2. সালাত (নামায)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে নামাযের ওয়াক্তসমূহের বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জিবরাইল (আঃ) কা’বা শরীফের চত্বরে দু’বার আমার নামাযে ইমামতি করেছেন। তিনি প্রথমবার যুহরের নামায আদায় করালেন যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া জুতার ফিতার মত ছিল। অতঃপর তিনি আসরের নামায আদায় করালেন যখন কোন বস্তুর ছায়া তার সমান ছিল। অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করালেন যখন র্সূয ডুবে গেল এবং যে সময়ে রোযাদার ইফতার করে। অতঃপর ‘ইশার নামায আদায় করালেন যখন লাল বর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। অতঃপর ফযরের নামায আদায় করালেন যখন ভোর বিদ্যুতের মত আলোকিত হল এবং যে সময় রোযাদারের উপর পানাহার হারাম হয়। তিনি (জিবরাইল) দ্বিতীয় দিন যুহরের নামায আদায় করালেন যখন কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হল এবং পূর্ববর্তী দিন ঠিক যে সময় আসরের নামায আদায় করেছিলেন। অতঃপর আসরের নামায আদায় করালেন যখন কোন বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হল। অতঃপর মাগরিবের নামায আদায় করালেন পূর্বের দিনের সময়ে। অতঃপর ‘ইশার নামায আদায় করালেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ চলে গেল এবং ফযরের নামায আদায় করালেন যখন যমিন আলোকিত হয়ে গেল। অতঃপর জিবরাইল (আঃ) আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই হল আপনার পূর্ববতী নাবীদের (নামাযের) ওয়াক্ত। নামাযের ওয়াক্ত এই দুই সীমার মাঝখানে। হাসান সহীহ্। মিশকাত-(৫৮৩), ইরওয়া-(২৪৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪১৬)। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জিবরাইল (আঃ) আমার ইমামতি করলেন, হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা ইবনু আব্বাসের হাদীসের মত। তবে এ হাদীসে আসরের নামায সম্পর্কে “গতকাল” শব্দটির উল্লেখ নেই। সহীহ্। ইরওয়া-(২৫০), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪১৮)।
ঐ সম্পর্কেই
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ সীমা রয়েছে। যুহরের নামাযের শুরুর সময় হচ্ছে যখন (সূর্য পশ্চিম দিকে) ঢলতে শুরু করে এবং শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে আসরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া। আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করে (যুহরের শেষ সময়) এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন সূর্যের আলো হলুদ রং ধারণ করে। মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর এবং তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক চলে যায়। ‘ইশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে যখন শাফাক বিলীন হয়ে যায়, আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে যখন অর্ধেক রাত চলে যায়। ফযরের নামাযের প্রথম ওয়াক্ত যখন ভোর শুরু হয় এবং তার ওয়াক্ত শেষ হয় যখন সূর্য উঠা শুরু হয়। সহীহ্। আস্-সহীহাহ্-(১৬৯৬)।
একই বিষয় সম্পর্কিত
সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (বুরাইদা) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ নবী ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে তাঁকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা চান তো তুমি আমাদের সংগে থাক। তিনি বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন এবং সে অনুযায়ী তিনি ভোর (সুবহি সদিক) উদয় হলে ফযরের নামাযের ইক্বামাত দিলেন। তিনি আবার নির্দেশ দিলেন এবং সূর্য ঢলে গেলে তিনি (বিলাল) ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর তিনি যুহরের নামায আদায় করালেন। তিনি আবার নির্দেশ দিলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। তখন সূর্য অনেক উপরে ছিল এবং আলোক উদ্ভাসিত ছিল। অতঃপর তিনি ‘আসরের নামায আদায় করালেন। অতঃপর সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি তাকে মাগরিবের নামাযের ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তাকে ‘ইশার নামাযের (ইক্বামাতের) নির্দেশ দিলেন। শাফাক অদৃশ্য হলে তিনি ইক্বামাত দিলেন। পরবর্তী সকালে তিনি তাকে (ইকামাতের) নির্দেশ দিলেন। ভোর খুব পরিষ্কার হওয়ার পর তিনি ফযরের নামায আদায় করালেন। অতঃপর তিনি তাকে যুহরের নামাযের (ইক্বামাতের) নির্দেশ দিলেন এবং (সূর্যের তাপ) যথেষ্ট ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত দেরি করে নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি তাকে আসরের নামাযের নির্দেশ দিলেন, সে অনুযায়ী তিনি (বিলাল) সূর্য শেষ সীমায় এবং পূর্ব দিনের চেয়ে অনেক নীচে নেমে আসলে ইক্বামাত দিলেন [অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের নামায আদায় করালেন]। অতঃপর তিনি তাকে (ইকামাতের) নির্দেশ দিলেন এবং শাফাক অদৃশ্য হওয়ার সামান্য পূর্বে মাগরিবের নামায আদায় করালেন। অতঃপর তিনি তাকে ‘ইশার নামাযের ইক্বামাত দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং সে অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ রাত চলে যাবার পর ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বলল, আমি। তিনি বললেনঃ নামাযের সময় এই দুই সীমার মাঝখানে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৬৭), মুসলিম।
ফযরের নামায অন্ধকার থাকতেই আদায় করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফযরের নামায আদায় করতেন, অতঃপর মহিলারা ফিরে আসতেন। আনসারীর বর্ণনায় আছে-মহিলারা নিজেদের চাদর মুড়িয়ে চলে যেতেন এবং অন্ধকারের মধ্যে তাদের চেনা যেত না। কুতাইবার বর্ণনায় (মুতালাফফিফাতিন শব্দের স্থলে) ‘মুতালাফফি’আতিন’ শব্দ রয়েছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৬৯), বুখারী ও মুসলিম।
ফযরের নামায অন্ধকার বিদূরিত করে আদায় করা
রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা ফযরের নামায (ভোরের অন্ধকার) ফর্সা করে আদায় কর। কেননা তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ -(৬৭২)।
যুহরের নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার ও উমার (রাঃ)-এর তুলনায় অন্য কাউকে আমি যুহরের নামায তাড়াতাড়ি আদায় করতে দেখিনি (ওয়াক্ত শুরু হলেই তাঁরা নামায আদায় করে নিতেন)। সনদ দূর্বল। আনাস ইবনু মালিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে যুহরের নামায আদায় করেছেন। সহীহ্। বুখারী।
অধিক গরমের সময় যুহরের নামায দেরিতে আদায় করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন (সূর্যের) উত্তাপ বেড়ে যায়, তখন তোমরা ঠান্ডা করে নামায আদায় কর (বিলম্ব করে নামায আদায় কর)। কেননা প্রচন্ড উত্তাপ জাহান্নামের নিঃশ্বাস হতে হয়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৭৮), বুখারী ও মুসলিম। আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফরে ছিলেন। বিলাল (রাঃ)-ও তাঁর সাথে ছিলেন। তিনি ইক্বামাত দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “যুহরকে শীতল কর”। আবূ যার (রাঃ) বলেন, বিলাল (রাঃ) আবার ইক্বামাত দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যুহরের নামায আরও শীতল করে আদায় কর। আবূ যার (রাঃ) বলেন, এমনকি আমরা যখন বালির স্তূপের ছায়া দেখতে পেলাম তখন তিনি ইক্বামাত দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করালেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস। তোমরা শীতল করে (রোদের তাপ কমলে) নামায আদায় কর”। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪২৯), বুখারী ও মুসলিম।
আসরের নামায শীঘ্রই আদায় করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের নামায আদায় করালেন, তখনও সূর্যের কিরণ তার (আয়িশাহ্’র) ঘরের মধ্যে ছিল এবং ছায়াও (দীর্ঘ না হওয়ার ফলে) তার ঘরের বাইরে যায়নি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৮৩)। ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বসরায় আনাস (রাঃ)-এর বাড়িতে আসলেন। তিনি তখন যুহরের নামায আদায় করে বাসায় ফিরে এসেছেন। তাঁর ঘরটি মসজিদের পাশেই ছিল। তিনি (আনাস) বললেন, উঠো এবং আসরের নামায আদায় কর। ‘আলা বলেন, আমরা উঠে গিয়ে ‘আসরের নামায আদায় করলাম। আমরা যখন নামায শেষ করলাম তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এটা মুনাফিকের নামায-যে বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করতে থাকে, যখন সূর্য শাইতানের শিং এর মাঝখানে এসে যায় তখন উঠে চারটি ঠোকর মারে এবং তাতে আল্লাহ্ তা’আলাকে খুব কমই স্মরণ করে। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪২০), মুসলিম।
আসরের নামায বিলম্বে আদায় করা
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের নামায তোমাদের চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন। আর তোমরা আসরের নামায তাঁর চেয়ে অধিক সকালে আদায় কর। সহীহ্। মিশকাত-(৬১৯৫) দ্বিতীয় তাহক্বীক্ব। আলী ইবনু হুজর ইমাম তিরমিযী বলেনঃ আমি আমার গ্রন্থে এটি লেখা পেয়েছি যে, আলী ইবনু হুজর, ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম হতে, তিনি ইবনু জুরাইজের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিশর ইবনু মু’আয বিশর ইবনু মু’আয, ইসমাঈল ইবনু উলাইয়্যা হতে ইবনু জুরাইজের সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে। আর এই বর্ণনাটি অধিক সহীহ্।
মাগরিবের ওয়াক্ত সম্পর্কে
সালামাহ্ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সূর্য ডুবে পর্দার অন্তরালে চলে যেত তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের নামায আদায় করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ্-(৬৮৮), বুখারী ও মুসলিম।
‘ইশার নামাযের ওয়াক্ত
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অন্যদের তুলনায় এ (ইশার) নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে বেশী ভাল জানি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়ার চাঁদ অস্ত গেলে এ নামায আদায় করতেন। সহীহ্। মিশকাত-(৬১৩), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪৪৫)। নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) এ হাদীসটি নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে মুহাম্মাদ ইবনু আবান, আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী’র সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে।
‘ইশার নামায দেরি করে আদায় করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে ইশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরি করে আদায়ের নির্দেশ দিতাম। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৯১)।
‘ইশার নামাজের পূর্বে শোয়া এবং নামায আদায়ের পর কথাবার্তা বলা মাকরূহ
আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার নামাযের আগে ঘুমানো এবং নামাযের পর আলাপচারিতা করা অপছন্দ করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ্-(৭০১), বুখারী ও মুসলিম।
‘ইশার নামাযের পর কথাবার্তা বলার অনুমতি সম্পর্কে
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা আবূ বাকার (রাঃ)-এর সাথে মুসলমানদের স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতেন। আমিও তাঁদের সাথে থাকতাম। সহীহ্। সহীহাহ্ (২৭৮১)।
প্রথম ওয়াক্তের ফাযিলত
কাসিম ইবনু গান্নাম (রহঃ) হতে তাঁর ফুফু ফারওয়া (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে বাই’আত গ্রহণকারিণীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল, কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি বললেন, আওয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে নামায আদায় করা। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৪৫২), মিশকাত-(৬০৭)। ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হে ‘আলী! তিনটি ব্যাপারে দেরি করো নাঃ ‘নামায’-যখন তার ওয়াক্ত আসে, ‘জানাযা’-যখন উপস্থিত হয় এবং ‘বিবাহযোগ্য নারী’ যখন তুমি তার উপযুক্ত (পাত্র) পাও। যঈফ, মিশকাত ৬০৫ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের প্রথম সময়ে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ, আর শেষ সময়ে রয়েছে মার্জনা লাভের সুযোগ। মাওযূ’, ইরওয়া ২৫৯, মিশকাত ৬০৬ আবূ আমর আশ-শাইবানী (রহঃ) এক ব্যক্তি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি বললেন, আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ নির্দিষ্ট ওয়াক্তসমূহে নামায আদায় করা। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় জিহাদ করা। সহীহ্। বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’বার কোন নামায শেষ ওয়াক্তে আদায় করেননি। এমনকি এ অবস্থায় আল্লাহ তা’আলা তাঁকে তুলে নেন। হাসান। মিশকাত-(৬০৮)।
আসরের নামাযের ওয়াক্ত ভুলে যাওয়া সম্পর্কে
ইবনু ’উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে গেল, (তার অবস্থা এরূপ) যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধন সম্পদ সবকিছু লুন্ঠিত হল। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৮৫), বুখারী ও মুসলিম।
ইমাম যদি বিলম্বে নামায আদায় করে তবে মুক্তাদীদের তা প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা সম্পর্কে
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবূ যার! আমার পর এমন সব আমীর (রাষ্ট্রপ্রধান) ক্ষমতায় আসবে যারা নামাযকে হত্যা করে ফেলবে। অতএব তুমি সময়মত (আওয়াল ওয়াক্তে) নামায আদায় করে নিও। যদি তুমি নির্ধারিত সময়ে নামায (একাকি) আদায় করে নাও তাহলে পরে ইমামের সাথে আদায় করা নামায তোমার জন্য নফল হিসাবে ধরা হবে। পরে তুমি যদি ইমামের সাথে আবার নামায না আদায় কর তাহলে তুমি নিজের নামাযের হিফাজাত করলে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২৫৬), মুসলিম।
নামায আদায় না করে শুয়ে থাকা
আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ‘নামাযের কথা ভুলে গিয়ে’ ঘুমিয়ে থাকা সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি বললেনঃ ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন অপরাধ নেই, জেগে থাকা অবস্থায় দোষ হবে। যখন তোমাদের কেউ নামাযের কথা ভুলে যায় অথবা তা আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে নামায পড়ে নেবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ–(৬৯৮), মুসলিম, অনুরূপ।
যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে গেছে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামায আদায়ের কথা ভুলে গেছে সে যেন (নামাযের কথা) মনে হওয়ার সাথে সাথেই তা আদায় করে নেয়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৯৬), বুখারী ও মুসলিম।
যার একাধারে কয়েক ওয়াক্তের নামায ছুটে গেছে সে কোন ওয়াক্ত থেকে শুরু করবে
আবূ উবাইদা ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (লড়াইয়ে বিব্রত করে) চার ওয়াক্ত নামায হতে নিবৃত্ত রাখে। পরিশেষে আল্লাহর ইচ্ছাই যখন কিছু রাত চলে গেল তখন তিনি বিলাল কে আযান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি আযান দিলেন এবং ইক্বামাত বললেন৷ তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) যুহরের নামায আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইক্বামাত দিলে তিনি আসরের নামায আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইক্বামাত দিলে তিনি মাগরিবের নামায আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইক্বামাত দিলে তিনি ‘ইশার নামায আদায় করালেন। হাসান, ইরওয়া-(১/২৫৭)। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধের দিন ‘উমার (রাঃ) কুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে দিতে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সূর্য ডুবে গেল অথচ আসরের নামায আদায় করার সুযোগ পেলামনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করার সুযোগ পাইনি। ‘ঊমার (রাঃ) বললেন, আমরা বুতহান নামক উপত্যকায় গিয়ে নামলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করলেন, আমরাও অযূ করলাম। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের নামায আদায় করলেন, এরপর মাগরিবের নামায আদায় করলেন। সহীহ্-বুখারী ও মুসলিম।
মধ্যবর্তী নামায আসরের নামায। তা যুহরের নামায বলেও কথিত আছে
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মধ্যবর্তী নামায হচ্ছে আসরের নামায। সহীহ্। মিশকাত-(৬৩৪), মুসলিম। সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মধ্যবর্তী নামায হল আসরের নামায। সহীহ্। মিশকাত-(৬৩৪), মুসলিম।
