20. হদ্দ (দণ্ড)
তিনটি কারণ ব্যতীত কোন মুসলমানের রক্তপাত বৈধ নয়
উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) তিনি (ছাদের) উপর থেকে বিদ্রোহীদের প্রতি তাকালেন। হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনে তিনি বললেনঃ তারা আমাকে হত্যার সংকল্প করছে। কেন তারা আমাকে হত্যা করবে? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তিনটি কারণের কোন একটি বিদ্যমান না থাকলে কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়। বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করলে, তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা অথবা যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অথবা যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে যায়। আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগেও কখনো যেনা করিনি এবং ইসলামী যুগেও না, আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করিনি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে মুরতাদ হইনি। [২৫৩৩] আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ তার রক্তপাত বৈধ নয়। কিন্তু তিন শ্রেণীর লোক হত্যার যোগ্যঃ জানের (হত্যার) বদলে জান (হত্যা), বিবাহিত যেনাকারী এবং মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে দ্বীন ত্যাগকারী। [২৫৩৪]
যে ব্যক্তি নিজের দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে (মুসলমান) ব্যক্তি নিজের দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে তোমরা হত্যা করো। [২৫৩৫] মুআবিয়াহ বিন হায়দাহ বিন মুআবিয়াহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তার কোন আমলই গ্রহণ করেন না, যাবত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলমানের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে। [২৫৩৬]
হদ্দ কার্যকর করা
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত হাদ্দসমূহের মধ্য থেকে কোন হাদ্দ কার্যকর করা, চল্লিশ রাত মহান আল্লাহর কোন জনপদে বৃষ্টিপাত হওয়ার চেয়ে উত্তম। [২৫৩৭] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন জনপদে একটি হদ্দ কার্যকর করা সেই জনপদে চল্লিশ দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার তুলনায় উত্তম। [২৫৩৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি কুরআনের একটি আয়াতও অস্বীকার করে তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি বলে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল,” তার উপর হদ্দ কার্যকর করার কোন পথ থাকে না। কিন্তু সে হদ্দযোগ্য অপরাধ করলে তা তার উপর কার্যকর হবে। [২৫৩৯] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কাছের ও দুরের সকলের উপর আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দ কার্যকর করো। আল্লাহর কাজে কোন সমালোচকের সমালোচনা যেন তোমাদের বিব্রত না করে। [২৫৪০]
যার উপর হদ্দ কার্যকর করা আবশ্যিক নয়
আতিয়্যাহ আল-কুরাযী (রাঃ) বনু কুরায়জাকে হত্যার দিন আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উপস্থিত করা হলো। যার (লজ্জাস্থানের) লোম গজিয়েছিল, তাকে হত্যা করা হলো এবং যার লোম গজায়নি তাকে রেহাই দেয়া হলো। আমি ছিলাম লোম না গজানোদের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমাকে রেহাই দেয়া হয়। [২৫৪১] আতিয়্যাহ আল-কুরাযী (রাঃ) তখন থেকেই আমি তোমাদের সামনে আছি। [২৫৪২] ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উপস্থিত করা হলো, তখন আমি চৌদ্দ বছরের তরুণ। তিনি আমাকে (জিহাদে শরীক হতে) অনুমতি দেননি। পরে খন্দকের যুদ্ধের দিন আমাকে তাঁর সামনে পেশ করা হয়। তখন আমি পনের বছরের তরুন। তিনি আমাকে (যুদ্ধে যোগদানের) অনুমতি দেন। নাফে’ (রাঃ) বলেন, আমি এ হাদীস উমার বিন আব্দুল আযিয (রাঃ) এর খেলাফত আমলে তার নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, এটাই নাবালেগ ও বালেগের মধ্যে পার্থক্যবিন্দু। [২৫৪৩]
মুমিন ব্যক্তির দোষ গোপন রাখা এবং সন্দেহের ভিত্তিতে হদ্দ মওকুফ করা
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। [২৫৪৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হদ্দ প্রতিরোধ করবে, যাবত তা প্রতিরোধের কোন অজুহাত পাও। [২৫৪৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুপ্ত (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। [২৫৪৬]
হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ
আয়িশাহ (রাঃ) মাখযূম গোত্রের এক নারী চুরি করে ধরা পড়লে তার বিষয়টি কুরায়শদেরকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। তারা বলাবলি করলো, বিষয়টি নিয়ে কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে কথা বলতে পারে? তারা বলাবলি করলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রিয়পাত্র উসামা বিন যায়েদ ছাড়া আর কেউ এমন দুঃসাহস করতে পারবে না। অতঃপর উসামা (রাঃ) তাঁর সঙ্গে বিষয়টি বিয়ে আলাপ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো? অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং বলেনঃ হে জনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ কারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং কোন দুর্বল অসহায় ব্যক্তি চুরি করলে তাকে শাস্তি দিতো। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাতও কেটে দিতাম। রাবী মুহাম্মাদ বিন রুম্হ (রাঃ) বলেন, আমি লায়স ইবনু সা‘দকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা তাকে (হযরত ফাতিমাকে) চুরি করা থেকে হেফাযত করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানেরই এরূপ বলা উচিত। [২৫৪৭] মাসঊদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) সেই নারী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘর থেকে সেই চাদরটি চুরি করলে তা আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। সে ছিল কুরায়শ বংশীয়া। অতঃপর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে এলাম। আমরা বললাম, আমরা তার পক্ষ থেকে চল্লিশ উকিয়া ফিদ্য়া দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে পবিত্র হোক, এটাই তার জন্য উত্তম। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নরম সুর শুনে উসামার কাছে এসে বললাম, তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে আলোচনা করো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিস্থিতি আঁচ করে খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আমার কাছে আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো, যা তাঁর কোন এক বান্দীর উপর প্রযোজ্য হচ্ছে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যদি আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমাও ঐ নারীর স্তরে উপনীত হতো, তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ তার হাত কেটে দিতো। [২৫৪৮]
যেনার হদ্দ
আবদুল্লাহ শিবলি (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলেছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো। লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে, আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে এক বছরের নির্বাচনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম করেন। [২৫৪৯] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে (দ্বীনের বিধান) শিখে নাও। আল্লাহ তাদের (মহিলাদের জন্য একটি পথ করে দিয়েছেন। যদি অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত এবং রজম করতে হবে। [২৫৫০]
কেউ নিজ স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করলে
নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) (হাবীব বিন সালিম) বলেন, নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) এর নিকট এক ব্যক্তিকে হাযির করা হলো, যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করেছিল। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করবো। তিনি বলেন, যদি তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীকে তার জন্য হালাল করে দিয়ে থাকে, তবে এ যেনাকারীকে একশত বেত্রাঘাত করবো। আর যদি তার স্ত্রী তাকে অনুমতি না দিয়ে থাকে, তবে তাকে আমি রজম করবো। [২৫৫১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তা‘লীক ইবনু মাজাহ। সালামাহ ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলো যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যেনা করেছিল। তিনি তার উপর হদ্দ কার্যকর করেননি। [২৫৫২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তা’লীক ইবনু মাজাহ।
