26. কোরবানি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোরবানী
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ শিংবিশিষ্ট দু’টি ধুসর বর্ণের মেষ কোরবানী করেছিলেন। তিনি (যবেহ করার সময়) বিসমিল্লাহ ও তাকবীর কলেছিলেন। আমি তাঁকে নিজের পা সেটির পাঁজরের উপর রেখে ছেপে ধরে স্বহস্তে তা কোরবানী করতে দেখেছি। [৩১২০] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন দু’টি মেষ যবেহ করেন। তিনি পশু দু’টিকে কিব্লামুখী করে বলেনঃ “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াকা ও মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি।” “আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই” (সূরা আনআমঃ ৭৯)। “বলো, আমার নামায, আমার ইবাদত (কুরবানী), আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম” (সূরা আনআমঃ ১৬২-৩)। হে আল্লাহ! তোমার নিকট থেকেই প্রাপ্ত এবং তোমার জন্যই উৎসর্গিত। অতএব তা মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ থেকে কবুল করো”। [৩১২১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানির ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহ্র একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। [৩১২২]
কোরবানি ওয়াজিব কি না?
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। [৩১২৩] মুহাম্মাদ বিন সীরীন আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট কোরবানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, তা ওয়াজিব কি না? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানী করেছেন, তাঁর পরে মুসলমানরাও কুরবানী করেছে এবং এ সূন্নাত অব্যাহতভাবে প্রবর্তিত হয়েছে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো] ৩/৩১২৪(১). জাবালাহ বিন সুহায়ম বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম… উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। [৩১২৪] তাহকীক আলবানী: দুর্বল। মিখনাফ বিন সুলায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের ময়দানে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে জনগণ! প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানি ও একটি আতীরা রয়েছে। তোমরা কি জানো আতীরা কি? তা হলো, যাকে তোমরা রাজাবিয়া বলো। [৩১২৫]
কোরবানির সওয়াব
আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো। [৩১২৬] যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে। [৩১২৭]
কোরবানী করার জন্য উত্তম পশু
আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং-বিশিষ্ট রিষ্টপুষ্ট এবং মুখমন্ডল, চোখ ও পা কালো বর্ণের একটি মেষ কোরবানী করেন। [৩১২৮] ইউনুস বিন মায়সারাহ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী আবু সাঈদ আয যুরাকী (রাঃ) এর সাথে কোরবানির পশু ক্রয় করতে গেলাম। ইউনুস আরো বলেন, আবু সাঈদ (রাঃ) একটি সামান্য কালো বর্ণের মেষের দিকে ইশারা করেন, যা খুব উঁচু ও ছিলো না, বেঁটেও ছিলো না। তিনি আমাকে বলেন, এই মেষটি আমার জন্য ক্রয় করো। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মেষের সাথে এর একটা সাদৃস্য আছে। [৩১২৯] আবু উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উত্তম কাফন একজোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর ) এবং উত্তম কোরবানী হলো শিং-বিশিষ্ট মেষ। [৩১৩০]
উট ও গরুতে কতজন শরিক হওয়া যায়?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। ইতোমধ্যে কোরবানীর ঈদ এসে গেলো। আমরা একটি উট দশজনে এবং একটি গরু সাতজনে শরীক হয়ে কোরবানী করলাম। [৩১৩১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়া নামক স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছি। [৩১৩২] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যে সকল স্ত্রী উমরাহ (অর্থাৎ তামাত্তো হাজ্জ) করেন, তিনি তাদের সকলের পক্ষ থেকে একটি গাভী কোরবানী করেন। [৩১৩৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে একবার উটের স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি লোকেদেরকে গরু কোরবানী করার নির্দেশ দেন। [৩১৩৪] আ’য়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জে তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে একটি মাত্র গরু কোরবানী করেন। [৩১৩৫]
কতোটি বকরী একটি উটের সমান হতে পারে?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমার উপর একটি উট কোরবানী করা অপরিহার্য এবং তা ক্রয়ের সামর্থ্যও আমার আছে কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছেনা বিধায় আমি ক্রয় করতে পারছিনা। মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সাতটি ছাগল ক্রয় করে তা যবেহ করার নির্দেশ দেন। [৩১৩৬] রাফি বিন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তিহামার যুল-হুলাইফায় ছিলাম। আমরা (যুদ্ধে) উট ও মেষ-বকরী লাভ করি। লোকেরা (তা বন্টনে) তারাহুড়া করছিল এবং তা বন্টনের পূর্বেই আমরা চুলায় (গোশতের) হাঁড়ি তুলে দিয়েছিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকটে এলেন এবং গোশতের হাঁড়িগুলো সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তদনুযায়ী তা উল্টে ফেলে দেয়া হয় (কারণ বন্টনের পূর্বে গনিমতের সম্পদ ব্যবহার অবৈধ)। অতঃপর একটি উট দশটি মেষের সমান ধরা হলো। [৩১৩৭]
যে ধরনের পশু কোরবানী করা উচিত
উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এক পাল বকরী দিলেন এবং তিনি সেগুলো কোরবানীর জন্য তার সঙ্গীদের মধ্যে বন্টন করলেন। এক বছর বয়সের একটি ছাগল (বন্টনের পর) অবশিষ্ট থাকলে তিনি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানান। তিনি বলেনঃ এটা তুমি কোরবানী করো। [৩১৩৮] হিলাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ছয় মাস বয়সের ভেড়া দিয়ে কোরবানী করা জায়েয। [৩১৩৯] মুজাশি‘ বিন মাসঊদ (রাঃ) (কুলায়ব) বলেন, আমরা সুলায়ম গোত্রের মুজাশি‘ (রাঃ) নামক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবীর সাথে ছিলাম। মেষ-বকরীর স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি একজন ঘোষককে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী সে ঘোষণা করলোঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ এক বছর বয়সের বকরীর দ্বারা যে কাজ হয় (কোরবানীর ক্ষেত্রে) ছয় মাস বয়সের মেষ দ্বারাও তা হতে পারে। [৩১৪০] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (কোরবানীতে) মুসিন্না ছাড়া যবেহ করো না। কিন্তু তা সংগ্রহ করা তোমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হলে ছয় মাস বয়সের মেষ-ভেড়া জবেহ করো। [৩১৪১]
যে ধরনের পশু কোরবানী করা মাকরূহ
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কানের অগ্রভাগ অথবা পশ্চাদভাগ (মূলের দিক) কর্তিত অথবা ফাটা অথবা ছিদ্রজুক্ত অথবা অঙ্গ কর্তিত পশু কোরবানী করতে নিষেধ করেছেন। [৩১৪২] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (কোরবানীর পশুর) চোখ ও কান উত্তমরূপে পরীক্ষা করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। [৩১৪৩] উবায়দ বিন ফাযরূয আমি বারা’ বিন আযিব (রাঃ) কে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ধরনের পশু কোরবানী করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন সেই সম্পর্কে আমাদের বলুন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাতের ইশারায় বলেন, এরূপ, আর আমার হাত তাঁর হাতের চেয়ে ক্ষুদ্র। চার প্রকারের পশু কোরবানী করলে তা যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রাঃ) বলেন, আমি ত্রুটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানী করা অপছন্দ করি। বারাআ (রাঃ) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ করো তা পরিহার করো, কিন্তু অন্যদের জন্য তা হারাম করো না। [৩১৪৪] আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং ভাঙ্গা ও কান কাটা পশু কোরবানী করতে নিষেধ করেছেন। [৩১৪৫]
কোন ব্যক্তি কোরবানীর জন্য উত্তম পশু ক্রয় করার পর তা বিপদগ্রস্থ হলে
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোরবানীর উদ্দেশ্যে একটি মেষ খরিদ করলাম। অতঃপর নেকড়ে বাঘ তার নিতম্ব অথবা কান কেটে নিয়ে গেলো। আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাদেরকে তা কোরবানী করার অনুমতি দেন। [৩১৪৬]
যে ব্যক্তি তার গোটা পরিবারের পক্ষ থেকে একটিমাত্র বকরী কোরবানী করে
আতা’ ইয়াসার বলেন আমি আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আপনাদের কোরবানী কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে কোন ব্যক্তি নিজের ও স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বকরী কোরবানী করতো। তা থেকে তারাও আহার করতো এবং (অন্যদেরও) আহার করাতো। পরবর্তী কালে লোকেরা কোরবানীকে অহমিকা প্রকাশের বিষয়ে পরিণত করে এবং এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা তো দেখতেই পাচ্ছ। [৩১৪৭] আবূ সারীহাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এতো দিন যে সুন্নাতের উপর আমল করে আসছিলাম, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে তার বিপরীত করতে বাধ্য করলো। অবস্থা এই ছিল যে, কোন পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বা দু’টি বকরী কোরবানী করা হতো। এখন আমরা তদ্রূপ করলে আমাদের প্রতিবেশীরা আমাদের কৃপণ বলে। [৩১৪৮]
যে ব্যক্তি কোরবানী করতে চায় সে যেন যিলহাজ্জ মাসের এক তারিখ থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত তার নখ ও চুল না কাটে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশক শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কোরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে (না কাটে)। [৩১৪৯] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ দেখে এবং কোরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। [৩১৫০]
ঈদের সালাতের পূর্বে কোরবানী করা নিষিদ্ধ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি কোরবানীর দিন ঈদের সলাতের পূর্বে কোরবানী করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পুনর্বার কোরবানী করার নির্দেশ দেন। [৩১৫১] জুনদুব আল-বাজালী (রাঃ) (আসওয়াদ) তাকে বলতে শুনেছেন, আমি ঈদুল আদহায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। কতক লোক ঈদের সলাতের পূর্বেই কোরবানী করলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বে কোরবানী করেছে সে যেন পুনর্বার কোরবানী করে। আর যে ব্যক্তি এখনও কোরবানী করেনি সে যেন আল্লাহ নাম নিয়ে যবেহ করে। [৩১৫২] উইয়ায়মির বিন আশকার (রাঃ) তিনি ঈদের সলাতের পূর্বে যবেহ করেন। তিনি বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেথ করলে তিনি বলেনঃ তুমি পুনরায় কোরবানী করো। [৩১৫৩] আবূ যায়দ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর ঘরের নিকট দিয়ে যেতে ভূনা গোশতের ঘ্রান পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কোন ব্যক্তি কোরবানী করেছে? আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বেরিয়ে এসে বলেন, আমি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার পরিবার ও প্রতিবেশীদের গোশত খাওয়ানোর জন্য ঈদের নামায পড়ার পূর্বেই কোরবানী করেছি। তিনি তাকে পূনর্বার (সলাতের পর) কোরবানী করার নির্দেশ দেন। সে বললো, না, আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই! আমার নিকট ছয় মাস বয়সের একটি ভেড়ার বাচ্চা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি বলেনঃ সেটিই (সলাতের পর) যবেহ করো। কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য ছয় মাসের বাচ্চা যথেষ্ট হবে না। [৩১৫৪]
কোরবানীর পশু স্বহস্থে যবেহ করা উত্তম
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর কোরবানীর পশুর পাঁজরের উপর পা দিয়ে চেপে ধরে স্বহস্তে কোরবানী করতে দেখেছি। [৩১৫৫] সা‘দ বিন আইয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুরায়ক গোত্রের রাস্তার পাশে একটি চাকু দিয়ে নিজের কোরবানী পশু গলার কাছ দিয়ে স্বহস্তে যবেহ করেছেন। [৩১৫৬]
কোরবানীর পশুর চামড়া
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর (কোরবানীর) উটের গোশত, চামড়া ও ঝুল (জালর) সবকিছু দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেন। [৩১৫৭]
কোরবানীর গোশত আহার করা
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবগুলো উটের কিছু অংশ একত্র করে তা একটি হাঁড়িতে পাকানোর নির্দেশ দেন। লোকেরা এই গোশত ও ঝোল আহার করে। [৩১৫৮]
কোরবানীর গোশত সঞ্চয় করে রাখা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্ভিক্ষজনিত কারণে লোকেদেরকে কোরবানীর গোশত জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলেন এবং পরে আবার জমা করে রাখার অনুমতি দেন। [৩১৫৯] নুবায়শাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি তোমাদেরকে কোরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক আহার করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা আহার করো এবং জমা করে রাখো। [৩১৬০]
ঈদের মাঠে কোরবানী করা
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে কোরবানীর পশু যবেহ করতেন। [৩১৬১]