23. ওয়ারিসী স্বত্ব বণ্টন

【1】

ফারায়েয শিখতে উৎসাহিত করা

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবু হুরায়রাহ! ফারায়েয শিক্ষা করো এবং (অন্যদের) তা শিক্ষা দাও। কেননা তা জ্ঞানের অর্ধেক। আর এটা ভুলিয়ে দেয়া হবে এবং এটাই প্রথম জিনিস যা আমার উম্মাত থেকে (শেষ যুগে) ছিনিয়ে নেয়া হবে। [২৭১৯] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।

【2】

ওরসজাত সন্তানের ওয়ারিসী স্বত্ব

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) সা‘দ বিন আর রাবী (রাঃ)-এর স্ত্রী সা‘দের দু’ কন্যাসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এরা দু’জন সা‘দ (রাঃ)-র কন্যা, যিনি আপনার সাথে উহুদের যুদ্ধে শরীক হয়ে শহীদ হয়েছেন। এদের পিতার পরিত্যক্ত সমস্ত মাল এদের চাচা দখল করে নিয়েছে। মেয়েদের সম্পদ না থাকলে তাদের বিবাহ দেয়া যায় না| রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে রইলেন। শেষে উত্তরাধিকার স্বত্ব সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা‘দ বিন আর রাবী‘র ভাইকে ডেকে এনে বলেনঃ সা‘দের কন্যাদ্বয়কে তার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দাও, তার স্ত্রীকে এক-অষ্টমাংশ দাও, অবশিষ্ট যা থাকে তা তুমি নাও। [২৭২০] তাহকীক আলবানীঃ হাসান আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) এক ব্যক্তি আবু মুসা আশাআরী ও সালমান বিন রাবীআ আল-বাহিলী (রাঃ)-এর কাছে এসে এক কন্যা, এক পৌত্রী ও এক সহোদর বোনের ওয়ারিসী স্বত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তারা বলেন, কন্যা পাবে অর্ধেক এবং অবশিষ্ট থাকবে তা পাবে বোন। তুমি বিন মাসউদের নিকট যাও। তিনিও হয়তো আমাদের সাথে একমত হবেন। অতঃপর লোকটি বিন মাসউদ (রাঃ)–এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো এবং তারা যা বলেছিলেন তাও তাকে অবহিত করলো। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ) বলেন, তাহলে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তভুক্ত থাকবো না। এ ব্যাপারে আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুরূপ ফায়সালাই দিবো। কন্যা পাবে অর্ধাংশ এবং পৌত্রী পাবে এক-ষষ্ঠাংশ। এভাবে উভয়ের অংশ মিলে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হবে। অবশিষ্ট যা থাকবে তা পাবে বোন। [২৭২১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【3】

দাদার ওয়ারিসী স্বত্ব

মা‘কিল বিন ইয়াসার আল-মুযানী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছি যে, একটি ফারায়েযের বিষয় উথাপিত হলো, যাতে দাদাও অন্তভুক্ত ছিল। তিনি দাদাকে এক-তৃতীয়াংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন। [২৭২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যেকার দাদাকে এক-ষষ্ঠাংশ ওয়ারিসী স্বত্ব প্রদানের নির্দেশ দিলেন। [২৭২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【4】

