18. হারানো প্রাপ্তি
হারানো উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি গবাদি পশু প্রাপ্তি সম্পর্কে।
আবদুল্লাহ ইবনুশ-শিখ্খীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানের হারানো বস্তু (অপরজনের জন্য) জাহান্নামের আগুন। [২৫০২] জারীর (রাঃ) (মুনযির বিন জারীর) আমি আল-বাওয়াযীজ নামক স্থানে আমার পিতার সাথে ছিলাম। সন্ধ্যাবেলা গরুর পাল ফিরে এলে তার সাথে তিনি একটি অপরিচিত গাভী দেখে বলেনঃ এটা কাদের গাভী? লোকেরা বললো, এই গাভীটি আমাদের গরুর সাথে চলে এসেছে। রাবী বলেন, তিনি গাভীটি সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তদনুযায়ী সেটিকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো, শেষে তা দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কেবল পথভ্রষ্ট ব্যক্তিই হারানো জন্তুকে আশ্রয় দেয়। [২৫০৩] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তবে মারফূ’ সূত্রে সহীহ। যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পথ ভোলা উট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অসন্তুষ্ট হন, এমনকি তাঁর গন্ডদেশ বা মুখমন্ডল রক্তিমাভ হয়ে যায়। তিনি বলেনঃ তাতে তোমার কী? ওর সাথে জুতা (খুর) ও মশক (পেট) রয়েছে। সে পানির উৎসে পৌঁছে তা পান করতে থাকবে এবং গাছপাতা খেতে থাকবে, শেষে তার মালিক তাকে পেয়ে যাবে। তাঁকে হারানো মেষ-বকরী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তাকে ধরে রাখ। হয় এটা তোমার অথবা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ে বাঘের জন্য। তাঁকে হারানো বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তার থলে ও চামড়ার বাক্স এবং মুখ বাধাঁর রশি উত্তমরূপে চিনে রাখো এবং এক বছর ধরে তার ঘোষণা দিতে থাকো। যদি তার মালিক পাওয়া যায় তো ভালো, অন্যথায় তা তোমাদের মালের সাথে যোগ কর। [২৫০৪]
কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু (লুকতা) প্রাপ্তির বিধান।
ইয়াদ বিন হিমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ কারো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু পেলে যেন একজন অথবা দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখে, অতঃপর তা পরিবর্তনও না করে এবং গোপনও না করে। যদি তার মালিক এসে যায় তবে সে-ই তার যথার্থ প্রাপক, অন্যথায় তা আল্লাহর সম্পদ, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। [২৫০৫] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) (সুওয়ায়দ বিন গাফালাহ) বলেন, আমি যায়েদ বিন সূহান ও সালামান বিন রাবীআর সাথে সফরে বের হলাম। আমরা উযায়ব নামক স্থানে পৌছে আমি একটি চাবুক কুড়িয়ে পেলাম। তারা উভয়ে আমাকে বলেন, এটা ফেলে দাও, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম। অতঃপর আমরা মদীনায় ফিরে এসে আমি উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বলেন, তুমি ঠিকই করেছো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক শত দীনার কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। আমি তাঁকে (এর বিধান) জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ এক বছর পর্যন্ত এর ঘোষণা দিতে থাকো। আমি ঘোষণা দিতে থাকলাম, কিন্তু তার শনাক্তকারী কাউকে পেলাম না। পুনরায় আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ঘোষণা দিতে থাকো। আমি ঘোষণা দিতে থাকলাম, কিন্তু তার শনাক্তকারী পেলাম না। অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি তার থলে ও মুখ বাঁধার রশি ও মুদ্রার সংখ্যা চিনে রাখো এবং আরো এক বছর ঘোষণা দাও। যদি তার শনাক্তকারী আসে তো ভালো, অন্যথায় তা তোমার সম্পদতুল্য। [২৫০৬] যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে হারানো বস্তু (লুকতা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেনঃ এক বছর পর্যন্ত তার ঘোষনা দিতে থাকো। যদি তার মালিক পাও, তবে তাঁকে তা ফেরত দাও। আর যদি তার মালিক না পাও তবে তার থলে এবং মুখ বাঁধার রশি চিনে রাখো। তারপর তুমি তা ব্যবহার করো। এরপর যদি তার মালিক এসে যায়, তবে তাকে তা ফেরত দাও। [২৫০৭]
গর্ত থেকে ইঁদুর যা বের করে দেয়, তার বিধান।
মিকদাদ বিন আমর (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে তিনি একদিন আল-বাকী‘ নামক কবরস্থানে যান। তৎকালে লোকেরা দু’-তিন দিন পরপর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতো। তারা উটের বিষ্ঠা সদৃশ মল ত্যাগ করতো। অতঃপর তিনি একটি বিরান ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বসে প্রয়োজন সারছিলেন, হঠাৎ দেখলেন যে, একটি ইঁদুর তার গর্ত থেকে একটি দীনার বের করলো। তারপর সে গর্তে প্রবেশ করে আর একটি দীনার বের করলো। ইঁদুরটি এভাবে পরপর সতেরটি দীনার বের করলো, অতঃপর একটি লাল কাপড়ের টুকরা টেনে বের করলো। মিকদাদ (রাঃ) বলেন, আমি আস্তে আস্তে কাপড়ের টুকরাটি টেনে উঠালাম এবং তার মধ্যেও একটি দীনার পেলাম। এভাবে মোট আঠারটি দীনার হলো। আমি সেগুলো নিয়ে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট চলে এলাম এবং বিষয়টি তাঁকে জানালাম। আমি আরো বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এর যাকাত গ্রহণ করুন। তিনি বলেনঃ তুমি এগুলো নিয়ে যাও এবং এর কোন যাকাত নেই। আল্লাহ এগুলোতে তোমার বরকত দান করুন। অতঃপর তিনি বলেনঃ মনে হয় তুমি গর্তের মধ্যে তোমার হাত ঢুকিয়েছিলে। আমি বললাম, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দ্বারা মর্যাদাবান করেছেন! আমি গর্তে হাত ঢুকাইনি। রাবী বলেন, এর শেষ দীনারটি তার ইনতিকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিলো। [২৫০৮] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তা‘লীক ইবনু মাজাহ।
কেউ খনিজ সম্পদ পেলে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ খনিজ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ (রাষ্ট্রের) প্রাপ্য। [২৫০৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খনিজ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ (রাষ্ট্রের) প্রাপ্য। [২৫১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের পূর্বকালে এক ব্যক্তি এক খন্ড জমি ক্রয় করে তার মধ্যে সোনাভর্তি একটি কলস পায়। সে (বিক্রেতাকে) বললো, আমি তো তোমার থেকে জমি ক্রয় করেছি, সোনা কিনিনি। বিক্রেতা বললো, আমি তোমার নিকট জমি এবং তার মধ্যকার সবকিছু বিক্রয় করেছি। অতঃপর তারা বিষয়টির মীমাংসার জন্য এক ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হলো। লোকটি বললো, তোমাদের দু’জনের কি সন্তান-সন্ততি আছে? একজন বললো, আমার একটি পুত্র সন্তান আছে। অপরজন বললো, আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। লোকটি বললো, তাহলে তোমরা ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিবাহ দাও এবং এই সোনা তাদেরকে দাও, যাতে তারা এটা নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারে এবং দান-খয়রাতও করতে পারে। [২৫১১]