34. দুনিয়াবী ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি

【1】

সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময় দুইটি মূল্যবান ঐশ্বর্য

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত : সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়। সহীহ্‌ ; বুখারী।

【2】

নিষিদ্ধ জিনিস ত্যাগকারী অধিক ইবাদাতকারী

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কে আছে যে আমার নিকট হতে এ কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং সে মুতাবিক নিজেও আমল করবে অথবা এমন কাউকে শিক্ষা দিবে যে অনুরূপ আমল করবে? আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আছি। অত:পর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং গুনে গুনে এ পাঁচটি কথা বললেনঃ তুমি হারাম সমূহ হতে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ বলে গণ্য হবে; তোমার ভাগ্যে আল্লাহ্‌ তা’আলা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে; প্রতিবেশীর সাথে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে; যা নিজের জন্য পছন্দ কর তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে এবং অধিক হাসা থেকে বিরত থাক। কেননা অতিরিক্ত হাস্য-কৌতুক হৃদয়কে মৃতবৎ করে দেয়। -হাসান, সহিহাহ (৯৩০), তাখরিজুল মুশকিলাহ (১৭)

【3】

সৎকাজের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা কার্য সম্পাদনে সাতটি বিষয়ের অগ্রগামী হও। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষায় আছ যা আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভুলিয়ে দেয় অথবা এরূপ ধনবান হওয়ার যা আল্লাহ্‌ তা‘আলার অবাধ্যাচারে লিপ্ত করে অথবা এমন রোগের যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয় অথবা নির্বোধে পরিণতকারী বার্ধক্যের অথবা এমন মৃত্যুর যা হঠাৎ করেই এসে যায় অথবা অপেক্ষা করছো দাজ্জালের অপেক্ষমাণ অদৃশ্য অমঙ্গলের অথবা কিয়ামাতের? আর কিয়ামাত তো আরো বিভিষিকাময়, আরো তিক্ত। যঈফ, যঈফা (১৬৬৬)।

【4】

মৃত্যুর কথা স্মরণ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারীর অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ কর। হাসান, সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪২৫৮)।

【5】

কবরের শাস্তিকে ভয় করা

উসমান (রাঃ)-এর মুক্তদাস হানী উসমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হলো, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করা হলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ এই কবর দর্শনে এত বেশি কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আখিরাতের মানযিলসমূহের (প্রাসাদ) মধ্যে কবর হলো প্রথম মানযিল। এখান হতে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর সে এখান হতে মুক্তি না পেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। তিনি (উসমান) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি। হাসান , ইবনু মা-জাহ (৪২৬৭)।

【6】

আল্লাহ্‌র সাক্ষাৎ পছন্দকারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে আল্লাহ্‌ও পছন্দ করেন

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করাকে যে লোক পছন্দ করে, তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আল্লাহ্‌ তা’আলাও পছন্দ করেন। আর আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করতে যে লোক অপছন্দ করে, আল্লাহ্‌ তা’আলাও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে অপছন্দ করেন। সহীহ্‌ , বুখারী, মুসলিম।

【7】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জাতিকে সতর্ক করেছেন

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন করুন” (২৬ : ২১৪), তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে সাফিয়্যা বিনতু আবদিল মুত্তালিব, হে ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! আল্লাহ্‌ তা’আলার (পাকড়াও) হতে তোমাদেরকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমার ধন-সম্পদ হতে তোমরা যতটুকু খুশি চাইতে পার (কিতাবুল তাফসীরে পুনরুক্ত)। সহীহ্‌ , মুসলিম (১/১৩৩)।

【8】

আল্লাহ্‌র ভয়ে কান্নাকাটির ফাযীলাত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেরূপ দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। আর আল্লাহ্‌ তা’আলার পথের (জিহাদের) ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না। সহীহ্‌ , মিশকাত (৩৮২৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১৬৬)।

【9】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী : আমি যা জানি, তোমরা তা জানতে পারলে খুব কমই হাসতে

আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি (অদৃশ্য জগতের) যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আর আমি যা শুনতে পাই তোমরা তা শুনতে পাও না। আসমান তো চড়চড় শব্দ করছে, আর সে এই শব্দ করার যোগ্য। তাতে এমন চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই যেখানে কোন ফেরেশতা আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্যে অবনত মস্তকে সাজদায় পড়ে না আছে। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কমই হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে, আল্লাহ্‌ তা’আলার সামনে কাকুতি-মিনতি করতে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মন চায় আমি যদি একটি বৃক্ষ হতাম আর তা কেটে ফেলা হতো। “আমার মন চায়....” অংশ ব্যতীত হাদীসটি হাসান, ইবনু মা-জাহ (৪১৯০)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে খুব অল্পই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। সহীহ্‌ , ফিকহুস সীরাহ্‌ (৪৭৯), বুখারী, মুসলিম আনাস (রাঃ) হতে।

【10】

কেউ যদি লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কোন কথা বলে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক এমন কথাও বলে যে প্রসঙ্গে সে মনে করে যে, তাতে কোন অসুবিধা নেই, এইজন্য সে সত্তর বছর জাহান্নামে অবস্থান করবে। হাসান সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৯৭০)। বাহ্‌য ইবনু হাকীম (রাহঃ) তার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি : সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। হাসান , গাইয়াতুল মারাম (৩৭৬), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৮৩৮)।

【11】

অনর্থক কথা বলা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবী মারা গেলে এক ব্যক্তি বলল, জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি তো জান না, হয়ত সে বেহুদা কথা বলেছে অথবা যা দান করলে তার কোন ক্ষতি হত না তাতেও সে কৃপণতা করেছে? যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (৪/১১)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক আচরণ ত্যাগ করা। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৯৭৬)। আলী (যাইনুল আবিদীন) ইবনুল হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ্‌।

【12】

স্বল্পভাষী হওয়া

বিলাল ইবনুল হারিস আল-মুযানী (রাঃ) নামীয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি কখনো আল্লাহ্‌ তা’আলার সন্তুষ্টির কথা বলে, যার সম্পর্কে সে ধারণাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌছবে, অথচ আল্লাহ্‌ তা’আলা তার এ কথার কারণে তাঁর সাথে মিলিত হওয়ার দিন পর্যন্ত তার জন্য স্বীয় সন্তুষ্টি লিখে দেন। আবার তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি কখনো আল্লাহ্‌ তা’আলার অসন্তুষ্টির কথা বলে, যার সম্পর্কে সে চিন্তাও করে না যে, তা কোন পর্যন্ত গিয়ে পৌছবে। অথচ এ কথার কারণে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার সাথে মিলিত হওয়ার দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৯৬৯)।

【13】

আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট পৃথিবীর মূল্যহীনতা ও তুচ্ছতা

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট যদি এই পৃথিবীর মূল্য মশার একটি পাখার সমানো হত তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এখানকার পানির এক ঢোকও পান করাতেন না। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (৯৪০)। মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আরোহীদলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একটি মৃত ছাগল ছানার পাশে এসে দাঁড়ান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি মনে কর, তার মনিবের নিকট এটা নিকৃষ্ট ও মূল্যহীন হওয়ায় সে তা নিক্ষেপ করেছে? তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা মূল্যহীন হওয়ার কারণে তারা ফেলে দিয়েছে। তিনি বললেনঃ তার মনিবের নিকট এটা যতটুকু মূল্যহীন, আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট পৃথিবীটা এর চেয়েও অধিক মূল্যহীন ও নিকৃষ্ট। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১১১)।

【14】

দুনিয়া অভিশপ্ত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : দুনিয়া ও তার মাঝের সকলকিছুই অভিশপ্ত, কিন্তু আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকির ও তার সাথে সংগতিপূর্ণ অন্যান্য আমল, আলিম ও ইলম অন্বেষণকারী এর ব্যতিক্রম। হাসান , ইবনু মা-জাহ (৪১১২)।

