8. জানাযা
রোগভোগের সাওয়াব
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মু'মিন ব্যক্তির দেহে কাঁটা বিদ্ধ হয় অথবা সে যদি এর চেয়ে বেশি কিছুতে আক্রান্ত হয় তবে এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে তার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন। -সহীহ্, রাওযুন নাযীর (৮১৯), মুসলিম, বুখারী, সংক্ষিপ্ত। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু'মিন ব্যক্তির প্রতি যে কোন ধরণের দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও রোগ, এমনকি তুচ্ছ যেকোন চিন্তাই আসুক না কেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তা'আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। -হাসান সহীহ, সহীহাহ (২৫০৩), মুসলিম, বুখারী সংক্ষিপ্ত।বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আনহু সায়্যিয়াতিহির পরিবর্তে মিন সায়্যিয়াতিহী উল্লেখ আছে। আর উহাই সংরক্ষিত।
রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া
সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান তার কোন (রুগ্ন) মুসলিম ভাইকে দেখতে গেলে সে (যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ) যেন জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। -সহীহ, মুসলিম (৮/১৩)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সাওবান (রাঃ) (উপরের হাদীসের) এরকমই বর্ণিত আছে। তবে এই বর্ণনাতে আরো আছেঃ প্রশ্ন করা হল, ‘খুরফাতুল জান্নাত কি? তিনি বলেনঃ এটা হচ্ছে জান্নাতের কুড়ানো ফল। - সহিহ, মুসলিম। সুওয়াইর (রহঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি বলেন, আমার হাত ধরে আলী (রাঃ) বললেন, আমার সাথে চল, অসুস্থ হুসাইনকে দেখে আসি। আমরা তার নিকটে গিয়ে মূসা (রাঃ)-কে হাযির পেলাম। আলী (রাঃ) বললেন, হে আবূ মূসা! আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন না এমনি বেড়াতে এসেছেন? তিনি বললেন, না, রোগী দেখতে এসেছি। আলী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান যদি অন্যকোন মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দু'আ করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দু'আ করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরী হয়। -সহীহ, তবে হাদীসে বর্ণিত যায়িরাণ শব্দের পরিবর্তে শামিতান শব্দ আছে।-সহীহাহ (১৩৬৭), আর-রা ওয (১১৫৫)।
মৃত্যু কামনা করা নিষেধ
হারিসা ইবনু মুযাররিব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা খাববাব (রাঃ)-এর নিকট আমি হাযির হলাম। তখন তার পেটে (গরম কিছু দিয়ে) তিনি সেঁক দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, আমি যত বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, জানি না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আর কোন সাহাবী এত বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন কি-না। একটি দিরহামও আমার নিকটে ছিল না (নিঃস্ব ছিলাম) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে। আর এখন চল্লিশহাজার দিরহাম আমার ঘরের কোণে পড়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ না করতেন তবে অবশ্যই আমি মৃত্যু কামনা করতাম। -সহীহ, আহ্কামুল জানায়িয (৫৯), নাসাঈতে শুধুমাত্র মৃত্যু কামনা নিষেধ বর্ণিত আছে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন লোক যেন কোন দুঃখ-কষ্টে জড়িয়ে পড়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। বরং সে যেন বলে, হে আল্লাহ! যে পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয় আমাকে সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখ এবং আমার জন্য যখন মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন আমাকে মৃত্যু দাও। -সহীহ, ইবনু মাজাহ (৪২৬৫), বুখারী, মুসলিম।
ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে রোগীর জন্য (আল্লাহ তা'আলার) আশ্রয় প্রার্থনা করা
আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন জিবরীল (আঃ) পাঠ করলেনঃ “আমি আপনাকে আল্লাহ তা'আলার নামে ঝাড়ছি এমন সকল কিছু হতে যা আপনাকে কষ্ট দেয় এবং সকল প্রকার অনিষ্টকর প্রাণী ও সকল হিংসুটে দৃষ্টি হতে। আল্লাহ তা'আলার নামে আমি আপনাকে ঝাড়ছি, আপনাকে আল্লাহ তা'আলা সুস্থতা দান করুন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৫২৩), মুসলিম। আবদুল আযীয ইবনু সুহাইব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও সাবিত আল-বুনানী আনাস (রাঃ)-এর নিকটে গেলাম। সাবিত বললেন, হে আবূ হামযা! আমি অসুস্থ অনুভব করছি। আনাস (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঝাড়ফুঁকের দু'আ পাঠ করে ঝাড়ব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আনাস (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহ, মানবজাতির প্রভু! কষ্ট-ক্লেশ বিতাড়নকারী, রোগ হতে আপনি মুক্তি দিন, নিরাময়কারী তো আপনিই, আর কোন সুস্থতা দানকারী নেই আপনি ব্যতীত। এমন সুস্থতা আপনি দান করুন আর কোন রোগ যেন থাকতে না পারে"। -সহীহ, বুখারী।
ওয়াসিয়াতের জন্য উৎসাহ দেওয়া
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি ওয়াসিয়াত করার মত সম্পদ কোন মুসলমান ব্যক্তির নিকট থাকে তবে নিজের নিকট ওয়াসিয়াতনামা লিখে না রেখে সেলোক যেন দুই রাতও অতিবাহিত না করে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৬৯৯), বুখারী, মুসলিম।
এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ সম্পদের ওয়াসিয়াত করা
সা'দ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি বললেনঃ তুমি কি ওয়াসিয়াত করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কতটুকু? আমি বললাম, আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় আমার সবটুকু সম্পদ দিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ তোমার সন্তানদের জন্য কি রাখলে? তিনি বললেন, তারা বেশ ধনী। তিনি বললেনঃ দশ ভাগের এক অংশ ওয়াসিয়াত কর। সা'দ (রাঃ) বলেন, আমি বরাবর “তা খুবই কম” বলতে লাগলাম। তিনি শেষে বললেনঃ ওয়াসিয়াত কর তিন ভাগের এক অংশ। আর তিন ভাগের এক অংশও বেশি হয়ে যাচ্ছে। সহীহ, ইরওয়া (৮৯৯), সহীহ আবূ দাউদ (২৫৫০), বুখারী, মুসলিম দশভাগের একভাগ ওয়াসিয়াত কর এই অংশ বাদে। এ অংশটুকু যঈফ।
অন্তিম সময়ের লোককে তালকীন দেয়া এবং তার জন্য দু’আ করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মাঝে অন্তিম সময়ের ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পাঠ করে শুনাও। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৪৪, ১৪৪৫), মুসলিম। উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন অসুস্থ বা মৃত লোকের নিকটে তোমরা হাযির হলে তার সম্বন্ধে ভাল কথা বলবে। কেননা, তোমরা যেসব কথা বল সে প্রসঙ্গে ফেরেশতাগণ আমীন বলে থাকেন। উন্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আবূ সালামা (রাঃ) মারা যাবার পর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সালামা মারা গিয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার পরে আমাকে তার চেয়ে আরও উত্তম পরিণতি দান করুন। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ্ তা'আলা তার পরবর্তীতে আমাকে তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি দান করেছেন। তিনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৪৭), মুসলিম।