‘আসর ও ফযরের নামাযের পর অন্য কোন নামায আদায় করা মাকরূহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একাধিক সাহাবীর নিকট হতে এ হাদীস শুনেছি যাদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। সাহাবাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন আমার নিকট বেশি প্রিয়। (তাঁরা বলেছেন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযরের নামাযের পর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত এবং ‘আসরের নামাযের পর সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২৫০), বুখারী ও মুসলিম।
‘আসরের নামাযের পর অন্য নামায আদায় প্রসঙ্গে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের নামাযের পর দুই রাক‘আত নামায আদায় করলেন। কেননা তাঁর নিকট কিছু সম্পদ এসেছিল, তিনি তা বিলি করতে ব্যস্ত ছিলেন এবং যুহরের (ফরযের) পরের দুই রাক‘আত আদায়ের সুযোগ পাননি। এই দুই রাক‘আতই তিনি আসরের নামাযের পর আদায় করলেন। তারপর তিনি কখনো তার পুণসঙ্ঘটন করেননি। সনদ দুর্বল। তারপর তিনি কখনও পুণসঙ্ঘটন করেননি, অংশটুকু মুনকার।
সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাযের পূর্বে নফল নামায আদায় করা
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে নামায আছে, যে চায় তা আদায় করতে পারে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১১৬২), বুখারী ও মুসলিম।
যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক’আত নামায পেয়েছে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের এক রাক’আত (ফরয নামায) পেল সে ফযরের নামায পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক’আত পেল সেও আসরের নামায পেল। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৭০, ৬৯৯), বুখারী ও মুসলিম।
মুক্বীম অবস্থায় দুই ওয়াক্তের নামায এক সাথে আদায় করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভয় অথবা বৃষ্টিজনিত কারণ ছাড়াই মাদীনাতে যুহর ও আসরের নামায একত্রে এবং মাগরিব ও ‘ইশার নামায একত্রে আদায় করেছেন। সা’ঈদ ইবনু যুবাইর বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, এরূপ করার পেছনে তাঁর (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) কি উদ্দেশ্য ছিল? তিনি বললেন, উম্মাতের অসুবিধা হ্রাস করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। সহীহ্। ইরওয়া-(১/৫৭৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১০৯৬), মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন অজুহাত ছাড়াই যে ব্যক্তি দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করে সে কাবীরা গুনাহের স্তরসমূহের মধ্যে একটি স্তরে পৌঁছে যায়। খুবই দুর্বল। তা’লীকুর রাগীব (১/১৯৮), যঈফাহ্ (৪৫৮১)।
আযানের প্রবর্তন
মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (যাইদ) বলেন, যখন সকাল হল, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলাম। তাঁকে (আমার) স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেনঃ “এটা নিশ্চয়ই বাস্তব (সত্য) স্বপ্ন। তুমি বিলালের সাথে যাও, কেননা তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে উঁচু এবং লম্বা। তাঁকে বলে দাও যা তোমাকে বলা হয়েছে এবং এগুলো দিয়ে সে আযান দেবে।” যাইদ (রাঃ) বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) যখন নামাযের জন্য বিলালের আযান শুনতে পেলেন, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি নিজের চাদর টানতে টানতে এবং এই বলতে বলতে আসলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহযোগে পাঠিয়েছেন! বিলাল যেমন বলেছে আমি তেমনই স্বপ্নে দেখেছি।’ রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এটা আরো প্রবল হল। হাসান। ইবনু মাজাহ-(৭০৬)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলমানরা যখন হিজরাত করে মাদীনায় আসলেন, তখন তারা আন্দাজ করে নামাজের জন্য একটা সময় ঠিক করে নিতেন এবং সে অনুসারে সমবেত হতেন। নামাযের জন্য কেউ আহ্বান করত না। একদিন তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন, খৃষ্টানদের মত একটি ঘন্টা বাজানো হোক। আবার কতেকে বললেন, ইয়াহূদীদের মত শিংগা বাজানো হোক। রাবী বলেন, ‘উমার (রাঃ) বললেন, নামাযের জন্য ডাকতে তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? রাবী বলেন, অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে বিলাল! ওঠো এবং নামাযের জন্য আহ্বান কর। সহীহ্-বুখারী ও মুসলিম।
আযানের তারজী করা
আবূ মাহযুরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে নিজের নিকট বসিয়ে আযানের প্রতিটি হরফ এক এক করে শিখিয়েছেন। (অধস্তন রাবী) ইবরাহীম বলেন, আমাদের আযানের মত। বিশর বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আমার সামনে পুনঃপাঠ করুন। তিনি তারজী সহকারে তা বললেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭০৮)। আবূ মাহযুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তাঁকে ঊনিশ বাক্যে আযান এবং সতের বাক্যে ইক্বামাত শিক্ষা দিয়েছেন। হাসান সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭০৯)।
ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা সম্পর্কে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দগুলো দুইবার এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো এক একবার বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭২৯-৭৩০)।
ইকামাতের শব্দগুলো দুইবার বলা প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আযান ও ইকামাতের বাক্যগুলো জোড়ায় জোড়ায় ছিল (দুই দুইবার বলা হত)। সনদ দুর্বল
আযানের শব্দগুলো থেমে থেমে স্পষ্টভাবে বলা
জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)–কে বললেনঃ হে বিলাল! যখন তুমি আযান দিবে, ধীরস্থিরভাবে ও দীর্ঘ স্বরে আযান দিবে এবং যখন ইকামাত দিবে তাড়াতাড়ি ও অনুচ্চস্বরে ইকামাত দিবে। তোমার আযান ও ইকামাতের মাঝখানে এতটুকু সময় ফুরসত দিবে যেন খাবার গ্রহণকারী তার খাবার হতে, পানকারী তার পান হতে এবং পেশাব-পায়খানারত ব্যক্তি তার পায়খানা-পেশাব হতে অবসর হতে পারে। তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত নামাযে দাঁড়াবে না। খুবই দুর্বল। ইরওয়া (২২৮), হাদীসের বর্ণিত, তোমরা দাঁড়িওনা অংশটুকু সহীহ। যাহা ৫১২ নং হাদীসেরও অংশ। আবদ ইবনু হুমাইদ আবদ ইবনু হুমাইদ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইউনুস ইবনু মুহাম্মাদ হতে তিনি আব্দুল মুনয়িম হতে ...... পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। -দেখুন পূর্বের হাদীস
আযান দেওয়ার সময় কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢোকানো
আওন ইবনু জুহাইফা (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেন, আমি বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে দেখলাম এবং তাঁকে এদিক সেদিক ঘুরতে ও মুখ ঘুরাতে দেখলাম। তাঁর (দুই হাতের) দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রঙ্গীন তাঁবুর মধ্যে ছিলেন। (রাবী বলেন) আমার ধারণা, তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেছেন, এটা চামড়ার তাঁবু ছিল। বিলাল (রাঃ) ছোট একটা বর্শা নিয়ে সামনে আসলেন এবং তা বাতহার শিলাময় যমিনে গেড়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা সামনে রেখে নামায আদায় করলেন। তাঁর সামনে দিয়ে কুকুর এবং গাধা চলে যেত। তাঁর গায়ে লাল চাদর ছিল। আমি যেন তাঁর পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি। সুফিয়ান বলেন, আমার মনে হয় এটা ইয়ামানের তৈরী চাদর ছিল। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭১১)।
ফযরের নামাযের ওয়াক্তে তাসবীব করা প্রসঙ্গে
বিলাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ ফযরের নামায ছাড়া অন্য কোন নামাযে ‘তাসবীব’ করো না। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৭১৫)।
যে আযান দিয়েছে সে ইক্বামাত দিবে
যিয়াদ ইবনু হারিস আস-সুদাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ফজরের নামাযের আযান দিতে বললেন। আমি আযান দিলাম। বিলাল (রাঃ) ইকামাত দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সুদাঈ আযান দিয়েছে, আর যে আযান দিবে ইকামাতও সে-ই দিবে”। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৭১৭)।
বিনা ওযূতে আযান দেয়া মাকরূহ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিনা ওযূতে কেউ যেন আযান না দেয়। যঈফ, ইরওয়া (২২২) ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, বিনা ওযূতে কেউ যেন নামাযের আযান না দেয়। যঈফ, প্রাগুক্ত।
ইমামই ইকামাত দেবার বেশি হকদার
জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়াযযিন (তাঁর জন্য) প্রতীক্ষা করতে থাকতেন এবং ইক্বামাত দিতেন না। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (তাঁর ঘর হতে) বেরিয়ে আসতে দেখতেন তখনই নামাযের ইক্বামাত দিতেন। হাসান। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৫৪৮), মুসলিম।
রাত থাকতে (ফযরের) আযান দেওয়া সম্পর্কে
সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়। অতএব তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূমের আযান না শুনা পর্যন্ত পানাহার কর। সহীহ্। ইরওয়া-(২১৯), বুখারী ও মুসলিম।
আযান হওয়ার পর মসজিদ হতে চলে যওয়া মাকরূহ
আবূ শা’সা (রাঃ) তিনি বলেন, আসরের নামাযের আযান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ হতে বেরিয়ে চলে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অমান্য করল। হাসান সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৩৩), মুসলিম।
সফরে থাকাকালে আযান দেওয়া
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আমার এক চাচাত ভাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আসলাম। তিনি আমাদের বললেনঃ “যখন তোমরা উভয়ে সফর করবে তখন আযান দেবে, ইক্বামাত বলবে, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে তোমাদের ইমামতি করবে”। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৯৭৯), বুখারী ও মুসলিম।
আযান দেওয়ার ফাযীলাত
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি নেকীর আকাঙ্খায় একাধারে সাত বছর আযান দেবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে নাজাত নির্ধারিত আছে। যঈফ, ইবনু মাজাহ(৭২৭)।
ইমাম যিম্মাদার এবং মুয়াযযিন আমানাতদার
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম হলো (নামাযের) যামিন এবং মুয়াযযিন হল আমানাতদার। হে আল্লাহ! ইমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে মাফ কর। সহীহ্। মিশকাত-(৬৬৩), ইরওয়া-(২১৭), সহীহ আবূ দাঊদ-(৫৩০)।
আযান শুনে যা বলতে হবে
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাবে, তখন মুয়াযযিন যা বলে তোমরাও তাই বল। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭২০), বুখারী ও মুসলিম।
আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা মাকরূহ
‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট হতে সর্বশেষ যে ওয়াদা নিয়েছিলেন তা ছিলঃ আমি একজন মুয়াযযিন রাখব যে আযানের বিনিময়ে মাহিনা নেবে না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭১৪)।
মুয়াযযিনের আযান শুনে যে দু’আ পাঠ করতে হবে
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, “ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি-মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ্ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৭২১), মুসলিম।
পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের পরিপূরক
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে, “হে আল্লাহ্! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নৈকট্য ও মর্যাদা দান কর এবং তাঁকে তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও” তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত ওয়াজিব হবে। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৭২২), বুখারী।
আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ ব্যর্থ হবে না
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ ফেরত দেয়া হয় না। সহীহ, মিশকাত-(৬৭১), ইরওয়া-(২৪৪), সহীহ আবূ দাঊদ-(৫৩৪)।
আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের উপর কত ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, মিরাজের রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হল, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোন অদল বদল নাই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব রয়েছে। সহীহ। বুখারী ও মুসলিম।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ফাযীলাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্তের নামায এবং জুমু’আর নামায হতে পরবর্তী জুমু’আর নামাযে তার মাঝখানে সংঘটিত (ছোটখাট) গুনাহসমূহের কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) হয়ে যায়; তবে শর্ত হল কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকতে হবে। সহীহ। তা’লীকুর রাগীব-(১/১৩৭)।
জামা’আতে নামযে আদায়ের ফাযীলাত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির একাকি আদায়কৃত নামাযের উপর জামা’আতে আদায়কৃত নামাযের সাতাশ গুন বেশি মর্যাদা রয়েছে। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৭৮৯), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তির জামা’আতের নামায তার একাকি নামাযের তুলনায় পঁচিশ গুন (সাওয়াব) বৃদ্ধি পায়। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৭৮৬, ৭৮৭), বুখারী ও মুসলিম।
আযান শুনে যে ব্যক্তি তাতে সাড়া না দেয় (জামা’আতে উপস্থিত না হয়)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার ইচ্ছা হয়, আমি আমার যুবকদের কাঠের স্তুপ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই, অতঃপর নামায আদায়ের নির্দেশ দেই এবং ইক্বামাত বলা হবে (নামায শুরু হয়ে যাবে), অতঃপর যেসব লোক নামাযে উপস্থিত হয়নি তাদের (ঘরে) আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেই। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৭৯১), বুখারী ও মুসলিম। মুজাহিদ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, সে দিনভর রোযা রাখে এবং রাতভর নামায আদায় করে, কিন্তু জুমু‘আ ও জামা‘আতে উপস্থিন হয় না। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হান্নাদ মুহারেবী হতে তিনি লাইস হতে তিনি মুজাহিদ হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সনদ দুর্বল, মুজাহিদ এ হাদীসের নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করেছেনঃ যে ব্যক্তি জামা‘আতকে তুচ্ছ ও হালকাজ্ঞান করে এরূপ করবে সে জাহান্নামী হবে।
যে ব্যক্তি একাকী নামায আদায়ের পর আবার জামা’আত পেল
জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (ইয়াযীদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর বিদায় হাজ্জে উপস্থিত ছিলাম। আমি তাঁর সাথে (মিনায় অবস্থিত) মসজিদে খাইফে ফযরের নামায আদায় করলাম। নামায শেষ করে তিনি মোড় ফিরলেন। তিনি লোকদের এক প্রান্তে দুই ব্যক্তিকে দেখলেন, তারা তাঁর সাথে নামায আদায় করেনি। তিনি বললেনঃ এদেরকে আমার নিকট নিয়ে এসো। তাদেরকে নিয়ে আসা হল, (কিন্তু ভয়ে) তাদের ঘাড়ের রগ কাঁপছিল। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ আমার সাথে নামায আদায় করতে তোমাদের উভয়কে কিসে বাঁধা দিল? তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা বাড়িতে নামায আদায় করে এসেছি। তিনি বললেনঃ এরূপ আর করবেনা। তোমরা বাড়িতে নামায আদায়ের পর যদি মসজিদে এসে জামা’আত হতে দেখ, তাহলে তাদের সাথে আবার নামায আদায় করবে। এটা তোমাদের উভয়ের জন্য নফল হবে। সহীহ্। মিশকাত-(১১৫২), সহীহ আবূ দাঊদ-(৫৯০)।
মসজিদে এক জামা’আত হয়ে যাবার পর আবার জামা’আত করা
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এমন সময় (মসজিদে) আসল যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করে নিয়েছেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে এই ব্যক্তির সাথে ব্যবসা করতে চায়? এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল এবং তার সাথে নামায আদায় করল। সহীহ্। মিশকাত-(১১৪৬), ইরওয়া–(৫৩৫), রাওযুন নাযীর–(৯৭৯)।
ফযর ও ‘ইশার নামায জামা’আতে আদায়ের ফাযীলাত
উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এশার নামায জামা’আতের সাথে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামায আদায়ের সাওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি ‘ইশা ও ফযরের নামায জামা’আতের সাথে আদায় করে তার জন্য সারারাত (নফল) নামায আদায়ের সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ-(৫৫৫), মুসলিম। জুনদাব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ফযরের নামায আদায় করল সে আল্লাহর হিফাজাতে চলে গেল। অতএব তোমরা আল্লাহ তা’আলার হিফাজাতকে চূর্ণ কর না, তুচ্ছ মনে কর না। সহীহ। তালীকুর রাগীব-(১/১৪১, ১৬৩), মুসলিম। বুরাইদা আল-আসলামী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যারা অন্ধকার পার হয়ে মসজিদে যায় তাদেরকে কিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুখবর দাও। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৭৯-৭৮১)।
