7. হজ্জ
মক্কা মুকাররমার মর্যাদা প্রসঙ্গে
আবূ শুরাইহ্ আল-আদাওবী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মদীনার গভর্নর আমার ইবনু সাঈদ (আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের বিরুদ্ধে) মক্কাতে সৈন্যবাহিনী পাঠাচ্ছিলেন তখন তিনি (আবূ শুরাইহ্) তাকে বললেনঃ হে আমীর ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন একটি হাদীস বর্ণনা করার। মক্কা বিজয়ের পরদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই হাদীসটি বলেছিলেন। তখন তা আমার কর্ণদ্বয় শুনেছিলো, আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছিল এবং আমার চক্ষুদ্বয় তা প্রত্যক্ষ করেছিল। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন, তারপর বললেনঃ মক্কাকে আল্লাহ্ তা’আলা “হারাম” ঘোষণা করেছেন, তাকে কোন মানুষ “হারাম” করেনি। অতএব, আল্লাহ্ তা’আলা ও আখিরাতের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে এখানে সে লোকের জন্য রক্তপাত করা বা এখানকার কোন বৃক্ষ কাটা বৈধ নয়। যদি কোন লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক এখানে (মক্কা বিজয়কালে) যুদ্ধ করার অজুহাত তুলে এখানে কোন রকম যুদ্ধাভিযান চালানোর সুযোগ খোঁজ করে তাহলে তোমরা সে লোককে বলে দিবে, আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে অনুমতি দিয়েছেন কেবল তাঁর রাসূলকেই, এর অনুমতি তোমাকে দেননি। শুধু দিনের কিছু সময়ের জন্য তিনি আমাকেও এর অনুমতি দিয়েছেন। যেমনি গতকাল তা হারাম ছিল তেমনিভাবে আজও সেটা হারাম। তোমাদের উপস্থিত লোক যেন (একথা) অনুপস্থিত লোকের কাছ পৌঁছে দেয়। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
হজ্জ ও উমরা আদায়ের সাওয়াব প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরপর একত্রে আদায় করো। কেননা, এ হজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ্ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি ক্ববূল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়। -হাসান সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৮৮৭)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি হজ্জ করে এবং তাতে কোনো রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। -সহীহ্, হাজ্জাতুন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পৃঃ ৫), বুখারী, মুসলিম।
হাজ্জ পরিত্যাগ করা প্রসঙ্গে কঠোর হুঁশিয়ারি
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলার ঘর পর্যন্ত পৌছার মত সম্বল ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হাজ্জ না করে তবে সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহ তা'আলার) কোন ভাবনা নেই। কারণ আল্লাহ তা'আলা তার কিতাবে বলেনঃ “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য"। (সূরাঃ আল-ইমরান - ৯৭)। যঈফ, মিশকাত (২৫২১), তা’লীকুর রাগীব (২/১৩৪)।
পাথেয় ও বাহন থাকলে হাজ্জ ফরজ হয়
ইবনু উমার (রাঃ) এক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসুল! কিসে হাজ্জ ওয়াজিব হয়? তিনি বললেন : সম্বল ও বাহন (থাকলে)। খুবই দুর্বল, ইবনু মাজাহ(২৮৯৬)।
কতবার হাজ্জ করা ফরজ?
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে গমনের ক্ষমতা আছে আল্লাহ্ তা’আলার স্মরণে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অপরিহার্যভাবে করণীয়,’ তখন সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রতি বছরই কি?’ তিনি নীরব হয়ে রইলেন। তারা আবার বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রতি বছরই কি?’ তিনি বললেন : ‘না, আমি যদি বলতাম হ্যাঁ, তবে তোমাদের উপর তা(প্রতি বছর) ফরয হয়ে যেত।’ তারপর আল্লাহ্ তা’আলা অবতীর্ণ করেন : ‘হে মুমিনগণ ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করনা যা জাহির হলে তোমরা দুঃখিত হবে।’(সূরা মাঈদা-১০১) যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৮৮৪)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার হজ্জ করেছেন?
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ করেছেন তিনবারঃ দু’বার হিজরাতের আগে এবং এক বার হিজরাতের পর। তিনি এই (শেষোক্ত) হজ্জের সাথে উমরাও করেছেন। তিনি তেষট্টিটি কুরবানীর উট এনেছিলেন এবং ইয়ামান হতে আলী (রাঃ) অবশিষ্ট (৩৭টি) উটগুলি এনেছিলেন। আবূ জাহালের একটি উটও ছিল এই উটগুলির মধ্যে। একটি রূপার শিকল এর নাসারন্ধ্রে (নাকের ছিদ্রে) পরানো ছিলো। তিনি এটাকেও যবেহ করেছিলেন। প্রতিটি কুরবানীর উট হতে এক টুকরো করে গোশত আনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন। এগুলো রান্না করা হলে তিনি এর শুরুয়া (ঝোল) পান করেন। সহীহ, হাজ্জাতুন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (৬৭-৮৩), মুসলিম, হিজরাতের পূর্বে ২ হজ্জ এবং আবূ জাহল এই বাক্যাংশ ছাড়া। এই হাদীসটিকে আবূ ঈসা গারীব বলেছেন। শুধুমাত্র যাইদ ইবনু বাবের সূত্রেই আমরা এ হাদীসটি জানতে পেরেছি। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমানের পুস্তকে --- তিনি এটি আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস সম্বন্ধে আমি মুহাম্মদ আল-বুখারীকে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু এই হাদীস উপরোক্ত সনদে বর্ণিত আছে বলে তিনি জানতে পারেননি। আমি দেখেছি এই হাদীসটিকে তিনি সংরক্ষিত বলে গণ্য করতেন না। তিনি বলেন, এটি সাওরী-আবূ ইসহাক-মুজাহিদের সনদে মুরসালভাবে বর্ণিত আছে। --------------------------- ৮১৫/২. কাতাদা (রহঃ) বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে আমি বললাম,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার হজ্জ করেছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার হজ্জ এবং চারবার উমরা করেছেন। যিলকাদ মাসে একটি উমরা, হুদাইবিয়ার উমরা, হজ্জের সাথে একটি এবং হুনাইন যুদ্ধের গানীমাত বন্টনকালে জি’রানা হতে একটি উমরা। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। হাব্বান ইবনু হিলাল (আবূ হাবীব আল-বাসরী) একজন মর্যাদাসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তাঁকে ইয়াহহিয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বলে মন্তব্য করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার উমরা করছেন?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারবার উমরা করেছেনঃ হুদাইবিয়ার উমরা, দ্বিতীয় উমরা এর পরের বছর, যিলকাদ মাসে কাযা উমরা হিসাবে ছিলো এটি, জি’রানা নামক জায়গা হতে হচ্ছে তৃতীয় উমরা এবং তাঁর হজ্জের সাথে আদায় করেন চতুর্থ উমারা -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০০৩)।
কোন জায়গা হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বেঁধেছেন?
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ করতে মনস্থ করলেন তখন লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন। তারা একত্র হল। অতঃপর তিনি যখন বাইদা নামক জায়গায় পৌঁছুলেন তখন ইহরাম বাঁধলেন। -সহীহ, হাজ্জাতুন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (৪৫/২)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তারা বাইদা নামক জায়গাকে কেন্দ্র করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জড়িয়ে (ইহরাম প্রসঙ্গে) মিথ্যারোপ করেছে। আল্লাহ্র শপথ ! মসজিদের নিকটেই একটি গাছের পাশে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের তাকবীর ধ্বনি করেছিলেন। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখন ইহরাম বাঁধেন?
