1. পবিত্রতা ও তার সুন্নাতসমূহ
নাপাকী হতে উযু ও গোসলের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ
সাফীনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্দ পানি দিয়ে উযু করতেন এবং এক সা’ পানি দিয়ে গোসল করতেন। [২৬৫] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্দ পানি দিয়ে উযু করতেন এবং এক সা’ পানি দিয়ে গোসল করতেন। [২৬৬] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্দ পানি দিয়ে উযু করতেন এবং এক সা’ পানি দিয়ে গোসল করতেন। [২৬৭] আকীল বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, উযুতে এক মুদ্দ এবং গোসলে এক সা’ পানি যথেষ্ট। এক ব্যক্তি বললো, আমাদের জন্য (এ পরিমাণ পানি) যথেষ্ট নয়। তিনি বললেন, এ পরিমাণ পানি তো তোমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির জন্যও যথেষ্ট ছিল, যাঁর মাথার চুলও বেশী অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। [২৬৮]
আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত সলাত কবূল করেন না
উসামাহ বিন উমায়র আল-হুযালী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত সলাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। [২৬৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সলাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। [২৭০] আনাস মালিক (রাঃ) তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সলাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় অর্জিত মালের দান-খয়রাতও কবূল করেন না। আবূ বাক্রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সলাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না।
পবিত্রতা সলাতের চাবি
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পবিত্রতা হলো সলাতের চাবি, তার তাকবীর হলো হারামকারী এবং তার সালাম হলো হালালকারী। [২৭৩] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পবিত্রতা হলো সলাতের চাবি, তাকবীর হলো তার হারামকারী এবং সালাম হলো তার হালালকারী। [২৭৪]
উযুর সংরক্ষণ
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) অবিচল থাকো, যদিও তোমরা আয়ত্তে রাখতে পারবে না। জেনে রাখো, তোমাদের আমালসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সলাত। কেবল মু’মিন ব্যক্তিই যত্ন সহকারে উযু করে। [২৭৫] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের উপর) স্থির থাকো, যদিও তোমরা তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। জেনে রাখো! তোমাদের সর্বোত্তম আমাল হলো সলাত। কেবল মু’মিন ব্যক্তিই যত্ন সহকারে উযু করে। [২৭৬] আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা দ্বীনের উপর স্থির থাকো। তোমরা দ্বীনের উপর অবিচল থাকলে তা কল্যাণকর। তোমাদের কার্যাবলীর মধ্যে সর্বোত্তম কাজ হলো সলাত আদায় করা। মু’মিন ব্যক্তিই যত্ন সহকারে উযু করে। [২৭৭]
ঈমানের অর্ধেক উযু
আবূ মালিক আল-আশআরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সুষ্ঠুভাবে উযু করা ঈমানের অর্ধেক। আল-হামদুলিল্লাহ (নেকীর) পাল্লা ভারী করে। সুবহানাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী ভরে দেয়। সলাত হলো নূর, যাকাত হলো দলীল, ধৈর্য হলো আলোকমালা এবং কুরআন হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষের প্রমাণ। প্রত্যেক মানুষ ভোরে উপনীত হয়ে নিজেকে বিক্রয় করে, এতে সে হয় তাকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। [২৭৮]
পবিত্রতা অর্জনের প্রতিফল
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে কেবল সলাত আদায়ের জন্যে মাসজিদে রওনা হলে তার মাসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার একধাপ মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি গুনাহ্ মাফ করেন। [২৭৯] আবদুল্লাহ্ আস-সুনাবিহী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি উযু করে কুলি করলো এবং নাকে পানি পৌঁছালো, তার গুনাহ্সমূহ তার মুখ ও নাক থেকে বের হয়ে যায়। সে তার মুখমণ্ডল ধৌত করলে তার গুনাহ্সমূহ তার মুখমণ্ডল থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার দু’ চোখের ভ্রুর নিম্নাংশ থেকেও গুনাহ্সমূহ বেরিয়ে যায়। সে তার উভয় হাত ধৌত করলে তার দু’ হাত থেকে গুনাহ্সমূহ বেরিয়ে যায়। সে তার মাথা মাসহ করলে তার মাথা থেকে গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার দু’ কান থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। সে তার উভয় পা ধৌত করলে পদদ্বয় থেকেও গুনাহসমূহ ঝরে যায়, এমনকি তার পদদ্বয়ের নখের নিম্নভাগ থেকেও গুনাহ্ বের হয়ে যায়। এরপর তার সলাত ও তার মসজিদে যাতায়াতের সাওয়াব (উল্লিখিত বিষয়ের) অতিরিক্ত। [২৮০] আম্র বিন আবাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বান্দা যখন উযু করে এবং তার উভয় হাত ধৌত করে, তখন তার দু’ হাত থেকে গুনাহসমূহ নির্গত হয়ে যায়। যখন সে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডল থেকে তার গুনাহসমূহ নির্গত হয়ে যায়। যখন সে তার উভয় হাত ধৌত করে এবং তার মাথা মাসহ করে, তখন তার দু’ হাত ও মাথা থেকে তার গুনাহসমূহ নির্গত হয়ে যায়। এরপর যখন সে তার পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার পদদ্বয় থেকে তার গুনাহসমূহ নির্গত হয়ে যায়। [২৮১] আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি আপনার উম্মাতের যেসব লোককে দেখেননি তাদের কিভাবে চিনবেন? তিনি বলেন, উযুর কারণে তাদের মুখমণ্ডল ও তাদের উযুর অন্যান্য অঙ্গ থেকে বিচ্ছুরিত আলোর সাহায্যে। [২৮২] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ)-এর মুক্তদাস হুমরান আমি উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ)-কে এক স্থানে উপবিষ্ট দেখলাম। তিনি উযুর পানি নিয়ে ডাকলেন এবং উযু করলেন, অতঃপর বলেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার এ স্থানে বসে আমার ন্যায় উযু করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার উযুর ন্যায় উযু করবে, তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, কিন্তু তোমরা তাতে আত্নতুষ্টির ধোঁকায় পড়ো না। ৫/২৮৫(১). উসমান (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [২৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মিসওয়াকের বর্ণনা
হুযায়ফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করতে উঠতেন, তখন তিনি মিসওয়াক দিয়ে তার মুখ পরিষ্কার করতেন। [২৮৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রতি ওয়াক্ত সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। [২৮৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে দু’ দু’ রাকআত করে (নফল) সলাত আদায় করতেন এবং (সলাত থেকে) অবসর হয়ে মিসওয়াক করতেন। [২৮৬] আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিস্কার করে এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাঈল (আঃ) এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন। শেষে আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মাতের জন্য ফার্দ করা হবে। আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফার্দ করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়। [২৮৭] শুরায়হ্ বিন হানী আমি আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার নিকট এসে প্রথমে কোন কাজটি করতেন তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তিনি প্রবেশ করেই প্রথমে মিসওয়াক করতেন। [২৮৮] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের মুখ হলো কুরআনের রাস্তা। অতএব তোমরা দাঁতন করে তা পবিত্র ও সুগন্ধযুক্ত করো। [২৮৯]
ফিতরাত বা স্বভাবজাত কার্য
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফিতরাত পাঁচটি অথবা পাঁচটি জিনিস স্বভাবজাতঃ খতনা করা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, নখসমূহ কাটা, বগলের পশম তুলে ফেলা এবং মোচ কাটা। [২৯০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দশটি জিনিস ফিতরাত বা স্বভাবজাত। মোচ কাটা, দাড়ি বাড়ানো, মিসওয়াক করা, নাকের ছিদ্র পানি দিয়ে পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের সংযোগ স্থলের ময়লা ধুয়ে ফেলা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ও পানি দিয়ে শৌচ করা। যাকারিয়্যা (রহঃ) বলেন মুসআব (রহঃ) বলেছেন, আমি দশম জিনিসের কথা ভুলে গেছি, সেটি হয়তো কুলি করা। [২৯১] আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুলি করা, নাকের ছিদ্রপথে পানি পৌঁছানো, মিসওয়াক করা, মোচ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, আঙ্গুলের সংযোগ স্থলগুলো ধৌত করা, শৌচ করা, খতনা করা ইত্যাদি মানব স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। ৩/২৯৪.(ক) আলী ইবনে যায়দ থেকে উপর্যুক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [২৯২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, মোচ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা ও নখ কাটার ব্যাপারে আমাদের চল্লিশ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা যেন তা বেশি সময় ছেড়ে না দেই। [২৯৩]
পায়খানায় প্রবেশকালে যা লোকের বলা কর্তব্য
যায়দ বিন আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (পায়খানায়) এসব শয়তান উপস্থিত হয়। অতএব তোমাদের কেউ (পায়খানায়) প্রবেশকালে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ্ ! আমি আপনার নিকট অপবিত্রতা ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।” [২৯৪] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝখানের পর্দা হলো পায়খানায় প্রবেশকালে তার ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। [২৯৫] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন বলতেনঃ “আমি আল্লাহ্র নিকট অপবিত্রতা ও শয়তানের অশুভ চক্রান্ত থেকে পানাহ চাই।” [২৯৬] আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশকালে যেন এ কথা বলতে অপারগ না হয়ঃ “হে আল্লাহ্! আমি কদর্যতা, অপবিত্রতা, কদাকার ও ক্ষতিকর বিতারিত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় চাই”। ৪/২৯৯(১). আবূ উমামাহ (রাঃ), তবে এ বর্ণনায় (আরবি) (কদর্যতা অপবিত্রতা থেকে) কথাটির উল্লেখ নাই, বরং এ বর্ণনায় (আরবি) (কদর্য কুৎসিত বিতাড়িত শয়তানের কবল থেকে) কথাটি উল্লেখ আছে। [২৯৭] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।
পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় যা বলবে
আবূ বুরদাহ আমি আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করে তাকে বলতে শুনলাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন, (গুফরানাকা) অর্থাৎ “আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি”। [২৯৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন”। [২৯৯]
পায়খানায় অবস্থানকালে মহান আল্লাহ্র যিক্র করা এবং আংটি খোলা
আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র যিক্র করতেন। [৩০০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় প্রবেশের আগে তার আংটি খুলে রাখতেন। [৩০১]
গোসলখানায় পেশাব করা মাকরূহ
আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার গোসলখানায় পেশাব না করে। কেননা তা থেকেই যাবতীয় সন্দেহের উদ্রেক হয়। ১/৩০৪(১). আবদুল্লাহ্ ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি আলী বিন মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন, এ নির্দেশ সেই সময়ের যখন গোসলখানা কাঁচা ছিল। যেহেতু বর্তমানকালে গোসলখানা ইট ও চুনা দ্বারা নির্মিত হয়। তাই যদি কেউ পেশাব করার পর সে সেখানে পানি ঢেলে দেয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই। এটা পূর্ণটিই দঈফ এর প্রথম অংশ সহীহ। [৩০২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ কিন্তু পূর্বশর্ত হিসেবে সহীহ।
দাঁড়িয়ে পেশাব করা প্রসঙ্গ
হুযাইফাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক গোত্রের ময়লা-আবর্জনার নিকট পৌঁছে সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। [৩০৩] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক গোত্রের ময়লা-আবর্জনার ইকত পৌঁছে তথায় দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। ২/৩০৬ (১). সে সময় এ হাদীস মুগীরাহ (রাঃ)>- এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু আসিম তা ভুলে যান। এরপর আমি <মানসূর (রঃ)>-কে জিজ্ঞেস করলে তিনিও সেটি <আবূ ওয়ায়িল (রাঃ)><এর সূত্রে হুজাইফাহ (রাঃ)> থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের ময়লা-আবর্জনার স্তূপের নিকট পৌঁছে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। [৩০৪]
বসে পেশাব করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে বলে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন, তার কথা তুমি বিশ্বাস করবে না। আমি তাঁকে বসে পেশাব করতে দেখেছি। [৩০৫] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখে বলেন, হে উমার! তুমি দাঁড়িয়ে পেশাব করো না। এরপর থেকে আমি দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। [৩০৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। ৩/৩০৯(১). আয়িশাহ (রাঃ) – এর এ হাদীস “আমি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে পেশাব করতে দেখেছি” বর্ণনা করলে এক ব্যক্তি বললো, একজন পুরুষ এ ব্যাপারে তার তুলনায় অধিক জ্ঞাত। আহমাদ বিন আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, দাঁড়িয়ে পেশাব করা ছিল আরবদের অভ্যাস। তুমি কি আবদুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) – এর বর্ণিত হাদীসে দেখোনি, যাতে তিনি বলেছেন, “তিনি মহিলাদের মত বসেই পেশাব করেন”? এটা সহীহ হাদীসের অন্তর্ভূক্ত। [৩০৭]
ডান হাতে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা ও শৌচ করা মাকরূহ্
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেন : তোমাদের কেউ যেন পেশাব করাকালে তার ডান হাত দিয়ে তার লিঙ্গ স্পর্শ না করে এবং তার ডান হাত দিয়ে শৌচ না করে। [৩০৮] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) আমি কখনো গান গাইনি, মিথ্যা কথাও বলিনি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বায়আত হওয়ার পর থেকে ডান হাতে আমার লিঙ্গও স্পর্শ করিনি। [৩০৯] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার ডান হাতে শৌচ না করে, বরং সে যেন তার বাম হাতে শৌচ করে। [৩১০]
পাথর বা ঢিলা দিয়ে শৌচ করা এবং শুকনা ও কাঁচা গোবর দিয়ে শৌচ না করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য সন্তানের পিতার সমতুল্য। আমি তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি যে, তোমরা পায়খানায় এসে কিবলাহ্কে সামনে রেখেও বসবে না এবং পেছনেও রাখবে না। তিনি তিনটি পাথর বা ঢিলা (শৌচকার্যে) ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং তিনি শুকনা ও কাঁচা গোবর (শৌচকার্যে) ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। উপরন্তু তিনি মানুষকে তার ডান হাত দিয়ে শৌচ করতে নিষেধ করেন। [৩১১] আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় যেতে (আমাকে) বলেন, আমার জন্য তিনটি পাথর (ঢিলা) নিয়ে এসো। আমি তাঁর জন্য দু’টি পাথর ও একটি শুকনা গোবরের টুকরা নিয়ে এলাম। তিনি পাথর দু’টি গ্রহণ করেন এবং গোবরের টুকরাটি ফেলে দিয়ে বলেন, এটি অপবিত্র। [৩১২] খুযায়মাহ বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচ করা সম্পর্কে বলেছেন, তিনটি টুকরা হতে হবে, যার সাথে কোন নাপাক জিনিস নেই। [৩১৩] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, কতিপয় মুশরিক তাকে উপহাস করে বললো, আমি তোমাদের এই সাথীকে (মুহাম্মাদ) দেখতে পাচ্ছি যে, তিনি তোমাদের সব বিষয়ে শিক্ষা দেন, এমনকি পায়খানা-পেশাব সম্পর্কেও। তিনি বলেন, হাঁ। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন কিবলাহ্মুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব না করি, ডান হাতে যেন শৌচ না করি এবং (শৌচে) তিনটি পাথরের কম যেন ব্যবহার না করি, যার সাথে পশুর গোবর ও হাড় যেন না থাকে। [৩১৪]
পেশাব-পায়খানায় কিবলামুখী হয়ে বসা নিষেধ
