37. জাহান্নামের বিবরণ
জাহান্নামের বিবরণ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে সেদিন এর সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের জন্য নিয়োজিত থাকবে সত্তর হাজার ফেরেশতা। তারা এগুলো ধরে এটাকে টানতে থাকবে। সহীহঃ মুসলিম (৮/১৪৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে জাহান্নাম হতে একটি গর্দান (মাথা) বের হবে। এর দুটি চোঁখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে, দুটি কান থাকবে যা দিয়ে সে শুনবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। সে বলবে, তিন ধরনের লোকের জন্য আমাকে নিয়োজিত করা হয়েছেঃ (১) প্রতিটি অবাধ্য অহংকারী যালিমের জন্য, (২) আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কোন কিছুকে যে ব্যক্তি ইলাহ বলে ডাকে তার জন্য এবং (৩) ছবি নির্মাতাদের জন্য। সহীহঃ সহীহাহ্ (৫১২), তা’লীকুর রাগীব (৪/৫৬)
জাহান্নামের গহ্বরের বর্ণনা
হাসান বাসরী (রহঃ) ‘উত্বাহ ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) আমাদের এই বসরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামের এক প্রান্ত হতে বড় একটি পাথরকে গড়িয়ে ছেড়ে দেয়া হলে এটা সত্তর বছর পর্যন্ত গড়াতেই থাকবে তবু স্থির হবার জায়গায় আসতে পারবে না। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৬১২), মুসলিম। আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের মধ্যে ‘সাঊদ’ নামে আগুনের একটি পাহাড় আছে। কাফিরগণ সত্তর বছরে এর উপর উঠবে এবং সত্তর বছরে গড়িয়ে পড়বে। এমনিভাবে তারা তাতে অনন্তকাল ধরে উঠবে ও নামবে। যঈফ, মিশকাত (৫৬৭৭)
জাহান্নামীদের শরীর হবে বিরাট আকৃতির
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামে কাফির ব্যক্তির গায়ের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ গজ মোটা, তার মাড়ির দাঁত হবে উহূদের সমান বড় এবং মক্কা-মদীনার দূরত্বের সমান বিস্তৃত হবে তার বসার জায়গা (নিতম্বদেশ)। সহীহঃ মিশকাত (৫৬৭৫), সহীহাহ্ (১১০৫), আযযিলা-ল (৬১০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত দিবসে কাফির ব্যক্তির মাড়ির দাঁত হবে উহূদ পাহাড়সম বড়, তার ঊরু হবে ‘বাইযা’ পাহাড়সম বিশাল এবং তার নিতম্বদেশ হবে রাবাযার মতো তিনদিন চলার পথের দূরত্বের সমান বিস্তৃত। হাসানঃ সহীহাহ্ (৩/৯৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামে কাফির ব্যক্তির মাড়ির দাঁত হবে উহূদ পাহাড়ের সমান। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (৪/২৩৭), সহীহাহ্ (৩/৯৬) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (কিয়ামাতের দিন) কাফির ব্যক্তি তার জিহ্বা এক-দুই ফারসাখ পরিমান জায়গা জুড়ে বিছিয়ে রাখবে। লোকেরা তা পদদলিত করবে। যঈফ, মিশকাত (৫৬৭৬), যঈফা (১৯৮৬)
জাহান্নামীদের পানীয় বস্তুর বিবরণ
আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার বাণী “কাল-মুহলি” (তা যেন গলিত তামা)-এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ তা হল তেলের গাদ সদৃশ। জাহান্নামীদের মধ্যে কোন জাহান্নামী যখনই এটা তার মুখের নিকটে নিবে সাথে সাথে তার মুখমন্ডলের চামড়া খসে তাতে পড়ে যাবে। যঈফ, মিশকাত (৫৬৭৮), তা’লীকুর রাগীব (৪/২৩৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানীয় ঢালা হবে, এমনকি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছবে এবং পেটের সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দিবে, তারপর তা পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। এটাই হল ‘সাহর’ (গলে যাওয়া)। আবার তা পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে (এবং এমনিভাবে শাস্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)। যঈফ, মিশকাত (৫৬৭৯) তা’লীক অনুরূপ আবূ উমামা (রাঃ) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “জাহান্নামীদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে এক এক ঢোক করে গলধঃকরণ করবে” (সূরাঃ ইবরাহীম–১৬, ১৭) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পুঁজ যখন তার মুখের নিকটে নিয়ে আসা হবে সে তা অপছন্দ করবে। তারপর যখন আরো নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার মুখমন্ডল পুড়ে যাবে এবং মাথার চামড়া গলে পড়ে যাবে। তারপর সে যখন তা পান করবে তখন তা তার নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে এবং তা মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তাদের গরম পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে দিবে” (সূরাঃ মুহাম্মাদ— ১৫)। তিনি আরো বলেনঃ “পিপাসার্ত হয়ে তারা পানীয় প্রার্থনা করলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। তা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং (জাহান্নাম) কতই না নিকৃষ্ট স্থান” (সূরাঃ কাহ্ফ— ২৯)। যঈফ, মিশকাত (৫৬৮০), তা’লীক অনুরূপ আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) “কালমুহ্লি” (গলিত ধাতুর ন্যায়) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তা হল গরম তেলের গাদ সদৃশ (যা জাহান্নামীদের পান করার জন্যে দেয়া হবে)। যখনই সে এটা (মুখের) নিকটে নিবে তার মুখমন্ডলের চামড়া এতে গলে পড়ে যাবে। যঈফ, ২৭০৭ নং হাদিসের পুনরাবৃত্তি একই সনদসূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ জাহান্নামের বেষ্টনী হবে চারটি প্রাচীর এবং প্রতিটি প্রাচীর হবে চল্লিশ বছরের দূরত্বের সমান পুরু। যঈফ, মিশকাত (৫৬৮১), তা’লিকুর রাগীব (৪/২৩১) একই সনদসূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের পুঁজের এক বালতিও যদি দুনিয়াতে ঢেলে দেয়া হত, তবে সমস্ত দুনিয়াই দুর্গন্ধময় হয়ে যেত। যঈফ, মিশকাত (৫৬৮২) আবূ ‘ঈসা বলেনঃ আমরা শুধুমাত্র রিশদীন ইবনু সা’দের সূত্রে এ হাদিস প্রসঙ্গে জেনেছি। স্বরণশক্তির কারণে তিনি (একজন) সমালোচিত রাবী। “কিছাফু কুল্লি জিদার” —এর অর্থ “প্রতিটি দেয়ালের পুরু বা ঘনত্ব”। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং মুসলমান না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করো না” — (সূরা আল- ইমরানঃ ১০২)। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘যাক্কুম’–এর একটি বিন্দুও যদি দুনিয়াতে পতিত হতো তাহলে দুনিয়াবাসীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে যেত। আর এটা যাদের খাদ্য হবে তাদের কি অবস্থা হবে। য’ঈফ; ইবনু মাযাহ– হাঃ নং-৪৩২৫
জাহান্নামীদের খাদ্যদ্রব্যের বর্ণনা
আবুদ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামীদের উপর ক্ষুধা চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা অন্যান্য শাস্তির মতই ক্ষুধার যন্ত্রণায়ও নিপিড়িত হবে। তারা কাতর কণ্ঠে ফারিয়াদ করবে এবং কাটাযুক্ত গুল্মের খাবার দিয়ে তাদের ফারিয়াদ পূর্ণ করা হবে। এ খাবার না তাদেরকে মোটাতাজা করবে, না তাদের ক্ষুধা দূর করবে। তারা আবার খাবারের জন্য ফারিয়াদ করবে। তাদের তখন এমন খাবার দেয়া হবে যা তাদের গলায় আটকে যাবে। তারা তখন মনে করবে দুনিয়াতে পানি পান করে গলায় আটকানো খাবার বের করার কথা। সুতরাং তারা পানীয়ের জন্য ফারিয়াদ জানাবে এবং তাদেরকে লোহার কাঁটাযুক্ত গরম পানি দেয়া হবে। এটা তাদের মুখের নিকটে নেয়া মাত্র তা তাদের মুখমণ্ডল পুড়ে ফেলবে এবং যখন উহা তাদের পেটে প্রবেশ করবে তখন তা তাদের নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবে। তখন তারা (পরস্পর) বলবে, জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ককে ডাকো। সে তাদের বলবে, “তোমাদের নিকটে কি রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ নিয়ে আসেননি? তারা বলবে, হ্যাঁ এসেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক বলবে, তোমরা ডাকতে থাক কিন্তু কাফিরের ডাক নিষ্ফল” (সূরাঃ মু’মিন– ৫০)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারা বলাবলি করবে, তোমরা মালিককে (জাহান্নামের প্রধান তত্ত্বাবধায়ককে) ডাকো। তারা বলবে, “হে মালিক! আপনার রব যেন আমাদের মৃত্যু ঘটান” (সূরাঃ যুখরুফ– ৭৮)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাদের জবাব দেয়া হবে, “তোমরা এভাবেই থাকবে (মৃত্যুও আসবেনা)” (৪৩:৭৮)। আ’মাশ (রহঃ) বলেন, আমি জেনেছি যে, তাদের এ আহ্বান ও মালিকের জবাবদানের মাঝখানে এক হাজার বছর চলে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর তারা (পরস্পর) বলবে, তোমাদের রবকে ডাকো, কেননা তোমাদের রবের চাইতে উত্তম আর কেউ নেই। তারা বলবে, “হে আমাদের রব! দুর্ভাগ্য আমাদের পরাজিত করেছে এবং আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়। হে আমাদের আল্লাহ! আমাদেরকে এখান হতে বের করে নিন। আমরা যদি আবার এরূপ করি, তাহলে অবশ্যই আমরা যালিম” (সূরাঃ মু’মিনূন– ১০৬, ১০৭)। তিনি বলেন, তাদের জবাব দেয়া হবে, “এখানেই তোরা লাঞ্ছিত অবস্থায় থাক, আর কোন্ কথা বলবে না” – (সূরা আল-মু’মিনূনঃ ১০৮)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন হতে তারা সব ধরণের কল্যাণলাভ থেকে হতাশ হয়ে যাবে এবং এ ভয়ংকর অবস্থায় গর্দভের ন্যায় চিৎকার দিতে থাকবে। য’ঈফ; মিশকাত– হাঃ নং- ৫৬৮৬; তা’লীকুর রাগীব– হাঃ নং- ৪/২৩৬ আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সেখানে তারা থাকবে বীভৎস চেহারায়”– (সূরা আল-মু’মিনূনঃ ১০৪) আয়াত প্রসঙ্গে বলেনঃ তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিদগ্ধ হবে, উপরের ঠোঁট কুঞ্চিত হয়ে মাথার মাঝখানে এসে যাবে এবং নীচের ঠোঁট নাভীর সাথে আছাড় খাবে। য’ঈফ; মিশকাত– হাঃ নং– ৫৬৮৪
জাহান্নামের গভীরতা
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথার খুলীর দিকে ইশারা করে বলেছেনঃ এটার মতই একটি সীসা যদি আকাশ হতে যমিনের দিকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে রাত হওয়ার পূর্বেই তা পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে। অথচ এত দু’য়ের মাঝখানে পাঁচ শত বছরের পথের ব্যবধান রয়েছে। আর জাহান্নামের জিঞ্জীরের অগ্রভাগ হতে সীসাটি নীচের দিকে নিক্ষেপ করা হলে তা চল্লিশ বছর ধরে রাত-দিন চলতে থাকবে, গর্তের শেষ সীমায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত। যঈফ, মিশকাত (৫৬৮৮) তা’লীকুর রাগীব (৪/২৩২)
তোমাদের এ (দুনিয়ার) আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তরভাগের একভাগ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এই আগুন যা তোমরা প্রজ্বলিত কর তা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্র কসম! এ আগুনই তো জাহান্নামীদের আযাবের জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেনঃ এটাকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রতিটি অংশের উত্তাপ এর সমান হবে। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (৪/২২৬), বুখারী ও মুসলিম। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামের আগুনের তুলনায় তোমাদের এই দুনিয়ার আগুন (তাপ) মাত্র সত্তর ভাগের এক ভাগ। প্রতিটি ভাগের উত্তাপ এরই সমান। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং তা এখন ঘোর কালো বর্ণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। যঈফ, ইবনু মাযাহ (৪৩২০)
জাহান্নামের দু’টি নিঃশ্বাস রয়েছে এবং তাওহীদে বিশ্বাসীগণকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা প্রসঙ্গে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন একদিন জাহান্নাম তার প্রভুর নিকট অভিযোগ করে বললো যে, আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দুটি নিঃশ্বাসের ব্যবস্থা করেন। এর একটি নিঃশ্বাস শীতকাল এবং অন্যটি গ্রীষ্মকালে। শীতকালের নিঃশ্বাস ‘যামহারীর’ (শৈত্যপ্রবাহ) এবং গ্রীষ্মের নিঃশ্বাস সামূম (লু হাওয়া)। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪৩১৯), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ (হিশামের বর্ণনায়) জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে অথবা (শু‘বাহ্র বর্ণনায়) যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন প্রভু নেই) বলেছে তাকে বের করে আন তার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান থাকলেও। আর যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে যদি গমের দানা পরিমাণও ঈমান থাকে তবে তাকেও জাহান্নাম হতে বের করে আন। যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার অন্তরে যদি অনু পরিমাণও (শু‘বাহ্র বর্ণনায় আছে, একটি হালকা জোয়ারদানা পরিমাণ) ঈমান থাকে তবে তকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪৩১২), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ যে ব্যক্তি কোন দিন আমাকে মনে করেছে কিংবা কোন জায়গাতে আমাকে ভয় করেছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আন। যঈফ, আয-যিলাল (৮৩৩), তা’লীকুর রাগীব (৪/১৩৮), মিশকাত তাহকীক ছানী (৫৩৪৯)
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম হতে বের হবে
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে, আমি তাকে জানি। সে নিতম্বের উপর ভর দিয়ে (জাহান্নাম থেকে) হেঁচড়িয়ে বের হয়ে আসবে। সে বলবে, হে প্রভু! জান্নাতের জায়গাগুলো তো মানুষজন দখল করে নিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও এবং তাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হবে এবং দেখতে পাবে যে, সম্পূর্ণ জায়গা মানুষজন দখল করে নিয়েছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! সমস্ত জায়গা তো মানুষজন দখল করে নিয়েছে! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকে বলা হবে, সে সময়ের কথা স্মরণ আছে কি যাতে তুমি অবস্থান করছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ স্মরণ আছে। বলা হবে, তুমি আকাঙ্ক্ষা কর। সে তখন আকাঙ্ক্ষা পেশ করবে। বলা হবে, তুমি যা আকাঙ্ক্ষা করেছো তা দেয়া হল তদুপারি দুনিয়ার দশ গুণ দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন এ কথা শোনার পর সে বলবে, আপনি বাদশাহ্ হয়ে আমার সাথে উপহাস করছেন? ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, এ কথা বলার পর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাসতে দেখলাম, এমনকি তাঁর মুখের দাঁত প্রকাশিত হল। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪৩৩৯), বুখারী ও মুসলিম। আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে এবং সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে আমি অবশ্যই তাকে চিনি। তাকে হাযির করা হলে আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ তোমারা ছোটখাটো গুনাহ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন কর এবং মারাত্মক গুনাহগুলো গোপন রাখো। সে মোতাবিক তাকে প্রশ্ন করা হবে, অমুক অমুক দিন তুমি এই এই গুনাহ করেছো, অমুক অমুক দিন এই এই গুনাহ করেছো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর তাকে বলা হবে, কিন্তু আজ প্রতিটি গুনাহ্র বিনিময়ে তোমাকে সাওয়াব দান করা হচ্ছে। সে বলবে, হে প্রভু! আমি তো এগুলো ব্যতীত আরো অনেক গুনাহ করেছি, কিন্তু এখানে সেগুলো দেখতে পাচ্ছিনা। বর্ণানাকরী বলেন, এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এমনভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর মুখের দাঁত পর্যন্ত প্রকাশিত হয়ে যায়। সহীহঃ মুসলিম। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিছু তাওহীদবাদী লোককেও জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করা হবে। এমনকি তারা তাতে পুড়তে পুড়তে কয়লার মতো হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলার রাহমাতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং জান্নাতের দরজায় নিক্ষেপ করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতে বসবাসকারীরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে। যার ফলে তারা সজীব হয়ে যাবে যেমনটি বন্যার স্রোত চলে যাবার পর মাটিতে উদ্ভিদ গঁজায়। তারপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহঃ সহীহাহ্ (২৪৫১)। আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমানও রয়েছে সে ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, কারো এ ব্যাপারে সন্দেহ হলে সে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করুকঃ “আল্লাহ তা‘আলা অণু পরিমাণও যুলুম করেন না”—(সূরা নিসাঃ ৪০)। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামে প্রবেশকারীদের মধ্যে দুই ব্যক্তি (তাতে প্রবেশ করেই খুব) জোরে চিৎকার করবে। আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এদের দু’জনকে বের করে আন। তারপর তাদের বের করে আনা হলে তিনি প্রশ্ন করবেনঃ এত জোরে চিৎকার করছিলে কেন? তারা বলবে, আমরা এরূপ করেছি, যেন আপনি আমাদের প্রতি দয়া করেন। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রতি দয়া করলাম। তবে তোমরা জাহান্নামের যেখানে ছিলে সেখানে গিয়ে নিজেদের নিক্ষেপ কর। তারা সেদিকে যাবে। তারপর তাদের একজন নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তার জন্য আগুনকে শীতল ও শান্তিময় করে দিবেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি উঠে দাঁড়াবে কিন্তু নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে না। আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেনঃ তোমার সাথীর মতো তুমি নিজেকে জাহান্নামে ফেললে না কেন? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আশা করি আপনি আমাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনার পর আবার তাতে ফিরিয়ে দিবেন না। আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ তোমার আশা পূর্ণ হোক! তারপর আল্লাহ্ তা’আলার রহমাতে তারা দু’জনই জান্নাতে চলে যাবে। যঈফ, মিশকাত (৫৬০৫), যঈফা (১৯৭৭) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার আবেদনের কারণে আমার উম্মাতের এক দল জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। তাদের নাম হবে জাহান্নামী। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪৩১৫), বুখারী। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মতো এমন কিছু দেখিনি যা হতে আত্মরক্ষাকারীগণ ঘুমে অচেতন এবং জান্নাতের মতো এমন কিছুও দেখিনি যার অন্বেষণকারীগণও ঘুমে অচেতন। হাসানঃ সহীহাহ্ (৯৫১)।
জাহান্নামীদের বেশিরভাগই মহিলা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মি’রাজের রাতে) আমি জান্নাতের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলাম যে, এর বেশিরভাগ অধিবাসীই গরীব এবং জাহান্নামের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলাম যে, এর বেশিরভাগ অধিবাসীই মহিলা। সহীহঃ যঈফার (২৮০০) নং হাদীসের অধীনে, বুখারী ও মুসলিম। ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মি’রাজের রাতে) আমি জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখলাম যে, এর বেশিরভাগ অধিবাসীই মহিলা এবং জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখলাম যে, এর বেশিরভাগ অধিবাসীই গরীব। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস।
জাহান্নামে সর্বাধিক কম আযাব আস্বাদনকারীর অবস্থা
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে কম শাস্তি প্রদান করা হবে তার পায়ের তালুর নীচে দু’টি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। তাতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৬৮০), বুখারী ও মুসলিম।
জান্নাত ও জাহান্নামের অধিবাসী
হারিসা ইবনু ওয়াহ্ব আল-খুজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না যে, কারা জান্নাতী হবে? জান্নাতী তারা হবে যারা দুর্বল, অসহায় এবং যেসব ব্যক্তিকে দুর্বল মনে করা হয়। তারা আল্লাহ তা‘আলার নামে (কোন বিষয়ে) শপথ করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তা পূরণ করেন। আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না যে, কোন সব ব্যক্তি জাহান্নামী হবে? প্রত্যেক অবাধ্য, আহাম্মক ও অহংকারী (জাহান্নামী হবে)। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১১৬), বুখারী ও মুসলিম।