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযের পর ইহরাম এর তাকবীর উচ্চারণ করেছেন। য’ঈফ, য’ঈফ আবূ দাঊদ ৩১২।
ইফরাদ হাজ্জ
আয়িশাহ (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ হাজ্জ করেছেন। শাজ, ইবনু মাজাহ ২৯৬৪, বুখারী ও মুসলিম)
হজ্জ ও উমরা দুটি একসাথে আদায় করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি উমরা ও হজ্জ উভয়ের একত্রে ইহরাম বেঁধে লাব্বায়িক বলতে শুনেছি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৬৮, ২৯৬৯)।
তামাত্তু’ হাজ্জ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ করেছেন। মুআবিয়া (রাঃ)-ই সর্বপ্রথম তা করতে নিষেধ করেন। সনদ দুর্বল। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফাল (রহঃ) তিনি হাজ্জের সাথে উমরা একত্রে করে তামাত্তু হাজ্জ প্রসঙ্গে সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস ও যাহহাক ইবনু কাইস (রাঃ)- কে আলোচনা করতে শুনেছেন। যাহহাক ইবনু কাইস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ প্রসঙ্গে জ্ঞানহীন ব্যক্তি ছাড়া কেউ এটা করতে পারেনা। সা’দ (রাঃ) বললেন, হে ভাতিজা! তুমি বড় অপ্রীতিকর কথা বললে। যাহহাক বললেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তো এটা করতে মানা করেছেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন এবং আমরাও তাঁর সাথে তা করেছি। সনদ দুর্বল।
তালবিয়া পাঠ করা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নরূপ তালবিয়া পাঠ করতেনঃ “আমি হাযির, হে আল্লাহ্ ! আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির; সকল প্রশংসা ও সকল নিয়ামাত তোমারই, সমস্ত বিশ্বের রাজত্ব তোমারই; তোমার কোন শরীক নেই।“ -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯১৮), বুখারী, মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) ইহরাম বাঁধার সময় উচ্চস্বরে বলতেনঃ “লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাত লাকা ওয়াল মুলকা, লা-শারীকা লাকা” বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর তালবিয়া। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর তালবিয়ার সাথে নিজের পক্ষ হতে তিনি এটুকু অংশ বাড়িয়ে পাঠ করতেনঃ লাব্বাইকা, লাব্বাইকা ও সা’দাইকা ওয়াল খাইরু ফী ইয়াদাইকা, লাব্বাইকা ওয়ার রাগবা-উ ইলাইকা ওয়াল আমালু। ‘আমি হাযির, আমি হাযির, আমি ভাগ্যবান, সকল প্রকার কল্যাণ তোমারই হাতে, আমি হাযির, সকল প্রকার আশা-আকাংক্ষা তোমার প্রতিই, আমলও তোমার (সন্তুষ্টির) জন্যই”। -সহীহ, প্রাগুক্ত, বুখারী, মুসলিম।
তালবিয়া ও কুরবানীর ফযিলত
আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করা হল, কোন প্রকার হজ্জ সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেনঃ চিৎকার করা (উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ) ও রক্ত প্রবাহিত করা (কুরবানী দেওয়া)। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯২৪)। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়। -সহীহ, মিশকাত (২৫৫০)।
উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ
খাল্লাদ ইবনুল সাইব (রাঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরাঈল (আ) আমার নিকট এসে বলেন যে, আমার সাহাবীদেরকে যেন আমি উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের নির্দেশ প্রদান করি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯২২)।
ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা
যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তিনি ইহরামের উদ্দেশ্যে (সেলাই করা) পোশাক খুলতে ও গোসল করতে দেখেছেন। -সহীহ, তা’লীকাতুল জিয়াদ, মিশকাত তাহকীক ছানী, আল হাজ্জুল কাবীর (২৫৪৭)।
বিভিন্ন এলাকার লোকদের ইহরাম বাঁধার জায়গা (মীকাত)
ইবনু উমার (রাঃ) এক লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কোথা হতে আমরা ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেনঃ যুল-হুলাইফা হতে মদানীবাসীগণ, জুহফা হতে সিরিয়াবাসীগণ, কারন হতে নাজদবাসীগণ এবং ইয়ালামলাম হতে ইয়ামানবাসীগণ ইহরাম বাঁধবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯১৪), বুখারী, মুসলিম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ব এলাকার লোকদের জন্য আকীক নামক জায়গাকে মীকাত হিসেবে স্থির করেছেন। মুনকার; ইরওয়া (১০০২), যঈফ আবূ দাঊদ(৩০৬), সহীহ হল যাতু ইরক।
যে ধরনের পোশাক পরা ইহরামধারী লোকের জন্য বৈধ নয়
ইবনু উমার (রাঃ) এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমাদেরকে ইহরাম অবস্থায় আপনি কি ধরণের পোশাক পরার নির্দেশ দেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জামা, পাজামা, টুপি, পাগড়ী ও মোজা পরবে না। তবে কোন লোকের জুতা না থাকলে সে চামড়ার মোজা পরবে যা পায়ের গোছার নিচে থাকে। যাফরান ও ওয়ারাস রং-এ রঙ করা কোন পোশাক তোমরা পরবে না। ইহরামধারী মহিলারা মুখ ঢাকবে না এবং হাতে দস্তানা (হাত মোজা) পরবে না। -সহীহ্, ইরওয়া, সহীহ্ আবূ দাঊদ (১৬০০- ১৩০৬), আল হাজ্জুল কাবীর, বুখারী, মুসলিম।
ইহরামধারী ব্যক্তি লুঙ্গি ও জুতা জোগাড় করতে না পারলে পাজামা ও মোজা পরতে পারে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ ইহরামধারী ব্যক্তি লুঙ্গি যোগাড় করতে না পারলে সে পাজামই পরবে এবং জুতা জোগাড় করতে না পারলে মোজা পরবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৩১), বুখারী, মুসলিম।
ইহরামধারী ব্যক্তির পরনে জামা বা জুব্বা থাকলে
ইয়ালা ইবনু উমাইয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, এক বেদুঈনকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় জুব্বা পরিহিত দেখলেন। তিনি তাকে তা খুলার নির্দেশ দিলেন। সহীহ্, সহীহ আবূ দাঊদ (১৫৯৬, ১৫৯৯), বুখারী, মুসলিম পূর্ণরূপে। ইবনু আবী উমার ইবনু আবী উমার সুফিয়ান হতে, তিনি আমর ইবনু দীনার হতে, তিনি আতা হতে, তিনি সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা হতে এই সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বক্তব্য সম্বলিত হাদীস ইয়ালা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা এই শেষোক্ত সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে অধিক সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীসের পটভূমিতে একটি ঘটনাও আছে। আতা-ইয়ালা ইবনু উমাইয়্যা (রাঃ) -এর সূত্রে কাতাদা-হাজ্জাজ ইবনু আরতাত প্রমুখ এইরূপই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমার ইবনু দীনার ও ইবনু জুরাইজ-আতা হতে, তিনি সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা হতে তিনি তার পিতা ইয়ালা (রাঃ) -এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা বর্ণনা করেছেন তাই সঠিক।
ইহরামধারী ব্যক্তি যে প্রাণী হত্যা করতে পারে
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হারাম শারীফের ভিতরেও পাঁচটি অনিষ্টকারী প্রাণীকে মারা যায়ঃ ইঁদুর, বিচ্ছু, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর। - সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৮৭), মুসলিম। আবূ সাঈদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইহরামধারী ব্যক্তি আক্রমণকারী হিংস্র জীব, হিংস্র কুকুর, ইঁদুর, বিছা, চিল ও কাক হত্যা করতে পারে। যঈফ, ইবনু মাজাহ(৩০৮৯),
ইহরামধারী ব্যক্তির রক্তক্ষরণ করানো
ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইহরাম পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তক্ষরণ করিয়েছেন। — সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৬৮২), বুখারী
ইহরামধারী লোকের বিয়ে করানো মাকরূহ
নুবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু মামার তার (ইহরামধারী) ছেলেকে বিয়ে করাতে মনস্থ করলেন। তাই তিনি আমাকে আমীরুল হজ্জ আবান ইবনু উসমানের নিকট পাঠালেন। তাঁর নিকট এসে আমি বললাম, আপনার ভাই তাঁর ছেলেকে বিয়ে করাতে চান। এই বিষয়ে তিনি আপনাকে সাক্ষী রাখতে চান। তিনি বললেন, আমি দেখছি সে তো এক মূৰ্খ বেদুঈন! ইহরামধারী ব্যক্তি না নিজে বিয়ে করতে পারে আর না অন্যকে বিয়ে করাতে পারে, অথবা এরকমই বলেছেন। নুবাইহ বলেন, এরপর তিনি হাদীসটিকে উসমান (রাঃ)-এর মারফতে মারফূভাবে বর্ণনা করেছেন। — সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৯৬৬), মুসলিম। আবূ রাফী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ইহরামমুক্ত অবস্থায় মায়মূনা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন এবং ইহরামমুক্ত অবস্থায়ই তাঁর সাথে বিবাহরজনী যাপন করেন। আমি ছিলাম তাদের মধ্যকার দূত (ঘটক)। যঈফ, ইরওয়া(১৮৪৯), হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ যাহা ৮৮৭ নং হাদীসের অংশ।
ইহরাম পরিহিত অবস্থায় বিয়ের অনুমতি প্রসঙ্গে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ইহরাম অবস্থায় মাইমুনাহ (রাঃ) কে বিয়ে করেন। শাজ, ইবনু মাজাহ ১৯৬৫, বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ইহরাম অবস্থায় মাইমূনাহ (রাঃ)-কে বিয়ে করেছেন। (শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস) ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ইহ্রাম অবস্থায় মাইমূনা (রাঃ)-কে বিয়ে করেছেন। শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস। মাইমূনা (রাঃ) , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে বিয়ে করেন তিনি তখন ইহরামমুক্ত অবস্থায় ছিলেন এবং একই অবস্থায় তিনি তার সাথে বাসর যাপন করেন। পরবর্তী কালে মাইমূনা (রাঃ) সারিফেই মারা যান এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে যে ঝুপড়িতে (কুঁড়ে ঘরে) বাসর যাপন করেন আমরা তাকে সেই স্থানেই দাফন করি। - সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৯৬৪), মুসলিম সংক্ষিপ্তভাবে।
