12. ব্যবসা-বাণিজ্য

【1】

আয়-রোজগার করতে উৎসাহ প্রদান।

আয়িশাহ (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মানুষের স্বোপার্জিত খাদ্যই হচ্ছে উত্তম খাদ্য। তার সন্তানও তার স্বোপার্জিত সম্পদ”। [২১৩৭] মিকদাম বিন মা’দীকারিব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষের স্বোপার্জিত আয়-রোজগারের চেয়ে উত্তম আয়-রোজগার আর কিছুই নাই। কোন ব্যক্তি তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, তার সন্তানের জন্য এবং তার কর্মচারীর জন্য যা ব্যয় করে তা দান-খয়রাত হিসেবে গণ্য হয়। [২১৩৮] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে। [২১৩৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিধবা ও নিঃসন্তানদের জন্য উপার্জনকারী ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত ব্যক্তি সমতুল্য এবং যারা রাতে (নফল) ইবাদত করে ও দিনে সিয়াম রাখে তাদেরও সমতুল্য। [২১৪০] আব্দুল্লাহ বিন খুবায়ব তার চাচা (ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত) তিনি বলেন, আমরা এক মজলিসে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথায় পানির চিহ্নসহ উপস্থিত হলেন। আমাদের কেউ তাকে বলল, আপনাকে আমরা আজ খুব প্রফুল্ল দেখছি। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আলহামদু লিল্লাহ্‌। অতঃপর মজলিশের লোকজন ধন-সম্পদের আলোচনায় লিপ্ত হল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকওয়ার অধিকারী (খোদাভীরু) লোকেদের ধন-সম্পদের মালিক হওয়াতে কোন দোষ নেই। আর খোদাভীরু লোকদের জন্য ধন-সম্পদ থেকে সুস্থতা অধিক উত্তম। মনের প্রফুল্লতাও নিয়ামতরাজির অন্তর্ভুক্ত। [২১৪১]

【2】

জীবিকা অর্জনে ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন

আবু হুমায়দ আস সায়দী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, তোমরা পার্থিব জীবনাপোকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন কর। কেননা যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর করা হয়েছে। [২১৪২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, যে মুমিন ব্যক্তি যুগপৎ দুনিয়ার ব্যাপারেও চিন্তা করে এবং আখিরাতের ব্যাপারেও চিন্তা করে সে মহৎ চিন্তার অধিকারী। আবু আবদুল্লাহ (ইবনে মাজাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব। ইসমাঈল ব্যতীত আর কেও এটি বর্ণনা করেননি। [২১৪৩] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর, যা হালাল তাই গ্রহন কর এবং যা হারাম তা বর্জন কর। [২১৪৪]

【3】

ব্যবসা-বানিজ্যে সতর্কতা অবলম্বন।

কায়স বিন আবু গারাযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমাদের সামাসিরা (দালাল) নামে ডাকা হত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে আমাদের আগের নামের চেয়ে অধিক সুন্দর নামকরন করেন। তিনি বলেনঃ ‘হে তাজের (ব্যবসায়ী) সম্প্রদায়! ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ ও বেহুদা কথাবার্তা হয়ে যায়।তাই কিছু দান-খয়রাত করে তা ধুয়েমুছে(পরিচ্ছন্ন করে) নিও। [২১৪৫] রিফাআহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওয়ানা হলাম। লোকেরা উট ক্রয়-বিক্রয় করছিল। তিনি তাদের ডেকে বলেনঃ হে তাজির (ব্যবসায়ী) সম্প্রদায়! তারা চোখ তুলে ও ঘাড় উঁচিয়ে তাকালে তিনি বললেনঃ কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপিষ্ঠ দুরাচাররুপে উঠানো হবে, তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে, সৎভাবে কাজ(ব্যবসা) করে ও সত্য কথা বলে তারা ব্যতীত। [২১৪৬]

【4】

কোন উপায়ে কারো রিযিকের ব্যাবস্থা হলে সে যেন তাতে লেগে থাকে।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ কেউ কোন সুত্রে আয়-রোজগার প্রাপ্ত হলে সে যেন তাতে লেগে থাকে। [২১৪৭] আয়িশা (রাঃ) (নাফি’) বলেন, আমি সিরিয়া ও মিশরে ব্যবসায়িক পণ্য রপ্তানি করতাম। আমি ইরাকে পন্য রপ্তানির মনস্থ করে উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি সিরিয়ায় পন্য রপ্তানি করতাম, এবার ইরাকে তা রপ্তানি করতে চাই। তিনি বলেন, তুমি তা করো না, তোমার আগের গন্তব্য ঠিক রাখো। কারন আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ কোন স্থান থেকে তোমাদের কারো রিযিকের ব্যাবস্থা করে দিলে সে যেন ওই স্থান ত্যাগ না করে, যতক্ষণ না সেই স্থান তার প্রতিকূল হয় বা অসহনীয় হয়। [২১৪৮]

【5】

কারিগরি শিল্প প্রসঙ্গে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি ছাগল চরাননি। সাহাবীগন তাকে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনিও? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমিও। কয়েক কীরাতের বিনিময়ে আমি মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি। সুওয়য়াদ (রাঃ) বলেন প্রতিটি বকরী এক কীরাতের বিনিময়ে। [২১৪৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকারিয়্যা ছুতার ছিলেন। [২১৫০] আয়িশাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চিত্রকরদের কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছ তাতে জীবন সঞ্চার করো। [২১৫১] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকদের মধ্যে অধিক মিথ্যাবাদী হল কাপড়ে রংকারী এবং অলংকার নির্মাতারা। [২১৫২] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【6】

পন্য সরবরাহ ও মজুতদারি।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমদানী পন্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রিযিক প্রাপ্ত হয় এবং মজুতদার অভিশপ্ত। [২১৫৩] মা’মার বিন আবদুল্লাহ বিন নাদলা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মজুতদারি করেনা। [২১৫৪] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে (বা সমাজে) খাদ্যদ্রব্য মজুতদারি করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্যতার কষাঘাতে শাস্তি দেন। [২১৫৫]

【7】

ঝাড়ফুঁককারীর মজুরী।

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিরিশজন অশ্বারোহীকে এক ক্ষুদ্র সামরিক অভিযানে পাঠান। আমরা এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে যাত্রাবিরতি করলাম এবং আমাদের মেহমানদারী করার জন্য তাদের অনুরোধ করলাম, কিন্তু তারা অস্বীকার করলো। ঘটনাক্রমে তাদের নেতা (বিষাক্ত প্রাণীর) হুলবিদ্ধ হল।তারা আমাদের কাছে এসে বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কি কেও আছে, যে বিছার কামড়ে ঝাড়ফুঁক করতে পারে? আমি বললাম, হাঁ, আমি পারি। তবে তোমরা আমাদেরকে এক পাল ছাগল-ভেড়া না দিলে আমি ঝাড়ফুঁক করব না।তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে তিরিশটি বকরী দিব। আমরা তা গ্রহন করলাম এবং আমি তার উপর সাতবার ‘আলহামদু’ সূরা পাঠ করলাম। সে সুস্থ হয়ে উঠলো এবং আমরা ছাগলগুলো গ্রহন করলাম। পরে এ ব্যাপারে আমাদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হলে আমরা বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আমাদের না পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়ো করোনা। আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হবার পর আমি যা করেছি তা তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ তুমি কিভাবে জানলে যে এটা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যায়! তোমরা সেগুলো বণ্টন করে নাও এবং তোমাদের সাথে আমাকেও একটি ভাগ দাও। [২১৫৬] (উপরোক্ত হাদিসের ৩টি সানাদের ১টি বর্ণীত হয়েছে।অপর দুটি সানাদ হলঃ) ২/২১৫৬(১). <আবু কুরায়ব><হুশায়ম><আবু বিশর><ইবনু আবিল মুতাওয়াক্কীল><আবুল মুতাওয়াক্কিল><আবু সাঈদ (রাঃ)> ৩/২১৫৬(২). <মুহাম্মাদ বিন বাশশার><মুহাম্মাদ বিন জা’ফার><শু’বাহ><আবু বিশর><আবুল মুতাওয়াক্কিল><আবু সাঈদ (রাঃ)> সুত্রেও অনুরূপ বর্ণীত হয়েছে। আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সঠিক নাম হল আবুল মুতাওয়াকিকল (যিনি আবু সাঈদ রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন)। [২১৫৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【8】

