26. চিকিৎসা

【1】

রুগ্ন অবস্থায় সংযত পানাহার

কাতাদা ইবনুন নু’মান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা যখন কোন বান্দাহকে ভালবাসেন তাকে দুনিয়া হতে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে পানি হতে বাঁচিয়ে রাখে। সহীহ, মিশকাত তাহকীক ছানী (৫২৫০)। উম্মুল মনিযির (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বাসায় আসলেন। আলী (রাঃ)-ও তাঁর সাথে ছিলেন। আমাদের খেজুরের ছড়া ঝুলিয়ে রাখা ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে খেতে আরম্ভ করলেন। তাঁর সাথে আলী (রাঃ)- ও খেতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে বললেনঃ হে আলী! থাম, থাম, তুমি তো অসুস্থতাজনিত দুর্বল। বর্ণনাকারী বলেন, আলী (রাঃ) বসে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেতে থাকলেন। আমি (উম্মুল মুনযির) তাদের জন্য বীট এবং বার্লি বানিয়ে আনলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আলী! তুমি এটা খেতে পার, তোমার জন্য এটা বেশি উপযোগী। হাসান, দেখুন পরবর্তী হাদীস।

【2】

চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা

উসামা ইবনু শারীক (রাঃ) তিনি বলেন, মফস্বলের লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি (রোগীর) চিকিৎসা করব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা কর। আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ বা নিরাময়ের ব্যবস্থা রাখেননি (রোগও দিয়েছেন রোগ সারাবার ব্যবস্থাও করেছেন)। কিন্তু একটি রোগের কোন নিরাময় নেই। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! সে রোগটি কি? তিনি বললেনঃ বার্ধক্য। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৩৪৩৬)।

【3】

রোগীর পথ্য

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের লোকদের জ্বর হলে তিনি দুধ ও ময়দা সহযোগে তরল পথ্য বানানোর নির্দেশ দিতেন। তা বানানো হলে তিনি পরিবারে লোকদের নির্দেশ দিতেন এটা হতে রোগীকে পান করাতে। তিনি বলতেনঃ এটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে শক্তি যোগায় এবং রোগীর মনের ক্লেশ ও দুঃখ দূর করে। যেমন তোমাদের কোন মহিলা পানি দ্বারা তার মুখমন্ডলের ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৪৪৫)

【4】

রোগীকে জোর করে পানাহার করানো নিষেধ

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের রোগীদেরকে জোরপূর্বক পানাহারে বাধ্য করো না। কেননা, প্রাচুর্যময় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পানাহার করান। সহীহ, ইবনু মাজাহ (৩৪৪৪)।

【5】

কালোজিরার বিবরণ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এই কালো বীজ (কালোজিরা) নিজেদের জন্য ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা, মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের নিরাময় এর মধ্যে রয়েছে। ‘আস-সাম’ অর্থ ‘মৃত্যু’। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৪৭), বুখারী, মুসলিম।

【6】

উটের প্রসাব পান করা প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) উরাইনা বংশের কিছু লোক মাদীনায় আসলে এ অঞ্চলের আবহাওয়া তাদের জন্যে অনুকূল হয়নি। রাসূলুল্লা (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সাদকার উটের নিকট পাঠিয়ে দেন এবং বলেনঃ তোমরা এর দুধ ও প্রসাব পান কর। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【7】

বিষপানে বা অন্যকিছু প্রয়োগে আত্মহত্যা করলে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) মারফূভাবে বর্ননা করেনঃ যে লোক লোহার অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে ঐ লৌহঅস্ত্র হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাজির হবে। সে নিজের পেটে এতা অবিরত ভাবে বিদ্ধ করতে থাকবে এবং সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। যে লোক বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে ঐ বিষ হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাযির হবে। সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এবং সর্বদা এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৬০) বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লৌহ অস্ত্রের মাধ্যমে যে লোক আত্মহত্যা করবে, সে ঐ অস্ত্র হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাযির হবে। জাহান্নামে সে এটা সর্বদাই তার পেটের মধ্যে বিদ্ধ করতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে ঐ বিষ হাতে নিয়ে কিয়ামত দিবসে হাযির হবে জাহান্নামে। সে উহা সর্বদা পান করতে থাকবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। পাহাড়ের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে যে লোক আত্মহত্যা করবে, সে সর্বদাই জাহান্নামের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে থাকবে এবং চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, হারাম ঔষধ প্রয়োগ করতে রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। সহীহ, ইবনু মাজাহ (৩৪৫৯)।