মৃত্যু যন্ত্রণা প্রসঙ্গে
আইশা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মুমূর্য অবস্থায় দেখেছি একটি পানি ভর্তি বাটি তার সামনে রাখা ছিল। তিনি সেই বাটিতে তার হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন এবং পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মলছিলেন আর বলছিলেনঃ "হে আল্লাহু! মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।" যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৬২৩)। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখার পর হতে আমার আর কোন ঈর্ষা হয় না অন্য কোন ব্যক্তির সহজ মৃত্যু হলে। -সহীহ, মুখতাসার শামায়িল মুহাম্মাদীয়া (৩২৫), বুখারী। আলকামা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই মুমিনের আত্মা (মৃত্যুর সময়) ঘামের সাথে বের হয়, আমি গাধার মত মৃত্যুকে পছন্দ করি না, তাকে প্রশ্ন করা হল, গাধার মত মৃত্যু কি? তিনি বললেন, হঠাৎ মৃত্যু। অত্যন্ত দুর্বল। আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ (১৪৮৮)
(যার আমলনামায় প্রথমে ও শেষে ভাল কাজ পাওয়া যাবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বান্দার আমল নাম লিপিবদ্ধকারী দু'জন ফেরেশতা দিবারাত্রির যখনই আমল নামা নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছে, আর আল্লাহ তা'আলা আমল নামার প্রথমে ও শেষে কল্যাণ (দেখতে) পান তখন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমাদেরকে এই কথার উপর সাক্ষি রাখছি যে, আমার বান্দার আমল নামার মাঝখানে যা আছে তা আমি ক্ষমা করে দিলাম। অত্যন্ত দুর্বল,যঈফা (২২৩৯)
মু’মিনদের মৃত্যুর সময় কপাল ঘামে
আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কপালের ঘামসহ মু’মিনের মৃত্যু হয়। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৫২)।
(মৃত্যুর সময় আল্লাহর নিকট কল্যাণের আশা করা)
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক যুবকের নিকট গেলেন। তখন সে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। তিনি বললেনঃ তোমার কেমন অনুভব হচ্ছে? যুবকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ, আল্লাহ্ তা'আলার রাহমাতের আশা করছি, কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছি আমার গুনাহগুলোর কারণে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে বান্দার হৃদয়ে এরকম সময়ে এরূপ দুই বিপরীত জিনিস একত্র হয়, আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তার কাংক্ষিত জিনিস তাকে দান করেন এবং তাকে তার বিপদাশংকা হতে নিরাপদ রাখেন। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (৪২৬১)।
মৃত্যুসংবাদ ফলাও করে প্রচার করা মাকরূহ
আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা মৃত্যুর খবর ঘোষণা থেকে নিবৃত্ত থাক। যেহেতু এটা জাহিলী যুগের কাজ। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘নাঈ’ শব্দের অর্থ মৃত্যুর খবর ঢালাও করে ঘোষণা করা। যঈফ, তাখরীজু ইসলাহিল মাসাজিদ (১০৮) আব্দুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ সাঈদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-মাখযুমী আব্দুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ হতে তিনি সুফিয়ান সাওরী হতে তিনি আবু হামযাহ হতে তিনি আল-কামা হতে তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তা মারফুরূপে বর্ণনা করা হয়নি এবং তাতে আন-নাইউ আযানুন বিলমায়্যিত" এই কথারও উল্লেখ নেই। যঈফ হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এই বিষয়ে তোমরা কোন ঘোষণা দিবে না। আমার ভয় হয় যে, এটা মৃত্যুর সংবাদ প্রচার বলে ধরা হবে। আমি মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করতে শুনেছি। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৪৭৬)।
প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ করা
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত ধৈর্য হচ্ছে বিপদের প্রথম ধাক্কাতেই ধৈর্যধারণ করা। সহীহ, আহকা-মুল জানা-য়িজ (২২ পৃঃ), বুখারী, মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিপদের প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধরতে হবে।
মৃত লোককে চুমা দেয়া
আইশা (রাঃ) উসমান ইবনু মাযউন (রাঃ)-কে মৃত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুম্বন করেছিলেন আর কাঁদছিলেন। অথবা বর্ণনাকারী বলেন, তার দু'চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৫৬)।
লাশের গোসল দেয়া
উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক কন্যা (যাইনাব) মারা গেলে তিনি বললেনঃ তোমরা বেজোড় সংখ্যায় তিন বার বা পাঁচ বার অথবা প্রয়োজনে এর চেয়েও অধিক বার তাকে গোসল দিতে পার। বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। আর শেষবার পানিতে কর্পূর বা কিছু পরিমাণ কর্পূর ঢেলে দাও। তোমাদের গোসল করানো শেষ হয়ে গেলে আমাকে জানিয়ে দিও। অতএব, তার গোসল শেষ করে আমরা তাঁকে জানালাম। তিনি তাঁর লুঙ্গি আমাদের দিকে ছুড়ে দিলেন এবং বললেনঃ তাঁর শরীরে এটিকে জড়িয়ে দাও। হুশাইম বলেন, এদের (খালিদ, মানসূর) ব্যতীত অন্যদের, হয়ত হিশামও তাদের একজন, বর্ণনায় আছে যে, উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর চুলকে তিন ভাগে বিন্যস্ত করলাম। হুশাইম বলেন, আমার ধারণায় তিনি এও বলেছেনঃ তাঁর চুলগুলোকে আমরা তাঁর পিছন দিকে ছেড়ে দিলাম। হুশাইম বলেন, এদের মধ্যে খালিদ আমাকে হাফসা ও মুহাম্মাদ-উম্মু আতিয়্যা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেনঃ তাঁর ডান পাশ দিযে তার ওযুর স্থানসমূহ হতে গোসল শুরু কর। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৫৮), বুখারী, মুসলিম।
মৃত ব্যক্তির জন্য কস্তুরি ব্যবহার করা
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কস্তুরি সবচাইতে উত্তম সুগন্ধি। -সহীহ, মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কস্তুরি প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ তোমাদের সুগন্ধিগুলোর মধ্যে এটা হলো সবচাইতে উত্তম সুগন্ধি। -সহীহ, মুসলিম।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করতে হবে এবং লাশ বহন করার পর ওযু করতে হবে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৬৩)।
কাফনের জন্য যেরূপ কাপড় উত্তম
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা রঙ্গের পোশাক পর। কেননা, তোমাদের জন্য তা সবচাইতে উত্তম পোশাক। তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের এটা দিয়েই কাফন দাও। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৭২)।
(উত্তম কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া)
আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের মাঝে কোন লোক তার কোন ভাইয়ের ওয়ালী হয় তবে সে যেন তার জন্য উত্তম কাফনের ব্যবস্থা করে। -সহীহ, সহীহাহু (১৪২৫), আহকামুল জানা-য়িজ (৫৮), মুসলিম জাবির হতে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কি পরিমাণ কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়েছিল?
