32. স্বপ্ন ও তার তাৎপর্য

【1】

মু’মিন ব্যক্তির স্বপ্ন নাবূয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত নিকটবর্তী সময়ে মু’মিনদের স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যা হবে। তাদের মধ্যে বেশি সত্যবাদীর স্বপ্নও তদনুরূপ সত্য হবে। মু’মিনের স্বপ্ন হলো নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। আর স্বপ্ন তিন প্রকারঃ (১) ভাল স্বপ্ন হলো আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট হতে সুসংবাদস্বরূপ। (২) আরেক প্রকার স্বপ্ন হলো শাইতানের নিকট হতে মু’মিনের জন্য দুশ্চিন্তাস্বরূপ। (৩) আরেক প্রকার স্বপ্ন হলো মানুষের মনের চিন্তা-ভাবনা (সে যা চিন্তা করে তা-ই স্বপ্নে দেখে)। অতএব, তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন উঠে যায় এবং (বাম দিকে) থুথু ফেলে এবং তা লোকের নিকট না বলে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি স্বপ্নে (পায়ে) শৃঙ্খল দেখা পছন্দ করি; কিন্তু (গলদেশে) শৃঙ্খল দেখা অপছন্দ করি। (পায়ে) শিকলের তাৎপর্য হলো ধর্মের উপর স্থিতিশীল। সহীহ্ঃ বুখারী ও মুসলিম। উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির স্বপ্ন হলো নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【2】

নাবূওয়াতের ধারা সমাপ্ত হয়ে গেছে এবং সুসংবাদ প্রদানের ধারা অব্যাহত আছে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রিসালাত ও নাবূওয়াতের ধারাবাহিকতা অবশ্যই সমাপ্ত হয়ে গেছে। অতএব, আমার পরে আর কোন রাসূলও প্রেরিত হবে না এবং নাবীও আসবে না। বর্ণনাকারী বলেন, বিষয়টি জনগণের নিকট কঠিন মনে হলো। তারপর তিনি বললেনঃ তবে মুবাশশিরাত অব্যাহত থাকবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুবাশশিরাত কি? তিনি বললেন, মুসলমানের স্বপ্ন। আর তা নাবূওয়াতের অংশসমূহের একটি অংশ। সনদ সহীহ।

【3】

আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ পার্থিব জীবনে তাদের জন্য আছে সুসংবাদ

জনৈক মিসরীয় ব্যাক্তি তিনি বলেন, আমি আবুদ দারদা (রাঃ) কে আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “দুনিয়াবী জীবনে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ” (সূরাঃ ইউনুস-৬৪) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করার পর হতে আজ পর্যন্ত তুমি ও অপর এক ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি। আমি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এই আয়াত নাযিলের পর হতে আজ পর্যন্ত আমাকে তুমি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেনি। আর তা (বুশরা) হল সত্য স্বপ্ন যা মুসলিম ব্যক্তি দেখে বা তাঁকে দেখানো হয়। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৭৮৬), মুসলিম। আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ভোর রাতের স্বপ্নই বেশী সত্য হয়। যঈফ, যঈফা (১৭৩২) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “দুনিয়াবী জীবনে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ” প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তা হলো সৎ স্বপ্ন, যা মু’মিন ব্যক্তি দেখে বা তাঁকে দেখানো হয়। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৭৮৬)।

【4】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র বাণী, যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে সে আমাকেই দেখেছে।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যে আমাকে দেখতে পেয়েছে সে আমাকেই দেখতে পেয়েছে। কেননা, শাইতান আমার রূপ (সাদৃশ্য) ধারণ করতে পারে না। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯০০)।

【5】

কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে তার করণীয়

আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আসে আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ হতে এবং মন্দ স্বপ্ন আসে শাইতানের পক্ষ হতে। কাজেই কেউ যদি স্বপ্নে অপছন্দীয় কিছু দেখতে পায় তাহলে সে যেন তার বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং এর অকল্যাণ হতে আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে তাতে তার কোন ক্ষতি হবে না। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【6】