【8】

নেশা জাতীয় দ্রব্য দিয়ে চিকিৎসা করা নিষেধ

ওয়াইল (রাঃ) তিনি কোন একসময় রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাকে সুয়াইদ ইবনু তারিক অথবা তারিক ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) মাদক দ্রব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তিনি এটা ব্যবহার করতে তাকে নিষেধ করেন। তিনি (সুয়াইদ) বললেন, আমরা ঔষধ হিসাবে এটা ব্যবহার করব। রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা কোন ঔষধ নয়, বরং এটা স্বয়ং একটা রোগ। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫০০), মুসলিম।

【9】

নস্য (নাক দিয়ে ব্যবহার্য ঔষধ) ইত্যাদি প্রসঙ্গে

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সব ঔষধ তোমরা ব্যবহার কর তার মধ্যে উত্তম ঔষধ হচ্ছে নস্য, মুখ দিয়ে সেবন করার ঔষধ, রক্তমোক্ষণ ও জোলাপ (বিরেচক ঔষধ)। রাসূল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হলে সাহাবীগণ তাঁকে মুখ দিয়ে ঔষধ সেবন করান। তারা অবসর হলে তিনি বলেনঃ এদের সবাইকে লাদু (মুখ দিয়ে সেব্য ঔষধ) সেবন করাও। রাবী বলেন, আব্বাস (রাঃ) ব্যতীত সবাইকে লাদু সেবন করানো হয়। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৪৭৩)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যেসব ঔষধ ব্যবহার কর তার মধ্যে উত্তম ঔষধ হচ্ছে, লাদুদ, নস্য, রক্তমোক্ষণ ও জোলাপ। তোমরা যে সুরমা ব্যবহার কর তার মধ্যে উত্তম হচ্ছে ইসমিদ নামক সুরমা। কেননা এটা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং চোখের পাতার পশম গজায়। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি সুরমাদানী ছিল। তিনি ঘুমানোর পূর্বে তা থেকে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগাতেন। যঈফ, “ইসমিদ সুরমা লাগানো” অংশটুকু সহীহ। ইবনু মাজাহ (৩৪৯৫, ৩৪৯৭, ৩৪৯৯), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। এটি আব্বাস ইবনু মানসূর (রহঃ) বর্ণিত হাদীস।

【10】

দাগ লাগানো (উত্তপ্ত লোহার মাধ্যমে শরীর দগ্ধ করা) নিষেধ

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) উত্তপ্ত লোহার মাধ্যমে শরীরে দাগ দিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা যখন রোগাক্রান্ত হয়ে উত্তপ্ত লোহা দ্বারা দাগ লাগিয়েছি তখন ব্যর্থতা ও বিফলতা ব্যতীত আর কিছুই পাইনি। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৯০)।

【11】

উত্তপ্ত লৌহ দ্বারা দগ্ধ করার অনুমতি প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু যুরারাকে কাঁটা বিদ্ধ হওয়ার কারণে উত্তপ্ত লোহার মাধ্যমে দগ্ধ করেছিলেন। সহীহ, মিশকাত তাহকীক ছানী (৩৫৩৪)।

【12】

রক্তক্ষরণ প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘাড়ের দুই পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফুলা অংশে রক্তক্ষরণ করাতেন। তিনি মাসের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখে রক্তক্ষরণ করাতেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৮৩)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, মিরাজের রাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, এই রাতে ফেরেশতাদের যে দলের সম্মুখ দিয়েই তিনি যাচ্ছিলেন তারা বলেছেন, “আপনার উম্মাতকে রক্তক্ষরণের নির্দেশ দিন”। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৭৭)। ইকরিমা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর তিনটি গোলাম ছিল। এরা রক্তমোক্ষণের কাজ করত। এদের মধ্যে দু’টি গোলাম তার ও পরিবারের উপার্জনের উদ্দেশ্যে অর্থের বিনিময়ে রক্তমোক্ষণ করত এবং অপরটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও তার পরিবারের লোকদের রক্তমোক্ষণ করত। -সনদ দুর্বল

【13】

ঔষধ হিসাবে মেহেদীর প্রয়োগ

আলী ইবনু উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে তাঁর দাদী তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খাদিমা (সেবিকা) ছিলেন। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দেহে কোন তলোয়ার বা দা-এর আঘাতে ক্ষত হতো, তিনি তাতে মেহেদী লাগানোর জন্য আমাকে নির্দেশ দিতেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫০)।

