3. কিতাবুল বিতর (বিতর নামায)
বিতর নামাযের ফযিলত
খারিজা ইবনু হুযাফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমদের নিকটে বের হয়ে আসলেন। তিনি বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একটি নামায দিয়ে তোমাদের সাহায্য করেছেন। এটা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম তা হল বিতরের নামায। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এটা ‘ইশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়ের জন্য নির্ধারণ করেছেন। -সহীহ। “এটা তোমাদের জন্য অনেক লাল উটের চেয়েও উত্তম” এই অংশ বাদে। ইবনু মাজাহ- (১১৬৮)।
বিতরের নামায ফরয নয়
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, বিতরের নামায তোমাদের ফরয নামায সমূহের মত অত্যাবশ্যকীয় (ফরয) নামায নয়। বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এ নামায) তোমাদের জন্য সুন্নতরূপে প্রবর্তন করেছেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বিতর (বেজোড়), তিনি বিতরকে ভালবাসেন। হে কুরআনের বাহকগণ (মুমিনগণ)! তোমরা বিতর আদায় কর। -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (১১৬৯)। সুফিয়ান সাওরী ও অন্যান্যরা আবূ ইসহাক তিনি আসিম ইবনু যামরাহ হতে, তিনি ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি [আলী (রাঃ)] বলেছেন, বিতরের নামায ফরয নামাযের মত জরুরী নামায নয়। বরং এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত নামায। -সহিহ, সহিহুত তারগীব (৫৯০)
বিতরের পূর্বে ঘুমানো মাকরূহ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ঘুমানোর পূর্বে বিতর আদায়ের আদেশ করেছেন। -সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ- (১১৮৭)।
বিতর নামায রাতের প্রথম অথবা শেষাংশে আদায় করা
মাসরূক (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিতর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, তিনি রাতের সকল ভাগেই বিতর আদায় করেছেন, হয় রাতের প্রথম ভাগে অথবা মধ্যভাগে অথবা শেষ ভাগে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিতর ভোর রাত পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (১১৫৮), বুখারী ও মুসলিম।
বিতর নামায সাত রাক’আত আদায় করা
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তের রাক’আত বিতর আদায় করতেন। যখন তিনি বার্ধক্যে পৌঁছলেন এবং দুর্বল হয়ে পড়লেন তখন সাত রাক’আত বিতর আদায় করেছেন। -সনদ সহীহ্।
বিতর নামায পাঁচ রাক’আত
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের নামাযের সংখ্যা ছিল তের রাক’আত। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত তিনি বিতর আদায় করতেন। এ পাঁচ রাক’আত আদায় করা শেষ করেই তিনি বসতেন। মুয়ায্যিন আযান দিলে তিনি উঠে হালকা দুই রাক’আত নামায আদায় করতেন। সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২০৯, ১২১০), সালাতুত তারাবীহ, মুসলিম।
বিতরের নামায তিন রাক’আত
আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন রাক’আত বিতরের নামায আদায় করতেন। তিনি এতে মুফাস্সাল সূরা সমূহের নয়টি সূরা পাঠ করতেন, প্রতি রাক’আতে তিনটি করে সূরা পাঠ করতেন, এর মধ্যে সর্বশেষ সূরা ছিল “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ”। অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত (১২৮১)
বিতর নামায এক রাক’আত
আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, আমি কি সকালের দুই রাক’আত (সুন্নাত) দীর্ঘ করতে পারি? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের নামায দুই দুই রাক’আত করে আদায় করতেন এবং এক রাক’আত বিতর আদায় করতেন। অতঃপর দুই রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করতেন এমনভাবে যে, তখনও তাঁর কানে আযানের শব্দ আসত অর্থাৎ তিনি সংক্ষিপ্ত করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৪৪, ১৩১৮), বুখারী ও মুসলিম।
বিতর নামাযের কিরা’আত
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের প্রথম রাক’আতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা”, দ্বিতীয় রাক’আতে “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন” ও তৃতীয় রাক’আতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” সূরা পাঠ করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৭২)। আবদুল আযীয ইবনু জুরাইজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের নামাযে কোন্ কোন্ সূরা পাঠ করতেন। তিনি বলেন, তিনি প্রথম রাক’আতে ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাক’আতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন এবং তৃতীয় রাক’আতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, কুল আঊযু বিরব্বিল ফালাক ও কুল আঊযু বিরব্বিন-নাস” সূরা পাঠ করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৭৩)।
বিতর নামাযে দু’আ কুনূত পাঠ করা
আবুল হাওরা (রহঃ) তিনি বলেন, হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন। এগুলো আমি বিতরের নামাযে পাঠ করে থাকিঃ “হে আল্লাহ! যাদেরকে তুমি হিদায়াত করেছো আমাকেও তাদের সাথে হিদায়াত কর, যাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছ তুমি তাদের সাথে আমার প্রতিও উদারতা দেখাও। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ তাদের সাথে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ কর। তুমি আমাকে যা দান করেছ তার মধ্যে বারকাত দাও। তোমার নির্ধারিত খারাবি হতে আমাকে রক্ষা কর। কেননা তুমিই নির্দেশ দিতে পার, তোমার উপর কারো নির্দেশ চলে না। যাকে তুমি বন্ধু ভেবেছ সে কখনও অপমানিত হয় না। তুমি কল্যাণময়, তুমি সুউচ্চ”। সহীহ্। ইরওয়া- (৪২৯), মিশকাত- (১২৭৩), তা’লীক আলা-ইবনু খুজাইমাহ- (১০৯৫), সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৮১)।
