2. সালাত (নামায)
সলাতের ওয়াক্তসমূহ
বুরায়দাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁকে সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তিনি বলেন, তুমি আমাদের সাথে এই দু' দিন সালাত পড়ো। সূর্য ঢলে পরলে তিনি বিলাল (রাঃ)-কে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আযান দেন। এরঃপর তিনি তাকে একামত দেয়ার নির্দেশ দেন এবং যোহরের সালাত পড়েন। এরপর তিনি তাকে আসরের সলাতের (আযান দেয়ার) নির্দেশ দেন এবং আসরের সালাত পড়েন এবং সূর্য তখন অনেক উপরে সাদা, পরিচ্ছন্ন ও উজ্জ্বল ছিল। এরপর সূর্য অস্ত গেলে তিনি তাঁকে মাগরিবের আযান দেয়ার নির্দেশ দেন এবং মাগরিবের সালাত পড়েন। অতঃপর পশ্চিম আকাশের লাল আভা (শাফাক) অদৃশ্য হওয়ার পর তাকে ইশার সলাতের আযান দেয়ার নির্দেশ দেন এবং ইশার সালাত পড়েন। অতঃপর ফজরের ওয়াক্ত হলে তিনি তাকে আযান দেয়ার নির্দেশ দেন এবং ফজরের সালাত পড়েন। দ্বিতীয় দিন তিনি বিলাল (রাঃ)-কে আযানের নির্দেশ দিলে তিনি যোহরের আযান দেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলম্বে যোহরের সালাত পড়েন। অতঃপর তিনি আসরের সালাত পড়েন, যখন সূর্য উপরে ছিল ঠিকই, কিন্তু প্রথম দিনের তুলনায় একটু বেশি ঢলে পড়েছিল। অতপর তিনি পশ্চিম আকাশের শুভ্র আভা অদৃশ্য হওয়ার আগে মাগরিবের সালাত পড়েন। রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রম হওয়ার পর তিনি ইশার সালাত পড়েন। পূর্বাকাশ পরিষ্কার হওয়ার পর তিনি ফজরের সালাত পড়েন, অতঃপর বলেন, সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেসকারী কোথায়? লোকটি বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বলেন, তোমরা যেভাবে দেখতে পেলে তোমাদের সলাতের ওয়াক্তসমূহ তার মাঝখানে অবস্থিত। [৬৬৫] আবূ মাসঊদ (রাঃ) (ইবনু শিহাব) উমার বিন আবদুল আযীয (রহঃ) এর গদীতে বসা ছিলেন, যখন তিনি মাদীনাহ্র গভর্নর ছিলেন। উরওয়া ইবনুয-যুবায়র (রহঃ)-ও তার সাথে ছিলেন। উমার বিন আবদুল আযীয (রহঃ) আসরের সালাত আদায় করতে কিছুটা বিলম্ব করলেন। উরওয়াহ (রহঃ) তাকে বলেন, জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইমাম হিসাবে সালাত আদায় করেন। উমার (রাঃ) তাকে বলেন, হে উরওয়া! আপনি কি বলছেন, তা ভেবে দেখুন। তিনি বলেন, আমি বাশীর বিন আবূ মাসঊদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি আবূ মাসঊদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, জিবরাঈল (আঃ) নাযিল হয়ে আমার ইমামতি করলেন। এরপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম। এভাবে তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গণনা করেন। [৬৬৬]
ফজরের সলাতের ওয়াক্ত
আয়িশাহ (রাঃ) আমরা মু'মিন মহিলারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ফজরের সালাত পড়তাম। অতঃপর তারা তাদের ঘরে ফিরে যেতেন এবং আবছা অন্ধকার থাকার দরুন তাদেরকে কেউ চিনতে পারতো না। [৬৬৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): "এবং ফজরের সালাত আদায় করবে। কেননা ফজরের সালাত বিশেষভাবে উপস্থিতির সময়" (১৭ : ৭৮)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ দিন ও রাতের ফেরেশতারা উপস্থিতির হন। [৬৬৮] ইবনু উমার (রাঃ) আমি আবদুল্লাহ ইবনুয-যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে আবছা অন্ধকারে ফজরের সালাত পড়লাম। তিনি সালাম ফিরানোর পর আমি ইবনু উমার (রাঃ)-এর সামনে উপস্থিত হয়ে বললাম, এটা কোন্ ধরনের সালাত? তিনি বলেন, এটা সেই সালাত যা আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাক্র ও উমার (রাঃ)-এর সাথে পড়তাম। উমার (রাঃ)-কে আহত করার পর থেকে উসমান (রাঃ) অন্ধকার দূরীভূত হলে সালাত পড়ার ব্যবস্থা করেন। [৬৬৯] রাফি' বিন খাদীজ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা পূর্বাকাশ পরিস্কার হলে ফজরের সালাত পড়বে। কেননা তাতে রয়েছে অধিক পুরস্কার অথবা বলেছেন তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক বেশি নেকী। [৬৭০]
যোহরের সলাতের ওয়াক্ত
জাবির বিন সামুরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলে পড়ার পর যোহরের সালাত আদায় করতেন। [৬৭১] আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করতেন। [৬৭২] খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রচণ্ড গরমের অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি আমদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি। [৬৭৩] আবদুল্লাহ বিন মাসূঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রচণ্ড গরমের অভিযোগ করলাম, কিন্তু তিনি আমদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি। [৬৭৪]
প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে যোহরের সালাত ঠাণ্ডা করে পড়া