【14】

ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি মাকরূহ্

আক্কার ইবনুল মুগীরা (রহঃ) হতে তাঁর বাবা তিনি (মুগীরা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক (শরীরে) দাগ নেয় অথবা ঝাড়ফুঁক করায় সে তাওয়াক্বকুল (আল্লাহ তা’আলার উপর নির্ভরশীলতা) হতে বিচ্যুত হয়েছে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৮৯)।

【15】

ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির অনুমতি প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) জ্বর, বদ-নজর ও ব্রণ-ফুসকুড়ি (ক্ষুদ্র ফোঁড়া) ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝাড়ফুঁক দেয়ার সম্মতি প্রদান করেছেন। সহীহ, মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, জ্বর ও ফুসকুড়ির ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝাড়ফুঁক দেয়ার সম্মতি প্রদান করেছেন। সহীহ, মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। তিনি আরও বলেন, আমার মতে পূর্ববর্তী হাদীসের তুলনায় এ হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ্। বুরাইদা, ইমরান ইবনু হুসাইন, জাবির, আইশা, তালক ইবনু আলী, আমর ইবনু হাযম ও আবূ খিযামা (রাঃ) হতে তাঁর বাবার সূত্রে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বদ-নজর ও জ্বর ব্যতীত আর অন্য কোন ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক বৈধ নয়। সহীহ, মিশকাত (৪৫৫৭), বুখারী মাওকুফরূপে বর্ণনা করেছেন।

【16】

সূরা ফালাক ও সূরা নাস-এর মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্বিন ও মানুষের কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫১১)।

【17】

কু-দৃষ্টিতে ঝাড়ফুঁক করা

উবাইদ ইবনু রিফাআ আয-যুরাকী (রহঃ) আসমা বিনতু উমাইস (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), জাফরের সন্তানদের তাড়াতাড়ি বদ-নজর লেগে যায়। আমি কি তাদেরকে ঝাড়ফূঁক করতে পারি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। কেননা, কোন জিনিস যদি ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারত তাহলে বদ-নজরই তা অতিক্রম করতে পারত। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫১০)।

【18】

(হাসান-হুসাইন (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আ পাঠ করে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন : “আমি তোমাদের উভয়ের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলার পরিপূর্ণ কল্যাণময় কালামের মাধ্যমে প্রতিটি শাইতান, জীবননাশক বিষ ও অনিষ্টকারী কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। তিনি বলতেন : এভাবে ইবরাহীম (আ:) তাঁর দুই ছেলে ইসহাক ও ইসমাঈলের জন্য আশ্রয় চাইতেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫২৫), বুখারী।

【19】

বদ নজর সত্য এবং এজন্য গোসল করা

হাইয়্যা ইবনু হাবিস আত-তামীমী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ হাম্ম বলতে কিছু নেই এবং বদনজর সত্য। যঈফ, যঈফা (৪৮০৪)। “আল-আইনু হাক্কুন” অংশটুকু সহীহ। সহীহা, (১২৪৮)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভাগ্যকে কোন জিনিস অতিক্রম করতে সমর্থ হলে কু-দৃষ্টিই তা অতিক্রম করতে পারত। যদি এ প্রসঙ্গে কেউ তোমাদেরকে গোসল করাতে চায় তাহলে তোমরা তাতে সম্মত হও। সহীহ, সহীহাহ্ (১২৫১,১২৫২), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (২৪২), মুসলিম