রজম করা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ বলে বসবে, আমি আল্লাহর কিতাবে রজমের কথা পাচ্ছি না। ফলে সে আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্যকার একটি ফরয ত্যাগ করার কারণে পথভ্রষ্ট হবে। সাবধান! রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা বাধ্যতামূলক- অপরাধী বিবাহিত হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা গর্ভসঞ্চার হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে। অতঃপর আমি রজমের এ আয়াত পাঠ করিঃ “বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যেনায় লিপ্ত হলে তোমরা তাদের উভয়কে রজম করো”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজম করেছেন এবং তাঁর পরে আমরাও রজম করেছি। [২৫৫৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) মাইয বিন মালিক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললোঃ আমি যেনা করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আবার সে বললো, আমি যেনা করেছি। তিনি এবারও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবার বললো, আমি যেনা করেছি। এবারও তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে আবার বললো, আমি যেনা করেছি। তিনি তার থেকে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এমনিভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি করলো। অতঃপর তিনি তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তার দেহে পাথর নিক্ষিপ্ত হতে থাকলে সে দ্রুত পালাতে তৎপর হলো। এক ব্যক্তি তার নাগাল পেয়ে গেলো। তার হাতে ছিল উটের চোয়ালের হাড়। সে তাকে আঘাত করে ভূপাতিত করলো। তার গায়ে পাথর নিক্ষিপ্ত হওয়ায় তার পলায়নের কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা কেন তাকে ছেড়ে দিলে না। [২৫৫৪] ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) এক নারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে যেনার স্বীকারোক্তি করলো। তিনি তার দেহে তার পরিধেয় বস্ত্র শক্ত করে পেঁচিয়ে তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। [২৫৫৫]
ইহূদী পুরুষ ও নারীকে রজম করা
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ইয়াহূদীকে রজম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমিও রজমকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমি পুরুষ লোকটিকে দেখেছি যে, সে নারীটিকে পাথর থেকে আড়াল করছে। [২৫৫৬] জাবীর বিন সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজোড়া ইহূদী নারী-পুরুষকে রজম করেছিলেন। [২৫৫৭] বারা’ বিন আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ইহূদীকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যার মুখে কালি মাখিয়ে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি তোমাদের কিতাবে যেনাকারীর এরূপ শাস্তি পেয়েছো? তারা বললো, হাঁ। তিনি তাদের আলেমদের মধ্যকার একজনকে ডেকে বলেনঃ আমি তোমাকে সেই সত্তার শপথ দিয়ে বলছি যিনি মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তিই পেয়েছো? সে বললো, না। আপনি যদি আমাকে শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস না করতেন তবে আমি আপনাকে এ কথা বলতাম না। আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি পেয়েছি রজম করা। কিন্তু আমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে রজমের (যেনার) অপরাধ বেড়ে গেলো। এমতাবস্থায় আমরা সম্ভ্রান্ত লোককে (এ অপরাধে) গ্রেপ্তার করলে তাকে ছেড়ে দিতাম এবং আমাদের দুর্বল ও অসহায় লোককে (একইরূপ অপরাধে) গ্রেপ্তার করলে তার উপর হদ্দ কার্যকর করতাম। (এক পর্যায়ে) আমরা বললাম এসো আমরা একটা বিষয়ে একমত হই, যা আমরা সম্ভ্রান্ত ও দুর্বল সকলের উপর কার্যকর করতে পারি। তখন থেকে আমরা (শাস্তি লাঘব করে) রজমের পরিবর্তে মুখমন্ডলে কালি মেখে বেত্রাঘাতের শাস্তি কার্যকর করতে একমত হই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তাদের ধ্বংস করা তোমার হুকুমকে জীবিত করেছে। অতঃপর তাঁর নির্দেশে ঐ ইহূদীকে রজম করা হয়। [২৫৫৮]
যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অশ্লীল কর্ম (যেনা) করে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া রজম করতাম, তবে অবশ্যই অমুক নারীকে রজম করতাম। কেননা তার কথাবার্তায় ও দৈহিক বেশভূষায় এবং যারা তার কাছে যাতায়াত করে তাদের থেকে অশ্লীলতা প্রকাশ পেয়েছে। [২৫৫৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) দু’ লিআনকারীর কথা উল্লেখ করলেন। ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) তাকে বললেন, এই সেই নারী যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই রজম করতাম, তবে অবশ্যই তাকে রজম করতাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সেই নারী তো প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করেছে। [২৫৬০]
যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয় তাকে হত্যা করো। [২৫৬১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো। [২৫৬২] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা করি। [২৫৬৩]
যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে যৌনাচার করে
ইবনু আব্বাস (রা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকেও হত্যা করো এবং পশুটিও হত্যা করো। [২৫৬৪] তাহকীক আলবানীঃ ২য় অংশ ব্যতীত দঈফ কারণ, ২য় অংশটি সহীহ।
ক্রীতদাসীর উপর হদ্দ কার্যকর করা
শিবলি (মাকবূল) (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে অবিবাহিত ক্রীতদাসীর যেনায় লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে বেত্রাঘাত করো। যদি সে পুনরায় যেনা করে তবে আবার তাকে বেত্রাঘাত করো। তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। [২৫৬৫] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ক্রীতদাসী যেনায় লিপ্ত হলে তাকে বেত্রাঘাত করো। সে আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবার তাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো। অতঃপর একটি রাশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। [২৫৬৬]
যেনার মিথ্যা অপবাদ (কায্ফ) আরোপের শাস্তি
আয়িশাহ (রাঃ) আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত মিথ্যা অপবাদ খণ্ডন করে কুরআনের আয়াত নাযিল হলে পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বিষয়টি উল্লেখ করে কুরআন (সেই আয়াত) তিলাওয়াত করেন, অতঃপর মিম্বার থেকে অবতরন করে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাদের উপর হদ্দ কার্যকর করা হয়। [২৫৬৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে “হে মুখান্নাস”(নপুংসক) বললে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো এবং কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে “হে লূতী”(সমকামী) বললে তাকেও বিশটি বেত্রাঘাত করো। [২৫৬৮]
মদ্যপের শাস্তি
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) মদ্যপ ব্যাতীত অপর কোন অপরাধী আমার নির্দেশে হদ্দ কার্যকর করার কারণে নিহত হলে আমি তার দিয়াত পরিশোধ করবো না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ্যপের হদ্দ নির্ধারণ করেন নি। আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে মদ্যপের হদ্দ নির্ধারণ করেছি (তাই তার দিয়াত পরিশোধ করবো)। [২৫৬৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ্যপকে জুতা ও লাঠি দ্বারা প্রহার করতেন। [২৫৭০] আলী (রাঃ) (হুদায়ন ইবনুল মুনযির) বলেন, ওয়ালিদ বিন উকবাকে উসমান (রাঃ)-এর আদালতে আনা হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে তার (মদ্যপানের) অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি ‘আলী (রাঃ) কে বলেন, এই নিন আপনার চাচাতো ভাইকে এবং তার উপর হদ্দ কার্যকর করুন। ‘আলী (রাঃ) তাকে বেত্রাঘাত করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মদ্যপকে) চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন, আবূ বকর (রাঃ) ও চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন এবং উমার (রাঃ) আশি বেত্রাঘাত করেছেন। এ সবই সুন্নাত। [২৫৭১]
কোন ব্যাক্তি বারবার মাদক সেবনে লিপ্ত হলে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ মাদক গ্রহণ করলে তাকে বেত্রাঘাত করো, সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করলে তাকে বেত্রাঘাত করো, সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করলে তাকে বেত্রাঘাত করো। চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ সে পুনরায় মাদক গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করো। [২৫৭২] মুআবিয়া বিন আবূ সুফইয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লোকেরা মদপান করলে তোমরা তাদেরকে বেত্রাঘাত করো, পুনরায় মদ পান করলে তাদেরকে বেত্রাঘাত করো, আবার মদপান করলে আবার তাদেরকে বেত্রাঘাত করো, পুনরায় (চতুর্থবার) মদপান করলে তাদেরকে হত্যা করো। [২৫৭৩]
