15. হাদ্দ বা দন্ডবিধি

【1】

যে লোকের উপর হাদ্দ বাধ্যকর হয় না

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকার লোক হতে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে (শাস্তি থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে) ঘুমিয়ে থাকা লোক জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত; শিশু বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং নিষ্ক্রিয়বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের জ্ঞান না আসা পর্যন্ত। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২০৪১, ২০৪২)

【2】

দণ্ড পরিহার প্রসঙ্গে

আইশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাধ্যানুযায়ী তোমরা মুসলমানদেরকে দণ্ড প্রদান পরিহার করে চল। কোন প্রকার সুযোগ থাকলে তাকে দণ্ড থেকে পরিত্রাণ দাও। কেননা ইমাম শাস্তি প্রদানে ভুল করার চাইতে মাফ করে দেয়ার ভুল উত্তম। যঈফ, মিশকাত (৩৫৭০), ইরওয়া (২৩৫৫), হাদীসটি হান্নাদ ওয়াকীর সূত্রে ইবনু যিয়াদ হতে মুহাম্মাদ ইবনু রাবীয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তা মারফূ হিসেবে নয়। এ বর্ণনাটিও দুর্বল। এ অনুচ্ছেদে আবূ হুরায়রা এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু রাবিয়ার সনদে উরওয়ার সূত্রে বর্ণিত আইশার এই হাদীস ছাড়া আইশার কোন মারফূ হাদীস আমাদের জানা নেই। ওয়াকী তার সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু তিনি একে মারফূরুপে বর্ণনা করেন নাই। ওয়াকীর বর্ণনা অধিক সহীহ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনেক সাহাবী হতে এরুপ বর্ণিত হয়েছে। ইয়াযিদ ইবনু যিয়াদ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল। ইয়াযিদ ইবনু আবী যিয়াদ কুফী অধিক দৃঢ় ও অধিক অগ্রগামী।

【3】

মুসলমানের দোষ-ক্রুটি গোপন রাখা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোন মু’মিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোন একটি অসুবিধা দূর করে দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তা‘আলা দূর করে দিবেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির দোষ-ক্রুটি যে লোক গোপন রাখে, তার দোষ-ক্রুটি আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাহায্য করতে থাকেন। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২২৫), মুসলিম সালিম (রহঃ) হতে তার বাবা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমান একজন অন্যজনের ভাই। সে তার উপর কোনরকম যুলুম-অত্যাচার করতে পারে না এবং শত্রুর কাছেও তাকে সমর্পণ করতে পারে না বা তাকে অসহায়ভাবে ছেড়ে দিতে পারে না। কোন লোক তার ভাইয়ের প্রয়োজন মিটানোর কাজে যে পর্যন্ত লেগে থাকে, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির কোন অসুবিধা যে লোক অপসারণ করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামাত দিবসে তার অসুবিধাগুলোর মধ্য হতে একটি অসুবিধা দূর করে দিবেন। কোন মুসলমান ব্যক্তির দোষ-ক্রটি যে লোক গোপন করে রাখে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামাত দিবসে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন। সহীহ্, সহীহাহ্ (৫০৪), নাসা-ঈ

【4】

হাদ্দের অপরাধের ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিকে বারবার বুঝানো

ইবনু আব্বাস (রাঃ) মায়িয ইবনু মালিক (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার সম্পর্কে আমি যা কিছু জেনেছি তা কি সত্য? তিনি বললেন, আপনি আমার ব্যাপারে কি জেনেছেন? তিনি বললেনঃ আমি জানতে পারলাম, তুমি অমুকের বাঁদীর উপর পতিত হয়েছ (যিনায় লিপ্ত হয়েছ)। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি চারবার স্বীকারোক্তি করেন। তিনি তার ব্যাপারে রায় দিলে সে মোতাবিক তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা হয়। সহীহ্, ইরওয়া (৭/৩৫৫), মুসলিম