দাদী-নানীর ওয়ারিসীর স্বত্ব

মুগীরাহ ও মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রাঃ) এক দাদী বা নানী আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর নিকট এসে তার ওয়ারিসীর স্বত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। আবূ বকর (রাঃ) তাকে বলেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কিছু নির্ধারিত নেই। আর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসেও তোমার জন্য কিছু নির্ধারিত আছে বলে আমি জানি না। তুমি ফিরে যাও, আমি লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেই। অতঃপর তিনি লোকজনের নিকট জিজ্ঞেস করলে মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি তাকে এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন। আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি ছাড়া তোমার সাথে আরো কেউ উপস্থিত ছিল কি? তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামা আল-আনসারী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ)-র অনুরূপ একই কথা বললেন। আবূ বকর (রাঃ) তার জন্য এ হুকুম জারী করে দিলেন। এরপর উমর (রাঃ) এর নিকট এক দাদী বা নানী এসে তার ওয়ারিসীর স্বত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোন স্বত্ব নির্ধারিত নেই এবং ইতিপূর্বেকার যে ফয়সালা, তা ছিল তুমি ছাড়া ভিন্নজনের ব্যাপারে। আমি ফারায়েযে অতিরিক্ত কিছু যোগ করতে প্রস্তুত নই, বরং সেই এক-ষষ্ঠাংশই নির্ধারিত থাকবে। যদি দাদী-নানী দু’জনই একত্র হয় তবে ঐ এক-ষষ্ঠাংশ স্বত্ব তোমাদের দু’জনের মধ্যে সমানভাবে বন্টিত হবে। আর তোমাদের দু’জনের মধ্যে যদি একজন জীবিত থাকে সে একাই এই স্বত্ব পাবে। [২৭২৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দাদীকে এক-ষষ্ঠাংশ ওয়ারিসী স্বত্ব দিয়েছেন। [২৭২৫] তাহকীক আলবানীঃ সানাদ দঈফ।

【5】

কালালা (পিতৃ-মাতৃহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি)

উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জুমুআর দিন তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতে দাঁড়ালেন এবং খুতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি আমার পরে কালালার চেয়ে গুরুতর কোন বিষয় রেখে যাচ্ছিনা। বিষয়টি সম্পর্কে আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এতো কঠোর জবাব দেন যে, অন্য কোন বিষয়ে ততো কঠোর জবাব আমাকে দেননি। এমনকি তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে আমার উভয় পার্শ্বদেশে অথবা আমার বুকে খোঁচা মারেন, অতঃপর বললেনঃ হে উমর! তোমার জন্য গ্রীষ্মকালে নাযিলকৃত সুরা নিসার শেষ ভাগের আয়াতটিই (৪:১৭৬) যথেষ্ট। [২৭২৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), তিনটি বিষয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিলে তা আমার জন্য দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সব কিছুর চেয়ে প্রিয়তর হতো। তা হলঃ কালালা, সুদ এবং খিলাফত। [২৭২৭] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে পদব্রজে আমাকে দেখতে এলেন। আমি বেহুঁশ হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন, অতঃপর তাঁর উযুর পানি আমার গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। (হুঁশ ফিরে এলে) আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আমার সম্পদের ব্যাপারে কী করবো, আমি এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিবো? শেষভাগে মীরাছের আয়াত নাযিল হলো (অনুবাদ): “লোকে তোমার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়। বলো, পিতৃ-মাতৃহীন নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে এবং তার এক বোন থাকলে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ এবং সে (বোন) নিঃসন্তান হলে তার ভাই তার ওয়ারিস হবে। আর দু’বোন থাকলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ তাদের প্রাপ্য। আর ভাই-বোন থাকলে এক পুরুষের অংশ দু’নারীর অংশের সমান। তোমরা যাতে পথভ্রষ্ট না হও সেজন্য আল্লাহ তোমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত” (সুরা নিসাঃ ১৭৬) [২৭২৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【6】

মুসলমান ব্যক্তি মুশরিক ব্যক্তির ওয়ারিস হলে

উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুসলমান ব্যক্তি কাফের ব্যক্তির ওয়ারিস হবে না এবং কাফেরও মুসলমানের ওয়ারিস হবে না। [২৭২৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি মক্কায় আপনার বাড়িতে অবস্থান করবেন? তিনি বলেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘর-বাড়ি বা ঠিকানা অবশিষ্ট রেখেছে? (রাবী বলেন,) আকীল ও তালিবই আবু তালিবের ওয়ারিস হয়েছিল এবং জাফর ও আলী (রাঃ) তার ওয়ারিস হননি। কেননা তারা দু’জন তখন (আবু তালিবের মৃত্যুর সময়) মুসলমান ছিলো। আর আকীল ও তালিব ছিল কাফের (আকীল পরে মুসলমান হন)। এ কারনেই উমর (রাঃ) বলেতেন, কোন মুমিন কোন কাফেরের ওয়ারিস হবে না। উসামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমান কাফেরের ওয়ারিস হবেনা এবং কাফেরও মুসলমানের ওয়ারিস হবেনা। [২৭৩০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’ ভিন্ন ধর্মের লোক পরস্পরের ওয়ারিস হবে না। [২৭৩১] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【7】

