38. ঈমান
যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি ।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই”-এর স্বীকারোক্তি না করা পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। তারা এটা বললে (একত্ববাদে ঈমান আনলে) তাদের রক্ত (জান) ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ হবে। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা (অর্থাৎ- অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে)। আর তাদের চূড়ান্ত হিসাব আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে। সহীহ মুতাওয়াতিরঃ ইবনু মা-জাহ (৭১), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাঃ) যখন খালীফা নির্বাচিত হন, তখন আরবের কিছু সংখ্যক লোক কাফির হয়ে যায়। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি এদের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্ৰধারণ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আর যে ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” সে আমার থেকে তার মাল ও রক্ত (জীবন) নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা। আর তাদের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্বে। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! নামায ও যাকাতের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থক্য করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। কেননা যাকাত সম্পদের হাক্ব। কেউ উটের একটি রশি দিতেও যদি অস্বীকার করে, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিত, আল্লাহ্র কসম! আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। তারপর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন যুদ্ধের জন্য আবূ বাক্রের অন্তর উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম যে, তার সিদ্ধান্তই যথার্থ। সহীহঃ সহীহাহ্ (৪০৭), সহীহ আবূ দাঊদ (১৩৯১-১৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম।
আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামায আদায় করবে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং আমাদের কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাবে এবং আমাদের মতো নামায আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামের অধিকারের বিষয়টি ভিন্ন। মুসলিমদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা তারাও পাবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে। সহীহঃ সহীহাহ্ (৩০৩) ও (১/১৫২), সহীহ আবূ দাঊদ (২৩৭৪), বুখারী অনুরূপ।
পাঁচটি ভিত্তির উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাচটি ভিত্তির উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিতঃ (১) এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল, (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) রামাযানের রোযা রাখা ও (৫) বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ্ব সম্পাদন করা। সহীহঃ ইরওয়াহ্ (৭৮১), ঈমান আবী ‘উবাইদ (২), রাওযুন নায়ীর (২৭০)।
জিবরীল (আঃ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঈমান ও ইসলামের পরিচয় প্রদান
ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়ামার (রহঃ) তাক্বদীর মতবাদের ব্যাপারে সর্বপ্রথম মা’বাদ আল-জুহানীই কথা বলেন। কোন এক সময় আমি ও হুমাইদ ইবনু ‘আব্দুর রাহমান আল-হিময়ারী মাদীনায় আসলাম এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেলে এসব লোকেরা যে নতুন কথা বের করেছে সেই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতাম। আমরা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি মাসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন। আমি ও আমার সাথী গিয়ে তার পাশে পাশে চললাম। আমি মনে করলাম আমার সঙ্গী আমার উপরি কথা বলার দায়িত্ব দিবেন। তাই আমি বললাম, হে আবূ ‘আব্দুর রাহমান! কিছু সংখ্যক লোক কুরআন তিলাওয়াত করে, জ্ঞানও অন্বেষণ করে, কিন্তু তাদের ধারণায় তাক্বদীর বলতে কিছু নেই, যা কিছু হচ্ছে তা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, তাদের সাথে তোমার দেখা হলে বলবে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং তারাও আমার হতে সম্পর্ক মুক্ত। তারপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলেন, তাদের কেউ উহূদ পাহাড় সমান স্বর্ণ দান-খাইরাত করলেও তা গ্রহণ করা হবে না, তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনবে। তারপর তিনি বললেন, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেনঃ কোন এক সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বসে ছিলাম। এমন সময় সাদা ধব্ধবে জামা পরা এবং কালো কুচকুচে চুলধারী এক লোক এসে উপস্থিত। তার মধ্যে সফরের কোন চিহ্নও ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউই তাকে চিনতে পারলো না। তারপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এসে তার হাঁটুদ্বয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে বসলেন। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করেন, হে মুহাম্মাদ! ঈমান কি? তিনি বললেনঃ ঈমান হলো-তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুলে, কিতাবসমূহে, রাসূলগণে, পরকালে এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, ইসলাম কি? তিনি বললেনঃ এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র বান্দা ও তার রাসূল, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ্ব আদায় করা এবং রামাযানের রোযা রাখা। তিনি আবার প্রশ্ন করেন, ইহ্সান কি? তিনি বললেনঃ তুমি (এমনভাবে) আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো। তুমি যদি তাঁকে না দেখ তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাকে দেখেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই তিনি বলতেন, আপনি সত্যই বলেছেন। তার এই আচরণে আমরা অবাক হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন আবার তিনিই তা সমর্থন করছেন। তিনি আবার প্রশ্ন করেন, কখন ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে? তিনি এবার বললেনঃ জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি এই ব্যাপারে প্রশ্নকারীর চাইতে বেশি কিছু জানে না। তিনি আবার প্রশ্ন করেন, এর নিদর্শনগুলো কি কি? তিনি বললেনঃ যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে এবং খোলা পা, উলঙ্গ শরীরের অভাবী মেষপালক রাখালগণকে বিশাল দালান-কোঠার প্রতিযোগিতায় গর্ব করতে দেখবে। ‘উমার (রাঃ) বলেন, তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনদিন পর আমার সাক্ষাৎ পেয়ে প্রশ্ন করেনঃ হে উমার! তুমি কি জানো, ঐ প্রশ্নকারী কে ছিলেন? তিনি ছিলেন জিবরীল (আঃ), তোমাদেরকে ধর্মীয় অনুশাসন শিখাতে এসেছিলেন। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৬৩), মুসলিম।
ঈমানের মৌলিক বিষয়ের সাথে ফরয কাজসমূহ সংশ্লিষ্ট
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আব্দুল কাইস বংশের একটি প্রতিনিধিদল এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলে, আমরা রাবীআ বংশের লোক। আমরা আপনার নিকট হারাম মাসগুলো ছাড়া আসতে পারি না। সুতরাং আমাদেরকে এমন কতগুলো বিষয়ের আদেশ করুন, যা আমরা ধারণ করতে পারি এবং যারা আমাদের পিছনে আছে তাদেরকেও সেগুলোর দা’ওয়াত দিতে পারি। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছিঃ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনয়ন, তারপর এই কথার ব্যাখ্যা করে বললেনঃ এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই, আমি আল্লাহ্র রাসূল, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেয়া এবং গানীমাতের সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ (বাইতুল মালে) প্রদান করা। সহীহঃ ঈমান আবী ‘উবাইদ, পৃষ্ঠা (৫৮-৫৯), মুসলিম।
ঈমানের পূর্ণতা ও হ্রাসবৃদ্ধি
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার চরিত্র ভালো এবং যে নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে সে-ই ঈমানের দিক হতে পরিপূর্ণ মু’মিন। যঈফ, সহীহা (২৮৪) হাদিসের আওতায় আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) জনতার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাসীহাতপূর্ণ খুতবাহ প্রদান করেন এবং বলেনঃ হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা বেশি পরিমাণে দান-খয়রাত কর। কেননা, জাহান্নামে তোমাদের সংখ্যাই বেশি হবে। তাদের মধ্যকার এক মহিলা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তা কেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের মাঝে অভিশাপ দানের প্রবণতার আধিক্যের কারণে, অর্থাৎ- তোমাদের স্বামীদের অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ হবার কারণে। তিনি আরো বলেনঃ আমি তোমাদের স্বল্পবুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে সংকীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধিমান বিচক্ষণদের উপর বিজয়ী হতে পারঙ্গম আর কাউকে দেখিনি। জনৈকা মহিলা প্রশ্ন করলো, তার বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে কমতি হলো কি করে? তিনি বললেনঃ তোমাদের দুজন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান। এটা হলো বুদ্ধির স্বল্পতা। আর তোমাদের হায়িয (ঋতুস্রাব) হলে তিন-চার দিন তোমরা নামায আদায় কর না। এটা হলো দ্বীনের স্বল্পতা। সহীহঃ ইরওয়াহ্ (১/২০৫), আয্যিলাল (৯৫৬), মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানের দরজা (স্তর) হলো সত্তরের অধিক। তার সর্বনিম্ন স্তর হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা এবং সর্বোচ্চ স্তর হলো ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলা। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৩৬৯), বুখারীর বর্ণনায় ষাটের অধিক এবং মুসলিমের বর্ণনায় সত্তরের অধিক উল্লেখ আছে। আর এটাই অগ্রগণ্য। তাখরীজুল ঈমান (২১/৬৭)।
লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ ঈমানের অঙ্গ
সালিম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন একজনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার ভাইকে লজ্জা সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ ঈমানের অঙ্গ। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৫৮), বুখারী ও মুসলিম।
নামাযের মাহাত্ম্য
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কোন এক ভ্রমণে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম হতে দূরে রাখবে। তিনি বললেনঃ তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা তা সহজ করে দেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা রাখবে এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করবে। তিনি আরো বললেনঃ আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হলো ঢালস্বরূপ, দান-খাইরাত গুনাহ্সমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোন ব্যক্তির মধ্যরাতের নামায আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “তাদের দেহ পাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ।” (সূরা আস-সাজদাহ ১৬, ১৭) তিনি আবার বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। তিনি আরো বললেনঃ আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেনঃ এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্র নাবী! আমরা যে কথা-বার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বললেনঃ হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৭৩)। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাউকে মাসজিদের খিদমতে নিয়োজিত দেখলে তাকে ঈমানদার বলে সাক্ষ্য দিও। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহ়র মাসজিদসমূহের তো তারাই রক্ষনাবেক্ষণ করে, যারা আল্লাহ্ ও পরকালে ঈমান রাখে, নামায কায়িম করে এবং যাকাত প্রদান করে”। (সূরাঃ তাওবা - ১৮) যঈফ, ইবনু মাযাহ (৮০২)
নামায ত্যাগের পরিণতি
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১০৭৮), মুসলিম। আ’মাশ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) হতেও উপরোক্ত সনদে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাহ্ ও শির্কের মধ্যে অথবা বান্দাহ্ ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দাহ্ ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ করা। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ, মুসলিম বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয়, সে কুফ্রী কাজ করে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১০৭৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব আল-উক্বাইলী (রহঃ) তিনি বলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কোন সাহাবী নামায ব্যতীত অন্য কোন ‘আমাল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী কাজ মনে করতেন না। সহীহঃ সহীহুত্ তারগীব (১/২২৭-৫৬৪)
ঈমানের স্বাদ লাভকারী ব্যক্তি
আল-‘আব্বাস ইবনু ‘আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছেনঃ সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ লাভ করেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলাকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নবী হিসেবে খুশী মনে মেনে নিয়েছে। সহীহঃ মুসলিম (১/৪৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি গুণ রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ লাভ করেছে। (১) যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অন্য সকল কিছু হতে প্রিয়তর, (২) যে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াস্তে কোন মানুষকে ভালবাসে এবং (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে (ঈমানের মাধ্যমে) কুফ্রী হতে মুক্তিদানের পর সে আবার তাতে ফিরে যেতে এতটা অপছন্দ করে যতটা অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪০৩৩), বুখারী ও মুসলিম।
কেউ যিনায় লিপ্ত থাকা অবস্থায় মু’মিন থাকে না
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যিনাকারী যিনায় লিপ্ত থাকা অবস্থায় মু’মিন থাকেনা, চোর চুরি করার সময় মু’মিন থাকেনা। তবে তাওবাহ্ করার সুযোগ আছে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৩৬), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস, ‘আয়িশা ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ‘ঈসা বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ এবং এ সূত্রে গারীব। অধিকন্তু আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “বান্দা যখন যিনায় লিপ্ত থাকে, তখন ঈমান তার থেকে বেরিয়ে যায় এবং ছায়ার মত তার মাথার উপর অবস্থান করে। তারপর সে যখন সেই দুষ্কর্ম হতে সরে আসে তখন ঈমান ও তার মাঝে ফিরে আসে।” আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, “অপরাধী ব্যক্তি এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঈমানের স্তর হতে বেরিয়ে ইসলামের স্তরে নেমে আসে”। একাধিক সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত , তিনি যিনা ও চুরি সম্পর্কে বলেন, “যে ব্যক্তি যিনা ও চুরির অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে এবং তার উপর হদ্দ (নির্ধারিত শাস্তি) কার্যকর করা হয়েছে, তাতে তার গুনাহ্র কাফফারা হয়ে গেছে। আর কেউ এ অপরাধে লিপ্ত হলে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তা গোপন রাখলে এটা আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি চাইলে কিয়ামাত দিবসে তাকে শাস্তি ও দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন।” সহীহঃ সহীহাহ্ (২৩১৭), বুখারী ও মুসলিম। তাছাড়া এ হাদীসটি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব, ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত ও খুযাইমাহ্ (রাঃ) প্রমুখগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে এবং দুনিয়াতেই তার উপর হাদ্দ কার্যকর হলে আল্লাহ্ তা'আলা তার বান্দাকে পরকালে আবার শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই ন্যায়বিচারক। আর কোন ব্যক্তি হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে, আল্লাহ তা'আলা তার অপরাধ গোপন রাখলে এবং ক্ষমা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করার পর আবার শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই অধিক দয়াপরবশ। যঈফ, ইবনু মাযাহ (২৬০৪)
যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে-ই প্রকৃত মুসলিম
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মু’মিন। হাসান সহীহঃ মিশকাত তাহক্বিক্ব সানী (৩৩), সহীহাহ্ (৫৪৯) আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে প্রশ্ন করা হল, কোন ব্যক্তি মুসলিমদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটি ২৫০৪ নং হাদিসের পুনরুক্তি।
ইসলামের সূচনা হয়েছে অপরিচিত অবস্থায় এবং অচিরেই অপরিচিত হবে
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছে এবং যে অবস্থায় তার সূচনা হয়েছিল আবার সে রকম অপরিচিত অবস্থায় ইসলাম ফিরে আসবে। সুতরাং অপরিচিতদের জন্যই সু-সংবাদ। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ(৩৯৮৮), মুসলিম। কাসীর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আওফ ইবনু যাইদ ইবনু মিলহা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাপ যেভাবে (সংকুচিত) হয়ে তার গর্তে ফিরে যায় তেমনি দ্বীন ইসলামও এক সময় সংকুচিত হয়ে হিজাযে ফিরে আসবে। পাহাড়ী বকরী যেমন পাহাড় শৃংগে আশ্রয় নেয়, দ্বীন ইসলামও তেমন হিজাযে আশ্রয় নিবে। দ্বীন ইসলাম তো অপরিচিত অবস্থায় যাত্রা শুরু করছিল এবং অচিরেই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে অর্থাৎ অপরিচিত হয়ে যাবে। সুতরাং অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ, যারা আমার সুন্নাত বিপর্যস্ত হয়ে যাবার পর তা পুনরুজ্জীবিত করে। অত্যন্ত দূর্বল, সহীহা (১২৭৩) নং হাদিসের আওতায়। মিশকাত (১৭০)
মুনাফিক্বের আলামত (নিদর্শন)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিক্বের আলামত বা নিদর্শন তিনটি। সে (১) কথা বললে মিথ্যা বলে, ; (২) ওয়া’দাহ্ করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার নিকট আমানাত রাখা হলে সে তার খিয়ানত করে। সহীহঃ ঈমান আবী ‘উবাইদ, পৃষ্ঠা (৯৫), বুখারী ও মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি অভ্যাস রয়েছে সে মুনাফিক্ব। আর যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি অভ্যাস থাকে, তা ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিক্বীর একটি স্বভাব থাকে। যে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়া‘দাহ্ করলে তা ভঙ্গ করে, ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে এবং চুক্তি করলে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ। যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি কোন ওয়াদা করে এবং তা পুরা করার নিয়াত করে; কিন্তু কোন কারণে তা পুরা করতে না পারে, তাহলে এজন্য তার কোন গুনাহ হবে না। যঈফ, মিশকাত (৪৮৮১), যঈফা (১৪৪৭)
মু’মিনকে গালি দেয়া ফাসিক্বী (পাপ)
‘আবদূল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের বিরুদ্ধে লড়াই করা কুফ্রী এবং তাকে গালি দেয়া ফাসিক্বী। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। অন্য সনদে ১৯৮৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিক্বী এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করা বা তাকে হত্যা করা কুফরী। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইহা ১৯৮৩ নং হাদিসের পুনরুক্তি।
কেউ তার ভাইকে কুফ্রীর অপবাদ দিলে
সাবিত ইবনুয্ যাহ্হাক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার যে জিনিসের মালিকানা নেই সে সেই জিনিসের মানত করলে তা পূরণ করা তার জন্য অপরিহার্য নয়। মু’মিনকে অভিশাপকারী তাকে হত্যাকারীর অনুরূপ। যে লোক মু’মিন ব্যক্তিকে কুফরীর অপবাদ দেয়, সেও তার হত্যাকারীর অনুরূপ। আর যে ব্যক্তি যে জিনিসের সাহায্যে আত্মহত্যা করে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সেই জিনিস দ্বারাই কিয়ামাত দিবসে শাস্তি দিবেন। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২০৯৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক তার ভাইকে কাফির বললে তা এ দু’জনের যে কোন একজনের উপর বর্তায়। সহীহঃ মুসলিম (১/৫৭)।
“আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই” এই সাক্ষ্যে অটল থেকে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে
আস্-সুনাবিহী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, সে সময় তিনি অন্তিম অবস্থায় ছিলেন। আমি (তাঁকে এ অবস্থায় দেখে) কেঁদে ফেললাম। তিনি বললেন, থামো, কাঁদছো কেন? আল্লাহ্র শপথ! যদি আমার সাক্ষ্য চাওয়া হয় তবে আমি অবশ্যই তোমার (ঈমানের) পক্ষে সাক্ষ্য দিব, যদি সুপারিশের অনুমতি আমাকে দেয়া হয় তবে অবশ্যই তোমার জন্য আমি সুপারিশ করবো; আর আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি অবশ্যই তোমার উপকার করবো। তিনি আবার বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তোমাদের জন্য কল্যাণকর যেসব কথা শুনেছি তার সবই তোমাদেরকে বলেছি। শুধুমাত্র একটি কথা বলা বাকি আছে, যা আমি আজ তোমাদেরকে এমন অবস্থায় বলছি যে, মৃত্যু আমাকে বেষ্টন করে ফেলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন। হাসানঃ মুসলিম (১/৪৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামাত দিবসে আমার উম্মাতের একজনকে সমস্ত সৃষ্টির সামনে আলাদা করে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে নিরানব্বইটি ‘আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি কি এগুলো হতে কোন একটি (গুনাহ) অস্বীকার করতে পার? আমার লেখক ফেরেস্তারা কি তোমার উপর যুল্ম করেছে? সে বলবে, না, হে প্রভু! তিনি আবার প্রশ্ন করবেনঃ তোমার কোন অভিযোগ আছে কি? সে বলবে, না, হে আমার প্রভু! তিনি বলবেনঃ আমার নিকট তোমার একটি সওয়াব আছে। আজ তোমার উপর এতটুকু যুলুমও করা হবে না। তখন ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। তাতে লিখা থাকবেঃ “আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল”। তিনি তাকে বলবেনঃ দাড়িপাল্লার সামনে যাও। সে বলবে, হে প্রভূ! এতগুলো খাতার বিপরীতে এই সামান্য কাগজটুকুর কি আর ওজন হবে? তিনি বলবেনঃ তোমার উপর কোন যুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর খাতাগুলো এক পাল্লায় রাখা হবে এবং উক্ত টুকরাটি আরেক পাল্লায় রাখা হবে। ওজনে খাতাগুলোর পাল্লা হালকা হবে এবং কাগজের টুকরার পাল্লা ভারী হবে। আর আল্লাহ তা‘আলার নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারী হতে পারে না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪৩০০)
এই উম্মাতের অনৈক্য
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ ইয়াহূদীরা একাত্তর অথবা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল এবং খৃষ্টানেরাও অনুরূপ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। হাসান সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৯১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বানী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত। হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (১৭১), সহীহাহ্ (১৩৪৮)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলা অন্ধকারে তাঁর মাখলূকাতের সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি এদের উপরে তাঁর নূরের আলোকপ্রভা ঢেলে দিয়েছেন। সুতরাং সেই নূরের আলোকপ্রভা যে ব্যক্তির উপর পড়েছে সে সৎপথ পেয়েছে এবং যে ব্যক্তির উপর তা পড়েনি সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। এ জন্যেই আমি বলিঃ আল্লাহ তা‘আলার ‘ইল্ম অনুযায়ী ক্বলম (তাক্বদীরের লিখন) শুকিয়ে গেছে। সহীহঃ মিশকাত (১০১), সহীহাহ্ (১০৭৬), আয্যিলা-ল (২৪১-২৪৪)। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করেনঃ তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহ তা‘আলার কি হক্ব (অধিকার) রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ তাদের উপর তাঁর হক্ব এই যে, তারা তাঁর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে আর কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করবে না। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তারা এগুলো করলে আল্লাহ তা‘আলার উপর তাদের কি হক্ব (অধিকার) রয়েছে তুমি কি তা জানো? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলার উপর তাদের হক্ব এই যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪২৯৬), বুখারী ও মুসলিম। আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার নিকট এসে এই সুসংবাদ দেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে কিছু শারীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি প্রশ্ন করলাম, সে যদি ব্যভিচার করে থাকে, সে যদি চুরি করে থাকে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ (তবুও সে জান্নাতে যাবে)। সহীহঃ সহীহাহ্ (৮২৬), বুখারী ও মুসলিম।