【20】

ঝাড়ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ করা

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন। আমরা একটি জনপদে আসার পর তাদের কাছে মেহমানদারী প্রার্থনা করলাম। কিন্তু তারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করাল না। এরকম পরিস্থিতিতে তাদের বংশের প্রধানকে বিচ্ছু দংশন করে। তারা আমাদের নিকট এসে বলে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে বিচ্ছু দংশনকারীকে ঝাড়ফুঁক করতে পারে? আমি বললাম, হ্যাঁ আমি নিজেই। কিন্তু তোমরা যদি আমাদেরকে এক পাল বকরী প্রদান না কর, তাহলে আমি ঝাড়ফুঁক করতে সম্মত নই। তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে ত্রিশটি বকরী প্রদান করব। আমরা এ প্রস্তাবে রাজি হলাম। আমি সাতবার সূরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়ফুঁক করলাম। ফলে সে রোগমুক্ত হলো এবং আমরা বকরীগুলো হস্তগত করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এই বিষয়ে আমাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। আমরা বললাম, তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত (সিদ্ধান্তে পৌছতে) তাড়াহুড়া করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হওয়ার পর আমি যা করেছি তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেনঃ কিভাবে তুমি জানতে পারলে, এটা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়? বকরীগুলো হস্তগত কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রেখ। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২১৫৬), বুখারী, মুসলিম। আবূ সাঈদ (রাঃ) কোন এক আরব গোত্রের অঞ্চল দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একদল সাহাবী পথ চলছিলেন। তারা তাদেরকে অতিথিসেবা করল না। ঘটনাক্রমে তাদের বংশের প্রধান ব্যক্তিটি অসুস্থ হয়ে যায়। তারা আমাদের নিকট এসে বলে, তোমাদের নিকট কি কোন ঔষধ আছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ আছে কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। অতএব, যে পর্যন্ত তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক ঠিক না করবে আমরা চিকিৎসা করব না। আমাদেরকে একপাল ছাগল প্রদান করতে তারা রাজি হলো। আমাদের মধ্যেকার একজন সূরা ফাতিহা দ্বারা তাকে ঝাড়ফুঁক করল। ফলে সে রোগমুক্ত হয়ে গেল। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি তাকে খুলে বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি কিভাবে জানতে পারলে যে, এর মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা যায়? বর্ণনাকারী এ বিষয়ে তাঁর পক্ষ হতে কোন নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করেননি। তিনি বললেনঃ এগুলো তোমরা ভাগ কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা ভাগ রাখ। সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।

【21】

ঝাড়ফুঁক ও ঔষধের বর্ণনা

আবূ খিযামা (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা যে ঝাড়ফুঁক করি, ঔষধ ব্যবহার করি এবং বিভিন্ন রকম সাবধানতা অবলম্বন করে থাকি, এগুলো কি আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্ধারিত ভাগ্যকে বাতিল করতে পারে? এ ব্যাপারে আপনার কি মত? তিনি বললেনঃ এগুলোও আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্ধারিত ভাগ্যের অন্তর্ভুক্ত। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৪৩৭)

【22】

আজওয়া খেজুর ও ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা) প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজওয়া হচ্ছে জান্নাতের খেজুরবিশেষ এবং এর মধ্যে বিষের প্রতিষেধক রয়েছে। ছত্রাক হলো মান নামক আসমানী খাবারের অন্তর্ভূক্ত এবং এর পানি চক্ষুরোগের প্রতিষেধক। হাসান সহীহ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪২৩৫)। সাঈদ ইবনু যাইদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘ছত্রাক’ মান্নের অন্তর্ভুক্ত। এর পানি চোখের জন্য নিরাময়। সহীহ, রাওযুন নাযীর (৪৪৪), বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিছু সাহাবী বলেন, ছত্রাক হলো যমীনের বসন্ত রোগ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ছত্রাক হলো মান্নের অন্তর্ভুক্ত এবং এর পানি চক্ষুরোগের প্রতিষেধক। আজওয়া হলো বেহেশতের খেজুরের অন্তর্ভুক্ত এবং এটা বিষের প্রতিষেধক। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। কাতাদাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি তিনটি অথবা ৫টি অথবা ৭টি ছত্রাক নিয়ে এর রস বের করলাম, তারপর রস টুকু বোতলে রেখে দিলাম, তারপর উহাদ্বারা আমার এক দাসীর চোখে সুরমা লাগালে তার চোখ ভালো হয়ে গেল। সনদ দুর্বল, মাওকূফ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ কালো জিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। সনদ দুর্বল

【23】

গণকের পারিশ্রমিক

আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, কুকুরের বিক্রয় মূল্য, বেশ্যার পারিশ্রমিক এবং গণকের উপঢৌকনকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষিদ্ধ করেছেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২১৫৯)।

【24】

তাবিজ ইত্যাদি ঝুলানো মাকরূহ্

ঈসা ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মা’বাদ আল-জুহানীর অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে গেলাম। তিনি বিষাক্তি ফোঁড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, কিছু তাবিজ-তুমার ঝুলিয়ে রাখছেন কেন? তিনি বললেন, মৃত্যু তো এর চেয়েও নিকটে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোনকিছু ঝুলিয়ে রাখে (তাবিজ-তুমার) তাকে তাঁর উপরই সোপর্দ করা হয়। সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (২৯৭)।

