যুগে দরজায় পর্দা টানানো থাকতো না।
কেউ প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার জন্য দরজা খটখট করলে
জাবির (রাঃ) একদা তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া ঋণ সম্পর্কে আলোচনার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট যান। আমি (জাবির) দরজা খটখট করলে তিনি বললেনঃকে? আমি বললাম, আমি। তিনি বললেনঃআমি! আমি! মনে হলো, তিনি এরূপ বলা অপছন্দ করেছেন। নাফি‘ ইবনু ‘আবদুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (স:) সঙ্গে বের হয়ে এক বাগানে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ দরজা বন্ধ করে রাখো। পরে দরজায় আঘাত করা হলে আমি বললাম, কে? অতঃপর বাকি অংশ আবূ মূসা (রাঃ) বর্ণিত হাসীসের অনুরূপ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আবূ মূসা আল-আশ‘আরীর (রাঃ) হাদীস। তাতে রয়েছেঃ সে দরজা খটখট করলো।
কাউকে আহবান করা কি তার জন্য অনুমতি ধর্তব্য ?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন: কোন ব্যক্তিকে ডেকে আনার জন্য কোন লোক পাঠালে তা তার অনুমতি হিসেবে ধর্তব্য। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি পানাহারের জন্য আমন্ত্রিত হয় এবং সে আমন্ত্রনকারীর প্রতিনিধির সঙ্গে আসে, তবে তার জন্য এটাই অনুমতি।
তিন সময়ে প্রবেশানুমতি প্রার্থনা
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, অধিকাংশ লোকই অনুমতি গ্রহন সম্পর্কিত আয়াতের উপর আমল করে না। আমি তো আমার এই দাসীকে আমার নিকট আসতে অনুমতি নেয়ার আদেশ দিয়েছি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আত্বা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে এমনটিই বর্ণনা করেছেন, তিনি অনুমতি নেয়ার আদেশ দিতেন। ইকরিমাহ (রহঃ) তিনি কলেন, ইরাকের অধিবাসী একদল লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নিকট প্রশ্ন করলো, হে ইবনু ‘আব্বাস! এ আয়াত সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তাতে আমাদেরকে যা নির্দেশ দেয়ার দেয়া হয়েছে, কিন্তু কেউই সে মোতাবেক আমল করে না। মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগন! তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়োপ্রাপ্ত হয়নি তারা যেন তোমাদের ঘরে প্র্রবেশ করতে তিন সময়ে অনুমতি নেয়, ফাজর সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখো এবং ‘ইশার সালাতের পর- এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একজনকে অপরজনের নিকট যাতায়াত করতে হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। তোমাদের সন্তান-সন্তুতি বয়োপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তোমাদের বয়োজ্যেষ্ঠাদের মতো অনুমতি গ্রহন করে। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়” (সূরাহ নূর: ৫৮-৫৯)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সহনশীল, পরম দয়ালু। তিনি গোপনীয়তা ভালোবাসেন। লোকজনের ঘরে কোনোরূপ পর্দার ব্যবস্থা ছিল না। ফলে কখনো ঘরে স্বামী-স্ত্রী অবস্থানকালে তার খাদেম বা বালক-বালিকারা ঢুকে পড়তো। এজন্যই আল্লাহ গোপনীয়তা অবলম্বনে এ সময়গুলোতে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেন। অতএব আল্লাহ তাদের জন্যে গোপনীয়তা অবলম্বন ও কল্যাণকর ব্যবস্থা দিয়েছেন। অথচ আমি কাউকে তদনুসারে আমল করতে দেখি না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ও ‘আত্বা (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। এ হাদীসকে দুর্বল করে।
সালামের প্রসার ঘটানো
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতোক্ষণ না মু’মিন হও। আর তোমরা মু’মিন হতে পারবে না, যতোক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করবো না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলো, ইসলামের কোন দিকটি উত্তম? তিনি বললেনঃ তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে তুমি খানা খাওয়াবে এবং সালাম দিবে।
সালাম বিনিময়ের পদ্ধতি
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আস্সালামু ‘আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেনঃ দশ নেকি! এরপর আরেকজন এসে বললো, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেন, বিশ নেকি! অতঃপর আরেকজন এসে বললো, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেনঃত্রিশ নেকি। সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে তার পিতা সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে তার পিতার মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। এতে আরো রয়েছে : এরপর আরেকজন এসে বললো, আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ চল্লিশ নেকি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আরো বলেনঃ এভাবে নেকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। [৫১৯৪]
যে প্রথমে সালাম দেয় তার ফাযীলাত
আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।
কে প্রথমে সালাম দিবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সালাম দিবে ছোট বড়কে, পথচারী বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক অধিক সংখ্যককে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি সালাম দিবে পদব্রজে যাতায়াতকারীকে। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরা হাদীস বর্ণনা করেন।
পরস্পর আলাদা হওয়ার পর আবার সাক্ষাত হলে তারা কি সালাম দিবে?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর দু’জনের মাঝে যদি গাছ, দেয়াল বা পাথর আড়াল হয়ে যায় এবং তারপর আবার সাক্ষাত হয়, তাহলেও যেন তাকে সালাম দেয়। [৫১৯৮] সহীহ মাওকূফ ও মারফুভাবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তাঁর কাঠের মাচানে ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আস্সালামু ‘আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ, আস্সালামু ‘আলাইকুম, ‘উমার কি প্রবেশ করবে?
