25. সদ্ব্যবহার ও পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা

【1】

বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ

বাহ্‌য ইবনু হাকীমের দাদা [মু‘আবিয়া ইবনু হাইদা (রাঃ)] তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কোন্‌ ব্যক্তির সাথে আমি উত্তম আচরণ করব? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের সাথে। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, এরপর কার সাথে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার বাবার সাথে, তারপর নিকটাত্মীয়তার ক্রমানুসারে উত্তম আচরণ করবে। হাসান, মিশকাত (৪৯২৯)।

【2】

( সবচাইতে উত্তম কাজ )

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কোন্‌ কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ নামায তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ করা। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদ করা। এরপর আমাকে কিছু বলা হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকেন। আমি তাঁকে আরো প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই আমাকে তিনি আরো জানাতেন। সহীহ, সহীহা (১৪৮৯) , বুখারী, মুসলিম।

【3】

বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির ফযীলত

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে। সহীহ, সহীহা (৫১৫)। আবুদ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, তার কাছে একজন লোক এসে বলল, আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাকে তালাক দেয়ার জন্য। আবুদ দারদা (রাঃ) বললেন, রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পার অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করতে পার। সহীহ্, সহীহা (৯১০) , মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৯২৮)।

【4】

বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া কাবীরা গুনাহ

আবদুর রাহমান ইবনু আবী বাকরা (রাঃ) হতে তার বাবা তিনি (আবূ বাকরা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সর্বাধিক কাবীরা গুনাহের ব্যাপারে জানিয়ে দিবো না? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! অবশ্যই জানিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ আল্লা্হ্‌ তা‘আলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করা এবং বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসেন এবং বলেনঃ এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ও মিথ্যা বলা। একথাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিরতভাবে বলতে থাকেন। আমরা (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আহা! তিনি যদি থামতেন, চুপ করতেন! সহীহ্, গাইয়াতুল মারাম (২৭৭) , বুখারী, মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার বাবা-মাকে গালিগালাজ করা কাবীরা গুনাহ্। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কেউ কি তার মা-বাবাকে গালিগালাজ করতে পারে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। কোন লোক অন্য কারো বাবাকে গালি দেয়। এর উত্তরে সেও তার বাবাকে গালি দেয়। সে অন্য কারো মাকে গালি দেয়। এর উত্তরে ঐ ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়। সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (৩/২২১)।

【5】

বাবার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান দেখানো

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ সর্বাধিক সাওয়াবের কাজ হচ্ছে বাবার বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখা। সহীহ্, যঈফা (২০৮৯) , মুসলিম।

【6】

খালার সাথে উত্তম আচরণ করা

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খালা হলো মাতৃস্থানীয়। সহীহ্, ইরওয়া (২১৯০) , বুখারী, মুসলিম।

【7】

(সন্তানের প্রতি) বাবা-মায়ের দু’আ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকারের দু’আ অবশ্যই মঞ্জুর করা হয়, তাতে কোন রকম সন্দেহ নেই। নির্যাতিত ব্যক্তির দু’আ, মুসাফিরের দু’আ এবং সন্তানের প্র্রতি বাবার বদ-দু’আ। হাসান, ইবনু মা-জাহ (৩৮৬২)।

【8】

বাবা-মায়ের অধিকার

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লা্ল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সন্তান কোন অবস্থাতেই তার বাবার সম্পূর্ণ অধিকার আদায়ে সক্ষম নয়। কিন্তু সে তার বাবাকে গোলাম অবস্থায় পেলে এবং তাকে কিনে মুক্ত করে দিলে তবে সামান্য অধিকার আদায় হয়। সহীহ্, ইবনু মাজাহ (৩৬৫৯) , মুসলিম।

【9】

রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা

আবূ সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আবুর রাদ্দাদ (রাঃ) একবার অসুস্থ হলে তাঁকে আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) দেখতে আসেন। আবুর রাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, আমার জানামতে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রক্ষাকারী ব্যক্তি হলেন আবূ মুহাম্মাদ (আবদুর রাহমান)। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পরিপূর্ণ কল্যাণ ও প্রাচুর্যের অধিকারী আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেনঃ ‘আমিই আল্লাহ্‌ এবং আমিই রাহমান। আত্মীয়তার সম্পর্ককে আমিই সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম হতে নির্গত করে এই নাম (রাহমান হতে রেহেম) রেখেছি। যে ব্যক্তি এই সম্পর্ক বহাল রাখবে আমিও তার সাথে (রাহমাতের) সম্পর্ক বহাল রাখব। আর এই সম্পর্ক যে ব্যক্তি ছিন্ন করবে আমিও তার হতে (রাহমাতের) সম্পর্ক ছিন্ন করব”। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৫২০)।

【10】

আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখা

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমানুরুপ ব্যবহারের মনোভাব নিয়ে সম্পর্ক রক্ষাকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, বরং কেউ কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলেও সে যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে তবে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত সম্পর্ক স্থাপনকারী। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৪) , সহীহ আবূ দাঊদ (১৪৮৯) , বুখারী, মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮) , সহীহ আবূ দাঊদ (১৪৮৮) , বুখারী, মুসলিম।

【11】

সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা

উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) খাওলা বিনতি হাকীম (রাঃ) একজন সৎকর্মশীলা মহিলা। তিনি বলেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)–এর দুই ছেলের একজনকে কোলে করে বাহিরে এলেন। তখন তিনি বলেনঃ (সন্তানের মুহাব্বতে) তোমারাই কৃপণতা, কাপুরুষতা ও অজ্ঞতার কারণ হও। তোমরা হলে আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাগানের সুগন্ধি ফুল। যঈফ, যঈফা (৩২১৪)।

【12】

সন্তানদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল-আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলেন যে, তিনি হাসানকে চুমু খাচ্ছেন। ইবনু আবী উমার তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হাসান অথবা হুসাইনকে চুমু খেয়েছেন। আল-আকরা (রাঃ) বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে কিন্তু আমি তাদের কাউকে কখনো চুমু দেইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দয়া-অনুগ্রহ করে না সে দয়া-অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয় না। সহীহ, তাখরীজ “মুশকিলাতুল ফাক্‌র” (১০৮) , বুখারী, মুসলিম।

