43. ক্বিরাআত

【1】

সূরা ফাতিহা পাঠের নিয়ম

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদাভাবে উচ্চারণ করে ক্বিরাআত পাঠ করতেন। তিনি পাঠ করতেন “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন”, তারপর বিরতি দিতেন; তারপর পাঠ করতেনঃ “আর-রাহমানির রাহীম”, তারপর বিরতি দিয়ে আবার পাঠ করতেনঃ “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন”। সহীহঃ ইরওয়াহ্‌ (৩৪৩), মিশকাত (২২০৫), সিফাতুস সালাত, মুখতাসার শামা-য়িল (২৭০)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বকর, উমার এবং উসমান (রাঃ) তাঁরা প্রত্যেকেই পাঠ করতেনঃ “মালিকি ইয়াওমিদ্দীন" অর্থাৎ মীমের সাথে আলিফসহ মদ্দের সাথে পাঠ করতেন।

【2】

সূরা হূদ পাঠের নিয়ম

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “হাল তাসতাতীউ রব্বাকা" পড়েছেন। উম্মু সালামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “ইন্নাহু আমিলা গাইরা সালিহীন” (‘আমিলা’ শব্দের মীমে যের) পাঠ করেছেন। সহীহঃ সহীহাহ (২৮০৯) উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নোক্ত আয়াত এভাবে পাঠ করেছেনঃ “ইন্নাহু আমিলা গাইরা সালিহীন”। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৮০৯)।

【3】

সূরা কাহ্‌ফ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশদীদ সহযোগে “কাব বাল্লাগতা মিল্লাদুন্নী উয্রা" পাঠ করেছেন, বা এর মধ্যে তাশদীদ সহযোগে। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “ফী আইনিন হামিআতিন” পাঠ করেছেন।

【4】

সূরা আর-রূম

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের সময় রোমবাসীর পারস্যবাসীদের উপর বিজয়ী হয়। এ সংবাদে মুসলিমগণ আনন্দিত হন। কারণ এই প্রসঙ্গে (ইতিপূর্বে) “আলিফ লাম মীম গুলাবাতির রূম..... ইয়াফরাহুল মু’মিনূন” (সূরা আর-রূম ১-৪) আয়াত অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেন, পারস্যবাসীদের উপর রোমীয়দের বিজয়ের কারণে মুসলিমগণ খুবই আনন্দিত হন। সহীহঃ (৩১৯২) নং হাদীসে এর পুনরুল্লেখ আসবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে পাঠ করলেন ‘খালাকাকুম মিন যা’ফিন”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “যু’ফিন” হবে। হাসানঃ রাওযুন নাযীর (৫৩০)।

【5】

সূরা আল ক্বামার

'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) "ফাহাল মিন মুদ্দাকির" পাঠ করতেন। সহীহঃ বুখারী (৪৮৬৯, ৪৮৭৪), মুসলিম (২/২০৫, ২০৬)।

【6】

সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্

'আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) "ফারূহুন ওয়া রাইহানুন ওয়া জান্নাতু নাঈম" পাঠ করতেন।

【7】

সূরা আল-লাইল

'আলক্বামাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা সিরিয়ায় পৌঁছে আবুদ দারদা (রাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদের কিরাআত পাঠ করতে পারে? 'আলক্বামাহ্ বলেন, লোকেরা আমার দিকে ইশারা করে দেখালে আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পারি। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি "ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশা” আয়াতটি ‘আবদুল্লাহকে কিভাবে তিলাওয়াত করতে শুনেছ? আমি বললাম, আমি তাকে "ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশা ওয়ায-যাকারি ওয়াল-উনসা" এভাবে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। আবুদ্ দারদা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা'আলার কসম! আমিও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবেই তিলাওয়াত করতে শুনেছি। কিন্তু এসব লোক তো আমাকে "ওয়ামা খালাকায্-যাকারা ওয়াল-উন্‌সা" এভাবে পাঠ করাতে চাচ্ছে। আমি তাদের অনুসরণ করি না। সহীহঃ বুখারী (৪৯৪৩, ৪৯৪৪), মুসলিম (২/২০৬)

【8】

সূরা আয-যারিয়াত

আবদুল্লাহ্‌ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, নিম্নোক্ত আয়াতটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এভাবে পড়িয়েছেনঃ “ইনী আনার-রায্‌যাকু যুল কুওয়্যাতিল মাতীন”। মতন সহিহ।

【9】

সূরা আল-হজ্জ

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করেছেন “ওয়া তারান-নাসা সুকারা, ওয়ামাহুম বিসুকারা”। সহীহঃ বুখারী (৪৭৪১), মুসলিম (১/১৩৯-১৪০)।

【10】

(কুরআন উটের চেয়েও দ্রুত পলায়নপর)

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাদের বা তোমাদের কারো এরূপ কথা বলা কতই না আপত্তিকরঃ “আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি’। (বরং তার বলা উচিত যে,) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা স্মরণ রাখার জন্য অনবরত কুরআন পাঠ করবে। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! উট যেভাবে রশি হতে ছাড়া পেয়ে পালায়, এটা (কুরআন) মানুষের হৃদয় হতে তার চাইতেও বেশি পলায়নপর। সহীহঃ আয্‌যিলা-ল (৪২২), বুখারী ও মুসলিম।