শিশুদেরকে সালাম দেয়া
সাবিত (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেলাধূলারত একদল বালকের নিকট এসে তাদেরকে সালাম দিয়েছেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের শিশুদের নিকট এসে পৌঁছলেন। আমিও শিশু হিসেবে তাদের সঙ্গে ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সালাম দিলেন। এরপর তিনি আমার হাত ধরে আমাকে একটি চিঠি দিয়ে পাঠালেন। তিনি একটি দেয়ালের পাশে ছায়ায় বসে থাকলেন, যতোক্ষণ না আমি তাঁর নিকট ফিরে আসি।
মহিলাদেরকে সালাম দেয়া সম্পর্কে
আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের একদল মহিলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সালাম দিয়েছেন। [৫২০২]
মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিককে সালাম দেয়া সম্পর্কে
সুহাইল ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। তারা গির্জাসমূহের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাতে অবস্থানরত খ্রিষ্টানদের সালাম দিলেন। আমার পিতা বললেন, তোমরা আগে তাদেরকে সালাম দিও না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আগে তাদেরকে (আহলে কিতাবকে) সালাম দিবে না। রাস্তায় তাদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাত হলে তাদের রাস্তার সংকীর্ণ দিকে চলে যেতে বাধ্য করবে। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহুদীদের কেউ তোমাদের সালাম দেয়ার সময় বলে যে “আস্সামু ‘আলাইকুম” (অর্থ : তোমাদের মৃত্যু হোক)। জবাবে তোমরা বলবে : ওয়া ‘আলাইকুম (অর্থ : তোমার উপরও তাই)। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান সাওরীও ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (জবাবে তোমরা বলবে), ওয়া ‘আলাইকুম। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আহলে কিতাবরা আমাদেরকে সালাম দেয়। আমরা তার জবাব কিভাবে দিবো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, ওয়া ‘আলাইকুম।
মাজলিস হতে বিদায়ের সময় সালাম দেয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ মাজলিসে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয় এবং মাজলিস হতে বিদায়ের সময়ও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম শেষ সালামের চেয়ে জরুরী নয়।
আলাইকাস সালাম বলা অপছন্দনীয়
আবূ জুরায়্যি আল-হুজাইমী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, ‘আলাইকাস্ সালামু ইয়া রাসূলুল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আলাইকাস্ সালাম বলো না। কারণ এটা হলো মুর্দার প্রতি সালাম।
দলের পক্ষ হতে একজনের সালামের উত্তর দান
আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এটি মারফুভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পথ অতিক্রমকালে দলের একজন যদি সালাম দেয়, তাহলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজন তার উত্তর দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট।
মুসাফাহা সম্পর্কে
আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দুইজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে, আল্লাহর প্রশংসা করলে এবং ক্ষমা চাইলে আল্লাহ উভয়কে ক্ষমা করে দেন। [৫২০৯] দুর্বল: যঈফাহ হা/২৩৪৪। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দুইজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ইয়ামানবাসীরা এসে উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানবাসীরা এসেছে। আর এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে। সহীহ। কিন্তু তার বক্তব্য: “এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা করেছে”-এ কথাটি মুদরাজ, যা আনাসের উক্তি।
কোলাকুলি সম্পর্কে
‘আনাযাহ গোত্রের এক ব্যক্তি তিনি আবূ যার (রাঃ)-কে সিরিয়া ত্যাগের সময় বললেন, আমি আপনার নিকট রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসসমূহের মধ্যকার একটি হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে আগ্রহী। আবূ যার (রাঃ) বললেন, তা গোপন কোন বিষয় না হলে আমি আপনাকে বলবো। আমি বললাম, না, তা কোন গোপন বিষয় নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আপনাদের দেখা হলে তিনি কি আপনাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন? তিনি বললেন, হাঁ যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমার দেখা হতো তিনি আমার সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। একদিন তিনি আমার নিকট লোক পাঠালেন। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমি ফিরে এলে জানানো হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট লোক পাঠিয়েছিলেন। অত:পর আমি তাঁর নিকট আসলাম। তখন তিনি গদির উপর ছিলেন। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তা ছিল খুবই উত্তম ও মনোরম। [৫২১২] দুর্বল: যঈফাহ হা/৪৬৮৩।
কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ (রাঃ)-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনু কুরাইযার লোকেরা আত্মসমর্পণ করলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট লোক পাঠালেন। সা’দ (রাঃ) একটি সাদা বর্ণের গাধায় চড়ে আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতা বা তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তির আগমনে দাঁড়াও। অত:পর সা’দ (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসলেন। শুবাহ (রাঃ) শুবাহ (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তিনি (সা’দ) মাসজিদের নিকটে আসলেন তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার আগমনে দাঁড়াও। উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র, (বর্ণনাকারী হাসানের মতে) আলাপচারিতা ও কথাবার্তায় ফাত্বিমাহ্র (রাঃ) চাইতে এতোখানি মিল আর কাউকে আমি দেখিনি। বর্ণনাকারী হাসান শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেননি। ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসতেন, তিনি উঠে তার দিকে এগিয়ে যেতেন, তার হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁর আসনে তাকে বসাতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফাতিমার নিকট যেতেন, তথন তিনিও তাঁর জন্য উঠে আসতেন, তাঁর হাতে ধরে চুমু খেতেন এবং তার আসনে তাঁকে বসাতেন।
কোন লোকের নিজ সন্তানকে চুমু খাওয়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল-আক্বরা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলেন যে, তিনি হুসাইন (রাঃ)-কে চুমু দিচ্ছেন। আক্বরা’ বললেন, আমাদের দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের একজনকেও চুমু দেইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে অনুগ্রহ করে না, তাকেও অনুগ্রহ করা হয় না। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আয়িশাহ! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার নির্দোষ হওয়া সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি কুরআনের আয়াতটি তাকে পড়ে শুনালেন। তখন আমার পিতা-মাতা (আবূ বাক্র ও উম্মু রুমান) বললেন, ওঠো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথায় চুমু দাও। আমি বললাম, শুকরিয়া আদায় করছি আমি সম্মানিত মহান আল্লাহর; আপনাদের নয়।
দুই চোখের মাঝে চুমু খাওয়া
আশ-শা’বী (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখা হলো জাফার ইবনু আবূ ত্বালিবের সঙ্গে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তার দু’চোখের মাঝখানে চুমু দিলেন। [৫২১৮] দুর্বল: মিশকাত হা/৪৬৮৬
গালে চুমু দেওয়া সম্পর্কে
ইয়াস ইবনু দাগফাল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ নাদরাহ (রাঃ)-কে হাসান (রাঃ)-এর গালে চুমু দিতে দেখেছি। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সর্বপ্রথম মদিনায় আগমনকারী আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে আসলাম। এ সময় তার কন্যা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বিছানায় শোয়া দেখলাম। তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাকে দেখতে এসে বললেন, হে প্রিয় কন্যা! তুমি কেমন আছো? এবং তিনি তার গালে চুমু দিলেন।
হাতে চুমু দেয়া সম্পর্কে
আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। অত:পর পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁর হাতে চুমু দিলাম। [৫২২১]
শরীরে চুমু দেয়া সম্পর্কে
উসাইদ ইবনু হুদাইর (রাঃ) নামক এক আনসারী তিনি লোকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন এবং মাঝে মধ্যে রসিকতা করে লোকদের হাসাচ্ছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাঠের টুকরা দিয়ে তার পেটে খোঁচা দিলেন। উসাইদ (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে এর বদলা নিতে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার থেকে বদলা নাও। উসাইদ বললেন, আপনার গায়ে তো জামা আছে, অথচ আমার গায়ে জামা ছিল না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর গায়ের জামা খুললেন। তখন উসাইদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জড়িয়ে ধরে তাঁর এক পাশে চুমু দিতে লাগলেন, আর বললেনঃ আমার এটাই ইচ্ছা ছিল হে আল্লাহর রাসূল।
পায়ে চুমু দেয়া সম্পর্কে
