28. শিকার
শিকারী কুকুর ও ক্ষেত পাহারার কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুর নিধন সম্পর্কে
আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর নিধনের নির্দেশ দেন, অতঃপর বলেনঃ লোকেদের কুকুরের কী প্রয়োজন? অতঃপর তিনি তাদের শিকারী কুকুর রাখার অনুমতি দেন। [৩২০০] আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ দেন, অতঃপর বলেনঃ লোকেদের কুকুরের কী প্রয়োজন? এরপর তিনি তাদের কৃষিক্ষেত ও বাগান পাহারায় নিয়োজিত কুকুর পোষার অনুমতি দেন। বুনদার (রাঃ) বলেন, ‘আল-ঈন’ হলো মদীনার বাগানসমূহ। [৩২০১] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ দেন। [৩২০২] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উচ্চ কণ্ঠে কুকুর নিধনের নির্দেশ দিতে শুনেছি। শিকারী কুকুর অথবা পশুপাল পাহারায় নিয়োজিত কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুর হত্যা করা হতো (তাঁর যুগে) [৩২০৩]
শিকারী কুকুর এবং কৃষিক্ষেত ও পশুপাল পাহারায় নিয়োজিত কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুর পোষা নিষিদ্ধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কৃষিক্ষেত অথবা পশুপাল পাহারায় রত কুকুর ব্যতীত অন্যান্য কুকুর পোষে সে তার সৎকর্ম থেকে প্রতিদিন এক কীরাত পরিমাণ হ্রাস করে। [৩২০৪] আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুকুর যদি আল্লাহর সৃষ্ট প্রজাতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি না হতো তবে আমি তা নির্মূল করার নির্দেশ দিতাম। অতএব তোমরা এর মধ্যে কালোগুলো হত্যা করো। যে সম্প্রদায় পশুপাল পাহারায় নিয়োজিত কুকুর, শিকারী কুকুর ও কৃষিখামার পাহারায় রত কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পোষে তাদের সৎকর্মের সওয়াব থেকে প্রতিদিন দুই কীরাত করে হ্রাস পায়। [৩২০৫] সুফইয়ান বিন আবূ যুহায়ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কুকুর পোষে এবং তা তার কৃষিক্ষেত বা মেষপাল পাহারায় প্রয়োজন হয় না, তার আমল থেকে প্রতিদিন এক কীরাত পরিমাণ হ্রাস পায়। সুফিয়ান (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি সরাসরি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, হাঁ, এই মসজিদের প্রতিপালকের শপথ। [৩২০৬]
কুকুর কর্তৃক ধৃত শিকার
আবূ সা’লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আহলে কিতাবের (ইহূদী-খৃস্টান) এলাকায় বসবাস করি। আমরা কখনো তাদের পাত্রে আহার করি। এখানে প্রচুর শিকার পাওয়া যায়। আমি তা আমার ধনুক ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণহীন কুকুরের সাহায্যেও শিকার করি। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি যে বলছো- তোমরা আহলে কিতাবের এলাকায় বসবাস করো, একান্ত নিরুপায় না হলে তাদের পাত্রে আহার করো না। যদি তোমরা একান্ত নিরুপায় হয়ে যাও, তবে তাদের পাত্র ধৌত করার পর তাতে আহার করো। আর তুমি যে শিকারের কথা বললে তাতে তুমি তীরের সাহায্যে যে শিকার করো তার উপর আল্লাহ্র নাম স্মরণ করো এবং খাও। আর তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সাহায্যে যে শিকার ধরো তাতে আল্লাহ্র নাম স্মরণ করো এবং খাও। আর তুমি প্রশিক্ষণহীন কুকুরের সাহায্যে যে শিকার ধরো তা যবেহ করতে পারলে খাও। [৩২০৭] আদী বিন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিজ্ঞেস করে বললাম, আমরা এই কুকুরের সাহায্যে শিকার ধরে থাকি। তিনি বলেন, তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর আল্লাহ্র নাম নিয়ে শিকারের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে থাকলে সে তোমাদের জন্য যা শিকার করে তা খাও, তা সে হত্যা করে ফেললেও, কিন্তু (তা থেকে) কুকুর খেয়ে ফেললে (তা খেও না)। যদি কুকুর (তা থেকে) খেয়ে থাকে তবে তুমি তা ভক্ষণ করো না। কারণ আমার সন্দেহ হয় যে, সে তা নিজের জন্য শিকার করেছে। আর সাথে অন্য কুকুর থাকলে তুমি তা আহার করো না। ইবনু মাজাহ (রহি) বলেন, আমি আলী ইবনু মুনযিরকে বলতে শুনেছি, আমি আটান্ন বার হাজ্জ করেছি এবং এর অধিকাংশ বার পদব্রজে। [৩২০৮]