প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর ফাযীলাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষ লোকদের জন্য প্রথম কাতার হচ্ছে সবচেয়ে ভাল এবং খুবই খারাপ হচ্ছে সবার পেছনের কাতার। স্ত্রী লোকদের জন্য সবার পেছনের কাতার সবচেয়ে ভাল এবং খুবই খারাপ হচ্ছে প্রথম কাতার। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১০০০-১০০১)। বর্ণনাকারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা যদি জানতে পারত আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কত সাওয়াব রয়েছে, তাহলে তাদের এতো ভীড় হত যে, শেষ পর্যন্ত লটারি করে ঠিক করতে হত (কে আযান দেবে এবং কে প্রথম কাতারে দাঁড়াবে)। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৯৮), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ হাদীসটি কুতাইবা মালিকের সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
কাতার সমান্তরাল করা সম্পর্কে
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাতারসমূহ সমান করে দিতেন। একদিন তিনি (ঘর হতে) বের হয়ে এসে দেখলেন, এক ব্যক্তির বুক কাতারের বাইরে এগিয়ে রয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের সারিগুলো সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মুখমণ্ডলে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৯৪), বুখারী ও মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশঃ তোমাদের মধ্যকার বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীরা আমরা নিকটে দাঁড়াবে
আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারা যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়; অতঃপর যারা (উভয় গুণে) এদের নিকটবর্তী; অতঃপর যারা এদের নিকটবর্তী। আঁকাবাঁকা (কাতরে) দাঁড়িও না, তাতে তোমাদের অন্তরসমূহ আলাদা হয়ে যাবে। সাবধান! মসজিদকে বাজারে পরিণত কর না (হৈ চৈ করে)। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬৭৯), মুসলিম।
খাম্বাসমূহের (খুঁটির) মাঝখানে কাতার করা মাকরূহ
আবদুল হামীদ ইবনু মাহমূদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা জনৈক আমীরের পেছনে নামায আদায় করলাম। লোকের এত ভীড় হল যে, আমরা বাধ্য হয়ে দুই খুঁটির মাঝখানে নামাযে দাঁড়ালাম। যখন নামায শেষ করলাম, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে (এভাবে দাঁড়ানো) এড়িয়ে যেতাম। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০০২)।
কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা
হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) তিনি বলেন, যিয়াদ ইবনু আবুল যা’দ আমার হাত ধরলেন। এ সময়ে আমরা রাক্কা নামক জায়গায় ছিলাম। তিনি আমাকে এক মুরুব্বির নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন আসাদ গোত্রের ওয়াবিসা ইবনু মা’বাদ (রাঃ)। যিয়াদ বললেন, আমাকে এই মুরুব্বি বলেছেন, এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাকি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিল। মুরুব্বি লোকটি শুনছিলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার নামায আদায়ের নির্দেশ দিলেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০০৪)। ওয়াবিসা ইবনু মা’বাদ (রাঃ) এক ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আবার নামায আদায়ের নির্দেশ দিলেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
দুই ব্যক্তির একসাথে নামায আদায় করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথার পেছনের চুল ধরে আমাকে তাঁর ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬২৩,১২৩৩), বুখারী ও মুসলিম।
তিন ব্যক্তি একসাথে নামায আদায় করা
সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেঃ আমরা যখন তিনজন এক সাথে নামায আদায় করি তখন আমদের একজন যেন সামনে এগিয়ে যায় (ইমামতির জন্য)। সনদ দূর্বল
ইমামের সাথে পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয় ধরনের মুক্তাদী থাকলে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁর নানী মুলাইকা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াত করলেন। তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলেন। তিনি তা খেলেন, অতঃপর বললেনঃ উঠো, তোমাদের সাথে নামায আদায় করব। আনাস (রাঃ) বলেন, নামায আদায়ের জন্য আমি একটি কালো পুরানো চাটাই নিলাম। এটাকে পরিস্কার ও নরম করার জন্য পানি ছিটিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উপর দাঁড়ালেন। আমি এবং ইয়াতীম (ছেলে)-ও তার উপর তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। বুড়ো নানী আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। তিনি আমাদের নিয়ে এভাবে দুই রাক’আত নামায আদায় করার পর চলে গেলেন। -সহিহ, বুখারি-মুসলিম।
কে ইমাম হওয়ার যোগ্য
আওস ইবনু যাম’আজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরা’আন বেশি ভাল পড়তে জানে সে লোকদের ইমামতি করবে। যদি কুর’আন পাঠে সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বেশি হাদীস (সুন্নাহ) জানে। যদি সুন্নাহর বেলায়ও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি প্রথম হিজরাত করেছে। যদি এ ব্যাপারেও সবাই সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি বয়সে বড়। কোন ব্যক্তি যেন অন্যের অধিকার ও প্রভাবিত এলাকায় তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং তার অনুমতি ছাড়া তার বাড়িতে তার নিদিষ্ট আসনে না বসে। মাহমূদ বলেন, ইবনু নুমাইর তাঁর হাদীসে (আকসারুহুম সিন্নান-এর স্থলে) ‘আকদামুহুম সিন্নান’ বর্ণনা করেছেন (যে ব্যক্তি বয়জ্যেষ্ঠ)। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৮০), মুসলিম।
ইমাম নামায সংক্ষিপ্ত করবে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ লোকদের ইমামতি করলে সে যেন (নামায) সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে ছোট বালক, দুর্বল ও অসুস্থ লোক থাকতে পারে। যখন সে একাকি নামায আদায় করে, বয়োবৃদ্ধ তখন নিজ ইচ্ছামত (দীর্ঘ করে) আদায় করতে পারে। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৫৯), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব লোকের চেয়ে অধিক সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ নামায আদায়কারী ছিলেন। আবূ ‘ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। সহীহ্। বুখারী ও মুসলিম।
নামায শুরু এবং শেষ করার বাক্য
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের চাবি হল পবিত্রতা; তার তাহরীম হল শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা; তার তাহলীল হল (শেষে) সালাম বলা। যে ব্যক্তি আলহামদু লিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) ও অন্য সূরা পাঠ করেনি তার নামায হয়নি, চাই তা ফরয নামায হোক বা সুন্নাত নামায। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(২৭৫-২৭৬)।
তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করা এবং ছাড়িয়ে দেয়া
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযের জন্য তাকবীর তাহরীমা বলতেন তখন হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে দিতেন। যঈফ, তা’লীক আলা ইবনু খুযাইমাহ (৪৫৮)। সাঈদ ইবনু সামআন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন নিজের উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে উপরে তুলতেন। সহীহ্। সিফাতুস্ সালাত-(৬৭), তালীক আ’লা ইবনু খুযাইমাহ-(৪৫৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৩৫)।
তাকবীরে উলার ফাযীলাত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীর) সাথে জামা’আতে নামায আদায় করতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়ঃ জাহান্নাম হতে নাজাত এবং মুনাফিকী হতে মুক্তি। হাসান। তা’লীকুর রাগীব-(১/১৫১), সহীহাহ্- (২৬৫২)।
নামায শুরু করে যা পাঠ করতে হয়
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে নামায আদায় করতে উঠে প্রথমে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন, অতঃপর এই দুআ পাঠ করতেনঃ সুবহানাকা আল্লাহুমা.........ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তুমি মহাপবিত্র, তোমার জন্যই প্রশংসা, তোমার নাম বারকাতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা সর্বোচ্চ এবং তুমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।” অতঃপর তিনি বলতেনঃ ‘আল্লাহু আকবার কাবীরা’ অতঃপর বলতেনঃ ‘আউযু বিল্লাহিস........ওয়া নাফাসিহি’। অর্থাৎ “অভিশপ্ত শাইত্বান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হতে আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তা’আলার নিকটে আশ্রয় চাই”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮০৪)। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮০৬)।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ না করা প্রসঙ্গে
ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা (আবদুল্লাহ) আমাকে নামাযের মধ্যে শব্দ করে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, হে বৎস! এটা তো বিদ’আত; বিদ’আত হতে সাবধান হও। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাদের চেয়ে অন্য কাউকে ইসলামে বিদ’আতের প্রচলন করার প্রতি এত বেশী ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করতে দেখিনি। তিনি আরও বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার (রাঃ), উমার (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)-এর সাথে নামায আদায় করেছি। কিন্তু তাদের কাউকে বিসমিল্লাহ সশব্দে পাঠ করতে শুনিনি। অতএব তুমিও সশব্দে পাঠ কর না। যখন তুমি নামায আদায় করবে তখন ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’-এর মাধ্যমে কিরা’আত শুরু করবে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৮১৫)।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সশব্দে পাঠ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ দিয়ে নামায শুরু করতেন। সনদ দুর্বল
সূরা ফাতিহার মাধ্যমে নামাযের কিরা’আত শুরু করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার, ‘উমার ও উসমান (রাঃ) ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ দিয়ে নামাযের কিরা’আত শুরু করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮১৩), মুসলিম।
ফাতিহাতুল কিতাব ছাড়া নামায হয় না
উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করেনি তার নামায হয়নি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৩৭), বুখারী ও মুসলিম।
‘আমীন’ বলা সম্পর্কে
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “গাইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম অলায্-যাল্লীন” পাঠ করতে এবং ‘আমীন’ বলতে শুনেছি। আমীন বলতে গিয়ে তিনি নিজের কণ্ঠস্বর দীর্ঘ ও উচ্চ করলেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৮৫৫)। আবূ ‘ঈসা আবূ বকর মুহাম্মাদ ইবনু আবান, তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু নুমাইর হতে, তিনি ‘আলা ইবনু সালিহ আল-আসাদী হতে তিনি সালামাহ ইবনু কুহাইল হতে তিনি হুজর ইবনু আনবাস হতে, তিনি ওয়াইল ইবনু হুজর হতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সালামা ইবনু কুহাইলের সূত্রে সুফিয়ানের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের-(২৪৮ নং) হাদীস।
আমীন বলার ফাযীলাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে সাথে হবে তার পূর্বেকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৫১), বুখারী ও মুসলিম।
দুই বিরতি স্থান
সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে দু’টি বিরতিস্থান মুখস্থ করে নিয়েছি। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) এতে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, আমি একটি মাত্র বিরতিস্থান মুখস্থ করেছি। (সামুরা বলেন, এর মীমাংসার জন্য) আমরা মাদীনায় উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর কাছে পত্র লেখলাম। তিনি উত্তরে লেখে জানালেন, সামুরাই সঠিকভাবে মুখস্থ রেখেছে। সাঈদ বলেন, আমরা কাতাদাকে প্রশ্ন করলাম, বিরতি দু’টো কোন কোন জায়গায়? তিনি বলেন, যখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে প্রবেশ করতেন (তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর) এবং যখন কিরা’আত শেষ করতেন। পরে তিনি (কাতাদা) বললেন, যখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘অলায-যআল্লীন’ পাঠ করতেন। রাবী বলেন, কিরা’আত পাঠের পর তিনি ভালভাবে নিঃশ্বাস নেয়া পর্যন্ত বিরতি দেওয়া খুবই পছন্দ করতেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৮৪৪, ৮৪৫)
নামাযের মধ্যে ডান হাত বাঁ হাতের উপর রাখা
কাবীসা ইবনু হুলব (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (হুলব) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইমামতি করতেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) নিজের ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত ধরতেন। হাসান, ইবনু মাজাহ-(৮০৯)।
রুকূ-সাজদাহ্র সময়ে তাকবীর বলা
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, (নামাযরত অবস্থায়) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেকবার উঠা, নীচু হওয়া, দাঁড়ানো ও বসার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। আবূ বাকার এবং ‘‘উমার (রাঃ)-ও এরূপ আমল করতেন। সহীহ। ইরওয়া-(৩৩০)।
একই বিষয় সম্পর্কিত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নামাযে) নীচের দিকে যেতে তাকবীর বলতেন। সহীহ্। ইরওয়া-(৩৩১), বুখারী ও মুসলিম।
রুকূর সময় উভয় হাত উত্তোলন করা (রফউল ইয়াদাইন)
সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি দেখেছি, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শুরু করতেন, তখন নিজের কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং যখন রুকূতে যেতেন এবং রুকূ হতে উঠতেন (তখনও এরূপ করতেন)। ইবনু আবূ ‘উমার তাঁর বর্ণিত হাদীসে আরো বলেছেন, ‘কিন্তু তিনি (রাসূলুল্লাহ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই সাজদাহ্র মাঝখানে হাত তুলতেন না। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৮৫৮), বুখারী ও মুসলিম। আবূ ‘ঈসা ফাযল ইবনু সাবাহ বাগদাদী তিনি সুফইয়ান ইবনু উয়াইনাহ হতে তিনি যুহরী হতে এই সনদ পরম্পরায় ইবনু আবী উমারের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমবার ব্যতীত নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি
‘আলকামা (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (নিয়মে) নামায আদায় করে দেখাব না? তিনি (‘আবদুল্লাহ) নামায আদায় করলেন, কিন্তু প্রথম বার (তাকবীরে তাহরীমার সময়) ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি। সহীহ্। সিফাতুস সালাত, মূল-মিশকাত-(৮০৯)।
রুকূতে দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখা
আবূ ‘আবদুর রাহমান আস-সুলামী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাদের বললেন, রুকূতে হাঁটুতে হাত রাখা তোমাদের জন্য সুন্নাত। অতএব তোমরা হাঁটুতে হাত রাখ। সনদ সহীহ্। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) আমরা প্রথমে এরূপ করতাম (দুই হাত একসাথে মিলিয়ে দুই রানের মাঝখানে রাখতাম)। কিন্তু পরে আমাদেরকে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং রুকূর সময় হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৭৩), বুখারী ও মুসলিম।
রুকূ অবস্থায় উভয় হাত পেটের পার্শ্বদেশ হতে পৃথক রাখা
‘আব্বাস ইবনু সাহল তিনি বলেন, একদা আবূ হুমাইদ, আবূ সা’ঈদ, সাহল ইবনু সা’দ এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) একত্র হলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায সম্পর্কে একে অপরের সংগে আলাপ করছিলেন। আবূ হুমাইদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে অনেক ভাল জানি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূর সময় দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখলেন। তিনি হাত দু’টোকে টানা তীরের মত (সোজা) রাখলেন এবং পার্শ্বদেশ হতে পৃথক (ফাঁক) করে রাখলেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭২৩), মিশকাত-(৮০১), সিফাতুস সালাত-(১১০)।