বৃদ্ধ ও রোগীর উপর হদ্দ আবশ্যিকভাবে কার্যকর করা
সাদ‘ বিন উবাদাহ (রাঃ) (সাঈদ বিন সা‘দ) বলেন, আমাদের বাড়িতে একটি বিকলাঙ্গ ও দুর্বল লোক বাস করতো। লোকেরা তার ব্যাপারে কোন আশঙ্কা করতো না। কিন্তু একদা বাড়ির এক ক্রীতদাসীর সাথে সে যেনায় লিপ্ত হলে লোকেরা তাজ্জব বনে যায়। সাদ বিন উবাদা (রাঃ) তার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পেশ করলেন। তিনি বলেনঃ তাকে এক শত বেত্রাঘাত করো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর নবী! সে এ শাস্তি সহ্য করতে (স্বাস্থ্যগতভাবে) দুর্বল (অক্ষম)। তাকে যদি আমরা এক শত বেত্রাঘাত করি তবে সে মারা যেতে পারে। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা একশত শাখাবিশিষ্ট একটি গাছের ডাল লও এবং তা দ্বারা তাকে একবার প্রহার করো। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো:] ২/২৫৭৪(১). <সুফইয়ান বিন ওয়াকী‘><আল-মুহারিবী><মুহাম্মাদ বিন ইসহাক (তিনি সত্যবাদী তবে হাদীস বর্ণনায় তাদলীস করেন, তার শীয়া ও কাদারিয়া মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে)><ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ><আবূ উমামাহ বিন সাহল><সা‘দ বিন উবাদাহ (রাঃ)> [২৫৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যে ব্যাক্তি (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) অস্ত্র ধারন করে
আবূ হুরায়ারাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [২৫৭৫] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [২৫৭৬] আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
যে ব্যাক্তি রাহাজানি ও লুটতরাজ করে এবং জনজীবনে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে
আনাস বিন মালিক (রাঃ) উরায়নাহ গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে (মদীনায়) আগমন করে। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল হলো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যদি আমাদের উটের চারণভূমিতে যেতে এবং তার দুধ ও পেশাব পান করতে (তাহলে হয়তো নিরাময় লাভ করতে)। তারা তাই করলো (এবং রোগমুক্ত হলো)। অতঃপর তারা দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করলো (মুরতাদ হয়ে গেল), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাখালকে হত্যা করলো এবং তাঁর উটের পাল লুট করে নিয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদের পিছু ধাওয়া করতে লোক পাঠালেন। তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে এবং তাদের চোখে লৌহ শলাকা বিদ্ধ করে তাদেরকে উত্তপ্ত বালুর উপর ফেলে রাখলেন। অবশেষে তারা মারা গেলো। [২৫৭৮] আয়িশাহ (রাঃ) এক সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উটের পাল লুট করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হাত-পা কেটে দিলেন এবং তাদের চোখে লৌহ শলাকা বিদ্ধ করলেন। [২৫৭৯]
যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
সাঈদ বিন আমর বিন নুফায়ল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি নিজের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। [২৫৮০] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির ধন-সম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়। [২৫৮১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কারো ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করার চেষ্টা করা হলে এবং সে তা রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়। [২৫৮২]
চোরের শাস্তি
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোরের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত, ডিম চুরি করার অপরাধে যার হাত কাটা যায় এবং রশি চুরি করার অপরাধে যার হাত কাটা যায়। [২৫৮৩] ইবনু উমার (রাঃ) তিন দিরহাম মুল্যের একটা ঢাল চুরির অপরাধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত কাটার নির্দেশ দেন। [২৫৮৪] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সিকি দীনার অথবা তার অধিক পরিমাণ ছাড়া (চোরের) হাত কাটা যাবে না। [২৫৮৫] সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একটি ঢালের সম-পরিমাণ চুরির বেলায় চোরের হাত কাটা হবে। [২৫৮৬]
কর্তিত হাত কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া