【15】

একই বিষয়

বানূ ফিহ্‌রের মুসতাওরিদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের পানিতে তার একটি আঙ্গুল ডুবিয়ে তুলে আনল। সে দেখুক তার আঙ্গুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১০৮), মুসলিম।

【16】

দুনিয়া মু’মিনদের জন্য কারাগার এবং কাফিরদের জন্য জান্নাত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়া (পার্থিব জীবন) মু’মিনদের জন্য কারাগারস্বরূপ এবং কাফিরদের জন্য জান্নাতস্বরূপ। সহীহ্‌ , মুসলিম (৮/২১০)।

【17】

দুনিয়ার দৃষ্টান্ত চারজন লোকের অনুরূপ

আবূ কাবশা আল-আনমারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : আমি তিনটি বিষয়ে শপথ করছি এবং সেগুলোর ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি। তোমরা এগুলো মনে রাখবে। তিনি বলেন, দান-খাইরাত করলে কোন বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না। কোন বান্দার উপর যুলুম করা হলে এবং সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ্‌ তা’আলা অবশ্যই তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। কোন বান্দাহ ভিক্ষার দরজা খুললে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা’আলাও তার অভাবের দরজা খুলে দেন অথবা তিনি অনুরূপ কথা বলেছেন। আমি তোমাদেরকে একটি কথা বলছি, তোমরা তা মুখস্থ রাখবে। তারপর তিনি বলেনঃ চার প্রকার মানুষের জন্য এই পৃথিবী। আল্লাহ্‌ তা’আলা যে বান্দাহকে ধন-সম্পদ ও ইল্‌ম (জ্ঞান) দিয়েছেন, আর সে এই ক্ষেত্রে তার প্রভুকে ভয় করে, এর সাহায্যে আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করে এবং এতে আল্লাহ্‌ তা’আলারও হক আছে বলে সে জানে, সেই বান্দার মর্যাদা সর্ব্বোচ্চ। আরেক বান্দাহ, যাকে আল্লাহ্‌ তা’আলা ইল্‌ম দিয়েছেন কিন্তু ধন-সম্পদ দেননি সে সৎ নিয়্যাতের (সংকল্পের) অধিকারী। সে বলে, আমার ধন-সম্পদ থাকলে আমি অমুক অমুক ভালো কাজ করতাম। এই ধরনের লোকের মর্যাদা তার নিয়্যাত মুতাবিক নির্ধারিত হবে। এ দুজনেরই সাওয়াব সমান সমান হবে। আরেক বান্দাহ, আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে ধন-সম্পদ প্রদান করেছেন কিন্তু ইল্‌ম দান করেননি। আর সে ইল্‌মহীন (জ্ঞানহীন) হওয়ার কারণে তার সম্পদ স্বীয় প্রবৃত্তির চাহিদা মতো ব্যয় করে। সে ব্যক্তি এ বিষয়ে তার রবকেও ভয় করে না এবং আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহারও করে না। আর এতে যে আল্লাহ্‌ তা’আলার হক রয়েছে তাও সে জানে না। এই লোক সর্বাধিক নিকৃষ্ট স্তরের লোক। অপর এক বান্দাহ, যাকে আল্লাহ্‌ তা’আলা ধন-সম্পদও দান করেননি, ইল্‌মও দান করেননি। সে বলে, আমার যদি ধন-সম্পদ থাকত তাহলে আমি অমুক অমুক ব্যক্তির ন্যায় (প্রবৃত্তির বাসনামতো) কাজ করতাম। তার নিয়্যাত মুতাবিক তার স্থান নির্ধারিত হবে। অতএব, এদের দুজনের পাপ হবে সমান সমান। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪২২৮)।

【18】

দুনিয়ার চিন্তা ও পার্থিব মোহ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি অভাব-অনটনে পড়ে তা মানুষের নিকট উপস্থাপন করে তাহলে তার অভাব-অনটন দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে তা আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট উপস্থাপন করে তবে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে দ্রুত অথবা বিলম্বে রিযিক দান করেন। তাকে দ্রুত মৃত্যু দেন অথবা দ্রুত ধনশালী করেন এই অর্থে হাদীসটি সহীহ্‌ , সহীহ্‌ আবূ দাঊদ (১৪৫২), সহীহাহ্‌ (২৭৮৭)।

【19】

একজন খাদিম ও একটি পরিবহনই যথেষ্ট

আবূ ওয়াইল (রাহঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন রোগাক্রান্ত আবূ হাশিম ইবনু উতবাকে মু’আবিয়া (রাঃ) দেখতে আসেন। তাকে তিনি প্রশ্ন করেন, হে মামা! আপনি কেন কাঁদছেন? রোগযাতনা আপনাকে অস্থির করে তুলেছে, নাকি দুনিয়ার লোভ? তিনি বললেন, এ দুটির কোনটিই নয়। (বরং আমার কান্নার কারণ এই যে,) আমার কাছ থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ওয়াদা নিয়েছিলেন, কিন্তু আমি তা বাস্তবায়িত করতে পারিনি। তিনি বলেছিলেন, সম্পদের ক্ষেত্রে একটি খাদিম ও আল্লাহ্ তা’আলার পথে (যুদ্ধ করার) একটি জন্তুযান, এতটুকুই তোমার জন্য যথেষ্ট। অথচ আমি এখন দেখতে পাচ্ছি যে, আমি অনেক সম্পদ জমা করে ফেলেছি। যাইদা ও উবাইদাহ্‌ ইবনু হুমাইদ এই হাদীসটি মানসূর হতে, তিনি আবূ ওয়াইল হতে, তিনি সামুরা ইবনু সাহম (রাহঃ)-এর সূত্রে একইরকম বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে বুরাইদা আল-আসলামী (রাঃ) হতেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণিত আছে। হাসান , ইবনু মা-জাহ (৪১০৩)।

【20】

সম্পদ দুনিয়ামুখী করে

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (অযাচিত) পার্থিব সম্পদ গ্রহণ করো না। কেননা, এর দ্বারা তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (১২)।

【21】

ঈমানদারের দীর্ঘায়ু

আবদুল্লাহ ইবনু বুস্‌র (রাঃ) কোন এক গ্রাম্য লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? তিনি বললেনঃ যে দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে এবং তার কর্মকান্ড সুন্দর হয়েছে। সহীহ্‌ , সহীহাহ্ (১৮৩৬), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫২৮৫), আর রাওয (৯২৬)।

【22】

দীর্ঘ জীবন ও সুন্দর আমলের অধিকারী ব্যক্তি সর্বোত্তম

আবূ বাক্‌রা (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বললেনঃ যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ্‌।

【23】

এ উম্মাতের গড় আয়ু ষাট ও সত্তরের মাঝামাঝি হবে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের (গড়) আয়ু ষাট হতে সত্তর বছর হবে। আমার উম্মাতের বয়স ষাট ও সত্তরের মাঝামাঝি এই অর্থে হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ ৩৩১৩ নং পরবর্তীতে বর্ণনা আসবে। ইবনু মা-জাহ (৪২৩৬)।

【24】

যামানা নিকটবর্তী হয়ে যাবে এবং আশা-আকাঙক্ষা হ্রাস পাবে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যামানা পরস্পর নিকটবর্তী (সংকীর্ণ) না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে না। তখন একবছর হবে একমাসের মতো, একমাস হবে এক সপ্তাহের মতো, এক সপ্তাহ হবে একদিনের মতো, একদিন হবে এক ঘন্টার মত এবং এক ঘন্টা হবে প্রজ্বলিত আগুনের একটি স্ফুলিংগের মতো। সহীহ্‌ , মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৪৪৮)।