【25】

পানি ঢেলে জ্বর ঠান্ডা করা

রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্বর হচ্ছে জাহান্নামের একটি উত্তাপ। তোমরা পানি ঢেলে তা ঠান্ডা কর। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৭৩), বুখারী, মুসলিম। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপের অংশবিশেষ। তোমরা পানি ঢেলে এটাকে ঠান্ডা কর। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【26】

জ্বর ও বেদনা উপশমের দু‘আ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জ্বর ও অন্যান্য সকল প্রকার ব্যথায় এই দু’আ পাঠের তালিম দিতেনঃ মহান “আল্লাহ্‌ তা’আলার নামে, আমি মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করি রক্তচাপের আক্রমণ হতে এবং জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের ক্ষতি হতে। যঈফ, মিশকাত (১৫৫৪)

【27】

দুগ্ধবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা

আইশা (রাঃ) হতে জুদামা বিনতু ওয়াহ্ব (রাঃ) তিনি (জুদামা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আমি দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীর সাথে সহবাস করাকে নিষিদ্ধ করতে ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমি অবহিত হলাম যে, পারস্য ও রোমের (এশিয়া মাইনর) জনগণ এটা করে থাকে (দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকাকালীন সময়ে স্ত্রী সহবাস করে)। অথচ তাদের সন্তানদের তারা হত্যা করে না (উল্লেখিত সময়ে সহবাসের কারণে শিশুর কোন ক্ষতি হয় না)। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২০১১), মুসলিম। জুদামা বিনতু ওয়াহ্ব আল-আসাদীয়্যাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন: আমি সন্তানের দুধ পানের সময়সীমার মধ্যে স্ত্রীসহবাস করাকে নিষিদ্ধ করতে চাইলাম। অবশেষে আমি জানলাম যে, পারস্য ও রোমের জনগণ (এ সময়) স্ত্রীসহবাস করে থাকে। এর ফলে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।

【28】

নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের প্রদাহের ঔষধ

যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুসফুসের প্রদাহে যাইতূন ও ওয়ারসের (ওষধি বিশেষ) প্রশংসা করতেন। কাতাদা (রাহ:) বলেন, দেহের যে দিক আক্রান্ত, এ ঔষধ চামচ দিয়ে মুখের সেদিক দিয়ে ঢালতে হবে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৪৬৭) যাইদ ইবনু আরকাম (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুসতে বাহ্‌রী (চন্দন কাঠ) ও যাইতূনের তৈল দিয়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করার নির্দেশ (পরামর্শ) দিয়েছেন। দুর্বল, দেখুন পূর্বের হাদীস

【29】

দু’আ পাঠ করে ব্যথার উপর হাত বুলানো

উসমান ইবনু আবুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন। আমি তখন ধ্বংসাত্মক ব্যথার কারণে অস্থির ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যথার জায়গাতে তোমার ডানহাত দিয়ে সাতবার মর্দন কর এবং বল, “ আমি আল্লাহ তা’আলার ইজ্জাত ও সম্মান, তাঁর কুদরাত ও শক্তি এবং তাঁর রাজত্ব, সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্বের নিকট আমার এই কষ্ট হতে মুক্তি প্রার্থনা করছি”। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তা-ই করলাম। আমার সম্পূর্ণ ব্যথাই আল্লাহ তা’আলা সারিয়ে দিলেন। আমি এরপর হতেই আমার পরিবারের লোকদেরকে এবং অন্যান্যদেরকে এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছি। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫২২), মুসলিম।

【30】

সোনামুখী গাছ ও এর পাতা

আসমা বিনতু উমাইস (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করেন: তোমরা কি দিয়ে জোলাপ দাও? তিনি বললেন, শুবরুম (ছোলার মত এক প্রকার দানা) দিয়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএটা তো খুব গরম ঔষধ। আসমা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি সোনামুখী গাছের পাতা দিয়ে জোলাপ দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘মৃত্যু’ নামক রোগের নিরাময় যদি কোন জিনিস দিয়ে সম্ভব হত তবে সোনামুখী গাছ দিয়েই তা সম্ভব হত। যঈফ, মিশকাত (৪৫৩৭), আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【31】

