20. জিহাদের ফযিলত
জিহাদের ফযিলত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কোন কাজ জিহাদের সমতুল্য হতে পারে? তিনি বললেনঃ তোমরা তা করতে পারবে না। তারা দুই অথবা তিনবার একই প্রশ্ন করল। প্রতি বারই তিনি বললেন, তোমরা তা করতে পারবে না। তৃতীয় বারে তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় জিহাদকারী লোকের সাথে এমন লোকের তুলনা হতে পারে যে লোক অক্লান্তভাবে নামায-রোযায় ব্যস্ত থাকে যতক্ষণ না আল্লাহ্ তা’আলার পথের মুজাহিদ ফিরে না আসে। সহীহ্, সহীহা (২৮৯৬), মুসলিম আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ আমার পথে জিহাদকারীর জন্য আমি নিজেই যামিন। আমি তার জীবনটা নিয়ে নিলে তবে তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেই। আমি তাকে (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) ফিরিয়ে আনলে তবে তাকে ছাওয়াব বা গানীমাতসহ ফিরিয়ে আনি। সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (২/১৭৮)
পাহারা প্রদানরত অবস্থায় মৃত্যুর সাওয়াব
ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির সকল প্রকার কাজের উপর সীলমোহর করে দেওয়া হয় (কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে)। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় পাহারাদানরত অবস্থায় যে লোক মৃত্যুবরণ করে কিয়ামাত পর্যন্ত তার কর্মের সাওয়াব বাড়ানো হতে থাকে এবং তিনি কবরের সকল ফিতনা হতে নিরাপদে থাকেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে সে-ই আসল মুজাহিদ। সহীহ্, মিশকাত তাহকীক ছানী (৩৪) এবং (৩৮২৩), তা’লীকুর রাগীব (২/১৫০), সহীহা (৫৪৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ (১২৫৮)
আল্লাহ্ তা’আলার পথে রোযা আদায়ের সাওয়াব
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক একদিন আল্লাহ্ তা’আলার পথে রোযা আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছরের (পথের) দূরত্বে রাখবেন। (উরওয়া ও সুলাইমানের) একজনের বর্ণনায় সত্তর বছর এবং অপরজনের বর্ণনায় চল্লিশ বছর উল্লেখ আছে। প্রথম শব্দে (অর্থাৎ সত্তর বছর) হাদীসটি সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (২/৬২) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মানুষ যদি একদিন আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় রোযা আদায় করে তাহলে সেই দিনটি তার চেহারা হতে জাহান্নামকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেয়। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৭১৭), নাসা-ঈ আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি একদিন আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় রোযা আদায় করে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মাঝখানে আকাশ ও যমীনের মাঝখানের দূরত্বের সমতুল্য একটি পরিখা সৃষ্টি করে দিবেন। হাসান সহীহ্, সহীহা (৫৬৩)
আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় ব্যয় করার সাওয়াব
খুরাইম ইবনু ফাতিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় কিছু ব্যয় করে (এর বিনিময়ে) তার জন্য সাতশত গুণ সাওয়াব লেখা হয়। সহীহ্, মিশকাত (৩৮২৬), তা’লীকুর রাগীব (২/১৫৬),
আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় সেবাদানের সাওয়াব
আদী ইবনু হাতিম তাঈ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করেন, কোন রকমের দান-খাইরাত বেশি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় সেবার উদ্দেশ্যে গোলাম দান করা, অথবা ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁবু দান করা বা আল্লাহ্র রাস্তায় জাওয়ান উষ্ট্রী দান করা। হাসান, তা’লীকুর রাগীব (২/১৫৮) আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম সাদকা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় ছায়া সৃষ্টির জন্যে তাঁবু দান করা, আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় সেবার উদ্দেশ্যে গোলাম দান করা অথবা আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় জাওয়ান উষ্ট্রী দান করা। হাসান, দেখুন পূর্বের হাদীস
সৈনিকের অস্ত্র ও রসদপত্রের যোগানদারের সাওয়াব
যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মানুষ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদকারী কোন যোদ্ধার যুদ্ধে যাওয়ার সকল সাজ-সরঞ্জামের যোগাড় করল সে যেন নিজেই জিহাদ করল। আর যে মানুষ কোন সৈনিকের পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর রাখলো সেও যেন জিহাদ করল। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৫৯) যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মানুষ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদের জন্য কোন যোদ্ধার সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করে দিল অথবা তার পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর রাখল, সে যেন নিজেই জিহাদ করল। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় এ হাদীসটি সহীহ্। মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে, তিনি আব্দুল মালিক ইবনু আবী সুলাইমান হতে, তিনি আতা হতে, তিনি যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী হতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় কোন মুজাহিদের সাজ-সরঞ্জামের যোগাড় করে দিল সে যেন নিজেই জিহাদ করল। আর যে লোক কোন যোদ্ধার পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর রাখলো সেও যেন জিহাদ করল। সহীহ্, দেখুন এই হাদীসের পূর্বের হাদীস
আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় যে লোকের পদদ্বয় ধুলি-মলিন হয় তার মর্যাদা
ইয়াযীদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি পায়ে হেটে জুমু‘আর সালাত আদায় করতে যাচ্ছিলাম। এ সময় আবাইয়া ইবনু রিফাআ ইবনু রাফি (রাঃ) আমার সাথে মিলিত হন। তিনি (আমাকে) বললেন, তোমার জন্য সুখবর। আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায়ই তোমার এই পথ চলা। আবূ আব্স (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় যে লোকের পা দুটি ধুলিমলিন হয় তা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম হয়ে যায়। সহীহ্, ইরওয়া (১১৮৩), বুখারী
আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় ধুলি-মলিন হওয়ার সাওয়াব
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার ভয়ে যে লোক ক্রন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার পালানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ্ তা‘আলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্র হবে না (আল্লাহ্ তা‘আলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। সহীহ্, মিশকাত (৩৮২৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১৬৬)
আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় যে লোক বুড়ো হয়েছে তার সাওয়াব
সালিম ইবনু আবুল জাদ (রহঃ) শুরাহ্বীল ইবনুস সিম্ত (রহঃ) বলেন, হে কা’ব ইবনু মুররা! আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস শুনান এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক মুসলমান অবস্থায় বুড়ো হল, তার জন্য কিয়ামাতের দিন একটি বিশেষ আলোকবর্তিকা থাকবে। সহীহ্, সহীহা (১২৪৪), মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৪৫৯) আমর ইবনু আবাসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লার তা‘আলার পথে যে লোক বুড়ো হয়েছে, তার জন্য কিয়ামাতের দিন একটি আলোকবর্তিকা থাকবে। সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (২/১৭১)
আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় যে ব্যক্তি ঘোড়া লালন-পালন করে তার সাওয়াব
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বাঁধা রয়েছে। তিন প্রকার মানুষের জন্য ঘোড়া তিন ধরণের ফল বয়ে আনে। তা কোন মানুষের জন্য সাওয়াবের মাধ্যম, কোন মানুষের জন্য আবরণস্বরূপ এবং কোন মানুষের জন্য গুনাহের কারণ হয়ে থাকে। এটা সেই প্রকার মানুষের জন্য সাওয়াবের মাধ্যম হয় যে আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় (জিহাদের উদ্দেশ্যে) তা লালন-পালন করে এবং এটাকে (সর্বদা) প্রস্তুত রাখে। এটা তার জন্য সাওয়াবের মাধ্যম হবে। সে এর পেটে যা কিছুই ঢালে আল্লাহ্ তা‘আলা তার বিনিময়ে তার জন্য সাওয়াব লিখে দেন। সহীহ্, মুসলিম
আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় তীর ছুড়ার সাওয়াব
আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবূ হুসাইন (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা একটি তীরের উসীলায় তিনজন লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনঃ তীর নির্মাতা যে নির্মাণকালে কল্যাণের আশা করেছে, (জিহাদে) এই তীর নিক্ষেপকারী এবং তা নিক্ষেপে সাহায্যকারী। তিনি আরো বলেনঃ তোমরা তীরন্দাজী কর ও ঘোড়দৌড় শিক্ষা কর। তবে তোমাদের ঘোড়দৌড় শেখার তুলনায় তীরন্দাজী শিক্ষা করা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়। মুসলিম ব্যক্তির সকল ক্রীড়া-কৌতুকই বৃথা। তবে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ এবং নিজ স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। (কারণ) এগুলো হল উপকারী ও বিধি সম্মত। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৮১১)। আবূ নাজীহ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় যে লোক তীর ছুড়লো তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করার অনুরূপ সাওয়াব। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৮১২)
আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় পাহারাদানের সাওয়াব
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ্ তা’আলার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়। সহীহ্, মিশকাত (৩৮২৯), তা’লীকুর রাগীব (২/১৫৩)
শহীদদের সাওয়াব সম্বন্ধে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার পথে মৃত্যুবরণ করা সকল পাপের কাফফারা হয়ে যায়। তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ঋণ ব্যতীত (তা ক্ষমা করা হয় না)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঋণ ব্যতীত। সহীহ্, মুসলিম ইবনু উমার হতে, ইরওয়া (১১৯৬), গাইয়াতুল মারাম (৩৫১), তাখরীজ মুশকিলাতুল ফাকর (৬৭) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবুজ পাখির মধ্যে শহীদদের রূহ্ অবস্থান করে। তারা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের ফল ভক্ষণ করে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৪২৭১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবার আগে যে তিনজন জান্নাতে যাবে তাদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয়েছে। শহীদ, হারাম ও সংশয়পূর্ণ জিনিস হতে ও অপরের নিকটে হাত পাতা হতে দূরে অবস্থানকারী এবং উত্তমরূপে অল্লাহ তা‘আলার ইবাদতকারী ও মনিবদের কল্যাণকামী গোলাম। যঈফ, তা’লিকুর রাগীব (১/২৬৮)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সঞ্চিত সাওয়াবের অধিকারী যে কোন বান্দার মৃত্যুর পর তাকে পৃথিবী এবং এর সকল কিছু দিলেও সে আবার পৃথিবীতে চলে আসা পছন্দ করবে না। কিন্তু যখন শহীদ ব্যক্তি শাহাদাত লাভের ফযিলত ও মর্যাদা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাবে তখন সে আবার দুনিয়াতে আসতে আগ্রহী হবে, যাতে সে আবার আল্লাহ তা’আলার পথে শহীদ হতে পারে। সহীহ্, নাসা-ঈ
আল্লাহ তা‘আলার নিকটে শহীদদের মর্যাদা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ শহীদ চার প্রকার। (১) উত্তম ঈমানের অধিকারী মু’মিন, যে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) সত্য বলে বিশ্বাস করে যুদ্ধ করে, অবশেষে মারা যায়। কিয়ামাতের দিন লোকেরা তার প্রতি এভাবে উপরে চোখ তুলে তাকাবে, এই বলে তিনি মাথা উপরের দিকে তুলে (বাস্তবরূপে) দেখালেন, এমনকি তাঁর মাথার টুপি পড়ে গেল। রাবী বলেন, এখানে উমারের টুপির কথা বলা হয়েছে না নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর টুপি বুঝানো হয়েছে তা আমার জানা নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (২) আরেক ব্যক্তিও উত্তম ঈমানের অধিকারী মু’মিন। সেও শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়, কিন্তু ভীরুতার কারণে তার দেহ এমনভাবে কম্পিত হতে থাকে যেন তাকে বাবলা গাছের কাঁটাযুক্ত ডাল দিয়ে মারা হয়েছে। একটি অদৃশ্য তীর এসে তার শরীরে বিদ্ধ হলে তার আঘাতে সে মারা গেল। এ হল দ্বিতীয় পর্যায়ের শহীদ। (৩) আরেক মু’মিন ব্যক্তি তার ভাল কাজের সাথে কিছু খারাপ কাজও করে ফেলেছে। সে শত্রুর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা সত্য বলে বিশ্বাস করে যুদ্ধ করে অবশেষে মারা যায়। এ ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ের শহীদ। (৪) অপর মু’মিন ব্যক্তি নিজের উপর যুলুম করেছে। সেও শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা সত্য বলে বিশ্বাস করে যুদ্ধ করে, তারপর মারা যায়। এই ব্যক্তি চতুর্থ স্তরের শহীদ। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৩৮৫৮), যঈফা (২০০৪)।
নৌযুদ্ধ প্রসঙ্গে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিলহানের মেয়ে উম্মু হারামের বাসায় গেলে তিনি তাঁকে খাবার খাওয়াতেন। উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। এক দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বাসায় গেলে তিনি তাঁকে খাওয়ান এবং তাঁর ঘুমানোর ব্যবস্থা করে তাঁর মাথায় বিলি কাটতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে যান। তারপর তিনি হাসতে হাসতে ঘুম হতে জেগে উঠেন। তিনি (উম্মু হারাম) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কি কারণে হাসছেন? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোককে (স্বপ্নে) আমার সামনে হাযির করা হল। তারা সাগরের বুকে সিংহাসনে বসা শাসকের মত সাওয়ার হয়ে আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় (নৌ) যুদ্ধে নিয়োজিত। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আমার জন্য দু’আ করুন, তিনি আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। তিনি তার জন্য দু’আ করেন এবং (বালিশে) মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি পুনরায় হাসতে হাসতে ঘুম হতে সজাগ হন। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি হাসছেন কেন? তিনি বললেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের এক দল লোককে (স্বপ্নে) হাযির করা হয়, যারা আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় (নৌ) যুদ্ধে নিয়োজিত। তিনি পূর্বানুরূপ বর্ণনা করেন। তিনি (উম্মু হারাম) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আমার জন্য দু’আ করুন, তিনি আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর রাজত্বকালে উম্মু হারাম (রাঃ) নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নৌযুদ্ধ হতে ফিরে এসে তার সাওয়ারী হতে পড়ে গিয়ে মারা যান। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৭৬), নাসা-ঈ
লোক দেখানো বা পার্থিব স্বার্থে যে লোক যুদ্ধ করে
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল, এক লোক বীরত্ব দেখানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, এক লোক গোত্রীয় মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে এবং এক লোক মানুষকে দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে-এদের মধ্যে কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার পথে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করে শুধুমাত্র সে-ই আল্লাহ্র পথে (জিহাদ করে)। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৮৩), নাসা-ঈ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল কর্মের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক মানুষের জন্য তার নিয়্যাত (উদ্দেশ্য ও লক্ষ) মতো ফলাফল রয়েছে। সুতরাং যে মানুষের হিজরাত আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দিকে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্যই তার হিজরাত পরিগণিত হয়। যে মানুষের হিজরাত দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য সে তা-ই অর্জন করবে। অথবা তার হিজরাত কোন নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হলে সে যে উদ্দেশ্যে হিজরাত করেছে তার হিজরাত সেই উদ্দেশ্যের জন্যেই পরিগণিত হবে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৪২২৭), নাসা-ঈ
আল্লাহ্ তা'আলার পথে এক সকাল ও এক বিকাল ব্যয় করার সাওয়াব
সাহল ইবনু সা'দ আস-সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় একটি সকালের ব্যয় পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। জান্নাতের এক চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৫৬), নাসা-ঈ আবূ হুরাইরা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় একটি সকালের অথবা একটি বিকালের ব্যয় পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছু হতে উত্তম। সহীহ্, ইরওয়া (৫/৩-৪), মুসলিম আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের মধ্যে একজন সাহাবী একটি পাহাড়ী উপত্যকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে স্থানে একটি মিঠা পানির ছোট ঝর্ণা ছিল। নির্মল-স্বচ্ছ এই পানির স্বাদ ও সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করল। তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি যদি সাথীদের হতে আলাদা হয়ে এই উপত্যকায় থেকে যেতাম! আমি তা কখনও করতে পারি না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমতি ব্যতীত। তিনি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করলেন। তিনি বললেনঃ তা কখনো কর না। কেননা তোমাদের কেউ বাড়ীতে থেকে সত্তর বছর ধরে নামায আদায় করার চেয়েও কিছু সময় আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় অবস্থান করা উত্তম। তোমরা কি এটা পছন্দ কর না যে, তোমাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষমা করে দেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করান? তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদ কর। যে লোক আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় দুইবার উষ্ট্রী দোহনের মধ্যবর্তী পরিমাণ সময় যুদ্ধ করে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। হাসান, তা’লীকুর রাগীব (২/১৭৪) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার পথে এক সকাল অথবা এক বিকাল ব্যয় করা অবশ্যই পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তোমাদের কারো ধনুকের জ্যা অথবা হাত পরিমাণ জান্নাতের জায়গা পৃথিবী ও তার মধ্যকার সকল কিছু হতে উত্তম। জান্নাতের মহিলাদের কেউ পৃথিবীর দিকে একবার উঁকি দিয়ে দেখলে অবশ্যই আকাশ-যমীনের মাঝে অবস্থিত সবকিছু আলোকিত হয়ে যেত এবং দুনিয়ার সমস্ত জায়গা সুগন্ধময় হয়ে যেত। তার মাথার ওড়নাটিও পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৫৭), নাসা-ঈ