ইহরামধারী ব্যক্তির শিকারের গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইহ্রাম অবস্থায়ও স্থলভাগের শিকারকৃত প্রাণীর গোশ্ত তোমাদের জন্য বৈধ, যদি না তোমরা নিজেরা তা শিকার করে থাক বা তোমাদের উদ্দেশে তা শিকার করা হয়। যঈফ, মিশকাত, তাহক্বীক্ব ছানী (২৭০০), আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে (সফরে) ছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে তার কিছু সঙ্গীসহ মক্কার কোন এক পথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে পড়ে গেলেন। তার সঙ্গীরা ইহরাম অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে মুহরিম ছিলেন না। তিনি একটি বন্য গাধা দেখলেন। তিনি সেই মুহূর্তে তার ঘোড়ায় উঠে বসলেন এবং তার চাবুকটি সঙ্গীদেরকে দিতে বললেন। কিন্তু তা দিতে তারা অস্বীকার করলেন। তিনি তার বর্শাটি চাইলে তাও দিতে তারা অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর তিনি নিজেই সেটাকে উঠিয়ে নেন এবং গাধাটিকে আক্রমণ করে মেরে ফেলেন। কিছু সাহাবী তার গোশত খেলেন এবং সেটা খেতে কেউ কেউ অস্বীকার করলেন। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তারা মিলিত হয়ে তাকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ এটি এমন খাবার যা আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে খাইয়েছেন। সহীহ, ইরওয়া (১০২৮), সহীহ আবূ দাউদ (১৬২৩), বুখারী, মুসলিম। আবূ কাতাদা (রাঃ) আবূন নাযরের হাদীসের মতই আবূ কাতাদা (রাঃ) -এর সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এই রিওয়ায়াতে আরো আছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নিকট এর গোশত অবশিষ্ট আছে কি? -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত খাওয়া মাকরূহ
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন এবং সা’ব ইবনু জাসসামা (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) -কে অবহিত করেছেন যে, আবওয়া বা ওয়াদদান নামক জায়গাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি একটা বন্য গাধা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে উপহার দিলেন। কিন্তু তাঁকে তিনি তা ফেরত দিলেন। তাঁর চেহারাতে মালিন্যের ভাব দেখতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমার এই উপহার ফিরিয়ে দিতাম না। কিন্তু আমরা যে এখন ইহরাম অবস্থায় আছি। -সহীহ।
মুহ্রিমের জন্য সমুদ্রের শিকার বৈধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্ করতে বের হলাম। আমাদের সামনে এক ঝাঁক পঙ্গপাল এসে পড়ল। আমরা আমাদের চাবুক ও ছড়ি দিয়ে এগুলো মারতে শুরু করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা তোমরা খেতে পার। কারণ এটা জলজ শিকারের অন্তর্ভুক্ত। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩২২২)।
মুহুরিমের জন্য ভুল্লোক শিকার করা
ইবনু আবূ আম্মার (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে আমি বললাম, ভুল্লোক কি শিকার (করার মত প্রাণী)। তিনি বলেন, হ্যা। আমি বললাম, সেটা কি খেতে পারবো? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এ কথা বলেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। - সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৮৫)।
মক্কায় যাওয়ার উদ্দেশে গোসল করা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা শরীফে যাওয়ার উদ্দেশে ফাখ নামক জায়গাতে গোসল করেন। সনদ খুবই দুর্বল। ফাখ শব্দ উল্লেখ না করে বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ আবূ দাঊদ (১২২৯)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চভূমি দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং নিম্নভূমি দিয়ে বের হতেন
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় আগমন করলেন তখন এর উচ্চভূমি দিয়ে আসলেন এবং বের হলেন নিম্নভূমি দিয়ে। – সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬৩৩) বুখারী, মুসলিম।
দিনের বেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মক্কায় আগমন
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের বেলা মক্কা নগরীতে আগমন করেন। – সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬২৯), বুখারী, মুসলিম।
বাইতুল্লাহ্ শরীফ দেখে হাত তোলা মাকরূহ
মুহাজির আল-মাক্কী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলঃ কোন ব্যক্তি বাইতুল্লাহ্ শরীফ দেখে তার উভয় হাত তুলবে কি-না। তিনি বললেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে হাজ্জ করেছি, কিন্তু তখন কি আমরা তা করেছি? যঈফ, যঈফ আবূ দাঊদ (৩২৬), মিশকাত তাহকীক ছানী (২৫৭৪)।
তাওয়াফ আদায়ের নিয়ম-কানুন
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মক্কায় পৌছার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন, তারপর ডান দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তিন বার তাওয়াফ করলেন দ্রুত পদক্ষেপে, আর স্বাভাবিক গতিতে তাওয়াফ করলেন চার বার। এরপর মাকামে ইবরাহীমে আসলেন এবং পাঠ করলেনঃ “মাকামে ইবরাহীমকে তোমরা নামাযের জায়গা হিসাবে গ্রহণ কর”(সূরাঃ বাকারা- ১২৫)। তিনি এখানে তাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝে মাকামে ইবরাহীমকে রেখে দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন, এরপর হাজরে আসওয়াদের নিকট এসে তা চুম্বন করলেন। এরপর তিনি বের হয়ে গেলেন সাফা পাহাড়ের দিকে (সাঈর উদ্দেশ্যে)। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার ধারণা তিনি তখন পাঠ করলেনঃ “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া (পাহাড়দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত”(সূরাঃ বাকারা-১৫৮)। - সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৭৪), মুসলিম।
হাজরে আসওয়াদ হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত দ্রুত প্ৰদক্ষিণ করা
জাবির (রাঃ) হাজরে আসওয়াদ হতে শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন বার দ্রুত পদক্ষেপে তাওয়াফ করেন এবং ধীর পদক্ষেপে চারবার তাওয়াফ করেন। — সহীহ, প্রাগুক্ত।
শুধু হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা
আবুত তুফাইল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তাওয়াফের সময় মুআবিয়া (রাঃ) যে রুকনের পাশ দিয়েই যেতেন সেটিই চুম্বন করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেন, শুধুমাত্র রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুম্বন করতেন। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, বাইতুল্লাহর কিছুই উপেক্ষণীয় নয়। -সহীহ, আলহাজ্জুল কাবীর, বুখারী, মুসলিম।
ইযতিবা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওয়াফ করেছেন
ইয়ালা (রাঃ) একটি চাদরের মধ্যভাগ ডান বগলের নীচে দিয়ে এবং তার দুই প্রান্ত বাম কাঁধের উপর দিয়ে জড়ানো (ইযতিবা) অবস্থায় (বাহু খোলা রেখে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফ করেছেন। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (২৯৫৪)।
হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেওয়া
আবিস ইবনু রবীআ (রহঃ) তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিতে দেখেছি এবং তিনি তখন বলছিলেনঃ আমি তোমাকে চুমা দিচ্ছি অথচ আমি জানি তুমি শুধুই একটি পাথর। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যদি তোমাকে চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুমা দিতাম না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৪৩), বুখারী, মুসলিম। যুবাইর ইবনু আরাবী (রাঃ) এক ব্যক্তি ইবনু উমারকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। জবাবে তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা স্পর্শ ও চুম্বন করতে দেখেছি। লোকটি বললোঃ আপনি কি মনে করেন? আমি যদি পরাভূত হই, আপনি কি মনে করেন? আমি যদি ভিড়ে আটকে পরি, তিনি বললেন, তোমার ঐ কি মনে কর (কথাটি) ইয়ামানে রেখে আস (লোকটি ইয়ামানী ছিল তাই একথা বললেন) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উহা স্পর্শ করতে ও চুম্বন দিতে দেখেছি। -সহীহ (আল-হাজ্জুলকাবীর) বুখারী।
মারওয়ার আগে সাফা হতে সাঈ শুরু করতে হবে
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় আসার পর বাইতুল্লাহ্ শরীফে সাত (শাওতে) তাওয়াফ করলেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমে এসে পাঠ করলেনঃ ইবরাহীমের দাড়াবার জায়গাকে তোমরা নামাযের জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর” (সূরাঃ বাকারা- ১২৫)। তারপর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে তিনি দুরাক’আত নামায আদায় করলেন, তারপর হাজরে আসওয়াদের নিকটে এসে তা চুমা দিলেন, তারপর বললেনঃ যে দিক হতে আল্লাহ্ তা'আলা শুরু করেছেন সে দিক হতে (দৌড়ানো) আমরাও শুরু করব। সাফা পর্বত হতে তিনি সাঈ শুরু করলেন এবং পাঠ করলেনঃ “সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্ তা'আলার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত”(সূরাঃ বাকারা- ১৫৮)। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৩৭৪), মুসলিমে এরূপ বর্ণনা আছে –“আমি শুরু করব”।
সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটির মধ্যে সাঈ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুশরিকদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করেছেন (দৌড়িয়েছেন)। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম। কাসীর ইবনু জুমহান (রহঃ) তিনি বলেন, সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়ে চলার স্থানে ইবনু উমার (রাঃ)-কে আস্তে চলতে দেখে আমি বললাম, সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়ে চলার স্থানে আপনি আস্তে চলছেন যে? তিনি বলেন, আমি যদি দ্রুত চলি তবে দ্রুত চলতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও দেখেছি। আর যদি আস্তে চলি তবে আস্তে চলতেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, আর আমি তো এখন একজন বৃদ্ধ লোক। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৮৮)।