কুরআন মাজীদ শিক্ষাদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ ।

উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ তিনি বলেন, আমি আহলে সুফফার কিছু সংখ্যক লোকদের কুরআন মাজিদ ও লেখা শিখাই। তাঁদের একজন আমাকে একটি ধনুক উপহার দেয়। আমি (মনে মনে) বললাম, এটি তেমন উল্লেখযোগ্য মাল নয়। এটির সাহায্যে আমি আল্লাহ্‌র পথে তীর মারতে পারবো। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামের জিঞ্জীর পরানো হলে তাতে তুমি খুশি হতে পারলে এটি গ্রহণ করো। [২১৫৭] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক ব্যাক্তিকে কুরআন শিক্ষা দিলে সে আমাকে একটি ধনুক উপহার দেয়। আমি তা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, তুমি এটি গ্রহণ করলে (জানবে যে), তুমি জাহান্নামের একটি ধনুক গ্রহণ করেছ। অতএব আমি তা ফেরত দিলাম। [২১৫৮]

【9】

কুকুরের বিক্রয় মূল্য, যেনার বিনিময়, গণকের বখশিশ ও পাঁঠার ভাড়া গ্রহণ নিষিদ্ধ।

আবু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মুল্য, যেনার বিনিময়, গণকের বখশিশ ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। [২১৫৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মুল্য ও পাঁঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। [২১৬০] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের মুল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। [২১৬১]

【10】

রক্তমোক্ষকের উপার্জন।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষন করান এবং রক্তমোক্ষককে পারিশ্রমিক দেন। ইবনু মাজাহ (র) বলেন, ইবনু আবু উমার এই হাদিসের একক রাবি। [২১৬২] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষন করান এবং আমাকে নির্দেশ দিলে আমি রক্তমোক্ষকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করি। [২১৬৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষন করান এবং রক্তমোক্ষককে তার পারিশ্রমিক দেন। [২১৬৪] আবু মাসউদ উকবাহ বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষেণের উপার্জন ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। ¬¬[২১৬৫] মুহায়্যিসাহ বিন মাসউদ বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রক্তমোক্ষকের উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাকে তা ভোগ করতে নিষেধ করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তার প্রয়োজনের কথা বললে তিনি বলেন, তুমি তোমার উটের আহার সংগ্রহে তা খরচ করো। [২১৬৬]

【11】

যে সকল বস্তু ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নয়।

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মদ, মৃতজন্তু, শুকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। তাকে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে কি বলেন? কারণ এটি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জালায়। তিনি বলেন, না এগুলোও হারাম। এরপর রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ ইহুদীদের ধ্বংস করুন! আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করলে তারা এটিকে গলিয়ে বিক্রয় করে এবং এর মুল্য ভোগ করে। [২১৬৭] আবু উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করতে, তাদের উপার্জন ও তাদের মুল্য ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। [২১৬৮]

【12】

মুনাবাযা ও মুলামাসা পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাবাযা ও মুলামাসা পদ্ধতির ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। [২১৬৯] আবু সাইদ আল খুদরি (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাবাযা ও মুলামাসা পদ্ধতির ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। অধস্তন রাবি সাহলের বর্ণনায় আরও আছে যে, সুফিয়ান বলেছেন, ‘মুলামাসা’ এই যে, “ক্রেতা পন্য হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই তা ক্রয় করা বাধ্যতামুলক হয়ে যায়, সে তা সচক্ষে না দেখলেও”। আর মুনাবাযা হল এরূপ বলা যে, “তোমার হাতের বস্তু আমার দিকে নিক্ষেপ করো এবং আমি আমার হাতের বস্তু তোমার দিকে নিক্ষেপ করবো।” (এভাবে ক্রয় বিক্রয় অনুষ্ঠান)। [২১৭০]

【13】

দু’জনের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় বা দরদাম চলাকালে তৃতীয় পক্ষ যেন তাতে অংশগ্রহণ না করে।

ইবনু উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যেন অপর কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। [২১৭১] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যাক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তার ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম না করে। [২১৭২]

【14】

নাজাশ ধরণের দালালী নিষিদ্ধ।

ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশ নিষিদ্ধ করেছেন।¬¬¬ [২১৭৩] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা নাজাশ করবে না। [২১৭৪]

【15】

স্থানীয় লোকজন যেন বহিরাগতদের পক্ষ থেকে ক্রয়-বিক্রয় না করে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, স্থানীয় লোকজন যেন বহিরাগতদের পক্ষ থেকে ক্রয়-বিক্রয় না করে। তোমরা লোকদের স্বাধীনভাবে ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের একজনের দ্বারা অপরজনকে রিযিক দান করেন। [২১৭৫] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, স্থানীয় লোকজন যেন বহিরাগতদের পক্ষ থেকে ক্রয়-বিক্রয় না করে। তোমরা লোকদের স্বাধীনভাবে ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের একজনের দ্বারা অপরজনকে রিযিক দান করেন। [২১৭৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থানীয় লোকদেরকে বহিরাগতদের পক্ষে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)কে জিজ্ঞেস করলাম, বহিরাগতদের পক্ষে স্থানীয় লোকদের বেচাকেনার অর্থ কী? তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন যেন তার দালাল না সাজে। [২১৭৭]

【16】

পণ্য বাজারে পৌঁছার পূর্বেই পথিমধ্যে এগিয়ে গিয়ে তা ক্রয় করা নিষেধ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন তোমরা বাজারের বাইরে গিয়ে পণ্যবাহীদের সাথে সাক্ষাত করে তা ক্রয় করো না। কেউ এভাবে এগিয়ে গিয়ে তা ক্রয় করলে পণ্যের বাহক বাজারে পৌঁছার পর তার বিক্রয় বাতিলের এখতিয়ার লাভ করে। [২১৭৮] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজারের বাইরে গিয়ে পণ্যবাহীদের সাথে সাক্ষাত করতে নিষেধ করেছেন। [২১৭৯] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজারের বাইরে গিয়ে বিক্রয়কারীদের পণ্য ক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২১৮০]

【17】

ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার বহাল থাকে।

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দু'জন লোক একত্রে অবস্থান করে পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করলে তারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার বহাল থাকে অথবা একজন অপরজন কে এখতিয়ার দিলেও তা বহাল থাকে। অতএব একজন অপরজনকে এখতিয়ার প্রদান করার পরে ক্রয়-বিক্রয় করলে তাদের ক্রয়-বিক্রয় অবধারিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয়কারী কোন পক্ষ তা প্রত্যাহার না করে পৃথক হয়ে গেলে তাদের ক্রয়-বিক্রয় বহাল হয়ে যায়। [২১৮১] আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার বহাল থাকে। [২১৮২] সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর থেকে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার বহাল থাকে। [২১৮৩]

【18】

ক্রয়-বিক্রয়ে এখতিয়ার প্রসঙ্গে।

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বেদুইনের নিকট থেকে এক বোঝা উটের খাদ্য ক্রয় করেন। ক্রয়-বিক্রয় চূড়ান্ত হয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার (ক্রয়-বিক্রয় বহাল রাখার বা বাতিল করার) এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারো। বেদুইন বললো, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। আমি বিক্রয় বহাল রাখলাম। [২১৮৪] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ক্রয়-বিক্রয় কেবল পারস্পারিক সম্মতিতে অনুষ্ঠিত হয়। [২১৮৫]