অগ্নি উপাসকদের কুকুর ও ঘোর কালো কুকুরের শিকার
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের অগ্নি উপাসকদের কুকুর ও পাখির ধৃত শিকার খেতে নিষেধ করা হয়েছে। [৩২০৯] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ঘোর কালো কুকুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তা শয়তান। [৩২১০]
ধনুকের শিকার
আবূ সা’লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা ধনুকের সাহায্যে ধৃত শিকার খাও। [৩২১১] আদী বিন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তীরন্দাজ সম্প্রদায়। তিনি বলেনঃ তুমি তীর নিক্ষেপ করলে এবং তা শিকার বিদ্ধ হলে তা খাও। [৩২১২]
এক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর শিকারকৃত প্রাণী পাওয়া গেলে
আদী বিন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করি, অতঃপর তা এক রাত পর্যন্ত নিখোঁজ থাকে। তিনি বলেনঃ তুমি শিকারের সাথে তোমার তীর পেলে এবং অন্য কিছু না পেলে তা খাও। [৩২১৩]
পালক ও সূক্ষ্মাগ্রবিহীন তীরের শিকার
আদী বিন হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পালক ও সূক্ষ্মাগ্রবিহীন তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেনঃ তীরের আঘাতে যে শিকার ধরতে পারো তা খাও এবং তীরের পার্শ্বদেশের আঘাতে যে শিকার ধরো তা মৃত (তা খাওয়া যাবে না)। [৩২১৪] আদী বিন হাতিম (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তীর বা লাঠির পার্শ্বদেশের আঘাতে ধৃত শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, তার শিকার খেও না, কিন্তু যদি তা শিকারের দেহ ভেদ করে (তবে খাবে) [৩২১৫]
জীবিত প্রাণীর দেহের অংশবিশেষ কর্তন করলে তা মৃত হিসাবে গণ্য
ইবনু উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জীবিত প্রানীর দেহের কোন অংশ কেটে বিচ্ছিন্ন করা হলে তা মৃত হিসাবে গণ্য। [৩২১৬] তামীম আদ-দারী (রাঃ) ২/৩২১৭. তামীম আদ-দারী (রাঃ), তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ যুগে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা উটের কুজ এবং মেষের লেজের (প্রান্তভাগের চর্বিযুক্ত মোটা) অংশ (খাওয়ার জন্য) কেটে বিচ্ছিন্ন করবে। সাবধান! জীবন্ত প্রানীর দেহের কোন অংশ কেটে বিচ্ছিন্ন করা হলে তা মৃত হিসাবে গণ্য (তা খাওয়া নিষিদ্ধ) [৩২১৭]
মাছ ও টিড্ডি শিকার
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাদের জন্য দু’টি মৃত জীব হালাল করা হয়েছেঃ মাছ ও টিড্ডি (এক প্রকারের বড় জাতের ফড়িং)। [৩২১৮] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট টিড্ডি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার বিরাট বাহিনী। আমি তা খাইও না এবং হারামও করি না। [৩২১৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ থরে থরে সাজিয়ে টিড্ডি উপঢৌকন পাঠাতেন। [৩২২০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) টীড্ডির ব্যাপারে বদদোয়া করে বলতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! বড় টিড্ডীগুলো ধংস করো, ছোট টিড্ডীগুলো হত্যা করো, এর ডিমগুলো নষ্ট করে তার মূলোৎপাটন করো এবং আমাদের কৃষিজ উৎপাদনের ক্ষতিসাধন থেকে এবং আমাদের জীবিকা থেকে তার মুখ বন্ধ করে দাও। নিশ্চয় তুমিই দুআ শ্রবণকারী।’’ এক ব্যাক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র একদল সৈনিকের মূলোৎপাটোনের জন্য আপনি কিরূপে বদদোয়া করলেন? তিনি বলেনঃ সমুদ্রে মাছের হাঁচি থেকে টিড্ডি নির্গত হয়। হাশিম (রাঃ) বলেন, যিয়াদ বলেছেন (রাঃ) এমন এক ব্যক্তি আমাদের তা বলেছেন, যিনি মাছের হাঁচি দিয়ে টিড্ডি নির্গত করতে দেখেছেন। [৩২২১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হাজ্জ অথবা উমরা করতে রওয়ানা হলাম। আমাদের সামনে একপাল টিড্ডি অথবা এক প্রকারের টিড্ডি উপস্থিত হলো। আমরা আমাদের চাবুক ও জুতা দিয়ে তা মারতে লাগলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তা খাও, কারণ তা সামুদ্রিক বা জলজ শিকার। [৩২২২]