রুকূ-সাজদাহ্র তাসবীহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ রুকূ করবে তখন রুকূতে তিনবার “সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম” (আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) বলবে। তাহলে তার রুকূ পূর্ণ হবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ। যখন সে সিজদা করবে তখন সিজদায় তিনবার “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” বলবে। তাহলে তার সিজদা পূর্ণ হবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৮৯০) হুযাইফা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করছেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) রুকূতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ এবং সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা’ বলতেন। যখনই কোন রাহমাত সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখনই তিনি সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে ‘রাহমাত’ চাইতেন। যখনই তিনি কোন শাস্তি সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখন সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে শাস্তি হতে আশ্রয় চাইতেন। সহীহ। মিশকাত-(৮৮১)। ইমাম তিরমিযী মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার ‘আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী হতে, তিনি শু’বা হতে স্বীয় সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
রুকূ-সাজদাহ্তে কুর’আন পাঠ নিষেধ
‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেনঃ কাচ্ছি নামক রেশমী কাপড় ও কড়া লাল রং- এর কাপড় পরতে, সোনার আংটি পরতে এবং রুকূর মধ্যে কুর’আনের আয়াত পাঠ করতে। সহীহ্। মুসলিম।
যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্তে পিঠ সোজা করে না
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্তে পিঠ স্থিরভাবে সোজা করে না তার নামায সহীহ হয় না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৭০)।
রুকূ হতে মাথা উঠানোর সময় যা বলতে হবে
‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ হতে মাথা উঠানোর সময় বলতেনঃ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মাশি’তা মিন শাই-ইম বাদু”। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৩৮), মুসলিম।
একই বিষয়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে, তোমরা তখন ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বল। কেননা যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাউদ-(৭৯৪), বুখারী ও মুসলিম।
সিজদার সময় হাঁটু দু’টি রাখার পর দুই হাত রাখতে হবে
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি- তিনি যখন সিজদা করতেন তখন মাটিতে হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতেন এবং যখন তিনি (সিজদা হতে) উঠতেন তখন হাঁটু উঠানোর আগে হাত উঠাতেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৮৮২)।
একই বিষয়বস্তু
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার নামাযে কি উটের মত ভর দিয়ে বসবে? সহীহ্। মিশকাত-(৮৯৯), ইরওয়া-(২/৭৮), সহীহ আবূ দাঊদ-(৭৮৯)।
নাক ও কপাল দিয়ে সাজদাহ্ করা
আবূ হুমাইদ আস-সায়েদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্ করতেন তখন নিজের নাক ও কপাল যমিনের সাথে লাগিয়ে রাখতেন, উভয় হাত পাঁজর হতে আলাদা রাখতেন এবং হাতের তালু কাঁধ বরারব রাখতেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭২৩), মিশকাত (৮০১), সিফাতুস সালাত (১২৩)।
সাজদাহ্র সময় মুখমন্ডল কোন্ জায়গায় রাখতে হবে
আবূ ইসহাক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলামঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্তে মুখমন্ডল কোন জায়গায় রাখতেন? তিনি বললেন, দুই হাতের তালুর মাঝ বরাবর রাখতেন। সহীহ্। মুসলিম-(২/১৩)।
সাত অঙ্গের সমন্বয়ে সাজদাহ্ করা
‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ বান্দা যখন সাজদাহ্ করে তখন তার সাথে তার (শরীরের) সাতটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সাজদাহ্ করে অর্থাৎ মুখমন্ডল, উভয় হাতরে তালু, দুই হাঁটু ও দুই পা। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৮৫), মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদিষ্ট হয়েছেন সাত অঙ্গের সমন্বয়ে সাজদাহ্ করতে এবং (নামাযের মধ্যে) চুল ও কাপড় না গোছাতে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৮৪), বুখারী ও মুসলিম।
সাজদাহ্তে হাত বাহু হতে ফাঁক করে রাখা
উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আকরাম আল-খুযাঈ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি আমার পিতার সাথে নামিরার সমতল ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। ইতিমধ্যে একদল সাওয়ারী (আমাদের) পার হয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। রাবী বলেন, যখন তিনি সাজদাহ্য় যেতেন তখন আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখে নিতাম। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৮১)।
সঠিকভাবে সাজদাহ্ করা
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সাজদাহ্ করে তখন সে যেন সঠিকভাবে সাজদাহ্ করে এবং কুকুরের মত যমিনে যেন হাত বিছিয়ে না দেয়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৯১)। কাতাদা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সঠিকভাবে সাজদাহ্ কর। তোমাদের কেউ যেন নামাযের মধ্যে কুকুরের মত যমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৯২), বুখারী ও মুসলিম।
সাজদাহ্র সময় যমিনে হাত রাখা এবং পায়ের পাতা খাড়া করে রাখা
‘আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত (তালু) মাটিতে রাখতে এবং পা খাড়া রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাসান। সিফাতুস সালাত-(১২৬)। বর্ণনাকারী অপর এক বর্ণনায় আছে ‘আমির ইবনু সা’দ এ হাদীসটি মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। (হাসান) পূর্বের হাদীসের কারণে। এ বর্ণনা সূত্রটি ওহাইবের বর্ণনার চেয়ে বেশি সহীহ। মনীষীগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করা পছন্দ করেছেন।
রুকূ ও সাজদাহ্ হতে মাথা তুলে পিঠ সোজা রাখা
বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামাযের নিয়ম ছিলঃ যখন তিনি রুকূ করতেন, যখন রুকু হতে মাথা তুলতেন, যখন সাজদাহ্ করতেন এবং সাজদাহ্ হতে মাথা তুলতেন তখন এ কাজগুলোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় সমানই হত। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৯৮), বুখারী ও মুসলিম। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার, তিনি মুহাম্মদ ইবনু জা’ফর হতে, তিনি শু’বা হতে তিনি হাকাম হতে, তিনি স্বীয় সনদে পূর্বের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইমামের সাথে সাথে রুকূ-সাজদাহ্য় যাওয়া ভাল নয়
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে বারাআ (রাঃ) বলেছেন আর তিনি মিথ্যাবাদী নন। আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে নামায আদায় করতাম, তখন তিনি রুকূ হতে মাথা তুলার পর সাজদাহ্য় যাওয়ার আগে আমাদের কেউই নিজ নিজ পিঠ (সাজদাহ্র জন্য) ঝুঁকিয়ে দিত না। তিনি সাজদাহ্য় যাওয়ার পর আমরা সাজদাহ্য় যেতাম। সহীহ্। সহীহ্ আবু দাঊদ-(৬৩১-৬৩৩), বুখারী ও মুসলিম।
দুই সিজদার মঝখানে ইক্আ করা মাকরুহ
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আলী! আমি নিজের জন্য যা ভাল মনে করি তোমার জন্যও তা হিত মনে করি এবং আমার নিজের জন্য যা অপছন্দ করি তা তোমার জন্যও অপছন্দ করি। তুমি দুই সিজদার মাঝে ইকআ রীতিতে বস না। যইফ, ইবনু মাজাহ(৮৯৪, ৮৯৫)
ইক্ব’আর অনুমতি
তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে ইক্ব’আ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, এটা সুন্নাত। আমরা বললাম, এতে আমরা পায়ে ব্যথা পাই। তিনি আবার বললেন, এটা তোমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৯১), মুসলিম।
দুই সাজদাহ্র মাঝে বিরতির সময় যা পাঠ করতে হবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই সাজদাহ্র মাঝখানে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৯৮)। হাসান ইবনু আলী আল-খাল্লাল আল-হুলওয়ানী তিনি ইয়াযিদ ইবনু হারুন হতে, তিনি যাইদ ইবনু হুবাব হতে, তিনি আবুল ‘আলা কামিল হতে স্বীয় সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সিজদার সময় কিছুতে ভর দেওয়া
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাগন তাঁর নিকট অভিযোগ করলেনঃ যখন তারা সিজদায় যান তখন কনুই পৃথক রাখতে তাদের খুব অসুবিধা হয়। তিনি বলেনঃ হাঁটুর সাথে কনুই ঠেকিয়ে সাহায্য নাও। যঈফ, যঈফ আবু দাউদ(১৬০)।
সাজদাহ্ হতে উঠার নিয়ম
মালিক ইবনু হুয়াইরিস আল-লাইসী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নামায আদায় করতে দেখেছেন। তিনি যখন নামাযের বেজোর রাকআতে থাকতেন তখন (সাজদাহ্ হতে উঠে) সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত (পরবর্তী রাক’আতের জন্য) দাঁড়াতেন না। সহীহ্। ইরওয়া-(২/৮২-৮৩), সিফাতুস সালাত-(১৩৬), বুখারী।
একই বিষয়
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে (সিজদা হতে সরাসরি) নিজের পায়ের তালুতে (ভর দিয়ে) দাঁড়িয়ে যেতেন। যঈফ, ইরওয়া ৩৬২।
তাশাহহুদ পাঠ করা
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, দুই রাক’আত নামায আদয়ের পর বসে যা পাঠ করতে হবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তা শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলঃ “আত্ত্যাহিয়্যাতু লিল্লাহি..........আবদুহু ওয়া রাসূলুহু”। অর্থাৎ-“সমস্ত সম্মান, ইবাদাত, আরাধনা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রাহমাত এবং প্রাচুর্যও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর পুণ্যশালী বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।” সহীহ্। ইরওয়া-(৩৩৬), দেখুন ইবনু মাজাহ-(৮৯৯)।
একই বিষয় সম্পর্কিত
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরাআন শিক্ষা দিতেন ঠিক অনুরূপভাবে ‘তাশাহ্হুদ’ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলতেনঃ “আত্তাহিয়্যাতুল মুবারাকাতুস সালাওয়াতুত তাইয়্যিবাতু লিল্লাহি.............মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯০০), মুসলিম।
নীরবে তাশাহ্হুদ পাঠ করবে
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নিঃশব্দে তাশাহ্হুদ পাঠ করাই সুন্নাত। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৯০৬), সিফাতুস সালাত-(১৪২)।
তাশাহ্হুদের সময় বসার নিয়ম
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায আদায় করা দেখব। তিনি যখন তাশাহ্হুদ পাঠ করতে বসলেন তখন বাম পা বিছিয়ে দিলেন, বাম হাত বাম ঊরুপ উপর রাখলেন এবং ডান পা খাড়া করে রাখলেন। সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭১৬)।
তাশাহ্হুদ সম্পর্কেই
‘আব্বাস ইবনু সাহল আস-সাইদী (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহর ইবনু সা’দ ও মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) একত্র হলেন তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায আদায়ের নিময় প্রসঙ্গে একে অপরে আলাপ করলেন। আবূ হুমাইদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অনেক ভাল জানি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহ্হুদ পাঠ করতে বসতেন, তখন বাম পা বিছিয়ে দিতেন, ডান পায়ের (পাতার) মাথার দিকটা কিবলার দিকে রাখতেন, ডান হাতের তালু ডান হাঁটুর উপর, বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর রাখতেন এবং তর্জনী (শাহাদাত আঙ্গুল) দিয়ে ইশারা করতেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭২৩)।
তাশাহ্হুদ পাঠ করার সময় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে বসতেন তখন ডান হাত (ডান) হাঁটুতে রাখতেন, (ডান হাতের) বৃদ্ধাঙ্গুলের পার্শ্ববর্তী আঙ্গুল (তর্জনী) উত্তোলন করতেন এবং তা দিয়ে দু’আ করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর বিছিয়ে রাখতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯১৩), মুসলিম।
নামাযের সালাম ফিরানো সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেষে ডান দিকে তারপর বাম দিকে এ বলে সালাম ফিরাতেন, আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯১৪), মুসলিম।
সালাম সম্পর্কেই
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে এক সালামই ফিরাতেন, প্রথমে সামনের দিকে (শুরু করে) তারপর ডান দিকে কিছুটা মুখ ঘুরাতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯১৯)।
সালাম খুব লম্বা করে টানবে না, এটাই সুন্নত
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেল, সালামের মধ্য হযফ করা সুন্নাত। যঈফ, আবু দাউদ ১৭৯।
সালাম ফিরানোর পর যা বলবে
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর এই দু’আ পাঠের বেশি সময় বসতেন না-“আল্লাহুম্মা আনতাস্ সালামু......ওয়াল ইকরাম”। অর্থাৎ-“হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা তোমার নিকট হতেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও গৌরবের মালিক! তুমি প্রাচুর্যময় ও বারকাতময়”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯২৪), মুসলিম। আসিম আল-আহওয়াল আসিম আল-আহওয়াল হতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে। শুধু ‘যাল-জালালি’ শব্দের পূর্বে ‘ইয়া’ (হে) শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুক্ত করা গোলাম সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায হতে ফুরসত হতে চাইতেন তখন তিনবার মার্জনা প্রার্থনা করতেন; তারপর বলতেন, “হে আল্লাহ! তুমিই শান্তি আনায়নকারী। তোমার নিকট হতেই শান্তি আসে। হে পরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! তুমি বারকাত ও প্রাচুর্যময়”। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯২৮), মুসলিম।
ডান অথবা বাম পাশে ফেরা
কাবিসা ইবনু হুলব (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি (হুলব) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইমামতি করতেন। (সালাম ফিরানোর পর) তিনি ডান এবং বাম উভয় পাশেই ফিরে বসতেন। এ অনুচ্ছেদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ, আনাস, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতেও হাদীস উল্লেখিত আছে। হাসান সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯২৯)।
নামায পড়ার নিয়ম
রিফাআ ইবনু রাফি (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে অবস্থান করছিলেন। রিফাআ (রাঃ) বলেন, আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। এমন সময় বিদুইনের বেশে এক ব্যক্তি আসল। সে নামায আদায় করল, কিন্তু হালকাভাবে (তাড়াহুড়া করে, নামাযের রুকনসমূহ ঠিকভাবে আদায় না করে) নামায শেষ করে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাকেও (সালাম), ফিরে গিয়ে আবার নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায পড়নি। সে ফিরে গিয়ে নামায আদায় করল, তারপর এসে তাঁকে সালাম করল। তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমাকেও (সালাম), ফিরে গিয়ে আবার নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায পড়নি। দুই অথবা তিনবার এরূপ হল। প্রত্যেকবার সে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে থাকলেনঃ তোমাকেও (সালাম), ফিরে গিয়ে আবার নামায আদায় কর, কেননা তুমি নামায আদায় করনি। ব্যাপারটা লোকদের (সাহাবাদের) নিকট ভয়ানক ও অস্বস্তিকর মনে হল যে, যে ব্যক্তি হালকাভাবে নামায আদায় করল তার নামাযই হল না। অবশেষে লোকটি বলল, আমাকে দেখিয়ে দিন, শিখিয়ে দিন, কেননা আমি তো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নই, কখনও শুদ্ধ কাজ করি কখনও ত্রুটি করি। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন তুমি নামায আদায় করতে দাঁড়াও, তখন তিনি (আল্লাহ) তোমাকে যেভাবে ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ওযূ কর, তারপর তাশাহ্হুদ পাঠ কর (আযান দাও), তারপর ইকামাত বল। যদি তোমার কুরআন জানা থাকে তবে তা হতে পাঠ কর। অন্যথায়-’আলহামদুলিল্লাহ’ তাকবীর-’আল্লাহু আকবার’ তাহলীল-’লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পাঠ কর, অতঃপর রুকূ কর, শান্তভাবে রুকূতে অবস্থান কর। তারপর রুকূ হতে সোজা হয়ে দাঁড়াও, তারপর সাজদাহ্য় যাও, ঠিকভাবে সাজদাহ্ কর, সাজদাহ্ হতে উঠে শান্তভাবে বস, তারপর উঠো। যদি তুমি এভাবে নামায আদায় কর তবে তোমার নামায পূর্ণ হল। যদি তুমি তাতে কোনরূপ ভুল কর তবে তোমার নামাযের মধ্যেই ভুল করলে। রাবী বলেন, পূর্বের কথার চেয়ে এই পরবর্তী কথাটা লোকদের (সাহাবাদের) নিকট সহজ লাগল। কেননা যে নামাযের মধ্যে কোনরূপ ভুল করল তার নামাযে ভুল হল কিন্তু পরিপূর্ণ নামায নষ্ট হল না। সহীহ্। মিশকাত-(৮০৪), সিফাতুস সালাত (মূল), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৮০৩-৮০৭), ইরওয়া-(১/৩২১-৩২২)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে গেলেন। এ সময় একটি লোক এসে নামায আদায় করল। (নামায শেষ করে) সে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বললেনঃ তুমি আবার গিয়ে নামায আদায় করে এসো, তোমার নামায হয়নি। এভাবে সে তিনবার নামায আদায় করল। তারপর লোকটি তাঁকে বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এর চেয়ে ভালভাবে নামায আদায় করতে পারছি না, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি নামায আদায় করতে দাঁড়াও তখন তাকবীর (তাহরীমা) বল, তারপর কুরআনের যে জায়গা হতে পাঠ করতে সহজ হয় তা পাঠ কর; তারপর রুকূতে যাও এবং রুকূর মধ্যে স্থির থাক; তারপর মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়াও; তারপর সাজদাহ্ কর এবং সাজদাহ্র মধ্যে স্থির থাক; তারপর মাথা তুলে আরামে বস। তোমার সমস্ত নামায এভাবে আদায় কর। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০৬০), বুখারী ও মুসলিম।