【13】

মেয়ে সন্তান ও বোনদের উদ্দেশ্যে খরচ করা

আবূ সাঈদ আল–খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের সাথে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে। যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মেয়ে সন্তানদের জন্য কোনরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয় (বিপদগ্রস্ত হয়) , সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হতে আবরণ (প্রতিবন্ধক) হবে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক দুটি মেয়ে সন্তানকে লালান-পালন করবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে যাব। এই বলে তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন। সহীহ, সহীহাহ্‌ (২৯৭) , মুসলিম। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, একজন মহিলা তার দুই মেয়েসহ আমার নিকটে এল এবং আমার কাছে কিছু চাইল। কিন্তু একটি খেজুর ব্যতীত আমার নিকটে আর কিছুই ছিল না। আমি সেটিই তাকে দিলাম। সে খেজুরটিকে ভাগ করে তার দুই মেয়ের হাতে দিল এবং নিজে মোটেও খেল না। তারপর সে উঠে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে আসার পর আমি বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক মেয়ে সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষার (বিপদের) সম্মুখীন হয়, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (৩/৮৩) , মুসলিম। আবূ সাঈদ আল–খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, অথবা দু’টি মেয়ে অথবা দু’টি বোন আছে, সে তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করলে এবং তাদের (অধিকার) সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় করলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আছে। বর্ণিত শব্দে হাদীসটি যঈফ, সাহীহা (২৯৪)। আবূ ঈসা বলেছেন হাদীসটি গারীব।

【14】

ইয়াতীমের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং তার লালন-পালন

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মুসলমানদের কোন ইয়াতীমকে এনে নিজের পানাহারে শরীক করলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন , যদি সে ক্ষমার অযোগ্য কোন গুনাহ না করে। যঈফ, তা’লিকুর রাগীব (৩/২৩০), যঈফা (৫৩৪৫)। সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী এই দুই আঙ্গুলের অনুরুপ একসাথে জান্নাতে বসবাস করব। এই কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখান। সহীহ্, সহীহাহ্ (৮০০) , বুখারী।

【15】

শিশুদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা।

যারবী (রহঃ) ‍তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ একজন বয়স্ক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক আমাদের ‍শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সহীহ, সহীহাহ্ (২১৯৬) আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পযার্য়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে তিনি (দাদা) বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সন্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (১/১৬) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না বড়দের সম্মান করে না, সৎকাজের নির্দেশ দেয় না এবং অসৎ কাজে বাধা দেয় না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। যঈফ, মিশকাত (৪৯৭০), তা’লিকুর রাগীব (৩/১৭৩)।

【16】

মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা

জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না। সহীহ-তাখরীজু মুশকিলাতিল ফাকর (১০৮) , বুখারী, মুসলিম আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়। হাসান, মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৯৬৮)। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সহীহ, সহীহাহ্ (৯২২)।

【17】

উপদেশ দেয়া বা কল্যাণ কামনা

জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে নামায বাস্তবায়ন, যাকাত আদায় এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার শপথ (বাই‘আত) করেছি। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধর্ম হচ্ছে কল্যাণ কামনার নাম। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কার কল্যাণ কামনা করা? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌, তাঁর গ্রন্থের, মুসলমানদের নেতৃবর্গের এবং মুসলমান সবর্সাধারণের। সহীহ, ইরওয়া (৯২৬) , গাইয়াতুল মারাম (৩৩২) , মুসলিম।

【18】

মুসলমানের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করবে না। প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের (জীবনের) উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম। তাক্বওয়া এখানে (অন্তরে)। কেউ মন্দ বলে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। সহীহ, ইরওয়া (৮/৯৯-১০০), মুসলিম। আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজন মু’মিন ব্যক্তি অন্য মু’মিনের জন্য একটি সুদৃঢ় প্রাসাদস্বরূপ, যার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। সহীহ, মিশকাত (১০৪) , আল-ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৯০) , বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ মুসলিম ভাইয়ের আয়নাস্বরূপ। অতএব সে যদি তার মধ্যে কোন দাগ (ত্রুটি) লক্ষ্য করে, তবে তা যেন দূর করে দেয়। খুবই দুর্বল, যঈফা (১৮৮৯)।

【19】

মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোন মুসলমান লোকের দুনিয়াবী বিপদাপদের মধ্যে একটি বিপদও দূর করে দেয়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার পরকালের বিপদাপদের কোন একটি বিপদ দূর করে নিবেন। যে লোক দুনিয়াতে অন্য কারো অভাব দূর করে দেয়, তার দুনিয়া ও আখিরাতের অসুবিধাগুলোকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা সহজ করে দিবেন। যে লোক দুনিয়ায় কোন মুসলমানের দোষ-ক্রটিকে গোপন রাখে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে, সে পর্যন্ত আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তাঁর সাহায্য-সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকেন। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (১২২৫) , মুসলিম।

【20】

কোন মুসলমানের মানসম্মানের উপর আসন্ন আক্রমণ প্রতিহত করা

আবুদ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার মুখমন্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪৩১)।

【21】

মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা পরিত্যাগ করা নিষেধ

আবূ আইয়্যূব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশি সময় ধরে তার ভাইয়ের সাথে কথা-বার্তা ও মেলামেশা ত্যাগ করা জায়িয নয়। তাদের দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, অথচ একজন এদিকে এবং অন্যজন আরেক দিকে মুখ সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয় সে-ই উত্তম। সহীহ, ইরওয়া (২০২৯) , বুখারী, মুসলিম।