আরোহী অবস্থায় তাওয়াফ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের বাহনে সাওয়ার হয়ে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করেছেন। তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটে পৌঁছে এর প্রতি ইশারা করেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৪৮), বুখারী, মুসলিম।
তাওয়াফের ফাষীলাত
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক পঞ্চাশ বার বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফ করবে সে তার মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মত পাপ মুক্ত হয়ে যাবে। যঈফ, যঈফা (৫১০২)। আইয়ূব সাখতিয়ানী (রহঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু জুবাইরকে মুহাদ্দিসগণ তার পিতা সাঈদ ইবনু জুবাইর হতেও উত্তম গণ্য করতেন। তার এক ভাই ছিল, যার নাম আবদুল মালিক ইবনু সাঈদ ইবনু জুবাইর। তার নিকট হতেও মুহাদ্দিসগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। -সনদ সহীহ।
আসর ও ফজরের পরেও তাওয়াফের ক্ষেত্রে তাওয়াফের নামায আছে
জুবাইর ইবনু মুতইম (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবদ মানাফের বংশধরগণ! তোমরা কোন লোককে রাত ও দিনের যে কোন সময় ইচ্ছা বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে এবং নামায আদায় করতে বাধা দিও না। -সহীহ, সহীহ ইবনু মা-জাহ (১২৫৪)।
তাওয়াফের দুই রাক’আত নামাযের কিরা'আত
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাওয়াফের দুই রাকাআত নামায আদায়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইখলাসের দুইটি সূরা তিলাওয়াত করেনঃ সূরা কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৭৪), মুসলিম। জাফর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্র তিনি বলেন, তাওয়াফের দু’রাক’আত নামাযে তিনি (মুহাম্মাদ আল-বাকির) সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে পছন্দ করতেন। -সনদ সহীহ, মাকতু’।
উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ
যাইদ ইবনু উসাই (রহঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, কি বিষয় সহকারে আপনাকে (নবম হিজরীতে মক্কায়) পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, চারটি বিষয় (ঘোষণা করার জন্য)। মুসলিম ছাড়া আর কোন লোক জান্নাতে যাবে না; কোন লোক উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না; এইখানে (কা'বা শারীফে) মুসলিম ও মুশরিকগণ এই বছরের পর একত্র হতে পারবে না এবং যে সব লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুক্তি আছে সে সব লোকের চুক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, কিন্তু যে সব লোকের চুক্তিতে কোন মেয়াদের উল্লেখ নেই সে সব লোকের চুক্তির মেয়াদ (আজ হতে) চার মাস পর্যন্ত। -সহীহ, ইরওয়া (১১০১)। ইবনু আবূ উমার ইবনু আবূ উমার ও নাসর ইবনু আলী তারা উভয়ে সুফিয়ান হতে, তিনি আবূ ইসহাকের বরাতে পূর্বোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। তবে যাইদ ইবনু উসাইর স্থলে তারা উভয়ে ইয়ুসাই উল্লেখ করেছেন, এটাই বেশি সহীহ। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
কাবা শরীফের অভ্যন্তরে যাওয়া
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট হতে অচঞ্চল চোখে ও প্রফুল্ল মনে চলে গেলেন কিন্তু (কিছুক্ষণ পর) ফিরে আসলেন চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায়। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কাবার ভেতরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মন বলছিল আমি যদি এরূপ না করতাম (তবে সেটাই ভাল ছিল)। আমার ভয় হচ্ছে আমার পরে আমার উম্মাতদেরকে যন্ত্রণায় ফেললাম কি-না। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩০৬৪)
কা'বার অভ্যন্তরে নামায আদায় করা
বিলাল (রাঃ) কা'বার অভ্যন্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৬৩), বুখারী, মুসলিম।
(নির্মাণকল্পে) কা'বা ঘর ভাঙ্গা প্রসঙ্গে
আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) , ইবনু যুবাইর (রাঃ) তাকে বললেন, তোমাকে উন্মুল মু'মিনীন আইশা (রাঃ) যে হাদীস বলেছেন, তা আমার নিকটে বর্ণনা কর। আসওয়াদ বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন যে, তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ যদি তোমার সম্প্রদায় জাহিলী যুগের এত নিকটে এবং ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে নবদীক্ষিত না হত তাহলে আমি কা'বা ঘরকে ভেঙ্গে (পুনঃনির্মাণ করে) এর দুটো দরজা বানাতাম। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৮৭৫)।
হাতীমে নামায আদায় করা
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, কাবা ঘরের অভ্যন্তরে ঢুকে সেখানে আমি নামায আদায়ের ইচ্ছা করতাম। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে হিজর (হাতীম)-এ প্রবেশ করিয়ে আমাকে বললেনঃ যদি তুমি বাইতুল্লায় চাও তাহলে এই হিজরেই নামায আদায় করে নাও। কেননা, এ বাইতুল্লাহর অংশ। কিন্তু তোমার সম্প্রদায় কা'বা ঘর ছোট করে নির্মাণ করে এবং (অর্থাভাবে) এই স্থানটিকে কা’বার বাইরে রেখে দেয়। -হাসান সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৭৬৯), সহীহাহ (৪৩)।
হাজরে আসওয়াদ, রুকন ও মাকামে ইবরাহীমের ফযিলত
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাত হতে হাজরে আসওয়াদ অবতীর্ণ হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়। কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো করে দিয়েছে। -সহীহ, মিশকাত (২৫৭৭), তা’লীকুর রাগীব (২/১২৩), আল-হাজ্জুল কাবীর। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের ইয়াকূত (দীপ্তিশীল মূল্যবান মণি) হতে দুটো ইয়াকূত। আল্লাহ্ তা'আলা এই দুটির আলোকপ্রতা নিম্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির প্রভা যদি তিনি নিস্তেজ করে না দিতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত। -সহীহ, মিশকাত (২৫৭৯)।
মিনায় গমন এবং সেখানে অবস্থান
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায আদায় করলেন, তারপর ভোরে যাত্রা শুরু করেন আরাফাতের দিকে। -সহীহ, হাজ্জাতুন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (৫৫/৬৯), মুসলিম, জাবির হতে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় যুহর ও ফজরের নামায (অর্থাৎ যুহর হতে পরবর্তী ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের নামায) আদায় করলেন। তারপর ভোরেই আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করেন। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
যে ব্যক্তি মিনার যে জায়গাতে আগে পৌঁছবে সেটিই হবে তার অবস্থানস্থল
আইশা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা মিনায় আপনার জন্য কি একটা ঘর বানিয়ে দিব যা আপনাকে ছায়া দিবে? তিনি বললেনঃ না। যে ব্যক্তি মিনায় যে জায়গাতে আগে পৌঁছবে সেটিই হবে তার অবস্থানস্থল। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩০০৬), আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ্।
মিনায় নামায কসর করা
হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাঃ) তিনি বলেন, পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় থাকা অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সর্বাধিক সংখ্যক লোকসহ মিনায় (চার রাক'আত ফরযের স্থলে) দুই রাক’আত নামায আদায় করেছি। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৭১৪), বুখারী, মুসলিম।
আরাফাতে অবস্থান এবং সেখানে দু’আ করা
ইয়াযীদ ইবনু শাইবান (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু মিরবা আনসারী (রাঃ) আমাদের নিকটে আসলেন। আরাফাতের এমন এক জায়গায় আমরা অবস্থান করছিলাম যাকে আমর (রাঃ) (ইমামের স্থান হতে) বহু দূর বলে মনে করছিলেন। ইবনু মিরবা আনসারী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিনিধি হিসাবে আমি তোমাদের নিকটে এসেছি। তিনি বলেছেনঃ হজ্জের নির্ধারিত স্থানসমূহে তোমরা অবস্থান কর। কারণ, তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর ওয়ারিসী প্রাপ্ত হয়েছ। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০১১)। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, কুরাইশ এবং তাদের ধর্মের যারা অনুসারী ছিল তাদেরকে হুম্স বলা হত। তারা মুযদালিফায় অবস্থান করত এবং বলত, আমরা আল্লাহর ঘরের অধিবাসী। তারা ব্যতীত অন্য লোকেরা আরাফাতে অবস্থান করত। আল্লাহ্ তাআলা এই বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “অতঃপর যেখান হতে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সেখান হতে প্রত্যাবর্তন কর” (সূরাঃ বাকারা-১৯৯)। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০১৮),বুখারী, মুসলিম।
সম্পূর্ণ আরাফাতই অবস্থান স্থল