উম্তু আবান বিনতু ওয়াযি’ ইবনু যারি’ (রহঃ) হতে তার দাদার তিনি (দাদা) ‘আবদুল ক্বাইসের প্রতিনিধি দলের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা মদিনায় এসে আমাদের আরোহী হতে দ্রুত নেমে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ও পায়ে চুমু দিলাম। হাসান, তবে পায়ে চুমু খাওয়ার কথাটি বাদে। অন্যদিকে আল-মুন্যির আল-আশাজ্জ তার কাপড়ের বান্ডিল হতে কাপড় বের করে তা পরা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন, তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমার মধ্যে দুটি উত্তম স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন: ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমিই কি এ অভ্যাস গড়ে তুলেছি, না আল্লাহ আমাকে এ দুটি অভ্যাসের উপর সৃ্ষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই তোমাকে এ দুটি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন। তখন তিনি বললেন, কৃতজ্ঞতা আদায় করছি সেই আল্লাহর যিনি আমাকে এমন দু’টি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন, যাকে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন। সহীহ।
কোন ব্যক্তির এরূপ বলা যে, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত, আমি আপনার জন্য উৎসর্গিত।
কোন ব্যক্তির এরূপ বলা যে, আল্লাহ তোমার চক্ষু শীতল করুন
ক্বাতাদাহ (রহঃ) বা অন্য কারো ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, জাহিলী যুগে আমরা বলতাম, “আল্লাহ তোমাদের চক্ষু শীতল করুন অথবা প্রত্যুষে তুমি আনন্দিত হও। ইসলামের আবির্ভাবের পর আমাদের এসব বলতে বাধা দেওয়া হয়। ‘আবদুর রায্যাক (রহঃ) বলেন, মা’মার বলেন, আল্লাহ তোমার জন্য তোমার চক্ষু শীতল করুন, এরুপ বলা অপছন্দনীয়। তবে ‘আল্লাহ তোমার চক্ষু শীতল করুন’ – এরুপ বলা দোষনীয় নয়। [৫২২৫]
একজন আরেকজনকে বললো, আল্লাহ তোমাকে হেফাযাত করুন
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে ছিলেন। পথিমধ্যে লোকেরা পিপাসার্ত হওয়ায় দ্রুত অগ্রসর হয়। আমি ঐ রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গেই ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে হেফাযাত করুন; যেমন তুমি তাঁর নাবীকে হিফাযাত করেছো (পাহাড়া দিয়ে)।
কেউ কারো সম্মানার্থে দাঁড়ালে
আবূ মিজলায (রহঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ (রাঃ) ইবনুয যুবাইর ও ইবনু ‘আমিরের নিকট আসলেন। ইবনু ‘আমির দাঁড়িয়ে গেলেন, কিন্তু ইবনুয যুবাইর বসে রইলেন। মু’আবিয়াহ (রাঃ) ইবনু ‘আমিরকে বললেন, বসো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক নিজের জন্য অন্য লোকের অপেক্ষা করাকে পছন্দ করে, সে যেন জাহান্নামে তার আসন নির্ধারন করে নেয়। আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাঠিতে ভর দিয়ে আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়ালে তিনি বললেনঃ তোমরা দাঁড়াবে না, যেরুপ অনারবরা একে অপরের সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়ায়।
যে ব্যক্তি বলে, অমুক আপনাকে সালাম দিয়েছে
গালিব (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা হাসান (রাঃ)–এর বাড়ির দরজায় বসে ছিলাম। এ সময় এক লোক এসে বলল, আমার পিতা আমার দাদার সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আমাকে আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট পাঠালেন। তিনি বললেন, তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম জানাবে। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট পৌঁছে বললাম, আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ ‘আলাইকা ওয়া ‘আলা আবীকাস্ সালাম (তোমার এবং তোমার পিতার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। আবূ সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আয়িশাহ (রাঃ) তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেন: জিবরাঈল (আ) তোমাকে সালাম জানিয়েছে। আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ “ওয়া ‘আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ” (অর্থ: তার উপরেও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক!)।
কারো ডাকের জবাবে ‘লাব্বায়িক’ বলা
আবূ হাম্মাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াসার (রহঃ) আবূ ‘আবদূর রহমান আল-ফিহরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে হুনাইনে উপস্থিত ছিলাম। আমরা প্রচণ্ড গরমের দিনে সফর করলাম। সূর্য ঢলে পড়লে আমি আমার সামরিক পোশাক পরিধান করে আমার ঘোড়ায় চড়লাম, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তিনি তখন তাঁর তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। আমি বললাম, আস্সালামু ‘আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহি ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। যাত্রার সময় হয়েছে। তিনি বললেনঃ ঠিক আছে। তারপর বললেনঃ হে বিলাল! উঠো। বিলাল (রাঃ) একটি বাবলা গাছের নীচ হতে হন্তদন্ত হয়ে আসলেন। তার ছায়া পাখীর ছায়ার মত ছোট ছিল। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিলাম, আমি উপস্থিত আছি, আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার ঘোড়ার গদি আঁটো। তিনি একটি গদি বের করলেন যার উভয় পাশ খেজুর গাছের পাতা ভর্তি ছিল। তাতে আত্মগর্বের কিছুই ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে আরোহন করলেন এবং আমরাও সওয়ার হলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো হাদীস বর্ণনা করেন।