আবদুল্লাহ্ ইবনুল হারিস বিন জায্য়িয-যুবায়দী (রাঃ) আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছে : “তোমাদের কেউ যেন কিবলাহ্মুখী হয়ে পেশাব না করে’ এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যে লোকেদের নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছে। [৩১৫] আবূ আয়্যূব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পায়খানায় যায় তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিমমুখী হয়ে বসো। [৩১৬] মা’কিল বিন আবূ মা’কিল আল-আসাদী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাহচর্য লাভ করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দু’কিবলাহ্র দিকে মুখ করে পায়খানা অথবা পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। [৩১৭] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আমাদেরকে কিবলাহ্র দিকে মুখ করে পায়খানা ও পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। [৩১৮] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)–কে বলতে শুনেছেন : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দাঁড়িয়ে পানীয় পান করতে এবং কিবলামুখী হয়ে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। [৩১৯]
ঘরের মধ্যে কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করার অনুমতি আছে এবং তা মুবাহ, কিন্তু খোলা স্থানে নয়
আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বলে, তুমি পায়খানায় কিবলাহমুখী হয়ে বসো না। কিন্তু একদিন আমি আমাদের ঘরের ছাদের উপর উঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে দু’টি ইটের উপর উপবিষ্ট দেখতে পাই। তাঁর মুখমন্ডল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ছিল। এটা হচ্ছে ইয়াযীদ বিন হারূনের বর্ণিত হাদীস। [৩২০] ইবনু উমার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তাঁর পায়খানায় কিবলাহমুখী হয়ে বসতে দেখেছি। রাবী ‘ঈসা বলেন, আমি বিষয়টি শা’বী (রহঃ)– কে বললে তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) সত্য বলেছেন। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)–এর উক্তি উন্মুক্ত ময়দানের বেলায় প্রযোজ্য : “(পায়খানা-পেশাবে) কেউ কিবলাহ্র দিকে মুখ করবে না এবং কিবলাহ্কে পিছনেও রাখবে না।” আর ইবনু উমার (রাঃ) – এর উক্তি প্রাচীর ঘেরা পায়খানা গৃহের বেলায় প্রযোজ্য : “সেখানে কোন কিবলাহ নাই। সেখানে তুমি যে দিকে ইচ্ছা মুখ ফিরিয়ে (পায়খানা পেশাব) করতে পারো”। ২/৩২৩(১). ইবনু উমার (রাঃ)। [৩২১] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট একদল লোক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যারা তাদের লজ্জাস্থানকে কিবলাহ্মুখী করতে অপছন্দ করে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তারা এরূপ করতে শুরু করে দিয়েছে। তোমরা আমার পায়খানা কিবলাহ্র দিকে ঘুরিয়ে দাও। [৩২২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কিবলাহ্মুখী হয়ে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমি তাঁকে তাঁর ইনতিকালের এক বছর আগে কিবলাহমুখী (পায়খানা-পেশাবে) হতে দেখেছি। [৩২৩]
পেশাব করার পর পবিত্রতা অর্জন করা
ইয়াযদাদ আল-ইয়ামানী (মাজহূল বা অপরিচিত) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ পেশাব করার পর যেন তার লজ্জাস্থান তিনবার ঝাড়ে। [৩২৪]
যে ব্যক্তি পেশাব করার পর ‘উযু করেনি
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করতে গেলেন এবং উমার (রাঃ) পানি নিয়ে তাঁর পিছে পিছে গেলেন। তিনি বলেন, হে উমার! এটা কী? উমার বলেন, পানি। তিনি বলেন, যখনই আমি পেশাব করব তখনই আমাকে উযু করার নির্দেশ দেওয়া হয় নি। আমি তাই করলে তা সুন্নাত (বাধ্যতামূলক) হয়ে যেত। [৩২৫]
যাতায়াতের রাস্তায় পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি এমন হাদীস বর্ণনা করতেন, যা রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপর সাহাবীগণ শুনেননি এবং তারা যে হাদীস শুনেছেন তা তিনি বর্ণনা করতেন না। আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) তার বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে অবহিত হয়ে বলেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ হাদীস বলতে শুনিনি। মুআয (রাঃ) যেন পায়খানা-পেশাবের ব্যাপারে তোমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ফেলে। মুআয (রাঃ) উক্ত মন্তব্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) এর সাথে দেখা করেন এবং বলেন, হে আবদুল্লাহ্ বিন আম্র! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি মিথ্যা হাদীস আরোপ করা মুনাফিকী এবং তার গুনাহ্ মিথ্যা আরোপকারীর উপর বর্তায়। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : তোমরা তিনটি অভিশপ্ত জিনিস থেকে দূরে থাকো : ব্যবহার্য পানি বা পানির উৎসে, ছায়াদার বৃক্ষতলে ও লোক চলাচলের পথে পেশাব-পায়খানা করা। [৩২৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা রাস্তার উপর রাত যাপন করা ও সলাত আদায় করা থেকে বিরত থাকো। কেননা, তা (রাতে) সাপ ও হিংস্র জন্তুর যাতায়াত পথ। তোমরা রাস্তায় পেশাব-পায়খানা করা থেকেও বিরত থাকো। কারণ তা অভিশপ্ত আচরণের অন্তর্ভুক্ত। [৩২৭] তাহকীক আলবানী : সলাত আদায়ের কথাটি ছাড়া হাসান। আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলাচলের পথের উপর সলাত আদায় করতে এবং পায়খানা-পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। [৩২৮]
পায়খানা-পেশাব করতে দূরে যাওয়া
মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে দূরে যেতেন। [৩২৯] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে দূরে যান। অতঃপর ফিরে এসে তিনি উযুর পানি নিয়ে ডাকেন এবং উযু করেন। [৩৩০] ইয়া‘লা বিন মুর্রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে দূরবর্তী স্থানে যেতেন। [৩৩১] আবদুর রহমান বিন আবূ কুরাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে হাজ্জ করেছি। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে দূরবর্তী স্থানে চলে যেতেন। [৩৩২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে বের হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে এতটা দূরে যেতেন যে, তাঁকে দেখা যেত না। [৩৩৩] বিলাল ইবনুল হারিস আল মুযানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে দূরে চলে যেতেন। [৩৩৪]
পেশাব-পায়খানার সময় পর্দা করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ঢিলা দ্বারা শৌচ করতে চায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি তাই করলো, সে উত্তম কাজ করলো এবং যে তা (বেজোড়) করলো না তার কোন দোষ নেই। কেউ খিলাল করলে সে যেন দাঁতের ফাঁক থেকে নির্গত জিনিস বাইরে ফেলে দেয়। যার মুখ থেকে লালা বের হয়, সে যেন তা ফেলে দেয়। যে ব্যক্তি এরূপ করলো, সে উত্তম কাজ করলো এবং যে তা করলো না, তার কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি পায়খানায় যায় সে যেন আড়াল করে। এজন্য কিছু না পেলে সে যেন বালু স্তুপ করে তার দ্বারা আড়াল করে। কেননা শয়তান আদম সন্তানের পশ্চাদদ্বার নিয়ে খেলা করে। যে ব্যক্তি এরূপ করলো, সে উত্তম কাজ করলো এবং যে তা করলো না, তার কোন দোষ নেই। [৩৩৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে এই সানাদ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই বর্ণনায় আরো আছে : যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যকবার লাগায়। যে ব্যক্তি এরূপ করলো, সে উত্তম কাজ করলো এবং যে তা করেনি, তার কোন দোষ নেই। কারো মুখ থেকে কিছু বের হলে সে যেন তা উদগীরণ করে ফেলে দেয়। [৩৩৬] তাহকীক আলবানী : যে ব্যক্তি সুরমা লাগায় সে যেন বিজোড় লাগায় এ কথা ব্যতীত দঈফ। মুর্রাহ বিন ওয়াহব (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি পায়খানা করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলেন, এই গাছ দু’টিকে ডেকে আনো। ওয়াকী’ (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, তা ছিল দু’টি ছোট খেজুর গাছ। তুমি গাছ দু’টিকে বলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের উভয়কে একত্র হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। অতএব, গাছ দু’টি একত্র হলে তিনি তাদের দ্বারা আড়াল করলেন এবং তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারলেন। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন, তুমি ওদের কাছে গিয়ে বলো, তারা যেন স্বস্থানে ফিরে যায়। অতএব আমি (গাছ দু’টির নিকট) গিয়ে তাই বললাম এবং তারা স্বস্থানে ফিরে গেল। [৩৩৭] আবদুল্লাহ্ বিন জা‘ফার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা করার সময় উঁচু টিলা অথবা ঘন খেজুর বিথীর আড়ালে বসতে পছন্দ করতেন। [৩৩৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করতে গিরিপথে চলে যেতেন। তিনি যখন পেশাব করতেন, তখন আমি তাঁর পিছন দিকে আড় হয়ে থাকতাম। [৩৩৯]
একত্রে বসে পায়খানা করা এবং পরস্পর কথা বলা নিষেধ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) দু’ব্যক্তি যেন এমনভাবে পায়খানায় না বসে যে, একে অপরের আবরণীয় অঙ্গ দেখতে পায় এবং এ অবস্থায় পরস্পর বাক্যালাপ না করে। কারণ তাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। [৩৪০]
বদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষেধ
জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে। [৩৪২] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন পরিষ্কার পানিতে পেশাব না করে। [৩৪৩] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) শব্দ দ্বারা সহীহ।
পেশাবের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা
আবদুর রহমান বিন হাসানাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বেরিয়ে এলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি ঢাল। তিনি সেটিকে (সামনে) রেখে বসেন এবং সে দিকে ফিরে পেশাব করেন। তাদের কোন এক ব্যক্তি বললো, তাঁকে দেখ ! তিনি মহিলাদের মত পেশাব করছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথা শুনে ফেলেন এবং বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়। তোমার কি জানা নেই যে, বানী ইসরাঈলের সেই ব্যক্তির কী দশা হয়েছিল? তাদের শরীরের কোন অংশে পেশাব লাগলে তারা তা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলতো। সে তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে। ফলে তাকে তার কবরে শাস্তি দেয়া হয়। [৩৪৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি নতুন কবর অতিক্রম করাকালীন বলেন, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এদেরকে কোন কঠিন অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছেনা। এদের একজন পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতো না এবং অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াতো। [৩৪৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বেশির ভাগ কবরে আযাব পেশাব থেকে অসতর্কতার কারণেই হয়ে থাকে। [৩৪৬] আবূ বাক্রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি ক্ববর অতিক্রম অতিক্রম করার সময় বলেন, নিশ্চয়ই এই দু’ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে কোন কঠিন অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছেনা। এদের একজনকে পেশাবের (অসতর্কতার) কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এবং অপরজনকে গীবত করার কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। [৩৪৭]
পেশাবরত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া প্রসঙ্গে
আম্র বিন জুদ’আন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তিনি উযু করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি তাঁর উযু সমাপনান্তে বলেন, আমি এজন্য তোমার সালামের উত্তর দেইনি যে, আমি তখন উযুবিহীন ছিলাম। [৩৪৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তিনি পেশাবরত ছিলেন। সে তাঁকে সালাম করলে তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি পেশাব শেষ করে তাঁর দু’হাতের তালু মাটিতে মারেন এবং তায়াম্মুম করেন, অতঃপর তার সালামের উত্তর দেন। [৩৪৯] তাহকীক আলবানীঃ الأرض এর স্থানে الجدار শব্দ দ্বারা সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন পেশাবরত ছিলেন। সে তাঁকে সালাম করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, তুমি আমাকে এ অবস্থায় দেখতে পেলে আমাকে সালাম করবে না। কারণ তুমি তা করলে আমি তোমার সালামের উত্তর দিতে পারবো না। [৩৫০] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন তিনি পেশাবরত ছিলেন। সে তাঁকে সালাম করলে তিনি তার সালামের উত্তর দেননি। [৩৫১]
পানি দিয়ে শৌচ করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো পানি ব্যবহার না করে পায়খানা থেকে বের হননি। [৩৫২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হলে (অনুবাদ): “সেখানে এমন লোকও আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন”- (সূরাহ আত্-তাওবাহঃ ১০৮)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করো? তারা বলেন, আমরা সলাতের জন্য উযু করি, জানাবাতের (শারীরিক অপবিত্রতা দূরীকরণের) জন্য গোসল করি এবং পানি দিয়ে শৌচ করি। তিনি বলেন, এটাই (প্রশংসার) কারণ। অতএব তোমরা এটাকে অপরিহার্যরূপে ধারণ করো। [৩৫৩] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা করে তাঁর পশ্চাদদ্বার তিনবার ধৌত করতেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমরাও তাই করেছি এবং এটাকে নিরাময় ও পবিত্রতার উপায় হিসেবে পেয়েছি। [৩৫৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসী সম্পর্কে নাজিল হয়েছে (অনুবাদ): “সেখানে এমন লোকও আছে যারা পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন”- (সূরাহ আত্-তাওবাহঃ ১০৮)। রাবী বলেন, তারা পানি দিয়ে শৌচ করতো। তাই তাদের প্রশংসায় এ আয়াত নাযিল হয়। [৩৫৫]
যে ব্যক্তি ইসতিনজা’ করার পর মাটিতে হাত ঘষলো
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা করার পর বদনার পানি দিয়ে শৌচ করতেন। অতঃপর তাঁর হাত মাটিতে ঘষতেন। [৩৫৬] জারীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝোপের মাঝে প্রবেশ করেন এবং তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করেন। জারীর (রাঃ) তাঁর নিকট এক পাত্র পানি নিয়ে আসেন। তা দিয়ে তিনি শৌচ করেন এবং তাঁর হাত মাটিতে ঘষেন। [৩৫৭]
পানপাত্র ঢেকে রাখা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে পানির মশকের মুখ বন্ধ করতে এবং পানপাত্রসমূহ ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। [৩৫৮] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাতের বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য তিনটি পানির পাত্র মুখ বন্ধ করে রেখে দিতাম, একটি তাঁর উযুর জন্য, একটি তাঁর মিসওয়াকের জন্য এবং একটি তাঁর পান করার জন্য। [৩৫৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উযুর পানি ও তাঁর দান-খয়রাত করার মাল কারো নিকট গচ্ছিত রাখতেন না এবং সেই মালও সোপর্দ করতেন না, যা তিনি সদাক্বাহ করতেন। তিনি নিজের তত্ত্বাবধানেই তা সংরক্ষণ করতেন। [৩৬০]
কুকুরের মুখ দেয়া পাত্র ধোয়া সম্পর্কে
আবূ রাযীন (রহঃ) আমি আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি তার কপালে হাত মেরে বলেছেন, হে ইরাকবাসী! তোমরা মনে করো যে, আমি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি মিথ্যারোপ করছি, যাতে তোমরা সাওয়াবের অধিকারী হও এবং আমি গুনাহ্র ভাগী হই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন তা সাতবার ধৌত করে। [৩৬১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তা সাতবার ধৌত কর। [৩৬২] আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফফাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাত্রে কুকুর মুখ দিলে তোমরা তা সাতবার ধৌত করো এবং অষ্টমবারে তা মাটি দিয়ে মাজো। [৩৬৩] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন তা সাতবার ধৌত করে। [৩৬৪]
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে উযু করা এবং তা জায়িয