ওয়ালাআর উত্তরাধিকার স্বত্ব

উমর (রাঃ) রাবাব বিন হুযায়ফাহ বিন সাঈদ বিন সাহম (রহঃ) উম্মু ওয়াইল বিনতু মা‘মার আল-জুমাহিয়্যাকে বিবাহ করেন। তার গর্ভে তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তাদের মা মারা গেলে তার ওয়ারিসী সূত্রে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি ও তার মুক্ত দাসদের ওয়ালাআর মালিক হয়। অতঃপর ‘আমর ইবনুল আ‘স (রাঃ) তাদেরকে সিরিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে তারা আমওয়াস নামক মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অতঃপর ‘আমর (রাঃ) তাদের ওয়ারিস হন। তিনি ছিলেন তাদের আসাবা। ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) ফিরে এলে মা‘মারের পুত্ররা এসে তাদের বোনের ওয়ালাআর দাবিদার হয়ে উমর (রাঃ)-এর নিকট মামলা দায়ের করে। উমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যা শুনেছি তদনুযায়ী তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবো। আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ পুত্র ও পিতা (ওয়ালাআ সূত্রে) যা পেয়েছে তা তার আসাবাগনের প্রাপ্য। রাবী বলেন, অতএব তিনি এ সম্পর্কে আমাদের অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং আমাদেরকে একখানা পত্র লিখে দিলেন যাতে আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ), যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) ও আরো একজন সাক্ষী হয়েছিলেন। এরপর আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের খেলাফতকালে উম্মু ওয়াইলের এক মুক্ত দাস দু’ হাজার দীনার রেখে মারা গেলো। আমি অবহিত হলাম যে, পূর্বের সেই ফয়সালা পরিবর্তন করা হয়েছে। অতএব তারা হিশাম বিন ইসমাঈলের নিকট অভিযোগ দায়ের করলে তিনি আমাদেরকে আব্দুল মালেকের নিকট পাঠান। আমরা তার কাছে উমর (রাঃ) এর পত্রসহ উপস্থিত হলাম। তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে, এই সুস্পষ্ট ফয়সালা নিয়েও লোকজন বিবাদ করবে। আমার ধারনা ছিল না যে, মদীনাবাসীদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যে, তারা এই ফয়সালা নিয়ে সন্দেহ করবে। অতএব তিনি এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষে রায় দিলেন এবং এরপর থেকে আমরা এ সম্পত্তি ওয়ারিসী সূত্রে ভোগদখল করে আসছি। [২৭৩২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি মুক্ত দাস খেজুর গাছ থেকে পড়ে মারা যায়। তার কিছু সম্পদও ছিল, কিন্ত কোন সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি তার গ্রামের কোন লোককে দান করো। [২৭৩৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হামযাহ (রা:)-র কন্যা উমামাহ (রাঃ) আমার এক মুক্ত দাস একটি কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিত্যক্ত সম্পদ আমার ও তার সেই কন্যার মধ্যে বণ্টন করেন। তিনি আমাকে দিলেন অর্ধেক এবং তাঁকে দিলেন অর্ধেক। [২৭৩৪] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【8】

হত্যাকারীর উত্তরাধিকার স্বত্ব

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হত্যাকারী ওয়ারিস হবেনা (উত্তরাধিকার স্বত্ব পাবে না)। [২৭৩৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন দাঁড়িয়ে বলেনঃ স্ত্রী তার স্বামীর দিয়াত ও পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিস হবে এবং স্বামী স্ত্রীর দিয়াত ও পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিস হবে, যদি না একজন অপরজনকে হত্যা করে। তাদের একজন অপরজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে সে তার দিয়াত ও সম্পদ কিছুরই ওয়ারিস হবে না। অবশ্য একজন অপরজনকে ভুলবশত হত্যা করলে তার সম্পদের ওয়ারিস হবে কিন্ত দিয়াতের ওয়ারিস হবে না। [২৭৩৬] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【9】