【25】

পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা কম করা

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার শরীর স্পর্শ করে বললেনঃ পৃথিবীতে এমনভাবে দিনযাপন কর, যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির। তুমি নিজেকে কবরবাসীদের অন্তর্ভূক্ত মনে কর। মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে বললেনঃ তুমি সকালে উপনীত হয়ে বিকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না এবং বিকালে উপনীত হয়ে সকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তোমার সুস্থতার এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাও। কেননা, হে আল্লাহ্‌র বান্দা! তুমি তো জান না, আগামীকাল তুমি কি নামে অভিহিত হবে। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (১১৫৭), বুখারী। “তুমি নিজেকে কবরবাসী মনে কর এবং তুমি তো জাননা” এই অংশ ব্যতীত। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ঘাড়ের পিছনে স্থাপন করলেন, তারপর তা প্রসারিত করে বললেনঃ এই হলো আদম সন্তান, আর এটা হলো তার আয়ু। তিনি তারপর তিনবার বললেনঃ আর এই হলো তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪২৩২), বুখারী অনুরূপ। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তখন আমাদের একটি কুঁড়েঘর মেরামত করছিলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, এটা কি করছ? আমরা বললাম, এটা নড়বড়ে হয়ে গেছে, তা ঠিকঠাক করছি। তিনি বললেনঃ আমি তো দেখতে পাচ্ছি সেই ব্যাপারটি (মৃত্যু) এর চেয়েও দ্রুত এসে যাচ্ছে। সহীহ্‌ , মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫২৭৫)।

【26】

এই উম্মাতের লোক ধন-সম্পদের পরীক্ষায় নিপতিত হবে

কা’ব ইবনু ইয়ায (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কোন না কোন ফিত্‌না রয়েছে। আর আমার উম্মাতের ফিত্‌না হলো ধন-সম্পদ। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (৫৯৪)।

【27】

কারো নিকট দুই উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ থাকলেও সে তৃতীয়টি কামনা করবে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন আদম-সন্তানের অধীনে যদি দুই উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ থাকে তবুও সে তৃতীয় একটি স্বর্ণভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। যে লোক ত্বাওবাহ করে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার ত্বাওবাহ ক্ববূল করেন। সহীহ্‌ , তাখরীজ মুশকিলাতুল ফাকরি (১৪), বুখারী, মুসলিম।

【28】

দুটি বস্তুর কামনায় বৃদ্ধের অন্তরও যুবকে পরিণত হয়

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুটি বস্তুর কামনায় বৃদ্ধের অন্তরও যুবক থাকে : দীর্ঘ জীবন ও সম্পদের প্রাচুর্য। হাসান সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪২৩৩), মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়; কিন্তু দুটি ব্যাপারে যুবকই থাকে : বেঁচে থাকার লোভ এবং সম্পদের মোহ। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ।

【29】

দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি

আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: হালাল বস্তুকে হারাম করে নেয়া এবং ধন-সম্পদ ধ্বংস করার নাম দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি (যুহ্‌দ) নয়, বরং দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি হল: আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকটে যা আছে তার চাইতে তোমার হাতে যা আছে তার উপর বেশী নির্ভরশীল না হওয়া এবং তুমি কোন বিপদে পড়লে তার বিনিময়ে সাওয়াবের আশার তুলনায় বিপদে না পড়াটা তোমার নিকট অধিকতর কাঙ্ক্ষিত না হওয়া। খুবই দুর্বল, ইবনু মাজাহ (৪১০০)

【30】

বাসস্থান, বস্ত্র, খাদ্য ও পানীয়ের অধিকার

উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মানুষের জন্য এই কয়টি বস্তু ছাড়া আর কোন অধিকার নেই: তার বসবাসের জন্য একটি ঘর ও লজ্জা নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় এবং এক টুকরা রুটি ও পানি। যঈফ, যঈফা (১০৬৩), না কদুল কাত্তানী (পৃঃ ২২)

【31】

দান-খাইরাত ও ভোগ-ব্যবহারকৃত সম্পদ

মুতাররিফ (রাহঃ) তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। তখন তিনি বলছিলেন : “সম্পদের প্রাচুর্যের মোহ তোমাদেরকে (আল্লাহ্‌ তা’আলা হতে) উদাসীন করে ফেলেছে” (সুরা : তাকাসুর-১)। তিনি আরো বললেনঃ মানুষ বলে, আমার মাল, আমার সম্পদ। কিন্তু তুমি দান-খাইরাত করে যা (আল্লাহ্ তা’আলার খাতায়) জমা রেখেছ, খেয়ে যা শেষ করেছ এবং পরিধান করে যা পুরানো করেছ এগুলো ব্যতীত তোমার সম্পদ বলতে আর কিছু নেই। সহীহ্‌ , মুসলিম।

【32】

গ্রহীতার হাত হতে দাতার হাত উত্তম

আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ যদি তুমি (সৎকাজে) খরচ করে ফেল তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু তুমি যদি তা গচ্ছিত রাখ তাহলে তা তোমার জন্য অকল্যাণকর। তোমার প্রয়োজন পরিমান সম্পদ জমা রাখলে তাতে কোন দোষারোপ করা হবে না। আর তোমার পোষ্যদের হতেই (দান-খাইরাত) আরম্ভ কর। নীচের হাত হতে উপরের হাত উত্তম। সহীহ্‌ , ইরওয়া (৩/৩১৮), মুসলিম।

【33】

আল্লাহ্ তা’আলার উপর পুরোপরি নির্ভরশীল হওয়া

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও রিযিক দেয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১৬৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে দুই ভাই ছিল। তাদের একজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত থাকত এবং অন্যজন আয়-উপার্জনে লিপ্ত থাকত। কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সেই উপার্জনকারী ভাই তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তিনি তাকে বললেনঃ হয়তো তার ওয়াসীলায় তুমি রিযিকপ্রাপ্ত হচ্ছ। সহীহ্‌ , মিশকাত (৫৩০৮), সহীহাহ্ (২৭৬৯)।

【34】

যে ব্যক্তি সপরিবারে নিরাপদে ভোরে উপনীত হয়

উবাইদুল্লাহ ইবনু মিহসান আল-খিত্মী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে লোক পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকী থাকে তবে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্র করা হলো। হাসান , ইবনু মা-জাহ (৪১৪১)।

【35】

প্রয়োজনের ন্যূনতম পরিমাণে সন্তুষ্ট থাকা এবং ধৈর্য ধারণ করা

আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঈর্ষনীয় হল সেই মু’মিন ব্যক্তি যার অবস্থা খুবই হালকা (স্বল্প সম্পদ এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যাও কম) এবং যে নামাযে মনোযোগী, সুচারুরূপে তার প্রভুর ইবাদাত করে, একান্ত নিভৃতেও তাঁর অনুগত থাকে, মানুষের মাঝে অখ্যাত, তার দিকে অংগুলি সংকেত করা হয় না, আর ন্যূনতম প্রয়োজন মাফিক তার রিযিক এবং তাতেই ধৈর্য ধারণকারী। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই হাতের ইংগিতে বলেনঃ শীঘ্রই তার মৃত্যু হয়, তার জন্য ক্রন্দনকারীর সংখ্যাও কম, তার রেখে যাওয়া সম্পদও খুব সামান্য। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫১৮৯), একই সনদসূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার রব আমার নিকট মক্কার বাতহা অর্থাৎ কংকরময় এলাকা আমার জন্য স্বর্ণে পরিণত করার প্রস্তাব করেন। আমি বললাম, হে আমার রব! প্রয়োজন নেই, বরং আমি একদিন তৃপ্তির সাথে খাবো আর একদিন ক্ষুধার্ত থাকব। একই কথা তিনি তিনবার বা তদ্রূপ বললেন। যখন ক্ষুধার্ত থাকব তখন বিনীতভাবে তোমার নিকটে প্রার্থনা করব ও তোমাকেই মনে করব এবং যখন তৃপ্তির সাথে খাবো তখন তোমার শুকরিয়া আদায় করব ও তোমার প্রশংসা করব। যইফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫১৯০), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। এ অনুচ্ছেদে ফাযালা ইবনু উবাইদ হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আল-কাসিম (রাঃ) তিনি আবদুর রহমানের পুত্র এবং উপনাম আবূ আবদির রহমান, মতান্তরে আবূ আবদিল মালিক। তিনি আবদুর রহমান ইবনু খালিদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে মু’আবিয়ার মুক্তদাস। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী এবং বিশ্বস্ত রাবী। আর ‘আলী ইবনু ইয়াযীদ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল এবং তার উপনাম আবূ আবদিল মালিক। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ইসলাম ক্ববূল করেছে, এবং তার নিকট নূন্যতম রিযিক রয়েছে এবং তাকে আল্লাহ্‌ তা'আলা অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক দিয়েছেন, সে-ই সফলকাম হলো। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১৩৮)। ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : সেই ব্যক্তি কতই না সৌভাগ্যবান যাকে ইসলামের পথে হিদায়াত দান করা হয়েছে এবং তার জীবিকা ন্যূনতম প্রয়োজন মাফিক এবং সে তাতেই খুশি। সহীহ্‌ , তা’লীকুর রাগীব (২/১১), সহীহাহ্ (১৫০৬)।

