0. ভূমিকা
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের অনুসরণ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে যা আদেশ দেই, তোমরা তা গ্রহণ করো এবং যে বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাকো। [১] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাদের নবীগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাঁদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। [২] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করে এবং যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করে সে আল্লাহ্রই অবাধ্যাচরণ করে। [৩] আবু জা’ফার (মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব) ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন হাদীস শুনলে, তাতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কম-বেশি করতেন না। [৪] আবুদ-দারদা' (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে আসেন, তখন আমরা দারিদ্র্য সম্পর্কে আলাপরত ছিলাম এবং আমরা সে বিষয়ে শংকিত ছিলাম। তিনি বলেন, তোমরা দারিদ্র্যকে ভয় করছো? সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই তোমাদের উপর পৃথিবী প্রবল বেগে প্রবাহিত হবে (প্রভাব বিস্তার করবে), এমনকি পৃথিবী তোমাদের অন্তর কেবল তার দিকেই আকৃষ্ট করে ফেলবে। আল্লাহ্র শপথ! আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন অবস্থায় ছেড়ে গেলাম, যার রাত-দিন ঔজ্জ্বল্যে সমান। আবুদ-দারদা' (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যই বলেছেন। আল্লাহ্র শপথ! তিনি আমাদের পরিচ্ছন্ন অবস্থায়ই ছেড়ে গেছেন, যার রাত ও দিন ঔজ্জ্বল্যে সমান। কুর্রাহ বিন ইয়াস বিন হিলাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল অব্যাহতভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যপ্রাপ্ত হতে থাকবে এবং যারা তাদের অপদস্থ করতে চায় তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। [৬] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহ্র নির্দেশের উপর স্থির থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের ক্ষতি করতে সক্ষম হবেনা। [৭] আবু ইনাবাহ (উতবাহ) আল-খাওলানী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দু' কিবলার দিকেই সলাত আদায় করেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ সর্বদা এক দ্বীনের মধ্যে একটি গাছ রোপণ করতে থাকবেন (এমন লোক সৃষ্টি করতে থাকবেন) যাদের তিনি তাঁর আনুগত্যে নিয়োজিত রাখবেন। [৮] শুআয়ব বিন মুহাম্মাদ মুআবিয়াহ (রাঃ) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেন, তোমাদের আলীমগণ কোথায়, তোমাদের আলীমগণ কোথায়? আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা লোকেদের উপর বিজয়ী থাকবে। তারা তাদের লাঞ্চিত করতে উদ্যত বা সাহায্য করতে আগ্রহী কারো পরোয়া করবে না। [৯] সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একটি দল সত্যের উপর স্থির থাকবে এবং সাহায্যপ্রাপ্ত হতে থাকবে। মহামহিম আল্লাহ্র নির্দেশ (কিয়ামাত) আসা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [১০] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাঁর ডান দিকে দু’টি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দু’টি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলওয়াত করেন (অনুবাদ) : ‘'এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরাহ আনআম ৬:১৫৪) [১১]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ
আল-মিকদাম বিন মা’দীকারিব আল-কিনদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অচিরেই কোন ব্যক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাব তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী বলেন) সাবধান! নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ। [১২] আবু রাফি' (রাঃ) [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্ত করা দাস] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না পাই যে, সে তার আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং (এই অবস্থায়) আমার প্রদত্ত কোন আদেশ বা আমার প্রদত্ত কোন নিষেধাজ্ঞা তার নিকট পৌঁছলে সে বলবে, আমি কিছু জানিনা, আমরা আল্লাহ্র কিতাবে যা পাবো তার অনুসরণ করবো। [১৩] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। [১৪] আবদুল্লাহ ইবনুয-যুবায়র (রাঃ) এক আনসার ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে হাররার পানি নালা নিয়ে বিবাদ করে, যার দ্বারা তারা খেজুর বাগানে পানি সেচ করতেন। আনসারী বলল, তুমি পানি ছেড়ে দাও যাতে তা প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু যুবায়র (রাঃ) তা অস্বীকার করেন। তাই তারা বিবাদ করতে করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে যুবায়র! তোমার বাগানে পানি সিঞ্চন করো, অতঃপর তোমার প্রতিবেশির দিকে তা পাঠিয়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার ফুপাতো ভাই তো (তাই এরূপ ফয়সালা দিলেন)। এ কথায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো। তিনি বলেন, হে যুবায়র! তোমার বাগানে পানি সিঞ্চন করো, অতঃপর তা প্রতিরোধ করে রাখো, যাবত না তা আইল বরাবর হয়। রাবী আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমার মতে এ আয়াত উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাযিল হয় (অনুবাদ) : “কিন্তু না। তোমার প্রভুর শপথ! তারা মু'মিন হবে না, যতক্ষণ তারা তাদের বিবাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার প্রদত্ত সিদ্ধান্তে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তারা তা মেনে নেয়”। (সূরাহ নিসা ৪ : ৬৫) [১৫] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্র বাঁদীদেরকে আল্লাহ্র মাসজিদে সলাত আদায় করতে (যেতে) বাধা দিও না। ইবনু উমার (রাঃ)-এর এক পুত্র বলল, আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিবো। রাবী বলেন, এতে তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, আমি তোমার নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করছি, আর তুমি বলছ আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দিবো! [১৬] আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তার পাশে তার এক ভ্রাতুষ্পুত্র বসা ছিল। সে কংকর নিক্ষেপ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন এবং বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এতে না শিকার ধরা যায়, না শত্রুকে আহত করা যায়, বরং তা দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং চোখ ফুঁড়ে দেয়। রাবী বলেন, তার ভাইপো পুনরায় কংকর নিক্ষেপ করলে আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন, তারপরেও তুমি কংকর নিক্ষেপ করলে! আমি তোমার সাথে কখনও কথা বলবো না। [১৭] উবাদাহ ইবনুস-সামিত আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী ও তাঁর মুখপাত্র উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) মুয়াবিয়াহ (রাঃ)-এর সাথে রোম (বায়যান্টাইন) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি লোকদের লক্ষ্য করলেন যে, তারা সোনার টুকরা স্বর্ণ মুদ্রার সাথে এবং রূপার টুকরা রৌপ্য মুদ্রার সাথে ক্রয়-বিক্রয় (বিনিময়) করছে। তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা তো (এরূপ বিনিময়ে) সুদ খাচ্ছো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা সোনার বিনিময়ে সোনা বিক্রয় করো না, তবে পরিমাণে সমান সমান হলে, বাড়তি না হলে এবং লেনদেন বাকীতে না হলে করতে পারো। তখন মুআবিয়াহ (রাঃ) তাকে বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আমি তো এরূপ লেনদেনে সুদের কিছু দেখছি না, যদি না লেনদেন বাকীতে হয়। উবাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি তোমার নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করছি। আর তুমি আমার নিকট তোমার অভিমত ব্যক্ত করছো। আল্লাহ্ যদি আমাকে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেন তাহলে আমি এমন এলাকায় বসবাস করবো না, যেখানে আমার উপর তোমার কর্তৃত্ব চলে। অতএব তিনি (যুদ্ধ থেকে) প্রত্যাবর্তন করে মদিনায় পৌঁছলে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনি কেন ফিরে এসেছেন? তখন তিনি তার নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন এবং সেখানে তার বসবাস না করার কথাও ব্যক্ত করেন। উমার(রাঃ) বলেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আপনি আপনার এলাকায় ফিরে যান। কেননা যে এলাকায় আপনি ও আপনার মত মানুষ থাকবে না সেখানে আল্লাহ্ গযব নাযিল করবেন। তিনি মুআবিয়াহ (রাঃ)-কে লিখে পাঠান, উবাদাহ (রাঃ)-এর উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব চলবে না এবং তিনি যা বলেন জনসাধারণকে তদানুযায়ী পরিচালনা করো। কারণ এটাই আদেশ। [১৮] আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) আমি তোমার নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করলে তোমরা তার যুহ্দ (সাধনা), ধার্মিকতা ও তাকওয়ার কথা স্মরণে রেখে তা মেনে নাও (এবং নিজের মত খাটানো ত্যাগ করো)। [১৯] আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) আমি তোমাদের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করলে তোমরা মনে রাখবে যে, তিনি ছিলেন সর্বাধিক ধার্মিক, হিদায়াতপ্রাপ্ত ও আল্লাহ্ভীরু। [২০] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি এমন লোকের পরিচয় তুলে ধরছি যার নিকট তোমাদের কেউ আমার হাদীস বর্ণনা করবে, আর সে তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বলবে, কুরআন পাঠ করো। কোন উত্তম কথা বলা হলে (মনে করবে যে) আমিই তা বলেছি। [২১] আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে (ইবনু আব্বাসকে) বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমার নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করলে তুমি তার বিপরীতে কোন দৃষ্টান্ত পেশ করো না। [২২]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনায় সতর্কতা অবলম্বন করা
আমর বিন মায়মূন প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ইবনু মসঊদ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হতে আমার ভুল হতো না। কিন্তু আমি কখনও তাঁকে “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন” এভাবে কিছু বলতে শুনিনি। এক রাতে তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন”। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি মাথা নিচু করলেন। রাবী বলেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন যে, তার জামার বোতাম খোলা, তার চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিগলিত এবং এর শিরাগুলো ফুলে গেছে। অতঃপর তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বলেছেন অথবা এর অধিক বা কম বলেছেন অথবা এর কাছাকাছি বা এর অনুরূপ বলেছেন (অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন তা আমার হুবহু মনে নেই)। [২৩] মুহাম্মদ বিন সীরীন আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনাকালে ভীত-শংকিত হতেন এবং বলতেন, অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বলেছেন। [২৪] আবদুর রহমান বিন আবু লাইলা আমরা যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) কে বললাম, আমাদের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং (অনেক কিছুই) ভুলে গেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করা খুবই কঠিন দায়িত্ব। [২৫] ইবনু উমার (রাঃ) (আবদুল্লাহ বিন আবু সাফার) বলেন, আমি (আমির বিন শুরাহীল) আশ-শা’বীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর সাথে একটি বছর যাবত উঠাবসা করেছি, কিন্তু আমি তাকে কখনও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বরাতে কিছুই বর্ণনা করতে শুনিনি। [২৬] তাঊস বিন কায়সান তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা হাদীস মুখস্থ করতাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছেই হাদীস মুখস্থ করা হতো। কিন্তু এখন তোমরা প্রতিটি কষ্টকর ও আরামদায়ক স্থানে (পর্যালোচনা ব্যতীত) উঠতে শুরু করেছ। তোমাদের জন্য আফসোস হয়। [২৭] কারাযাহ বিন কা’ব উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আমাদেরকে কূফার উদ্দেশ্যে পাঠালেন। তিনি আমাদের বিদায় দিতে আমাদের সাথে সিরার নামক স্থান পর্যন্ত হেঁটে আসেন। তিনি বলেন, তোমরা কি জানো আমি কেন তোমাদের সাথে চলে এসেছি? রাবী বলেন, আমরা বললাম, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্যের কর্তব্য এবং আনসারদের প্রতি কর্তব্যের কারণে। উমার (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদের নিকট একটি বিশেষ কথা বলার উদ্দেশ্যে তোমাদের সঙ্গে চলে এসেছি। আমি আশা করি তোমাদের সাথে আমার চলে আসার প্রতি খেয়াল রেখে তোমরা তা মনে রাখবে। তোমরা এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো, যাদের বক্ষস্থলে ফুটন্ত হাঁড়ির মত কুরআনের আওয়াজ হবে। তারা তোমাদেরকে দেখে তোমাদের প্রতি তাদের আনুগত্যের গর্দান এগিয়ে দিবে এবং বলবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ এসেছেন। তোমরা তাদের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করবে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে আছি। [২৮] সা’দ বিন (আবু ওয়াক্কাস) মালিক (রাঃ) (সায়িব) বলেন, আমি মদিনা থেকে মক্কা পর্যন্ত সা’দ বিন (আবু ওয়াক্কাস) মালিক (রাঃ)-এর সাহচর্যে ছিলাম। কিন্তু আমি তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীসও বর্ণনা করতে শুনিনি। [২৯]
স্বেচ্ছায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপের ভয়ানক পরিণতি
আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামকে তার আবাস বানালো। [৩০] আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা আমার প্রতি মিথ্যারোপ জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। [৩১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার আবাস জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। [৩২] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। [৩৩] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে মনগড়া কথা রচনা করলো, যা আমি বলিনি, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। [৩৪] আবু কাতাদাহ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি: তোমারা আমার থেকে অধিক হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে সাবধান হও। কেউ আমার সম্পর্কে বলতে চাইলে সে যেন হক কথা বা সত্য কথাই বলে। যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলে যা আমি বলিনি, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করলো। [৩৫] আবদুল্লাহ ইবনুয-যুবায়র (রাঃ) আমি (আমার পিতা) যুবায়র ইবনুল আওওয়াম (রাঃ)-কে বললাম, আমি যেমন বিন মাসঊদ (রাঃ) ও অমুক অমুক সহাবীকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনি তদ্রূপ আপনাকে কেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনি না? তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনও আমি তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। কিন্তু আমি তাঁকে একটি কথা বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করলো। [৩৬] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে যেন জাহান্নামে তার আবাস নির্ধারণ করলো। [৩৭]
যে ব্যক্তি সজ্ঞানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা বর্ণনা করে
আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে হাদীস বর্ণনা করলো, অথচ সে মনে করে যে, সে মিথ্যা বলেছে, সেও মিথ্যাবাদীদের একজন। [৩৮] সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে আমার নামে মিথ্যা বর্ণনা করলো, সেও মিথ্যাবাদীদের একজন। [৩৯] আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে কোন মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করলো, সে অন্যতম মিথ্যাবাদী। [৪০] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ ধারণা মতে আমার বরাতে কোন (মিথ্যা) হাদীস বর্ণনা করলো সে অন্যতম মিথ্যাবাদী। [৪১]
হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদ্বীনের সুন্নাতের অনুসরণ
ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রাঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের নাসীহাত করেন, যাতে অন্তরসমুহ ভীত হলো এবং চোখগুলো অশ্রু বর্ষণ করলো। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি তো বিদায় গ্রহণকারীর উপদেশ দিলেন। অতএব আমাদের নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন (একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ দিন)। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করো, শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো (নেতৃ-আদেশ), যদিও সে কাফ্রী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা মারাত্মক মতভেদ লক্ষ্য করবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। অবশ্যই তোমরা বিদ‘আত কাজ পরিহার করবে। কারন প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। [৪২] ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেন, আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে। তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মু’মিন ব্যক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়। [৪৩] ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ফাজ্রের সলাত আদায় করালেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্যে মর্মস্পর্শী ওয়ায করেন .... অবশিষ্ট বিবরণ পূর্ববৎ (৪৩ নং হাদীসের অনুরূপ)। [৪৪]
বিদ‘আত ও ঝগড়াঝাটি হতে বেঁচে থাকা
জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ভাষণ দিতেন তখন তাঁর চোখ দু’টি লাল হয়ে যেতো, কন্ঠস্বর জোরালো হতো, তাঁর ক্রোধ বৃদ্ধি পেতো, যেন তিনি কোন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলতেনঃ তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় আক্রান্ত হতে পারো (অথবা তোমাদের সকাল-সন্ধ্যা কল্যাণময় হোক)। তিনি আরো বলতেনঃ আমার প্রেরণ ও কিয়ামাত এ দু’টি আঙ্গুলের অবস্থানের মত পরস্পর নিকটবর্তী। তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে দেখান। অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে উত্তম নির্দেশ হলো আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হলো মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদর্শিত পথ। দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। তিনি আরো বলেন, কোন ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে (মারা) গেলে তা তার পরিবারবর্গের এবং কোন ব্যক্তি দেনা অথবা অসহায় সন্তান রেখে (মারা) গেলে তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার এবং তার সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বভারও আমার যিম্মায়। [৪৫] আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বস্তুত বিষয় দু’টিঃ কালাম ও হিদায়াত। অতএব সর্বোত্তম কালাম (কথা) হলো আল্লাহ্র কালাম এবং সর্বোত্তম হিদায়াত (পথ নির্দেশ) হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হিদায়াত। শোন! তোমরা নতুনভাবে উদ্ভাবিত নিকৃষ্ট বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। কেননা নিকৃষ্ট কাজ হলো দ্বীনের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়। প্রতিটি নতুন নিকৃষ্ট উদ্ভাবন হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। সাবধান! (শয়তান) যেন তোমাদের অন্তরে দীর্ঘায়ুর আকাঙ্খা সৃষ্টি করতে না পারে, অন্যথায় তা তোমাদের অন্তরাত্মাকে শক্ত করে দিবে। সাবধান! নিশ্চয় যা কিছু আসার তা নিকটবর্তী এবং যা দূরবর্তী তা আসার নয়। জেনে রাখো! অবশ্যই সেই ব্যক্তি দুর্ভাগা যে তার মায়ের পেট থেকেই দুর্ভাগা। খোশনসীব সেই ব্যক্তি যে অপরকে দেখে নাসীহাত গ্রহণ করে। সাবধান! ঈমানদার ব্যক্তিকে হত্যা করা (বা তার সাথে সশস্ত্র সংঘাত করা) কুফরী এবং তাকে গালমন্দ করা পাপ। কোন মুসলিমের পক্ষে তার মুসলিম ভাইকে তিন দিনের অধিক (কথা না বলে) ত্যাগ করা হালাল নয়। সাবধান! তোমরা মিথ্যাচারিতা থেকে দূরে থাকো। কেননা মিথ্যাচারিতা দ্বারা না সফলতা অর্জন করা যায়, না অর্থহীন অপলাপ থেকে বাঁচা যায়। নিজ সন্তানের সাথে ওয়াদা করে তা পূরণ না করা কোন লোকের জন্যই শোভনীয় নয়। কেননা মিথ্যা (মানুষকে) পাপাচারের দিকে চালিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে চালিত করে। পক্ষান্তরে সততা (মানুষকে) পুণ্যের পথে চালিত করে এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে চালিত করে। সত্যবাদী সম্পর্কে বলা হয়, সে সত্য বলেছে ও পুণ্যের কাজ করেছে। আর মিথ্যাবাদী সম্পর্কে বলা হয়, সে মিথ্যা বলেছে ও পাপাচার করেছে। জেনে রাখো! কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্র নিকট ডাহা মিথ্যাবাদী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়। [৪৬] - উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ। তাহক্বীক্ব আলবানী: যঈফ। তাখরীজ আলবানী: জামি সগীর ২০৬৩ যঈফ, ফিলুল জান্নাহ ২৫। উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুহাম্মাদ বিন উবায়দ বিন মায়মুন আল মাদানী আবু উবায়দ সম্পর্কে ইবনু হিব্বান তার সিকাহ হওয়া ব্যাপারে আলোচনা করলেও অন্যত্রে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। ২. উবাইদ বিন মায়মুন সম্পর্কে আবূ হাতিম আর রাযী বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত। আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন (অনুবাদ): “তিনি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, এগুলো কিতাবের মূল অংশ, আর অন্যগুলো রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লঙ্ঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই বিশৃঙ্খলা ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ তার ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম, সমস্তই আমার রবের নিকট থেকে আগত। বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না”-(সূরাহ আলে-ইমরান ২:৭)। অতঃপর তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! যখন তুমি তাদেরকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বাদানুবাদ করতে দেখবে, তখন মনে করবে যে, এরা সেই লোক যাদের আল্লাহ্ অপদস্থ করেন। তোমরা তাদের পরিহার করো। [৪৭] আবু উমামাহ (সাদী বিন আজলান) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক তখনই পথভ্রষ্ট হবে, যখন তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “বরং এরা তো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।” (সূরাহ যুখরুফ ৪৩:৫৮) [৪৮] হুযায়ফাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ বিদ‘আতী ব্যক্তির সওম, সলাত, যাকাত বা দান-খয়রাত, হাজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, ফিদ্য়া, ন্যায়বিচার ইত্যাদি কিছুই কবূল করবেন না। সে ইসলাম থেকে এমনভাবে খারিজ হয়ে যায় যেভাবে আটা থেকে চুল টেনে বের করা হয়। [৪৯] আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বিদ‘আতী ব্যক্তির নেক আমাল কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তার বিদ‘আত পরিহার করে। [৫০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যাকে বাতিল মনে করে পরিহার করলো তার জন্য জান্নাতের এক প্রান্তে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া ত্যাগ করলো তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। যে ব্যক্তি তার চরিত্র সুন্দর করলো তার জন্য জান্নাতের উচ্চতর স্থানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। [৫১]
কিয়াস ও মনগড়া মতামত হতে বেঁচে থাকা।
আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে তা কেড়ে নিবেন না, বরং তিনি আলিমদেরকে (দুনিয়া থেকে) তুলে নেয়ার মাধ্যমে ইল্মকেও তুলে নিবেন। অতএব যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন জনগণ অজ্ঞ ও মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে এবং তাদের কাছে (দ্বীনী বিষয়ে) জিজ্ঞেস করা হলে তারা (সেই বিষয়ে) কোন ইল্ম না থাকা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং জনগণকেও পথভ্রষ্ট করবে। [৫২] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দলীল-প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ব্যতীত কাউকে সিদ্ধান্ত (ফাতাওয়া) দেয়া হলে তার পাপের বোঝা ফাতাওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। [৫৩] আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অত্যাবশ্যকীয় ইল্ম (জ্ঞান) তিন প্রকার, এ ছাড়া অবশিষ্টগুলো অতিরিক্তঃ আল কুরআনের বিধান সম্পর্কিত (মুহকাম) আয়াতসমূহ অথবা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ (হাদীস) অথবা ইনসাফভিত্তিক ফারায়েজের জ্ঞান (ওয়ারিসী স্বত্ব ন্যায়সঙ্গতভাবে বন্টনের জ্ঞান)। [৫৪] মুআয বিন জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় বলেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান আছে কেবল সেই বিষয়ে তুমি সিদ্ধান্ত বা রায় প্রদান করবে। কোন বিষয় তোমার জন্য কঠিন হলে (অজ্ঞাত থাকলে) তুমি অপেক্ষা করবে, যতক্ষণ না তোমার নিকট স্পষ্ট হয় (বা তোমাকে বলে দেয়া হয়) অথবা তুমি লিখিতভাবে সে সম্পর্কে আমাকে জানাবে। [৫৫] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র ইবনুল আস (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বানী ইসরাঈলের যাবতীয় কাজকর্ম যথার্থভাবেই হচ্ছিল, যতক্ষণ তাদের মধ্যে যথার্থ সন্তান জন্মেছে। অতঃপর তাদের মধ্যে বিজাতীয় বা লুন্ঠনকৃত নারীর সন্তান যুক্ত হলে তারা নিজেদের মত অনুযায়ী রায় প্রদান করে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করে। [৫৬]
ঈমানের বিবরণ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমানের ষাট বা সত্তরের অধিক স্তর আছে। তার সাধারন বা নিম্নতর স্তর হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। সর্বোচ্চ স্তর হলো কালিমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই) বলা এবং লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। [৫৭] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে লজ্জাশীলতা সম্পর্কে তার ভাইকে নাসীহাত (তিরস্কার) করতে শুনলেন। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয় লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। [৫৮] আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানা (সামান্যতম) পরিমানও অহংকার আছে, সে (প্রথম পর্যায়েই) জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং যার অন্তরে সরিষার দানা (সামান্যতম) পরিমাণ ঈমান আছে সে জাহান্নামে (স্থায়ীভাবে) প্রবেশ করবে না। [৫৯] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন আল্লাহ্ তাআলা (কিয়ামাতের দিন) মু’মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, তখন ঈমানদারগণ তাদের জাহান্নামী ভাইদের ব্যাপারে তাদের প্রতিপালকের সাথে এত প্রচন্ড তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে যে, তারা দুনিয়াতে অবস্থানকালে তাদের কেউ তার বন্ধুর পক্ষে ততটা প্রচন্ড বিতর্কে লিপ্ত হয়নি। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে সলাত আদায় করতো, সওম রাখতো এবং হাজ্জ করতো। অথচ আপনি তাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করেছেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা বলবেনঃ তোমরা যাও এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা চিনতে পারো, তাদেরকে বের করে নিয়ে এসো। অতএব তারা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের আকৃতি দেখে তাদের চিনতে পারবে। জাহান্নামের আগুন তাদের দৈহিক গঠনাকৃতি ভক্ষন (নষ্ট) করবে না। আগুন তাদের কারো পদদ্বয়ের জংঘার অর্ধাংশ পর্যন্ত এবং কারো পদদ্বয়ের গোছা পর্যন্ত স্পর্শ করবে। তারা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে এনে বলবে, হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে যাদের বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাদের বের করে এনেছি। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান আছে, অতঃপর যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তোমরা তাদেরকেও বের করে নিয়ে এসো। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, যার এ কথা বিশ্বাস না হয় সে যেন তিলাওয়াত করে (অনুবাদ): “আল্লাহ্ অণু পরিমাণও যুল্ম করেন না। কোন উত্তম কাজ হলে আল্লাহ্ তা দ্বিগুন করেন এবং আল্লাহ্ তাঁর পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার প্রদান করেন”- (সূরাহ নিসা’ ৪-৪০)। [৬০] জুনদুব বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং তার দ্বারা আমাদের ঈমান বেড়ে যায়। [৬১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ উম্মাতের দু’টি শ্রেণীর জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই- মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়। [৬২] উমার (ইবনুল খাত্তাব) (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় ধবধবে সাদা পোশাক পরিহিত ও মাথায় গাড় কালো চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি এসে হাজির হন। তার চেহারায় সফরের কোন ছাপ দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের কেউই তাকে চিনে না। রাবী বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বসলেন, তার হাঁটুদ্বয় মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে সাথে লাগিয়ে এবং তার দু’হাত তাঁর দু’ উরুর উপর রেখে, তারপর জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ইসলাম কী? তিনি বলেন, এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহ্র রসূল, সলাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, রমাযানের সওম পালন করা এবং আল্লাহ্র ঘরের হাজ্জ করা। তিনি (আগন্তুক) বলেন, আপনি সত্য কথা বলেছেন। আমরা তার এ কথায় অবাক হলাম যে, তিনিই জিজ্ঞেস করলেন এবং তিনিই তা সত্যায়ন করলেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ঈমান কী? তিনি বলেন, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর, তাঁর মালায়িকার, তাঁর রসূলগণের, তাঁর কিতাবসমূহে, আখিরাতের দিনে এবং তাকদীরে ও তার ভালো-মন্দে। আগন্তুক বলেন, আপনি সত্য কথা বলেছেন। আমরা এবারও তার কথায় অবাক হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন এবং তিনিই তা সত্যায়ন করছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, হে মুহাম্মাদ! ইহসান কী? তিনি বলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখো নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। তিনি বলেন, মুহূর্তটি (কিয়ামাত) কখন আসবে? তিনি বলেন, এ সম্পর্কে উত্তরদাতা প্রশ্নকর্তার চেয়ে অধিক কিছু জানে না। তিনি বলেন, তাহলে এর আলামত কী? তিনি বলেন, ক্রীতদাসী তার মনিবকে প্রসব করবে। ওয়াকী‘ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ অনারবদের ঔরসে আরবরা জন্মগ্রহণ করবে। তুমি দেখতে পাবে নগ্নদেহ, নগ্নপদ ও অভাবগ্রস্থ মেষ চারকরা সুউচ্চ ইমারতের মালিক হয়ে অহংকারে ফেটে পড়বে। উমার (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার তিন দিন পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, লোকটি কে, তুমি কি তা জানো? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, ইনি হলেন জিবরীল (আঃ), দ্বীনের বিষয়াদি শিক্ষা দেয়ার জন্য তোমাদের নিকট এসেছেন। [৬৩] আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকবেষ্টিত থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ঈমান কী? তিনি বলেন, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ্র উপর, তাঁর মালায়িকাহ, তাঁর কিতাবসমূহে, তাঁর রসূলগণের, তাঁর সাথে সাক্ষাতে এবং তুমি আরো ঈমান আনবে পুনরুত্থান দিবসে। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ইসলাম কী? তিনি বলেন, তুমি আল্লাহ্র ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শারীক করবে না, ফার্দ সলাত আদায় করবে, ফার্দ যাকাত প্রদান করবে এবং রমাদানের সওম পালন করবে। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! ইহসান কী? তিনি বলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহ্র ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো। যদি তুমি তাঁকে দেখতে সক্ষম না হও, তবে তিনি নিশ্চয় তোমাকে দেখছেন। সে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন, মুহূর্তটি (কিয়ামাত) কখন আসবে? তিনি বলেন, এ বিষয়ে উত্তরদাতা প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানে না। তবে আমি তোমাকে তার কতিপয় শর্ত (আলামত) সম্পর্কে বলছি। ক্রীতদাসী যখন তার মনিবকে প্রসব করবে। সেটা কিয়ামাতের শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। যখন মেষ চারকরা সুউচ্চ দালান-কোঠার (মালিক হয়ে) অহংকারে ফেটে পড়বে এটাও তার শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানে না। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামীকাল (বা ভবিষ্যতে) সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মরবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত”-(সূরাহ লোকমানঃ ৩৪)। [৬৪] আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমান হলো অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং দ্বীনের রোকনসমূহের (অপরিহার্য বিধানসমূহ) বাস্তবায়ন। আবুস-সালত (রহঃ) বলেন, এ সানাদ কোন পাগলের নিকট পাঠ করা হলে সেও নিরাময় লাভ করবে। [৬৫] আনাস বিন মালিক (রাঃ) আল্লাহ্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হবে না, যাবত না সে তার ভাইয়ের জন্য (বা তার প্রতিবেশির জন্য) তাই পছন্দ করবে, যা সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে। [৬৬] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদের কারো কাছে তার সন্তান-সন্ততি, তার পিতা-মাতা ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হওয়া পর্যন্ত সে (পূর্ণ) মু’মিন হতে পারবে না। [৬৭] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তোমরা পরস্পরকে মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয় নির্দেশ করবো না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে মহব্বত করবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। [৬৮] আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলিমকে গালি দেয়া গর্হিত কাজ এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী। [৬৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি এক আল্লাহ্র প্রতি নিষ্ঠাবান অবস্থায়, তাঁর ইবাদাতরত অবস্থায় যাঁর কোন শারীক নাই, সলাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, সে এমন অবস্থায় মারা গেল যে, আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট। আনাস (রাঃ) বলেন, এটা হলো আল্লাহ্র সেই দ্বীন, যা নিয়ে রসূলগণ এসেছেন এবং তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়েছেন ফিতনা-ফাসাদ এবং মনগড়া মতবিরোধ সৃষ্টির পূর্বেই। এর সমর্থন রয়েছে কুরআনের শেষের দিকে অবতীর্ণ আয়াতে, মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন, "যদি তারা তাওবাহ করে, সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়"- (সূরাহ তাওবাহ ৯:৫)। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা তাওবা করার পর মূর্তিগুলো ও সেগুলোর পূজা ত্যাগ করে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, "যদি তারা তাওবাহ করে, সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই"- (সূরাহ তওবা ৯:১১)। [৭০] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তারা সলাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়। [৭১] মুআয বিন জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তারা সলাত আদায় করে ও যাকাত দেয়। [৭২] ইবনু আব্বাস ও জাবির বিন আহদুল্লাহ্ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মাতের দু’ শ্রেণীর লোকের ইসলামে কোন অংশ নেই- মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়। আবু হুরায়রা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) তারা বলেন, ঈমান বাড়ে ও কমে। আবুদ-দারদা' (রাঃ) ঈমান বাড়ে ও কমে। [৭৩]
তাকদীর (রাঃ) ভাগ্যলিপির বর্ণনা
আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, আর তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে সমর্থিতঃ তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি কার্যক্রম এভাবে অগ্রসর হয় যে, তার মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্ররূপে) জমা রাখা হয়, তারপর অনুরূপ সময়ে তা জমাট রক্ত পিন্ডের রূপ ধারণ করে, তারপর অনুরূপ সময়ে তা মাংসপিন্ডের রূপ ধারণ করে, তারপর আল্লাহ্ তাআলা তার নিকট একজন ফেরেশ্তা পাঠান। তাকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতএব তিনি (আল্লাহ্) বলেন, তার কার্যকলাপ, আয়ুষ্কাল, তার রিয্ক এবং সে দুর্ভাগা না ভাগ্যবান তা লিখে দাও। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় তোমাদের কেউ অবশ্যই জান্নাতীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকে, তখন তার দিকে তার তাকদীরের লেখা অগ্রসর হয় এবং সে জাহান্নামীদের কাজ করে, ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ অবশ্যই জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, তখন তার দিকে তার তাকদীরের লেখা অগ্রসর হয় এবং সে জান্নাতীদের কাজ করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। [৭৪] উবাই বিন কা’ব, আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ, হুযায়ফাহ ও যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) (ইবনুল দায়লামী) বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই বিন কা’ব (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবুল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ্ তা দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা ঊর্ধলোকের ও ইহলোকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি যুলমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়। যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবুল হবে না, যাবত না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তবে তুমি জাহান্নামে যাবে। আমি মনে করি তুমি আমার ভাই আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কোন ক্ষতি হবেনা। (ইবনুদ দাইলামী বলেন), অতঃপর আমি আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও উবাই (রাঃ)-এর অনুরূপ বললেন। তিনি আরো বললেন, তুমি হুযাইফাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তোমার ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি হুযাইফাহ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও তাদের দু’জনের অনুরূপ বলেন। তিনি আরও বলেন, তুমি যায়দ বিন সাবিত (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাকেও জিজ্ঞেস করো। অতএব আমি যায়দ বিন সাবিত (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ তা’আলা ঊর্ধলোক ও ইহলোকের সকল অধিবাসীকে শাস্তি দিতে চাইলে অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারবেন এবং তিনি তাদের প্রতি যুলমকারী নন। আর তিনি তাদের প্রতি দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের সমস্ত সৎ কাজের চাইতেও তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। তোমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকলেও এবং তুমি তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করলেও তিনি তা কবূল করবেন না, যাবত না তুমি সম্পূর্ণরূপে তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রাখো! তোমার উপর যা কিছু আপতিত হওয়ার আছে তা তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনো ভুলেও এড়িয়ে যেত না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না, তা তোমার উপর ভুলেও কখনো আপতিত হত না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। [৭৫] আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম। তাঁর হাতে ছিল এক টুকরা কাঠ। তা দিয়ে তিনি মাটির উপর রেখা টানলেন, অতঃপর মাথা তুলে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জান্নাতে তার একটি আসন অথবা জাহান্নামে তার নিকট আসন নির্ধারিত করা হয়নি। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! তাহলে আমরা কি ভরসা করব না? তিনি বলেন, না, তোমরা সৎ কাজ করতে থাকো এবং (এর উপর) ভরসা করো না। কারণ যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজসাধ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দিব সহজ পথ। আর কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করলে আমি তার জন্য সুগম করে দিব কঠোর পথ।”(সূরাহ লায়ল ৯২ : ৫-১০)। [৭৬] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল মু’মিনের চাইতে উত্তম এবং আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়। অবশ্য উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করো এবং আল্লাহ্র সাহায্য চাও এবং কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। তোমার কোন ক্ষতি হলে বলো না, যদি আমি এভাবে করতাম, বরং তুমি বল, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা “লাও” (যদি) শব্দটি শয়তানের তৎপরতার দ্বার খুলে দেয়। [৭৭] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর সাথে (আত্মার জগতে) বিতর্ক করেন। মূসা (আঃ) তাঁকে বলেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আপনি আমাদের হতাশ করেছেন এবং আপনার ভুলের মাশুল স্বরূপ আমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেছেন। আদম (আঃ) তাঁকে বলেন, হে মূসা! আল্লাহ্ তোমাকে তাঁর প্রত্যক্ষ কালামের জন্য মনোনীত করেছেন এবং স্বহস্তে তোমাকে তাওরাত কিতাব লিখে দিয়েছেন। তুমি কি আমাকে এমন একটি ব্যাপারে দোষারোপ করছো, যা আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর পূর্বে আমার জন্য নির্ধারিত করেন? অতএব আদম (আঃ) বিতর্কে মূসা (আঃ)-এর উপর বিজয়ী হন, আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর সাথে বিতর্কে বিজয়ী হন, আদম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর সাথে বিতর্কে বিজয়ী হন। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। [৭৮] আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন বান্দাহ চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনা পর্যন্ত মু’মিন হবে না। একমাত্র আল্লাহ্র উপর ঈমান আনবে, যাঁর কোন শরীক নেই, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্র রসূল, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং তাকদীরের ভালমন্দে। [৭৯] উম্মুল মু’মিনীন আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আনসার সম্প্রদায়ের এক বালকের জানাযাহ পড়ার জন্য ডাকা হলো। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! তার জন্য সুসংবাদ, সে জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে এক চড়ুই যে পাপ কাজ করেনি এবং তা তাকে স্পর্শও করেনি। তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! এর ব্যতিক্রমও কি হতে পারে? নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারা তাদের পিতাদের মেরুদন্ডে অবচেতন থাকতেই তিনি তাদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি জাহান্নামের জন্যও একদল সৃষ্টি করেছেন। তারা তাদের পিতাদের মেরুদন্ডে অবচেতন থাকতেই তিনি তাদের জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। [৮০] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, কুরায়শ মুশরিকরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে তাকদীরের ব্যাপারে ঝগড়া করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (অনুবাদ): “যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, (সেদিন বলা হবে) জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো। আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।” (সূরা আল ক্বামার ৫৪ : ৪৮, ৪৯) [৮১] আবদুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে তাকদীর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তাকদীর সম্পর্কে কিছু বলবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে কিছু বলবে না তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হবে না। [৮২] আবদুল্লাহ বিন আম্র ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদের নিকট বের হয়ে এলেন। তখন তারা তাকদীর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছিল। ফলে রাগে তাঁর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করে, যেন ডালিমের দানা তাঁর মুখমন্ডলে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এ কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা এর জন্য কি তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে? তোমরাও কুরআনের কতকাংশকে কতকাংশের বিরুদ্ধে পেশ করছো। এ কারণেই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বললেন, আমি এই মজলিসে উপস্থিত না থাকায় যে লজ্জা পেলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আর কোন মজলিসে আমি উপস্থিত না হওয়ায় এতটা লজ্জা পাইনি। [৮৩] (আবদুল্লাহ) বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ নেই, অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই এবং হামাহ (পেঁচার ডাক) বলতে কিছুই নেই। তখন তার সামনে এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার কী মত যে, চর্মরোগে আক্রান্ত একটি উট সুস্থ উটের সংস্পর্শে এসে সকল উটকে আক্রান্ত করে? তিনি বলেন, এটাই তোমাদের তাকদীর। আচ্ছা প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করেছিল? [৮৪] তাহকীকঃ এটাই তোমাদের তাকদীর এ ব্যতীত সহীহ। শা’বী (আমির বিন শুরাহীল) তিনি বলেন, আদী বিন হাতিম (রাঃ) কূফায় এলে আমরা কূফার একদল ফকীহ তাঁর সাথে সাক্ষাত করি। আমরা তাকে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যা শুনেছেন, তা আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলে তিনি বলেন, হে আদী বিন হাতিম! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো, শান্তি পাবে। আমি বললাম, ইসলাম কী? তিনি বলেন, তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহ্র রসূল এবং তুমি তাকদীরের ভাল-মন্দ, স্বাদ-তিক্ততা সবকিছুর উপর ঈমান আনবে। [৮৫] আবু মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অন্তর হলো পালকতুল্য, উন্মুক্ত মাঠে বাতাস তাকে যেদিকে ইচ্ছা উল্টাতে-পাল্টাতে থাকে। [৮৬] জাবির (বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার একটি দাসী আছে। আমি কি তার সাথে (সঙ্গমকালে) আযল করতে পারি? তিনি বলেন, তার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবশ্যই সে লাভ করবে। পরে আবার সেই আনসারই তাঁর নিকট এসে বলেন, দাসীটি গর্ভধারণ করেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার জন্য যা নির্ধারিত হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। [৮৭] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেবল সৎ কর্মই আয়ু বৃদ্ধি করে এবং দু’আ ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষের অসৎ কর্মই তাকে রিয্ক বঞ্চিত করে। [৮৮] তাহকীক আলবানীঃ (আরবী) কথাটি ছাড়া হাসান। সুরাকাহ বিন জু’শুম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! কার্যকলাপ কি তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তদানুযায়ী তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে, না ভবিষ্যতে যা করা হবে তা? তিনি বলেন, বরং তাই যা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে এবং তদানুযায়ী তাকদীর নির্দিষ্ট হয়েছে। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তা সহজসাধ্য করা হয়েছে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ উম্মাতের তারা মাজুসী (অগ্নিপূজক) যারা আল্লাহ্র নির্ধারিত তাকদীরকে অস্বীকার করে। এরা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাদের দেখতে যেও না। তারা মারা গেলে তোমরা তাদের জানাযাহয় হাজির হয়ো না। এদের সাথে তোমাদের সাক্ষাত হলে তোমরা এদের সালাম দিওনা। তাহকীকঃ সালাম অংশ কথাটি ছাড়া হাসান।
