25. হজ্জ
হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সফর শাস্তিরই একটি টুকরা। তা তোমাদের যে কোন ব্যক্তির ঘুম ও পানাহারকে বাধাগ্রস্ত করে। তোমাদের যে কেউ সফরে নিজ প্রয়োজন পূরণ হওয়ার সাথে সাথে যেন অবিলম্বে বাড়ি ফিরে আসে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ৪টি সানাদের ৩টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো:] ২/২৮৮২ (১) . আবূ হুরায়রা (রাঃ) , নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে। [২৮৮২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনুল আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও আসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। [২৮৮৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
হজ্জ ফারদ হওয়ার বিবরণ
আলী (রাঃ) যখন এ আয়াত নাযিল হলো (অনুবাদ) : “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য” (সূরা আল ইমরান : ৯৭) , তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছরই কি হজ্জ ফারদ? তিনি নিরুত্তর থাকলেন। পুনরায় তারা বলেন, প্রতি বছরই কি? তিনি বলেন, না। কিন্তু আমি যদি বলতাম, হাঁ, তবে তদ্রুপই ওয়াজিব হতো। অতঃপর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয় (অনুবাদ) : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে...” (সুরা মাইদাহ: ১০১)। [২৮৮৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আলাহর রাসূল! প্রতি বছরই কি হজ্জ ফারদ? তিনি বলেনঃ আমি যদি বলি হাঁ, তবে তা অবশ্যই ওয়াজিব (ফারদ) হতো। আর যদি তা ওয়াজিব হতো তবে তোমরা তা আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়তে। আর তোমরা যদি তা আদায় করতে না পারতে তবে তোমাদের শাস্তি দেয়া হতো। [২৮৮৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আল-আকরা’ বিন হাসিব (রাঃ) মহানবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কি প্রতি বছর, না মাত্র একবার? তিনি বলেনঃ বরং একবার মাত্র। অতঃপর এর অধিক করার কারো সামর্থ্য থাকলে তা নফল। [২৮৮৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হজ্জ ও ‘উমরার ফযিলত
উমার (রাঃ) মহানবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ্জ ও উমরাহ আদায় করো। কেননা এ দু’টি ধারাবাহিকভাবে আদায় করলে তা দারিদ্র ও গুনাহ দূরীভুত করে, যেমন হাপর লোহার মরিচা দূর করে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/২৮৮৭ (১) . উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) , মহানবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। [২৮৮৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এক উমরাহ থেকে অপর উমরাহ মাঝখানের সময়ের জন্য কাফ্ফারাস্বরূপ এবং জান্নাতই হলো মাবরূর (ত্রুটিমুক্ত) হজ্জের প্রতিদান। [২৮৮৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ্জ করেছে এবং তাতে অশালীন কথাবার্তা বা আচরণ করেনি, সে এমন অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে যেমন তার মা তাকে (নিষ্পাপ) প্রসব করেছে। [২৮৮৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যানবাহনে চড়ে হজ্জ আদায় করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উটের পিঠে) একটি পুরাতন জিন ও পালানে উপবিষ্ট অবস্থায় হজ্জ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল একটি চাদর যার মূল্য চার দিরহাম বা তারও কম। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! এ এমন হজ্জ, যাতে কোন প্রদর্শনেচ্ছা বা প্রচারেচ্ছা নেই। [২৮৯০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মক্কা ও মদীনার মাঝপথে ছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করাকালে তিনি বলেনঃ এটা কোন্ উপত্যকা? সাহাবীগণ বলেন, আল-আযরাক উপত্যকা। তিনি বলেনঃ আমি মূসা (আঃ) -কে দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি নিজের দু’ আংগুল কর্ণদ্বয়ে স্থাপন করে তাঁর দীর্ঘ কেশের কিছুটা বর্ণনা দেন, যা রাবী দাউদ পূর্ণ মনে রাখতে পারেননি। তিনি উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে করতে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় এ উপত্যকা অতিক্রম করেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমরা পথ অতিক্রম করে একটি টিলার উপর আসলাম। তিনি বলেন, এটা কোন টিলা? সাহাবীগণ বলেন, এটা হারশা অথবা লিফাত (লাফ্ত) নামীয় টিলা। তিনি বলেন, আমি যেন ইউনুস (আঃ) -কে একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রীর উপর পশমী জুব্বা পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি, যার নাসারন্ধ্রের রমি ছিল খেজুর পাতার তৈরী এবং তিনি তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় এ উপত্যকা অতিক্রম করেন। [২৮৯১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাজ্জীগনের দুআ’র ফযিলত
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হজ্জযাত্রীগণ ও উমরার যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর নিকট দুআ’ করলে তিনি তাদের দুআ’ কবুল করেন এবং তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। [২৮৯২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জযাত্রী ও উমরা যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর নিকট দুআ’ করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। [২৮৯৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উমার (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উমরা আদায় করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দেন এবং বলেনঃ “হে আমার ছোট ভাই! তোমার দুআ’র মধ্যে আমাদেরকেও শরীক করবে, আমাদের ভুলে যেও না”। [২৮৯৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আবূ দারদা’ ও উম্মু দারদা’ (রাঃ) আবূ দারদা’ (রাঃ) এর কন্যা তার বিবাহ বন্ধনে ছিল। তিনি তার নিকট এলেন এবং সেখানে উম্ম দারদা (রাঃ) কেও উপস্থিত পেলেন কিন্তু আবূ দারদা’ (রাঃ) কে পাননি। উম্মু দারদা’ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ বছর হজ্জ করতে চাও? সফওয়ান (রাঃ) বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, তাহলে তুমি আমাদের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর নিকট দুআ’ করো। কেননা নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দুআ’ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা তার দুআ’র সময় আমীন বলতে থাকেন। যখনই সে তার কল্যাণ কামনা করে দুআ’ করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আমীন, তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ। রাবী বলেন, অতঃপর আমি বাজারের দিকে গেলাম এবং আবূ দারদা’ (রাঃ) -র সাক্ষাত পেলাম। তিনিও নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করেন। [২৮৯৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
কিসে হজ্জ ফারদ হয়
ইবনু উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কিসে হজ্জ ফরদ হয়? তিনি বলেনঃ পাথেয় ও বাহন থাকলে। সে (পুনরায়) বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হাজ্জী কে? তিনি বলেনঃ যার (ইহরামের কারনে) এলোমেলো কেশ এবং দুর্গন্ধ শরীর। অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কী? তিনি বলেন, উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পাঠ ও রক্ত প্রবাহিত (কোরবানী) করা। ওয়াকী’ (রাঃ) -এর মতে “আল-‘আজ্জ” অর্থ “তালবিয়া পাঠ” এবং “আস-সাজ্জু” অর্থ “পশু কোরবানী করা”। [২৮৯৬] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাথেয় ও বাহন অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বাণী : “যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে” (সূরা আল ইমরান : ৯৭) (-এর তাৎপর্য এটাই)। [২৮৯৭] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল।
যে মহিলা সাথে অভিভাবক ব্যতীত হজ্জ করে
আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সাথে তার পিতা, ভাই, ছেলে, স্বামী অথবা কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সফর না করে। [২৮৯৮] তাহকীকঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে মহিলা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তার জন্য এক দিনের পরিমাণ দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। [২৮৯৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক বেদুঈন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, অমুক অমুক যুদ্ধে যোগদানের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং আমার স্ত্রী হজ্জে যাওয়ার সংকল্প করেছে। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তার সাথে হজ্জে যাও। [২৯০০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মহিলাদের জিহাদ হলো হজ্জ
আয়িশাহ (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের জন্য কি জিহাদ বাধ্যতামূলক? তিনি বলেনঃ হাঁ, তাদের উপরও জিহাদ ফারদ, তবে তাতে অস্ত্রবাজি নাই। তা হচ্ছে হজ্জ ও উমরা। [২৯০১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন দুর্বল ব্যক্তির জিহাদ হলো হজ্জ। [২৯০২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন : “শুবরুমার পক্ষ থেকে আমি তোমার দরবারে হাযির হয়েছি”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন : শুবরুমা কে? সে বললো, আমার এক নিকটাত্মীয়। তিনি বলেনঃ তুমি কি কখনও হজ্জ করেছো? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তাহলে এই হজ্জ তোমার নিজের পক্ষ থেকে করো, অতঃপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ করো। [২৯০৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আমি কি আমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারি? তিনি বলেনঃ হাঁ, তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো। তুমি যদি তার জন্য কল্যাণ ও নেকী বৃদ্ধি করতে না পারো, তবে অন্তত তার জন্য অকল্যাণ ও পাপ বৃদ্ধি করো না। [২৯০৪] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি সহীহ। আবুল গাওস বিন হুসায়ন (রাঃ) নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তার পিতার উপর ফরজ হওয়া হজ্জ সম্পর্কে ফতওয়া জিজ্ঞেস করেন, যিনি মারা গেছেন কিন্তু হজ্জ করতে পারেননি। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করো। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ মানতের সিয়ামও অনুরূপ অর্থাৎ তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা যাবে। [২৯০৫] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল।
জীবিত ব্যক্তি হজ্জ করতে অপারগ হলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা
আবূ রাযীন আল-উকায়লী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ অথবা উমরা করতে বা বাহনে উপবিষ্ট থাকতে অক্ষম। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় করো। [২৯০৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) খাসআম গোত্রের এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ এবং অচল হয়ে পড়েছেন। বান্দাদের উপর আল্লাহর ফরযকৃত হজ্জ তার উপর ও ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি তা আদায় করতে সক্ষম নন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করি, তবে তা কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হাঁ। [২৯০৭] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি হাসান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে হুসায়ন বিন আওফ (রাঃ) , অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি হজ্জ করতে সক্ষম নন-যদি না তাকে হাওদার সাথে বেঁধে দেয়া হয়। তিনি মুহুর্তকাল নীরব থাকার পর বলেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো। [২৯০৮] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল। আল ফাদাল (রাঃ) কুরবানীর দিন ভোরবেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সওয়ারীতে তাঁর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন খাষআম গোত্রের এক মহিলা তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল!বান্দাদের উপর আল্লাহর ধার্যকৃত হজ্জ আমার পিতার উপরও তার বৃদ্ধ বয়সে ফারদ হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনে চড়তে সক্ষম নন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। কেননা তোমার পিতার কোন ঋণ থাকলে তাও তোমাকেই পরিশোধ করতে হতো। [২৯০৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শিশুদের হজ্জ
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হজ্জের সময় এক মহিলা তার শিশু সন্তানকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে উঁচিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এই শিশুর জন্যও কি হজ্জ? তিনি বলেনঃ হাঁ, তবে সওয়াব হবে তোমার। [২৯১০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত মহিলারা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে
আয়িশাহ (রাঃ) শাজারা (যুল-হুলায়ফা) নামক স্থানে উমায়স কন্যা আসমা (রাঃ) এর নিফাস হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাঃ) -কে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন। [২৯১১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ বাকর (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তাঁর সাথে (তাঁর স্ত্রী) উমায়স-কন্যা আসমা’ (রাঃ) -ও ছিলেন। তিনি শাজারা নামক স্থানে মুহাম্মাদ বিন আবূ বাকর-কে প্রসব করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করার পর হজ্জের ইহরাম বাঁধার এবং লোকেদের অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালনের নির্দেশ দেন, কিন্তু সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। [২৯১২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) আসমা বিনতু উমাইস (রাঃ) (মুহাম্মাদ বিন আবূ বাকরকে প্রসব করলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বিধান জিজ্ঞেস করার জন্য লোক পাঠালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন গোসল করে একটি কাপড় জড়িয়ে নেন ও ইহরাম বাঁধেন। [২৯১৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মীকাত
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মদীনাবাসীগন যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়ার অধিবাসীগন আল-জুহ্ফা থেকে, নাজ্দবাসীগণ ‘কারন’ নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এই তিনটি মীকাতের বর্ণনা আমি সরাসরি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছি। আমি আরোও জানতে পেরেছি যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীগন ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে। [২৯১৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেনঃ মদীনাবাসীগণের মীকাত যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের মীকাত আল-জুহ্ফা, ইয়ামানবাসীদের মীকাত ইয়ালামলাম, নাজদবাসীদের মীকাত ‘কারন’, প্রাচ্যের মীকাত যাতু ইরক অতঃপর তিনি দিগন্তের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ! তাদের অন্তরসমূহ ঈমানের দিকে ধাবিত করুন। [২৯১৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইহরাম বাঁধা
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন স্বীয় পদদ্বয় বাহনের পাদানিতে রাখেন এবং তাঁর জন্তুযান তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তখন তিনি যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকট ইহরাম্ বাঁধেন| [২৯১৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) আশ-শাজারা (যুল-হুলায়ফা) নামক স্থানে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উষ্ট্রীর পায়ের নিকটে ছিলাম। উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তখন তিনি বলেনঃ “লাব্বায়কাবি-উমরাতিন ওয়া হাজ্জাতিম-মাআন” (আমি তোমার দরবারে একসাথে হজ্জ ও উমরার সংকল্প নিয়ে হাযির হচ্ছি)। এটা বিদায় হজ্জের ঘটনা। [২৯১৭] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি সহীহ।
তালবিয়া
ইবনু উমার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট তালবিয়া শিখেছি। তিনি বলেনঃ “লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়কা লাব্বায়কা, লা শারীকা লাকা লাব্বায়কা। ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নিয়’মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা লাকা (“হে আল্লাহ!আমি তোমার নিকট উপস্থিত আছি, তোমার নিকট উপস্থিত আছি, তোমার দরবারে হাযির হয়েছি। তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার নিকট হাযির হয়েছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শরীক নাই”) রাবী (রহঃ) বলেন, বিন উমার (রাঃ) এর সাথে যোগ করতেনঃ “লাব্বায়াকা লাব্বায়াকা লাব্বায়াকা ওয়া সা’দায়কা ওয়াল-খায়রু ফী ইয়াদায়কা, লাব্বায়কা ওয়ার-রাগবাউ ইলায়কা ওয়াল-আমালু” (“তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি (রাঃ) তোমার নিকট হাযির হয়েছি, তোমার নিকট হাযির আছি, তোমার খেদমতে সৌভাগ্য লাভ করেছি। সমস্ত কল্যাণ তোমার হাতে, আমি তোমার সমীপে উপস্থিত হয়েছি। সমস্ত আকর্ষন তোমার প্রতি এবং সকল কাজ তোমারই নির্দেশে”)। [২৯১৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তালবিয়া ছিল নিম্নরূপঃ “লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়কা, লাব্বায়কা লা শারীকা লাকা লাব্বায়কা ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নিয়’মাতা লাকা ওয়াল-মুলকা লা শারীকা লাকা”। [২৯১৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর তালবিয়ায় বলেনঃ “লাব্বায়কা ইলাহাল্-হাক্ক লাব্বায়কা। [২৯২০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাহল বিন সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তিই তালবিয়া পাঠ করে, সাথে সাথে তার ডান ও বাম দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটি, এমনকি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের সবকিছু তালবিয়া পাঠ করে। [২৯২১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা
সাইব বিন খাল্লাদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের আদেশ দেই। [২৯২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি আপনার সাহাবীদের নির্দেশ দিন, তারা যেন উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে। কারন তা হজ্জের অন্যতম নিদর্শন। [২৯২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং কোরবানীর দিন কোরবানী করা। [২৯২৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইহরামধারী ব্যক্তির অনবরত তালবিয়া পাঠের ফযিলত
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ইহরামধারী ব্যক্তি কোরবানীর দিন আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানী করে এবং মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করতে থাকে, সূর্য তার গুনাহরাশিসহ অস্ত যায়। তখন সে তার জন্মদিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যায়। [২৯২৫] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ।
ইহরাম বস্ত্র পরিধানের সময় সুগন্ধি ব্যবহার
আয়িশাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ইহরাম বাঁধার প্রাক্কালে সুগন্ধি লাগিয়ে দেই এবং ইহরাম খোলার সময় তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দেই। সুফিয়ানের বর্ণনায় “আমার এই দু’হাত দিয়ে” কথাটুকুও উল্লেখ আছে। [২৯২৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সিঁথিতে সুগন্ধির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি, তখন তিনি তালবিয়া উচ্চারণ করছিলেন। [২৯২৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সিঁথিতে তিনদিন পরেও সুগন্ধির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি, অথচ তিনি ছিলেন ইহরাম অবস্থায়। [২৯২৮]
ইহরাম বাধা অবস্থায় যেরূপ কাপড় পরিধান করবে
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলো , ইহরামধারী ব্যক্তি কিরূপ কাপড় পরিধান করবে? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে জামা পরবে না, পাগড়ী পরবে না, পাজামা পরবে না, টুপি পরবে না এবং মোজা পরবে না। কিন্তু তার জুতা না থাকলে, সে মোজা পরতে পারবে, তবে পায়ের গোছা বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলবে। সে জাফরান অথবা সুগন্ধি ঘাস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ও পরিধান করবে না। [২৯২৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। . আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামধারী ব্যক্তিকে কুমকুম অথবা ওয়ারস ঘাস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। [২৯৩০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কাপড় ও জুতা না থাকলে মুহরিম ব্যক্তি পাজামা ও মোজা পরিধান করবে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে বলতে শুনেছিঃ যে (মুহরিম ) ব্যক্তি কাপড় সংগ্রহ করতে পারেনি সে মোজা পরতে পারে। হিশামের বর্ণনায় আছেঃ কাপড়’ না পেলে সে পাজামা পরিধান করবে’। [২৯৩১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তি জুতা সংগ্রহ করতে না পারলে মোজা পরিধান করবে। সে যেন গোছার উপরিভাগ কেটে নেয়। [২৯৩২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইহরাম অবস্থায় যেসব আচরন থেকে বিরত থাকা উচিত
আবু বাকর (রাঃ) এর কন্যা আসমা (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওনা হলাম। আল-আরজ নামক স্থানে পৌঁছে আমরা যাত্রাবিরতি করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আয়িশাহ (রাঃ) তাঁর পাশে বসলেন এবং আমি আবু বাকর (রাঃ) -র পাশে বসলাম। ইত্যবসরে গোলাম আসলো কিন্তু তার সাথে উট ছিল না। আবু বাকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উট কোথায়? সে বলল , গত রাতে তা হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তোমার সাথে একটি মাত্র উট ছিল, তাও তুমি হারিয়ে ফেললে? রাবী বলেন, তিনি তাকে মারতে শুরু করলেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দেখো ! এই ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কি করছে? [২৯৩৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
ইহরামধারী ব্যক্তি মাথা ধৌত করতে পারে
আবু আয়্যুব (খালিদ বিন যায়দ) আল-আনসারী (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) এবং আল-মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) আল-আবওয়া নামক স্থানে একটি বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হলেন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইহরামধারী ব্যক্তি নিজ মাথা ধৌত করতে পারবে। আর আল-মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, সে নিজ মাথা ধৌত করতে পারবে না। অতএব বিন আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবু আয়্যুব আল-আনসারী (রাঃ) - র নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠান। আমি গন্তব্যে পৌঁছে দেখি যে, তিনি দুটি খুঁটির মাঝখানে কাপড় দ্বারা পর্দা টেনে গোসল করছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি আবদুল্লাহ বিন হুনায়ন। বিন আব্বাস (রাঃ) আমাকে আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় কিভাবে মাথা ধৌত করতেন? রাবী বলেন, আবু আইউব (রাঃ) তার হস্তদ্বয় পর্দার কাপড়ের উপর রেখে তা মাথা পযন্ত উত্তোলন করলেন এবং আমি তার মাথা দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, পানি ঢালো। লোকটি তার গোসলে সাহায্য করছিলো। সে তার মাথায় পানি ঢেলে দিলো। তিনি স্বহস্তে তার গোটা মাথা মর্দন করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এভাবে মাথা ধৌত করতে দেখেছি। [২৯৩৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
ইহরামধারী স্ত্রী লোকের মুখমণ্ডলে কাপড় ঝুলানো
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। কোন কাফেলা আমাদের নিকটবর্তী হলে আমরা নিজেদের মাথার সামনে দিয়ে (মুখমণ্ডলে) কাপড় ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদের অতিক্রম করে যাওয়ার পর আবার তা মুখমণ্ডল থেকে তুলে ফেলতাম। [২৯৩৫] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের একটি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলঃ] ২/২৯৩৫ (১) . {আলী বিন মুহাম্মদ ><আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস><ইয়াযীদ বিন আবু যীয়াদ (দঈফ বা দুর্বল) ><মুজাহিদ>< আয়িশাহ (রাঃ) } [২৯৩৫] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
হজ্জে শর্ত আরোপ করা
সু’দায় বিনতু আওফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল মুত্তালিব কন্যা দুবাআ (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেনঃ হে ফুফুজান ! কোন জিনিস আপনাকে হজ্জ থেকে বিরত রাখছে।? তিনি বলেন, আমি একজন অসুস্থ মহিলা। আমার আশঙ্কা হয় যে, আমি হজ্জের অনুষ্ঠানাদি পূর্ণ করতে পারব না। তিনি বলেনঃ আপনি ইহরাম বাঁধুন এবং এই শর্ত আরোপ করুন, “ যেখানে আমি বাধাগ্রস্ত হবো, সেখানেই ইহরাম মুক্ত হবো। [২৯৩৬] তাহকী্ক আলবানীঃ সহীহ। দুবাআহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট উপস্থিত হলেন, আমি তখন রোগগ্রস্থ ছিলাম। তিনি বলেন, আপনি কি এ বছর হজ্জে যাওয়ার সংকল্প করেছেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল , আমি তো অসুস্থ। তিনি বলেন, আপনি হজ্জের নিয়ত করুন এবং বলুন, “আপনি যেখানে আমাকে বাধাগ্রস্থ করবেন সেখানে ইহরাম খুলে ফেলব”। [২৯৩৭] তাহকী্ক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) যুবায়র বিন আবদুল মুত্তালিবের কন্যা দুবাআ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি রোগগ্রস্থ এবং আমি হজ্জে যাওয়ার ইচ্ছা রাখি। অতএব আমি কিভাবে ইহরাম বাধব? তিনি বলেনঃ আপনি ইহরাম বাধুন এবং শর্ত রাখুন, “আপনি (আল্লাহ) যেখানে আমাকে বাধাগ্রস্থ করবেন, সেটাই হবে আমার ইহরাম খোলার স্থান”। [২৯৩৮] তাহকী্ক আলবানীঃ সহীহ।
হারাম এলাকায় প্রবেশ
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) আম্বিয়া-ই কিরাম (রাঃ) হেরেমর এলাকায় পদব্রজে ও নগ্নপদে প্রবেশ করতেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফহসহ হজ্জের যাবতীয় অনুষ্ঠান নগ্নপদে ও পদব্রজে সমাপন করতেন। [২৯৩৯] তাহকী্ক আলবানীঃ দুর্বল।
মক্কায় প্রবেশ।
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চ ভূমি দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং যখন বের হতেন তখন নিম্ন ভূমি দিয়ে বের হতেন। [২৯৪০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের বেলায় মক্কায় প্রবেশ করেন। [২৯৪১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূ্লাল্লাহ ! আমরা আগামীকাল কোথায় অবতরণ করবো? এটা তাঁর (বিদায়) হজ্জের সময়কার কথা। তিনি বলেন,আকীল কি আমাদের জন্য একটি বাড়িও অবশিষ্ট রেখেছে? তিনি পুনরায় বলেনঃ আমরা আগামীকাল বনূ কিনানার ঘাঁটিতে (অর্থাৎ মুহাসসাবে) অবতরণ করবো যেখানে কুরায়াশগণ কুফরীর উপর অবিচল থাকার শপথ করেছিলো। অর্থাৎ বনূ কিনানাহ কুরায়াশদের নিকট থেকে বনু হাশিমের বিরুদ্ধে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে, তারা শেষোক্ত গোত্রের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না এবং ব্যবসায়িক লেনদেনও করবে না। মা’মার (রাঃ) বলেন, যুহরী (রাঃ) বলেছেন,আল- খায়ফ অর্থ উপত্যকা। [২৯৪২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা।
আবদুল্লাহ বিন সারজিস (রাঃ) আমি আল-উসায়লিহ্ অর্থাৎ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে দেখলাম যে, তিনি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি অবশ্যই তোমাকে চুম্বন করছি। আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, তুমি ক্ষতিও করতে পারো না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তোমায় চুমা দিতে না দেখতাম , তাহলে আমিও তোমায় চুমা দিতাম না। [২৯৪৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাঈদ বিন জুবায়র (রাঃ) আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়া্মতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দুটি চোখ থাকবে, তা দিয়ে সে দেখবে, যবান থাকবে তা দিয়ে সে কথা বলবে এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে যে তাকে সত্যতার সাথে চুমা দিয়েছে। [২৯৪৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথরের দিকে মুখ করলেন, অতঃপর তার উপর নিজের দুই ঠোঁট স্থাপন করে দীর্ঘক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর তিনি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখলেন যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও কাঁদলেন। তিনি বলেন,হে উমার ! এটাই অশ্রু প্রবাহিত করার উপযুক্ত স্থান। [২৯৪৫] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। আবদুল্লাহ বিন উমার) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহর কোন রুকনে চুমা খেতেন না, কেবলমাত্র রুকনুল আসওয়াদ (কালো পাথর) এবং এর নিকটের জুমাহ গোত্রের দিককার কোণে (রুকনে ইয়ামানিতে) চুমা খেতেন। [২৯৪৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
লাঠির সাহায্যে রুকন (হাজরে আসওয়াদ) কে চুমা দেওয়া
শায়বাহ’র কন্যা সাফিয়্যাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের বছর যখন নিশ্চিত (নিরাপদ) হলেন তখন তিনি স্বীয় উটে আরোহণ করে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করেন এবং নিজের হাতের লাঠির সাহাস্যে রুকন (হাজরে আসওয়াদ) কে চুম্বন করেন। অতঃপর তিনি কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং তথায় কাঠের তৈরী একটি কবুতর দেখতে পান। তিনি তা ভেঙ্গে ফেলেন এবং অতঃপর তা কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে বাইরে নিক্ষেপ করেন। আমি তা দেখেছিলাম। [২৯৪৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে একটি উটে আরোহণ করে তাওয়াফ করেন এবং একটি লাঠির সাহায্যে (ইশারায়) রুকনকে চুম্বন করেন। [২৯৪৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ তোফায়েল আমর বিন ওয়াসেলাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি তিনি তাঁর সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, নিজ লাঠির সাহায্যে রুকন স্পর্শ করেন এবং লাঠিতে চুমা দেন। [২৯৪৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
বায়তুল্লাহর চারপাশে তাওয়াফের সময় রমল করা
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে (তাওয়াফে) রামল করতেন (বাহু দুলিয়ে বীরদর্পে প্রদক্ষিণ করতেন) এবং চার চক্করে সাধারণভাবে হেঁটে তাওয়াফ করতেন- হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত। ইবনু উমার (রাঃ) ও তাই করতেন। [২৯৫০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তিনবার রামল করতেন এবং চারবার সাধারণ গতিতে তাওয়াফ করতেন। [২৯৫১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উমার (রাঃ) এখন এই দু’ রামলের মধ্যে কী ফায়দা আছে? এখন তো আল্লাহ তাআলা ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন এবং কুফর ও তার অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করেছেন। আল্লাহর শপথ! আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে যেসব আমল করেছি তার কিছুই ত্যাগ করব না। [২৯৫২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার ঘটনার পরবর্তী বছরে উমরা পালনকালে মক্কায় প্রবেশের প্রাক্কালে তাঁর সাহাবীগণকে বলেনঃ অচিরেই তোমাদের সম্প্রদায় আগামীকাল তোমাদের দেখতে পাবে। অতএব তারা যেন তোমাদের সতেজ ও চালাক চতুর দেখতে পায়। তারা মসজিদে প্রবেশ করে রুকন (পাথর) চুম্বন করেন এবং রামল করেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে ছিলেন। তারা রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হন। তারা পুনরায় রামল করে রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছান; অতঃপর রুকনুল আসওয়াদ পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিতে চলেন। তারা তিনবার রামল করেন ও চারবার স্বাভাবিক গতিতে হাঁটেন। [২৯৫৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইদতিবা’ (বিশেষ পদ্ধতিতে চাদর পরিধান)