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, তিনটি ইয়ামানী সাদা কাপড় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফন দেওয়া হয়েছিল। এতে জামা ও পাগড়ী ছিল না। বর্ণনাকারী (উরওয়া) বলেন, লোকেরা আইশা (রাঃ)-কে বলল, কেউ কেউ বলেন, দু'টি কাপড় ও একটি লম্বা রেখাযুক্ত চাদর দ্বারা তাকে কাফন দেওয়া হয়েছে। আইশা (রাঃ) বলেন, একটি চাদর আনা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা তা ফিরিয়ে দেন এবং তাঁকে সেটা দিয়ে কাফন দেননি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৬৯),বুখারী, মুসলিম। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) শুধুমাত্র একটি পশমী চাদর দ্বারা হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফন দিয়েছিলেন। -হাসান, আল-আহকাম (৫৯,৬০)।
মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনদের জন্য খাবার তৈরী করে পাঠানো
আবদুল্লাহ্ ইবনু জাফর (রাঃ) তিনি বলেন, জাফর (রাঃ)-এর শহীদ হওয়ার খবর এলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরী কর। কেননা, এমন খবর তাদের নিকটে এসেছে যা তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৬১০), মিশকাত (১৭৩৯)।
বিপদের সময় কপালে হাত চাপড়ানো ও জামার বুক ছেঁড়া নিষেধ
আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব লোক (মৃত্যুশোকে) জামার বুক ছিড়ে, গাল চাপড়ায় ও জাহিলী যুগের ন্যায় হা-হুতাশ করে সেসব লোক আমাদের দলভুক্ত নয়। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৮৪), বুখারী, মুসলিম।
মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা মাকরূহ্
আলী ইবনু রাবীআ আল-আসাদী (রহঃ) তিনি বলেন, কারাযা ইবনু কা’ব নামক এক আনসারী মারা গেলে তার জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি শুরু হয়। এমতাবস্থায় মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) এসে মিম্বারে উঠলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, ইসলামে বিলাপ করে কাঁদার বিধান কোথায়? সাবধান! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা হয় তাকে বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। -সহীহ, আল আহকাম (২৮, ২৯), বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতদের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি (খারাপ) বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি) ছাড়বে না: মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্ৰন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, সংক্রামক রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উট সংক্রমিত হলে একশ’টি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো। -হাসান, সহীহাহ্ (৭৩৫)।
মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা মাকরূহ
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৯৩), বুখারী, মুসলিম। আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার জন্য ক্ৰন্দনকারীরা যখন কাঁদে আর বলে, হায় আমাদের পাহাড়! হে আমাদের নেতা বা অনুরূপ কোন কথা, তখন দুইজন ফেরেশতা ঐ মৃত ব্যক্তির জন্য নিয়োগ করা হয়। তারা তার বুকে ঘুষি মারে আর বলতে থাকে, তুমি কি এরূপ ছিলে? হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৫৯৪)
মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করার অনুমতি
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আইশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে (ইবনু উমারকে) রহম করুন। তিনি মিথ্যা বলেননি, বরং ভুল বুঝেছেন। এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যে ইয়াহুদী অবস্থায় মারা গিয়েছিলঃ মৃত ব্যক্তিকে (তার গুনাহের কারণে) শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, আর তার জন্য তার পরিবারের লোকেরা কাঁদছে। -সহীহ্, আহকা-মুল জানা-য়িজ (২৮), বুখারী, মুসলিম৷ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর হাত ধরে তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ পুত্র ইবরাহীম (রাঃ)-এর নিকটে গেলেন। তাঁকে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কোলে তুলে নিলেন এবং কাঁদলেন। আবদুর রাহমান (রাঃ) তাকে বললেন, আপনিও কাঁদছেন? আপনি কি কান্না করতে বারণ করেননি? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি দুইটি নির্বোধ সুলভ ও পাপাচারমূলক চিৎকার নিষেধ করেছিঃ বিপদের সময় চিৎকার করা, মুখমণ্ডলে আঘাত করা এবং জামার সম্মুখভাগ ছিড়ে ফেলা আর শাইতানের মত (চিৎকার) কান্নাকাটি করা। -হাসান, হাদীসটিতে আরো অনেক বক্তব্য আছে। আমর (রহঃ) তিনি আইশা (রাঃ)-এর নিকট শুনেছেন যে, তার নিকট উল্লেখ করা হল যে, ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয় (এ কথা শুনে) আইশা (রাঃ) বললেন, আবদুর রাহমানের বাবাকে আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করুন। তিনি মিথ্যা বলেননি। তবে তিনি হয়ত ভুলে গেছেন বা সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি। (প্রকৃত বিষয় এই যে,) কোন এক ইয়াহুদী নারীর লাশের বা কবরের পাশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাচ্ছিলেন। তখন তার জন্য কান্নাকাটি করা হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ তার জন্য তো এরা কান্নাকাটি করছে, অথচ তাকে কবরের মাঝে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। -সহীহ, আল-আহকাম (২৮), বুখারী, মুসলিম।
জানাযার (লাশের) আগে আগে চলা
সালিম (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে জানাযার আগে আগে চলতে দেখেছি। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৪৮২)। সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে জানাযার আগে আগে চলতে দেখেছি। যু্হরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) জানাযার আগে আগে চলতেন। যুহরী বলেন, আমাকে সালিম (রহঃ) জানিয়েছেন যে, তার পিতাও জানাযার আগে আগে যেতেন। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকার, উমার এবং উসমান (রাঃ) জানাযার আগে আগে চলতেন। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৪৮৩)।
