29. আহার ও তার শিষ্টাচার
অপরকে আহার করানো
আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন (হিজরত করে মক্কা থেকে) মদীনায় এলেন তখন লোকেরা তাঁর নিকট যেতে লাগলো এবং বলাবলি হতে লাগলোঃ আল্লাহর রাসূল এসেছেন, আল্লাহর রাসূল এসেছেন, আল্লাহর রাসূল এসেছেন (তিনবার)। আমিও লোকজনের সাথে (তাঁকে) দেখতে গেলাম। আমি তাঁর মুখমন্ডল উত্তমরূপে দেখার পর বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা মিথ্যাবাদীর নয়। সর্বপ্রথম তাঁর মুখে আমার শোনা কথা এই যে, তিনি বললেনঃ হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্নীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামায পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। [৩২৫১] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সালামের ব্যাপক প্রসার করো, খাদ্য দান করো এবং ভাই ভাই হয়ে সদ্ভাবে থাকো, যেমন মহামহিম আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন। [৩২৫২] আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জিজ্ঞাস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ দরিদ্রদেরকে তোমার খাদ্যদান এবং তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া। [৩২৫৩]
একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। [৩২৫৪] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজনের খাদ্য দু’জনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, দু’জনের খাবার তিন বা চারজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে এবং চারজনের খাবার পাঁচ অথবা ছ’জনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। [৩২৫৫]
মুমিন ব্যক্তি এক উদরে খায় এবং কাফের ব্যক্তি সাত উদরে খায়
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি এক উদরে খায় এবং কাফের ব্যক্তি সাত উদরে খায়। [৩২৫৬] ইবনু উমার (রাদিয়ালাহু তা’আলা আনহু) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কাফের ব্যক্তি সাতটি পাকস্থলী পূর্তি করে খায় এবং মুমিন ব্যক্তি এক পাকস্থলী পূর্তি করে খায়। [৩২৫৭] আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি এক পাকস্থলীতে খায় এবং কাফের ব্যক্তি সাত পাকস্থলীতে খায়। [৩২৫৮]
খাদ্যে দোষারোপ করা নিষেধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও খাদ্যসামগ্রীর ত্রুটি ধরতেন না। পছন্দ হলে তিনি আহার করতেন, অন্যথায় রেখে দিতেন। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/৩২৫৯ (১). আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [৩২৫৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ
আহার করার পূর্বে উযু করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি চায় যে, তার ঘরে বরকত আসুক, সে যেন সকালের আহার গ্রহণের সময় উযু করে এবং আহার শেষেও উযু করে। [৩২৬০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট থেকে বর্ণিত। তিনি পায়খানা থেকে বেরিয়ে আসলে তাঁর জন্য খাবার পেশ করা হলো। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি কি আপনার জন্য উযুর পানি নিয়ে আসব না? তিনি বলেনঃ আমি কি নামায পড়তে চাচ্ছি? [৩২৬১]
হেলান দিয়ে খাদ্যগ্রহণ শিষ্টাচারের পরিপন্থী
আবূ জুহায়ফাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কখনো হেলান দিয়ে আহার করি না। [৩২৬২] আবদুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি বকরী হাদিয়া দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উভয় হাটু উঁচু করে বসে আহার করছিলেন। এক বেদুঈন বলল, এটা কি ধরনের বসা! তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে অনুগ্রহপরায়ণ ও বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন, হিংসুক ও অহংকারী বানাননি। [৩২৬৩]
আহার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ বলা
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ছয়জন সাহাবীসহ আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন এসে সমস্ত খাদ্য দু’গ্রাসে শেষ করে ফেললো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করতো, তাহলে এ’ খাদ্য তোমাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হতো। অতএব তোমাদের কেউ আহার গ্রহণকালে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। সে যদি আহার গ্রহণের প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ ‘বিসমিল্লাহ ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহী’ (খাদ্যের প্রারম্ভে এবং শেষেও বিসমিল্লাহ)। [৩২৬৪] উমার বিন আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার আহার অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ মহামহিম আল্লাহ্র নাম স্মরণ কর। [৩২৬৫]