যাবিল আরহাম

আবূ উমামাহ বিন সাহল বিন হুনায়ফ (রাঃ) এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তিকে তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করলো। নিহতের এক মামা ছাড়া আর কোনো ওয়ারিস ছিলো না। আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ(রাঃ) বিষয়টি নিয়ে উমর(রাঃ) কে পত্র লিখেন। উমর(রাঃ) তাকে লিখে জানান যে, নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কোনো অভিভাবক নেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই তার অভিভাবক এবং যার কোনো ওয়ারিস নেই মামাই তার ওয়ারিস। [২৭৩৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। মিকদাম আবু কারীমাহ (রাঃ) রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যাক্তি সম্পদ রেখে গেলে তা তার ওয়ারিসদের প্রাপ্য। আর কোনো ব্যাক্তি ঋণের বোঝা বা অসহায় সন্তান রেখে গেলে সেগুলোর দায়িত্ব আমাদের উপর। তিনি কখনো বলতেনঃ তার দায়িত্ব আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর। যার কোনো ওয়ারিস নেই আমিই তার ওয়ারিস। আমিই তার পক্ষ থেকে দিয়াত পরিশোধ করবো এবং আমিই তার পরিত্যক্ত মাল গ্রহণ করবো। আর যার অন্য কোনো ওয়ারিস নেই মামাই তার ওয়ারিস। সে তার পক্ষ থেকে দিয়াত পরিশোধ করবে এবং তার পরিত্যাক্ত মাল গ্রহণ করবে। [২৭৩৮] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【10】

আসাবার মীরাস

আলী বিন আবু তালিব(রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দিয়েছেনঃ একই মায়ের সন্তানেরা পরস্পরের ওয়ারিস হবে, বৈমাত্রেয় ভাইগণ নয়। মানুষ তার সহোদর ভাই-বোনের ওয়ারিস হবে, বৈমাত্রেয় ভাই-বোনের নয়। [২৭৩৯] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু আব্বাস(রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যাবিল ফরুদের মধ্যে মৃতের সম্পদ বন্টন করো আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী। তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ তাদেরকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা (মৃতের) সবচেয়ে নিকটতম পুরুষ আত্মীয় পাবে। [২৭৪০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【11】

যার কোনো ওয়ারিস নেই

ইবনু আব্বাস(রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যাক্তি মারা গেলো এবং তার একটি মুক্ত দাস ছাড়া আর কোনো ওয়ারিস রেখে যায়নি। নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিতাক্ত সম্পত্তি সেই মুক্ত দাসকে দেন। [২৭৪১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।

【12】

নারীগণ বিশেষ তিন শ্রেণীর লোকের ওয়ারিস হতে পারে

ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা‘(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নারীগণ বিশেষ তিন শ্রেণীর লোকের ওয়ারিস হতে পারে। (১) তার আযাদকৃত দাস-দাসীর, (২) পরিত্যক্ত শিশুর যাকে সে কুড়িয়ে পেয়েছে এবং (৩) সেই সন্তানের যার সম্পর্কে সে স্বামীর সাথে লীআন (অভিশাপযুক্ত শপথ) করেছে। মুহাম্মাদ বিন ইয়াযিদ(রঃ) বলেন, এই হাদীস হিশাম ছাড়া অন্য কেউ রিওয়ায়াত করেননি। [২৭৪২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।

【13】

যে ব্যক্তি নিজ সন্তানকে অস্বীকার করেছে

আবু হুরায়রা(রাঃ) লিআন সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে নারী কোনো সম্প্রদায়ের সাথে এমন বাচ্চাকে শামিল করে যে তাদের নয়, তার সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি কখনো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ নিজের সন্তানকে চিনতে পেরেও অস্বীকার করলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার থেকে আড়ালে থাকবেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে তাকে অপমান করবেন। [২৭৪৩] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস(রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এমন লোককে নিজ বংশীয় দাবি করা কুফরী যাকে লোকে চিনে না, অথবা সামান্য সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নিজ বংশের লোককে অস্বীকার করাও কুফরী। [২৭৪৪] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【14】