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতে অবস্থান গ্রহণ করলেন, তারপর বললেনঃ এটাই আরাফাতের ময়দান, এটাই অবস্থান স্থল। আর গোটা আরাফাতই অবস্থান স্থল। এরপর সূর্য ডুবে গেলে তিনি সেখান হতে ফিরে আসলেন এবং তার বাহনের পিছনে উসামা ইবনু যাইদকে বসালেন। স্বীয় অবস্থান হতে তিনি হাত দিয়ে ইশারা করছিলেন। লোকজন তাদের উটগুলো ডানে বামে হাকাচ্ছিল। তাদের দিকে তিনি তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা শান্তভাবে পথ চল। লোকদেরকে নিয়ে মুযদালিফায় পৌঁছে তিনি দুই ওয়াক্তের (মাগরিব ও এশা) নামায একসাথে আদায় করলেন। ভোরে 'কুযাহ' নামক জায়গাতে এসে তিনি অবস্থান করলেন এবং বললেনঃ এটা হলো কুযাহ; এটাও অবস্থান স্থল, আর সম্পূর্ণ মুযদালিফাই অবস্থানের জায়গা। এরপর তিনি ওয়াদী মুহাসসারে আসলেন। তাঁর উটটিকে তিনি বেত মারলেন, ফলে তা দ্রুত উপত্যকাটি অতিক্রম করল। তারপর তিনি থামলেন এবং তাঁর পিছনে ফাযলকে বসালেন এরপর তিনি জামরায় আসলেন এবং এখানে কংকর নিক্ষেপ করলেন। তিনি কুরবানীর জায়গায় পৌছে বললেনঃ এটা কুরবানী করার জায়গা। আর সম্পূর্ণ মিনাই কুরবানী করার জায়গা। এরকম সময় তাকে খাসআম গোত্রের এক যুবতী ফাতাওয়া জিজ্ঞাসা করল, আমার বাবা খুবই বয়স্ক ব্যক্তি। আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত হজ্জ তার উপর ফরয হয়েছে। তার পক্ষ হতে আমি হজ্জ আদায় করলে সেটা কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর। আলী (রাঃ) বলেন, তিনি এমন সময় ফাযলের ঘাড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চাচাতো ভাইয়ের ঘাড় কেন ঘুরিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ আমি লক্ষ্য করলাম এরা দুইজন যুবক-যুবতী। সুতরাং তাদেরকে আমি শাইতান হতে নিরাপদ মনে করিনি। এরপর এক লোক এসে তাকে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে মাথা মুণ্ডনের পূর্বেই তাওয়াফ (ইফাযা) করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ মাথা মুণ্ডন করে ফেলো, কোন সমস্যা নেই, অথবা বললেন, চুল ছেটে ফেলো, কোন সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আরেক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কংকর মেরে নাও, কোন সমস্যা নেই। আলী (রাঃ) বলেন, তারপর বাইতুল্লাহু পৌছে তিনি তাওয়াফ করলেন, তারপর যমযম কূপের নিকটে এসে বললেনঃ হে আবদুল মুত্তালিব বংশের লোকেরা! জনতা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠবে এই ভয় যদি না হত তবে আমি (তোমাদের সঙ্গে) অবশ্যই পানি টেনে তুলতাম। -হাসান, হিযাবুল মারআ, আল-হাজ্জুল কাবীর (২৮)।
আরাফাতের ময়দান হতে প্রত্যাবর্তন
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াদী মুহাসসারে তার উট দ্রুত হাঁকিয়ে যান। এই হাদীসে বিশর আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি শান্তভাবে মুযদালিফা হতে ফিরে আসেন এবং লোকদেরকেও শান্তভাব অবলম্বনের হুকুম দেন। আবূ নুআইম আরো বর্ণনা করেনঃ তিনি নুড়ি পাথর (জামরায়) ছুঁড়ে মারার হুকুম দেন এবং বলেনঃ এই বছরের পর হয়ত আমি আর তোমাদের দেখা পাব না। - সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬৯৯, ১৭১৯), মুসলিম।
মাগরিব ও এশা একসাথে মুযদালিফাতে আদায় করা
আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রহঃ) মুযদালিফাতে ইবনু উমার (রাঃ) নামায আদায় করলেন। সেখানে তিনি এক ইকামাতে দুই নামায (মাগরিব ও এশা) একসাথে আদায় করলেন এবং বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই স্থানে আমি এরকমই করতে দেখেছি। - সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬৮২, ১৬৯০), নাসা-ঈ, মুসলিমের শব্দ ইকামাতুন ওয়াহিদাতুন ঐ বর্ণনাটি শাজ, বুখারীর শব্দ প্রত্যেক নামাযের জন্যই ইকামাত, এ বর্ণনাটি সংরক্ষিত। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ হতে, তিনি আবূ ইসহাক হতে, তিনি সাঈদ ইবনু জুবাইর হতে, তিনি ইবনু উমার হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
মুযদালিফায় যে লোক ইমামকে পেল সে লোক হজ্জ পেয়ে গেল
আবদুর রাহমান ইবনু ইয়ামার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে নাজদবাসী কিছু লোক আসলো। তিনি তখন আরাফাতে অবস্থান করছিলেন। তারা হজ্জ সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করে। এই মর্মে এক ঘোষণাকারীকে তিনি ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেনঃ হজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান। মুযদালিফার রাতে ফজর উদয় হওয়ার পূর্বেই কোন লোক এখানে পৌঁছতে পারলে সে হজ্জ পেল। তিনটি দিন হচ্ছে মিনায় অবস্থানের। দুই দিন অবস্থান করে কোন লোক তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করলে তাতে কোন সমস্যা নেই। আর তিন দিন পর্যন্ত অবস্থানকে কোন লোক বিলম্বিত করলে তাতেও কোন সমস্যা নেই। মুহাম্মাদ আল-বুখারী বলেন, ইয়াহইয়ার বর্ণনায় আরো আছেঃ এক লোককে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিছনে আরোহণ করালেন। সে লোক তা ঘোষণা দিতে থাকল। — সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০১৫)। ইবনু আবী উমার সুফিয়ান পূর্বোক্ত হাদীসের মতই ইবনু আবী উমার সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা হতে, তিনি সুফিয়ান সাওরী হতে, তিনি বুকাইর ইবনু আতা হতে তিনি আবদুর রাহমান ইবনু ইয়ামুর (রাঃ) হতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। – সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস। উরওয়া ইবনু মুযাররিস ইবনু আওস ইবনু হারিসা ইবনু লাম আত-তাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মুযদালিফায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম, তখন তিনি নামাযের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাঈ-এর দুই পাহাড় (অঞ্চল) হতে এসেছি। আমার বাহনকেও আমি ক্লান্ত করে ফেলেছি এৰং নিজেকেও খুবই পরিশ্রান্ত করেছি। আল্লাহর শপথ! আমি এমন কোন বালির স্তুপ ছেড়ে যাইনি যেখানে আমি অবস্থান করিনি। আমার কি হজ্জ হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাদের এই নামাযে যে লোক শরীক হয়েছে, আমাদের সাথে ফিরে আসা পর্যন্ত অবস্থান করেছে এবং এর পূর্বে রাতে বা দিনে আরাফাতে থেকেছে তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে এবং সেলোক তার অপরিচ্ছন্নতা দূর করে নিয়েছে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০২৬), বুখারী, মুসলিম।
রাতেই দুর্বল লোকদের মুযদালিফা হতে (মিনায়) পাঠানো
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাল-সামানবাহী দলের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতেই আমাকে মুযদালিফা হতে (মিনায়) পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। - সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০২৬), নাসা-ঈ অনুরূপ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিবারের মধ্যে দুর্বলদের (মুযদালিফা হতে মিনায়) আগেই পাঠিয়ে দেন। আর তিনি বলে দেনঃ তোমরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত (জামরায়) কংকর নিক্ষেপ করবে না। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০২৫)।
কুরবানীর দিন সকাল বেলা কংকর মারা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন (১০ই যিলহজ্জ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল বেলা কংকর মেরেছেন এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে সূৰ্য ঢলে যাওয়ার পর কংকর মেরেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৫৩), মুসলিম।
সূর্য উঠার আগেই মুযদালিফা হতে (মিনার উদ্দেশ্যে) রাওয়ানা হওয়া
ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূর্য উঠার আগেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মুযদালিফা হতে) যাত্রা করেন। পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় এ হাদীসটি সহীহ। আমর ইবনু মাইমুন (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা মুযদালিফায় অবস্থানরত ছিলাম। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তখন বললেনঃ সূর্য না উঠা পর্যন্ত মুশরিকরা এখান হতে রাওয়ানা হত না। তারা বলতঃ হে সাবির। আলোকিত হও। কিন্তু তাদের বিপরীত নীতি অনুসরণ করেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। অতঃপর সূর্য উঠার পূর্বেই উমার (রাঃ)-ও রাওয়ানা হন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০২২), বুখারী
ছোট নুড়ি পাথর নিক্ষেপ (রমী) করতে হবে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি ছোট কংকর দিয়ে জামরায় নিক্ষেপ করতে দেখেছি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০২৩), মুসলিম।
সূৰ্য ঢলে পড়ার পর রমী (কংকর নিক্ষেপ) করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য ঢলে পড়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কংকর নিক্ষেপ করতেন। -জাবির (রাঃ) বর্ণিত ৯০১ নং হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ।
আরোহী বা হাঁটা অবস্থায় রমী করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরোহী অবস্থায় জামরায় কংকর মেরেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৩৪), মুসলিম, জাবির হতে দেখুন হাদীস নং (৮৮৭)। ইবনু উমার (রাঃ) কংকর মারার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরে আসতেন। -সহীহ, সহীহা (২০৭২), সহীহ আবূ দাউদ (১৭১৮)।
জামরায় কিভাবে কংকর মারতে হবে
আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, জামরা আকাবায় যখন আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) আসলেন তখন উপত্যকার মাঝে দাঁড়ালেন, কিবলামুখী হলেন এবং বরাবর ডান ভ্রু উচু করে কংকর মারতে শুরু করলেন। তিনি সাতটি কংকর মারলেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় আল্লাহু আকবার বললেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই, যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনি এখান হতেই কংকর মেরেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৩০), বুখারী, মুসলিম। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার যিকির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জামরায় কংকর ছুড়া এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার নিয়ম রাখা হয়েছে। যঈফ, মিশকাত (২৬২৪), যঈফ আবূ দাঊদ (৩২৮)
জামরায় কংকর মারার সময় লোকদের হাঁকিয়ে সরিয়ে দেয়া নিষেধ
