1. পবিত্রতা
পবিত্রতা ছাড়া নামায ক্ববূল হয় না
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পবিত্রতা ছাড়া নামায ক্ববূল হয় না। আর হারাম উপায়ে প্রাপ্ত মালের সাদকাও ক্ববূল হয় না। হান্নাদ ‘বিগাইরি তুহূর’ –এর স্থলে ‘ইল্লা বিতুহূর’ উল্লেখ করেছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (২৭২)
পবিত্রতা অর্জনের ফাযীলাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মু’মিন অথবা মুসলিম বান্দা ওযূ করে এবং মুখমণ্ডল ধোয়, তার মুখমণ্ডল হতে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার দু’হাত ধোয়, তার দু’হাতে কৃত সকল গুনাহ তার হাত হতে পানির সাথে অথবা পানির অবশিষ্ট বিন্দুর সাথে দূরীভূত হয়ে যায়। অতঃপর সে সকল গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে যায়। সহীহ। আত্তা‘লীকুর রাগীব- (১/৯৫)
পবিত্রতা নামাযের চাবি
‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পবিত্রতা নামাযের চাবি; তাকবীর তার (নামাযের বাইরের সকল হালাল কাজ) হারামকারী এবং সালাম তার (নামাযের বাইরের সকল হালাল কাজ) হালালকারী। হাসান সহীহ। ইবনু মাজাহ- (২৭৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের চাবি হচ্ছে নামায, আর নামাযের চাবি হচ্ছে ওযূ। হাদীসটির প্রথম অংশ যঈফ। ২য় অংশ সহীহ, পূর্বের সহীহ হাদীসের অংশ হওয়ার কারণে। –মিশকাত (২৯৪)।
মলত্যাগ করতে যাওয়ার সময় যা বলবে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় প্রবেশের কালে বলতেনঃ اللهم إني اعوذبك من الخبث والخبيث হে আল্লাহ! শয়তান,জ্বিন ও সকল কষ্টদায়ক প্রাণী থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। الخبث والبيث এর স্থলে الخبث والخبا ئث ও বর্ণিত আছে। এই হাদীছটির অন্যমত রাবী শু‘বা বলেন, তাঁর উস্তাদ আবদুল আযীয ইবনু সুহাইাব اعوذبك এর স্থলে এক সময় اعوذ بالله ও রিওয়ায়াত করেছেন। - ইবনু মাজাহ ২৯৮, বুখারি ও মুসলিম আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মলত্যাগ করতে যাওয়ার সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জঘন্য পুরুষ ও স্ত্রী জ্বিন শাইতানের ক্ষতি হতে আশ্রয় চাই। সহীহ। দেখুন পূর্বের হাদীস।
পায়খানা থেকে বের হবার পর যা বলবে
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেনঃ “(হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি”। সহীহ। ইবনু মজাহ-(৩০০)
কিবলামুখী হয়ে পায়খানা বা পেশাবে বসা নিষেধ
আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন মলত্যাগ করতে যাও, তখন মলত্যাগ বা পেশাবের সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে বসো না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বস। আবূ আইয়ুব (রাঃ) বলেন, আমরা সিরিয়াতে এসে দেখতে পেলাম এখানকার পায়খানাগুলো কিবলার দিকে করে স্থাপিত। অতএব আমরা কিবলার দিকে ঘুরে যেতাম এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা চাইতাম। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩১৮),বুখারী ও মুসলিম।
উল্লিখিত ব্যাপারে অনুমিত সম্পর্কে
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলাকে সামনে রেখে মলত্যাগ বা পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। আমি তাঁর মৃত্যুর এক বছর আগে তাঁকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে মলত্যাগ বা পেশাব করতে দেখেছি। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩২৫) ইবনু লাহীআ ইবনু লাহীআ আবু যুবাইরের সূত্রে, তিনি জাবিরের সুত্রে এবং আবূ কাতাদার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করছেন। তিনি (কাতাদা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিবলার দিকে ফিরে পেশাব করতে দেখেছেন। সনদ দুর্বল। কুতাইবা আমাদের কাছে এ তথ্য পরিবেশন করেছেন। ইবনু লাহীআর হাদীসের চেয়ে জাবিরের হাদীস অধিকতর সহীহ। হাদীস বিশারদদের মতে, ইবনু লাহীআ দুর্বল রাবী। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান ও অন্যরা তাঁকে স্মরণশক্তিতে দুর্বল বলে সাব্যস্ত করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ)-এর ঘরের ছাদে উঠি। অতঃপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিরিয়ার দিকে মুখ করে এবং কা’বাকে পেছনে রেখে মলত্যাগ করতে দেখি। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩২২),বুখারী ও মুসলিম।
দাড়িয়ে পেশাব করা নিষেধ
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন,যে লোক তোমাদেরকে বলে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে পেশাব করেছেন, তার কথা তোমরা বিশ্বাস কর না। তিনি সব সময় বসেই পেশাব করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩০৭) এ অনুচ্ছেদে উমার ও বুরাইদা (রাঃ)-এর হাদীস রয়েছে। আবূ ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে আইশার হাদীস অধিকতর হাসান ও সবচাইতে সহীহ। উমারের বর্ণিত হাদীস হলঃ ----------------- ১২/১. উমার (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখেন। তিনি বলেন হে উমার! দাঁড়িয়ে পেশাব কর না। (উমার বলেন,) তারপর আমি আর কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি।” যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩০৮) সিলসিলাহ আহাদীস যঈফাহ(৯৩৪) আবূ ঈসা বলেনঃ শুধুমাত্র আব্দুল কারীম ইবনুল মুখারিক এই হাদীসটিকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি মুহাদ্দিসদের মতে যঈফ। আইয়ুব সাখতিয়ানী তাঁকে যঈফ বলেছেন এবং তাঁর সমালোচনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায় ইবনু উমার হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেছেন, “আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি”। এ হাদীসটি আবদুল কারীমের বর্ণিত হাদীস হতে অধিক সহীহ। এ অনুচ্ছেদে বুরাইদার হাদীস অরক্ষিত। দাঁড়িয়ে পেশাব করা নিষিদ্ধ হওয়ার তাৎপর্য হল, এটা প্রচলিত নিয়ম বিরোধী, তবে হারাম নয়। “আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ তোমার দাঁড়িয়ে পেশাব করাটা একটা যুলুম ও বেয়াদবী।”
দাড়িয়ে পেশাব করার অনুমতি সম্পর্কে
হুযাইফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সম্প্রদায়ের আবর্জনা রাখার স্থানে আসেন এবং সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। অতঃপর আমি তাঁর জন্য পানি আনি। আমি অপেক্ষা করার জন্য একটু দূরে সরে দাঁড়াই। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং আমি এসে তাঁর পায়ের সামনে দাঁড়ালাম। তিনি অজু করলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩০৫)
মলত্যাগ বা পেশাবের সময় গোপনীয়তা (পর্দা) অবলম্বন করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মলত্যাগ করার প্রয়োজন মনে করতেন, তিনি মাটির কাছাকাছি না হওয়া পর্যন্ত বস্ত্র তুলতেন না। সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ-(১১), সহীহাহ-(১০৭১)
ডান হাতে ইস্তিনজা করা মাকরূহ
আবদুল্লাহ ইবনু আবী কাতাদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কোন ব্যক্তিকে ডান হাত দিয়ে নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩১০), বুখারী ও মুসলিম।
পাথর বা ঢিলা দিয়ে ইস্তিনজা করা
‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, সালমান (রাঃ)-কে বলা হল, আপনাদের নবী প্রতিটি বিষয় আপনাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন; এমনকি পায়খানা-পেশাবের শিষ্টাচারও? সালমান (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ, তিনি আমাদের কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করতে, ডান হাত দিয়ে ইস্তিনজা করতে, আমাদের কাউকে তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিনজা করতে, এবং শুকনা গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩১৬), বুখারী ও মুসলিম।
দুটি ঢিলা দিয়ে ইস্তিনজা করা
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মলত্যাগ করতে যাওয়ার সময় (আমাকে) বললেনঃ আমার জন্য তিন টুকরা পাথর নিয়ে আস। রাবী বলেন, আমি দুটি পাথরের টুকরা এবং একটি শুকনা গোবরের টুকরা নিয়ে আসলাম। তিনি পাথরের টুকরা দু’টো রাখলেন এবং গোবরের টুকরাটা ফেলে দিলেন। তিনি বললেনঃ “এটা নাপাক জিনিস”। সহীহ। বুখারী - (১৫৬)।