【19】

ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হলে।

আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আশআস বিন কায়স (রাঃ) এর নিকট রাষ্ট্রের গোলামসমূহের মধ্য থেকে একটি গোলাম বিক্রয় করেন। পরে তার মূল্য নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ হয়। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি বিশ হাজারে তোমার নিকট বিক্রয় করেছি। আর আশআস বিন কায়স (রাঃ) বলেন, আমি দশ হাজারে আপনার নিকট থেকে ক্রয় করেছি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, তুমি চাইলে আমি তোমার নিকট একটি হাদীস বলতে পারি, যা আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছি। কায়স (রাঃ) বলেন, তা পেশ করুন। আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মূল্য নিয়ে বিরোধ বাধলে এবং এ ব্যাপারে কোন সাক্ষী না থাকলে এবং বিক্রীত পণ্যও অবিকল বিদ্যমান থাকলে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হবে অথবা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ করবে। কায়স (রাঃ) বলেন, আমি এই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ করলাম। অতএব তিনি গোলাম ফেরত দিলেন। [২১৮৬]

【20】

তোমার মালিকানায় যা নেই তা বিক্রয় করা নিষিদ্ধ এবং ঝুঁকি গ্রহণ করা ছাড়া লাভে অংশীদার হওয়া নিষিদ্ধ।

হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এক ব্যক্তি আমার নিকট থেকে এমন কিছু কিনতে চায়, যা আমার নিকট বিদ্যমান নাই। আমি কি তার সাথে বিক্রয় চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারি? তিনি বলেন: তোমার নিকট যা বিদ্যমান নেই, তা তুমি বিক্রয় করো না। [২১৮৭] আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে জিনিস তোমার নিকট বিদ্যমান নেই, তা বিক্রয় করা হালাল নয়। আর লোকসানের ঝুঁকি গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুনাফা গ্রহণ করা হালাল নয়। [২১৮৮] আত্তাব বিন আসীদ (উসাউদ) (রাঃ) তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে মক্কায় পাঠান তখন তাকে (লোকসানের) ঝুঁকি বহন না করা পর্যন্ত মুনাফা গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। [২১৮৯]

【21】

সম-কর্তৃত্বসম্পন্ন দু’ ব্যক্তি কোন জিনিস বিক্রয় করলে তা প্রথম ক্রেতা পাবে।

উকবাহ বিন আমির অথবা সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যাক্তি কোন জিনিস পরপর দু'জন ক্রেতার নিকট বিক্রয় করলে তা প্রথম ক্রেতা পাবে। [২১৯০] হাসান বিন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কর্তৃত্বসম্পন্ন দু'ব্যক্তি কোন জিনিস বিক্রয় করলে তা প্রথম ব্যক্তি (ক্রেতা) পাবে। [২১৯১]

【22】

উরবান ধরণের ক্রয়-বিক্রয়।

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২১৯২] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম ইবনু মাজাহ) বলেন, উরবান ধরনের ক্রয়-বিক্রয় এই যে, যেমন কোন ব্যক্তি একশত দীনারে একটি পশু ক্রয় করে বিক্রেতাকে বায়নাস্বরূপ দু'দীনার দিয়ে বললো, আমি পশুটি ক্রয় না করলে দীনার দু'টি তোমারই থাকবে। আরো বলা হয়েছে যে, ক্রেতা কোন জিনিস ক্রয় করে বিক্রেতাকে এক দিরহাম অথবা তার কম বা বেশি দিয়ে বললো, আমি তা রেখে দিলে তো ঠিক আছে, অন্যথায় দিরহামটি তোমারই। আল্লাহই ভাল জানেন। [২১৯৩]

【23】

পাথর নিক্ষেপ বেচা-কেনা এবং প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় এবং পাথর নিক্ষেপে নির্ধারিত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। [২১৯৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। [২১৯৫]

【24】

গবাদি পশুর পেটের বাচ্চা ক্রয়বিক্রয়য়, পশুর স্তনে থাকা অবস্থায় দুধ বিক্রয় এবং ডুবুরীর বাজি নির্ভর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।

আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গবাদি পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা প্রসবের পূর্বে, পশুর স্তনের দুধ পরিমাণ না করে, পলাতক গোলাম, গনিমতের মাল বন্টনের পূর্বে, দান-খয়রাত হস্তগত করার পূর্বে এবং ডুবুরীর বাজির ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২১৯৬] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর গর্ভস্থ ভ্রুণের বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২১৯৭]

【25】

নিলামে ক্রয়-বিক্রয়।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) এক আনসারী ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে কিছু চাইলে তিনি বলেনঃ তোমার ঘরে কি কিছু আছে? সে বললো, হ্যাঁ, একটি কম্বল আছে, যার একাংশ আমরা গায়ে দেই এবং অপরাংশ (বিছানা হিসেবে) বিছাই। আর আছে একটি পানপাত্র যাতে করে আমরা পানি পান করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জিনিস দু’টি আমার নিকট নিয়ে এসো।রাবী বলেন, সে এগুলো তাঁর নিকট নিয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনিস দু’টি নিজ হাতে নিয়ে বলেনঃ এই জিনিস দু’টি কে কিনবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এক দিরহামে তা ক্রয় করতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এর বেশী মূল্য কে দিবে? তিনি কথাটি দু’বার অথবা তিনবার বলেন। তখন এক লোক বললো, আমি দু’ দিরহামে তা কিনতে পারি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনিস দু’টি তাকে দিয়ে দিরহাম দু’টি গ্রহণ করলেন। তিনি তা আনসারী লোকটিকে দিয়ে বললেনঃ এর একটি দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে তোমার পরিবার-পরিজনকে দিয়ে আসো এবং অবশিষ্ট দিরহামটি দিয়ে কুঠার কিনে আমার নিকট নিয়ে আসো।লোকটি তাই করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটি নিয়ে তাতে নিজ হাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ যাও, জংগল থেকে কাঠ সংগ্রহ করো।আমি যেন পনের দিনের মধ্যে তোমাকে না দেখি। সে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রয় করতে লাগলো।অতঃপর সে যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম সঞ্চিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এর কিছু দিয়ে খাদ্য কিনে নাও এবং কিছু দিয়ে কপড়-চোপড় কিনে নাও। তিনি আরও বলেনঃ ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডলে অপমানের চিহ্ন থাকার চেয়ে এটি তোমার জন্য অধিক উত্তম। চরম দরিদ্রতা, কঠিন ঋণের বোঝা অথবা রক্তপণ আদায়ের মত প্রয়োজন ব্যতীত যাচ্ঞা করা সংগত নয়। [২১৯৮]

【26】

ইকালা (ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদকরণ)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের (বা অনুতপ্ত ব্যক্তির অনুরোধে) চুক্তি ভঙ্গের সুযোগ দিলো, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন। [২১৯৯]

【27】

যে ব্যক্তি মূল্য বেঁধে দেয়া অপছন্দ করে।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে একবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য বেঁধে দিন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, সংকোচনকারী, সম্প্রসারণকারী এবং রিযিক দানকারী। আমি আমার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করতে চাই যে, কেউ যেন আমার বিরুদ্ধে রক্তের ও সম্পদের কোনরূপ অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে। [২২০০] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে একবার জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেলে লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি যদি মূল্য বেঁধে দিতেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের নিকট থেকে এমন অবস্থায় বিদায় নিতে ইচ্ছুক যে, তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তার উপর কৃত যুলুমের দাবি না উঠাতে পারে। [২২০১]

【28】

ক্রয়-বিক্রয়ে উদারতা প্রদর্শন।

উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যে ব্যক্তি সহজতা প্রদর্শন করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [২২০২] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করুন। [২২০৩]