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন প্রচণ্ড গরম অনুভূত হবে, তখন তোমরা যোহরের সালাত ঠাণ্ডা করে পড়বে। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের তাপ (উত্তাপ) বিশেষ। [৬৭৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গরমের তীব্রতা বেড়ে গেলে তোমরা যোহরের সালাত ঠাণ্ডা করে (গরম কমলে) পড়ো। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ বিশেষ। সহীহ। [৬৭৬] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যোহরের সালাত ঠাণ্ডা করে পড়ো। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। [৬৭৭] মুগীরাহ বিন শুবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যোহরের সালাত দুপুরের (প্রথমভাগে) পড়তাম। তিনি আমাদের বলেন, তোমরা ঠাণ্ডা করে সালাত পড়ো। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। [৬৭৮] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যোহরের সালাত ঠাণ্ডা করে (বিলম্বে) পড়ো। [৬৭৯]
আসরের সলাতের ওয়াক্ত
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য উপরে পূর্ণ উজ্জ্বল থাকা অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাত আদায় করতো। সালাত শেষে কোন ব্যাক্তি মদীনাহ্র উপকণ্ঠে পৌঁছে যেত এবং তখনও সূর্য উপরে থাকতো। [৬৮০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ঘরে সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত থাকা অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাত পড়েন, তারপরও ছায়া বিস্তৃত হতো না। [৬৮১]
আসরের সলাতের হেফাজত করা।
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দক যুদ্ধের দিন বলেন, আল্লাহ তাদের ঘরসমূহ ও কবরসমূহ আগুন দিয়ে ভরে দিন। যেমন তারা আমাদের মধ্যবর্তী সালাত থেকে বিরত রেখেছে। [৬৮২] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার আসরের সালাত ছুটে গেল তার পরিবার-পরিজন ও ধন সম্পদ যেন ধ্বংস হয়ে গেল। [৬৮৩] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মুশরিকরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আসরের সালাত থেকে বিরত রাখলো, এমনকি সূর্য ডুবে গেল। তখন তিনি বলেন, যারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত থেকে বিরত রাখলো, আল্লাহ তাদের ঘর-বাড়িগুলো ও কবরসমূহ আগুন দিয়ে ভরে দিন। [৬৮৪]
মাগরিবের সলাতের ওয়াক্ত
রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় মাগরিবের সালাত পড়তাম, অতঃপর আমাদের কেউ ফিরে গিয়ে তার নিক্ষিপ্ত তীরের পতিত স্থান দেখতে পেত। [৬৮৫] সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সূর্যাস্তের পরপর মাগরিবের সালাত পড়েন। [৬৮৬] আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মাত যাবত বিলম্ব না করে এবং তারকারাজি চমকানোর পূর্বে মাগরিবের সালাত পড়বে, তাবত তারা ফিতরাতের উপর স্থির থাকবে। ইমাম আবূ আবদুল্লাহ ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়াকে বলতে শুনেছি, লোকেরা বাগদাদে এ হাদীস সম্পর্কে মতানৈক্যে লিপ্ত হয়। তখন আমি ও আবূ বাকর আল-আয়অন (রহঃ) আল-আওওয়াম ইবনু আব্বাস ইবনুল আওওয়াম (রহঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের সামনে তার পিতার লেখা মূল পাণ্ডুলিপি পেশ করলেন,যাতে উক্ত হাদীস বিদ্যমান ছিল। [৬৮৭]
ইশার সলাতের ওয়াক্ত
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদেরকে বিলম্বে ঈশার সালাত পড়ার নির্দেশ দিতাম। [৬৮৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে অবশ্যই ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বিত করতাম। [৬৮৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) আনাস বিন মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হাঁ। একদা তিনি ঈশার সালাত প্রায় অর্ধ-রাত পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। সালাত শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, অন্য লোক ইশার সালাত পরে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা যখন থেকে সলাতের জন্যে অপেক্ষা করছো, তখন থেকে সলাতের মধ্যে আছো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন তাঁর আংটির উজ্জলতা দেখতে পাচ্ছি। [৬৯০] আবূ সাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে মাগরিবের সালাত পড়েন, অতঃপর অর্ধ-রাত অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাইরে আসেননি। অতঃপর তিনি বের হন এবং লোকদের নিয়ে সালাত পড়েন, অতঃপর বলেন, লোকেরা সালাত পড়ে ঘুমিয়ে গেছে। আর তোমরা সলাতের জন্যে যখন থেকে অপেক্ষা করছো, তখন থেকে সালাতরত আছো। যদি দুর্বল ও রোগাক্রান্ত লোকেরা না থকতো, তাহলে আমি এ সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বিত করতাম।[৬৯১]
মেঘাচ্ছন্ন দিনে সলাতের ওয়াক্ত
বুরায়দাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করবে। কারণ যার আসরের সালাত ছুটে যায় তার আমাল বিনষ্ট হয়ে যায়। [৬৯২] তাহকীক আলবানী : (আরবি) কথাটি ছাড়া দইফ।