কে উত্তম লোক
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কে উত্তম মানুষ, আমি কি তোমাদের তা জানিয়ে দেবো না? আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় যে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে প্রস্তুত থাকে। আমি কি তোমাদের বলে দেবো না, তারপর কোন মানুষ উত্তম? যে নিজের মেষপাল নিয়ে মানুষদের কাছ হতে দূরে অবস্থান করে থাকে এবং তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার যে হক (যাকাত) রয়েছে তা দিয়ে দেয়। কে মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট লোক তা কি আমি তোমাদের বলে দেবো না? যার নিকট আল্লাহ্ তা‘আলার নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হয় কিন্তু (সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও) দান করে না। সহীহ্, সহীহা (২৫৫), তা’লীকুর রাগীব (২/১৭৩)
যে লোক (আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায়) শাহাদাতের প্রার্থনা করে
সাহ্ল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সত্যিকারভাবে সর্বান্তকরণে শাহাদাতের প্রার্থনা করে, আল্লাহ্ তাকে শহীদের মনযিলে পৌঁছাবেন, সে তার বিছানাতে মারা গেলেও। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৯৭), মুসলিম মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সত্যিকারভাবেই আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার পথে নিহত হওয়ার জন্য তাঁর নিকট প্রার্থনা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে শহীদের সাওয়াব দান করবেন। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৯২)
মুজাহিদ, মুকাতাব গোলাম ও বিবাহ ইচ্ছুক ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্য
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদকারী, মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে এবং বিবাহে আগ্রহী লোক- যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। হাসান, ইবনু মা-জাহ (২৫১৮)
আল্লাহ্ তা‘আলার পথে আহত ব্যক্তির মর্যাদা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার পথে যে মানুষই আহত হয়, আর আল্লাহ্ তা‘আলা ভালভাবেই জানেন, তাঁর পথে কে আহত হয়; সে এমনভাবে কিয়ামাত দিবসে হাযির হবে যে, রক্তের রং-এর মত হবে তার জখমের রং এবং কস্তুরীর সুগন্ধির মত হবে এর ঘ্রাণ। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৯৫), নাসা-ঈ মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলমান লোক আল্লাহ্ তা'আলার পথে উষ্ট্রীর দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী ( সময়ের পরিমাণ ) সময় জিহাদ করল তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে গেছে। আল্লাহ্ তা'আলার পথে যে লোক আহত হল অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হল, এই জখম কিয়ামতের দিবসে আরো তাজা হয়ে উপস্থিত হবে। এই জখমের রং যাফরানের মত হবে এবং এর ঘ্রাণ কস্তুরীর মত সুগন্ধময় হবে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৯২)
সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ কাজ কোনটি?
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলঃ সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ কাজ কোনটি এবং উত্তম বা কল্যাণকর কোন ধরনের কাজ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা। আবার প্রশ্ন করা হল, এরপর কোন জিনিস উত্তম? তিনি বললেনঃ জিহাদ হচ্ছে সকল কাজের চূড়া বা শিখর। আবার প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! এরপর কোন জিনিস উত্তম? তিনি বললেনঃ(আল্লাহ তা’আলার নিকট) ক্ববূল হওয়া হাজ্ব। হাসান সহীহ্, নাসা-ঈ
তলোয়ারের ছায়াতলে জান্নাতের দরজা
আবূ বাক্র ইবনু আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, শত্রুর মোকাবিলায় আমি আমার বাবাকে (যুদ্ধক্ষেত্রে) বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তলোয়ারের ছায়াতলে জান্নাতের দরজাসমূহ। দলের উস্কখুস্ক একজন লোক বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কি তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদের বিদায়ী সালাম জানাচ্ছি। এই বলে তিনি নিজ তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেললেন এবং তলোয়ার দ্বারা (শত্রুর প্রতি) আঘাত হানতে থাকেন। অবশেষে তিনি নিহত হন। সহীহ্, ইরওয়া (৫/৭), মুসলিম
কোন ধরনের মানুষ সবচাইতে উত্তম?
