5. যাকাত
যে সকল লোক যাকাত দিতে অসম্মত সে সকল লোকের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কঠোর হুঁশিয়ারি
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এলাম। তিনি সে সময় কা’বার ছায়াতে বসে ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে সম্মুখে আসতে দেখে বলেনঃ কা’বার প্রভুর শপথ! তারা কিয়ামাতের দিবসে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হাযির হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে মনে বললাম, আমার কি হল, মনে হয় আমার প্রসঙ্গে তার উপর কোন কিছু নাযিল হয়েছে। আমি বললাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা নিবেদিত হোক! এধরণের লোক কারা? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অধিক ধনদৌলত আত্মসাৎকারী, কিন্তু যে সব লোক এই, এই ও এই পরিমাণ দিয়েছে সে সব লোক ছাড়া। তিনি সামনে, ডানে ও বামে হাতের ইশারা করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! যে লোক এধরণের উট অথবা গরু রেখে মৃত্যুবরণ করল যার যাকাত সে দেয়নি, কিয়ামাতের দিন সেগুলো পূর্বাবস্থা হতে বেশি মোটাতাজা হয়ে তার নিকটে আসবে এবং নিজেদের পায়ের ক্ষুর দ্বারা তাকে দলিত করবে এবং শিং দ্বারা গুঁতো মারবে। সবশেষের জন্তুটি চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম জন্তুটি ফিরে আসবে। মানুষের সম্পূর্ণ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির এ ধারা চলতে থাকবে। -সহীহ্, তা’লাকুর রাগীব (১/২৬৭)।
যখন তুমি যাকাত দিয়ে দিলে, তোমার উপর আরোপিত ফরয আদায় করলে
আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তুমি তোমার ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করে ফেললে, তুমি তোমার কর্তব্যভার পালন করলে। যঈফ ইবনু মাজাহ (১৭৮৮)। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছা করতাম, আমাদের উপস্থিত থাকা অবস্থায় কোন বুদ্ধিমান বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করুক! এমন সময় এক বেদুঈন হাযির হল। সে তার হাঁটু গেড়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে বসল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের নিকট আপনার প্রতিনিধি এসে বলল, আপনি দাবি করছেন, ‘আপনাকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল করে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আকাশসমূহ সমুন্নত করেছেন, যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং পাহাড়সমূহ দাঁড় করিয়েছেন, সত্যিই কি আপনাকে আল্লাহ তা’আলা তার রাসূল করে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। বেদুঈন বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন বছরে এক মাস আমাদের উপর রোযা বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সঠিক বলেছে। লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন আমাদের ধনদৌলতের উপর যাকাত বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সত্য বলেছে! বেদুঈন বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি রাসূল করে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আমাদের মধ্যে যে লোক দূরত্ব অতিক্রম করার (আর্থিক ও দৈহিক) যোগ্যতা রাখে আপনি মনে করেন তার জন্য বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। বেদুঈন বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি রাসূল করে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি আপনাকে এই প্রসঙ্গে আদেশ করেছেন। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এগুলোর কোনটিই ছাড়বো না এবং এগুলোর সীমাও পার করব না। তারপর সে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই বেদুঈন যদি সত্য বলে থাকে তবে সে জান্নাতে যাবে। -সহীহ, তাখরীজ ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৪/৫), বুখারী, মুসলিম।
সোনা-রূপার যাকাত প্রসঙ্গে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া ও গোলামের সাদকা (যাকাত) আমি ক্ষমা করেছি, কিন্তু প্রতি চল্লিশ দিরহাম রূপার ক্ষেত্রে এক দিরহাম সাদকা (যাকাত) আদায় কর। কিন্তু একশত নব্বই দিরহামে কোন সাদকা নেই। যখন তা দুই শত দিরহামে পৌছবে তখন তাতে পাঁচ দিরহাম সাদকা দিতে হবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯০)।