কুদামা ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উষ্ট্রীতে সাওয়ার হয়ে জামরায় কংকর মারতে দেখেছি। সেখানে কোন রকম মারপিট, কোন ধাক্কাধাক্কি এবং সরে যাও সরে যাও ইত্যাদি কিছু ছিল না। -সহীহ ইবনু মা-জাহ (৩০৩৫)।
উট ও গরু কুরবানীতে শরীক হওয়া প্রসঙ্গে
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হুদাইবিয়ার (সন্ধির) বছর একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উটও সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী করেছি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩১৩২), মুসলিম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ আসলে আমরা একটি গরুতে সাতজন এবং একটি উটে দশজন করে শরীক হই। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩১৩১)।
(হারাম শারীফ এলাকায় কুরবানীর জন্য পাঠানো) উটে চিহ্ন লাগানো
ইবনু আব্বাস (রাঃ) যুল-হুলাইফা নামক জায়গায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর পশুর গলায় একজোড়া জুতা ঝুলিয়ে দিলেন এবং এর কুঁজের ডান দিকে চিরে রক্ত প্রবাহিত করলেন। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৯৭), মুসলিম।
(কুরবাণীর পশু ক্রয় প্রসঙ্গে)
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদাইদ নামক জায়গা হতে তাঁর কুরবাণীর পশু কেনেন। সনদ দুর্বল, ইব্ন মাজাহ (৩১০২)। বুখারী বর্ণনা করেছেন মাওকূফভাবে
কুরবানীর পশুর গলাতে মুকীমের জন্য মালা পরানো
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদয়ির (কুরবানীর পশুর) গলায় মালা পরানোর রশি পাকিয়ে দিয়েছি। এরপরও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামও বাধেননি এবং সাধারণ জামাকাপড়ও পরিবর্তন করেননি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৯৮), বুখারী, মুসলিম৷
কুরবানীর মেষ-বকরীর গলায় মালা পরানো
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর গলায় মালা পরানোর রশি পাকিয়ে দিতাম। এগুলোর সবই ছিল মেষ ও বকরী। এরপরও তিনি ইহরাম বাঁধেননি। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৫৪০), বুখারী, মুসলিম।
কুরবানীর পশু পথ চলতে না পারলে যা করতে হবে
নাজিয়া আল-খুযাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কুরবানীর পশু পথ চলতে না পারলে এবং এর মৃত্যুর আশংকা দেখা দিলে আমি কি করব? তিনি বললেনঃ এটিকে যবাহ কর, এর (গলায় বাঁধা) জুতা তার রক্তে ডুবিয়ে দাও, এরপর মানুষের জন্য তা রেখে দাও যেন তারা তা খেতে পারে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩১০৬)।
কুরবানীর উটে আরোহণ করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তার কুরবানীর উট হাকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা তো কুরবানীর উট। তিনি তৃতীয় বা চতুর্থ বারে তাকে বললেনঃ আরে দুর্ভাগা! এতে আরোহণ কর। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
মাথার কোন পাশ দিয়ে চুল মুড়ানো শুরু করবে
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, জামরায় কংকর মারার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশু কুরবানী করলেন, এরপর তার মাথার ডান দিক নাপিতের দিকে বাড়িয়ে দিলেন এবং সে তা মুণ্ডন করল। আবূ তালহা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ চুলগুলো দিলেন। এরপর তিনি বাম দিক বাড়িয়ে দিলে সে তা মুণ্ডন করল। তিনি (আবূ তালহাকে) বলেনঃ লোকজনের মাঝে এগুলো বণ্টন করে দাও। -সহীহ, ইরওয়া, সহীহ আবূ দাউদ (১০৮৫, ১৭৩০), মুসলিম।
চুল কেটে ফেলা অথবা ছেটে ফেলা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীদের একদল মাথা মুণ্ডন করলেন এবং কতিপয় সাহাবী চুল খাট করলেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মাথা মুণ্ডনকারীদের উপর আল্লাহ্ তা'আলা অনুগ্রহ করুন। একবার কি দুইবার তিনি এ কথাটি বললেন, তারপর বললেনঃ চুল ছোট করে কর্তনকারীদের উপরও। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৪৪), বুখারী, মুসলিম।
মহিলাদের মাথা মুন্ডন করা মাকরূহ
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে তাদের মাথা কামিয়ে ফেলতে মানা করেছেন। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৬৫৩)। যঈফ (৬৭৮) মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আবূ দাঊদ হতে তিনি হাম্মাম হতে তিনি খিলাস মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আবূ দাঊদ হতে তিনি হাম্মাম হতে তিনি খিলাস হতে এই সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মতই বর্ণিত আছে। কিন্তু এই সূত্রে আলী (রাঃ)- এর নাম উল্লেখ নেই। আবূ ঈসা বলেন, আলী (রাঃ) বর্ণিত এই হাদীসটিতে অস্থিরতা আছে। এই হাদীসটি হাম্মাদ হতে কাতাদার সূত্রে আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে বিদ্বানগণের মতে মহিলাদের মাথা কামাতে হবে না তাদের মাথার চুল ছাটতে হবে।
কুরবানীর পূর্বে মাথা মুণ্ডন বা কংকর মারার পূর্বে কুরবানী করে ফেললে
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক লোক প্রশ্ন করল, যবাহ (কুরবানী) করার পূর্বে আমি মাথা মুণ্ডন করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবাহ কর, এতে কোন সমস্যা নেই। অন্য আরেকজন প্রশ্ন করল, আমি কংকর মারার আগে কুরবানী করেছি। তিনি বললেনঃ কংকর মেরে নাও, এতে কোন সমস্যা নেই। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৫১),বুখারী, মুসলিম৷
তাওয়াফে যিয়ারাতের পূর্বে ইহরামমুক্ত হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং কুরবানীর দিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি কস্তুরী মিশ্রিত সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯২৬), বুখারী, মুসলিম।
কখন হতে হজ্জে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করা হবে
ফাযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুযদালিফা হতে মিনা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তার বাহনের পিছনে বসিয়ে এনেছেন। জামরা আকাবায় কংকর মারা পর্যন্ত তিনি অনবরত তালবিয়া পাঠ করেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৪০), বুখারী, মুসলিম।
উমরার ক্ষেত্রে তালবিয়া পাঠ কখন বন্ধ করতে হবে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরার বেলায় হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা মাত্র তালবিয়া পাঠ বন্ধ করতেন। যঈফ, ইরওয়া (১০৯৯), যঈফ আবূ দাঊদ (৩১৬)
রাতের বেলা তাওয়াফে যিয়ারাত করা
ইবনু আব্বাস ও আইশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওয়াফে যিয়ারাতরাত পর্যন্ত বিলম্ব করেছেন। শাজ, ইবনু মাজাহ (৩০৫৯)।
আবতাহ নামক জায়গায় অবতরণ করা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আবতাহ নামক জায়গায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) অবতরণ করতেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৬৯), মুসলিম, বুখারী সংক্ষেপে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাসসাব নামক জায়গায় অবতরণ কোন (জরুরী) বিষয় নয়। এতো একটি স্থান, যে জায়গায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবতরণ করেছিলেন। -সহীহ, বুখারী, মুসলিম।
যে ব্যক্তি আবতাহ নামক জায়গায় অবতরণ করেছেন
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এজন্য আবতাহে অবতরণ করেন যে, সেখান হতে (মাদীনার উদ্দেশ্যে) বেরিয়ে যাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৭৫২), বুখারী, মুসলিম।
শিশুদের হজ্জ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে তার এক শিশু সন্তানকে উচিয়ে ধরে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর জন্য কি হজ্জ আছে? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আর এর প্রতিদান তোমার। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯১০), মুসলিম। সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমার পিতা আমাকে নিয়ে হজ্জ আদায় করেছেন। তখন আমি সাত বছরের বালক ছিলাম। -সহীহ, আলহাজ্জুল কাবীর, বুখারী। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির কুতাইবা কাযায়া ইবনু সুয়াইদ আল-বাহিলী হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির হতে, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস
(শিশুদের হাজ্জ)
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে যখন হাজ্জ করতাম তখন মেয়েদের পক্ষ হতে তালবিয়া পাঠ করতাম এবং বালকদের পক্ষ হতে রমী (কঙ্কর নিক্ষেপ) করতাম। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩০৩৮)।
অতি বৃদ্ধ ও মৃত ব্যক্তির পক্ষে হজ্জ আদায় করা
ফাযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) খাসআম গোত্রের এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতার উপর আল্লাহ নির্ধারিত হজ্জ ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি খুবই বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন। উটের পিঠে বসার সামর্থ্যও তার নেই। তিনি বললেনঃ তার পক্ষে তুমি হজ্জ আদায় কর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯০৯), বুখারী, মুসলিম।
(মৃত ব্যক্তির পক্ষে হজ্জ আদায় করা)
বুরাইদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক মহিলা এসে বলল, আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তিনি হজ্জ আদায় করেননি। তার পক্ষে কি আমি হজ্জ আদায় করব? তিনি বললেনঃ হ্যা, তার পক্ষে তুমি হজ্জ আদায় কর। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (২৫৬১), মুসলিম।
(অন্যের পক্ষ হতে উমরা আদায় করা)
আবূ রাযীন আল-উকাইলী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা খুবই বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ, উমরা, এমনকি সফর করতেও সক্ষম নন। তিনি বললেনঃ তোমার পিতার পক্ষে তুমি হজ্জ ও উমরা আদায় কর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯০৬)।
উমরা ওয়াজিব কি না ?