【29】

দরদাম করে ক্রয়-বিক্রয় করা।

বানী আনমারের মাতা কায়লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন উমরা আদায়কালে মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি একজন ব্যবসায়ী নারী।আমি কোন জিনিস কিনতে চাইলে আমার ইপ্সিত মূল্যের চেয়ে কম দাম বলি। এরপর দাম বাড়িয়ে বলতে বলতে আমার ইপ্সিত মূল্যে গিয়ে পৌঁছি। আবার আমি কোন জিনিস বিক্রয় করতে চাইলে ইপ্সিত মূল্যের চাইতে বেশি মূল্য চাই। এরপর দাম কমাতে কমাতে অবশেষে আমার ইপ্সিত মূল্যে নেমে আসি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে কাইলা! এরূপ করো না। তুমি কিছু কিনতে চাইলে তোমার ইপ্সিত মূল্যই বলো, হয় তোমাকে দেয়া হবে নয় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেনঃ তুমি কোন কিছু বিক্রয় করতে চাইলে তোমার ইপ্সিত দামই চাও, হয় তুমি দিলে অথবা না দিলে। [২২০৪] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ তোমার এই উটটি কি এক দীনারে বিক্রয় করবে? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যখন মদীনায় পৌঁছাবো, তখন এটি আপনাদের উট হবে। তিনি বলেনঃ তাহলে এটি কি দু’ দীনারে বিক্রয় করবে? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। জাবির (রাঃ) বলেন, এভাবে তিনি প্রতিবার এক দীনার করে বাড়িয়ে বলতে থাকেন এবং প্রতিবারই বলেনঃ আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। অবশেষে তিনি বিশ দীনার পর্যন্ত পৌঁছলেন। এরপর আমি মদীনায় পৌঁছে উটটির মাথা ধরে এটিকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে হাযীর হলাম। তিনি বলেনঃ হে বিলাল! গনীমাতের মাল থেকে একে বিশটি দীনার দাও। তিনি আমাকে বলেনঃ তুমি তোমার উট নিয়ে রওয়ানা হও এবং তা তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও। [২২০৫] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য উঠার আগে দরদাম করতে এবং দুগ্ধবতী পশু যবহ করতে নিষেধ করেছেন। [২২০৬]

【30】

ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ করা নিষেধ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি। (১) যার নিকট নির্জন প্রান্তরে অতিরিক্ত পানি আছে, সে তা পথিক মুসাফিরকে পান করতে বাধা দেয়। (২) যে বিক্রেতা আসরের পর তার পণ্য ক্রেতার নিকট বিক্রয় করে আর আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, সে এতো এতো মূল্যে তা ক্রয় করেছে এবং ক্রেতা তার কথা বিশ্বাস করেছে, অথচ আসল ব্যাপার তার বিপরীত।(৩) যে ব্যক্তি কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের অভিপ্রায়ে শাসকের আনুগত্য করার শপথ করে, শাসক তাকে কিছু দিলে শপথ পূর্ণ করে এবং না দিলে শপথ ভঙ্গ করে। [২২০৭] আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, (১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। [২২০৮] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করাকালে শপথ করা থেকে বিরত থাকো। কেননা মিথ্যা শপথের ফলে পণ্য বিক্রয় হলেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। [২২০৯]

【31】

তাবীরকৃত খেজুর বাগান ও মালদার গোলাম বিক্রয় করা।

ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি তাবীরকৃত খেজুর বাগান ক্রয় করলে তার ফল বিক্রেতার, তবে ক্রেতা শর্ত করে নিলে তা তার। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/২২১০(১) মুহাম্মাদ বিন রুমহ, লায়স বিন সা’দ, নাফি, ইবনু উমার (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে। [২২১০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি তাবীরকৃত খেজুর বাগান বিক্রয় করলে তার ফল বিক্রেতাই পাবে, তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। কোন ব্যক্তি মালদার গোলাম খরিদ করলে তার মাল বিক্রেতা পাবে। তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে তা সে পাবে। [২২১১] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি খেজুর বাগান ও গোলাম বিক্রয় করলে তা অবশ্য একত্রেও বিক্রয় করতে পারে। [২২১২] উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা করেছেন যে, খেজুর গাছের ফল তাবীরকারী পাবে, তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। আর ক্রীতদাসের মালও বিক্রেতার থাকবে। তবে ক্রেতা পূর্বেই শর্ত আরোপ করে থাকলে সে পাবে। [২২১৩]

【32】

পুষ্ট হওয়ার আগে ফল বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পুষ্ট হওয়ার আগে তোমরা ফল বিক্রয় করো না। তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন। [২২১৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ফল পুষ্ট হওয়ার আগে বিক্রয় করো না। [২২১৫] জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফল পুষ্ট হওয়ার আগে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২২১৬] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুষ্ট হওয়ার আগে ফল বিক্রয় করতে, কালো হওয়ার পূর্বে আঙ্গুর বিক্রয় করতে এবং শক্ত না হওয়া পর্যন্ত শস্য ইত্যাদি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২২১৭]

【33】

কয়েক বছরের মেয়াদে ফল বিক্রয় করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে।

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক বছরের মেয়াদে (ফলের বাগান) বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২২১৮] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি ফলের বাগান বিক্রয় করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা বিনষ্ট হলে, সে যেন তার ভাই (ক্রেতা) থেকে কিছু গ্রহণ না করে। তোমাদের কেউ কিসের বিনিময়ে তার মুসলিম ভাইয়ের মাল গ্রহণ করবে? [২২১৯]

【34】

ওজনে একটু বেশি দেয়া।

সুওয়ায়দ বিন কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও মাখরাফা আল-আবদী হাজার এলাকা থেকে কাপড় নিয়ে এলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসেন এবং একটি পাজামার দর করেন। আমাদের নিকটেই ছিল একজন কয়েল, যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ওজন করে দিতো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ কয়েল! ওজন করো এবং কিছু বেশী দাও। [২২২০] মালিক আবূ সফওয়ান বিন উমায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিজরতের পূর্বে আমি তাঁর নিকট একটি পাজামা বিক্রয় করেছিলাম। তিনি ওজন করে দিলেন এবং আমাকে কিছু বেশীই দিলেন। [২২২১] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন ওজন করে দিবে, তখন একটু বেশীই দিবে। [২২২২]

【35】

পুরাপুরি ওজন ও পরিমাপ করা।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করতো। অতএব মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ): “মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়” (৮৩:১)। এরপর থেকে তারা ঠিকভাবে ওজন করে। [২২২৩]

【36】

ধোঁকা দেয়া নিষিদ্ধ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন সে খাদ্যশস্য বিক্রয় করছিল। তিনি খাদ্যশস্যের স্তুপের মধ্যে তার হাত ঢুকালেন এবং আদ্রতা অনুভব করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [২২২৪] আবুল হামরা’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যেতে দেখলাম, যার কাছে একটি পাত্রে খাদ্যশস্য ছিল। তিনি এর মধ্যে তাঁর হাত ঢুকালেন এবং বললেনঃ সম্ভবত তুমি ধোঁকা দিচ্ছো। যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজি করে, সে আমাদের নয়। [২২২৫]

【37】

হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যশস্য বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।

ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করলে, সে যেন তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় না করে। [২২২৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করে সে যেন তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় না করে। আবূ আওয়ানা (রাঃ) তার হাদীসে বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমি অন্যান্য সকল বস্তুকে খাদ্যশস্যের বিধানের অন্তর্ভুক্ত মনে করি। [২২২৭] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্যশস্য দু’বার ওজন না দেয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। একটি হলো বিক্রেতার ওজন, অপরটি হলো ক্রেতার ওজন। [২২২৮]

【38】

খাদ্যশস্যের স্তুপ বিক্রয় করা।

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন কাফেলা থেকে অনুমানের ভিত্তিতে খাদ্যশস্য ক্রয় করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই খাদ্যশস্য স্থানান্তর করার পূর্বে পুনরায় বিক্রয় করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। [২২২৯] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বাজারে খেজুরের স্তুপ বিক্রয় করতাম। আমি বলতাম, আমার এই স্তুপ থেকে এই পরিমাণ খেজুর মেপে নাও। সে (ক্রেতা) নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুর ওজন করে নেয়ার পর আমি অবশিষ্ট অংশ রেখে দিতাম। এতে আমার মনে খটকার সৃষ্টি হলে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, যেহেতু তুমি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের উল্লেখ করেছো, তাই তাকে মেপে দাও। [২২৩০]

【39】

খাদ্যশস্য ওজন করলে তাতে বরকত হওয়ার আশা করা যায়।

আবদুল্লাহ বিন বুসর আল-মাযিনী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের খাদ্যশস্য ওজন করো, তার মধ্যে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হবে। [২২৩১] আবূ আয়্যূব (খালিদ বিন যায়দ বিন কুলায়ব)(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের খাদ্যশস্য ওজন করো, তার মধ্যে তোমাদেরকে বরকত দেয়া হবে। [২২৩২]