যে প্রাণী হত্যা করা নিষেধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুরাদ পাখি, বেঙ, পিপীলিকা ও হুদহুদ পাখি হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। [৩২২৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার ধরনের প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছেনঃ পিপীলিকা, মৌমাছি, হুদহুদ পাখি, সুরাদ পাখি। [৩২২৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নবীগণের মধ্যকার এক নবীকে পিপীলিকা দংশন করলো। তিনি পিপীলিকাদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী তা জ্বালিয়া দেয়ে হলো। এজন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ওহী নাযিল করেনঃ একটি পিপীলিকা তোমাকে দংশন করেছে, আর তুমি আল্লাহ্র গুনগানে রত তাদের গোটা জাতিকে ধ্বংস করলে। [উপরোক্ত হাদীসের মোট ৬টি সানাদের ৪টি বর্ণিত হয়েছে, অপর ২টি সানাদ হলোঃ] ৪/৩২২৫(১). আবূ হুরায়রা (রাঃ) [৩২২৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
কাঁকর নিক্ষেপ নিষিদ্ধ
আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) এর এক নিকটাত্নীয় কাঁকর নিক্ষেপ করলে তিনি তাকে বারণ করেন এবং বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁকর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ ‘‘তাঁর সাহায্যে শিকারও ধরা যায় না, শত্রুকেও আঘাত করা যায় না, কিন্তু তা দাঁতে ভাংগে ও চোখ নষ্ট করে।’’ রাবী বলেন, সে পুনরায় কাঁকর নিক্ষেপ করলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাচ্ছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিষেধ করেছেন, আর তুমি তা নিক্ষেপ করছো! আমি কখনও তোমার সাথে কথা বলবো না। [৩২২৬] আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁকর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ তা শিকারও হত্যা করতে পারে না শত্রুকেও আঘাত করতে পারে না, কিন্তু তা চোখ নষ্ট করে এবং দাঁত ভাঙ্গে। [৩২২৭]
নিধন
উম্মু শারীক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে গিরগিটি হত্যা করার নির্দেশ দেন। [৩২২৮] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যাক্তি প্রথম গিরগিটি হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এত এত পরিমান পুন্য। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এই এই পরিমাণ পুন্য (কিন্তু প্রথম আঘাতের তুলনায় কম)। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এই এই পরিমাণ পুন্য (কিন্তু দ্বিতীয় আঘাতের তুলনায় কম)। [৩২২৯] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিরগিটি সম্পর্কে বলেনঃ তা ক্ষতিকর প্রাণী। [৩২৩০] ফাকিহা ইবনুল মুগীরার মুক্তদাসী সাইবাহ (মাকবূলাহ) তিনি আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করে তার ঘরে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব গিরগিটি হত্যা করি। কারণ আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইবরাহিম (আঃ)-কে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোন প্রানী ছিল না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, গিরগিটি ব্যতীত। সে বরং আগুনে ফুঁ দিয়েছিলো। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটিকে হত্যার নির্দেশ দেন। [৩২৩১]
শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম
আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন। যুহরী (রাঃ) বলেন, আমি সিরিয়ায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত এ হাদীস শুনতে পাইনি। [৩২৩২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম। [৩২৩৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধের দিন শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংস্র জন্তু এবং নখরযুক্ত যে কোন শিকারী পাখী আহার করতে নিষেধ করেছেন। [৩২৩৪]
বাঘ ও খেঁকশিয়াল
খুযায়মাহ বিন জাযই (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনার নিকট যমীনের কীট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছি। আপনি খেঁকশিয়াল সম্পর্কে কী বলেন? তিনি পাল্টা জিজ্ঞেস করেনঃ কে খেঁকশিয়াল খায়? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি নেকড়ে বাঘ সম্পর্কে কী বলেন? তিনি বলেনঃ যার মধ্যে কোন ভালো গুণ আছে সেরূপ কোন ব্যাক্তি কী তা খেতে পারে? [৩২৩৫]
দাবু (বেজি ও ভালুকের মাঝামাঝি চতুষ্পদ জন্তু)
আবদুর রহমান বিন আবূ আম্মার আমি জাবির বিন আবদুল্লাহ(রাঃ) নিকট ‘দাবুই’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তা শিকার কিনা? তিনি বলেন, হাঁ। আমি বললাম, আপনি কি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, হ্যা। [৩২৩৬] খুযায়মাহ বিন জাযই (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ‘দাবু’ সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, কোন্ লোক দাবু আহার করে? [৩২৩৭]
গুইসাপ
সাবিত বিন ইয়াযিদ আল-আনসারী (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। লোকেরা গুইসাপ ধরে তা ভুনা করে আহার করলো। আমিও একটি গুইসাপ ধরে তা ভুনা করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি একটি কাঠ তুলে নিয়ে তা দিয়ে সেটির আঙ্গুল গননা করতে লাগলেন, অতঃপর বলেনঃ বনী ইসরাঈলের একটি সম্প্রদায়ের চেহারা বিকৃত হয়ে পৃথিবীর জন্তুতে পরিণত হয়। আমি জানি না, এটাই সেই প্রাণী কিনা। আমি বললাম লোকেরা তা ভুনা করে খেয়েছে। কিন্তু তিনি তা আহারও করেননি এবং আহার করতে নিষেধও করেননি। [৩২৩৮] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গুইসাপ হারাম করেননি, কিন্তু তা অপছন্দ করেছেন। এটা পশুপালের রাখালদের খাদ্য। আল্লাহ তাআলা এই প্রানীর দ্বারা অনেককে উপকৃত করেন। আমার নিকট থাকলে আমি তা অবশ্যি আহার করতাম। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্নিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ৩/৩২৩৯(১) উমার ইবনুল খাত্তাব(রাঃ), [৩২৩৯] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায শেষে ফিরছিলেন তখন আহলে সুফ্ফার মধ্যকার এক ব্যক্তি তাঁকে ডেকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের এলাকায় প্রচুর গুইসাপ পাওয়া যায়। এই প্রানী সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? তিনি বলেনঃ আমি জানতে পেরেছি যে, একটি সম্প্রদায়ের সৃষ্টিগত রূপ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করে দেয়া হয়েছে। অতএব তিনি তা খাওয়ার নির্দেশ দেননি এবং তা খেতে নিষেধও করেননি। [৩২৪০] খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য ভুনা গুইসাপ এনে তাঁর সামনে পরিবেশন করা হলে তিনি তা খাওয়ার জন্য হাত বাড়ালেন। তাঁর নিকটে উপস্থিত এক ব্যক্তি বললো, এটা গুইসাপের গোশত। তিনি নিজের হাত তুলে নিলেন। খালিদ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, গুইসাপ কি হারাম? তিনি বলেন, না, কিন্তু তা আমার এলাকার প্রানী নয়। তাই এটাতে আমার রুচি হয় না। খালিদ (রাঃ) হাত বাড়িয়ে তা নিলেন এবং আহার করলেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন। [৩২৪১] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি গুইসাপ হারাম বলি না। [৩২৪২]
খরগোশ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা “মারজা-জাহরান (ওয়াদী ফাতিমাহ)” এলাকা অতিক্রমকালে একটি খরগোশকে উত্তেজিত করে বের করলাম। লোকেরা তার পিছু ধাওয়া করে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। অতঃপর আমি তার পিছু ধাওয়া করে তা ধরে ফেললাম এবং তা নিয়ে আবূ তালহা (রাঃ)-র নিকট আসলাম। তিনি তা যবেহ করলেন। অতঃপর তার নিতম্ব ও উরুর গোশত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পাঠালেন। তিনি তা গ্রহণ করলেন। [৩২৪৩] মুহাম্মদ বিন সফওয়ান (রাঃ) তিনি দু’টি খরগোশ কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই খরগোশ দু’টি ধরেছি কিন্তু এমন কোন লৌহাস্ত্র পেলাম না, যা দিয়ে তা যবেহ করতে পারতাম। তাই আমি একটি ধারালো সাদা পাথর দিয়ে তা যবেহ করেছি। আমি কি তা আহার করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আহার করো। [৩২৪৪] খুযায়মাহ বিন জাযই (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি মাটির গর্ভে বসবাসকারী প্রানী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আপনার নিকট এসেছি। গুইসাপ সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি নিজে খাই না এবং হারামও করি না। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যে জিনিস আপনি হারাম করবেন না তা কি আমি আহার করতে পারি, আর আপনিই বা কেন তা আহার করেন না? তিনি বলেন, কোন এক সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের গঠন এরুপ দেখেছি বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! খরগোশ সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি তা খাইও না এবং হারামও করি না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যে জিনিস আপনি হারাম করেন না, তা কি আমি আহার করতে পারি, আর আপনি তা কেন খান না? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তা ঋতুবতী হয়। [৩২৪৫]
সমুদ্রগর্ভে মরে ভেসে ওঠা মাছ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সমুদ্রের পানি পাক এবং তার মৃতজীব হালাল”। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি আবূ উবায়দা আল-জাওয়াদের সূত্রে জানতে পেরেছি যে, তিনি বলেন, এটা জ্ঞানের অর্ধেক। কারণ দুনিয়াটা (দু‘ভাগে বিভক্ত): স্থলভাগ ও জলভাগ। অতএব তোমাকে জলভাগ সম্পর্কে ফতোয়া দেয়া হয়েছে। আর অবশিষ্ট থাকলো স্থলভাগ। [৩২৪৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমুদ্র যা উদগীরণ করে অথবা তা থেকে যা নিক্ষিপ্ত হয় তা তোমরা আহার করো। আর যা সমুদ্রে মারা যায়, অতঃপর পানির উপর ভেসে উঠে তা আহার করো না। [৩২৪৭]
কাক
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কোন্ লোক কাক খায়? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নাম রেখেছেন, “ফাসিক” (নিকৃষ্ট প্রাণী)। আল্লাহর শপথ! তা পবিত্র প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত নয়। [৩২৪৮] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ বলেনঃ সাপ ক্ষতিকর প্রাণী, বিছা ক্ষতিকর প্রানী, ইঁদুর ক্ষতিকর প্রানী এবং কাক ক্ষতিকর প্রাণী। কাসিমের নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো, কাক আহার করা যায় কি? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোন্ লোক কাক আহার করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথার পর যে, ‘তা ফাসিক’? [৩২৪৯]
বিড়াল
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়াল ও তার ক্রয়মূল্য ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। [৩২৫০]