জানাযার পিছে পিছে যাওয়া
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানাযার পিছে পিছে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলেন : দৌড়ের চেয়ে কিছুটা ধীরে চলবে। যদি সে ভাল ব্যক্তি হয় তাহলে তোমরা তাকে তাড়াতাড়ি তার জায়গায় পৌছে দিলে। সে মন্দ ব্যক্তি হলে তাড়াতাড়ি এক জাহান্নামীকে বিতাড়িত করা হল। লাশের অনুসরণ করা হয়। লাশ কারো অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি লাশের আগে আগে চলে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৪৮৪),
সাওয়ার হয়ে জানাযার পিছে পিছে চলা মাকরূহ
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, একটি জানাযায় উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে বের হলাম। তিনি কিছু ব্যক্তিকে আরোহী অবস্থায় দেখে বললেন ; তোমাদের কি শরম নেই? আল্লাহ তা'আলার ফেরেশতাগণ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর তোমরা পশুর পিঠে সাওয়ার হয়ে যাচ্ছো! যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৪৮০),
জানাযায় সাওয়ার হয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে
সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) তিনি বলেন, জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আমরা ইবনুদ দাহ্দাহ-এর জানাযাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার অবস্থায় ছিলেন। আমরা তাঁর চারপাশে ছিলাম এবং সেটি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিলো এবং ঘোড়ার চলার তালে তালে তিনি দুলছিলেন। -সহীহ, আল আহকাম (৭৫), মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) ইবনুদ দাহদাহ-এর জানাযায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়ে হেটে যান, কিন্তু ফিরে আসেন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হয়ে। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
জানাযা (লাশ) নিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাওয়া
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জানাযা (লাশ) নিয়ে তোমরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে চল। কেননা, সে যদি ভাল লোক হয় তাহলে তোমরা উত্তম পরিণতির দিকে তাকে এগিয়ে দিলে। আর যদি সে খারাপ লোক হয়ে থাকে তাহলে তাকে তোমাদের গর্দান হতে তাড়াতাড়ি নামিয়ে রাখলে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৭৭), বুখারী, মুসলিম।
উহুদ যুদ্ধের শহীদগণ ও হামযা (রাঃ) প্রসঙ্গে আলোচনা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের যুদ্ধের দিন হামযা (রাঃ)-এর লাশের নিকটে এলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি দেখতে পেলেন, তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে তাকে বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বললেনঃ (হামযার বোন) সাফিয়্যা তাঁর মনে আঘাত পাবে এমন ভয় যদি না হতো তাহলে আমি এই অবস্থায়ই তাঁর লাশ ছেড়ে যেতাম। তাকে হিংস্র জীবজন্তু খেয়ে ফেলত এবং সে এদের পেট হতেই কিয়ামাতের দিন বেরিয়ে আসত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি একটি সাদা-কালো ডোরাযুক্ত চাদর নিয়ে আসতে বললেন এবং সেটা দিয়ে তার কাফন পরান। তা এত ছোট ছিল যে, মাথার দিকে টানলে তার দু'পা বেরিয়ে যেত, আবার তার পায়ের দিকে টানলে তার মাথা বেরিয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, নিহতের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি কিন্তু কাপড় কম ছিল। তাই এক কাপড়ে একজন, দুইজন, এমনকি তিনজনকেও একসাথে কাফন পরানো হয় এবং একই কবরে দাফন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করতেনঃ এদের মধ্যে কার বেশি কুরআন জানা আছে? তাকেই তিনি কিবলার সম্মুখে এগিয়ে রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাশগুলোর দাফন সম্পন্ন করলেন, কিন্তু তাদের জানাযা আদায় করেননি। -সহীহ, আল আহকাম (৫৯, ৬০)।
(জানাযায় শারীক হওয়া)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থকে দেখতে যেতেন, জানাযায় উপস্থিত হতেন, গাধার পিঠে সাওয়ার হতেন এবং কেনা গোলামের দাওয়াতও ক্ববুল করতেন। বানূ কুরাইযার (যুদ্ধের) দিন তিনি একটি গাধার পিঠে সাওয়ার ছিলেন। এর লাগাম ও গদি ছিল খেজুর গাছের বাকলের তৈরী। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪১৭৮)।
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর স্থান ও দাফনের স্থান)
আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তার দাফন সম্পর্কে সাহাবীগণের মাঝে মতের অমিল দেখা দেয়। আবূ বাকার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে আমি কিছু শুনেছি, তা আমি ভুলিনি। তিনি বলেছেনঃ যে স্থানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নাবীকে দাফন হওয়ার ইচ্ছা করেন সে স্থানেই তাঁর মৃত্যু দেন। তোমরা তাঁকে তাঁর শয্যাস্থানে দাফন কর। -সহীহ্, আল আহকাম (১৩৭, ১৩৮), মুসলিম, মুখতাসার শামায়িল (৩২৬)।
(মৃত ব্যক্তির উত্তম গুণ বর্ণনা করা)
ইবনু উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত লোকদের ভালো দিকগুলো আলোচনা কর এবং তাদের খারাপ দিকগুলো আলোচনা থেকে ক্ষান্ত হও। যঈফ, মিশকাত (১৬৭৮), রাওযুন্ নাযীর (৪৮২)
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পূর্বে বসা
উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, কোন লাশের সাথে যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেতেন তাহলে কবরে তা না রাখা পর্যন্ত তিনি বসতেন না। একদা এক ইয়াহুদী পণ্ডিত তাকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরাও এরূপ করি। এরপর হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার) আগেই বসতে লাগলেন এবং বললেনঃ তোমরা তাদের বিপরীত কর। -হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৫৪৫)।
বিপদের মাঝে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরার ফাযীলাত