যে ব্যাক্তি সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেল বা সলাতের কথা ভুলে গেল
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো, এক ব্যাক্তি সলাতের কথা ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, যখনই তার স্মরণে আসবে, তখনই সে ঐ সালাত আদায় করবে। [৬৯৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি সলাতের কথা ভুলে গেলো, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেয়। [৬৯৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে সারারাত ধরে পথ চলতে থাকেন। অবশেষে তিনি ঘুমে কাতর হয়ে বিশ্রামের জন্য এক স্থানে অবতরণ করেন এবং বিলাল (রাঃ) কে বলেন, তুমি আমাদের জন্য রাতের হেফাজত করবে। অতএব বিলাল (রাঃ) তার সাধ্যমত সালাত আদায় করতে থাকেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগন ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের সময় নিকটবর্তী হলে বিলাল (রাঃ) তাঁর সওয়ারীর শিবিকার সাথে হেলান দিয়ে পূর্ব আকাশের দিকে মুখ করে বসলেন। শিবিকার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বিলাল (রাঃ) ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের কেউই ঘুম থেকে জাগতে পারেননি, যাবত না তাদের উপর সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লো। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন, হে বিলাল! বিলাল (রাঃ) বলেন, হে আল্লহর রসুল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। যেই সত্তা আপনার জান নিয়েছেন, তিনি আমার জানও নিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা সামনে অগ্রসর হও। অতএব তারা তাদের সওয়ারী নিয়ে আগ্রসর হন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদূ করেন এবং বিলাল (রাঃ) কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদের নিয়ে ফজরের সালাত পড়েন। সালাত সমাপনান্তে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি সলাতের কথা ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, “আমার স্মরণে তুমি সালাত আদায় করো” (সূরাহ তহাঃ ১৪)। রাবী বলেন, ইবনু শিহাব (রাঃ) তিলাওয়াত করতেনঃ (‘রা’ অক্ষরের উপর মাদ্দ সহকারে)। [৬৯৫] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সহাবীগন তাদের ঘুমে বাড়াবাড়ির কথা আলোচনা করলেন। কেউ বলেন, লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, এমনকি সূর্য উঠে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঘুমে কোন বাড়াবাড়ি নেই, বাড়াবাড়ি হয় জাগ্রত অবস্থায়। সুতরাং তোমাদের কেউ সলাতের কথা ভুলে গেলে বা তা না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে সে যেন তা স্মরণে আসার সাথে সাথে পড়ে নেয় অথবা পরদিন স্ব স্ব ওয়াক্তে পড়ে নেয়। [৬৯৬]
ওজর ও জরুরী অবস্থায় সালাতের ওয়াক্ত
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাকাআত পেলো সে আসরের সালাত পেয়ে গেলো। আর যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাকাআত পেল সে ফজরের সালাত পেয়ে গেলো। [৬৯৭] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রাকাআত পেলো, সে ফজরের সালাত পেয়ে গেলো। আর যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকাআত পেল, সে আসরের সালাত পেয়ে গেলো। [৬৯৮] ২/৭০০(১). আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ........................ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [৬৯৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং ঐ সালাতের পর কথাবার্তা বলা
আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত বিলম্বে পড়তে পছন্দ করতেন। তিনি ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং ঐ সালাতের পর কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। [৬৯৯] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমাননি এবং তার পর নৈশ আলাপ করেননি। [৭০০] আবদুল্লাহ বিন মাসুঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতের পর আমাদের নৈশ আলাপ নিষেধ করতেন অর্থাৎ কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। [৭০১]
ইশার সালাতকে আতামার সালাত বলা নিষেধ
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের সালাতের নামকরণের ব্যাপারে বেদুঈনরা যেন তোমাদের উপর প্রভাব বিস্তার না করে। কেননা এটা হলো ইশা। এ সময় তারা উটের দুধ দোহন করে। [৭০২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বেদুঈনরা যেন তোমাদের সালাতের নামকরণের ব্যাপারে তোমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। বিন হারমালার রিওয়ায়াতে আরো আছেঃ এটা হলো ইশা। লোকেরা অন্ধকারে উটের দুধ দোহন করায় একে আতামা বলে। হাসান সহীহ। [৭০৩]