উট ও ছাগল-ভেড়ার যাকাত প্রসঙ্গে
সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সাদকা (যাকাত) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ফরমান (অধ্যাদেশ) লিখালেন। তার কর্মচারীদের নিকটে এটা পাঠানোর আগেই তিনি মারা যান। তিনি এটা নিজের তরবারির সাথে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আবূ বাকার (রাঃ) তা কার্যকর করেন। তিনিও মারা যান। উমার (রাঃ)-ও সে অনুযায়ী কাজ করেন। তারপর তিনিও মারা যান। তাতে লেখা ছিল পাঁচটি উটের জন্য একটি বকরী, দশটি উটের জন্য দুটি বকরী, পনেরটি উটের জন্য তিনটি বকরী এবং বিশটি উটের জন্য চারটি বকরীর যাকাত আদায় করতে হবে। পঁচিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উটের জন্য একটি বিনতু মাখায (একটি পূর্ণ এক বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত (ছত্রিশ হতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত) উটের জন্য একটি বিনতু লাবুন (একটি পূর্ণ দুই বছরের মাদী উট); এর বেশি হলে ষাট পর্যন্ত (ছিচল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত) উটের জন্য একটি হিক্কাহ (একটি পূর্ণ তিন বছরের মাদী উট); আবার এর বেশি হলে পঁচাত্তর পর্যন্ত (একষট্টি হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত) উটের জন্য একটি জাযাআহ (একটি চার বছরের মাদী উট); আরো বেশি হলে নব্বই পর্যন্ত (ছিয়াত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত) উটের জন্য দু’টি বিনতু লাবূন; আরো বেশি হলে একশত বিশ পর্যন্ত (একানব্বই-একশত বিশ) উটের জন্য দু’টি হিক্কাহ এবং যখন একশত বিশের বেশি হবে তখন প্রতি পঞ্চাশ উটের জন্য একটি হিক্কাহ এবং প্রতি চল্লিশ উটের জন্য একটি বিনতু লাবূন যাকাত আদায় করতে হবে। ভেড়া বকরীর যাকাত হলঃ চল্লিশ হতে এক শত বিশ পর্যন্ত বকরীর জন্য একটি বকরী; এর বেশি হলে দু’শত পর্যন্ত দুটি বকরী; এর বেশি হলে তিনশত পর্যন্ত বকরীর জন্য তিনটি বকরী; তিনশতর বেশি হলে প্রতি একশত বকরীর জন্য একটি করে বকরী যাকাত আদায় করতে হবে। তারপর বকরীর পরিমাণ আবার একশত পর্যন্ত না পৌছালে (পুনরায়) কোন যাকাত দিতে হবে না। যাকাতের ভয়ে (একাধিক মালিকানায়) বিচ্ছিন্নগুলোকে একত্র করা এবং একত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এক সাথে দুই শরীকের পশু থাকলে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের হিসাব করে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করবে। যাকাতে বৃদ্ধ এবং ক্রটিযুক্ত পশু গ্রহণ করা হবে না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯৮)।
গরুর যাকাত আদায় প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্রিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর। চল্লিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি দুই বছরের বাছুর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮০৪)। মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানে (গভর্ণর করে) প্রেরণ করলেন এবং আদেশ দিলেনঃ আমি যেন প্রতি ত্রিশটি গরুর ক্ষেত্রে একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর; প্রতি চল্লিশটি গরুর ক্ষেত্রে একটি দুই বছরের বাছুর (যাকাত হিসেবে) এবং প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়সের (জিম্মী) লোকের নিকট হতে এক দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) অথবা একই মূল্যের মাআফির নামক কাপড় (জিয্য়া হিসাবে) আদায় করি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮০৩)। আমর ইবনু মুররা (রহঃ) আমর ইবনু মুররা (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবূ উবাইদাকে আমি প্রশ্ন করলাম, আবদুল্লাহ্র নিকট হতে তিনি কি কোন কিছু বর্ণনা করেন? তিনি বললেন, না।
