5. নফল সালাত
নাফ্ল ও সুন্নাত সালাতের রাক’আত সংখ্য
উম্মু হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক বারো রাক’আত নাফ্ল সলাত আদায় করবে এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর নির্মান করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাফ্ল সলাত সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি আমার ঘরে যুহরের (ফরয সলাতের) পুর্বে চার রাক’আত সলাত আদায় করেন। অতঃপর বাইরে গিয়ে লোকদেরকে নিয়ে ফরয সলাত আদায় করতেন। পুনরায় আমার ঘরে ফিরে এসে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন। তিনি লোকদেরকে নিয়ে ইশার সলাত আদায় করার পর আমার ঘরে এসে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন। তিনি লোকদের নিয়ে ‘ইশার সলাত আদায়ের পর আমার ঘরে এসে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। এছাড়া তিনি রাতে বিতরসহ নয় রাক’আত সলাত আদায় করতেন। তিনি রাতে দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘক্ষন বসে সলাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন ঐ অবস্থায়ই রু’কু ও সাজদাহ্ করতেন আর বসাবস্থায় ক্বিরাআত পড়লে বসাবস্থায় থেকেই রু’কু ও সাজদাহ্ করতেন। যখন ফাজ্র উদয় হতো তিনি দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর বের হয়ে লোকদেরকে নিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের (ফারয সলাতের) পুর্বে দু’ রাক’আত ও পরে দু’ রাক’আত, মাগরিবের পরে দু’ রাক’আত সলাত তাঁর ঘরে আদায় করতেন। তিনি ‘ইশার পরে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। আর জুমু’আহর (ফারয সলাতের) পরে ঘরে এসে দু’ রাক’আত আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী, মুসলিমে কেবল জুমুআহর পরে দু’ রাক’আত । আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের পূর্বে চার রাক’আত ও ফজরের পূর্বে দু রাক’আত সলাত কখনও ত্যাগ করতেন না। সহীহঃ বুখারী।
ফাজরের দু’ রাক’আত (সুন্নাত )
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের পূর্বে দু রাক’আত সলাতের চেয়ে অধিক দৃঢ় প্রত্যয় অন্য কোন নাফ্ল সলাতে রাখেননি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
ফাজ্রের দু’ রাক’আত সুন্নাত সংক্ষেপ করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের পুর্বে দু’ রাক’আত সলাত এতো সংক্ষেপে আদায় করতেন যে , আমি (মনে মনে ) বলতাম, তিনি কি এ দু’ রাক’আতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করেছেন? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের দু’ রাক’আত (সুন্নাতে) ‘ক্বুল ইয়া- আয়্যুহাল কা-ফিরু-ন’ এবং ‘ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন। সহীহঃ মুসলিম। বিলাল (রাঃ) একদা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফাজ্রের সলাতের সংবাদ দিতে আসলে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বিলালকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করে তাকে তাতেই ব্যস্ত রাখলেন, এমতাবস্থায় আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বিলাল (রাঃ) এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বারবার সংবাদ দেয়া স্বত্বেও তিনি বাইরে আসলেন না। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে লোকদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তিনি তাঁকে জানালেন যে, আয়িশাহ (রাঃ) তাকে কোন এক কাজে ব্যস্ত রেখেছিলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও বাইরে আসতে যথেষ্ট দেরী করেছেন, এমতাবস্থায় আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। অতঃপর (বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি ফাজরের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করেছি। বিলাল বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনিও আজ খুব ভোর করে ফেলেছেন। তিনি বললেনঃ আমি এর চেয়ে অধিক ভোর করলেও ঐ দু’রাক’আত আদায় করবো এবং তা উত্তম সুন্দরভাবে আদায় করবো। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ফাজরের দু’রাক’আত কখনো ত্যাগ করো না, যদিও তোমাদেরকে ঘোড়া পদদলিত করলেও। [১২৬১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময় ফাজরের দু’ রাক’আতে “আমান্না বিল্লাহি ওয়ামা উনজিলা ইলাইনা” (সূরাহ আল-বাকারাহঃ ১৩৬) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলেন, তবে এ আয়াতটি প্রথম রাক’আতে পাঠ করতেন। আর দ্বিতীয় রাক’আতে পাঠ করতেনঃ “আমান্না বিল্লাহি ওয়াশহাদ বিআন্না মুসলিমূন” (সূরাহ আলে-ইমরানঃ ৫২)। সহীহঃ মুসলিমে এ কথা বাদেঃ অধিকাংশ সময়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফাজ্রের দু’ রাক’আতের প্রথম রাক’আতে “কুল আমান্না বিল্লাহি ওয়ামা উনযিলা ‘আলাইনা” (সূরাহ আলে ইমরানঃ ৮৪) তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। আর দ্বিতীয় রাক’আতে তিলাওয়াত করতে শুনেছেন এ আয়াতঃ “রব্বানা আমান্না বিমা আনযালতা ওয়াত্তাবা’নার রসূলা ফাক্তুবনা মা’আশ শাহিদীন” (সূরাহ আলে-ইমরানঃ ৫৩) অথবা “ইন্না আরসালনাকা বিলহাক্কি বাশীরাও ওয়া নাযীরা, ওয়ালা তুসআলু আন আসহাবিল জাতীম” (সূরাহ আল-বাকারাহঃ ১১৯)। হাসানঃ বায়হাক্বী এটি বর্ণনা করেছেন তার এ কথাটি বাদেঃ অথবা “ইন্না আরসালনাকা বিলহাক্কি বাশীরাও ওয়া নাযীরা, ওয়ালা তুসআলু আন আসহাবিল জাতীম” (সূরাহ আল-বাকারাহঃ ১১৯)
ফাজরের সুন্নাতের পর বিশ্রাম গ্রহণ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ফাজরের পূর্বে দু’ রাক’আত সলাত আদায়ের পর যেন ডান কাতে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। মারওয়ান ইবনুল হাকাম তাকে বললো, আমাদের কেউ যতক্ষণ ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম গ্রহণের সময়টুকুতে মসজিদে রওয়ানা হলে তাকি যথেষ্ট হবে না? ‘উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, তিনি উত্তরে বলেন, ‘না’। তিনি বলেন, ইবনু উমারের কাছে এ হাদিস পৌঁছুলে তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছেন। তখন কেউ ইবনু উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, তিনি যা বলেছেন আপনি তার কিছু অস্বীকার করেন? তিনি বলেন, না, তবে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, আর আমরা ভীরুতা ও নমনীয়তা প্রকাশ করছি। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু উমারের উক্তিতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, তারা ভুলে গেলে এবং আমি স্মরণে রাখলে আমার দোষ কোথায়? ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শেষ রাতের সলাত শেষ করার পর আমাকে জাগ্রত দেখলে আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন। যদি আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তাহলে তিনি আমাকে জাগিয়ে দিয়ে দু’ রাক’আত আদায় করতেন। অতঃপর মুয়ায্যিন আসা পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। মুয়াযযিন এসে ফাজ্রের সলাতের সংবাদ দিলে তিনি সংক্ষেপে দু’ রাক’আত আদায় করে সলাতের জন্য বের হতেন। সহীহঃ কিন্তু হাদিসের ‘মুয়াযযিন আসার পর্যন্ত ডান কাতে শুয়ে থাকা’ কথাটি শায। মাহফূয হচ্ছেঃ তার পরে। আবূ সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায়ের পর আমি ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও বিশ্রাম নিতেন। আর আমি জাগ্রত থাকলে তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মুসলিম ইবনু আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফাজ্রের সলাতের জন্য বের হতাম। তিনি কারোর নিকট দিয়ে যাবার সময় তাকে সলাতের জন্য আহ্বান করতেন অথবা তাঁর পা দিয়ে তাকে নাড়া দিতেন। [১২৬৭]
ফাজরের সুন্নাত আদায়ের পূর্বে ইমামকে জামা’আতে পেলে
আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করলো। সে প্রথমে দু’ রাক’আত সুন্নাত আদায় করার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাতে শরীক হলো। সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তোমার একাকী আদায়কৃত ঐ দু’ রাক’আত সলাত কিসের অথবা তুমি আমাদের সাথে যা আদায় করেছো? সহীহঃ মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে উক্ত ফরয সলাত ছাড়া অন্য কোন সলাত আদায় করা যাবে না। সহীহঃ মুসলিম।
ফাজরের সুন্নাত ছুটে গেলে তা কখন আদায় করবে?
ক্বায়িস ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতের পর এক ব্যাক্তিকে দু’ রাক’আত আদায় করতে দেখে বলেনঃ ফজরের সালাত তো দু’ রাক’আত। সে বলল, আমি তো ফজরের পূর্বে যে দু’ রাকা’আত আদায় করিনি, সেটাই এখন আদায় করে নিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। সুফয়ান (রহঃ) তিনি ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) এ হাদীস সা’দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সা’দ এর দুই পুত্র ‘আবদ রাব্বিহী ও ইয়াহইয়া এ হাদীস মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের দাদা যায়িদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেছেন এবং ঘটনাটি তার সাথে সংশ্লিষ্ট। সহীহঃ পূর্বেরটির কারনে। এবং তার উক্তিঃ (তাদের দাদা যায়িদ) কথাটি ভুল। সঠিক হচ্ছেঃ (তাদের দাদা ক্বায়িস)।
যুহরের পূর্বে ও পরে চার রাক’আত সালাত
আনবাসাহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু হাবিবাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে যুহরের পূর্বে চার রাক’আত এবং পরে চার রাক’আত সালাত আদায় করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হবে। আবূ আইয়ূব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যুহরের পূর্বে এক সালামে চার রাক’আত সালাত রয়েছে, এগুলোর জন্য আকাশের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়।
‘আসরের ফারয্ সলাতের পূর্বে সলাত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন, যে ‘আসরের পূর্বে চার রাক’আত সালাত আদায় করে। ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের পূর্বে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। হাসান, তবে (চার রাক’আত) শব্দযোগে।
‘আসরের পর সালাত আদায়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর মুক্তদাস কুরাইব (রহঃ) একদা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস, ‘আব্দুর রহমান ইবনু আযহার ও আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) সকলেই তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে প্রেরণ করেন। (তারা তাকে বললেন), আমাদের পক্ষ হতে ‘আয়িশাহকে সালাম জানাবে, তাঁকে ‘আসরের পরে দু’ রাক’আত সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে যে, আমাদের জানতে পেরেছি, আপনি ঐ দু’ রাক’আত সালাত আদায় করে থাকেন। অথচ আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পড়তে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনাকারী কুরাইব বলেন), অতঃপর আমি তাঁর কাছে যাই এবং তারা আমাকে যে সংবাদসহ পাঠিয়েছেন, তা পৌঁছাই। তিনি বললেন, এ বিষয়ে উম্মু সালামাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করো। সুতরাং আমি তাদের নিকট ফিরে এসে তার বক্তব্য তাদেরকে জানাই। তারা আমাকে পুনরায় উম্মু সালামহ (রাঃ) এর নিকট ‘আয়িশাহর অনুরুপ সংবাদসহ পাঠালেন। উমু সালামাহ (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’ রাক’আতকে যে নিষেধ করেছেন, তা আমিও শুনেছি। কিন্তু পরবর্তীতে আমি তাকে এ দু’ রাক’আত আদায় করতে দেখেছি। তবে তিনি এ দু’ রাক’আত আদায় করেছেন ‘আসরের (ফারয) সালাতের পরে। অতঃপর তিনি যখন আমার কাছে আসেন, তখন আনসারের বনি হারাম গোত্রীয় কতিপয় মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিল। তিনি সে সময় তা আদায় করেছেন। আমি আমার এক দাসীকে তাঁর কাছে এ বলে প্রেরণ করি যে, তুমি তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! উম্মু সালামাহ (রাঃ) এ দু’ রাক’আত সালাত সম্পর্কে আপনাকে নিষেধ করতে শুনেছেন। অথচ এখন তিনি দেখেছেন যে, আপনি তা নিজেই আদায় করেছেন। এ সময় তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলে তাঁর থেকে সরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, দাসী তাই করলো। তিনি তাকে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করায় সে সরে দাঁড়ালো। অতঃপর তিনি সলাত শেষে বললেনঃ হে আবু উমাইয়্যার কন্যা! তুমি আমাকে ‘আসরের পরে দু’ রাক’আত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো। ইসলাম গ্রহনের উদ্দেশে ‘আবদুল ক্বায়িস গোত্রীয় কতিপয় লোক আমার নিকট আসার কারনে আমি যুহরের দু’ রাক’আত আদায় করতে পারিনি। এটা সেই দু’ রাক’আত। সহীহঃ মুসলিম ও বুখারী।
সূর্য উপরে থাকতে দু’ রাক’আত সলাতের অনুমতি
‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের পর সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য সূর্য উঁচুতে থাকাবস্থায় আদায় করা যায়। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্র ও ‘আসর ব্যতীত প্রত্যেক ফরয সলাতের পরে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। [১২৭৮] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কতিপয় আল্লাহর প্রিয় লোক আমার কাছে সাক্ষ্য দেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ছিলেন তাদের একজন। মুলতঃ আমার নিকট ‘ উমার (রাঃ) ছিলেন তাদের মধ্যেকার অধিক আল্লাহর প্রিয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ফায্রের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো সলাত নেই এবং ‘আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো সালাত নেই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আমর ইবনু আনবাসাহ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাতের কোন অংশ অধিক শ্রবণীয় (অর্থাৎ আল্লাহ দু’আ বেশি কবুল করেন)? তিনি বলেন: রাতের শেষাংশ, এ সময় যতটুকু ইচ্ছা সালাত আদায় করবে। কেননা এ সময়ে মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ) এসে ফাজরের সালাত শেষ হওয় পর্যন্ত উপস্থিত থাকেন এবং লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সলাত হতে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না তা এক কিংবা দুই তীর পরিমাণ উপরে উঠে। কারণ সূর্য উদিত হয় শাইত্বানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে। আর কাফিররা এ সময় তার পূজা করে থাকে। এরপর তীরের ছায়া ঠিকথাকা (দ্বি প্রহরের পূর্বে) পর্যন্ত যত ইচ্ছা সলাত আদায় করবে, এ সময়ের সলাত সম্পর্কে ফেরেশতাগণ সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন এবং তা লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর সলাত হতে বিরত থাকবে, কেননা এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় এবং তার সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয়। যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়বে তখন যত ইচ্ছা সলাত আদায় করবে, কেননা আসরের সলাত পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যকার সলাত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় হয়। অতঃপর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সলাত হতে বিরত থাকবে, কেননা তা শাইত্বানের দুই শিংয়ের মধ্যে দিয়ে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফিররা তার উপাসনা করে থাকে। অতঃপর বর্ণনাকারী এ বিষয়ে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। আল-‘আব্বাস (রহঃ) বলেন,আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে আবূ সাললাম (রহঃ) আমার কাছে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে আমি অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল করেছি, সেজন্যে আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁরই কাছে তাওবাহ করি। সহীহঃ মুসলিম এ বাক্য বাদে জাওফুল লাইল। ইবনু উমার (রাঃ) এর মুক্তদাস ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে সুবহি সাদিকের পর সলাত আদায় করতে দেখে বললেন, হে ইয়াসার! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। ঠিক ঐ সময় আমরা এ সলাত আদায় করছিলাম। তিনি বললেনঃ অবশ্যই তোমাদের উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় যে সুবহি সাদিকের পর (ফজরের) দু’রাক’আত সুন্নাত ব্যতীত তোমরা অন্য কোন সলাত আদায় করবে না। সহীহ: মুসলিম। আল-আসওয়াদ ও মাসরূক (রহঃ) সূত্র তারা উভয়ে বলেন, আমরা আয়িশাহ (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দিনই আমার কাছে আসতেন, তখন তিনি আসরের পর দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আয়িশা (রাঃ) এর মুক্তদাস যাকওয়ান (রহঃ) তিনি তাকে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে ‘আসরের পরে সলাত আদায় করতেন, তবে লোকদেরকে নিষেধ করতেন এবং তিনি বিরতিহীনভাবে (বহুদিন) সওম পালন করতেন, কিন্ত অন্যদেরকে বিরতিহীনভাবে সওম পালনে নিষেধ করতেন। [১২৮৩]
মাগরিবের পূর্বে নাফ্ল সলাত
আব্দুল্লাহ আল-মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মাগরিবের পূর্বে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করো। তিনি দু’ বার এরূপ বললেন। অতঃপর বললেন, যার ইচ্ছা হয়। এ আশংকায় যে লোকেরা হয়ত এটাকে সুন্নাত (বা স্থায়ী নিয়ম) বানিয়ে নিবে। সহীহঃ বুখারী আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে মাগরিবের পূর্বে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেছি। মুখতার ইবনু ফুলফুল (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাদের সলাত আদায় করতে দেখেছেন কি? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি আমাদেরকে দেখেছেন। তবে তিনি আমাদেরকে এ বিষয় কোন আদেশ বা নিষেধ করেননি। সহীহ: মুসলিম, অনুরূপ বুখারী। আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে সলাত রয়েছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে সলাত রয়েছে, যার ইচ্ছে হয় পড়তে পারে। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। তাঊস (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ)-কে মাগরিবের পূর্বে দু’ রাক’আত সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমি কাউকে এ সলাত আদায় করতে দেখিনি। তবে ‘আসরের পরে দু’ রাক’আত সলাত আদায়ের অনুমতি আছে। [১২৮৭]
সালাতুদ্- দুহা (চাশতের সলাত)
আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের উপর সদাক্বাহ ওয়াজিব করে। কারোর সাক্ষাতে তাকে সালাম দেয়া একটি সদাক্বাহ। সৎ কাজের আদেশ একটি সদাক্বাহ, অন্যায় হতে নিষেধ করা একটি সদাক্বাহ। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদাক্বাহ। পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব বহন করা একটি সদাক্বাহ। আর চাশতের দু’ রাক’আত সলাত এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ‘আব্বাদের বর্ণনাটি পরিপূর্ণ ও ক্রটিমুক্ত। অপর বর্ণনাকারী মুসাদ্দাদ তার বর্ণনায় “সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায় হতে নিষেধ” বাক্যটি উল্লেখ করেননি। তিনি তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, “এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অমুক অমুক কাজ।’’ ইবনু মানী’ তার হাদীসে বৃদ্ধি করেছেন যে, লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ তার স্ত্রী সাথে সহবাস করে যৌন-তৃপ্তি মিটাবে এটাও কি তার জন্য সদাক্বাহ? তিনি বললেনঃ তোমার কি ধারণা যদি সে তা অবৈধ স্থানে ব্যবহার করতো তবে কি সে গুনাহগার হতো না? সহীহ: মুসলিম। আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা আবু যার (রাঃ) এর নিকট অবস্থানকালে তিনি বলেছেন, প্রতিদিন তোমাদের প্রত্যেকের দেহের প্রতিটি অস্থি একটি সদাক্বাহ ওয়াজিব করে। প্রত্যেক সলাত, প্রত্যেক সওম, প্রত্যেক হাজ্জ, প্রত্যেক তাসবীহ, প্রত্যেক তাকবীর এবং প্রত্যেক তাহমীদ তার জন্য সদাক্বাহ স্বরূপ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ উত্তম কাজগুলোকে গণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ চাশতের দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলে তা ঐগুলোর পরিপূরক হবে (অনুরূপ সওয়াব পাবে)। সহীহ: মুসলিম। সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি ফাজ্রের সলাত আদায় শেষে চাশতের সলাত আদায় পর্যন্ত তার জায়গাতে বসে থাকলে এবং এ সময়ে উত্তম কথা ছাড়া অন্য কিছু না বললে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়্ যদিও গুনাহের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনারাশির চেয়ে অধিক হয়। [১২৯০] আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক সলাতের পরে আরেক সলাত যার মধ্যবর্তী সময়ে কোনো গুনাহ হয়নি, তা ইল্লীয়্যুনে (উচ্চ মর্যাদায়) লিপবদ্ধ করা হয়। নু’আইম ইবনু হাম্মার (রাঃ) তিনি বলেন,আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, হে আদম সন্তান! তোমরা দিনের পূর্বহ্নের মধ্যে চার রাক’আত সলাত হতে আমাকে ত্যাগ করো না, তাহলে আমি আখিরাতে তোমার জন্য যথেষ্ট হবো। আবূ ত্বালিবের কন্য উম্মু হানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন আট রাক’আত চাশতের সলাত আদায় করেছেন। তিনি প্রতি দু’ রাক’আতে সালাম ফিরিয়েছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আহমাদ ইবনু সলিহ বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন চাশতের সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর পূর্ববতী হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইবনুস সারহ বলেন, উম্মু হানী (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন, কিন্ত এ হাদীসে চাশতের সলাতের উল্লেখ নেই। তবে তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, উম্মু হানী (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ আমদেরকে অবহিত করেননি যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে চাশতের সলাত আদায় করতে দেখেছেন। অবশ্য তিনি বর্ণনা করেছেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে গোসল করে আট রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। এরপর কেউই তাকেঁ উক্ত সলাত আদায় করতে দেখেনি। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি (একই রাক’আতে) একাধিক সূরাহ একত্রে পাঠ করতেন? তিনি বললেন, (হাঁ) তিনি মুফাসসাল হতে পাঠ করতেন। (অর্থাৎ সূরাহ হুজরাত হতে নাস পর্যন্ত কুরাআনের শেষ দিকের সূরাহগুলো মিলিয়ে পড়তেন)। সহীহ: মুসলিমে এর প্রথমাংশ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো চাশতের সলাত আদায় করেননি। তবে আমি তা আদায় করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোনো কাজকে যদিও প্রিয় মনে করতেন, কিন্ত তা এ আশংকায় বর্জন করতেন যে, লোকেরা তার উপর আমল করলে হয়ত তাদের উপর তা ফরয করে দেয়া হবে। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। সিমাক (রহঃ) আমি জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহচর্যে থাকতেন? তিনি বলেন, হাঁ, অধিক সময় তার সাহচর্যে ছিলাম। তিনি সূর্যোদায় পর্যন্ত ঐ স্থানেই বসে থাকতেন সেখানে তিনি ফজরের সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর সূর্যোদয় হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে যেতেন। সহীহ: মুসলিম
দিনের নাফ্ল সলাতের বর্ণনা
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের এবং দিনের (নাফল) সলাত দু’ রাক’আত করে আদায় করতে হয়। আল-মুত্তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সলাত দু’ রাক’আত দু’ রাক’আত করে আদায় করতে হয়। প্রত্যেক দু’ রাক’আতে তোমার তাশাহহুদ পড়তে হবে। অতঃপর তুমি তোমার বিপদাপদ ও দারিদ্রের কথা দু’ হাত উঠিয়ে দু’আ করবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! যে ব্যাক্তি এরূপ করে না তার আচরণ হবে ক্রটিপূর্ণ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ)-কে রাতে দু’ রাক’আত সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে দু’ রাক’আত আদায় করতে পারো, আবার ইচ্ছে হলে চার রাক’আত করেও আদায় করতে পারো।
সলাতুত তাসবীহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আব্বাস ইবনু ‘আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে বললেনঃ হে ‘আব্বাস! হে আমার চাচা ! আমি কি আপনাকে দান করবো না? আমি কি আপনাকে উপহার দিবো না? আমি কি আপনার দশটি মহৎ কাজ করে দিবো না? আপনি যখন সে কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন, তখন আল্লাহ আপনার প্রথম ও শেষ, অতীত ও বর্তমান, ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃত, ছোট ও বড় এবং প্রকাশ্য ও গোপন সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। ঐ দশটি মহৎ কাজ হচ্ছেঃ আপনি চার রাক’আতের ক্বিরাআত হতে অবসর হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় বলবেন, “সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” পনের বার, অতঃপর রুকূ’ করুন এবং রুকূ’ অবস্থায় তা পাঠ করুন দশবার, আবার রুকূ’ হতে মাথা উঠিয়ে তা পাঠ করুন দশবার, অতঃপর সাজদাহ্য় যান এবং সাজদাহ্ অবস্থায় তা পাঠ করুন দশবার, অতঃপর সাজদাহ্ হতে মাথা উঠিয়ে তা পাঠ করুন দশবার। আবার সাজদাহ্ করুন, সেখানে তা পাঠ করুন দশবার। অতঃপর সাজদাহ্ হতে মাথা তুলে তা পাঠ করুন দশবার, এ নিয়মে প্রত্যেক রাক’আতে তাসবীহর সংখ্যা হবে পঁচাত্তুর বার এবং তা করতে থাকুন পূর্ণ চার রাক’আতে। (এতে পুরো সলাতে তাসবীহর সংখ্যা হবে তিন শত বার)। আপনার পক্ষে সম্ভব হলে উক্ত সলাত দৈনিক একবার আদায় করুন। অন্যথায় সপ্তাহে একবার, তাও সম্ভব না হলে মাসে একবার, এটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার, যদি তাও না হয় তবে সারা জীবনে অন্তত একবার আদায় করুন। আবুল জাওযা’ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী বর্ণনা করেছেন। তাদের ধারণা, তিনি হচ্ছেন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)। তিনি বলেছেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি আগামীকাল ভোরে আমার কাছে আসবে, আমি তোমাকে কিছু দান করবো, আমি তোমাকে দিবো, আমি তোমাকে উপঢৌকন প্রদান করবো। আমি ধারণা করলাম, তিনি আমাকে কোন জিনিস দিবেন। (অতঃপর পরদিন তাঁর নিকটে আসলে) তিনি বললেনঃ “দুপুরে সূর্য হেলে পড়লে তুমি দাঁড়িয়ে চার রাক’আত সলাত আদায় করবে”। অতঃপর পূর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তিনি বললেনঃ অতঃপর দ্বিতীয় সাজদাহ্ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে এবং দাঁড়ানোর পূর্বে দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্হামদুলিল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবার এবং দশবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। এভাবে তোমার চার রাক’আত আদায় করবে। তিনি বললেনঃ তুমি দুনিয়াবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহগার হয়ে থাকলেও এ বিনিময়ে তোমাকে ক্ষমা করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমি ঐ সময়ে এ সলাত আদায় করতে না পারলে? তিনি বললেনঃ রাত ও দিনের যে কোন সময়ে সুযোগ পেলেই তা আদায় করে নিবে। [১৩০১] ইমাম আবূ দাউদ (রাঃ) এ হাদীস ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমরের (রাঃ) মাউকূফ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। অন্য সানাদে এটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। ‘উরওয়াহ ইবনু রুওয়াইম (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক আনসারী (রাঃ) আমাকে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জা’ফারকে উপরোক্ত হাদীসটি বলেছেন। অতঃপর উপরোক্ত বর্ণনাকারীদের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি প্রথম রাক’আতের দ্বিতীয় সাজদাহ্য় তাই বলেছেন, যেরূপ মাহদী ইবনু মাইমূনের হাদীসে রয়েছে।
মাগরিবের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) কোথায় আদায় করবে
সা’দ ইবনু ইসহাক্ব ইবনু কা’ব ইবনু ‘উজরাহ (রহঃ) তাঁর পিতা তিনি তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী ‘আবদুল আশহালের মাসজিদে এসে সেখানে মাগরিবের সলাত আদায়ের পর দেখলেন, সলাত শেষে লোকেরা সেখানেই (সুন্নাত) সলাত আদায় করছেন। তখন তিনি বললেনঃ এটাতো ঘরের সলাত। [১৩০৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের ফরয সলাতের পর দু’ রাক’আত (সুন্নাত) সলাতের ক্বিরাআত এতো দীর্ঘ করতেন যে, মাসজিদের লোকজন চলে যেতো। [১৩০৪] সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে এ হাদীসের ভাবার্থ মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। [১৩০৫]
‘ইশার ফার্য সলাতের পর নাফ্ল সলাত
শুরাইহ ইবনু হানী (রহঃ) হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র তিনি (শুরাইহ) বলেন, আমি তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার ফার্য সলাত আদায়ের পর আমার ঘরে আসলে অবশ্যই চার কিংবা ছয় রাক’আত সলাত আদায় করতেন। একদা রাতে আমাদের এখানে বৃষ্টি হওয়ায় আমরা তাঁর জন্য চামড়া বিছিয়ে দেই। আমি যেন এখন চাক্ষুস দেখছি যে, খেজুর পাতার চালনির ছিদ্র দিয়ে পানি গড়ে পড়ছে। আমি তাঁকে কখনো কোন কাপড় দিয়ে মাটি হতে রক্ষা করতে দেখিনি। [১৩০৩]
তাহাজ্জুদ সলাতের বাধ্যবাধকতা রহিত করে শিথিল করা হয়েছে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি সূরাহ মুয্যাম্মিল সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর বাণীঃ “কুমিল লায়লাহ ইল্লা ক্বালীলান নিসফাহু” (অর্থঃ আপনি রাতের কিছু অংশ ব্যতীত সারা রাত আল্লাহর ‘ইবাদাতে দাঁড়িয়ে থাকুন)। অতঃপর এর পরবর্তী আয়াতটি এ নির্দেশকে রহিত করেঃ “আলিমা আন লান তুহ্সূহু ফাতাবা ‘আলাইকুম ফাক্বরাউ মা তাইয়াস্সারা মিনাল কুরআন। ” (অর্থঃ তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে, তা করা তোমাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা কুরআনের যতটুকু পাঠ করা সম্ভব ততটুকুই পড়ো) এবং রাতের প্রথামাংশ। তাদের সলাত রাতের প্রথমভাগেই হয়ে থাকতো। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, কাজেই আল্লাহ তোমাদের উপর যেটুকু রাতের ইবাদত ফরয করেছেন তা সঠিকভাবে আদায় করো। কেননা মানুষ ঘুমিয়ে গেলে কখন সে জাগ্রত হবে তা বলতে পারে না। আল্লাহর বাণীঃ “আকওয়ামু কীলা” –অর্থ হচ্ছে কুরআনকে অনুধাবন করার অধিক যোগ্য। আল্লাহর বাণীঃ “ইন্না লাকা ফিন নাহারি সাবহান তাবীলা” এর অর্থ হচ্ছে, আপনি দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূরাহ মুয্যাম্মিলের প্রথমাংশ অবতীর্ণ হলে মুসলিমরা রমাযান মাসের ন্যায় রাতে দীর্ঘ ক্বিয়াম (সলাত আদায়) করতে লাগলেন। অতঃপর এ সূরাহ্র শেষাংশ অবতীর্ণ হয়। এ সুরাহ্র প্রথম ও শেষাংশ অবতীর্ণের মধ্যে এক বছরের ব্যবধান ছিল।
ক্বিয়ামুল লাইল
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শাইত্বান তাঁর মাথার পিছনে তিনটি গিরা দেয় এবং প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় বলে, আরো ঘুমাও, রাত এখনো অনেক বাকী। যদি ঐ ব্যক্তি সজাগ হয়ে আল্লাহর যিকির করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে উযু করে হলে আরেকটি গিরা খুলে যায় এবং যদি সে সলাত আদায় করে, তাহলে শেষ গিরাও খুলে যায়। ফলে ঐ ব্যক্তি সতেজ ও উৎফুল্লতা নিয়ে সকাল করে। (আর এরূপ না করে ঘুমিয়ে থাকলে) সে অলসতা ও মন্দ মন নিয়ে সকাল করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বায়িস (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, তুমি রাতের ক্বিয়াম ছেড়ে দিবে না। কারণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো একে পরিত্যাগ করতেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে বসে সলাত আদায় করতেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন যে রাতে সজাগ হয়ে নিজে সলাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও সজাগ করে। স্ত্রী উঠতে না চাইলে সে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটায়। আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি রাতের বেলায় স্বীয় স্ত্রীকে সজাগ করে উভয়ে কিংবা প্রত্যেকে দু’ দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণকারী ও স্মরণকারিনীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু কাসীর এ হাদীস রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছাননি এবং তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর নাম উল্লেখ করেননি বরং বলেছেন, এটি আবূ সাঈদ (রাঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য।
সলাতের মধ্যে তন্দ্রা এলে
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সলাতরত অবস্থায় তোমাদের কারো ঝিমনি এলে ঝিমনি দূর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন অবশ্যই শুয়ে পড়ে। কেননা কেউ ঘুমের ঘোরে সলাত আদায় করলে হয়ত সে নিজের ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে নিজেকে গালি দিবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (ঘুমের ঘোরে) রাতের সলাতে দণ্ডায়মান হলে কুরআন স্বাভাবিকভাবে তাঁর মুখ থেকে বের হয় না, এবং সে কি তিলাওয়াত করছে তাও বুঝতে পারে না। কাজেই এরূপ অবস্থায় সে যেন অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ে। সহীহঃ মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে দু’টি খুটির মাঝে রশি বাধা দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ রশিটি কিসের? বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! এটা হামনাহ বিনতু জাহ্শের (রাঃ) রশি, তিনি রাতে সলাত আদায়কালে ক্লান্তিবোধ হলে এ রশিতে নিজেকে আটকে রাখেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাঁর উচিত সামর্থ্ অনুযায়ী সলাত আদায় করা, যখন ক্লান্তিবোধ করবে তখন সলাত ছেড়ে বসে যাবে। যিয়াদের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কি? লোকেরা বলল, এটা যাইনাবের (রাঃ) রশি, তিনি সলাত আদায়কালে ক্লান্তি বা অলসতাবোধ করলে এতে ঝুলে থাকেন। তিনি বললেনঃ এটা খুলে ফেলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের আনন্দের সাথে সলাত আদায় করা উচিত, যখন ক্লান্তি কিংবা অলসতাবোধ করবে তখন সলাত ছেড়ে বসে পড়বে। সহীহ, হামনাহ’ শব্দ উল্লেখ বাদেঃ বুখারী ও মুসলিম।
ঘুমের কারণে ওযীফা ছুটে গেলে
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঘুমের কারণে রাতের বেলায় তসবীহ বা কুরআন পূর্ণরূপে পড়তে না পারায় তা ফাজ্র ও যুহরের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে পাঠ করে নিয়েছে, এর বিনিময়ে তাঁর জন্য ঐরূপ সওয়াব লিখা হয়, যেন সে রাতেই তা পাঠ করেছে। সহীহঃ মুসলিম।
নাফ্ল সলাতের নিয়্যাত করার পর ঘুমিয়ে গেলে
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সলাত আদায়ের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও ঘুম তাকে পরাভূত করে দিলো, তার আমলনামায় রাতে সলাত আদায়ের সওয়াবই লিখা হবে। তার জন্য ঘুম সদাক্বাহ হিসেবে গন্য হবে।
(ইবাদাতের জন্য) রাতের কোন্ সময়টি উত্তম?
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাদের মহা মহীয়ান রব্ব প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? আছে কেউ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো? আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতে সলাত আদায়ের সময়
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মহা মহীয়ান আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রাতে সজাগ করতেন এবং তিনি সাহরীর সময়ে তাঁর নাফ্ল সলাত, তাসবীহ ইত্যাদি হতে অবসর হতেন। মাসরুক (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বলি, তিনি কোন সময় সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, তিনি মোরগের ডাক শুনে উঠে সলাতে দাড়াতেন। সহীহঃ ও বুখারি ও মুসলিম এ শব্দে (আরবি)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট যখনই ভোর করেছেন, ( আমি তাঁকে) নিদ্রাবস্থায় পেয়েছি। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম। হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে সলাত আদায় করতেন। রবী’আহ ইবনু কা’ব আল-আসলামী (রাঃ) যখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রাত যাপন করতাম, তখন তাঁর উযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করে দিতাম। তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম , জান্নাতে আপনার সান্নিধ্যে থাকতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আরো কিছু? আমি বললাম, এটাই যথেষ্ট। তিনি বললেনঃ তাহলে অধিক পরিমানে সাজদাহ করে এ কাজে আমাকে সাহায্য করো। সহীহঃ মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আল্লাহর বাণীঃ “তারা (মুমিনরা) স্বীয় পিঠ হতে বিছানা ত্যাগ করে তাদের রব্বকে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে ,আর আমরা তাদেরকে যা কিছু রিযিক্ব দিয়েছি তা হতে খরচ করে” ( সুরা্হ আস-সাজদা্হঃ ১৬)। তিনি বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে তারা (সাহাবীগণ) মাগরিব এবং ‘ইশার মধ্যবর্তী সময় জেগে থেকে সালাত আদায় করতেন। বর্ননাকারী বলেন, হাসান বাসরি বলেছেন, এই আয়াতের অর্থ হলো, রাত জেগে সলাতে দাঁড়িয়ে থাকা। আনাস (রাঃ) আল্লাহর বাণীঃ “তারা রাতের সামান্য সময় ঘুমে কাটাতো” (সূরাহ আয- যারি’আতঃ ১৭ )। তিনি বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, সাহাবীগণ মাগরিব ও ‘ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সলাত আদায় করতেন। ইয়াহইয়া তার বর্ননায় এটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, “তাতাজাফা জুনূবুহুম” -এর অর্থও অনুরুপ।
দু’ রাক’আত নাফ্ল দ্বারা রাতের সলাত আরম্ভ করা
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাতে সলাত আদায় করতে দাড়াঁলে সে যেন প্রথমে সংক্ষেপে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। [১৩২৩] দুর্বল, সহীহ হচ্ছে এটি তার মাওকূফ বর্ননা। যা এর পরের হাদীসে রয়েছে। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। তবে এতে রয়েছে, এরপর যত ইচ্ছা দীর্ঘ করবে। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালামাহ, যুহাইর ইবনু মু’আবিয়াহ, আইয়ূব, ইবনু ’আওন ও একদল হিশাম সুত্রে বর্ননা করেছেন, তারা এটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিজস্ব বক্তব্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইবনু ‘আওন মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন সুত্রে বর্ননা করেন যে, প্রথম দু’ রাক’আতের ক্বিরাআত ছোট করবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে উত্তম আমল সম্পর্কে জ্ঞিগেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করা। সহীহঃ এ শব্দেঃ কোন সলাত?
রাতের সলাত দু’ দু’ রাক’আত করে
‘আবদুল্লা ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা কতিপয় লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, রাতের সলাত হচ্ছে দু’ দু’ রাক’আত করে। তোমাদের কেউ সুবহি সাদিকের আশংকা করলে পূর্বে যেটুকু সলাত আদায় করেছে তা বিতর করতে এক রাক’আত সলাত আদায় করে নিবে। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম
রাতের সলাতে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) তিনি বলেন, ঘরে সালাত আদায়কালে নবী (সাল্লালাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্বিরাআত এত স্পষ্ট হতো যে, হুজরাহতে অবস্থানকারীরা তা শুনতে পেতো। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাতে ক্বিরাআত কখনো সশব্দে আবার কখনো নিঃশব্দে পড়তেন। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে আবু বাকর (রাঃ) কে নিঃশব্দে ক্বিরাআত পড়তে দেখলেন। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে সশব্দে ক্বিরাআত পড়তে দেখলেন। বর্ননাকারী বলেন, অতঃপর তারা উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একত্র হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ হে আবু বাকর! আমি তোমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, তুমি নিঃশব্দে ক্বিরাআত পরছিলে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাঁকেই শুনাচ্ছিলাম যার সাথে চুপিসারে কথা বলছিলাম।বর্ণনাকারী বললেন, অতঃপর তিনি ‘উমার (রাঃ) কে বললেনঃ আমি তোমার পাশ দিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, তুমি সশব্দে ক্বিরাআত পড়ছিলে। তিনি বললেন হে আল্লাহর রসুল! আমি ঘুমন্ত ব্যাক্তিকে জাগাতে এবং শাইত্বাকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলাম। হাসান বাসরি (রহঃ) এর বর্ননায় রয়েছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ বাকর! তোমার কিরা’আত একটু শব্দ করে পড়বে এবং ’উমারকে বললেনঃ তোমার কিরা’আত একটু নিচু স্বরে পড়বে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্রে উপরোক্ত ঘটনা অনুরুপ বর্নিত।। তবে তাতে এটা উল্লেখ নেই। তিনি আবু বাকর (রাঃ) কে বলেন তুমি একটু উচ্চস্বরে পড়বে এবং ‘উমার (রাঃ) কে বলেন তুমি একটু নিচু স্বরে পড়বে। এই বর্ননায় রয়েছেঃ হে বিলাল! আমি তোমার আওয়াজ শুনেছি। তুমি এই এই সূরাহ হতে তিলওয়াত করছিলে। বিলাল বললেন, খুবই উত্তম বাক্য, আল্লাহ একটিকে অন্যটির সাথে সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা সবাই সঠিক কাজ করেছো। [১৩৩০] ‘আয়িশাহ (রাঃ) এক রাতে জনৈক ব্যক্তি সলাতে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে কিরা’আত পাঠ করেন। অতঃপর ভোর হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ অমুকের প্রতি দয়া করুন। আজ রাতে সে আমাকে কতিপয় আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমি বাদ দিয়েছিলাম। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, হারুন আন না্হবী হাম্মাদ ইবনু সালমা্হ হতে বর্ণনা করেন যে, তা ছিলো সুরা্হ আল ’ইমরানের এই আয়াতটিঃ ওয়াকাআইয়্যিম মিন নাবিয়্যীন। সহীহ : বুখারি ও মুসলিম। আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে ই’তিকাফ কালে সাহাবীদেরকে উচচস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেনঃ জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রব্বের সাথে চুপিসারে আলাপে রত আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরা’আতে বা সলাতে আওয়াজ উঁচু করো না। সহীহ। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন ,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উচচস্বরে পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মত এবং নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মত।
রাতের (তাহাজ্জুদ) সলাত সম্পর্কে
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে দশ রাক’আত সলাত আদায় করতেন এবং বিতর পড়তেন এক রাক’আত। অতঃপর ফাজ্রের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করতেন, এ নিয়ে সর্বমোট তেরো রাক’আত হতো। সহীহ :বুখারী ও মুসলিম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে এগারো রাক’আত সলাত আদায় করতেন। তন্মধ্যে বিতর হতো এক রাক’আত। অতঃপর সলাত শেষে তিনি ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন। সহীহ : মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাতের পর থেকে সুবহি সাদিক পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে এগারো রাক’আত সলাত আদায় করতেন। প্রত্যক দু’ রাক’আতে সালাম ফিরাতেন এবং এক রাক’আত দ্বারা বিতর করতেন। তিনি এত দীর্ঘক্ষন সাজদাহয় অবস্থান করতেন যে, তাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের কেউ আনুমানিক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারতে। মুয়ায্যিন ফাজ্রের (প্রথম) আযান শেষ করলে তিনি উঠে সংক্ষেপে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর মুয়াযযিন (জামা’আতের সংবাদ দেয়ার জন্য) পুনরায় আসা পর্যন্ত তিনি ডান পাশের পাজরের উপর ভর করে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম ইবনু শিহাব (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ সানাদ ও অর্থের হাদীস বর্ণিত। সুলায়মান ইবনু দাউদ বলেন, তিনি বিতর করতেন এক রাক’আত। তিনি এতো দীর্ঘক্ষণ সাজদাহয় অবস্থান করতেন যে, তাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতে পারতে। যখন মুয়াযযিন ফাজরের আযান শেষ করতো এবং সুবহি সাদিক উদ্ভাসিত হতো, ... অতঃপর উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ। সুলায়মান বলেন, তাদের একজনের বর্ণনায় অন্যজন হতে কিছু কম-বেশী আছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তের রাক’আত সলাত আদায় করতেন। তন্মধ্যে তিনি পাঁচ রাক’আত বিতর আদায় করতেন, এ পাঁচ রাক’আতে কেবল শেষ বৈঠক ছাড়া মাঝখানে বসতেন না, অতঃপর সালাম ফিরাতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তের রাক’আত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর ফাজর সলাতের আযান শুনতে পেলে সংক্ষেপে দু’ রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তের রাক’আত সলাত আদায় করতেন, তন্মধ্যে আট রাক’আত (তাহাজ্জুদ), অতঃপর বিতর সলাত পড়তেন। এরপর তিনি আবার সলাত আদায় করতেন। বর্ণনাকারী মুসলিম ইবনু ইবরাহীম বলেন, বিতর সলাতের পর তিনি বসাবস্থায় দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। তবে রুকূ’র ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে রুকূ’ করতেন এবং ফাজরের আযান ও ইক্বামাতের মাঝখানে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, রমাযান ও রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, রমাযান ও রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগার রাক‘আতের অধিক সলাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে চার রাক‘আত আদায় করতেন, খুবই সুন্দর ও দীর্ঘায়িত করে। অতঃপর চার রাক‘আত, তাও এতো সুন্দর ও দীর্ঘায়িত হতো যে, জিজ্ঞেস করো না। সর্বশেষে (বিতর আদায় করতেন) তিন রাক‘আত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি বিতর সলাতের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ ! আমার দু’ চোখ ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর জাগ্রত থাকে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। সা‘দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশে আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে মাদীনাহয় আমার যে ভূমি রয়েছে তা বিক্রি করে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করার জন্য (বাসরাহ থেকে) মাদীনাহতে আসলাম। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একদল সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলে তারা বললেন, আমাদের মধ্যকার ছয় ব্যক্তির একটি দল এরূপ ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে বলেনঃ “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মাঝেই উত্তম আদর্শ নিহিত আছে ”। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিতর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর সলাত সম্পর্কে যিনি অধিক অভিজ্ঞ আমি তোমাকে তার সন্ধান দিচ্ছি। তুমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট যাও। কাজেই আমি তার নিকট যাই এবং হাকীম ইবনু আফলাহকেও যাবার অনুরোধ করি, কিন্তু তিনি অস্বীকার করায় আমি তাকে শপথ দিয়ে অনুরোধ করলে তিনি আমার সঙ্গে রওয়ানা হন। আমরা ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কে? তিনি বলেন, হাকীম ইবনু আফলাহ। তিনি বলেন, তোমার সাথে কে? তিনি বললেন, সা‘দ ইবনু হিশাম। তিনি বললেন, উহুদের যুদ্ধে শহীদ হওয়া হিশাম ইবনু ‘আমির? হাকীম ইবনু আফলাহ বলে, আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, ‘আমির তো অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। তিনি বলেন, হে উম্মুল মু‘মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চরিত্র সম্বন্ধে বলুন। তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? গোটা কুরআনই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চরিত্র। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে রাতের ক্বিয়াম সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনের “ইয়াআইয়্যুহাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠ করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, হাঁ, পাঠ করেছি। তিনি বললেন, এ সূরাহর প্রথমাংশ অবতীর্ণ হবার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ এতো বেশী “ক্বিয়ামুল লাইল” করতেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। অতঃপর এ সূরাহর শেষাংশ অবতীর্ণ হলে “ক্বিয়ামুল লাইল” ফারয হতে নাফল হিসেবে পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিতর সলাত সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, তিনি আট রাক‘আত বিতর করতেন এবং তাতে কেবল অষ্টম রাক‘আতেই বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে আরো এক রাক‘আত পড়তেন এবং এই অষ্টম ও নবম রাক‘আত ছাড়া কোথাও বসতেন না। তিনি নবম রাক‘আতে সালাম ফিরাতেন। অতঃপর বসে বসে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। হে আমার বৎস! এ এগার রাক‘আতই ছিল তাঁর রাতের সলাত। অতঃপর বার্ধক্যের কারণে তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাক‘আত বিতর করতেন এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম রাক‘আত ছাড়া বসতেন না, আর সালাম ফিরাতেন সপ্তম রাক‘আতে। অতঃপর বসে বসে দু’ রাক‘আত নাফল সলাত আদায় করতেন। হে বৎস! এ নয় রাক‘আতই ছিল রাতের সলাত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো সারারাত ভোর পর্যন্ত সলাত আদায় করতেন না, এক রাতে গোটা কুরআন খতম করতেন না এবং রমাযান মাস ছাড়া পুরো এক মাস সওম পালন করতেন না। তিনি কোনো সলাত আরম্ভ করলে তা নিয়মিত আদায় করতেন। ঘুমের কারণে রাতে জাগ্রত হতে না পারলে তিনি দিনের বেলা বারো রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এসে এগুলো বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এটাই হচ্ছে প্রকৃত হাদীস। আমি যদি ‘আয়িশাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতাম তাহলে আমি এসে এ হাদীস আলোচনা করতাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, আপনি তাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন না, তাহলে আমি হাদীসটি আপনার কাছে বর্ণনা করতাম না। সহীহঃ মুসলিম। ক্বাতাদাহ (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আট রাক‘আত সলাত আদায় করতেন এবং তাতে কেবল অষ্টম রাক‘আতেই বসতেন। তিনি বসে আল্লাহর যিকর করতেন, দু‘আ করতেন, অতঃপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমরা শুনতে পেতাম। অতঃপর বসাবস্থায় দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন, অতঃপর এক রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। হে বৎস! এটাই তাঁর আদায়কৃত মোট এগার রাক‘আত সলাত। অবশ্য বয়োবৃদ্ধির কারণে যখন রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীর ভারি হয়ে যায় তখন তিনি সাত রাক‘আত বিতর আদায় করতেন। অতঃপর সালামের পর বসাবস্থায় দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ মুসলিম। সাঈদ (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমরা শুনতে পেতাম। যেমনটি রয়েছে ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ এর বর্ণনায়। সাঈদ (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ইবনু বাশশারও ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদের অনুরূপ বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন। যুরারাহ ইবনু আওফা (রাঃ) একদা ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধ্য রাতের সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি ‘ইশার সলাত জামা‘আতে আদায় করে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এসে চার রাক‘আত সলাত আদায় করে স্বীয় বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তেন। এ সময় উযুর পানি ও মিসওয়াক তাঁর কাছেই থাকতো। অতঃপর মহান আল্লাহ রাতে যখন সজাগ করার তাঁকে সজাগ করতেন। তিনি মিসওয়াক ও উত্তমরূপে উযু করে তাঁর মুসল্লায় দাঁড়িয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তাতে সূরাহ ফাতিহা, কুরআনের অন্য সূরাহ এবং আল্লাহ যা চাইতেন তা পাঠ করতেন। তিনি এতে মাঝখানে না বসে কেবলমাত্র অষ্টম রাক‘আতেই বসতেন এবং সালাম না ফিরিয়ে নবম রাক‘আতে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর (শেষ বৈঠকে) বসে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দু‘আ করতেন, তাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। সবশেষে তিনি এতো জোরে সালাম ফিরাতেন যে, সালামের আওয়াজে ঘরের লোকের জাগ্রত হবার উপক্রম হতো। অতঃপর তিনি (বসে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন এবং তাতে) বসেই সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও রুকূ করতেন। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাক‘আতেও বসাবস্থায় রুকূ ও সাজদাহ্ করতেন। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দু‘আ করে সালাম ফিরিয়ে সলাত শেষ করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত এভাবেই সলাত আদায় করতেন। অতঃপর ( শরীর ভারী হয়ে গেলে) তিনি নয় রাক‘আত থেকে দুই কমিয়ে ছয় রাক‘আত ( এবং এক যোগ করে ) সাত রাক‘আত আদায় করেন এবং দু’ রাক‘আত বসাবস্থায় আদায় করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এভাবেই সলাত আদায় করেছেন। সহীহ, চার রাক‘আত কথাটি বাদে। সংরক্ষিত হচ্ছে ‘আয়িশাহ সূত্রে দু’ রাক‘আত। বাহয ইবনু হাকীম (রাঃ) উপরোক্ত সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি ‘ইশার সলাত আদায়ের পর স্বীয় বিছানায় বিশ্রাম নিতেন। এতে চার রাক‘আতের কথা উল্লেখ নেই। অতঃপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। এতে রয়েছে, অতঃপর তিনি আট রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্ এগুলো পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সমপরিমাণ এবং তিনি এ সলাতে কেবলমাত্র অষ্টম রাক‘আতেই বসতেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে এক রাক‘আত দ্বারা বিতর করতেন। সবশেষে এমনভাবে উচ্চস্বরে সালাম বলতেন যে, আওয়াজ আমাদের নিদ্রা ভঙ্গ করে দিতো। এরপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, তিনি লোকদেরকে নিয়ে ‘ইশার সলাত আদায় শেষে ঘরে ফিরে এসে চার রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। এরপর ঘুমের জন্য স্বীয় বিছানায় চলে যেতেন। অতঃপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে “ক্বিরাআত, রুকূ’ ও সাজদাহ্তে সমতা রক্ষা করা এবং তাঁর উচ্চস্বরে সালাম উচ্চারণ আমাদেরকে ঘুম থেকে সজাগ করতো” এ বাক্যে উল্লেখ নেই। সহীহ, চার রাক‘আত কথাটি বাদে। মাহফূয হচ্ছে দু’ রাক‘আত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন এবং নবম রাক‘আতে বিতর অথবা তিনি অনুরূপ বলেছেন। তিনি বসে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন, অতঃপর ফাজ্রের দু’ রাক‘আত সুন্নাত সলাত আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাত নয় রাক‘আত আদায় করতেন। পরবর্তীতে (পরিণত বয়সে) তিনি সাত রাক‘আত বিতর সলাত আদায় করেন এবং বিতরের পর বসাবস্থায় দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। তাতে ক্বিরাআত পাঠ করেছেন এবং রুকূর সময় দাঁড়িয়ে রুকূ করেছেন, অতঃপর সাজদাহ্ করেছেন। হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দুটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেন খালিদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-ওয়াসিত্বী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর হতে। তাতে রয়েছে, আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস বলেন, হে আম্মাজান! তিনি ঐ দু’ রাক‘আত কিভাবে আদায় করেছেন? অতঃপর হাদীসের ভাবার্থ উল্লেখ করেন। সহীহ। হিশাম ইবনু সা‘দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাদীনাহয় এসে ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আমাকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত সম্বন্ধে বলুন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে ‘ইশার সলাত আদায়ের পর নিজের বিছানায় এসে ঘুমাতেন। অতঃপর মাঝ রাতে উঠে নিজের প্রয়োজন সেরে উযুর পানি নিয়ে উযু করে মাসজিদে গিয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। আমার ধারণা, তিনি ক্বিরাআত, রুকূ’ ও সাজদাহ্র মধ্যে সমতা বজায় রাখতেন। তারপর এক রাক‘আত বিতর করতেন। সবশেষে বসাবস্থায় দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে বিশ্রাম নিতেন। অতঃপর কখনো বিলাল এসে তাঁকে সলাতের সংবাদ দিতেন। কখনো তিনি আবার হালকা ঘুমিয়ে পড়েছেন কিনা, এ নিয়ে আমার সংশয় হতো। অতঃপর তাঁকে আবারো সলাতের জন্য ডাকা হতো। এ ছিল বয়োবৃদ্ধ বা শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত তাঁর রাতের সলাত। অতঃপর ‘আয়িশাহ তাঁর শরীর ভারী হওয়া সম্পর্কিত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যা উল্লেখ করার করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ঘুমালেন। অতঃপর তিনি দেখলেন যে, তিনি ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করে উযু সেরে আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করলেনঃ “ইন্না ফি খালক্বিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি” সূরাহ আল ‘ইমরানের শেষ আয়াত পর্যন্ত। তারপর উঠে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। সলাতের ক্বিয়াম, রুকূ’ ও সাজদাহ্ খুব দীর্ঘায়িত করলেন। অতঃপর সলাত শেষে তিনি নাক ডেকে ঘুমাতে লাগলেন। এরূপে তিনবারে ছয় রাক‘আত আদায় করলেন এবং প্রতিবারই মিসওয়াক করে উযু সেরে উক্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলেন। সবশেষে বিতর পড়লেন। বর্ণনাকারী ‘উসমান বলেন, তিনি বিতর সলাত তিন রাক‘আত আদায় করেছেন। অতঃপর মুয়াযযিন এলে তিনি মাসজিদে চলে গেলেন। ইবনু ঈসা বলেন, তিনি বিতর করলেন, অতঃপর ফাজ্রের আবির্ভাব হলে বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সলাতের সংবাদ দিলেন। তিনি ফাজরের দু’ রাক‘আত সুন্নাত আদায়ের পর মাসজিদে যান এবং দু‘আ পাঠ করেনঃ “হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দাও, আমার জবানে নূর দাও, আমার কানে নূর দাও, আমার চোখে নূর দাও, নূর দান করো আমার পিছনে ও সম্মুখভাগে এবং আমার উপরে ও নীচে। হে আল্লাহ! আমাকে পর্যাপ্ত নূর দান করো”। সহীহঃ মুসলিম। হুসাইন (রহঃ) এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ “আমাকে পর্যাপ্ত নূর দান করো”। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ খালিদ আদ-দালানী (রহঃ) হাবীব (রহঃ) হতে এবং সালামাহ ইবনু কুহাইল (রহঃ) আবূ রিশদীন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আল-ফাদল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, স্বচক্ষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি অবলোকনের উদ্দেশে আমি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রাত যাপন করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে উঠে উযু করে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তাঁর দাঁড়ানোর দীর্ঘতা তাঁর রুকূর সমান এবং তাঁর রুকূর দীর্ঘতা ছিলো তাঁর সাজদাহ্র সমান। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আবার সজাগ হয়ে উযু ও মিসওয়াক করে সূরাহ আল ‘ইমরান হতে এ পাঁচটি আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “ইন্না ফি খলকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি”। এরূপে তিনি দশ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন এবং শেষে এক রাক‘আত দ্বারা বিতর করলেন। এ সময় মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে বসে থাকলেন। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করলেন। [১৩৫৫] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু বাশশার বর্ণিত এ হাদীসটির কিছু অংশ আমার নিকট অস্পষ্ট। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃ) নিকট অবস্থান করি। সন্ধ্যার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে জিজ্ঞেস করলেন, বালকটি কি সলাত আদায় করেছে? তারা বললেন, হাঁ। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি উঠে উযু করে বিতর সহ সাত বা পাঁচ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। এতে তিনি কেবল শেষ রাক‘আতেই সালাম ফিরান। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহ বিনতুল হারিসের (রাঃ) ঘরে অবস্থান করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায়ের পর ঘরে এসে চার রাক‘আত সলাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর আবার উঠে সলাত আদায় করতে লাগলেন, তখন আমি তাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন, এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। অতঃপর আবার উঠে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর (ঘর থেকে) বের হয়ে (মাসজিদে) গিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় করেন। সাইদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উঠে দু’ দু’ রাক‘আত করে আট রাক‘আত সলাত আদায়ের পর পাঁচ রাক‘আত বিতর করেন এবং তিনি এ রাক‘আতগুলোর মাঝে বসেননি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের পূর্বের দু’রাক‘আত সহ সর্বমোট তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। দু’ দু’ রাক‘আত করে ছয় রাক‘আত এবং বিতর পাঁচ রাক‘আত, এর সর্বশেষ রাক‘আত ছাড়া তিনি মাঝখানে বসতেন না। ‘উরওয়াহ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সহ রাতে সর্বমোট তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায়ের (অনেকক্ষণ) পরে দাঁড়িয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করেন এবং দু’ আযানের (ফাজ্রের আযান ও ইকামাতের) মাঝখানে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেন। তিনি কখনো এ দু’ রাক‘আত ছেড়ে দেননি। জা‘ফর ইবনু মুসাফিরের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি দু’ আযানের মাঝখানে দু’ রাক‘আত সলাত বসে আদায় করেছেন। সহীহঃ তার একথাটি বাদেঃ দুই আযানের মাঝে। সংরক্ষিত হচ্ছেঃ বিতরের পরে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ কায়িস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, তিনি চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন অথবা তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি সাত রাক‘আতের কম এবং তের রাক‘আতের অধিক বিতর করতেন না। সহীহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আহমাদের (রহঃ) বর্ণনায় ছয় ও তিন রাক‘আতের কথা উল্লেখ নেই। আল-আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তিনি রাতে তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। পরবর্তীতে তিনি দু’ রাক‘আত বর্জন করে এগার রাক‘আত আদায় করেছেন। অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রাতে নয় রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। বিতর হতো তাঁর রাতের শেষ সলাত। [১৩৬৩] মাখরামাহ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) তাকে ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) মুক্তদাস কুরাইব (রহঃ) অবহিত করেছেন যে, তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাতের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছেন, একদা আমি মায়মূনাহর (রাঃ) ঘরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রাত যাপন করি। সেখানে তিনি কিছুক্ষন ঘুমিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর জেগে উঠে পানির মশকের নিকট গিয়ে উযু করলেন। আমিও তাঁর সাথে উযু করলাম। তিনি সলাতে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি আমাকে টেনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমার মাথার উপর তাঁর হাত রাখলেন, যেন তিনি আমার কান মলে আমাকে সজাগ করছেন। অতঃপর তিনি সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। প্রতি রাক‘আতে তিনি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আবার সলাত আদায় করলেন। শেষ পর্যন্ত বিতর সহ মোট এগার রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। এরপর ঘুমালেন। অতঃপর বিলাল এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! সলাত। ফলে তিনি উঠে দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায়ের পর লোকদের নিয়ে ফারয সলাত আদায় করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃ) নিকট এক রাত অতিবাহিত করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। তিনি তের রাক‘আত সলাত আদায় করলেন, তাতে ফাজরের দু’ রাক‘আত সুন্নাতও ছিল। আমি অনুমান করলাম, তাঁর প্রতি রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময়টুকু ছিল “ইয়া আইয়্যূহাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠের সময়ের অনুরূপ। বর্ণনাকারী নূহ ইবনু হাবীব, ‘তন্মধ্যে ফাজরের দু’ রাক‘আতও ছিল’ এ কথাটি বলেননি। যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতের সলাত সচক্ষে দেখার সংকল্প করলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর ঘরের চৌকাঠ বা তাঁবুর দরজাতে মাথা রেখে শুয়ে থাকলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’ রাক‘আত আদায় করলেন খুবই দীর্ঘভাবে। অতঃপর আরো দু’ রাক‘আত। তবে এর দীর্ঘতা পূর্বের দু’ রাক‘আতের চেয়ে কম। অতঃপর দু’ রাক‘আত পড়লেন, এটা পূর্বের দু’ রাক‘আতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিলো। অতঃপর আরো দু’ রাক‘আত আদায় করলেন পূর্বেরটির চেয়ে সংক্ষিপ্ত করে। অতঃপর বিতর আদায় করলেন। এ নিয়ে সর্বমোট তের রাক‘আত সলাত। সহীহঃ মুসলিম ইবনু ‘আব্বাসের (রাঃ) মুক্তদাস কুরাইব (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন যে, এক রাত তিনি তাঁর খালা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী মায়মূনাহর (রাঃ) ঘরে অবস্থান করেন। তিনি বলেন, আমি বিছানায় আড়াআড়ি ঘুমিয়ে পড়ি আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর স্ত্রী লম্বালম্বী ঘুমালেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে থাকলেন। অতঃপর রাতের অর্ধেক অথবা সামান্য অতিবাহিত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল হতে ঘুমের রেশ মুছতে মুছতে উঠে বসেন এবং সূরাহ আলে ‘ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর পানির একটি ঝুলন্ত মশকের নিকট গিয়ে তা থেকে খুব ভালভাবে উযু করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে লাগলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যা যা করেছেন তা করলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রেখে আমার কান ধরে টানলেন। অতঃপর তিনি দু’ রাক‘আত, দু’ রাক‘আত, অতঃপর দু’ রাক‘আত, দু’ রাক‘আত, আবার দু’ রাক‘আত এবং আবার দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। বর্ণনাকারী আল-কা‘নাবী বলেন, তিনি এভাবে ছয়বার আদায় করেন। অতঃপর বিতর করে বিশ্রাম নেন। অবশেষে মুয়াযযিন এলে তিনি উঠে সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে বের হলেন এবং (মাসজিদে গিয়ে) ফাজরের সলাত আদায় করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
সলাতে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ
‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাধ্যানুযায়ী (নিয়মিতভাবে) আমল করবে। কেননা তোমরা বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না। মহান আল্লাহ ঐ আমলকে ভালবাসেন যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমানে কম হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন আমল করলে তা নিয়মিতভাবে করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান ইবনু মাযউন (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘উসমান! তুমি কি আমার সুন্নাতকে এড়িয়ে চলছো? তিনি বললেন, না, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! বরং আমি আপনার সুন্নাতেরই প্রত্যাশী। তিনি বললেনঃ আমি (রাতে) ঘুমাই এবং সলাতও আদায় করি, সওম পালন করি এবং ইফতারও করি এবং নারীদেরকে বিবাহও করি। হে উসমান! আল্লাহকে ভয় করো! কেননা তোমার প্রতি তোমার পরিবারের হক আছে, তোমার মেহমানের হক আছে এবং তোমার নিজের শরীরেও হক আছে। কাজেই তুমি সওম পালন করবে এবং ইফতারও করবে, সলাত আদায় করবে এবং নিদ্রায়ও যাবে। আলকামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তিনি ‘ইবাদাতের জন্য কোনো বিশেষ দিনকে নির্ধারণ করতেন কিনা? তিনি বললেন, না। তিনি প্রতিটি আমল নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করতে সক্ষম ছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি সেরূপ করতে সক্ষম? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।