【22】

ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি দেখানো

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) মাদীনায় পৌছানোর পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এবং সা’দ ইবনুর রাবী (রাঃ)-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দেন। সা’দ (রাঃ) তাকে বললেন, আসুন আমার সম্পদ উভয়ে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিই। আমার দু’জন স্ত্রী আছে। আমি তাদের একজনকে তালাক দেই এবং সে তার ইদ্দাত পূর্ণ করলে আপনি তাকে বিয়ে করে ফেলুন। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আপনাকে আপনার ধন-দৌলতে ও পরিবার-পরিজনে আল্লাহ্‌ তা‘আলা বারকাত দান করুন। আপনারা আমাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন। তারা তাকে বাজারের পথটি দেখিয়ে দিলেন। সেদিন বাজার হতে তিনি লাভস্বরূপ কিছু পনির ও ঘি নিয়ে ফিরে আসেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন তাঁর শরীরে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখে বললেন, কি ব্যাপার? তিনি বললেন, আমি একজন আনসার মহিলাকে বিয়ে করেছি। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ মোহরানা হিসেবে কি দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুর বীচি (পরিমাণ স্বর্ণ)। হুমাইদ বলেনঃ অথবা তিনি বললেন, এক খেজুর বীচি পরিমাণ স্বর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিবাহ ভোজের ব্যবস্থা কর তা একটি ছাগল দিয়ে হলেও। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (১৯০৭) , বুখারী, মুসলীম। তবে তাতে সা’দ ও আব্দুর রাহমানের ঘটনার উল্লেখ নেই।

【23】

গীবত (অনুপস্থিতিতে পরনিন্দা) প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! গীবত কি? তিনি বললেন? তোমরা ভাইয়ের প্রসঙ্গে তোমার এমন ধরনের কথা-বার্তা বলা যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্নকারী বলল, আমি যে কথাগুলো বলি তা প্রকৃতপক্ষেই তার মধ্যে নিহিত থাকলে, এক্ষেত্রে আপনার কি মত? তিনি বললেনঃ তুমি যে কথাগুলো বল তা প্রকৃতই তার মধ্যে নিহিত থাকলে তবেই তো তুমি তার গীবত করলে। তুমি যা বল তার মধ্যে যদি সেগুলো না থাকে তাহলে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪২৬) , নাকদুল কাত্তাণী (৩৬) , সহীহাহ্‌ (২৬৬৭) , মুসলিম।

【24】

হিংসা-বিদ্বেষ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একজন অন্যজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না, পরস্পরে শত্রুতা পোষণ করো না, পরস্পরকে ঘৃণা করো না, পরস্পর হিংসা করো না, বরং আল্লাহ্‌ তা‘আলার বান্দাহগণ! পরস্পর ভাই হয়ে থাকো। কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষেই বৈধ নয় তার ভাইকে তিনদিনের অধিক সময় ধরে ত্যাগ করে থাকা। সহীহ ইরওয়া (৭/৯৩) , বুখারী, মুসলিম। সালিম (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শুধু দুই প্রকারের লোকই হিংসাযোগ্য। (এক) যে লোককে আল্লাহ্‌ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা হতে দিন-রাত আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। (দুই) যাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে দিন-রাত এর বাস্তবায়নে নিযুক্ত থাকে। সহীহ্‌, রাওযুন নাযীর (৮৯৭) , বুখারী, মুসলিম।

【25】

পরস্পরের বিরুদ্ধে হিংসা ও শক্রতা পোষণ করা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামায আদায়কারী কখনো শাইতানের পূজা করবে (সাজদা দিবে) এ বিষয়ে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু সে তাদের মধ্যে একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে নিরাশ হয়নি। সহীহ্‌, সহীহাহ (১৬০৬) , মুসলিম।

【26】

পরস্পরের মাঝে সংশোধন করা

উম্মু কুলসুম বিনতু উকবা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি লোকদের মাঝে সংশোধন করার চেষ্টা করে সে মিথ্যাবাদী নয়। সে (যা বলেছে) ভাল বলেছে অথবা ভালকাজের অগ্রগতি ঘটিয়েছে। সহীহ্‌, রাওযুন নাযীর (১১৯৬) , সহীহাহ্‌ (৫৪৫) , মুসলিম। আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। (এক) স্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তার সাথে স্বামীর কিছু বলা, (দুই) যুদ্ধের সময় এবং (তিন) লোকদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন করার জন্য মিথ্যা কথা বলা। অধঃস্তন রাবী মাহমূদ তার হাদীসে বলেছেন, তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোথাও মিথ্যা বলা ঠিক নয়। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৫৪৫) , মুসলিম।

【27】

বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা

আবূ সিরমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে লোক অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন। হাসান, ইরওয়া (৮৯৬)। আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত। যঈফ, যঈফা (১৯০৩)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【28】

প্রতিবেশীর হক বা অধিকার

আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। সহীহ, প্রাগুক্ত, বুখারী, মুসলিম। মুজাহিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। সহীহ, ইরওয়া (৮১১) , বুখারী। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হল সেই ধরনের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর নিকট উত্তম। আল্লাহ্‌ তা‘আলার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মাঝে উত্তম হল সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর নিকট উত্তম। সহীহ, সহীহাহ (১০৩০) , মিশকাত (৪৯৮৭)।

【29】

খাদিমদের সাথে উত্তম আচরণ করা

আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এরা তোমাদের ভাই, এদেরকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির এরূপ ভাই (গোলাম, বাঁদী, খাদিম) তার অধীনে আছে, সে যেন তার খাদ্য হতে তাকে খেতে দেয় এবং তার পোশাক-পরিচ্ছদ হতে তাকে পরতে দেয়। সে এরূপ কাজের বোঝা যেন তার উপর না চাপায় যা করতে সে সমর্থ নয়। সে তার উপর সাধ্যাতীত কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দিলে সে যেন তাকে সহযোগিতা করে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৬৯১)।

【30】

খাদিমকে প্রহার করা এবং গালি দেয়া নিষধ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, তাওবাহকারী আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি তার নির্দোষ গোলামের বিরুদ্ধে (যিনার) অপবাদ আরোপ করে তবে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কিয়ামাত দিবসে তার উপর হদ্দ (নির্ধারিত শাস্তি) প্রতিষ্ঠিত করবেন। তবে গোলামটি যদি প্রকৃতপক্ষেই সেরকমের হয় তাহলে ভিন্ন কথা। সহীহ, রাওযুন নাযীর (১১৪৬) , বুখারী, মুসলিম। আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি আমার এক গোলামকে প্রহার করছিলাম। তখন আমার পিছন হতে একজন লোককে আমি বলতে শুনলাম, আবূ মাসঊদ, জেনে রাখ, আবূ মাসঊদ, জেনে রাখ! আমি পিছনে তাকানো মাত্রই দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি বললেনঃ তুমি এর উপর যে পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী, তোমার উপর আল্লাহ্‌ তা‘আলা এরচাইতে অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এরপর হতে আমি আমার কোন গোলামকে আর কখনো মারিনি। সহীহ, মুসলিম।