সন্তানের দাবীদার হওয়া সম্পর্কে

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস(রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যাক্তি বাঁদী বা স্বাধীন নারীর সাথে যিনা করলে তার পরিণতিতে যে সন্তান হবে তা জারজ সন্তান। পুরুষ লোকটিও ঐ সন্তানের ওয়ারিস হবে না এবং ঐ সন্তানও পুরুষ লোকটির ওয়ারিস হবে না। [২৭৪৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যাক্তির মৃত্যুর পর কোনো শিশুকে তার সন্তানরুপে তার সাথে সম্পৃক্ত করা হলো এবং মৃতের ওয়ারিসগণ তার সম্পর্কে এই দাবি করলো, “সে আমাদের বংশীয়”, তার ক্ষেত্রে ফয়সালা এই যে, সে যে দাসীর গর্ভজাত, মালিকের মালিকানায় থাকা অবস্থায় যদি তার সাথে সঙ্গম হয়ে থাকে তবে সেই সন্তান যার বলে দাবি করা হচ্ছে তার সাথে সম্পৃক্ত হবে। তবে ইতোপূর্বে (জাহিলী যুগে) যে ওয়ারিসী স্বত্ব বন্টিত হয়েছে সে তার কিছুই পাবে না। আর যে ওয়ারিসী স্বত্ব এখনো বন্টিত হয়নি তা থেকে সে তার অংশ পাবে। পক্ষান্তরে তাকে যে পিতার সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, সেই পিতা তাকে অস্বীকার করলে ওয়ারিসগণের দাবির কোনো কার্যকারিতা নেই। আর সেই সন্তান যদি তার মালিকানাধীন কোন দাসীর গর্ভজাত হয়ে থাকে অথবা কোনো স্বাধীন নারীর সাথে তার যেনার পরিণতিতে হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত সন্তান তার সাথে সম্পৃক্ত হবে না এবং সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তিও পাবে না, যদিও সে তাকে তার সন্তান বলে দাবি করে। সে হবে জারজ সন্তান। সে তার মায়ের বংশের সাথে সম্পৃক্ত হবে, সে স্বাধীন নারী হোক বা কৃতদাসী। রাবী মুহাম্মাদ বিন রাশেদ বলেন, এখানে বন্টনের অর্থ হলোঃ যে ওয়ারিসী স্বত্ব ইসলামের পূর্বে জাহিলী যুগে বন্টিত হয়েছে। [২৭৪৬] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【15】

ওয়ালাআস্বত্ব বিক্রয়ও করা যাবে না, হেবাও করা যাবে না

ইবনু উমর(রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়ালাআ স্বত্ব বিক্রয় বা হেবা করতে নিষেধ করেছেন। [২৭৪৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমর(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়ালাআ স্বত্ব বিক্রয় বা হেবা করতে নিষেধ করেছেন। [২৭৪৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【16】

ওয়ারিসী স্বত্ব বন্টন

আবদুল্লাহ বিন উমর(রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যেসব ওয়ারিসী স্বত্ব জাহিলী যুগে বন্টিত হয়েছে তা সেই জাহিলী যুগের বন্টন নীতি অনুযায়ী বহাল থাকবে। আর যে সকল ওয়ারিসী স্বত্ব ইসলামী যুগে উদ্ভূত হয়েছে তা ইসলামের বন্টন নীতি অনুযায়ী বন্টিত হবে। [২৭৪৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【17】

সদ্যজাত শিশু চীৎকার দিলে সে ওয়ারস হবে

জাবির(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সদ্যজাত শিশু চীৎকার দিলে তার (জানাযার) নামায পড়তে হবে এবং সে ওয়ারিস হবে। [২৭৫০] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। জাবির বিন আবদুল্লাহ ও মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সদ্যজাত শিশু সশব্দে চীৎকার না দেয়া পর্যন্ত ওয়ারিস হবে না। রাবী বলেন, তার সশব্দে চীৎকারের অর্থ হলোঃ ক্রন্দন করা, চিল্লানো বা হাঁচি দেয়া। [২৭৫১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【18】

যে ব্যাক্তি অপর কোনো ব্যাক্তির নিকট ইসলাম গ্রহণ করে

তামিম আদ-দারী (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আহলে কিতাবদের কেউ কারো কাছে ইসলাম গ্রহণ করলে তার বিধাণ কী? তিনি বলেনঃ সে (মুসলিম ব্যাক্তি) তার (নও মুসলিমের) জীবনে ও মরণে অন্য সব লোকের চেয়ে অগ্রগন্য। [২৭৫২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।