আবূ সিনান (রহঃ) তিনি বলেন, আমার ছেলে সিনানকে আমি দাফন করলাম। কবরের কিনারায় আবূ তালহা আল-খাওলানী (রহঃ) বসা অবস্থায় ছিলেন। কবর হতে আমি যখন উঠে আসতে চাইলাম তখন আমার হাত ধরে তিনি বললেন, হে আবূ সিনান! তোমাকে কি আমি সুসংবাদ দিব না? আমি বললাম, অবশ্যই দিন। তিনি বললেন, আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) হতে যাহ্হাক ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আর্যাব (রহঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার কোন সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ তা'আলা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ “বাইতুল হাম্দ" বা প্রশংসালয়। -হাসান, সহীহাহ (১৪০৮)।
জানাযার নামাযের তাকবীর
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশীর জন্য চার তাকবীরের মাধ্যমে (গায়বী) জানাযার নামায আদায় করেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৩৪), বুখারী, মুসলিম। আবদুর রাহমান ইবনু আবী লাইলা (রহঃ) তিনি বলেন, আমাদের জানাযাগুলোতে যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) চারবার তাকবীর দিতেন। কিন্তু এক জানাযায় তিনি পাঁচবার তাকবীর দিলেন। তাকে এই বিষয়ে আমরা প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও দিতেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫০৫), মুসলিম।
জানাযার নামাযের দু'আ
আবূ ইবরাহীম আল-আশহালী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার নামায পড়তেন তখন এই দু'আ পাঠ করতেনঃ "হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যকার জীবিত, মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট, বড় এবং পুরুষ ও মহিলা সবাইকেই মাফ করুন"। ইয়াহইয়া বলেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাকে আবূ সালামা ইবনু আবদুর রাহমান একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এই বর্ণনাতে আরো আছেঃ “হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যে ব্যক্তিকে আপনি বাঁচিয়ে রাখেন তাকে ইসলামের উপর বাঁচিয়ে রাখুন এবং যে ব্যক্তিকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করুন"। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৯৮) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় কালে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে দু'আ পাঠ করতে শুনেছি আমি তার বাক্যগুলি মনে রেখেছিঃ “হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন এবং তাকে এমনভাবে (আপনার দয়ার) শিশির বিন্দু দিয়ে ধৌত করুন যেভাবে কাপড় ধোয়া হয়"। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫০০) মুসলিম।
জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) জানাযার নামাযে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৯৫), বুখারী। তালহা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আওফ (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক মৃত ব্যক্তির জানাযা আদায় করলেন এবং তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন। তাকে এ প্রসঙ্গে আমি প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, এটা সুন্নাত অথবা সুন্নাতের পূর্ণতা দানকারী। -সহীহ্, দেখুন পূর্বের হাদীস।
জানাযার নামাযের ধরণ ও মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ
মারসাদ ইবনু আবদুল্লাহ আল-ইয়াযানী (রহঃ) তিনি বলেন, যখন মালিক ইবনু হুবাইরা (রাঃ) জানাযার নামায আদায় করতেন তখন লোকজনের উপস্থিতি অল্প হলে তাদেরকে তিনি তিন সারিতে ভাগ করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির জানাযার নামায তিন কাতার লোক আদায় করেছে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত হয়েছে। -হাসান, আহকামুল জানায়িয (১২৮)। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মুসলমান মারা যাওয়ার পর একশত জনের একদল মুসলমান তার জানাযার নামায আদায় করে এবং তারা তার জন্য সুপারিশ করে, তবে তার জন্য তাদের সুপারিশকে ক্ববূল করা হবে। আলী (ইবনু হুজর) তার বর্ণিত হাদীসে (একশতের স্থলে) একশত বা ততোধিক’ বাক্য উল্লেখ করেছেন। -সহীহ্, আল আহকাম (৯৮), মুসলিম।
সূর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়ার সময় জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহ
উকবা ইবনু আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, এমন তিনটি সময় আছে যে সময়ে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায আদায় করতে অথবা আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন সম্পন্ন করতে বারণ করতেনঃ চক্ মক্ করে সূর্য উঠার সময় হতে তা সম্পূর্ণভাবে না উঠা পর্যন্ত; দুপুরের সময় সূর্য ঠিক (মাথার উপর) সোজা হয়ে যাওয়া হতে যতক্ষণ পর্যন্ত তা ঢলে না পড়ে এবং যে সময় সূর্য ডুবার সময় হয়, সম্পূর্ণভাবে তা ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫১৯), মুসলিম।
শিশুদের জন্য জানাযার নামায আদায় করা
মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি লাশের পিছে পিছে যাবে, আর পায়ে হাঁটা ব্যক্তি যেদিক দিয়ে ইচ্ছা সেদিক দিয়ে যেতে পারবে এবং শিশুর (লাশের) জানাযাও আদায় করতে হবে। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৫০৭)।
ভূমিষ্ঠ হয়ে চিৎকার না করলে সেই শিশুর জানাযা আদায় না করা
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন শিশু যদি জন্মগ্রহণ করার পরে চিৎকার না করে তবে তার জানাযার নামায আদায় করতে হবে না, সে কোন ব্যক্তির ওয়ারিস হবে না এবং তারও কেউ ওয়ারিস হবে না। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৫০৮)।
জানাযার নামায মাসজিদে আদায় করা
আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, সুহাইল ইবনু বাইযা (রাঃ)-এর জানাযা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের অভ্যন্তর ভাগে আদায় করেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫১৮)।
ইমাম সাহেব পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জানাযার নামায আদায়ে কোথায় দাঁড়াবে?