যেসব বস্তু দিয়ে ইস্তিনজা করা মাকরূহ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শুকনা গোবর দিয়ে আর হাড় দিয়ে ইস্তিনজা করবে না। কেননা এগুলো তোমাদের ভাই জ্বিনদের খাদ্য। সহীহ। আল-ইরওয়া- (৪৬), মিশকাত-(৩৫০), যাঈফাহ-(১০৩৮) এর অধীনে।
পানি দিয়ে ইস্তিনজা করা
'আয়িশাহ (রাঃ) তিনি (মহিলাদের) বললেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের পানি দ্বারা ইস্তিনজা করার নির্দেশ দাও। আমি (স্ত্রীলোক হিসাবে) তাদের (এ নির্দেশ দিতে) লজ্জাবোধ করছি। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও পানি দিয়ে ইস্তিনজা করতেন। সহীহ। ইরওয়া- (৪২)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়খানার বেগ হলে তিনি দূরে চলে যেতেন
মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কোন এক সফরে নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মলত্যাগের প্রয়োজন হলে তিনি অনেক দূরে চলে গেলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৩৩০১)।
গোসলখানায় পেশাব করা মাকরূহ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তিকে নিজের গোসলখানায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ (মানুষের মনে) বেশিরভাগ ওয়াসওয়াসা তা হতেই সৃষ্টি হয়। প্রথম অংশ সহীহ, দ্বিতীয় অংশ যঈফ। ইবনু মাজাহ- (৩০৪)।
মিসওয়াক করা বা দাঁত মাজা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হবে মনে না করলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (২৮৭), বুখারী ও মুসলিম। যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হবে মনে না করলে তাদেরকে সকল নামাযের সময় দাঁত মাজার নির্দেশ দিতাম এবং এশার নামাযের জামা’আত এক-তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত দেরি করতাম। অধঃস্তন রাবী আবূ সালামা বলেন, যাইদ ইবনু খালিদ (রাঃ) নামাযে আসতেন আর তাঁর কানের গোড়ার ঠিক সেখানে মিসওয়াক থাকত যেখানে লেখকের কলম থাকে। যখনই তিনি নামাযে দাঁড়াতেন মিসওয়াক করতেন, অতঃপর তা আবার সেখানে রাখতেন। সহীহ। সহীহ্ আবু দাঊদ- (৩৭)।
তোমাদের কেউ ঘুম হতে জেগে হাত না ধোয়া পযর্ন্ত যেন তা পানির পাত্রে না ডুবায়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ রাতের ঘুম হতে জেগে তার হাত দুই অথবা তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত যেন তা পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা তার জানা নেই, রাতে তার হাত কোথায় ছিলো (ঘুমে থাকাবস্থায় লজ্জাস্থানে যেতে পারে)। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম, বুখারীতে সংখ্যার উল্লেখ নেই।
ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা
রাবাহ ইবনু ‘আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তাঁর দাদী তিনি তাঁর পিতার (সাঈদ ইবনু যায়িদ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাঈদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযূর শুরুতে বিলমিল্লাহ বলেনি তার ওযূ হয়নি। হাসান। ইবনু মাজাহ- (৩৯৯)। বর্ণনাকারী পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।
কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
সালামা ইবনু ক্বাইস (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি ওযূ কর নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেল এবং যখন (পায়খানায়) ঢিলা ব্যবহার কর বেজোড় সংখ্যায় ব্যবহার কর। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪০৬)।
এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করা নাক পরিষ্কার করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) হত তিনি বলেন, আমি নবী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করতে ও নাক পরিষ্কার করতে দেখেছি। তিনি তিনবার এরকম করেছেন। সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১০), বুখারী ও মুসলিম।
দাড়ি খিলাল করা
আবদুল কারীম ইবনু আবুল মুখারিক আবূ উমাইয়া হতে হাসসান ইবনু বিলালের তিনি বলেন, আমি ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-কে ওযূ করার সময় দাড়ি খিলাল করতে দেখলাম। তাঁকে বলা হল, অথবা তিনি (হাসসান) বলেছেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি দাড়ি খিলাল করছেন? তিনি (আম্মার) বললেনঃ (এ কাজে) কে আমাকে বাঁধা দিবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর দাড়ি খিলাল করতে দেখেছি। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪২৯)। ‘আম্মার (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন........... এ সূত্রেও উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে। উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ি খিলাল করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪৩০)।
মাথা মাসিহ করার নিয়মঃ সামনের দিক হতে শুরু করে পিছনের দিকে নিতে হবে
‘আবুদল্লাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’হাতে মাথা মাসিহ করতেন। তিনি হাত দুটি সামনে আনতে এবং পিছনে নিতেন। তিনি মাথার সামনের দিক হতে শুরু করে উভয় হাত ঘাড়ের দিকে নিতেন; অতঃপর পেছন দিক হতে আবার সামনের দিকে এনে শুরু করার জায়গায় পৌঁছাতেন। অতঃপর তিনি উভয় পা ধুতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪৩৪), বুখারী ও মুসলিম।
মাথার পেছন দিক হতে সামনের দিকে মাসিহ করা
রুবাই‘ বিনতু মুআব্বিয ইবনি ‘আফরাআ (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের মাথা দু’বার মাসিহ করলেন। তিনি প্রথমবার ঘাড়ের দিক হতে মাসেহ শুরু করলেন এবং দ্বিতীয়বার মাথার সামনের দিক হতে শুরু করলেন। তিনি উভয় কানের ভেতর ও বাহিরও মাসিহ করলেন। হাসান ইবনু মাজাহ-(৩৯০)।
একবার মাথা মাসিহ করা
রুবাই‘ বিনতু মু‘আব্বিয ইবনি ‘আফরাআ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ওযূ করতে দেখলেন। তিনি বলেন, তিনি (নাবী) মাথার সামনের দিক, পেছনের দিক (সমুদয় মাথা) এবং দুই কানের ভেতর ও বাহির একবার করে মাসিহ করলেন।
মাথা মাসিহ করার জন্য পৃথকভাবে পানি নেয়া
‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) তিনি নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ওযূ করতে দেখলেন। তিনি হাতে লেগে থাকা অতিরিক্ত পানি বাদে নতুন পানি নিয়ে মাথা মাসিহ করলেন। সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১১), মুসলিম।
কানের ভেতরে ও বাইরে মাসিহ করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মাসিহ করলেন এবং দুই কানের ভেতরে ও বাহিরে মাসিহ করলেন। হাসান সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪৩৯)
দুই কান মাথার অন্তর্ভূক্ত
আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন। তিনি মুখমন্ডল ও উভয় হাত তিনবার করে ধুলেন এবং মাথা মাসিহ করলেন আর বললেনঃ উভয় কান মাথারই অংশ। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪৪৪)
আঙ্গুল খিলাল করা
আসিম ইবনু লাকীত ইবনু সাবিরা হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি ওযূ করবে, আঙ্গুলও খিলাল করবে। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪৪৮)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তুমি ওযূ করবে তখন দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুল খিলাল করবে। হাসান সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪৪৭)। মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ আল-ফিহরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি, নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ওযূ করতেন, (বাঁ হাতের) ছোট আঙ্গুল দিয়ে দু’পায়ের আঙ্গুলগুলো মলতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪৪৬)।
পায়ের গোড়ালি ধোয়ার ব্যাপারে যারা সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদেরকে আগুনের ভীতি প্রদর্শন করা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পায়ের গোড়ালির জন্য আগুনের শাস্তি। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম।
ওযূর সময় প্রত্যেক অংশ একবার করে ধোয়া
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর প্রতিটি অংগ একবার করে ধুয়েছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৪১১), বুখারী।
ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ দুইবার করে ধোয়া
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ওযূর সময়) প্রতিটি অঙ্গ দু’বার করে ধুয়েছেন। হাসান সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৫)।
ওযূর সময় প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া
‘আলী (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন। সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১০০)।
ওযূর অঙ্গগুলো এক, দুই অথবা তিনবার ধোয়া সম্পর্কে
সাবিত ইবনু আবূ সাফিয়্যা (রহঃ) আমি আবূ জা’ফরকে বললাম, জাবির (রাঃ) কি আপনাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওযূর অঙ্গগুলো একবার, দুইবার বা তিনবার করে ধুয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪১০) সাবিত ইবনু আবূ সাফিয়্যা (রহঃ) আমি আবূ জা‘ফরকে বললাম, জাবির (রাঃ) কি আপনাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর অঙ্গগুলো একবার করে ধুয়েছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। হাদীসটি হান্নাদ ও কুতাইবা বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়েই বলেন, ওয়াকী সাবিত ইবনু সাফিয়্যা হতে বর্ণনা করেছেন। সহীহ। এই হাদীসটি ইবনু ‘আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত ৪২ নং এর অনুরূপ তাই সহীহ্।
যে ব্যক্তি কোন অঙ্গ দু’বার এবং কোন অঙ্গ তিনবার ধোয়
‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ওযূ করলেন। তিনি তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, দুই হাত দু’বার করে ধুলেন, মাথা মাসিহ করলেন এবং উভয় পা দু’বার ধুলেন। সহীহ, তবে দু’বার ধুলেন, অংশটি শাজ। সহীহ্। আবূ দাঊদ- (১০৯)।
নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযূ কেমন ছিল
আবূ হাইআ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ) কে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন এবং ভাল ভাবে পরিষ্কার করলেন; তিনবার কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনিবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, একবার মাথা মাসিহ করলেন এবং উভয় পা গোছা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ওযূর অবশিষ্ট পানি তুলে নিয়ে তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযূ কিরূপ ছিল তা তোমাদের দেখানোর জন্যই আমি এরূপ করা পছন্দ করলাম। সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১০১-১০৫), বুখারী সংক্ষেপিত। আবদি খাইর ‘আলী (রাঃ) আবদি খাইর ‘আলী (রাঃ)-এর সূত্রে আবূ হাইআ হতে বর্ণিত হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আবদি খাইরের বর্ণিত হাদীসের শেষের অংশ নিম্নরূপঃ তিনি যখন ওযূ শেষ করতেন তখন অবশিষ্ট পানি হাতের আঁজলে নিয়ে পান করতেন। সহীহ। দেখুন পূর্ববর্তী হাদীস।
ওযূর শেষে পরিধানের কাপড়ে পানি ছিটানো
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! যখন আপনি ওযূ করেন, (পরিধেয় বস্ত্রে) পানি ছিটিয়ে দেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪৬৩)।
সুন্দরভাবে ওযূ করা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদের বলব না, আল্লাহ তা‘আলা কি দিয়ে গুনাহ মুছে দেন এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ (বলে দিন)। তিনি বললেনঃ কষ্ট থাকার পরেও ভালভাবে ওযূ করা, মাসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এটাই হল ‘রিবাত’ (প্রস্তুতি)। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৪২৮), মুসলিম। ‘আলা (রহঃ) ‘আলা (রহঃ) হতে এই সনদসূত্রে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে, কুতাইবা তাঁর সনদে বর্ণিত হাদীসে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাটা এভাবে) উল্লেখ করেছেনঃ ‘এটাই তোমাদের জন্য রিবাত, এটাই তোমাদের জন্য রিবাত, এটাই তোমাদের জন্য রিবাত। ’ এ কথাটা (এ বর্ণনায়) তিনবার উল্লেখিত হয়েছে। সহীহ্। দেখুন পূর্ববর্ণিত হাদীস।
ওযূর পর রুমাল ব্যবহার করা
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি বস্ত্রখণ্ড ছিল। ওযূ করার পর এটা দিয়ে তিনি (ওযূর অঙ্গসমূহ) মুছে নিতেন। সনদ দুর্বল। মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি- তিনি ওযূ করে তাঁর কাপড়ের কিনারা দিয়ে মুখমন্ডল মুছে ফেলতেন। সনদ দুর্বল।
ওযূর পর যা বলতে হবে
উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করার পর বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা‘আলা ব্যতিত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই; আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও তাঁরই রাসূল; হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর”, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৪৭০)।
এক মুদ্দ পানি দিয়ে ওযূ করা
সাফীনাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘এক মুদ্দ পানি দিয়ে ওযূ করতেন এবং এক সা পানি দিয়ে গোসল করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (২৬৭)।
ওযূর মধ্যে পানির অপচয় মাকরূহ
উবাই ইবনু কাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ওযূর সময় (সন্দেহপ্রবণতা সৃষ্টি করার জন্যই) একটি শাইতান রয়েছে। তার নাম ‘ওয়ালাহান’ বলে কথিত। অতএব ওযূর সময় পানি ব্যবহারে ওয়াসওয়াসা হতে সতর্ক থাক। সনদ দুর্বল, ইবনু মাজাহ (৪২১)।
প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুনভাবে ওযূ করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুন ওযূ করতেন, তিনি পবিত্র (ওযূ) থাকলেও করতেন এবং অপবিত্র (ওযূহীন) থাকলেও করতেন। হুমাইদ বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি করেন? তিনি বললেন, আমরা একই ওযূতে কাজ সারি। যইফ, সহীহ আবূ দাঊদ (১৬৩)। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযূ থাকা সত্বেও ওযূ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ১০টি নেকি লিখবেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫১২) ‘আমর ইবনু ‘আমির আনসারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন করে ওযূ করতেন। আমি আনাসকে প্রশ্ন করলাম, আপনারা কি করেন? তিনি বলেন, আমাদের ওযূ নষ্ট না হলে একই ওযূতে আমরা সব ওয়াক্তের নামায আদায় করে করে নেই। সহীহ্। ইবনু মাজাহ – (৫০৯), বুখারী।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই ওযূতে সকল নামায আদায় করেছেন
সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (বুরাইদা) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযূ করতেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন একই ওযূ দিয়ে সব ওয়াক্তের নামায আদায় করলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ আপনি এমন একটি কাজ করলেন যা ইতোপূর্বে কখনও করেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ইচ্ছা করেই এটা করলাম। সহীহ। ইবনু মাজাহ – (৫১০), মুসলিম।
একই পাত্রের পানি দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ওযূ করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে মাইমূনা (রাঃ) জানিয়েছেন, তিনি বলেছেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র হতে পানি দিয়ে নাপাকির (ফরজ) গোসল করেছি। সহীহ। বুখারী ও মুসলিম।
মহিলাদের পবিত্রতা অর্জনের পর বেঁচে যাওয়া পানির ব্যবহার মাকরুহ
বানী গিফার গোত্রের এক ব্যক্তির তিনি বলেন, মহিলাদের (ওযূ বা গোসল হতে) বেঁচে যাওয়া পানি ব্যবহার করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পুরুষদেরকে) মানা করেছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩৭৩) হাকাম ইবনু ‘আমর আল-গিফারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষদেরকে স্ত্রীলোকদের ওযূ-গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে ওযূ করতে নিষেধ করেছেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি স্ত্রীলোকদের অবশিষ্ট পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বোক্ত হাদীস।
মহিলাদের ঝুটা পানি ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক স্ত্রী একটি গামলাতে গোসল করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে ওযূ করতে চাইলেন। তিনি (স্ত্রী) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নাপাক ছিলাম। তিনি বললেনঃ (নাপাক ব্যক্তির ছোঁয়ায়) পানি নাপাক হয় না (যদি তার হাতে ময়লা না থাকে)। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩৭০)
পানিকে কোন জিনিস নাপাক করতে পারে না
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি বীরে বুযা’আহ্ নামক কূপের পানি দিয়ে ওযূ করতে পারি? এটা এমন একটি কূপ যাতে হায়েবের ন্যাকড়া, (মরা কুকুর) ও আবর্জনা ফেলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “পানি পাক, কোন জিনিসই তাকে নাপাক করতে পারে না। ” সহীহ। মিশকাত- (৪৭৮), সহীহ আবূ দাউদ- (৫৯)
ঐ সম্পর্কেই
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন পানির বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুনেছি , যা জঙ্গল ও জনশূন্য এলাকায় জমা হয়ে থাকে এবং যা পান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হিংস্র জীব ও বন্য জন্তু এসে থাকে। তিনি বললেনঃ পানি যখন দুই কুল্লা পরিমাণ হয় তখন তা নাপাক হয়না। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৫১৭)
বদ্ধ পানিতে পেশাব করা মাকরূহ
আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এমন যেন না হয় যে, তোমাদের কেউ বদ্ধ পানিতে (কূপ, পুকুর, জলাশয়) পেশাব করে, অতঃপর তা দিয়েই ওযূ করে। – সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩৩৪)
সমুদ্রের পানি পবিত্র
মুগীরা ইবনু আবী বুরদা তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রশ্ন করল , হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্র পথে আসা-যাওয়া করি এবং সাথে করে সামান্য মিঠা পানি নেই। যদি আমরা তা দ্বারা ওযূ করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযূ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত জীব হালাল”। সহীহ। ইবনু মাজাহ (৩৮৬-৩৮৮)
পেশাবের ব্যাপারে কঠোরতা ও সতর্কতা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ এদের উভয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। , কিন্তু বড় কোন অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজন পেশাবের সময় আড়াল (পর্দা) করত না, আর অপরজন একের কথা অন্যের নিকট বলে বেড়াত (চোগলখুরী করত)। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৩৪৭), বুখারী ও মুসলিম
দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবে পানি ছিটানো
উম্মু ক্বাইস বিনতু মিহসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। সে তখনও শক্ত খাবার ধরেনি। বাচ্চাটি তার কোলে পেশাব করে দিল। তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন, অতঃপর তা পেশাবের জায়গায় ছিটিয়ে দিলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৫২৪), বুখারী ও মুসলিম
হালাল জীবের পেশাব সম্পর্কে
আনাস (রাঃ) উরাইনা গোত্রের লোকেরা মদীনায় আসল। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সাদকার উটের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ “তোমরা এর দুধ ও পেশাব পান কর”। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাখালকে হত্যা করে উটগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে গেল এবং ইসলাম ত্যাগ করল (মুরতাদ হয়ে গেল) তাদেরকে গ্রেফতার করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আনা হল। তিনি তাদের এক দিকের হাত ও অন্যদিকের পা কাটলেন (কাটালেন), চোখ উপড়ে ফেললেন (ফেলালেন) এবং রোদের মধ্যে কাঁকরময় জমীনে ফেলে রাখলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি তাদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে মুখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে দেখলাম। অতঃপর সে মারা গেল। (অধঃস্তন রাবী) হাম্মাদ কখনো কখনো বলতেন, সে তার মুখ দিয়ে মাটি কামড়াচ্ছিল। পরিশেষে তারা মারা গেল। সহীহ। ইরওয়া- (১৭৭),রাওয- (৪৩), বুখারী ও মুসলিমের অনুরূপ আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের চোখ উপড়ে ফেললেন (ফেলালেন)। কেননা তারা রাখালদের চোখ উপড়ে ফেলেছিল। সহীহ, প্রাগুক্ত, মুসলিম
বায়ু নির্গত হলে ওযূ করা সম্পর্কে
আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (বায়ুর) শব্দ অথবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত পুনরায় ওযূ ফরজ নয়। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৫১৫), মুসলিম আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে থাকা অবস্থায় যদি তার নিতম্বের মাঝখান হতে বায়ুর আভাস পায়, তাহলে সে যেন শব্দ অথবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত (মাসজিদ হতে) বের না হয়। সহীহ। সহীহ আবু দাউদ-(১৬৯), মুসলিম। আবু হুরাইরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার নামায কবুল করেন না। সহীহ। আবু দাউদ- (৫৪), বুখারী ও মুসলিম।
ঘুমালে ওযূ ভেঙ্গে যায় বা নতুন করে ওযূ করা ফরয হয়ে যায়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিজদারত অবস্থায় ঘুমাতে দেখলেন। এমনকি তিনি নাক ডাকলেন, তারপর তিনি নামাযরত অবস্থায়ই দাঁড়ালেন। (নামায শেষে) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে ঘুমালেন? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি শুয়ে ঘুমায় শুধু তার জন্যই ওযূ করা ওয়াজিব। কেননা যখন কেউ শুয়ে ঘুমায় তখন তার শরীরের বন্ধনসমূহ শিথিল হয়ে যায়। যঈফ, যঈফ আবু দাঊদ (২৫), মিশকাত (৩১৮। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ (বসে বসে) ঘুমাতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন এবং নামায আদায় করতেন, কিন্তু ওযূ করতেন না। সহীহ্। ইরওয়া- (১১৪), সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১৯৪), মিশকাত- (৩১৭)।
আগুন যে জিনিসের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে তার সংস্পর্শে আসলে পুনরায় ওযূ করা সম্পর্কে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আগুনে রান্না করা খাদ্য খেলে ওযূ করতে হবে; তা পনিরের একটা টুকরাই হোক না কেন। ” (আবূ হুরাইরাকে এ কথা বর্ণনা করতে শুনে) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আমরা কি তৈল ব্যবহার করলেও ওযূ করব, আমরা কি গরম পানি পান করলেও ওযূ করব? আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, হে ভাইয়ের ছেলে! যখন তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদীস শুনতে পাও তার সামনে উদাহরণ পেশ কর না। হাসান। ইবনু মাজাহ-(৪৮৫)।
আগুনের তাপ দ্বারা পরিবর্তিত জিনিস ব্যবহারে ওযূর প্রয়োজন নেই
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কোথাও যাবার উদ্দেশ্যে) বের হলেন। আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি এক আনসার মহিলার বাড়ীতে গেলেন। সে তাঁর জন্য একটি বকরী যাবাহ করল। তিনি তা খেলেন। অতঃপর সে তাঁর জন্য পাত্রে করে তাজা খেজুর আনলো। তিনি তা হতে খেলেন, অতঃপর যুহরের নামাযের ওযূ করলেন এবং নামায আদায় করলেন। মহিলাটি বকরীর অবশিষ্ট গোশত হতে কিছু গোশ্ত তাঁকে দিলেন। তিনি তা খেলেন এবং আসরের নামায আদায় করলেন, কিন্তু ওযূ করেননি। হাসান সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১৮৫)।
উটের গোশত খেলে ওযূ নষ্ট হওয়া সম্পর্কে
বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, উটের গোশত খেলে আবার ওযূ করতে হবে কি না এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ উটের গোশত খাওয়ার পর ওযূ কর। তাঁকে আবার বকরীর গোশত খেলে ওযূ করতে হবে কি না এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেন এতে (বকরীর গোশত খেলে) তোমরা ওযূ করো না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৪৯৪)।
যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ থাকবে কিনা
বুসরা বিনতু সাফওয়ান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি (ওযূ করার পর) নিজের যৌনাংগ স্পর্শ করেছে, সে যেন আবার ওযূ না করা পর্যন্ত নামায না আদায় করে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৪৭৯)। হিশাম (রহঃ) এ হাদীসটি একাধিক সূত্রে হিশাম, আবূ উসামা, আবুল যিনাদ ও অন্য রাবীগণ হতে বর্ণনা করেছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বোক্ত হাদীস। আবুল যিনাদ ওরওয়ার সূত্রে আবুল যিনাদ ওরওয়ার সূত্রে বুসরা হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
যৌনাংগ স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে না
কাইস ইবনু তালক্ব ইবনু ‘আলী আল-হানাফী হতে তাঁর পিতার (তালকের) সূত্রে কাইস ইবনু তালক্ব ইবনু ‘আলী আল-হানাফী হতে তাঁর পিতার (তালকের) সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘এটা (যৌনাংগ) তাঁর দেহের একটা অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। ’ (অথবা রাবীর সন্দেহ) তিনি ‘বুয্আহ’ (টুকরা, অংশ) শব্দ বলেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৪৮৩)।
চুমু দিলে ওযূ করতে হবে না
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক স্ত্রীকে চুমু খেলেন, অতঃপর নামায আদায় করতে গেলেন, কিন্তু তিনি (নতুন করে) ওযূ করেননি। উরওয়া বলেন, আমি বললাম, তা আপনি (‘আয়িশাহ্) ছাড়া আর কেউ নয়। এতে তিনি হেসে দিলেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৫০২)।
বমি করলে বা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হওয়া সম্পর্কে
আবূ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বমি করলেন, ফলে তিনি ইফতার করলেন। অতঃপর ওযূ করলেন। মাদান বলেন, আমি দামিশকের মাসজিদে সাওবান (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে এ কথা বললাম। তিনি বললেন, আবূ দারদা (রাঃ) ঠিকই বলেছেন, এ সময় আমি তাঁর (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) ওযূর পানি ঢেলেছিলাম। -সহীহ। ইরওয়া- (১১১)
নাবীয দিয়ে ওযূ করা
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমার পাত্রে কি আছে? আমি বললাম, নাবীয (খেজুর দ্বারা তৈরী শরবত)। তিনি বললেনঃ খেজুর পবিত্র এবং পানিও পবিত্র। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দিয়ে ওযূ করলেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৮৪)।
দুধ পান করে কুলি করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করে পানি আনতে বললেন, অতঃপর কুলি করলেন এবং বললেনঃ দুধে তৈলাক্ত পদার্থ (চর্বি) আছে। সহীহ। ইবনু মাজাহ (৪৯৮)
বিনা ওযূতে সালামের উত্তর দেওয়া মাকরূহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম করল, তখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। তিনি তার সালামের জবাব দেননি। হাসান সহীহ্। ইরওয়া (৫৪) সহীহ্ আবূ দাঊদ (১২-১৩), মুসলিম।
কুকুরের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুতে হবে, প্রথম অথবা শেষবার মাটি দ্বারা ঘষতে হবে। বিড়াল যদি তাতে মুখ দেয় তবে একবার ধোয়াই যথেষ্ট। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাউদ (৬৪-৬৬), মুসলিম অনুরূপ; কিন্তু তাতে বিড়ালের উল্লেখ নেই।
বিড়ালেন উচ্ছিষ্ট (ঝুটা) সম্পর্কে
কাবাশা বিনতু কা’ব ইবনি মালিক (রাঃ) তিনি আবূ কাতাদা (রাঃ) এর পুত্রবধূ ছিলেন। আবূ কাতাদা (শ্বশুর) তাঁর নিকট এলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর জন্য ওযূর পানি ঢাললাম। তিনি বলেনঃ একটি বিড়াল এসে তা পান করতে লাগল। তিনি পাত্রটি কাত করে ধরলেন আর বিড়ালটি পানি পান করতে থাকল। কাবশা বলেন, তিনি (শ্বশুর) দেখলেন, আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, হে ভাইঝি! তুমি কি আশ্চর্য হচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “বিড়াল অপবিত্র নয়। এটা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী অথবা বিচরণকারিণী। ” সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৩৬৭)
মোজার উপর মাসিহ করা
হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) তিনি বলেন, জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) পেশাব করলেন, অতঃপর ওযূ করলেন এবং মোজার উপর মাসিহ করলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি এরূপ করছেন? তিনি বললেন, কোন জিনিস আমাকে বাধা দিবে? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপ করতে দেখেছি। হাম্মাম বলেন, জারীরের এ হদীস সবারই ভাল লাগত। কেননা তিনি সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পর মুসলমান হয়েছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ (৫৪৩)। শাহার ইবনু হাওশাব তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহকে ওয়ূ করতে এবং মোজার উপর মাসিহ করতে দেখলাম। আমি এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। তিনি বললেন, আমি রাসূলুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ওযূ করতে এবং মোজার উপর মাসিহ করতে দেখেছি। আমি (শাহর) তাঁকে (জারীরকে) প্রশ্নে করলাম, সেটা কি সূরা মাইদা অবতীর্ণ হওয়ার আগে না পরে? তিনি বললেন আমি তো সূরা মাইদা অবতীর্ণ হওয়ার পরেই ইসলাম গ্রহণ করেছি। সহিহ। ইরওয়া (১/১৩৭)।
মুসাফির ও মুকীম ব্যক্তির মোজার উপর মাসাহ করা
খুযাইমাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ “মুসাফিরের জন্য তিন (দিন) এবং মুকীমের জন্য এক (দিন)”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ (৫৫৩) সাফওয়ান ইবনু ‘আসসাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন সফরে থাকতাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিতেন, আমরা যেন নাপাকির গোসল ছাড়া তিন দিন তিন রাত আমাদের মোজা না খুলি; এমনকি এমনকি মলত্যাগ-পেশাব ও ঘুম হতে ওঠার পর ওযূ করার সময়ও (মোজা না খুলি)। হাসান। ইবনু মাজাহ (৪৭৮)
মোজার উপরের দিক ও নীচের দিক মাসিহ করা
মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজার উপরের অংশ মাসিহ করেছেন এবং নীচের অংশও মাসিহ করেছেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫৫০)।
মোজার বাহিরের দিক মাসাহ করা
মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর মোজা দুটির উপরিভাগ মাসাহ করতে দেখেছি। হাসান সহীহ্। মিশকাত- (৫২২), সহীহ আবূ দাঊদ- (১৫১-১৫২)।
জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করা
মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন এবং জাওরাব ও জুতার উপর মাসাহ করলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৫৫৯)।
পাগড়ীর উপর মাসাহ করা
মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন এবং মোজা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করলেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১৩৭, ১৩৮), মুসলিম। বিলাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ (৫৬১)। আবূ উবাইদা ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্মার ইবনু ইয়াসার (রহ:) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! এটা সুন্নাত। আমি আবার তাঁকে পাগড়ীর উপর মাসাহ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, (মাথার) চুল পানি স্পর্শ করাও। সনদ সহীহ্।
নাপাকির গোসল
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি তাঁর খালা মাইমূনা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি সহবাসজনিত নাপাকির গোসল করলেন। তিনি বাঁ হাত দিয়ে পানির পাত্র ডান হাতের উপর কাত করলেন, উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, অতঃপর পানির পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি তুলে লজ্জাস্থানে দিলেন, অতঃপর দেয়ালে অথবা মাটিতে হাত ঘষলেন, অতঃপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, অতঃপর তিনবার মাথায় পানি ঢাললেন। অতঃপর সমস্ত শরীরে পানি ঢাললেন। অতঃপর (গোসলের) জায়গা থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৫৭৩), বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নাপাকির জন্য গোসল করতে ইচ্ছা করতেন, তখন পানির পাত্রে হাত দেয়ার আগে উভয় হাত ধোয়ার মাধ্যমে গোসল শুরু করতেন। অতঃপর তিনি লজ্জাস্থান ধুতেন এবং নামাজের ওযূর মত ওযূ করতেন। অতঃপর চুলের ভেতরে পানি পৌঁছাতেন এবং মাথায় তিন আঁজলা পানি ঢালতেন। সহীহ। ইরওয়া- (১৩২), বুখারী ও মুসলিম।
গোসলের সময় নারীরা চুলের বাঁধন খুলবে কি?
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাথার চুলে শক্ত বেনী বাঁধি। আমি কি নাপাকি গোসল করার সময় তা খুলে দেব? তিনি বললেনঃনা, তুমি তোমার মাথায় তিন আঁজল পানি ঢাল, তারপর তোমার সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত কর এবং এভাবে পবিত্র হও। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বললেনঃএভাবে তুমি নিজেকে পবিত্র করলে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬০৩), মুসলিম।
প্রতিটি চুলের নীচে নাপাকি রয়েছে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রতিটি চুলের নীচে নাপাকি আছে। অতএব চুলগুলো ভাল করে ধৌত কর এবং শরীর ভাল করে পরিষ্কার কর। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫৯৭)।
গোসলের পর ওযূ করা
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করার পর ওযূ করতেন না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৫৭৯)।
পুরুষের লজ্জাস্থান ও স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, পুরুষাংগের খাতনার স্থান স্ত্রীর (যৌনাংগের) খাতনার স্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। আমি (‘আয়িশাহ্) ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছি, অতঃপর আমরা গোসল করেছি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬০৮), মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক লজ্জাস্থান অপর লজ্জাস্থানে প্রবেশ করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। সহীহ্। পূর্বের হাদীসের কারণে, ইরওয়া-(১/১২১)।
বীর্যপাতের ফলে গোসল ওয়াজিব হয়
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, “বীর্যপাতের ফলেই গোসল ওয়াজিব হয়” এ অনুমতি ইসলামের প্রথম যুগে ছিল, অতঃপর তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬০৯)। ইমাম যুহ্রী (রহঃ) ইমাম যুহ্রী (রহঃ) হতে এই সূত্রে উপরের হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, “বীর্যপাত হলেই গোসল ওয়াজিব” এই হুকুম ইহতিলামের (স্বপ্নদোষের) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইহতিলামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই অংশটুকুর সনদ দুর্বল। আর সেটা মাওকূফ। হাদীসের বাকী অংশ সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬০৬-৬০৭)।
যে ব্যক্তি ঘুম হতে জেগে (কাপড় বা বিছানা) ভিজা দেখতে পেল অথচ তার স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হচ্ছে না
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, সে ঘুম থেকে জেগে ভিজা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু স্বপ্নদোষের কথা মনে করতে পারছে না। তিনি বললেন, সে গোসল করবে। অপর এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে কিন্তু বীর্যপাতের কোন আলামাত দেখতে পাচ্ছে না। তিনি বললেনঃ “তাকে গোসল করতে হবে না। ” উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রীলোক যদি এমনটি দেখতে পায় (স্বপ্নদোষ হয়) তবে তাকে কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, স্ত্রীলোকেরা পুরুষদেরই অংশ। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (২৩৪)।
বীর্য এবং বীর্যরস (মযী)
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বীর্যরস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেনঃ “বীর্যরস বের হলে ওযূ করতে হবে, এবং বীর্যপাত হলে গোসল করতে হবে”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৫০৪)
কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে কি করতে হবে
সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) তিনি বলেন, বীর্যরস বের হওয়ার কারণে আমি কঠিন অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কেননা এ কারণে আমাকে প্রায়ই গোসল করতে হত। আমি ব্যাপারটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলাম এবং তার বিধান জানতে চাইলাম। তিনি বললেনঃ “এটা বের হলে তোমার জন্য ওযূই যথেষ্ট”। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তা যদি আমার কাপড়ে লেগে যায়, তবে কি করব? তিনি বললেনঃ “এক আঁজলা পানি তোমার কাপড়ের যে অংশে বীর্যরস দেখতে পাও সেখানে ছিটিয়ে দাও, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। “ হাসান। ইবনু মাজাহ- (৫০৬)
কাপড়ে বীর্য লেগে গেলে
হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর বাড়িতে একজন মেহমান এল, তিনি তার জন্য হলুদ রংয়ের একটি চাদর বিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। সে তাতে শুয়ে গেল। (ঘুমের মধ্যে) তার স্বপ্নদোষ হল। সে চাদরটি এ অবস্থায় ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করল। তাই সে তা পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিল। অতঃপর ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট তা পাঠিয়ে দিল। তিনি বললেন, সে আমাদের কাপড়টি খারাপ করে দিল কেন? আঙ্গুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে বীর্য তুলে ফেলাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। কখনো কখনো আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় হতে আঙ্গুল দিয়ে শুক্র খুঁটে খুঁটে তুলে ফেলতাম। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৫৩৮), মুসলিম।
কাপড় হতে বীর্য ধোয়া
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় হতে বীর্য ধুয়ে ফেলেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৫৩৬), বুখারী ও মুসলিম।
গোসল না করে নাপাক অবস্থায় ঘুমিয়ে যাওয়া
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কখনো নাপাক অবস্থায় ঘুমিয়ে যেতেন, এমনকি পানি স্পর্শও করতেন না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৫৮১)। ওয়াকী ওয়াকী সুফিয়ানের বরাতে আবূ ইসহাকের সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
নাপাক ব্যক্তির ঘুমের পূর্বে ওযূ করা
‘উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করলেন, আমদের কেউ কি নাপাক অবস্থায় ঘুমাতে পারবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে ওযূ করে নেবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৫৮৫), বুখারী ও মুসলিম।
নাপাক ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করা (হাতে হাত মিলানো)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন। তখন তিনি (আবূ হুরাইরা) নাপাক ছিলেন। তিনি (আবূ হুরাইরা) বলেন, আমি চুপচাপ সরে গেলাম এবং গোসল করে তাঁর নিকট এলাম। তিনি বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে, অথবা কোথায় গিয়েছিলে? আমি বললাম, আমি নাপাক ছিলাম। তিনি বললেনঃ “মুমিন ব্যক্তি কখনও নাপাক হয় না”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৫৩৪), বুখারী ও মুসলিম।
পুরুষদের মত স্ত্রীলোকদেরও যখন স্বপ্নদোষ হয়
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মিলহান কন্যা উম্মু সুলাইম (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হক কথা বলতে আল্লাহ তা’আলা লজ্জাবোধ করেন না। অতএব কোন নারীর পুরুষদের মত স্বপ্নদোষ হলে কি তাকে গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন সে পানির (বীর্যপাতের) চিহ্ন দেখতে পায় তখন যেন গোসল করে নেয়। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে বললাম, হে উম্মু সুলাইম! আপনি তো নারীদের অপমান করলেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬০০), বুখারী ও মুসলিম।
গোসলের পর শরীর গরম করার জন্য স্ত্রীর শরীরের সাথে লেগে যাওয়া
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও কখনও নাপাকির গোসল করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতেন শরীর গরম করার জন্য। আমি তাঁকে আমার সাথে জড়িয়ে নিতাম (ঠান্ডা দূর করার জন্য)। অথচ আমি তখনও নাপাকির গোসল করিনি। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫৮০)।
নাপাক ব্যক্তি পানি না পেলে তায়াম্মুম করবে
আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য পবিত্রতাকারী, যদিও সে দশ বছর ধরে পানি না পায়। যখন সে পানি পাবে তখন নিজের শরীরে যেন পানি পৌঁছায় (গোসল করে)। এটাই (তার জন্য) উত্তম। মাহমূদ তার বর্ণিত হাদীসে এরূপ উল্লেখ করেছেনঃ পবিত্র মুসলমানদের জন্য ওযূ গোসলের (বিকল্প) উপকরণ। সহীহ্। মিশকাত-(৫৩০), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৩৫৭), ইরওয়া-(১৫৩)।
ইস্তিহাযা (রক্তপ্রদর)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুবাইশের কন্যা ফাতিমা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন ইস্তিহাযার রোগিণী, কখনও পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ “না, এটা একটা শিরার রক্ত, হায়িয নয়। যখন তোমার হায়িয শুরু হবে,নামায ছেড়ে দেবে। যখন হায়িযের সময়সীমা শেষ হবে, তোমার শরীর হতে রক্ত ধুয়ে ফেলবে (গোসল করে নেবে) এবং নামায আদায় করবে”। আবূ মুআবিয়া তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন, (হায়িযের মুদ্দাত শেষ হওয়ার পর) প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযূ কর (নামায আদায় কর), যতক্ষণ পরবর্তী (হায়িযের) সময় না আসে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬২১), বুখারী ও মুসলিম।
ইস্তিহাযার রোগিণী প্রতি ওয়াক্তে ওযূ করবে
‘আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিহাযার রোগিণী সম্পর্কে বলেনঃ ইতোপূর্বে সে যে কয়দিন ঋতুবতী থাকতো ততদিন নামায ছেড়ে দেবে; অতঃপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক নামযের সময় নতুন করে ওযূ করবে এবং রোযা রাখবে ও নামায আদায় করবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬২৫)। 'আলী ইবনু হুজ্র 'আলী ইবনু হুজ্র হতেও শুরাইক এর সূত্রে উপরের হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইস্তিহাযার রোগিণীর একই গোসলে দুই ওয়াক্তের নামায আদায় করা
হামনা বিনতু জাহ্শ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ও অত্যধিক পরিমাণে ইস্তিহাযাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিধান জিজ্ঞেস করতে এবং ব্যাপারটা তাঁকে জানাতে আসলাম। আমি আমার বোন যাইনাব বিনতি জাহ্শের ঘরে তাঁর দেখা পেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি গুরুতররূপে ও অত্যধিক পরিমানে ইস্তিহাযাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি হুকুম করেন? এটা আমাকে রোযা-নামাযে বাধা দিচ্ছে। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে তুলা ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি; এটা রক্ত শোষণ করবে। তিনি (হামনা) বলেন, এটা তার চেয়েও বেশি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি (নির্দিষ্ট স্থানে কাপড়ের) লাগাম বেঁধে নাও। তিনি (হামনা) বললেন, এটা তার চেয়েও বেশি। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি কাপড়ের পট্টি বেঁধে নাও। তিনি বললেন, এটা আরো অধিক গুরুতর, আমি পানি প্রবাহের মত রক্তক্ষরণ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাকে দু'টো নির্দেশ দিচ্ছি, এর মধ্যে যেটাই তুমি অনুসরণ করবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি উভয়টিই করতে পার তাহলে তুমিই ভাল জান ( কোনটি অনুসরণ করবে )। অতঃপর তিনি তাকে বললেনঃ এটা শাইতানের একটা আঘাত ছাড়া আর কিছু নয় (অতএব চিন্তার কিছু নেই)। এক. তুমি হায়িযের সময়সীমা ছয় দিন অথবা সাত দিন ধরে নিবে। প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহ তা'আলার জ্ঞানে রয়েছে। অতঃপর তুমি গোসল করবে। তুমি যখন মনে করবে যে, তুমি পবিত্র হয়ে গেছ তখন (মাসের অবশিষ্ট ) চব্বিশ দিন অথবা তেইশ দিন নামায আদায় করবে এবং রোযা রাখবে। এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। তুমি প্রতি মাসে এরূপ করবে, যেভাবে অন্য মেয়েরা তাদের হায়িযের সময়ে এবং তোহরের (পবিত্রতার) সময়ে নিজেদের হায়িযের সময়সীমা ও তুহরের সময়সীমা গণনা করে থাকে। দুই. যদি তুমি যুহরের নামায পিছিয়ে আনতে এবং আসরের নামায এগিয়ে আনতে পার তাহলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করে যুহর ও আসর উভয় নামায একত্রে আদায় করে নাও। এভাবে মাগরিবের নামায পিছিয়ে আনতে এবং ইশার নামায এগিয়ে আনতে পার এবং গোসল করে উভয় নামায এক সাথে আদায় করতে পারলে তাই করবে। তুমি যদি ফযরের নামাযের জন্যও গোসল করতে পার তাহলে তাই করবে এবং রোযাও রাখবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু'টি বিকল্প নির্দেশের মধ্যে শেষেরটিই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়। হাসান। ইবনু মাজাহ- (৬২৭)।
ইস্তিহাযার রোগিণী প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করবে
'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জাহ্শ কন্যা উম্মু হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফাতোয়া জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমি সর্বদা ইস্তিহাযার রোগে আক্রান্ত থাকি এবং কখনও পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দেব? তিনি বললেনঃ "না, এটা একটি শিরার রক্ত; তুমি গোসল করে নামায আদায় করবে। " অতঃপর তিনি (উম্মু হাবীবা) প্রত্যেক নামাযের জন্য গোসল করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬২৬), বুখারী ও মুসলিম।
ঋতুবতী নারী ছুটে যাওয়া নামায কাযা করবে না
মুআযাহ্ (রহঃ) এক মহিলা 'আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করল, আমাদের কেউ তার হায়িয চলাকালীন সময়ের নামায কি পরে আদায় করবে? তিনি (‘আয়িশাহ্) বললেন, তুমি কি হারূরা এলাকার বাসিন্দা (খারিজী)? আমাদের কাউকে মাসিক ঋতু চলাকালীন ছুটে যাওয়া নামায পরবর্তীতে কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬৩১), বুখারী ও মুসলিম।
নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবর্তী নারী কুরআন তিলাওয়াত করবে না
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঋতুবর্তী নারী ও নাপাক ব্যক্তি (যার উপর গোসল ফরয) কুরআনের কোন অংশ তিলাওয়াত করবে না। মুনকার, ইবনু মাজাহ (৫৯৫)।
ঋতুবতীর সাথে একই বিছানায় ঘুমানো
'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন ঋতুবতী হতাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিতেনঃ 'তুমি শক্ত করে পাজামা বেঁধে নাও। অতঃপর তিনি আমাকে আলিঙ্গন করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (২৬০), বুখারী ও মুসলিম।
ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির সাথে একত্রে পানাহার এবং তাদের উচ্ছিষ্ট (ঝুটা) সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু সা'দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়িযগ্রস্তা নারীর সাথে একত্রে পানাহার সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তার সাথে খাও। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৬৫১)।
হায়িয অবস্থায় মাসজিদ হতে কিছু আনা
কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেন, 'আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেনঃ "হাত বাড়িয়ে মাসজিদ হতে আমাকে মাদুরটি এনে দাও। " তিনি ('আয়িশাহ্) বলেন, আমি বললাম, আমি হায়িযগ্রস্তা। তিনি বললেনঃ তোমার হায়িয তো তোমার হাতে নয়। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৬৩২), মুসলিম।
ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করা অধিক গুনাহের কাজ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করে অথবা স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে অথবা গনক ঠাকুরের নিকটে যায়- সে মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (কুরআন) অবিশ্বাস করে। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৬৩৯)।
ঋতুবতীর সাথে সহবাসের কাফফারা
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে হায়িয চলাকালীন সময়ে সহবাস করে তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "সে অর্ধ দীনার সাদকা করবে"। সহীহ্ - এই শব্দে "এক দীনার বা অর্ধ দীনার" - সহীহ্ আবূ দাউদ -(২৫৬), ইবনু মাজাহ-(৬৪০)। হাদীসে বর্ণিত অর্ধ দীনার এই শব্দে হাদীসটি য'ঈফ, য'ঈফ আবূ দাঊদ-(৪২)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন রক্ত লাল থাকে তখন (সহবাস করলে) এক দীনার, আর যখন রক্ত পীতবর্ণ ধারণ করে তখন অর্ধ দীনার। য’ঈফ। এই বিশ্লেষণ সহীহ সনদে মাওকূফ, সহীহ আবূ দাঊদ-(২৫৮)।
কাপড় হতে হায়িযের রক্ত ধুয়ে ফেলা
আসমা বিনতু আবী বাকার সিদ্দীক (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হায়েইযের রক্ত লাগা কাপড়ের বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আঙ্গুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে তা তুলে ফেল, অতঃপর পানি দিয়ে তা আঙ্গুলের মাধ্যমে মলে নাও, অতঃপর তাতে পানি গড়িয়ে দাও, অতঃপর তা পরে নামায আদায় কর। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৬২৯), বুখারী ও মুসলিম।
নিফাসগ্রস্তা নারী কত দিন নামায রোযা থেকে বিরত থাকবে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে নিফাসগ্রস্তা মহিলারা চল্লিশ দিন বসে থাকত। আমরা ওয়ারস ঘাস পিষে তা দিয়ে আমাদের চেহারার দাগ তুলতাম। হাসান সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৬৪৮)
একই গোসলে একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করা
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই গোসলে তাঁর স্ত্রীদের নিকট যেতেন (একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করে একবারেই গোসল করতেন)। সহীহ। ইবনু মাজাহ –(৫৮৮), বুখারী ও মুসলিম।
দ্বিতীয় বার সহবাস করতে চাইলে ওযূ করে নেবে
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর যদি আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযূ করে নেয়। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৫৮৭), মুসলিম।
নামায শুরু হওয়ার সময়ে কারো মলত্যাগের প্রয়োজন হলে সে প্রথমে মলত্যাগ করে নেবে
হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনু আল-আরক্বাম সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি (উরওয়া) বলেন, একদা নামাযের ইকামাত হয়ে গেল। তিনি (আব্দুল্লাহ) এক ব্যক্তির হাত ধরে তাকে সামনে ঠেলে দিলেন। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনু আরকাম) স্বীয় গোত্রে ইমাম ছিলেন (নামায শেষে)। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “নামাযের ইকামাত হয়ে যাওয়ার পর তোমাদের কারো মলত্যাগের প্রয়োজন হলে প্রথমে সে মলত্যাগ করে নেবে। “ সহীহ। ইবনু মাজাহ – (৬১৬)।
চলাচলের পথের ময়লা আবর্জনা লাগলে ওযূ করা
আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফের উম্মু ওয়ালাদ তিনি (উম্মু ওয়ালাদ) বলেন, আমি উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে বললাম, আমি আমার কাপড়ের আঁচলের নীচের দিকে লম্বা করে দেই এবং ময়লা-আবর্জনার স্থান দিয়ে চলাচল করি (এর বিধান কি)। তিনি বললেন, রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরবর্তী পবিত্র জায়গার মাটি এটাকে পবিত্র করে দেয়। সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৫৩১)।
তায়াম্মুম সম্পর্কিত হাদীস
‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুখমন্ডল এবং উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত তায়াম্মুম করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ- (৩৫০, ৩৫৩), বুখারী ও মুসলিম আরো পূর্ণ রূপে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁকে তায়াম্মুম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওযূর বিধান উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান গ্রন্থে বলেছেনঃ “তোমাদের মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর” (সূরা মাইদাঃ ৬)। তিনি তায়াম্মুম প্রসঙ্গে বলেছেনঃ “(মাটির ওপর হাত মেরে তা দিয়ে) নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত মাসিহ করে নাও” (সূরা মাইদাঃ ৬)। তিনি (চোরের শাস্তি প্রসঙ্গে) বলেছেনঃ “চোর পুরুষ হোক আর নারী-উভইয়ের হাত কেটে দাও” (সূরা মাইদাঃ ৩৮)। আর চোরের হাত কাটার সুন্নাত তরীকা হল ‘হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটা’। এ হতে জানা গেল হাত বলতে হাতের কব্জি পর্যন্তই বুঝায়। এজন্য তায়াম্মুমে মুখমন্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসিহ করতে হবে। সনদ দূর্বল
নাপাক না হলে যে কোন অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, শরীর নাপাক না হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সর্বাবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করাতেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫৯৪) ইরওয়া (১৯২, ৪৮৫)।
মাটিতে পেশাব লাগলে তার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, এক বিদুইন এসে মাসেজিদে (নবাবীতে) প্রবেশ করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন (ঐ স্থানে) বসা ছিলেন। লোকটি নামায আদায় করল। তারপর সে নামায শেষে বলল,‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর ও মুহাম্মাদের উপর অনুগ্রহ কর; আমদের সাথে আর কাউকে রাহাম কর না। ” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ“তুমি প্রশস্ত রাহমাতকে সংকীর্ণ করে দিলে। ” লোকটি কিছুক্ষণের মধ্যে মাসজিদে পেশাব করে দিল। লোকেরা দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গেল (আক্রমণ করার জন্য)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তিনি আবার বললেনঃ তোমাদেরকে সহজ পথ অবলম্বনকারী বা দয়াশীল করে পাঠানো হয়েছে; কঠোরতা করার জন্য পাঠানো হয়নি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৫২৯),বুখারী। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪০৫)।