কাবশাহ বিনতু কা‘ব (রাঃ), আবূ কাতাদাহ (রাঃ) (কাবশাহ ছিলেন আবূ কাতাদাহ এর পুত্রবধু) তিনি আবূ আবূ কাতাদাহ (রাঃ)-এর উযুর পানি ঢেলে দেন। তখন একটি বিড়াল এসে সেই পানি পান করে। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) পানির পাত্রটি তার দিকে ঝুঁকিয়ে দিলেন এবং আমি তার দিকে তাকাতে লাগলাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজি! তুমি কি বিস্ময়বোধ করছো! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিড়াল অপবিত্র নয়। এটা তো তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী বা বিচরণকারিণী। [৩৬৫] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে উযু করেছি, যা থেকে ইতোপূর্বে বিড়াল পানি পান করেছিল। [৩৬৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিড়াল সলাত বিনষ্ট করে না। কারণ তা ঘরের জিনিসপত্রের অন্তর্ভুক্ত। [৩৬৭]
নারীর উযুর উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে উযু করা জায়িয
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক স্ত্রী একটি বড় পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল অথবা উযু করতে আসলে তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি অপবিত্র ছিলাম (এবং এই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করেছি)। তিনি বলেন, পানি অপবিত্র হয় না। [৩৬৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক স্ত্রী নাপাকির গোসল করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার গোসলের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে উযু ও গোসল করেন। [৩৬৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ) , তার নাপাকির গোসলের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন। [৩৭০]
এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা/নিষিদ্ধ বিষয়
হাকাম বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষকে নারীর উযুর উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে উযু করতে নিষেধ করেছেন। [৩৭১] আবদুল্লাহ্ বিন সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষকে নারীর উযুর উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে এবং নারীকে পুরুষের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে উযু-গোসল করতে নিষেধ করেছেন। তবে তারা (স্বামী-স্ত্রী) একত্রে গোসল করতে পারে। ইমাম আবূ আবদুল্লাহ্ ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, প্রথমোক্ত বক্তব্যই সঠিক এবং শেষোক্ত বক্তব্য ধারণামাত্র। [৩৭২] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রী এ পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতেন। তবে তাদের একজন অপরজনের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন না। [৩৭৩]
স্বামী-স্ত্রীর একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতাম। [৩৭৪] মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতাম। [৩৭৫] উম্মু হানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মায়মূনাহ (রাঃ) একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করেন, যাতে আটার দাগ লেগেছিল। [৩৭৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রীগণ একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতেন। [৩৭৭] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতেন। [৩৭৮]
স্বামী-স্ত্রীর একই পাত্রের পানিতে উযু করা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে নারী ও পুরুষেরা একই পাত্রের পানি দিয়ে উযু করতো। [৩৭৯] উম্মু সুবায়্যাহ আল-জুহানিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, একই পাত্রের পানি দিয়ে উযু করার কারণে কখনো কখনো আমার হাতের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের স্পর্শ লাগতো। ইমাম আবূ আবদুল্লাহ্ ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, উম্মু সুবায়্যাহ হলেন খাওলা বিনতু কায়স (রাঃ)। আমি বিষয়টি আবূ যুরআহ (রহঃ)-এর নিকট উত্থাপন করলে তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সত্য বলেছেন। [৩৮০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য একত্রে উযু করতেন। [৩৮১]
নাবীয নামক শরবত দিয়ে উযু করা
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাইলাতুল জিন্ন-এ তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার সাথে উযুর পানি আছে কি? তিনি বলেন, না, তবে একটি পাত্রে কিছু নাবীয আছে। তিনি বলেন, খেজুরও পবিত্র এবং পানিও পবিত্র। অতঃপর তিনি উযু করলেন। [৩৮২] আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে লাইলাতুল জিন্ন-এ বলেন, তোমার সাথে পানি আছে কি? তিনি বলেন, না, তবে একটি পাত্রে নাবীয আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, খেজুরও পবিত্র এবং পানিও পবিত্র। আমাকে তা ঢেলে দাও। রাবী বলেন, আমি তাঁকে নাবীয ঢেলে দেই এবং তিনি তা দিয়ে উযু করেন। [৩৮৩]
সমুদ্রের পানি দিয়ে উযু করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা সমুদ্রে যাতায়াত করে থাকি এবং আমাদের সাথে খুব কম পানি থাকে। যদি আমরা তা দিয়ে উযু করি, তাহলে পিপাসার্ত হবো। আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে উযু করতে পারি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণীও হালাল। [৩৮৪] ইবনুল ফিরাসী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি শিকারে যেতাম এবং আমার একটি পানির মশক ছিল, তাতে (পানের) পানি নিতাম এবং সমুদ্রের পানি দ্বারা উযু করতাম। আমি বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে উত্থাপন করলাম। তিনি বলেন, তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণীও হালাল। [৩৮৫] জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সমুদ্রের পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, তার পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণীও হালাল। [৩৮৬]
উযু করতে অপরের সাহায্য গ্রহণ এবং তার পানি ঢেলে দেয়া
মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন প্রয়োজনে (পায়খানায়) বের হয়ে গেলেন। তিনি ফিরে এলে আমি পানির পাত্রসহ তাঁর কাছে গেলাম এবং তাঁকে পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি তাঁর দু’ বাহু ধৌত করলেন, তারপর মুখমন্ডল ধৌত করলেন। তিনি তাঁর বাহুদ্বয় ধৌত করতে চাইলে তাঁর জুব্বার হাত দুটো সংকীর্ণ হওয়াতে তাঁর দু’ হাত জুব্বার নিম্নভাগ দিয়ে বের করলেন এবং তা ধুলেন, অতঃপর তাঁর মোজাদ্বয়ের উপরিভাগে মাসহ করলেন, তারপর আমাদের সাথে সলাত আদায় করলেন। [৩৮৭] আর-রুবায়‘ বিনতু মুআব্বিয (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য উযুর পানি নিয়ে এলাম। তিনি বলেন, পানি ঢালতে থাকো। আমি পানি ঢাললাম। তিনি তাঁর মুখমন্ডল ও দু’ হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। তিনি পুনরায় পানি নিয়ে তা দিয়ে তাঁর মাথা সম্মুখ ও পেছনভাগসহ মাসহ করলেন এবং তাঁর উভয় পা তিনবার করে ধৌত করেন। [৩৮৮] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি)....... কথাটি ছাড়া হাসান। সফ্ওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে ও বাড়িতে থাকাকালে আমি তাঁর উযুর পানি ঢেলে দিয়েছি। [৩৮৯] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা রুকাইয়াহ (রাঃ)-এর দাসী উম্মু আইয়্যাশ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করাতাম। আমি দাঁড়িয়ে পানি ঢালতাম (এবং তিনি বসে উযু করতেন)। [৩৯০]
কোন ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে তার হাত না ধুয়ে তা পানির পাত্রে প্রবেশ করাবে না
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ রাতের ঘুম থেকে জেগে তার হাত দু’ অথবা তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত যেন পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা তোমাদের কেউ জানে না যে, তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে। [৩৯১] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তার হাত ধোয়ার পূর্বে যেন পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। [৩৯২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে উযু করার ইচ্ছা করলে সে যেন তার হাত ধোয়ার আগে তা তার উযুর পানিতে প্রবেশ না করায়। কেননা সে জানে না যে, তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে এবং সে তার হাত কিসের উপর রেখেছিল। [৩৯৩] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি)........... মুসলিমে এ শব্দগুলো নেই। "সে তার হাত কিসের উপর রেখেছিল” এ অতিরিক্ত অংশ মুনকার বাকী সহীহ। আল-হারিস (বিন আবদুল্লাহ্) (শাবী তাকে মিথ্যুক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তার দু’ হাত পাত্রে ঢুকানোর পূর্বেই ধুয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। [৩৯৪]
উযু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা
আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি উযুর সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করেনি তার উযু হয়নি। [৩৯৫] (আসমা’) বিনতু সাঈদ বিন যায়দ, তিনি তার পিতা সাঈদ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার উযু হয়নি তার সলাত হয়নি এবং যে ব্যক্তি উযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেনি তার উযু হয়নি। [৩৯৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার উযু হয়নি তার সলাত হয়নি এবং যে ব্যক্তি উযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেনি তার উযু হয়নি। [৩৯৭] সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার উযু হয়নি তার সলাত হয়নি এবং যে ব্যক্তি উযুর সময় বিসমিল্লাহ বলেনি তার উযু হয়নি। ৪/৪০০(১). সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী (রাঃ), যে ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পড়েনি তার সলাত এবং যে ব্যক্তি আনসারদের ভালোবাসে না তার সলাত হয় না। [৩৯৮] তাহকীক আলবানীঃ দ্বিতীয় শর্তে মুনকার।
ডান থেকে উযু আরম্ভ করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করাকালে ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। একইভাবে তিনি মাথার চুল আঁচড়ানো ও জুতা পরিধানও ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। [৩৯৯] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা উযু করার সময় তোমাদের ডান থেকে শুরু করবে। [৪০০]
এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করা ও নাক পরিস্কার করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করতেন ও নাক পরিষ্কার করতেন। [৪০১] আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং এক আঁজলা পানি দিয়ে তিনবার কুলি করেন ও তিনবার নাক পরিষ্কার করেন। [৪০২] আবদুল্লাহ্ বিন ইয়াযীদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে উযুর পানি চান। আমি পানি নিয়ে তাঁর নিকট এলাম। তিনি এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করলেন এবং নাক পরিষ্কার করলেন। [৪০৩]
নাকের ভিতর পানি পৌঁছানো ও নাক উত্তমরূপে পরিষ্কার করা
সালামাহ বিন কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি যখন উযু করবে তখন নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করবে। আর যখন তুমি ইসতিনজা’ করবে, তখন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করবে। [৪০৪] লাকীত বিন সবরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে উযু সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তুমি পরিপূর্ণরুপে উযু করো এবং নাকের ভেতর উত্তমরূপে পানি পোঁছাও। কিন্তু তুমি সায়িম হলে তা করবেনা। [৪০৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা দুই বা তিনবার পানি দিয়ে উত্তমরূপে নাক পরিষ্কার করো। [৪০৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি উযু করে, সে যেন উত্তমরূপে নাক পরিষ্কার করে এবং যে ব্যক্তি শৌচ করে, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। [৪০৭]
একবার করে উযুর অঙ্গসমুহ ধৌত করা
সাবিত বিন আবূ সাফিয়্যাহ আস-সুমালী (দ’ইফ বা দুর্বল ও রাফিযী) আমি আবূ জা’ফার ... কে জিজ্ঞেস করে বললাম, আমার নিকট জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার করে উযুর অঙ্গ ধৌত করতেন? তিনি বলেন, হাঁ। আমি বললাম, তিনি কি দু’বার অথবা তিনবার করে উযু অঙ্গ ধৌত করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। [৪০৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক এক আঁজলা পানি দিয়ে উযুর এক একটি অঙ্গ ধৌত করতে দেখেছি। [৪০৯] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাবুক অভিযানকালে উযুর প্রতিটি অঙ্গ একবার করে ধৌত করতে দেখেছি। [৪১০]
উযুর অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করা
শাকীক বিন সালামাহ আমি উসমান (রাঃ) ও আলী (রাঃ)-কে তিনবার করে উযুর অঙ্গসমূহ ধৌত করতে দেখেছি এবং তারা দু’জন বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু এরূপই ছিল। [৪১১] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি তিনবার করে উযুর অঙ্গসমূহ ধৌত করেন এবং বলেন যে, এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু। [৪১২] আয়িশাহ ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধৌত করতেন। [৪১৩] আবদুল্লাহ্ বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযুর অঙ্গসমূহ তিন তিনবার করে ধৌত করতে দেখেছি এবং তিনি তাঁর মাথা একবার মাসহ করেন। [৪১৪] আবূ মালিক আল আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযুর অঙ্গগুলো তিন তিনবার করে ধৌত করতেন। [৪১৫] রুবায়’ বিনতু মুআব্বায বিন আফরা’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন তিনবার করে উযুর অঙ্গগুলো ধৌত করতেন। [৪১৬]
উযুর অঙ্গসমূহ একবার দু’বার বা তিনবার করে ধৌত করা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার করে উযুর অঙ্গগুলো ধৌত করার পর বলেন, এটা হলো সেই উযু, যা ছাড়া আল্লাহ কারো সলাত কবুল করেন না। অতঃপর তিনি দু’বার করে উযুর অঙ্গগুলো ধৌত করেন এবং বলেন, এই উযুই যথেষ্ট। অতঃপর তিনি তিনবার করে উযুর অঙ্গগুলো ধৌত করেন এবং বলেন, এটা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ উযু। এটা আমার উযু এবং আল্লাহ্র অন্তরঙ্গ বন্ধু ইবরাহীম (আঃ)-এর উযু। যে ব্যক্তি এভাবে উযু করলো এবং উযুর শেষে বললোঃ (কালিমা শাহাদাত) “ আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর (প্রেরিত) বান্দা ও রসূল,’’ তাঁর জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে এবং সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [৪১৭] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি নিয়ে ডাকলেন এবং উযুর অঙ্গসমূহ একবার করে ধৌত করলেন, অতঃপর বলেন, এটা হচ্ছে উযুর আবশ্যকীয় রূপ অথবা তিনি বলেন, এটা হলো সেই ব্যক্তির উযু যে উযু করেনি এবং যা ব্যতীত আল্লাহ তার সলাত কবুল করবেন না। অতঃপর তিনি উযুর অঙ্গগুলো দু’বার করে ধৌত করে বলেন, এটা এমন উযু, যে ব্যক্তি এভাবে উযু করবে আল্লাহ তাঁকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবেন। অতঃপর তিনি উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেন, এটা হল আমার উযু এবং আমার পূর্ববর্তী নবী রসুলগণের উযু। [৪১৮]
সঠিকভাবে উযু করা এবং তাতে সীমাতিরিক্ত কিছু করা মাকরুহ
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় উযুর জন্য ‘ওয়ালাহান’ নামের একটি শয়তান আছে। অতএব তোমরা পানি প্রসূত সন্দেহ থেকে দূরে থাকো। [৪১৯] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র ইবনুল আস তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে উযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাঁকে তিনবার করে ‘উযুর অঙ্গগুলো ধৌত করে দেখান, তারপর বলেন, এই হল উযু। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশি করল সে অবশ্যই মন্দ কাজ করলো অথবা সীমালঙ্ঘন করলো অথবা যুল্ম করলো। [৪২০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমি আমার খালা মায়মূনাহ (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটালাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘুম থেকে উঠে) দাঁড়ান এবং মশক থেকে অল্প অল্প পানি নিয়ে উযু করেন। তখন আমিও উঠলাম এবং তিনি যেরূপ করলেন আমিও তদ্রূপ করলাম। [৪২১] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে উযু করতে দেখে বলেন, অপচয় করো না, অপচয় করো না। [৪২২] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদ (রাঃ)-কে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি উযু করছিলেন। তিনি বলেন, এই অপচয় কেন? সা’দ (রাঃ) বলেন, উযুতেও কি অপচয় আছে? তিনি বলেন, হাঁ যদিও তুমি প্রবাহমান নদীতে থাকো। [৪২৩]
পূর্ণাঙ্গভাবে উযু করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। [৪২৪] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের পথ দেখাবো না যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দিবেন এবং পূণ্যের পরিমান বাড়িয়ে দিবেন? তারা বলেন, হাঁ, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন, কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে উযু করা, মাসজিদের দিকে ঘন ঘন যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্তের সলাত আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের সলাতের অপেক্ষায় থাকা। [৪২৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে উযু করা, মাসজিদে যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্তের সলাত আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের সলাতের জন্যে অপেক্ষারত থাকা (এই তিনটি কাজ) গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ। [৪২৬]
দাড়ি খিলাল করা
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর দাড়ি খিলাল করতে দেখেছি। [৪২৭] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং তাঁর দাড়ি খিলাল করলেন। [৪২৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উযু করতেন, তখন তাঁর দাড়ি খিলাল করতেন এবং তাঁর আঙ্গুলের ফাঁকসমূহও দু’বার খিলাল করতেন। [৪২৯] তাহকীক আলবানীঃ দু’বার শব্দ ছাড়া সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উযু করতেন, তখন তাঁর কপালের দু’পাশে আস্তে আস্তে মলতেন। অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে নিচের দিক থেকে তাঁর দাড়ি খিলাল করতেন। [৪৩০] আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করার সময় তাঁর দাড়ি খিলাল করতে দেখেছি। [৪৩১]
মাথা মাসহ করা
ইয়াহইয়া তিনি আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) কে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযু করতেন তা আপনি আমাকে দেখাতে পারেন কি? আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) বলেন, হাঁ। তিনি উযুর পানি নিয়ে ডাকলেন এবং তিনি তার হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত দু’বার ধৌত করলেন, অতঃপর তিনবার কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন, অতঃপর মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করলেন, অতঃপর দু’হাত কনুইসহ দু’বার করে ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি উভয় হাত দিয়ে সামনের দিক থেকে পেছনের দিক পর্যন্ত তাঁর মাথা মাসহ করলেন। তিনি তাঁর মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করলেন এবং দু’ হাত ঘাড় পর্যন্ত নিলেন, অতঃপর পেছন দিক থেকে দু’হাত যেখান থেকে মাসহ শুরু করেন সেখানে নিয়ে আসেন, অতঃপর তাঁর দু’ পা ধৌত করেন। [৪৩২] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখলাম এবং তিনি তাঁর মাথা একবার মাসহ করেন। [৪৩৩] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা একবার মাসহ করেন। [৪৩৪] সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখেছি। তিনি তাঁর মাথা একবার মাসহ করেন। [৪৩৫] আর-রুবায়’ বিনতু মুআব্বিয বিন আফরা’ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তিনি তাঁর মাথা দু’বার মাসহ করেন। [৪৩৬]
উভয় কান মাসহ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উভয় কান মাসহ করেন। তিনি তাঁর তর্জনীদ্বয় তাঁর দু’ কানের ছিদ্রপথে প্রবেশ করান এবং তাঁর বুড়ো আঙ্গুলদ্বয় দু’ কানের বাইরের অংশে রাখেন। এভাবে তিনি দু’ কানের ভেতরের ও বাইরের অংশ মাসহ করেন। [৪৩৭] আর-রুবায়’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তাঁর উভয় কানের ভেতর ও বাইরের অংশ মাসহ করেন। [৪৩৮] আর-রুবায়’ বিনতু মুআব্বিয বিন আফরা’ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তাঁর দু’টি আঙ্গুল তাঁর দু’ কানের ছিদ্রপথে প্রবেশ করান। [৪৩৯] মিকদাম বিন মা’দীকারিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন, তাঁর মাথা মাসহ করেন এবং দু’ কান ভেতর ও বাইরের অংশসহ মাসহ করেন। [৪৪০]
কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত
আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত। [৪৪১] আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাঁর মাথা একবার মাসহ করতেন এবং নাক সংলগ্ন চোখের কোটরদ্বয়ও মাসহ করতেন। [৪৪২] তাহকীক আলবানীঃ চোখের কোটরদ্বয় ব্যতীত সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কর্ণদ্বয় মাথার অন্তর্ভুক্ত। [৪৪৩]
আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা
মুসতাওরিদ বিন শাদ্দাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখেছি। তিনি তাঁর হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে তাঁর পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করেন। [৪৪৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি সলাত আদায় করতে দাঁড়াতে চাইলে পূর্ণরূপে উযু করবে এবং তোমার হস্তদ্বয় ও পদদ্বয়ের আঙ্গুলসমূহের মাঝখানে পানি পৌঁছাবে। [৪৪৫] লাকীত বিন সাবরাহ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেণ, তোমরা পূর্ণরূপে উযু করো এবং আঙ্গুলসমূহের মধ্যখান খিলাল করো। [৪৪৬] রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাওলা আসলাম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার সময় তাঁর হাতের আংটি নাড়াচাড়া করতেন। [৪৪৭]
পায়ের গোড়ালি ধৌত করা
আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোককে উযু করতে দেখলেন, কিন্তু তাদের পায়ের গোড়ালি (না ভেজায়) চমকাচ্ছিল। তিনি বলেন, পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তোমরা পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করো। [৪৪৮] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। [৪৪৯] আবূ সালামাহ আয়িশাহ (রাঃ) আবদুল রহমান (রাঃ) -কে উযু করতে দেখে বলেন, পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করুন। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। [৪৫০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। [৪৫১] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। [৪৫২] খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ ইয়াযীদ বিন আবূ সূফ্ইয়ান, শুরাহবীল বিন হাসানাহ ও আম্র ইবনুল আস (রাঃ), তারা সকলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা পূর্ণরূপে উযু করো। পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। [৪৫৩]
দু’ পায়ের পাতা ধৌত করা
আবূ হাইয়্যাহ (মাকবূল) আমি আলী (রাঃ)-কে উযু করতে দেখেছি। তিনি তার উভয় পায়ের পাতা গোছা পর্যন্ত ধৌত করেন; অতঃপর বলেন, আমি তোমাদেরকে তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযু দেখাতে চাই। [৪৫৪] মিকদাম বিন মা‘দীকারিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তাঁর দু’পা তিনবার করে ধৌত করেন। [৪৫৫] আর-রুবায়‘ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমার নিকটে এলেন এবং আমাকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন অর্থাৎ যে হাদীস আমি বর্ণনা করি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তাঁর দু’পা ধৌত করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, লোকেরা তো পা ধৌত করা ব্যতীত অন্য কিছু মেনে নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু আমি আল্লাহ্র কিতাবে মাসহ ব্যতীত কিছুই পাই না। [৪৫৬] তাহকীক আলবানীঃ ইবনু আব্বাসের কথাটি ছাড়া হাসান, কেননা সেটি মুনকার।
আল্লাহ্র নির্দেশিত পন্থায় উযু করা
উসমান বিন আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নির্দেশমত পূর্ণরূপে উযু করবে, তার ফরয সলাতসমূহ এগুলোর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা হবে। [৪৫৭] রিফাআহ বিন রাফি‘ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বসা ছিলেন। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ্র নির্দেশ মত পূর্ণাঙ্গরূপে উযু না করলে কারো সলাত পরিপূর্ণ হবে না। সে তার মুখমন্ডল ও দু’হাত কনুইসহ ধৌত করবে, তার মাথা মাসহ করবে এবং দু’পা গোছা পর্যন্ত ধৌত করবে। [৪৫৮]
উযু করার পর পানি ছিটানো
আল-হাকাম বিন সুফ্ইয়ান আস-সাকাফী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযু করতে দেখেন। তিনি উযু শেষে এক আঁজলা পানি নিয়ে তা তাঁর লজ্জাস্থানে ছিটিয়ে দেন। [৪৫৯] উসামাহ বিন যায়দ ইবনুল হারিসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) আমাকে উযু করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। তিনি আমাকে আমার কাপড়ের নিচে পানি ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছেন, উযু করার পর পেশাব বের হওয়ার সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য। [৪৬০] তাহকীক আলবানীঃ নির্দেশ দেয়ার কথা ব্যতীত হাসান। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি উযু করার পর (তোমার লজ্জাস্থানে) পানি ছিটিয়ে দিও। [৪৬১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার পর তাঁর লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দেন। [৪৬২]
উযু ও গোসলের পর রুমাল ব্যবহার করা
উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করতে দাঁড়ালেন। ফাতিমাহ (রাঃ) তাকে আড়াল করে রাখেন। অতঃপর তিনি তাঁর কাপড় নিয়ে তা শরীরে পেচান (গা মোছেন)। [৪৬৩] কায়স ইবন সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এলে আমরা তাঁর গোসলের পানি রাখলাম এবং তিনি গোসল করেন। অতঃপর আমি তাঁর জন্য একটি রঙ্গীন চাদর নিয়ে এলাম। তিনি তাঁর শরীরে সেটি পেচালেন। আমি যেন তাঁর পেটের উপর ওয়ারস ঘাসের বর্ণের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি। [৪৬৪] মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি কাপড় নিয়ে এলাম, তখন তিনি নাপাকির গোসল করছিলেন। তিনি সেটি ফেরত দেন এবং তাঁর শরীর থেকে পানি ঝাড়তে থাকেন। [৪৬৫] সালমান আল-ফারিসী (রাঃ) 468 ৪/৪৬৮. সালমান আল-ফারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং তাঁর পরিধানের পশমী জুব্বা উল্টিয়ে তা দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল মাসহ করেন। [৪৬৬]
উযু করার পর যে দুআ’ পড়বে
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করার পর তিনবার বলে (কালিমা শাহাদাত): “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তাঁর কোন শারীক নাই, তিনি একক এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল, “তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে। [৪৬৭] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করার পর বলে (কালিমা শাহাদাত) : “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তাঁর কোন শারীক নাই, তিনি একক এবং আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল, “তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে। [৪৬৮]
পিতলের পাত্রে উযু করা
আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এলেন। আমরা একটি পিতলের পাত্রে তাঁর জন্য পানি পেশ করি। তিনি তা দিয়ে উযু করেন। [৪৬৯] যায়নাব বিনতু জাহ্শ (রাঃ) তার পিতলের একটি পাত্র ছিল। তিনি বলেন, আমি তাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল আঁচড়াতাম। [৪৭০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতলের একটি পাত্রে উযু করেন। [৪৭১]
ঘুম থেকে উঠে উযু করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে যেতেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকতো। অতঃপর তিনি ঘুম থেকে উঠে সলাত আদায় করতেন এবং উযু করতেন না। আত-তানাফিসী (রহঃ) বলেন, ওয়াক্বী (রহঃ) বলেছেন, অর্থাৎ তিনি সাজদাহরত অবস্থায় (কখনো) ঘুমিয়ে যেতেন। [৪৭২] আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকতো। অতঃপর তিনি উঠে সলাত আদায় করতেন। [৪৭৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ ঘুম ছিল বসা অবস্থায়। [৪৭৪] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চোখ হলো পশ্চাদদ্বারের বন্ধনস্বরূপ। অতএব যে ব্যক্তি ঘুমায় সে যেন উযু করে (যদি সলাত আদায় করতে চায়)। [৪৭৫] সাফওয়ান বিন আসসাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নাপাকির গোসল ব্যতীত তিন দিন পর্যন্ত মোজা না খোলার নির্দেশ দিয়েছেন, পায়খানা, পেশাব হলেও এবং ঘুমালেও। [৪৭৬]
লিঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করতে হবে কিনা
বুস্রাহ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার লিঙ্গ স্পর্শ করলে সে যেন উযু করে। [৪৭৭] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার লিঙ্গ স্পর্শ করলে সে যেন অবশ্যই উযু করে। [৪৭৮] উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলো যে যেন উযু করে। [৪৭৯] আবূ আয়্যূব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করলো সে যেন উযু করে। [৪৮০]
লিঙ্গ স্পর্শ করলে উযু করা জরুরী নয়
তালক আল-হানাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। তিনি বলেন, তাতে উযুর প্রয়োজন নেই। কেননা তা তোমার দেহের একটি অঙ্গ। [৪৮১] আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, এটা তোমার শরীরের একটি অঙ্গমাত্র। [৪৮২]
আগুনের তাপে পরিবর্তিত জিনিস আহারের পর উযু করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আগুনে পাকানো জিনিস খাওয়ার পর তোমরা উযু করো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আবূ হুরায়রাহ্কে) বলেন, আমরা কি গরম পানি পানের পরও উযু করবো? তিনি তাকে বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস শুনলে তার সামনে দৃষ্টান্ত পেশ করো না। [৪৮৩] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি).....শব্দটি ছাড়া হাসান। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আগুন যাকে স্পর্শ করেছে তা খাওয়ার পর তোমরা উযু করো। [৪৮৪] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি তার দু’ কানে তার দু’ হাত রেখে বলতেন, এই দু’কান বধির হয়ে যাক! যদি আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে না শুনে থাকি যে, “আগুনে পাকানো জিনিস খাওয়ার পর তোমরা উযু করো’। [৪৮৫]
আগুনে রান্না করা জিনিস খাওয়ার পর উযুর প্রয়োজন নেই
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর কাঁধের গোশত খাওয়ার পর তাঁর নিচে বিছানো কাপড়ে তাঁর উভয় হাত মোছেন, অতঃপর সলাতে দাঁড়ান এবং সলাত আদায় করেন। [৪৮৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র ও উমার (রাঃ) রুটি ও গোশত খেলেন এবং তাঁরা উযু করেননি। [৪৮৭] যুহরী আমি ওয়ালীদ অথবা আবদুল মালিকের সামনে রাতের খাবার পেশ করলাম। ইত্যবসরে সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে আমি উযু করতে উঠে দাঁড়ালাম। তখন জা’ফার বিন আম্র বিন উমাইয়্যাহ বলেন, আমি আমার পিতা (আম্র বিন উমাইয়্যাহ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগুনে পাকানো খাদ্য গ্রহণের পর সলাত আদায় করেন কিন্তু উযু করেননি। আলী বিন আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও আমার পিতার সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিও তাই করেছেন। [৪৮৮] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বকরীর রানের গোশত পরিবেশন করা হলো। তিনি তা থেকে খেলেন, অতঃপর সলাত আদায় করলেন, কিন্তু পানি স্পর্শ করেননি। [৪৮৯] সুওয়াইদ বিন নু‘মান আল-আনসারী (রাঃ) তাঁর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে খায়বারের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। তারা আস-সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছে আসরের সলাত আদায় করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার নিয়ে ডাকলে ছাতু ছাড়া আর কিছুই পরিবেশন করা গেলো না। তাঁরা সকলে পানাহার করলেন। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং মুখে পানি নিয়ে কুলি করলেন, তারপর দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সাথে নিয়ে মাগরিবের সলাত আদায় করেন। [৪৯০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর কাঁধের গোশত খেলেন, অতঃপর কুলি করেন এবং তাঁর উভয় হাত ধোয়ার পর সলাত আদায় করেন। [৪৯১]