【5】

স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলে হাদ্দ বাস্তবায়ন না করা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, মায়িয আল-আসলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, এই লোক (মাইয) যিনা করেছে। তিনি তার কাছ থেকে মুখ সরিয়ে নিলেন। মায়িয (রাঃ) -ও অপর দিকে ঘুরে এসে বললেন, এই লোক যিনা করেছে। তিনি আবারও তার দিখ থেকে মুখ সরিয়ে নেন। মায়িয (রাঃ) -ও পুনরায় অপর দিক হতে ঘুরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই লোক যিনা করেছে। তিনি চতুর্থবাব তার ব্যাপারে হুকুম করলেন এবং সে মোতবিক তাকে হাররার প্রান্তরে নেওয়া হয় এবং তার উপর পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। সে পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পালিয়ে এক লোককে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। ঐ লোকটির হাতে উটের চোয়ালের হাড় ছিল। সে তাকে তা দিয়ে আঘাত করে এবং অন্যান্য লোকজনও আঘাত করে। ফলে লোকটি মৃত্যুবরণ করে। লোকেরা এ ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা করে যে, তিনি পাথরের আঘাতে এবং প্রত্যক্ষ মৃত্যুর স্পর্শ পেয়ে ভয়ে পালাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন? হাসান সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৫৪) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম বংশের একজন লোক এসে ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করে। তিনি তার সামনে থেকে মুখ সরিয়ে নিলেন। সে পুনরায় তার পাপ কর্মের স্বীকারোক্তি করে। পুনরায় তিনি তার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। এমনিভাবে সে তার নিজের বিরুদ্ধে চারবার সাক্ষ্য প্রদান করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি পাগল নাকি? সে বলল, না। তিনি প্রশ্ন করেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি তার ব্যাপারে রায় দিলেন এবং সে মোতাবিক তাকে ঈদগাহের ময়দানে নিয়ে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা হল। পাথরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে সে পালাতে থাকলে তাকে আটক করে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা হয়। তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাল কথা বলেছেন (তার প্রশংসা করেছেন)। কিন্তু তিনি নিজে তার জানাযার নামায আদায় করেন নি। সহীহ্, ইরওয়া (৭/৩৫৩), নাসা-ঈ

【6】

হাদ্দ এর আওতাধীন অপরাধের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা নিষেধ

আইশা (রাঃ) মাখযূম বংশের একজন মহিলার চুরির ঘটনা কুরাইশদেরকে চিন্তিত করে তুলে। তারা একে অপরের সাথে বলাবলি করল, এ ব্যাপারটি নিয়ে কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আলোচনা করতে পারে? তারা বলল, এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলার সাহস উসামা ইবনু যাইদ ছাড়া আর কারো নেই। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খুবই প্রিয়। উসামা (রাঃ) তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত শাস্তিসমূহের অন্তর্ভূক্ত একটি শাস্তি প্রসঙ্গে তুমি সুপারিশ করছ? তারপর তিনি দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন এবং বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো একারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে কোন ধনী-মর্যাদাশালী লোক চুরি করলে তাকে তারা ছেড়ে দিত এবং তাদের মাঝে কোন দুর্বল প্রকৃতির লোক চুরি করলে তার উপর শাস্তি কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করত তবে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৪৭), নাসা-ঈ

【7】

রজম (পাথর মেরে হত্যা) -এর প্রমাণ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন, আবূ বাকর (রাঃ) -ও রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন এবং রজমের আইন আমিও বাস্তবায়ন করছি। আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের মধ্যে যদি কোন কিছু যোগ করাকে আমি নিষিদ্ধ মনে না করতাম তবে অবশ্যই এই বিধান মাসহাফে (কুরআনে) লিখে দিতাম। কেননা আমার ভয় হয় যে, পরবর্তী সময়ে মানব জাতির এমন দল আসবে যারা এই হুকুম আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে না দেখতে পেয়ে তা অস্বীকার করবে। সহীহ্, তা’লীক আলা ইবনু মা-জাহ, ইরওয়া (৮/৫০৪) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর নিকট হতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি (উমার) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর উপর কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছেন। তিনি যা কিছু তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্যে রজম বিষয়ক আয়াতও ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজমের বিধান কার্যকর করেছেন। আমরাও তাঁর মৃত্যুর পর রজমের বিধান কার্যকর করেছি। আমার ভয় হচ্ছে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ হয়ত বলবে, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে তো আমরা রজমের উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি না। তারা এভাবেই আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত একটি বিধান ছেড়ে দিয়ে পথভ্রষ্ট হবে। সাবধান! যিনাকারীকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব দ্বারা প্রমাণিত, যদি সে সুরক্ষিত (বিবাহিত) হয় এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ বিদ্যমাণ থাকে অথবা অন্তঃসত্তা প্রকাশিত হয় অথবা নিজেই এর স্বীকারোক্তি করে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৫৩), নাসা-ঈ আলী (রাঃ) হতেও এ অনু্চ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। উমার (রাঃ) হতে একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