আবূ গালিব (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-এর সাথে আমি এক লোকের জানাযার নামায আদায় করলাম। তিনি লাশের মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। তারপর লোকেরা কুরাইশ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে আসলো। তার বলল, হে হামযার পিতা! এর জানাযা আদায় করুন। তিনি তার খাটিয়ার মাঝ বরাবর দাঁড়ালেন। তাকে আলা ইবনু যিয়াদ (রহঃ) বললেন, স্ত্রীলোকটির খাটিয়ার মাঝ বরাবর এবং পুরুষ লোকটির মাথা বরাবর আপনি যেভাবে দাঁড়ালেন, এভাবে কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাঁড়াতে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নামায শেষে তিনি বললেন, তোমরা এই নিয়ম ভালোভাবে স্মরণ রাখ। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৪৯৪)। সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার জানাযা আদায় করলেন, তিনি তার কোমর বরাবর দাঁড়ালেন। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৪৯৩), বুখারী, মুসলিম।
শহীদ ব্যক্তির জানাযা আদায় না করা
আব্দুর রাহমান ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) জাবির (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, উহুদের যুদ্ধের দুই দুইজন শহীদকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই কাপড়ে একসাথে কাফন সম্পন্ন করেছেন। তিনি প্রশ্ন করতেনঃ এদের দুজনের মধ্যে কোন ব্যক্তির বেশী কুরআন মুখস্ত আছে ? তাদের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে তিনি প্রথমে তাকে (কিবলার দিকে) কবরে রাখতেন। তারপর তিনি বলতেনঃ এদের জন্য আমি কিয়ামতের দিন সাক্ষী হব। (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি রক্তমাখা দেহেই তাদেরকে দাফন করার হুকুম দিয়েছেন এবং তাদের জানাযা আদায় করেন নি, এমন কি তাদের গোসলও করানো হয়নি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫১৪), বুখারী।
কবরের উপর জানাযা আদায় করা
শাবী (রহঃ) তিনি বলেন, এমন এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বিচ্ছিন্ন কবর দেখলেন। অতঃপর তিনি তার সাহাবীদেরকে তাঁর পিছনে কাতারবন্দী করে দাঁড় করালেন এবং তার উপর (কবরের উপর) জানাযার নামায আদায় করলেন। বর্ণনাকারীকে প্রশ্ন করা হল, কে আপনাকে জানিয়েছেন? তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৩০), বুখারী, মুসলিম। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাহঃ) সা’দ (রাঃ)-এর আম্মা ইন্তিকাল করেন। এ সময় নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাযির ছিলেন না। তিনি (সফর হতে) প্রত্যাবর্তন করে তার জানাযার নামায আদায় করেন। ইতিমধ্যে (মৃত্যুর পর) একমাস চলে গিয়েছিল। যঈফ, ইরওয়া (৩/১৮৩, ১৮৬)
নাজাশীর জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জানাযার নামায
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের ভাই নাজাশী মারা গেছেন। তোমরা তার জন্য দাঁড়িয়ে নামায আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের ন্যায় আমরা দাঁড়িয়ে কাতার বাঁধলাম এবং তার জন্য জানাযার নামায আদায় করলাম। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৩৫), মুসলিম।
জানাযার নামাযের ফাযীলাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক জানাযার নামায আদায় করল সে লোকের জন্য এক কীরাত সাওয়াব। আর জানাযার সাথে সাথে যে লোক যায় এবং দাফন সমাপ্ত পর্যন্ত থাকে তার জন্য দুই কীরাত সাওয়াব। এর একটি অথবা অপেক্ষাকৃত ছোটটি উহুদ পাহাড়ের সমান। (বর্ণনাকারী বলেন) একথা ইবনু উমারের নিকট আমি বর্ণনা করলে তিনি আইশা (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে এ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বললেন, আবূ হুরাইরা সত্য কথা বলেছেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমরা তো তাহলে অনেক কীরাত হতে বঞ্চিত হয়েছি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৩৯), বুখারী, মুসলিম।
(জানাযা বহন করা প্রসঙ্গে)
আব্বাস ইবনু মানসূর (রাহঃ) তিনি বলেছেন, আমি আবূল মুহায্যিমকে বলতে শুনেছিঃ আমি দশ বছর ধরে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সান্নিধ্যে ছিলাম। আমি তাকে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি লাশের পিছে পিছে গেল এবং তা তিনবার বহন করল সে মৃত ব্যক্তির প্রতি তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পালন করল। যঈফ, মিশকাত (১৬৭০)
মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখে দাঁড়ানো
আমির ইবনু রাবীআ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখলে তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। তোমরা দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তোমাদেরকে ছাড়িয়ে যায় অথবা তা মাটিতে না রাখা হয়। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৪২), বুখারী, মুসলিম। আবূ সাঈদ-আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যেতে দেখলে তোমরা দাঁড়িয়ে যাবে। লাশের পিছু পিছু যে লোক যাবে সে লোক যেন না বসে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিচে নামিয়ে না রাখা হয়। -সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।
মৃত ব্যক্তিকে দেখে না দাঁড়ানোর অনুমতি প্রসঙ্গে
আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) “মৃত ব্যক্তিকে নিচে না রাখা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা" প্রসঙ্গে তার সামনে আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগে দাঁড়াতেন কিন্তু পরবর্তীতে বসে থেকেছেন। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৪৪), মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আমাদের জন্য লাহ্দ কবর এবং অন্যদের জন্য শাক কবর
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের জন্য লাহ্দ এবং অন্যদের জন্য শাক। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৫৪)।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় যে দু’আ পাঠ করতে হয়
ইবনু উমার (রাঃ) মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হত; আবূ খালিদের বর্ণনায় আছে, মৃত ব্যক্তিকে যখন তার কবরে নামানো হত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলতেনঃ “বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া 'আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ”, অপর বর্ণনায় আছেঃ ‘বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া 'আলা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)”। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৫০)।
কবরে লাশের নিচে একটি কাপড় বিছিয়ে দেওয়া
জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য যে ব্যক্তি লাহ্দ (সিন্দুকী) কবর খুঁড়েছিলেন সে ব্যক্তি হচ্ছেন আবূ তালহা (রাঃ)। আর তাঁর (কবরে লাশের) নিচে যে ব্যক্তি পশমী চাদর বিছিয়ে ছিলেন সে ব্যক্তি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তদাস শুকরান (রাঃ)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একটি লাল পশমী চাদর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবরে ৰিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। -সহীহ, মুসলিম (৩/৬১)।
কবরকে সমান করা
আবূ ওয়াইল (রহঃ) আবূল হাইয়ায আলা-আসাদীকে আলী (রাঃ) বললেন, আমি এমন এক কাজের দায়িত্ব দিয়ে তোমাকে পাঠাব যে কাজ করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠিয়ে ছিলেন। কোন ধরণের উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না এবং কোন প্রতিকৃতি না ভেঙ্গে রাখবে না। -সহীহ্, আল আহকাম (২০৭), ইরওয়া (৭৫৯), তাহযীরুস্ সাজিদ (১৩০), মুসলিম৷