আবু বাক্র সিদ্দীক (রাঃ)- এর সম্মান
আবদুল্লাহ্ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জেনে রাখো! আমি প্রত্যেক বন্ধুর বন্ধুত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। যদি আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম তবে আবু বাক্রকেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। নিশ্চয় তোমাদের এই সাথী আল্লাহ্র অন্তরঙ্গ বন্ধু। ওয়াকী' (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ তিনি নিজে। [৯১] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আবু বাক্রের ধন-সম্পদ আমার যতটুকু উপকারে এসেছে অন্য কারো ধন-সম্পদ আমার তত উপকারে আসেনি। রাবী বলেন, এ কথায় আবু বাক্র (রাঃ) কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি ও আমার ধন-সম্পদ আপনারই। [৯২] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আবু বাকর ও উমার নবী-রসূলগণ ব্যতীত পূর্বাপর (সর্বকালের) সকল বয়স্ক জান্নাতীর নেতা হবে। হে আলী! তাদের জীবদ্দশায় তুমি তা তাদেরকে অবহিত করো না। [৯৩] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (জান্নাতে) উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে, তাদের তুলনায় নিম্ন মর্যাদার লোকেরা দেখতে পাবে, যেমন আকাশের দিগন্তে আলোকোজ্জ্বল তারকারাজি দেখা যায়। আবু বাক্র ও উমার (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত, বরং তাদের মাঝে অধিক মর্যাদাবান। [৯৪] হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি জানি না আমি তোমাদের মাঝে আর কতকাল জীবিত থাকবো। অতএব আমার অবর্তমানে তোমরা আমরা পরে অবশিষ্ট লোকের অনুসরণ করবে এবং (এ কথা বলে) তিনি আবু বাক্র ও উমার (রাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করেন। [৯৫] (আবদুল্লাহ বিন উবায়দুল্লাহ) বিন আবু মুলায়কাহ তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ উমার (রাঃ)-এর লাশ জানাযাহর খাটিয়ায় রাখা হলে উপস্থিত লোকজন, তার চারপাশে ভীড় করে দু’আ-কালাম ও সলাত শুরু করে দেয়, তখনো সলাত আদায়ের জন্য লাশ উঠানো হয়নি। আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তির সাথে আমার ধাক্কা লাগলো এবং তিনি আমার কাঁধ ধরলেন। আমি তাকিয়ে দেখি যে, তিনি আলী বিন আবু তালিব (রাঃ)। তিনি উমার (রাঃ)-এর প্রতি করুণা প্রকাশ করে আফসোস করলেন, অতঃপর বলেন, আমার নিকট আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় আর কেউ নেই, আপনি যে নেক আমালসহ আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করেছেন তার তুলনা নেই। আল্লাহ্র শপথ! অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে আপনার দু’জন সাথীর সাথে মিলিত করবেন। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রায়ই বলতে শুনতামঃ আমি, আবু বাকর ও উমার গিয়েছিলাম। আমি আবু বাকর ও উমার প্রবেশ করলাম। আমি, আবু বাকর ও উমার বের হলাম। তাই আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্ আপনাকে আপনার দু’ মহান বন্ধুর সাথে একত্র করবেন। [৯৬] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাকর ও উমার (রাঃ)-এর মাঝখান দিয়ে বের হয়ে চললেন, অতঃপর বললেনঃ এভাবেই আমরা (কিয়ামাতের দিন) উত্থিত হবো। [৯৭] আবু জুহাইফাহ (ওয়াহব বিন আবদুল্লাহ) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আবু বাক্র ও উমার নবী-রসূলগণ ব্যতীত পূর্বাপর সকল যুগের বয়স্ক জান্নাতীদের নেতা হবে। [৯৮] আনাস (বিন মালিক) (রাঃ) বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! কোন ব্যক্তি আপনার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন, আয়িশাহ। আবার বলা হলো, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বলেন, তার পিতা। [৯৯]
উমার (রাঃ)-এর সম্মান
আবদুল্লাহ বিন শাকীক আমি আয়িশাহ (রাঃ)-কে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাঁর কোন সাহাবী সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন? তিনি বলেন, আবু বাকর (রাঃ)। আমি আবার বললাম, তারপর তাদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, উমার (রাঃ)। আমি আবার বললাম, অতঃপর তাদের মধ্যে কে? তিনি বলেন, আবু উবায়দাহ (রাঃ)। [১০০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলে জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে বলেন, হে মুহাম্মাদ! 'উমারের ইসলাম কবূল করার সুসংবাদে ঊর্ধ্ব জগতের বাসিন্দারা আনন্দিত হয়েছে। [১০১] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহাসত্যবাদী সত্তা (আল্লাহ্) সর্বপ্রথম উমারের সাথে মুসাফাহা করবেন, তাকে সর্বপ্রথম সালাম করবেন এবং তার হাত ধরে সর্বপ্রথম তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [১০২] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আল্লাহ্ বিশেষভাবে উমার ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামকে সম্মানিত করেন। [১০৩] তাহকীকঃ খাসসাহ শব্দটি ছাড়া সহীহ। আবদুল্লাহ বিন সালামাহ (তিনি সত্যবাদী কিন্তু শেষ বয়সে স্মৃতি শক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল) আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হলেন আবু বাক্র (রাঃ) এবং আবু বাকর (রাঃ)-এর পরে উত্তম লোক হলেন উমার (রাঃ)। [১০৪] আবু হুরায়রা (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে বসা ছিলাম। তিনি বলেন, একদা আমি স্বপ্নে নিজেকে জান্নাতের মধ্যে দেখলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, এক মহিলা একটি প্রাসাদের নিকট বসে উদূ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রাসাদটি কার? মহিলা বললো, উমার (রাঃ)-এর। তখন উমারের আত্মমর্যাদাবোধের কথা আমার স্মরণ হলো এবং আমি সেখান থেকে পেছনে ফিরে এলাম। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) কেঁদে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমি আপনার উপর কিভাবে আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করতে পারি। [১০৫] আবু যার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা 'উমারের মুখে সত্যকে স্থাপন করেছেন এবং সেই সত্যের সাহায্যে সে কথা বলে। [১০৬]
উসমান (রাঃ)-এর সম্মান
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জান্নাতে প্রত্যেক নবীর একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে। সেখানে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হবে উসমান বিন আফফান। [১০৭] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের দরজায় উসমান (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়ে বলেন, হে উসমান! এই যে, জিবরীল (আঃ)। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা তোমার সাথে উম্মু কুলসুমের বিবাহ দিয়েছেন এবং তার মোহরও রুকাইয়ার মোহরের সমান। [১০৮] কা’ব বিন উজরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অচিরেই সংঘটিতব্য একটি বিপর্যয়ের উল্লেখ করেন। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি মাথা নিচু করে চলে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন এ ব্যক্তি সৎপথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আমি দ্রুত হেঁটে গিয়ে তার দু কাঁধে হাত রাখতেই দেখলাম যে, তিনি উসমান (রাঃ)। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, ইনি কি সেই ব্যক্তি? তিনি বলেন, ইনিই সেই ব্যক্তি। [১০৯] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে উসমান! তোমাকে আল্লাহ্ তা’আলা একদিন এক কাজের (খিলাফতের) দায়িত্বশীল করবেন। মুনাফিকরা ষড়যন্ত্র করে আল্লাহ্ প্রদত্ত তোমার এই জামা (খিলাফতের দায়িত্ব) তোমার থেকে খুলে ফেলতে চাইবে। তুমি কখনও তা খুলবে না। তিনি এ কথা তিনবার বলেন। নুমান (রহঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাস করলাম, (বিদ্রোহ চলাকালে) জনসম্মুখে এ হাদীস বর্ণনা করতে আপনাকে কিসে বিরত রেখেছে? তিনি বলেন, আমি ভুলে গিয়েছিলাম। [১১০] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রোগশয্যায় বললেনঃ আমি আশা করি যে, এ সময় আমার কোন সহাবী আমার নিকট উপস্থিত থাকুক। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা কি আপনার কাছে আবু বাক্রকে ডেকে আনবো? তিনি নীরব থাকলেন। আমরা বললাম, আমরা কি আপনার কাছে উমারকে ডেকে আনবো? তিনি এবারও নীরব থাকলেন। আমরা বললাম, আমরা কি আপনার নিকট উসমানকে ডেকে আনবো? তিনি বলেন, হ্যাঁ। অতঃপর উসমান (রাঃ) এলেন। তিনি তার সাথে একান্তে আলাপ-আলোচনা করেন। উসমান (রাঃ)-এর চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। কায়স (রহঃ) বলেন, আমার নিকট উসমানের মুক্ত দাস আবু সাহলাহ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, উসমান বিন আফফান (রাঃ) নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকাকালে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার থেকে একটি অঙ্গীকার নিয়েছেন, আমি তাতে ধৈর্য ধারণ করবো। আলী বিন মুহাম্মাদ (রহঃ) তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, উসমান (রাঃ) বলেছেন, আমি তাতে ধৈর্য ধারণ করবো। কায়স (রহঃ) বলেন, সহাবীদের মতে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এটাই ছিল তাঁর একান্ত আলাপ। [১১১]
আলী বিন আবী তালিব (রাঃ)-এর সম্মান
আলী (রাঃ) উম্মী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অবগত করলেন যে, মু'মিন ব্যক্তিরাই আমাকে ভালবাসবে এবং মুনাফিকরাই আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। [১১২] সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, আমার নিকট তুমি এরুপ স্থানের অধিকারী মূসা (আঃ)-এর নিকট হারুন (আঃ)-এর স্থান (মর্যাদা)? [১১৩] আল-বারা বিন আযিব (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে উপস্থিত ছিলাম। তিনি পথিমধ্যে এক স্থানে অবতরণ করেন, অতঃপর সলাতের জামা’আতে একত্র হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আলী (রাঃ)-এর হাত ধরে বলেন, আমি কি মু'মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চাইতে অধিক ঘনিষ্টতর নই? তারা বলেন, হাঁ অবশ্যই। তিনি আবার বলেন, আমি কি প্রত্যেক মু'মিনের নিকট তার নিজের চাইতে অধিক ঘনিষ্টতর নই? তারা বলেন, হাঁ অবশ্যই। তিনি বলেন, আমি যার বন্ধু আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ্! যে তাকে ভালোবাসে আপনি তাকে ভালোবাসুন। হে আল্লাহ্! যে তার সাথে শত্রুতা করে আপনিও তার সাথে শত্রুতা করুন। [১১৪] আলী (রাঃ) আবূ লাইলা (রাঃ) আলী (রাঃ)-এর সাথে নৈশ আলাপ করতেন। আলী (রাঃ) শীতকালে গ্রীস্মকালীন পোশাক এবং গরমকালে শীতকালীন পোশাক পরিধান করতেন। আমরা বললাম, আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করতেন! তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধ চলাকালে আমাকে ডেকে পাঠান। তখন আমি চক্ষুপীড়ায় আক্রান্ত ছিলাম। আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল! আমি চক্ষুপীড়ায় আক্রান্ত। তিনি তাঁর মুখের লালা আমার চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তার থেকে গরম ও ঠান্ডা দূরীভূত করে দাও। তিনি বললেন, সেদিন থেকে আমি না গরম অনুভব করছি না ঠান্ডা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আমি এমন এক ব্যক্তিকে অভিযানে পাঠাবো যে আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালোবাসে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলও তাকে ভালোবাসেন এবং সে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারীও নয়। লোকদের এই মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা হলো। তিনি আলী (রাঃ)-কে ডেকে পাঠান এবং তাকেই (সেনাবাহিনীর) পতাকা দান করেন। [১১৫] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হাসান ও হুসায়ন জান্নাতী যুবকদের নেতা এবং তাদের পিতা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে। [১১৬] আবূ ইসাহাক (আমর বিন আবদুল্লাহ) হুবশী বিন জুনাদাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি আলী আমার থেকে এবং তার থেকে। আলীই আমার পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে। [১১৭] আব্বাদ বিন আবদুল্লাহ আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তার রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাই। আমি পরম সত্যবাদী। আমার পরে কেবল মিথ্যাবাদীই এই (খেতাব) দাবি করে। আমি লোকদের সাত বছর পূর্বেই সালাত আদায় করেছি। [১১৮] সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) একবার হাজ্জ করতে আসেন। সা‘দ (রাঃ) তার নিকটে উপস্থিত হলে লোকেরা আলী (রাঃ) সম্পর্কে (অশোভন) উক্তি করে। এতে সা‘দ (রাঃ) অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে কটুক্তি করলে যার সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি যার বন্ধু, আলী তার বন্ধু। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরো বলতে শুনেছিঃ তুমি আমার কছে ঐরূপ যেরূপ ছিলেন হারূন (আ.) মূসা (আ.)-এর নিকট। তবে আমার পরে কোন নবী নেই। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরো বলতে শুনেছিঃ আজ (খায়বার যুদ্ধের দিন) আমি অবশ্যই এমন ব্যক্তির হাতে (যুদ্ধের) পতাকা অর্পন করবো, যে আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালোবাসে। [১১৯]
যুবায়র (রাঃ)-এর সম্মান
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, বনূ কুরায়যার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কে আমাদের নিকট (কাফির) সম্প্রদায়ের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে? যুবয়র (রাঃ) বলেন, আমি। তিনি পুনরায় বলেন, কে আমাদের নিকট (কাফির) সম্প্রদায়ের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে? যুবয়র (রাঃ) বলেন, আমি। এভাবে তিনবার এ কথার পুনরাবৃত্তি হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক নাবীর হাওয়ারী (জানবাজ সহচর) ছিল, আমার হাওয়ারী হলো যুবায়র। [১২০] যুবায়র (ইবনুল আওওয়াম) (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহূদের যুদ্ধের দিন তাঁর পিতামাতাকে আমার জন্য একত্র (উল্লেখ) করেন। [১২১] হিসাম বিন উরওয়াহ, তার পিতা (উরওয়াহ ইবনুয-যুবায়র) তিনি বলেন, আয়িশাহ (রাঃ), আমাকে বললেন, হে উরওয়াহ! তোমরা দু’জন পিতৃপুরুষ সেই লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে (অনুবাদ): “যারা ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার পরও আল্লাহ ও তার রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে” (সূরাহ আল ইমরানঃ ১৭২)। আবূ বাকর ও যুবায়র (রাঃ)। [১২২]
তালহাহ বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-এর সম্মান
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তালহাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেন, একজন শহীদ যমীনের বুকে বিচরন করেছে। [১২৩] মুআবিয়াহ বিন আবূ সুফাইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালহা (রাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বলেন, যারা নিজেদের মানৎ পূর্ণ করেছে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। [১২৪] মূসা বিন তালহা আমরা মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যারা নিজেদের মানৎ পূর্ণ করেছে, তালহাহ তাদের অন্তর্ভুক্ত। [১২৫] কায়স (বিন আবূ হাসিম) আমি তালহাহহ (রাঃ)-এর কর্তিত হাত দেখেছি, যা দ্বারা তিনি উহূদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (প্রতি আক্রমন) প্রতিহত করেছিলেন। [১২৬]
সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর সম্মান
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সা‘দ বিন মালিক ব্যতীত অপর কারো জন্য তার পিতা-মাতাকে একত্রে উল্লেখ করতে দেখিনি। তিনি উহূদের যুদ্ধ চলাকালে তাকে বললেন, হে সা’দ! তীর নিক্ষেপ করো, আমার পিতা তোমার জন্য উৎসর্গিত হোক। [১২৭] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব তিনি বলেন, আমি সা‘দ ইবনুল আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহূদের দিন যুদ্ধ চলাকালে আমার জন্য তাঁর পিতা-মাতাকে একত্র করেছেন। তিনি বলেন, হে সা‘দ! তীর নিক্ষেপ করো, আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গিত হোক। [১২৮] কায়স (বিন আবূ হাযিম) আমি সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাস্তার তীর বর্ষণকারী প্রথম আরব। [১২৯] সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি, সেদিন আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। কিন্তু আমি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সাত দিন যাবৎ গোপন রাখি। আমি ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি। [১৩০]