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলঃ কোন ধরনের মানুষ সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার পথে যে সকল মানুষ জিহাদ করে। তারা আবার প্রশ্ন করলেন, তারপর কে? তিনি বললেনঃ পাহাড়ের কোন উপত্যকায় যে মু’মিন আশ্রয় নিয়ে নিজের প্রতিপালককে ভয় করে চলে এবং মানুষকে নিজের অনিষ্ট হতে নিরাপদে রাখে। সহীহ্, তালীকুর রাগীব (২/১৭৩), নাসা-ঈ
শহীদের সাওয়াব
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতে বসবাসকারীদের মধ্যে শহীদ ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউই পৃথিবীতে ফিরে আসার উৎসাহ বোধ করবে না। শহীদ ব্যক্তিই আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে। আল্লাহ্ তা’আলা তাকে যেসব নিয়ামত ও মর্যাদা দিবেন তা দেখে সে বলবে, আমি দশবার আল্লাহর রাস্তায় নিহত হব। সহীহ্, নাসা-ঈ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার- মুহাম্মদ ইবনু জাফর হতে, তিনি শুবা হতে, তিনি কাতাদা হতে, তিনি আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একইরকম বর্ণনা করেছেন। মিকদাব ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে। তাঁর প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হয়, তাঁকে তাঁর জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়, কবরের আযাব হতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে, তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তাঁর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তার সাথে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতী হূরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্য তাঁর সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। সহীহ্, আহকা-মুল জানায়িজ (৩৫-৩৬), তা’লীকুর রাগীব (২/১৯৪), সহীহা (৩২১৩)
আল্লাহ্ তা’আলার পথে পাহারাদানের সাওয়াব
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও তার মধ্যকার (উপরের) সব কিছু হতে উত্তম। (জিহাদের মাঠে) বান্দার এক বিকাল অথবা এক সকালের ব্যয় পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে কল্যাণকর। সহীহ্, বুখারী (২৭৯৪, ২৮৯২, ৬৪১৫) মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) কোন এক সময় শুরাহবীল ইবনুস সিমতের সামনে দিয়ে সালমান ফারসী (রাঃ) পথ চলছিলেন। তিনি তখন তার ঘাঁটিতে পাহারারত ছিলেন। তাঁর ও তাঁর সাথীদের জন্য পাহারার কাজটি খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তিনি (সালমান) বললেন, হে সিমতের পুত্র! আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীস বলব, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সালমান (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এক দিন আল্লাহ্ তা’আলার পথে সীমান্ত পাহারা দেওয়া একাধারে এক মাস রোযা রাখা এবং রাতে নামায আদায় হতেও উত্তম ও বেশি কল্যাণকর। এই কাজে লিপ্ত থাকাবস্থায় যে লোক মারা যাবে তাকে কবরের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হতে মুক্তি দেওয়া হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল পরিবর্ধিত করা হবে। সহীহ্, ইরওয়া (১২০০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (নিজ দেহে) জিহাদের কোন চিহ্ন ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলার নিকটে হাযীর হবে, তার দীনদারী ও কাজের মধ্যে বিরাট ত্রুটি থেকে যাবে। যঈফ ইবনু মাজাহ (২৭৬৩)। উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর গোলাম আবূ সালিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উসমান (রাঃ)-কে মিম্বারের উপরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি (উসমান) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনা একটি হাদীস তোমাদেরকে বলিনি এই ভয়ে যে, হয়ত (তা শুনে) তোমরা আমার নিকট হতে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু পরে আমার উপলব্ধি হল যে, তোমাদের নিকট এটা বর্ণনা করি, যাতে নিজের জন্য প্রত্যেকে তা পছন্দ করে নিতে পারে যা তার নিকট ভাল মনে হয়। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অন্য (কোন কাজে) কোথাও এক হাজার দিন কাটানোর চাইতে এক দিন আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়া (বা শত্রুর অপেক্ষায় থাকা) বেশি কল্যাণকর। হাসান, তা’লীকুর রাগীব, তাহকীক ছানী (২/১৫২), তা’লীক আলা-আহাদীস মুখতারাহ (৩০৫-৩১০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদ ব্যক্তি মৃত্যুর কষ্ট শুধু ততটুকুই অনুভব করে, তোমাদের কাউকে একবার চিমটি কাটলে সে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে। হাসান সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৮০২) আবূ উমামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আর কিছু নেই। আল্লাহ্ তা’আলার ভয়ে যে অশ্রুর ফোঁটা পরে, আল্লাহ্ তা’আলার পথে (জিহাদে) যে রক্তের ফোঁটা নির্গত হয় এবং আল্লাহ্ তা’আলার নির্ধারিত কোন ফরজ আদায় করতে গিয়ে যে চিহ্ন সৃষ্টি হয় (যেমন কপালে সিজদার চিহ্ন)। হাসান, মিশকাত (৩৮৩৭), তা’লীকুর রাগীব (২/১৮০)