ইয়া’লা বিন উমায়্যাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান কাঁধ খোলা রেখে এবং বাম কাঁধের উপর চাদরের উভয় কোণ একত্রে লটকিয়ে তাওয়াফ করেন। কাবীসা (রাঃ) বলেন, তাঁর পরিধানে ছিল একটি চাদর। [২৯৫৪] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
হাতীমও তাওয়াফের অন্তর্ভূক্ত।
আয়িশাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হিজর (হাতীম) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেনঃ তা বাইতুল্লার অন্তর্ভূক্ত। আমি বললাম, তাকে কা’বার অন্তর্ভূক্ত করতে কোন জিনিস তাদের বাধা দিলো? তিনি বলেনঃ অর্থাভাব তাদের অপারগ করে দিয়েছিল। আমি বললাম, তার দরজা এতো উঁচুতে স্থাপিত হওয়ার কারণ কী যে, তাতে সিঁড়ি ব্যতীত উঠা যায় না? তিনি বলেনঃ তা তোমার সম্প্রদায়ের কান্ড। তাদের মর্জি হলে কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারতো, আর যাদেরকে ইচ্ছা তাতে প্রবেশে বাধা দিতো। তোমার সম্প্রদায়ের কুফরী ত্যাগের যুগ যদি অতি নিকট না হতো এবং (কাবা ঘর ভাঙার কারণে) তাদের মধ্যে বিতৃষ্ণার উদ্রেক হওয়ার আশঙ্কা না থাকতো, তাহলে তুমি দেখতে পেতে আমি কিভাবে তা পরিবর্তন করতাম! তা থেকে যা বাদ দেওয়া হয়েছিল আমি পুনরায় তা এর অন্তর্ভূক্ত করতাম আবং তার দরজা ভূমি বরাবর স্থাপন করতাম। [২৯৫৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
তাওয়াফের ফযীলত।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলো এবং দু’ রাকাআত নামায পড়লো, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য। [২৯৫৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমি ইবনে হিশামকে রকনে ইয়ামানী সম্পর্কে আ’তা বিন আবূ রাবাহ (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। তিনি তখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। আতা (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (রুকনে ইয়ামানীতে) সত্তরজন ফেরেশতা মোতায়েন আছেন। অতএব যে ব্যক্তি বলে, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকাল আফওয়া, ওয়াল-আফিয়াতা ফিদ-দুনয়া ওয়াল-আখিরাতে রব্বানা আতিনা ফিদ-দুনয়া হাসানাতান ওয়াফিল-আখিরাতে হাসানাতান ওয়াকিনা আযাবান-নার,” তখন ফেরেশতাগণ বলেন, আমীন। (“হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি দুনিয়া ও আখিরাতের। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেরও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন”)। আতা’ বিন আবূ রাবাহ (রাঃ) রুকনুল-আসওয়াদ (হাজরে আসওয়াদ) পৌঁছালে ইবনু হিশাম (রাঃ) বলেন, হে আবূ মুহাম্মদ! এই রুকনল আসওয়াদ সম্পর্কে আপনি কী জানতে পেরেছেন? আতা (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ “যে কেউ তার সামনা-সামনি হলো, সে যেন দয়াময় আল্লাহর হাতের সামনাসামনি হলো। ইবনু হিশাম পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আবূ মুহাম্মদ! তাওয়াফ সম্পর্কে কী এসেছে? আতা (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং কোন কথা না বলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে, ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’, তার দশটি গুনাহ মুছে যাবে, তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে এবং তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফরত অবস্থায় কথা বলে, সে তার পদদ্বয় কেবল রহমাতের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে, যেমন কারো পদদ্বয় পানিতে ডুবে থাকে।” [২৯৫৭] তাহকীক আলবানীঃ দূর্বল।
তাওয়াফ শেষে দু’ রাক’আত নামায পড়া।
আল-মুত্তালিব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তিনি সাত চক্কর তাওয়াফ শেষ করে হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলেন এবং মাতাফের প্রান্তে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তাঁর ও তাওয়াফের মাঝে আর কেউ ছিল না। ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, এটা (সুতরাবিহীন অবস্থায় সলাত আদায় করা) কেবল মক্কার জন্য নির্দিষ্ট। [২৯৫৮] তাহকীক আলবানীঃ দূর্বল। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মক্কায়) পৌঁছে সাতবার বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন, অতঃপর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করেন। (ওয়াকী’ বলেন, অর্থাৎ মাকামে ইবরাহীমের নিকটে) , অতঃপর সাফা পর্বতের দিকে রওয়ানা হন। [২৯৫৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহ তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমে এলেন। তখন উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এট আমাদের পিতা (পূর্ব পুরুষ) ইবরাহীম (আঃ) এর স্থান, যে সম্পর্কে মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে সালাতের স্থানরুপে গ্রহণ করো।” (সুরা বাকারাঃ ১২৫)। ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম মালিক (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এভাবে পাঠ করেছেনঃ “ওয়াত্তাখিযু মিম-মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা”? তিনি বলেন, হাঁ। [২৯৬০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
অসুস্থ ব্যক্তির বাহনে চড়ে তাওয়াফ করা।
উম্মু সালমাহ (রাঃ) তিনি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লোকদের পেছনে পেছনে জন্তুযানে আরোহিত অবস্থায় তাওয়াফ করার নির্দেশ দিলেন। উম্মু সালমাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে নামায পরতে দেখেছি এবং তাতে তিনি “ওয়াত-তূর ওয়া কিতাবিম-মাসতূর” সূরা তিলাওয়াত করেন। ইবনু মাজাহ (রঃ) বলেন, এটা আবূ বকর বর্ণিত হাদীস। [২৯৬১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মুলতাযাম-এর বর্ণনা।
আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) আমি আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) এর সাথে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলাম। আমরা সাতবার তাওয়াফ শেষে কা’বার পশ্চাতে নামায পড়লাম। অতঃপর আমি বললাম, আমরা কি আল্লাহর নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবো না? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি অগ্রসর হয়ে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন, অতঃপর হাজরে আসওয়াদ ও কা’বার দরজার মাঝ বরাবর দাঁড়ান, অতঃপর তার নিজের বুক, হস্তদ্বয় ও গাল তার সাথে লাগান এবং বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপ করতে দেখেছি। [২৯৬২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
ঋতুবতী মহিলা তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের অবশিষ্ট অনুষ্ঠানাদি পালন করবে
আয়িশা (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হজ্জ আদায় করা। আমরা সারিফ নামক স্থানে অথবা তার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছালাম, তখন আমার মাসিক ঋতু শুরু হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কী হয়েছে, তুমি কি ঋতুগ্রস্ত হয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ তাআলা আদম কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। তুমি হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করো, শুধুমাত্র বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করো না। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে একটি গরু কোরবানী করেন। [২৯৬৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইফরাদ হজ্জ।
আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ হজ্জ করেন। [২৯৬৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ হজ্জ করেন। [২৯৬৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ হজ্জ করেছেন। [২৯৬৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বকর, উমার ও উসমান (রাঃ) ইফরাদ হজ্জ করেন। [২৯৬৭] তাহকীক আলবানীঃ সনদটি দূর্বল।
যে ব্যক্তি একই ইহরামে হজ্জ ও ‘উমরা (কিরান হজ্জ) আদায় করে
আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ “আমি উমরা ও হজ্জের উদ্দেশ্যে হাজির”। [২৯৬৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমি উমরা ও হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার দরবারে হাজির হচ্ছি”। [২৯৬৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (সূবায় বিন মা’বাদ বলেন) “আমি ছিলাম একজন নাসারা (খৃষ্টান)। অতঃপর ইসলাম গ্রহন করি। আমি হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাধলাম। সালমান বিন রবী’আ ও যায়েদ বিন সূহান (রাঃ) উভয়ে আমাকে কাদিসিয়ায় হজ্জ ও উমরার একত্রে তালবিয়া পাঠ করতে শুনেন। তখন তারা বলেন “এই ব্যাক্তি তো উটের চেয়েও পথভ্রষ্ট। তাদের এ মন্তব্য যেন আমার উপর একটি পাহাড় নিক্ষেপ করলো। তাই আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তাকে অবহিত করলাম। তিনি তাদের উভয়কে তিরষ্কার করলেন এবং আমাকে বললেন, তুমি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছো,তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছো। হিশাম (রাঃ আঃ) তার বর্ণিত হাদীসে বলেন , শাকীক (রাঃ আঃ) বলেছেন,আমি ও মাসরূক অনেকবার (সুবাই ইব্ন মা’বাদের নিকট ) গিয়েছি এবং এ হাদীস সম্পর্কে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছি। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ৫টি সনদের ২ টি বর্ণিত হয়েছে, অপর তিনটি সনদ হলোঃ] ৪/২৯৭০ (১) . উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (সুবায়) বলেন, যুবক বয়সে আমি খৃষ্টান ছিলাম। অতঃপর ইসলাম গ্রহন করি এবং ইবাদত –বন্দেগী করার চেষ্টা করি। আমি একই সাথে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাধলাম.......। পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [২৯৭০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে অবহিত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই ইহরামে হজ্জ ও উমরা আদায় করেন (কিরান হজ্জ করেন)। [২৯৭১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কিরান হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ
জাবির বিন আব্দুল্লাহ, ইবনু উমার ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীগন মক্কায় পৌছে হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্যে একবার (সাত চক্র) মাত্র তাওয়াফ করেন। [২৯৭২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে এক তাওয়াফ করেন। [২৯৭৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি কিরান হজ্জের ইহরাম বেঁধে (মক্কায়) আগমন করেন। তিনি সাতবার বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করেন, অতঃপর বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করেছেন। [২৯৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ বলেনঃ কোন ব্যাক্তি হজ্জ ও উমরার জন্যে একত্রে ইহরাম বাধলে এদূভয়ের জন্য এক তাওয়াফই যথেষ্ট।সে হজ্জের যাবতীয় অনুষ্ঠান পালন না করা পর্যন্ত ইহরাম মুক্ত হতে পারেনা। সে হজ্জ ও উমরা থেকে একই সাথে ইহরাম মুক্ত হবে। [২৯৭৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উমরাহ সহ তামাত্তু হজ্জের বর্ণনা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল-আকীক নামক স্থানে অবস্থানকালে বলতে শুনেছিঃ আমার প্রতিপালক থেকে একজন দূত এসে বলেন, এই বরকতময় উপত্যকায় নামাজ পড়ুন এবং বলুনঃ উমরা ও হজ্জের (ইহরাম)। হাদীসের মূল পাঠ দুহায়ম এর বর্ণনা অনূযায়ী। [২৯৭৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সুরাকা বিন জু’সুম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণদানের উদ্দেশ্যে এই উপত্যকায় দাঁড়িয়ে বলেনঃ জেনে রাখো! কেয়ামত পর্যন্ত হজ্জের সাথে উমরা আদায় করা যেতে পারে। [২৯৭৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) নিশ্চয় আমি তোমার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা করবো। আশা করি আল্লাহ তাআলা আজকের দিনের পর থেকে এ হাদীস দ্বারা তোমাকে উপকৃত করবেন। জেনে রাখো! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর পরিবারের একদল সদস্য যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের মধ্যে উমরা আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে বাঁধা দেননি এবং তা রহিতকারী কোন আয়াতও নাযিল হয়নি। কিন্তু পরবর্তী কালে এক ব্যাক্তি (উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ) এ সম্পর্কে নিজ ইচ্ছামত যা বলার তাই বলেন। [২৯৭৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (আবূ মূসা আল–আশআরী) তিনি তামাত্তু হজ্জের অনুকূলে ফতোয়া দিতেন। এক ব্যাক্তি তাকে বললো, আপনি আপনার কতক ফতোয়া দেয়া ছেড়ে দিন বা ত্যাগ করুন। আপনার জানা নেই যে, আপনার পরে আমীরুল মুমিনীন (উমার) হজ্জের ব্যাপারে নতুন হুকুম জারী করেছেন। অবশেষে আমি (আবূ মূসা) তার সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন উমার (রাঃ) বলেন, আমি অবশ্যই জানি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীগণ তামাত্তু হজ্জ করেছেন। কিন্তু আমার নিকট এটা খুবই খারাপ লাগে যে, লোকেরা গাছের নীচে স্ত্রীদের সাথে সহবাস করবে, অতঃপর মাথার চুল থেকে পানি পতিত অবস্থায় হজ্জে যাবে। [২৯৭৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করা
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) আমরা কেবল হজ্জের নিয়তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ইহরাম বাঁধলাম, এর সাথে উমরার নিয়ত করিনি। যিলহজ্জ মাসের চারদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা মক্কায় উপনীত হলাম। আমরা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ সমাপ্ত করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইহরাম (ভঙ্গ করে) উমরার ইহরামে পরিনত করার নির্দেশ দেন এবং স্ত্রীদের সাথে মেলামেশার অনুমতি দেন। আমরা আরয করলাম, আমাদের লজ্জাস্থান থেকে বীর্য নির্গত হওয়ার পরপরই আরাফতের দিকে অগ্রসর হবো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সৎকর্মশীল ও সর্বাধিক সত্যবাদী। আমার সাথে কোরবানির পশু না থাকলে আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম। সুরাকা বিন মালিক (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, এ সুযোগ কি আমাদের এ বছরের জন্য, না চিরকালের জন্য? তিনি বলেনঃ না, চিরকালের জন্য। [২৯৮০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আয়িশাহ (রাঃ) যিলকাদ মাসের পাঁচ দিন বাকি থাকতে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওনা হলাম। হজ্জ করাই ছিল আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমরা গন্তব্যে (মক্কায়) বা তার কাছাকাছি পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দেন, যার সাথে কোরবানির পশু নেই সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। অতএব যাদের সাথে কোরবানির পশু ছিল তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেলেন। কোরবানির দিন আমাদের জন্য গরুর গোশত নিয়ে আসা হল এবং বলা হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। [২৯৮১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আল-বারা বিন আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীগণ রওনা হলেন। আমরা হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। আমরা মক্কায় পৌঁছলে তিনি বলেনঃ তোমাদের হজ্জকে উমরায় পরিণত করো। লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা তো হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছি, তা কিরুপে উমরায় পরিনত করবো? তিনি বলেনঃ লক্ষ্য কর, আমি তোমাদের যা নির্দেশ করি তা করো। তারা তাদের কথার পুনরাবৃত্তি করলে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে স্থান ত্যাগ করেন এবং এই অবস্থায় আয়িশাহ (রাঃ) -র নিকট যান। তিনি তাঁর চেহারায় অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করে বলেন, আপনাকে কে অসন্তুষ্ট করেছে, আল্লাহ তাকে অসন্তুষ্ট করুন? তিনি বলেনঃ আমি কীভাবে অসন্তুষ্ট না হয়ে পারি, আমি কোনো কাজের হুকুম করি, অথচ তা মান্য করা হবে না? [২৯৮২] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) আমরা ইহরাম অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওনা হলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যাদের সাথে কোরবানির পশু আছে তারা যেন ইহরাম অবস্থায় থাকে। আর যাদের সাথে কোরবানির পশু নেই তারা যেন ইহরাম ভঙ্গ করে। রাবী বলেন, আমার সাথে কোরবানির পশু না থাকায় আমিও ইহরাম ভঙ্গ করলাম, কিন্তু (আমার স্বামী) যুবাইর (রাঃ) -র সাথে কোরবানির পশু থাকায় তিনি ইহরাম ভঙ্গ করতে পারেননি। আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র পরে যুবাইর (রাঃ) -র নিকট আসলে তিনি বলেন, তুমি আমার নিকট থেকে উঠে যাও। আমি বললাম, আপনি কি আশঙ্কা করছেন যে, আমি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো? [২৯৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যারা বলেন, হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সীমিত (খাস) ছিল