ডান হাত দিয়ে খাদ্য গ্রহণ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকে যেন ডান হাতে আহার করে, ডান হাতে পান করে, ডান হাতে গ্রহণ করে এবং ডান হাতে দান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়, বাম হাতে পান করে, বাম হাতে দেয় এবং বাম হাতে গ্রহণ করে। [৩২৬৬] উমার বিন আবূ সালামাহ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিপালনাধীন ছিলাম। আহার গ্রহণের সময় আমার হাত পাত্রের যত্রতত্র চলে যেতো। তিনি আমাকে বললেনঃ এই ছেলে! আল্লাহর নাম স্মরণ করো, ডান হাতে আহার করো এবং তোমার নিকটের খাদ্য থেকে খাও। [৩২৬৭] জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা বাম হাতে আহার করো না। কারণ শায়তান বাম হাতে আহার করে। [৩২৬৮]
আঙ্গুলসমূহ চেটে খাওয়া
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন নিজ হাত চেটে খাওয়ার অথবা (অপরকে) চেটে খাওয়ানোর পূর্বে তা না মোছে। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমি উমার বিন কায়েসকে আমর বিন দীনারের নিকট জিজ্ঞাসা করতে শুনেছিঃ আপনার মতে আতা (রাঃ)- এর হাদিস "তোমাদের কেউ যেন হাত চেটে খাওয়ার অথবা চেটে খাওয়ানোর পূর্বে তা না মোছে", কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত? তিনি বলেন, বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। 'আমর বিন দীনার (রাঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) আমাদের নিকট আসার পূর্বেই আমরা তা বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে আতার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে মুখস্হ করেছি। আতা (রহঃ) তো জাবির (রাঃ)- এর সাথে মক্কায় যাওয়ার বছর সাক্ষাত করে। [৩২৬৯] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন হাত চেটে খাওয়ার পূর্বে তা না মোছে। কারণ তার জানা নেই যে, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে। [৩২৭০]
পাত্র পরিষ্কার করা
উম্মু আসিম (মাকবূলাহ) রাসূলুল্লাহর মুক্তদাস নুবায়শাহ (রাঃ), আমাদের নিকট প্রবেশ করলেন। তখন আমরা একটি বড় পাত্রে আহার করছিলাম। তিনি আমাদের বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আহার করার পর আহারের পাত্র চেটে খেয়ে পরিষ্কার করে, তার জন্যে পাত্র ক্ষমা প্রার্থনা করে। [৩২৭১] উম্মু আসিম নুবায়শাহ আমাদের নিকট এলেন। আমরা তখন আমাদের একটি পাত্রে আহার করছিলাম। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন পাত্রে আহার করার পর তা চেটে খেয়ে পরিষ্কার করে, তার জন্যে ঐ পাত্র ক্ষমা প্রার্থণা করে। [৩২৭২]
নিকটের খাদ্য থেকে গ্রহণ
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আহারের দস্তরখানা বিছানো হলে কেউ তার নিকটের খাবার থেকে যেন আহার করে এবং নিজ সঙ্গীর নিকটেরগুলো না নেয়। [৩২৭৩] ইকরাশ বিন যুআয়ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রচুর সারীদ (গোশ্তের ঝোলে ভিজানো রুটি) ও চর্বি ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে আসা হলো। আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে তা আহার করতে লাগলাম।আমার হাত পাত্রের মধ্যে যত্রতত্র সঞ্চালিত হতে থাকলে তিনি বলেনঃ হে ইকরাশ! এক জায়গা থেকে নিয়ে খাও।কারণ গোটা পাত্রে একই খাদ্য রয়েছে। অতঃপর আমাদের জন্যে বিভিন্ন রকমের তাজা খেজুর ভর্তি আর একটি বড় পাত্র আনা হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাত পাত্রের সর্বত্র বিচরণ করতে লাগলো এবং তিনি বললেনঃ হে ইকরাশ! পাত্রের যেখান থেকে ইচ্ছা খাও। কারণ তাতে বিভিন্ন কিছিমের খাবার রয়েছে। [৩২৭৪]
সারীদ-এর উপরাংশ থেকে খাওয়া নিষেধ
আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি পাত্র আনা হলে তিনি বলেনঃ এর চারপাশ থেকে খাও এবং উপরাংশ রেখে দাও, তাহলে তাতে বরকত লাভ করা যাবে। [৩২৭৫] ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা' আল-লায়সী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারীদের উপরাংশ স্পর্শ করে বলেনঃ আল্লাহর নাম নিয়ে তার চারপাশ থেকে আহার করো এবং তার উপরাংশ অবশিষ্ট রাখো। কারণ এই উপরের দিক থেকেই বরকত আসে। [৩২৭৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্যদ্রব্য এনে রাখা হলে তার চারপাশ থেকে খাও এবং মধ্যভাগ রেখে দাও। কারণ এ মধ্যস্হলে বরকত নাযিল হয়। [৩২৭৭]
খাবারের গ্রাস নীচে পড়ে গেলে
মা’কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন যে, একদা তিনি সকালের খাবার খাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার একটি গ্রাস (লুকমাহ) নীচে পড়ে গেলো। তিনি তা তুলে নিয়ে তার ময়লা দূর করে আহার করেন। এতে অনারব কৃষকরা চোখ টিপাটিপি করতে লাগলো। বলা হলো, আল্লাহ নেতাকে কল্যাণের সাথে রাখুন। নিচে পতিত খাবার তুলে নেয়ায় এসব কৃষক আপনার প্রতি চোখ টিপাটিপি করছে। তিনি বলেন, এসব অনারবের কারণে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট থেকে শ্রুত কথা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই। আমাদের মধ্যে কারো খাবারের গ্রাস পড়ে গেলে তাকে নির্দেশ দেয়া হতো যে, সে যেন তা তুলে নিয়ে তার ময়লা দূর করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্যে ফেলে না রাখে। [৩২৭৮] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো হাত থেকে খাবারের গ্রাস পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয় এবং তাতে যে ময়লা লেগেছে তা দূর করে খেয়ে নেয়। [৩২৭৯]
অন্যান্য খাদ্যের উপর সারীদের প্রাধান্য
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতায় পৌঁছেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে কেবল ইমরান কন্যা মরিয়ম এবং ফিরআওনের স্ত্রী আসিয়া এই পূর্ণতায় পৌঁছুতে পেরেছিলেন। আর নারী সমাজের উপর আয়িশাহর মর্যাদা তদ্রুপ, যেমন অন্যান্য খাদ্যের উপর সারীদের (ঝোলে ভিজানো রুটির) মর্যাদা। [৩২৮০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারী সমাজের উপর আয়িশাহর এমন মর্যাদা রয়েছে যেমন অন্যান্য সকল প্রকারের খাদ্যের উপর রয়েছে সারীদের প্রাধান্য। [৩২৮১]
আহারের পর হাত পরিষ্কার করা
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে খাদ্য খুব কমই পেতাম। আমরা যখন তা পেতাম তখন আমাদের নিকট তোয়ালে থাকতো না, হাতের তালু, বাহু ও পায়ের পাতা ব্যতীত। অতঃপর আমরা নামায পড়তাম এবং (আহার শেষে) উযু করতাম না। [৩২৮২]
আহার শেষে যে দুআ' পড়তে হয়
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার শেষ করে বলতেনঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানা ওয়া সাকানা ওয়া জা’আলানা মিনাল মুসলিমীন" (সমস্ত প্রশংসা আল্রাহর জন্যে যিনি আমাদের আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়েছেন)। [৩২৮৩] আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খাবার বা তাঁর সামনের খাবার তুলে রাখার পর তিনি বলতেনঃ আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান তায়্যিবান মুবারাকান গায়রা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দাইন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রব্বানা " (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, অসংখ্য প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা, পবিত্র ও প্রাচুর্যময় সত্ত্বার জন্যে। তিনি সবার জন্যে যথেষ্ট, তিনি কখনও পৃথক হন না। তাঁর অমুখাপেক্ষী হওয়া যায় না, আমাদের রব।)। [৩২৮৪] মুআয বিন আনাস আল-জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আহার করে সে যেন বলে, ' আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আতআমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিনগায়রি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'লার জন্যে, যিনি আমাকে আমার শক্তি ও ক্ষমতা ব্যতীত আহার করিয়েছেন ও রিযিক দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [৩২৮৫]
একত্রে আহার করা
ওয়াহশী (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা আহার করি, কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারি না। তিনি বলেন, তোমরা হয়ত পৃথক পৃথকভাবে আহার করো। তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, তোমরা একত্রে আহার করো এবং আহারকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করো, তাহলে তোমাদের খাদ্যে তোমাদের জন্যে বরকত দেয়া হবে। [৩২৮৬] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একত্রে আহার করো এবং বিচ্ছিন্নভাবে করো না। কারণ বরকত থাকে সমষ্টির সাথে। [৩২৮৭] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল তবে প্রথম বাক্যটি প্রমানিত।
খাদ্যে ফুঁ দেয়া
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দিতেন না এবং পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতেন না। [৩২৮৮] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল, তবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কওল থেকে যা সহীহ তা ৩৪২৯ নং হাদীসে আসছে।
কারো খাদেম তার খাদ্য নিয়ে এলে তা থেকে তাকে কিছু দেয়া
আবু হুরাইরা (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদেম তার জন্য খাবার এনে উপস্থিত হলে সে যেন তাকে নিজের সাথে বসায় এবং নিজের সাথে খাওয়ায়। সে যদি তাকে নিজের সাথে বসাতে না চায়, তবে খাবার থেকে যেন তাকে দেয়। [৩২৮৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো ক্রীতদাস তার সামনে আহার পরিবেশন করে, যা রান্না করার কষ্ট ও গরম সে সহ্য করেছে, তখন সে যেন তাকে নিজের সাথে বসিয়ে খাওয়ায়। সে যদি তা না করে, তাহলে একটি গ্রাস তুলে যেন তার হাতে দেয়। [৩২৯০] আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদেম যখন তার নিকট খাদ্য নিয়ে আসে, তখন সে তাকে যেন নিজের সাথে বসায় অথবা খাদ্য থেকে তাকেও খেতে দেয়। কারণ সে খাদ্যদ্রব্য রান্না করতে গিয়ে গরম ও ধোঁয়া সহ্য করেছে। [৩২৯১]
খাঞ্চা ও দস্তরখানে আহার করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন উঁচু জিনিসের উপর থালা রেখে আহার করেননি। কাতাদা (রাঃ) বলেন, তাহলে তারা কিসের উপর রেখে খেতেন? তিনি (আনাস) বলেন, দস্তরখানের উপর রেখে। [৩২৯২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত কখনও খাঞ্চা ভরে আহার করতে দেখিনি। [৩২৯৩]
খাদ্যসামগ্রী তুলে না নেয়া পর্যন্ত উঠে যাওয়া এবং সকলের আহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাত ধোয়া নিষেধ
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্যসামগ্রী তুলে নেয়ার পূর্বে (সকলের আহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত) উঠে যেতে নিষেধ করেছেন।[৩২৯৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দস্তরখান বিছানো হলে তা পুনরায় তুলে না নেয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি যেন উঠে না যায় এবং সে আহারে পরিতৃপ্ত হলেও হাত গুটিয়ে না নেয়, যতক্ষন না অন্য সকলের আহার গ্রহন শেষ হয়। (একান্তই যদি উঠার প্রয়োজন হয় তবে) সে যেন ওজরখাহি করে। কারণ সে হাত গুটিয়ে নিলে তার সাথের লোক লজ্জিত হবে এবং হয়ত তার আরও খাদ্যের প্রয়োজন থাকতে পারে। [৩২৯৫]
আহারের উচ্ছিষ্ট হাত থেকে পরিস্কার না করে রাত কাটানো
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! যে ব্যক্তি আহারের তেলচিটে হাত নিয়ে (হাত পরিস্কার না করে) রাত কাটায়, সে যেন নিজেকেই ভর্ৎসনা করে। [৩২৯৬] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি হাতে তেলচিটে নিয়ে ঘুমালো, তা ধুয়ে পরিস্কার করলো না, এমতাবস্থায় সে কোন অনিষ্টের শিকার হলে এজন্য সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে। [৩২৯৭]
আহার পরিবেশন করা
আসমা’ বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য খাদ্যদ্রব্য আনা হলো। তা আমাদের সামনে পরিবেশন করা হলে আমরা বললাম, আমাদের ক্ষুধা নেই। তখন তিনি বলেনঃ মিথ্যা ও ক্ষুধা একত্র করো না (পেটে ক্ষুধা রেখে খেতে অস্বীকার করো না)। [৩২৯৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি সকালের আহার করছিলেন। তিনি বলেনঃ এগিয়ে আসো এবং খাও। আমি বললাম, আমি রোযাদার। আফসোস আমার জন্য আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আহারে অংশগ্রহণ করতাম। [৩২৯৯]
মসজিদের ভিতরে আহার করা
আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিস বিন জাযই আয-যুবায়দী (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে মসজিদে বসে রুটি ও গোশ্ত আহার করতাম। [৩৩০০]
দাঁড়ানো অবস্থায় আহার করা
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে হাঁটা অবস্থায় আহার করেছি এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পান করেছি। [৩৩০১]
লাউ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাউয়ের তরকারী পছন্দ করতেন। [৩৩০২] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আমার মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আমাকে এক টুকরি তাজা খেজুরসহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠালেন। কিন্ত আমি তাঁকে পেলাম না। তিনি তাঁর নিকটস্থ এক মুক্তদাসের বাড়ীতে গিয়েছিলেন। সে তাঁকে আহার গ্রহনের দাওয়াত করেছিল। এবং তার জন্য খাবার তৈরি করেছিল। আমি তাঁর নিকট আসলাম, তখন তিনি আহার করছিলেন। রাবী বলেন, তিনি আমাকে তাঁর সাথে আহার করার জন্য ডাকলেন। রাবী বলেন, সে তাঁর জন্য গোশ্ত ও লাউ দিয়ে ছারীদ তৈরী করেছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি লাউ খুব পছন্দ করেন। তাই আমি লাউয়ের টুকরাগুলো একত্র করে তাঁর সামনে দিতে থাকলাম। আমরা আহার শেষ করার পর তিনি নিজের বাড়ীতে ফিরে এলেন এবং আমি তাঁর সামনে টুকরিটি রাখলাম। তিনি খেজুর আহার করতে লাগলেন এবং অন্যদেরও দিতে থাকলেন, এভাবে তা দিতে দিতে শেষ করে অবসর হলেন। [৩৩০৩] জাবির বিন তারিক (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়ীতে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর সামনে লাউয়ের তরকারী ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? তিনি বললেনঃ এটা লাউ তরকারী। আমরা তা দিয়ে আমাদের খাদ্যদ্রবের পরিমাণ বাড়াই। [৩৩০৪]
গোশ্ত
আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়াবাসী ও জান্নাতবাসীদের খাদ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ খাদ্য হলো গোশ্ত। [৩৩০৫] আবূ দারদা’ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখনই গোশ্ত খাওয়ার দাওয়াত দেয়া হয়েছে তখনই তিনি তাতে সাড়া দিয়েছেন এবং যখনই তাঁকে গোশ্ত উপঢৌকন দেয়া হয়েছে, তিনি তা কবুল করেছেন। [৩৩০৬]
(দেহের) কোন অংশের গোশ্ত অপেক্ষাকৃত উত্তম
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গোশ্ত আনা হল। তাঁকে রানের গোশ্ত দেয়া হল এবং তিনি এটাই পছন্দ করতেন। তিনি তা চুষে চুষে খেলেন। [৩৩০৭] আবদুল্লাহ বিন জা’ফর (রাঃ) তিনি তাদের জন্য একটি উট যবেহ করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, যখন লোকেরা তাঁর জন্য গোশ্ত ঢালছিলঃ গোশ্তের মধ্যে অপেক্ষাকৃত উত্তম হচ্ছে রানের (পাছার) গোশ্ত। [৩৩০৮]
ভুনা গোশ্ত
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহামহিম আল্লাহ্র সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনো আস্ত ভুনা বকরী দেখেছেন বলে আমি জানি না। [৩৩০৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে থেকে কখনো খাওয়ার পর অবশিষ্ট ভুনা গোশ্ত তুলে রাখা হয়নি (কারন এই গোশ্তের পরিমান কম হত এবং অভ্যাগত অধিক হওয়ায় তা অবশিষ্ট থাকতো না) এবং তাঁর জন্য কখনো মোটা বিছানা বহন করা হত না। [৩৩১০] আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনুল হারিস ইবনুল জাযই আয-যুবায়দী (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মসজিদে বসে ভুনা গোশ্ত খেয়েছি, অতঃপর কাঁকরে হাত মুছে দাঁড়িয়ে নামায পড়েছি, কিন্তু (গোশ্ত খাওয়ার কারনে পুনরায়) উযু করিনি। [৩৩১১] তাহকীক আলবানীঃ হাত মুছার কথা ব্যতীত সহীহ।
গোশ্তের শুটকি
আবু মাসউদ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এল। তিনি লোকটির সাথে কথা বলেন। তার কাঁধের গোশ্ত (ভয়ে) কাঁপছিল। তিনি তাকে বলেনঃ তুমি শান্ত হও, স্বাভাবিক হও। কারন আমি কোন রাজা-বাদশা নই, বরং আমি শুকনো গোশ্ত খেয়ে জীবনধারিনী এক মহিলার পুত্র। [৩৩১২] আয়িশাহ (রাঃ) আমরা ছাগলের পায়া তুলে রাখতাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোরবানির পনের দিন পরও তা খেতেন। [৩৩১৩]
কলিজা ও প্লীহা
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের জন্য দু প্রকারের মৃতজীব ও দু ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হল মাছ ও টিড্ডি এবং দু প্রকারের রক্ত হল কলিজা ও প্লীহা। [৩৩১৪]
লবণ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের তরকারীর নেতা (প্রধান উপকরণ) হল লবণ। [৩৩১৫]
সির্কা দিয়ে রুটি খাওয়া
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সির্কা (টক ও ঝাঁঝযুক্ত) পানীয় উত্তম তরকারী। [৩৩১৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সির্কা উত্তম তরকারী। [৩৩১৭] উম্মু সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট আসলেন। আমি তখন তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেনঃ সকালের নাস্তা আছে কি? তিনি বলেনঃ আমাদের নিকট রুটি, খেজুর ও সির্কা আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সির্কা উত্তম তরকারী। হে আল্লাহ! সির্কায় বরকত দান করুন, কারন তা ছিল আমার পূর্বকালের নবীগণের তরকারি। যে ঘরে সির্কা আছে সে ঘরে কখনো তরকারীর অভাব হয়না। [৩৩১৮]
যায়তুন তৈল
উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যায়তুন তেল দিয়ে রুটি খাও ও তা দেহে মাখো। কারন তা বরকতপূর্ণ গাছ থেকে নির্গত হয়। [৩৩১৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যায়তুন তৈল খাও এবং তা দেহে মাখো। কারন তা বরকতপূর্ণ। [৩৩২০] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল তবে ৩৭৯ নং হাদিসের অনুরূপে সহীহ।
দুধ
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দুধ আনা হলে তিনি বলতেনঃ এক অথবা দুই বরকত। [৩৩২১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে আহার করান তখন সে যেন বলেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহী ওয়ারযুকনা খাইরাম মিনহু’ (হে আল্লাহ! আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দান করুন এবং এর চেয়েও উত্তম রিযিক দান করুন)। আর আল্লাহ যাকে দুধ পান করান সে যেন বলেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহী ওয়া যিদনা মিনহু’ (হে আল্লাহ! এ দুধে আমাদের বরকত দান করুন এবং এর চেয়েও বাড়িয়ে দিন)। কারন আমি জানিনা যে, দুধ ছাড়া এমন কোন জিনিস আছে কিনা যা একি সঙ্গে আহার ও পানীয় উভয়ের জন্যে যথেষ্ট হতে পারে। [৩৩২২]
হালুয়া বা মিষ্টি দ্রব্য
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হালুয়া ও মধু পছন্দ করতেন। [৩৩২৩]
শসা ও তাজা খেজুর একত্রে মিশিয়ে খাওয়া
আয়িশাহ (রাঃ) আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরুপে দৈহিক পরিপুস্টি লাভ করলাম। [৩৩২৪] আবদুল্লাহ বিন জা’ফার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেতে দেখেছি। [৩৩২৫] সাহল বিন সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাজা খেজুর তরমুজের সাথে মিশিয়ে আহার করতেন। [৩৩২৬]
খেজুর
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে খেজুর নাই সে ঘরের বাসিন্দারা অভুক্ত। [৩৩২৭] সালমাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ঘরে খেজুর নেই সে ঘর খাদ্যশুন্য ঘরের ন্যায়। [৩৩২৮]
যখন (মৌসুমের) প্রথম ফল আসে
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মৌসুমের প্রথম ফল উপস্থিত করা হলে তিনি বলতেনঃ ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী মাদিনাতিনা ওয়া ফী সিমারিনা ওয়া ফী মুদ্দিনা ওয়া ফী সাইনা বারাকাতান মাআ বারাকাতিন’ (হে আল্লাহ! আমাদের বরকত দান করুন আমাদের শহরে, আমাদের ফলে, আমাদের মুদ্দ-এ ও আমাদের সা-এ, বরকতের উপর বরকত)। অতঃপর তিনি তার নিকট উপস্থিত শিশুদের তা খেতে দিতেন। [৩৩২৯]
ভেজা ও শুষ্ক খেজুর একত্রে মিশিয়ে খাওয়া
আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তাজা খেজুর শুকনা খেজুরের সাথে মিশিয়ে খাও, পুরাতন খেজুর নতুন খেজুরের সাথে মিশিয়ে খাও। কারন তাতে শয়তান রাগান্বিত হয় এবং বলে, আদম সন্তান জীবিত রইল, এমনকি পুরাতন ফল নতুন ফলের সাথে আহার করল। [৩৩৩০]
একাধিক খেজুর একত্রে মুখে দেয়া নিষেধ
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন কোন ব্যক্তি যেন নিজ সাথীদের অনুমতি ব্যতিরেকে একত্রে দুটি খেজুর মুখে না দেয়। [৩৩৩১] সা’দ (রাঃ) সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমত করতেন এবং তাঁর কথাবার্তা তার ভাল লাগত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকটি খেজুর একসাথে মুখে দিতে নিষেধ করেছেন। [৩৩৩২]
ভাল খেজুর বেছে বেছে খাওয়া
আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তাঁর সামনে খেজুর পেশ করা হলে তিনি ভাল খেজুর খোঁজ করতেন। [৩৩৩৩]
মাখনের সাথে খেজুর খাওয়া
আতিয়্যাহ বিন বুসর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলেন। আমরা তাঁর বসার জন্য আমাদের একটি চাদর পেতে দিলাম। পানি ছিটিয়ে আমরা তা তাঁর জন্য নরম করে দিলাম। তিনি তার উপর বসলেন। তখন আমাদের ঘরে মহামহিম আল্লাহ তাঁর উপর ওহী নাযিল করলেন। আমরা তাঁর সামনে মাখন ও খেজুর পেশ করলাম। তিনি মাখন পছন্দ করতেন। [৩৩৩৪]
ময়দা
আবু হাযিম আমি সাহল বিন সা’দ (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ময়দা দেখেছেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত ময়দা দেখিনি। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে লোকদের কি চালুনী ছিল? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত চালুনীও দেখিনি। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আপনারা চালুনী ছাড়া কিভাবে যব খেতেন? তিনি বললেন , হাঁ (আমরা তা গুড়ো করে) তাতে ফুঁ দিতাম এবং যা উড়ে যাওয়ার তা উড়ে যেত এবং যা অবশিষ্ট থাকতো তা পানিতে ভিজাতাম। [৩৩৩৫] উম্মু আয়মান (রাঃ) তিনি আটা ছেনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য রুটি তৈরি করলেন। নবীজী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? তিনি বললেন, এটা আমাদের এলাকার খাবার। আমি আপনার জন্য এ খাবার তৈরি করতে আগ্রহী হলাম। তিনি বলেন, এর মধ্যে ভুষি ঢেলে দাও, তারপর ছেনে নাও। [৩৩৩৬] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এক চোখেও (কখনো) ময়দার রুটি দেখেননি, এমনকি এই অবস্থায় তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হন। [৩৩৩৭]
পাতলা রুটি (চাপাতি)
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) (আতা’) বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তার এলাকা অর্থাৎ উবাইনায় (ইউনা) যান। লোকেরা তার জন্য মিহি রুটি পরিবেশন করলে তিনি কেঁদে দিলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো এরূপ রুটি দেখেননি। [৩৩৩৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) (কাতাদাহ) বলেন, আমরা আনাস বিন মালিক (রাঃ)-র নিকট যেতাম। ইসহাক (রহঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ তার রুটি প্রস্তুতকারী দাঁড়ানো থাকতো আর দারিমীর বর্ণনায় আছেঃ তার খাঞ্চা বিছানো থাকতো। একদিন তিনি বলেন, তোমরা আহার করো। আমি জানি না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বচক্ষে মিহি রুটি এবং আস্ত ভূনা বকরী দেখেছেন কি না। [৩৩৩৯]
ফালূদা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমরা ফালূদার নাম শুনতে পাই, জিবরীল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলেন, আপনার উম্মত অনেক দেশের উপর বিজয়ী হবে এবং অঢেল সম্পদ তাদের হস্তগত হবে, এমনকি তারা ফালূদা খাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ ফালূদা কী? তিনি বলেনঃ তারা ঘি ও মধু একত্রে মিশাবে। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কান্নার মত আওয়াজ করলেন। [৩৩৪০] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি মুনকার ও মাতানটি বানোয়াট।
ঘির সাথে ভূষিযুক্ত রুটি
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন বলেনঃ আহা! আমার নিকট যদি ঘি মিশ্রিত সাদা মিহি আটার রুটি থাকতো, আমরা তা আহার করতাম। রাবী বলেন, একথা শুনে এক আনসার সাহাবী অনুরূপ রুটি তৈরি করে তাঁর নিকট নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এই ঘি কিসের মধ্যে ছিল? সাহাবী বলেন, গুই সাপের চামড়ার তৈরি পাত্রের মধ্যে। রাবী বলেন, তিনি তা আহার করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। [৩৩৪১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলাইম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য রুটি তৈরি করলেন এবং তাতে কিছু ঘি ঢেলে দিলেন। অতঃপর তিনি (আমাকে) বলেন, তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যাও এবং তাঁকে দাওয়াত দাও। রাবী বলেন, আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার মা আপনাকে দাওয়াত দিয়েছেন। রাবী বলেন, আমি তাদের আগেই বাড়ি পৌঁছে মাকে এ কথা জানালাম। ইতোমধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন, তুমি যা তৈরি করেছো, তা নিয়ে এসো। মা বলেন, আমি তো মাত্র আপনার একার পরিমাণ খাবার তৈরি করেছি। তিনি বলেন, তাই দাও। তিনি আরও বলেনঃ হে আনাস! দশজন দশজন করে আমার কাছে ভেতরে পাঠাও। তিনি বলেন, আমি দশজন দশজন করে তাঁর নিকট পাঠাতে থাকি। তারা সবাই আহার করলেন, এমনকি সবাই পরিতৃপ্ত হলেন, আর তারা ছিলেন আশিজন। [৩৩৪২]
গমের রুটি
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো পরপর তিনদিন গমের রুটি পেট ভরে খেতে পাননি, এ অবস্থায় মহামহিম আল্লাহ তাঁকে তুলে নেন (ইনতিকাল করেন)। [৩৩৪৩] আ’য়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আসার পর থেকে তাঁর ইনতিকাল পর্যন্ত তাঁর পরিবার কখনো একাধারে তিনদিন পেট ভরে আটার রুটি খেতে পাননি। [৩৩৪৪]
যবের রুটি
আ’য়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইনতিকাল করেন, তখন আমার ঘরে আমার আলমিরায় রক্ষিত যবের সামান্য আটা ব্যতীত কোন প্রাণীর আহার করার মত আর কিছুই ছিলো না। আমি তা থেকে আহারের ব্যবস্থা করতে থাকলাম। এভাবে অনেকদিন চলে গেলো। অবশেষে একদিন আমি তা ওজন করলাম। ফলে তা শেষ হয়ে গেলো। [৩৩৪৫] আ’য়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকাল পর্যন্ত তাঁর পরিবারের সদস্যগণ কখনো যবের রুটি পেট ভরে আহার করেননি। [৩৩৪৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একাধারে কয়েক রাত অভুক্ত অবস্থায় কেটে যেত এবং তাঁর পরিবারের লোকদেরও রাতের আহার জুটতো না। অধিকাংশ সময় তাদের রুটি হত যবের তৈরি। [৩৩৪৭] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশমী বস্ত্র ও সাধারণ জুতা পরিধান করতেন। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বাদহীন খাবার খেতেন এবং মোটা বস্ত্র পরিধান করতেন। হাসানকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘স্বাদহীন-এর অর্থ কী? তিনি বলেন, মোটা যবের রুটি। তিনি তা এক ঢোক পানি ব্যতীত গলাধঃকরণ করতে পারতেন না। [৩৩৪৮]
পরিমিত আহার উত্তম ও ভুরিভোজ খারাপ
মিকদাম বিন মা’দীকারিব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন পাত্র ভর্তি করে না। (যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে পাত্র থেকে ততটুকু খাদ্য উঠানো কোন ব্যক্তির জন্য দূষণীয় নয়)। যতটুকু আহার করলে মেরুদণ্ড সোজা রাখা সম্ভব, ততটুকু খাদ্যই কোন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এরপরও যদি কোন ব্যক্তির নফস (প্রবৃত্তি) জয়জুক্ত হয়, তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। [৩৩৪৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ঢেকুর তুললে তিনি বলেন: তুমি আমাদের থেকে তোমার ঢেকুর প্রতিরোধ করো। কারণ যারা পার্থিব জীবনে ভুরিভোজ করে তারাই হবে কিয়ামতের দিন অর্ধেক ক্ষুধার্ত। [৩৩৫০] আতিয়্যাহ বিন আমির আল-জুহানী (মাকবূল) আমি সালমান (রাঃ), এর নিকট শুনেছি যে, তাকে আহার করতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি বলতেন, আমার জন্য যথেষ্ট যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়াতে যেসব লোক ভুরিভোজ করে, তারাই হবে কিয়ামতের দিন অধিক ক্ষুধার্ত। [৩৩৫১]
তোমার যখন যা খেতে ইচ্ছা হয় তখন তাই খাওয়া অপচয়
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখনই তোমার যা খেতে লোভ জাগে, তখনই তা খাওয়াই (যথেচ্ছ আহার) হলো অপচয়। [৩৩৫২]
খাদ্যদ্রব্য ফেলে দেয়া নিষেধ
আয়িশাহ (রাঃ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে ঘরে প্রবেশ করে এক টুকরা রুটি পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি তা তুলে নিয়ে ধুলাবালি ঝেড়ে ফেলে আহার করলেন এবং বললেনঃ হে আয়িশাহ! সম্মান করো সম্মানিতের (আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকের)। কারণ কোন জাতির নিকট থেকে আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক উঠে গেলে তা পুনরায় তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে না। [৩৩৫৩]
দুর্ভিক্ষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল জূ’, ফাইন্নাহু বি’সাদ-দাজীঊ ওয়া আউযুবিকা মিনাল খিয়ানাতে ফাইন্নাহা বি’সাতিল-বিতানাহ” (হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। কারণ তা (মানুষের) নিকৃষ্ট সাথী এবং আমি আপনার নিকট আরও আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রতারণা থেকে। কারণ তা গোপন চারিত্রিক দোষ)। [৩৩৫৪]
রাতের আহার পরিত্যাগ
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের আহার ত্যাগ করো না, যদিও তা এক মুঠো খেজুরও হয়। কারণ রাতের আহার ত্যাগ মানুষকে বৃদ্ধ করে দেয়। [৩৩৫৫]
লোকদেরকে দাওয়াত করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরে মেহমানের ভিড় লেগে থাকে সেই ঘরে উটের কুঁজের দিকে দ্রুত ধাবমান ছুরির চেয়েও দ্রুততর গতিতে কল্যাণ প্রবেশ করে। [৩৩৫৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে (মেহমানদের) আহার করানো হয়, সেই ঘরে উটের কুঁজের দিকে দ্রুত ধাবমান ছুরির চেয়েও দ্রুত গতিতে কল্যাণ প্রবেশ করে। [৩৩৫৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিদায়ের প্রাক্কালে মেহমানের সাথে ঘরের দরজা পযর্ন্ত এগিয়ে যাওয়া সুন্নাত। [৩৩৫৮]
দাওয়াতের স্থানে খারাপ কিছু দেখলে মেহমান সেখান থেকে ফিরে আসবে
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আহার তৈরি করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দাওয়াত দিলাম। তিনি এসে ঘরের ভেতর ছবি দেখতে পেয়ে ফিরে গেলেন। [৩৩৫৯] সাফীনাহ আবূ আবদুর রহমান (রাঃ) এক ব্যক্তি ‘আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ)-এর মেহমান হলো। তিনি তার জন্য আহার তৈরি করলেন। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, আমরা যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেও দাওয়াত করতাম তবে তিনিও আমাদের সাথে আহার করতেন। অতএব তাঁরা তাঁকে ও দাওয়াত করলেন এবং তিনি আসলেন। তিনি ঘরের দরজার চৌকাঠে হাত রেখে ঘরের এক কোণে পাতলা নকশাযুক্ত কাপড় দেখতে পেয়ে ফিরে গেলেন। ফাতিমা (রাঃ) আলী (রাঃ)-কে বলেন, আপনি তাঁর সাথে সাক্ষাত করুন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ জিনিস আপনাকে ফিরিয়ে দিলো? তিনি বলেনঃ এ রকম সুসজ্জিত ঘরে প্রবেশ করা আমার জন্য শোভা পায় না। [৩৩৬০]
গোশ্ত ও ঘি একত্রে মিশিয়ে খাওয়া
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (ইবনু উমার) বলেন যে, তিনি আহাররত অবস্থায় উমার (রাঃ) তার ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি তাকে আহারের মজলিসে মধ্যখানে জায়গা করে দিলেন। তিনি বিসমিল্লাহ বলে খাবারের পাত্রে হাত দিলেন এবং এক গ্রাস তুলে দিলেন, অতঃপর দ্বিতীয় গ্রাস তুলে নিয়ে বলেনঃ আমি তৈলাক্ত জিনিসের স্বাদ পাচ্ছি এবং তা গোশতের চর্বি নয়। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি মোটা গোশত ক্রয়ের উদ্দেশে বাজারে গিয়েছিলাম, কিন্তূ তার চড়া দাম দেখে এক দিরহামের শীর্ণকায় পশুর গোশত ক্রয় করে এবং এক দিরহামের ঘি ক্রয় করে তা ঐ গোশতের মধ্যে ঢেলে দিয়েছি। আমি চাচ্ছিলাম যে, পরিবারের সকলের ভাগে অন্তত একটি করে হাড় পড়ুক। উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঘি ও গোশত একত্রে উপস্থিত করা হলে, তিনি তার একটি আহার করতেন এবং অন্যটি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আহার করুন। পুনরায় কখনো ঘি ও গোশত একত্র হলে আমি তাই করবো। উমার (রাঃ) বলেন, আমি কখনও খাবো না। [৩৩৬১]
তরকারী রান্না করলে ঝোল বেশী রাখবে
আবূ যার্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে ঝোল বেশী দিও এবং তোমার প্রতিবেশীদের পযর্ন্ত তা পৌঁছিও। [৩৩৬২]
রসুন, পিঁয়াজ ও একপ্রকারের দুর্গন্ধযুক্ত তরকারী খাওয়া
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জুমুআর দিন খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা ও গুনগান করেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা দু’প্রকারের গাছ খাও, আমি তা নিকৃষ্ট জ্ঞান করি। তা হলো রসুন ও পিঁয়াজ। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে দেখেছি যে, এক ব্যক্তির মুখ থেকে তার দুর্গন্ধ নির্গত হলে তার হাত ধরে আল-বাকী নামক স্থানের দিকে বের করে দেয়া হয়। অতএব তোমাদের কেউ যদি তা খেতেই চায়, তবে সে যেন তা রান্না করে এর দুর্গন্ধ দূর করে দেয়। [৩৩৬৩] উম্মু আয়্যূব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করলাম, এবং তাতে কিছু শাক-সব্জিও ছিল। তিনি তা ত্যাগ করে বলেনঃ আমি আমার সাথীকে (জিবরীল) কষ্ট দেয়া পছন্দ করি না। [৩৩৬৪] জাবির (রাঃ) এক দল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলে তিনি তাদের থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করেন। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাদের এই বৃক্ষ খেতে নিষেধ করিনি? মানুষ যে সব জিনিসে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও সেসব জিনিসে কষ্ট পান। [৩৩৬৫] উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে বললেনঃ তোমরা পিঁয়াজ খেও না। অতঃপর তিনি আস্তে বলেন: কাঁচা পিয়াজ। [৩৩৬৬] তাহকীক আলবানীঃ “অতঃপর তিনি বললেন” কথাটি ব্যতিত সহীহ।
পনির ও ঘি খাওয়া
সালমান আল-ফারিসী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঘি, পনির ও বন্য গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর কিতাবে যেসব জিনিষ হালাল করেছেন তা হালাল এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে যেসব জিনিষ হারাম করেছেন তা হারাম। আর যে সব জিনিষ সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন তা তিনি ক্ষমা করেছেন। [৩৩৬৭]
ফল খাওয়া
নুমান বিন বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য তায়েফ থেকে আংঙ্গুরের উপঢৌকন এলো। তিনি আমাকে ডেকে বলেনঃ এই আংঙ্গুরের গুচ্ছ তুমি লও এবং তোমার মাকে পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তূ আমার মাকে পৌঁছানোর পূর্বে আমি তা খেয়ে ফেললাম। কয়েক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ আংঙ্গুরের গুচ্ছের কী হলো? তুমি কি তোমার মাকে তা পৌঁছেছিলে? আমি বললাম, না। তাই তিনি রসিকতা করে আমার নাম রাখলেন “গুদার” (দাগাবাজ)। [৩৩৬৮] তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম তখন তাঁর হাতে ছিল এক জাতীয় অম্ল ফল। তিনি বলেনঃ হে তালহা! এগুলো লও। এগুলো অন্তরকে শান্তি দেয়। [৩৩৬৯]
উপুড় হয়ে খাওয়া নিষেধ
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কোন ব্যাক্তিকে উপুড় হয়ে আহার করতে নিষেধ করেছেন। [৩৩৭০]