【8】

বিবাহিত (যিনাকারী) লোকের শাস্তি রজম

উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি আবূ হুরাইরা, যাইদ ইবনু খালিদ ও শিবল (রাঃ) -এর নিকট শুনেছেন। তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উপস্থিত ছিলেন। এসময় দু’জন লোক ঝগড়া করতে করতে (তা সমাধানের উদ্দেশ্যে) তাঁর সামনে আসে। তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের দু’জনের মধ্যে আপনি আল্লাহ তা‘আলার কিতাব মোতাবিক সমাধান করে দিন। তার বুদ্ধিমান প্রতিপক্ষ বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহ তা‘আলার কিতাব মোতাবিক আমাদের দু’জনের মধ্যে সমাধান করে দিন এবং আমাকে কথা বলার সম্মতি দনি। আমার পুত্র তার কাছে মজুর হিসাবে ছিল। সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। লোকজন আমাকে বলল, আমার ছেলের উপর রজম কার্যকর হবে। আমি এর পরিবর্তে আমার ছেলের পক্ষ হতে তাকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম প্রদান করি। তারপর কয়েকজন আলিমের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তাদের মতে আমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত প্রদান করতে হবে। এবং এক বছরের নির্বাসন শাস্তি ধার্য হবে। আর এই ব্যক্তির স্ত্রীর উপর রজম কার্যকর হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেই মহান প্রভুর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদের দু’জনের মাঝে ফায়সালা করব। তুমি একশত বকরী ও গোলাম ফিরত পাবে এবং তোমার ছেলেকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে ও এক বছরের নির্বাসনে পাঠাতে হবে। হে উনাইস! ভোরে তুমি তার স্ত্রীর কাছে যাবে। সে ব্যভিচার করার কথা স্বীকার করলে তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করবে। সেই স্ত্রীলোকটির কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলে সে তার পাপের কথা স্বীকার করে এবং তিনি তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করেন। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৪৯), নাসা-ঈ উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার নিকট হতে তোমরা জেনে নাও। তাদের (যিনাকারীদের) জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটি রাস্তা (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। বিবাহিত পুরুষ ও স্ত্রীলোক পরস্পর যিনা করলে তাদের প্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হবে, তারপর পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। অবিবাহিত পুরুষ বা স্ত্রীলোক যিনা করলে তাদের প্র্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসনে পাঠাতে হবে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৫০), মুসলিম

【9】

সন্তান জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত গর্ভবর্তী নারীর শাস্তি বিলম্বিত হবে

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) জুহাইনা বংশের এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিজের যিনার কথা স্বীকার করে এবং বলে, আমি গর্ভবতী অবস্থায় আছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অভিভাবককে ডেকে পাঠান এবং বলেনঃ তার সাথে উত্তম আচরণ কর এবং সে সন্তান প্রসব করার পর আমাকে খবর দিও। তার অভিভাবক তাই করল। তিনি তার ব্যাপারে আদেশ করলেন এবং সে মোতাবিক তাঁর দেহে তার কাপড় শক্তভাবে বাঁধা হল। তারপর তিনি তাকে রজম করার (পাথর মেরে হত্যার) হুকুম করলেন। অতএব তাকে রজম করা হল। তারপর তিনি তার জানাযার নামায আদায় করেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজমের নির্দেশ দিলেন আবার আপনিই তার জানাযার নামায আদায় করলেন! তিনি বললেনঃ সে এরূপ তাওবা করেছে যদি তা মাদীনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বন্টন করা হয়, তবে সেই তাওবা তাদের সকলের (গুনাহ মাফের) জন্য যথেষ্ট হবে। হে উমার! সে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তার জীবনকে কুরবানী করে দিয়েছে। তুমি কি এর চেয়েও উত্তম কিছু পেয়েছ?