【36】

ধনীদের পূর্বে দরিদ্র মুহাজিরগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দরিদ্র মুহাজিরগণ তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১২৩)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দু’আ করে) বলেনঃ হে আল্লাহ্‌! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখ, দরিদ্র থাকাবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কিয়ামাত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর করো। (একথা শুনে) আইশা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কেন এরূপ বলছেন? তিনি বললেনঃ হে আইশা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আইশা! তুমি যাঞ্চাকারী দরিদ্রকে ফিরিয়ে দিও না। যদি দেয়ার মতো কিছু তোমার নিকট না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরা হলেও তাকে দিও। হে আইশা! তুমি দরিদ্রদের ভালোবাসবে এবং তাদেরকে তোমার সান্নিধ্যে রাখবে। তাহলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌ তা'আলা তোমাকে তাঁর সান্নিধ্যে রাখবেন। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১২৬)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দরিদ্রগণ সম্পদশালীদের চেয়ে পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। আর তা হলো (আখিরাতের) অর্ধদিনের সমান। হাসান সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১২২)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দরিদ্র মুসলমানগণ জান্নাতে যাবে সম্পদশালীদের চেয়ে অর্ধদিন পূর্বে। এই অর্ধদিন হলো পাঁচ শত বছরের সমান। হাসান সহীহ্‌ , দেখুন হাদীস নং ২৩৫৩। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দরিদ্র মুসলমানগণ তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। দরিদ্র মুহাজিরগণ এই শব্দে হাদীসটি সহীহ্‌ , মুসলিম (৮/২২০)।

【37】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা

মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেনঃ কোন এক সময় আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকটে গেলাম। তিনি আমার জন্য খাবার আনালেন। পরে তিনি বললেনঃ আমি যখনি পেট পুরে খাবার খাই তখনি আমি কাঁদতে চাইলে কাঁদতে পারি। আমি প্রশ্ন করলাম, তা কেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে অবস্থায় দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন সে কথা মনে পড়ে। আল্লাহ্‌ তা’আলার শপথ! তিনি কোন দিনই দু’বার গোশত ও রুটি দ্বারা পেট ভরে খেতে পাননি। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব ৪/১০৯, মুখতাসার শামায়িল ১২৮ আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এক নাগাড়ে দুইদিন যবের রুটি পেট ভরে খেতে পাননি। সহীহ্‌ , মুখতাসার শামা-ইল (১২৩), মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবার এই দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো এক নাগাড়ে তিনদিন পেট ভরে গমের রুটি খেতে পাননি। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৩৪৩), বুখারী, মুসলিম। সুলাইম ইবনু আমির (রাহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ উমামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে কখনো যবের রুটিও অতিরিক্ত হতো না। সহীহ্‌ , মুখতাসার শামাইল (১২৪), তা’লীকুর রাগীব (৪/১১০)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবার-পরিজন একাধারে কয়েক রাত ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটিয়ে দিতেন। তাদের জন্য রাতের খাবার জুটত না। আর বেশিরভাগ সময় যবের রুটিই ছিল তাদের খাদ্য। হাসান , ইবনু মা-জাহ (২৩৪৭)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আ করেন : হে আল্লাহ্‌! মুহাম্মাদের পরিবারের জন্য শুধুমাত্র জীবন ধারণোপযোগী (পরিমাণ) রিযিকের ব্যবস্থা করুন। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১৩৬), বুখারী, মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগামী দিনের জন্য কোন কিছু সঞ্চয় করে রাখতেন না। সহীহ্‌ , মুখতাসার শাখাইল (৩০৪), তা’লীকুর রাগীব (২/৪২)। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনো টেবিলে খাবার খাননি এবং কখনো পাতলা রুটিও খাননি। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩২৯২, ৩২৯৩), বুখারী। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করা হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো ময়দার রুটি খেয়েছেন কি? সাহ্‌ল (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ (মৃত্যু) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কখনো ময়দা দেখেননি। তাকে আবার প্রশ্ন করা হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আপনাদের নিকট কি কোন চালুনি ছিল? তিনি বললেন, আমাদের কোন চালুনি ছিল না। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাহলে যব নিয়ে আপনারা কি করতেন? তিনি বললেন, আমরা তাতে ফুঁ দিতাম, ফলে যা উড়ে যাওয়ার তা উড়ে যেত, তারপর তাতে পানি ঢেলে খামির তৈরি করতাম। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৩৩৫), বুখারী।