【40】

বাজারসমূহ এবং তাতে প্রবেশের নিয়ম।

আবূ উসাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আন-নাবীত নামক বাজারে গেলেন এবং কিছুক্ষণ তা পরিদর্শন করে বলেনঃ এটা তোমাদের উপযোগী বাজার নয়। অতঃপর তিনি অন্য একটি বাজারে গেলেন এবং তা পরিদর্শন করে বলেনঃ এটিও তোমাদের উপযোগী নয়। অতঃপর তিনি এই বাজারে ফিরে এলেন এবং কিছুক্ষণ পরিদর্শন করে বলেনঃ এটি তোমাদের জন্য উপযুক্ত বাজার। এখানে তোমরা কারচুপি পাবে না এবং এই বাজারে তোমাদের উপর খাজনা আরোপ করা হবে না। [২২৩৩] সালমান আল-ফারিসী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ভোরবেলা ফজরের নামায পড়তে রওয়ানা হয়, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে রওয়ানা হয়। আর যে ব্যক্তি সকাল বেলা বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে রওয়ানা হয়। [২২৩৪] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে বলেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়ুহ্‌য়ী ওয়া য়ুমীতু ওয়া হুয়া হায়্যুন লা ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাইর কুল্লুহু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই, রাজত্ব তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মরবেন না, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ নিহিত এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান), আল্লাহ তার আমলনামায় এক লক্ষ পুণ্য লিপিবদ্ধ করেন, তাঁর এক লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরী করেন। [২২৩৫]

【41】

সকাল বেলায় বরকত হওয়ার আশা করা।

সাখর আল-গামিদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উম্মাতের জন্য তাদের ভোরবেলাকে বরকতময় করুন।” তিনি ক্ষুদ্র বা বৃহৎ সামরিক বাহিনী অভিযানে পাঠাতে চাইলে দিনের প্রথম ভাগেই তাদেরকে পাঠাতেন। রাবী (উমারা বিন হাদীদ) বলেন, সাখর (রাঃ) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়িক পণ্য দিনের প্রথম ভাগেই পাঠাতেন। ফলে তিনি সম্পদশালী হন এবং তার সম্পদে প্রাচুর্য আসে। [২২৩৬] তাহকীক আলবানীঃ “হে আল্লাহ্‌! আমার উম্মাতের জন্য তাদের ভোরবেলাকে বরকতময় করুন” বাক্যটি সহীহ। তবে (আরবি) কথাগুলো দুর্বল। আবূ হুরায়রা(রা) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমভাগে আমার উম্মতকে বরকত দান করুন। [২২৩৭] ইবনু উমার(রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোরবেলায় বরকত দান করুন”। [২২৩৮]

【42】

(দুধ আটকে রেখে) স্তন ফুলানো পশু বিক্রয় করা।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি স্তনে দুধ আটকে রাখা জন্তু ক্রয় করলো, তাঁর জন্য তিন দিনের এখতিয়ার আছে(ক্রয় বহাল রাখা বা না রাখার)। সে তা ফেরত দিলে তাঁর এক সা খেজুরও দিবে, গম নয়। [২২৩৯] আব্দুল্লাহ বিন উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকসকল! যে ব্যক্তি (দুধ জমা করে) স্তন ফুলানো পশু ক্রয় করবে তাঁর জন্য তিন দিনের এখতিয়ার থাকবে। সে যদি তা ফেরত দেয় তবে তাঁর সাথে দুধের সমপরিমান দুধ অথবা দুধের সমপরিমান গম দিবে। [২২৪০] আবদুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ) তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যবাদী এবং সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আবুল কাসিম(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, (দুধ আটকে রেখে) স্তন ফুলানো পশু বিক্রয় করা একটি প্রতারনা। আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য প্রতারণা করা হালাল নয়। [২২৪১]

【43】

আয় ভোগ দায় বহনের সাথে যুক্ত।

আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রায় দিয়েছেন যে, গোলামের দায় বহন করলে তার উপার্জিত আয় ভোগ করা যায়। [২২৪২] আয়িশাহ(রাঃ) এক ব্যক্তি একটি গোলাম খরিদ করে তার দ্বারা কিছু উপার্জনও করে। অতঃপর গোলামের মধ্যে কিছু দোষ পেয়ে সে তা ফেরত দেয়। বিক্রেতা এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে আমার গোলাম দ্বারা কিছু উপার্জনও করেছে। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উপার্জন ভোগ দায় বহনের সাথে যুক্ত। [২২৪৩]

【44】

গোলাম ফেরতদানের সময়সীমা।

সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, গোলাম ফেরত দেওয়ার সময়সীমা তিন দিন। [২২৪৪] উকবার বিন আমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ চার দিনের পর ফেরত দানের সুযোগ নাই। [২২৪৫]

【45】

কোন ব্যক্তি ত্রুটিযুক্ত জিনিস বিক্রয় করলে তা বলে দিবে ।

উকবাহ বিন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ মুসলমান মুসলমানের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের পক্ষে তাঁর ভাইয়ের কাছে পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। [২২৪৬] ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা’(রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে তা বিক্রয় করে, সে সর্বদা আল্লাহর গযবের মধ্যে থাকে এবং ফেরেশতারা সব সময় তাঁকে অভিসম্পাত করতে থাকে। [২২৪৭]

【46】

বন্দীদের পরস্পর থেকে বিছিন্ন করা নিষেধ।

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যুদ্ধবন্দী আসলে তিনি তাদেরকে বিছিন্ন করা অপছন্দ করতেন। তাই তিনি (নিকট সম্পর্কযুক্ত) সকল বন্দী একই পরিবারকে দান করতেন। [২২৪৮] আলী (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দু’টি গোলাম দান করেন, যারা ছিল পরস্পর সহোদর ভাই। আমি তাদের একজনকে বিক্রয় করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি গোলাম দু’টি কী করলে? আমি বললাম, আমি তাদের একজনকে বিক্রয় করেছি। তিনি বলেন, তাকে ফেরত আনো। [২২৪৯] তাহকীক আলবানীঃ হাদীসটি সহিহ তবে সানাদ দঈফ বা দুর্বল। আবূ মূসা(রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (বন্দী) মা ও সন্তানকে এবং দু’সহোদর ভাইকে পরস্পর থেকে বিছিন্ন করে, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অভিসম্পাত করেছেন। [২২৫০]

【47】

গোলাম ক্রয়-বিক্রয়।

আদ্দা বিন খালিদ বিন হওযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আদ্দা বিন খালিদ বিন হাওয়া (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে সেই পত্র পড়ে শুনাবো না, যা রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লিখেছিলেন? রাবী বলেন, আমি বললাম, হাঁ। অতএব তিনি আমার সামনে একখানি পত্র বের করলেন, যাতে লেখা ছিলঃ “আদ্দা বিন খালিদ বিন হাওয়া আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের নিকট থেকে যা ক্রয় করেছেন এটা তার দলীল। সে তাঁর নিকট থেকে একটি গোলাম বা বাঁদী ক্রয় করেছে, যার কোন রোগ-ব্যাধি নাই, যা চুরিকৃতও নয় এবং হারাম মালও নয়। এ হলো দু’ মুসলমানের পারস্পারিক ক্রয়-বিক্রয়”। [২২৫১] আবদুল্লাহ বিন আমার ইবনুল আস(রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ দাসী ক্রয় করলে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণ এবং এর স্বভাবের মধ্যে যে কল্যাণ রেখেছেন তা প্রার্থনা করি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি”, অতঃপর বরকতের জন্য দোয়া করবে। আর তোমাদের কেউ উট ক্রয় করলে সে যেন তাঁর কুজের উপরিভাগ ধরে বরকতের জন্য দোয়া করে এবং পূর্বানুরুপ বলে। [২২৫২]