【10】

আহলে কিতাবের যিনাকারীকে রজম করা

ইবনু উমার (রাঃ) যিনাকারী একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও একজন ইয়াহূদী মহিলাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজমের নির্দেশ দেন। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৪৭৬) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিনাকারী একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও একজন মহিলাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করার নির্দেশ দেন। সহীহ্ পূর্বের হাদীসের সহায়তায়।

【11】

নির্বাসন দন্ড বিষয়ে

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যিনাকারীকে) বেত্রাঘাত করেছেন ও নির্বাসন দন্ড দিয়েছেন, আবূ বাকর (রাঃ) বেত্রাঘাত করেছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন এবং উমার (রাঃ) -ও বেত্রাঘাত করেছেন এবং নির্বাসন দন্ডও প্রদান করেছেন। সহীহ্,ইরওয়া (২৩৪৪)

【12】

হাদ্দ প্রতিষ্ঠিতহলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে কোন এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা এই কথার উপর আমার নিকট বাই’আত করঃ আল্লাহ তা‘আলার সাথে তোমরা কোন অংশীদার স্থাপন করবে না, চুরি করবে না এবং যিনা-ব্যভিচার করবেনা। তারপর তিনি বাই’আত বিষয়ক পূর্ণ আয়াত তাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনালেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের যে লোক এই বাই’আত পূর্ণ করবে, আল্লাহ তা‘আলার নিকট রয়েছে তার জন্য পুরষ্কার। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপরাধে জড়িয়ে পড়লে এবং এর জন্য তাকে শাস্তিও প্রদান করা হলে তাতে তার গুণাহের কাফফারা হয়ে যাবে। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপকর্ম করে বসলে এবং আল্লাহ তা‘আলা সেটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে দিলে তার প্রসঙ্গটি আল্লাহ তা‘আলার উপর ন্যস্ত। তাকে আল্লাহ তা‘আলা চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন আবার মাফও করে দিতে পারেন। সহীহ্, ইরওয়া (২৩৩৪), নাসা-ঈ

【13】

ক্রীতদাসীদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত করা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো দাসী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের নির্দেশ মোতাবেক তিনবার চাবুক পেটা কর। যদি এরপরও (চতুর্থবার) সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে বিক্রয় করে দাও একটি পশমের দড়ির পরিবর্তে হলেও। সহীহ্, ‍ইবনু মা-জাহ (২৫৬৫), নাসা-ঈ আবূ আবদুর রাহমান আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) তার বক্তৃতায় বলেন, হে মানব মন্ডলী! তোমাদের গোলামদের উপর হাদ্দ প্রতিষ্ঠিত কর, তারা বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত যেটাই হোক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একজন দাসী যিনা করলে তাকে চাবুক পিটানোর জন্য তিনি আমাকে হুকুম করেন। আমি তার নিকট এসে দেখলাম, সে এইমাত্র সন্তান প্রসব করেছে। আমার ভয় হল, আমি যদি তাকে চাবুক পেটা করি তাহলে হয়ত তাকে হত্যা করে ফেলব অথবা বলেছেন, সে মরে যেতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ফিরে এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ (তার শাস্তি স্থগিত রেখে) তুমি ভালই করেছ। সহীহ্, ইরোয়া (৭/৩৬০), মুসলিম।

【14】

মাদকদ্রব্য সেবনকারীর শাস্তি (হাদ্দ)