একে অপরকে বলা, আল্লাহ আপনাকে হাসিমুখে রাখুন
ইবনু কিনানাহ ইবনু ‘আব্বাস ইবনু মিরদাস (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদা একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। তখন আবূ বাকর বা ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ আপনার মুখে হাঁসি ফুটিয়ে রাখুন। [৫২৩২] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি ও আমার মা তখন আমার একটি দেয়াল মেরামত করছিলাম। তিনি বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ! কি হচ্ছে? আমি বললাম, মেরামত করছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি দেখছি, নির্দেশ (কিয়ামত বা মৃত্যু) এর চেয়েও দ্রুত ধাবমান। সহীহ । আল-আ’মাশ (রহঃ) আল-আ’মাশ (রহঃ) এ সানাদে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তখন আমাদের জীর্ণশীর্ণ ঘরটি মেরামত করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা কি হচ্ছে? আমরা বললাম, আমাদের এ জীর্ণশীর্ণ কুঁড়ে ঘরটি মেরামত করছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তো দেখছি এ জীর্ণ ঘরের চাইতেও নির্দেশ দ্রুত ধাবমান। সহীহ।
বাড়িঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে বের হয়ে গম্বুজাকৃতির একটি উঁচু পাকা ঘর দেখতে পেয়ে বললেনঃ এটা কি? তাঁর সাহাবীগণ বললেন, এতা অমুক আনসারী ব্যক্তির। তিনি চুপ থাকলেন এবং বিষয়টি স্মরণে রাখলেন। পরে ঐ প্রাসাদের মালিক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসে লোকদের মধ্যে তাঁকে সালাম দিলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরূপ কয়েকবার হলো। ফলে লোকটি তার প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাগ হওয়া এবং তাঁর উপেক্ষা সম্পর্কে বুঝতে পারলো। এতে সে তার সাথীদের নিকট প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলো। সে বলল, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এরূপ আচরণ তা আমি বুঝতে পারছি না। লোকেরা বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে বের হয়েছিলেন। তিনি তোমার গম্বুজ দেখতে পেয়েছেন। অতএব সে তার পাকা বাড়িতে ফিরে এসে তা ধ্বংস করে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরেক দিন বের হলেন। তিনি ঐ প্রাসাদটি দেখতে না পেয়ে বললেন, প্রাসাদটির কি হলো? লোকেরা বললো, প্রাসাদের মালিক আমাদের নিকট তার প্রতি আপনার অসন্তষ্টি ও উপেক্ষার বিষয় জানতে চাইলে আমরা তাকে ঘটনা খুলে বলি, এতে সে তা বিধ্বস্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বস্তুত প্রত্যেক উচ্চ পাকা বাড়ি তার মালিকের জন্য দুর্ভাগ্যর কারন হবে। তবে যেটি একান্ত জরুরী সেটি ছাড়া। সহীহঃ সহীহাহ হা/২৮৩০।
উপর তলায় কক্ষ নির্মাণ সম্পর্কে
দুকাইন ইবনু সাঈদ আল-মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে খাবার চাইলাম। তিনি বললেনঃ হে ‘উমার! যাও, এদেরকে দাও। অতএব তিনি আমাদেরকে নিয়ে উপর তলার একটি রুমে উঠলেন, অতঃপর তার রুম হতে চাবি নিয়ে তা খুললেন।
কুল গাছ কাটা সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কুল গাছ কাটবেঃ, আল্লাহ তাকে মাথা উপর করে জাহান্নামে ফেলবেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) কে এ হাদিসের তাৎপর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি খুবই সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ খোলা ময়দানের কুল গাছ, যার ছায়ায় পথচারী ও চতুষ্পদ প্রাণী আশ্রয় নিয়ে থাকে তা কোনো ব্যক্তি নিজ মালিকানাহীন, অপ্রয়োজনে ও অন্যায়ভাবে কেটে ফেললে আল্লাহ তাকে উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তিনি হাদীসের সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত উন্নীত করে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।[৫২৩৮] হাসসান ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) আমি ‘উরওয়াহ (রহঃ)-এর পুত্র হিশাম (রহঃ)-কে কুল গাছ কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। এ সময় তিনি ‘উরওয়াহ (রাঃ)-এর দালানে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, তুমি কি এসব দরজা ও পত্রপল্লব দেখতে পাচ্ছো? এসব দরজার চৌকাঠ ‘উরওয়াহ (রাঃ) এর কুল গাছ দ্বারা তৈরী। তিনি তার জমি থেকে তা কেটে এনেছিলেন। তিনি বলেছেন, তাতে কোন অসুবিধা নেই। হুমাইদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি বলেন, হে ইরাকী! তুমি আমার নিকট একটি বিদ’আত নিয়ে এসেছো! সে বলল, আমি বললাম, বিদ’আত তো আপনাদের কাছ থেকেই। আমি মক্কায় এ ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, যে লোক কুল গাছ কাটে তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লানত করেছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণনা করেন। [৫২৩৯]