【38】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের জীবন-যাপন

কাইস (রাহঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি : আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌ তা’আলার পথে রক্ত ঝরিয়েছে এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌ তা’আলার রাস্তায় তীর ছুড়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের সাথে এক যুদ্ধাভিযানে যোগদান করি। তখন খাবারের জন্য আমরা গাছের পাতা ও বাবলা গাছের ফল ব্যতিত আর কিছুই পাইনি। ফলে আমাদের এক একজন ছাগল ও উটের বিষ্ঠার ন্যায় পায়খানা করত। কিন্তু বর্তমানে আসাদ বংশের জনগণ দ্বীনের ব্যাপারে আমাকে তিরস্কার করছে। তাহলে তো আমি ব্যর্থ হলাম এবং আমার সব আমলও বাতিল হয়ে গেল। সহীহ্‌ , মুখতাসার শামাইল (১১৪), বুখারী, মুসলিম। কাইস (রাহঃ) সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, আরবের মধ্যে আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌ তা’আলার পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমরা নিজেরা জিহাদ করেছি। তখন খাবারের জন্য বাবলা গাছের ফল আর বুনো জাম ছাড়া আমাদের সাথে আর কিছু ছিল না। আমাদের এক একজন তা খেয়ে ছাগলের বিষ্ঠার ন্যায় পায়খানা করত। অথচ বর্তমানে আসাদ বংশের জনগণ ধর্মের ব্যাপারে আমাকে তিরস্কার করছে। তাই যদি হয়, তাহলে তো আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং আমার আমলও বিনষ্ট হয়ে গেল। সহীহ্‌ , দেখুন পূর্বের হাদীস। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাহঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি গোলাপী রংয়ের দুটি কাতান কাপড় পড়ে ছিলেন। তিনি একটি কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন এবং বললেন, বেশ, বেশ, আবূ হুরাইরা আজ কাতান কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে! অথচ আমার অবস্থা এরূপ ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বার ও আইশা (রাঃ)-এর ঘরের মাঝখানে ক্ষুধার তাড়নায় কাতর হয়ে পড়ে থাকতাম। এ পথে কেউ এসে আমার ঘাড়ের উপর পা রাখত এবং মনে করত যে, আমি পাগল হয়ে গেছি। অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামী ছিল না, বরং ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমার এরূপ অবস্থা হতো। সহীহ্‌ , বুখারী (৭৩২৪)। ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন লোকদের সাথে নিয়ে জামা‘আতে নামায় আদায় করতেন, তখন কিছু লোক অসহনীয় ক্ষুধার যন্ত্রনায় নামাযের মধ্যেই দাঁড়ানো অবস্থা হতে পড়ে যেতেন। তারা ছিলেন সুফ্‌ফার সদস্য। তাদের এ অবস্থা দেখে বেদুঈনরা বলত, এরা পাগল নাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেষ করে তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন : আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমাদের যে কি মর্যাদা রয়েছে তা তোমরা জানলে আরো ক্ষুধার্ত, আরো অভাব-অনটনে থাকতে পছন্দ করতে। ফাযালা (রাঃ) বলেন, সে সময়ে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। সহীহ্‌ , তা’লীকুর রাগীব (৪/১২০)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সময় ঘর হতে বের হলেন, যে সময়ে তিনি সচরাচর বের হন না এবং এ সময় কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেও আসতো না। (এ মুহূর্তে) আবূ বকর (রাঃ) এসে উপস্থিত হলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন : হে আবূ বাক্‌র! আপনি কি মনে করে এলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করতে, তাঁর বারকাতময় মুখমন্ডল দেখতে ও তাঁকে সালাম প্রদানের উদ্দেশ্যে এসেছি। ইতোমধ্যে উমার (রাঃ)-ও এসে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন : হে উমার! আপনার এ সময় আসার কারণ কি? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ক্ষুধার তাড়নায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমিও এরূপ কিছু অনুভব করছি। এই বলে তাঁরা আবুল হাইসাম ইবনু আত্তাইহান আল-আনসারী (রাঃ)-এর বাড়ীর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। আর তিনি ছিলেন প্রচুর খেজুরগাছ ও বকরীর মালিক, কিন্তু তার কোন খাদিম ছিল না। তাঁরা তাকে বাড়ীতে না পেয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সাথী কোথায়? তিনি বললেন, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন। ইতোমধ্যে আবুল হাইসাম (রাঃ) পানিভর্তি মশক নিয়ে ফিরে এলেন এবং সেটা রেখেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! তারপর তিনি তাঁদেরকে নিয়ে তাঁর বাগানে গেলেন এবং তাদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। তারপর তিনি খেজুরগাছ হতে কয়েক গুচ্ছ খেজুর নামিয়ে এনে তাঁদের সামনে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ আমাদের জন্য পাকা খেজুর বেছে আলাদা করে নিয়ে আসলে না কেন? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি ভাবলাম যে, আপনারা নিজেদের ইচ্ছামতো তাজা কিংবা পাকা খেজুর বেছে খাবেন, (এজন্য দুরকম খেজুরই পেশ করলাম)। তারপর তাঁরা খেজুর খেয়ে সেই পানি পান করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! কিয়ামাত দিবসে এসব নিয়ামাত প্রসঙ্গেও তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। এই সুশীতল ছায়া, সুস্বাদু কাঁচা-পাকা খেজুর ও ঠান্ডা পানি (কতই না সুন্দর নিয়ামাত)। এরপর আবুল হাইসাম (রাঃ) তাঁদের জন্য খাবার তৈরী করতে চলে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলে দিলেন : কোন অবস্থাতেই দুধেল পশু যবাহ করবে না। কাজেই তিনি নবীন একটি নর ছাগল যবাহ করলেন এবং রান্না করে তাঁদের জন্য নিয়ে এলেন। তাঁরা তা খেলেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেন : তোমার কি কোন খাদিম আছে? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যখন আমার নিকট বন্দী আসবে তুমি তখন এসো। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দুটি গোলাম আসে। তাদের সাথে তৃতীয় কোন গোলাম ছিল না। আবুল হাইসাম (রাঃ) তাঁর নিকট এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ এদের মধ্যে যেটা ভালো লাগে বেছে নাও। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনিই আমাকে একটি পছন্দ করে দিন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তাকে আমানাতদার হতে হয়। ঠিক আছে, তুমি এটাই নাও। কেননা, আমি একে নামায আদায় করতে দেখেছি। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তার সাথে উত্তম আচরণ করার জন্য। আবুল হাইসাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপদেশ প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রীর নিকট গিয়ে তাকে জানিয়ে দেন। তার স্ত্রী বললেন, এক মুক্ত করা ব্যতীত আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বক্তব্যের মর্ম পর্যন্ত পৌছ্‌তে পারবেন না। তিনি বললেন, ঠিক আছে, সে এখন মুক্ত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা যত নবী ও খলীফা প্রেরণ করেছেন, তাদের সকলকেই দুজন করে একান্ত পরামর্শক দিয়েছেন। একজন সাথী তো তাকে ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকে এবং অন্যায় কাজে প্রতিহত করে। আর অন্যজন তাকে ধ্বংস করার কোন সুযোগই ছাড়ে না। যাকে এই অসৎ পরামর্শক হতে হিফাযাত করা হয়েছে তাকেই বাঁচানো হয়েছে। সহীহ্‌ , সহীহাহ্ (১৬৪১), মুখতাসার শামাইল (১১৩)। আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র ও উমার (রাঃ) বের হলেন….। তারপর তিনি উক্ত মর্মে পূর্বোক্ত হাদীসের মতোই হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই সনদে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই। সহীহ্‌ , দেখুন পূর্বের হাদীস। আবূ তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে অনাহারের অভিযোগ করলাম এবং নিজেদের পেটের কাপড় উঠিয়ে একটা পাথর (বাঁধা) দেখালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাঁর পেটের কাপড় উঠিয়ে আমাদেরকে দু’টি পাথর বাঁধা দেখালেন। যঈফ, মুখতাসার শামায়িল (১১২) সিমাক ইবনু হারব (রাহঃ) তিনি বলেন, নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি : এখন তোমরা কি নিজেদের খুশি মতো পানাহার করতে পারছো না? অথচ আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি এই নিকৃষ্ট ও শুকনো খেজুরও পেতেন না, যদ্ধারা তাঁর পেট ভরতে পারেন। সহীহ্‌ , মুখতাসার শামা-ইল (১১০), মুসলিম।

【39】

মনের ঐশ্বর্যই আসল ঐশ্বর্য

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পার্থিব সম্পদের আধিক্য থাকলেই ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায় না। মনের ঐশ্বর্যই আসল ঐশ্বর্য। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহা (৪১৩৭), বুখারী, মুসলিম।

【40】

নিজের সম্পদ গ্রহণ করা

হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিবের স্ত্রী খাওলা বিনতু কাইস (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : এ পার্থিব ধন-সম্পদ হলো সবুজ-শ্যামল, মনোরম ও মধুময়। যে লোক সঠিক পন্থায় তার প্রয়োজন মুতাবিক তা গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বারকাত দেয়া হয়। এমন অনেক লোক আছে, যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া এই সম্পদ নিজেদের খুশি মুতাবিক ভোগ-ব্যবহার করে। কিয়ামাত দিবসে তাদের জন্য জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই নেই। সহীহ্‌ , সহীহাহ্ (১৫৯২), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪০১৭)।

【41】

দিরহাম ও দীনারের দাসগণ অভিশপ্ত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দীনার ও দিরহামের দাসগণ অভিশপ্ত। আবূ ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত বর্ণনায় হাদীসটি হাসান গারীব। এই হাদীসটি অন্য সূত্রেও আবূ সালিহ হতে তিনি আবূ হুরাইরা হতে তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপভাবে আরও পূর্ণ ও দীর্ঘ বর্ণিত হয়েছে। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫১৮০)

【42】

সম্পদ ও প্রতিপত্তির মোহ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে

কা’ব ইবনু মালিক আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের। সহীহ্‌ , রাওযুন নাযীর (৫-৭)।

【43】

পার্থিব জীবন ছায়ার মতো ক্ষণস্থায়ী

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন একসময় খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তিনি ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে দাঁড়ালে দেখা গেল তাঁর গায়ে মাদুরের দাগ পড়ে গেছে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আপনার জন্য যদি একটি নরম বিছানার (তোষক) ব্যবস্থা করতাম। তিনি বললেনঃ দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? দুনিয়াতে আমি এমন একজন পথচারী মুসাফির ছাড়া তো আর কিছুই নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিল, তারপর তা ছেড়ে দিয়ে গন্তব্যের দিকে চলে গেল। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪১০৯)।

【44】

ভেবে-চিন্তে বন্ধু নির্বাচন করবে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে। হাসান , সহীহাহ্ (৯২৭), মিশকাত (৫০১৯)।