【48】

মুদ্রার নগদ বিনিময় এবং যে সব বস্তু কম-বেশী করে বিনিময় করা জায়েয নয়।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নগদ আদান প্রদান না হলে সোনার বিনিময়ে স্বর্ণমুদ্রা গ্রহণ সুদের অন্তর্ভুক্ত। গমের বিনিময়ে গম নগদ বিনিময় না হলে সূদ হবে। বার্লির সাথে বার্লির নগদ বিনিময় না হলে সূদ হবে। খেজুরের সাথে খেজুরের নগদ বিনিময় না হলে সূদ হবে। [২২৫৩] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ তিনি বলেন, কোন এক গির্জায় অথবা ইহূদীদের ইবাদতখানায় উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) ও মুআবিয়া (রাঃ) এর সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) তাদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে রুপার বিনিময়ে রুপা, সোনার বিনিময়ে সোনা, গমের বিনিময়ে গম, বার্লির বিনিময়ে বার্লি, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবনের বিনিময়ে লবন বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে গমের বিনিময়ে বার্লি এবং বার্লির বিনিময়ে গম ওজনে কন-বেশি করে যেভাবে ইচ্ছা নগদ বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন। [২২৫৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রুপার সাথে রুপা, সোনার সাথে সোনা, যবের সাথে যব এবং গমের সাথে গম পরিমাণে সমান সমান ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় অনুমোদিত। [২২৫৫] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আহারের জন্য নিম্ন মানের খেজুর দিতেন। আমরা এই খেজুর পরিমাণে বেশি দিয়ে উত্তম খেজুর বদলে নিতাম। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এক সা’ খেজুরের পরিবর্তে দু’ সা’ খেজুর এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’ দিরহাম গ্রহণ করা বৈধ নয়, বরং এক দিরহামের পরিবর্তে এক দিরহাম এবং এক দিনারের পরিবর্তে এক দীনার সমান ওজনে অতিরিক্ত না করে নেয়া যাবে। [২২৫৬]

【49】

যে ব্যক্তি বলে, বাকি লেনদেনই সুদ হয়।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম, দীনারের বিনিময়ে দীনার (ওজনে সমান ও নগদ আদান প্রদান) হতে হবে। আমি বললাম, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে অন্য রকম বলতে শুনেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আমাকে অবহিত করুন যে, মুদ্রার বিনিময় সম্পর্কে আপনি যা বলেন, তা কি আপনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন, না আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বলেন, আমি তা আল্লাহর কিতাবেও পাইনি এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটও শুনিনি, বরং উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধার-কর্জের ক্ষেএেই কেবল (কম বেশি করলে) সুদ হয়। [২২৫৭] আবুল জাওযা' আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে শুনলাম যে,তিনি মুদ্রার বিনিময় (বাকিতে কম-বেশি) করার বিষয়টি অনুমোদন করছেন এবং তার বরাতে তা বর্ণনা করা হচ্ছে। অতঃপর আমি জানতে পারলাম যে, তিনি এ মত প্রত্যাহার করেছেন। তাই আমি মক্কা শরীফে তার সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি আপনার মত প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেন, হা। সেটি ছিল আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আর এই আবূ সাইদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বরাতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি (বাকিতে) মুদ্রার বিনিময় নিষিদ্ধ করেছেন। [২২৫৮]

【50】

সোনার সাথে রুপার বিনিময়।

উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নগদ লেনদেন না হলে সোনার সাথে রুপার (বাকীতে) বিনিময় সুদের অন্তর্ভুক্ত। আবূ বাকর বিন আবূ শাইবা (রাঃ) বলেন, আমি সুফিয়ান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা মনে রেখো, সোনার সাথে রুপার বিনিময়। [২২৫৯] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (মালিক) বলেন, আমি একথা বলতে বলতে সামনে অগ্রসর হলাম, কে রৌপ্য মুদ্রা বদল করবে? তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ) তখন উমার ইবনুল খাত্তাব(রাঃ)- এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে তোমার সোনা দেখাও এবং (কিছুক্ষণ পর) আমাদের নিকট এসো। আমাদের কোষাধ্যক্ষ এসে গেলেই (তোমাকে তোমার প্রাপ্য) রুপা দিয়ে দিবো। তখন উমার (রাঃ) বলেন কক্ষনো নয়। আল্লাহর শপথ! হয় এখনই তুমি তাকে রৌপ্য মুদ্রা দিয়ে দাও, নতুবা তার সোনা তাকে ফেরত দাও। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নগদ আদান-প্রদান না হলে সোনার সাথে রুপার বিনিময়ে সুদ হবে। [২২৬০] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দীনারের বিনিময়ে দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহামের (রৌপ্যমুদ্রা) লেনদেনের ক্ষেএে অতিরিক্ত নেয়া যাবে না। কারো রুপার প্রয়োজন হলে সে যেন সোনার সাথে তা বিনিময় করে এবং কারো সোনার প্রয়োজন হলে সে যেন তা রুপার সাথে বিনিময় করে। তবে বিনিময়ের এই লেনদেন নগদ হতে হবে। [২২৬১]

【51】

সোনার বিনিময়ে রুপা এবং রুপার বিনিময়ে সোনা ক্রয়-বিক্রয় করা।

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উটের ব্যবসা করতাম। আমি রুপার পরিবর্তে সোনা, সোনার পরিবর্তে রুপা, দীনারের পরিবর্তে দিরহাম এবং দিরহামের পরিবর্তে দীনার গ্রহন করতাম। আমি এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ যখন তুমি ঐগুলোর একটি গ্রহন করবে এবং অপরটি প্রদান করবে, তখন তোমার সঙ্গীর সাথে লেনদেন চূড়ান্ত না করে পৃথক হবে না। (তিরমিযী ১১৭৯)। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ৭ টি সানাদের ৬ টি বর্ণিত হয়েছে, অপরটি সানাদটি হলঃ]। [২২৬২] ২/২২৬২(১). ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।

【52】

দিরহাম ও দীনার (মুদ্রা) ভাঙ্গা নিষেধ।

আবদুল্লাহ বিন সিনান বিন নাবীশায় বিন সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত বৈধ মুদ্রা অপরিহার্য প্রয়োজন ব্যতিত ভাঙ্গতে নিষেধ করেছেন। [২২৬৩]

【53】

শুকনা খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রয় করা।

সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) যুহরা গোত্রের মুক্ত দাস যায়দ আবূ আইয়্যাশ সাদ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)- কে যবের বিনিময়ে সাদা গম ক্রয় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সাদ (রাঃ) তাকে বলেন, এ দু’টির মধ্যে কোনটি উত্তম? তিনি বলেন, সাদা গম। সা’দ (রাঃ) আমাকে এরুপ লেনদেন করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শুকনা খেজুরের সাথে তাজা খেজুরের বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তাজা খেজুর শুকালে কি কমে যায়? লোকজন বলেন, হাঁ। তিনি এ জাতীয় লেনদেন করতে নিষেধ করেন। [২২৬৪]

【54】

মুযাবানা ও মুহাকালা প্রসঙ্গে।

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুষাবানা ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। বাগানের তাজা খেজুর গাছে থাকা অবস্থায় (সংগৃহীত) ওজনকৃত শুকনো খেজুরের বিনিময়ে বিক্রয় করাকে ‘মুযাবানা’ বলে। অনুরূপভাবে তাজা আঙ্গুর ওজনকৃত শুকনা আঙ্গুর (কিশমিশ) - এর বিনিময়ে বিক্রয় করা, ক্ষেতের শস্য (সংগৃহীত) ওজনকৃত শস্যের বিনিময়ে বিক্রয় করাও (মুযাবানার অন্তর্ভুক্ত)। তিনি এই প্রকারের লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। [২২৬৫] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা ও মুযাবানা ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২২৬৬] রাফি’ বিন খাদীজ(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাকালা ও মুযাবানা ধরনের লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। [২২৬৭]

【55】

আরিয়া পদ্ধতির লেনদেন (গাছের মাথার খেজুর অনুমানে ক্রয়-বিক্রয়)।

যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের উপরিস্থিত খেজুর অনুমানে পরিমাণ নিরূপণ করে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন। [২২৬৮] যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের উপরিস্থিত খেজুর অনুমানে পরিমান নির্ধারণ করে সংগৃহীত খেজুরের বিনিময়ে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন। ইয়াহইয়া (রাঃ) বলেন, গাছের মাথার খেজুর অনুমানে পরিমান নিরূপণ করে ঘরের শুকনা খেজুরের সাথে বিনিময় করাকে আরিয়্যা বলে। [২২৬৯]