স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে

আবূ রাযীন আল-উকাইলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নাবূওয়াতের চল্লিশ ভাগের একভাগ। স্বপ্নের ব্যাপারে যে পর্যন্ত আলোচনা করা না হয় সে পর্যন্ত এটা পাখির পায়ে (ঝুলে) থাকা জিনিসের মতো। আলোচনা করার সাথে সাথে তা যেন পা হতে পড়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ কথাটুকুও বলেছেনঃ আর স্বপ্ন দ্রষ্টা ব্যক্তি যেন জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা পছন্দীয় ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো নিকট স্বপ্নের ব্যাপারে আলোচনা না করে। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১২০), মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৬২২)। আবূ রাযীন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানের স্বপ্ন নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। স্বপ্নদ্রষ্টা এ প্রসঙ্গে (কারো সাথে) আলোচনা না করা পর্যন্ত তা পাখির পায়ে ঝুলন্ত জিনিসের অনুরূপ। আর যখনই সে এটা আলোচনা করে তখনই তা ছিটকে পড়ে যায়। সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।

【7】

পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় স্বপ্ন প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকারঃ (১) সত্য স্বপ্ন, (২) বান্দার মনের চিন্ত-ভাবনা (যা চিন্তা করে তাই স্বপ্নে দেখে) ও (৩) শাইতানের পক্ষ হতে ভীতি প্রদর্শনমূলক কিছু। অতএব, কেউ যদি অপছন্দনীয় কোন কিছু স্বপ্নে দেখে তাহলে সে যেন ঘুম হতে জেগে নামায আদায় করে। আর তিনি বলতেন, স্বপ্নে (পায়ে) শৃংখল দেখা আমার পছন্দনীয় এবং (গলায়) শৃংখল দেখা অপছন্দনীয়। (পায়ে) শৃংখলের ভাবার্থ হচ্ছে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকার ইঙ্গিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলতেনঃ যে আমাকে স্বপ্নে দেখলো তা সত্যিই আমি। কেননা, শাইতান আমার রূপ (সাদৃশ্য) ধারণ করতে পারে না। তিনি আরো বলতেনঃ জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা শুভাকাংখী ব্যক্তি ব্যতীত আর কোন ব্যক্তির কাছে স্বপ্নের কথা প্রকাশ করবে না। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১১৯, ১২০, ১৩৪১), রাওযুন নাযীর (১১৬২)।

【8】

কেউ যদি মনগড়া (মিথ্যা) স্বপ্ন বলে

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমি বর্ণনা করছি যে, তিনি বলেছেনঃ মনগড়া (মিথ্যা) স্বপ্ন বর্ণনাকারীকে কিয়ামতের দিন যবের দানায় গিঁট লাগাতে বাধ্য করা হবে। সহীহ, সহীহাহ্‌ (২৩৫৯)। উপরোল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ কুতাইবা–আবূ আওয়ানা তিনি আবদুল আলা হতে, তিনি আবূ আবদুর রাহমান আস-সুলামী হতে, তিনি আলী (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি হাসান। ইবনু আব্বাস, আবূ হুরাইরা, আবূ শুরাইহ ও ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদ হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মনগড়া (মিথ্যা) স্বপ্ন বর্ণনাকারীকে কিয়ামাতের দিন দুটি যবের দানায় গিঁট লাগাতে বাধ্য করা হবে; আর সে তাতে গিঁট লাগাতে সক্ষম হবে না। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯১৬), বুখারী।