【45】

আদম সন্তান ও তার পরিবার পরিজন, সম্পদ ও কর্মের উদাহরন

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃতের অনুসরণ করে, তারপর দুটি চলে আসে এবং একটি (তার সাথে) রয়ে যায়। তার সাথে যায় তার পরিবার-পরিজন, সম্পদ ও কৃতকর্ম। তারপর তার পরিজন ও সম্পদ ফিরে আসে এবং তার কৃতকর্ম (তার সাথে) থেকে যায়। সহীহ্‌ , বুখারী, মুসলিম।

【46】

অতি ভোজন নিন্দনীয়

মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : মানুষ পেট হতে অধিক নিকৃষ্ট কোন পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদন্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৩৪৯)।

【47】

প্রদর্শনেচ্ছা ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করবে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তাকে তা-ই দেখাবেন (অর্থাৎ সে প্রদর্শনীমূলক আমল করলে তা প্রচার করে দেখানো হবে) এবং সুনাম-সুখ্যাতির অন্বেষণের উদ্দেশ্যে যে লোক আমল করবে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার আমল (দোষ-ক্রুটিগুলো) প্রচার করে দেবেন। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪২০৬)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ মানুষকে যে ব্যক্তি দয়া করে না, আল্লাহ্‌ও তাকে দয়া করেন না। সহীহ্‌ , তাখরীজুল মুশকিলাহ (১০৮), সহীহাহ্‌ (৪৮৩), বুখারী, মুসলিম অনুরুপ। জুনদাব ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও এ অনু্চ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্, তবে উপরোক্ত সূত্রে গারীব। শুফাই আল-আসবাহী (রাহঃ) কোন একদিন তিনি মাদীনায় পৌঁছে দেখতে পেলেন যে, একজন লোককে ঘিরে জনতার ভিড় লেগে আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ইনি কে? উপস্থিত লোকেরা তাকে বলল, ইনি আবূ হুরাইরা (রাঃ)। (শুফাই বলেন), আমি কাছে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তখন লোকদের তিনি হাদীস শুনাচ্ছিলেন। তারপর তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে বললাম, আমি সত্যিকারভাবে আপনার নিকট এই আবেদন করছি যে, আপনি আমাকে এমন একটি হাদীস শুনাবেন, যা আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আমি তাই করব, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন এবং আমি তা বুঝেছি ও জেনেছি। আবূ হুরাইরা (রাঃ) একথা বলার পর কেমন যেন তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। অল্প সময় এভাবে থাকলেন। তারপর তন্ময়ভাব চলে গেলে তিনি বললেন, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ঘরের মধ্যে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তখন আমি ও তিনি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় আরো গভীরভাবে তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে মুখমন্ডল মুছলেন, তারপর বললেন, আমি তোমার নিকট অবশ্যই এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তখন এই ঘরে তিনি ও আমি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবূ হুরাইরা আবার বেহুশ হয়ে গেলেন; তিনি পুনরায় হুশে ফিরে এসে তার মুখমন্ডল মুছলেন এবং বললেন, আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমার নিকট এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যাহা তিনি আমাকে বর্ণনা করেছেন। আমি তখন তার সাথে এই ঘরে ছিলাম। আমি আর তিনি ব্যতীত তখন আর কেউ ছিলনা। আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় আরো গভীরভাবে তন্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি অনেকক্ষণ তাকে ঠেস দিযে রাখলাম। তারপর হুঁশ ফিরে এলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য কিয়ামাত দিবসে তাদের সামনে হাযির হবেন। সকল উম্মাতই তখন নতজানু অবস্থায় থাকবে। তারপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিদের ডাকা হবে তারা হলো কুরআনের হাফিয, আল্লাহ্‌ তা‘আলার পথের শহীদ এবং প্রচুর ধনৈশ্বর্যের মালিক। সেই ক্বারী (কুরআন পাঠক)-কে আল্লাহ্‌ তা‘আলা প্রশ্ন করবেন, আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি তা কি তোমাকে শিখাইনি? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, শিখিয়েছেন। তিনি বলবেন, তুমি যা শিখেছ সে অনুযায়ী কোন কোন আমল করেছ? সে বলবে, আমি রাত-দিন তা তিলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে আরো বলবেন, বরং তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, তোমাকে বড় ক্বারী (হাফিয) ডাকা হোক। আর তা তো ডাকা হয়েছে। তারপর সম্পদওয়ালা ব্যক্তিকে হাযির করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদশালী বানাইনি? এমনকি তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলেনা? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, তা বানিয়েছেন। তিনি বলবেন, আমার দেয়া সম্পদ হতে তুমি কোন কোন (সৎ) আমল করেছ? সে বলবে, আমি এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রেখেছি এবং দান-খাইরাত করেছি। আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌ তা‘আলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, মানুষের নিকট তোমার দানশীল-দানবীর নামের প্রসার হোক। আর এরূপ তো হয়েছেই। তারপর যে লোক আল্লাহ্‌ তা‘আলার রাস্তায় শাহাদাৎ বরণ করেছে তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি কিভাবে নিহত হয়েছ? সে বলবে, আমি তো আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাৎ বরণ করেছি। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, আর ফেরেশতারাও তাকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌ তা‘আলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে লোকমুখে একথা প্রচার হোক যে, অমুক ব্যক্তি খুব সাহসী বীর। আর তাতো বলাই হয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাঁটুতে হাত মেরে বললেনঃ হে আবূ হুরাইরা! কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্‌ তা‘আলার সৃষ্টির মধ্য হতে এ তিনজন দ্বারাই প্রথমে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে। ওয়ালীদ অর্থাৎ আবূ উসমান আল-মাদাইনী বলেন, উকবা ইবনু আমাকে বলেছেন যে, উক্ত শুফাই (শাফী) এ হাদীসটি মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বর্ণনা করেন। আবূ উসমান আরো বরেন, আলা ইবনু আবূ হাকীম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সে (শাফী) ছিল মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর তলোয়ারবাহক। সে বলেছে যে, জনৈক ব্যক্তি মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তখন মু‘আবিয়া (রাঃ) বলেন, যদি তাদের সাথে এমনটি করা হয় তাহলে অন্যসব লোকের কি অবস্থা হবে? তারপর মু‘আবিয়া (রাঃ) খুব বেশি কাঁন্না করলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি কাঁদতে কাঁদতে মারা যাবেন। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে (অর্থাৎ সে এই হাদীসটি বর্ণনা না করলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না)। ইতিমধ্যে মু‘আবিয়া (রাঃ) হুঁশ ফিরে পেলেন এবং তার চেহারা মুছলেন, তারপর বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যই বলেছেন। (এই বলে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন) : “যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর সৌন্দর্য কামনা করে, আমি দুনিয়াতে তাদের কর্মের পূর্ণ ফল প্রদান করে থাকি এবং সেখানে তাদেরকে কর্ম প্রদান করা হবে না। তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছু নেই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা বিফলে যাবে” (সূরা : হূদ-১৫,১৬)। সহীহ্‌ , তা’লীকুর রাগীব (১/২৯-৩০), তা’লীক আলা ইবনে খুযাইমাহ (২৪৮২)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ‘জুব্বুল হুযন’ হতে আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘জুব্বুল হুযন’ কি? তিনি বললেনঃ তা জাহান্নামের মধ্যকার একটি উপত্যকা, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তাতে কে প্রবেশ করবে? তিনি বললেনঃ যেসব কুরআন পাঠক লোক দেখানো আমল করে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৫৬)

【48】

একান্ত গোপনে আমল করা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন লোক খুবই গোপনে কোন আমল করে কিন্তু অন্যরা তা জেনে ফেললে তাতেও তার আনন্দ লাগে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব, একটি গোপনে আমল করার জন্য এবং অপরটি প্রকাশ হয়ে পড়ার জন্য। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২২৬)