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো
বুরাইদাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেতে শুনেছি: মানুষের শরীরে তিনশো ষাটটি গ্রন্থি রয়েছে। তার প্রতিটি জোড়ার জন্য সদাক্বাহ করা উচিৎ। লোকজন বলল, কেউ কি এতো সদাক্বাহ করতে সক্ষম, হে আল্লাহর নাবী! তিনি বললেনঃ তুমি মাসজিদের শ্লেষ্মা পুতে দিবে এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলবে। তুমি যদি তা নাও পারো তাহলে চাশ্তের সময় দুই রাক’আত সলাত আদায় করবে, এতেই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রতিদিন সকালে আদম সন্তানের দেহের প্রতিটি জোড়ার জন্য সদাক্বাহ ধার্য হয়। তার সঙ্গে সাক্ষাতকারীকে তার সালাম দেয়া একটি সদাক্বাহ। সৎকাজের আদেশ করা একটি সদাক্বাহ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করাও একটি সদাক্বাহ। রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা একটি সদাক্বাহ। নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করাও একটি সদাক্বাহ। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে কামভাব উপভোগ করলে তাও কি তার জন্য সদাক্বাহ? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা অবৈধ পাত্রে রাখা হলে কি সে গুনাহগার হতো না? তিনি আরো বললেনঃ দুপুরের সময় দুই রাক’আত সলাত আদায় করা এসবের জন্য যথেষ্ট। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ (রাঃ) ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’ কথাটুকু উল্লেখ করেননি। আবূ যার (রাঃ) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথাবার্তার মাঝখানে এসবের উল্লেখ করেছেন। [৫২৪২] আমি এটি সহীহ এবং যঈফে পাইনি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি কখনো কোন ভালো কাজ করেনি, শুধু একটি কাঁটাযুক্ত ডাল রাস্তা হতে সরিয়েছিল। হয়ত ডালটি গাছেই ছিলো, কেউ তা কেটে ফেলে রেখেছিলো অথবা রাস্তায়ই পরে ছিল। আল্লাহ তার একাজ গ্রহন করলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।
রাতে আগুন নিভিয়ে রাখা
সালিম (রাঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা ঘুমানোর সময় তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রাখবে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একটি ইঁদুর আসে বাতির সলতে টেনে নিয়ে যেতে যেতে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্মুখে তাঁর মাদুরের উপর রাখলো। যার উপর তিনি বসা ছিলেন। এতে মাদুরের এক দিরহাম পরিমান জায়গা পুড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেনঃ যখন তোমরা ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দিবে। কারন শয়তান ইঁদুর ইত্যাদির অনুরূপ প্রানীকে এরুপ কাজে প্ররোচিত করে এবং তোমাদেরকে পোড়ায়।
সাপ মারা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ যেদিন থেকে সাপের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে ঐগুলোর সঙ্গে আমরা শান্তিচুক্তি করিনি। অতএব যে ব্যক্তি ভয়ে সেগুলোকে (হত্যা না করে) ছেড়ে দিবে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাপ মারবে। যে ব্যক্তি তাদের প্রতিশোধের ভয় করবে সে আমার দলভুক্ত নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তাদের প্রতিশোধের ভয়ে সাপ (না মেরে) ছেড়ে দিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। যখন হতে এগুলোর সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখন থেকে আমরা এগুলোকে নিরাপদে ছেড়ে দেইনি। আল-‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন, আমরা যমযম কূপকে পরিষ্কার করতে চাই। কিন্তু তাতে জিন অর্থাৎ ছোট ছোট অনেক সাপ রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐগুলো মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। সহীহ। যদি ইবনু সাবিত হাদীসটি “আব্বাস হতে শুনে থাকেন”। সালিম (রহঃ) হতে তার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা সাপ মেরে ফেলবে, বিশেষ করে ডোরাকাটা ও লেজকাটা সাপ। কেননা এ দু’টি সাপ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটায়। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সাপ পেলেই মেরে ফেলেতেন। আবূ লুবাবাহ অথবা যায়িদ ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একটি সাপের পিছু ধাওয়া করতে দেখে বললেন, ঘরে বসবাসকারী সাপ মারতে নিষেধ করা হয়েছে। আবূ লুবাবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে বসবাসকারী সাপ মারতে বারণ করেছেন, তবে ডোরাবিশিষ্ট এবং লেজকাটাগুলো নয়। কারন এগুলো দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে এবং নারীদের গর্ভপাত ঘটায়। নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ লুবাবাহ (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ)- এর নিকট উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর তিনি তার ঘরে একটি সাপ দেখতে পান। তার আদেশে ঘর হতে সাপটি বের করে বাকী’র দিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। নাফি’ (রহঃ) তিনি এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, পরে আমি ঐ সাপটিকে আবার তার ঘরে দেখেতে পেয়েছি। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ও তার এক সাথী অসুস্থ আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে দেখতে যান। তিনি বলেন, আমরা তার নিকট হতে বেরিয়ে আসার পর আরেক সঙ্গীর সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। তিনিও তাকে দেখতে এসেছেন। আমরা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মাসজিদে বসলাম। তিনি ফিরে এসে আমাদের জানালেন, তিনি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ কতক সাপ জিনদের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কেউ তার ঘরে এগুলোর কোনোটিকে দেখতে পেলে সে যেন তিনবার একে সতর্ক করে। তারপরও ফিরে আসলে সে যেন একে মেরে ফেলে। কারন তা শয়তান। [৫২৫৪] দুর্বলঃ যঈফাহ, হা/৩১৬৩. আবুস সায়িব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরীর (রাঃ) নিকট আসলাম। আমি তার নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় আমি তার খাটের নিচে নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। চেয়ে দেখি একটি সাপ। আমি উঠে দাঁড়ালাম। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, তোমার কি হলো? আমি বললাম, ওখানে সাপ। তিনি বললেন তা তুমি কি করতে চাও? আমি বললাম, আমি এটিকে হত্যা করবো। তিনি তার ঘরের নিজ কক্ষ বরাবর অপর একটি কক্ষের দিকে ইশারা করে বললেন, আমার এক চাচাত ভাই এই কক্ষে বাস করতো। আহযাবের যুদ্ধের দিন সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাড়ি যাওয়ার অনুমতি চাইল, সে ছিল সদ্য বিবাহিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন এবং সঙ্গে তার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন। সে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো, তার স্ত্রী ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে। সে বর্শা দ্বারা তার স্ত্রীকে ইশারা করলো আর স্ত্রী বললো, তুমি তাড়াহুড়া করো না, আগে দেখো কিসে আমাকে বের হতে বাধ্য করেছে। সে ঘরে প্রবেশ করে দেখলো এক বীভৎস সাপ। সে সেটিকে বর্শাবিদ্ধ করলো। সাপটি তখনো তড়পাচ্ছিল। তিনি বললেন, আমার জানা নেই কার মৃত্যু আগে হয়েছে, লোকটির না সাপটির! তার গোত্রের লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যাতে তিনি আমাদের সঙ্গীকে ফিরিয়ে দেন। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। তারপর বললেনঃ মাদীনাহ্র একদল জিন ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাদের কাউকে যদি তোমরা দেখতে পাও তাহলে তিনবার তাকে সতর্ক করবে। তারপরও যদি তোমাদের সামনে তা আত্মপ্রকাশ না করে তাহলে তোমরা তাকে মারতে চাইলে তিনবার বলার পর মারতে পারো। ইবনু ‘আজলান (রহঃ) ইবনু ‘আজলান (রহঃ) হতে এ হাদীস সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতে রয়েছেঃ সে এটিকে তিনবার সতর্ক করবে। তারপরও যদি দেখতে পাও, তবে তাকে মারবে। কারণ তা একটি শয়তান। [৫২৫৬] হিশাম ইবনু যাহবার আযাদকৃত গোলাম আবুস সায়িব (রহঃ) তিনি আবূ সাঈদ আল-খুদরীর (রাঃ) নিকট গেলেন। অতঃপর অনুরূপ বরং এর চেয়ে পূর্ণাঙ্গ হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছেঃ তিনদিন পর্যন্ত একে সতর্ক করো। তারপরও যদি তোমরা দেখতে পাও, তাহলে সেটিকে হত্যা করো। কারণ সেটি হচ্ছে একটি শয়তান। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) হতে তার পিতা একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঘরে বসবাসকারী সাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা তোমাদের বসবাসের ঘরে এগুলোকে দেখতে পেলে বলবেঃ ‘আমি তোমাদেরকে সেই ওয়াদার কসম দিয়ে বলছি যা নূহ (আ) তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছিলেন। অথবা আমি তোমাদেরকে সেই ওয়াদার কসম দিয়ে বলছি যা সুলায়মান (আ) তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন যে, তোমরা আমাদের ক্ষতি করবে না’। এরপরও তারা ফিরে এলে তোমরা তাদের মেরে ফেলো। [৫২৫৮] ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেছেন, তোমরা সব সাপকেই হত্যা করবে, কেবল সাদা জিন ব্যতীত যা দেখতে রৌপ্য দন্ডের মত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমাকে এক ব্যক্তি বলেছেন, সাদা সাপ আঁকাবাঁকা হয়ে চলাচল করে না। এটা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে আল্লাহর ইচ্ছায় তা এই সাপের একটি নিদর্শন।