যাকাত হিসাবে উত্তম মাল নেয়া অপরাধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) মুআয (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি তাকে বললেনঃ এমন একটি জাতির নিকটে তুমি যাচ্ছ যারা আহ্লি কিতাব। তাদেরকে এমন সাক্ষ্য দিতে আহ্বান কর যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন মা’বূদ নেই এবং আমি (মুহাম্মাদ) আল্লাহ্র রাসূল। এটা তারা মেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও- অবশ্যই তাদের উপর আল্লাহ তা’আলা দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে ফরয করেছেন। তারা এটাও মেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও- তাদের ধন-দৌলতে আল্লাহ তা’আলা যাকাত ফরয করে দিয়েছেন। তাদের ধনীদের মধ্য হতে এটা আদায় করে তাদের গরীবদের মাঝে বিলি করে দেয়া হবে। যদি তারা এটিও মেনে নেয় তাহলে সাবধান! তাদের উত্তম মাল (যাকাত হিসাবে) নেয়া হতে বিরত থাকবে। নিজেকে নিপীড়িতদের অভিশাপ হতে দূরে রাখ। কেননা, তার আবেদন এবং আল্লাহ তা’আলার মাঝে কোন প্রতিবন্ধক নেই। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৮৩), বুখারী, মুসলিম।
কৃষিজাত ফসল, ফল ও শস্যের যাকাত আদায় প্রসঙ্গে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচের কম সংখ্যক উটে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না; পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপাতে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না এবং পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ ফসলে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯৩), বুখারী, মুসলিম। মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী হতে, তিনি সুফিয়ান হতে, তিনি শুবা হতে, তিনি মালিক ইবনু আনাস হতে, তিনি আমর ইবনু ইয়াহইয়া হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি আবূ সাঈদ আল-খুদরী হতে আমর ইবনু ইয়াহইয়া হতে আব্দুল আজীজের হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ সাঈদ হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আরো কয়েকটি সূত্রে উপরে উল্লেখিত হাদীসটি তার নিকট হতে ৰর্ণিত হয়েছে।
ঘোড়া ও গোলামে কোন যাকাত আদায় করতে হবে না
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া ও ক্রীতদাসের জন্য মুসলমানের কোন সাদকা (যাকাত) আদায় করতে হবে না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮১২), যঈফা (৪০১৪), বুখারী, মুসলিম।
মধুতে যাকাত আদায় প্রসঙ্গে
ইবনু উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতি দশ মশক মধুর ক্ষেত্রে এক মশক যাকাত ধার্য হবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮২৪)। নাফি (রহঃ) উমার ইবনু আব্দুল আযীয আমাকে মধুর যাকাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আমি জবাবে বললামঃ (যাকাত দেওয়ার মত) মধু আমাদের কাছে নাই যাতে আমরা যাকাত দিব। কিন্তু মুগীরা ইবনু হাকীম আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, মধুতে কোন যাকাত নেই। (একথা শুনে) উমর ইবনু আব্দুল আযীয বললেনঃ তিনি (মুগীরা) ন্যায় পরায়ণ, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। অতঃপর তিনি নির্দেশ জারী করলেন যে, মধুতে যাকাত আদায় করতে হবে না। -সনদ সহীহ্।
অর্জিত মালের ক্ষেত্রে বর্ষচক্র পার না হওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সম্পদ অর্জন করল, তার উপর বর্ষচক্র পার না হওয়া পর্যন্ত যাকাত আদায় করতে হবে না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৯২)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যে লোক সম্পদ অর্জন করল, মালিকের হাতে তা পুরো এক বছর না থাকা পর্যন্ত তাতে যাকাত আদায় করতে হবে না। -সনদ সহীহ্, মাওকূফ, এটি মারফু হাদীসের মতই।
মুসলমানদের উপর জিয্ইয়া ধার্য হয় না
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একই লোকালয়ে (আরবে) দু'টি কিবলার সুযোগ নেই এবং মুসলমানদের ওপর কোন জিযইয়া নেই। যঈফ, ইরওয়া (১২৪৪), যঈফ (৪৩৭৯) ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
অলংকার ও গহনাপত্রের যাকাত দেওয়া প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর স্ত্রী যাইনাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে মহিলাগণ! তোমাদের গহনাপত্র দিয়ে হলেও তোমরা দান-খয়রাত কর। কেননা, কিয়ামাত দিবসে তোমাদের সংখ্যাই জাহান্নামীদের মধ্যে বেশি হবে। -পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ্। মাহমুদ ইবনু গাইলান আবূ দাঊদ তিনি শুবা হতে তিনি আ’মাশ হতে, তিনি আবূ ওয়ায়িল হতে তিনি জায়নাবের ভ্রাতুষ্পুত্র হতে তিনি আব্দুল্লাহর স্ত্রী যাইনাব হতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরের হাদীসের মত হাদীস বর্ণনা করেছেন......। এই বর্ণনাটি পূর্ববর্তী বর্ণনার চেয়ে অনেক বেশি সহীহ্। আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা দুইজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসে। তাদের দুজনের হাতে স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাদের উভয়কে প্রশ্ন করেনঃ তোমরা কি এর যাকাত প্রদান কর। তারা বলল, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ তোমরা কি এটা পছন্দ কর যে, আল্লাহ তা’আলা (কিয়ামাতের দিন) তোমাদের আগুনের দু’টি বালা পরিয়ে দিবেন? তারা বলল, না। তিনি বললেনঃ তবে তোমরা এর যাকাত প্রদান কর। -অন্য শব্দে হাদীসটি হাসান, ইরওয়া (৩/২৯৬), মিশকাত (১৮০৯), সহীহ আবূ দাঊদ (১৩৯৬)।