ঘুমের কারণে অথবা ভুলে বিতরের নামায ছুটে গেলে
আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিতরের নামায না আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা তা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন মনে হওয়ার সাথে সাথে অথবা ঘুম হতে উঠার সাথে সাথে তা আদায় করে নেয়। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৮৮) যাইদ ইবনু আসলাম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি বিতরের নামায না আদায় করে ঘুমিয়ে গেল সে যেন সকাল বেলা তা আদায় করে নেয়। -সহীহ্। ইরওয়া- (৪২২)
ভোর হওয়ার পূর্বেই বিতর আদায় করে নেয়া
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ভোর হওয়ার পূর্বেই বিতর আদায় করে নিবে। সহীহ্। ইরওয়া- (২/১৫৪), সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৯০) আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভোর হওয়ার পূর্বেই বিতর আদায় করে নাও। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৮৯), মুসলিম। ইবনু ‘উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন ভোর হয় তখন রাতের সব নামায এবং বিতরের সময় চলে যায়। অতএব তোমরা সকাল হওয়ার পূর্বেই বিতর আদায় করে নাও। -সহীহ্। ইরওয়া- (২/১৫৪), সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৯০)।
এক রাতে দুই বার বিতরের নামায নেই
তলক ইবনু ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ এক রাতে দুইবার বিতর নেই। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৯৩)। উম্মু সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের নামাযের পর দুই রাক‘আত নামায আদায় করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৯৫)।
সাওয়ারীর উপর বিতরের নামায আদায় করা
সা‘ঈদ ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি কোন এক সফরে ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সাথী ছিলাম। আমি (বিতর আদায়ের উদ্দেশ্যে) তাঁর পিছনে থেকে গেলাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, বিতর আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, তোমার জন্য কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে অনুসরণীয় আদর্শ নেই? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে সাওয়ারীর উপর বিতরের নামায আদায় করতে দেখেছি। -সহীহ্। বুখারী ও মুসলিম।
পূর্বাহ্নের (চাশতের) নামায
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পূর্বাহ্নের বার রাক’আত নামায আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি সোনার প্রাসাদ তৈরী করেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৩৮০) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে এমন কোন লোকই জানায়নি যে, সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে পূর্বাহ্নের নামায আদায় করতে দেখেছে। কিন্তু উম্মু হানী (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গেলেন, অতঃপর গোসল করে আট রাক’আত নামায আদায় করলেন। আমি তাঁকে এতো সংক্ষিপ্তভাবে আর কখনও নামায আদায় করতে দেখিনি। হ্যাঁ তিনি রুকু-সাজদাহ্ ঠিকমত আদায় করেছিলেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১৩৭৯)। আবূ দারদা ও আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাক‘আত নামায আদায় কর, আমি তোমার দিনের শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন পূরণ করে দিব। -সহীহ্। তা’লীকুর রাগীব- (১/২৩৬)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পূর্বাহ্নের জোড়া নামাযের নিয়মিত হিফাযাত করে, তাঁর গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তা সমুদ্রের ফেনার সমান হলেও। যঈফ, মিশকাত (১৩১৮) আবূ সাইদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিত পূর্বাহ্নের নামায আদায় করতেন, এমনকি আমরা বলাবলি করতাম, তিনি কখনও এ নামায ছাড়বেন না। তিনি আবার কখনও এমনভাবে এ নামায ছেড়ে দিতেন, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়ত আর কখনও তা আদায় করবেন না। যঈফ, ইরওয়া (৪৬০)
সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় নামায আদায় করা
‘আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর যুহরের পূর্বে চার রাক’আত নামায আদায় করতেন। তিনি বলেছেনঃ এটা এমন একটা সময় যখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আমি এ সময় আমার কোন ভাল কাজ উপরে উঠে যাক এ আকাংখা করি। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৫৭)।
প্রয়োজন পূরণের নামায (সালাতুল হাজাত)
আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির আল্লাহ্ তা’আলার কাছে অথবা কোন আদম সন্তানের কাছে কোন প্রয়োজন রয়েছে সে যেন প্রথমে উত্তমরূপে ওযূ করে, তারপর দুই রাক’আত নামায আদায় করে, তারপর আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা করে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে, তারপর এ দু’আ পাঠ করেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু.........আরহামার রাহিমীন’’ অর্থাৎ “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি ধৈর্যশীল ও মহামহিম। মহান আরশের মালিক আল্লাহ্ তা’আলা খুবই পবিত্র। সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। (হে আল্লাহ্!) আমি তোমার নিকট তোমরা রাহমাত লাভের উপায়সমূহ, তোমার ক্ষমা লাভের কঠিন ওয়াদা, প্রত্যেক ভাল কাজের ঐশ্বর্য এবং সকল খারাপ কাজ হতে নিরাপত্তা চাইছি। হে মহা অনুগ্রহকারী ! আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা কর, আমার প্রতি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং যে প্রয়োজন ও চাহিদা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয় তা পরিপূর্ণ করে দাও।” অত্যন্ত দুর্বল, ইবনু মাজাহ (১৩৮৪)