【31】

খাদিমকে ক্ষমা করা

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তার কথা শুনে রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। সে আবার বললঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি খাদিমের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তরবার। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৪৮৮)।

【32】

খাদেমের অপরাধ ক্ষমা করা এবং তাদের প্রতি উদার হওয়া

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার খাদিমকে মারে এবং সে (খাদিম) আল্লাহ্‌ তা‘আলার দোহাই দেয়, তখন তোমাদের হাত তুলে নাও (মারধর বন্ধ কর)। যঈফ, যঈফা (১৪৪১)।

【33】

সন্তানদের শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিজের সন্তানকে শিষ্টাচার ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া এক ‘সা’ পরিমাণ বস্তু দান-খাইরাত করার চেয়েও উত্তম। যঈফ, যঈফা (১৮৮৭)। আইউব ইবনু মূসা (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চেয়ে বেশী উত্তম কোন জিনিস দিতে পারে না। যঈফ, যঈফা (১১২১) নাকদুল কাত্তানী পৃঃ (২০)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আমির ইবনু আবূ আমির আল-খায্‌যায-এর সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। আমিরের পিতা সালিহ ইবনু রুসতুম। আইউব ইবনু মূসা হলেন ইবনু আমর ইবনু সাঈদ আল-আসী। আমার মতে এটি মুরসাল হাদীস।

【34】

উপহার আদান-প্রদান

আইশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপহার নিতেন এবং বিনিময়ে উপহার প্রদান করতেন। সহীহ, ইরওয়া (১৬০৩) , বুখারী।

【35】

উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। সহীহ, মিশকাত (৩০২৫) , সহীহাহ্‌ (৪১৭) , তা’লীকুর রাগীব (২/৫৬)। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞ নয় আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞ নয়। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ, প্রাগুক্ত।

【36】

কল্যাণকর কাজ ও আচরণ

আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। সহীহ, সহীহাহ (৫৭২)।

【37】

দান প্রসঙ্গে

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সম-পরিমাণ সাওয়াব। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (২/৩৪,২৪১) , মিশকাত (১৯১৭)।

【38】

চলাচলের পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক সময় একজন লোক পথ দিয়ে চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেল। সে তা তুলে ফেলে দিল। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার এ কাজকে ক্ববূল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম।

【39】

বৈঠকের আলাপ-আলোচনা আমানতস্বরূপ

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক কোন কথা বলার পর আশেপাশে তাকালে তার উক্ত কথা (শ্রবণকারীর জন্য) আমানাত বলে গণ্য। হাসান, সহীহাহ (১০৮৯)।

【40】

দানশীলতা

বিনতু আবূ বাক্‌র তনয়া আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! যুবাইর (রাঃ) আমাকে যা কিছু দেন তা ব্যতীত আমার কাছে কিছু নেই। আমি কি তা হতে দান করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তুমি থলের ফিতা বেঁধে রাখবে না, অন্যথায় তোমার জন্যও (আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ হতে) বেঁধে রাখা হবে (তোমার রিযিকের থলে)। সহীহ্‌; সহীহ্‌ আবূ দাউদ (১৪৯০) , বুখারী ও মুসলীম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকতবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম হতে দূরবর্তী। কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলা হতে দূরবর্তী, জান্নাত হতে দূরবর্তী, মানুষের নিকট হতেও দূরবর্তী, কিন্তু জাহান্নামের নিকটবর্তী। আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকটে কৃপণ আলেম ব্যক্তির চেয়ে মূর্খ দানশীল ব্যক্তি বেশী প্রিয়। খুবই দুর্বল, যঈফা (১৫৪)।

【41】

কৃপণতা

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির মধ্যে দু’টি স্বভাবের (চারিত্রিক দোষ) সমাবেশ হতে পারে নাঃ কৃপণতা ও চরিত্রহীনতা। যঈফ, যঈফা (১১১৯) নাকদুল কাত্তানী (৩৩/৩৩)। আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতারক-ধোঁকাবাজ, কৃপণ ও উপকার করে তার খোটা দানকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। যঈফ (বেচা-কেনা সংক্রান্ত হাদীস)। আবূ ঈসা বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে। হাসান, সহীহাহ্‌ (৯৩২)।

【42】

পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ

আবূ মাসঊদ আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যক্তির ধন-সম্পদ ব্যয় সাদকারূপে গণ্য। সহীহ্‌, সহীহা (৯৮২) , বুখারী ও মুসলিম। সাওবান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক তার দীনারগুলোর মধ্যে যেটি তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে, যে দীনারটি সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে তার পশুর জন্য ব্যয় করে এবং যে দীনারটি সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে তার মুজাহিদ সঙ্গীর জন্য ব্যয় করে, তা-ই সর্বোত্তম দীনার। আবূ কিলাবা তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বক্তব্য শুরু করেন পরিবার-পরিজন হতে। তারপর তিনি বলেনঃ যে লোক তার নিজের ছোট ছোট সন্তানদের জন্য ব্যয় করে, বিরাট সাওয়াবের ব্যাপারে তাঁর চেয়ে বেশি বড় আর কে আছে? আল্লাহ্‌ তার মাধ্যমে এদের মান-ইজ্জাত ও সম্মান-সম্ভ্রম রক্ষা করেন এবং তার ওয়াসীলায় এদের স্বনির্ভর করেন। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২৭৬০) , মুসলিম।