কবরের উপর দিয়ে চলাফিরা করা এবং এর উপর বসা, উহার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা মাকরূহ্
আবূ মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবরের উপর তোমরা বসবে না এবং কবরকে সামনে রেখে নামায আদায় করবে না। -সহীহ, আল আহকাম (২০৯, ২১০), তাহযীরুস সাজিদ (৩৩), মুসলিম। ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম আলী ইবনু হুজর এবং আবূ আম্মার উভয়েই ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম হতে, তিনি আব্দুর রাহমান ইবনু ইয়ামীদ হতে, তিনি বুসর ইবনু উবাইদুল্লাহ হতে, তিনি ওয়াসিলা ইবনুল আসকা হতে, তিনি মারসাদ আল-গানাবী হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। -সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।
কবর পাকা করা, এতে ফলক লাগানো নিষেধ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, কবর পাকা করতে, তার উপর কোন কিছু লিখতে বা কিছু নির্মাণ করতে এবং তা পদদলিত করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। -সহীহ, আহকামুল জানা-য়িয (২০৪), তাহযীরস সাজিদ (৪০), ইরওয়া (৭৫৭), লিখতে নিষেধ করেছেন ব্যতীত, মুসলিম।
কবরস্থানে প্রবেশ করে যা বলতে হবে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার গোরস্তানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরবাসীদের দিকে মুখ করে বললেনঃ “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহ্লাল কুবূর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহ্নু বিল আসার।” যঈফ, মিশকাত (১৭৬৫)
কবর যিয়ারাত করার অনুমতি
সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারাত করতে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারাত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারাত কর। কেননা, তা আখিরাতের কথাকে মনে করিয়ে দেয়। -সহীহ্, আল আহকাম (১৭৮, ১৮৮), মুসলিম।
(মৃত ব্যক্তিকে মৃত্যু স্থলে কবর দেয়া প্রসঙ্গে)
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলাইকা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) হুবশী নামক স্থানে মারা গেলেন। পরে তাকে মক্কায় এনে এখানে কবর দেয়া হল। আইশা (রাঃ) মক্কায় এসে (ভাই) আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্রের কবর যিয়ারাতে গেলেন। তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেনঃ “আমরা দু’জন জাযীমার দুই সহচর দীর্ঘকাল কাটিয়েছি একসাথে এমনকি বলা হত আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হব না কিন্তু যখন পৃথক হলাম আমি মালিকের থেকে মনে হচ্ছে এক রাতও কাটাইনি একসাথে।” তারপর তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার কসম! আমি যদি হাযির থাকতাম তবে আপনার মউতের জায়গাতেই আপনাকে দাফন করা হত। আমি যদি আপনার দাফনের সময় হাযির থাকতাম, তবে আমি আপনার কবর যিয়ারাতে আসতাম না। যঈফ, মিশকাত (১৭১৮)
কবর যিয়ারাত করা মহিলাদের জন্য মাকরূহ্
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কবর যিয়ারাতকারী মহিলাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন। -হাসান, ইবনু মাজাহ (১৫৭৬)।
মৃত ব্যক্তির প্রশংসা বর্ণনা করা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা কবরে প্রবেশ করলেন। তাঁর জন্য একটি আলো জ্বালানো হল। তিনি কিবলার দিক হতে মৃতদেহ ধরলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা তোমায় রহম করুন! তুমি ছিলে বেশী নরমদিলের এবং বেশী কুরআন তিলাওয়াতকারী। তিনি তার (নামাযে) চারবার 'আল্লাহু আকবার' বললেন। যঈফ, মিশকাত (১৭০৬)তিনি রাত্রে কবরে প্রবেশ করলেন এ অংশটুকু হাসান, আহকামুল জানায়িয। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একটি মৃত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকজন তার প্রশংসা করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার জন্য (জান্নাত) নির্ধারিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ পৃথিবীতে তোমরা (মু'মিনরা) আল্লাহ্ তা'আলার সাক্ষী। -সহীহ, ইবনু মাজাহ (১৪৯১), বুখারী, মুসলিম। আবুল আসওয়াদ আদ-দীলী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাদীনাতে এসে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বসলাম। (আমাদের সামনে দিয়ে) লোকেরা একটি লাশ নিয়ে যাচ্ছিল। তারা তার ভালো গুণাবলীর প্রশংসা করছিল। উমার (রাঃ) বললেন, নির্ধারিত হয়ে গেল। তাকে আমি প্রশ্ন করলাম, কি নির্ধারিত হলো? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন আমি শুধু তাই বলেছি। তিনি বলেছেনঃ তিনজন লোকও যদি কোন মুসলমানের পক্ষে উত্তম সাক্ষী দেয় তাহলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। উমার (রাঃ) বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, দু’জন লোক যদি এমন সাক্ষী দেয়? তিনি বললেনঃ দু’জন লোক (সাক্ষী) দিলেও। উমার (রাঃ) বলেন, তারপর একজনের সাক্ষ্যের কথা আমরা প্রশ্ন করিনি। -সহীহ, আল আহকাম (৪৫), বুখারী।
যে ব্যক্তির শিশু সন্তান মারা যায় সে ব্যক্তির সাওয়াব
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির তিনটি শিশু সন্তান মারা গেলে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না; তবে শপথ ভঙ্গ করে থাকলে (স্পর্শ করবে)। -সহীহ ইবনু মাজাহ (১৬০৩)। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান (আল্লাহ্ তা'আলার কাছে) পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য (জাহান্নামের বিরুদ্ধে) সুরক্ষিত কেল্লা হবে। আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি দু'টি সন্তান আগে পাঠিয়েছি। তিনি বললেনঃ দু'টি পাঠালেও। কুরআন বিশেষজ্ঞদের নেতা উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বললেন, আমি একটি আগে পাঠিয়েছি? তিনি বললেনঃ একটি পাঠালেও। কিন্তু এটা শুধু তার জন্য যে প্রথম চোটেই সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেছে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৬০৬) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে যার দু'টি মৃত সন্তান থাকবে, তাদের প্রতিদানে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আইশা (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মাতের মধ্যে যার একটি মৃত সন্তান থাকবে? তিনি বললেনঃ হে কল্যাণময়ী! যার এমন একটি সন্তান থাকবে তাকেও। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মাতের মধ্যে যার কোন অগ্রগামী সন্তান নেই? তিনি বললেনঃ আমিই আমার উম্মাতের জন্য অগ্রগামী। কেননা আমার ইন্তেকালে তারা যে কষ্ট পাবে তেমন আর কারো ইন্তেকালে পাবে না। যঈফ, তা'লীকুর রাগীব (৩/৯৩), মিশকাত (১৭৩৫)
শহীদগণের বর্ণনা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকারেরঃ মহামারির কারণে যে লোক মারা যায়, যে পেটের অসুখের কারণে মারা যায়, পানিতে ডুবে যে লোক মারা যায়, চাপা পড়ে যে লোক মারা যায় এবং যে লোক আল্লাহ তা'আলার রাস্তায় (যুদ্ধক্ষেত্রে) শহীদ হয়। -সহীহ, আল আহকাম (৩৮) বুখারী, মুসলিম৷ আবূ ইসহাক আস-সাবীঈ (রহঃ) তিনি বলেন, খালিদ ইবনু উরফুতা (রাঃ)-কে সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) অথবা সুলাইমান (রাঃ)-কে খালিদ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একথা বলতে শুনেছেনঃ "যে লোককে পেটের পীড়া মৃত্যু দিয়েছে কবরে সে লোককে কোন রকম শাস্তি দেয়া হবে না"? তাদের একজন অন্যজনকে বললেন, হ্যাঁ। -সহীহ, আল আহকাম (৩৮)।
মহামারীতে আক্রান্ত এলাকা হতে পালানো নিষেধ
উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ) মহামারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলোচনা করলেন এবং বললেনঃ যে গযব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিলো, তার বাকী অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারীর দেখাদিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না। -সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।
আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাত লাভকে যে লোক পছন্দ করে আল্লাহ্ তা'আলাও তার সাক্ষাত লাভকে পছন্দ করেন
উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তা'আলার সাক্ষাত লাভ করা পছন্দ করে, তার সাথে সাক্ষাত করতে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন। আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাত করতে যে লোক পছন্দ করে না, তার সাথে সাক্ষাত করতে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন না। -সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। আইশা (রাঃ) তিনি উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাত করতে যে লোক পছন্দ করে তার সাথে সাক্ষাত করতে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন। আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাত করতে যে লোক পছন্দ করে না, তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন না। আইশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত্যুকে তো আমরা সবাই অপছন্দ করি। তিনি বললেনঃ এর অর্থ তা নয়, বরং যখন আল্লাহ্ তা'আলার রাহমাত, তাঁর সন্তোষ ও তাঁর জান্নাতের সুসংবাদ কোন মু'মিন লোককে দেয়া হয় তখন সে লোক আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত করতে ইচ্ছা করে এবং তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন। অপরপক্ষে যখন কাফির লোককে আল্লাহ্র নির্ধারিত আযাব ও তাঁর গযবের দুঃসংবাদ দেয়া হয় তখন আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সাক্ষাত করাকে সে লোক পছন্দ করে না এবং তার সাথে সাক্ষাত করাকে আল্লাহ্ তা'আলাও পছন্দ করেন না। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৬৪), বুখারী, মুসলিম।
আত্মহত্যাকারীর (জানাযার নামায) প্রসঙ্গে
জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) কোন এক লোক আত্মহত্যা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা আদায় করেননি। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫২৬), মুসলিম।
ঋণগ্রস্ত লোকের জানাযা
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) হতে তার পিতা কোন এক মৃত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জানাযার উদ্দেশ্যে আনা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা আদায় কর; কেননা, তার ঋণ (অপরিশোধিত অবস্থায়) আছে। আবূ কাতাদা (রাঃ) বললেন, তার দেনা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তা পরিশোধ করে দেবে তো? তিনি বললেন, অবশ্যই পরিশোধ করব। তারপর তিনি সে ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় করলেন। -সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৪০৭), বুখারী, মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসা হলে তিনি প্রশ্ন করতেন, তার ঋণ পরিশোধ করার মত কোন কিছু রেখে গেছে কি এ ব্যক্তি? সে লোক ঋণ পরিশোধ করার মত সম্পদ রেখে গেছে বলা হলে তবে তিনি তার জানাযার নামায আদায় করতেন। অন্যথায় তিনি মুসলমানদের বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জানাযার নামায তোমরা আদায় কর। তারপর তাঁকে আল্লাহ তা'আলা অসংখ্য বিজয় দিলে তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ মু’মিনদের জন্য তাদের নিজেদের চাইতেও আমি বেশি কল্যাণকামী। অতএব, মুমিনদের মাঝে কোন লোক যদি ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা যায় তবে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর ধন-সম্পদ রেখে যে ব্যক্তি মারা যায় তা তার ওয়ারিসদের প্রাপ্য। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৪১৫), বুখারী, মুসলিম।
কবরের শাস্তি প্রসঙ্গে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু'জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেনঃ তুমি এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) প্রসঙ্গে কি বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মু'মিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবেঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তারা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি একথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন। মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহলে (প্রশ্নের উত্তরে) বলবে, তার প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত আমিও তাই বলতাম। এর বেশি কিছুই আমি জানি না। ফেরেশতা দু'জন তখন বলবেন, আমরা জানতাম, এ কথাই তুমি বলবে। তারপর যমীনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে লোককে এমন শক্ত করে যমীন চাপা দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পরবে। (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আযাব পেতে থাকবে। -হাসান, মিশকাত (১৩০), সহীহাহ্ (১৩৯১)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক মারা গেলে তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার (আখিরাতের) বাসস্থান তুলে ধরা হয়। সে লোক জান্নাতে বসবাসকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে জান্নাতের জায়গা দেখানো হয়। আর যদি সে লোক জাহান্নাম বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তাকে জাহান্নামীদের জায়গা দেখানো হয়। তারপর বলা হয়, তোমার থাকার জায়গা এটাই। তোমাকে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা'আলা এখানে পাঠাবেন। -সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম।
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়ার সাওয়াব
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, তাকেও দুর্দশাগ্রস্তের সমান বদলা দেয়া হয়। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৬০২)
জুমু'আর দিন যে লোক মৃত্যু বরণ করে
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনে অথবা জুমু‘আর রাতে কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরের শাস্তি হতে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। -হাসান, মিশকাত (১৩৬৭), আল আহকাম (৩৫)।
তাড়াতাড়ি জানাযার ব্যবস্থা করা
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে আলী! তিনটি কাজে দেরি করবে না। নামায- যখন ওয়াক্ত হয়ে যায়; জানাযা- যখন উপস্থিত হয় এবং বিধবা- যখন তার যোগ্য পাত্র পাওয়া যায়। যঈফ, মিশকাত (১৪৮৬)
বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ফাযীলাত
আবূ বারযা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সন্তানহারা মহিলাকে সমবেদনা জানায় তাকে জান্নাতে একটি কারুকার্য খচিত চাদর পরিয়ে দেয়া হবে। যঈফ, মিশকাত (১৭৩৮)
জানাযা আদায়ে দুই হাত উঠানো (রাফউল ইয়াদাইন)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জানাযা আদায়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন এবং প্রথম তাকবীরেই শুধু হাত দুটোকে উঠালেন (রাফউল ইয়াদাইন করলেন)। ডান হাতকে তিনি বাম হাতের উপর রাখলেন। -হাসান, আল আহকাম (১১৫, ১১৬)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ মু'মিন ব্যক্তির রূহ্ দেনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত দেনার সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু'মিন ব্যক্তির রূহ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে। -সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৪১৩)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু'মিন ব্যক্তির রূ্হ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক থাকে। -সহীহ, পূর্বের হাদীসের কারণে।