শাক-সব্জির যাকাত প্রসঙ্গে
মুআয (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সব্জি অর্থাৎ তরিতরকারির উপর যাকাত ধার্য প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে চিঠি লিখেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এতে যাকাত ধার্য হবে না। -সহীহ্, ইরওয়া (৩/২৭৯)।
নদী-নালা ইত্যাদির পানির সাহায্যে উৎপন্ন ফসলের যাকাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে জমি ঝর্ণা ও বৃষ্টির পানির সাহায্যে সিক্ত হয় সে জমিতে উশর ধার্য হবে। সেচের সাহায্যে যে জমি সিক্ত হয় তাতে অর্ধেক উশর ধার্য হবে। -পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ। সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার এমন ধরণের জমির উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উশর ধার্য করেছেন যেটি বৃষ্টির পানি অথবা ঝর্ণার কিংবা নালার পানির সাহায্যে সিক্ত হয়ে থাকে। আর সেচের সাহায্যে যে জমি সিক্ত হয় তাতে অর্ধেক উশর। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৮১৭), বুখারী, মুসলিম।
ইয়াতীমের সম্পদের যাকাত
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পালাক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিলেন। তিনি বললেনঃ শুনো! যে লোক কোন সম্পদশালী ইয়াতীমের তত্ত্বাবধায়ক হয়েছে, ষে যেন তা ব্যবসায়ে খাটায় এবং ফেলে না রাখে। তা না হলে যাকাতে সেগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে। যইফ, ইরওয়া (৭৮৮)
পশুর আঘাতে দণ্ড নেই এবং রিকাযে (গুপ্তধন) পাঁচ ভাগের এক ভাগ (যাকাত) নির্ধারিত হবে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পশুর আঘাতে, খনিতে, এবং কূপে পড়াতেও কোন দণ্ড নেই। রিকাযে পাঁচ ভাগের এক ভাগ (যাকাত) নির্ধারিত হবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৬৭৩), বুখারী, মুসলিম।
আন্দাজ করে গাছের ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করা
আবদুর রহমান ইবনু মাসঊদ (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) আমাদের এক মজলিসে হাযির হয়ে বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ যখন তোমার কোন ফলের পরিমাণ আন্দাজ কর তখন (সে অনুযায়ী যাকাত) নিয়ে নাও। তা আন্দাজে নির্ধারিত মোট পরিমাণ) হতে তিনভাগের এক অংশ বাদ দাও। যদি তিনভাগের এক অংশ না বাদ দাও তবে অন্তত চারভাগের এক অংশ বাদ দাও। যঈফ, যঈফ আবূ দাঊদ (২৮১)। আত্তাব ইবনু উসাইদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যক্তিদের নিকট তাদের আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফল আন্দাজ (পরিমাণ নির্ধারণ) করার জন্য লোক পাঠাতেন। একই সনদে এও বর্ণিত আছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুরের যাকাত প্রসঙ্গে বলেছেনঃ যেভাবে (গাছে থাকতেই) খেজুর আন্দাজ করা হয় ঠিক সেভাবে আঙ্গুরও আন্দাজ করা হবে। তারপর যেভাবে খেজুরের যাকাত শুকনো খেজুর দিয়ে আদায় করা হয় সেভাবে আঙ্গুরের ক্ষেত্রেও কিশমিশ দিতে হবে। যঈফ, ইরওয়া (৮০৭), যঈফ আবূ দাঊদ (২৮০)।
ন্যায় নিষ্ঠার সাথে যাকাত আদায়কারী
রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ন্যায়নিষ্ঠার সাথে যাকাত আদায়কারী আল্লাহ্ তা’আলার পথে জিহাদকারী সৈনিকের সমান (মর্যাদা সম্পন্ন) যে পর্যন্তনা সে বাড়িতে ফিরে আসে। -হাসান সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৮০৯)।
যাকাত আদায়ে সীমা লংঘনকারী
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত সংগ্রহে সীমা লংঘনকারী যাকাত আদায়ে বাধা দানকারীর (অস্বীকারকারীর) মতই। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৮০৮)।
যাকাত আদায়কারীর সন্তুষ্টি বিধান করা
জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত আদায়কারী (সংগ্রহকারী) তোমাদের নিকটে আসলে তিনি যেন (তোমাদের উপর) সন্তুষ্ট হয়েই ফিরতে পারে (তার সাথে ভাল ব্যবহার কর)। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৮০২), মুসলিম সংক্ষিপ্তভাবে। আবূ আম্মার আল-হুসাইন ইবনু হুরাইস সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা আবূ আম্মার আল-হুসাইন ইবনু হুরাইস সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা হতে, তিনি দাঊদ হতে, তিনি শা’বী হতে, তিনি জারীর হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা মুজালিদের হাদীসের (৬৪৭) তুলনায় দাঊদের হাদীসকে (৬৪৮) বেশি সহীহ্ বলেছেন। মুজালিদকে কিছু হাদীস বিশেষজ্ঞ যঈফ বলেছেন এবং তিনি অনেক ভুলের শিকার হন।
ধনীদের নিকট হতে যাকাত আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলি করা
আওন ইবনু আবূ জুহাইফা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (নিযুক্ত) যাকাত আদায়কারী আমাদের নিকটে আসলেন। তিনি আমাদের মালদারদের নিকট হতে যাকাত নিয়ে আমাদের দরিদ্রের মাঝে বিলি করলেন। এ সময় আমি ইয়াতীম বালক ছিলাম। তিনি আমাকে তা হতে একটি হৃষ্টপুষ্ট মাদী উট দিলেন। সনদ দুর্বল।
যে লোকের জন্য যাকাত নেয়া (ভোগ করা) বৈধ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের নিকটে যে লোক হাত পাতে (সাহায্য প্রার্থনা করে) অথচ তার এটা হতে বাঁচার মত সম্বল আছে, সে লোক কিয়ামাত দিবসে তার মুখমণ্ডলে এই সাহায্য চাওয়ার ক্ষত নিয়ে আল্লাহ্ তা’আলার সামনে উপস্থিত হবে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে সে লোক অন্য কারো নিকটে হাত পাততে পারবে না? তিনি বললেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম বা সমমূল্যের স্বর্ণ। -সহীহ্, সহীহ্ আবূ দাঊদ (১৪৩৮), মিশকাত (১৮৪৭)।
যে লোকের জন্য যাকাতের মাল বৈধ নয়
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবস্থাপন্ন সচ্ছল ও সুস্থ-সবল লোকের জন্য যাকাত নেয়া বৈধ নয়। -সহীহ, মিশকাত (১৪৪৪), ইরওয়া (৮৭৭)। হুবশী ইবনু জুনাদা (রাঃ) তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি বিদায় হাজ্জের সময় বলতে শুনেছি। তিনি তখন ‘আরাফার মাইদানে ছিলেন। এক বিদুঈন এসে তাঁর চাদরের পার্শ্ব ধরে তাঁর নিকটে কিছু চাইলো। তিনি তাকে কিছু দিলেন। লোকটি চলে গেল। এ সময়ই ভিক্ষারুপ পেশা নিষিদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ধনী লোকের জন্য এবং সুস্থ সুগঠিত শরীরের অধিকারী সচল ব্যক্তির জন্য (অপরের নিকট) ভিক্ষা করা জায়িয নয়, তবে সর্বনাশা অভাবে পরেছে এমন ব্যক্তি এবং অপমানকর কর্জে জর্জরিত ব্যক্তির জন্য জায়িয। যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অপরের নিকটে ভিক্ষা চায়, কিয়ামাতের দিন তার চেহারায় এর ক্ষতচিহ্ন হবে এবং সে জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর খাবে। অতএব যার ইচ্ছা হয় (ভিক্ষা) কম করুক আর যার ইচ্ছা হয় বেশী করুক। যঈফ, ইরওয়া (৩/৩৮৪) মাহমূদ ইবনু গাইলান ইয়াহইয়া ইবনু আদাম মাহমূদ ইবনু গাইলান ইয়াহইয়া ইবনু আদাম এর সূত্রে আব্দুর রহীম ইবনু সুলাইমান হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। দেখুন পূর্বের হাদীস। আবূ ঈসা বলেন, এই সূত্রে হাদীসটি গারীব।
ঋণগ্রস্ত লোক এবং আরও যে সব লোকের জন্য যাকাত নেয়া বৈধ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ফল কিনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে অনেক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (লোকদের) বললেনঃ একে তোমরা দান-খয়রাত কর। লোকেরা তাকে দান-খয়রাত করল, কিন্তু তা ঋণ পরিশোধের সমপরিমাণ হল না। তারপর ঋণগ্রস্ত লোকের পাওনাদারদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখন যা পাচ্ছ নিয়ে নাও, (আপাতত) এরচেয়ে বেশি আর পাবে না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৩৫৬), মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার-পরিজনদের ও তাঁর দাস-দাসীদের সাদকা (যাকাত) নেয়া মাকরুহ