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করা হলো উমরা করা কি ওয়াজিব? তিনি বললেনঃ না, তবে তোমরা উমরা করলে তা অতিশয় ভাল। সনদ দুর্বল।
(উমরা আদায় ওয়াজিব কি না)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত পর্যন্ত হজ্জের মধ্যে উমরাও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৫৭১), মুসলিম।
উমরার ফযিলত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক উমরা অপর উমরা পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ। ক্ববূল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নেই। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৮৮৮), বুখারী, মুসলিম।
তানঈম হতে উমরাহ করা
আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন আইশা (রাঃ)-কে তানঈম হতে (ইহরাম করে) উমরা করান। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৯৯), বুখারী, মুসলিম।
জি'রানা হতে উমরা করা
মুহাররিশ আল-কাবী (রাঃ) উমরার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে (ইহরাম বেঁধে) জিরানা হতে বের হন এবং রাতেই মক্কায় যান। উমরা পালন করে তিনি ঐ রাতেই ফিরে আসেন। জিরানাতেই তার ভোর হয়। মনে হল তিনি যেন এখানেই রাতযাপন করেছেন। পরের দিন তিনি সূর্য ঢলে পড়ার পর বাতনে সারিফের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হন এবং মুযদালিফার পথে সেখানে পৌছে যান। এই কারণে তাঁর এই উমরার খবর মানুষের নিকট অজ্ঞাত থেকে যায়। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৭৪২)।
রজব মাসের উমরাহ
উরওয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, কোন মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরা করেছেন? তিনি বললেন, রজব মাসে। উরওয়া বলেন, তখন আইশা (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন উমরা করেননি যাতে তিনি অর্থাৎ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো কখনও রজব মাসে উমরা করেননি। -সহীহ, ইবনু মাজাহ (২৯৯৭, ২৯৯৮), বুখারী, মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বমোট চারবার উমরা করেছেন, এর মধ্যে একটি করেছেন রজব মাসে। -সহীহ, (হাদীসটি পূর্বের হাদীসের সংক্ষিপ্তরূপ, তাতে আইশা (রাঃ) রজব মাসের উমরাহকে অস্বীকার করেছেন।)
যুলকাদা মাসের উমরাহ
বারাআ (রাঃ) যুলকাদা মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমরাহ করেছেন। -সহীহ, বুখারী।
রমযান মাসের উমরা
উম্মু মাকিল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমযান মাসের উমরা হজ্জের সমতুল্য। -সহীহ, ইবনু মাজাহ (২৯৯৩)।
হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর কোন ব্যক্তির শরীরের কোন অঙ্গ ভেঙ্গে গেলে বা সে খোঁড়া হয়ে গেলে
হাজ্জাজ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো দেহের কোন অঙ্গ ভেঙ্গে গেলে বা সে খোঁড়া হয়ে গেলে হালাল (ইহরামমুক্ত) হয়ে যাবে এবং তাকে আরেকবার হজ্জ আদায় করতে হবে। ইকরামা বলেন, আমি এই হাদীস প্রসঙ্গে আবূ হুরাইরা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে তারা উভয়ে বলেন, হাজ্জাজ সত্য বলেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৭৭)।
হজ্জের মধ্যে শর্ত আরোপ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) যুবাআ বিনতুয যুবাইর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হজ্জ আদায় করতে চাচ্ছি। আমি কি কোন শর্ত আরোপ করতে পারি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যুবাআ বললেন, আমি কিভাবে বলব। তিনি বললেনঃ তুমি বলবে, আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ। আমি উপস্থিত। হে আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে বাধাগ্রস্ত করে দিবে সেখানেই আমি ইহরামমুক্ত হব। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৩৮), মুসলিম।
(যারা হজ্জের মধ্যে শর্তারোপ করা বৈধ মনে করেন না)
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি হজ্জে কোন রকম শর্তারোপ করা প্রত্যাখ্যান করতেন এবং বলতেন, তোমাদের জন্য কি তোমাদের নাবীর সুন্নাতই যথেষ্ট নয়? -সহীহ (১৮১০), বুখারী।
কোন মহিলার তাওয়াফে যিয়ারাত শেষে মাসিক ঋতু হলে
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি বললামঃ মিনায় অবস্থানের দিনগুলিতে সাফিয়্যা বিনতু হুওয়াই (রাঃ) হায়েযগ্রস্তা হয়ে পড়েছেন। তিনি বললেনঃ সে আমাদের প্রতিবন্ধক হবে নাকি? লোকেরা বলল, তিনি তাওয়াফে যিয়ারাত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে কোন সমস্যা নেই। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৭২,৩০৭৩), বুখারী, মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যে লোক বাইতুল্লাহর হজ্জ করে তার শেষ কাজ যেন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ হয়। তবে ঋতুবতী মহিলা এর ব্যতিক্রম। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জন্য (চলে আসার) অনুমতি দিয়েছেন। -সহীহ, বুখারী (১৭৬১), অনুমতির বাক্য সহ ইরওয়া (৪/২৮৯)।
হজ্জের কোন কোন অনুষ্ঠান ঋতুবতী মহিলা পালন করবে?
