28. ওয়াসিয়াত
তিনের-একাংশ সম্পত্তিতে ওয়াসিয়াত সীমাবদ্ধ
আমির ইবনু সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে তার বাবার সূত্রে তিনি (সা’দ) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে গেলাম এবং মৃত্যুর আশংকা করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে এলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার প্রচুর ধন-সম্পদ রয়েছে। মাত্র একটি মেয়ে সন্তান ব্যতীত আমার আর কোন উত্তরাধিকারী নেই। আমি আমার সমস্ত সম্পদের ওয়াসিয়াত করবো কি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম, তবে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ ওয়াসিয়াত করব কি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ এক তৃতীয়াংশ করতে পার, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে দরিদ্র এবং অন্যকারো নিকট হাত পতাতে বাধ্য অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে তাদেরকে সম্পদশালী অবস্থায় রেখে যাওয়া অধিক উত্তম। তুমি যেটুকু খরচ কর না কেন নেকী অবশ্যই পাবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে গ্রাসটি তুলে দাও তুমি তার জন্যও নেকী পাবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমি কি আমার হিজরাত হতে পিছনে পড়ে থাকব (মাদীনায় ফিরে যেতে পারব না)? তিনি বললেনঃ তুমি আমার পরেও যদি জীবিত থাক এবং আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে যে কোন কাজই কর তাতে তোমার মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। আশা করি আমার পরবর্তীতেও তুমি জীবিত থাকবে। তোমার মাধ্যমে বহু লোকের উপকার হবে এবং অসংখ্য লোকের ক্ষতি সাধিত হবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরাত পূর্ণ করে দাও, তাদেরকে পিছনে ফিরিয়ে দিও না। সা’দ ইবনু খাওলা হতভাগ্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু খাওলার জন্য অনেক দুঃখ প্রকাশ করতেন। তিনি মক্কাতে মারা যান। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৭০৮), বুখারী, মুসলিম।
ওসিয়াতের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক ষাট বছর ধরে আল্লাহ্ তা’আলার আনুগত্যমূলক কাজ করল। তারপর তাদের মৃত্যু হাযির হলে তারা ওসিয়াতের মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে তাদের জন্য জাহা্ন্নামের আগুন নির্ধারিত হয়ে যায়। (শাহর ইবনু হাওশাব বলেন) তারপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) আমার উপস্থিতিতে এ আয়াত পাঠ করেনঃ “যখন ওসিয়াত পূরণ করা হবে এবং (মৃত ব্যক্তির অনাদায়ী) ঋণ পরিশোধ করা হবে। অবশ্য তা (ওসিয়াত) যেন ক্ষতিকর না হয়। ওসিয়াত প্রসঙ্গে এটা আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ.... প্রকৃতপক্ষে এটা বিরাট সাফল্য”। (সূরা: নিসা-১২,১৩) যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৭০৪),
ওয়াসিয়াতের জন্য উৎসাহ দেয়া
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মুসলমানের নিকট ওয়াসিয়াত করার মতো কিছু থাকে তাহলে তার নিজের নিকট ওয়াসিয়াতনামা লিখে না রেখে দুই রাতও অতিবাহিত করার অধিকার তার নেই। সহীহ, ইবনু মা-তজাহ (২৬৯৯), বুখারী, মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াসিয়াত করেননি
তালহা ইবনু মুসাররিফ (রাহঃ) তিনি বলেন, ইবনু আবী আওফা (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি (কিছু) ওয়াসিয়াত করেছিলেন? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কিভাবে ওয়াসিয়াতটি বিধিবদ্ধ হলো এবং কিসের ভিত্তিতে তিনি জনগণকে (ওয়াসিয়াতের) নির্দেশ দিলেন? তিনি বললেন, তিনি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে অনুসারে ওয়াসিয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৬৯৬), বুখারী, মুসলিম।
উত্তরাধিকারীদের জন্য ওয়াসিয়াত করার বৈধতা নেই
আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের খুতবায় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক হকদারের হক (নির্দিষ্ট করে) দিয়েছেন। অতএব, উত্তরাধিকারীদের জন্য ওয়াসিয়াত করা বৈধ নয়। সন্তান বিছানার (মালিকের); আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। তাদের সবর্শেষ ফায়সালার ভার আল্লাহ তা‘আলার উপর। যে লোক নিজের বাবাকে পরিত্যাগ করে আরেকজনকে বাবা বলে পরিচয় দেয় এবং যে গোলাম নিজের মনিব ব্যতীত অন্য মনিবের পরিচয় দেয় তার উপর অব্যাহতভাবে কিয়ামাত পর্য্ন্ত আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ। স্ত্রী তার স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার ঘর হতে কোন কিছু ব্যয় করবে না। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বললেনঃ এটাতো আমাদের সবোর্ত্তম সম্পদ। তিনি আরো বললেনঃ ধারনকৃত বস্তু ফেরত যোগ্য, মানীহা (দুধপানের উদ্দেশ্যে ধার করা পশু) ফেরত দিতে হবে, ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং যামিনদার দায়বদ্ধ থাকবে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৭১৩)। আমর ইবনু খা-রিজাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে বসে থাকাবস্থায় খুতবাহ দেন। আমি এর ঘাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উষ্ট্রী জাবর কাটছিল এবং আমার কাঁধের মাঝখান দিয়ে এর লালা গড়িয়ে পড়ছিল। আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ সকল হকদারের হক আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। অতএব, উত্তরাধিকারীদের জন্য ওয়াসিয়াত করা বৈধ নয়। সন্তান বৈধ বিছানার (মালিকের) এবং ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। যে ব্যক্তি নিজের বাবাকে পরিত্যাগ করে অন্যজনকে বাবা বলে পরিচয় দেয় অথবা যে গোলাম নিজ মনিবকে পরিত্যাগ করে অন্য মনিবের পরিচয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত। আল্লাহ তার ফরয ও নফল কোন ইবাদাতই কবূল করবেন না। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৭১২)।
ওয়াসিয়াত মঞ্জুরের পুবে দেনা পরিশোধ করতে হবে
আলী (রাঃ) ওয়াসিয়াত পূরনের পূবে ঋন পরিশোধ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তোমরা ঋন পরিশোধের পূবে ওয়াসিয়াত পূরণের স্বীকৃতি দিয়ে থাক। হাসান, (২০৯৪) নং হাদীসে আরও পূর্ণাঙ্গ ভাবে ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে।
মৃত্যুর সময় কেউ দান খয়রাত করলে বা গোলাম আযাদ করলে
আবূ হাবীবা আত-তাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, আমার ভাই তার সম্পদের একটা অংশ আমার জন্য ওসিয়াত করে যান। আমি আবুদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে বললাম, আমার ভাই তার সম্পত্তির একটা অংশ আমার জন্য ওসিয়াত করে গেছেন। এ ব্যাপারে আপনার কি মত? আমি কি তা ফকীর-মিসকীনদের জন্য খরচ করব, না আল্লাহ্ তা’আলার পথের সৈনিকদের জন্য খরচ করব? তিনি বললেন, যদি আমি হতাম তবে এ ব্যাপারে আমি মুজাহিদদের মুকাবিলায় অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দিতাম না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় (গোলাম) মুক্ত করে সে হচ্ছে এমন ব্যক্তির মত যে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পর উপহার দেয়। যঈফ, যঈফা (১৩২২), মিশকাত, তাহকীক ছানী (১৮৭১), উরওয়া (রাহঃ) তাকে আইশা (রাঃ) জানিয়েছেন। বারীরা (রাঃ) আইশা (রাঃ)- এর নিকট আসেন নিজের মুক্তির চুক্তিপত্রের ব্যাপারে তার সাহায্য প্রার্থনা করতে। তিনি তার চুক্তিপত্রের ব্যাপারে তার সাহায্য প্রার্থনা করতে। তিনি তার চুক্তিপত্রের শর্ত মুতাবিক এ পযর্ন্ত কিছুই পরিশোধ করতে পারেননি। আইশা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার মালিক পরিবারে ফিরে যাও। তারা যদি সম্মত হয় যে, তোমার চুক্তিপত্রের নির্ধারিত মূল্য আমি পরিশোধ করব এবং আমি তোমার ‘ওয়ালাআর’ হক্বদার হবো, তাহলে আমি মূল্য পরিশোধ করতে তৈরী আছি। তিনি ফিরে গিয়ে বিষয়টি তার মালিক পরিবারের কাছে বললেন। কিস্তু তারা এ শর্তে সম্মত হলো না। তারা বলল, তিনি যদি নেকীর উদ্দেশ্যে তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তোমার ওয়ালআর অধিকারী আমরা হবো তাহলে এই শর্তে আমরা সম্মত আছি এবং তিনি তা করতে পারেন। তিনি (আইশা) বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও। কেননা, যে ব্যক্তি মুক্ত করে সে-ই ওয়ালাআর মালিক হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়িয়ে বললেনঃ লোকদের কি হলো! তারা এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহ তা‘আলার গ্রন্থে নেই। যে লোক এরুপ শর্তারোপ করে যা আল্লাহ তা‘আলার গ্রন্থে নেই সেরুপ শর্ত তার কোন উপকারে আসবে না, সে শতবার শর্তারোপ করলেও। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৫২১), বুখারী, মুসলিম।