বিলাল ইবনুল হারিস (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করে উমরা করার সুযোগ কি কেবল আমাদের পর্যন্তই সীমিত, না সাধারণভাবে সব লোকের জন্য উন্মুক্ত? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বরং আমাদের জন্যই সীমিত। [২৯৮৪] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আবূ যার (রাঃ) হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করার সুযোগ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণের মধ্যে সীমিত ছিল। [২৯৮৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করা (দৌড়ানো)
হিশাম বিন উরওয়াহ আমার পিতা আমাকে অবহিত করে বলেছেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ) – কে বললাম, আমি যদি সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ না করি তবে তা আমার জন্য দূষণীয় মনে করি না। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ বলেছেনঃ “সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে কেউ কাবা ঘরের হজ্জ অথবা উমরাহ সম্পন্ন করে, এই দু’টির মাঝে সাঈ করলে তার কোনো পাপ নেই” (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তুমি যেরূপ বুঝেছ যদি তাই হত তবে এভাবে বলা হতঃ “তবে এ দু’টির মাঝে সাঈ না করলে তার কোনো গুনাহ নেই”। উপরোক্ত আয়াত আনসার সম্প্রদায়ের কতক লোকের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা যখন ইহরাম বাঁধতো (জাহিলী যুগে) মানাত দেবতার উদ্দেশ্যে বাঁধতো। তাই সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা (তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী) তাদের জন্য হালাল ছিলো না। তারা (ইসলামোত্তর যুগে) মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জ করতে এসে বিষয়টি তাঁর সামনে উত্থাপন করলে তখন আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। (আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমার জীবনের শপথ! যে ব্যক্তি হজ্জ করতে এসে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করবে না মহান আল্লাহ তার হজ্জ পূর্ণ করবেন না। [২৯৮৬] শায়বার উম্মু ওয়ালাদ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করতে দেখেছি এবং তিনি তখন বলছিলেনঃ আল-আবতাহ্ উপত্যকা অতিক্রম করতে হবে। [২৯৮৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে দৌড়াই তবে তা এজন্য যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাঈ করতে দেখেছি। আমি যদি তা হেঁটে অতিক্রম করি তবে তা এজন্য যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তা হেঁটে অতিক্রম করতে দেখেছি। আমি তো একজন অতি বৃদ্ধ। [২৯৮৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উমরার বর্ণনা
তালহাহ বিন উবায়দুল্লাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ হাজ্জ হলো জিহাদ এবং উমরা হলো নফল। [২৯৮৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে ছিলাম। তিনি উমরা করা কালে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করেন, আমরাও তাঁর সাথে তাওয়াফ করি, তিনি সলাত আদায় করেন এবং আমরাও তাঁর সাথে সলাত আদায় করি। আমরা তাঁকে মক্কাবাসীদের থেকে আড়াল করে রাখতাম যাতে কেউ তাঁর কোনরূপ ক্ষতি করার সুযোগ না পায়। [২৯৯০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
রমাদান মাসের উমরা
ওয়াহব বিন খানবাশ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রামাদান মাসের উমরা (সওয়াবের ক্ষেত্রে ) হাজ্জের সমতূল্য। [২৯৯১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হারিম বিন খানবাশ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রামাদান মাসের উমরা হাজ্জের সমতূল্য। [২৯৯২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ মা‘কিল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রামাদান মাসের একটি উমরা একটি হাজ্জের সমতূল্য। [২৯৯৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমদানের একটি উমরা একটি হাজের সমতুল্য। [২৯৯৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রমদান মাসের উমরা হাজ্জের সমতূল্য। [২৯৯৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যিলকদ মাসের উমরা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল যিলকাদ মাসেই উমরা করেছেন। [২৯৯৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলকাদ মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে উমরা করেননি। [২৯৯৭] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
রজব মাসের উমরা
উরওয়াহ ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মাসে উমরা করেছেন? তিনি বলেন, রজব মাসে। তখন আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও রজব মাসে উমরা করেননি। আর তিনি যখনই উমরা করেছেন, বিন উমার (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন (কিন্তু তিনি ভুলবশত রজব মাসে বলেছেন)। [২৯৯৮]
তানঈম নামক স্থান থেকে উমরা করা
আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন আয়িশাহ (রাঃ) -কে নিজের জন্তুযানে করে নিয়ে যান এবং তানঈম নামক স্থান থেকে তার উমরা করার ব্যবস্থা করেন। [২৯৯৯] তাহকীক আলবানী: সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বিদায় হজ্জে রওয়ানা হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধতে চায় সে তা করতে পারে। আমি যদি সাথে কোরবানির পশু না আনতাম তবে অবশ্যই উমরার ইহরাম বাঁধতাম। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, কাফেলার কতক উমরার উদ্দেশ্যে এবং কতক হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলো। যারা উমরার নিয়াতে ইহরাম বাঁধে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমরা রওয়ানা হয়ে মক্কায় পৌছলাম। আরাফাত দিবস নিকটবর্তী হলে আমি হায়েজগ্রস্থ হলাম এবং তখনও উমরার ইহরাম খুলিনি। এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বলেন: তুমি উমরা ত্যাগ করো, মাথার চুলের বাঁধন খুলে ফেলো, তাতে চিরুনী করো এবং হজ্জের ইহরাম বাঁধো। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। যখন হাসবার রাত (যিলহজ্জ মাসের ১২ তম রাত) এলো এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদের হজ্জ পূর্ণ করলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে (আমার ভাই) আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর (রাঃ) কে পাঠালেন। তিনি আমাকে তাঁর উটের পিঠে পেছন দিকে তুলে নিয়ে তানঈম রওনা হলেন। সেখানে আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলাম। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হজ্জ ও উমরা পূর্ণ করে দিলেন এবং এজন্য আমাদের উপর না কোরবানী, না সদাকা, আর না রোযা বাধ্যতামূলক হয়েছিল। [৩০০০] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদিস থেকে উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধে, তাকে ক্ষমা করা হয়। [৩০০১] তাহকীক আলবানী: দুর্বল। উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি বায়তুল মাকদিস থেকে উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলে তাতে তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, অতএব আমি বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উমরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। [৩০০২] তাহকীক আলবানী: দুর্বল।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতটি উমরা করেছেন?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারবার উমরা করেছেন: হুদায়বিয়ার উমরা, পরবর্তী বছরের কাযা উমরা, তৃতীয়টি জি'রানা থেকে এবং চতুর্থটি তার বিদায় হজ্জের সাথে উমরা। [৩০০৩] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারবিয়ার দিন (৮ যিলহজ্জ) মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সলাত আদায় করেন, অত:পর ভোরবেলা আরাফাতে রওয়ানা হন। [৩০০৪] তাহকীক আলবানী: সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন, অত:পর সঙ্গীদের অবহিত করতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাই করতেন। [৩০০৫] তাহকীক আলবানী: হাসান।
মিনায় অবস্থান
আয়িশাহ (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার জন্য মিনায় একটি ঘর বানিয়ে দিবো না? তিনি বলেনঃ না, যারা আগে পৌছে যাবে মিনা তাদের ঠিকানা। [৩০০৬] তাহকীক আলবানী: দুর্বল। আয়িশাহ (রাঃ) আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি মিনায় আপনার জন্য একটি ঘর বানাবো না, যা আপনাকে ছায়া দান করবে? তিনি বলেন: না, মিনায় যারা আগে পৌছবে, তা তাদের ঠিকানা। [৩০০৭] তাহকীক আলবানী: দুর্বল।
ভোরবেলা মিনা থেকে আরাফাতে যাত্রা
আনাস (রাঃ) আমরা আজকের (৯ যিলহজ্জ) ভোরবেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিনা থেকে আরাফাতে রওয়ানা হয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে কতক তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতো এবং কতক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) উচ্চারণ করতো। এদের কেউই এজন্য পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করেননি। অথবা তিনি এ কথা বলেছেন যে, না এরা ওদের ত্রুটি নির্দেশ করেছে, আর না ওরা এদের ত্রুটি ধরেছে। [৩০০৮] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
আরাফাতে অবতরণের স্থান
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে 'নামিরা' উপত্যকায় অবতরণ করেছিলেন। রাবী বলেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, যুবায়ের (রাঃ) কে হত্যা করার পর বিন উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করে পাঠায় যে, আজকের এ দিনের কোন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খোতবা দিতে মাঠের কেন্দ্রস্থলে) রওয়ানা হতেন? তিনি বলেন, সেই সময় উপস্থিত হলে স্বয়ং আমরাই রওয়ানা হবো। অতএব তিনি কখন রওয়ানা হন তা লক্ষ্য করার জন্য হাজ্জাজ একজন লোক পাঠায়। বিন উমার (রাঃ) যখন রওয়ানা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? লোকেরা বললো এখনও ঢলেনি। তিনি বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? তারা বললো, এখনও ঢলেনি। কিছুক্ষণ পর তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সূর্য কি ঢলে পড়েছে? তারা বললো, হাঁ। তারা যখন বললো, সূর্য ঢলেছে তখন তিনি রওয়ানা হলেন। [৩০০৯] তাহকীক আলবানী: হাসান।
আরাফাতে অবস্থানস্থল
আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতে অবস্থান করেন এবং বলেন: এটাই অবস্থানস্থল, গোটা অরাফাতই অবস্থানস্থল। [৩০১০] তাহকীক আলবানী: সহীহ। ইয়াযীদ বিন শায়বান (রাঃ) আমরা এক স্থানেই অবস্থানরত ছিলাম, কিন্তু আরাফাত থেকে তা দূরে মনে হলো। ইতিমধ্যে বিন মিরবা' (রাঃ) আমাদের নিকট আসেন এবং বলেন, আমি তোমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দূত হিসাবে এসেছি। তিনি বলেন: তোমরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করো। কারণ তোমরা আজকে ইবরাহীম (আ:) এর উত্তরসূরি। [৩০১১] তাহকীক আলবানী: সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সমগ্র অরাফাতই অবস্থানস্থল, বাতনে আরাফাত থেকে উঠে যাও। গোটা মুযদালিফাই অবস্থানস্থল এবং বাতনে মুহাসসির থেকে উঠে যাও (সেখানে অবস্থান করো না)। সমস্ত মিনাই কুরবানীর স্থান, কিন্তু জামরাতুল আকাবার পশ্চাদভাগ নয়। [৩০১২] তাহকীক আলবানী: (اِلاَّ ماَ وَرَاءَ الْمَقَبَةِ) অর্থাৎ কিন্তু জামরাতুল আকাবার পশ্চাদভাগ নয়; কথাটি ব্যতীত সহীহ।
আরাফাতের দুআ'
আব্বাস বিন মিরদাস আস-সুলামী (রাঃ) নবী (রাঃ) আরাফাতে তৃতীয় প্রহরে তাঁর উম্মাতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে দুআ' করেন। জবাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়: আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম, স্বৈরাচারী যালেম ব্যতীত। কারণ আমি অবশ্যই তার উপর নির্যাতিতের প্রতিশোধ নিবো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে প্রভু! আপনি ইচ্ছা করলে নির্যাতিত ব্যক্তিকে জান্নাত দান করতে এবং যালেমকে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত এর কোন জবাব পাওয়া গেলো না। ভোরবেলা তিনি মুযদালিফায় পুনরায় উপরোক্ত দুআ' করেন। এবার তাঁর আবেদন কবুল হলো। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনন্দের হাসি দিলেন অথবা মুচকি হাসলেন। আবূ বাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! আপনি এ (হজ্জের) সময় কখনও হাসেননি, আজ কোন জিনিস আপনাকে হাসালো? আল্লাহ আপনাকে হাসিমুখে রাখুন। তিনি বলেন: আল্লাহর দুশমন ইবলীস যখন জানতে পারলো যে, মহামহিম আল্লাহ আমার দুআ' কবুল করেছেন এবং আমার উম্মাতকে ক্ষমা করেছেন, তখন সে গুড়া মাটি তুলে নিজের মাথায় ঢালতে ঢালতে বলতে লাগলো, হায় সর্বনাশ, হায় ধংস। আমি ওর যে অস্থিরতা দেখেছি তা আমাকে হাসিয়েছে। [৩০১৩] তাহকীক আলবানী: দূর্বল। আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরাফাতের দিন জাহান্নাম থেকে যতো অধিক সংখ্যক বান্দাকে নাজাত দেন, অন্য কোন দিন এতো অধিক বান্দাকে নাজাত দেন না। মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ এ দিন (বান্দার) নিকটবর্তী হন, অত:পর তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন: তারা কী চায়? [৩০১৪] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজরের পূর্বে আরাফাতে আসে
আবদুর রহমান বিন ইয়া'মার আদ-দীলী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আরাফাতে উপস্থিতকালে তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। নাজদ এলাকার কতক লোক তাঁর নিকট হাযির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কিভাবে সম্পন্ন হয়? তিনি বলেন: "আরাফাতে অবস্থান হচ্ছে হজ্জ"। অতএব যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজর সলাতের পূর্বেই আরাফাতে এসে পৌঁছলো তার হজ্জ পূর্ণ হলো। মিনায় তিন দিন (১১,১২ ও ১৩ যুলহিজ্জা) অবস্থান করতে হয়। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি দু'দিন অবস্থানের পর চলে আসে, তবে তাতে কোন গুনাহ নেই। অত:পর তিনি কোন ব্যক্তিকে নিজ বাহনের পেছনে উঠিয়ে নিলেন এবং সে উচ্চৈ:স্বরে একথা ঘোষণা করতে থাকলো। ২/৩০১৫ (১) . আবদুর রহমান বিন ইয়া'মার আদ-দীলী (রাঃ) , তিনি বলেন, আমি আরাফাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলাম। তখন নাজদের একদল লোক তাঁর নিকট উপস্থিত হলো ... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনূরূপ। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বলেন, আমি সাওরীর কোন রিওয়ায়াত এ হাদীসের তুলনায় অধিক উত্তম পাইনি। [৩০১৫] তাহকীক আলবানী: সহীহ। উরওয়া বিন মুদাররিস আত-তায়ী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে হজ্জ করেন। লোকেরা যখন মুযদালিফায় ছিল তখন তিনি পৌছেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমার উষ্ট্রীকে শীর্ণকায় করে ফেলেছি (দীর্ঘ সফরে) এবং নিজেও কষ্টক্লেশ করেছি। আল্লাহর শপথ! আমি এমন কোন ঢিলা ত্যাগ করিনি যার উপর অবস্থান করিনি। আমার হজ্জ হয়েছে কি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের সাথে নামাযে শরীক হয়েছে এবং আরাফাতে অবস্থানের পর রাতে অথবা দিনে প্রত্যাবর্তন করেছে সে নিজের ময়লা-মালিন্য (নখ-চুল ইত্যাদি) দূর করেছে এবং তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে। [৩০১৬] তাহকীক আলবানী: সহীহ।
আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তন
উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তনকালে কিভাবে পথ অতিক্রম করতেন? তিনি বললেন, তিনি জন্তযানে আরোহিত অবস্থায় কিছুটা দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম করতেন। উন্মুক্ত জায়গা পেলে তিনি দ্রুত চলতেন। ওয়াকী (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ প্রথমোক্ত গতিবেগের তুলনায় অধিক দ্রুত বেগে (চলতেন)। [৩০১৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) কুরাইশগণ বললেন, আমরা তো বায়তুল্লাহর অধিবাসী। তাই আমরা হারামের বাইরে যাই না (আরাফাত হারামের সীমার বাইরে হওয়াতে তারা আরাফাতে যেতো না)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেনঃ “আতঃপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন কর।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৯)। [৩০১৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
প্রয়োজনবোধে আরাফাত ও মুযদালিফার মাঝে যাত্রাবিরতি।
উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে (আরাফাত থেকে) প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন তিনি সেই উপত্যকায় পৌঁছালেন যেখানে সম্ভ্রান্ত লোকেরা যাত্রাবিরতি করে, তখন সেখানে যাত্রাবিরতি দিয়ে পেশাব করেন, অতঃপর উযু করেন। আমি বললাম, (মাগরিবের) নামায পরে নিন। তিনি বলেনঃ আরও সামনে এগিয়ে গিয়ে নামায পড়বো। তিনি মুযদালিফায় পৌঁছলে আযান ও ইকামত দেওয়া হল এবং মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর কেউ জন্তুযানের পালান না খুলতেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এশার সালাত আদায় করলেন। [৩০১৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মুযদালিফায় দু’ওয়াক্তের নামায একসঙ্গে পড়া।
আবদুল্লাহ বিন ইয়াযীদ আল-খাতমী (রাঃ) তিনি আবূ আয়্যূব (খালিদ বিন যায়দ) আল-আনসারী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, আমি বিদায় হজ্জের সফরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামায পড়েছি। [৩০২০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। আমরা যখন উটগুলো বসাচ্ছিলাম তখন তিনি বলেনঃ (এশার) সালাতের ইকামাত হচ্ছে। [৩০২১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মুযদালিফায় অবস্থান।
আমর বিন মায়মূন আমরা উমার ইবনূল খাত্তাব (রাঃ) -এর সাথে হজ্জ করেছি। আমরা যখন মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম তখন তিনি বলেন, মুশরিকরা বলতো, হে সাবীর (মুযদালিফার একটি পাহাড়) ! উজ্জ্বল হও, আমরা প্রত্যাবর্তন করবো। তারা সূর্য না উঠা পর্যন্ত (মুযদালিফা থেকে) প্রত্যাবর্তন করতো না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিপরীত আমল করেন এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে (মিনার উদ্দেশ্যে) রওয়ানা করেন। [৩০২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে ধীরেসুস্থে (মুযদালিফা থেকে) রওয়ানা করেন এবং লোকেদেরও শান্তভাবে রওয়ানা হতে বলেন। (মিনায় পৌঁছার পর) তিনি তাদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন ক্ষুদ্র কাঁকর নিক্ষেপ করে। তিনি নিজে (মুযদালিফা ও মিনার মাঝখানে অবস্থিত) ওয়াদী মুহাসসির দ্রুত অতিক্রম করেন এবং বলেনঃ আমার উম্মাত যেন হজ্জের অনুষ্ঠানাদি শিখে নেয়। কারণ এ বছরের পর হয়তো আমি তাদের সাথে মিলিত হতে পারবো না। [৩০২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। বিলাল বিন রাবাহ (রাঃ) মুযদালিফার দিন ভোরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে বিলাল! লোকেদের চুপ করতে বল। আতঃপর তিনি বলেনঃ এই মুযদালিফায় আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের প্রতি যথেষ্ট অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদের উত্তম লোকেদের ওয়াসীলায় তোমাদের গুনাহগারদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল ব্যক্তি যা প্রার্থনা করেছে তিনি তাকে তা দিয়েছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। [৩০২৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যে ব্যক্তি কংকর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে মুযদালিফা থেকে আগেভাগে চলে যায়।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে অর্থাৎ আবদুল মুত্তালিব গোত্রের অল্প বয়স্কদের আমাদের গাধাগুলোয় চড়িয়ে মুযদালিফা থেকে আগেভাগে পাঠিয়ে দেন। তিনি আমাদের উরুর উপর হালকা আঘাত করে বলতেনঃ আমার কচিকাঁচা! সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত জামরায় পাথর নিক্ষেপ করো না। সুফইয়ান এর বর্ণনায় আরও আছে, সূর্যোদয়ের পূর্বে কেউ কাঁকর নিক্ষেপ করতো কিনা জানি না। [৩০২৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের যেসব দুর্বল লোকেদের (মুযদালিফা থেকে মিনায়) আগেভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। [৩০২৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) নিশ্চয় সাওদা বিনতু যামআহ (রাঃ) স্থূলকায় ছিলেন। তিনি মুযদালিফা থেকে লোকেদের রওনা হওয়ার আগেই চলে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। [৩০২৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
জামরায় নিক্ষেপের কঙ্করের আকার।
উম্মু জুনদুব (রাঃ) কোরবানির দিন জামরাতুল আকাবার নিকটে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খচ্চরের পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখেছি। তখন তিনি বলেছেনঃ হে লোকসকল! যখন তোমরা জামরায় (কংকর ) নিক্ষেপ করতে যাবে তখন সেখানে ক্ষুদ্র আকারের কংকর নিক্ষেপ করবে। [৩০২৮] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল আকাবার ভোরে তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় বলেনঃ আমার জন্য কংকর সংগ্রহ করে লও। আমি তাঁর জন্য সাতটি কংকর সংগ্রহ করলাম। তা ছিল আকারে ক্ষুদ্র। তিনি তা নিজের হাতের তালুতে নাড়াচাড়া করতে করতে বলেনঃ এই আকারের ক্ষুদ্র কংকর নিক্ষেপ করবে। তিনি পুনরায় বলেনঃ দ্বীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে তোমরা সাবধান থাকো। কেননা তোমাদের পূর্বেকার লোকদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে তাদের বাড়াবাড়ি ধ্বংস করেছে। [৩০২৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যেখানে দাঁড়িয়ে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) জামরাতুল আকাবায় পৌঁছে উপত্যকার নিম্নভূমিতে কাবাকে সামনে রেখে এবং জামরাতুল আকাবাকে ডান দিকে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। তিনি প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে সাথে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করেন, অতঃপর বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই! যে মহান ব্যক্তির উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছিল তিনি এখান থেকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। [৩০৩০] উম্মু জুনদুব (রাঃ) আমি কোরবানির দিন জামরাতুল আকাবার নিকটে উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। তিনি প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে সাথে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করেন, অতঃপর প্রত্যাবর্তন করেন। [৩০৩১] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর তথায় অবস্থান করবে না।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর সেখানে আর অবস্থান করেন নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এরূপ করেন। [৩০৩২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করে চলে যেতেন, অবস্থান করতেন না। [৩০৩৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
আরোহিত অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করা।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীতে আরোহিত অবস্থায় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করেন। [৩০৩৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। কুদামাহ বিন আবদুল্লাহ আল-আমিরী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কোরবানির দিন লাল-সাদা মিশ্র বর্ণের একটি উষ্ট্রীতে সওয়ার অবস্থায় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। এতে না ছিল আঘাত, না ছিল হাঁকানো, না এদিক, না ওদিক। [৩০৩৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ওজরবশত কংকর নিক্ষেপে বিলম্ব করা।
আসিম বিন আদী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উট চারকদের একদিন কাঁকর নিক্ষেপ করার ও একদিন বিরতি দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। [৩০৩৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আসিম বিন আদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উট চারকদের মিনায় অথবা তার বাইরে রাত যাপনের অনুমতি দিয়েছেন, যেন তারা কোরবানীর দিন কংকর নিক্ষেপ করে। এরপর কোরবানীর পরে দু’দিনের কংকর একসাথে নিক্ষেপ করবে। তারা ঐ দু’দিনের যে কোন একদিন তা নিক্ষেপ করবে। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় আবদুল্লাহ দিন আবূ বকর বলেছেন, প্রথম দিন (কোরবানির দিন) কংকর নিক্ষেপ করবে, অতঃপর প্রস্থানের দিন কংকর নিক্ষেপ করবে। [৩০৩৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শিশুদের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ
জাবির (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হজ্জ করলাম। আমাদের সাথে মহিলা ও শিশুরা ছিল। আমরা শিশুদের পক্ষ থেকে তালবিয়া পাঠ ও কংকর নিক্ষেপ করেছি। [৩০৩৮] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
হজ্জ আদায়কারী কখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবে ?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রেখেছেন যতক্ষন না জামরাতুল আকাবায় (কোরবানীর দিন) কংকর নিক্ষেপ করেছেন। [৩০৩৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) ফাদল বিন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একই বাহনে তাঁর পিছনে সওয়ার ছিলাম। আমি তাকে অনবরত তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি, যতক্ষন না তিনি জামরাতুল ‘আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করেছেন। তিনি যখন তা নিক্ষেপ করেন, তখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করেছেন। [৩০৪০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
জামরাতুল ‘আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর হাজ্জীদের জন্য যা বৈধ হয়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন তোমরা জামরায় কংকর নিক্ষেপ করলে, তখন স্ত্রীসংগ ব্যাতীত সবকিছু হালাল হয়ে গেল। এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করেন, হে বিন আব্বাস! সুগন্ধিও? তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার বক্তব্য এই যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নিজ মাথায় কস্তুরী মাখতে দেখেছি (কংকর নিক্ষেপের পরে)। তা সুগন্ধি কি নয়? [৩০৪১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ইহরাম বাঁধার আগে সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছি এবং যখন তিনি ইহরাম খুলেছেন তখনও। [৩০৪২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মাথা কামানো
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ! যারা মাথা মুণ্ডন করিয়েছে তাদের ক্ষমা করুন। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা নিজেদের মাথার চুল ছাঁটিয়েছে? তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! যারা নিজেদের মাথা মুণ্ডন করিয়েছে তাদের ক্ষমা করুন। এ কথা তিনি তিনাবার বলেন। সাহাবীগন বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যারা নিজেদের মাথার চুল ছাঁটিয়েছে তাদের জন্যও। তিনি বলেনঃ যারা চুল ছাঁটিয়েছে তাদের জন্যও। [৩০৪৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যারা মাথা মুণ্ডন করিয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি দয়া করুন। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা চুল ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও। তিনি বলেনঃ যারা মাথা মুণ্ডন করিয়েছে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি দয়া করুন। তারা বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যারা চুল ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও। তিনি বলেনঃ যারা চুল ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও। [৩০৪৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যারা মাথা মুণ্ডন করিয়েছে আপনি তাদের জন্য তিনবার, আর যারা চুল ছাঁটিয়েছে তাদের জন্য একবার মাত্র দুআ’ করেছেন, এর কারন কী? তিনি বলেনঃ যারা মাথা মুণ্ডন করিয়েছে তারা সন্দেহ করেনি (অর্থাৎ উত্তম কাজ সন্দেহমুক্তভাবে সমাধা করেছে)। [৩০৪৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
যে ব্যাক্তি নিজ মাথার চুল একত্রে জমাতবদ্ধ করে
হাফসাহ (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! লোকেরা ইহরামমুক্ত হয়েছে, আর আপনি এখনও উমরার ইহরাম থেকে মুক্ত হননি, এর কারণ কী? তিনি বলেনঃ আমি আমার মাথার চুল জমাটবদ্ধ করে নিয়েছি এবং সাথে কোরবানির পশু এনেছি। তাই কোরবানী না করা পর্যন্ত আমি ইহরামমুক্ত হতে পারি না। [৩০৪৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মাথার চুল একত্রে জমাটবদ্ধ অবস্থায় লাব্বাইক ধ্বনি করেছেন। [৩০৪৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কোরবানির বর্ণনা
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন মিনার সমস্ত এলাকাই কোরবানীর স্থান, মক্কার প্রতিটি প্রশস্ত সড়কই রাস্তা এবং কোরবানীর স্থান, আরাফাতের গোটা এলাকাই অবস্থানস্থল এবং মুযদালিফার সমস্ত এলাকাও অবস্থানস্থল। [৩০৪৮] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হজ্জের অনুষ্ঠানাদিতে অগ্রপশ্চাৎ করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হজ্জের অনুষ্ঠানাদিতে অগ্র-পশ্চাৎ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দু’হাতের ইশারায় বলেনঃ কোন ক্ষতি নেই। [৩০৪৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) , মিনার দিবসে লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেতেন, কোন দোষ নেই, কোন ক্ষতি নেই। অতএব এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, কোরবানীর পূর্বে আমি মাথা মুণ্ডন করিয়েছি। তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই। আরেকজন বললো, আমি সন্ধ্যায় কাঁকর নিক্ষেপ করেছি। তিনি বললেন, কোন ক্ষতি নেই। [৩০৫০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মাসাআলা জানতে চাওয়া হলো যে, কোন ব্যক্তি মাথা মুণ্ডনের পূর্বে কোরবানী করেছে অথবা কোন ব্যক্তি কোরবানীর পূর্বে কামিয়েছে। তিনি বলেনঃ তাতে কোন দোষ নেই। [৩০৫১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানীর দিন লোকেদের উদ্দেশে মিনায় বসলেন। এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কোরবানী করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করেয়েছি। তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই। অপর এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কংকর নিক্ষেপের পূর্বে কোরবানী করেছি। তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই। সেদিন কোন অনুষ্ঠান কোন অনুষ্ঠানের আগে বা পরে সম্পন্ন করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই। [৩০৫২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
তাশরীকের দিনসমূহে (১১-১২-১৩ যিলহজ্জ) জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা
জাবির (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জামরাতুল আকাবায় পূর্বাহ্ণে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। তিনি এরপরের (দিনগুলোতে) পাথর নিক্ষেপ করেন অপরাহ্ণে। [৩০৫৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (অপরাহ্ণে) সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জামরায় কাঁকর নিক্ষেপ করতেন, কাঁকর নিক্ষেপের পর তাঁর নামায পরার সময় হয়ে যেতো। [৩০৫৪] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল।