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে
আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিরগিটি (টিকটিকি) মারার হুকুম করেছেন। তিনি তার নাম দিয়েছেন অনিষ্টকারী। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি গিরগিটি (টিকটিকি) হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথম আঘাতে মারতে পারলে তার জন্য সত্তর নেকী রয়েছে।
পিঁপড়া মারা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক নবী (আ) এক গাছের নিচে বসবাস করছিলেন। একটি পিঁপড়া তাঁকে কামড় দিলো। তিনি বিছানাপত্র সরানোর নির্দেশ দিলে তা তাঁর নিচ হতে সরানো হলো। তারপর তিনি আদেশ দিলে সব পিঁপড়া জ্বালিয়ে দেয়া হলো। আল্লাহ তাঁর নিকট ওয়াহী পাঠালেনঃ একটি মাত্র পিঁপড়া নয় কেন? আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদা একটি পিঁপড়া এক নাবীকে কামড় দিলে তাঁর নির্দেশে সব পিঁপড়া জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ ঐ নাবীর নিকট ওয়াহী পাঠালেনঃ তোমাকে একটি মাত্র পিঁপড়া কামড় দিয়েছে। অথচ তুমি তাসবীহ পাঠরত একটি উম্মাত ধ্বংস করে দিলে! ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার প্রকার প্রাণী হত্যা করতে বারণ করেছেনঃ পিঁপড়া, মধুমক্ষিকা, হুদহুদ পাখি এবং চড়ুই সদৃশ বাজ পাখি। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য চলে গেলেন। এদিকে আমরা একটি ছোট পাখি দেখতে পেলাম। তার সঙ্গে ছিল দু’টি বাচ্চা। আমরা বাচ্চা দু’টিকে ধরে ফেলি। মা পাখিটি এসে পাখা ঝাপটাতে লাগলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে বললেনঃ কে এই পাখিটিকে তার বাচ্চা ধরে এনে ভীত সন্ত্রস্ত করেছে? তোমরা এটির বাচ্চা ফিরিয়ে দাও। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পুড়িয়ে মারা পিঁপড়ার একটি বাসস্থানও দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ এগুলো কে পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা। তিনি বললেনঃ আগুনের রব ছাড়া আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া কারো পক্ষে সমীচীন নয়।
ব্যাঙ হত্যা করা
আবদুর রহমান ইবনু ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ডাক্তার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঔষধ তৈরীতে ব্যাঙ ব্যবহার করা বিষয়ে প্রশ্ন করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ব্যাঙ মারতে বারণ করেন।
পাথর কুচি নিক্ষেপ করা
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথরকণা নিক্ষেপ করতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ এর দ্বারা শিকারও ধরা যায় না, শত্রুকেও আঘাত করা যায় না, বরং তা চোখ নষ্ট করে এবং দাঁত ভেঙ্গে ফেলে।
খাত্না করা সম্পর্কে
উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ আল-আনসারী (রাঃ) মাদীনাহ্তে এক মহিলা খাত্না করতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি গভীর করে কাটবে না। কারণ তা মেয়েলোকের জন্য অধিকতর আরামদায়ক এবং স্বামীর জন্য অতি পছন্দনীয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রহঃ) হতে ‘আবদুল মালিক (রহঃ) সূত্রে একই অর্থে ও সানাদে এটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সানাদ দুর্বল।
রাস্তায় পুরুষদের সাথে নারীদের যাতায়াত সম্পর্কে
হামাযাহ ইবনু আবূ উসাইদ আল-আনসারী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হওয়ার সময় দেখেন, রাস্তায় পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের বললেনঃ তোমরা একটু অপেক্ষা করো। কারণ তোমাদের রাস্তার মাঝ দিয়ে চলাচলের পরিবর্তে পাশ দিয়ে চলাচল করা উচিৎ। সুতরাং মহিলারা দেয়ালের পাশ দিয়ে চলাচল করতো, এতে তাদের চাদর দেয়ালের সাথে আটকে যেতো। [৫২৭০] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষ লোককে দুই মহিলার মাঝখান দিয়ে চলাচল করতে বারণ করেছেন। [৫২৭১] বানোয়াটঃ যঈফাহ হা/৩৭৫।
সময়কে গালি দেয়া সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। সে যুগকে (সময়কে) গালি দেয়। অথচ যুগ আমারই নিয়ন্ত্রণে। আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি।