8. বিতর সালাত
বিতর সলাত মুস্তাহাব
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে কুরআনের ধারকগণ! তোমরা বিতর সলাত আদায় করো। কেননা আল্লাহ বেজোড়, তাই তিনি বেজোড়কে ভালবাসেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে মারফু’ভাবে বর্ণিত। পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ এক বেদুঈন জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি বলেছেন? তিনি বললেন, এটা তোমার ও তোমার সাথীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। খারিজাহ ইবনু হুযাফা আল-আদাবী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে বললেনঃ মহা মহীয়ান আল্লাহ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত সলাত দিয়েছেন, সেটা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। তা হলো বিতর। তোমাদের জন্য এ সলাত আদায়ের সময় হচ্ছে ‘ইশা সলাতের পর হতে ফাজ্র উদয় হওয়া পর্যন্ত। [১৪১৮] দুর্বলঃ মিশকাত (১২৬৭)।
যে ব্যক্তি বিতর সলাত আদায় করেনি
‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বিতর সলাত সত্য। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করে না সে আমার দলভুক্ত নয়। বিতর সলাত সত্য। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করে না সে আমার দলভুক্ত নয়। বিতর সলাত সত্য। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করে না সে আমার দলভুক্ত নয়। [১৪১৯] দুর্বলঃ মিশকাত (১২৭৮)। ইবনু মুহাইরীয (রহঃ) বনু কিনানাহ্র আল-মুখদাজী সিরিয়াতে আবূ মুহাম্মাদ নামক এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন, বিতর ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, আমি ‘উবাদাহ ইবনুস সামিতের (রাঃ) কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা বলেছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলাহেতু এর কোনটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
বিতর সলাতের রাক’আত সংখ্যা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলেনঃ দু’ দু’ রাক’আত এবং রাতের শেষভাগে বিতর এক রাক’আত। সহীহঃ মুসলিম। আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর বিতর সলাত অপরিহার্য। সুতরাং কেউ ইচ্ছে হলে পাঁচ রাক’আত আদায় করবে, কেউ তিন রাক’আত আদায় করতে চাইলে সে তাই করবে এবং কেউ এক রাক’আত বিতর আদায় করতে চাইলে সে এক রাক’আত আদায় করবে।
বিতর সলাতের ক্বিরাআত
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাতে সূরাহ ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’, ‘ক্বুল ইয়া-আইয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ আল্লাহুস সমাদ’ তিলাওয়াত করতেন। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু জুরাইজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বিতর সলাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কোন সূরাহ তিলাওয়াত করতেন তা জিজ্ঞেস করি। এরপর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তৃতীয় রাক’আতে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’, ‘কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’ এবং ‘কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন নাস’ সূরাহ তিনটি তিলাওয়াত করতেন।
বিতর সলাতের দু’আ কুনূত
আবুল হাওরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল-হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এমন কতগুলো বাক্য শিখিয়েছেন, যা আমি বিতর সলাতে পাঠ করে থাকি। তা হলোঃ “আল্লাহুম্মা ইহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া’আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্দা ‘আলাইকা ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইতা ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আ-দাইতা তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা’আলাইতা। আবূ ইসহাক উপরোক্ত সানাদ ও অর্থে বর্ণিত। তাতে শেষাংশে রয়েছেঃ এগুলো বিতরের কুনূতে বলেছেন। কিন্তু এ কথা উল্লেখ নেই যে, ‘আমি এগুলো বিতরে বলেছি।’ ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিতর সলাত শেষে বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিরিদাকা মিন সাখাতিকা ওয়া বিমু‘আফাতিকা মিন ‘উকুবাতিকা ওয়া আউ‘যুবিকা মিনকা লা উহসী সানা ‘আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা ‘নাফসিকা।” (অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ হতে আশ্রয় চাই। আপনার শাস্তি হতে আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আশ্রয় চাই। আমি আপনার থেকে সর্বপ্রকারের আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গণনা করে শেষ করতে পারবো না, বরং আপনি আপনার নিজের যেরূপ প্রশংসা করেছেন, ঠিক সেরূপই।” ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হিশাম হাম্মাদের প্রাক্তন শায়খ এবং ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন হতে আমার কাছে এ হাদীস পৌঁছে যে, তার থেকে হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ছাড়া অন্য কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেননি। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাতে রুকূ‘র আগে কুনূত পাঠ করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা হতে তার পিতা থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে কুনূতের কথা এবং উবাইয়ের নাম উল্লেখ নেই। অনুরূপ ভাবে ‘আবদুল আ‘লা এবং মুহাম্মাদ ইবনু বিশর আল-আবদী বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এ হাদীসটি ঈসা ইবনু ইউনুসের সাথে কুফাতে শুনেছেন। তবে কুনূতের কথা উল্লেখ করেননি। একইভাবে হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈ এবং শু‘বাহ (রহঃ) ক্বাতাদাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এখানেও কুনূতের কথা উল্লেখ নেই। যুবাইদী সূত্রে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পাঠ করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এরূপও বর্ণিত হয়েছে যে, উবাই (রাঃ) রমাযানের অর্ধ মাস কুনূত পাঠ করতেন। মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তার এক সাথীর সূত্র উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) রমাযানে তাদের ইমামতি করেছেন এবং রমাযানের শেষ দিকে কুনূত পড়েছেন। [১৪২৮] হাসান বাসরী (রহঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (তারাবীহ সলাতের জন্য) উবাই ইবনু কা‘বের পিছনে লোকদের জামা‘আতবদ্ধ করলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে বিশ রাত সলাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি রামাযান মাসের অর্ধেক পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেননি। অতঃপর যখন রমাযানের শেষ দশকে তিনি মাসজিদ ছেড়ে নিজ ঘরে সলাত আদায় করলেন। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, উবাই পালিয়ে গেছে। [১৪২৯] দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, কুনূত সংক্রান্ত যা কিছু উল্লেখ হয়েছে তা অনির্ভরযোগ্য এবং উল্লেখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরে কুনূত পড়েছেন এ মর্মে উবাইর বর্ণনা দুর্বল।
বিতরের পরে দু‘আ পাঠ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাতের সালাম ফিরিয়ে বলতেন: সুব্হানাল মালিকিন কুদ্দুস। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিতর সলাত আদায় না করেই ঘুমায় অথবা আদায় করতে ভুলে যায়, পরে স্মরণ হওয়া মাত্রই সে যেন তা আদায় করে নেয়।
ঘুমানোর পূর্বে বিতর সলাত আদায় করা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওয়াসিয়াত করেছেন, যা আমি সফরে কিংবা বাড়িতে থাকাকালেও পরিহার করি না। তা হলো : চাশতের দু’ রাকা‘আত সলাত, প্রতি মাসে তিন দিন (১৩,১৪ ও ১৫ আওয়ামে বিযের) সওম পালন এবং বিতর আদায় না করা পর্যন্ত না ঘুমানো। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম, এ কথা বাদে : সফরে কিংবা বাড়িতেও নয়। আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওয়াসিয়াত করেছেন যা আমি কখনো বর্জন করি না। তিনি আমাকে ওয়াসিয়াত করেছেন প্রতি মাসে তিন দিন সওম পালন করতে, বিতর সলাত আদায়ের পূর্বে নিদ্রা না যেতে এবং বাড়িতে ও সফরে প্রত্যেক অবস্থায় চাশতের সলাত আদায় করতে। সহীহ : তার এ কথা বাদে : মুকীম অবস্থায় ও সফর অবস্থায়ও নয়। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন: বিতর সলাত তুমি কোন সময়ে আদায় করো? তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথমাংশে বিতর আদায় করি। তিনি ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বিতর কোন সময়ে আদায় করো? তিনি বললেন, আমি বিতর শেষ রাতে আদায় করি। অতঃপর তিনি আবূ বকর (রাঃ) সম্পর্কে বলেনঃ সে সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং ‘উমার (রাঃ) সম্পর্কে বলেনঃ সে শক্তভাবে ধারণ করেছে।
বিতর সলাতের ওয়াক্ত
মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর কোন সময়ে আদায় করতেন? তিনি বলেন, রাতের প্রথমভাগে, মধ্যভাগে এবং শেষভাগে-এগুলোর প্রত্যেক সময়েই বিতর আদায় করেছেন। তবে তিনি ইন্তিকালের পূর্বে বিতর সলাত সাহারীর শেষ সময়ে আদায় করেছেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সুবহি সাদিকের আগেই বিতর আদায় করে নিবে। আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়িস (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি বিতর সলাত কখনো রাতের প্রথমাংশে আবার কখনো শেষাংশে আদায় করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ক্বিরাআত করেছেন? তিনি কি নিঃশব্দে পড়তেন নাকি সশব্দে? তিনি বলেন, তিনি কখনো আস্তে এবং কখনো জোরে-উভয় ভাবেই পড়েছেন। তিনি কখনো গোসল করে ঘুমিয়েছেন এবং কখনো উযু করে ঘুমিয়েছেন। সহীহ : মুসলিম। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, কুতাইবাহ ছাড়া অন্যরা ‘স্ত্রী সহবাসের গোসল’ বলেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সলাতে পরিণত করবে। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
বিতর সলাত দুইবার আদায় করবে না
ক্বায়িস ইবনু ত্বালক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা রমযান মাসে ত্বালক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) আমাদের সাথে দেখা করতে এসে এখানে সন্ধ্যা অতিবাহিত করেন এবং এখানেই ইফতার করেন। অতঃপর রাতে আমাদেরকে নিয়ে তারাবীহ ও বিতর সলাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি নিজেদের মাসজিদে গিয়ে তার সাথীদেরকে নিয়েও সলাত আদায় করেন। অতঃপর বিতর সলাতের জন্য এক ব্যক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে দিয়ে বলেন, তোমার সাথীদেরকে বিতর পড়াও। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনছি : একই রাতে দুইবার বিতর হয় না।
অন্যান্য সলাতে কুনূত পাঠ সম্পর্কে
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের নিকটবর্তী করবো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহর, ‘ইশা এবং ফাজ্রের সলাতের শেষ রাকা‘আতে দু‘আ কুনূত পাঠ করতেন। এতে মুমিনদের জন্য দু‘আ এবং কাফিরদের জন্য বদদু‘আ করতেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আল-বারাআ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের সলাতে দু‘আ কুনূত পাঠ করতেন। ইবনু মুয়াযের বর্ণনায় মাগরিবের সলাতেও কুনূত পড়ার কথা রয়েছে। সহীহ : মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস পর্যন্ত ‘ইশার সলাতে দু‘আ কুনূত পাঠ করেছেন। তিনি কুনূতে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! “ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্ত করুন! হে আল্লাহ! সালামহ ইবনু হিশামকে মুক্ত করুন! হে আল্লাহ! দুর্বল মুমিনদেরকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর আপনি কঠোর হোন! হে আল্লাহ! তাদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ দিন যেমন দুর্ভিক্ষ দিয়েছিলেন ইউসুফ (আ)-এর যুগে।” আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন ভোরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর দুর্বল ও নির্যাতিত মুমিনদের জন্য দু‘আ না করায় আমি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেনঃ তুমি কি তাদেরকে (নির্যাতিত মুসলিমদের) দেখছ না যে তারা মদিনায় ফিরে এসেছে? সহীহ : মুসলিম। বুখারীতে এ কথা বাদে : “আমি তাকে তা স্মরণ করিয়ে দিলে…।” ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরো এক মাস যুহর, ‘আসর মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজ্রের সলাতে শেষ রাকা‘আতে “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর কুনূত পাঠ করেছেন। এ সময় তিনি বনু সুলাইমের কয়েকটি গোত্র, যেমন রি‘ল, যাকওয়ান ও উসাইয়্যার উপর বদদু‘আ করেছেন এবং তাঁর পিছনের মুক্তাদীরা আমীন আমীন বলেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের সলাতে কুনূত পড়েছেন কিনা এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাঁ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, রুকূ‘র পূর্বে নাকি পরে? তিনি বলেন, রুকূ‘র পরে। মুসাদ্দাদ বলেন, ছোট কুনূত পড়েছেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরো এক মাস কুনূত পড়েছেন। অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছেন। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফাজ্রের সলাত আদায়কারী এক সাহাবী আমাকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাকা‘আতে (রুকূ‘) হতে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন।
নাফ্ল সলাত ঘরে আদায়ের ফাযীলাত
যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে একটি হুজরাহ বানিয়ে নিলেন। রাতে সেখানে গিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরাও তাঁর সাথে সলাত আদায় করতো এবং তারা প্রতি রাতে সেখানে একত্র হতো। এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট (মাসজিদে) না আসায় তারা গলা খাকাড়ি ও উচ্চস্বরে কথাবার্তা বললো, এমনকি তাঁর দরজায় কংকর নিক্ষেপ করলো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তুষ্ট মনে তাদের নিকট এসে বললেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের কি হলো যে, তোমরা (নাফ্ল সলাত জামা‘আতে আদায়ের জন্য) ব্যতিব্যস্ত হচ্ছো? আমি আশংকা করছি, তোমরা এভাবে এলে রাতের নাফ্ল সলাত তোমাদের উপর ফরয করা হতে পারে? কাজেই নাফ্ল সলাত তোমাদের নিজ নিজ ঘরে আদায় করা উচিত। কেননা ফরয সলাত ছাড়া প্রত্যেক ব্যক্তির নাফ্ল সলাত নিজ ঘরে আদায় করাই উত্তম। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কিছু সলাত নিজ নিজ ঘরে আদায় করবে এবং তোমাদের ঘরগুলোকে ক্ববরস্থানে পরিণত করবে না। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। এটি গত হয়েছে (১০৪৩)।
সলাতে দীর্ঘ ক্বিয়াম
আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস‘আমী (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করা। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন সদাক্বাহ উত্তম? তিনি বলেনঃ নিজ শ্রমে উপার্জির্ত সামান্য সম্পদ হতে যে দান করা হয় সেটা। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন হিজরাত উত্তম? তিনি বলেনঃ আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থাকা। জিজ্ঞেস করা হলো কোন জিহাদ উত্তম? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের জান ও মাল দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। জিজ্ঞেস করা হলো কোন ধরণের হত্যা মর্যাদা সম্পন্ন? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি (যুদ্ধের ময়দানে) নিজের ঘোড়া সহ নিহত হয়। সহীহ : এ শব্দে : (কোন সলাত?)।
ক্বিয়ামুল লাইল করতে উৎসাহ প্রদান
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে দয়া করুন, যে রাতে উঠে নিজেও সলাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও সলাত আদায় করে। সে উঠতে না চাইলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ এমন নারীর প্রতিও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে নিজে সলাত আদায় করে এবং তার স্বামীকেও জাগায়। সে উঠতে না চাইলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। [১৪৫০] হাসান সহীহ : এটি গত হয়েছে (১৩০৮)। আবূ সাঈদ আল-খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে নিজে সজাগ হলো এবং তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দিলো। অতঃপর উভয়েই একত্রে দু’ রাকা‘আত সলাত আদায় করলো। তাদের দু’জনকেই (আল্লাহর) অধিক যিকিরকারী ও যিকিরকারিণীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। সহীহ : এটি গত হয়েছে (১৩০৯)।
কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব
উসমান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন নিজে শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। সহীহ : বুখারী। সাহল ইবনু মু‘আয আল-জুহানী (রহঃ) হতে তার পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, ক্বিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চাইতেও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো! [১৪৫৩] ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরাআন পাঠে দক্ষ ব্যাক্তি উচ্চ মযাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যাক্তি কুরাআন পড়ার সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদেরকে রহমাত ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। সহীহ : মুসলিম। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা সুফ্ফাতে (মাসজিদে নাববীর আঙ্গিনায়) অবস্থান করছিলাম এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে বললেনঃতোমাদের মধ্যে কে পছন্দ করবে যে, ভোরে বুতহান অথবা আক্বীক্ব উপত্যকায় গিয়ে সেখান থেকে আল্লাহর সাথে কোনরূপ অন্যায় না করে ও আত্নীয়তা ছিন্ন না করে উঁচু কুঁজবিশিষ্ট উজ্জ্বল বর্ণের সুন্দর দু‘টি উটনী নিয়ে আসবে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সবাই। তিনি বললেনঃ অবশ্য তোমাদের কেউ ভোরে মাসজিদে এসে আল্লাহর কিতাব হতে দু‘টি আয়াত শিক্ষা করা এরূপ দু‘টি উটনীর চেয়েও উত্তম এবং তিনটি আয়াত শিক্ষা করা এরূপ তিনটি উটের চেয়েও উত্তম। আয়াতের সংখ্যা যত বেশি হবে তা তত সংখ্যক উটের চেয়ে উত্তম হবে। সহীহ : মুসলিম।
সূরাহ আ্ল-ফাতিহা
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সূরাহ “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন” হচ্ছে উম্মুল কিতাব, উম্মুল কুরআন এবং বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত। আবূ সাঈদ ইবনুল মু‘আল্লা (রাঃ) একদা তিনি সলাতে রত থাকাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সলাত আদায় শেষে তাঁর নিকট এলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমার ডাকে সাড়া দিতে কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমি সলাত রত ছিলাম। তিনি বললেনঃ মহান আল্লাহ কি বলেননিঃ “হে মুমিনগণ! যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্তকরে। (সূরাহ আল-আনফালঃ ২৪) আমি মাসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কুরআনের অত্যধিক মর্যাদা সম্পন্ন একটি সূরাহ শিক্ষা দিবো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার কথাটি স্মরণ রাখবো। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন”, এটি হচ্ছে সাত আয়াতবিশিষ্ট সূরাহ। আমাকে এটি এবং কুরআনুল ‘আযীম প্রদান করা হয়েছে। সহীহঃ বুখারী।
যিনি বলেন, সূরাহ ফাতিহা দীর্ঘ সূরাহসমূহের অন্তর্ভূক্ত
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাব‘উ মাসানী (সাত আয়াতবিশিষ্ট) নামক দীর্ঘ সূরাহ দেয়া হয়েছে এবং মূসা (আ)-কে দেয়া হয়েছিল ছয়টি। অতঃপর তিনি তাওরাতের লিখিত ফলকগুলো ছুড়ে ফেলায় দু‘টি উঠিয়ে নেয়া হয় এবং চারটি অবশিষ্ট থাকে।
আয়াতুল কুরসী সম্পর্কে
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি আবার বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম” (আয়াতুল কুরসী)। তখন তিনি আমার বুকে (হালকা) আঘাত করে বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক। সহীহঃ মুসলিম।
সূরাহ আস-সমাদ (আল-ইখলাস) সম্পর্কে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে বারবার সূরাহ ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতে শুনে ঘটনাটি ভোর বেলায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে উল্লেখ করলো। লোকটি যেন এ সূরাহ বারবার পাঠ করাকে তুষ্ট মনে করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! এ সূরাহটি পুরো কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। সহীহঃ বুখারী।
সূরাহ আল-ফালাক্ব ও সূরাহ আন-নাস সম্পর্কে
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সফরকালে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উষ্ট্রীর লাগাম টেনে নিয়ে যেতাম। একদা তিনি আমাকে বললেনঃ হে ‘উক্ববাহ! আমি কি তোমাকে পঠিতব্য দু‘টি সূরাহ শিক্ষা দিবো না? অতঃপর তিনি আমাকে সূরাহ ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব এবং কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস’ শিখালেন। এতে তিনি আমাকে তেমন খুশী হতে দেখেননি। অতঃপর তিনি সলাতের জন্য অবতরণ করে লওকদেরকে নিয়ে ফাজর সলাতে এ দু‘টি সূরাহ পাঠ করলেন। সলাত শেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ কেমন দেখলে, হে ‘উক্ববাহ! ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আল-জুহফা ও আল-আবওয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় সফরকালে আমরা হঠাৎ প্রবল বাতাস ও ঘোর অন্ধকারের কবলে পড়ি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব এবং কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস’ সূরাহ দু‘টি পাঠ করে আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং বললেনঃ হে ‘উকবাহ! এ সূরাহ দু‘টি দ্বারা পানাহ চাও। কেননা পানাহ চাওয়ার জন্য এরূপ সূরাহ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ দু‘টি সূরাহ দ্বারা সলাতের ইমামতি করতেও শুনেছি।
তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত পছন্দনীয়
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতে) কুরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কুরআন পাঠ করতে করতে উপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। ক্বাতাদাহ (রঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্বিরাআত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি যেখানে যতটুকু দীর্ঘ করা প্রয়োজন, সেখানে ততটুকু দীর্ঘ করে টেনে পাঠ করতেন। সহীহঃ বুখারী। ইয়া‘লা ইবনু মামলাক (রঃ) একদা তিনি উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত ও ক্বিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তাঁর সলাত সম্পর্কে জেনে তোমাদের কি দরকার? তিনি সলাত আদায় করতেন এবং সলাত আদায়ের সমপরিমান সময় ঘুমাতেন, আবার যেটুকু সময় ঘুমাতেন সে পরিমাণ সময় সলাত আদায় করতেন। আবারো সলাত আদায়ের সমপরিমান সময় ঘুমাতেন। এভাবেই ভোর হয়ে যেতো। তিনি তাঁর ক্বিরাআতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি ক্বিরাআতে এক একটি হরফ স্পষ্ট উচ্চারণ করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় সূরাহ ‘আল-ফাতহ’ পাঠ করতে শুনেছি এবং প্রতিটি আয়াত পুনরাবৃত্তিসহ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সুললিত কন্ঠে কুরআনকে সুসজ্জিত করো। আবুল ওয়ালীদ, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইয়াযীদ ইবনু খালিদ পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। সাঈদ ইবনু আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মধুর সূরে কুরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। সা‘দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রঃ) একদা আবূ লুবাবাহ (রাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলে আমরা তার অনুসরণ করি। যখন তিনি তার ঘরে ঢুকলেন, আমরাও তাতে ঢুকে পড়ি এবং দেখি, তিনি এমন লোক যার ঘরটি একেবারে জীর্ণ-শীর্ণ এবং অবস্থাও অসচ্ছল। আমি তাকে বলতে শুনি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে কুরআনকে মধুর সূরে পাঠ করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনু আবূ মুলায়কাহকে বলি, হে আবূ মুহাম্মাদ! যদি কারো স্বরই শ্রুতিমধুর না হয়? তিনি বললেন, সাধ্যমত সুন্দরভাবে পড়ার চেষ্টা করবে। ওয়াকী‘ ও ইবনু ‘উয়াইনাহ (রঃ) মান লাম ইতাগান্না’ এর অর্থ হচ্ছে ‘মধুর সূরে স্পষ্ট আওয়াযে কুরআন পড়ার চেষ্টা করা। সহীহ মাক্বতূ‘: বুখারী। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ অন্য কিছু এতো মনোযোগ দিয়ে শুনেন না, যেভাবে তিনি নাবীর সুমধুর কন্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে কুরআন পাঠ শুনেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।
কুরআন হিফয করার পর তা ভুলে যাওয়ার পরিণাম
সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ (মুখস্ত) করার পর তা ভুলে যায়, সে ক্বিয়াময়াতের দিন আল্লাহর সাথে পঙ্গু অবস্থায় (বা খালি হাতে) সাক্ষাত করবে।
কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হয়েছে
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযামকে সূরাহ আল-ফুরক্বান আমার পড়ার নিয়মের ব্যতিক্রম পড়তে শুনেছি। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে আমাকে তা পড়িয়েছেন। আমি তার উপর ঝাপিয়ে পড়তে চাইলাম। কিন্তু আমি তাকে পড়া শেষ করতে সুযোগ দিলাম। তার সলাত শেষ হলে আমি আমার চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরে তাঁকে টেনে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে নিয়ে এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে সূরাহ আল-ফুরক্বান পড়তে শুনেছি আপনি আমাকে যেভাবে পড়িয়েছেন তার বিপরীতভাবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ আচ্ছা পাঠ করো তো! তখন সে ঐরূপে পড়লো যেভাবে আমি তাকে পড়তে শুনেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ আচ্ছা তুমি পড়ো তো। তখন আমিও পাঠ করলাম। তিনি বললেনঃ এভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ কুরআন সাত হরফে অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং যেভাবে পড়তে সহজ হয় পড়ো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। মা‘মার (রঃ) ইমাম যুহরী (রঃ) বলেছেন, উল্লেখিত বর্ণের পার্থক্য এক একটি বর্ণে সীমিত (অর্থাৎ তা কেবল অক্ষরিক পার্থক্য), এখানে হালাল-হারাম সম্পর্কে কোন বিভেদ নেই। সহীহ মাক্বতূ‘: মুসলিম। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে উবাই! আমাকে কুরআন শিখানো হয়েছে। আমাকে বলা হলো, এক হরফে নাকি দু’ হরফে? তখন আমার সঙ্গী ফেরেশতা বললেন, বলুন, দু’ হরফে। আমি বললাম, দু’ হরফে। অতঃপর আমাকে বলা হলো, দু’ হরফে নাকি তিন হরফে? আমার সঙ্গী ফেরেশতা বললেন,বলুন, তিন হরফে। তখন আমি বললামঃ আমি তিন হরফে (রীতিতে) পাঠ করতে চাই। এভাবে পর্যায়ক্রমে সাত হরফে পৌঁছে। অতঃপর ফেরেশতা বললেন, এর যে কোনো রীতিতে পাঠ করা মুর্খতার নিরাময় এবং সলাতের জন্য যথেষ্ট। অতঃপর বললেন, আপনি সামী‘আন, ‘আলীমান, ‘আযীযান, হাকীমান- এর স্থলে অন্য কোনো সিফাত পরিবর্তন করে পাঠ করলে দোষ নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত ‘আযাবের আয়াতকে রহমত দিয়ে এবং রহমাতের আয়াতকে ‘আযাবের আয়াত দিয়ে পরিবর্তন না করা হয়। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনু গিফারের কূপ বা ঝর্ণার নিকট অবস্থানকালে জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মাতকে এক হরফে (রীতিতে) কুরআন পড়ানোর জন্য আপনাকে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কাছে তাঁর ক্ষমা ও উদারতা কামনা করি যে, আমার উম্মাত (ভাষা ও আঞ্চলিকতার বিভিন্নতার দরুন) এই এক হরফে পাঠ করতে সক্ষম হবে না। অতঃপর জিবরাঈল দ্বিতীয়বার এসে আগের মতই বললেন। অবশেষে সাত হরফ পর্যন্ত পৌঁছে বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মাতকে সাত হরফে কুরআন পড়াতে আপনাকে আদেশ করেছেন। আপনার উম্মাত এর যে কোনো হরফে পড়লেই তাঁদের পড়া নির্ভুল হবে।
দু‘আ সম্পর্কে
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু‘আও একটি ‘ইবাদাত। তোমাদের রব্ব বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।“ (সূরাহ আল-মু’মিনঃ৬০)। সা‘দ (রাঃ) এর এক পুত্রের সূত্র তিনি বলেন, আমার আব্বা আমাকে বলতে শুনলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত, তাঁর সমস্ত নিয়ামত ও আনন্দদায়ক বস্তু চাই এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার কাছে আশ্রয় জাহান্নামের আগুন হতে ও তথাকার শক্ত শিকল ও হাতকড়া বেড়ী হতে, এবং ইত্যাদি।’ তিনি বললেন, হে আমার পুত্র! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এমন জাতির আবির্ভাব হবে যারা দু‘আর মধ্যে সীমালঙ্ঘন করবে। সাবধান! তুমি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। তোমাকে জান্নাত দেয়া হলে সমগ্র জান্নাত ও তাঁর যাবতীয় কল্যাণকর সম্পদও তোমাকে দেয়া হবে। আর যদি জাহান্নামের আগুন হতে রেহাই পাও তাহলে তথাকার যাবতীয় অমঙ্গল ও কষ্টদায়ক সব কিছু হতেই রেহাই পাবে। হাসান সহীহঃ অনুরূপ গত হয়েছে (৯৬৫)। ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে সলাতের মধ্যে দু‘আকালে আল্লাহর বড়ত্ব ও গুণাবলী বর্ণনা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে শুনলেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। অতঃপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে অথবা অন্য কাউকে বললেনঃ তোমাদের কেউ সলাত আদায়কালে যেন সর্বপ্রথম তাঁর প্রভুর মহত্ব ও প্রশংসা বর্ণনা করে এবং পড়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরূদ পাঠ করে, অতঃপর ইচ্ছানুযায়ী দু‘আ করে। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন (যে দু‘আয় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা থাকে), এছাড়া অন্যান্য দু‘আ ত্যাগ করতেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে, হে আল্লাহ! তোমরা ইচ্ছা হলে আমার প্রতি অনুগ্রহ করো। বরং যা চাওয়ার দৃঢ়তার সাথে চাইবে। কেননা তাঁর উপর কারোর প্রভাব চলে না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের দু‘আ কবুল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে এবং বলে, আমি তো দু‘আ করেছি, অথচ কবুল হয়নি? সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় এবং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে। মালিক ইবনু ইয়াসার আস-সাকূনী আল-‘আওফী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট দু‘আর সময় হাতের তালুকে সম্মুখে রেখে দু‘আ করবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়। হাসান সহীহ। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুমায়মান ইবনু ‘আবদুল হামীদ (রঃ) বলেন, আমাদের মতে মালিক ইবনু ইয়াসার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য পেয়েছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো তাঁর দু’ হাতের তালু দ্বারা এবং কখনো দু’ হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা দু’ভাবেই দু’আ করতে দেখেছি। সহীহ: এ শব্দে: ---( আরবী) সালমান ফারসী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: নিশ্চয় তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু করে দু‘আ করবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং দু‘আতে কাকুতি মিনতির সময় দু’ হাত প্রসারিত করবে। আব্বস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’বাদ ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) তিনি বলেছেন, কাকুতি মিনতির প্রার্থনা এরূপঃ দু’ হাতের পৃষ্ঠকে চেহারার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন...অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আর সময় দু’ হাত উপরে উঠাতেন এবং দু’ হাত দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল মুছতেন। [১৪৯২] আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন : “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে চাই, আমি সাক্ষ্য দেই যে, তুমিই আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি একক, তুমি ঐ সত্তা যে, তুমি কারো হতে জন্ম নাওনি এবং কাউকে জন্মও দাওনি, কেউই তোমার সমকক্ষ নয়”। তিনি বললেনঃ তুমি এমন নামে আল্লাহর কাছে চেয়েছো, যে নামে চাওয়া হলে তিনি দান করেন এবং যে নামে ডাকা হলে সাড়া দেন। মালিক ইবনু মিগওয়াল (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি আল্লাহর ইসমে আযম দ্বারাই প্রার্থনা করেছো। আনাস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বসা ছিলেন। এসময় এক ব্যক্তি সলাত আদায় করে এই বলে দু’আ করলোঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সকল প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবী একমাত্র সৃষ্টকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরন্জ্ঞীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু’আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইসমে আযম এ দু’টি আয়াত রয়েছে: (এক) তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই, তিনি অতি দয়ালু মেহেরবান (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৬৩)। (দুই) সূরা আলে-‘ইমরানের প্রথমাংশ, আলিফ-লাম-মীম, তিনি সেই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। [১৪৯৬] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা তার একখানা চাদর চুরি হয়ে যায়। তিনি চোরকে বদদু’আ করতে শুরু করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি তার পাপকে হালকা করো না। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘লা তুসাববিখী’ এর অর্থ হচ্ছে, হালকা করো না। [১৪৯৭] ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমরাহ করতে যাবার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিয়ে বললেনঃহে আমার ছোট ভাই! তোমার দু’আয় আমাদেরকে যেন ভুলো না। পরবর্তীতে ‘উমার (রাঃ) বলেন, তাঁর এ একটি শব্দ আমাকে এতোটা অনন্দ দিয়েছে যে, এর বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়ার সম্পদও আমাকে এতোটা অনন্দিত করতে পারতো না। শু’বাহ (রহঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমি মদিনায় ‘আসিমের সাথে দেখা করলে তিনি আমাকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি ‘আমাদেরকে ভুলো না’ এর স্থলে ‘আমাদেরকেও শরীক করো’ বলেছেন। [১৪৯৮] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি দু’ আঙ্গুল উঠিয়ে দু’আ করছিলাম, এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বললেনঃএক আঙ্গুল উঠিয়ে দু’আ করো এবং তিনি তর্জনী (শাহাদাত আঙ্গুল) দ্বারা ইশারা করলেন।
কংকর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা
আয়িশাহ বিনতু সা’দ (রাঃ) হতে তার পিতা একদা তিনি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে এক মহিলার কাছে গিয়ে তার সম্মুখে খেজুর বিচি অথবা কংকর দেখতে পেলেন। মহিলাটি ওগুলোর সাহায্যে তাসবীহ পাঠ করছিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাকে এর চাইতে অধিক সহজ ও উত্তম পদ্ধতি জানাবো না! “আকাশের সমস্ত সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ সুবহানাল্লাহ এবং যমীনের সমস্ত সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ সুবহানাল্লাহ। আকাশ ও যমীনের মাঝে যা কিছু রয়েছে সে পরিমাণ সুবহানাল্লাহ এবং অনুরূপ সংখ্যক আল্লাহু আকবার, আল্হামদুলিল্লাহ , লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” [১৫০০] ইউসায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন: তোমরা তাকবীর, তাকদীস এবং তাহলীল এগুলো খুব ভালো ভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে অঙ্গুলে গুনে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জ্ঞিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন (ক্বিয়ামাতে) কথা বলবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আঙ্গুলে গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ) এর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিলো বাররাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এ নাম পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুসাল্লায় বসে তাসবীহ পাঠ করতে করতে দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুসাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তখন থেকে একটানা এ মুসাল্লায় বসে রয়েছো? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালেমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পাঠ করেছো, উভয়টি ‘ওজন হলে আমার ঐ চারটি কালেমা ওজনে ভারী হবে। তা হচ্ছে: “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ‘আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।” সহীহ: মুসলিম। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরা তো সওয়াবে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন সলাত আদায় করি, তেমন তারাও সলাত আদায় করে, আমরা যেমন সওম পালন করি, তারাও তেমন সওম পালন করে। কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দান-খয়রাত করে। (দান খয়রাতের জন্য) আমাদের তো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ যার! আমি কি তোমাকে এমন দুটি বাক্য শিক্ষা দিবো না যা পাঠ করলে তুমি তোমার চেয়ে অগ্রগামীদের সমপর্যায় হতে পারবে এবং তোমার পিছনের লোকেরাও তোমাকে অতিক্রম করতে পারবে না? তবে তার কথা ভিন্ন যে তোমার মতো আমল করে। তিনি বললেন, হাঁ, নিশ্চয়। তিনি বললেনঃ তুমি প্রত্যেক সলাতের পর তেত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’, তেত্রিশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’, তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং শেষে একবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর” বলবে। কেউ এ দু’আ পড়লে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হবে। সহীহ: কিন্তু: “কেউ এ দু’আ পড়লে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও তা ক্ষমা হবে।” তার এ কথাটুকু মুদরাজ।
সলাতে সালাম ফিরানোর পর কি পড়বে?
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সালাম ফিরানোর পর কোন দু’আ পাঠ করতেন তা জানার জন্য মু’আবিয়াহ (রাঃ) মুগীরাহ ইবনু শু’বাহর কাছে পত্র লিখলেন। অতঃপর মুগীরাহ (রাঃ) মু’আবিয়াহর (রাঃ) নিকট পত্রের জবাব লিখে পাঠালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানি’আ লিমা আ’ত্বায়তা ওয়ালা মু’ত্বি’আ লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দু মিনকাল জাদ্দ।” সহীহ: বুখারী ও মুসলিম। আবুয-যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাত শেষে বলতেনঃ ““লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কফিরুন। আহলুন নি’আমি ওয়াল ফাদলি, ওয়াস সানায়িল হুসনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুল দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরুন।” সহীহ : মুসলিম। আবুয-যুবাইর (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) প্রত্যেক ফার্য সলাতের পর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতেন। অতঃপর উপরোক্ত দু‘আর অনুরূপ। আরো বৃদ্ধি করেনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন নি‘মাতু..।” অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন। সহীহ : মুসলিম। যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। বর্ণনাকারী সুলায়মানের বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ফার্য সলাতের পর বলতেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আপনার বান্দাহ ও রসূল। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এবং প্রত্যেক বস্তুর রব্ব! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি মূহুর্তে আপনার অকৃত্রিম ‘ইবাদতকারী বানিয়ে দিন। হে মহান পরাক্রমশালী ও সম্মানের অধিকারী! আমার ফরিয়াদ শুনুন, আমার দু‘আ কবুল করুন। আল্লাহ মহান, আপনি সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ! আসমান ও যমীনের নূর। সুলায়মান ইবনু দাউদ বলেছেন, আপনিই আকাশ ও যমীনের রব্ব! হে আল্লাহ! আপনি মহান, অতি মহান। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি মহান! অতি মহান। [১৫০৮] আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সালাম ফিরানোর পর বলতেনঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতু ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আ’লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুয়াখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন যা কিছু আমি পূর্বে ও পরে করেছি, গোপনে, প্রকাশ্যে ও সীমালঙ্ঘন করেছি, এবং যা আমার চেয়ে আপনি অধিক জ্ঞাত। আপনিই আদি ও অন্ত। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করতেন : “হে আমার রব্ব! আমাকে সাহায্য করুন, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করবেন না। শত্রুর বিরুদ্ধে আমাকে প্রতারিত করুন, কিন্তু তাকে আমার উপর প্রতারক বানাবেন না। আমাকে কল্যাণের পথ দেখান, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার পথকে আমার জন্য সহজ করুন, যে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করুন, হে আল্লাহ! আমাকে আপনার কৃতজ্ঞ ও স্মরণকারী, ভীত ও আনুগত্যকারী, আপনার প্রতি আস্থাশীল ও আপনার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানিয়ে দিন। হে রব্ব! আমার তাওবাহ কবুল করুন, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়ে পরিস্কার করুন, আমার ডাকে সাড়া দিন, আমার ঈমান ও ‘আমলের প্রমাণে আমাকে ক্ববরে ফেরেশতাদের প্রশ্নে স্থির রাখুন, আমার অন্তরকে সরল পথের অনুসারী করুন, আমার জিহ্বাকে সদা সত্য বলার তাওফীক দিন এবং আমার অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ ও যাবতীয় দোষ হতে মুক্ত রাখুন।” সুফয়ান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আমর ইবনু মুররাহকে উপরোক্ত সানাদ ও অর্থে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি ‘ওয়া ইয়াসসিরিল হুদা ইলাইয়্যা’ বলেছেন, কিন্তু ‘হুদায়া বলেননি। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সালাম ফিরানোর পর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম”। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুফয়ান (রহঃ) ‘আমর ইবনু মুররাহ হতে আঠারটি হাদীস শুনেছেন, এ হাদীস সেগুলোরই একটি। সহীহ : মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে তিনবার ‘ইস্তিগফার’ পাঠ করতেন। অতঃপর সাওবান (রাঃ) ‘আল্লাহুম্মা’ হতে .....‘আয়িশাহর (রাঃ) হাদীসের ভাবার্থ বর্ণনা করেন। সহীহ : মুসলিম।
(ইস্তিগফার) ক্ষমা প্রার্থণা সম্পর্কে
আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গুনাহ করার পরপরই ক্ষমা চায়, সে বারবার গুনাহকারী গণ্য হবে না। যদি সে দৈনিক সত্তর বারও ঐ পাপে লিপ্ত হয়। [১৫১৪] আগার আল-মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কখনো কখনো আমার হৃৎপিন্ডের উপরও আবরণ পড়ে। তাই আমি দৈনিক একশো বার ক্ষমা চাই। সহীহ : মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু‘আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছি : “রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহীম।” প্রভূ হে! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার তাওবাহ কবুল করে নাও, তুমিই তাওবাহ কবুলকারী ও দয়ালু। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়িদ (রাঃ) আমি আমার আব্বাকে আমার দাদার সূত্রে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি দু‘আ পাঠ করবে : “আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহি” সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। [১৫১৮] ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু সুহাইব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ক্বাতাদাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময় কোন দু‘আ পাঠ করতেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসনাতাও ওয়াক্বিনা ‘আযাবান নারি।” যিয়াদের বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, আনাস (রাঃ) কেবল একটি দু‘আ দিয়ে মুনাজাতের ইচ্ছা করলে এটিই পাঠ করতেন, আর একাধিক দু‘আ পড়তে চাইলেও তাতে এ দু‘আ শামিল করতেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ উমামাহ ইবনু সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট শাহাদাত চায়, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দিবেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। সহীহ : মুসলিম। আসমা ইবনুল হাকাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তি, যখন আমি সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কোনো হাদীস শুনি, তখন তার মাধ্যমে মহান আল্লাহ যতটুকু চান কল্যাণ লাভ করি। কিন্তু যদি তাঁর কোন সাহাবী আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন, আমি তাকে (সত্যতা যাচাইয়ের জন্য) শপথ করাতাম। তিনি শপথ করলে আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে একটি হাদীস বর্ণনা করলেন, মূলতঃ তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন কোনো বান্দা কোনরূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে উযু করে দাঁড়িয়ে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। অতঃপর তিনি প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করেন : “এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে........আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ আলে ‘ইমরান : ১৩৫)। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে না : “আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা” (অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রত্যেক সলাতের পর ‘কুল আ‘ঊযু বি-রব্বিল ফালাক্ব ও কুল আঊযু বি-রব্বিন্ নাস’ সূরাহ দুটি পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার দু‘আ পাঠ করা এবং তিনবার ক্ষমা চাওয়া পছন্দ করতেন। [১৫২৪] আসমা বিনতু উমাইস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিবো না, যা তুমি বিপদের সময় পাঠ করবে? তা হচ্ছে : “আল্লাহু আল্লাহু রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান” (অর্থ : আল্লাহ! আল্লাহ! আমার রব্ব! তাঁর সাথে আমি কাউকে শরীক করি না)। আবূ ‘উসমান আন-নাহদী (রহঃ) আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে লোকেরা উচ্চস্বরে তাকবীর বললো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা তো কোনো বধির কিংবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না, যাকে তোমরা ডাকছো তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড়ের চাইতেও অতি নিকটে আছেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ মূসা! আমি কি তোমাকে আল্লাহর ধন-ভান্ডারসমূহ হতে একটি ভান্ডারের খোঁজ দিবো না। আমি বললাম, সেটা কি? তিনি বললেনঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” সহীহ : বুখারী ও মুসলিম এ কথাটি বাদে : “তোমরা যাকে ডাকছো তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড়ের চাইতেও অতি নিকটে আছেন।” কেননা এ অংশটুকু মুনকার। আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) একদা তারা আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে পাহাড়ী পথে এক টিলার চূড়ায় আরোহণকালে এক ব্যক্তি উচ্চস্বরে বললো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা কোনো বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়িস....এরপর অবশিষ্ট পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ।১ সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ মূসা (রাঃ) পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে তিনি বলেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের নফসের প্রতি সদয় হও। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে ব্যক্তি বলে : আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ আমার উপর একবার দরূদ পড়লে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমাত বর্ষণ করেন। সহীহ : মুসলিম। আওস ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিনটি উৎকৃষ্ট। কাজেই এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বললো, আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ নাবীদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
কোন ব্যক্তির স্বীয় পরিবার ও সম্পদকে বদ্দু‘আ করা নিষেধ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নিজেদেরকে বদ্দু‘আ করো না, তোমাদের সন্তানদের বদ্দু‘আ করো না, তোমাদের খাদিমদের বদ্দু‘আ করো না এবং তোমাদের ধন-সম্পদের উপরও বদ্দু‘আ করো না। কেননা ঐ সময়টি আল্লাহর পক্ষ হতে কবুলের মূহুর্তও হতে পারে, ফলে তা কবুল হয়ে যাবে। সহীহ : মুসলিম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মুত্তাসিল। ‘উবাদা ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ (রহঃ) জাবিরের (রাঃ) সাক্ষাত পেয়েছেন।
নাবী-রসূল ছাড়া অন্যের উপর দরূদ পাঠ সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললো, আপনি আমার ও আমার স্বামীর জন্য দু‘আ করুন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার উপর ও তোমার স্বামীর উপর আল্লাহর রহমাত বর্ষণ করুন।
কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ করা সম্পর্কে
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ করে, তখন ফেরেশতাগণ বলেন, আমীন, এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হবে। সহীহ : মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অনুপস্থিত ব্যক্তিদের পরস্পরের জন্য দু‘আ অতি দ্রুত কবুল হয়। [১৫৩৫] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিন ব্যক্তির দু‘আ নিঃসন্দেহে কবুল হয় : (এক) পিতার দু‘আ, (দুই) মুসাফিরের দু‘আ, (তিন) মজলুমের দু‘আ।
কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশংকা করলে যে দু’আ পড়তে হয়
আবূ বুরদা ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা তাকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশংকা করলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমরা তাদের মোকাবিলায় তোমাকে যথেষ্ট ভাবছি এবং তাদের অনিষ্ট হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি”।
ইস্তিখারা’ সম্পর্কে
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুর্আনের সুরাহ্ শিক্ষা দানের মত ইস্তিখারাও শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেতেনঃ তোমাদের কেউ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের মনস্থ করলে সে যেন ফরয ছাড়া দু’ রাক’আত নাফ্ল সলাত আদায় করে এবং বলেঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার অবগতির মাধ্যমে আপনার কাছে ইস্তিখারা করছি। আপনার কুদরত এর মাধ্যমে আমি শক্তি কামনা করি। আমি আপনার মহান অনুগ্রহ কামনা করি। আপনিই ক্ষমতাবান, আমার কোন ক্ষমতা নেই। আপনিই সবকিছু অবগত, আমি অজ্ঞ। আপনিই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে আমার এ কাজ (এ সময় নির্দিষ্ট কাজের নাম বলবে) আমার দ্বীন, পার্থিব জীবন, পরকাল এবং সর্বোপরি আমার পরিণামে কল্যাণকর হলে তা আমাকে হাসিল করার শক্তি দিন, আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার জন্য তাতে বরকত দিন। আর আপনার অবগতিতে সেটা আমার জন্য প্রথমে উল্লিখিত কাজসমূহে অকল্যাণকর হলে আমাকে তা থেকে দূরে রাখুন এবং সেটিকেও আমার থেকে দূরে রাখুন। আমার জন্য যা কল্যাণকর আমাকে তাই হাসিল করার শক্তি দিন, তা যেখানেই থাক না কেন। অতঃপর আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুন, অথবা বলেছেন, অবিলম্বে কংবা দেরীতে। সহীহঃ বুখারী। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, ইবনু মাসলাম ও ইবনু ঈসা (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির থেকে তিনি জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
(আল্লাহর কাছে) আশ্রয় প্রার্থণা করা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বস্তু হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেনঃ ভীরুতা, কৃপণতা, বয়োবৃদ্ধি জনিত দূরাবস্থা, অন্তরের ফিতনাহ এবং ক্ববরের শাস্তি হতে। [১৫৩৯] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই ক্ববরের শাস্তি হতে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ হতে”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমাত করতাম। আমি তাকে অধিকাংশ সময় বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের নির্যাতন হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”। সহীহঃ বুখারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিচের দু’আটি এমনভাবে শিখাতেন, যেমনভাবে তাদেরকে কুর্আনের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় চাই, ক্ববরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনাহ হতে এবং আশ্রয় চাই জীবন মরণের বিপদাপদ হতে”। সহীহঃ মুসলিম। ‘আশিয়াহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বাক্যগুলো দিয়ে দু’আ করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা, আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্র্যের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে ও অসম্মানী হতে। আমি আপনার নিকট আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা হতে অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।” ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন দু’আর মধ্যে এটাও অন্যতমঃ “হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতে বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ হতে”। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বলে দু’আ করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ঝগঢ়া-বিবাদ, মুনাফেকী ও দুশ্চরিত্রতা থেকে আশ্রয় চাই। ” [১৫৪৬] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা হতে আশ্রয় চাই, কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা হতে, কেননা তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু”। [১৫৪৭] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চারটি বস্তু হতে আশ্রয় চাইঃ এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না, এমন হৃদয় যা ভীত হয় না, এমন আত্মা যা তৃপ্ত হয় না এবং এমন দু’আ যা কবুল হয় না”। সহীহঃ মুসলিম,যায়দ ইবনু আরক্বাম হতে। আবুল মু’তামির (রহঃ) আমার ধারণা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন সালাত হতে যা উপকার দেয় না। ” এছাড়া অন্য দু’আ ও উল্লেখ করেন”। ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল আল-আশজাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি উম্মুল মু’মিনীন (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি দু’আ পড়তেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আমার কর্মের অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই, যা আমি করেছি এবং যা আমি এখনও করি নাই। ” সহীহঃ মুসলিম। আবূ আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দু’আ শিক্ষা দিন। তিনি বললেনঃ তুমি বলোঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অশ্লীল শ্রবণ, চোখের কুদৃষ্টি, জিহবার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই। ” আবুল ইয়াসার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ দু’আ করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ হতে, আমি আপনার নিকট হতে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ হতে এবং অতি বার্ধক্য হতে। আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শাইত্বানের প্রভাব হতে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হতে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রানীর দংশনে মৃত্যুবরণ হতে। ” আবুল ইয়াসার (রাঃ) সূত্র (পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ) বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ “দুশ্চিন্তা হতে আশ্রয় চাই”। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে। ” আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে আবূ উমামাহ নামক এক আনসারী সাহাবীকে দেখতে পেয়ে তাকে বললেনঃ হে আবূ উমামাহ! কি ব্যাপার! আমি তোমাকে সলাতের ওয়াক্ত ছাড়া মাসজিদে বসে থাকতে দেখছি? তিনি বললেন, সীমাহীন দুশিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিবো না, তুমি তা বললে আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা ও করে দিবেন? তিনি বললেন,আমি বললাম, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি সকাল সন্ধ্যায় বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য হতে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল হতে”। আবূ উমামাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দূর করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। [১৫৫৫]