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির উপর দু’টি জুতা দিয়ে চল্লিশ ঘা হাদ্দ কায়িম করেন। সনদ দূর্বল, মিসআর বলেন, আমার মনে হয় এটা মাদক সেবনের ঘটনা ছিল। এ অনুচ্ছেদে আলী, আবদুর রহমান ইবনু আযহার, আবূ হুরাইরা, সায়িব, ইবনু আব্বাস ও উকবা ইবনুল হারিস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, আবূ সাঈদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান। আবূ সিদ্দীকের নাম বাক্‌র, পিতা আমর, মতান্তরে পিতার নাম কাইস। আনাস (রাঃ) একজন লোককে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে আসা হয়। সে মাদক সেবন করেছিল। তিনি দুইটি খেজুরের ডাল দিয়ে তাকে প্রায় চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবূ বাকর (রাঃ) -ও একইরকম শাস্তি দেন। উমার (রাঃ) খালীফা হওয়ার পর জনগণের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) তখন বলেন, আশিটি বেত্রাঘাত হল সবচেয়ে হালকা (সর্বনিম্ন) শাস্তি। অতএব উমার (রাঃ) আশিটি বেত্রাঘাতেরই আদেশ দিলেন। সহীহ্, ইরওয়া (২৩৭৭), মুসলিম, বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে।

【15】

যে লোক মাদকদ্রব্য সেবন করে তাকে চাবুক পেটা কর। সে চতুর্থবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে তাকে হত্যা করে ফেল

মুআবিয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সুরা পান করে তাকে চাবুক পেটা কর। যদি সে লোক চতুর্থবার সুরাপানে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে মেরে ফেল। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৭২, ২৫৭৩)

【16】

যে পরিমাণ (মাল) চুরি করলে হাত কেটে ফেলা বৈধ হবে

আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি চুরি করার অপরাধে (চোরের) হাত কাটার হুকুম দিতেন। সহীহ্, ইরওয়া (২৪০২), মুসলিম,বুখারী অনুরূপ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একটি ঢাল চুরির দায়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (চোরের) হাত কাটার হুকুম দেন, যার মূল্য ছিল তিন দিরহাম। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৮৪), নাসা-ঈ

【17】

চোরের (কাটা) হাত (তার ঘাড়ে) লটকানো

আবদুর রহমান ইবনু মুহাইরীয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ)-কে চোরের (কাটা) হাত তার ঘাড়ের সাথে লটকে দেয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম, এটা কি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে একটি চোর ধরে আনা হলে তার হাত কেটে দেয়া হয়। তারপর তাঁর নির্দেশ মোতাবিক চোরের (কর্তিত) হাত তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৫৮৭), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৩৬০৫)

【18】

আত্নসাৎকারী, ছিনতাইকারী ও লুন্ঠনকারীদের প্রসঙ্গে

জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারীর ব্যাপারে হাত কেটে ফেলার দণ্ড নেই। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৮৯)

【19】

ফল ও গাছের মাথার মজ্জা চুরি করার দায়ে হাত কাটার হুকুম নেই

রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ গাছের ফল ও গাছের মজ্জা (তাল, খেজুর, নারিকেল ইত্যাদি গাছের মাথার নরম ও কচি অংশ) চুরির দায়ে হাত কাটার বিধান নেই। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৯৩)

【20】

সামরিক অভিযান চলাকালে হাত কাটা যাবে না

বুসর ইবনু আরতাত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ সামরিক অভিযান চলা অবস্থায় হাত কাটা যাবে না। সহীহ্, মিশকাত (৩৬০১)

【21】

কোন লোক নিজ স্ত্রীর বাঁদীর উপর পতিত হলে (সংগম করলে)