বাহ্য ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার তিনি (দাদা) বলেন, কোন কিছু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আনা হলে তিনি প্রশ্ন করতেনঃ এটা সাদকা না-কি উপহার? লোকেরা যদি এটাকে সাদকা বলত তবে তিনি তা খেতেন না এবং লোকেরা যদি এটাকে উপহার বলত তবে তিনি তা খেতেন। -হাসান সহীহ, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বুখারী, মুসলিম। আবূ রাফি (রাঃ) মাখযূম বংশের এক লোককে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। সে আবূ রাফি (রাঃ)-কে বলল, আপনি আমার সহযাত্রী হয়ে যান, আপনিও যাতে কিছু পেতে পারেন। তিনি বলেন, না, আগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেনঃ আমাদের (হাশিম বংশের) জন্য যাকাত নেয়া বৈধ নয়। আর কোন বংশের মুক্তদাস তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। -সহীহ, মিশকাত (১৮২৯), ইরওয়া (৩/৩৬৫ ও ৮৮০), সহীহাহ (১৬১২)।
আত্মীয়-স্বজনদের যাকাত দেয়া
সালমান ইবনু আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন লোক ইফতার করে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। কেননা, এতে বারকাত আছে। যদি সে খেজুর না পায় তবে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা, পানি হল পবিত্র। -যঈফ, সঠিক হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কর্ম (নির্দেশ নয়), ইবনু মা-জাহ (১৬৯৯)। তিনি আরো বলেছেনঃ গরীবদের দান-খায়রাত করা শুধু দান বলেই গণ্য হয়; কিন্তু আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে তা দানও হয় এবং আত্মীয়তাও রক্ষা করা হয় (তাই সাওয়াবও দ্বিগুণ)। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৮৪৪)।
যাকাত ছাড়াও সম্পদে আরো প্রাপ্য আছে
ফাতিমা বিনতু কাইস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অথবা (রাবীর সন্দেহে) অন্য কেউ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে যাকাত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেনঃ অবশ্যই যাকাত ছাড়াও (ধনীর) মালে আরো প্রাপ্য আছে। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা বাকারার এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে শুধু এটাই সাওয়াবের কাজ নয়, বরং সাওয়াব আছে- কোন ব্যক্তি আল্লাহ, আখিরাত, ফেরেশতা, কিতাব ও নাবীদের প্রতি ঈমান আনলে এবং তার ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, পথিক-মুসাফির, ভিক্ষুক ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার উদ্দেশ্যে নিজের সম্পদ খরচ করলে, দুর্ভিক্ষ, প্রতিকূল অবস্থা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সময় ধৈর্য ধরলে। এরাই প্রকৃত সত্যবাদী আর এরাই প্রকৃত মুত্তাকী।” (সূরাঃ বাকারা - ১৭৭) যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৭৮৯) ফাতিমা বিনতু কাইস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত ছাড়াও (সম্পদশালীর) সম্পদে অবশ্যই আরো প্রাপ্য আছে। অনুরূপ যঈফ
দানের মর্যাদা
সাঈদ ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি আবূ হুৱাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বৈধ উপার্জন হতে দান খায়রাত করে, আর আল্লাহ তা’আলা হালাল ও পবিত্র মাল ছাড়া গ্রহণ করেন না, সেই দান দয়াময় রাহমান স্বয়ং ডান হাতে গ্রহণ করেন, তা যদি সামান্য একটি খেজুর হয় তাহলেও। এটা দয়াময় রাহমানের হাতে বাড়তে বাড়তে পাহাড় হতেও বড় হয়ে যায়; যেভাবে তোমাদের কেউ তার দুধ ছাড়ানো গাভী বা ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন পালন করে থাকে। -সহীহ্, জিলালুল জুন্নাহ (৬২৩), তা’লীকুর রাগীব, ইরওয়া (৮৮৬), বুখারী, মুসলিম। আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা দান-খাইরাত ক্ববুল করেন এবং তা ডান হাতে গ্রহণ করেন। সেগুলো প্রতিপালন করে তিনি তোমাদের কারো জন্য বাড়াতে থাকেন, যেভাবে তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন করে বড় করতে থাকে। (এ দানের) এক একটি গ্রাস বাড়তে বাড়তে উহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ হয়ে যায়। এর প্রমাণে আল্লাহ তা'আলার কিতাবে আছেঃ তিনি তার বান্দাদের তাওবা ক্ববুল করেন এবং তাদের দান গ্রহণ করেন" (সূরাঃ তাওবা- ১০৪)। "আল্লাহ তা'আলা সুদকে নির্মুল করেন এবং দান-খাইরাত বাড়িয়ে দেন" (সূরাঃ বাকারা- ২৭৬) হাদীসের বর্ধিত অংশ এর প্রমাণে আল্লাহ্ তা'আলার কিতাব রয়েছে….। মুনকার। ইরওয়া (৩/৩৯৪)তা’লীকুর রাগীব (২/১৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হল, রামাযানের রোযার পর কোন রোযা সবচাইতে বেশী মর্যাদা সম্পন্ন? তিনি বলেনঃ রামাযানের সম্মানার্থে শা'বানের রোযা। প্রশ্নকারী আবার বলল, কোন (সময়ের) দান-খাইরাত সবচাইতে বেশী মর্যাদা সম্পন্ন? তিনি বললেনঃ রামাযান মাসের দান-খাইরাত। যঈফ, ইরওয়া (৮৮৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দান-খাইরাত আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে। হাদীসের প্রথমাংশ সহীহ, ইরওয়া (৮৮৫), সাহীহাহ (১৯০৮)