【11】

সাত রীতিতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি (নামাযে মধ্যে) সূরা আল-ফুরকান তিলাওয়াত করছিলেন। আমি মনোযোগ সহকারে তার তিলাওয়াত শুনলাম এবং লক্ষ্য করলাম যে, তিনি অনেকগুলো অক্ষর এমন নিয়মে তিলাওয়াত করেছেন যে নিয়মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পড়ান নি। আমি তাকে নামাযের মধ্যেই জব্দ করতে উদ্যত হলাম কিন্তু সালাম ফিরানো পর্যন্ত অবকাশ দিলাম। তিনি সালাম ফিরাতেই আমি তার চাদর তার গলায় পেচিয়ে ধরে প্রশ্ন করলাম, আমি আপনাকে যে (রীতিতে এ) সূরাটি পাঠ করতে শুনলাম তা আপনাকে কে শিখিয়েছে? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (এরূপই) শিখিয়েছেন। আমি তাকে বললাম, আপনি মিথ্যা বলছেন। আল্লাহ্‌র কসম! আপনি যে সূরাটি পাঠ করলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে আমাকে তা শিখিয়েছেন। তারপর আমি তাকে টেনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনি আমাকে সূরা আল-ফুরক্বান যেভাবে পাঠ করা শিখিয়েছেন, সেই সূরা তা হতে ভিন্নভাবে আমি একে পাঠ করতে শুনেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘উমার! তাকে ছেড়ে দাও। হে হিশাম! তুমি সূরাটি পাঠ করে শুনাও। আমি যেভাবে তাকে তিলাওয়াত করতে শুনেছিলাম সেরূপেই তিনি তা তিলাওয়াত করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা এইভাবেই অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে ‘উমার! তুমি তিলাওয়াত করে শুনাও। যেভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠ করিয়েছেন আমি সেভাবেই তা পাঠ করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এভাবেও এটা অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন বস্তুত এ কুরআন সাত রীতিতে অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং যেভাবেই তোমাদের সহজ হয় সেভাবেই তা পাঠ করবে। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১৩২৫), বুখারী (৪৯৯২), মুসলিম। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ) এর সাক্ষাৎ পেয়ে বললেনঃ হে জিবরীল! আমি একটি নিরক্ষর উম্মাতের নিকট প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে প্রবীণ, বৃদ্ধ, কিশোর ও কিশোরী আছে এবং এমন লোকও আছে যে কখনো কোন লেখাপড়াই করেনি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! কুরআন তো সাত রীতিতে অবতীর্ণ হয়েছে। হাসান সহীহঃ আবূ দাঊদ (১৩২৮)।

【12】

(মু’মিনের দোষ গোপন রাখা ও তাকে সাহায্য করা)

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়াতে যে লোক তার কোন ভাইয়ের একটি বিপদ দূর করবে, ক্বিয়ামাতের দিবসে আল্লাহ তা’আলা তার একটি বিপদ দূর করবেন। আর কোন মুসলিমের দোষ-ক্রুটি যে লোক গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা ইহকালে ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। কোন আভাবীর কষ্ট যে ব্যক্তি দূর করবে, ইহকালে ও পরকালে তার কষ্ট আল্লাহ তা’আলা দূর করবেন। ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা বান্দার সহায়তা করতে থাকেন যতক্ষন পর্যন্ত সে তার কোন ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। যে লোক জ্ঞান অর্জনের পথে বের হয় আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল মসজিদে আল্লাহ তা’আলার কিতাব তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে পরস্পর আলোচনা করার উদ্দেশে একত্রিত হয়, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়, (আল্লাহ তা’আলার) রাহমাত তাদের ঢেকে ফেলে এবং ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে। কৃতকর্ম যাকে পিছিয়ে দেয় বংশ মর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারে না। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (২২৫), মুসলিম।

【13】

(কুরআন খতমের সময়সীমা)

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি কত দিনে কুরআন শেষ করব? তিনি বলেনঃ এক মাসে তা শেষ করবে। আমি বললাম, আমি এর চাইতে বেশি পাঠ করতে পারি (আরো কম দিনে শেষ করতে পারি)। তিনি বললেনঃ তাহলে বিশ দিনে শেষ করবে। আমি বললাম, আমি এর চাইতেও বেশি পাঠ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তাহলে পনের দিনে তা শেষ করবে। আমি আবার বললাম, আমি এর চাইতেও কম সময়ে শেষ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তাহলে দশ দিনে তা শেষ করবে। আমি আবার বললাম, আমি এর চাইতেও বেশি পাঠ করতে পারি। তিনি বললেনঃ তাহলে পাঁচ দিনে তা শেষ করবে। আমি আবার বললাম, আমি আরো বেশি পাঠ করতে পারি। তিনি (রাবী) বলেন, এর চাইতে কম দিনে পাঠ করতে তিনি আমাকে সম্মতি দেননি। সনদ দুর্বল। নাসাঈতে ৫ দিনের উল্লেখ ব্যতীত অনুরূপ বর্ণনা আছে। সহীহ আবু দাউদ (১২৫৫), সহীহ বর্ণনা আছে তিনি তাকে বলেছেনঃ প্রতি তিন দিনে কুরআন পাঠ (শেষ) কর। সহীহ আবু দাউদ (১২৬০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেনঃ তুমি চল্লিশ দিনে কুরআন পাঠ (শেষ) করবে। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১২৬১), সহীহাহ্‌ (১৫১২)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন কাজ আল্লাহ্‌র কাছে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বলেনঃ সাওয়ারী হতে নেমেই পুনরায় সে সাওয়ার হয়। লোকটি প্রশ্ন করল আল-হাল আল মুরতা হাল কি? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন শেষ করেই আবার প্রথম হতে পাঠ করা শুরু করে দেয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন দিনের কম সময়ে যে লোক কুরআন পাঠ করল সে কুরআনের কিছুই বুঝেনি। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১২৬০), মিশকাত (২২০১), সহীহাহ্‌ (১৫১৩)|