একই বিষয়
মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু আতা (রহঃ) হতে আবূ হুমাইদ আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি (মুহাম্মাদ) বলেন, আমি তাঁকে (আবূ হুমাইদকে) দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে এ হাদীস বলতে শুনেছি। আবূ কাতাদা ইবনু রিব্ঈ (রাঃ)-ও তাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সামনে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে বেশি জানি। তাঁরা বললেন, তা কেমন করে? তুমি তো আমাদের আগে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করতে পারনি। তাছাড়া তুমি তাঁর নিকট আমাদের চেয়ে বেশি যাতায়াত করতে না। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা বললেন, ঠিক আছে বর্ণনা কর। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন (তাকবীরে তাহরীমা করার জন্য); যখন রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন; তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে রুকূতে যেতেন এবং শান্তভাবে রুকূতে থাকতেন, মাথা নীচের দিকেও ঝুঁকাতেন না এবং উপরের দিকেও উঠাতেন না, উভয় হাত উভয় হাঁটুতে রাখতেন; তারপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকূ হতে উঠতেন, রফউল ইয়াদাইন করতেন (উভয় হাত উপরের দিকে তুলতেন) এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, এমনকি প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে স্বাভাবিকভাবে এসে যেত। তারপর সাজদাহ্র জন্য যমিনের দিকে নীচু হতেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন; দুই বাহু দুই বগল হতে আলাদা রাখতেন; পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ফাঁক করে দিতেন; বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন; অতঃপর সোজা হয়ে বসতেন যাতে তাঁর প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে ঠিকভাবে বসে যেত; অতঃপর দ্বিতীয় সাজদাহ্য় যেতেন; ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সাজদাহ্ হতে উঠে পা বিছিয়ে দিয়ে বসতেন (জলসায়ে ইস্তিরাহাত করতেন); এমনকি প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে ঠিকভাবে বসে যেত; তারপর দাঁড়াতেন; তারপর দ্বিতীয় রাক’আতেও এরূপ করতেন। তারপর দুই রাক’আত আদায় করতে যখন দাঁড়াতেন, তখনও তাকবীর বলতেন এবং দুই হাত নামায শুরু করার সময়ের মত কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন। বাকী নামাযেও তিনি এরূপ করতেন; তারপর যখন শেষ সাজদাহ্য় পৌঁছাতেন যেখানে তাঁর নামায শেষ হত তখন বাঁ পা বিছিয়ে দিতেন এবং পাছার উপর চেপে বসতেন; তারপর সালাম ফিরাতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০৬১)। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু আতা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুমাইদ আস-সায়েদী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দশজন সাহাবীর সামনে বলতে শুনেছি, তাদের মধ্যে কাতাদা ইবনু রিবঈ (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী বর্ণনা ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ইদের হাদীসের অনুরূপ। তবে আবূ আসিম এ হাদীসে আবদুল হামীদ ইবনু জাফরের সূত্রে এ কথাটুকুও বর্ণনা করেছেনঃ তাঁরা বললেন, তুমি সত্যিই বলেছ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপভাবেই নামায আদায় করতেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
ফযরের নামাযের কিরা’আত
কুতবা ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফযরের প্রথম রাকআতে ‘ওয়ান-নাখলা বাসিকাতিন’ (সূরা কাফ) পাঠ করতে শুনেছি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮১৬)।
যুহর ও আসরের নামাযের কিরা’আত
জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর এবং আসরের নামাযে সূরা “ওয়াস সামায়ি যাতিল বুরুজ’, ‘ওয়াস সামায়ি ওয়াত তারিক্ব’ এ ধরনের (আকার বিশিষ্ট) সূরা পাঠ করতেন। হাসান সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৯৪), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৭৬৭)।
মাগরিবের নামাযের কিরা’আত
উম্মুল ফযল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। অসুখের কারণে এ সময়ে তাঁর মাথায় পট্টি বাঁধা ছিল। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করলেন এবং তাতে সূরা “ওয়াল মুরসালাত” পাঠ করলেন। তারপর তিনি মহান আল্লাহ তা’আলার সাথে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আর কখনও এ সূরা পাঠ করেননি। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৩১), বুখারী ও মুসলিম।
‘ইশার নামাযের কিরা’আত
‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (বুরাইদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার নামাযে ‘ওয়াশ-শামসি ওয়া যুহাহা’ ও এ ধরনের সূরাগুলো পাঠ করতেন। সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৯৭)। বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার নামাযে ‘ওয়াত-তীনি ওয়ায-যাইতূন’ সূরা পাঠ করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৮৩৪), বুখারী ও মুসলিম।
ইমামের পিছনে কিরা’আত পাঠ করা
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকালে (ফযরের) নামায আদায় করলেন। কিন্তু কিরা’আত পাঠ তাঁর নিকট একটু শক্ত ঠেকল। তিনি নামায শেষে বললেন, আমার মনে হয় তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিরা’আত পাঠ কর। রাবী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ! হ্যাঁ আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বললেনঃ সূরা ফাতিহা ছাড়া (ইমামের পিছনে) অন্য কোন কিরা’আত পাঠ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার নামায হয় না। যঈফ। যঈফ আবূ দাঊদ-(১৪৬)। আবূ নু’আইম ওয়াহ্ব ইবনু কাইসান (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি নামায আদায় করল অথচ তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, সে নামাযই আদায় করেনি। হ্যাঁ ইমামের পিছনে হলে ভিন্ন কথা, সেক্ষেত্রে ফাতিহা পাঠের দরকার নাই। সহীহ্। মাওফূফ ইরওয়া-(২/২৩৭)।
মসজিদে প্রবেশের দু’আ
ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রাব্বিগফির লী যুনূবী ওয়াফতাহ্ লী আবওয়াবারাহমাতিকা।” যখন তিনি মসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের (নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনূবী ওয়াফতাহ্ লী আবওয়াবা ফাদলিকা।” রব্বিগ ফিরলী বাক্যবাদে সহীহ্। ফজলুস্ সালাত আলান্নাবী-(৭২-৭৩), তামাতুল মিন্নাহ-(২৯০)। ‘আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম বলেছেন, আমি মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনু হাসানের সাথে দেখা করে তাঁকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমার নিকট হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করলেন-“যখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) মসজিদে ঢুকতেন তখন বলতেনঃ “রাব্বিফ্তাহ্লী বাবা রাহমাতিকা” এবং যখন বের হতেন তখন বলতেনঃ রাব্বিফ্তাহলী বাবা ফায্লিকা। সহীহ্। পূর্বের হাদীসের শব্দগুলো অধিক সহীহ্।
মসজিদে ঢুকে দুই রাক’আত নামায আদায় করবে
আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন মসজিদে আসে, তখন সে যেন বসার আগে দুই রাকা’আত নামায আদায় করে নেয়। সহীহ। ইবনু মাজাহ–(১০১৩), বুখারী ও মুসলিম।
কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সমগ্র পৃথিবীই নামায আদায়ের জায়গা
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীই নামায আদায়ের উপযোগী। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৪৫)।
মসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত
‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সুপ্রসন্নতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরী করে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরী করেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৩৬), বুখারী ও মুসলিম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তালার সুপ্রসন্নতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করতে চাই তা ছোট হোক বা বড়, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। যঈফ, তা’লিকুর রাগিব (১/১১৭)।
কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা মাকরুহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতকারীনীদের, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারীদের এবং কবরে বাতি জ্বালানো ব্যক্তিদের অভিসম্পাত করেছেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৫৭৫)। অধিক যিয়ারতকারীনী এই অর্থে এবং বাতি জ্বালানো বাদে হাদীসটি সহিহ।
মসজিদে ঘুমানো
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন কালে মসজিদে ঘুমাতাম। অথচ আমরা তখন যুবক ছিলাম। সহীহ্। বুখারী।
মসজিদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয়, হারানো জিনিস খোঁজা এবং কবিতা আবৃত্তি করা মাকরূহ
‘আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে, কেনা-বেচা করতে এবং জুমু’আর দিন জুমু’আর নামাযের আগে বৃত্তাকারে গোল হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। হাসান। ইবনু মাজাহ-(৭৪৯)।
যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, খুদরা গোত্রের এক ব্যক্তি এবং ‘আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক ব্যক্তি ‘তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ’ কোনটি-তা নিয়ে সন্দেহে পতিত হল। খুদরা গোত্রের লোকটি বলল, এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদ (মাদীনার মসজিদ)। অপর ব্যক্তি বলল, এটা কুবার মসজিদ। বিষয়টি নিয়ে তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আসল। তিনি বললেনঃ এটা এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে নাব্বী। এ মসজিদে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সহীহ্। মুসলিম।
কুবার মসজিদে নামায আদায় করা
উসাইদ ইবনু যুহাইর আল-আনসারী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবা ছিলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেন, কুবার মসজিদে নামায আদায় করলে ‘উমরা করার সমান নেকী পাওয়া যায়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪১১)।
কোন্ মসজিদ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার এই মসজিদে এক রাক’আত নামায আদায় করা অন্য মাসাজিদে এক হাজার রাক’আত নামায আদায় করা হতেও উত্তম, কিন্তু মাসজিদুল হারাম ব্যতীত। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪০৪), বুখারী ও মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (সাওয়াবের আশায়) সফর করা যায় না। এ মসজিদগুলো হল, মাসজিদুল হারাম, আমার এই মসজিদ এবং মাসজিদুল আকসা। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪০৯), বুখারী ও মুসলিম।
মসজিদে পায়ে হেঁটে যাতায়াত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের জামাআত শুরু হয়ে গেলে তোমরা দৌঁড়ে বা তাড়াহুড়া করে এসো না, বরং ধীরেসুস্থে হেঁটে এসো। জামাআতে যতটুকু পাও আদায় করে নাও, যতটুকু ছুটে যায় তা সালামের পরে পুরা কর। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৭৫), বুখারী ও মুসলিম। আল-হাসান ইবনু আলী আল-হাসান ইবনু আলী বর্ণনা করেন, তিনি আব্দুর রাজ্জাক হতে, তিনি মা’মার হতে, তিনি যুহরী হতে, তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হতে, তিনি আবূ হুরায়রা হতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে, আবূ সালামার সূত্রে বর্ণিত আবূ হুরায়রা’র মতোই হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি ইয়াযিদ ইবনু যুরাই-এর হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ্। ইবনু আবী ‘উমার ইবনু আবী ‘উমার বর্ণনা করেছেন সুফইয়ান হতে, তিনি যুহরী হতে, তিনি সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হতে তিনি আবূ হুরায়রা হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
মসজিদে বসা এবং নামাযের জন্য অপেক্ষা করার ফযিলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত মসজিদে নামাযের প্রতীক্ষায় থাকে, সে যেন নামাযের মধ্যেই থাকে, আর যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ মসজিদে থাকে ফেরেশতারা সে পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করতে থাকে- “আল্লাহুম্মাগফিরহু আল্লাহুম্মারহামহু।” হাদাস (ওযূ ছুটে) না যাওয়া পর্যন্ত তার জন্য দু’আ চলতে থাকে। হাযরামাওতের এক ব্যক্তি বলল, হে আবূ হুয়াইরা! হাদাস কাকে বলে? তিনি বললেন, নিঃশব্দে বা স্বশব্দে বায়ু বের হওয়া। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৭৯৯), বুখারী ও মুসলিম।
চাটাইর উপর নামায আদায় করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাটাইয়ের উপর নামায আদায় করতেন। হাসান সহীহ্। ইবনু মাজাহ, বুখারী।
মাদুরের উপর নামায আদায় করা
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদুরের উপর নামায আদায় করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০২৯), বুখারী ও মুসলিম।
বিছানার উপর নামায আদায় করা
আবূ তাইয়াহ আয্-যুবাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কপট লোকাচার বাদ দিয়ে) স্বাভাবিকভাবে আমাদের সাথে মিলেমিশে থাকতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে বলতেনঃ হে আবূ উমাইর! কোথা তোমার নুগায়ির (লাল পাখি)। রাবী বলেন, আমাদের বিছানা পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হল, তিনি তার উপর নামায আদায় করলেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৩৭২০, ৩৭৪০), বুখারী ও মুসলিম।
বাগানের মধ্যে নামায আদায় করা
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাগানের মধ্যে নামায আদায় করা পছন্দ করতেন। যঈফ, যঈফাহ (৪২৭০)।
নামাযীর সামনে অন্তরাল (সুতরা) রাখা
মূসা ইবনু তালহা (রাঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি (তালহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নিজের সামনে হাওদার খুঁটির মত কিছু রেখে দেয়, তারপর তার দিকে নামায আদায় করে তখন খুঁটির বাইরে দিয়ে কেউ চলাচল করলে কোন ভয় নেই। হাসান সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৪০)।
নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া মাকরূহ
বুসর ইবনু সা’ঈদ যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রহঃ) আবূ জুহাইমের নিকট লোক পাঠালেন। উদ্দেশ্য ছিল, নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তিনি যা শুনেছেন তা জিজ্ঞেস করা। আবূ জুহাইম (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযীর সামনে দিয়ে চলাচকারী যদি জানত তার কত বড় গুনাহ হয়, তবে সে নামাযীর সামনে দিয়ে চলাচল করা অপেক্ষা চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা নিজের জন্য ভাল মনে করত। আবূ নায্র বলেন, তিনি (আবূ জুহাইম) কি চল্লিশ দিন না চল্লিশ মাস না চল্লিশ বছরের কথা বলেছেন তা আমার মনে নেই। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৪৫), বুখারী ও মুসলিম।
নামাযীর সামনে দিয়ে কোন কিছু গেলে তাতে নামায নষ্ট হয় না
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একটি গাধীর পীঠে ফযলের পিছনে সাওয়ার ছিলাম। আমরা মিনায় পৌঁছলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবাদের নিয়ে নামাযরত অবস্থায় ছিলেন। আমরা গাধার পীঠ হতে নেমে (নামাযের) কাতারে শামিল হয়ে গেলাম। গাধীটা কাতারের সামানে দিয়ে চলে গেল। কিন্তু তাতে তাদের নামায নষ্ট হয়নি। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৯৪৭), বুখারী ও মুসলিম
কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোক ছাড়া অন্য কিছু নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামায নষ্ট হয় না
আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন বাক্তি নামায আদায় করে তখন তার সামনে হাওদার পিছনের কাঠের মত কিছু (অন্তরাল) না থাকলে কালো কুকুর, গাদা ও স্ত্রীলোক তার নামায নষ্ট করে দিবে। আমি আবু যার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, কালো কুকুর এমন কি অপরাধ করল, অথচ লাল অথবা সাদা কুকুরও তো রয়েছে? তিনি বললেন হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমিও তোমার মত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন কালো কুকুর শাইতান সমতুল্য। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৫২), মুসলিম
এক কাপড়ে নামায আদায় করা
ঊমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঊম্মূ সালামা (রাঃ)–এর ঘরে এক কাপড়ে নামায আদায় করতে দেখেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০৪৯), বুখারী ও মুসলিম।
কিবলা শুরু হওয়ার বর্ণনা
বারআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আসার পর হতে ষোল অথবা সতের মাস বাইতুল মুকাদ্দাসকে কিবলা করে নামায আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আন্তরিক বাসনা ছিল কাবার দিকে ফিরে নামায আদায় করা। তারপর মহান আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “তোমরা বারবার আকাশের দিকে মুখ করে তাকানোকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। তোমার আকাংখিত কিবলার দিকে আমরা তোমার মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছি। এখন হতে মসজিদে হারামের দিকে তোমর মুখ ফিরাও" (সূরাঃ আল-বাকারা-১৪৪)। তিনি কা’বার দিকে মুখ ফিরালেন, আর তিনি এটাই চাচ্ছিলেন। এক বাক্তি তাঁর সাথে আসরের নামায আদায়ের পর আনসার সম্প্রদায়ের একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তখন বাইতুল মুকাদ্দাসকে সামনে রেখে আসরের নামাযের রুকূর মধ্যে ছিলেন। লোকটি সাক্ষ্য দিয়ে বললেন যে, তিনি এই মাত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কাবার দিকে মুখ করে নামায আদায় করে এসেছেন। রাবী বলেন, তারা রুকূর অবস্থাই ঘুরে গেলেন। সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৫৬), ইরওয়া-(২৯০), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তারা তখন ফজরের নামাযের রুকূতে ছিলেন। সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৫৭), ইরওয়া-(২৯০), বুখারী ও মুসলিম।
পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানে কিবলা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী দিকে কিবলা অবস্থিত। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০১১)। ইয়াহহিয়া ইবনু মূসা ইয়াহহিয়া ইবনু মূসা তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবী মা’শার হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে কিবলা অবস্থিত। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
যে ব্যক্তি বৃষ্টি–বাদলের কারণে কিবলা ব্যতীত অন্যদিকে ফিরে নামায আদায় করে
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমির ইবনু রবী’আ (রাঃ) হতে তাঁর পিতার , তিনি (‘আমির) বলেন, এক অন্ধকার রাতে নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে ছিলাম। কিবলা যে কোন দিকে তা আমরা ঠিক করতে পারলাম না। আমাদের প্রত্যেকে যার যার সামনের দিকে ফিরে নামায আদায় করলাম। সকাল বেলা আমরা এ ঘটনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম। এ প্রসঙ্গে এই আয়াত অবতীর্ণ হল-“পূর্ব ও পশ্চিম সবই আল্লাহ তা’আলার। যে দিকে তুমি মুখ ফিরাবে, সেদিকেই আল্লাহ তা’আলার চেহারা বিরাজমান”-(সূরা আল-বাকারা-১১৫)। হাসান। ইবনু মাজাহ-(১০২০)।
কোথায় এবং কিসের দিকে ফিরে নামায আদায় করা মাকরুহ
ইবনু উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি জায়গায় নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেনঃ ময়লা রাখার স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উট (পশু)-শালায় এবং বাইতুল্লাহর (কাবা ঘরের) ছাদে। যঈফ, ইবনু মাজাহ(৭৪৬)। আলী ইবনু হুজুর আলী ইবনু হুজুর স্বীয় সনদে ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে উপরের হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করেছেন। যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। এ অনুচ্ছেদে আবু মারসাদ, জাবির ও আনাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনু উমারের হাদীসের সনদ খুব একটা শক্তিশালী নয়। যাইদ ইবনু জাবিরার স্মরণশক্তির সমালোচনা করা হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ যাইদ ইবনু যুবাইর আল-কুফী যাইদ ইবনু জাবিরার তুলনায় অধিক বিশস্ত ও অধিক বয়স্ক আর তিনি ইব্ন উমার হতে হাদিস শুনেছেন। লাইস ইবনু সা’দ-আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর আল-উমারির সনদ পরম্পরায় ইবনু উমারের হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। দাউদের হাদীস নাফী’ হতে তিনি ইবনু উমার হতে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনাটি লাইসের বর্ণনা চেয়ে অধিক সহিহ। কিছু হাদীস বিশারদ আল-উমারির স্মরণশক্তির সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, তার স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল। সমালোচকদের মধ্যে ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান অন্যতম।
ছাগলের ঘরে ও উটশালায় নামায আদায় করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ছাগলের ঘরে নামায আদায় করতে পার কিন্তু উটশালায় নামায আদায় করবেনা। সহীহ্। ইবনে মাজাহ-(৭৬৮)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন......উপরের হাদীসের অনুরূপ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীশালায় নামায আদায় করতেন। সহীহ্। বুখারী ও মুসলিম।
চতুস্পদ জন্তুর পিঠে থাকা কালে জন্তুটি যেদিকে মুখ করে আছে সেদিকে ফিরে নামায আদায় করা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন এক কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখি, তিনি তাঁর সওয়ারীর উপর পূর্ব দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন এবং সিজদাতে রুকূ অপেক্ষা বেশী নীচু হচ্ছেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১১২), বুখারী ও মুসলিম সিজদার কথা উল্লেখ না করে; বুখারী, কাজে পাঠানো শব্দ ব্যতীত।
জন্তুযানের দিকে ফিরে নামায আদায় করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উট বা বাহনের দিকে (বাহন সামনে রেখে) নামায আদায় করেছেন। জন্তুযান যানবাহন তাঁকে নিয়ে যেদিকে চলত সেদিকে ফিরেই (ফরয ছাড়া অন্যান্য) নামায আদায় করতেন। সহীহ্। সিফাতুস সালাত–(৫৫), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬৯১, ১১০৯), বুখারী ও মুসলিম, বিচ্ছিন্নভাবে।
রাতের খাবার উপস্থিত হওয়ার পর নামায শুরু হলে প্রথমে খাবার খেয়ে নাও
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন রাতের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং নামাযের ইকামতও দেওয়া হয়, তখন আগে খাবার খেয়ে নাও। সহীহ্। ইবনু মাজাহ –(৯৩৩), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তিনি বলেছেনঃ “যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয় এবং নামাযেরও ইকামত দেওয়া তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও। ” সহীহ্। বুখারী ও মুসলিম।
তন্দ্রা অবস্থায় নামায আদায় করা উচিত নয়
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযরত অবস্থায় তোমাদের কারও ঘুম আসলে সে যেন প্রথমে ঘুমিয়ে নেয়। তাতে তার ঘুমের আবেশ কেটে যাবে। কেননা সে যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামায আদায় করে তবে এরূপ হওয়া মোটেই অসম্ভব নয় যে, সে গুনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৩৭০), বুখারী ও মুসলিম।
কোন সম্প্রদায়ের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে গিয়ে তাদের ইমাম হওয়া উচিত নয়
আবূ আতীয়া (রহঃ) তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বলল, মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) আমাদের নামাযের জায়গায় (মসজিদে) এসে আমদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন। একদিন নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। আমরা তাঁকে বললাম সামনে যান, (ইমামতি করুন)। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ সামনে যাক। আমি সামনে না যাওয়ার কারন তোমাদের বলব। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি কোন কাওমের সাথে করতে গিয়ে সে যেন ইমামতি না করে, বরং তাদের মধ্যেরই কেউ যেন ইমামতি করে। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬০৯), মালিকের ঘটনা উল্লেখ ব্যতীত।
ইমামের কেবল নিজের জন্য দু’আ করা মাকরূহ
সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তির পক্ষেই তার ঘরের মধ্যে তাকানো জায়িয নয়। যদি সে তাকায়, তবে সে যেন বিনা অনুমতিতেই তার ঘরে ঢুকলো। কোন ব্যক্তির পক্ষেই এটা শোভনীয় নয় যে, সে লোকদের ইমামতি করে এবং তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দু’আ করে। যদি সে এমনটি করে তবে সে যেন শঠতা (বিশ্বাসভংগ) করল। প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়েও কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়। -প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়ে কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়। হাদীসের এই অংশটুকু বাদে হাদীসটি যঈফ। যঈফ আবূ দাঊদ–(১১-১২)। হাদীসের শেষ অংশ “প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বেগ নিয়েও কেউ যেন নামাযে না দাঁড়ায়।” – এই বাক্যটি সহীহ্। ইবনু মাজাহ (৬১৭)
লোকদের অসন্তোষ সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করা
হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন। তারা হলঃ যে ব্যক্তি মুক্তাদীদের অপছন্দ সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করে; যে নারী স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ব্যক্তি ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ শুনেও তাতে সাড়া দেয় না (জামা’আতে উপস্থিত হয় না)। সনদ খুবই দুর্বল আমর ইবনুল হারিস ইবনু মুস্তালিক (রহঃ) তিনি বলেন, কথিত আছে, দুই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি হবেঃ যে নারী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করে এবং কোন গোত্রের ইমাম যাকে তারা অপছন্দ করে। সনদ সহীহ্। আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন ব্যক্তির নামায তাদের কান ডিঙ্গায় না (কবূল হয় না)। পলায়নকারী দাস যে পর্যন্ত তার মালিকের নিকটে ফিরে না আসে; যে মহিলা তার স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ইমামকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না। হাসান। মিশকাত–(১১২২)।
ইমাম যখন বসে নামায আদায় করে তখন তোমরাও বসে নামায আদায় কর
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার পিঠ হতে পড়ে গিয়ে আহত হলেন। তিনি বসে বসে আমাদের নামায আদায় করালেন, আমরাও তাঁর সাথে বসে বসে নামায আদায় করলাম। নামায হতে ফিরে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্যই নিযুক্ত করা হয় যাতে তার অনুসরণ করা হয়। যখন সে আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন সে রুকূতে যাবে তোমরাও রুকূতে যাবে; যখন সে মাথা তুলবে তোমরাও মাথা তুলবে; যখন সে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে তোমরা তখন ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বল; যখন তিনি সাজদাহ্তে যান তোমরাও সিজদায় যাও; যখন তিনি বসে নামায আদায় করেন তোমরাও সবাই বসে নামায আদায় কর। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১২৩৮), বুখারী ও মুসলিম।
একই বিষয় সম্পর্কে
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন ঐ রোগে তিনি আবূ বাকার (রাঃ)–এর পিছনে বসে বসে নামায আদায় করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২৩২), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগাক্রান্ত অবস্থায় এক কাপড় পরে আবূ বাকার (রাঃ)-এর পিছনে বসে বসে নামায আদায় করেছেন। সহীহ। তা’লীকাত হাস্সান-(৩/২৮৩/২১২২)।
ইমাম যদি দু’রাক’আত আদায় করে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়
শাবী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) আমাদের নামায আদায় করালেন। তিনি দ্বিতীয় রাকআতে (ভুলে) দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ তাঁকে শুনিয়ে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল। তিনিও তাদের সাথে সুবহানাল্লাহ বললেন। নামায শেষ করে তিনি সালাম ফিরালেন তারপর তিনি বসা অবস্থায় সাহু (ভুলের) সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর তাদেরকে বললেন, (নামাযে ভুল হওয়ায়) তিনি (মুগীরা) যেরূপ করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিয়ে ঠিক এরূপই করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ–(১২০৮)। যিয়াদ ইবনু ইলাক্বা (রহঃ) তিনি বলেন, একদা মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) আমাদের নামায আদায় করালেন। তিনি দুই রাক’আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর পিছনের লোকেরা তাঁকে শুনিয়ে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল। তিনি তাদেরকে ইশারায় বললেন, দাঁড়িয়ে যাও। নামায শেষ করে তিনি সালাম ফিরালেন, তারপর দুটি ভুলের সাজদাহ্ করলেন এবং আবার সালাম ফিরালেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনটিই করেছেন। সহীহ। দেখুন পূর্বের হাদীস।
প্রথম দুই রাক’আতের পর বসার পরিমাণ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রথম দুই রাক’আত আদায় করার পর বসতেন, তখন মনে হত যেন গরম পাথরের উপর বসেছেন (অল্প সময় বসতেন)। শুবা বলেন, সা’দ কিছু বলে ঠোঁট নাড়ছিলেন [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু পাঠ করতেন]। আমি তখন বললাম, তারপর তিনি উঠে যেতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ তিনি তারপর উঠে যেতেন। যঈফ, মিশকাত (৯১৫), যঈফ আবূ দাঊদ (১৭৭)
নামাযের মধ্যে ইশারা করা
সুহাইব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি তখন নামাযে ছিলেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি ইশারায় আমার সালামের জবাব দিলেন। সহীহ। সহীহ আবু দাউদ-(৮৫৮)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, বিলালকে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে থাকতেন তখন তাকে সাহাবাগণ সালাম দিলে তিনি কিভাবে জবাব দিতেন? তিনি বলেন, তিনি হাত দিয়ে ইশারা করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১০১৭)।
পুরুষদের সুবহানাল্লাহ বলা ও নারীদের হাততালি দেয়া
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (ইমাম যখন নামাযে ভুল করে তাকে সতর্ক করার জন্য) পুরুষ মুক্তাদীগণ সুবহানাল্লাহ বলবে এবং স্ত্রীলোকেরা ‘হাততালি’ দিবে। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১০৩৪-১০৩৬), বুখারী ও মুসলিম।
নামাযের মধ্যে হাই তোলা মাকরূহ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নামাযের মধ্যে হাই তোলা শাইতানের তরফ হতে হয়ে থাকে। তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন তা ফিরাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। সহীহ। য’ঈফা-(২৪২০), মুসলিম।
বসে নামায আদায় করলে দাড়িয়ে আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কোন ব্যক্তির বসে বসে নামায আদায় করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি দাড়িয়ে (নফল) নামায আদায় করে সেটাই উত্তম। যে ব্যক্তি বসে নামায আদায় করে তার জন্য দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক নেকী রয়েছে। আর যে ব্যক্তি ঘুমে অসাড় অবস্থায় বা শুয়ে নামায আদায় করে তার জন্য বসে বসে নামায আদায়কারীর অর্ধেক নেকী রয়েছে। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১২৩১), বুখারী। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অসুস্থ ব্যক্তির নামায আদায় করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ দাড়িয়ে নামায আদায় কর; যদি দাড়িয়ে আদায় করতে সক্ষম না হও তবে বসে নামায আদায় কর; যদি বসে নামায আদায় করতে সক্ষম না হও তবে (শুয়ে) কাত হয়ে নামায আদায় কর। সহীহ্। ইরওয়া-(২৯৯), বুখারী।
নফল নামায বসে আদায় করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের এক বছর পূর্ব পর্যন্ত আমি তাকে বসে বসে নফল নামায আদায় করতে দেখিনি। তারপর তিনি বসে বসে নফল নামায আদায় করতেন এবং সূরাসমূহ শান্ত-স্থিরভাবে থেমে থেমে পাঠ করতেন। এতে তা দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হত। সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৬০), মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে নামায আদায় করলে কিরা’আতও বসে পাঠ করতেন। তার কিরাআতের তিরিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকি থাকতে তিনি উঠে দাড়িয়ে তা পাঠ করতেন, তারপর রুকূ-সাজদাহ করতেন। দ্বিতীয় রাকআতেও তিনি অনুরূপ করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১২২৬), বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক হতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি তাকে (‘আয়িশাহ্কে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নফল নামায আদায় করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তিনি কখনও দীর্ঘ রাত পর্যন্ত দাড়িয়ে নামায আদায় করতেন, আবার কখনও দীর্ঘ রাত ধরে বসে নামায আদায় করতেন। তিনি যখন দাড়িয়ে কিরা’আত পাঠ করতেন, তখন রুকূ-সাজদাহও দাড়ানো অবস্থায় করতেন। তিনি বসে কিরা’আত পাঠ করলে রুকূ-সাজদাহও বসে করতেন সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১২২৮), মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ আমি শিশুদের কান্না শুনলে নামায সংক্ষেপ করি
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি নামাযের মধ্যে বাচ্চার কান্না শুনতে পেলে তার মায়ের ব্যাকুল হওয়ার সম্ভাবনায় আমি নামায সংক্ষেপ করি। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(৯৮৯), বুখারী ও মুসলিম।
দোপাট্টা পরিধান ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কার নামায ক্ববূল হয় না
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ওড়না ব্যতিত প্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদের নামায ক্ববূল হয় না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৬৫৫)।
নামাযের মধ্যে সাদল করা (কাঁধের উপর কাপর লটকে রাখা) মাকরুহ
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযের মধ্যে সাদল করতে (কাপড় ঝুলিয়ে দিতে) নিষেধ করেছেন। এ অনুচ্ছেদে আবূ জুহাইফা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাসান। মিশকাত-(৭৬৪), তা’লীক ‘আলা ইবনু খুজাইমাহ-(৯১৮), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬৫০)।
নামাযের মধ্যে পাথর-টুকরা অপসারণ করা মাকরূহ
আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সামনের কাঁকর না মুছে। কেননা তখন ‘রাহমাত’ তার সামনে থাকে। যঈফ, ইবনূ মাজাহ (১০২৭) মু’আইক্বীব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নামাযের মধ্যে কাঁকর সরানো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তা সরানো খুবই দরকার হয় তবে একবার মাত্র সরাবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১০২৬)।
নামাযের মধ্যে (মাটিতে) ফুঁ দেওয়া মাকরূহ
উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আফলাহ নামের যুবককে দেখলেন, সে যখন সিজদায় যায় তখন ফুঁ দিয়ে ধুলা সরায়। তিনি বললেনঃ হে আফলাহ! তোমার চেহারায় ধুলা বালি লাগাও। যঈফ, তালীকুর রাগীব (১/১৯৩), মিশকাত (১০০২), যঈফাহ (৫৪৮৫)। আহমাদ ইবনু আবদা আয-যাব্বী আহমাদ ইবনু আবদা আয-যাব্বী হতে, তিনি হাম্মাদ ইবনু যাইদ হতে, তিনি মাইমূন হতে….. উক্ত সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনায় গোলামের নাম রাবাহ উল্লেখিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ উম্মু সালামার হাদীসের সনদ তেমন একটা সুবিধাজনক নয়। মাইমুন-আবূ হামাযাকে কিছু বিশেষজ্ঞ দুর্বল বলেছেন। নামাযের মধ্যে ফুঁ দেয়া প্রসঙ্গে আলিমদের মধ্যে মতের অমিল আছে। একদল বলেছেন, নামাযের মধ্যে ফুঁ দিলে আবার নামায আদায় করতে হবে। সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসীগণ এ মত ব্যক্ত করেছেন। অপরদল বলেছেন, এটা মাকরূহ, তবে এতে নামায নষ্ট হবে না। আহমাদ ও ইসহাক এ কথা বলেছেন।
নামাযের মধ্যে কোমরে হাত রাখা নিষেধ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কোন ব্যক্তিকে কোমরে হাত রেখে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ্। সিফাতুস সালাত-(৬৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৮৭৩), রাওয-(১১৫২), ইরওয়া-(৩৭৪), বুখারী ও মুসলিম।
চুল বেঁধে নামায আদায় করা মাকরূহ
আবূ রাফি (রাঃ) তিনি হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি নামায আদায় করছিলেন। তাঁর চুল ঘাড়ের নিকট বাঁধা ছিল। তিনি (আবূ রাফি) তা খুলে দিলেন। এতে হাসান (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি (আবূ রাফি) বললেন, নামাযে মনোনিবেশ কর, রাগ কর না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, এটা (নামাযে চুল বাঁধা) শাইতানের অংশ। হাসান। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৬৫৩)।
নামাযে বিনয় হওয়া
ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামায দুই দুই রাক’আত; প্রতি দুই রাক’আত পর তাশাহ্হুদ পাঠ করতে হবে; নামাযী কে বিনয়ী হতে হবে, মিনতির সাথে প্রার্থনা করতে হবে; কপর্দকহীন হতে হবে। কোন কিছুকে ওয়াসীলা করে চাইতে হবে। এ অবস্থায় তোমার প্রতিপালকের দরবারে নিজের দু’হাত তুলবে, হাতের তালু তোমার চেহারার দিকে থাকবে, তারপর বলবে, হে প্রভু, হে প্রতিপালক। যে ব্যক্তি এমনটি না করবে তার নামায এরূপ এবং এরূপ হবে। যঈফ, ইবনু মাজাহ(১৩২৫)।
নামাযের মধ্যে উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢোকানো মাকরূহ
কা’ব ইবনু উযরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ ভালভাবে ওযূ করে নামায আদায়ের নিয়্যাতে মসজিদের দিকে যেতে থাকে তখন সে যেন নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ না করায়। কেননা সে তখন নামাযের মধ্যেই আছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(৯৭৬)।
নামাযে দীর্ঘ কিয়াম করা (দাঁড়ানো)
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, কোন্ ধরনের নামায উত্তম? তিনি বললেনঃ যে নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো হয়। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪২১), মুসলিম।
অধিক পরিমাণে রুকু-সাজদাহ্ করার (নামায আদায় করা) ফাযিলাত
মা’দান ইবনু আবূ তালহা আল-ইয়ামারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত দাস সাওবান (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা আমাকে উপকৃত করবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমার প্রশ্নে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি অবশ্যই বেশি বেশি সাজদাহ্ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন বান্দাহ আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর জন্য একটি সাজদাহ্ করে, আল্লাহ তা’আলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪২৩), মুসলিম। মা’দান অতঃপর আমি আবূ দারদা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকেও সাওবানের নিকট যে প্রশ্ন করেছিলাম তাই করলাম। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই সাজদাহ্ করতে থাক। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন ব্যক্তিই আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁকে একটি সাজদাহ্ করে, আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সহীহ্। দেখুন পূর্বের হাদীস।
নামাযে থাকা অবস্থায় সাপ, বিছা হত্যা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে থাকা অবস্থায়ও দুটি কালো প্রাণী অর্থাৎ সাপ এবং বিছা হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২৪৫)।
সালাম ফিরানোর পূর্বে সাহুসাজদাহ্ করা
আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনা আল-আসাদী (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের নামাযে (দ্বিতীয় রাক’আতে) বসার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে গেলেন। নামায শেষ করার পর সালাম ফিরানোর আগে তিনি বসা অবস্থায় তাকবীরসহকারে দুটি সাজদাহ্ করলেন। তার সাথের লোকেরাও সাজদাহ্ করলো। ভুলে বর্জিত বসার পরিবর্তে এ সাজদাহ্। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২০৬, ১২০৭), বুখারী ও মুসলিম।
সালাম ও কথাবার্তা বলার পর সাহুসাজদাহ্ করা
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের নামায পাঁচ রাক’আত আদায় করলেন। তাঁকে বলা হল, নামায কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? ফলে সালাম ফিরানোর পর তিনি দুটি সাজদাহ্ করলেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২০৫, ১২১১, ১২১২, ১২১৮), বুখারি ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাবার্তা বলার পর সাহুসিজদা করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২১২)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুলের সাজদাহ্, দুটো সালাম ফিরানোর পর করেছেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২১৪), বুখারী ও মুসলিমে বিস্তারিত।
ভুলের সিজদার পর তাশাহ্হুদ পাঠ করা
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নামায আদায় করালেন। তিনি ভুল করলেন, তারপর দুটি সিজদা করলেন, তারপর তাশাহ্হুদ পাঠ করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তাশাহ্হুদের উল্লেখ সহ বর্ণনাটি শাজ, ইরওয়া (৪০৩), যঈফ আবূ দাঊদ (১৯৩), মিশকাত (১০১৯)
যে ব্যক্তি নামাযে কম অথবা বেশি আদায় করার সন্দেহে পরে যায়
‘ইয়ায ইবনু হিলাল (রঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আমাদের কেউ নামায আদায় করল কিন্তু তার মনে নেই সে কত রাক’আত আদায় করল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামায আদায় করে, কিন্তু বলতে পারছে না সে কত রাক’আত আদায় করল, সে বসা অবস্থায়ই দুটি সাজদাহ্ করবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২০৪), মুসলিম অনুরূপ আরো পূর্ণভাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো নামাযের সময় শাইত্বান উপস্থিত হয়ে তার নামাযের মধ্যে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। এমনকি সে (কোন কোন সময়) বলতে পারে না যে, সে কত রাক’আত আদায় করেছে। তোমাদের কেউ এরূপ অবস্থায় পরলে সে যেন বসা অবস্থায়ই দুটি সাজদাহ্ করে। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৯৪৩-৯৪৫), বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন তার নামাযে ভুল করে তারপর সে বলতে পারছে না সে কি এক রাক’আত আদায় করেছে না দুই রাক’আত আদায় করেছে, এমতাবস্থায় সে এক রাক’আতের উপরই ভিত্তি করবে। সে কি দুই রাক’আত আদায় করেছে না তিন রাক’আত-তা ঠিক করতে না পারলে দুই রাক’আতকেই ভিত্তি ধরবে। সে তিন রাক’আত আদায় করেছে না চার রাক’আত-তা ঠিক করতে না পারলে তিন রাক’আতকেই ভিত্তি ধরবে এবং সালাম ফিরানোর আগে দুটি সাজদাহ্ করবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২০৯)।
যে ব্যক্তি যুহর বা ‘আসরের দুই রাক’আত আদায় করে সালাম ফিরায়
আবূ হুরায়রা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই রাক’আত নামায আদায় করে সালাম ফিরালেন। যুল-ইয়াদাইন (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! নামায কি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (লোকদের) প্রশ্ন করলেনঃ যুল-ইয়াদাইন কি ঠিক বলছে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন, বাকী দুই রাক’আত আদায় করালেন, তারপর সালাম ফিরালেন, তারপর তাকবীর বললেন, এবং আগের সাজদাহ্র সমান অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সময় সাজদাহ্য় থাকলেন, তারপর তাকবীর বলে মাথা তুললেন। তিনি আবার সাজদাহ্য় গিয়ে আগের সাজদাহ্র সমান অথবা তার চেয়ে বেশি সময় সাজদাহ্য় কাটালেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২১৪), বুখারী ও মুসলিম।
জুতা পরে নামায আদায় করা
সা’ঈদ ইবনু ইয়াযীদ আবূ মাসলামা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি জুতা পরে নামায আদায় করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সহীহ্। সিফাতুস সালাত মূল, বুখারী ও মুসলিম।
ফযরের নামাযে দু’আ কুনূত পাঠ করা
বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযর ও মাগরিবের নামাযে দু’আ কুনূত পাঠ করতেন। সহীহ্৷ মুসলিম।
কুনূত ছেড়ে দেয়া
আবূ মালিক আল-আশজা’ঈ (রঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, আব্বাজান! আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন এবং এই কুফা শহরে প্রায় পাঁচ বছর যাবত ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর পিছনে নামায আদায় করেছেন। তাঁরা কি কুনূত পাঠ করতেন? তিনি উত্তর দিলেন, হে বৎস! এটা তো বিদ’আত। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১২৪১)। আবূ মালিক আল-আশজাঈ সালিহ ইবনু আব্দুল্লাহ আবূ ‘আওয়ানার সূত্রে আবূ মালিক আল-আশজাঈ হতে উপরিউক্ত সনদে হাদীসটি ঐরূপ অর্থেই বর্ণনা করেছেন।
নামাযের মধ্যে হাঁচি দেয়া প্রসঙ্গে
রিফা’আ ইবনু রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে নামায আদায় করছিলাম। হঠাৎ আমার হাঁচি বের হল। আমি বললাম, “আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবান মুবারাকান ফীহে মুবারাকান ‘আলাইহি কামা ইউহিব্বু রব্বুনা ওয়া ইয়ারদা।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায শেষ করে ফিরে বসলেন তখন প্রশ্ন করলেনঃ নামাযের মধ্যে কে কথা বলেছে? কেউ কোন সাড়া শব্দ করল না। তিনি দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলেনঃ নামাযের মধ্যে কে কথা বলেছে? এবারও কেউ কোন কথা বলল না। তিনি তৃতীয় বার প্রশ্ন করলেনঃ নামাযের মধ্যে কে কথা বলেছে? (রাবী) রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ ইবনু আফরাআ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কথা বলেছি। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কিভাবে বললে? রাবী বলেন, আমি বলেছি, “আল্লাহর জন্য অশেষ প্রশংসা, পবিত্রময় প্রশংসা, বারকাতময় প্রশংসা (এবং প্রশংসাকারীর জন্য) বারকাতময় প্রশংসা যা আমাদের প্রতিপালক ভালবাসেন ও পছন্দ করেন।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ, আমি দেখেছি তিরিশের বেশি ফেরেশতা তাড়াহুড়া করছে কে কার আগে এটা নিয়ে উপরে উঠবে। হাসান। সহীহ্ আবূ দাঊদ-৭৪৭, মিশকাত-(৯৯২)।
তাওবা করার সময় নামায আদায় করা
আসমা ইবনু হাকাম আল-ফাযারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি এমন এক ব্যক্তি ছিলাম যখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন হাদীস শুনতাম, আল্লাহ তা’আলা যতটুকু চাইতেন আমি তা হতে ফায়দা উঠাতাম। যখন তাঁর কোন সাহাবী আমার নিকট হাদীস বলতেন আমি তাঁকে শপথ করাতাম। সে যখন শপথ করে বলত আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। আবূ বকর (রাঃ) আমাকেও হাদীস বলেছেন, আর তিনি সত্যিই বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন ব্যক্তি যদি গুনাহ করে ফেলে, তারপর উঠে পবিত্রতা অর্জন করে কিছু নামায আদায় করে আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “যাদের অবস্থা এরূপ যে, তাদের দ্বারা যদি কোন অশ্লীল কাজ সংঘটিত হয় অথবা তারা কোন গুনাহ করে নিজেদের উপর যুলুম করে বসে, তবে সংগে সংগেই তারা তারা আল্লাহ তা’আলার কথা মনে করে এবং তাদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া গুনাহ মাফ করতে পারে এমন কে আছে? এ লোকেরা জেনে বুঝে নিজেদের অন্যায় কাজ বারবার করে না”-(সূরাঃ আলে ইমরান-১৩৫)। হাসান, ইবনু মাজাহ-(১৩৯৫)।
বালকদের কখন হতে নামায আদায়ের নির্দেশ দিতে হবে
সাবরা ইবনু মা’বাদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাত বছর বয়সে বালকদের নামায শিখাও এবং দশ বছরে পৌঁছলে নামায আদায়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাসান সহীহ্। মিশকাত-(৫৭২, ৫৭৩), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(২৪৭), ইরওয়া-(২৪৭), তা’লীক আলা ইবনু খুজাইমাহ-(১০০২)।
তাশাহ্হুদ পাঠের পর ওযূ ভঙ্গ হলে
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি নামাযের শেষে (তাশাহ্হুদের জন্য) বসে সালাম ফিরানোর পূর্বে বাতকর্ম করে তবে তার নামায জায়িয হবে (নতুন করে আদায় করতে হবে না)। যঈফ, আবূ দাঊদ (২৬, ১৮১)
বৃষ্টির সময় ঘরে নামায আদায় করা প্রসঙ্গে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আমাদেরকে বৃষ্টিতে পেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার ইচ্ছা নিজের হাওদার মধ্যে নামায আদায় করে নিতে পারে। সহীহ্। ইরওয়া-(২/৩৪০, ৩৪১), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৯৭৬)।
নামাযের পর তাসবীহ পাঠ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বিলেন, গরীব সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এলেন। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! ধনীরা আমাদের মত নামায আদায় করে এবং রোযা রাখে। তাদের সম্পদ আছে, তারা দাস আযাদ করতে পারে এবং দান-খয়রাত করতে পারে। তিনি বললেনঃ যখন তোমরা নামায আদায় করবে তখন (নামায শেষে) তেত্রিশ বার “সুবহানাল্লাহ” তেত্রিশবার “আলহামদু লিল্লাহ”, চৌত্রিশবার “আল্লাহু আকবার” এবং দশবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করবে। যারা (সাওয়াবের ক্ষেত্রে) তোমাদেরকে ছাড়িয়ে গেছে এর দ্বারা তোমরা তাদেরকে ধরে ফেলতে পারবে। আর যারা তোমাদের পিছে পড়ে আছে তারা তোমাদেরকে ধরতে পারবে না। সনদ দুর্বল, তালীকুর রাগীব (২/২৬০), তাহলীলের অংশটুকু মুনকার।