【49】

যে যাকে ভালোবাসে (কিয়ামাত দিবসে) সে তার সাথী হবে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একজন লোক এসে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কিয়ামাত কখন সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে দাঁড়িযে গেলেন। নামায সমাপ্তির পর তিনি প্রশ্ন করেন : কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই যে আমি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কিয়ামাতের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি অবশ্য তেমন লম্বা (নাফল) নামাযও পড়িনি, রোযাও (নাফল) রাখিনি, তবে আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক যাকে ভালোবাসে, কিয়ামাত দিবসে সে তার সাথেই অবস্থান করবে। তুমিও যাকে ভালোবাস তার সাথেই অবস্থান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, তারা এ কথায় এতই সন্তুষ্ট হলেন যে, ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের আর কোন বিষয়ে এত খুশি হতে দেখিনি। সহীহ্‌ , রাওযুন নাযীর (১০৪), বুখারী, মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক যাকে ভালোবাসে, (কিয়ামাত দিবসে) সে তার সাথেই অবস্থান করবে এবং সে যা অর্জন করেছে তা-ই পাবে। তুমি যাকে ভালবাস তার সাথেই থাকবে, তুমি যা নিয়্যাত করেছ তাই পাবে এই অর্থে হাদীসটি সহীহ্। সহীহাহ্ (৩২৫৩)। সাফওয়ান ইবনু আসসাল (রাঃ) তিনি বলেন, উচ্চ আওয়াজধারী জনৈক বেদুঈন এসে বলল, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কোন একজন ব্যক্তি একটি সম্প্রদায়কে ভালোবাসে; কিন্তু সে তাদের সাথে গিয়ে মিলিত হতে পারেনি (অর্থাৎ তাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে (কিয়ামাত দিবসে) সে তার সাথেই অবস্থান করবে। হাসান , আর রাওয (৩৬০)।

【50】

আল্লাহ্‌ তা‘আলার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেনঃ বান্দাহ আমার সম্বন্ধে যেরকম ধারণা পোষণ করে আমি তার সাথে সে অনুযায়ী আচরণ করি। সে আমাকে ডাকলে আমি তার সাথেই থাকি। সহীহ্‌ , মুসলিম (৮/৬৬), বুখারী (৭৪০৫), আমাকে স্বরণ করলে এই অর্থে।

【51】

গুনাহ ও সাওয়াবের কাজ প্রসঙ্গে

নাওয়াস ইবনু সাম’আন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একজন লোক গুনাহের কাজ ও সাওয়াবের কাজ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সৎকাজ বা সাওয়াবের কাজ হলো সদাচার এবং গুনাহের কাজ হলো যা তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে, আর সেটা মানুষ জানতে পারুক তা তুমি অপছন্দ কর। সহীহ্‌ , মুসলিম (৮/৭)।

【52】

আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্যই ভালোবাসা

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেনঃ আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য রয়েছে আলোর মিম্বার (মঞ্চ)। নবী ও শাহীদগণ পর্যন্ত তাদের সাথে (মর্যাদা দর্শনে) ঈর্ষা করবে। সহীহ্‌ , মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫০১১), তা’লীকুর রাগীব (৪/৪৭)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) অথবা আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা (কিয়ামাত দিবসে) সাত প্রকারের লোককে তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়াই (আশ্রয়) অবশিষ্ট থাকবে না। (তারা হলো): (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) যে যুবক আল্লাহ্‌ তা‘আলার ইবাদাতের মধ্যে বড় হয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ হতে বেরিয়ে গেলেও তার অন্তর এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে, যে পর্যন্ত না সে আবার সেখানে ফিরে আসে, (৪) এমন দুব্যক্তি যারা আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করেছে, এই সম্পর্কেই একত্র থাকে এবং বিচ্ছিন্ন হয়, (৫) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে স্মরণ করেছে এবং তার দুচোখ বেয়ে পানি পড়েছে, (৬) এমন ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত পরিবারের সুন্দরী রূপসী নারী (অশ্লীল কাজে) আহ্ববান করেছে কিন্তু সে তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছে : আমি আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় করি এবং (৭) এমন ব্যক্তি যে এত গোপনে দান-খাইরাত করেছে যে, তার বাম হাতও জানতে পারেনি যে, তার ডান হাত কি দান করেছে। সহীহ্‌ , ইরওয়া (৮৮৭), বুখারী, মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এই হাদীসটি অনুরূপভাবে মালিক ইবনু আনাস (রাহঃ)-এর বরাতে ভিন্ন সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সন্দেহবশতঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) অথবা আবূ সাঈদ (রাঃ) বলা হয়েছে। কিন্তু এই হাদীসটি খুবাইব (হাবীব) ইবনু আবদুর রাহমানের সূত্রে সন্দেহমুক্তভাবে আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন। মালিক ইবনু আনাসের বর্ণিত হাদীসের একইরকম হাদীস সাওয়ার ইবনু আবদুল্লাহ আল-আনসারী ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না-ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার হতে, তিনি খুবাইব (রাহাবীব) ইবনু আবদুর রাহমান হতে, তিনি হাফ্‌স ইবনু আসিম হতে, তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে তাতে আছে : “কানা কালবুহু মুআল্লাকান বিল-মাসাজিদ” (যার অন্তর মাসজিদসমূহের সাথে সংযুক্ত) এবং “যাতু হাসাবিন” (উচ্চবংশীয়া) এর স্থলে “যাতু মানসাবিন ওয়া জামালিন” (মর্যাদাসম্পন্ন ও সুন্দরী) বাক্যাংশের উল্লখ আছে। এ বর্ণনাটিও হাসান সহীহ্। সহীহ্‌ , দেখুন র্পূবের হাদীস। ------------------- ৫৩/২. অনুচ্ছেদঃ ভালোবাসার কথা অবহিত করা ২৩৯১/২। মিকদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ তার কোন (মুসলিম) ভাইকে ভালোবাসলে সে যেন অবশ্যই তাকে তা অবহিত করে। সহীহ্‌ , সহীহাহ্ (৪১৭, ২৫১৫)। আবূ ঈসা বলেন, মিকদাম (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ্ গারীব। আবূ যার ও আনাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মিকদামের উপনাম আবূ কারীমাহ। ইয়াযীদ ইবনু নুআমা আয–যাব্বী (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কারো সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে সে যেন তার নাম, পিতার নাম ও গোত্র বা বংশের নাম জিজ্ঞেস করে নেয়। কেননা তা ভালোবাসার সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য খুব বেশী কার্যকরী হয়। যঈফ, যঈফা (১৭২৬)

【53】

চাটুকারিতা ও চাটুকার নিন্দনীয়

আবূ মা’মার (রাহঃ) কোন একদিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোন এক প্রশাসকের সামনেই তার প্রশংসা করতে শুরু করে। এতে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) তার মুখমন্ডলে ধুলাবালি নিক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চাটুকারের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করি। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৭৪২), মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, চাটুকারদের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সহীহ্‌ , দেখুন পূর্বের হাদীস।

【54】

ঈমানদার লোকের সংসর্গে থাকা

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং আল্লাহ্‌ভীরু মুত্তাক্বী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়। হাসান , মিশকাত (৫০১৮)।

【55】

বিপদে ধৈর্যধারণ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামাতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। সহীহ্‌ , সহীহাহ্ (১২২০), মিশকাত (১৫৬৫)। এ সনদেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ্ তা‘আলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আ্ল্লাহ তা‘আলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। হাসান , ইবনু মা-জাহ (৪০৩১)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থতাজনিত কষ্টের তুলনায় বেশি কষ্ট আমি আর কোন ব্যক্তির হতে দেখিনি। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (১৬২২), বুখারী, মুসলিম। মুস‘আব ইবনু সা’দ (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে তিনি (সা’দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেনঃ নাবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহ্‌ই থাকে না। হাসান, সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৪০২৩)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্‌ তা‘আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। হাসান সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (২২৮০)।