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবা (রাঃ)-দের সম্মান
সাঈদ বিন যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ ব্যক্তির মধ্যে দশম জন। তিনি বলেন, আবূ বাকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, তালহাহহ্ জান্নাতী, যুবায়র জান্নাতী, সা‘দ জান্নাতী ও আবদুর রহমান বিন আওফ জান্নাতী। সাঈদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, আমি। [১৩১] সাঈদ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দেই যে, আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ হে হেরা (পর্বত)! স্থির হও। কেননা তোমার উপর একজন নবী, একজন পরম সত্যবাদী ও একজন শহীদ রয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নাম ধরে গণনা করেনঃ আবূ বাকর, উমার, উসমান, আলী, তালহাহহ, যুবায়র, সা‘দ, বিন আওফ ও সাঈদ বিন যায়দ। [১৩২]
আবূ উবাইদাহ বিন জাররাহ (রাঃ)-এর সম্মান
হুযায়ফাহ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজরানবাসীদের বলেন, আমি অচিরেই তোমাদের সাথে একজন আমানতদার (বিশস্ত) লোক পাঠাচ্ছি, যে সত্যিকারে আমানতদার (বিশস্ত)। (রাবী বলেন), লোকেরা এই মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা করছিল। অতঃপর তিনি আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে পাঠান। [১৩৩] আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররা (রাঃ)-কে বললেনঃ এ ব্যক্তি হলো এ উম্মাতেরর আমানতদার (পরম বিশ্বস্ত ব্যক্তি)। [১৩৪]
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ)- এর সম্মান
আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যদি পরামর্শ না করেই কাউকে খলীফা নিযুক্ত করতাম, তাহলে বিন উম্মে আব্দকেই খলীফা নিযুক্ত করতাম। [১৩৫] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আবু বাক্র ও উমার (রাঃ) তাকে সুসংবাদ দেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ উত্তমরূপে তিলাওয়াত করতে চায়, যেভাবে তা নাযিল হয়েছে, সে যেন ইবনু উম্মে আবদ-এর পাঠ মোতাবেক তিলাওয়াত করে। [১৩৬] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তোমার জন্য পর্দা (বাধা) তুলে নেয়া হয়েছে। তাই তুমি আমার নিকট এসে আমার গোপন কথা শুনতে পারো, যাবত না আমি তোমাকে নিষেধ করি। [১৩৭]
আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর সম্মান
আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আমরা কুরায়শ গোত্রের লোকেদের সমাবেশে তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাদের আলোচনা বন্ধ করে দিত। আমরা বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, লোকেদের কী হলো যে, তাদের পারস্পারিক আলোচনাকালে আমার আহ্লে বাইতের কোন লোককে দেখলে তারা তাদের কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়? আল্লাহ্র শপথ! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যতক্ষণ না সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার সাথে তাদের আত্নীয় সম্পর্কের কারণে তাদেরকে ভালোবাসবে। [১৩৮] আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা আমাকে প্রিয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন, যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে তিনি বন্ধুরূপে গ্রহন করেছিলেন। কিয়ামাতের দিন জান্নাতে আমি ও ইবরাহীম (আঃ) সামনাসামনি আসনে উপবিষ্ট থাকবো এবং আব্বাস (রাঃ) আমাদের দু’জনের মাঝে একজন মু’মিন হিসাবে অবস্থান করবেন। [১৩৯]
হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-এর সম্মান
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, হে আল্লাহ্! আমি অবশ্যই হাসানকে ভালোবাসি। অতএব আপনিও তাকে ভালোবাসুন এবং যারা তাকে ভালোবাসে আপনি তাদেরও ভালোবাসুন। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন। [১৪০] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি হাসান ও হুসায়নকে ভালোবাসে, সে আমাকেই ভালোবাসে এবং যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে। [১৪১] ইয়ালা বিন মু্র্রাহ (রাঃ) তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁকে প্রদত্ত এক আহারের দাওয়াতে রওনা হন। তখন হুসায়ন (রাঃ) গলির মধ্যে খেলাধূলা করছিলেন। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের অগ্রভাগে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর দু’ হাত বিস্তার করে দিলেন। বালকটি এদিক ওদিক পালাতে থাকলো এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হাসতে হাসতে ধরে ফেলেন। এরপর তিনি তাঁর এক হাত ছেলেটির চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অপর হাত তাঁর মাথার তালুতে রাখলেন, অতঃপর তাকে চুমা দিলেন এবং বললেনঃ হুসায়ন আমার থেকে এবং আমি হুসায়ন থেকে। যে ব্যক্তি হুসায়নকে ভালোবাসে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে ভালোবাসেন। হুসায়ন আমার নাতিদের একজন। ১৪৪ (ক)। {[আলী বিন মুহাম্মদ] [ওয়াকী ] [সুফইয়ান (রাঃ)]} সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [১৪২] যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী, ফাতিমাহ, হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, যারা তোমাদের শান্তি ও স্বস্তিতে রাখবে, আমিও তাদের শান্তিতে রাখবো এবং যারা তোমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, আমিও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো। [১৪৩]
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ)-এর সম্মান
আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলাম। আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) প্রবেশানুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকে অনুমতি দাও। এই পাক ও পবিত্র ব্যক্তিকে স্বাগতম। [১৪৪] আলী (রাঃ) (হানী) বলেন, আম্মার (রাঃ) আলী (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলেন, এই পাক-পবিত্র ব্যক্তিকে স্বাগতম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আম্মার এমন একটি পাত্র যার গলা পর্যন্ত ঈমানে ভরপুর। [১৪৫] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আম্মার এমন ব্যক্তি, যাকে দু’টি বিষয়ের মধ্যে এখতিয়ায় দেয়া হলে সে অধিকতর হিদায়াতপূর্ণ বিষয়টি গ্রহণ করে। [১৪৬]
সালমান, আবু যার ও মিকদাদ (রাঃ)-এর সম্মান
বুরাইদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা চার ব্যক্তিকে ভালোবাসতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনিও তাদের ভালোবাসেন। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, আলী তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (অপর তিনজন) আবু যার, সালমান ও মিকদাদ। [১৪৭] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) সর্বপ্রথম সাত ব্যক্তি তাদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেন। তারা হলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বাক্র (রাঃ), আম্মার (রাঃ), তাঁর মাতা সুমাইয়্যাহ (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ), বিলাল (রাঃ) ও মিকদাদ (রাঃ)। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা আবু তালিবের মাধ্যমে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ্ তা’আলা আবু বাকর (রাঃ)-এর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন তার স্বগোত্রীয়দের দ্বারা। অবশিষ্ট সকলকে মুশরিকরা আটক করে। তারা তাদেরকে লৌহবর্ম পরিধান করিয়ে প্রখর রোদের মাঝে চিৎ করে শুইয়ে দিত। তাদের মাঝে এমন কেউ ছিল না, যাকে দিয়ে তারা তাদের ইচ্ছানুসারে স্বীকারোক্তি করায়নি। কেবল বিলাল (রাঃ) নিজেকে আল্লাহ্র রাস্তায় অপমানিত করেন এবং লোকেরাও তাকে অপমানিত করে। তারা তাকে আটক করে বালকদের হাতে তুলে দেয়। তারা তাকে নিয়ে মাক্কাহর অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াতো এবং তিনি শুধু আহাদ আহাদ (আল্লাহ্ এক, আল্লাহ্ এক) বলতেন। [১৪৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ্র পথে আমাকে যতটা নির্যাতন করা হয়েছে, অপর কাউকে সেরূপ নির্যাতন করা হয়নি এবং আমাকে আল্লাহ্র পথে যতটা ভীতসন্ত্রস্ত করা হয়েছে, অপর কাউকে সেরূপ ভীতসন্ত্রস্ত করা হয়নি। আমার ও বিলালের উপর দিয়ে তিন তিনটি রাত এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে যে, বিলালের বগলের নিচে দাবিয়ে রাখা সামান্য খাদ্য ছাড়া এমন কোন খাদ্য ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। [১৪৯]
বিলাল (রাঃ)-এর সম্মান
ইবনু উমার (রাঃ) (সালিম) বলেন, জনৈক কবি বিলাল বিন আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর প্রশংসা করে বলেন, বিলাল বিন আবদুল্লাহ হলেন সর্বোত্তম বিলাল। তখন ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, তুমি মিথ্যা বলছো। না, বরং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিলালই হলেন সর্বোত্তম বিলাল। [১৫০]
খাব্বাব (রাঃ)-এর সম্মান
আবু লায়লা আল-কিন্দী (সালামাহ বিন মুআবিয়াহ) খাব্বাব (ইবনুল আরাত (রাঃ)) উমার (রাঃ)-এর নিকট এলে তিনি বলেন, কাছে এসো। তোমার চেয়ে উপযুক্ত এই মজলিসে যোগদানকারী আর কেউ নেই, আম্মার (রাঃ) ব্যতীত। খাব্বাব (রাঃ) তাঁর পিঠে মুশরিকদের বীভৎস শাস্তির দাগসমূহ তাকে দেখাতে লাগলেন। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে আমার উম্মাতের প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ার্দ্র ব্যক্তি আবু বাক্র। তাদের মধ্যে আল্লাহ্র দ্বীনের ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা কঠোর মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি উমার। তাদের মধ্যে সর্বাধিক সত্যিকার লজ্জাশীল ব্যক্তি উসমান। তাদের মধ্যে সর্বাধিক বিচক্ষণ বিচারক আলী বিন আবু তালিব। তাদের মধ্যে আল্লাহ্র কিতাবের সর্বোত্তম পাঠকারী উবাই বিন কা’ব। তাদের মধ্যে হালাল ও হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ব্যক্তি মু’আয বিন জাবাল। তাদের মধ্যে ফারায়িয (দায়ভাগ) সম্পর্কিত বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী যায়দ বিন সাবিত। শোন! প্রত্যেক উম্মাতের একজন আমীন (বিশ্বস্ত ব্যক্তি) থাকে। আর এ উম্মাতের আমীন হলো আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ। [১৫২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তবে এ সূত্রে আরো আছে যে, তিনি যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) সম্পর্কে বলেন, তাদের মধ্যে তিনি ফারায়িদ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। [১৫৩]
আবু যার (রাঃ)-এর সম্মান
আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বাচনিক সত্যবাদিতায় আবু যারের চেয়ে উত্তম কোন ব্যক্তিকে আসমান ছায়াদান করেনি এবং পৃথিবী তার বুকে ধারণ করেনি। [১৫৪]
সা‘দ বিন মুআয (রাঃ)-এর সম্মান
আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক টুকরা সাদা রেশমী কাপড় উপহার দেয়া হল। উপস্থিত লোকজন একের পর এক তা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি এটি দেখে অবাক হচ্ছো! তারা তাঁকে বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! জান্নাতে সা‘দ বিন মুআয-এর রুমাল এর চাইতেও উত্তম হবে। [১৫৫] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সা‘দ বিন মুআয-এর মৃত্যুতে মহান আল্লাহ্র আরশ কেঁপে উঠেছিল। [১৫৬]
জারীর বিন আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ)-এর সম্মান
জারীর বিন আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) আমি ইসলাম গ্রহণের দিন থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে প্রবেশে আমাকে কখনো বাধা দেননি এবং তিনি যখনই আমাকে দেখেছেন আমার সামনে হেসে দিয়েছেন। আমি তাঁর নিকট অভিযোগ করি যে, আমি ঘোড়ার পিঠে স্থির হয়ে থাকতে পারি না। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকে মৃদু আঘাত করে বলেন, হে আল্লাহ্! তাকে (ঘোড়ার পিঠে) স্থির রাখো এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দাও। [১৫৭]
বাদ্র যুদ্ধ অংশগ্রহণকারী
রাফি‘ বিন খাদীজ (রাঃ) জিবরীল (আঃ) অথবা একজন ফেরেশ্তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, আপনাদের মধ্যে যারা বদর যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছে আপনারা তাদের কেমন গণ্য করেন? তাঁরা বলেন, তারা আমাদের মধ্যে উত্তম লোক। ফেরেশ্তা বলেন, অনুরূপভাবে তারাও আমাদের মধ্যে উত্তম ফেরেশ্তা (যারা বদর যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছিল)। [১৫৮] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার সহাবীদের গালি দিও না। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ যদি উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও দান-খয়রাত করে তবে তা তাদের কারো এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ দান-খয়রাত করার সমান মর্যাদাসম্পন্নও হবে না। [১৫৯] নুসায়র বিন যু‘লূক ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের গালি দিও না। অবশ্যই তাদের কারো এক মুহূর্তের সৎকাজ তোমাদের কারো সারা জীবনের সৎকাজের চেয়েও উত্তম।
আনসারদের ফাদীলাত
আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আনসারদের ভালোবাসে, আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন এবং যে ব্যক্তি আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। শু‘বাহ (রহঃ) বলেন, আমি আদী (রহঃ)-কে বললাম, আপনি কি এটি বারা’ বিন আযিব (রাঃ)-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, অবশ্যই তিনি বর্ণনা করেছেন। [১৬১] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আনসারগণ যেন দেহের আভরণ এবং অন্যরা তার উপরিভাগের (শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন) আভরণ। আনসারগণ যদি কোন গিরি সংকটে বা গিরিখাদে প্রবেশ করে এবং অন্য লোকেরা অন্য গিরিখাদে বা গিরি সংকটে প্রবেশ করে, তবে আমি আনসারদের গিরি সংকটেই যাবো। হিজরতের ঘটনা না ঘটলে আমি আনসারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। [১৬২] আম্র বিন আওফ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা আনসারদের প্রতি দয়াপরবশ হোন, তাদের সন্তানদের প্রতি দয়াপরবশ হোন, তাদের সন্তানদের প্রতি দয়াপরবশ হোন এবং তাদের সন্তানদের সন্তানগণের প্রতিও দয়াপরবশ হোন। [১৬৩] তাহকীক আলবানীঃ হাদীসের শব্দগুলো খুব দুর্বল। সহীহ শব্দে আছে (আরবী)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) –এর সম্মান
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ্! তাকে প্রজ্ঞা ও কুরআনের তাৎপর্য জ্ঞান দান করুন। [১৬৪]
খারিজীর আলোচনা
আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) তিনি খারিজীদের উল্লেখ করে বলেন, তাদের মাঝে খাটো হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তির উদ্ভব হবে। যদি তোমরা স্বেচ্ছায় সৎকাজ ছেড়ে না দিতে, তবে আমি তোমাদের নিকট সেই হাদীস বর্ণনা করতাম যাতে আল্লাহ্ তাআলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যবানিতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীদের সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। অধস্তন রাবী উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি কি এ কথা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, কাবার প্রভুর শপথ! তিনি তিনবার এ কথা বলেন। [১৬৫] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শেষ যমানায় ক্ষুদ্র দাঁতবিশিষ্ট ও স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে। তারা মানুষকে ভালো ভালো কথা বলবে, কুরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত বেগে খারিজ হয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর দ্রুত বেগে শিকারের দিকে ছুটে যায়। অতএব যে ব্যক্তি তাদের সাক্ষাৎ পাবে সে যেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্র নিকট তাদের জন্য তার বিনিময় রয়েছে। [১৬৬] আবু সালামাহ (আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন আওফ) আমি আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি (খারীজী) হারূরিয়াদের সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি তাঁকে একটি সম্প্রদায়ের কথা আলোচনা করতে শুনেছি যারা হবে অত্যধিক ইবাদাতকারী এবং তাদের সলাত-সওমের তুলনায় তোমাদের নিকট তোমাদের সলাত-সওম খুবই নগণ্য মনে হবে। তারা দ্বীন থেকে দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর শিকারের দিকে দ্রুত গতিতে চলে যায়। সে তার তীর তুলে নিয়ে তার ফলার অগ্রভাগ পরখ করবে কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না, অতঃপর তার তীরের (ফলা সংলগ্ন) কাঠ পরখ করবে তাতেও কোন চিহ্ন দেখতে পাবে না। অতঃপর তীরের ফলা পরখ করে তাতেও কিছু দেখতে পাবে না, অতঃপর তীরের পালক পরখ করে তার সন্দেহ হবে যে, সে কিছু চিহ্ন দেখতে পাচ্ছে কিনা। [১৬৭] আবু যার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে আমার উম্মাতের মধ্যে অচিরেই একটি দলের উদ্ভব হবে, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা এত দ্রুতবেগে ধর্মচ্যুত হবে, যেমন তীর ধনুক থেকে শিকারের দিকে দ্রুত ছুটে যায়, অতঃপর তারা দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না। এরা হলো সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট। আবদুল্লাহ ইবনুস-সামিত (রহঃ) বলেন, আমি বিষয়টি হাকাম বিন আম্র আল-গিফারীর ভাই রাফি‘ বিন আম্র (রাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বলেন, আমিও হাদীসটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছি। [১৬৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অবশ্যই আমার উম্মাতের একটি দল কুরআন পড়বে, কিন্তু তারা ইসলাম থেকে দ্রুত বিচ্যুত হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে দ্রুত শিকারের দিকে বেরিয়ে যায়। [১৬৯] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জি‘রানাহ নামক স্থানে গনীমাতের মাল ও সোনারূপা বণ্টন করছিলেন। এগুলো বিলাল (রাঃ)-এর কোলে ছিল। এক ব্যক্তি বললো, হে মুহাম্মাদ! ইনসাফ করুন। কেননা, আপনি ইনসাফ করছেন না। তিনি বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমিই যদি ইনসাফ না করি, তবে আমার পরে কে ইনসাফ করবে? উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে ছেড়ে দিন, আমি এই মুনাফিকের ঘাড় উড়িয়ে দেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দলের উদ্ভব হবে, যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা এমনভাবে ধর্মচ্যুত হবে, যেমন ধনুক থেকে তীর শিকারের দিকে দ্রুত ছুটে যায়। [১৭০] ইবনু আবু আওফা (রাঃ) বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, খারিজীরা হলো জাহান্নামের কুকুর। [১৭১] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একটি দল আবির্ভূত হবে, যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। যখনই তারা আবির্ভূত হবে, তখনই তাদের হত্যা করা হবে। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যখনই এক দল আবির্ভূত হবে তখনই তাদের ধ্বংস করা হবে। এভাবে বিশের অধিক বার তা ঘটবে, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে দাজ্জাল আবির্ভূত হবে। [১৭২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শেষ যমানায় এ উম্মাতের মধ্যে একটি সম্প্রদায় আবির্ভূত হবে, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীর নিচে যাবে না। তাদের চিহ্ন হবে মুণ্ডিত মাথা। তোমরা তাদের দেখতে পেলেই কিংবা তাদের সাক্ষাৎ পেলেই তাদের হত্যা করবে। [১৭৩] আবু উমামাহ (রাঃ) আসমা’নের নিচে সর্বাধিক নিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি তারা, যারা জাহান্নামের কুকুর (খারিজীরা) এবং সর্বোত্তম নিহত তারা যারা তাদের হত্যা করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এরা (খারিজীরা) ছিল মুসলিম, পরে কাফির হয়ে যায়। (আবু গালিব বলেন) আমি বললাম, হে আবু উমামাহ! এটা কি আপনার মন্তব্য? তিনি বলেন, বরং আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে তা বলতে শুনেছি। [১৭৪]
জাহমিয়াহ্ সম্প্রদায় যা অমান্য করে
জারীর বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদ দেখতে পাচ্ছো। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। ফাজ্র ও আসরের সলাতে তোমরা পরাভূত না হয়ে সামর্থ্যবান হলে তাই করো (সলাত কাযা করো না)। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে”-(সূরাহ কাফ ৫০ : ৩৯)। [১৭৫] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, তদ্রূপ কিয়ামাতের দিন তোমাদের প্রভুর দর্শন লাভে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। [১৭৬] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমারা কি আমাদের রবকে দেখতে পাবো? তিনি বলেন, তোমরা কি ঠিক দুপুরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে বাধাগ্রস্ত হও? আমরা বললাম, না। তিনি আবার বললেন, পূর্ণিমার রাতে মেঘমুক্ত আকাশে তোমাদের চাঁদ দেখতে কি অসুবিধা হয়? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, ঐ দু’টি দেখতে তোমাদের যেমন কষ্ট হয় না, তদ্রূপ তাঁর দর্শন লাভেও তোমাদের কোন কষ্ট হবে না। [১৭৭] আবু রযীন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা কি কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্কে দেখতে পাবো এবং তাঁর সৃষ্টির মাঝে এর নিদর্শন কী? তিনি বললেন, হে আবু রযীন! তোমাদের প্রত্যেকে কি চাঁদকে পৃথকভাবে দেখতে পায় না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, আল্লাহ্ অতীব মহান এবং এটাই হলো তাঁর সৃষ্টির মাঝে (তাঁর) নিদর্শন। [১৭৮] আবু রযীন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন আল্লাহ্র বান্দারা (সামান্য বিপদেই) হতাশ হয় এবং (বিপদ কেটে উঠার জন্য) আল্লাহ্ ভিন্ন অপরের নৈকট্য অন্বেষী হয়, তখন আমাদের প্রভু তার এ আচরণে হাসেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! মহান প্রভু কি হাসেন? তিনি বলেন, হাঁ। আমি বললাম, আমরা কখনো পুণ্যের কাজ ত্যাগ করবো না, যাতে আমাদের প্রভু হাসেন। [১৭৯] আবু রাযীন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের প্রতিপালক তাঁর সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার পূর্বে কোথায় ছিলেন? তিনি বলেন, মেঘমালার মধ্যে, যার নিচেও বায়ু ছিল না এবং উপরেও বায়ু পানি ছিল না। অতঃপর পানির উপর তিনি তাঁর আরশ সৃষ্টি করেন। [১৮০] সফওয়ান বিন মুহ্রিয আল-মাযিনী একদা আমরা আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলেন, হে ইবনু উমার! আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একান্তে কথা বলা সম্পর্কে কিভাবে বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : কিয়ামাতের দিন ঈমানদার ব্যক্তিকে তার প্রতিপালক প্রভুর খুব নিকটবর্তী করা হবে, এমনকি তিনি তার থেকে পর্দা সরিয়ে নিবেন, অতঃপর তার থেকে তার গুণাহসমূহের স্বীকারোক্তি আদায় করবেন। তিনি বলবেন : তুমি কি চিনতে পেরেছ? সে বলবে, হে প্রভু! হ্যাঁ, আমি চিনতে পেরেছি, এমনকি আল্লাহ্র মর্জিমাফিক সে স্বীকার করতে থাকবে। তিনি বলবেন, আমি তোমার এ গুণাহসমূহ দুনিয়াতে লুকিয়ে রেখেছি এবং আজ তোমার সেই গুণাহ ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর তার ডানহাতে তার সৎকাজের হিসাব সম্বলিত একটি পুস্তিকা প্রদান করা হবে। অপরদিকে কাফের ও মুনাফিকদের উপস্থিত সকলের সামনে ডাক দিয়ে বলা হবে, “এরাই তাদের প্রতিপালক প্রভুর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। সাবধান! জালিমদের প্রতি আল্লাহ্র অভিসম্পাত” – (সূরাহ হূদ ১১:১৮)। [১৮১] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতবাসীরা তাদের ভোগ-বিলাসে মশগুল থাকবে, এমতাবস্থায় তাদের সামনে একটি নূরের আলোকচ্ছটা বিচ্ছুরিত হবে। তারা তাদের মাথা তুলে দেখতে পাবে যে, তাদের মহান প্রভু তাদের উপর দিক থেকে উদ্ভাসিত হয়েছেন। তিনি বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! আস্সালাম আলাইকুম (তোমাদের উপর অনন্ত শান্তি বর্যিত হোক)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটাই হলো আল্লাহ্র বাণীর প্রমাণ (অনুবাদ) : "সালাম (অনন্ত শান্তি) পরম দয়ালু প্রভুর পক্ষ থেকে সম্ভাষণ"-(সূরাহ ইয়াসিন ৩৬ : ৫৮)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রতি তাকাবেন এবং তারাও তাঁর প্রতি অপলক নেত্রে তাকাবে। জান্নাতীরা যতক্ষণ আল্লাহ্র দীদারে মশগুল থাকবে ততক্ষণ তারা অন্য কোন ভোগ-বিলাসের প্রতি ফিরেও তাকাবে না। অবশেষে তিনি তার দৃষ্টি থেকে অন্তর্হিত হবেন এবং তাঁর নূর ও বারাকাত তাদের জন্য তাদের আবাসে অবারিত থাকবে। [১৮২] আদী বিন হাতিম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার মহান প্রভু কথা বলবেন এবং তার ও প্রভুর মধ্যখানে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডান দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। সে তার বাম দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। সে তার সামনের দিকে তাকালে জাহান্নাম তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। অতএব কারো জাহান্নামের আগুন থেকে আত্নরক্ষা করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তাই করে। [১৮৩] আবদুল্লাহ্ বিন কায়স আল-আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু'টি জান্নাত এবং তার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সব কিছুই হবে রূপার তৈরি। আরও দু'টি জান্নাত এবং তার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সব কিছুই হবে সোনার তৈরি। আদন নামক জান্নাতে জান্নাতীগণ ও তাদের বারাকাতময় মহান প্রভুর দীদার লাভের মাঝখানে তাঁর চেহারার উপর তাঁর গৌরবের চাদর ব্যতীত আর কোন প্রতিবন্ধক থাকবে না। [১৮৪] সুহায়ব (বিন সিনান) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) : "যারা কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ও আরো অধিক" - (সূরাহ য়ূনুস ১০ : ২৬)। অতঃপর তিনি বলেন, জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর এক ঘোষণাকারী ডেকে বলবে : জান্নাতবাসীগণ! নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহ্ তাআলার একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে যা তিনি এখন পূর্ণ করবেন। তারা বলবে, তা কী? আল্লাহ্ তাআলা কি আমাদের (সৎ কর্মের) পাল্লা ভারী করেননি, আমাদের চেহারাগুলো আলোকিত করেননি, আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ্ তাআলা আবরণ উন্মুক্ত করবেন এবং তারা তাঁর দিকে তাকাবে। আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ্ তাদেরকে তাঁর দীদারের চাইতে অধিক প্রিয় ও অধিক নয়নপ্রীতিকর আর কিছু দান করেননি। [১৮৫] আয়িশাহ (রাঃ) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য যিনি সব রকমের ডাক শুনেন। এক মহিলা তার অভিযোগ নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসে। তখন আমি ঘরের এক কোণে অবস্থানরত ছিলাম। সে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, কিন্তু আমি তার বক্তব্য শুনতে পাইনি। তখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : "আল্লাহ্ অবশ্যই সেই নারীর কথা শুনেছেন, যে তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে ... " -(সূরাহ মুজাদালা ৫৮ : ১)। [১৮৬] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টির পূর্বেই তাঁর হাতে তাঁর নিজের ব্যাপারে লিপিবদ্ধ করেন : আমার দয়া আমার ক্রোধের উপর অগ্রবর্তী হয়েছে। [১৮৭] তালহাহহ্ বিন খিরাস (রহঃ) আমি জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি: উহূদের যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ্ বিন আম্র বিন হারাম (রাঃ) শহীদ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন, হে জাবির! আল্লাহ্ তাআলা তোমার পিতা সম্পর্কে যা বলেছেন, আমি কি তোমাকে তা অবহিত করবো না? ইয়াহইয়া (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে জাবির! আমার কী হলো, আমি তোমাকে ভগ্ন হৃদয় দেখছি কেন? জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন এবং তিনি অনেক সন্তান ও ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিবো না যে, আল্লাহ্ তাআলা তোমার পিতার সাথে কিভাবে সাক্ষাৎ করেছেন? তিনি বলেন, অবশ্যই, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাআলা কখনো অন্তরাল ছাড়া কারো সাথে কথা বলেননি, কিন্তু তোমার পিতার সাথে অন্তরাল ছাড়াই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, কে আমার বান্দা! আমার কাছে কামনা করো, আমি তোমাকে দান করবো। তোমার পিতা বললো, হে প্রভু! আমাকে জীবন দান করুন, যাতে আমি আপনার রাস্তায় পুনরায় শহীদ হতে পারি। মহান ও পবিত্র প্রতিপালক আল্লাহ্ বলেন, আমি তো আগেই লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি যে, লোকেরা (মৃত্যুর পর) (পৃথিবীতে) ফিরে যাবে না। তোমার পিতা বললো, হে প্রভু! তাহলে আমার পশ্চাতবর্তীদের কাছে (আমার সৌভাগ্যের) এ খবর পৌঁছে দিন। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ): "যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে, তোমরা তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তারা তাদের প্রভুর নিকট থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত"-(সূরাহ আল ইমরান: ৩ :১৬৯)। [১৮৮] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা দু' ব্যক্তিকে দেখে হাসবেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করার পর দু'জনই জান্নাতবাসী হবে। তাদের একজন আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা হত্যাকারীর তাওবাহ কবূল করবেন, ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হবে। [১৮৯] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামাতের দিন যমীন ও আসমানকে গুটিয়ে তাঁর ডান হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলবেন : আমিই রাজাধিরাজ, পৃথিবীর রাজা-বাদশারা (আজ) কোথায়? [১৯০] আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আমি বাতহা নামক স্থানে একদল লোকের সাথে ছিলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তাদের সাথে ছিলেন। তখন একখণ্ড মেঘ তাকে অতিক্রম করে। তিনি মেঘখণ্ডের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমরা এটাকে কী নামে অভিহিত করো? তারা বলেন, মেঘ। তিনি বলেন, এবং মুয্ন। তারা বলেন, মুয্নও বটে। তিনি বলেন, আনানও। আবু বাক্র (রাঃ) বলেন, তারা সবাই বললেন, আনানও বটে। তিনি বলেন, তোমাদের ও আস'মানের মাঝে তোমরা কত দূরত্ব মনে করো? তারা বলেন, আমরা অবগত নই। তিনি বলেন, তোমাদের ও আসমা'নের মাঝে ৭১ বা ৭২ বা ৭৩ বছরের দূরত্ব রয়েছে। এক আসমান থেকে তার ঊর্ধ্বের আস'মানের দূরত্বও তদ্রূপ। এভাবে তিনি সাত আস'মানের সংখ্যা গণনা করেন। অতঃপর সপ্তম আকাশের উপর একটি সমুদ্র আছে যার শীর্ষভাগ ও নিম্নভাগের মধ্যকার ব্যবধান (গভীরতা) দু' আস'মানের মধ্যকার দুরত্বের সমান। তার উপর রয়েছেন আটজন ফেরেশ্তা, যাদের পায়ের পাতা ও হাঁটুর মধ্যকার ব্যবধান দু' আসমা'নের মধ্যকার দুরত্বের সমান। তাদের পিঠের উপরে আল্লাহ্র আরশ অবস্থিত, যার উপর ও নিচের ব্যবধান (উচ্চতা) দু' আসমা'নের মধ্যকার দুরত্বের সমান। তার উপরে রয়েছেন বরকতময় মহান আল্লাহ্। [১৯১] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা আসমা'নে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা জারী করলে মালায়িকাহ বিনয়াবনত হয়ে তাদের পাখাসমূহ দোলাতে থাকেন। ফলে তা থেকে মসৃণ পাথরের উপর জিঞ্জিরের আঘাতের আওয়াজের অনুরূপ আওয়াজ হতে থাকে। "অতঃপর তাদের অন্তরের ভীতিকর অবস্থা দূরীভূত হলে তারা পরস্পর জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা বলেন, তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি সমুচ্চ মহান" - (সূরাহ সাবা ৩৪ : ২৩)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাদের পারস্পারিক আলোচনা শয়তান ওৎ পেতে শোনে এবং ভূপৃষ্ঠে অবস্থানকারী তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে তা পৌঁছে দেয়। কখনো তা নিম্নে অবস্থানকারীদের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়। শ্রুত কথা তারা পৃথিবীতে এসে গণক বা যাদুকরের মুখে ঢেলে দেয়। আবার কখনো তারা কিছুই শুনতে পায় না, বরং (নিজেদের পক্ষ থেকে) তা গণক ও যাদুকরের মুখে তাদের কথার সাথে শত মিথ্যা যোগ করে ঢেলে দেয়। তাই কেবল সত্য সেটিই হয় যা তারা আসমান থেকে শোনে। [১৯২] আবু মুসা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বিষয় নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ ঘুমান না এবং ঘুমানো তাঁর জন্য সঙ্গতও নয়। তিনি মীযান (তুলাদণ্ড) নীচু করেন এবং উঁচু করেন। রাতের কর্মকাণ্ড দিনের কর্মকাণ্ডের পূর্বেই এবং দিনের কর্মকাণ্ড রাতের কর্মকাণ্ডের পূর্বেই তাঁর নিকট পৌঁছানো হয়। তাঁর পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। তিনি তাঁর পর্দা তুলে নিলে তাঁর চেহারার জ্যোতি বা মহিমা তাঁর সৃষ্টির দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত সব কিছু ভস্মীভূত করে দিত। [১৯৩] আবু মুসা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ ঘুমান না এবং ঘুমানো তাঁর জন্য শোভাও পায় না। তিনি দাঁড়িপাল্লা উঠা-নামা করান। তাঁর পর্দা হলো নূর। তিনি তাঁর পর্দা তুলে নিলে তাঁর চেহারার জ্যোতি (বা মহিমা) মানুষের দৃষ্টিসীমার সব কিছুকে জ্বালিয়ে দিত। অধস্তন রাবী আবু উবায়দাহ (রহঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করেন : "ধন্য তারা যারা আছে এ আলোর মাঝে এবং যারা আছে তার চারপাশে। জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ পবিত্র ও মহিমান্বিত" (সূরাহ নামল : ৮) [১৯৪] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্র ডান হাত পরিপূর্ণ, কোন কিছুই তার পূর্ণতাকে হ্রাস করতে পারে না। তিনি রাত-দিন অবধারিত দান করেন। তাঁর অপর হাতে রয়েছে তুলাদন্ড। তিনি তুলাদন্ড উঠানামা করান। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহ্ আসমান-যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে অবাধে খরচ করছেন, তারপরও তাতে তাঁর হাতে যা আছে তার সামান্যও কমেনি। [১৯৫] আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ (কিয়ামাতের দিন) আসমান ও যমীনসমূহকে ধরে তাঁর হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিবেন। তিনি তাঁর হাত সংকুচিত করবেন এবং সম্প্রসারিত করবেন, অতঃপর বলবেনঃ "আমি মহাপ্রতাপশালী। দাম্ভিকরা কোথায়?" রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানদিক ও বামদিকে ঝুঁকতে থাকলেন, এমনকি আমি দেখলাম যে, মিম্বারটি নিচে থেকে আন্দোলিত হচ্ছে। আমি ভাবলাম, মিম্বারটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমেত উল্টে পড়ে যাবে না তো! [১৯৬] আন-নাওওয়াস বিন সামআন আল-কিলাবী (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিটি অন্তঃকরণ দয়াময় আল্লাহ্র দু' আঙ্গুলের মাঝখানে অবস্থিত। তিনি চাইলে তা সোজা পথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তিনি চাইলে তা বক্র পথে চালিত করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ ''হে অন্তরসমূহের স্থিরতাদানকারী! আমাদের অন্তরসমূহকে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন।'' তিনি আরো বলেন, তুলাদন্ডও দয়াময় আল্লাহ্র হাতে। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত কোন সম্প্রদায়কে উন্নত করবেন এবং কোন সম্প্রদায়কে অবনত করবেন। [১৯৭] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনটি বিষয়ে হাসেন (আনন্দিত হন)ঃ সলাতের কাতারের জন্য, যে ব্যক্তি গভীর রাতে সলাতরত থাকে এবং যে ব্যক্তি সৈন্যবাহিনীকে পিছু হটতে দেখেও জিহাদরত থাকে।' [১৯৮] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের মৌসুমে নিজেকে লোকদের সামনে পেশ করতেন এবং বলতেনঃ কুরায়শরা আমাকে আমার প্রভুর কালাম প্রচারে বাধা দিচ্ছে। তোমাদের মাঝে এমন কে আছে যে আমাকে তার গোত্রের কাছে নিরাপদে নিয়ে যাবে? [১৯৯] আবুদ-দারদা' (ঊওয়াইমির বিন মালিক) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র বানীঃ "তিনি প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত"-(সুরাহ আর-রহমান ৫৫ : ২৯) সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ্র কাজের মধ্যে তিনি গুনাহ ক্ষমা করেন, বিপদাপদ দূর করেন, এক দলকে উন্নীত করেন এবং অপর দলকে অবনমিত করেন। [২০০]
যে ব্যক্তি কোন উৎকৃষ্ট নীতি বা নিন্দনীয় নীতির প্রচলন করে।
জারীর বিন আব্দুল্লাহ বিন জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন উত্তম পন্থার প্রচলন করলো এবং লোকে তদানুযায়ী কাজ করলো, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদানুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ প্রথার প্রচলন করলো এবং লোকেরা তদানুযায়ী কাজ করলো, তার জন্য তার নিজের পাপ তো আছেই, উপরন্তু যারা তদানুযায়ী কাজ করেছে, তাদের সমপরিমাণ পাপও সে পাবে, এতে তাদের পাপ থেকে মোটেও হ্রাস পাবে না। [২০১] আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি (সাহায্যের জন্য) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলে তিনি তাকে সাহায্য করার জন্য (লোকেদের) উৎসাহিত করলেন। এক ব্যক্তি বললো, আমার পক্ষ থেকে এই এই পরিমাণ। রাবী বলেন, উক্ত মজলিসে এমন কেউ অবশিষ্ট রইল না, যে কম বেশি কিছু ঐ ব্যক্তিকে দান করেনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি কোন উত্তম পন্থার প্রচলন করলে এবং তদানুযায়ী কাজ করা হলে সে তার পূর্ণ প্রতিদান পাবে এবং যারা সেই পন্থা অনুসরণ করে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও ঐ ব্যক্তি পাবে, এতে তাদের প্রতিদানে কোন ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি কোন মন্দ পন্থার প্রচলন করলে এবং তদানুযায়ী কাজ করা হলে পূর্ণ পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে এবং যারা উক্ত পন্থার অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমাণ পাপও ঐ ব্যক্তির উপর বর্তাবে, এতে তাদের পাপের বোঝা মোটেও হালকা হবে না। [২০২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কোন আহবানকারী ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করলে তার অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ পাপ তার উপর বর্তাবে এবং তাতে তার অনুসরণকারীদের পাপের বোঝা মোটেও হালকা হবে না। আবার যে কোন ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করলে সে তার অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং এতে তাদের সাওয়াব মোটেই হ্রাসপ্রাপ্ত হবে না। [২০৩] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে ডাকে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তাতে তার অনুসারীদের পুরস্কারে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ গুনাহ হয় এবং এতে তার অনুসারীদের পাপের বোঝা কিছুমাত্র কমবে না। [২০৪] আবু জুহাইফাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি কোন ভাল প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুসারে কাজ করলে তার জন্য এ কাজের পুরস্কার রয়েছে, অধিকন্তু তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পুরস্কারও রয়েছে। অবশ্য তাতে তাদের পুরস্কারে কোন ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি কোন মন্দ প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদানুযায়ী কাজ করা হলে তার জন্য এ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং যারা তদনুসারে কাজ করবে, তাদের গুনাহের সমপরিমাণ তার উপর বর্তাবে, এতে তাদের গুনাহের পরিমাণ কিছুই কমবে না। [২০৫] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি কোন জিনিসের (মতবাদের) দিকে আহবান করলে কিয়ামাতের দিন তাকে সেই আহবানসহ দাঁড় করানো হবে, সে মাত্র এক ব্যক্তিকে আহবান করে থাকলেও। [২০৬]
যে ব্যক্তি কোন বিলুপ্ত সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করে তার বিনিময় যা পাবে
আম্র বিন আওফ আয-মুযানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার একটি (মৃত) সুন্নাত জীবিত করলো এবং লোকেরা তদানুযায়ী আমাল করলো, সেও আমালকারীদের সমপরিমাণ পুরস্কার পাবে এবং তাতে আমালকারীদের পুরস্কার আদৌ হ্রাস পাবে না। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি বিদ‘আতের প্রচলন করলে এবং তদানুযায়ী আমাল করা হলে তার উপর আমালকারীদের সমপরিমাণ পাপ বর্তাবে এবং তাতে আমালকারীদের পাপের বোঝা আদৌ হালকা হবে না। [২০৭] আমর বিন আওফ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার (মৃত্যুর) পরে বিলুপ্ত হওয়া আমার কোন সুন্নাত জীবিত করলো, সে তদানুযায়ী আমালকারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তাতে আমালকারীদের সামান্যও হ্রাস পাবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এমন কোন বিদ‘আতের প্রচলন করলো, যার প্রতি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল সন্তুষ্ট নন, তার উপর বিদ‘আত অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ গুনাহ বর্তাবে এবং তাতে অনুসরণকারীদের পাপের পরিমান কিছুই হ্রাস পাবে না। [২০৮]
যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং তা শিক্ষা দেয় তার সম্মান
উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম ও অধিক মর্যাদাবান। [২০৯] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়, সেই তোমাদের মধ্যে অধিক মর্যাদাবান। [২১০] সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অপরকে শিক্ষা দেয়, সেই তোমাদের মধ্যে উত্তম। রাবী বলেন, তিনি আমার হাত ধরে আমাকে এই স্থানে বসালেন এবং বললেন, ইনি সর্বাপেক্ষা বড় কারী। [২১১] আবু মূসা আল-আশআরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারী মু’মিন ব্যক্তি কমলালেবু তুল্য, যা খেতে সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত। যে মু’মিন ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে খেজুর তুল্য, যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধিবিহীন। কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিক ব্যক্তি সুগন্ধি গুল্মের সাথে তুলনীয়; যা খুব সুগন্ধিযুক্ত কিন্তু খেতে তিক্ত। যে মুনাফিক ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে মাকাল ফল তুল্য, যা খেতেও বিস্বাদ এবং যার কোন সুগন্ধিও নেই। [২১২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কতক লোক আল্লাহ্র পরিজন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহ্র পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা। [২১৩] আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তা কন্ঠস্থ করে, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাকে তার পরিবারের এমন দশজন লোকের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন যাদের সকলের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে। [২১৪] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কুরআন শিক্ষা করো, তা তিলাওয়াত করো এবং তা নিয়ে রাত জাগো। কেননা কুরআন এবং যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, সে হলো (মুখ খোলা) মৃগনাভিপূর্ণ থলেবৎ, যার সুবাস চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে তা পেটে ভর্তি করে ঘুমিয়ে রাত কাটায়, সে হলো মুখ বাঁধা মৃগনাভিপূর্ণ থলের মত। [২১৫] উমার (রাঃ) নাফি’ বিন আবদুল হারিস, তিনি উস্ফান নামক স্থানে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। উমার (রাঃ) তাকে মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, গ্রামবাসী বেদুঈনদের জন্য তুমি কাকে প্রশাসক নিয়োগ করেছ? তিনি বলেন, আমি বিন আবযা (রাঃ)-কে তাদের প্রশাসক নিয়োগ করেছি। উমার (রাঃ) বলেন, বিন আবযা কে? তিনি বলেন, সে আমাদের একজন মুক্তদাস। উমার (রাঃ) বলেন, তুমি একজন মুক্তদাসকে কেন জনগণের প্রশাসক নিয়োগ করলে? তিনি বলেন, সে তো মহান আল্লাহ্র কিতাবের বিশেষজ্ঞ আলিম, ফারায়িয সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং উত্তম ফয়সালাকারী। উমার (রাঃ) বলেন, শোন! তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা এই কিতাবের দ্বারা কতক লোককে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং কতককে অবনমিত করেন। [২১৬] আবু যার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ হে আবু যার! সকালবেলা কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য একশত রাকআত (নফল) সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। সকালবেলা জ্ঞানের কিছু অংশ শিক্ষা করা তোমার জন্য এক হাজার রাকআত সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম, তদানুযায়ী কাজ করা হোক বা না হোক। [২১৭]
আলিমদের মর্যাদা এবং জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করা ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা'আলা যার কল্যাণ সাধন করতে চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। [২১৮] মুআবিয়াহ বিন আবু সুফ্য়ান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘কল্যান’ হলো সুস্বভাব এবং ‘মন্দ’ হলো প্রবৃত্তির তাড়না থেকে উদ্ভূত। আল্লাহ্ যার কল্যাণ সাধন করতে চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। [২১৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একজন ফকীহ (শারীআতের বিধানে অভিজ্ঞ ব্যক্তি) শয়তানের জন্য এক হাজার ইবাদাতকারীর চেয়ে অধিক শক্ত। [২২০] কাসীর বিন কায়স (দঈফ) আমি দামিশকের মাসজিদে আবুদ দারদা’ (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আবুদ-দারদা’! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শহর মাদীনাহ থেকে আপনার নিকট একটি হাদীস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তুমি কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আসোনি তো? সে বললো, না। তিনি বলেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যেও তুমি আসোনি? সে বললো, না। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি পথ সুগম করে দেন। ফেরেশ্তাগন জ্ঞান অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পাখাসমুহ অবনমিত করেন। আর জ্ঞান অন্বেষীর জন্য আসমান ও যমীনবাসী আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মধ্যের মাছও। নিশ্চয় ইবাদাতকারীর উপর আলিমের মর্যাদা তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার সমতুল্য। আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিস। আর নবীগণ দীনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো। [২২১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অপাত্রে জ্ঞান দানকারী শুকরের গলায় মণিমুক্তা ও সোনার হার পরানো ব্যক্তির সমতুল্য। [২২২] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) কথাটি ছাড়া সহীহ, কেননা উক্ত কথাগুলো খুবই দুর্বল। আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করলো, আল্লাহ্ কিয়ামাতের দিন তার পারলৌকিক বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবেন। কোন ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষ গোপন রাখলে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কষ্ট-কাঠিন্য সহজ করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট সহজ করে দিবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় রত থাকে, আল্লাহ্ ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তায় রত থাকেন। কোন ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করলে, আল্লাহ্ এই উসীলায় তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সুগম করে দেন। যখন কোন লোকসমষ্টি আল্লাহ্র ঘরসমূহের মধ্যকার কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহ্র কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা শিক্ষা করে, তখন মালায়িকাহ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়, দয়া ও অনুগ্রহ তাদের আবৃত করে নেয় এবং আল্লাহ্ তাঁর নিকটে অবস্থানকারীদের (মালায়িকাহ্র) সাথে তাদের বিষয়ে আলোচনা করেন। (পৃথিবীতে) যার সৎকর্ম কম হবে (আখিরাতে) তার বংশমর্যাদা কোন উপকারে আসবে না। [২২৩] যির বিন হুবায়শ আমি সাফওয়ান বিন আসসাল আল-মুরাদী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেন, তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম, জ্ঞানার্জনের জন্য। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তিই জ্ঞানার্জনের জন্য তার ঘর থেকে রওনা হয়, তার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য মালায়িকাহ তাদের পাখা বিস্তার করেন। [২২৪] আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার এই মাসজিদে কোন উত্তম বিষয় শিক্ষা দানের জন্য বা শিক্ষা লাভের জন্য আসে, সে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদরত ব্যক্তির মর্যাদাসম্পন্ন স্থানীয়। আর যে ব্যক্তি ভিন্নতর উদ্দেশ্যে আসে, সে অপরের সম্পদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপকারীর তুল্য। [২২৫] আবু উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এই জ্ঞান জব্দ করে নেয়ার পূর্বেই তোমরা তা ধারণ করো। তা জব্দ করার অর্থ তুলে নেয়া। অতঃপর তিনি তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল একত্র করে বললেন, এভাবে। অতঃপর তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিদানে সমান অংশীদার। অবশিষ্ট লোকের মধ্যে কোন সৌন্দর্য ও কল্যাণ নেই। [২২৬] আবদুল্লাহ্ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক হুজরা থেকে বের হয়ে এসে মাসজিদে প্রবেশ করেন। তখন সেখানে দু’টি সমাবেশ চলছিল। একটি সমাবেশে লোকজন কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ্র যিকরে মশগুল ছিল এবং অপর সমাবেশে লোকজন শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সকলেই কল্যাণকর তৎপরতায় রত আছে। এই সমাবেশের লোকজন কুরআন তিলাওয়াত করছে এবং আল্লাহ্র নিকট দুআ’ করছে। তিনি চাইলে তাদের দান করতেও পারেন আবার চাইলে নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে এই সমাবেশের লোকেরা শিক্ষাগ্রহণ এবং শিক্ষাদানে রত আছে। আর আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তিনি এদের সমাবেশে বসলেন। [২২৭]