ফাদালাহ বিন উবায়দ (রাঃ) (ইবনু মুহায়রিয) বলেন, আমি ফাদালাহ বিন উবায়দ (রাঃ) কে কর্তিত হাত কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এটাই নিয়ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির হাত কেটে তা তার কাঁধের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। [২৫৮৭]
চোর স্বীকারোক্তি করলে
সা‘লাবাহ আল-আনসারী (রাঃ) ‘আমর বিন সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি অমুক গোত্রের একটি উট চুরি করেছি। অতএব আমাকে পবিত্র করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই গোত্রের নিকট লোক পাঠালে তারা বললো, আমরা আমাদের একটি উট হারিয়েছি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলে তার হাত কর্তন করা হয়। ছালাবা (রাঃ) বলেন, আমি লক্ষ্য করছিলাম, যখন তার হাতটি (কেটে) পড়ে গেলো তখন সে বললো, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমার থেকে আমাকে পবিত্র করেছেন। তুমি আমার দেহটাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে চেয়েছিলে। [২৫৮৮]
ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করলে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করলে বিশ দিরহামের বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। [২৫৮৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) যুদ্ধলব্ধ মাল (গানীমাত) থেকে প্রাপ্ত একটি যুদ্ধবন্দী দাস যুদ্ধলব্ধ মালের রাষ্ট্রের প্রাপ্য অংশ থেকে চুরি করলে তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পেশ করা হলো। কিন্তু তিনি তার হাত কর্তনের নির্দেশ দেননি। তিনি বলেনঃ মহামহিম আল্লাহর সম্পদের একাংশ অপরাংশ চুরি করেছে। [২৫৯০]
আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারী
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মসাৎকারী, লুণ্ঠনকারী ও ছিনতাইকারীর হাত কর্তন করা হবে না। [২৫৯১] আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ছিনতাইকারীর হাত কর্তন করা যাবে না। [২৫৯২]
ফল ও গাছের মাথি চুরির অপরাধে হাত কর্তন করা যাবে না
রাফি‘ বিন খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফল ও মাথি (নারিকেল, খেজুর, তাল ইত্যাদি গাছের মাথার মূল কচি অংশ) চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। [২৫৯৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফল ও মাথি চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। [২৫৯৪]
যে ব্যক্তি সুরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করে
সাফওয়ান বিন আবূ উমায়্যাহ (রাঃ) তিনি নিজের চাদরকে বালিশবৎ বানিয়ে তা মাথার নিচে রেখে মসজিদে ঘুমিয়েছিলেন। চোর তার মাথার নিচ থেকে তা চুরি করল। তিনি তাকে গ্রেপ্তার করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো এটা চাইনি! আমার চাদর আমি তাকে দান করলাম। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তাকে আমার কাছে আনার আগে কেন তা করলে না? [২৫৯৫] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) মুযায়না গোত্রের এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ফল (চুরির অপরাধ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলেনঃ (গাছের মাথার) গুচ্ছ থেকে নিলে তার মূল্য এবং তার সাথে তার সমপরিমান দিতে হবে। আর খলিয়ান থেকে নিলে এবং তার মূল্য একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমান হলে হাত কাটা যাবে। আর যদি শুধু খায়, নিয়ে না যায় তবে তার উপর কিছুই (জরিমানা) ধার্য হবে না। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চারণভূমি থেকে বকরী নিয়ে গেলে? তিনি বলেনঃ তার মূল্য ও সাথে সমপরিমান দিতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হবে। আর বাথান থেকে চুরি করলে তার মূল্য যদি একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমান হয় তবে হাত কাটা যাবে। [২৫৯৬]
চোরকে তালকীন দেয়া
আবূ উমায়্যাহ (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক চোরকে উপস্থিত করা হলে সে তার অপরাধের স্বীকারোক্তি করলো। কিন্তু তার কাছে চুরিকৃত মাল পাওয়া গেলো না। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বললো, হাঁ (চুরি করেছি)। তিনি আবার বললেনঃ মনে হয় তুমি চুরি করোনি। সে বললো, হাঁ (চুরি করেছি)। অতঃপর তিনি হুকুম দিলে তার হাত কেটে দেয়া হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (লোকটিকে) বললেনঃ তুমি বলো, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে তওবা করছি। সে বললোঃ “আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে তওবা করছি”। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল করো”। তিনি দু’বার একথা বলেন। [২৫৯৭]