বৃষ্টি ও কাদার কারণে পশুর (যানবাহনে) উপর নামায আদায় প্রসঙ্গে
‘আমর ইবনু ‘উসমান ইবনু ইয়ালা ইবনু মুররাহ (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার একবার তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে ছিলেন। তারা একটি সংকীর্ণ স্থান গিয়ে পৌঁছালো। নামাযের ওয়াক্ত এসে গেল। উপর থেকে আকাশ বৃষ্টিবর্ষণ করছিল এবং নীচে ছিল কর্দমাক্ত মাটি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্তুযান থেকে আযান দিলেন এবং ইক্বামাত বললেন অথবা শুধু ইক্বামাত দিলেন। তিনি আপন সওয়ারীসহ সামনে আগালেন এবং তাদের নামায আদায় করালেন। তিনি ইশারায় রুকূ’ সিজদা করলেন এবং রুকূ’র চেয়ে সিজদায় বেশি ঝুঁকলেন। সনদ দুর্বল
নামাযে কষ্ট স্বীকার করা
মুগীরা ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত সময় ধরে নামায আদায় করলেন যে, তাঁর পা দুটি ফুলে উঠল। তাঁকে বলা হল, আপনি এতো কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হব না। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪১৯, ১৪২০), বুখারী ও মুসলিম।
কিয়ামাতের দিন বান্দার নিকট হতে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে
হুরাইস ইবনু ক্বাবীসা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাদীনায় আসলাম এবং বললাম, “হে আল্লাহ! আমাকে একজন নেককার সহযোগী দান কর”। রাবী বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট অবস্থান করলাম। আমি (তাঁকে) বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট একজন উত্তম সহযোগী চাইলাম। অতএব আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন এমন একটি হাদীস আমাকে বলুন। আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা আমাকে এর মাধ্যমে কল্যাণ দিবেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ক্বিয়ামাতের দিন বান্দার কাজসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। যদি (নিয়মিতভাবে) ঠিকমত নামায আদায় করা হয়ে থাকে তবে সে নাজাত পাবে এবং সফলকাম হবে। যদি নামায নষ্ট হয়ে থাকে তবে সে ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত হবে। যদি ফরয নামাযের মধ্যে কিছু কমতি হয়ে থাকে তবে মহান আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ দেখ, বান্দার কোন নফল নামায আছে কি না। থাকলে তা দিয়ে ফরযের এ ঘাটতি পূরণ করা হবে। তারপর সকল কাজের বিচার পালাক্রমে এভাবে করা হবে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৪২৫, ১৪২৬)।
যে ব্যক্তি দৈনিক বার রাকা’আত সুন্নাত নামায আদায় করে তার ফযিলত
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সবসময় বার রাক’আত সুন্নাত নামায আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করেন। এ সুন্নাতগুলো হল, যুহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাক’আত ও পরে দুই রাক’আত, মাগরিবের (ফরযের) পর দুই রাক’আত, ‘ইশার (ফরযের) পর দুই রাক’আত এবং ফযরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাক’আত। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১১৪০)। উম্মু হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিন রাতে বার রাক’আত নামায আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। যুহরের নামাযের পূর্বে চার রাক’আত ও পরে দুই রাক’আত, মাগরিবের নামাযের পরে দুই রাক’আত, ‘ইশার নামাযের পরে দুই রাক’আত এবং ভোরের ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাক’আত। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১১৪১)।
ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাতের ফাজিলাত
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফজরের দুই রাক’আত (সুন্নাত) নামায দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম। সহীহ্। ইরওয়া-(৪৩৭), মুসলিম।
ফজরের সুন্নাত এবং তার কিরা’আত সংক্ষিপ্ত করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক মাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পর্যবেক্ষণ করলাম। তিনি ফজরের (ফরযের) পূর্বের দুই রাক’আতে সূরা ‘কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন’ ও কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতেন। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১১৪৯)।
ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত আদায়ের পর কথাবার্তা বলা
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত আদায় করতেন, তারপর আমার সাথে কথা বলার দরকার হলে কথা বলতেন, নতুবা নামাযের জন্য মসজিদে চলে যেতেন। সহীহ্। সহীহ আবূ দাঊদ-(১১৪৭, ১১৪৮), বুখারী ও মুসলিম।
ফজর শুরু হওয়ার পর দুই রাক’আত সুন্নাত ব্যতীত আর কোন নামায নেই
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর দুই রাক’আত (সুন্নাত) নামায ব্যতীত আর কোন নামায নেই। উল্লেখিত হাদীসের অর্থ হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত নামায ছাড়া ফজরের ফরয নামাযের আগে সুবহি সাদিক শুরু হওয়ার পর আর কোন নামায নেই। সহীহ্। ইরওয়া-(৪৭৮)। সহীহ আবূ দাঊদ-(১১৫৯)।
ফজরের সুন্নাত আদায়ের পর শোয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত আদায় করে তখন সে যেন ডান কাতে একটু শুয়ে নেয়। সহীহ্। মিশকাত-(১২০৬), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১৪৬)।
ইক্বামাত হয়ে গেলে ফরয নামায ছাড়া অন্য নামায নেই
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন নামাযের জন্য ইকামাত দেওয়া হয় তখন ফরয নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১১৫১), মুসলিম।
ফজরের সুন্নাত ফরযের আগে আদায় করতে না পারলে ফরয নামায আদায়ের পর তা আদায় করবে
মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম হতে তাঁর দাদা ক্কাইস (রাঃ) তিনি (ক্কাইস) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নিজের ঘর হতে) বেরিয়ে আসলেন, অতঃপর নামাযের ইক্কামাত দেওয়া হল। আমি তাঁর সাথে নামায আদায় করলাম। নামায হতে অবসর হয়ে তিনি আমাকে নামাযরত অবস্থায় দেখলেন। তিনি বললেনঃ হে ক্কাইস, থামো! তুমি কি দুই নামায একত্রে আদায় করছ? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ফজরের দুই রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করতে পারিনি। তিনি বললেনঃ তাহলে কোন দোষ নেই (পড়ে নাও)। সহীহ। ইবনু মাজাহ-(১১৫১)
ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত ফরযের পূর্বে আদায় করতে না পারলে তা সূর্য উঠার পর আদায় করবে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত (ফরযের পুর্বে) আদায় করতে পারেনি সে সূর্য উঠার পর তা আদায় করবে। সহীহ্। সহীহাহ্-(২৩৬১)
যুহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাক’আত সুন্নাত
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের (ফরয) নামাযের পূর্বে চার রাক’আত এবং পরে দুই রাক’আত (সুন্নাত নামায) আদায় করতেন। সহীহ্ ইবনু মাজাহ-(১১৬১)।
যুহরের ফরয নামাযের পর দুই রাক’আত সুন্নাত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুহরের (ফরয) নামাযের পূর্বে দুই রাক’আত এবং পরে দুই রাক’আত সুন্নাত আদায় করেছি। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১৩৮), বুখারী আরো পূর্ণভাবে।
পূর্ববর্তী বিষয়ের উপর
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি যুহরের পূর্বে চার রাক’আত না আদায় করতেন তবে যুহরের (ফরযের) পর তা আদায় করতেন। সহীহ্। তামামুল মিন্নাহ্। যঈফা-(৪২০৮)। উম্মু হাবীবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যুহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাক’আত এবং পরে চার রাক’আত নামায আদায় করবে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১১৬০)। ‘আনবাসা ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বোন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি যুহরের (ফরযের) পূর্বে চার রাক’আত এবং পরে চার রাক’আত নামাযের হিফাজাত করবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। সহীহ্। প্রাগুক্ত।
আসরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাক’আত
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাক’আত নামায আদায় করতেন। তিনি (আল্লাহর) নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতা ও তাদের অনুগামী মুসলমান এবং মু’মিনদের প্রতি সালাম করার মাধ্যমে এ নামাযের মাঝখানে বিভক্তি করতেন (দুই সালামে চার রাক’আত আদায় করতেন)। হাসান। ইবনু মাজাহ-(১১৬১), এটা পূর্বে বর্ণিত ৪২৫ নং হাদীসের বাকী অংশ। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ‘আসরের পূর্বে চার রাক’আত নামায আদায় করবে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অনুগ্রহ করুন। হাসান। মিশকাত-(১১৭০), সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১৫৪), তা’লীকুর রাগীব-(১/২০৪), তা’লীক আলা ইবনু খুজাইমাহ-(১১৯৩)।
মাগরিবের দুই রাক’আত সুন্নাত এবং তার কিরা’আত
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের পরের দুই রাক’আতে এবং ফজরের পূর্বের দুই রাক’আতে "কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন" এবং "কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ" সূরা দুটি এত সংখ্যকবার পাঠ করতে শুনেছি যে, তা গণনা করে শেষ করতে পারব না। এ অনুচ্ছেদে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১১৬৬)।
মাগরিবের (সুন্নাত) দুই রাক’আত বাসায় আদায় করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর বাসায় মাগরিবের পর দুই রাক’আত সুন্নাত নামায আদায় করেছি। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১১৫৮), বুখারী। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে দশ রাক’আত নামায মুখস্থ রেখেছি। তিনি দিনরাত (চব্বিশ ঘণ্টায়) এ নামাযগুলো আদায় করতেন। যুহরের পূর্বে দুই রাক’আত এবং পরে দুই রাক’আত, মাগরিবের পরে দুই রাক’আত এবং ‘ইশার পর দুই রাক’আত। রাবী বলেন হাফসাহ্ আমাকে বলেছেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ) ফজরের পূর্বেও দুই রাক’আত আদায় করতেন। সহীহ্। ইরওয়া-(৪৪০), বুখারী। ইবনু ‘উমার (রাঃ) সারিম হতে ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে........ একই হাদীস পুনর্বার বর্ণিত হয়েছে।
মাগরিবের পর ছয় রাক’আত নফল নামায আদায়ের ফাযীলাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মাগরিবের পর ছয় রাক’আত নামায আদায় করলে এবং তার মাঝখানে কোন অশালীন কথা না বললে তাঁকে এর বিনিময়ে বার বছরের ইবাদাতের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। অত্যন্ত দুর্বল, ইবনু মাজাহ (১১৬৭)।
‘ইশার নামাযের পর দুই রাক’আত সুন্নাত
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাকীক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামায প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ) যুহরের পূর্বে দুই রাক’আত এবং পরে দুই রাক’আত, মাগরিবের পর দুই রাক’আত, ‘ইশার পর দুই রাক’আত এবং ফজরের পূর্বে দুই রাক’আত নামায আদায় করতেন। সহীহ। মুসলিম।
রাতের (নফল) নামায দুই দুই রাক’আত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতের নামায দুই দুই রাক’আত (করে আদায় করতে হয়)। তুমি যদি ভোর হয়ে যাওয়ার ভয় কর তবে এক রাক’আত করে বিতর পূর্ণ করে নাও। বিতর নামাযকেই তোমার সর্বশেষ নামায কর। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৩১৯, ১৩২০), বুখারী ও মুসলিম।
রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাযের ফযিলত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রামাযান মাসের রোযার পর সর্বোৎকৃষ্ট রোযা হল আল্লাহ তা’আলার মাস মুহাররামের রোযা। ফরয নামাযের পর সর্বোৎকৃষ্ট নামায হল রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৭৪২), মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের নামাযের বৈশিষ্ট্য
আবূ সালামা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, রামাযান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামাজের বৈশিষ্ট্য কি বা ধরন কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে ও অন্যান্য সময়ে (রাতের বেলা) এগার রাক’আত নামাযের বেশি আদায় করতেন না। তিনি চার রাক’আত করে মোট আট রাক’আত আদায় করতেন। এর সৌন্দর্য এবং দৈর্ঘ্য সম্পর্কে তুমি আমাকে আর প্রশ্ন কর না। অতঃপর তিনি তিন রাক’আত নামায আদায় করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর আদায়ের পূর্বে ঘুমান? তিনি বললেন. হে ‘আয়িশাহ্! আমার চক্ষু দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না। সহীহ্। সালাতুত্ তারাবীহ্, সহীহ্ আবু দাঊদ-(১২১২), বুখারী ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা এগার রাক’আত নামায আদায় করতেন। তার মধ্যে এক রাক’আত বিতর আদায় করে নিতেন। তিনি নামায শেষে অবসর হয়ে ডান কাতে শুয়ে যেতেন। সহীহ্। এই হাদীসে শুবার বর্ণনাটি সাজ, সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১২০৬)। সঠিক কথা হচ্ছে- শুবার বর্ণনা ফজরের সুন্নাতের পরে-বুখারী। ইবনু শিহাব কুতাইবা মালিকের সূত্রে ইবনু শিহাব হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
একই বিষয়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা তের রাক’আত নামায আদায় করতেন। সহীহ্। সহীহ্ আবু দাঊদ-(১২০৫), বুখারী ও মুসলিম আরো পূর্ণরূপে।
একই বিষয়
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের বেলা নয় রাক’আত নামায আদায় করতেন। সহীহ্। সহীহ্ আবু দাঊদ-(১২১৩), মুসলিম আরো পূর্ণরূপে। সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) সুফিয়ান সাওরী আ’মাশের বরাতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যদি রাতে নামায আদায় না করেই ঘুমিয়ে যেতেন তবে তা দিনে আদায় করতেন
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি বেশি ঘুম অথবা তন্দ্রার কারণে রাতের নামায আদায় করতে সক্ষম না হতেন, তবে দিনের বেলা বার রাক’আত আদায় করে নিতেন। সহীহ্। মুসলিম।
প্রতি রাতে প্রাচুর্যময় আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর প্রতি রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমিই রাজাধিরাজ। আমার নিকট প্রার্থনাকারী কে আছে, আমি তার প্রার্থনা কবুল করব। আমার নিকট আবেদনকারী কে আছে, আমি তার আবেদন পূর্ণ করব। কবুল করব। আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কে আছে, আমি তাকে ক্ষমা করব। সকাল আলোকিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের এভাবে আহবান করতে থাকেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ-(১৩৬৬), বুখারী ও মুসলিম।
রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাযের কিরা’আত
আবূ কাতাদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকার (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি আপনার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আপনি নামায আদায় করছিলেন এবং আপনার কন্ঠস্বর খুব নীচু ছিল। তিনি (আবূ বাকর) বললেন, আমি তাঁকে শুনাচ্ছিলাম যিনি আমার কানকথাও জানেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বল্লেনঃ কিছুটা উচ্চস্বরে পাঠ করুন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) ‘উমার (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি আপনার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আপনি নামায আদায় করছিলেন এবং আপনার কন্ঠস্বর খুব উঁচু ছিল। তিনি (‘উমার) বললেন, আমি অলসদের জাগরিত করছিলাম এবং শাইতানকে তাড়াচ্ছিলাম। তিনি বললেন, আপনার কন্ঠস্বর কিছুটা নীচু করুন। সহীহ্। সহীহ্ আবু দাঊদ-(১২০০), মিশকাত-(১২০৪)। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করেই রাত কাটিয়ে দিলেন। সনদ সহীহ্। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাইস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)–কে প্রশ্ন করলাম, রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাযে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিরা’আত কেমন ছিল? তিনি নিরবে কিরা’আত করতেন না সরবে? তিনি (‘আয়িশাহ্) বললেন, কখনও তিনি নিচু আওয়াজে এবং কখনও উঁচু আওয়াযে কিরা’আত পাঠ করতেন। আমি বললাম, সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি এ কাজের মধ্যে প্রশস্ততা রেখেছেন। সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ-(১২৯১), মুসলিম।
বাড়িতে নফল নামায আদায়ের ফযিলত
যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ফরয ব্যতীত তোমাদের বাড়িতে আদায়কৃত নামায সর্বোৎকৃষ্ট। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(১৩০১), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের বাড়িতেও নামায আদায় কর, তাঁকে কবরস্থানে পরিনত কর না। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ-(৯৫৮, ১৩০২), বুখারী ও মুসলিম।