জ্ঞানের প্রচারক
যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার বক্তব্য শুনেছে, অতঃপর তার প্রচার করেছে, আল্লাহ্ তাকে হাস্যোজ্জ্বল ও সতেজ করুন। এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে যারা নিজেরাই জ্ঞানী নয়। আবার এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে, তারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা এই বাহকদের চেয়ে অধিক সমঝদার। আলী বিন মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তিনটি বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তির অন্তর যেন প্রতারিত না হয়ঃ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা, মুসলিম নেতৃবৃন্দকে সদুপদেশ দেয়া এবং তাদের (নেক কাজের) সাথে সম্পৃক্ত থাকা। [২২৮] জুবায়র বিন মুতঈম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনার আল-খায়ফ নামক উচ্চ ভুমিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আল্লাহ্ এমন ব্যক্তিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন যে আমার বক্তব্য শোনার পর তা প্রচার করলো (বা অপরের নিকট পৌঁছে দিল)। জ্ঞানের অনেক বাহক নিজেরাই জ্ঞানী নয়। জ্ঞানের এমন বাহকও আছে যে, তারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী। [২২৯] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নিকট হতে একটি হাদীস শুনে তা অন্যদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়, আল্লাহ্ তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেন। কখনো শ্রোতার চেয়ে প্রচারক অধিকতর স্মৃতিধর হয়ে থাকে। [২৩০] আবু বাক্রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন তাঁর ভাষণে বলেন, উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। এমনও হতে পারে যে, যাদের নিকট জ্ঞানের কথা পৌঁছানো হয় তারা শ্রোতাদের চাইতে অধিক স্মৃতিধর। [২৩১] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) শব্দটি ব্যতীত সহীহ। মুআবিযাহ আল-কুশাইরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শোন! উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট (আমার কথা) পৌঁছিয়ে দেয়। [২৩২] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের উপস্থিতরা যেন তোমাদের অনুপস্থিতদের নিকট (আমার বানী) পৌঁছে দেয়। [২৩৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ সেই বান্দাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন যে আমার বক্তব্য শুনে তা স্মৃতিতে ধারণ করেছে, অতঃপর আমার পক্ষ থেকে তা (অন্যদের নিকট) প্রচার করেছে। কতক জ্ঞানের বাহক নিজেরাই জ্ঞানী নয় এবং কতক জ্ঞানের বাহক যাদের নিকট তা পৌঁছে দেয় তারা তাদের চেয়ে অধিক সমঝদার হতে পারে। [২৩৪]
কল্যাণের চাবিকাঠি যেসব লোক
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় কতক লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কতক লোকও আছে যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। সেই লোকের জন্য সুসংবাদ যার দু’ হাতে আল্লাহ্ কল্যাণের চাবি রেখেছেন এবং সেই লোকের জন্য ধ্বংস যার দু’ হাতে আল্লাহ্ অকল্যাণের চাবি রেখেছেন। [২৩৫] সাহল বিন সা’দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয় এই কল্যাণ কোষাগারস্বরূপ এবং এই কোষাগারের রয়েছে কিছু সংখ্যক চাবি। সুসংবাদ সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ্ কল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী ও অকল্যাণের পথ রুদ্ধকারী বানিয়েছেন। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যাকে আল্লাহ্ অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী বানিয়েছেন। [২৩৬]
লোকজনকে উত্তম বিষয় শিক্ষাদাতার সাওয়াব।
আবুদ-দারদা’ (উয়াইমির বিন মালিক) (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীনের অধিবাসীগণ জ্ঞানীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছরা পর্যন্ত। [২৩৭] মুআয বিন আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানের কথা শিক্ষা দেয়, সে তদনুসারে কর্ম সম্পাদনকারীর সমান পুরস্কার পাবে, এতে কর্ম সম্পাদনকারীর পুরস্কারে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। আবু কাতাদাহ হারিস বিন রিবঈ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষ তার (মৃত্যুর) পরে যা কিছু রেখে যায়, তার মধ্যে তিনটি জিনিস কল্যাণকরঃ সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, যে তার জন্য দুআ’ করে, সদাকায়ে জারিয়া যার সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে এবং এমন জ্ঞান যা তার মৃত্যুর পরও কাজে লাগানো যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলোঃ যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মুসাফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে। [২৪০] আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন মুসলিমের ইল্ম শিক্ষা করা, অতঃপর তা তার মুসলিম ভাইকে শিক্ষা দেয়া সর্বোত্তম দানরূপে গণ্য। [২৪১]
যে ব্যক্তি তার পেছনে পেছনে অন্যের চলাকে অপছন্দ করে।
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো গদিতে হেলান দিয়ে আহার করতে দেখা যায়নি এবং দু’জন লোকও তাঁর পেছনে চলতো না। [২৪২] আবু উমামাহ (সাদী বিন ঈজলান) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক প্রচন্ড গরমের দিনে ‘বাকীউল গারকাদ’ নামক স্থানের দিকে বের হলেন। লোকেরা তাঁর পেছনে হেঁটে যাচ্ছিল। তিনি জুতার আওয়াজ শুনতে পেলে বিষয়টি তাঁর মনে অপ্রিয় লাগলো। তিনি বসে পড়লেন, যাতে লোকেরা তাঁর আগে চলে যায়, যাতে তাঁর অন্তরে বিন্দুমাত্র অহমিকা জাগ্রত না হয়। [২৪৩] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাঁটতেন তখন তাঁর সাহাবীগণ তাঁর আগে আগে চলতেন এবং তাঁর পেছনের দিকে মালায়িকার জন্য ছেড়ে দিতেন। [২৪৪]
জ্ঞানার্জনকারীদের নাসীহাত করা
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অচিরেই তোমাদের নিকট ইলম শিক্ষার জন্য দলে দলে লোক আসবে। তোমরা তাদের দেখলেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপদেশের সুসংবাদ জানাবে এবং তাদের তালকীন দিবে (জ্ঞানদান করবে)। আমি হাকাম (রহঃ)-কে বললাম, আমরা তাদের কী তালকীন দিব? তিনি বলেন, তাদের ইলম শিক্ষা দিবে। [২৪৫] আবু হুরায়রা (রাঃ) (ইসমাইল) বলেন, আমরা অসুস্থ হাসান (রহঃ) কে দেখতে গেলাম, এমনকি আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তিনি তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বললেন, আমরা অসুস্থ আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। এমনকি আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তখন তিনি তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রবেশ করলাম এবং আমাদের উপস্থিতিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তিনি তখন কাত হয়ে শায়িত ছিলেন। তিনি আমাদের দেখে তাঁর পদদ্বয় গুটিয়ে নিলেন, অতঃপর বলেন, অচিরেই আমার পরে তোমাদের নিকট দলে দলে লোক আসবে জ্ঞানার্জনের জন্য। তোমরা তাদের স্বাগত জানাবে, তাদের সালাম দিবে এবং ইল্ম শিক্ষা দিবে। অধস্তন রাবী হাসান (রহঃ) বলেন, আমরা তাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। আল্লাহ্র শপথ! আমরা তাদের নিকট গেলে তারা আমাদের স্বাগত জানায়নি, আমাদের সালাম দেয়নি, আমাদের ইলম শিক্ষা দেয়নি, বরং আমরা তাদের কাছে পৌঁছলে তারা আমাদের উপর যুলম করেছে। [২৪৬] আবু হারূন আল-আবদী (মাতরূক বা প্রত্যাখ্যানযোগ্য) আমরা আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর কাছে এলেই তিনি বলতেনঃ তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওসিয়াত অনুযায়ী স্বাগতম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেন, লোকেরা অবশ্যই তোমাদের অনুগামী। অচিরেই পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থেকে লোকেরা তোমাদের নিকট দ্বীন শিক্ষার জন্য আসবে। তারা তোমাদের নিকট আসলে তোমরা তাদের ভালো কাজের উপদেশ দিবে। [২৪৭]
জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং তদানুযায়ী আমাল করা
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি দুআ’ এই যে, “হে আল্লাহ্! আমি সেই জ্ঞান থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যা কোন উপকারে আসে না, এমন দুআ’ থেকে যা শোনা হয় না, সেই অন্তর থেকে যা ভীত হয় না এবং সেই দেহ থেকে যা তৃপ্ত হয় না।” [২৪৮] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ্! তুমি যে জ্ঞান আমাকে শিখিয়েছো তার দ্বারা আমাকে উপকৃত করো, আমাকে এমন জ্ঞান দান করো যা আমার উপকারে আসে, আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দাও এবং সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য।” [২৪৯] তাহকীক আলবানীঃ হাম্দ ছাড়া সহীহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামাতের দিন জান্নাতের সুবাসও পাবে না। [২৫০] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি নির্বোধের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য অথবা তার প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জ্ঞানার্জন করে, সে জাহান্নামী। [২৫১] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। [২৫২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার উম্মাতের কতক লোক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করবে, তারা কুরআন পড়বে এবং বলবে, আমরা শাসকদের নিকট যাবো তাদের নিকট থেকে পার্থিব স্বার্থ প্রাপ্ত হবো এবং আমাদের দ্বীন থেকে তাদের সরিয়ে রাখবো। এরূপ কখনো হতে পারে না। যেমন কাঁটাদার গাছ থেকে ফল আহরণের সময় হাতে কাঁটা ফুটবেই, তদ্রূপ তারা তাদের কাছে গিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। মুহাম্মাদ ইবনুস সাব্বাহ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ গুনাহ ব্যতীত তারা কিছুই লাভ করতে পারে না। [২৫৩] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুযন’ থেকে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! ‘জুব্বুল হুযন’ কী? তিনি বলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা, যা থেকে বাঁচার জন্য জাহান্নাম দৈনিক চার শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। তারা বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তাতে কারা প্রবেশ করবে? তিনি বলেন, যারা প্রদর্শনেচ্ছার বশবর্তী হয়ে কাজ করে সেসব কুরআন পাঠকের জন্য তা তৈরি করা হয়েছে। যে সকল কুরআন পাঠক (বিশেষজ্ঞ) শাসক গোষ্ঠীর সাথে দেখা-সাক্ষাত করে তারা আল্লাহ্র কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ক্বারী। মুহারিবী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা যালিম ও অত্যাচারী শাসকদের বুঝানো হয়েছে। [২৫৪] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আলিমরা যদি জ্ঞানার্জনের পর তা সংরক্ষণ করে এবং তা যোগ্য আলিমদের সামনে রেখে দেয়, তাহলে অবশ্যই তারা নিজ যুগের জনগণের নেতৃত্ব দিবে। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের নিকট পেশ করেছে পার্থিব স্বার্থ লাভের জন্য। ফলে তারা তাদের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার সমস্ত চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ্ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপর দিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে সে যে কোন উন্মুক্ত মাঠে ধংস হোক, তাতে আল্লাহ্র কিছু আসে যায় না। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য জ্ঞানার্জন করে অথবা জ্ঞানার্জনের দ্বারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কিছু লাভের ইচ্ছা করে, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান বানিয়ে নিল। [২৫৬] হুযায়ফাহ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা আলিমগণের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য অথবা নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা সাধারণ মানুষের মনোযোগ তোমাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করো না। যে তা করবে সে জাহান্নামী। আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আলিমদের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং নিজের দিকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। [২৫৮]
জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে যে ব্যক্তি তা গোপন করে
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি (দ্বীনের) জ্ঞানের কথা শিক্ষা করার পর তা গোপন করে রাখলে, কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। আবদুর রহমান বিন হুরমুয আল-আ’রাজ তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ্র শপথ! যদি মহান আল্লাহ্র কিতাবে (কুরআন মাজীদ) দু’টি আয়াত না থাকতো, তাহলে আমি কখনো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করতাম না। যদি আল্লাহ্র এই বাণী না থাকতো (অর্থ): “আল্লাহ্ যে কিতাব নাযিল করেছেন যারা তা গোপন রাখে এবং বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভরে না। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। এরাই সৎপথের বিনিময়ে ভ্রান্ত পথ এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করেছে। আগুন সহ্য করতে এরা কতই না ধৈর্যশীল।” (সূরা বাকারাঃ ১৭৪-১৭৫)। [২৬০] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এই উম্মাতের পরবর্তীকালের লোকেরা যখন তাদের পূর্ববর্তীকালের লোকেদের অভিশাপ দিবে, তখন কেউ একটি হাদীস গোপন করলে, সে যেন আল্লাহ্ কর্তৃক নাযিলকৃত কিতাবকেই গোপন করলো। [২৬১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি (তার জানা) জ্ঞানের কথা জিজ্ঞাসিত হয়ে সে তা গোপন করলে কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে। [২৬২] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের এমন জ্ঞান গোপন করে, যার দ্বারা আল্লাহ্ মানুষের কাজে, দ্বীনের কাজে উপকৃত করে থাকেন, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামাতের দিন আগুনের লাগাম পরাবেন। [২৬৩] আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার জানা জ্ঞানের কথা জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলে, কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে।