11. কাফফারা সমূহ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সকল শব্দে শপথ করতেন।
রিফাআহ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শপথ করলে বলতেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। [২০৯০] রিফাআহ বিন আরাবাহ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে শব্দ দ্বারা শপথ করতেন তা ছিলঃ আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি; সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। [২০৯১] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অধিকাংশ শপথ ছিলঃ না, অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারীর শপথ! [২০৯২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শপথ ছিলঃ না, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [২০৯৩]
আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর নামে শপথ করা নিষেধ ।
উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমার (রাঃ) -কে তার পিতার নামে শপথ করতে শুনলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। উমার (রাঃ) বলেন, এরপর থেকে আমি আর কখনো এভাবে শপথ করিনি বা অন্যের বরাতেও তা উল্লেখ করিনি। [২০৯৪] আবদুর রহমান বিন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা দেব-দেবী ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করো না। [২০৯৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে বললো, লাত ও উযযার শপথ, সে যেন ''লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'' বলে। [২০৯৬] সা'দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি লাত ও উযযার নামে শপথ করলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বলো, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু" (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই)। অতঃপর তুমি তিনবার বামদিকে থুথু নিক্ষেপ করো এবং শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো, আর কখনো এর পুনরাবৃত্তি করো না। [২০৯৭]
কেউ দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের নামে শপথ করলে।
সাবিত ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের মিথ্যা শপথ করলো, সে যেরুপ বলেছে সে তদ্রপ। [২০৯৮] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, আমি যদি এরূপ করি তবে আমি ইহুদী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অবধারিত হতে গেল। [২০৯৯] বুরায়দাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বললো, আমি ইসলাম থেকে মুক্ত, সে যদি মিথ্যা বলে থাকে তবুও সে যা বলেছে তাই, আর যদি সে সত্য বলে থাকে তবুও ইসলাম তার কাছে নিরাপদে ফিরে আসবে না। [২১০০]
যার জন্য আল্লাহর নামে শপথ করা হয়, সে যেন তাতে সন্তুষ্ট হয়।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তার পিতার নামে শপথ করতে শুনে বলেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করো না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে শপথ করে সে যেন তা সত্যে পরিণত করে। আর যার জন্য আল্লাহর নামে শপথ করা হয়, সে যেন তাতে সন্তুষ্ট হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে সন্তুষ্ট হয় না, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকে না। [২১০১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঈসা বিন মারয়াম (আঃ) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে বললেন, তুমি চুরি করলে? সে বললো, না, সেই সত্তার শপথ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তখন ঈসা (আঃ) বললেন, আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং আমার চোখকে অবিশ্বাস করলাম। [২১০২]
শপথ হয় গুনাহ অথবা অনুতাপের কারণ।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বস্তুত শপথ হলো গুনাহ বা অনুতাপ। [২১০৩]
শপথের সাথে ইনশাআল্লাহ যুক্ত করা।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি শপথ করলো এবং ইনশাআল্লাহ (যদি আল্লাহ চান) বললো, তার প্রতি শপথ ভংগের দায় বর্তায়। [২১০৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার শপথের সাথে ইনশাআল্লাহ যুক্ত করলো, সে চাইলে শপথ থেকে ফিরে যেতে পারে অথবা তা পরিত্যাগও করতে পারে। তাতে সে শপথ ভঙ্গকারী নয়। [২১০৫] নাফি' ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শপথের সাথে ইনশাআল্লাহ যুক্ত করে, সে শপথ ভঙ্গকারী নয়। [২১০৬]
কেউ শপথ করার পর তার বিপরীত করা কল্যাণকর প্রতিভাত হলে।
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আশআরীদের একটি দলের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জন্তুযান চাইতে এসেছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর শপথ ! আমি তোমাদের জন্য জন্তুযানের ব্যবস্থা করতে অক্ষম। রাবী বলেন, আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। অতঃপর কিছু সংখ্যক উট এসে গেল। তখন তিনি আমাদের উজ্জ্বল কুঁজবিশিষ্ট তিনটি উট দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমাদের প্রত্যাবর্তনের সময় আমাদের একজন অপরজনকে বললো, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জন্তুযান চাইতে এসেছিলাম। তিনি শপথ করে বলেছিলেন যে, তিনি আমাদের জন্তুযান দিতে অপারগ। পরে আবার তিনি আমাদের তা দিলেন। কাজেই চলো, আমরা তাঁর নিকট ফিরে যাই। অতএব আমরা তাঁর নিকট ফিরে এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার নিকট জন্তুযান চাইতে এসেছিলাম। আপনি শপথ করে বলেছিলেন যে, আপনি আমাদের জন্তুযান দিতে অক্ষম। এরপর আপনি আমাদের জন্তুযান দিলেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের বাহনের ব্যবস্থা করিনি, আল্লাহই তোমাদের বাহনের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহর শপথ! আল্লাহর তা'আলার মর্জি আমি শপথ করার পর তার বিপরিতে কল্যাণ দেখতে পেলে আমি শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করি, অতঃপর কল্যাণকর কাজটি করি। অথবা তিনি বলেনঃ আমি সেই ভাল কাজটি করি এবং আমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা শোধ করি। [২১০৭] আদী বিন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি শপথ করার পর তার বিপরীতে কল্যাণ দেখতে পেলে সে যেন ঐ কল্যাণকর কাজটি করে এবং তার শপথের কাফফারা আদায় করে। [২১০৮] মালিক আল-জুশামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার নিকট আমার চাচাতো ভাই এলে আমি শপথ করে বলি যে, আমি তাকে কিছু দানও করবো না এবং তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও বজায় রাখবো না। তিনি বলেনঃ তোমার শপথের কাফফারা শোধ করো। [২১০৯]
যারা বলে, মন্দ বিষয়ে শপথের কাফফারা হলো কাজটি বর্জন করা।
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শপথ করলে অথবা অসঙ্গত বিষয়ের শপথ করলে, ঐ কাজটি তার না করার ভিতরেই কল্যাণ নিহিত আছে। [২১১০] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে শপথ করার পর তার বিপরীতে কল্যাণ লক্ষ্য করলে সে যেন তার শপথ ত্যাগ করে। তার শপথ ত্যাগ করাই তার শপথ ভঙ্গের কাফফারা। [২১১১]
শপথ ভঙ্গের কাফফারাস্বরূপ কয়জনকে আহার করাতে হবে?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সা' খেজুর কাফফারাস্বরূপ দান করেন এবং লোকদের এরুপ নির্দেশ দেন। কেউ যদি তা না পায়, তবে অর্ধ সা' গম আদায় করবে। [২১১২]
মধ্যম ধরনের আহার্যদান, যা তোমরা নিজেদের পরিজনদের আহার করিয়ে থাকো।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন কোন লোক তার পরিবার পরিজনের আহারের জন্য সহজেই পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারতো এবং কোন কোন লোক একান্ত কষ্টেই তার পরিজনদের জন্য অপর্যাপ্ত ব্যয় করতো। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (অনুবাদ) "মধ্যম ধরনের, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদের আহার করিয়ে থাকো।" (সূরা মাইদাঃ ৮৯) [২১১৩] তাহকিক আলবানীঃ সনদটি সহিহ ও মাওকূফ।
মন্দ কাজের শপথ করে তাতে অটল থাকা এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা শোধ না করা উভয়ই নিষিদ্ধ।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূল কাসিম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ আল্লাহর বিধানমত কাফফারা আদায় না করে কোন অসঙ্গত শপথের উপর অটল থাকলে সে আল্লাহর নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হয়। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ১/২১১৪ (১) [ মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া ] [ ইয়াহইয়া বিন সালিহ আল-ওয়াহাযী ] [ মুআবিয়াহ বিন সাল্লাম ] [ ইয়াহইয়া বিন আবু কাসীর ] [ ইকরিমাহ ] [ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) ] [২১১৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শপথকারীর দায়মুক্তিতে সাহায্য করা।
বারা' বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শপথকারীর দায়মুক্তিতে সাহায্য করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। [২১১৫] আবদুর রহমান বিন সফওয়ান অথবা সফওয়ান বিন আবদুর রহমান আল-কুরাশী (রাঃ) মাক্কাহ বিজয়ের দিন আবদুর রহমান তার পিতাকে নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতাকে হিজরতে শরীক করুন। তিনি বলেনঃ তার তো হিজরত নেই। তিনি সেখান থেকে চলে গিয়ে আব্বাস (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আপনি আমাকে চিনেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। এরপর আব্বাস (রাঃ) একটি জামা গায়ে দিয়ে চাদরবিহীন অবস্থায় বেরিয়ে পড়লেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি তো এই লোক এবং তার ও আমাদের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে অবহিত। সে তার পিতাকে নিয়ে এসেছে, যেন আপনি তাকে হিজরতের জন্য বাইআত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এখন তো আর হিজরত নেই। আব্বাস (রাঃ) বলেন, আপনাকে শপথ দিয়ে বলছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়ে লোকটির হাত স্পর্শ করলেন এবং বললেনঃ আমি আমার চাচার শপথ পূর্ণ করলাম এবং এখন আর হিজরত নেই। [ উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ ] ২/২১১৬ (১) . আবদুর রহমান বিন সফওয়ান অথবা সফওয়ান বিন আবদুর রহমান আল-কুরাশী (রাঃ) তার নিজেস্ব সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। ইয়াযীদ বিন আবূ যিয়াদ বলেন, অর্থাৎ যে দেশের লোকেরা ইসলাম গ্রহন করে সেখান হতে কোন হিজরত নেই। তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।
“আল্লাহ্ যা চান এবং তুমি যা চাও” এরূপ বলা নিষেধ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন শপথ করা কালে এভাবে না বলে, “আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা ইচ্ছা করো”। বরং সে যেন বলে, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, এরপর তুমি যা ইচ্ছা করছো”। [২১১৭] হুযায়ফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) তিনি বলেন, এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, আহলে কিতাবের এক ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাত হলে সে বললো, তোমরা কতই না উত্তম জাতি, যদি তোমরা শেরেক না করতে। তোমরা বলে থাকো, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন এবং মুহাম্মাদ যা ইচ্ছা করেন”। অতঃপর সে স্বপ্নের কথাটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা করলো। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! শোনো, আমি তো তোমাদের এরূপ কিছু বলতে শিখাইনি। তোমরা বলবে, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা চান”। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] . ২/২১১৮ (১) . আয়িশাহ (রাঃ) , এর মায়ের সম্পর্কের ভাই তুফায়ল বিন সাখবারাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। [২১১৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শপথের বিষয় কেউ যদি মনের মধ্যে গোপন রাখে।
সুওয়ায়দ বিন হানযালাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্দেশে বের হলাম এবং আমাদের সাথে ছিলেন ওয়াইল বিন হুজর (রাঃ)। তার এক শত্রু তাকে ধরে ফেলে। সাথের লোকজন শপথ করতে রাযী হলো না। তাই আমি শপথ করে বললাম যে, সে আমার ভাই। অতএব সে তাকে ছেড়ে দেয়। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে জানালাম যে, দলের লোকজন শপথ করতে সম্মত না হওয়ায় আমি শপথ করে বলি যে, সে আমার ভাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি সত্য বলেছো। এক মুসল্মান অপর মুসলমানের ভাই। [২১১৯] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শপথের ফলাফল শপথকারীর অভিপ্রায়ের উপর নির্ভরশীল। [২১২০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার প্রতিপক্ষ তোমার শপথে আস্থা স্থাপন করলে সেটাই হবে তোমার শপথের ভিত্তি। [২১২১]
মানত করা নিষেধ ।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানত করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ এর দ্বারা কৃপণের কিছু সম্পদ হাতছাড়া হয় মাত্র। [২১২২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মান্নত আদম-সন্তানের জন্য তার তাকদীরের নির্ধারিত বস্তুর অতিরিক্ত কিছু বয়ে আনে না, বরং তার জন্য নির্ধারিত তাকদীরই তার উপর বিজয়ী হয়। অতএব এর দ্বারা বখীলের কিছু আর্থিক খরচ হয় মাত্র। ফলে ইতোপূর্বে তার জন্য যা সহজ ছিলো না তা তার জন্য সহজ হয়ে গেলো। আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যি বলেছেন, তুমি খরচ করলে আমিও তোমার জন্য খরচ করবো। [২১২৩]
পাপাচারমূলক কাজের মানত ।
ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপ কাজে মানত করা যাবে না এবং আদম-সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তার মানতও হয় না। [২১২৪] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ গুনাহের কাজে মানাত করা যাবে না। এর কাফফারা হলো শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরুপ। [২১২৫] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র আনুগত্য করার মানত করে, সে যেন তা করে। এর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র অবাধ্যাচরণ করার মানত করে, সে যেন তা না করে। [২১২৬]
কেউ নামোল্লেখ না করে মানত করলে ।
উকবাহ্ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন কোন ব্যক্তি নামোল্লেখ না করে মানত করলে তার কাফফারা হলো শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরুপ। [২১২৭] তাহকীক আলনানীঃ নাম উল্লেখ করার কথা ব্যতীত সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি নামোল্লেখ না করে মানত করলে তার কাফফারা হবে শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। আর কোন ব্যক্তি তার সামর্থ্যের বহির্ভূত কিছুর মানত করলে তার কাফফারাও শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। আর যে ব্যক্তি তার সামর্থ্য মোতাবেক মানত করে, সে যেন তা পূরণ করে। [২১২৮]
মানত পূর্ণ করা ।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে একটি মানত করেছিলাম। ইসলাম গ্রহণের পর আমি এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দেন। [২১২৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি বুয়ানা নামক স্থানে একটি কুরবানী করার মানত করেছি তিনি বলেনঃ তোমার মধ্যে কি জাহিলিয়াতের চিন্তা অবশিষ্ট রয়ে গেছে? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করো। [২১৩০] মায়মূনা বিনতু কারদাম আল-ইয়াসারিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সাক্ষাত করেন। তখন মায়মূনা তার পিতার সাথে একই বাহনে তার পিছনে বসা ছিলেন। তিনি (পিতা) বললেন, আমি বুয়ানা নামক স্থানে একটি কুরবানী করার মানত করেছি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ সেখানে কি কোন মূর্তি আছে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেনঃ তোমরা মানত পূর্ণ করো। [২১৩১]
কেউ মানত পূর্ন না করে মারা গেলে ।
সা’দ বিন উবাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তার মায়ের একটি মান্নত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যা পূর্ণ করার আগেই তার মা মারা যান। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ করো। [২১৩২] জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আমার মা মারা গেছেন। তিনি সিয়াম রাখার মান্নত করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার রোযার মান্নত পূর্ণ করার আগেই মারা গেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তার পক্ষ থেকে ওলী (ওয়ারিস) যেন সিয়াম রাখে। [২১৩৩]
যে ব্যক্তি পদব্রজে হাজ্জ করার মান্নত করেছে ।
উকবাহ বিন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, যে তার বোন নগ্নপদে ও অনাবৃত চেহারায় পদব্রজে (হজ্জে) যাওয়ার মান্নত করেছে। তিনি বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবহিত করলেন। তিনি বলেনঃ তাকে বলো, সে যেন বাহনে আরোহণ করে এবং মুখমণ্ডল আবৃত রেখে (হাজ্জে যায়) এবং তিন দিন সিয়াম রাখে। [২১৩৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, সে তার দু ছেলের উপর ভর করে হেঁটে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ এ ব্যক্তির কি হয়েছে? ছেলেরা বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (তার) মানত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে বুড়ো! তুমি বাহনে আরোহণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমার ও তোমার মানতের মুখাপেক্ষী নন। [২১৩৫]
কোন ব্যক্তি তার মানতের মধ্যে পাপ-পুণ্য একাকার করে ফেললে ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় রোদের মধ্যে দাঁড়ানো এক ব্যক্তিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ একী? লোকজন বললো যে, সে সিয়াম রাখার, সারাটা দিন ছায়া গ্রহন না করার এবং কথাবার্তা না বলার মান্নত করেছে। তাই সে এ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। তিনি বলেনঃ সে যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহন করে, বসে এবং তার সিয়াম পূর্ণ করে। [উপরোক্ত হাদীসে মত ২ টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলঃ] ১/২১৩৬. (১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) , সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।[২১৩৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।