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়েযগ্রস্তা হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হজ্জের বাকী সব অনুষ্ঠান পালন করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৬৩), বুখারী, মুসলিম। ------------ ৯৪৫/২. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই হাদীস মারফূরূপে বর্ণনা করেছেন। হায়েযগ্রস্তা ও নিফাসগ্রস্তা মহিলারা গোসল করে ইহরাম বাধবে এবং হজ্জের সকল অনুষ্ঠান পালন করবে, কিন্তু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বাইতুল্লাহ্ তাওয়াফ করবে না। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৫৩১, ১৮১৮)।
হজ্জ বা উমরা পালনকারীর শেষ আমল যেন বাইতুল্লায় সম্পর্কযুক্ত হয়
হারিস ইবনু আব্দুল্লাহ্ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি এই ঘরের হাজ্জ বা উমরা করবে তার শেষ কাজ যেন বাইতুল্লায় সম্পর্কযুক্ত হয়। এই বর্ণনাটি মুনকার, তবে “উমরা করবে” এই শব্দ ব্যতীত হাদীসের অর্থ সহীহ, সহীহ আবূ দাঊদ (১৭৪৯), যঈফা (৪৫৮৫)
হজ্জ ও উমরার জন্য কিরান হজ্জকারী এক তাওয়াফই করবে
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একসাথে হজ্জ ও উমরা আদায় করেছেন (কিরান হজ্জ করেছেন) এবং হজ্জ ও উমরার জন্য একটি মাত্র তাওয়াফই করেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৯৭১, ২৯৭৪)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হজ্জ ও উমরার ইহরাম যে লোক একত্রে বাঁধবে এই দুইটির ক্ষেত্রে সে লোকের জন্য এক তাওয়াফ ও এক সাঈ যথেষ্ট হবে এবং সে একই সাথে উভয়টি হতে ইহরামমুক্ত হয়ে যাবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৯৭৫)।
মুহাজিরগণ মিনা হতে ফেরার পর মক্কাতে তিন দিন থাকবে
মারফূভাবে আলী ইবনুল হাযরামী (রাঃ) মারফূভাবে আলী ইবনুল হাযরামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, মুহাজিরগণ হজ্জের সকল অনুষ্ঠান পালনের পর মক্কাতে তিন দিন থাকতে পারেন। -সহীহ ইবনু মা-জাহ (১০৭৩), বুখারী, মুসলিম।
হজ্জ ও উমরা শেষে ফেরার সময় যা বলবে
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদ, হজ্জ বা উমরা আদায়ের পর ফেরার সময় যখনই কোন টিলা বা উঁচু জায়গায় উঠতেন তখন তিনবার “আল্লাহু আকবার" বলতেন, তারপর পাঠ করতেনঃ "আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সকল বিষয়ের উপর শক্তিশালী। তাঁর নিকটেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, তাঁরই ইবাদতকারী, তাঁর পথে ভ্ৰমণকারী, আমরা আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ্ তার প্রতিশ্রুতি সত্যে পরিণত করেছেন, তার বান্দাহকে সাহায্য করেছেন এবং সম্মিলিত বাহিনীকে একাই পরাস্ত করেছেন। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (২৪৭৫), বুখারী, মুসলিম।
ইহরামরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি দেখতে পেলেন এক লোক তার উটের পিঠ হতে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে মারা গেছে। সে লোক ইহরাম পরিহিত অবস্থায় ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে তাকে গোসল করাও এবং তাকে তার (ইহরামের) দুই কাপড়েই কাফন পরাও, কিন্তু তার মাথা ঢেকে দিও না। কিয়ামাতের দিন অবশ্যই তাকে ইহরাম অথবা তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৮৪), বুখারী, মুসলিম।
ইহরামধারী ব্যক্তির চক্ষু উঠলে তাতে ঘৃতকুমারীর রস দেওয়া
নুবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) উমার ইবনু উবাইদুল্লাহ ইবনু মামার-এর চক্ষুরোগ হয়। তিনি ইহরামধারী ছিলেন। তিনি আবান ইবনু উসমানকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চোখে ঘৃতকুমারীর রস দাও। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ চোখে ঘৃতকুমারীর রস দাও। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬১২), মুসলিম।
ইহরামে থাকাবস্থায় মাথা মুণ্ডন করলে কী করতে হবে?
কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) হুদাইবিয়াতে তিনি ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে এবং মক্কায় আসার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় তিনি হাড়ির নীচে (চুলায়) আগুন জ্বালাচ্ছিলেন, আর তার চেহারায় উকুন গড়িয়ে পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমাকে কি তোমার এই পোকাগুলো কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে মাথা মুণ্ডন কর এবং এক ফারাক" খাদ্যদ্রব্য ছয়জন মিসকীনকে দান কর (তিন সা"-তে এক ফারাক) অথবা তিনদিন রোযা রাখ অথবা একটি পশু কুরবানী কর। ইবনু আবী নাজীহ-এর বর্ণনায় আছেঃ অথবা একটি বকরী যবাহ কর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৭৯, ৩০৮০), নাসা-ঈ।
রাখালদের জন্য একদিন কংকর মেরে অপরদিনে তা বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে
আবূল বাদাহ ইবনু আদী (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাখালদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন (জামরাতুল আকাবায়) কংকর মারতে এবং আরেকদিন তা বাদ দিতে অনুমতি দিয়েছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৩৬)। আসিম ইবনু আদী (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের রাখালদের (মিনায়) রাত্রি যাপন না করার এবং কুরবানীর দিন কংকর মেরে পরবর্তী দুইদিনের কংকর কোন একদিন একত্রে মারার অনুমতি দিয়েছেন। মালিক বলেন, আমার মনে হয় আবদুল্লাহ ইবনু আবী বাকর তার বর্ণনায় বলেছেন, দুই দিনের কংকর প্রথম দিন একত্রে এবং মিনা হতে যাত্রার শেষদিন কংকর মারবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩০৩৭)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আলী (রাঃ) ইয়ামান হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এলে তিনি তাকে বললেনঃ তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? আলী (রাঃ) বললেন, যে নিয়্যাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বেঁধেছেন আমিও সেই ইহরাম বেঁধেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার সাথে হাদী (কুরবানীর পশু) না থাকলে আমি (উমরা করে) হালাল (ইহরামমুক্ত) হয়ে যেতাম। -সহীহ, ইরওয়া, আল-হাজ্জুল কাবীর (১০০৬), বুখারী, মুসলিম।
হজ্জের বড় (মহিমান্বিত) দিন প্রসঙ্গে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হজ্জের বড় (মহান) দিন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে কুরবানীর দিন। -সহীহ, ইরওয়া, সহীহ আবূ দাউদ (১৭০০, ১৭০১)। আলী (রাঃ) ৯৫৮. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজ্জের বড় দিন হলো কুরবানীর দিন। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
দুই রুকন (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) স্পর্শ করা
উমাইর (রহঃ) ভীড় ঠেলে হলেও ইবনু উমার (রাঃ) হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর নিকটে যেতেন (তা ম্পর্শ করার জন্য)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্য কোন সাহাবীকে আমি এরূপ করতে দেখিনাই। আমি বললাম, হে আবূ আবদুর রাহমান! আপনি ভীড় ঠেলে হলেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌছেন, কিন্তু আমি তো ভীড় ঠেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্যকোন সাহাবীকে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বললেন, আমি এরূপ কেন করব না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ এই দুইটি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়। -সহীহ, তালিকুল রাগীব (২/১২০)। আমি তাকে আরো বলতে শুনেছিঃ সঠিকভাবে যদি কোন লোক বাইতুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে তাহলে তার একটি ক্রীতদাস আযাদ করার সমান সাওয়াব হয়। -সহীহ ইবনু মা-জাহ (২৯৫৬) তাকে আমি আরো বলতে শুনেছিঃ যখনই কোন ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে এক পা রাখে এবং অপর পা তোলে আল্লাহ তখন তার একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন এবং একটি করে-সাওয়াব লিখে দেন। -সহীহ, তা’লীকুর রাগীব (২/১২০), মিশকাত (২৫৮০)।
তাওয়াফকালে কথাবার্তা বলা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাইতুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামায আদায়ের অনুরূপ। তবে তোমরা এতে (তাওয়াফকালে) কথা বলতে পার। সুতরাং তাওয়াফকালে যে ব্যক্তি কথা বলে সে যেন ভাল কথা বলে। -সহীহ, ইরওয়া (১২১), মিশকাত (২৫৭৬), তা’লীকুর রাগীব (২/১২১), তা’লীক আলা ইবনু খুযাইমাহ (২৭৩৯)।
হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ। এই পাথরকে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাতের দিন এমন অবস্থায় উঠাবেন যে, এর দুটি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। যেলোক সত্য হৃদয়ে একে স্পর্শ করবে তার সম্বন্ধে এই পাথর আল্লাহ্ তা'আলার নিকটে সাক্ষ্য দিবে। -সহীহ, মিশকাত (২৫৭৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১২২), তা’লীক আলা ইবনু খুযাইমা (২৭৩৫)।
(ইহ্রাম অবস্থায় তৈল ব্যবহার করা)
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহ্রাম অবস্থায় সুগন্ধিহীন তেল ব্যবহার করতেন। সনদ দুর্বল।
(যমযমের পানি বহন করা প্রসঙ্গে)
আইশা (রাঃ) তিনি যমযমের পানি সাথে করে নিয়ে আসতেন, আর বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা বহন করে আনতেন। -সহীহ, সহীহাহ (৮৮৩)।
(৮ই জিলহজ্জ মিনায় জুহরের নামায পড়া প্রসঙ্গে)
আবদুল আযীয ইবনু রুফাই (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বললাম, ইয়াওমুত-তারবিয়ায় (৮ই যুলহিজ্জায়) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় যুহরের নামায আদায় করেছেন? আপনি এই প্রসঙ্গে যা জানেন তা আমাকে বলুন। তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম, তিনি ইয়াওমুন নাফরে (১৩ই যুলহিজ্জায়) আসরের নামায কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বলেন, আবতাহ (বাতহা) নামক জায়গায়। এরপর তিনি বললেন, তোমার আমীরগণ যা করবে তুমিও সেইভাবে কর (যেখানে তারা নামায আদায় করে সেখানে তুমিও আদায় কর)। -সহীহ, সহীহ আবূ দাউদ (১৬৭০) বুখারী, মুসলিম।