সাহায্য প্রার্থনাকারীর অধিকার
আবদুর রাহমান ইবনু বুজাইদ (রহঃ) হতে তার দাদী উন্মু বুজাইদ (রাঃ)-এর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে যে সকল মহিলা বাইআ’ত গ্রহণ করেছিলেন তিনিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, ভিক্ষুক এসে আমার দরজায় দাড়ায়, অথচ আমার হাতে তাকে দেওয়ার মত কিছুই থাকে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যদি তুমি (পশুর পায়ের) একটি ক্ষুর (খুবই সামান্য জিনিস) ছাড়া তাকে দেওয়ার মত আর কিছু না পাও তবে তাই তার হাতে তুলে দাও। -সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (২/২৯), সহীহ আবূ দাঊদ (১৪৬৭)।
তাদের মন জয়ের জন্য দান করা
সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কিছু (গানীমাতের) মাল দান করেন। তিনি আমার দৃষ্টিতে সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য দুশমন ছিলেন। আমাকে তিনি দান করতে থাকলেন। যার ফলে তিনিই আমার নিকটে সৃষ্টিকুলের মাঝে সবচেয়ে পছন্দনীয় লোক হয়ে গেলেন। -সহীহ্, মুসলিম।
সাদকা দানকারীর পুনরায় দানকৃত বস্তুর উত্তরাধিকারী হওয়া
আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) তিনি (বুরাইদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আমি বসা ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করেছিলাম। তিনি মারা গেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি সাওয়াবের অধিকারী হয়ে গেছ এবং উত্তরাধিকার স্বত্ত্ব দাসীটি তোমাকে ফেরত দিয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! এক মাসের রোযা আদায় করা তার বাকী আছে, তার পক্ষ হতে আমি কি রোযা আদায় করতে পারি? তিনি বললেনঃ তার পক্ষে তুমি রোযা আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কখনও তিনি হাজ্জ করেননি। তার পক্ষ হতে আমি কি হাজ্জ আদায় করতে পারি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তার জন্য তুমি হাজ্জ আদায় কর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৭৫৯, ২৩৯৪), মুসলিম।
দান-খায়রাত ফিরত নেয়া অতি নিন্দিত
উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার পথে ঘোড়া দান করলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, সে লোক ঘোড়াটিকে বিক্রয় করছে। তিনি তা কিনতে ইচ্ছা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার দান করা বস্তু তুমি ফিরত নিও না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৩৯০), বুখারী, মুসলিম।
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক লোক বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পক্ষে আমি দান-খায়রাত করলে তার কি কোন কল্যাণে আসবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, আমার একটি বাগান আছে। আপনাকে আমি সাক্ষী রেখে তার পক্ষ থেকে তা দান করলাম। -সহীহ, সহীহ আবূ দাঊদ (৬৫৬৬), বুখারী।
স্বামীর ঘর হতে স্ত্রীর কিছু দান করা
আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর বক্তৃতায় বলতে শুনেছিঃ স্বামীর ঘর হতে তার পূবার্নুমতি ছাড়া কোন স্ত্রীলোক যেন কিছু দান না করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল! খাবারও কি নয়? তিনি বললেনঃ খাবার তো আমাদের উত্তম সম্পদ। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (২২৯৫)। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামীর ঘর হতে স্ত্রী কোন কিছু দান করলে এতে তার সাওয়াব হয়। স্বামীরও সমপরিমান সাওয়াব হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণকারীরও সমপরিমান সাওয়াব হয়। এতে একজন অন্যজনের কিছু পরিমাণ সাওয়াবও কমাতে পারে না। স্বামীকে উপার্জনের জন্য এবং স্ত্রীকে খরচের জন্য সাওয়াব দেওয়া হয়। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২২৯৪), বুখারী, মুসলিম। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামীর ঘর হতে যে মহিলা কোনরূপ অপচয় না করে এবং খুশি মনে কোন কিছু দান করে সে স্বামীর সমপরিমান সাওয়াব লাভ করে। তার সৎ উদ্দেশ্যের জন্য সে সাওয়াব লাভ করে এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী একই পরিমাণে সাওয়াব অর্জন করে। পূববর্তী হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ্।