ইস্তিখারার নামায
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ছাড়া দুই রাক’আত নামায আদায় করে নেয়, অতঃপর বলেঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা......সুম্মা আরযিনী বিহি”। “হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে ও সম্যকভাবে জানো। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেনঃ আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেনঃ আমার ইহকাল-পরকালের ব্যাপারে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। যেখান হতে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”। অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) অথবা রাবী বলেন, (এ কাজটির স্থলে) প্রার্থনাকারী যেন নিজের উদ্দিস্ট কাজের নাম করে। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১৩৮০)।
সালাতুত তাসবীহ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উম্মু সুলাইম (রাঃ) একদিন সকাল বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন। তিনি বললেন, আমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যা আমি নামাযে পাঠ করব। তিনি বললেনঃ দশবার ‘আল্লাহু আকবার’ দশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং দশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পাঠ কর। অতঃপর তোমার যা খুশি তাই চাও। তিনি (আল্লাহ তা’আলা) বলবেনঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ (ক্ববূল করলাম)। -সনদ সহীহ্। আবূ রাফি (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আব্বাস (রাঃ) -কে বললেনঃ হে চাচা! আমি কি আপনার সাথে সদ্ব্যবহার করব না, আমি কি আপনাকে ভালবাসব না, আমি কি আপনার উপকার করব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেনঃ হে চাচা! চার রাক’আত নামায আদায় করুন, প্রতি রাক’আতে সূরা আল-ফাতিহা ও এর সাথে একটি করে সূরা পাঠ করুন। কিরা’আত পাঠ শেষ করে রুকূ করার পূর্বে পনের বার বলুন, “আল্লাহু আকবার ওয়ালু হামদু লিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”। অতঃপর রুকূতে গিয়ে দশবার, রুকূ হতে মাথা তুলে দশবার, সাজদাহ্তে গিয়ে দশবার, সাজদাহ্ হতে মাথা তুলে দশবার আবার সাজদাহ্য় গিয়ে দশবার এবং সাজদাহ্ হতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর পূর্বে দশবার এটা পাঠ করুন। এভাবে প্রতি রাক’আতে পঁচাত্তর বার পাঠ করা হবে, চার রাক’আতে সর্বমোট তিনশ বার হবে। আপনার টিলা পরিমাণ গুনাহ হলেও আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতিদিন এ রকম নামায আদায় করতে কে পারবে? তিনি বললেনঃ প্রতিদিন আদায় করতে না পারলে প্রতি শুক্রবারে (সপ্তাহে একবার) আদায় করুন। যদি প্রতি জুমু’আয় আদায় করতে না পারেন তবে প্রতি মাসে আদায় করুন। (রাবী বলেন,) তিনি এভাবে বলতে বলতে শেষে বললেনঃ বছরে একবার আদায় করে নিন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১৩৮৬)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দুরূদ পাঠের পদ্ধতি
কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কিভাবে সালাম করতে হবে তা আমরা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি কিভাবে দুরূদ পাঠ করব? তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর রাহমাত বর্ষণ কর যেভাবে ইবরাহীমের উপর রাহমাত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত মর্যাদাবান। (হে আল্লাহ!) তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের বারকাত দান কর, যেভাবে তুমি ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের বারকাত দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত”। ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা বলেন, আমরা “তাদের সাথে আমাদের প্রতিও” শব্দটুকুও বলতাম। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৯০৪), বুখারী ও মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দুরূদ পাঠের ফযিলত
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি হবে যে আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠ করেছে। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (২/২৮০)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দশটি রাহমাত বর্ষণ করেন। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১৩৬৯), মুসলিম। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, দু’আ আকাশ যমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যতক্ষণ তুমি দুরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না। -হাসান। সহীহাহ্- (২০৫৩)। ‘আলা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ইয়াকূব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার তিনি (ইয়াকূব) বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেনঃ যার দ্বীন প্রসঙ্গে সঠিক জ্ঞান আছে কেবল সেই যেন আমাদের বাজারে ব্যবসা করে। -সনদ হাসান।