হাবীব ইবনু সালিম (রাহঃ) তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর বাঁদীর সাথে যেনা করলে তাকে নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ)-এর নিকটে আনা হয়। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ফায়সালার মতই ফায়সালা করব। যদি তার স্ত্রী এই বাঁদীকে তার জন্য হালাল করে দিয়ে থাকে তবে আমি এই ব্যক্তিকে এক শত বেত্রাঘাত করব। যদি সে তাকে স্বামীর জন্য হালাল করে না দিয়ে থাকে তবে আমি তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করব। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৫৫১) আলী ইবনু হুজর-হুশাইম আলী ইবনু হুজর-হুশাইম হতে, তিনি আবূ বিশর হতে, তিনি হাবীব ইবনু সালিম হতে, তিনি নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে (উপরের হাদীসের) একই রকম বর্ণনা করেছেন। -দেখুন পূর্বের হাদীস কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ এ প্রসঙ্গে হাবীব ইবনু সালিমের নিকট লিখা হয়েছিল। আবূ বিশর এ হাদীসটি হাবীব ইবনু সালিমের নিকট হতে শুনেননি। তিনি এটা খালিদ ইবনু উরফুতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ অনুচ্ছেদে সালামা ইবনুল মুহাব্বাক (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, নুমান (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের সনদে অস্থিরতা আছে। তিনি আরও বলেন, আমি মুহাম্মাদ (বুখারী)-কে বলতে শুনেছি যে, কাতাদা এ হাদীসটি হাবীব ইবনু সালিম হতে শুনেননি। তিনি খালিদ ইবনু উরফুতা (রাহঃ) হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করে তার শাস্তি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ আলিমদের মাঝে মতের অমিল আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবী, যেমন আলী ও ইবনু উমার (রাঃ)-এর মতে, তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করতে হবে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, তার উপর হাদ্দ কার্যকর হবে না, বরং তাকে তাযীরের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাক (রাহঃ) নুমান (রাঃ)-এর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী মত দিয়েছেন।

【22】

জোরপূর্বক যে নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে

আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি (ওয়াইল ইবনু হুজর) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একটি স্ত্রীলোককে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীলোকটিকে হাদ্দ (যেনার শাস্তি) হতে মুক্তি দেন, কিন্তু তার ধর্ষণকারীর উপর হাদ্দ (যেনার শাস্তি) কার্যকর করেন। তিনি তার জন্য মোহর নির্ধারণ করেছেন কি-না রাবী তা বর্ণনা করেন নি। যঈফ, মিশকাত (৩৫৭১), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এর সনদ পরস্পর সংযুক্ত (মুত্তাসিল) নয়। অন্য সূত্রেও এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, আবদুল জাব্বার তার পিতা ওয়াইলের নিকট হতে হাদীস শুনার কোন সুযোগই পাননি এবং তাকে দেখেনওনি। কথিত আছে যে, তিনি তার পিতার মৃত্যুর কয়েক মাস পর জন্মগ্রহণ করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবীগণ ও তৎপরবর্তী আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেছেন। তাদের মতে, যে নারীকে জোরপূর্বক যেনায় লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয় অর্থাৎ যাকে ধর্ষণ করা হয় সে হাদ্দমুক্ত (যেনার শাস্তিমুক্ত)। আলকামা ইবনু ওয়াইল (রহঃ) হতে তার বাবা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় একজন মহিলা নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাস্তায় একজন লোক তার সামনে পড়ে এবং সে তাকে তার পোশাকে ঢেকে নিয়ে (জাপটে ধরে) নিজের প্রয়োজন মিটায় (ধর্ষণ করে)। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি পালিয়ে গেল। তারপর আরেকজন লোক তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। ইতিমধ্যে মুহাজির সাহাবীদের একটি দলও সে স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এই এই করেছে। যে লোকটি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে সে ধারণা করল, তারা (দৌঁড়ে) গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তাকে নিয়ে তারা মহিলাটির সামনে ফিরে আসলে সে বলল, হ্যাঁ, এই সেই লোক। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তাকে নিয়ে আসেন। তিনি যখন তাকে রজমের (পাথর মেরে হত্যা) হুকুম দিলেন, সে সময় তার আসল ধর্ষণকারী উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার ধর্ষণকারী (ঐ লোকটি নয়)। তিনি মহিলাটিকে বললেনঃ যাও, তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিয়েছেন। তিনি (সন্দেহজনকভাবে) ধৃত লোকটির সম্বন্ধে ভাল কথা বললেন। মহিলাটির আসল ধর্ষণকারীর সম্পর্কে তিনি হুকুম করলেনঃ একে রজম কর। তিনি আরও বললেনঃ সে এমন ধরণের তাওবা করেছে, যদি মাদীনার সকল জনগণ এমন তাওবা করে তবে তাদের সেই তাওবা ক্ববূল করা হবে। হাসান, তাকে রজম কর বাক্য ব্যতীত। সঠিক বক্তব্য হল তাকে রজম করা হয় নাই। মিশকাত (৩৫৭২) সহীহাহ (৯০০)