【43】

মেহমানদারী ও এর সময়সীমা

আবূ শুরাইহ্‌ আল ‘আদাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার উভয় চোখ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছে এবং আমার উভয় কান তাঁকে বলতে শুনেছে। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ ও আখিরাতের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে, তাকে জা-ইযা দেয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, জা-ইযা কি? তিনি বলেনঃ একদিন ও একরাতের পাথেয় সাথে দেয়া। তিনি আরো বলেনঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত। এর অতিরিক্তটুকু সাদকারূপে গণ্য। আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও আখিরাতের উপর সে লোক ঈমান রাখে যে যেন উত্তম কথা বলে, আর না হয় চুপ থাকে। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (৩৬৭৫) , বুখারী ও মুসলিম। আবূ শুরাইহ আল-কা‘বী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মেহমানদারী তিনদিন পর্যন্ত এবং জা-ইযা হল একদিন ও একরাতের পাথেয় প্রদান। এরপর তার জন্য যা ব্যয় করা হবে তা সাদকারূপে গণ্য। অতিথিসেবক বিরক্ত হতে পারে-কোন মেহমানের পক্ষেই এতটা সময় সেখানে থাকা বৈধ নয়। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (৩/২৪২) , বুখারী ও মুসলিম।

【44】

ইয়াতীম ও বিধবাদের ভরণ-পোষণের চেষ্টা সাধন

সাফওয়ান ইবনু সুলাইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টা সাধনকারী আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথে জিহাদকারী অথবা সারাদিন রোযা পালনকারী ও সারারাত নামায আদায়কারী সমান সাওয়াবের অধিকারী। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২১৪০) , বুখারী ও মুসলিম।

【45】

সহাস্য মুখ ও প্রশস্ত মন (নিয়ে কারো সাথে সাক্ষাৎ করা)

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি ভালকাজই সাদকারূপে গণ্য। তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য মুখে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেয়াও ভাল কাজের অন্তুর্ভূক্ত। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (৩/২৬৪)।

【46】

সত্য ও মিথ্যা প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের পথ অবলম্বন করবে। কেননা, সততাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। আর কল্যাণ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোন মানুষ প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের প্রতি মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে পরম সত্যবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যাকে অবশ্যই পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা (মানুষকে) পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। কোন বান্দাহ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ্‌ সে আল্লাহ্‌ তা‘আলার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে তখন তার মিথ্যা কথনের দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতা এক মাইল (বা দৃষ্টি সীমার বাইরে) দূরে সরে যায়। খুবই দুর্বল, যইফা (১৮২৮)। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, মিথ্যা হতে অধিক ঘৃণিত চরিত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আর কিছুই ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে কেউ মিথ্যা বললে তা অবিরত তার মনে থাকত, যে পর্যন্ত না তিনি জানতে পারতেন যে, মিথ্যাবাদী তাঁর মিথ্যা কথন হতে তাওবাহ করেছে। সনদ সহীহ।

【47】

নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও অশ্লীল আচরণ প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর শুধুমাত্র কদর্যতাই বাড়িয়ে দেয়। আর লজ্জা কোন জিনিসের সৌন্দর্য তাই বাড়িয়ে দেয়। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (৪১৮৫)। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বোত্তম চরিত্রবান ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (বর্ণনাকারী বলেন,) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্লীলভাষীও ছিলেন না এবং অশ্লীলতার ভানও করতেন না। সহীহ্‌, বুখারী ও মুসলিম, দেখুন সহীহাহ্‌ (৭৯১)।

【48】

অভিশাপ বা বদ-দু’আ

সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহ্‌ তা‘আলার অভিসম্পাত, তাঁর গযব ও জাহান্নামের বদ-দু’আ করো না। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৮৯৩)। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিস্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। সহীহ, সহীহাহ (৩২০)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একজন লোক বাতাসকে অভিসম্পাত করে। তিনি বললেনঃ বাতাসকে অভিশাপ প্রদান করো না, কারণ, সে তো হুকুমের গোলাম। কোন ব্যক্তি অপাত্রে অভিশাপ প্রদান করলে তা অভিশাপকারীর উপর ফিরে আসে। সহীহ, সহীহাহ (৫২৮)।

【49】

বংশধারার প্রসঙ্গে জ্ঞানদান

আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের বংশধারার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন কর, যাতে করে তোমাদের বংশীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে পার। কেননা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় থাকলে নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা তৈরী হয় এবং ধন-সম্পদ ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়। সহীহ, সহীহাহ্‌ (২৭৬)।

【50】

এক ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে অপর ভাইয়ের দু’আ

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অপর অনুপস্থিত ব্যক্তির দু‘আর চেয়ে বেশী দ্রুত আর কোন দু‘আ ক্ববূল হয় না। যঈফ, যঈফ আবূ দাউদ (২/২৬৯)।

【51】

গালিগালাজ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুইজন লোক একে অপরকে গালি দেয়ার অপরাধ প্রথমে গালি প্রদানকারীর উপর এসে পড়ে, যতক্ষন পর্যন্ত নির্যাতিত ব্যক্তি (দ্বিতীয় ব্যক্তি) সীমালংঘন না করে। সহীহ, মুসলিম। যিয়াদ ইবনু ইলাকা (রহঃ) তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিদেরকে তোমরা গালি দিও না, (যদি দাও) তাহলে জীবিতদেরই কষ্ট দিলে। সহীহ, রাওয (৩৫৭) , তা’লীকুর রাগীব (৪/১৩৫) , সহীহাহ’’ (২৩৭৯)।

【52】

মুসলমানদের গালি দেয়া

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী ও নাফারমানীমূলক কাজ এবং তাকে মেরে ফেলা বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা কুফরীমূলক কাজ। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৬৯) , বুখারী ও মূসলিম।

【53】

উত্তম কথা বলা প্রসঙ্গে

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা (প্রাসাদ) আছে। এর ভিতর হতে বাইরের এবং বাহির হতে ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বিদুঈন (গ্রাম্যলোক) দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এই বালাখানা কোন ব্যক্তির জন্য? তিনি বললেনঃ যে লোক মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়, সর্বদা রোযা পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে তার জন্য। হাসান, মিশকাত (২৩৩৫) , তা’লীকুর রাগীব (২/৪৬)।