সাদাকাতুল ফিত্র (ফিত্রা)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আমরা (মাথাপিছু) এক সা’ খাবার অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিশমিশ অথবা এক সা’ পনির (ফিতরা হিসাবে) দান করতাম। আমরা এভাবেই দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু মুআবিয়া (রাঃ) মাদীনায় এসে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে লোকদের সাথে আলোচনা করলেন। তার আলোচনার মধ্যে একটি ছিলঃ আমি দেখছি, সিরিয়ার দুই মুদ্দ গম এক সা’ খেজুরের সমান। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর লোকেরা এটাই অনুসরন করতে লাগলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আমি পূর্বের মতই দিতে থাকব। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮২৯), বুখারী, মুসলিম। আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার অলিতে গলিতে লোক পাঠিয়ে ঘোষণা করলেনঃ জেনে রাখ! প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষ, আযাদ-গোলাম, ছোট অথবা বড় সকলের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। এর পরিমাণ হল, (মাথাপিছু) দুই মুদ্দ গম অথবা এটা ছাড়া এক সা’ পরিমাণ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য। সনদ দুর্বল ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, প্রত্যেক পুরুষ, নারী, মুক্ত দাস-দাসীর উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ যব ফিত্রা হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে লোকেরা অর্ধেক সা’ গমকে এর সমপরিমাণ ধরে নিয়েছে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮২৫), বুখারী। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) মুসলমান মুক্ত অথবা গোলাম, পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক নিবির্শেষে সকলের উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ যব রামাযান মাসের ফিত্রা হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। -সহীহ ইবনু মা-জাহ (১৮২৬), বুখারী, মুসলিম।
ঈদের নামাযের পূর্বে ফিত্রা আদায় করা
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন সকালে ঈদের নামায আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে ফিত্রা আদায়ের নির্দেশ দিতেন। -হাসান সহীহ্, সহীহ আবূ দাঊদ (১৪২৮), ইরওয়া (৮৩২), বুখারী।
অগ্রিম যাকাত আদায় করা
আলী (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যাকাত আদায় প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তিনি তাঁকে এর অনুমতি দিয়েছেন। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৭৯৫)। আলী (রাঃ) উমার (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমরা বছরের শুরুতেই আব্বাসের এই বছরের যাকাত নিয়ে নিয়েছি। -হাসান।
ভিক্ষা করা নিষেধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মাঝে কোন লোক সকালে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে তা পিঠে করে বহন করে এনে তা হতে প্রাপ্ত উপার্জন হতে সে দান-খায়রাত করল এবং লোকদের নিকটে হাত পাতা হতে বিরত থাকল। তার জন্য এটা অনেক উত্তম অন্যের নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করা হতে। আর অন্য লোকের নিকটে চাইলে সে তাকে দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। কেননা, নিচের হাত হতে উপরের হাত (দান গ্রহণকারীর চেয়ে প্রদানকারী) উত্তম। নিজের প্রতিপাল্যদের নিকট হতে (অর্থ ব্যয় ও দান-খয়রাত) শুরু কর। -সহীহ্, ইরওয়া (৮৩৪), মুসলিম। সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্য কারো নিকটে হাত পাতাটা ক্ষতের সমতুল্য (হীন ও শ্রান্তিকর)। সাহায্য প্রার্থী নিজের মুখমণ্ডলকে এর দ্বারা ক্ষতবিক্ষত (লাঞ্ছিত) করে। কিন্তু শাসকের নিকটে কোন কিছু চাওয়া বা যে লোকের হাত পাতা ব্যতীত আর কোন উপায় নেই তার কথা ভিন্ন। -সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (২/২)।