মধু দ্বারা চিকিৎসা প্রসঙ্গে

আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একজন লোক এসে বলল, আমার ভাইয়ের পাতলা পায়খানা (উদরাময়) হচ্ছে। তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে তাকে মধু পান করায়, তারপর এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , আমি তাকে মধু পান করিয়েছি। কিন্তু তাতে দাস্ত আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। বর্ণনাকারী বলেন, সে তাকে মধু পান করানোর পর এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , আমি তাকে তা পান করিয়েছি। কিন্তু এর ফলে তাঁর দাস্ত আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা সত্য বলেছেন (মধুতে নিরাময় আছে), কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেটই মিথ্যা বলছে। আবার তাকে মধু পান করাও। অতএব, লোকটি তাকে মধু পান করায় এবং সে সুস্থ হয়ে উঠে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【32】

রোগীর জন্য দু’আ তাঁর সুস্থতার কারণ হয়

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি কোন রোগীকে দেখতে যায় যার মৃত্যুক্ষণ আসেনি, সে তাকে সাতবার এই দু’আ করলে : “আমি মহান আরশের রব (প্রভু) মহামহিম আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ প্রার্থনা করছি, তিনি তোমাকে রোগ হতে সুস্থতা দান করুন”, তাকে রোগমুক্ত করা হবে। সহীহ, মিশকাত (১৫৫৩), আল কালিমুত তাইয়্যিব (১৪৯)।

【33】

জ্বরের তদবীর

সাওবান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জ্বর হল জাহান্নামের একটি টুকরা। তোমাদের কারো জ্বর হলে সে যেন তা পানি ঢেলে নিভায়। (এর নিয়ম হচ্ছে) ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রবাহমান ঝর্ণায় নেমে স্রোত প্রবাহের দিকে মুখ করে সে বলবে, “আল্লাহ্‌ তা’আলার নামে, হে আল্লাহ্‌! তোমার বান্দাকে রোগমুক্ত করে দাও এবং তোমার রাসূলকে সত্যবাদী প্রমাণ কর”। তারপর ঝর্ণার পানিতে তিনবার ডুব দিবে। তিনি দিন এরূপ করবে। তিন দিনেও যদি জ্বর না ছাড়ে তবে পাঁচ দিন এরকম করবে। পাঁচ দিনেও ভাল না হলে সাত দিন এরকম করবে। সাত দিনেও ভাল না হলে নয় দিন করবে। আল্লাহ্‌ তা’আলার হুকুমে জ্বর নয় দিনের বেশী অতিক্রম করতে পারবে না। যঈফ, যঈফা (২৩৩৯), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব।

【34】

ছাই দিয়ে চিকিৎসা করা

আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো এবং আমিও তা শুনলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জখমের মধ্যে কোন দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক ভাল আর কোন ব্যক্তি জানে না। আলী (রাঃ) তাঁর ঢালে করে পানি নিয়ে আসছিলেন এবং ফাতিমা (রাঃ) তাঁর জখমের রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন। একটি মাদুর পুড়িয়ে তার ছাই তাঁর ক্ষত স্থানের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রা) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: অসুস্থ ব্যক্তি যখন সুস্থ্য হয়ে ভাল হয়ে যায় তার উদাহরণ হল আকাশ হতে পতিত স্বচ্ছ পরিষ্কার শিশিরের মত। -মাউযূ

【35】

(জ্বর পৃথিবীতে মু’মিন গুনাহগানের শাস্তি)

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তাকে বেঁচে থাকারই আশান্বিত করবে। তা যদিও কোন কিছুকে (তাকদীরকে) রোধ করতে পারবে না তবুও তার মনটা এতে প্রফুল্ল হবে, শান্তি পাবে। খুবই দুর্বল। যঈফা (১৮৪), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বললেন, “তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সেটা আমার অগ্নি, আমার গুনাহগার বান্দার উপর উহা চাপিয়ে দিয়ে থাকি, যাতে উহা তাঁর জাহান্নামের শাস্তির অংশ হয়ে যায়” অর্থাৎ পরকালের পরিবর্তে দুনিয়াতেই তাঁর শাস্তি হয়ে যায়। সহীহ, সহীহাহ্ (২/৯৮)। হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, গুনাহর কারণে তাদের মর্যাদার ঘাটতি পূরণের কাফ্ফারা স্বরূপ তারা রাতের বেলায় জ্বরের আকাঙ্খা করত।