【54】

সৎকর্মশীল গোলামের মর্যাদা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেই লোক কতইনা উত্তম যে নিজের প্রভুরও আনুগত্য করে এবং নিজের মনিবের হকও আদায় করে অর্থাৎ গোলাম। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (৩/১৫৯) , বুখারী ও মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন কস্তরীর টিলার উপর থাকবে। (এক) যে ক্রীতদাস আল্লাহ্‌ তা‘আলার হাকও আদায় করে এবং মনিবের হাকও আদায় করে, (দুই) যে ইমামের উপর তার মুসল্লিগণ সন্তুষ্ট এবং (তিন) যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে পাঁচবার নামাযের জন্য আহ্বান জানায়। যঈফ, মিশকাত (৬৬৬)।

【55】

মানুষের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা

আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় কর, মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর। হাসান, মিশকাত (৫০৮৩) , রাওযুন নাযীর (৮৫৫)

【56】

কু-ধারণা পোষণ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মন্দ ধারণা পোষণ করা হতে তোমরা দূরে থাক। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪১৭) , বুখারী ও মুসলিম।

【57】

কৌতুক করা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের (ছোটদের) সাথে মিশতেন। এমনকি আমার ছোট ভাইটিকে তিনি কৌতুক করে বলতেনঃ হে আবূ উমাইর! কি করেছে নুগাইর (ছোট পোষা পাখি)। সহীহ, বুখারী ও মুসলিম। ৩৩৩ নং হাদিস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনিতো আমাদের সাথে কৌতুকও করে থাকেন। তিনি বললেনঃ আমি শুধু সত্য কথাই বলে থাকি (এমনকি কৌতুকেও)। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৭২৬) , মুখতাসার শামা-ইল (২০২)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক আরোহণযোগ্য একটি বাহন চাইল। তিনি বললেনঃ একটি উষ্ট্রীর বাচ্চায় আমি তোমাকে আরোহণ করাব। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি উষ্ট্রীয় বাচ্চা দিয়ে কি করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উষ্ট্রী ব্যতীত আর কোন কিছু কি উট প্রসব করে? সহীহ্‌, মিশকাত (৪৮৮৬) , মুখতাসার শামা-ইল (২০৩)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) ।নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে “হে দুই কান বিশিষ্ট” বলে সম্বোধন করেন। সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল (২০০)

【58】

ঝগড়া-বিবাদ প্রসঙ্গে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাতিল ও জঘন্য মিথ্যা বলা ছেড়ে দিল, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে এক পাশে প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি ন্যায়ানুগ হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ ছেড়ে দিল, তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি নিজের চরিত্র উন্নত করে তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। এই শব্দে হাদীসটি যঈফ, ইবনু মাজাহ (৫১)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঝগড়াটে হওয়াই তোমার পাপিষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। যঈফ, যঈফা (৪০৯৬)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো না, তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করো না এবং তার সাথে এরূপ ওয়াদা করো না যা তুমি পরে ভেঙ্গে ফেলবে। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৮৯২)।

【59】

কোমল ধরনের আচরণ

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার জন্য একজন লোক অনুমতি চাইলো। আমি সে সময় তাঁর সামনে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ গোত্রের মধ্যে এই লোকটি অথবা গোত্রের এই ভাই কতই না মন্দ! তারপর তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের সম্মতি প্রদান করলেন এবং তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনি প্রথম অবস্থায় তার ব্যাপারে এইে এই কথা বললেন, তারপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললেন! তিনি বললেন, হে আইশা! মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার অশালীন আচরণ হতে মুক্তির জন্য জনগণ তাকে পরিত্যাগ করে। সহীহ, সহীহাহ (১০৪৯) , মুখতাসা শামা-ইল (৩০১) , বুখারী, মুসলিম।

【60】

বন্ধুত্ব ও বিদ্বেষ উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা

. আবূ হুরাইরা (রাঃ) (মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন বলেন) আমার অনুমান যে, তিনি এটা মারফূভাবে বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী স্বরূপ বর্ণনা করেছেন)। তিনি বলেছেনঃ নিজের বন্ধুর সাথে ভালবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সাথেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪৭২)।

【61】

অহংকার প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকারও (সামান্যতম) যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর সরিষার দানা সমপরিমান ঈমানও যার অন্তরে আছে সে জাহান্নামে যাবে না। সহীহ, তাখরীজ ইসলাহুল মাসা-জিদ (১১৫) , মুসলিম। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকারও আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও আছে সে জাহান্নামে যাবে না। তখন একজন বলল, আমার নিকট এটা তো খুবই পছন্দনীয় যে, আমার জামা-কাপড় সুন্দর হোক এবং আমার জুতা জোড়াও সুন্দর হোক। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা অবশ্যই সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। কোন ব্যক্তির সদর্পে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করাই হলো অহংকার। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৬২৬) , মুসলিম। সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিজেকে বড় বলে ভাবতে ভাবতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত সে অহংকারীদের তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। ফলে অহংকারীদের যে পরিণতি হয় তারও তাই হয়। যঈফ, যঈফা (১৯১৪)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। নাফি ইবনু জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে তিনি (যুবাইর) বলেন, তোমরা বলে থাক আমার মধ্যে অহংকার রয়েছে। অথচ আমি গাধায় আরোহণ করি, চাদর পরিধান এবং ছাগলের দুধ দোহন করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে এ কাজগুলো করে তার মধ্যে সামান্যতম অহংকারও নেই। সনদ সহীহ।

【62】

সচ্চরিত্র ও সদাচার

আবুদ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মু’মিনের দাঁড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহ্‌ তা‘আলা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৮৭৬) , রাওযুন নাযীর (৯৪১)। আবুদ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লায় মধ্যে সবচাইতে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারি ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোযাদার ও নামাযীর পর্যায়ে পৌছে যায়। সহীহ, প্রাগুক্ত। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ মুখ ও লজ্জাস্থান। সনদ, হাসান। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা। সনদ সহীহ।