উটের গোশত খাওয়ার পর উযু করা
আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উটের গোশত খেয়ে উযু করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেনঃ তোমরা তা খেয়ে উযু করবে। [৪৯২] জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে উটের গোশত খেয়ে উযু করার এবং ছাগলের গোশত খেয়ে উযু না করার নির্দেশ দিয়েছেন। [৪৯৩] উসায়দ বিন হুদায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বকরীর দুধ পান করার পর উযু করবে না এবং উটের দুধ পান করার পর উযু করবে। [৪৯৪] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা উটের গোশত খেয়ে উযু কর, বকরীর গোশত খেয়ে উযু করো না এবং ছাগলের দুধ পান করে উযু করো না। তোমরা বকরীর খোঁয়াড়ে সলাত আদায় করতে পারো কিন্তু উটের খোঁয়াড়ে সলাত আদায় করোনা। [৪৯৫]
দুধপান করার পর কুলি করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা দুধ পান করে কুলি করবে। কেননা তাতে চর্বি আছে। [৪৯৬] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা দুধ পান করার পর কুলি করবে। কেননা তাতে চর্বি আছে। [৪৯৭] সাহল বিন সাদ আস-সাঈদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা দুধ পান করার পর কুলি করবে। কারণ তাতে চর্বি আছে। [৪৯৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বকরী দোহন করে দুধ পান করেন, অতঃপর পানি চেয়ে নিয়ে তা দিয়ে কুলি করেন এবং বলেন, তাতে চর্বি আছে। [৪৯৯]
চুমা দেয়ার পর উযু করা
উরওয়াহ ইবনুয-যুবায়র আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এক স্ত্রী কে চুমা দিলেন, অতঃপর সলাত আদায়ের জন্য বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু উযু করেননি। আমি (উরওয়াহ) বললাম, আপনিই সেই ব্যক্তি। এতে তিনি (আয়িশাহ) হাসলেন। [৫০০] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার পর চুমা দিতেন, অতঃপর উযু না করেই সলাত আদায় করতেন। বহুবার তিনি আমার সাথে এরূপ করেছেন। [৫০১]
মযী নির্গত হলে উযু করা
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মযী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তা নির্গত হলে উযু করতে হবে এবং বীর্য নির্গত হলে গোসল করতে হবে। [৫০২] মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, যে তার স্ত্রীর নিকটবর্তী হয়েছে কিন্তু বীর্যপাত হয়নি। তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো এরূপ হলে সে যেন তার লজ্জাস্থান ধৌত করে এবং উযু করে। [৫০৩] সাহল বিন হুনায়ফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার প্রচুর মযী নির্গত হতো, তাই বহুবার গোসল করতাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এতে তোমার জন্য উযুই যথেষ্ট। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল, তা আমার কাপড়ে লেগে গেলে কি করতে হবে? তিনি বলেন, তোমার কাপড়ের যে অংশে তা লাগে দেখবে সেই অংশ এক আজলা পানি দিয়ে ধৌত করাই তোমার জন্য যথেষ্ট। [৫০৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি উমার (রাঃ) কে সাথে করে উবাই বিন কাব (রাঃ) এর নিকট এলেন। তিনি তাদের সামনে বেরিয়ে এসে বলেন, আমার মযী নির্গত হয়েছিল, তাই আমার লজ্জাস্থান ধৌত করলাম এবং উযু করলাম। উমার (রাঃ) বললেন, তাই কি যথেষ্ট? তিনি বলেন, হাঁ। উমার (রাঃ) বললেন, আপনি কি তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, হাঁ। [৫০৫]
ঘুমানোর পূর্বে উযু করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে উঠলেন, অতঃপর পায়খানায় গেলেন, তারপর প্রয়োজন পূরণ করে মুখমন্ডল ও দু’হাত ধৌত করে ঘুমালেন। [৫০৬]
প্রতি ওয়াক্তের সলাতের জন্য উযু করা এবং একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ওয়াক্তের সলাতের জন্য উযু করতেন এবং আমরা একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত পড়তাম। [৫০৭] বুরায়দাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ওয়াক্তের সলাতের জন্য উযু করতেন। তবে মাক্কাহ বিজয়ের দিন তিনি একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করেছেন। [৫০৮] ফাদল বিন মুবাশ্শির (তার মাঝে দুর্বলতা আছে) আমি জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করতে দেখেছি। আমি বললাম, একি ব্যাপার? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপ করতে দেখেছি। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ করেছেন আমিও তদ্রুপ করলাম। [৫০৯]
উযু থাকা অবস্থায় পুনরায় উযু করা
আবূ গুতায়ফ আল-হুযালী (মাজহুল) আমি আবদুল্লাহ্ বিন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নিকট মাসজিদে তার বৈঠক শুনেছি : যখন সলাতের সময় উপস্থিত হলো তিনি উঠে গিয়ে উযু করেন এবং সলাত আদায় করেন, অতঃপর তার মাজলিসে ফিরে আসেন।অতঃপর আসরের সলাত আদায়ের সময় হলে তিনি উঠে গিয়ে উযু করেন এবং সলাত আদায় করেন, অতঃপর তার মাজলিসে ফিরে আসেন। পুনরায় মাগরিবের সলাতের সময় হলে তিনি উঠে গিয়ে উযু করেন এবং সলাত আদায় করেন, অতঃপর তার মাজলিসে ফিরে আসেন। আমি বললাম, আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য ( নতুনভাবে) উযু করা ফারয না সুন্নাত? তিনি বলেন, তুমি কি ধারণা করেছ যে, এটা আমার নিজের থেকে করছি? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, না। যদি আমি ফাজরের সলাতের জন্য উযু করতাম, তাহলে অবশ্যই তা দিয়ে সকল ওয়াক্তের সলাত আদায় করতাম, যাবত না আমার উযু ভঙ্গ হয়। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি উযু থাকা অবস্থায় প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করবে, তার জন্য রয়েছে দশটি নেকী”। আমি নেকীর প্রতিই আগ্রহী। [৫১০]
উযু ভঙ্গ হলেই কেবল উযু করা জরুরি
আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অভিযোগ করা হলো যে, কোনো ব্যক্তি তার সলাতের মধ্যে কিছু পাওয়ার (বায়ু নির্গত হওয়ার) আশংকা করছে। তিনি বলেন, (উযু ভঙ্গ হয়না) যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গত হওয়ার গন্ধ পায় অথবা শব্দ শোনে। [৫১১] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সলাতের মধ্যে (বায়ু নির্গত হওয়ার) সন্দেহ হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, সে শব্দ না শোনা অথবা দুর্গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ত্যাগ করবেনা। [৫১২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বায়ু নির্গত হওয়ার শব্দ কিংবা দুর্গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত উযু নষ্ট হয়না বা পুনরায় উযু করতে হয়না। [৫১৩] মুহাম্মদ বিন আম্র বিন আতা তিনি বলেন, আমি সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) কে তার কাপড় শুকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এরূপ করছেন কেন? তিনি বললেন, অবশ্যই আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ বায়ুর দুর্গন্ধ পাওয়া বা আওয়াজ শোনা ব্যতিত (পুনরায়) উযু করতে হবে না। [৫১৪]
যে পরিমাণ পানি হলে অপবিত্র হয় না
আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জঙ্গলের কুয়ার পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি, যা থেকে হিংস্র প্রাণী ও গৃহপালিত পশু পানি পান করে এবং তাতে নামে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পানি দু’ কুল্লা পরিমাণ হলে তাকে কোন কিছুই অপবিত্র করে না। [৫১৫] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পানি দু’ বা তিন কুল্লা পরিমাণ হলে, একে কোন কিছু অপবিত্র করে না। [৫১৬]
কূপ বা জলাশয়
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) মাক্কাহ ও মাদীনাহ্র মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত কূপ বা জলাশয়, যা থেকে হিংস্র প্রাণী, কুকুর ও গাধা পানি পান করে এবং তার পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, সেগুলো যা তাদের পেটে পুরেছে তা সেগুলোর জন্যই এবং তাছাড়া যা আছে তা আমাদের জন্য পবিত্র। [৫১৭] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একটি পুকুরের পাড়ে গিয়ে পৌছালাম,যাতে একটি গাধার লাশ পতিত ছিল। তিনি বলেন, আমরা তার পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকি, যাবত না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে পৌঁছেন। তিনি বললেনঃ “কোন জিনিস পানিকে অপবিত্র করে না”। আমরা পানি পান করলাম পরিতৃপ্ত হলাম এবং তা আমাদের সাথে করে নিলাম। [৫১৮] তাহকীক আলবানীঃ গাধার লাশ এর ঘটনা মুনকার, আর বাকী অংশ সহীহ। আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন জিনিস পানিকে অপবিত্র করে না, যতক্ষণ না তার ঘ্রাণে, স্বাদে ও রং-এর পরিবর্তন আসে। [৫১৯]
যে শিশু শক্ত খাবার ধরেনি তার পেশাব সম্পর্কে
লুবাবাহ বিনতুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ)-এর পুত্র হুসায়ন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোলে পেশাব করে দিলে আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার পরিধেয় বস্ত্রটি আমাকে দিন এবং এটা ছাড়া অন্য একটি বস্ত্র পরে নিন। তিনি বললেনঃ দুগ্ধপোষ্য বালকের পেশাবের উপর পানি ছিটালেই চলবে কিন্তু বালিকার পেশাব ধুতে হবে। [৫২০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি (দুগ্ধপোষ্য) শিশু আনা হলো। সে তাঁর কোলে পেশাব করে দেয়। তিনি তাতে পানি ছিটিয়ে দেন এবং তা ধৌত করেননি। [৫২১] উম্মু কায়স বিনতু মিহসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার (দুগ্ধপোষ্য) শিশু পুত্রকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। সে তখনও শক্ত খাবার ধরেনি। সে তাঁর কোলে পেশাব করে দেয়। তিনি পানি নিয়ে ডাকেন এবং তা তাতে ছিটিয়ে দেন। [৫২২] আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দুগ্ধপোষ্য শিশু পুত্র সন্তান হলে তার পেশাবে পানি ছিটালেই চলবে, কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার পেশাব ধুয়ে ফেলতে হবে। ৪/৫২৫(১). আবূল ইয়ামান আল-মিসরী, তিনি বলেন, আমি ইমাম শাফিঈ (রহঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস “দুগ্ধপোষ্য শিশু পুত্র সন্তান হলে তার পেশাবে পানি ছিটালে হবে এবং কন্যা সন্তান হলে তার পেশাব ধুয়ে ফেলতে হবে” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, এখানে উভয়ের পানি (পেশাব হিসেবে) একই পর্যায়ের। তিনি বলেন, কেননা পুত্র সন্তানের পেশাব পানি ও মাটি থেকে নির্গত এবং কন্যা সন্তানের পেশাব গোশত ও রক্ত থেকে নির্গত। অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছ অথবা তিনি বলেন, তোমার কি বোধগম্য হয়েছে? আল-মিসরী বলেন, আমি বললাম, না। শাফিঈ ( রহঃ) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করার পর তাঁর পাঁজরের ক্ষুদ্র হাড় থেকে হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়। এ হিসাবে পুত্র সন্তানের পেশাব পানি ও মাটি থেকে তৈরি হয় এবং কন্যা সন্তানের পেশাব গোশত ও রক্ত থেকে নির্গত হয়। আল-মিসরী বলেন, শাফিঈ (রহঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এবার তুমি কি বুঝতে পেরেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি আমাকে বললেন, আল্লাহ্ এই জ্ঞান দ্বারা তোমাকে উপকৃত করুক। [৫২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ সাম্হ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাদিম ছিলাম। তাঁর নিকট হাসান অথবা হুসায়ন (রাঃ)-কে নিয়ে আসা হলো। সে তাঁর বুকের উপর পেশাব করে দেয়। উপস্থিত লোকেরা তা ধোয়ার উদ্যোগ নিলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাতে পানি ছিটিয়ে দাও। কেননা শিশু কন্যা সন্তান হলে তার পেশাব ধৌত করতে হয় এবং পুত্র সন্তান হলে তার পেশাবের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়াই যথেষ্ট। [৫২৪] উম্মু কুর্য (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (দুগ্ধপোষ্য শিশু) বালকের পেশাবের উপর পানি ছিটাতে হবে এবং বালিকার পেশাব ধুতে হবে। [৫২৫]
পেশাবে সিক্ত মাটি কিভাবে ধুয়ে পরিস্কার করতে হয়
আনাস (রাঃ) এক বেদুঈন মাসজিদে (নাববীতে) পেশাব করে দিল। কতক লোক তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে পেশাব করতে বাধা দিও না। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং তা পেশাবের উপর ঢেলে দিলেন। [৫২৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) এক বেদুইন মাসজিদে (নাববীতে) প্রবেশ করলো, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে বসা ছিলেন। সে বললো, হে আল্লাহ্! আমাকে ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ষমা করুন এবং আমাদের সাথে অপর কাউকে ক্ষমা না করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিয়ে বললেনঃ তুমি একটি প্রশস্ত বিষয়কে সংকীর্ণ করে দিলে। অতঃপর সে ফিরে মোড় ঘুরে মাসজিদের এক কোণায় গিয়ে পেশাব করতে লাগলো। বেদুঈন তার অশিষ্ট আচরণ উপলব্ধি করে আমার নিকট দাঁড়িয়ে বললো, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তিনি তাকে ধমকও দেননি এবং গালি-গালাজও করেননি। তিনি শুধু বললেনঃ এই মাসজিদে, এতে পেশাব করা সঙ্গত নয়, বরং তা নির্মাণ করা হয়েছে আল্লাহ্র যিকির ও সলাতের জন্য। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি আনার নির্দেশ দেন এবং তা পেশাবের উপর ঢেলে দেয়া হয়। [৫২৭] ওয়াসিলাহ ইবনুল আসক্বা’ (রাঃ) তিনি বলেন, এক বেদুইন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্! আমার উপর ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং বিশেষ করে আমাদের সাথে আপনার রহমতের মধ্যে অন্য কাউকে যোগ না করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়! তুমি প্রশস্তকে সংকীর্ণ করে ফেলেছ। রাবী বলেন, এরপর সে সরে গিয়ে পেশাব করতে লাগলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগন বলেন, থামো! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তাকে ত্যাগ করো। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি আনালেন এবং তা পেশাবের উপর ঢেলে দিলেন। [৫২৮]
মাটির একাংশ অপরাংশকে পবিত্র করে
আবদুর রহমান বিন আওফ (রহঃ)-এর উম্মু ওয়ালাদ তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে বললেন, আমার পরিধেয় বস্ত্রের আঁচল বেশ লম্বা। এ অবস্থায় আমি আবর্জনার স্থান দিয়ে যাতায়াত করি। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তার পরের স্থান একে পবিত্র করে দেয়। [৫২৯] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা মাসজিদে যাতায়াতকালে আবর্জনার স্থানও অতিক্রম করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ভূমির একাংশ অপরাংশকে পবিত্র করে। [৫৩০] আবদুল আশহাল গোত্রের এক মহিলা (ইসমু মুবহাব বা নাম অস্পষ্ট) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জানতে চেয়ে বললাম, আমার ও মাসজিদের মাঝখানে আবর্জনাপূর্ণ কিছু পথ আছে। তিনি বলেন, তার পরবর্তী পথ হয়ত পরিচ্ছন্ন হবে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, এই অংশ ঐ অংশের সমান বা পরিপূরক। [৫৩১]
নাপাক ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) মাদীনাহ্র কোন এক পথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নাপাক অবস্থায় তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হারিয়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি ফিরে এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ হে আবূ হুরায়রাহ! তুমি কোথায় ছিলে? তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি যখন আমাকে দেখেছেন তখন আমি নাপাক ছিলাম। এমতাবস্থায় গোসল না করে আপনার সাথে বসা আমি সঙ্গত মনে করিনি। রসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মু’মিন ব্যক্তি নাপাক হয় না। [৫৩২] হুযায়ফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এসে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। আমি নাপাক অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি তাঁকে পাশ কাটিয়ে গোসল করতে গেলাম। অতঃপর আমি ফিরে এলে তিনি বলেন, তোমার কি হলো? আমি বললাম, আমি নাপাক ছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুসলিম ব্যক্তি নাপাক হয় না। [৫৩৩]
পরিধেয় বস্ত্রে বীর্য লাগলে
আয়িশাহ (রাঃ) (আম্র বিন মায়মূন) আমি সুলায়মান বিন ইয়াসারকে বীর্য লেগে যাওয়া পরিধয় বস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, আমরা কি শুধু বীর্য লেগে যাওয়া অংশ ধৌত করবো, না গোটা কাপড়টিই ধৌত করবো? সুলায়মান (রহঃ) বলেন, আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিধেয় বস্ত্রে বীর্য লেগে গেলে তিনি তা পরিহিত অবস্থায় ধুয়ে ফেলতেন, অতঃপর ঐ কাপড় পরেই সলাত আদায় করতে বেরিয়ে যেতেন এবং আমি তাতে ধোয়ার চিহ্ন দেখতে পেতাম। [৫৩৪]
কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলা
আয়িশাহ (রাঃ) কখনো কখনো আমি নিজ হাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলতাম। [৫৩৫] হাম্মাম ইবনুল হারিস তিনি বলেন, আয়িশাহ (রাঃ) এর ঘরে একজন মেহমান আসলে তিনি তার জন্য একটি হলুদ বর্ণের তোষক বিছিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তাতে মেহমানের স্বপ্নদোষ হল এবং স্বপ্নদোষের চিহ্ন বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সে তোষকটি ফেরত পাঠাতে লজ্জা বোধ করে। তাই সে তা পানিতে ডুবিয়ে ধৌত করার পর সেটি তাকে ফেরত পাঠায়। তখন আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, সে আমাদের কাপড়টি কেন নষ্ট করলো? তার জন্য তো আঙ্গুল দিয়ে তা খুঁটে ফেলা যথেষ্ট ছিল। কখনো কখনো আমি আমার আঙ্গুল দ্বারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলেছি। [৫৩৬] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি স্বচক্ষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড়ে বীর্যের চিহ্ন দেখে তা নিজ হাতে খুঁটে তুলে ফেলেছি। [৫৩৭]
সহবাসকালের পরিধেয় বস্ত্রে সলাত আদায় করা
মুআবিয়াহ বিন আবূ সুফ্ইয়ান তিনি তার বোন ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কাপড় পরে সহবাস করতেন তা পরেই কি তিনি সলাতও আদায় করতেন? তিনি বলেন, হাঁ, যদি তাতে নাপাকী না লাগতো। [৫৩৮] আবূদ-দারদা’ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা পতিত হওয়া অবস্থায় আমাদের নিকট বের হয়ে আসেন। তিনি আমাদের এক কাপড়ে সলাত আদায় করালেন, যার দু’ প্রান্ত দু’ (কাঁধে) বিপরীত দিকে ছিল। তিনি সলাত শেষ করলে পর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি আমাদের সাথে এক কাপড়ে সলাত আদায় করালেন। তিনি বললেন, হাঁ, তাতেই সলাত আদায় করেছি এবং এই কাপড় পরিহিত অবস্থায় আমি সহবাস করেছি। [৫৩৯] জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলো, কোন ব্যক্তি যে কাপড় পরে সহবাস করেছে সে কাপড় পরেই কি সে সলাত আদায় করতে পারে? তিনি বললেন, হাঁ, তবে তাতে নাপাকী দৃষ্টিগোচর হলে তা ধুয়ে নিতে হবে। [৫৪০]
চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করা
হাম্মাম ইবনুল হারিস জারীর বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) পেশাব করার পর উযু করলেন এবং তার চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করলেন। তাকে বলা হল, আপনিও কি এরুপ করেন? তিনি বলেন, আমাকে কোন জিনিস তাতে বাধা দিবে? অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরুপ করতে দেখেছি। ইবরাহীম বলেন, জারীর (রাঃ) এর হাদীস শুনে লোকেরা বিস্মিত হতো। কারণ তিনি সূরাহ আল-মায়িদাহ নাযিল হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন। [৫৪১] হুযায়ফাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং তার চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করলেন। [৫৪২] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় যেতে বের হলেন। মুগীরাহ (রাঃ) এক পাত্র পানিসহ তাঁর অনুসরণ করেন। শেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজন সেরে উযু করেন এবং তাঁর চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেন। [৫৪৩] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি সা’দ বিন মালিক (রাঃ)-কে চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করতে দেখে বলেন, আপনারাও এটা করছেন! এরপর তারা উভয়ে উমার (রাঃ)-এর নিকট একত্র হলেন। সা’দ (রাঃ) উমার (রাঃ)-কে বলেন, আমার এই ভাতিজাকে চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ সম্পর্কে ফতওয়া দিন। উমার (রাঃ) বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থাকাকালে আমাদের চামড়ার মোজার উপর মাসহ করতাম। আমরা একে আপত্তিকর দেখতে পাইনি। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আর সে যদি পায়খানা সেরে আসে? তিনি বললেন, হ্যা সে ক্ষেত্রেও। [৫৪৪] সাহ্ল আস্ সাঈদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেছেন এবং আমাদেরকেও মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। [৫৪৫] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সফরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি বলেন, পানি আছে কি? তিনি উযু করেন এবং তাঁর চামড়ার মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেন, অতঃপর সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে তাদের সলাতে ইমামাত করেন। [৫৪৬] বুরায়দাহ (রাঃ) (হাবশা-রাজ) নাজাশী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কালো রংয়ের এক জোড়া চামড়ার মোজা উপহার পাঠান। তিনি তা পরিধান করেন, অতঃপর উযু করেন এবং মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেন। [৫৪৭]
মোজার উপরিভাগ ও নিম্নভাগ মাসহ করা
মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজার উপরিভাগ ও নিম্নভাগ মাসহ করেন। [৫৪৮] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তখন সে উযু করছিল এবং তার চামড়ার মোজাদ্বয় ধৌত করছিল। তিনি তাকে হাতের ইশারায় নিষেধ করেন এবং বলেন, আমাকে মাসহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, এভাবে আঙ্গুলের মাথা থেকে নলার মূল পর্যন্ত এবং তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা রেখা টানেন (পায়ের নলা পর্যন্ত)। [৫৪৯]
মুকীম ও মুসাফিরের জন্য মাসহ করার সময়সীমা
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ)-কে মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তুমি আলীর নিকট যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো। কারণ তিনি এ সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। অতএব আমি আলী (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছে তাকে মাসহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে মাসহ করার নির্দেশ দিয়েছেনঃ মুকীমের জন্য একাধারে এক দিন ও এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য পূর্ণ তিন দিন পর্যন্ত। [৫৫০] খুযায়মাহ বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফিরের জন্য তিন দিন (মাসহ করার মেয়াদ) নির্ধারণ করেছেন। যদি প্রশ্নকারী আবেদন করতে থাকতো তাহলে তিনি হয়তো পাঁচ দিন নির্ধারণ করতেন। [৫৫১] খুযায়মাহ বিন সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তিন দিন’ (রাবী বলেন) আমার ধারণা মতে “তিন রাত” ও বলেছেন, মুসাফিরের জন্য মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করার মেয়াদ। [৫৫২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! মোজার উপর মাসহ করার মেয়াদ কত? তিনি বলেন, মুসাফিরের জন্য একাধারে তিন দিন ও তিন রাত ও মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত। [৫৫৩] আবূ বাকরাহ (রাঃ) উযু করে মোজা পরিধানের পর উযু ভংগ হওয়ার ক্ষেত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফিরের জন্য একাধারে তিন দিন ও তিন রাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন ও এক রাত মোজার উপর মাসহ করার অনুমতি দিয়েছেন। [৫৫৪]
অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাসহ করা
উবায় বিন ইমারাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বাড়িতে উভয় কিবলার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন, আমি কি মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, এক দিন? তিনি বলেন, দু’ দিন। রাবী বলেন, তাহলে তিন দিন? এভাবে তিনি সাত (দিন) পর্যন্ত পৌঁছেন। তিনি তাকে বলেন, যতদিন তোমার ইচ্ছা হয়। [৫৫৫] উকবাহ্ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি মিসর থেকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট আসেন। উমার (রাঃ) বলেন, কবে থেকে তুমি মোজা খোলনি? তিনি বলেন, এক জুমুআহর দিন থেকে পরবর্তী জুমুআহ্র দিন পর্যন্ত। তিনি বলেন, তুমি সুন্নাতকে পেয়ে গেছো। [৫৫৬]
সুতি মোজা ও জুতার উপরিভাগ মাসহ করা
মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং সুতি মোজাদ্বয় ও জুতা জোড়ার উপর মাসহ করেন। [৫৫৭] আবূ মুসা আল-আশআরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করেন এবং সুতি মোজাদ্বয় ও জুতা জোড়ার উপর মাসহ করেন। মুআল্লা (রহঃ) তার বর্ণিত হাদীসে বলেন, আমি অবশ্যি জানি যে, তিনি জুতা জোড়ার কথা বলেছেন। [৫৫৮]
পাগড়ির উপর মাসহ করা
বিলাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চামড়ার মোজাদ্বয় ও পাগড়ির উপর মাসহ করেছেন। [৫৫৯] আম্র বিন উমায়্যাহ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চামড়ার মোজাদ্বয় ও পাগড়ীর উপর মাসহ করতে দেখেছি। যায়দ বিন সূহান (রাঃ)-এর মুক্তদাস আবূ মুসলিম (মাকবূল) আমি সালমান (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে উযু করার উদ্দেশ্যে তার চামড়ার মোজাদ্বয় খুলতে দেখে তাকে বলেন, তুমি তোমার মোজাদ্বয়ের উপর, তোমার পাগড়ির উপর ও তোমার মাথার সম্মুখভাগ মাসহ করো। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মোজাদ্বয় ও পাগড়ীর উপর মাসহ করতে দেখেছি। [৫৬০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিতরী পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় উযু করতে দেখেছি। তিনি তাঁর পাগড়ির নিম্নভাগ দিয়ে তাঁর হাত প্রবেশ করিয়ে তাঁর মাথার সম্মুখভাগ মাসহ করেন এবং পাগড়ি খুলেননি। [৫৬১]
তাইয়াম্মুমের বিবরণ
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আয়িশাহ (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে গেলে তিনি তার সন্ধানে পেছনে থেকে গেলেন। আবূ বকর (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে লোকেদের অগ্রযাত্রায় বিলম্ব ঘটানোর জন্য তার উপর অসন্তুষ্ট হন। তখন মহামহিম আল্লাহ তায়াম্মুমের অনুমতি সম্বলিত আয়াত নাযিল করেন। রাবী বলেন, আমরা সেদিন থেকে কাঁধ পর্যন্ত মাসহ করে আসছি। রাবী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি জানতাম না যে, তুমি এত কল্যাণময়ী। [৫৬২] আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কাঁধ পর্যন্ত মাসহ করেছি। [৫৬৩] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার জন্য ভূপৃষ্ঠকে মাসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। [৫৬৪] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি আসমা’ (রাঃ)-এর নিকট থেকে একটি হার ধার নেন এবং সেটি হারিয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটির খোঁজে লোক পাঠান। ইত্যবসরে তাদের সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে তারা বিনা উযুতে সলাত আদায় করেন। তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এসে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তখন তাইয়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসায়দ বিন হুদায়র (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ)-কে বলেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তমরূপে পুরস্কৃত করুন। আল্লাহ্র শপথ! যখনই আপনার উপর কোন কঠিন বিপদ এসেছে, তখনই আল্লাহ তা থেকে আপনার জন্য নাযাতের পথ বের করে দিয়েছেন এবং তাতে মুসলিমদের জন্য বারাকাত রেখেছেন। [৫৬৫]
তায়াম্মুম করার জন্য মাটিতে একবার হাত মারবে
আবদুর রহমান বিন আবযা (রাঃ) এক ব্যাক্তি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আমি অপবিত্র হয়েছি, কিন্তু পানি পাচ্ছি না (এখন কি করি)? উমার (রাঃ) বলেন, তুমি সলাত আদায় কর না। আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার কি স্মরণ আছে, আমি ও আপনি যখন এক যুদ্ধাভিযানে যোগদান করেছিলাম, আমরা অপবিত্র হয়ে পড়লাম, কিন্তু পানি পাইনি? তখন আপনি সলাত আদায় করেননি, কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি করি, অতঃপর সলাত আদায় করি। এরপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট ঐ ঘটনা বর্ণনা করি। তিনি বলেন, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’ হাত দিয়ে মাটিতে আঘাত করার পর তাতে ফুঁ দেন, তারপর দু’ হাত দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাসহ করেন। [৫৬৬] হাকাম ও সালামাহ বিন কুহায়ল আবদুল্লাহ্ বিন আবূ আওফা (রাঃ)-এর নিকট তাইয়াম্মুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আম্মার (রাঃ)-কে এভাবে তাইয়াম্মুম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর তিনি তাঁর দু’ হাত দিয়ে মাটিতে আঘাত করেন, অতঃপর হস্তদ্বয় ঝেড়ে তাঁর মুখমন্ডল ও (হাকামের বর্ণনায়) উভয় হাত মাসহ করেন। সালামাহ (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর দু’ হাত্র কনুই সমেত মাসহ করেন। দু’ হাতের কনুই ব্যতীত সহীহ কেননা কনুইয়ের কথা মুনকার। [৫৬৭] তাহকীক আলবানী : মুরফিকিয়ার বর্ণনা ছাড়া সহীহ, কেননা সে মুনকার।
তায়াম্মুমে মাটিতে দু’ বার হাত মারা
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) যখন মুসলিমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাইয়াম্মুম করেন, তখন তিনি মুসলিমদের নির্দেশ দিলে তারা তাদের হাতের তালু দ্বারা মাটিতে আঘাত করেন, কিন্তু মাটি থেকে কিছুই নেননি। এরপর তারা তাদের মুখমন্ডল একবার মাসহ করেন। তারা পুনর্বার তাদের হাতের তালু দ্বারা মাটিতে আঘাত করেন এবং তাদের হাতসমূহ মাসহ করেন। [৫৬৮]
আহত ব্যক্তি অপবিত্র হওয়ার পর গোসল করলে তার শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করলে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যমানায় এক ব্যক্তি মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হলো, অতঃপর তার স্বপ্নদোষ হলো। তাকে গোসলের নির্দেশ দেয়া হলে সে গোসল করলো। ফলে সে সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো। এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌছলে তিনি বলেন, তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের হত্যা করুন। অজ্ঞতার প্রতিষেধক কি জিজ্ঞেস নয়? আতা (রাঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ সংবাদ পৌছেছে যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সে যদি তার শরীর ধৌত করতো এবং তার মাথা বাদ দিতো! আতা তার নিকট পৌছেছে এ কথা ব্যতীত হাসান। [৫৬৯]
পবিত্রতার গোসল
মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য গোসলের পানি রেখে দিলে তিনি অপবিত্রতার গোসল করেন। তিনি তাঁর বাম হাত দিয়ে পানির পাত্রটি কাত করে তাঁর ডান হাতে পানি ঢালেন এবং দু’ হাতের তালু কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করেন, অতঃপর নিজের লজ্জাস্থান ধৌত করেন, অতঃপর হস্তদ্বয় মাটিতে ঘষেন, অতঃপর কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। তিনি তাঁর মুখমন্ডল তিনবার এবং দু’ হাত তিনবার ধুলেন, অতঃপর নিজের সমস্ত শরীরে পানি ঢালেন, তারপর একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’ পা ধৌত করেন। [৫৭০] জুমায়’ বিন উমায়র আত-তায়মী (দঈফ বা দুর্বল) আমি আমার ফুফু ও খালার সাথে আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্রতার গোসলে কী কী করতেন? আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি প্রথমে তাঁর উভয় হাতে তিনবার পানি ঢালতেন, অতঃপর হাত পানির পাত্রে ঢুকাতেন, অতঃপর তিনবার মাথা ধৌত করতেন, অতঃপর সমস্ত শরীরে পানি ঢালতেন, অতঃপর সলাতে দাঁড়াতেন। আর আমরা আমাদের মাথার চুল ঘন হওয়ায় তা পাঁচবার ধৌত করি। [৫৭১]
গোসলের পর উযু করা
জুবায়র বিন মুতইম (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কে বাদানুবাদে লিপ্ত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তো হাত ভর্তি করে তিনবার আমার মাথায় পানি ঢেলে থাকি। [৫৭২] আবূ সাঈদ (রাঃ) এক ব্যাক্তি তাকে নাপাকির গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনবার। লোকটি বললো, আমার মাথার চুল তো বেশ ঘন। তিনি বললেলন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল তোমার চুলের চাইতে অধিক ঘন ছিল এবং তিনি (তোমার চাইতে) অধিক পবিত্রতা সচেতন ছিলেন। [৫৭৩] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি শীতপ্রধান অঞ্চলে কিভাবে নাপাকির গোসল করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তো হাতে পানি নিয়ে তিনবার আমার মাথায় ঢেলে থাকি। [৫৭৪] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, অপবিত্রতার গোসলে আমি আমার মাথায় কতবার পানি ঢালবো? তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত ভর্তি করে তার মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। লোকটি বললো, আমার চুল তো খুব লম্বা। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল ছিল তোমার চুলের চাইতে অধিক (লম্বা) এবং (তিনি ছিলেন) অধিক পবিত্রতা সচেতন। [৫৭৫]
গোসলের পর ওজুর প্রয়োজন নাই
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকির গোসলের পর ওজু করতেন না। [৫৭৬]
নাপাকির গোসল সেরে স্ত্রীর গোসলের পূর্বে তাকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা লাভ করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকির গোসল করার এবং আমার গোসলের পূর্বে আমাকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা লাভ করতেন। [৫৭৭]
নাপাকির গোসল না সেরে ঘুমানো
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র হতেন, তারপর গোসল না করেই ঘুমিয়ে যেতেন, অতঃপর উঠে গোসল করতেন। [৫৭৮] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার প্রয়োজন মনে করলে তা পূর্ণ করতেন, অতঃপর সেই অবস্থায় গোসল না করে ঘুমিয়ে যেতেন। [৫৭৯] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র হতেন, তারপর গোসল না করেই ঘুমিয়ে যেতেন। সুফইয়ান (রহঃ) বলেন, আমি একদিন এ হাদীস বর্ণনা করলে ইসমাঈল (রহঃ) আমাকে বলেন, হে যুবক! হাদীসটি কোন কিছুর সাথে মজবুত করে বেঁধে রাখা হোক। [৫৮০]
যে ব্যক্তি বলে, নাপাক ব্যক্তি সলাতের ওজুর ন্যায় ওজু করা ব্যতীত ঘুমাবে না
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র হওয়ার পর ঘুমানোর ইচ্ছা করলে তার পূর্বে সলাতের ওজুর ন্যায় ওজু করে নিতেন। [৫৮১] ইবনু উমার (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, আমাদের কেউ কি অপবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে পারে? তিনি বলেন, হাঁ, সে ওজু করে নিলে পারবে। [৫৮২] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রাতের বেলা অপবিত্র হতেন, অতঃপর ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ওজু করে ঘুমানোর নির্দেশ দেন। [৫৮৩]
নাপাক ব্যক্তি পুনরায় সহবাস করতে চাইলে আগে উযু করে নিবে
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের পর পুনরায় সহবাসের ইচ্ছে করলে, সে যেন ওযূ করে নেয়। [৫৮৪]
যে ব্যক্তি সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর একবার গোসল করে
আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস শেষে একবার গোসল করতেন। [৫৮৫] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোসলের পানি প্রস্তুত করে রাখলাম। তিনি একই রাতে তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর একবার গোসল করেন। [৫৮৬]
যে ব্যক্তি প্রতিবার সহবাসের পর গোসল করে
আবূ রাফি’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে তাঁর স্ত্রীগণের সাথে সহবাস করলেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের সাথে সহবাসের পর পর গোসল করেন। তাকে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন একবার গোসল করলেন না? তিনি বলেন, সেটি অধিকতর বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। [৫৮৭]
যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্হায় পানাহার করে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্হায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করে নিতেন। [৫৮৮] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অপবিত্র ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সে কি ঘুমাতে বা পানাহার করতে পারে? তিনি বলেন, হাঁ, যদি সে তার সলাতের উযুর ন্যায় উযু করে নেয়। [৫৮৯]
যে ব্যক্তি বলে , তার দু হাত ধোয়াই যথেস্ট
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্হায় খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা করলে তার দু’হাত ধুয়ে নিতেন। [৫৯০]
বিনা উযুতে কোরআন তেলাওয়াত করা
আবদুল্লাহ বিন সালামাহ (তিনি সত্যবাদী, কিন্তু স্মৃতি শক্তি খুবই দুর্বল) তিনি বলেন, আমি আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গিয়ে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে বের হয়ে এসে আমাদের সাথে রুটি ও গোশত খেতেন, কুরআন তিলাওয়াত করতেন, এবং তাঁকে কোন জিনিস এ থেকে বিরত রাখতো না। রাবী কখনো বলতেন, গোসলের প্রয়োজন হয়, এরূপ নাপাক অবস্হা ব্যতীত কোন জিনিস তাকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতো না। [৫৯১] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবতী স্ত্রীলোক কুরআন তিলাওয়াত করবেনা। [৫৯২] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নাপাক ব্যক্তি ও ঋতুবতী স্ত্রীলোক কুরআনের কিছুই তিলাওয়াত করবেনা। [৫৯৩]
প্রতিটি লোমকূপে নাপাকী আছে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় প্রতিটি লোমকূপে নাপাকী আছে। অতএব তোমরা লোমকূপ উত্তমরূপে ধৌত করো এবং দেহের চামড়া পরিষ্কার করো। [৫৯৪] আবূ আয়্যূব আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাঁচ ওয়াক্তের সলাত, এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহ এবং আমানত ফেরত দেয়া এদের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ। আমি বললাম, আমানত ফেরত দেয়ার অর্থ কী? তিনি বলেন, নাপাকির গোসল করা। কেননা প্রতিটি লোমকূপে নাপাকী আছে। [৫৯৫] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি নাপাকির গোসলে তার দেহের একটি পশমও (না ধুয়ে) ছেড়ে দেয়, সে গোসলই করেনি। তাকে জাহান্নামের এই এই শাস্তি দেয়া হবে। আলী (রাঃ) বলেন, এরপর থেকে আমি আমার চুলের সাথে শত্রুতা করে আসছি। তিনি তার মাথা মুন্ডন করতেন। [৫৯৬]
পুরুষের ন্যায় স্ত্রীলোকদেরও স্বপ্নদোষ হয়
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন যে, স্ত্রীলোকের যদি পুরুষ লোকের ন্যায় স্বপ্নদোষ হয় তবে কী করবে? তিনি বলেন, হাঁ, সে পানি (বীর্য) দেখতে পেলে যেন গোসল করে। আমি বললাম, তুমি তো নারীদের অবমাননা করলে। মহিলাদেরও কি স্বপ্নদোষ হয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার হাত ধুলিমলিন হোক, তা না হলে সন্তান মাতৃসদৃশ হয় কেন? [৫৯৭] আনাস (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করেন, পুরুষের ন্যায় কোন নারীর স্বপ্নদোষ হলে সে কী করবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি তার স্বপ্নদোষ হয় এবং তার বীর্যপাত হয়, তবে তাকে গোসল করতে হবে। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! তাই কি হয়? তিনি বলেন, হাঁ। পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা এবং স্ত্রীলোকের বীর্য পাতলা হলদে রংবিশিষ্ট। সুতরাং এদের মধ্যে যার বীর্য আগে স্ত্রীলোকের বীর্য পাতলা হলদে রংবিশিষ্ট। সুতরাং এদের মধ্যে যার বীর্য আগে স্খলিত হয়, সন্তান তার সদৃশ হয়। [৫৯৮] খাওলা বিনত হাকীম (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেন, পুরুষের ন্যায় নারীর স্বপ্নদোষ হলে তিনি বলেন, বীর্যপাত না হওয়া পর্যন্ত গোসল করা তার কর্তব্য নয়, যেমন পুরুষের বীর্যপাত না হলে গোসল করতে হয় না। [৫৯৯]
মহিলাদের নাপাকির গোসল
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি আমার চুলের খোপা খুব শক্ত করে বেঁধে থাকি। আমি নাপাকির গোসল করতে কি তা খুলে নিব? তিনি বলেন, তোমার হাতে করে তিনবার মাথায় পানি ঢাললেই তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। অতঃপর তুমি তোমার সমস্ত দেহে পানি ঢেলে দিবে এবং তাতেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে অথবা তিনি বলেছেন, এরূপ করলেই তুমি পবিত্র হয়ে গেলে। [৬০০] উবায়দ বিন উমায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আয়িশাহ (রাঃ) জানতে পারেন যে, আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) তার স্ত্রীদের (নাপাকির) গোসলের সময় তাদের মাথার চুলের খোপা খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, আমরের পুত্রের এ কাজে আশ্চর্য বোধ করছি। সে তার স্ত্রীগণকে তাদের মাথা কামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় না কেন? অবশ্যই আমি ও আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে একত্রে গোসল করেছি। আমি আমার হাতে তিনবার পানি নিয়ে আমার মাথায় ঢেলেছি। এর বেশি নয়। [৬০১]
নাপাক ব্যক্তি পানিতে ঝাপিয়ে পড়লে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে কি?
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে গোসল না করে। তিনি বলেন, তাহলে সে কিভাবে গোসল করবে, হে আবূ হুরায়রাহ ! তিনি বলেন, কোন পাত্রে পানি তুলে নিয়ে গোসল করবে। [৬০২]
বীর্যপাতে গোসল অপরিহার্য হয়
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর নিকট দিয়ে গেলেন এবং তাকে ডেকে পাঠালেন। সে বেরিয়ে এলো এবং তখন তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। তিনি বলেন, সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলেছি? সে বললো , হাঁ, হে আল্লাহ্র রসূল। তিনি বলেন, যখন তোমার তাড়াহুড়া করতে হয় এবং তোমার বীর্যপাত না হয়, তখন তোমার জন্য গোসল অপরিহার্য নয়, তুমি উযু করে নিবে। [৬০৩] তাহকীক আলবানী : সহীহ মানসূখ। [হাদীসটি মানসুখ। বিস্তারিত জানতে আলেমদের সাথে পরামর্শ করুন।] আবূ আয়্যূব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বীর্যপাত হলে গোসল ওয়াজিব হয়। [৬০৪]
পুরুষ ও নারীর লজ্জাস্থান একত্র হলেই গোসল ওয়াজিব হয়
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলেই গোসল ওয়াজিব হয়। আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছি এবং আমরা গোসল করেছি। [৬০৫] উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে বীর্যপাতের ফলে গোসল ওয়াজিব ছিল না। অতঃপর আমাদেরকে গোসলের নির্দেশ দেয়া হয়। [৬০৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি তার (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে উপবিষ্ট হয় এবং তার সাথে সঙ্গম করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়। [৬০৭] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু’বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলেই গোসল ওয়াজিব হয়। [৬০৮]
যার স্বপ্নদোষ হয়েছে, কিন্তু সে ভিজা দেখতে পায় না।
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠে ভিজা দেখতে পায় কিন্তু স্বপ্নদোষের কথা তার মনে না পড়ে তাহলে গোসল করবে। অপরদিকে তার স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হলে, কিস্তু ভিজা দেখতে না পেলে তার উপর গোসল ওয়াজিব নয়। [৬০৯]
গোসলের সময় আড়ালের ব্যবস্থা করা
আবূস সাম্হ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমত করতাম। তিনি গোসলের ইচ্ছা করলে বলতেনঃ আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়াও। আমি তাঁর দিকে আমার পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়াতাম এবং কাপড় লম্বা করে তা দিয়ে তাকে আড়াল করতাম। [৬১০] আবদুল্লাহ্ বিন আবদুল্লাহ্ বিন নাওফাল তিনি বলেন, আমি অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সফররত অবস্থায় চাশতের সলাত আদায় করতেন? আমাকে অবহিত করার মত কাউকে আমি পেলাম না। অবশেষে উম্মু হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) আমাকে অবহিত করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের বছর সেখানে আসেন। তিনি আড়াল করার জন্য নির্দেশ দেন। সে মতে তাঁর জন্য আড়ালের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি গোসল করেন, অতঃপর আট রাকআত (চাশতের) সলাত পড়েন। [৬১১] আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন আড়ালের ব্যবস্থা না করে উন্মুক্ত ময়দানে কিংবা ছাদের উপরে গোসল না করে। কারণ সে তাঁকে না দেখলেও তিনি (আল্লাহ) তাকে দেখেন। [৬১২]
পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে সলাত পড়া নিষেধ
আবদুল্লাহ্ বিন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ পায়খানায় যাওয়ার মনস্থ করলে এবং সলাতের ইকামাতও হতে থাকলে সে যেন প্রথমে পায়খানা সেরে নেয়। [৬১৩] আবূ উমামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কোন ব্যক্তিকে পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। [৬১৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন পেশাব-পায়খানার বেগ নিয়ে সলাতে না দাঁড়ায়। [৬১৫] সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন মুসলিমের পেশাব-পায়খানার বেগ হলে সে যেন তা থেকে হালকা না হয়ে সলাতে না দাঁড়ায়। [৬১৬]
ঋতুবতী নারীর হায়িদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর রক্ত নির্গত হলে
ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবায়শ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে ঋতুস্রাব সম্পর্কে অভিযোগ করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তা এক প্রকার শিরাজনিত রোগ। সুতরাং তুমি লক্ষ্য রাখবে যে, তোমার হায়িদ শুরু হলে সলাত পড়বে না। হায়িদকাল উত্তীর্ণ হলে পর তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে, অতঃপর দু’হায়িদের মধ্যবর্তীকাল সলাত পড়বে। [৬১৭] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার অনবরত রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি পবিত্র হতে পারি না। আমি কি সলাত ছেড়ে দিবো? তিনি বলেন, না, বরং এটি হচ্ছে একটি শিরাজনিত রোগ এবং এটা হায়িদের রক্ত নয়। অতএব তোমার ঋতুস্রাব দেখা দিলে তুমি সলাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে তুমি রক্ত ধুয়ে ফেলে সলাত পড়বে। [৬১৮] উম্মু হাবীবাহ বিনতে জাহ্শ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ইস্তিহাদার রক্ত খুব বেশি দিন ধরে নির্গত হতো। আমি এ ব্যাপারে সমাধান জানতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম এবং তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলাম। রাবী বলেন, আমি তাঁকে আমার বোন যয়নবের নিকট পেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার সাথে আমার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, তা কী, হে শ্যালিকা? আমি বললাম, আমার খুব বেশি পরিমাণে দীর্ঘ সময় ধরে ইস্তিহাদার রক্ত আসে, যা আমাকে সলাত-সাওম থেকে বিরত রাখে। এ ব্যপারে আপনি আমাকে কী হুকুম করেন? তিনি বলেন, আমি তোমাকে তুলার পট্টি ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছি। কেননা তা রক্ত প্রতিরোধক। আমি বললাম, তা পরিমাণে আরো বেশি। ...... পরবর্তী বর্ণনা শারীকের হাদীসের অনুরূপ। [৬১৯] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সমাধান জানতে চেয়ে বলেন, আমার অনবরত রক্তস্রাব হয়, আমি কখনো পবিত্র হই না। আমি কি সলাত ছেড়ে দিবো? তিনি বলেন, না, বরং তুমি তোমার হায়িদের মেয়াদে সলাত ত্যাগ করো। আবূ বকর (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতে আছেঃ প্রতি মাসে হায়িদের সমপরিমাণ মেয়াদ নির্ধারণ করো, অতঃপর গোসল করে কাপড়ের পট্টি বেঁধে সলাত পড়ো। [৬২০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। আমি কি সলাত ছেড়ে দিবো? তিনি বলেন, না, এটা এক প্রকার শিরাজনিত রোগ, এটা হায়িযের রক্ত নয়। তুমি তোমার হায়িযের মেয়াদকাল সলাত থেকে বিরত থাকো, অতঃপর গোসল করো এবং প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করে সলাত পড়ো, যদিও সলাতের পাটিতে রক্ত পড়ে। [৬২১] তাহকীক আলবানীঃ পাটিতে রক্ত পড়ার কথা ব্যতীত সহীহ। উবায়দ বিন আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইস্তিহাদায় (রক্তপ্রদরে) আক্রান্ত নারী তার হায়িযের মেয়াদকাল সলাত ত্যাগ করবে। এরপর সে গোসল করবে এবং প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করবে এবং সলাত-সাওম করবে। [৬২২]