【56】

দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেনঃ আমি দুনিয়াতে যখন কোন বান্দার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই, তখন তার জন্য একমাত্র জান্নাত ব্যতীত আমার নিকট আর কোন প্রতিদান থাকে না। সহীহ্ , তা’লীকুর রাগীব (৪/১৫৫, ১৫৬), বুখারী অনুরূপ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, মহামহিম আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেনঃ আমি যে ব্যক্তির দুটি প্রিয় চোখ কেড়ে নিয়েছি; অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করেছে এটা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে হয়েছে বলে মনে করে এবং সাওয়াবের আশা করে, আমি তাকে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন কিছু প্রতিদান দিয়ে সন্তুষ্ট হব না। সহীহ্‌ , তা‘লীকুর রাগীব (৪/১৫৬)।

【57】

বিপদে ধৈর্য ধারণের সাওয়াব প্রসঙ্গে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে বিপদে পতিত (ধৈর্যধারী) মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হবে, তখন (পৃথিবীতে) বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙ্ক্ষা (পরিতাপ) করবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করে দেয়া হতো। হাসান , সহীহাহ্‌ (২২০৬), তা’রীকুর রাগীব (৪/১৪৬), মিশকাত (১৫৭০)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর অনুতপ্ত হবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কিসের জন্য অনুতপ্ত হবে? তিনি বললেনঃ মৃত লোকটি সৎকর্মশীল হলে সে এই বলে অনুতপ্ত হবে যে, সে আরও বেশী (আমল) করল না কেন। আর সে অন্যায়কারী (পাপী) হলে এই বলে অনুতপ্ত হবে যে, সে কেন অন্যায় থেকে বিরত থাকলো না। খুবই দুর্বল, মিশকাত (৫৫৪৫)

【58】

একদল লোক পার্থিব স্বার্থে ধর্মকে প্রতারণার উপায় বানাবে। এদের মুখে মিষ্টি বুলি অন্তরে বিষ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ জামানায় কিছু লোকের উদ্ভব হবে যারা পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে। তারা জনগণের সামনে ভেড়ার চামড়ার মত কোমল পোশাক পরবে। তাদের মুখের ভাষা হবে চিনির চেয়ে মিষ্টি; কিন্তু তাদের হৃদয় হবে নেকড়ে বাঘের মত হিংস্র। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের বলবেনঃ তোমরা কি আমার বিষয়ে ধোঁকায় পড়ে আছ, নাকি আমার প্রতি ধৃষ্টতা দেখাচ্ছ? আমার শপথ! আমি তাদের উপর তাদের মধ্য হতেই এমন বিপর্যয় আপতিত করব, যা তাদের খুবই সহনশীল ব্যক্তিদের পর্যন্ত হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ছাড়বে। খুবই দুর্বল, তা’লীকুর রাগীব (১/৩২) ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেনঃ “আমি এমন মাখলুকও সৃষ্টি করেছি, যাদের মুখের ভাষা মধুর চাইতে মিষ্টি; কিন্তু তাদের হৃদয় তেতো ফলের চাইতেও তিক্ত। আমার সত্তার শপথ! আমি তাদেরকে এমন এক মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে ছেড়ে দেব যে, তা তাদের অধিক সহনশীল ব্যক্তিকেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ছাড়বে। তারা কি আমার সাথে প্রতারণা করছে নাকি আমার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে? যঈফ, প্রাগুক্ত

【59】

রসনা সংযত রাখা বা সংযতবাক হওয়া

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুক্তির উপায় কি? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় (অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়ীতে অবস্থান কর) এবং তোমার গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (৮৮৮)। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ সকালে ঘুম হতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য। হাসান , মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৮৩৮)। সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুই ঠোঁটের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থানের) যামিন হতে পারে (অপব্যবহার হতে সংযত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো। সহীহ্‌ , তা’লীকুর রাগীব (৩/১৯৭), যঈফা (২৩০২), বুখারী অনুরূপ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা'আলা যে ব্যক্তিকে তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ হতে মুক্ত করেছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাসান, সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (৫১০)। সুফিয়ান ইবনু আবদুল্লাহ আস-সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে এমন একটি কথা বলুন, যা আমি ধারণ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি বল, আল্লাহ্‌ই আমার রব (প্রভু) তারপর এতে সুদৃঢ় থাকো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আবার বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সর্বাধিক আশংকাজনক বস্তু কোনটি? তিনি স্বীয় জিহবা ধরে বললেনঃ এই যে, এটি। সহীহ্‌ , ইবনু মা-জাহ (৩৯৭২), মুসলিম।

【60】

আল্লাহ্‌র যিকিরশুন্য কথায় অন্তর কঠিন হয়ে যায়

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বলো না। কেননা, আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বললে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর নিঃসন্দেহে কঠিন অন্তরের লোকই আল্লাহ্‌ তা’আলা থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে থাকে। যঈফ, যঈফা (৯২০), মিশকাত, তাহকীক ছানী (২২৭৬)

【61】

উপকারী কথাই লাভজনক

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষের প্রতিটি কথা তার জন্য অপকারী, উপকারী নয়। তবে সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকিরই তার জন্য লাভজনক। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৯৭৪)

【62】

প্রত্যেক দাবিদারের দাবি পূরণ করতে হবে

আবূ জুহাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালমান (ফারসী) ও আবুদ দারদা (রাঃ)-এর মধ্যে ভাইয়ের সম্পর্ক তৈরী করে দেন। কোন একদিন আবুদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে সালমান (রাঃ) দেখা করতে আসেন। তখন তিনি তার স্ত্রী উম্মুদ দারদাকে খুবই সাধারণ জামা-কাপড় পরে থাকাবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করেন, আপনি এরূপ সাধারণ পোশাকে কেন? তিনি বললেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার তো দুনিয়ার কিছু প্রয়োজন নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আবুদ দারদা (রাঃ) এরই মধ্যে বাড়ী ফিরে আসলেন এবং তার (মেহমানের) সামনে খাবার পরিবেশন করে বললেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি রোযা রেখেছি। তিনি বললেন, আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমি খাব না। তারপর তিনি খাবার খেলেন। রাত গভীর হলে আবুদ দারদা (রাঃ) নামায আদায় করার জন্য উঠেন। সালমান (রাঃ) তাকে বললেন, এখন ঘুমান। সুতরাং তিনি ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি পুনরায় নামায আদায় করতে উঠলে এবারো তিনি বললেন, ঘুমিয়ে থাকুন (রাত অনেক বাকী)। কাজেই তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। তারপর ফজরের সময় ঘনিয়ে এলে সালমান (রাঃ) তাকে বললেন, এখন উঠুন। তারপর দু’জনেই উঠে (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বললেন, আপনার উপর আপনার দেহের প্রাপ্য (অধিকার) আছে এবং আপনার রবের প্রাপ্য (অধিকার) আছে, মেহমানের প্রাপ্য (অধিকার) আছে এবং আপনার পরিবারের (অধিকার) আছে। অতএব, প্রত্যেক হাকদারকে তার প্রাপ্য (অধিকার) প্রদান করুন। তারপর তারা এ ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন। তিনি বললেনঃ সালমান ঠিকই বলেছে। সহীহ্‌ , মুখতাসার বুখারী (৯৬৫), মুসলিম।

【63】

আইশা ও মুআবিয়া (রাঃ)-এর পত্রালাপ

জনৈক মাদীনাবাসী তিনি বলেন, কোন এক সময় উম্মুল মু'মিনীন আইশা (রাঃ)-কে মু'আবিয়া (রাঃ) লিখে পাঠান : আমাকে লিখিতভাবে কিছু উপদেশ দিন, তবে তা যেন দীর্ঘ না হয়। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, আইশা (রাঃ) মু'আবিয়া (রাঃ)-কে লিখলেন : আপনাকে সালাম। তারপর এই যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা'আলার সন্তুষ্টি আকাঙ্খা করে তা মানুষের অসন্তুষ্টি হলেও, মানুষের দুঃখ-কষ্ট হতে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ্‌ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি আশা করে আল্লাহ্ তা'আলাকে অসন্তুষ্ট করে হলেও, আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন। আপনাকে আবারো সালাম। সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ (২৩১১), তাখরীজ তাহাভীয়া (২৭৮)।