বল প্রয়োগে যাকে কিছু করতে বাধ্য করা হয়
ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কোনরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষণকারীকে হদ্দের শাস্তি দেন। তিনি মহিলার জন্য মোহরের ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা তা রাবী উল্লেখ করেননি। [২৫৯৮]
মসজিদে হদ্দ কার্যকর করা নিষেধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মসজিদের মধ্যে হদ্দ কার্যকর করা যাবে না। [২৫৯৯] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের মধ্যে হদ্দ কার্যকর করতে নিষেধ করেছেন। [২৬০০]
তা‘যীর প্রসঙ্গ
আবূ বুরদাহ বিন নিয়ার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধ ব্যতীত অপর কোন অপরাধে অপরাধীকে দশের অধিক বেত্রাঘাত করা যাবে না। [২৬০১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমারা দশটি বেত্রাঘাতের অধিক তা‘যীর (শাস্তি) নির্ধারণ করো না। [২৬০২]
হদ্দ (শাস্তি) হলো (গুনাহের) কাফফারা
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে, অতঃপর সে যত সত্বর শাস্তি ভোগ করে, সেটাই তার অপরাধের কাফফারা অন্যথায় তার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ হয়। [২৬০৩] ‘আলী (রাঃ) রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন পাপ করার পর সেজন্য শাস্তি ভোগ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বান্দাকে পুনর্বার (একই অপরাধের) শাস্তি দেয়ার বিষয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ। কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে পাপকাজ করার পর আল্লাহ তা গোপন করে রাখলেন। আল্লাহ যা উপেক্ষা করেছেন তার জন্য পুনরায় গ্রেফতার করার ব্যাপারে অধিক দয়াপরবশ। [২৬০৪]
কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে বেগানা পুরুষ লোককে পেলে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) সা‘দ বিন উবাদাহ আল-আনসারী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ! কোন ব্যক্তি বেগানা পুরুষ লোককে তার স্ত্রীর সাথে (অবৈধ কাজে লিপ্ত) পেলে সে কি তাকে হত্যা করবে? রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ না। সা’দ (রাঃ) বলেন, হাঁ, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দান করে সম্মানিত করেছেন (সে তাকে অবশ্যই হত্যা করবে)। রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের নেতা যা বলেন তা শোনো। [২৬০৫] সালামাহ ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) হাদ্দ সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে তীক্ষ্ণ আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী আবূ সাবিত সাদ বিন উবাদা (রাঃ) কে বলা হলো, তোমার স্ত্রীর সাথে বেগানা কোন পুরুষ লোককে পেলে তুমি কি করবে? তিনি বলেন, আমি তাদের উভয়কে তরবারির আঘাতে হত্যা করবো। আমার দ্বারা এটা সম্ভব হবে না যে আমি এই অপকর্মের চারজন সাক্ষী তালাশ করবো এবং সাক্ষী নিয়ে আসতে আসতে সে তার অপকর্ম শেষ করবে অথবা আমি তোমাদের সামনে এসে বলবো যে, আমি এরূপ এরূপ দেখেছি এবং তোমরা আমাকে যেনার অপবাদের শাস্তি দিবে এবং আর কখনো আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। রাবী বলেন, বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ তরবারিই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট, অতঃপর তিনি বলেনঃ না (এ অনুমতি দেয়া যায় না)। আমি আশঙ্কা করছি যে, উন্মাদ ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি তাই করে বসবে। ইমাম আবূ আবদুল্লাহ ইবনু মাজা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ যুরআ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এটা হলো আলী বিন মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী বর্ণিত হাদীস, যার অংশবিশেষ আমার স্মরণ নাই। [২৬০৬]
কোন ব্যক্তি পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিবাহ করলে