【63】

ইহ্‌সান (অনুগ্রহ) এবং ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন

আবুল আহ্‌ওয়াস (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি কোন লোককে অতিক্রম করি, সে আমাকে পানাহার করায় না, মেহমানদারীও করে না। যদি ঐ লোকটি আমাকে অতিক্রম করে, আমি কি একইভাবে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি? তিনি বললেনঃ না, তুমি তার মেহমানদারী কর। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাকে খুবই পুরাতন পোশাক পরে থাকতে দেখে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার ধন-দৌলত আছে কি? আমি বললাম, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাকে উট, ছাগল-ভেড়া প্রভৃতি সকল প্রকার সম্পদই দিয়েছেন। তিনি বললেঃ তা তোমার শরীরে পরিলক্ষিত হওয়া উচিত। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৭৫) , সহীহাহ্‌ (১৩২০)। হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার অনুকরণপ্রিয় হয়ো না যে, তোমরা এরূপ বলবেঃ লোকরা যদি আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে তাহলে আমরাও ভাল ব্যবহার করব। যদি তারা আমাদের সাথে যুলুম করে তাহলে আমরাও যুলুম করব। বরং তোমরা নিজেদের অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল করে নাও যে, লোকেরা তোমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করলে তোমরাও ভাল ব্যবহার করবে। তারা তোমাদের সাথে অন্যায় ব্যবহার করলেও তোমরা যুলুমের পথ বেছে নিবে না। যঈফ, নাকদুল কাত্তানী (২৬) মিশকাত (৫১২৯),

【64】

ভাইদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা্হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোন অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেনঃ কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। হাসান, মিশকাত (৫০১৫)।

【65】

লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হচ্ছে দুর্ব্যবহারের অঙ্গ, আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারীর) জায়গা জাহান্নামে। সহীহ, সহীহাহ্ (৪৯৫) , রাওযুস নাযীর (৭৪৬)।

【66】

ধীর-স্থিরতা ও তাড়াহুড়া

আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস আল-মুযানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম আচরণ, দৃঢ়তা-স্থিরতা ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে নাবুওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ। হাসান, রাওযুন নাযীর (৩৮৪) , তা’লীকুর রাগীব (৩/৬)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আবদুল কাইস বংশের প্রতিনিধি দলের নেতা আশাজ্জকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এরুপ দুটি গুন রয়েছে যা আল্লাহ্‌ তা‘আলা অধিক পছন্দ করেনঃ সহিষ্ণুতা ও স্থিরতা। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪১৮৮) , মুসলিম। সাহল ইবনু সা’দ আস-সায়িদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধৈর্য ও স্থিরতা আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ হতে, আর তাড়াহুড়া শাইতানের পক্ষ হতে। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫০৫৫)

【67】

নম্রতা প্রসঙ্গে

আবুদ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে নমনীয়তার অংশ দেয়া হয়েছে তাকে কল্যাণের অংশ দেয়া হয়েছে। নমনীয়তার অংশ হতে যে ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে কল্যাণের অংশ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। সহীহ, সহীহাহ্ (৫১৫, ৮৭৪)।

【68】

অত্যাচারিতের বদ-দু’আ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুআয (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণের সময় বলেনঃ অত্যাচারিতের বদ-দু’আকে ভয় কর। কেননা, তার বদ-দু’আ এবং আল্লাহ্ তা‘আলার মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। সহীহ্, সহীহ আবূ দাঊদ (১৪১২) , বুখারী, মুসলিম।

【69】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র বৈশিষ্ট্য

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন আমি দশবছর যাবতকাল ধরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেবা-যত্ন করেছি। তিনি আমার প্রতি কখনো ‘উহ্’ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি (অসন্তোষ প্রকাশ করেননি)। তিনি আমার কোন কাজে কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেননি যে, এটা তুমি করলে কেন অথবা কোন কাজ ছুটে যাওয়ার কারণেও তিনি বলেননি যে, এটা তুমি কেন করলে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সবচাইতে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ। আমি রেশম এবং পশম মিশিয়ে বানানো কাপড়ও নিজ হাতে ছুয়ে দেখেছি এবং খাঁটি রেশমী কাপড়ও ছুয়েছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের চেয়ে অধিক নরম ও মসৃন কোন কিছু স্পর্শ করিনি। আমি মৃগনাভির গন্ধও গ্রহণ করেছি এবং আতরের গন্ধও গ্রহণ করেছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরের ঘামের চেয়ে অধিক সুগন্ধ কোন কিছুতেই পাইনি। সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল (২৯৬) , বূখারী, মুসলিম। আবূ আবদুল্লাহ আল-জাদালী (রহঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র-মাধুর্য সম্বন্ধে আইশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী ছিলেন না, অশ্লীল ব্যবহারও করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হট্টগোল করতেন না এবং অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন। সহীহ, মুখতাসার শামা-ইল (২৯৮) , মিশকাত (৫৮২০)

【70】

উত্তমভাবে ওয়াদা পালন

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খাদীজা (রাঃ)-এর উপর যতটুকু ঈর্ষা হয়েছিল, এতটুকু পরিমাণ ঈর্ষা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আর কোন স্ত্রীর উপর হয়নি। অথচ আমি তাঁকে পাইনি। আমার ঈর্ষার কারণ ছিল, তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি বেশি স্মরণ করতেন। তিনি কখনো ছাগল যবেহ করলে খাদীজা (রাঃ)-এর বান্ধবীদের খুঁজে খুঁজে তার গোশত্ উপহার স্বরূপ প্রদান করতেন। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【71】

উন্নত চারিত্রিক গুণ

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামাত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামাত দিবসে আমার নিকট হতে অনেক দূরে থাকবে তারা হলোঃ বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! বাচাল ও ধৃষ্ট-দাম্ভিকদের তো আমরা জানি কিন্তু মুতাফাইহিকূন কারা? তিনি বললেনঃ অহংকারীরা। সহীহ, সহীহাহ্ (৭৯১।

【72】

অভিশাপ ও তিরস্কার করা।

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী হতে পারে না। সহীহ, মিশকাত তাহকীক সানী (৪৮৪৮) , জিলালুল জান্নাত (১০১৪)।

【73】

অধিক ক্রোধ বা উত্তেজনা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে বলল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করতে পারি। তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেনঃ ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না। সহীহ, বুখারী।