【9】

স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-র দুধপান ও জামা দর্শন

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন এক সময় আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম, এ সময় আমার সামনে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আসা হলো। আমি তা হতে পান করলাম এবং বাকী টুকু উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এর কি তাবীর (ব্যাখ্যা) করেন? তিনি বললেনঃ জ্ঞান। সহীহ, তা’লীকাত আল-হাস্‌সান (৬৮১৫, ৬৮৩৯), বুখারী, মুসলিম। আবূ উমামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-র জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন একদিন আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখতে পাই যে, জামা পরিহিত লোকদেরকে আমার সামনে হাযির করা হচ্ছে। তাদের কারো জামা বুক পর্যন্ত এবং কারো জামা তার নীচে পর্যন্ত। তখন উমারকে আমার সামনে হাযির করা হলো এবং তার পরনে ছিলো লম্বা পোশাক, যা সে হেঁচড়িয়ে চলছিল। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এর কি তাবীর (ব্যাখ্যা) করেন? তিনি বললেনঃ এর দ্বারা দ্বীন বুঝানো হয়েছে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। পূর্বোক্ত হাদীসের মতো হাদীস আব্‌দ ইবনু হুমাইদ-ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম ইবনু সা’দ পূর্বোক্ত হাদীসের মতো হাদীস আব্‌দ ইবনু হুমাইদ-ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম ইবনু সা’দ হতে, তিনি তার বাবা হতে, তিনি সালিহ ইবনু কাইসান হতে, তিনি যুহ্‌রী হতে, তিনি আবূ উমামা হতে, তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং এই সনদসূত্রটি অনেক বেশি সহীহ্‌।