আবূ বুরদাহ (রাঃ) (বারা’ বিন আযিব) বলেন, আমার মামা (আবূ বুরদাহ) আমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। অধস্তন রাবী হুশাইম তার রিওয়ায়াতে তার জন্য একটি পতাকা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এক ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তাকে হত্যা করি। [২৬০৭] মুআবিয়াহ বিন কুররাহ তার পিতা (কুররাহ বিন ইয়াস) (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার জন্য তার সমস্ত মালপত্র নিয়ে নেয়ার জন্য আমাকে পাঠান। [২৬০৮]
কোন ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে পরিচয় দিলে এবং নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বলে পরিচয় দিলে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সাথে জন্মসূত্র স্থাপন করে অথবা নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বানায়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। [২৬০৯] আবূ উসমান আন-নাহ্দী আমি সাদ (রাঃ) ও আবূ বাকরাহ (রাঃ), কে বলতে শুনেছি এবং তাদের প্রত্যেকেই বলেছেন, আমার উভয় কান শুনেছে এবং আমার অন্তর মুখস্থ রেখেছে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য লোককে বাপ বলে পরিচয় দেয়, জান্নাত তার জন্য হারাম। [২৬১০] আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচ শত বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে। [২৬১১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তবে ৭০ বছরের হাদীসটি মাহফুয।
কেউ কাউকে নিজের গোত্র থেকে খারিজ করলে
আশআস বিন কায়স (রাঃ) আমি কিনদাহ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তারা (কিনদা গোত্র) আমাকে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনারা কি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নন? তিনি বলেন আমরা বানূ নাযর বিন কিনানার বংশধর। আমরা আমাদের মাতার প্রতি অপবাদ আরোপ করি না এবং আমাদের পিতৃপুরুষ থেকেও পৃথক হই না। রাবী বলেন, (এরপর থেকে) আশআছ বিন কায়স (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি কুরায়শ গোত্রের কোন লোককে নাযর বিন কিনানা গোত্রভুক্ত নয় বলে দাবি করবে, আমি অবশ্যই তাকে কাযাফ-এর শাস্তি দিবো। [২৬১২]
নপুংসকদের বিধান।
সাফওয়ান বিন উমায়্যাহ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত থাকতেই তাঁর নিকট আমর বিন মুররা (রাঃ) এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আমার কপালে দুর্ভাগ্য লিখে দিয়েছেন। আমি আমার হাতের এই দফ (ঢোল) বাজানো ছাড়া রিযিক প্রাপ্তির আর কোন পথ দেখি না। অতএব আপনি আমাকে নির্দোষ সংগীতের অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তোমাকে অনুমতিও দিবো না এবং তোমাকে সন্মানিত করে তোমার চোখও শীতল করবো না। হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলেছো। আল্লাহ তোমাকে পবিত্র ও হালাল রিযিক দান করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে যে হালাল রিযিক দিয়েছেন তার পরিবর্তে আল্লাহ তোমার জন্য যে রিযিক হারাম করেছেন তুমি তাই গ্রহণ করেছো। আমি যদি তোমাকে ইতোপূর্বে নিষেধ করে থাকতাম তবে অবশ্যই তোমাকে শাস্তি দিতাম। আমার এখান থেকে উঠে যাও এবং আল্লাহর নিকট তওবা করো। সাবধান! তোমাকে নিষেধ করার পরও যদি তুমি এ কাজ করো তবে আমি অবশ্যই তোমাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবো, তোমার মাথা মুণ্ডন করিয়ে বিকৃত করে দিবো, তোমার পরিবার থেকে তোমাকে নির্বাসিত করবো এবং তোমার সহায় সম্পত্তি লুণ্ঠন করা মদীনার যুবকদের জন্য হালাল করে দিবো। এ কথায় আমর উঠে দাঁড়ায় এবং নিজেকে এতোটা লাঞ্ছিত ও অপমানিত বোধ করে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সে উঠে চলে গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এইসব লোক পাপাচারী। এদের কেউ তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে নপুংসক ও বিবস্ত্র অবস্থায় উত্থিত করবেন, যেরূপ সে দুনিয়াতে ছিল। সে একটুকরা কাপড় দিয়েও মানুষের সামনে লজ্জা নিবারণ করবে না এবং যখনই সে দাঁড়াবে সাথে সাথে আছাড় খেয়ে পড়ে যাবে। [২৬১৩] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি এক নপুংসককে আবদুল্লাহ বিন আবূ উমাইয়্যার প্রতি বলতে শুনলেন, আল্লাহ যদি আগামীতে তায়েফ বিজয় দান করেন তবে আমি তোমাকে এমন এক নারীকে দেখাবো, যে চার ভাঁজে সামনে আসে এবং আট ভাঁজে পিছনে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। [২৬১৪]