【74】

ক্রোধ নিয়ন্ত্রন প্রসঙ্গে

সাহ্‌ল ইবনু মুআয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রাঃ) হতে তার বাবা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার ক্রোধকে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রেখেও তা নিয়ন্ত্রণ করে-আল্লাহ্‌ তা‘আলা কিয়ামাত দিবসে তাকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে এনে জান্নাতের যে কোন হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেয়ার অধিকার দিবেন। সহীহ, সহীহাহ্ (১৭৫০)।

【75】

বড়দের সম্মান করা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে যুবক প্রবীণ ব্যক্তিকে সম্মান করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবেন যে তাকে তার প্রবীণ বয়সে সম্মান করবে। যঈফ, যঈফা (৩০৪), মিশকাত (৪৯৭১)

【76】

পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীদের প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের দরজাগুলো সোমবার ও বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়। যেসব পাপী আল্লাহ্‌ তা‘আলার সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেনি তাদেরকে মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীর ব্যাপারে (আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন) : এদেরকে ফিরিয়ে দাও যে পর্যন্ত না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। সহীহ, ইরওয়া (৩/১০৫) , গাইয়াতুল মারাম (৪১২) , মুসলিম।

【77】

ধৈর্য ধারণ করা

আবূ সাঈদ (রাঃ) আনসারদের কয়েকজন লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে যৎসামান্য সাহায্য প্রার্থনা করল। তাদেরকে তিনি তা দিলেন। তারা আরো চাইলে তিনি তাদেরকে তা দিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে সম্পদই আছে তোমাদের তা না দিয়ে কখনো জমা করে রাখি না। যে স্বনির্ভর হতে চায় আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে স্বনির্ভর করেন। যে (অপরের নিকট চাওয়া হতে) সংযমী হতে চায় আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে সংযমী করেন। যে ধৈর্যশীল হতে চায়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে ধৈর্যের তাওফীক দেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি কল্যাণকর প্রাচর্যপুর্ণ কোন সম্পদ কাউকে দেয়া হয়নি। সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (২/১১) . সহীহ আবূ দাউদ (১৪৫১) , বুখারী, মুসলিম।

【78】

দ্বিমুখীপনা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে দ্বিমুখী স্বভাবের মানুষেরা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গন্য হবে। সহীহ, সহীহুল জামি’ (২২২৬) , সহীহুল আদাবিল মুফরাদ (৯৮৭) , বুখারী, মুসলিম।

【79】

চোগলখোর (পরোক্ষে নিন্দাকারী) প্রসঙ্গে

হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) তিনি বলেন, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)-কে একজন লোক অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে বলা হলো, এই লোক জনসাধারণের কথা প্রশাসকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। (একথা শুনে) হুযাইফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ চোগলখোর জান্নাতে যেতে পারবে না। সহীহ, সহীহাহ্ (১০৩৪) , গাইয়াতুল মারাম (৪৩৩) , বুখারী, মুসলিম।

【80】

অল্প কথা বলা

আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুইটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকীর) দুইটি শাখা। সহীহ, ঈমান ইবনে আবী শাইবা (১১৮) , মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৭৯৬)

【81】

বক্তৃতা-ভাষণেও রয়েছে যাদুকরী প্রভাব

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলে দুইজন লোক এসে উপস্থিত হয়। তারা দুজনে এরকম জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিল যে, জনগণ আশ্চর্য্ হয়ে গেল। তখন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন কোন বক্তৃতায় যাদু রয়েছে অথবা কোন কোন ভাষণে রয়েছে যাদুকরী প্রভাব। সহীহ্ঃ বুখারী।

【82】

বিনয় ও নম্রতা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত বা দানের কারনে কখনো সম্পদের কমতি হয় না। অবশ্যই ক্ষমা ও উদারতার দ্বারা আল্লাহ্‌ তা‘আলা মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে যে লোক বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে অতি মর্যাদা সম্পন্ন করেন। সহীহ, ইরওয়া (২২০০) , সহীহাহ (২৩২৮) , মুসলিম।

【83】

যুলুম-অত্যাচার প্রসঙ্গে

ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে যুলুম-অত্যাচার অন্ধকারের মতো আবির্ভূত হবে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【84】

নিয়ামাতের মধ্যে ত্রুটি সন্ধান করা অনুচিত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন খাদ্যের উপর কখনো দোষারোপ করতেন না। রুচি হলে খেতেন আর না হয় পরিত্যাগ করতেন। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【85】

মু’মিন লোকেকে সম্মান প্রদর্শন করা

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেনঃ হে ঐ জামা’আত, যারা মুখে ইসলাম ক্ববূল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হযনি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবেনা এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ্‌ তা‘আলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও। বর্ণনাকারী (নাফি) বলেন, একদিন ইবনু উমার (রাঃ) বাইতুল্লাহ বা কা’বার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কতই না ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতইনা সম্মানি তা কিন্তু তোমার চেয়েও মু’মিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকটে অনেক বেশি। হাসান, মিশকাত (৫০৪৪) , তা’লীকুর রাগীব (৩/২৭৭)।

【86】

অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সহনশীল ও ধৈর্যশীল হয় এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় না। যঈফ, মিশকাত (৫০৫৬)

【87】

কিছু না পেয়ে পাওয়ার ভান করা

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাউকে কিছু দান করা হলে পরে তার (দান গ্রহীতার) সংগতি হলে সে যেন এর প্রতিদান দেয়। সংগতি না হলে সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা, যে লোক প্রশংসা করল সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। আর যে তা গোপন রাখল সে অকৃতজ্ঞ হলো। যে লোক এমন কিছু পাওয়ার ভান করল যা তাকে দান করা হয়নি, সে যেন ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার দুটি পোশাক পরল। হাসান, সহীহাহ (২৬১৭) , তা’লীকুর রাগীব (২/৫৫)। উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, “তোমাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কল্যাণকর প্রতিদান দিন” তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল। সহীহ মিশকাত (৩০২৪) , তা’লীকুর রাগীব (২/৫৫) , রাওযুন নাযীর (৮)।