【10】

স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাঁড়িপাল্লা ও বালতি দর্শন

আবূ বাকরা (রাঃ) কোন একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে কে স্বপ্ন দেখেছে? জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি স্বপ্নে দেখি যে, আকাশ হতে একটি দাঁড়িপাল্লা নেমে এলো। তারপর আপনাকে ও আবূ বাক্‌রকে ওজন করা হলো। আবূ বাক্‌রের চেয়ে আপনার ওজন ভারী হলো। তারপর আবূ বাক্‌র ও উমারকে ওজন দেয়া হলো এবং তাতে আবূ বাক্‌রের ওজন বেশি হলো। তারপর উমার ও উসমানকে ওজন দেয়া হলো এবং তাতে উমারের ওজন বেশি হলো। তারপর দাঁড়িপাল্লা উঠিয়ে নেয়া হলো। এমন সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করলাম। সহীহ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৬০৫৭)। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ওয়ারাকা ইবনু নাওফল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় (তিনি কি জন্নাতী না জাহান্নামী)। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে বলেন, তিনি তো আপনাকে সত্য বলে সমর্থন করেছিলেন এবং আপনার নবুওয়াত প্রকাশের পূর্বেই মারা যান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি তাকে সাদা পোশাক পরে থাকা অবস্থায় স্বপ্নে দেখেছি। তিনি জাহান্নামী হলে তার পরিধানে অন্য রংয়ের পোশাক থাকত। যঈফ, মিশকাত (৪৬২৩), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আর হাদীস বিশারদদের মতে উসমান ইবনু আবদুর রহমান খুব একটা মজবুত রাবী নন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) এর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্ন দেখা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি জনগণকে সমবেত হতে দেখলাম। আবূ বাক্‌র এক বালতি কি দুই বালতি পানি তুললো। তার মধ্যে সামান্য দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে ক্ষমা করুন। তারপর উমার দাঁড়ালো এবং পানি তুলতে লাগল। বালতিটি বেশ বিরাট আকার ধারণ করল। তার মতো করে কোন শক্তিশালী ব্যক্তিকে আমি কাজ করতে দেখিনি। আর সে এত পানি তুললো যে, লোকেরা তাদের উটের পানির চৌবাচ্চা পূর্ণ করে নিল। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্ন দর্শন প্রসঙ্গে তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি এলোমেলো চুল ওয়ালা এক কালো মহিলাকে মাদীনা হতে বের হয়ে মাহ্‌ইয়াআহ-তে গিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। মাহ্‌ইয়াআহ হলো জুহ্‌ফা। তারপর আমি এর ব্যাখ্যা করেছি যে, মাদীনার মহামারী জুহ্‌ফাতে স্থানান্তরিত হলো। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯২৪), বুখারী। আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ যামানায় মু’মিনের স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যা হবে। তাদের মধ্যে অধিক সত্যবাদীর স্বপ্নই বেশি সত্য হবে। স্বপ্ন তিন প্রকারঃ (১) ভাল স্বপ্ন, যা আল্লাহ্‌ তা’আলার পক্ষ হতে সুসংবাদ, (২) স্বপ্নের আকারে ব্যক্তির মনের চিন্তা-ভাবনা ও (৩) শাইতানের পক্ষ হতে দুশ্চিন্তায় ফেলার স্বপ্ন। কাজেই তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্নে দেখে তাহলে সে যেন তা অন্যের নিকট প্রকাশ না করে বরং সে যেন তখন উঠে গিয়ে নামায আদায় করে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, (স্বপ্নে পায়ে) শৃংখল দেখা আমার পছন্দনীয় এবং গলায় শৃংখল দেখা অপছন্দনীয়। (পায়ে) শৃংখল দেখা হলো দ্বীনের উপর সুদৃঢ়তার প্রতীক। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নাবূওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। সহীহ, দেখুন ২২৮০ নং হাদীস। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কোন একদিন স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার হাতে যেন দুটি স্বর্ণের চুড়ি। বিষয়টি আমাকে চিন্তিত করে তুললো। তারপর আমার নিকট ওয়াহী প্রেরিত হলো যে, আমি যেন ঐ দুটিতে ফুঁ দেই। আমি দুটিতে ফুঁ দেয়ার পর তা উড়ে চলে গেল। আমি চুড়ি দুটির এই ব্যাখ্যা করলাম যে, আমার পরে দুইজন মিথ্যাবাদী (নাবূওয়াতের দাবিদার) আত্মপ্রকাশ করবে। তারা হলোঃ মুসাইলামা নামে ইয়ামামার অধিবাসী এবং আল-আনাসী নামে সানআর (ইয়ামানের রাজধানী) অধিবাসী। সহীহ, বুখারী। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে কোন একজন লোক এসে বলল, আমি আজ রাতে একটি ছায়াযুক্ত মেঘ স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি এবং তা হতে ঘি ও মধু ঝরে পড়ছে। লোকদের দেখলাম যে, তারা হাতে তুলে তা পান করছে। কেউ বেশি পাচ্ছে এবং কেউ অল্প। আমি আরো দেখতে পেলাম যে, আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত একটি রশি ঝুলছে। হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকে দেখলাম যে, আপনি সেটা ধরে উপরে উঠে গেছেন, তারপর আরেকজন সেটা ধরে উঠে গেছে, তারপর আরেকজন ধরল এবং সেও উঠে গেল। তারপর অপর একজন ধরলে সেটা ছিড়ে গেল। আবার সেটা জোড়া লেগে গেল এবং সেও তা ধরে উঠে গেল। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! আল্লাহ্‌র শপথ! আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে দিন। তিনি বললেনঃ ঠিক আছে, এর তাবীর (ব্যাখ্যা) কর। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ছায়াযুক্ত মেঘ হলো ইসলামের ছায়া, পতিত ঘি ও মধু হলো কুরআনের কোমলতা, সুমিষ্টতা ও মাধুর্য। আর বেশি ও কম লাভকারী হল কুরআন হতে বেশি ও কম লাভকারী। আকাশ হতে যমীন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশি হলো সেই মহাসত্য যার উপর আপনি প্রতিষ্ঠিত। আপনি তা ধরে আছেন, আপনাকে এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা’আলা উপরে তুলে নিয়েছেন। তারপর সেটা আরেকজন ধারণ করবেন এবং তিনিও উপরে উঠে যাবেন। তারপর আরেকজন তা ধরবেন এবং তিনিও উপরে উঠে যাবেন। তারপর আরেকজন তা ধরবেন এবং রশি ছিঁড়ে যাবে। আবার তা জোড়া লাগবে এবং তিনিও উপরে উঠে যাবেন। হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বলুন, আমি সঠিক বলেছি না তাতে ভুল করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সামান্য তো সঠিকই বলেছ আর সামান্য ভুল বলেছ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্‌র কসম! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আপনি আমাকে বলুন আমি কোথায় ভুল করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কসম দিয়ে বলো না। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৯১৮), বুখারী, মুসলিম। সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায়ের পর লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করতেনঃ আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (১/১৯৮-১৯৯), বুখারী।