【56】

জন্তুর বিনিময়ে বাকীতে জন্তু বিক্রয় করা।

সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশুর বিনিময়ে পশু ধারে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [২২৭০]

【57】

পশুর পরিবর্তে পশু অধিক দরে নগদ ক্রয়-বিক্রয়।

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একটি পশু দু’টি পশুর বিনিময়ে নগদ ক্রয়-বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু তিনি বাকীতে এরূপ লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। [২২৭১] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) কে সাতটি দাসীর বিনিময়ে খরিদ করেন। রাবী আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, দিহয়াতুল কালবী (রাঃ)-র নিকট থেকে (তাকে খরিদ করেন)। [২২৭২]

【58】

সুদ সম্পর্কে কঠোর বানী।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমাকে একদল লকের কাছে নিয়ে আসা হলো। তাদের পেট ছিল ঘরের মত বিশাল, তার মধ্যে সাপ ভর্তি ছিলো, যা বাইরে থেকে দেখা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বলেনঃ এরা সুদখোর। [২২৭৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সুদের গুনাহর সত্তরতি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [২২৭৪] আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সুদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। [২২৭৫] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, সবশেষে সূদের আয়াত নাযিল হয়। কিন্তু আমাদেরকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাদানের আগেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন। অতএব সূদ এবং (সূদের) সন্দেহ সৃষ্টিকারী জিনিস পরিহার করো। [২২৭৬] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষীদ্বয় এবং সুদের হিসাব রক্ষক বা দলীল লেখককে অভিসম্পাত করেছেন। [২২৭৭] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই মানুষ এমন এক যুগের সম্মুখীন হবে যখন তাদের মধ্যে এমন একজনও পাওয়া যাবে না যে সুদখোর নয়। সে সুদ না খেলেও তার ধুলোবালি (মলিনতা) তাকে স্পর্শ করবে। [২২৭৮] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সুদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। [২২৭৯]

【59】

ওজন, পরিমাপ ও মেয়াদ নির্দিষ্ট করে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনাবাসী দু’ বা তিন বছর মেয়াদে খেজুর আগাম ক্রয়-বিক্রয় করতো। তিনি বলেনঃ কেউ অগ্রিম খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সে যেন ওজন, পরিমাপ ও মেয়াদ নির্দিষ্ট করে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করে। [২২৮০] আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, ইহুদিদের অমুক দল ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। আমার আশংকা হয় যে, তারা মুরতাদ হয়ে যায় কিনা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কারো নিকট মাল থাকলে আমাদের সাথে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করুক। এক ইহুদি বললো, আমার নিকট এই এই পরিমাণ জিনিস আছে। সে তার নামও উল্লেখ করলো। আমার মনে হয় সে বলেছে, তিনশত দীনারে অমুক গোত্রের বাগান থেকে এই এই দরে ফল দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ দর এবং মেয়াদ ঠিকই আছে, কিন্তু অমুক গোত্রের বাগান এভাবে স্থান নির্ধারণ গ্রহণযোগ্য নয়। [২২৮১] আবুল মুজালিদ আবদুল্লাহ বিন শাদ্দাদ ও আবু বারযা (রাঃ)-এর মধ্যে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে মতভেদ হয়। তাই তারা আমাকে আবদুল্লাহ বিন আবু আওফা (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। আমি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবু বক্‌র (রাঃ) ও উমর (রাঃ) এর যুগে গম, যব, কিশমিশ ও খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতাম এমন লোকেদের সাথে যাদের কাছে তা বিদ্যমান থাকতো না। (রাবী আবুল মুজালিদ বলেন) আমি বিন আবযা (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনিও অনুরূপ জবাব দেন। [২২৮২]

【60】

কোন ব্যক্তি কোন জিনিস অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করলে তার পরিবর্তে অন্যটি নিতে পারবে না।

আবু সাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি কোন জিনিস অগ্রিম ক্রয় করলে সেই জিনিসের পরিবর্তে অন্যটি নিতে পারবে না। [উপরোক্ত হাদিসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/২২৮৩(১). আবু সাইদ (রাঃ), তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সনদসূত্রে রাবী সাদ (রাঃ)-এর উল্লেখ নাই। [২২৮৩] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।

【61】

কোন নির্দিষ্ট খেজুর গাছ, ফল আসার পূর্বে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।

আন-নাজরানী আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ), কে জিজ্ঞেস করলাম, ফল আসার পূর্বে খেজুর গাছ অগ্রিম বিক্রয় করা যায় কিনা? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, কেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এক ব্যক্তি ফল আসার পূর্বে একটি খেজুর বাগান অগ্রিম ক্রয় করে। কিন্তু (ঘটনাক্রমে) সে বছর খেজুর গাছে কোন ফল ধরেনি। ক্রেতা বললো, ফল না আসা পর্যন্ত এ বাগান আমার। আর বিক্রেতা বললো, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট খেজুর বাগান কেবল এক বছরের জন্যই বিক্রয় করেছি। অতঃপর তারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে মামলা দায়ের করলো। তিনি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ক্রেতা কি তোমার খেজুর গাছ থেকে কিছু গ্রহণ করেছে? বিক্রেতা বললো, না। তিনি বলেনঃ তাহলে কিসের বদলে তুমি তার মাল হালাল করলে? তার থেকে যা গ্রহণ করেছো তা তাকে ফেরত দাও। আর (ভবিষ্যতে) গাছের খেজুর পুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তা অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করো না। [২২৮৪]

【62】

চতুষ্পদ জন্তু অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।

আবু রাফি’ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির নিকট থেকে ধারে একটি উঠতি বয়সের উট কিনেন এবং বলেনঃ যাকাতের উট এলে তোমার ধার পরিশোধ করবো। অতঃপর যাকাতের উট এলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আবূ রাফে! সেই লোকের উটটি পরিশোধ করো। অতএব আমি চার বছর বা ততোধিক বয়সের উট ছাড়া আর কোন উট পেলাম না। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেনঃ ওটাই তাকে দাও। কেননা লোকেদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম যে উত্তমভাবে ঋণ পরিশোধ করে। [২২৮৫] ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় এক বেদুঈন (এসে) বললো, আমার উঠতি বয়সের উটটি পরিশোধ করুন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি বড় উট দিলেন। বেদুঈন বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এটি আমার উটের তুলনায় অধিক বয়স্ক। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে ঋণ পরিশোধে উত্তম। [২২৮৬]

【63】

শারীকাত (অংশিদারী) ও মুদারাবা ব্যবসা।

আস-সাইব (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন, জাহিলী যুগে আপনি আমার অংশীদার ছিলেন এবং সর্বোত্তম অংশীদার ছিলেন। না আপনি কখনো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন আর না আমার সাথে বিবাদ করেছেন। [২২৮৭] আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন সাদ (রাঃ), আম্মার (রাঃ) ও আমি গণিমতের মালের ব্যাপারে অংশীদার হই (এই মর্মে যে, আমরা যা পাবো তা তিনজনে ভাগ করে নিবো)। আম্মার ও আমি কিছুই আনতে পারিনি। অবশ্য সাদ (রাঃ) দু’জন যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসেন। [২২৮৮] সুহায়ব বিন সিনান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে বরকত রয়েছেঃ মেয়াদ নির্দিষ্ট করে ক্রয়-বিক্রয়, মুকারাযা ব্যবসা এবং পারিবারিক প্রয়োজনে গমে যব মিশানো, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। [২২৮৯]

【64】

সন্তানের সম্পদে পিতার হক।

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যা ভোগ-ব্যবহার করো তার মধ্যে উত্তম হলো তোমাদের নিজস্ব শ্রমের উপার্জন। আর তোমাদের সন্তানও তোমাদের উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। [২২৯০] তাহকিক আলবানীঃ সহিহ। হাদীসটি সহিহ কিন্তু উমারাহ বিন উমায়র এর চাচার জাহালাতের কারনে সানাদটি দুর্বল; কেননা কেউ তাকে তাওসীক করেন নি (সিকাহ বলেননি)। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার সম্পদও আছে, সন্তানও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি ও তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার। [২২৯১] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমার পিতা আমার সম্পদ শেষ করে দিয়েছে প্রায়। তিনি বলেন, তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, তোমাদের সন্তান তোমাদের উত্তম উপার্জন। অতএব তোমরা তাদের সম্পদ থেকে ভোগ করতে পারো। [২২৯২]

【65】

স্বামীর সম্পদে স্ত্রীর হক।

আয়েশা (রাঃ) (আবু সুফিয়ানের স্ত্রী) হিন্‌দ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবু সুফিয়ান খুবই কৃপণ লোক। সে আমার ও আমার সন্তানের জীবন ধারণে যথেষ্ট হওয়ার মত খরচপাতি দেয় না। তাই আমি তার অগোচরে তার সম্পদ থেকে কিছু নেই (যাতে যথেষ্ট হয়)। তিনি বলেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট হতে পারে ততটুকু ন্যায়সংগতভাবে নিতে পারো। [২২৯৩] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্ত্রী তার স্বামীর মালিকানাভুক্ত মাল থেকে অপচয় না করে খরচ করলে বা আহারের সংস্থান করলে তার জন্য এর সওয়াব লেখা হয়। স্বামীর অনুরূপ সওয়াব হয় উপার্জন করার কারণে, স্ত্রীর সওয়াব হয় খরচ করার কারণে এবং ভাণ্ডার রক্ষকেরও অনুরূপ সওয়াব হয়, এতে তাদের কারো সওয়াব থেকে কিছুই হ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। [২২৯৪] আবু উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ স্ত্রী তার ঘর থেকে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কিছু খরচ করবে না। লোকজন বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বলেনঃ তা তো আমাদের সর্বোত্তম সম্পদভুক্ত। [২২৯৫]

【66】

গোলামের কাউকে কিছু দেয়া এবং দান করার অধিকার প্রসঙ্গে।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোলামের দাওয়াত কবুল করতেন। [২২৯৬] আবুল লাহ্‌মের মুক্ত দাস উমায়র(রাঃ) তিনি বলেন, আমার মনিব আমাকে কিছু দিলে আমি তা থেকে অপরকে খাওয়াতাম। আমার মনিব আমাকে তা করতে নিষেধ করলেন বা আমাকে প্রহার করলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিষয়টি অবহিত করে বললাম, গরীবদের আহার করানো ত্যাগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এর সওয়াব হলো তোমাদের উভয়ের। [২২৯৭]

【67】

কোন ব্যক্তি কারো গবাদি পশু বা ফলের বাগান অতিক্রম করাকালে তা থেকে কিছু (দুধ বা ফল) নিতে পারবে কিনা?

আবূ বিশর জাফর আবূ ইয়াস(রাঃ) আমি গুবার গোত্রের আব্বাদ বিন শুরাহবীল(রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ এক বছর আমাদের এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে আমি মদীনায় চলে এলাম। আমি মদীনার কোন এক ফলের বাগানে পৌঁছে এক ছড়া শস্যবীজ নিয়ে তা থেকে ছিঁড়ে কিছু আহার করলাম এবং কিছু আমার চাদরে বেধে নিলাম। বাগানের মালিক এসে আমাকে মারধর করলো এবং আমার চাদরখানা কেড়ে নিলো। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি মালিককে বলেনঃ সে তো দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিল, কেন তুমি তাঁকে আহার করাওনি? আর সে তো ছিল মূর্খ, কেন তুমি তাঁকে শিখাওনি? অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাগানের মালিককে তাঁর চাদর ফেরতদানের নির্দেশ দিলে সে তা ফেরত দেয় এবং তিনি তাঁকে এক ওয়াসাক বা অর্ধ ওয়াসাক খাদ্যদ্রব্য প্রদানেরও নির্দেশ দেন। [২২৯৮] রাফি বিন আমর আল-গিফারী (রাঃ) আমি বালক বয়সে আমাদের খেজুর বাগানে অথবা এক আনসার ব্যক্তির খেজুর বাগানে ঢিল মেরেছিলাম। তিনি আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে বলেনঃ হে বালক বা হে বৎস! তুমি খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়েছিলে কেন? রাফে’(রাঃ) বলেন, আমি বললাম, খেজুর খাওয়ার জন্য। তিনি বলেনঃ তুমি আর কখনো খেজুর গাছে ঢিল মের না, গাছের নিচে যা পড়ে থাকে তা খাও। রাফে’(রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দুআ’ করেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তার পেটের ক্ষুধা দূর করে দাও। [২২৯৯] আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি গবাদিপশুর পালের নিকট পৌঁছে তার রাখালকে উচ্চৈঃস্বরে তিনবার ডাক দিবে। সে তোমার ডাকে সাড়া দিলে তো ভালো, অন্যথায় তুমি তার দুধপান করো, ক্ষতিসাধন না করে। আর তুমি কোন ফলের বাগানে পৌঁছে বাগানের মালিককে তিনবার ডাক দিবে। সে তোমার ডাকে সাড়া দিলে তো ভালো, অন্যথায় তুমি ক্ষতি না করে তা থেকে পেড়ে খাও। [২৩০০] ইবনু উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বাগানের কাছ দিয়ে যাতায়াতকালে সে ইচ্ছা করলে ফল খাবে, কিন্তু কাপড়ে বেঁধে নিয়ে যাবে না। [২৩০১]

【68】

মালিকের অনুমতি ব্যতীত কিছু নেয়া নিষেধ।

আবদুল্লাহ বিন উমার(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন মালিকের অনুমতি ছাড়া তার পশু দোহন না করে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করে যে, তার ধনভাণ্ডারে অন্য লোক প্রবেশ করে তার ধনভাণ্ডারের দরজা ভেঙ্গে তার খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যাক? গবাদি পশুর বাঁট তো তাদের মালিকের জন্য খাদ্যদ্রব্য সঞ্চিত করে রাখে। তাই তোমাদের কেউ যেন অপরের পশুর দুধ তার অনুমতি ব্যতীত দোহন না করে। [২৩০২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা কাঁটাযুক্ত গাছের আড়ালে দুগ্ধবতী উষ্ট্রী দেখতে পেয়ে সেদিকে দ্রুত ছুট দিলাম। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাক দিলেন। আমরা তাঁর নিকট ফিরে এলে তিনি বলেনঃ এই উট কোন মুসলিম পরিবারের। এগুলোই তাদের খাদ্যের এবং বেঁচে থাকার সংস্থান। এগুলো আল্লাহর পর তাদের মালিকানাধীন। তোমার কি ভালো লাগবে যে, তোমরা তোমাদের খাদ্যভাণ্ডারে ফিরে গিয়ে তা খাদ্যশূন্য দেখতে পাবে? তোমরা কি এটাকে ইনসাফ মনে করো? তারা বলেন, না। তিনি বলেনঃ এটাও তদ্রূপ। আমরা বললাম, আপনি কি মনে করেন, যদি খাদ্য ও পানীয়ের অভাব দেখা দেয়? তিনি বলেনঃ এমতাবস্থায় তোমরা খেতে পার কিন্তু সাথে নিয়ে যেতে পারবে না এবং পান করো, কিন্তু সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। [২৩০৩]

【69】

গবাদি পশু পালন

উম্মু হানী(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি ছাগল-ভেড়া পালো। কারন তাতে বরকত রয়েছে। [২৩০৪] উরওয়াহ আল-বারিকী (রাঃ) উরওয়াহ আল-বারিকী (রাঃ) থেকে মারফূ হাদীসরূপে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উট তার মালিকের জন্য গৌরবের ধন, ছাগল-ভেড়া হলো বরকতপূর্ণ সম্পত্তি এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ যুক্ত রয়েছে। [২৩০৫] ইবনু উমার(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বকরী বেহেশতের প্রানীকুলের অন্তর্ভুক্ত। [২৩০৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধনীদেরকে ছাগল-ভেড়া পালতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং দরিদ্রদেরকে মুরগী পালতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ ধনীরা মুরগী পালন করলে আল্লাহ তা-আলা সেই জনপদ ধ্বংস করার অনুমতি দেন। [২৩০৭] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।