【23】

কোন মানুষ পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত হলে

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত দেখ, তাকে এবং পশুটিকে হত্যা কর। হাসান সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৬৪)

【24】

পায়ুকামী বা সমকামীর শাস্তি

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৩৫৬১) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। হাসান, ইবনু মা-জাহ (২৫৬৩)

【25】

মুরতাদ্দ (ধর্মত্যাগী) প্রসঙ্গে

ইকরিমা (রহঃ) একদল মানুষ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে (মুরতাদ্দ হয়ে গেলে) আলী (রাঃ) তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি সেখানে উপস্থিত থাকলে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী মোতাবিক ‘হত্যা করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যে মানুষ তার দ্বীন পরিবর্তন করে তাকে মেরে ফেল”। আমি (ইবনু আব্বাস) কখনো তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে মারতাম না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার আযাব (আগুন) দ্বারা (কাউকে) শাস্তি দিও না।” একথা আলী (রাঃ) -এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস সঠিক বলেছে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৩৫)

【26】

যে মানুষ (রক্তপাতের উদ্দেশ্যে) অস্ত্র উঠায়

আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের বিপক্ষে যে মানুষ অস্ত্র ধারণ করে সে আমাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৫৭৫, ২৫৭৭), মুসলিম

【27】

যাদুকরের শাস্তি প্রসঙ্গে

জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাদুকরের শাস্তি হল তরবারির আঘাতে মৃতুদন্ড। যঈফ, যঈফা (১৪৪৬), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৩৫৫১)

【28】

গানীমাতের মাল আত্মসাৎকারীর শাস্তি

উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যাকে আল্লাহ্‌ তা’আলার পথে (গানীমাত) আত্মসাৎ করতে দেখবে তার মালপত্র সব পুড়িয়ে দিবে। সালিহ (রহঃ) বলেছেন, আমি মাসলামার নিকটে গেলাম। এ সময় সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ তার নিকটই ছিলেন। তিনি এক আত্মসাৎকারীকে পেলেন। সালিম (রহঃ) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ হাদীস উল্লেখ করেন। তিনি তার মালপত্র পুড়িয়ে দেয়ার হুকুম দিলে তা পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার মালপত্রের মধ্যে এক জিল্‌দ কুরআন পাওয়া গেলে সালিম (রহঃ) বলেন, তা বিক্রয় করে তার মূল্য দান-খাইরাত করে দাও। যঈফ, যঈফ আবূ দাঊদ (৪৬৮), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৩৬৩৩), তাহকীকুল মুখতারাহ (১৯১, ১৯৪)

【29】

কোন ব্যক্তি যদি অন্যকে বলে, হে মুখান্নাস (নপুংসক)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে বলে, “হে ইয়াহুদী” তখন তাকে বিশটি চাবুক মার। যখন সে বলে, “হে নপুংসক” তখন তাকে বিশটি চাবুক মার। যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ার সাথে যেনা করে তাকে হত্যা কর। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানি (৩৬৩২), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আমরা শুধু উল্লেখিত সনদেই জেনেছি। এ হাদীসের অধঃস্তন রাবী ইবরাহীম ইবনু ইসমাঈল হাদীসশাস্ত্রে দুর্বল। আমাদের সমমনা আলিমগন এ হাদীস অনুসারে আমল করেছেন।তাঁরা বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনেশুনে মাহরাম আত্মীয়ার সাথে জেনা করে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ইমাম আহ্‌মাদ (রাহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের মাকে বিয়ে করে তাকে হত্যা করতে হবে। ইসহাক (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ার সাথে যেনা করে তাকে হত্যা করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) ও কুররা ইবনু ইআস আল-মুযানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ এক ব্যক্তি নিজের পিতার স্ত্রীকে (সৎ্মাকে) বিয়ে করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার হুকুম দেন।

【30】

তা’যীর প্রসঙ্গে

আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত হাদ্দের অন্তর্ভুক্ত কোন অন্যায় ছাড়া (অন্য অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে) দশটির বেশি বেত্রাঘাত প্রদান করা যাবে না। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৬০১)