কোন নারীর ইস্তিহাদা ও হায়িদের রক্ত গোলমাল হয়ে গেলে হায়িদের মেয়াদের উপর নির্ভর করা যাবে না
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃ) আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা বিনতে জাহ্শ (রাঃ)-এর ইস্তিহাদা (রক্তপ্রদর) হলো। তিনি সাত বছর তার স্ত্রীত্বে ছিলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে অভিযোগ করলে তিনি বলেন, এটা হায়িদের রক্ত নয়, বরং তা একটি শিরাজনিত রোগ। তোমার হায়িদ শুরু হলে তুমি সলাত ছেড়ে দিবে এবং হায়িদের রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে তুমি গোসল করে সলাত পড়বে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য গোসল করে সলাত আদায় করতেন। তিনি তার বোন যয়নব বিনতে জাহ্শ (রাঃ)-এর পানির পাত্রে বসতেন, এমনকি রক্তের লাল রংয়ে পানি রঞ্জিত হয়ে যেত। [৬২৩]
যে কুমারী মেয়ের প্রথমেই ইস্তিহাদা এসেছে অথবা সে তার হায়িদের মেয়াদ ভুলে গেছে
হামনাহ বিনতু জাহ্শ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় তার ইস্তিহাদা শুরু হলে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, আমার প্রচুর পরিমাণে হায়িদের রক্ত আসে। তিনি তাকে বলেন, তুমি তুলার পট্টি ব্যবহার করো। হামনা (রাঃ) তাকে বলেন, তা অত্যধিক। আমার সারাক্ষণই স্রাব হতে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে স্রাব নির্গত স্থানে কাপড়ের পট্টি বাঁধো এবং প্রতি মাসের ছয় বা সাত দিন হায়িদের মেয়াদ গণ্য করো, যোহরের সলাত বিলম্বে (ওয়াক্তের শেষ দিকে) ও আসরের সলাত জলদি (ওয়াক্তের প্রথমভাগে) পড়ো এবং এই সলাতদ্বয়ের জন্য একবার গোসল করো। অনুরূপভাবে মাগরিবের সলাত বিলম্বে ও ইশার সলাত জলদি পড়ো এবং এই দু’ সলাতের জন্য একবার গোসল করো। এ পন্থা আমার নিকট অধিকতর প্রিয়। [৬২৪]
পরিধেয় বস্ত্রে হায়িদের রক্ত লাগলে
উম্মু কায়স বিনতু মিহসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পরিধানের কাপড়ে হায়িদের রক্ত লেগে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তুমি তা পানি ও বরই পাতা দিয়ে ধৌত করো এবং কাঠি দিয়ে হলেও তা খুঁচিয়ে পরিষ্কার করো। [৬২৫] আসমা’ বিনতু আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পরিধানের কাপড়ে হায়িদের রক্ত লেগে গেলে তার বিধান জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বলেন, তা খুঁটে ফেলে ধৌত করো এবং তা পরেই সলাত পড়ো। [৬২৬] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কারো হায়িদ হওয়ার পর পবিত্র অবস্থায় পৌঁছে সে তার পরিধেয় থেকে রক্তের দাগ খুঁটে তুলে রগড়িয়ে ধৌত করতো, অতঃপর গোটা কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিতো, অতঃপর সেই কাপড়ে সলাত আদায় করতো। [৬২৭]
হায়িদগ্রস্ত নারী কাযা সলাত আদায় করবে না
আয়িশাহ (রাঃ) জনৈকা মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করলো, ঋতুবতী নারী কি কাযা সলাত আদায় করবে? আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি কি হারূরিয়া (খারিজী) নারী? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় আমাদের হায়িদ হতো, অতঃপর আমরা পবিত্র হতাম, কিন্তু তিনি আমাদেরকে কাযা সলাত আদায় করার নির্দেশ দেননি। [৬২৮]
হায়িদগ্রস্ত নারীর মাসজিদ থেকে কিছু নেয়া
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ মাসজিদ থেকে চাটাইটি তুলে আমাকে এনে দাও। আমি বললাম, আমি তো হায়িদগ্রস্ত। তিনি বললেনঃ তোমার হায়িদের নাপাকী তো আর তোমার হাতে লেগে নেই। [৬২৯] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে ই’তিকাফরত অবস্থায় তাঁর মাথা আমার নিকট এগিয়ে দিতেন। আমি তখন ঋতুবতী ছিলাম। আমি তাঁর মাথা ধুয়ে চুল আঁচড়ে দিতাম। [৬৩০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়িদগ্রস্ত থাকাকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা আমার কোলে রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। [৬৩১]
হায়িদগ্রস্ত নারীর থেকে তার স্বামী সেবা গ্রহণ করতে পারে
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কারো হায়িদ শুরু হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার লজ্জাস্থানে শক্ত করে পাজামা বাঁধার নির্দেশ দিতেন, অতঃপর তিনি তার সাথে আলিঙ্গন করতেন। তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তার প্রবৃত্তিকে বশে রাখতে পারে, যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রবৃত্তিকে বশে রাখতে সক্ষম ছিলেন! [৬৩২] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ হায়িদগ্রস্ত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার (লজ্জাস্থানে) পাজামা শক্তভাবে বাঁধার নির্দেশ দিতেন, অতঃপর তাকে আলিঙ্গন করতেন। [৬৩৩] উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একত্রে তাঁর লেপের ভিতর ছিলাম। নারীদের যে হায়িদ হয় আমার তা শুরু হয়েছে বুঝতে পেরে, আমি লেপের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী হায়িদ হয়েছে? আমি বললাম, নারীদের যেরূপ হায়িদ হয় আমিও সেরুপ অনুভব করছি। তিনি বলেন, এটা তো এমন জিনিস, যা আল্লাহ আদম (আঃ)-এর কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি বের হয়ে গিয়ে নিজের অবস্থা ঠিকঠাক করে ফিরে আসলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, এসো এবং আমার সঙ্গে লেপের মধ্যে ঢোকো। তিনি বলেন, আমি তাঁর সাথে লেপের মধ্যে ঢুকলাম। [৬৩৪] মুআবিয়াহ বিন আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ঋতুবতী অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কিরূপ করো? তিনি বলেন, আমাদের কারো হায়িদ শুরু হলে, তখনই তিনি তার পাজামা দু’ উরুর মাঝ বরাবর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে শুয়ে পড়তেন। [৬৩৫]
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা নিষেধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেল এবং সে যা বলল তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। [৬৩৬]
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলে তার জরিমানা (কাফ্ফারা)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি তার ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলো, তার সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে এক দীনার বা অর্ধ দীনার দান-খয়রাত করবে। [৬৩৭]
ঋতুবতী নারীর গোসলের নিয়ম
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার হায়িদগ্রস্ত অবস্থায় বলেন, তোমার মাথার চুল খুলে গোসল করো। অধস্তন রাবী আলী (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছেঃ তোমার মাথার চুল খুলে ফেলো। [৬৩৮] আয়েশা (রাঃ) আসমা’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হায়িদের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের যে কোন নারী বরই পাতাযুক্ত পানি নিয়ে যেন উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে যতটা উত্তমরূপে সম্ভব; অতঃপর মাথায় পানি ঢেলে তা মর্দন করবে, যেন তার চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়, অতঃপর তার গোটা শরীরে পানি ঢেলে দিয়ে এক টুকরা সুগন্ধিযুক্ত পশমী কাপড় অথবা তুলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আসমা’ (রাঃ) বলেন, আমি তার সাহায্যে কিরূপে পবিত্রতা অর্জন করবো? তিনি বলেন, সুবহানাল্লাহ! তার সাহায্যেই তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে। আয়িশাহ (রাঃ) চুপিসারে বলেন, তুমি তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন মুছে ফেলবে। আসমা’ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে নাপাকির গোসল সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমাদের যে কোন নারী তার গোসলের পানি নিয়ে যেন যতটা সম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর তার মাথায় পানি ঢেলে তা উত্তমরূপে মর্দন করে, যাতে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়, অতঃপর গোটা দেহে পানি ঢালবে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আনসার মহিলারা কতই না উত্তম। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে লজ্জা তাদের বিরত রাখে না। [৬৩৯]
ঋতুবতী নারীর সাথে একতে পানাহার এবং তার উচ্ছিষ্ট
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় চুষতাম, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটি নিয়ে আমার মুখ লাগানো স্থানে তাঁর মুখ রেখে তা চুষতেন। আবার আমি ঋতুবতী থাকাকালে যে পাত্রে পানি পান করতাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটি নিয়ে আমার মুখ লাগানো স্থানে তাঁর মুখ লাগিয়ে পান করতেন। [৬৪০] আনাস (রাঃ) বাড়িতে ইহূদীরা ঋতুবতী মহিলাদের সাথে একত্রে বসতো না এবং পানাহার করত না। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ): “লোকে আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুনঃ তা অশুচি। অতএব তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করো” (সূরাহ বাকারাঃ ২২২)। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তাদের সাথে সঙ্গম ব্যতীত আর সবকিছুই করতে পারো। [৬৪১]
হায়িদগ্রস্ত নারী মসজিদে প্রবেশ করবে না
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই মাসজিদের বারান্দায় প্রবেশ করে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করেন যে, নাপাক ব্যক্তি ও হায়িদগ্রস্তা নারীর মাসজিদে প্রবেশ করা হালাল নয়। [৬৪২]
হায়িদগ্রস্তা নারী পবিত্র হওয়ার পর হলুদ বর্ণের ও মেটে বর্ণের রক্ত দেখলে
আয়িশাহ (রাঃ) যে নারী (হায়িদ থেকে) পবিত্র হওয়ার পর সন্দেহজনক কিছু দেখতে পায় তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তা শিরাজনিত রোগ বা শিরাসমূহ থেকে নির্গত। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, হাদীসে “পবিত্র হওয়ার পর” বলতে “গোসল করার পর” বুঝানো হয়েছে। [৬৪৩] উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হলদে ও মেটে বর্ণের স্রাব দেখলে তাকে কিছুই মনে করতাম না। [৬৪৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ২/৬৪৭(১). উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ), তিনি বলেন, আমরা হলদে ও মেটে বর্ণের স্রাবকে হায়িদের মধ্যে গণ্য করতাম না। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বলেন, আমাদের কাছে এটাই গ্রহণযোগ্য। [৬৪৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
নিফাসগ্রস্তা নারীরা কত দিন অপেক্ষা করবে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে নিফাসগ্রস্তা নারীরা চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। আমরা তখন আমাদের মুখমন্ডলে ওয়ারস ঘাস থেকে নিঃসৃত হলদে বর্ণের রস কলপ হিসাবে ব্যবহার করতাম। [৬৪৬] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিফাসগ্রস্তা নারীদের নিফাসকাল চল্লিশ দিন নির্ধারণ করতেন। এই মেয়াদের আগেই কেউ পবিত্র হলে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার। [৬৪৭] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ জিদ্দান।
যে ব্যক্তি হায়িদগ্রস্ত স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলো
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি তার হায়িদগ্রস্তা স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অর্ধ-দীনার সদাকা (দান-খয়রাত) করার নির্দেশ দিয়েছেন। [৬৪৮]
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে পানাহার
আবদুল্লাহ্ বিন সাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে একত্রে পানাহার করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তুমি তার সাথে একত্রে পানাহার করতে পারো। [৬৪৯]
হায়িদের কাপড় পরে সলাত পড়া
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতেন, আমি হায়িদগ্রস্তা অবস্থায় তাঁর পাশে অবস্থান করতাম। আমার গায়ে পরিহিত পশমী চাদরের কিছু অংশ তাঁর উপর পতিত থাকতো। [৬৫০] মায়মূনা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী চাদর পরিহিত অবস্থায় সলাত পড়লেন, যার কতকাংশ আমার দেহে এবং কতকাংশ তাঁর দেহে ছিল। তখন আমি হায়িদগ্রস্তা ছিলাম। [৬৫১]
বালেগা মেয়ে ওড়না জড়িয়ে সলাত পড়বে
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট প্রবেশ করলেন। তার মুক্তদাসী পর্দার আড়ালে চলে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ তার কি হায়িদ হয়েছে (বালেগ হয়েছে)? আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, হাঁ। তিনি তাঁর পাগড়ীর একাংশ ছিঁড়ে তাকে দিয়ে বলেন, এটা দিয়ে তোমার মাথা ঢেকে নাও। [৬৫২] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ প্রাপ্তবয়স্কা নারীর সলাত ওড়না পরা ব্যতীত কবূল করেন না। [৬৫৩]
হায়িদগ্রস্তা নারীর কলপ ব্যবহার
আয়িশাহ (রাঃ) এক মহিলা আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, ঋতুবতী নারী কি খেযাব লাগাতে পারে? তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অবস্থানকালে খেযাব লাগাতাম। তিনি আমাদের তা থেকে বিরত থাকতে বলেননি। [৬৫৪]
পট্টির উপর মাসহ করা
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বাহুর একটি হাড় ভেঙ্গে গেল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে পট্টির উপর মাসহ করতে নির্দেশ দেন। [৬৫৫] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
কাপড়ে থুথু লাগলে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে হুসাইন বিন আলী (রাঃ)-কে তাঁর কাঁধে বহন করতে দেখেছি এবং তার মুখের লালা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরে গড়িয়ে পড়ছিল। [৬৫৬]
পাত্রের পানিতে মুখের লালা পড়লে
ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এক বালতি পানি আনা হলো। তিনি তা থেকে কুলি করলেন এবং তাতে কস্তুরীসম বা কস্তুরীর চেয়েও সুঘ্রাণযুক্ত তাঁর মুখের লালা নিক্ষেপ করলেন এবং নাকের ময়লা বালতির পানিতে ঝেড়ে ফেললেন। [৬৫৭] মাহমুদ ইবনুর রবী (রাঃ) তিনি কূপ থেকে পানি তোলা বালতিটি তুলে রেখে দিলেন, যার মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের লালা নিক্ষেপ করেছিলেন। [৬৫৮]
অপরের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো নিষেধ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন নারী যেন অপর নারীর লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়। একইভাবে কোন পুরুষ যেন অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়। [৬৫৯] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কখনো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাইনি বা দেখিনি। [৬৬০]
কোন ব্যক্তির নাপাকির গোসলে তার শরীরের সামান্য কিছু অংশে পানি না পৌঁছলে তাকে যা করতে হবে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকির গোসল করলেন, তারপর দেখতে পেলেন যে, তাঁর শরীরের সামান্য অংশে পানি পৌঁছায়নি। তিনি এক আঁজলা পানি আনিয়ে তা সেই স্থানে প্রবাহিত করলেন। ইসহাক (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে : তিনি তাঁর পশম ভিজালেন। [৬৬১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমি নাপাকির গোসল করে ফজরের সলাত পড়লাম। তারপর সকাল হলে আমি দেখতে পেলাম যে, নখ পরিমাণ স্থানে পানি পৌঁছায়নি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি স্থানটুকু তোমার হাত দিয়ে মাসহ্ করলেই তোমার জন্য তা যথেষ্ট হতো। [৬৬২] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
কোন ব্যক্তি উযু করলো কিন্তু কোন স্থানে পানি পৌঁছেনি
আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি উযু করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো, সে নখ পরিমাণ স্থান ছেড়ে দিয়েছিল, যেখানে পানি পৌঁছেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, তুমি ফিরে গিয়ে উত্তমরূপে উযু করো।[৬৬৩] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে উযু করার সময় তার পায়ের নখ পরিমাণ স্থান অধৌত বা শুকনা ছেড়ে দিতে দেখলেন। তিনি তাকে পুনর্বার উযু করে সলাত পড়ার নির্দেশ দেন। রাবী বলেন, সে ফিরে গেল (এবং উযু করে সলাত পড়লো)। [৬৬৪]