কোরবানীর দিনের ভাষণ
আমর ইবনুল আহ্ওয়াস (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিদায় হজ্জে বলতে শুনেছিঃ হে লোকসকল! কোন্ দিনটি সর্বাধিক সম্মানিত? তিনি তিনবার এ কথা বলেন। তারা বলেন, হজ্জের বড় দিন। তিনি বলেনঃ তোমাদের রক্ত (জীবন) , তোমাদের সম্পদ, তোমাদের মান-সম্ভ্রম তোমাদের পরস্পরের জন্য (তাতে হস্তক্ষেপ করা) হারাম, যেভাবে তোমাদের এ দিনে, এই মাসে এবং এই শহরে হারাম। সাবধান! কেউ অপরাধ করলে সেজন্য তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে দায়ী করা যাবে না এবং পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করা যাবে না। জেনে রাখো ! তোমাদের এই শহরে শয়তান নিজের জন্য ইবাদাত পাওয়া থেকে চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কতগুলো কাজ যা তোমরা তুচ্ছজ্ঞানে করতে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য করো এবং তাতে সে খুশি হয়ে যায়। সাবধান! জাহিলী যুগের সকল রক্তের (হত্যার) দাবি রহিত হলো। এসব দাবির মধ্যে আমি সর্ব প্রথম আল-হারিস বিন আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবি রহিত করছি, সে লাইস গোত্রে প্রতিপালিত হওয়াকালে হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। সাবধান! জাহিলী যুগের সমস্ত সূদের দাবি রহিত হলো। তবে তোমরা মূলধন ফেরত পাবে, তোমরাও জুলুম করবে না এবং জুলুমের শিকারও হবে না। শোনো হে আমার উম্মাত! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? একথা তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করেন। তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। একথাও তিনি তিনবার বলেন। [৩০৫৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জুবায়র বিন মুতইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনার মসজিদুল খায়ফ-এ দাঁড়িয়ে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন যে আমার কথা শোনে, অতঃপর তা (অন্যদের নিকট) পৌঁছে দেয়। জ্ঞানের অনেক বাহক মূলত জ্ঞানী নয়। কোন কোন জ্ঞানের বাহক যার নিকট জ্ঞান বয়ে নিয়ে যায়, সে তার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনটি বিষয়ে মুমিন ব্যক্তির অন্তর প্রতারণা করতে পারে না। (১) একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) জন্য ‘আমাল (কাজ) করা, (২) মুসলিম শাসকবর্গকে সদুপদেশ প্রদানে এবং (৩) মুসলিম জামা’আতের (সমাজের) সাথে সংঘবদ্ধ থাকার ব্যপারে। কারণ মুসলমানদের দুআ’ তাদেরকে পেছন থেকে পরিবেষ্টন করে রাখে। [৩০৫৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে তাঁর স্বীয় উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্হায় বলেনঃ তোমরা কি জানো আজ কোন দিন, এটা কোন মাস এবং এটা কোন শহর? তারা বলেন, এটা (মক্কা) সন্মানিত শহর , সন্মানিত মাস ও সন্মানিত দিন। তিনি আরো বলেনঃ সাবধান ! তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের প্রতি তেমনি হারাম যেমনি তোমাদের এই মাসের সন্মান রয়েছে তোমাদের এই শহরে তোমাদের এই দিনে। শুনে রাখো ! আমি তোমাদের আগেই হাওযে কাওসারে উপস্থিত থাকবো। অন্যান্য উম্মাতের তুলনায় তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে আমি গৌরব করবো। তোমরা যেন আমার চেহারা কালিমালিপ্ত না করো। সাবধান! কিছু লোককে আমি মুক্ত করতে পারবো। আর কিছু লোককে আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। তখন আমি বলবো , হে আল্লাহ ! এরা তো আমার সাহাবী ! তিনি বলবেনঃ তোমার পরে এরা কী বিদআতী কাজ করেছে, তা তুমি জানো না। [৩০৫৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বছর হজ্জ করেন, সেই বছর কোরবানির দিন জামরাসমূহের মধ্যস্থলে দাঁড়ালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেনঃ আজ কোন দিন? সাহাবীগণ বললেন, কোরবানীর দিন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কোন শহর? তারা বললেন, এটা আল্লাহর সন্মানিত শহর। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন মাস? তারা বললেন, আল্লাহর সন্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ এটি হজ্জের বড় দিন। তোমাদের রক্ত , তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের মান-সম্ভ্রম ( প্রভৃতির উপর হস্তক্ষেপ ) তোমাদের জন্য হারাম , যেমন এই শহরের হুরমাত ( সন্মান) এই মাসে এবং এই দিনে। তিনি পুনরায় বলেনঃ আমি কি পৌছে দিয়েছি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বলতে শুরু করলেনঃ হে আল্লাহ! সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি লোকেদের বিদায় দেন। তখন তারা বলেন, এটা বিদায় হজ্জ। [৩০৫৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
বাইতুল্লাহ যিয়ারত
আয়িশাহ (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত পর্যন্ত তাওয়াফে যিয়ারত বিলম্ব করেন। [৩০৫৯] তাহকীক আলবানীঃ শায। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওয়াফে যিয়ারতের সাত চক্করে রমল ( বাহু দুলিয়ে বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ) করেননি। আতা (রহঃ) বলেন, তাওয়াফে যিয়ারতে রমল করতে হয় না। [৩০৬০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যমযমের পানি পান করা
মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর (মাকবুল) আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এলে তিনি জিজ্ঞেস করনে, তুমি কোথা থেকে এসেছো? সে বললো যমযমের নিকট থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি তা থেকে প্রয়োজনমত পান করেছ? সে বললো ,তা কিরুপে? তিনি বললেন , তুমি তা থেকে পান করার সময় কিবলামুখী হবে , আল্লাহর নাম স্মরন করবে , তিনবার নিঃশ্বাস নিবে এবং তৃপ্তি সহকারে পান করবে। পানি পান শেষে তুমি মহামহিম আল্লাহর প্রশংসা করবে। কারন , রাসুলাল্লাহ ( (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) বলেছেনঃ আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে নিদর্শন এই যে, তারা তৃপ্তি সহকারে যমযমের পানি পান করে না। [৩০৬১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাযিঃ) আমি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যমযমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে , তা অর্জিত হবে। [৩০৬২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কা’বা ঘরের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করা
ইবনু উমার (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন কাবা ঘরে প্রবেশ করেন। তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল ও উসমান বিন শায়বাহ (রাঃ)। তাঁরা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা বেরিয়ে এলে আমি বিলালাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন স্হানে নামায পড়েছেন? তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, তিনি ভিতরে প্রবেশ করে ডান দিকের দু’স্তম্ভের মাঝখানে দাড়িয়ে তার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেন। অতপর আমি নিজেকে তিরস্কার করলাম যে, আমি কেন জিজ্ঞেস করলাম না যে, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত রাকাত নামায পরেছেন। [৩০৬৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট থেকে আনন্দিত চোখে ও উৎফুল্ল চিত্তে বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু বিষণ্ণ অবস্হায় ফিরে এলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার নিকট থেকে চক্ষু শীতল অবস্থায় বেরিয়ে গেলেন, অথচ দুশ্চিন্তাযুক্ত অবস্হায় ফিরে এলেন। তিনি বলেনঃ আমি কা’বা ঘরে প্রবেশ করার পর ভাবলাম, আমি যদি এটা না করতাম! আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, আমার উম্মাতের কষ্ট হবে। [৩০৬৪] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্হান
ইবনু উমার (রাঃ) আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) মিনার দিনগুলোর রাত মক্কায় কাটানোর জন্য রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। কারন হাজ্জীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত ছিল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। [৩০৬৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্বাস (রাঃ) ব্যাতীত আর কাউকে মিনার রাতগুলোতে মক্কা অবস্থানের অনুমতি দেননি। কারন তার উপর পানি সরবরাহের দায়িত্ব অর্পিত ছিল। [৩০৬৬] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল।
মুহাস্সাবে যাত্রা বিরতি
আয়িশাহ (রাঃ) আল-আবতাহ্’ নামক স্থানে যাত্রাবিরতি সুন্নাত নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - সেখানে এজন্য যাত্রাবিরতি করেন যাতে মদীনার উদ্দেশ্যে তাঁর রওয়ানা করা সহজ হয়। [৩০৬৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা বাতহা নামক স্থান থেকে মদীনার উদ্দেশে রওনা হন। [৩০৬৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। . ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) বাতহা নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করতেন। [৩০৬৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
বিদায়ী তাওয়াফ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) লোকেরা বিক্ষিপ্তভাবে সব দিকে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শেষবারের মত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ যেন প্রস্থান না করে। [৩০৭০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) শেষবারের মত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে (মক্কা থেকে) প্রস্থান করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [৩০৭১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ঋতুবতী স্ত্রীলোক বিদায়ী তাওয়াফ না করে প্রস্থান করতে পারে
আয়িশাহ (রাঃ) তাওয়াফে ইফাদা করার পর সাফিয়্যা বিনতু হুয়ায় (রাঃ) ঋতুবতী হলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জানালাম। তিনি বলেন, সে কি আমাদের আটক রাখবে? আমি বললাম, তিনি তাওয়াফে ইফাযা করেছেন, অতঃপর ঋতুবতী হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - বললেন তাহলে রওয়ানা হতে পারো। [৩০৭২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) সম্পর্কে জানতে চাইলে আমরা বললাম, সে ঋতুবতী হয়েছে। তিনি বলেনঃ বন্ধ্যা, ন্যাড়া, সে তো আমাদের আটকে ফেলেছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি কোরবানীর দিন তাওয়াফ করেছেন। তিনি বলেনঃ তাহলে অসুবিধা নেই। তোমরা তাকে রওনা হতে বলো। [৩০৭৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ের হজ্জ
মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসায়ন বিন আলী বিন আবূ তালিব আমরা জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে তিনি সাক্ষাতপ্রার্থীদের পরিচয় জানতে চান। আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে আমি বলি যে, আমি ইবনুল হুসাইনের পুত্র মুহাম্মাদ। অতএব তিনি (স্নেহভরে) আমার দিকে তার হাত বাড়ালেন এবং তা আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি প্রথমে আমার পরিচ্ছদের উপর দিকের বোতাম, অতঃপর নিচের বোতাম খুললেন, অতঃপর তার হাত আমার বুকের উপর রাখলেন। আমি তখন উঠতি বয়সের যুবক। তিনি বলেন, তোমাকে মোবারকবাদ জানাই। তুমি যা জানতে চাও জিজ্ঞেস করো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এ সময় তিনি (বাধ্যর্কজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ইতোমধ্যে সলাতের ওয়াক্ত হলো। তিনি নিজেকে একটি চাদরে আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাদরের প্রান্তভাগ নিজের কাঁধের উপর রাখতেন, তা (আকারে) ছোট হওয়ার কারণে নিচে পড়ে যেতো। তার আরেকটি বড় চাদর তার পাশেই আলনায় রাখা ছিল। তিনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর (বিদায়) হাজ্জ্ সম্পর্কে অবহিত করুন। জাবির (রাঃ) স্বহস্তে (৯) সংখ্যার প্রতি ইংগিত করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন এবং (এ সময়কালের মধ্যে) হজ্জ করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকেরদের মধ্যে ঘোষণা করালেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এ বছর) হজ্জে যাবেন। সুতরাং মদীনায় অসংখ্য লোকের সমাগম হলো। তাদের প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করতে এবং তাঁর অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী। অতএবং তিনি রওয়ানা হলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা যুল-হুলাইফা নামক স্থানে পৌঁছলে আসমা বিনতু উমাইস (রাঃ) মুহাম্মাদ বিন আবূ বাকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, এমন অবস্থায় আমি কী করবো? তিনি বলেনঃ তুমি গোসল করো, এক খণ্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বাঁধো এবং ইহরামের পোশাক পরিধান করো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - মসজিদে (ইহরামের দু’রাক’আত) সলাত আদায় করলেন, অতঃপর ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অবশেষে ‘বায়দা’ নামক স্থানে তাঁর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তখন আমি (জাবির) সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টিযায় তাকিয়ে দেখলাম, লোকে লোকারণ্য, কতক সওয়ারীতে এবং কতক পদব্রজে অগ্রসর হচ্ছে। ডান দিকে, বাঁ দিকে এবং পেছনেও একই দৃশ্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তাৎপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন আমরাও তাই করতাম। তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এই তালবিয়া পাঠ করলেনঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইকা ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নিয়’মাতা লাকা ওয়াল-মুলকা লা শারীকা লাকা” (আমি তোমার দরবারে হাজির আছি যে আল্লাহ, আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দরবারে হাজির। তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, সমস্ত নিয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও, তোমার কোন শরীক নাই)। লোকেরাও উপরোক্ত তালবিয়া পাঠ করলো যা (আজকাল) পাঠ করা হয়। লোকেরা তাঁর তালবিয়ার সাথে কিছু শব্দ বাড়িয়ে বলেন, কিন্তু তিনি তাদের বাধা দেননি। আর রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত তালবিয়াই পাঠ করেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা হজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়াত করিনি, আমরা উমরার কথা জানতাম না। অবশেষ আমরা তাঁর সাথে বাইতুল্লাহ শরীফে পৌঁছলে তিনি রুকন (হাজরে আসওয়াদ) চুম্বন করলেন, অতঃপর (সাতবর কাবা ঘর) তাওয়াফ করলেন, (প্রথম) তিনবার দ্রুত গতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে তিলাওয়াত করলেনঃ “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো” (সূরা বাকারাঃ ১২৫) তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও বাইতুল্লাহর মাঝখানে রেখে (দুই রাক’আত সলাত আদায় করলেন)। (জা’ফর বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মাদ) বলতেন, আমি যতদূর জানি, তিনি (জাবির) বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি দু’ রাক্আত নামাযে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পড়েছেন। অতঃপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহ ফিরে এলেন এবং হাজরে আসওয়াদে চুমা দিলেন। অতঃপর তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম” (সূরা বাকারাঃ ১৫৮) এবং (আরও বললেন) আল্লাহ তা’আলা যা দিয়ে আরম্ভ করেছেন আমরাও তা দিয়ে আরম্ভ করবো। অতএব তিনি সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলে এবং তার এতোটা উপরে আরোহন করলেন যে, বাইতুল্লাহ শরীফ দেখতে পেলেন। তিনি (কিবলামুখী হয়ে) আল্লাহর একত্ব ও মহত্ব ঘোষণা করলেন এবং এ দুআ’ পড়েন : “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল-মুলক ওয়া লাহুল-হামদু ইউহ্যী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়েন কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু আনজাযা ওয়াদাহু ওয়অ নাসারা আবদাহু ওয়আ হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই, তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন, নিজের বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন)। তিনি এ দুআ’ তিনবার পড়লেন এবং মাঝখানে অনুরূপ আরো কিছু দুআ’ পড়লেন। অতঃপর তিনি নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অ্গ্রসর হলেন, যাবত না তাঁর পা মোবারক উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকলো। তিনি দৌড়ে চললেন যাবত না উপত্যকার মধ্যভাগ অতিক্রম করলে। মারওয়া পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন, যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। শেষ তাওয়াফে তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে (লোকেদের সম্বোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আগে বুঝতে পারতাম যে, আমার কী করা উচিত তাহলে আমি সাথে করে কোরবানীর পশু আনতাম না এবং (হজ্জের) ইহরামকে উমরায় পরিবর্তিত করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কোরবানীর পশু নাই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং একে উমরায় পরিণত করে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং যাদের সাথে কোরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত সকলেই ইহরাম খুলে ফেলেন এবং চুল ছোট করলেন। এ সময় সুরাকা বিন মালিক বিন জুশুম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতের আংগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢুকিয়ে দু’বার বললেনঃ উমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করলো, না, বরং সর্বকালের জন্য। এ সময় আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য কোরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাতিমা (রাঃ) কেও তাদের অন্তুর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীন কাপড় পরিহিত ছিলেন এবং চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তা অপছন্দ করলেন। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (রাবী বলেন) এরপর আলী (রাঃ) ইরাকে অবস্থানকালে বলতেন, তখন আমি রাসূলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হলাম ফাতিমার উপর অসন্তুষ্ট অবস্থায়, সে যা করেছে সে সম্পর্কে মাসআলা জানার জন্য। আমি তাঁকে বললাম যে, আমি তার এ কাজ অপছন্দ করেছি। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ফাতিমা ঠিকই করেছে, ঠিকই বলেছে! তুমি হজ্জের ইহরাম বাঁধার সময় কী বলেছিলে? আলী (রাঃ) বলেন, আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম যে নিয়াতে ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রাসূল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার সাথে কোরবানীর পশু আছে, অতএব তুমি (আলী) ইহরাম খুলো না। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইয়ামেন থেকে যে পশুপাল নিয়ে আসেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের সাথে করে যে পশুগুলো নিয়ে এসেছিলেন এর সর্বমোট সংখ্যা দাঁড়ায় একশত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং যাদের সাথে কোরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেলেন এবং চুল ছোট করে। অতঃপর তারবিয়ার দিন (৮ যিলহজ্জ) শুরু হলে লোকেরা পুনরায় ইহরাম বাঁধলো এবং মিনার দিকে রওয়ানা হলো। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হয়ে গেলেন এবং তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত তথায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন এবং তাঁর জন্য নামিরা নামক স্থানে গিয়ে তাঁবু টানানোর জন্য নির্দেশ দিলেন, অতঃপর নিজেও রওয়ানা হয়ে গেলেন। কুরাইশগণ নিশ্চিত ছিল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাশআরুল হারাম নামক স্থানে অবস্থান করবেন, যেমন কুরাইশগণ জাহিলী যুগে এখানে অবস্থান করতো (মানহানি হওয়ার আশঙ্কায় তারা সাধারনের সাথে একত্রে আরাফাতে অবস্থান করতো না)। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন যাবত না আরাফাতে পৌঁছলেন। তিনি দেখতে পেলেন, নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন। অবমেষ সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়লে তিনি তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রী সাজানোর জন্য নির্দেশ দিলে তা সাজানো হলো। অতঃপর তিনি উপত্যকার মাঝখানে আসেন এবং লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ “তোমাদের জীবন ও সম্পদ তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেভাবে এই দিনে, এই মাসে এবং এই শহরে হারাম”। “সাবধান! জাহিলী যুগের সকল জিনিস (অপ-সংষ্কৃতি) রহিত হলো। আমাদের (বংশের) রক্তের দাবির মধ্যে সর্বপ্রথম আমি রবীআ ইবনুল হারিসের রক্তের দাবি রহিত করলাম”। সে সাদ গোত্রে শিশু অবস্থায় লালিত-পালিত হওয়াকালীন হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল। “জাহিলী যুগের সূদও রহিত করা হলো। আমাদের বংশের প্রাপ্য সূদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমি আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস (রাঃ) -র প্রাপ্য সমুদয় সূদ রহিত করলাম”। “তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামানতে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর কালামের মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের অন্দর মহলে এমন কোন লোককে যেতে না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা অনুরূপ কাজ করে তবে তাদেরকে হাল্কাভাবে মারপিট করবে। আর তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তোমরা ন্যয়সঙ্গতভাবে তাদের পোশাক ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে”। “আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব”। “তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? উপস্থিত জনতা বললো, আমরা সাক্ষ্য দিবো যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন, আপনার কর্তব্য পালন করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন”। অতঃপর তিনি নিজের তর্জনী (শাহাদাত আঙ্গুল) আকাশের দিকে উত্তোলন করেন এবং জনতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন (তিনবার) অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসওয়ার উপর সওয়ার হয়ে আল মাওকিফ (অবস্থানস্থল) এ এলেন, নিজের কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর পেট পাথরের স্তুপের দিকে করে দিলেন এবং পায়ে হাঁটার পথ নিজের সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি উসামা (রাঃ) -কে তাঁর বাহনের পেছন দিকে বসালেন এবং কাসওয়ার নাসারন্ধ্রের দড়ি সজোরে টান দিলেন, ফলে এর মাথা জিনপোষ স্পর্শ করলো (এবং তা অগ্রযাত্রা শুরু করলো)। তিনি তাঁর ডান হাতের ইশারায় বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! শান্তভাবে, শান্তভাবে (ধীরে সুস্থে মধ্যম গতিতে) অগ্রসর হও”। তখনই তিনি বালুর স্তূপের নিকট পৌঁছতেন, কাসওয়ার নাসারন্ধ্রের দড়ি কিছুটা ঢিল দিতেন, যাতে তা উপর দিকে উঠতে পারে। এভাবে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছলেন এবং এখানে এক আযানে ও দু’ ইকামতে মাগরিব ও ইশার সলাত আদায় করলেন। এই দু’ সলাতের মাঝখানে অন্য কোন সলাত আদায় করেননি। অতপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুয়ে ঘুমালেন যাবত না ফজরের ওয়াক্ত হলো। অতঃপর ঊষা পরিস্কার হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইকামাতসহ ফজরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর কাসওয়ার পিঠে আরোহন করে ‘মাশআরুল-হারাম’ নামক স্থানে আসেন। এখানে তিনি (কিবলামুখী হয়ে) আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তাঁর মহত্ব বর্ণনা করলেন, কলেমা তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। আকাশ যথেষ্ট পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন। সূর্য উদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওয়ানা হলেন এবং ফাযল বিন আব্বাসকে সওয়ারীতে তাঁর পিছনে বসালেন। সে ছিল সুদর্শন যুবক এং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অগ্রসর হলেন তখন (পাশাপাশি) একদল মহিলাও যাচ্ছিল। ফাযল তাদের দিকে তাকাতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হাত অন্যদিক থেকে ফাযলের চেহারার উপর রাখলেন। সে আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। এভাবে তিনি ‘বাতনে মুহাসসির’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সাওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুততর করলে। তিনি মধ্যপথ দিয়ে অগ্রসর হলেন যা জামরাতুল কুবরায় গিয়ে পৌঁছেছে। তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং নিচের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে এখানে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করলে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি পশু যবেহ করলেন। অতঃপর যে কয়টি অবশিষ্ট ছিল তা আলী (রাঃ) কে যবেহ করতে বললেন এবং তিনি তা কোরবানী করলেন। তিনি নিজ পশুতে ‘আলীকেও শরীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর কিছু অংশ নিয়ে একত্রে রান্না করার নির্দেশ দিলে। অতএব তাই করা হলো। তাঁরা উভয়ে এই গোশত থেকে আহার করলেন এবং ঝোল পান করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহর দিকে রওয়ানা হলেন এবং মক্বায় পৌঁছে যোহরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (নিজ গোত্র) বনূ আবদুল মুত্তালিবে এলেন। তারা লোকেদের যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আবদুল্ মুত্তালিবের বংশধর! পানি তোলো। আমি যদি আশঙ্কা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভূত করবে, তাহলে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তারা তাঁকে এক বালতি পানি দিলো এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন। [৩০৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) আমরা রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে তিন পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের কতক একসাথে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধে কতক শুধু বেঁধেছিল তাদের জন্য হজ্জের অনুষ্ঠানাদি শেষ না করা পর্যন্ত (ইহরামের ফলে) কোন (সাময়িক) নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হয়নি। অনুরূপ যারা শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিল তাদের জন্যও হজ্জের অনুষ্ঠানাদি শেষ না করা পর্যন্ত (ইহরামের ফলে) কোন (সাময়িক) নিষিদ্ধ জিনিস হালাল হয়নি। আর যারা শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তাদের জন্য বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝখানে সাঈ করার পর (ইহরামের কারণে) যা কিছু হারাম ছিল তা হালাল হয়ে গেল, হাজের ইহরাম বাঁধার পূর্ব পর্যন্ত [৩০৭৫] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি হাসান। সুফিয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার হজ্জ করেছেনঃ হিজরতের পূর্বে দু’বার এবং হিজরতের পর মদীনা থেকে একবার (যা বিদায় হজ্জ নামে প্রসিদ্ধ)। শেষোক্তটি তিনি কিরান হজ্জ করেছেন অর্থাৎ একত্রে হজ্জ ও উমরার ইহরাম বাঁধেন। এ হজ্জে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতোটি কোরবানীর পশু এনেছিলেন এবং আলী (রাঃ) যতোটি পশু এনেছিলেন তার মোট সংখ্যা ছিল একশত। এর মধ্যে একটি উট ছিল আবূ জাহলের, যার নাসারন্ধ্রে রূপার লাগাম আঁটা ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বহস্তে ৬৩টি এবং ‘আলী (রাঃ) অবশিষ্টগুলি কোরবানী করেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ হাদীস কে তার নিকট বর্ণনা করেছেন? তিনি বলেন, জাফর সাদিক, তিনি তার পিতার সূত্রে, তিনি জাবির (রাঃ) -র সূত্রে। অন্যদিকে বিন আবূ লাইলা, তিনি আল-হাকামের সূত্রে, তিনি মিকসামের সূত্রে, তিনি বিন আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হজ্জের উদ্দেশে যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হলে
আল-হাজ্জাক বিন আমর আল-আনসারী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : যার হাড় ভেঙ্গে গেলো অথবা যে লেংড়া হয়ে গেলো। ইহরাম বাঁধার পর) , সে ইহরামমুক্ত হয়ে গেলো। সে পুনর্বার হজ্জ করবে। (আবূ বাক্র বিন আবূ শায়বাহ, ইয়াহইয়অ বিন সাঈদ ও ইবনু উলায়্যাহ, হাজ্জাজ বিন আবূ উসমান, ইয়াহইয়া বিন আবূ কাসীর, ইকরামাহ, ইবনু আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) , (ইকরিমাহ বলেন) , আমি এ হাদীস বিন আব্বাস (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) -র নিকট বর্ণনা করলে তারা উভয়ে বলেন, তিনি (হাজ্জাজ) সত্য বলেছেন। [৩০৭৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আল-হাজ্জাজ বিন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির হাড় ভেঙ্গে গেলে বা সে পঙ্গু হয়ে গেলে বা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে অথবা বাধাগ্রস্ত হলে সে হালাল হয়ে যাবে। তাকে পরবর্তী বছর হজ্জ করতে হবে। সালামাহ বিন শাবীব, আবদুর রায্যাক, মা’মার, ইয়াহইয়া বিন আবূ কাসীর, ইকরিমাহ, ইবনু আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) , (ইকরিমাহ) বলেন, আমি এ হাদীস ইবনু আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) এর নিকট বর্ণনা করলে তারা উভয়ে বলেন, তিনি সত্য বলেছেন। আবদুর রাযযাক বলেন, আমি এ হাদীস হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈর কিতাবে লিপিবদ্ধ পেয়েছে। আমি তা নিয়ে মামার-এর নিকট এলে তিনি আমার সামনে তা পাঠ করেন অথবা আমি তার সামনে তা পাঠ করি। [৩০৭৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
বাধাগ্রস্ত হলে তার ফিদ্য়া
আবদুল্লাহ আমি মসজিদের মধ্যে কা’ব বিন উজরাহ (রাঃ) এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। আমি তার নিকট নিম্নোক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম (অনুবাদ) : “তবে রোযা অথবা সদাকা অথবা কোরবানীর মাধ্যমে ফিদ্য়া দিবে” (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) কা’ব (রাঃ) বলেন, এ আয়াত আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। আমার মাথার অসুখ ছিল। আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো। উকুন আমার মুখমণ্ডলে ছড়িয়েছিল। তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে যে কষ্ট ভোগ করতে দেখছি তেমনটি আর কখনও দেখিনি। তুমি কি একট বকরী সংগ্রহ করতে পারবে? আমি বললাম, না। রাবী বলেন, তখন এ আয়াত নাযিল হলোঃ “তবে রোযা অথবা সদাকা অথবা কোরবানীর মাধ্যমে ফিদ্য়া দিবে”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তিন দিন রোযা রাখতে হবে, আর সদাকার ক্ষেত্রে ছয়জন মিসকীনকে খাদ্যদ্রব্য দিতে হবে, মাথাপিছা অর্ধ সা’ (এক কেজি দু’শ পঞ্চাশ গ্রাম) এবং কোরবানীর ক্ষেত্রে একটি বকরী। [৩০৭৯] কা’ব বিন উজরাহ (রাঃ) উকুন আমাকে কষ্ট দিতে থাকলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মাথা কামানোর নির্দেশ দেন এবং তিনি দিন রোযা রাখতে অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাতে বলেন। তিনি জানতেন যে আমার নিকট কোরবানী করার মত কিছু ছিলো না। [৩০৮০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
ইহরাম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করানো
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় ও রোযা অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। [৩০৮১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) একটি কঠিন ব্যথার কারণে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। [৩০৮২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
ইহরামধারী ব্যক্তি কী ধরনের তৈল মাখতে পারে
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় ঘ্রাণহীন যায়তুনের তৈল মাথায় মাখতেন। [৩০৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দূর্বল।
কেউ ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক ইহরামধারী ব্যক্তিকে তার জন্তুযান নিচে ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে সে মারা যায়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার পরনের বস্ত্রদ্বয় দিয়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মুখমণ্ডল ও মাথা ঢেকো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো:] ২/ ৩০৮৪ (১) . ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি বলেন, তার জন্তুযান তার ঘাড় মটকে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ তাকে সুগন্ধি মাখিয়া না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। [৩০৮৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কেউ ইহরাম অবস্থায় শিকার করলে তার কাফ্ফারা
জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামধারী ব্যক্তি কর্তৃক হায়েনা শিকারের কাফ্ফারা একটি ভেড়া নির্ধারণ করেছেন এবং হায়েনাকেও শিকারের অন্তুর্ভুক্ত করেছেন। [৩০৮৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইহরামধারী ব্যক্তি পাখির ডিম আত্মসাৎ করলে তাকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে (কাফফারা স্বরূপ)। [৩০৮৬] তাহকীক আলবানী দুর্বল।
ইহরামধারী ব্যক্তি যে সব প্রানী হত্যা করতে পারবে
আশিয়াহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচটি প্রানী আছে যা হারামের বাইরে ও ভেতরে হত্যা করা বৈধঃ সাপ, বুকে না পিঠে সাদা চিহ্নযুক্ত কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। [৩০৮৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন পাঁচটি প্রানী আছে যা কোন ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় হত্যা করলে তার কোন দোষ হবে নাঃ বিছা, কাক, চিল, ইঁদুর ও পাগলা কুকুর। [৩০৮৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুহরিম ব্যক্তি নিম্নোক্ত প্রাণীগুলো হত্যা করতে পারেঃ সাপ, বিছা, আক্রমণকারী হিংস্র প্রাণী, পাগল কুকুর ও ক্ষতিকর ইঁদুর। আবূ সাঈদ (রাঃ) -র নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো, ইঁদুরকে ক্ষতিকর বলা হলো কেনো? তিনি বলেন, কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য জেগেছিলেন এবং সে ঘরে আগুল ধরানোর জন্য জ্বলন্ত সলিতা নিয়েছিল। [৩০৮৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
ইহরামধারী ব্যক্তির জন্য যে ধরণের শিকার নিষিদ্ধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সা'ব বিন জাসসামাহ (রাঃ) আমাদের অবহিত করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন আল-আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান এলাকায় ছিলাম। আমি তাঁকে বন্য গাধার গোশত পেশ করলাম। তিনি তা আমাকে ফেরত দিলেন। তিনি আমার চেহারায় অনুতাপের লক্ষণ দেখে বলেনঃ আমরা অন্য কোন কারণে তা ফেরত দেইনি, বরং আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। (তাই তা ফেরত দিয়েছি)। [৩০৯০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে শিকারকৃত প্রাণীর গোশত পেশ করা হলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা আহার করেননি। [৩০৯১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
ইহরামধারী ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শিকার না করা হলে সে তার গোশত খেতে পারে
তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি (শিকারকৃত) বন্য গাধা প্রদান করে তা তার সঙ্গীদের মধ্যে বন্টন করার নির্দেশ দেন। তখন তারা ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। [৩০৯২] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি ত্রুটি যুক্ত ও মাতানের মাঝে ভুল রয়েছে, এক্ষেত্রে নাসায়ীর রেওয়াতটি সঠিক। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হুদাইবিয়ার বছর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওয়ানা হলাম। তাঁর সাহাবীগণ ইহরাম বাঁধলেন, কিন্ত আমি বাঁধিনি। আমি একটি গাধা দেখতে পেয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়লাম এবং তা শিকার করলাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তার অবস্থান বর্ণনা করলাম। আমি আরও উল্লেখ করলাম যে, আমি তখনও ইহরাম বাঁধিনি। এবং তা আপনার জন্য শিকার করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবী এ গোশত খাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্ত আমি তাঁর জন্য এটা শিকার করেছি বলায় তিনি তা আহার করলেন না। [৩০৯৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কোরবানী পশুর গলায় মালা পরানো
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা থেকে (মক্কায়) কোরবানীর পশু পাঠাতেন। আমি তাঁর কোরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরি করে দিতাম। অতঃপর তিনি এমন কোন জিনিস বর্জন করতেন না, যা ইহরামধারী ব্যক্তি বর্জন করে থাকে। [৩০৯৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোরবানী পশুর জন্য মালা তৈরি করে দিতাম এবং তিনি তা পশুর গলায় পরিয়ে দিতেন। এরপর তা পাঠিয়ে দেয়া হতো এবং তিনি (সেখানে) অবস্থান করতেন। আর তিনি এমন কোন বস্ত বর্জন করতেন না যা ইহরামধারী ব্যক্তি বর্জন করে থাকে। [৩০৯৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মেষ-বকরীর গলায় মালা পরানো
আয়িশাহ (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানীর উদ্দেশ্যে বাইতুল্লা্হয় মেষ-বকরী পাঠান এবং গলায় মালা পরান। [৩০৯৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উটের কুঁজ ফেড়ে দেয়া
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানী উটের কুঁজ ডান পাশ দিয়ে ফেড়ে দেন এবং তা থেকে রক্ত পরিস্কার করেন। ‘আলী তার (রাঃ) বর্ণনায় বলেন, এটা যুল-হুলাইফা নামক স্থানে। আর তিনি একজোড়া জুতার মালা পরিয়ে দেন। [৩০৯৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানীর পশুর গলায় মালা পরান, কুঁজ ফেড়ে দেন এবং তা (মক্কায়) পাঠিয়ে দেন। অতঃপর তিনি এমন কোন কিছু পরিহার করেননি যা ইহরামধারী ব্যক্তি পরিহার করে। [৩০৯৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কোরবানী পশুকে কাপড়ের ঝুল পরানো
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নির্দেশ দেন, আমি যেন তাঁর কোরবানী পশু দেখাশুনা করি, ঝুল ও চামড়া (দরিদ্রের মধ্যে) বন্টন করি এবং কসাইকে যেন তা থেকে (পারিশ্রমিক বাবদ) কিছু না দেই। তিনি বলেনঃ তাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে দিবো। [৩০৯৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মর্দা ও মাদী উভয় ধরনের পশুই কোরবানী দেয়া যায়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানীর জন্য যে পশু পাঠান তার মধ্যে আবূ জাহলের একটি উটও ছিল এবং এর নাসারন্ধ্রের দড়ি ছিল রূপার তৈরি। [৩১০০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সালামাহ বিন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোরবানীর পশুর মধ্যে একটি উটও ছিল। [৩১০১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মীকাত অতিক্রম করেও কোরবানীর পশু নেয়া যায়
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদায়দ নামক স্থান থেকে তাঁর কোরবানী পশু ক্রয় করেন। [৩১০২] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল, হাদীসটি ইবনু উমার থেকে মাওকুফ সুত্রে বর্ণিত হয়েছে, [সহীহ হলোঃ নবী বড় হজ্জের সময় তার হাদীসকে (কুরবানীর পশুকে) যুল হুলায়ফাহ থেকে তাড়িয়ে নিতেন]।
কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তার কোরবানীর পশু হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে বলেনঃ এর পিঠে চড়ে যাও। সে বললো, এটা কোরবানীর পশু। তিনি বলেনঃ তুমি তার পিঠে চড়ে যাও। তোমার জন্য আফসোস। [৩১০৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে একটি উট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেনঃ এর পিঠে চড়ে যাও। লোকটি বললো, এটা কোরবানীর উট। তিনি বলেনঃ তুমি এর পিঠে চড়ো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উটের পিঠে চড়ে যেতে দেখেছি। এর গলায় একটি জুতা বাঁধা ছিল। [৩১০৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কোরবানীর পশু পথিমধ্যে অচল হয়ে পড়লে
যুআইব আল-খুযাঈ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কোরবানীর পশু নিয়ে (মক্কায়) পাঠাতেন, অতঃপর বলতেন : এগুলোর মধ্যে কোন পশু অচল হয়ে পড়লে এবং তুমি তার মৃত্যুর আশঙ্কা করলে সেটি যবেহ করবে, অতঃপর তার রক্তের মধ্যে তার গলায় জুতা ফেলে রাখবে, অতঃপর তার পাছার উপর ক্ষতচিহ্ন করবে। তবে তার গোশত তুমিও খাবে না এবং তোমার সঙ্গীদের মধ্যেও কেউ খাবে না। [৩১০৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। নাজিয়াহ আল-খুযাঈ (রাঃ) আমরের বর্ণনামতে তিনি ছিলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোরবানীর উটের রক্ষনাবেক্ষনকারী) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোনো উট অচচল হয়ে পড়লে আমি কী করবো? তিনি বলেনঃ সেটি যবেহ করবে এবং তার গলায় জুতা তার রক্তের মধ্যে ফেলে দিবে, অতঃপর তার পাছার উপর ক্ষতচিহ্ন করবে এবং লোকেদের জন্য তা ফেলে রাখবে, তারা তা আহার করবে। [৩১০৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মক্কা শরীফের বাড়িঘর ভাড়া দেয়া
আলকামা বিন নাদলাহ (মাকবূল) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , আবূ বকর ও উমার (রাঃ) ইন্তিকাল করেন এবং ঐ সময় পর্যন্ত মক্কার বাড়িঘর ‘আস-সাওয়াইব’ নামে পরিচিত ছিল। কোন ব্যক্তির প্রয়োজন হলে সে তাতে (তিন ঘরে) বসবাস করতো এবং কারো (নিজের জন্য) প্রয়োজন না হলে সে তা অন্যকে বসবাসের জন্য খালি করে দিতো। [৩১০৭] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
মক্কার ফাদীলাত
আবূ সালামাহ বিন আবদুর রহমান বিন আওফ আবদুল্লাহ বিন আদী ইবনুল হামরা’ (রাঃ) তাকে বলেন, আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় আল-জাযওয়ারা নামক স্থানে বলেনঃ আল্লাহর শপথ! তুমি (মক্কা) আল্লাহর গোটা যমীনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সমস্ত যমীনের মধ্যে তুমি আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর শপথ! তোমার থেকে আমাকে উচ্ছেদ না করা হলে আমি (তোমায় ত্যাগ করে) চলে যেতাম না। [৩১০৮] সাফিয়্যা বিনতু শায়বাহ (রাঃ) আমি মক্বা বিজয়ের বছর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ভাষণে বলতে শুনেছিঃ হে জনগণ! আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন থেকে মক্কাকে হারাম (সম্মানিত) করেছেন। অতএব তা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। তার বৃক্ষরাজি কাটা যাবে না, এখানকার শিকারের পিছু ধাওয়া করা যাবে না, এখানে পড়ে থাকা কোন জিনিস তুলে নেয়া যাবে না, কেবল সেই ব্যক্তি তা তুলতে পারবে যে তার ঘোষণা দিবে। আব্বাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু ইযখির ঘাস (বৈধ করা হোক)। কারণ তা ঘরবাড়ি তৈরিী ও কবরে রাখার জন্য (প্রয়োজন হয়)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইযখির ঘাস ব্যতীত। [৩১০৯] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। আয়্যাশ বিন আবূ রবীআহ আল-মাখযূমী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই উম্মাত যত দিন এই হারাম শরীফের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করবে, ততো দিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। কিন্তু যখন তারা তা বিনষ্ট করবে, তখন ধ্বংস হবে। [৩১১০] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
মদীনার ফাদীলাত
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমান মাদীনার দিকে গুটিয়ে আসবে, যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে। [৩১১১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মদীনায় মৃত্যুবরণ করতে পারে, সে যেন তাই করে। কারণ যে ব্যক্তি এখানে মারা যাবে, আমি তার পক্ষে সাক্ষী হবো। [৩১১২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আ.) তোমার বন্ধু ও নবী। তুমি মক্কাকে ইবরাহীম (আ.)-এর যবানীতে হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করেছো। হে আল্লাহ! আমিও তোমার বান্দা ও নবী। অতএব আমি মদীনাকে, তার দু প্রস্তরময় জমীনের মধ্যস্থল হারাম ঘোষণা করছি। আবূ মারওয়ান (রাঃ) বলেন, ‘লাবাতাইহা’ শব্দের অর্থ মদীনার দু’প্রান্তের প্রস্তরময় ভূমি। [৩১১৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) , রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদীনার অধিবাসীদের ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা করবে, তাকে আল্লাহ তাআলা এমনভাবে গলিয়ে দিবে, যেভাব লবণ পানিতে গলে যায়। [৩১১৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন মিকনাফ (মাজহুল বা অপরিচিত) আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উহুদ একটি পাহাড়, সে আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। তা জান্নাতের টিলাসমূহের একটির উপর অবস্থিত। আর আইর পাহাড় দোযখের টিলাসমূহের একটির উপর অবস্থিত। [৩১১৫]
কাবা ঘরের অভন্তরের সম্পদ
শায়বাহ বিন উসমান (রাঃ) এক ব্যক্তি আমার মাধ্যমে বাইতুল্লাহয় হাদিয়াস্বরূপ কতকগুলি দিরহাম পাঠায়। আমি বাইতুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে শাইবাকে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট দেখতে পেলম। আমি দিরহামগুলো তাকে দিলাম। সে তাকে জিজ্ঞেসা করলো, এগুলো কি তোমার দিরহাম? আমি বললাম, না। এগুলো আমার হলে তা নিয়ে তোমার নিকট আসতাম না। সে বলরো, যদি তুমি এ কথা বলো তবে শোনো, তুমি যে স্থানে বসে আছো, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এখানে বসেছেন, অতঃপর বলেছেন, আমি কাবার সম্পদ দরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন না করা পর্যন্ত বের হবো না। আমি বললাম, আপনি তা করবে না। তিনি বললেন, আমি অবশ্যই তা করবো। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলৈন, তুমি একথা কেন বললে? আমি বললাম, কারণ রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সম্পদের স্থান দেখেছেন এবং আবূ বকর (রাঃ) ও। তাঁদের উভয়ের আপনার চেয়ে মালের অধিক প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁরা এ সম্পদ স্থানচ্যুত করেননি। একথা শুনে উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ান এবং বের হয়ে চলে যান। [৩১১৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মক্কায় রমাদান মাসের রোযা রাখা
সাঈদ বিন জুবায়র ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মক্কায় রমাদান মাস পেলো, রোযা রাখলো এবং যথাসাধ্য (রাতে) ইবাদত করলো, আল্লাহ তাআলা তাকে অন্য স্থানের তুলনায় এক লক্ষ রমাদান মাসের সওয়াব দান করবেন এবং প্রতিটি দিনের পরিবর্তে একটি গোলাম এবং প্রতিটি রাতের পরিবর্তে একটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব (তার আমলনামায়) লিখে দিবেন, প্রতিটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য একটি ঘোড়া দানের সমপরিমাণ সওয়াব, প্রতি দিনের জন্য একটি নেকী (পূণ্য) এবং প্রতিটি রাতের জন্য একটি পূণ্য দান করবেন। [৩১১৭] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।
বৃষ্টির মধ্যে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমরা আবূ ইকালের সাথে বৃষ্টির মধ্যে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করলাম এবং তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে এলাম। তখন আবূ ইকাল বলেন, আম আনাস বিন মালিক (রাঃ)-র সাথে বৃষ্টির মধ্যে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছি। আমরা তাওয়াফ শেষে মাকামে (ইবরাহীম) এসে দু’ রাক’আত নামায পড়েছি। অতঃপর আনাস (রাঃ) আমাদের বলেন, এখন নতুনভাবে নিজেদের আমলের হিসাব রাখো। তোমাদের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এরূপই বলেছেন এবং আমরা তাঁর সাথে বৃষ্টির মধ্যে তাওয়াফ করেছি। [৩১১৮] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি খুবই দুর্বল।
পদব্রজে হাজ্জ করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ মদীনা থেকে মক্কায় পদব্রজে গিয়ে হাজ্জ করেন এবং তিনি বলেনঃ নিজেদের কোমরে পরিধেয় বস্ত্র বেঁধে নাও”। তিনি কিছুটা দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম করেন। [৩১১৯] তাহকীক আলবানীঃ দূর্বল।